মানুষের সহায়তায় হাইব্রিড প্রজাতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত

extra_large-1464855884-13-hybrid-species-are-on-the-march-with-the-help-of-humans.jpg

বর্তমানে বর্ধিষ্ণু হারে প্ল্যান্ট হাইব্রিড বা উদ্ভিদ সংকর প্রজাতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই নতুন হাইব্রিড প্রজাতিগুলো নাটকীয়ভাবে লোকাল প্ল্যান্ট বা স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতি, বিভিন্ন প্রাণী এবং বাস্তুসংস্থানকে প্রভাবিত করতে সক্ষম।

আমরা জানিনা যে, ঠিক কত পরিমাণে নতুন হাইব্রিড প্রজাতি সারা পৃথিবী জুড়ে রয়েছে। কিন্তু আমরা এটা জানি যে, এদের একটি বড় অংশের জন্য দায়ী মানুষ। ব্রিটিশ আইলে পাওয়া এক তৃতীয়াংশ বুনো হাইব্রিডদের এক বা একাধিক প্যারেন্টস ছিল বিদেশী। এই বিদেশী বা ফরেইন প্ল্যান্টকে জেনে বা না জেনে মানুষই সেখানে নিয়ে এসেছিল।

বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির সাথে ইকোসিস্টেম বা বাস্তুসংস্থানেরও যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটছে। বিশেষ করে অধিক হারে ভূমি দখল বা ল্যান্ড ইউজের কারণে বাস্তুসংস্থান হুমকির সম্মুখীন। ক্রমশ অ্যামাজন রেইনফরেস্ট এবং দক্ষিণ চীনের পাহাড় তাদের ভূমি হারাচ্ছে। এই অবস্থায় নতুন হাইব্রিড প্ল্যান্টগুলো বাড়তি সমস্যার সৃষ্টি করছে।

হাইব্রিড নিয়ে সমস্যা

নতুন হাইব্রিডদের শরীরে তাদের প্যারেন্টস এর বৈশিষ্ট্য মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই মিশ্রিত বৈশিষ্ট্য তাদেকে ইনভেসিভ স্পিসিজ বা আক্রমণকারী প্রজাতিতে পরিণত করে তুলতে পারে। ঊনিশ শতকের শেষ দিকে ইংল্যান্ডের সাউদার্ন কোস্টের একটি আঞ্চলিক ঘাস একটি নতুন আনা নর্থ আমেরিকান ঘাসের সাথে মিলিত বা মেটেড হয়েছিল। এরফলে “ইংলিশ কর্ডগ্রাস” নামে একটি হাইব্রিড তৈরি হয়। তখন থেকে মানুষের সহায়তায় এই হাইব্রিড প্রজাতিটি সারা পৃথিবী জুড়ে নিজেদেরকে বিস্তৃত করছে। কারণ মানুষ এই হাইব্রিড প্রজাতিটিকে এশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া হয়ে নর্থ আমেরিকা পর্যন্ত স্যান্ড ডিউন বা বালির ঢিবিকে স্ট্যাবলাইজ করতে ব্যবহার করে। কিন্তু বেশ কিছু জায়গায় এটা অস্বাস্থ্যকর আক্রমণকারী উদ্ভিদে পরিণত হয়েছে।

হাইব্রিড প্রজাতিরা নেটিভ ও নন নেটিভ প্রজাতির জিনের এক্সচেঞ্জ এর ব্রিজ তৈরি করে। আর এর মাধ্যমে এরা লোকাল প্ল্যান্টদেরকেও ধ্বংস করতে পারে। ফরেইন বা বিদেশী জিনের ইনফ্লাক্স এক ধরণের জেনেটক “মেল্টিং পট” তৈরি করতে পারে যেখানে নেটিভ বা লোকাল স্পিসিজদের আইডেন্টিটি কমতে কমতে এরা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে দুটি লোকাল স্পিসিজের জিন মিলে নতুন হাইব্রিড প্রজাতি তৈরি হলে সেই প্রজাতিটি তার প্যারেন্ট প্রজাতিগুলোর উপর ডোমিনেট করে তাদেকেই বিলুপ্ত করে দেয়। এই বিলুপ্তিকে বিবর্তনের ভাষায় “এক্সটিংকশন বাই মেটিং” বা মিলনের দ্বারা বিলুপ্তি বলে।

কিন্তু তবুও হাইব্রিডাইজেশনে একেবারেই যে খারাপ তা নয়। যদিও হাইব্রিডাইজেশনের বর্তমান হার আশঙ্কাজনক তবুও এটা প্রকৃতির একটি অংশ এবং লাখ লাখ বছর ধরে এই প্রক্রিয়াটি ধীরে ধীরে চলে এসেছে। অনেক উদ্ভিদ প্রজাতি এবং প্রাণী প্রাকৃতিকভাবেই হাইব্রিডাইজ করেছে। এবং বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে জিনের এই এক্সচেঞ্জ বা আদান-প্রদান কিছু অসাধারণ ইভোল্যুশনারি চেঞ্জ বা বিবর্তনীয় পরিবর্তন এর জন্য কাজ করেছে। আফ্রিকার গ্রেট লেকে পাওয়া সিকলিড মাছ (Cichlid fish) এরকম এক অসাধারণ ইভোল্যুশনারি চেঞ্জ এর উদাহরণ। গবেষকগণ বলেন, এরকম অকেশনাল হাইব্রিডাইজেশন ডাইভার্সিটিকে বুস্ট করে এবং ইভোল্যুশনারি চেঞ্জকে আরও গতিশীল করে যেমনটা করেছে গেলাপেগোসে বিখ্যাত ডারুইনের ফিঞ্চদের বেলায়।

উদ্ভিদেরা প্রাকৃতিকভাবেই “বিশৃঙ্খল” এবং তাই নিকটবর্তী প্রজাতিদের মধ্যে হাইব্রিডাইজেশন এদের মধ্যে খুব সাধারণ। এই হাইব্রিডাইজেশনের ফলে এরা কিছু অপ্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে পারে। যেমন, কয়েক হাজার বছর আগে হাইব্রিড সানফ্লাওয়ার বা হাইব্রিড সূর্যমুখীর প্যারেন্টস একে অপরের সংস্পর্শে আসলে এই হাইব্রিড সূর্যমুখীর বিবর্তন ঘটে। এই নতুন হাইব্রিড সূর্যমুখীর খরা ও লবণাক্ত মাটিতে টিকে থাকার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেকারণে তারা আমেরিকার মরুভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে।

নতুন কোন প্রজাতির এস্ট্যাবলিশড বা প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সময় লাগে। আর একারণেই আমরা এখনও পর্যন্ত অনেক মনুষ্যপ্রভাবিত হাইব্রিডকে সনাক্ত করতে পারিনি।  কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে। কিছু নতুন প্রজাতির হাইব্রিডের মধ্যে একটি মিউটেশন হয়েছে যেকারণে তাদের কোষে ডিএনএ এর পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এই জিনোম ডাবলিং অথবা পলিপ্লয়েডাইজেশনের ফলে খুব তাড়াতাড়ি “ওবিস” জিনোম তৈরি হয় যেটায় হাইব্রিড ডিএনএ এর প্রতিটি কপিরই ডুপ্লিকেশন বা নকল ঘটে। ডিএনএ মেটারিয়াল এর ডুপ্লিকেশন একটি সিংগেল জেনারেশন বা একক প্রজন্মেই ঘটতে পারে এবং এভাবে নতুন এই স্পিসিজটির ফরমেশন বা প্রতিষ্ঠা বিবর্তনের ভাষায় “ইনস্ট্যান্টেনিয়াস” বা তাৎক্ষনিক।

যেহেতু এই পলিপ্লয়েড উদ্ভিদ তাদের প্যারেন্টসের দ্বিগুণ ক্রোমোজোম বহন করে, তারা আর তাদের কোন প্যারেন্টস প্রজাতির সাথে মিলিত হতে পারে না। এক্ষেত্রে তারা কেবল নিজেরা নিজেরাই বংশ বিস্তার করতে পারে। ফলে এরা একটি নিজস্ব বায়োলজিকাল স্পিসিজ গঠন করে। অনেক সাধারণ শস্য যেমন স্ট্রবেরি এবং আলু আসলে এরকম পলিপ্লয়েড। গত ২০০ বছরে ছয়টি নতুন উদ্ভিদ প্রজাতি হাইব্রিডাইজেশন এবং জিনোম ডাবলিং প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিকতম ঘটনাটি হল “স্কটিশ মাংকিফ্লাওয়ার” যার উৎপত্তি ইংল্যান্ডে নন চিলির ও নর্থ আমেরিকার নন নেটিভ প্রজাতির মিলন হয়। এই দুই প্রজাতির হাইব্রিডে জিনোম ডাবলিং মিউটেশন ঘটে এবং একটি নতুন প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। কিন্তু মজার বিষয় হল, একই হাইব্রিডকে আরও দুইবার বিবর্তিত হতে দেখা যায় যা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে ঘটে। একবার সাউদার্ন স্কটল্যান্ডে আরেকবার দেশটির নর্থ কোস্ট থেকে ১০ মাইল দূরে অর্কনি আইল্যান্ডে।

এটা মনে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে নেটিভ ও ইনট্রোডিউসড প্রজাতির মধ্যে হাইব্রিডাইজেশন যে খারাপ হবে এমন কোন কথা নেই। জিন ট্রান্সফার নেটিভ স্পিসিজকে আরও বেশি জেনেটিক অস্ত্র প্রদান করে গ্লোবাল চেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করতে পারে যার ফলে তারা জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। আর তাই নন নেতিভ স্পিসিজের সাথে এরকম হাইব্রিডাইজেশন আসলে একধরণের ইভোল্যুশনারি রেস্কিউ বা বিবর্তনগত উদ্ধার।

কিন্তু যেসকল হাইব্রিডাইজেশন এখন হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে কোনগুলো গ্লোবাল ডাইভারসিটির জন্য ভাল আর কোন গুলো খারাপ সেটা এখনও আমাদের জানা বাকি। মানুষ বায়োস্ফিয়ার বা জীবমণ্ডলকে এমনভাবে পরিবর্তন করে ফেলেছে যে এখান থেকে ফিরে আসার আর কোন পথ খোলা নেই। পৃথিবীতে উদ্ভিদ ও প্রাণীরা নিজেদেরকে হাইব্রিডাইজেশন দ্বারা যেভাবে পরিবর্তিত করছে তা আর আগের মত করার আর কোন উপায় নেই। আপনাদের হাইব্রিডদের এই নতুন রাজ্যে স্বাগতম।

http://onlinelibrary.wiley.com/wol1/doi/10.1111/nph.14004/full

http://onlinelibrary.wiley.com/enhanced/doi/10.1111/bij.12577

http://alienspecies.royalbcmuseum.bc.ca/eng/species/spartina

http://www.annualreviews.org/doi/abs/10.1146/annurev.ecolsys.27.1.83?journalCode=ecolsys.1

http://mbe.oxfordjournals.org/content/29/1/195.long

http://www.nature.com/nature/journal/v518/n7539/full/nature14181.html

http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/12907807?dopt=Abstract

http://www.genomenewsnetwork.org/articles/08_03/sunflowers.shtml

https://theconversation.com/all-our-food-is-genetically-modified-in-some-way-where-do-you-draw-the-line-56256

http://phytokeys.pensoft.net/articles.php?id=1432

http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1111/evo.12678/abstract

http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0169534714001372

– বুনোস্টেগস

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.