Table of Contents
ইলন মাস্কের মন্তব্য: কীভাবে স্টারমারকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়? (সংক্ষিপ্ত) (৯ জানুয়ারি, ২০২৫)
জার্মানির উদ্যোগে সিরিয়া-নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে (সংক্ষিপ্ত) (৮ জানুয়ারি, ২০২৫)
জার্মানির পরবর্তী সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ ট্রাম্পকে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন (সংক্ষিপ্ত) (৩ জানুয়ারি, ২০২৫)
ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস ট্রাঞ্জিট বন্ধ করল ইউক্রেইন, শীতে তীব্র জ্বালানি সংকটে ইউরোপ (৩ জানুয়ারি, ২০২৫)
জার্মানিতে ওলাফ শলৎসের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট (১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪)
এবার নজর জার্মানির দিকে। সেখানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস (Olaf Scholz) আজ (সোমবার) বুন্দেস্ট্যাগে (Bundestag) একটি অনাস্থা ভোটে (confidence vote) পরাজিত হতে পারেন। অনাস্থা ভোটটি এসেছে তার কথিত “ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন” (traffic light coalition) ভেঙে যাওয়ার পর। এই কোয়ালিশন গঠিত হয়েছিল তার এসডিপি (SPD: Social Democratic Party), গ্রিনস (Greens) ও এফডিপি (FDP: Free Democratic Party) নিয়ে।
২০২১ সালে গঠিত এই কোয়ালিশন শুরু থেকেই মতবিরোধ ও রাজনৈতিক অন্তর্কলহে জর্জরিত ছিল। গত মাসের গোড়ার দিকে অর্থমন্ত্রী (Finance Minister) এবং এফডিপি নেতা ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনারকে (Christian Lindner) পদচ্যুত করার পর কোয়ালিশন পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।
এরপর শলৎস প্রতিশ্রুতি দেন তিনি একটি অনাস্থা ভোট আহ্বান করবেন। এটি গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে জমা পড়ে। আজ দুপুর নাগাদ তিনি বুন্দেস্ট্যাগে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেবেন এবং বিকেল ৪টার দিকে রোল কল ভোটে (roll call vote) এর মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারিত হবে।
অনেকেই ধারণা করছেন শলৎস পরাজিত হবেন। তবে শোনা যাচ্ছে, ডানপন্থী এএফডি (AfD: Alternative for Germany) দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য কৌশলে শলৎসকে সমর্থন করতে পারেন। তাদের পরিকল্পনা হল শলৎসকে ক্ষমতায় রেখে আগামী সাধারণ নির্বাচনের (general election) দিন পিছিয়ে দেওয়া, যা এখন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। জরিপ অনুযায়ী কেন্দ্রে ডানপন্থী CDU (centre-right CDU) নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্টজ (Friedrich Merz) সম্ভবত সেই নির্বাচনে জয়ী হবেন।
যদি শলৎস অনাস্থা ভোটে পরাজিত হন, তবে ২৩শে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের তারিখ নিশ্চিত হবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী জার্মান চ্যান্সেলর ও সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে।
জার্মান গ্রিন (Green) পার্টির সমর্থন কেন সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে তা জানতে এখানে যান।
তথ্যসূত্র
- https://www.ft.com/content/cbff5965-69e3-4d61-8190-b20fcecb74a9
- https://www.euronews.com/2024/12/16/german-chancellor-olaf-scholz-faces-vote-of-confidence-what-can-we-expect
জার্মানি কেন সম্ভবত ঋণ নিয়ন্ত্রণ (Debt Brake) নীতি থেকে সরে আসবে? (১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪)
ভূমিকা
জার্মানি ঋণকে (Debt) একেবারেই পছন্দ করে না—এমন একটি বদ্ধমূল ধারণা বহুদিন ধরে চলে আসছে। ২০০৯ সালে তথাকথিত “ডেট ব্রেক” (Debt Brake) বা ঋণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সূচনা থেকেই জার্মানি মূলত একমাত্র ইউরোপীয় দেশ, যারা ধারাবাহিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট (Balanced Budget) বজায় রেখে এসেছে। জার্মান রাজনীতিকরা ঋণের প্রতি তাদের বিরূপ মনোভাবকে প্রতীকায়িত করতে গড়ে তুলেছে একধরনের মিথিক কল্পচিহ্ন—”শোয়ার্জ নাল” (Schwarz Null) বা “কালো শূন্য (Black Zero)”—যা দেখায় শূন্য ঋণগ্রহণের প্রতীকি মানে।
হেস (Hesse) রাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটা “ব্ল্যাক জিরো” (Black Zero) ভাস্কর্য রয়েছে। ২০১৭ সালে যখন এঙ্গেলা মেরকেলের (Angela Merkel) অর্থমন্ত্রী উলফগ্যাং শয়াবলে (Wolfgang Schäuble) বিদায় নিচ্ছিলেন, তখন কর্মীরা তার প্রতি সম্মান জানাতে “ব্ল্যাক জিরো” ধারণাটি স্মরণ করেছিল।
কিন্তু এখন, যখন দেশটির অর্থনীতি স্থবির (Stagnation), আর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও আরও জটিল হয়ে উঠছে, তখন মনে হচ্ছে যে জার্মানির ঋণ-বিরোধী মনোভাব কিছুটা নরম হচ্ছে। এমনকি চ্যান্সেলর (Chancellor) ওলাফ শলৎসের (Olaf Scholz) পরবর্তী উত্তরসূরি হিসেবে সম্ভাব্য সিডিইউ (CDU) নেতা ফ্রিডরিশ মের্টজ (Friedrich Merz)-সহ বেশিরভাগ প্রধান রাজনীতিকই এখন একমত যে মেরকেলের বিখ্যাত ডেট ব্রেক বা ঋণ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার।
এই লেখায় দেখার চেষ্টা করবো, আসলে ডেট ব্রেক (Debt Brake) কী, কেন এটি সংস্কারযোগ্য বলে মনে হচ্ছে, এবং এর স্থলে কী আসতে পারে।
ডেট ব্রেক (Debt Brake) কী?
শুরুতেই আসি ডেট ব্রেক আসলে কী। সংক্ষেপে বললে, ডেট ব্রেক (Debt Brake) মূলত ফেডারেল সরকারের কাঠামোগত বাজেট ঘাটতিকে (Structural Budget Deficit) জিডিপির (GDP) মাত্র ০.৩৫%-এ সীমাবদ্ধ রাখে, এবং কার্যত জার্মানির ফেডারেল রাজ্যগুলোকে (German states) কোনো ঋণই না নিতে বাধ্য করে। এটি সম্পূর্ণ অনমনীয় নয়। সরকার বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে বাজেটের বাইরে “বিশেষ তহবিল” (Special Funds) গঠন করতে পারে এবং “অস্বাভাবিক জরুরি অবস্থা” (Unusual Emergencies) ঘটলে ডেট ব্রেক সাময়িক স্থগিত করা যায়। তবে সাধারণ অবস্থায় ডেট ব্রেক জার্মানিকে ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট রাখার দিকেই ঠেলে দেয়।
ডেট ব্রেক ২০০৯ সালে আঙ্গেলা মেরকেলের “গ্র্যান্ড কোয়ালিশন” (Grand Coalition) সরকার দ্বারা সংবিধান সংশোধনের (Constitutional Amendment) মাধ্যমে পাস হয়, যখন জার্মান সংসদের ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এটি অনুমোদন করে।
ডেট ব্রেক (Debt Brake) কেন চালু হয়েছিল?
একটি জনপ্রিয় ধারণা হল, ডেট ব্রেক জার্মানির ঋণের প্রতি স্বাভাবিক বিতৃষ্ণার প্রতীক, এবং জার্মানরা স্বভাবতই মিতব্যয়ী (Austere by Nature)। মেরকেল নিজে হয়তো এই রকম চিন্তা-ভাবনায় বিশ্বাস রাখতেন, তবে এটি বিষয়টার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেয় না। কারণ ইতিহাস বলছে, ডেট ব্রেক চালুর আগে জার্মানি কিন্তু নিয়মিত বিশাল ঘাটতি বাজেট চালাতো।
১৯৭০-এর দশকে তেলের দামের ঝাঁকুনিতে (Oil Price Shock) জার্মানি প্রথম নিয়মিত বাজেট ঘাটতি করা শুরু করে। সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ জিডিপির ৭% থেকে ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
১৯৯০-এর দশকে পুনঃএকত্রীকরণের (Reunification) পর, হেলমুট কোল (Helmut Kohl)-এর ডানপন্থী খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী (Christian Democrats) ও এফডিপি (FDP) জোট সরকারকে জার্মান পূর্বাঞ্চলের (East) অপেক্ষাকৃত দরিদ্র পরিবারগুলোকে সাহায্য করার জন্য প্রচুর টাকা ব্যয় ও ঋণ নিতে হয়েছিল। কিন্তু এর পরের সময়ে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক (Social Democratic) ও গ্রীন (Green) কোয়ালিশন সরকার, গেরহার্ড শ্রোয়েডার (Gerhard Schröder)-এর নেতৃত্বে, আবারও ধারাবাহিকভাবে বড় ঘাটতি চালাতে থাকে। ২০০২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিন বছর তারা জিডিপির ৩%-এর বেশি বাজেট ঘাটতি বজায় রাখে।
এতে জার্মানির আর্থিক অবস্থান যেমন বিপদগ্রস্ত হয়, তেমনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মৌলিক অর্থনৈতিক নিয়ম—মাসট্রিখ্ট ক্রাইটেরিয়াও (Maastricht Criteria) (যা সদস্য রাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ৩%-এর নিচে রাখার কথা বলে) চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। উপরন্তু, জার্মানির আঞ্চলিক সরকারগুলোর (Länder) ঋণগ্রহণের কারণে সহস্রাব্দের (Millennium) শুরুর দিকে জার্মানির মোট সরকারি ঋণ জিডিপির ৬০%-এরও বেশি হয়ে যায়, যা মাসট্রিখ্ট নিয়মের আরেকটি লক্ষ্যমাত্রা।
২০০৮-এর আর্থিক সংকটের (Financial Crisis) পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, ঠিক এক বছর পর ডেট ব্রেকের প্রবর্তনের আগেই। পাশাপাশি, ১৯৯২ সালে ল্যান্ড (Länder) বা আঞ্চলিক সরকারের মাত্রাতিরিক্ত ঋণগ্রহণ রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দেয়। ফেডারেল সরকার ব্রেমেন (Bremen) ও জার (Saar)-কে দেউলিয়া ঘোষণা করার পর আর্থিক সহায়তা দিলেও বার্লিনকে (Berlin) একই সহযোগিতা দিতে অস্বীকার করে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে বার্লিন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে, কিন্তু হেরে যায়। এতে ল্যান্ডগুলোর আর্থিক অবস্থান বিপজ্জনক হয়ে পড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে ডেট ব্রেককে দেখা উচিত জার্মানির অতীতের অতিরিক্ত ব্যয় ও ঋণগ্রহণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, কোনো পূর্বনির্ধারিত মিতব্যয়ী মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে নয়। আর এই বিবেচনায় এটি কাজ করেছিল। ডেট ব্রেক প্রবর্তনের আগ পর্যন্ত জার্মানির ঋণ-জিডিপি অনুপাত ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো সমপর্যায়ের অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে জার্মানি ধারাবাহিকভাবে বাজেট উদ্বৃত্ত (Budget Surplus) তৈরি করে এবং তাদের ঋণমাত্রা কমে আসে।
অর্থনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্ক
ডেট ব্রেক শুরুতে জার্মানির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিস্ময়করভাবে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল। এমনকি জার্মান বামপন্থীদের (Left) একটি অংশও এটিকে সমর্থন করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল যে, জার্মানির রাজকোষকে একটি স্থিতিশীল ভিত্তিতে দাঁড় করানো প্রয়োজন, যাতে দেশটি জ্বালানি রূপান্তর (Energy Transition) ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনীয়তাগুলির জন্য আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকে।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই ঐক্যমত্য ভেঙে পড়েছে। স্বভাবতই, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (Social Democrats) ও গ্রীন (Greens)-রা গত কয়েক বছর ধরে ডেট ব্রেকের উপর বিরূপ মনোভাব পোষণ করছে। কারণ এটি তাদের উদার ব্যয় পরিকল্পনাকে বারবার বাধা দিয়েছে এবং এফডিপির (FDP) সাথে নিয়মিত দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে। বিশেষত, জার্মানির সাংবিধানিক আদালত (Constitutional Court) রায় দিয়েছে যে মহামারীকালীন (Pandemic) তহবিল নতুন বাজেটে স্থানান্তরের সুযোগ ডেট ব্রেক দেয় না। এটি সরকারকে আরও বাজেট সংকটে ফেলে।
কিন্তু ডানপন্থীদের মধ্যেও ডেট ব্রেক নিয়ে মনোভাব নরম হচ্ছে। নভেম্বরে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট (CDU) নেতা ফ্রিডরিশ মের্টজ (Friedrich Merz), যিনি প্রায় নিশ্চিতভাবে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর হবেন বলে অনেকের ধারণা, ডেট ব্রেক সংস্কারের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিছু সপ্তাহ পর এঙ্গেলা মেরকেল (Angela Merkel) নিজেও একই ধরনের ইঙ্গিত দেন, এবং এরপরে এই মাসের শুরুতে বুন্ডেসব্যাঙ্কের (Bundesbank) প্রধানও একই কথা বলেন।
ডেট ব্রেক (Debt Brake)-এর প্রতি আগ্রহ হ্রাসের কারণ
ডেট ব্রেক থেকে সরে আসতে চাওয়ার অন্তত পাঁচটি কারণ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্পষ্ট।
- ১. টানা স্থগিতাদেশের পর বাস্তব অভিজ্ঞতা: ২০২০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত টানা চার বছর ডেট ব্রেক স্থগিত রাখা হয়েছিল কোভিড-১৯ মহামারী (Pandemic) এবং পরবর্তীতে পুতিনের (Putin) ইউক্রেইন আক্রমণের (Invasion of Ukraine) মতো সংকটের কারণে। এই সময় ঋণ নিয়ন্ত্রণ কার্যকর ছিল না, তবুও আকাশ ভেঙে পড়েনি। বরং ২০২৩ সালে আবার ডেট ব্রেক কার্যকর করতে গেলে বাজেট সমস্যা দেখা দেয় এবং কোয়ালিশন সরকার ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।
- ২. অর্থনীতির স্থবিরতা: জার্মানির অর্থনীতি এখন ভালো অবস্থায় নেই। প্রবৃদ্ধি (Growth) স্থবির, আস্থা (Confidence) কম, এবং এই সময়টিতে কৃচ্ছ্রসাধন (Austerity) আরোপ করা মানে অর্থনীতির আরও ক্ষতি ডেকে আনা।
- ৩. কৃচ্ছ্রসাধনের (Austerity) সুনামহানি: ডেট ব্রেক প্রবর্তনের সময়—২০০৯ সালে—অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কৃচ্ছ্রসাধন যৌক্তিক মনে হয়েছিল। কিন্তু আজ, গ্রিস (Greece) ও যুক্তরাজ্যের (UK) মতো দেশে দেখা গেছে যে কৃচ্ছ্রসাধন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দিয়ে ঋণ-জিডিপি অনুপাত কমানোর কাজকে কঠিন করে তুলেছে। ফলে কৃচ্ছ্রসাধনের ভালো ভাবমূর্তি আর নেই।
- ৪. নিম্ন সরকারি বিনিয়োগের ফলাফল: বছর বছর কম সরকারি বিনিয়োগের (Public Investment) কারণে এখন জার্মানির অবকাঠামো (Infrastructure) নিম্নমানের হয়ে পড়েছে। মেরকেল আমলের প্রতিরক্ষা খাতে (Defence Spending) কাটছাঁটের কারণে জার্মান সামরিক বাহিনী (German Military) বাস্তব মোতায়েনের ক্ষেত্রে অপ্রস্তুত। এই অবস্থা পরিবর্তন করতে বিনিয়োগ দরকার।
- ৫. অতিরিক্ত কৃচ্ছ্রসাধন ও চরমপন্থী দলের উত্থান: জার্মানির অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন যে ডেট ব্রেক চরমপন্থী দল এএফডি (AfD)-র উত্থানের জন্য কিছুটা দায়ী। কারণ এটি রাষ্ট্রের ক্ষমতাকে সীমিত করে, ফলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা করা যায় না। ডেট ব্রেক শিথিল করলে তাদের সাহায্যের সুযোগ বাড়বে এবং এর ফলে এই ভোটারদের কিছুটা সন্তুষ্ট করা যেতে পারে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
ডেট ব্রেক সংবিধান সংশোধনের ফসল। সুতরাং এটি পরিবর্তন করতে আবারও বুন্ডেসটাগে (Bundestag) ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার। কিন্তু এটি একেবারে অসম্ভব নয়। কারণ এখন সিডিইউ (CDU), এসপিডি (SPD), এবং গ্রীন (Green)-রা সবাই কোনো না কোনো মাত্রায় সংস্কারের পক্ষে।
যদি ডেট ব্রেক পরিবর্তন হয়, তবে এটি সম্ভবত সম্পূর্ণরূপে বাতিল হবে না। বরং সম্ভবত “জল মিশিয়ে” একটু নমনীয় করা হবে। বিশেষ করে বিনিয়োগের (Investment) ক্ষেত্রে বেশি ব্যয় করার সুযোগ রাখা হবে। তবে দৈনন্দিন ব্যয় (Day-to-day spending) বা নিয়মিত খরচ বাড়ানোর জন্য নয়। ফ্রিডরিশ মের্টজ বিশেষভাবে এই বিনিয়োগ বৃদ্ধির দিকেই মনোযোগ দিচ্ছেন।
চ্যালেঞ্জ হবে এই “বিনিয়োগ”-কে (Investment) এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাতে সংসদের ২/৩ সদস্যরা রাজি হন এবং সেই সাথে জার্মানির সুদৃঢ় আর্থিক শৃঙ্খলার (Fiscal Prudence) সুনাম অটুট থাকে।
উপসংহার
জার্মানি সবসময় ঋণের বিষয়ে সতর্ক থেকেছে। ডেট ব্রেক তাদের ঋণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু বদলে যাওয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় জার্মানির মূলধারার রাজনীতিকরা এখন ভাবছেন, এই কঠোর নিয়ন্ত্রণ কি সত্যিই দেশের কল্যাণ করছে? নাকি কিছুটা নমনীয়তা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয়?
এমন এক সময়ে, যখন বিনিয়োগের ঘাটতি, অর্থনীতির স্থবিরতা, আন্তর্জাতিক অস্থিরতা, এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে জার্মানি টালমাটাল, ডেট ব্রেকের সংস্কার সর্বসম্মত সমাধান হতে পারে। সময়ই বলে দেবে এই পরিবর্তন কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তবে অনেকেই মনে করছেন, জার্মানি খুব শীঘ্রই তার এখনকার কঠোর ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতিতে কিছুটা হলেও শৈথিল্য আনবে।
তথ্যসূত্র
1 – https://twitter.com/LHaffert/status/1171840730215735296/photo/1
2 – https://www.imf.org/external/datamapper/CG_DEBT_GDP@GDD/FRA/DEU/GBR
3 – https://tradingeconomics.com/germany/government-budget
4 – https://adamtooze.com/2017/10/22/german-questions-3-applying-debt-brake-genealogy-german-austerity-regime/
5 – https://adamtooze.com/wp-content/uploads/2017/10/Tooze-Applying-the-Debt-Brake-2017.pdf
6 – https://www.bruegel.org/blog-post/understanding-lack-german-public-investment
7 – https://www.bloomberg.com/news/articles/2024-11-13/merz-opens-door-to-reform-germany-s-strict-borrowing-limits
8 – https://www.ft.com/content/2854eff3-97a3-4f9f-9e5f-1aaf216424d8
9 – https://www.ft.com/content/702d21e5-63d7-44c8-8fc2-e52d050146c7
জার্মান গ্রিন (Green) পার্টির সমর্থন কেন সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে? (৩০ নভেম্বর, ২০২৪)
ভূমিকা
জার্মানির সর্বশেষ ফেডারেল নির্বাচন (German Federal Election)-এ গ্রিন (Green) পার্টি তাদের ইতিহাসের সর্বোত্তম ফলাফল অর্জন করেছিল। তারা ভোটের ১৫% পেয়েছিল এবং ওলাফ শল্ৎস (Olaf Scholz)-এর ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশনে (Traffic Light Coalition) দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। তবে আজ, তাদের সেই ভাগ্য সম্পূর্ণভাবে বিপরীতদিকে মোড় নিয়েছে। বর্তমানে তারা জনমত জরিপে মাত্র প্রায় ১০% সমর্থন পাচ্ছে, যেখানে ২০২২ সালের মাঝামাঝি তারা শীর্ষে ছিল প্রায় ২৩%। এর চেয়েও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এক তৃতীয়াংশেরও বেশি জার্মান নাগরিক চায় গ্রিন (Green) পার্টি আগামী সরকারের কোনো ভূমিকাই না রাখুক। এই প্রেক্ষাপটে, এই লেখায় আলোচনা করা হবে কীভাবে গ্রিন পার্টি দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পর আবার কীভাবে তাদের পতন ঘটল।
পটভূমি: গ্রিন (Green) পার্টির উত্থানের সূচনা
গ্রিন পার্টি জার্মানিতে “ডি গ্রুইনেন” (Die Grünen) নামে পরিচিত। ১৯৬০ এর দশকের শেষ দিকের ছাত্রবিদ্রোহের ফলস্বরূপ একটি প্রান্তিক আন্দোলন হিসেবে উদ্ভূত হয়। শীতল যুদ্ধ (Cold War)-এর তীব্রতার সময়ে একটি “এন্টি-পার্টি” হিসেবে আবির্ভূত হয়ে এই দল পরমাণু শক্তি (Nuclear Power) পরিহার, নারীবাদ (Feminism) ও শান্তিবাদ (Pacifism) প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আশির দশকে তারা প্রথমবারের মতো নির্বাচনে সাফল্য পায় এবং ১৯৮৩ সালের ফেডারেল নির্বাচনে ৫.৬% ভোট পেয়ে রাজ্য সংসদে তাদের প্রথম প্রতিনিধিদের পাঠায়।
দশ বছর পর, পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির পুনরায় একীকরণের (Reunification) পর গ্রিন পার্টি তাদের পূর্বাঞ্চলীয় সহযোগী অ্যালায়েন্স ’৯০ (Alliance 90)-এর সাথে একীভূত হয়। এরপর, ১৯৯৮ সালে তারা প্রথমবারের মতো ফেডারেল সরকারে যোগ দেয়, সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (SPD)-র নেতৃত্বাধীন একটি রেড-গ্রিন (Red-Green) কোয়ালিশনের অংশ হয়ে ওঠে। সে সময় গ্রিন পার্টি ফেডারেল সরকারে তিনজন মন্ত্রী নিয়ে ক্ষমতা দখল করলেও দলটি অভ্যন্তরীণ বিভাজনের মুখে পড়ে। এই বিভাজন ছিল ফুন্ডিস (Fundis) ও রেয়ালোস (Realos) নামে পরিচিত দুই ধারা নিয়ে। ফুন্ডিসরা এমন কোন দলের সাথে জোট করতে চায়নি যা তাদের সবুজ আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অন্যদিকে রেয়ালোসরা বিশ্বাস করত যে তাদের ধারণা সমাজে বাস্তবায়ন করতে হলে রাজনৈতিক জোট অপরিহার্য।
আদর্শিক বিবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতি
২০০০-এর দশকে রেয়ালোস (Realos) গোষ্ঠী ফুন্ডিস (Fundis)-দের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে। গ্রিন পার্টির প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী (Foreign Minister) যোশকা ফিশার (Joschka Fischer) ন্যাটো (NATO)-র যুগোস্লাভিয়া (Yugoslavia)-তে বোমাবর্ষণের অভিযানের সমর্থন করেন, পাশাপাশি আফগানিস্তানে (Afghanistan) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের দিকেও স্বীকৃতি দেন। দলটি দ্রুত তাদের আগের যুক্তরাষ্ট্র-বিরোধী ও কঠোর পুঁজিবাদ বিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে “পরিবেশগত ও সামাজিক বাজার অর্থনীতি” (Ecological and Social Market Economy)-র পক্ষে অবস্থান নেয় এবং এসপিডি (SPD)-র চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোডার (Gerhard Schröder)-এর অধীনে বিতর্কিত শ্রমবাজার সংস্কারকে সমর্থন করে।
এসব আদর্শিক সামঞ্জস্যতার ফলে দলের ভেতরে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই ঘটনাগুলোতে গ্রিন পার্টির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। পরবর্তী কয়েক বছর বিরোধী বেঞ্চে বসে তারা আবার জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করে, বিশেষ করে তখন, যখন অন্যান্য মূলধারার রাজনৈতিক দলও সবুজনীতি (Green Policies) গ্রহণ শুরু করে।
ফুকুশিমা (Fukushima) বিপর্যয়, নির্বাচনী সাফল্য ও অতঃপর উন্নতি
২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দুর্ঘটনা (Fukushima Nuclear Power Plant Disaster)-র পর জার্মানিতে ব্যাপক গণআন্দোলন দেখা দেয়। এই ঘটনা গ্রিন পার্টির পক্ষে জনসমর্থন বৃদ্ধি করে। সে সময়ের জরিপে দেখা যায়, জার্মানদের এক-পঞ্চমাংশ গ্রিন পার্টিকে সমর্থন করে। দলটি তখন বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে (State) নির্বাচনেও চমৎকার ফলাফল করে, বিশেষ করে সিডিইউ (CDU)-র ঐতিহ্যবাহী শক্ত ঘাঁটি বাদেন-ভুর্টেমবার্গে (Baden-Württemberg)।
২০১৬ সালের মধ্যে গ্রিন পার্টি বিভিন্ন ধরনের জোট সরকারের অংশ ছিল, কিন্তু ফেডারেল পর্যায়ে ক্ষমতার বাইরে ছিল এসপিডি (SPD) ও সিডিইউ (CDU)/সিএসইউ (CSU)-এর মহাজোট (Grand Coalition)-এর কারণে। তবুও, এই সময়ে এসে গ্রিন পার্টি জার্মানির অন্যতম বৃহৎ বিরোধী দলে পরিণত হয়। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দলটির সদস্যসংখ্যা অন্য যেকোনো দলের চেয়ে দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায়। ২০২১ সালের ফেডারেল নির্বাচনে গ্রিন পার্টি তাদের ইতিহাসের সেরা ফলাফল করে। তরুণ, শিক্ষিত ভোটারদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দলটি ২০২১ সালে ১৫% ভোট পায়, যা ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তারা ১৬টি আসনে জয়ী হয় এবং যেকোনো দলের মধ্যে সর্বাধিক অগ্রগতি অর্জন করে।
যদিও ২০২১ সালের ফলাফল তাদের ঐতিহাসিক সাফল্য ছিল, তবুও এটি কিছুটা হতাশাজনকও ছিল, কারণ নির্বাচনের কয়েক দিন আগে তাদের জনসমর্থন ছিল প্রায় ৩০% এবং তারা একজন চ্যান্সেলর (Chancellor) প্রার্থীও ঘোষণা করেছিল। কিন্তু দলের সহ-নেতাদের (Co-leaders) কিছু ভুল ও ব্যর্থতার কারণে তারা সেই উচ্চ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তবুও, গ্রিন পার্টি ফেডারেল সরকারে ফিরে আসে ওলাফ শল্ৎস (SPD)-এর নেতৃত্বে গঠিত ট্র্যাফিক লাইট কোয়ালিশনে (Traffic Light Coalition), যেখানে তাদের সঙ্গী ছিল এসপিডি (SPD) এবং ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (FDP) – একটি নবউদারবাদী (Neoliberal) দল যা তরুণ ও শিক্ষিত ভোটারদের মধ্যেও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।
জনপ্রিয়তার পতন: সাম্প্রতিক সময়ের চ্যালেঞ্জ
কিন্তু সরকারে যোগ দেওয়ার পর থেকেই গ্রিন পার্টির জনপ্রিয়তা কমতে থাকে এবং ২০২৩ সালটি তাদের জন্য বিশেষভাবে কঠিন প্রমাণিত হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে (European Parliament Elections) তারা ব্যাপক ভোটহ্রাসের শিকার হয়, সমস্ত ইইউ (EU) দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গ্রিন এমপি (Green MP) হারায়। সাম্প্রতিক অঙ্গরাজ্য নির্বাচনে (State Elections) তারা থুরিঙ্গিয়া (Thuringia) ও ব্রান্ডেনবুর্গে (Brandenburg) প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, আর স্যাক্সোনিতে (Saxony) সামান্য ব্যবধানে টিকে থাকে।
এই পতনের মূল চালিকাশক্তি ছিল তরুণ ভোটারদের মধ্যে সমর্থনের ধস। ইউরোপীয় নির্বাচনে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে গ্রিন পার্টির সমর্থন মাত্র ১১% এ নেমে আসে, যেখানে আগে এটি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছিল। ব্রান্ডেনবুর্গের জনমত জরিপে একই বয়সী ভোটারদের মধ্যে সমর্থনে ২৪% পতন লক্ষ্য করা যায়। সামগ্রিকভাবে, দলটি এখন সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের জনসমর্থনে আছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দলের সহ-নেতারা (Co-leaders) তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং দলের দিকনির্দেশনা নতুনভাবে পর্যালোচনার আহ্বান জানান।
কী কারণে এই পতন?
আমরা অন্তত তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করতে পারি:
১. জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে জনস্বার্থের হ্রাস
প্রথম ও সহজ কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) ইস্যুতে জনসাধারণের আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে। ইউরোবারোমিটার (Eurobarometer) জরিপ অনুযায়ী, ২০১৯ সালে জার্মানরা পরিবেশকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে দেখলেও পাঁচ বছর পর তা বদলে যায়। এখন জার্মানরা, ইইউর অন্যান্য দেশের মতোই, মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধিকে (Cost of Living) সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা বলে বিবেচনা করছে।
২. ক্ষমতায় আসার পর এন্টি-এস্ট্যাবলিশমেন্ট ভাবমূর্তি ধরে রাখা কঠিন
দ্বিতীয়ত, সরকারে থাকাকালীন একসময়কার এন্টি-এস্ট্যাবলিশমেন্ট (Anti-Establishment) ভাবমূর্তি ও র্যাডিকাল পরিচয় ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে কোয়ালিশন সঙ্গীদের খুশি করতে গিয়ে গ্রিন পার্টি বেশ কিছু অপছন্দনীয় সিদ্ধান্ত নেয়। তারা শরণার্থীদের (Refugees) ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে, সামরিক বাহিনীতে অতিরিক্ত সম্পদ বরাদ্দ দেয়, এবং লুৎসেরাথ (Lützerath) নামক একটি গ্রামের ধ্বংসকরণকে সমর্থন করে, যেখানে কয়লা উত্তোলনের উদ্দেশ্যে গ্রামটি উচ্ছেদ করা হয়।
এসব সিদ্ধান্ত দলটির যুব শাখার অনেক নেতাকর্মীকে (Green Youth) ক্ষুব্ধ করে তোলে, যারা সাধারণত দলের বামপন্থী ধারার অনুসারী। তারা দলীয় নেতৃত্বকে অতিরিক্ত ডানদিকে সরে যাওয়ার অভিযোগ এনে দল থেকে গণহারে পদত্যাগ করে।
এই সমস্যা আরও প্রকট হয় ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (FDP)-র অনড় অবস্থানের কারণে। এফডিপি (FDP) সরকারী ব্যয় বৃদ্ধিতে কার্যত কোনো ধরনের সমঝোতা করতে চায়নি। অন্যদিকে গ্রিন পার্টি তাদের আদর্শিক বা পরিচয়মূলক ক্ষেত্র, যেমন পারমাণবিক শক্তি পরিহার (Denuclearization), নিয়ে দৃঢ় অবস্থানে ছিল। ২০২৩ সালে জার্মানি হঠাৎ তাদের শেষ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়, তখনই রাশিয়ান গ্যাস (Russian Gas) সংকটের কারণে জার্মানির জ্বালানি মূল্য আকাশচুম্বী হয়ে গিয়েছিল।
পরিষ্কার জ্বালানি (Clean Energy)-র কঠোর দাবি অনেকের কাছে জার্মান শিল্পখাতের ওপর চাপ ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর অতিরিক্ত বোঝা হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ গত বছরের “হিট পাম্প কেলেঙ্কারি” (Heat Pump Scandal), যখন সরকারকে গৃহস্থালি পর্যায়ে গ্যাস বয়লারের বদলে হিট পাম্প বসানোর প্রস্তাব হালকাভাবে গ্রহণ করতে হয়েছিল। এই প্রস্তাব ব্যাপক জনঅসন্তোষের জন্ম দেয়। ফলে গ্রিন পার্টির ওপর “উচ্চবিত্তদের দল” বা “জনসাধারণের বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন” হওয়ার অভিযোগ উঠে, যা বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের অন্য এন্টি-এস্ট্যাবলিশমেন্ট দলগুলোর দিকে ঠেলে দেয়।
৩. গাফিলতি, কেলেঙ্কারি ও অদক্ষতার বদনাম
পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে একের পর এক গাফিলতি, কেলেঙ্কারি ও অদক্ষতার ছাপ ফুটে ওঠায়। একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে গ্রিন মন্ত্রীরা (Green Ministers) পারমাণবিক কেন্দ্র দ্রুত বন্ধ করতে গিয়ে নিরাপত্তা বিষয়ক কিছু তথ্য নিয়ে সত্য গোপন করেছেন। এছাড়াও অর্থনীতি মন্ত্রী (Economy Minister) রবার্ট হাবেক (Robert Habeck)-কে তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে (Aide) বরখাস্ত করতে হয় একটি স্বজনপ্রীতি (Cronyism) কেলেঙ্কারির কারণে।
এসব ঘটনা গ্রিন পার্টির নেতাদেরকে জনমানসে সাধারণ “রাজনীতিবিদ”-এর চেহারায় উপস্থাপন করেছে, যারা ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ খেলায় লিপ্ত, আদর্শ থেকে বিচ্যুত, এবং স্ক্যান্ডাল এড়াতে অক্ষম।
উপসংহার
একসময়কার জার্মানির সবুজ আন্দোলনের অগ্রপথিক গ্রিন পার্টি এখন জনপ্রিয়তা সংকটে ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে জনমানসের অগ্রাধিকার হ্রাস, কোয়ালিশন সঙ্গীদের সাথে বিরোধ, আদর্শ থেকে বিচ্যুতি, এবং নানা কেলেঙ্কারির কারণে দলটি তার আগের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি হারিয়েছে। ফলাফলস্বরূপ, আজ এক তৃতীয়াংশেরও বেশি জার্মান মনে করে গ্রিন পার্টি আগামী সরকারে কোনো ভূমিকা না রাখাই ভালো। দীর্ঘমেয়াদে এই দল কীভাবে তাদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করবে এবং তরুণ ভোটারদের আস্থা ফেরত পাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ইউরোপ জুড়ে গ্রিন পার্টির সংকট ও তাদের আদর্শের প্রতি জনসমর্থনের হ্রাসের ব্যাপারে জানতে এখানে যান।
Leave a Reply