Table of Contents
রাশিয়ার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট
সারমর্ম
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে। এই সময়ে রাশিয়ার অর্থনীতি অনেকাংশেই সেই দুর্যোগময় পূর্বাভাসগুলোকে অস্বীকার করেছে যা অনেকেই আগে প্রত্যাশা করেছিলেন। তবে গত কয়েক সপ্তাহে অর্থনৈতিক চিত্র উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ হয়েছে, কারণ ক্রেমলিনের (Kremlin) বিশাল সামরিক ব্যয় এখন অর্থনীতির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে।
আবার অতীতে খুব বেশি দিন হয়নি, যখন মনে হচ্ছিল রাশিয়ান রুবল (Russian ruble) নিষেধাজ্ঞার (sanctions) যুদ্ধে জয়লাভ করেছে। পুতিনের (Putin) আগ্রাসনের ফলে মুদ্রাটির তাৎক্ষণিক দরপতন সত্ত্বেও, রুবল খুব দ্রুতই পুনরুদ্ধার করে এবং ২০২২ সালের জুনে ডলারের (dollar) বিপরীতে ৫০ রুবলের পরিমাণে পৌঁছে ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বিনিময় হার অর্জন করে। কিন্তু এরপর স্থিতিশীল থেকে প্রায় এক বছর ৯০ রুবল প্রতি ডলারের আশেপাশে থাকার পর, চলতি আগস্ট মাস থেকে রুবলের দর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে নিম্নমুখী হতে থাকে এবং গত বুধবার তা ডলারের বিপরীতে ১০৮ রুবলের নতুন সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছায়।
রাশিয়ার তীব্র শ্রমিক সংকট (Labor Shortages), উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি (High Inflation) এবং আগামী বছরে প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের মন্দার আশঙ্কার সম্মুখীন। এসবের পাশাপাশি, সম্প্রতি এক ভয়াবহ রিয়াল এস্টেট সংকটের (Real Estate Crisis) আশঙ্কা দানা বেঁধেছে। এর পেছনে মূল কারণ হলো উদার মনে দেওয়া এক মর্টগেজ (Mortgage) ভর্তুকি (Subsidy) কর্মসূচির হঠাৎ প্রত্যাহার। এই কর্মসূচির প্রত্যাহার রাশিয়ার অর্থনীতিকে আরও গভীর মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতি
তথ্য ঘাটতি ও মূল্যায়ন
কেউই রাশিয়ার অর্থনীতি এখন ঠিক কী অবস্থায় আছে, তা নির্দিষ্টভাবে জানে না। কারণ, ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ তাদের অনেক অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও ক্রেমলিন (Kremlin) কিছু তথ্য প্রকাশ আবার শুরু করেছে, সেখানে প্রায়ই অনেক রকম, বিশেষ করে অনুত্তেজক পরিসংখ্যান বাদ দেওয়া হয়। তবুও, আইএমএফ (IMF) এবং বিশ্বব্যাংক (World Bank)-এর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমান প্রায়ই রাশিয়ান সরকারের পরিসংখ্যান সংস্থা রসস্ট্যাটের (Rosstat) সঙ্গে মোটামুটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, অন্তত বড় ধরনের ম্যাক্রো-ইকোনমিক পরিসংখ্যানগুলোতে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ ডেটা মোটের ওপর সঠিক।
প্রত্যাশার চেয়ে ভালো পারফরম্যান্সের কারণ, এবং কেন এগুলো সাস্টেইনেবল নয়
শুরুতে দেখা যাক, কেন এবং কীভাবে রাশিয়ার অর্থনীতি এত দিন যাবৎ প্রত্যাশার চেয়ে ভালো পারফর্ম করে এসেছে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (Russian Central Bank) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রাশিয়ার মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি (GDP) প্রায় ১.২% হ্রাস পেয়েছিল এবং ২০২৩ সালে জিডিপি (GDP) প্রায় ৩.৬% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই বছরের জুনে বিশ্বব্যাংক (World Bank) জানায় যে, ইতোমধ্যে জার্মানিকে ছাড়িয়ে রাশিয়া ক্রয়ক্ষমতা সমতার (purchasing power parity) ভিত্তিতে চীন (China), যুক্তরাষ্ট্র (US) এবং ভারতের (India) পরেই বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। এছাড়াও, জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংক (World Bank) রাশিয়াকে উপরের মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নীত করে উচ্চ আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে গেছে, যেখানে সাধারণত জি-সেভেন (G7) নেতৃস্থানীয় শিল্পোন্নত দেশগুলো অবস্থান করে।
এই বৃদ্ধির বেশিরভাগই এসেছে বিপুল সামরিক ব্যয় (military spending) থেকে, যা রাশিয়া মূলত চালাতে পেরেছে যুদ্ধ শুরুর পূর্বে তাদের হাতে থাকা বড় আর্থিক অবকাশের (fiscal space) কারণে। কারণ যুদ্ধের আগে রাশিয়া খুব বেশি ব্যয় বা ঋণ (borrowing) নেয়নি, তাই তারা সহজেই যুদ্ধ অর্থায়নের জন্য ব্যয় বাড়াতে পেরেছে। এছাড়াও, পশ্চিমা জ্বালানি নিষেধাজ্ঞার (energy sanctions) তুলনামূলকভাবে শিথিল প্রয়োগ এবং ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী জ্বালানি দামের উর্ধ্বগতির কারণে রাশিয়া তেল থেকে প্রচুর লাভ করছে। ফলে রাষ্ট্র যখন নগদ অর্থ হাতে পাচ্ছে, তখন ক্রেমলিন (Kremlin) যুদ্ধের খরচ মেটানো বেশ সহজ ভাবেই চালিয়ে যেতে পারছে।
বর্তমানে রাশিয়ার সামরিক ব্যয় (defence spending) জিডিপির (GDP) প্রায় ৭.৯% ছুঁয়েছে, যা প্রায় ফেডারেল বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রসস্ট্যাট (Rosstat), রাশিয়ান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং অর্থনীতিবিদরা এই নজিরবিহীন সামরিক ব্যয় সম্পর্কে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন, এবং এর পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন।
- প্রথমত, সামরিক ব্যয় জিডিপিতে (GDP) যুক্ত হলেও এটি ভালো ধরনের জিডিপি নয়, কারণ আপনি ট্যাঙ্ক বানাচ্ছেন, যা পরে ধ্বংস হয়ে যাবে। একইভাবে, ইউক্রেনে যুদ্ধে নিযুক্ত করার জন্য সৈন্য নিয়োগ করা, যাদের অনেকে মারা যাবে, অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে কোনো ইতিবাচক বিনিয়োগ নয়।
- দ্বিতীয়ত, আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই বিশাল সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে অর্থনীতির বাকি খাতগুলোতে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি (inflation) বাড়ছে এবং কিছু কিছু খাতে অর্থনীতি অতিরিক্ত উত্তপ্ত (overheating) হয়ে উঠছে।
সাম্প্রতিক মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধি
রাশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতি (inflation) ধীরে ধীরে বাড়ছিল এবং এখন প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে এ বছর এটি ৮.৫% পর্যন্ত উঠতে পারে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তখন অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেছিলেন যে রুবলের (ruble) মূল্যহ্রাস ও আমদানির খরচ বৃদ্ধি রাশিয়ায় নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি ঘটাবে। তবে যুদ্ধ শুরুর পরপরই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য মুদ্রাস্ফীতি ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ১৭.৮% ছুঁয়েছিল বটে, কিন্তু রুবলের (ruble) পুনরুদ্ধার এবং তীব্র সুদের হারের (interest rate) বৃদ্ধির ফলে মুদ্রাস্ফীতি তুলনামূলকভাবে দ্রুত কমে আসে।
কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মুদ্রাস্ফীতি ২.৩% এ নেমে যাওয়ার পর তা আবার বাড়তে শুরু করেছে এবং বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (Central Bank) ৪% লক্ষ্যের তুলনায় এটি দ্বিগুণেরও বেশি। এমনকি পশ্চিমা অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রকৃত মুদ্রাস্ফীতি যা ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে সমন্বয় করা হয়, সেটি ২৭% পর্যন্ত হতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করতে সুদের হার বৃদ্ধি ও এর ফলে রুবলের দরপতন সহ বিভিন্ন সমস্যা
গত অক্টোবর মাসে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Bank) জানায় যে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মূল কারণ বেড়ে যাওয়া সরকারি ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতি (budget deficit)। ব্যাংকটি আরও জানায় যে মুদ্রানীতি (monetary policy) আরও কঠোর করা প্রয়োজন। ফলে ব্যাংকটি ২০২৩ সালের অক্টোবরে আবারও সুদের হার (interest rate) বাড়িয়ে ২১% এ নিয়ে গেছে। এটি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা জরুরি সুদের হারের চেয়েও বেশি এবং ২০০৩ সালের পর সর্বোচ্চ। সুদের হার বৃদ্ধিতে ব্যবসায়িক খাতে ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে রুশ সিনেটরদের সামনে বিরল এক প্রকাশ্য অসন্তোষের নমুনা দেখিয়ে প্রতিরক্ষা বিষয়ক কনগ্লোমারেট রস্তেকের (Rostec) সিইও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে এত উচ্চ সুদের হার (interest rate) তাদের লাভ গিলে খাচ্ছে। তিনি সতর্ক করে দেন যে এই উচ্চ ঋণব্যয় শেষ পর্যন্ত ব্যাপক দেউলিয়া (bankruptcy) পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে, যা ইতোমধ্যে এ বছরে ২০% বেড়েছে।
উচ্চ সুদের হার (interest rate) রাশিয়ান স্টক মার্কেটকেও (stock market) নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে, যা আগস্টের শেষ নাগাদ প্রায় ২৫% পড়ে গেছে। অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা রুবলের (ruble) দরপতনও ঘটিয়েছে, যা অক্টোবরে নতুন নিম্নস্তরে পৌঁছেছে। সাধারণত সুদের হার বাড়লে মুদ্রার মান শক্তিশালী হওয়ার কথা, কারণ সঞ্চয়ের আকর্ষণ বাড়ে। কিন্তু এখানে বিপরীত পরিস্থিতি ঘটছে।
অন্য ব্যবসাগুলো অভিযোগ করছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (Central Bank) মুদ্রানীতি (monetary policy) তাদের অর্থায়নের খরচ এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছে যে তারা বিনিয়োগ করতে পারছে না, যা রাশিয়ার শিল্প সক্ষমতাকে (industrial capacity) খর্ব করছে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Bank) তাদের মুদ্রানীতির পক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছে যে সামরিক ব্যয় সংশ্লিষ্ট খাতে শ্রমের (labor) ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি কর্মী বেসামরিক খাত থেকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরিত হয়েছে, যেখানে অধিক মজুরি ও সুবিধার লোভে তারা যাচ্ছে। এটি উভয় খাতে মজুরি বাড়িয়ে দিয়েছে, এবং রাশিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়ের (Labour Ministry) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৭ সাল নাগাদ দেশটি প্রায় ২৪ লাখ শ্রমিকের ঘাটতিতে পড়তে পারে।
মজুরি-মূল্য বৃদ্ধির চক্রের আগমন ও মুদ্রাস্ফীতির বৃদ্ধি
ক্রেমলিনের (Kremlin) জন্য এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো রাশিয়ান অর্থনীতি একটি মজুরি-মূল্য বৃদ্ধির চক্রে (wage-price spiral) প্রবেশ করবে; অর্থাৎ উচ্চ মজুরি বেশি মুদ্রাস্ফীতি ডেকে আনবে, যা আবার উচ্চ মজুরির দাবি তৈরি করবে, এবং এই চক্র চলতেই থাকবে।
মজুরি বাড়লে মূল্য বাড়ে কারণ –
- উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি: শ্রমিকদের মজুরি বাড়লে কোম্পানির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অধিক খরচ পুষিয়ে নিতে কোম্পানিগুলো পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়।
- গ্রাহক চাহিদা বৃদ্ধি: শ্রমিকদের মজুরি বাড়লে তাদের হাতে বেশি অর্থ থাকে, যা তারা ব্যয় করে। ফলে চাহিদা বাড়ে। অতিরিক্ত চাহিদা পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়, বিশেষত যদি সরবরাহ সীমিত হয়।
- মুদ্রাস্ফীতির চাপে দাম বৃদ্ধি: মজুরি বৃদ্ধি পণ্যের খরচ বাড়িয়ে দেয়, যা পুরো অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে।
আবার মূল্য বাড়লে মজুরি বাড়ে কারণ –
- জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি: পণ্যের মূল্য বাড়লে শ্রমিকদের জীবিকার ব্যয় বেড়ে যায়। শ্রমিকরা তখন অধিক মজুরি দাবি করে, যাতে তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় থাকে।
- শ্রমিক ইউনিয়নের চাপ: শ্রমিক সংগঠনগুলো মজুরি বৃদ্ধির দাবি তোলে, যদি মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাস্তব আয় (real income) কমে যায়।
- শ্রমের বাজারের প্রতিযোগিতা: মূল্যবৃদ্ধির সময় কোম্পানিগুলো দক্ষ শ্রমিক ধরে রাখতে উচ্চ মজুরি দিতে বাধ্য হয়।
এভাবে একটি মজুরি-মূল্য চক্রের সৃষ্টি হয়। সামষ্টিক অর্থনীতি বা (macroeconomics) ম্যাক্রোইকোনমিক্সে এই মজুরি-মূল্য চক্র (wage-price spiral) মুদ্রাস্ফীতির (inflation) একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা প্রদান করে। মজুরি বৃদ্ধি ও মূল্য বৃদ্ধি উভয়ই মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়, যাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে। মূল্যবৃদ্ধির (Price Increase) ফলে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা সেবা কেনা সম্ভব হয় না। আবার মজুরি বৃদ্ধির (Wage Increase) ফলে কর্মীদের হাতে অতিরিক্ত টাকা আসে। কিন্তু যদি মজুরি বৃদ্ধির হার পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চেয়ে কম হয়, তাহলে প্রকৃত আয় (real income) কমে যায়, যার মানে হলো তারা আগের মতো একই পণ্য বা সেবা কিনতে পারে না।
শ্রমবাজারে সংকট
ইতোমধ্যে রাশিয়ায় মজুরি-মূল্য বৃদ্ধির চক্রের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। শুধু যে মুদ্রাস্ফীতি (inflation) অনেক উচ্চ হারে চলছে তা নয়, বেকারত্বের হারও (unemployment rate) রেকর্ড নিম্ন ২.৪% এ নেমে এসেছে। বেকারত্বের হার এতটা কম আসলে ভালো লক্ষণ নয়, কারণ এটি শ্রমবাজারে চরম ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়। শ্রমবাজারের ঘাটতি হচ্ছে কারণ শ্রম বা শ্রমিকদের নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিগুলোর ডিমান্ড সাপ্লাই এর তুলনায় কমে গেছে, অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রিগুলো বেশি শ্রমিক নিতে বা রাখতে চাচ্ছে না। চরম মুদ্রাস্ফীতি এর অন্যতম কারণ, কারণ এর ফলেই ইন্ডাস্ট্রিগুলোর উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায় (যার অন্যতম কারণ আবার শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি), আর সেই খরচ কমিয়ে আনতে তারা শ্রমিকদের পেছনে খরচ কমাতে চায় ও শ্রমিকদের ছাটাই করে। রাশিয়ায় এই শ্রমঘাটতি ইতোমধ্যেই কিছু বিশেষ খাতে, যেমন নির্মাণ খাতে (construction), তীব্র প্রভাব ফেলেছে, যেখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কেননা নির্মাণ খাতের মতো শ্রমঘন শিল্পে শ্রমিক কমলে উৎপাদন কমতে বাধ্য। এদিকে নির্মাণ খাতের মত খাতকে সবসময় চালু রাখতে হয়। কম সংখ্যার দক্ষ শ্রমিকদের ধরে রাখতে, আর তাদের দিয়ে অনেক কাজ করিয়ে নেয়ার চাপের কারণে মজুরি দ্রুত বাড়তে থাকে। এটি গত কয়েক বছরে রাশিয়ায় দ্রুত এবং ক্রমবর্ধমান মজুরি বৃদ্ধির মূল কারণ।
ভবিষ্যত চিত্র ও সম্ভাবনা
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Bank) এবং একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করেছে যে রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী বছর উল্লেখযোগ্যভাবে মন্থর হয়ে আসবে। তা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছে পুতিন (Putin) তার বর্তমান পথ পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা করছেন না, এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় (defence expenditure) আগামী বছর আরও প্রায় ৩০% বৃদ্ধি পাওয়ার কথা রয়েছে।
যদি বৈশ্বিক জ্বালানি মূল্যে (global energy prices) বড় ধরনের বৃদ্ধি না ঘটে, যা রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থায়নের সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে, তাহলে রাশিয়ার বর্তমান অর্থনৈতিক গতিপথ আসলেই টেকসই নয় বলে মনে হচ্ছে।
রুবলের সাম্প্রতিক পতন
রুবলের মূল্য নির্ধারণ ও সাম্প্রতিক পরিবর্তন
প্রথম যে প্রশ্নটি উঁকি দিতে পারে, তা হল: রুবলের মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করা হয়? বাস্তবিকই, স্থানীয় মানি এক্সচেঞ্জে (currency exchange) রুবল সরাসরি বিনিময়যোগ্য নয়। ২০২৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্র (US) মস্কো এক্সচেঞ্জ (Moscow exchange)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যেটি ছিল রুবল লেনদেনের শেষ স্বীকৃত কেন্দ্র। তার পর থেকে রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Russian central bank) রুবলের মূল্য নির্ধারণ করে তথাকথিত ‘ওভার দ্য কাউন্টার ট্রেড’ (over the counter trades) এর মাধ্যমে।
এর মানে হলো, যখন ব্যাংকগুলো বা বড় রপ্তানিকারক সংস্থাগুলো — যেমন গ্যাজপ্রম (Gazprom), যারা এসময়ের রাশিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে — ডলার বা অন্যান্য বিদেশি মুদ্রার বড় অঙ্কের বিনিময় করে, তখন সেই লেনদেনকে ভিত্তি করেই রুবলের মূল্যমান নির্ধারণ করা হয়। রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরবরাহকৃত তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সংশয় থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু এটি আশ্চর্যজনকভাবে বেশ নির্ভরযোগ্য। রাশিয়ান সংবিধান (Russian Constitution) অনুযায়ী, রাশিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যত স্বাধীনভাবে কাজ করে। ধারনা করা হয় যে যুদ্ধের পরেও এই স্বাধীনতা বহাল রয়েছে। এর প্রমাণ হল, ২০২২ সালে প্রথম ধাপের নিষেধাজ্ঞার পর এবং সাম্প্রতিক কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক ধারাবাহিক সুদের হারের (interest rate) বড় বৃদ্ধি। রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক অভিজাতদের আপত্তি সত্ত্বেও সুদের হার বাড়ানো প্রমাণ করে যে ব্যাংক এখনো কার্যকরভাবে স্বাধীন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাস বা তার একটু বেশি সময় ধরে রুবলের ক্রমাগত পতন আরও বেগ পেয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রুবল ডলারের বিপরীতে প্রায় ৫০ রুবলের বিনিময় হারে পৌঁছেছিল, কিন্তু তারপর থেকে এক বছর ধরে তা ক্রমাগত কমতে কমতে ২০২৩ সালের শুরুতে ডলারের বিপরীতে প্রায় ৯০ রুবলে স্থিতিশীল হয়। তবে দুই-তিন সপ্তাহ আগে এর দর আবার কমতে শুরু করে। আগস্টের শুরুতে ডলারের বিপরীতে ৮৫ রুবল থাকলেও দ্রুত তা নেমে নতুন রেকর্ড নিম্ন বিনিময় হার স্পর্শ করে। স্বভাবতই, এটি পুতিন এবং সাধারণ রুশ জনগণের উভয়ের জন্য খারাপ সংবাদ। যদিও দুর্বল রুবল রপ্তানিকারকদের (exporters) জন্য সহায়ক হতে পারে, এটি আমদানি পণ্যের দাম বাড়ায়, যা মূল্যস্ফীতি (inflation) উস্কে দেয়। স্বাভাবিক অবস্থায় এটি অস্বাভাবিক কিছু হত না, কিন্তু রাশিয়ায় ইতোমধ্যেই বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ৮%-এর উপরে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বেঞ্চমার্ক সুদের হার (benchmark interest rate) ২১%-এ উন্নীত করেছে। তুলনার জন্য, ইউরোপ (Europe) এবং যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার এখন প্রায় ৫%, এবং এটাকেও খুব বেশি বলেই মনে করা হচ্ছে।
রুবল পতনের কারণসমূহ
তাহলে কেন রুবল পড়ে যাচ্ছে? এর অন্তত পাঁচটি প্রধান কারণ রয়েছে –
- ১. অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধি: রাশিয়ান সরকার যুদ্ধ অর্থায়নের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। এর ফলে বাজারে রুবলের সরবরাহ (money supply) নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়ে রাশিয়ায় অর্থ সরবরাহ বছরে গড়ে প্রায় ১০% বেড়েছে। কিন্তু আগ্রাসনের পর থেকে তা বছরে ২০% বা এমনকি ২৫%-এ পৌঁছেছে। আমরা এটা বলছি না যে কেবলমাত্র অর্থ সরবরাহই মুদ্রাস্ফীতি বা মুদ্রার মান নির্ধারণে একমাত্র বিষয়। তবে ধরুন, রুবলের প্রতি সামগ্রিক চাহিদা অপরিবর্তিত থাকলে, সরবরাহের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিতে রুবলের মান হ্রাস পায়। যাতে এটি না ঘটে, তার জন্য রুবলের চাহিদাও তুলনামূলকভাবে বাড়তে হবে। কিন্তু তা হয়নি। নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে, আর বিশ্বব্যাংকের (World Bank) হিসেবে রাশিয়ার জিডিপি (GDP) ২০২২ সালের মাত্র সামান্য উপরে। অর্থাৎ উৎপাদন বাড়েনি উল্লেখযোগ্যহারে।
- ২. নিষেধাজ্ঞা: দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে নতুন নিষেধাজ্ঞা। রুবলের দরপতন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গ্যাজপ্রম ব্যাংক (Gazprombank)-এর ওপর আরোপিত নতুন বিধিনিষেধের সঙ্গে মিল রেখেই হয়েছে। গ্যাজপ্রম ব্যাংক এতদিন ছিল রাশিয়ার শেষ বড় অ-নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যাংক। আগে ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়া থেকে কেনা গ্যাসের (gas) মূল্য পরিশোধের জন্য এই ব্যাংককে ব্যবহার করত। এটিই ছিল রাশিয়ার বাকি থাকা সামান্য কয়েকটি বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তির পথের একটি। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে যে দ্বিতীয় ধাপের নিষেধাজ্ঞা (secondary sanctions) আরোপ শুরু হয়েছে, তাতে চীন (China) ও তুরস্কের (Turkey) মতো দেশের ব্যাংকগুলোও রুশ প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসা করতে নিরুৎসাহিত হয়েছে। ফলে রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ আরও সংকীর্ণ হয়েছে।
- ৩. রাশিয়ান অর্থনীতির বাস্তব অবস্থা: তৃতীয় কারণটি আরও সাধারণ: রাশিয়ান অর্থনীতি আগের বছরের মতো আর এতটা শক্তপোক্ত নেই। গত বছর যখন মনে হচ্ছিল রাশিয়া পশ্চিমের অর্থনৈতিক যুদ্ধ (economic warfare) সামাল দিতে পারছে, তখনকার চিত্র এখন আর নেই। সংক্ষেপে বললে, যুদ্ধজনিত সরকারি ব্যয় মুদ্রাস্ফীতির আরেকটি ঢেউ সৃষ্টি করেছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আসছে না সহজে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে উঠেছে এবং রাশিয়ানরা তাদের অর্থ বিদেশে সরিয়ে নিচ্ছে, কারণ দেশীয় ব্যাংকে রাখা রুবল আমানতের মান মূল্যস্ফীতির কারণে কমে যাচ্ছে।
- ৪. রপ্তানিকারকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিলকরণ: চতুর্থ কারণ হল ক্রেমলিন কর্তৃক গৃহীত নীতিগত পরিবর্তন। এতদিন রপ্তানিকারকদের তাদের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের অর্ধেক (৫০%) রুবলে রূপান্তর করতে বাধ্য করা হত। এটি কৃত্রিমভাবে রুবলের মূল্য বৃদ্ধি করে রেখেছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগে এই বাধ্যবাধকতা ৫০% থেকে ২৫%-এ নামিয়ে আনা হয়। একইসঙ্গে, আরেকটি নিয়ম যা রপ্তানিকারকদের তাদের ৬০% আয় রাশিয়ায় রাখতে বাধ্য করত, সেটিও জুলাইয়ে ৪০%-এ নামানো হয়। ফলে রপ্তানিকারকরা আর আগের মতো প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করে না, যার ফলে রুবলের ওপর নিম্নমুখী চাপ বেড়েছে।
- ৫. সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা: পঞ্চম এবং শেষ কারণ হল ইউক্রেনে (Ukraine) সামরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা। এটি ইউরোপীয় ও রাশিয়ান উভয় অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। গত সপ্তাহে রাশিয়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (intercontinental ballistic missile) ব্যবহার করে, যা সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কাকে তীব্র করেছে। এর পর থেকেই রুবলের দরপতন আরও বেগবান হয়েছে।
করণীয় কী?
তাহলে রাশিয়া কি এই পতন থামাতে কিছু করতে পারবে? কিছুটা পারলেও তা দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর সমাধান বলে মনে হয় না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (foreign exchange reserves) ব্যয় করে রুবলকে কৃত্রিমভাবে চাঙা রাখতে পারে, অথবা রাশিয়ান নাগরিক ও রপ্তানিকারকদের ওপর বিদেশে রুবল বিক্রি করা নিষিদ্ধ করার মতো অধিকতর কঠোর মূলধন নিয়ন্ত্রণ (capital controls) আরোপ করতে পারে। কিন্তু এসবই স্বল্পমেয়াদী সমাধান। প্রকৃতপক্ষে, মাত্র দুটি উপায়ে দীর্ঘমেয়াদে রুবলকে শক্তিশালী করা সম্ভব:
- ১) বৈশ্বিক জ্বালানি (energy) মূল্যের বড় ধরনের বৃদ্ধির মাধ্যমে রাশিয়ার রপ্তানি আয় বাড়ানো।
- ২) সরকারী ব্যয় হ্রাস করা, যা যুদ্ধের কারণে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। তবে ইউক্রেনে অন্তত কিছুটা উত্তেজনা নিরসন না করলে সরকারের ব্যয় কমানোও কঠিন।
রিয়েল এস্টেট সংকট
পটভূমি
রাশিয়ার সম্পত্তি বাজারে (Property Market) অস্থিরতার প্রকৃত তীব্র ধাপ সম্ভবত ২০২০ সাল থেকেই শুরু হয়। সেই সময়, সরকার নির্মাণ খাত (Construction Sector) ও সম্পত্তি বাজারকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে একটি বিশেষ মর্টগেজ কর্মসূচি (Preferential Mortgage Program) চালু করে। কোভিড (COVID) লকডাউনের সময়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Bank) যখন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়াচ্ছিল, তখন এই কর্মসূচি মর্টগেজে সুদের হার কৃত্রিমভাবে ৮% রাশি পর্যন্ত ধরে রাখত। এর ফলে মাসিক লোন পরিশোধযোগ্যতা (Monthly Loan Payments) অনেক কমে যায়। এটি অনেক রুশ নাগরিকের জন্য একটি দারুণ সুযোগ হয়ে ওঠে এবং ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পায়। এমনকি ২০২২ সালে মোট মর্টগেজ লোনের এক-চতুর্থাংশের বেশি এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
যদিও এই পরিকল্পনা শুরুতে মাত্র এক বছরের জন্য হওয়ার কথা ছিল, এটি বারবার বাড়ানো হয় এবং অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত চলতে থাকে। এর পেছনে অন্তত দুটি বড় কারণ ছিল –
- প্রথমত, ইউক্রেইনে আগ্রাসনের (Invasion of Ukraine) পর রাশিয়ার সামনে যখন একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা (Western Sanctions) ও অস্থির অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ আসে, তখন ব্যবসা ও ব্যক্তি উভয়েই রিয়াল এস্টেটকে স্থিতিশীল বিনিয়োগ (Stable Investment) হিসেবে গ্রহণ করে। নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশে নগদ অর্থ পাঠানো কিংবা রাশিয়ান শেয়ারে বিনিয়োগ করা কঠিন হয়ে পড়ে, তাই অনেকে সম্পত্তি কেনাকাটায় ঝুঁকে পড়ে।
- দ্বিতীয়ত, অনেক সম্পত্তি ডেভেলপার (Property Developers) ক্রেমলিনকে (Kremlin) এই কর্মসূচি চালিয়ে যেতে তদবির করে, কারণ এটি তাদের বিক্রয় ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তোলে। ক্রেমলিনও এ বিষয়ে সায় দেয়, কারণ এটি রাশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP – Gross Domestic Product) পরিসংখ্যানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং নির্মাণ শিল্পকে (Construction Industry) চাঙা রাখে। রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা তাস (Tass)-এর তথ্যমতে, নির্মাণ শিল্পের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবাসন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি
২০২৩ সালে নতুন আবাসন নির্মাণের পরিমাণ ছিল ১৯৯০ সালের পর সর্বোচ্চ। সেই বছর আবাসন ক্রয় মোট সম্পদ বিনিয়োগের (Asset Investment) বড় অংশ দখল করে। আবাসন খাতে এই উত্থান এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় (Defence Spending) বৃদ্ধি মিলিয়ে রাশিয়ার জিডিপি (GDP) পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, এই মর্টগেজ স্কিম চার বছর চালু রাখার কারণে ক্রেমলিনের ব্যয় প্রায় ৬০০ বিলিয়ন রুবল (Rubles) ছাড়িয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়াচ্ছিল, তখন এই স্কিম আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের (Finance Ministry) হিসাব অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত কর্মসূচিটি চালিয়ে যেতে হলে সরকারের আরও ১ ট্রিলিয়ন রুবল ব্যয় করতে হতো।
যুদ্ধের আগের সময়ে রাশিয়ান রাষ্ট্র খুব বেশি ব্যয় কিংবা ঋণ নিত না, যার ফলে তাদের একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক পরিসর (Fiscal Space) তৈরি হয়েছিল: ঋণ থেকে জিডিপির অনুপাত (Debt to GDP Ratio) ছিল কম, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (Foreign Exchange Reserves) ছিল পর্যাপ্ত। এছাড়াও, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও তা ছিল তুলনামূলক শিথিল, এবং সামগ্রিক জ্বালানি দামের ঊর্ধ্বগতি রাশিয়াকে তেল বিক্রি থেকে বড় অঙ্কের মুনাফা এনে দেয়। ফলে সরকারের পক্ষে এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া আপাতত সহজ হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। এখনো রাশিয়ার কিছুটা আর্থিক পরিসর আছে, ঋণ-জিডিপির অনুপাত তুলনামূলক কম, কিন্তু অর্থনীতি এখন অত্যধিক উত্তপ্ত (Overheating)। এর বড় একটি কারণ হলো অনন্য মাত্রার সামরিক ব্যয় (Military Spending) যা এখন জিডিপির ৮%।
সুদের হারের বৃদ্ধি ও স্কিমটির নিয়ন্ত্রণ
অর্থনীতি এখন এমন গতিতে বাড়ছে যা স্থায়ী নয়। সরবরাহ চাহিদা মেটাতে পারছে না, ফলে শ্রমিক সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি তীব্রতর হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে প্রতিরক্ষা ব্যয়, যা ফেডারেল বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ, কমানোর জন্য। কিন্তু পুতিন (Putin) যখন ইউক্রেইনে আগ্রাসী অপারেশন আরও তীব্র করছেন, তখন প্রতিরক্ষা ব্যয় কমার সম্ভাবনা নেই। বরং আগামী বছরে তা প্রায় ৩০% বৃদ্ধির পথে।
ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাধ্য হয়ে সুদের হার আগ্রাসীভাবে বাড়াচ্ছে। কিন্তু এই সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাব মর্টগেজ স্কিমের কারণে ধাক্কা খাচ্ছে, কারণ মর্টগেজ ধারকরা এখনো ৮% হারের গণ্ডিতে নিরাপদে রয়েছে। এই পরিস্থিতি মুদ্রাস্ফীতিকে (Inflation) কমানো কঠিন করে তুলছে, যা এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৪%-এর দ্বিগুণেরও বেশি।
এ কারণে জুলাই মাসে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ অনুসারে কর্মসূচিটি বেশিরভাগের জন্য বন্ধ করে দেয়, শুধুমাত্র যেসব পরিবারের অন্তত দুটি সন্তান আছে তাদের জন্য তা চালু রাখে। এর ফলে রাশিয়ার রিয়াল এস্টেট বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এবং অনেকে ধারণা করছেন দেশটি পূর্ণাঙ্গ একটি সম্পত্তি সংকটের পথে।
সমস্যার মূলে রয়েছে সম্পত্তির অতিমূলায়ন (Overvaluation)। মর্টগেজ ঋণ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং গত তিন বছরে রাশিয়ার বড় শহরগুলোতে সম্পত্তির দাম প্রায় ১৭০% বেড়েছে বলে দ্য ইকোনমিস্ট (The Economist) জানিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মর্টগেজ ভর্তুকি প্রত্যাহার সম্পত্তির দামে বড় রকমের পতন ঘটাতে পারে।
স্কিম প্রত্যাহারের পর এখন মর্টগেজের সুদের হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেফারেন্স (Benchmark) হারের সঙ্গে যুক্ত, যা বর্তমানে প্রায় ১৫%। সম্প্রতি রাশিয়ার সবচেয়ে বড় কয়েকটি ব্যাংকের মর্টগেজ হার ৮% থেকে বেড়ে ২২%-এরও বেশি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় মর্টগেজ প্রদানকারী ব্যাংক স্পেয়ারব্যাংক (SberBank) সুদের হার ২৮%-এ নিয়ে গেছে। ফলে মাসিক পরিশোধ অনেক বেশি বেড়ে গেছে, আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এতে অনেক বাড়ির মালিককে হয় সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে অথবা ছোট বাসস্থানে চলে যেতে হবে।
সংকটময় পরিণতি
রিয়াল এস্টেট কোম্পানিগুলোর সংকট: সুদের হার বৃদ্ধির কারণে এখন আর কেউ আগের দামে বাড়ি কিনতে পারছে না। এ জন্য স্কিম প্রত্যাহারের পর মর্টগেজ অনুমোদন (Mortgage Approval) অর্ধেকে নেমে এসেছে। নতুন নির্মিত অ্যাপার্টমেন্ট (New Build Apartments)-এর চাহিদাও ব্যাপকভাবে কমেছে। মস্কোতে (Moscow) ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নতুন সম্পত্তি বিক্রি ৪৮% কমে গেছে। অন্য অনেক অঞ্চলে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ক্রাসনোইয়ার্সকে (Krasnoyarsk) বিক্রি পতন ৬২%। ফলে রিয়াল এস্টেট কোম্পানিগুলো গভীর সংকটে পড়েছে, এবং ধারনা করা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ডেভেলপার যেমন পিক (Pik) এবং সামোলেট (Samolet) হয়তো দেউলিয়া হওয়ার (Bankruptcy) দ্বারপ্রান্তে। এখনো সম্পত্তির দাম ব্যাপকভাবে পড়ে যায়নি, কারণ যেসব ক্রেতা বাড়ি কিনতে পারছেন না তারা ভাড়ার (Rental) দিকে ঝুঁকছেন। ফলে ভাড়ার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
মর্টগেজ হার বৃদ্ধি ও সম্পত্তি ক্রয়ের অক্ষমতা: সিআইএম (CIAM) ডেটা অনুযায়ী, রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ১ বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া আগস্ট থেকে ১০% থেকে ৬১% পর্যন্ত বেড়েছে। মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে (St. Petersburg) ভাড়া আরও বেশি বেড়েছে, কিছু ক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণ পর্যন্ত। মস্কোতে ১ বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টের গড় ভাড়া এখন ৬৮,২০০ রুবল, যা প্রায় ৬১৭.৪০ ইউরো (Euro)। এটি জাতীয় গড় মাসিক মজুরিের সমান প্রায়। অর্থাৎ, এখন এক মাসের পুরো মজুরি খরচ করে মাত্র এক মাসের ভাড়া মেটানো যাচ্ছে।
মূল্য হ্রাসের সাথে ভাড়া বৃদ্ধির পাল্টা প্রভাব: এখন প্রশ্ন উঠতে পারে: সম্পত্তির অতিমূলায়ন যদি কমে আসে, তাহলে কি তা খারাপ? একটি নিয়মিত মূল্য সংশোধন (Correction) তো স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সমস্যা হলো, এই ধরনের বড় ধরনের মূল্য সংশোধন স্বল্পমেয়াদে অর্থনীতিতে প্রচণ্ড ধাক্কা দেয়, যা রাশিয়া এখন বহন করতে পারবে না। অনেক সময় এর সমাধান হিসেবে আর্থিক উদ্দীপক বা ফিসকাল স্টিমুলাস (Fiscal Stimulus) প্রয়োজন হয়, যা চীন (China) এখন চেষ্টা করছে। কিন্তু ক্রেমলিনের পক্ষে এটি করা কঠিন, কারণ তারা ইতিমধ্যেই বিপুল অর্থ ব্যয় করছে এবং বাজেটের বড় অংশ প্রতিরক্ষায় যাচ্ছে।
সারসংক্ষেপে, মর্টগেজ ভর্তুকি কর্মসূচির অবসান রাশিয়ার রিয়াল এস্টেট খাতকে চাপে ফেলেছে। সম্পত্তির মূল্য অত্যধিক উঁচু হয়ে গিয়েছিল, সুদের হার বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষ আর আগের দামে বাড়ি কিনতে পারছে না, বিক্রি কমে যাচ্ছে, ডেভেলপাররা দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে, আর ভাড়া মহার্ঘ হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদে মূল্য সংশোধন প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু স্বল্পমেয়াদে এটি রাশিয়ার আগে থেকেই চাপে থাকা অর্থনীতিকে আরও সঙ্কটে ফেলবে। আর ক্রেমলিনের হাতে খুব বেশি বিকল্প নেই, কারণ প্রতিরক্ষা ব্যয় ও অন্যান্য খাতে আগেই প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে, রাশিয়া এখন এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে রিয়াল এস্টেট সংকটের সম্ভাব্য অভিঘাত তাদের অর্থনীতিতে গভীর এক মন্দার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
সিরিয়ায় আসাদের পতনের অন্যতম কারণ রাশিয়ার সিরিয়াকে পরিত্যাগ
রাশিয়া এখন সমস্ত সামরিক মনোযোগ ইউক্রেনে কেন্দ্রীভূত করেছে এবং সেখানে সামরিক ব্যয় ২০২৫ সালে ১৪৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে, যা ২০২৪ সালে প্রায় ১১৬ বিলিয়ন ডলার থেকে প্রায় ২৫% বেশি। এই সংখ্যাগুলো বিশাল। ইউক্রেন যুদ্ধে তারা এখন স্বাস্থ্যসেবা (healthcare) ও শিক্ষা (education)-র চেয়ে বেশি খরচ করছে। এই ক্রমবর্ধমান সামরিক ব্যয় রাশিয়াকে অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য করছে। এরকমই একটি ক্ষেত্র হলো সিরিয়ায় (Syria) তাদের সহায়তা।
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের বিজয় ও আসাদের পতনের ক্ষেত্রে একটি অদ্ভুত বিষয় হলো, গত ৯ বছর ধরে সিরিয়া রাশিয়া ও ইরান-সমর্থিত হেজবোল্লাহ বাহিনীর সাহায্য পেয়ে আসছিল। এটি ছিল সিরিয়ান সরকারের পক্ষে “শান্তি” বজায় রাখার এক ধরনের সহায়তা, যার বার্ষিক খরচ আনুমানিক ৪০০-৫০০ মিলিয়ন ডলার রাশিয়ার পক্ষ থেকে। কিন্তু এখন রাশিয়া ইউক্রেনে (Ukraine) বিপুল পরিমাণ অর্থ ও জনবল বিনিয়োগ করছে, যার ফলে তাদের কাছে বাড়তি সম্পদ বা সৈন্য বাহিনী নেই যে সিরিয়ায় পাঠাবে। এর পাশাপাশি ইরান-সমর্থিত হেজবোল্লাহ বাহিনীকেও এখন ইসরায়েলের (Israel) সাথে উদ্ভূত উত্তেজনার কারণে লেবাননে (Lebanon) নিজেদের প্রতিরক্ষায় মনোযোগ দিতে হচ্ছে।
একসময় সিরিয়ায় রাশিয়ান স্বার্থ রক্ষায় ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ (Wagner Group) নিয়োজিত ছিল। কিন্তু ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন (Yevgeny Prigozhin)-এর মৃত্যুর পর (যিনি আগে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে বিদ্রোহের চেষ্টা করেন এবং পরে একটি বিমানের দুর্ঘটনায় নিহত হন), ওয়াগনার গ্রুপ কার্যত ভেঙে যায়। ফলে রাশিয়ার হাতে এখন আর সেই ভাড়াটে বাহিনী নেই যা তাদের সিরিয়ায় মোতায়েন করার সুযোগ দিত।
এছাড়া মানুষজনের ঘাটতি থাকায় রাশিয়া অতিরিক্ত সৈন্য পাঠাতে পারেনি, কারণ তাদের প্রায় সব সামরিক মনোযোগ এখন ইউক্রেনে নিবিষ্ট। ফলস্বরূপ, এইচটিএস সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সহজেই প্রবেশ করে শহরগুলির নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে, আর সিরিয়ান সরকারও তাতে বাস্তবসম্মত কোনো প্রতিরোধ দেখাতে পারেনি।
ইরান ও হেজবোল্লাহর মনোযোগ এখন অন্যত্র, ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইরত অবস্থায় তারা লেবাননের সীমান্তে নিজেদের শক্তি সংহত করতে ব্যস্ত। সুতরাং সিরিয়া এখন কার্যত উন্মুক্ত মাঠে পরিণত হয় বিদ্রোহী এইচটিএসের জন্য।
গত নয় বছর বা তারও বেশি সময় ধরে রাশিয়া ও ইরান সিরিয়ায় বিরাট প্রভাব বিস্তার করে আসছিল। তারা আসাদ সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে পশ্চিমা-সমর্থিত বিদ্রোহীদের ঠেকিয়েছিল। কিন্তু এখন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে অতিব্যস্ত এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পদে সংকটাপন্ন। ইরান ও হেজবোল্লাহ নিজেদের ইসরায়েল সংলগ্ন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। ফলে সিরিয়া কার্যত নিষ্করণ অবস্থায় পড়েছে।
এই সুযোগে এইচটিএস নিজের কর্তৃত্ব বাড়ানোর সুযোগ পায়। তারা কোনো প্রতিরোধের সম্মুখীন না হয়েই একে একে আলেপ্পো, হামা, হোমস ও দামেস্ক দখল করে নেয়। এটি দেখিয়ে দিল যে, বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ভূরাজনীতি কতটা আন্তঃসংযুক্ত। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুধু এই দুই দেশকে নয়, বরং পরোক্ষভাবে সিরিয়ার মতো দেশেও ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দিচ্ছে। রাশিয়া যখন আর আগের মতো অর্থ ও সৈন্য দিতে পারছে না, তখন বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আফ্রিকার (Africa) কিছু দেশেও রাশিয়া তাদের প্রভাব পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হতে পারে, কারণ রাশিয়ার রিসোর্স এখন সীমিত।
সার্বিকভাবে, রাশিয়ান অর্থনীতির এই দুরাবস্থা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সামরিক মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হওয়া বিভিন্ন স্থানে নতুন অস্থিরতার সৃষ্টি করতে পারে। অতীতে যেখানে রাশিয়া সামরিক সহায়তা দিয়ে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখত, এখন সেই সহায়তা কমে যাওয়াতে সেখানে উগ্রপন্থী গোষ্ঠী বা অন্যান্য বাহিনী শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। ফলত বিশ্বে নতুন করে সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
(রাশিয়া সম্পর্কিত সংবাদ পড়তে ক্লিক করুন এখানে)
তথ্যসূত্র
- https://www.themoscowtimes.com/2024/10/18/russias-real-estate-market-rocked-by-the-end-of-generous-mortgage-subsidies-a86738
- https://www.bloomberg.com/news/articles/2024-07-01/russia-ends-housing-mortgage-subsidy-that-stoked-a-property-boom
- https://www.intellinews.com/russia-s-mortgage-loan-applications-halved-in-july-by-end-of-subsidies-programme-337189/
- https://wavellroom.com/2024/06/20/russias-collapsing-housing-market/
- https://tass.com/economy/1701819
- https://www.intellinews.com/russia-s-central-bank-surprises-market-with-100bp-rate-hike-to-19-343316/
- https://kse.ua/wp-content/uploads/2024/08/Chartbook_August2024.pdf
- https://www.statista.com/chart/30484/forecast-for-real-gdp-growth-in-the-worlds-largest-economies/
- https://www.bloomberg.com/news/articles/2024-11-19/russian-ruble-falls-to-13-month-low-after-ukraine-missile-strike
- https://www.bofit.fi/en/monitoring/weekly/2024/vw202435_1/
- https://tradingeconomics.com/russia/currency
- https://tradingeconomics.com/russia/inflation-cpi
- https://tradingeconomics.com/russia/interest-rate
- https://www.ceicdata.com/en/indicator/russia/m2-growth
- https://www.bloomberg.com/news/articles/2024-10-15/russia-is-willing-to-let-ruble-weaken-to-ease-sanctions-pressure
- https://www.bloomberg.com/news/articles/2023-08-09/ruble-weakens-toward-100-per-dollar-for-first-time-in-16-months
- https://www.gisreportsonline.com/r/a-somber-outlook-for-the-russian-economy/
- https://cepr.org/system/files/publication-files/203674-policy_insight_131_russian_economy_on_war_footing_a_new_reality_financed_by_commodity_exports.pdf
- https://mronline.org/2024/06/22/russia-overtakes-japan-to-become-the-fourth-largest-economy-in-the-world-in-ppp-terms/
- https://en.thebell.io/russian-military-spending-to-rise-rise/
- https://tradingeconomics.com/russia/inflation-cpi
- https://www.kyivpost.com/post/40513
- https://www.bloomberg.com/news/articles/2023-05-11/russia-budget-gap-hits-45-billion-exceeding-full-year-goal
- https://tradingeconomics.com/russia/interest-rate
- https://www.the-express.com/news/world-news/154764/russian-economy-on-brink-of-disaster
- https://www.express.co.uk/news/world/1976692/russia-economy-ruble-inflation-interest-rates-putin
- https://www.reuters.com/markets/rates-bonds/russian-central-bank-blames-labour-shortages-not-high-rates-investment-slowdown-2024-11-07/
- https://en.thebell.io/russias-acute-labor-shortage/
- https://kse.ua/wp-content/uploads/2024/08/Chartbook_August2024.pdf
- https://www.ft.com/content/3e2b2e63-082e-4058-ba92-dea580d4f40c
- https://www.statista.com/chart/30484/forecast-for-real-gdp-growth-in-the-worlds-largest-economies/
Leave a Reply