Table of Contents
ভূমিকা
ফরাসি অর্থনীতি এবং প্রকৃতপক্ষে ফ্রান্স (France) সামগ্রিকভাবে বর্তমানে বেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুর্বল প্রবৃদ্ধি (weak growth), ম্রিয়মাণ কর আদায় (lacklustre tax receipts), এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সরকারি খাত (one of the world’s biggest public sectors)—এসবের কারণে ফ্রান্স এখন এমন এক ঋণ সংকটে (debt crisis) জড়িয়ে পড়েছে, যা একই সঙ্গে দেশটির চলমান রাজনৈতিক সংকটের (political crisis) কারণ ও ফলাফল। এই পরিস্থিতি দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে একটি ব্যাপক ধারণার জন্ম দিয়েছে যে ফ্রান্স ও তার অর্থনীতি একপ্রকার ধ্বংসোন্মুখ। কিন্তু “প্রচলিত ধারণার মুখোশ সরিয়ে” (peak beneath the proverbial bonnet) দেখা গেলে ফরাসি অর্থনীতি আসলে যতটা খারাপ মনে হয় ততটা নয়—অন্তত শিরোনামগুলোতে যেভাবে উঠে আসছে, তার চেয়ে ভালো অবস্থা রয়েছে।
এই লেখায় ফরাসি অর্থনীতি নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হবে, এবং দেখা হবে কেন দেশটি যদি ঋণ সংকটের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে থাকলেও, তবুও আগামী কয়েক বছর সামলানোর মতো ভালো অবস্থানে রয়েছে।
ফরাসি অর্থনীতির প্রকৃত অবস্থা বোঝার পথ
প্রথম এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যে কারণে আমরা মনে করি ফরাসি অর্থনীতিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না, তা হলো ফ্রান্সের উৎপাদনশীলতা (productivity) পরিসংখ্যান প্রায়শঃই সামগ্রিক জিডিপি (GDP) ডেটার তুলনায় ভালো হলেও সেগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয় না। উৎপাদনশীলতা অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর একটি। উৎপাদনশীলতা সাধারণভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় কর্মঘণ্টা প্রতি অর্থনৈতিক আউটপুট বা জিডিপি (GDP per hour worked) হিসেবে।
জিডিপি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে পারে দুটি উপায়ে—আরও বেশি মানুষকে দেশে নিয়ে আসা বা মানুষকে আরও দীর্ঘ সময় কাজ করানো। কিন্তু এর মাধ্যমে জীবনমানের (living standards) আসল উন্নতি নিশ্চিত হয় না, যদিও নমিনাল জিডিপি (GDP) বাড়ে। এই অর্থে, জিডিপি পরিসংখ্যান বিভ্রান্তিকর হতে পারে, বিশেষত যদি সেগুলো জীবনমানের সূচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আপনার উৎপাদনশীলতা (productivity) যদি বাড়ে, তাহলে মানুষ কম ঘণ্টা কাজ করেও তাদের বর্তমান জীবনমান বজায় রাখতে পারে বা একই পরিমাণ ঘণ্টা কাজ করে আরও সম্পদশালী হতে পারে—ধরে নেওয়া যায় যে উৎপাদনশীলতা ও মজুরি (wages) মধ্যে যোগসূত্র আছে।
ফ্রান্সের উচ্চ উৎপাদনশীলতা (Productivity)
ফ্রান্সের উৎপাদনশীলতা বিশ্বের সর্বোচ্চগুলোর একটি। কিন্তু এটি সবসময় স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না, বিশেষ করে যখন আমরা জিডিপি বা মাথাপিছু জিডিপি (GDP per capita) পরিমাপ দেখি। এর একটি বড় কারণ হলো ফরাসিরা অন্য অনেক দেশের তুলনায় কম কর্মঘণ্টা কাজ করে। ২০০০ সালে চালু হওয়া ৩৫ ঘণ্টার কর্মসপ্তাহ (35 hour work week) নীতি এবং ফরাসি কর্মীদের প্রতি বছর ৩০ দিন বার্ষিক ছুটি (annual leave) দেওয়ার ফলে ফরাসিরা গড়ে প্রতি বছর মাত্র আনুমানিক ১,৫০০ ঘণ্টা কাজ করে, যেখানে ওইসিডি (OECD) গড় প্রায় ১,৭৫০ ঘণ্টা।
উদাহরণস্বরূপ, আইএমএফ (IMF) এর মাথাপিছু জিডিপি (GDP per capita) ডেটা ব্যবহার করে যদি আপনি ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য (UK) এবং যুক্তরাষ্ট্রের (US) তুলনা করেন, তাহলে দেখা যায় যে ২০শ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় জুড়ে এসব দেশ একই ধাচে এগোলেও ২০শ শতাব্দীর শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্র অনেক এগিয়ে যায়।
ক্রয়ক্ষমতার সামঞ্জস্য (Purchasing Power Parity) ও কর্মঘণ্টার সমন্বয়
কিন্তু যখন আপনি ক্রয়ক্ষমতার সামঞ্জস্য (purchasing power) হিসাব করেন—যা সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন ডলারের (US dollar) অস্বাভাবিক শক্তিশালী অবস্থানকে কিছুটা সামঞ্জস্য করে—এবং কর্মঘণ্টার সংখ্যাকে হিসাবের মধ্যে আনেন, অর্থাৎ মাথাপিছু জিডিপির বদলে উৎপাদনশীলতা (productivity) যাচাই করেন, তখন ছবিটি একেবারেই ভিন্ন হয়ে যায়।
“সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান রিফর্ম” (Centre for European Reform) এর জন স্প্রিংফোর্ড (John Springford) কর্তৃক করা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ফ্রান্সের উৎপাদনশীলতা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে চলেছে, আর যুক্তরাজ্য অনেক পিছিয়ে পড়েছে। একইভাবে, ২০২২ সালে “দ্য ইকোনমিস্ট” (The Economist) পরিচালিত এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মাথাপিছু জিডিপি দিয়ে মূল্যায়ন করলে ফ্রান্স ইউরোপীয় মানদণ্ডে (European standards) বেশ গড় পর্যায়ে অবস্থান করছে—যুক্তরাজ্য ও ইতালির (Italy) সমান সমান। কিন্তু যখন আপনি ক্রয়ক্ষমতা ও কম কর্মঘণ্টার প্রভাব বিবেচনা করেন, তখন ফরাসি অর্থনীতি অনেক ভালো দেখায়। উৎপাদনশীলতার স্তর যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে সামান্য পিছিয়ে থাকলেও খুব একটা বেশি নয়।
“দ্য ইকোনমিস্ট” এর ওই বিশ্লেষণে আরও উঠে আসে যে প্রচলিত ধারণার বিপরীতে, ২০২০ থেকে ২০২২ সময়কালে ফ্রান্সের উৎপাদনশীলতা আসলে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে।
অর্থাৎ বিষয়টা পরিষ্কার—সামগ্রিক জিডিপি ফরাসিদের “ভালো” না দেখানোর একটি কারণ তাদের কম কর্মঘণ্টা। কিন্তু যদি আমরা উৎপাদনশীলতাকেই (productivity) আসল সূচক হিসেবে ধরি—যা আসলেই ধরা উচিত—তাহলে ফরাসি অর্থনীতি হঠাৎই অনেক ভালো দেখায়।
বিনিয়োগের মাত্রা: ফ্রান্সের শক্তিশালী দ্বিতীয় কারণ (Investment Levels)
এবার দ্বিতীয় যে কারণে ফরাসি অর্থনীতি আশাতীতভাবে ভালো অবস্থায় রয়েছে তা হলো বিনিয়োগের মাত্রা (investment levels)। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক উন্নত অর্থনীতি (developed economies) কম বিনিয়োগের সমস্যায় ভুগছে। কেউ ২০০৮ সালের পর কম বিনিয়োগের ধারাবাহিক প্রভাবের মুখোমুখি, কেউ বা বিনিয়োগ বাড়াতেই পারছে না—বা উভয় সমস্যায় একসঙ্গে জর্জরিত।
উদাহরণস্বরূপ, জার্মানি (Germany) ২০০৮ সালের পর দুর্বল সরকারি খাতের বিনিয়োগ (public sector investment) এর প্রভাব এখন টের পাচ্ছে। অ্যাঞ্জেলা মেরকেলের (Angela Merkel) কৃচ্ছসাধনমূলক রাজনীতি (austerity politics) জার্মান অবকাঠামো (German infrastructure) ও সামরিক বাহিনী (German military) দুটোই জরুরি সংস্কারের মুখে ঠেলে দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের (UK) ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে—ওরা দুর্বল সরকারি খাতের বিনিয়োগের পাশাপাশি দুর্বল বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ (private sector investment) সমস্যায় ভুগছে। এটি যুক্তরাজ্যের উৎপাদনশীলতাকে ভীষণভাবে কমিয়ে দিয়েছে, যার সমাধানে স্টারমার (Starmer) ও রিভস (Reeves) মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন।
বিনিয়োগ সংক্রান্ত ডেটা কিছুটা জটিল—কারণ বিনিয়োগকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তবে “ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চ” (IPPR) দ্বারা ওইসিডি (OECD) ডেটার ভিত্তিতে করা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত এক দশক বা তার বেশি সময়ে ফ্রান্সে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ (private sector investment) উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে—জিডিপির আনুমানিক ৯% থেকে বেড়ে প্রায় ১৪%-এ পৌঁছেছে।
ফলে এখন জি৭ (G7) এর মধ্যে জাপানের (Japan) পরেই ফ্রান্সের অবস্থান বেসরকারি বিনিয়োগের মাত্রায় দ্বিতীয়। এর পেছনে অন্তত কিছুটা ভূমিকা রেখেছে গত আট বছরে ম্যাক্রোঁ (Macron) সরকারের নেওয়া কিছু কাঠামোগত সংস্কার (structural reforms) —যেমন শ্রম (labour) ও কর (tax) ব্যবস্থার সংস্কার—যা ফ্রান্সকে আরও প্রতিযোগিতামূলক (competitive) এবং বিদেশি বিনিয়োগের (foreign investment) জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
একইভাবে, ফ্রান্সের সরকারি খাতের বিনিয়োগ (public sector investment) সাধারণত ইইউ গড়ের (EU average) চেয়ে ২৫% বেশি এবং যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো সমমর্যাদার অর্থনীতির চেয়ে অনেক বেশি। সমগ্র চিত্রটি এক করে দেখলে, বিশ্বব্যাংকের (World Bank) ডেটা অনুযায়ী, ফ্রান্সে বিনিয়োগ (investment) বর্তমানে জিডিপির প্রায় ২৫%-এর কাছাকাছি অবস্থান করছে। এটি জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি।
এর ফলে, উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সের অবকাঠামো (infrastructure) ভালো অবস্থায় রয়েছে, আর সামগ্রিকভাবে এটি নির্দেশ করে যে ফ্রান্সকে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য অর্থনীতির কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে না। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মতো দেশগুলোকে শক্তির রূপান্তর (energy transition) এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ (war in Ukraine) সংক্রান্ত চাহিদা পূরণে অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে পুনর্গঠিত করতে হবে।
সমস্যার দিক: তাৎক্ষণিক ও কাঠামোগত সংকট (Immediate and Structural Crisis)
এটা অবশ্যই বলার অপেক্ষা রাখে না যে ফরাসি অর্থনীতি নিখুঁত (perfect) নয়। উচ্চ উৎপাদনশীলতা (productivity) ও উচ্চ বিনিয়োগ (investment) অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিষয় হলেও, ফ্রান্সকে এখনই কিছু তাৎক্ষণিক এবং কাঠামোগত সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
তাৎক্ষণিক সংকট হলো সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে ফ্রান্সের জিডিপি (GDP) এবং এমনকি উৎপাদনশীলতা (productivity) কার্যত স্থবির হয়ে আছে। ফলে প্রত্যাশার তুলনায় কর আদায় (tax revenues) কম হচ্ছে, যা বর্তমানে আমরা যে তীব্র বাজেট সংকট (acute budget crisis) দেখছি তার মূল কারণ। এ বছর বাজেট ঘাটতি (deficit) জিডিপির ৬%-এরও বেশি হয়েছে, যেখানে পূর্বাভাস ছিল মাত্র ৪.৪%। ফরাসি সংসদ (French parliament) এই ঘাটতি কমানোর কোনো কার্যকর কর্মসূচি নিয়ে একমত হতে পারছে না।
কিন্তু এই তীব্র বাজেট সংকট এক গভীর কাঠামোগত সমস্যার (structural problem) প্রতিফলন। আর এই সমস্যাটি হচ্ছে, ফরাসি অর্থনীতির জন্য রাষ্ট্রের ব্যয় (public spending) টেকসই নয়। ফরাসি রাষ্ট্র বিশ্বের সম্ভবত সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র (the French state is probably the biggest in the world), যেখানে সরকারি ব্যয় (government spending) সাধারণত জিডিপির ৫০%-এরও বেশি হয়ে থাকে।
আইএমএফ (IMF) এর সর্বশেষ ডেটা অনুযায়ী, উদাহরণস্বরূপ, কোভিডের (COVID) আগে ফ্রান্সের সরকারি ব্যয় জিডিপির প্রায় ৫৫% ছিল, যেখানে জার্মানিতে তা ৪৯%, যুক্তরাজ্যে ৪৪% এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩৬%। একা এটি কোনও সমস্যা নয়, কিন্তু ফরাসি রাষ্ট্র এ ধরনের সরকারি ব্যয়কে করের মাধ্যমে পূরণ করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে ফ্রান্সের ঋণ-জিডিপি অনুপাত (debt to GDP ratio) প্রায় ১১২%-এ পৌঁছেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে, বর্তমান ঘাটতি দেখে মনে হচ্ছে এই অনুপাত আরও বাড়বে।
যদিও বর্তমানে ফ্রান্স হয়তো তাৎক্ষণিক তীব্র ঋণ সংকটের মুখে নেই—কারণ ফ্রান্সের ঋণগ্রহণের খরচ (borrowing costs) আপাতত স্থিতিশীল হয়েছে—কিন্তু এই কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা (structural imbalance) ঠিক করতে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কার (structural reform) প্রয়োজন। আর এটা করার জন্য একটি কর্মক্ষম, কার্যকরী রাজনৈতিক পরিবেশ (functional politics) দরকার, যা বর্তমানে বড়ই দুর্লভ।
সমাপ্তি ভাবনা
এই প্রবন্ধে আমরা দেখলাম, বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ঋণ সংকটের আলোকে ফ্রান্সের অর্থনীতি দেখতে যতটা খারাপ লাগে, আসলে তার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। ফ্রান্সের উচ্চ উৎপাদনশীলতা (high productivity) ও বিনিয়োগের উচ্চমাত্রা (high investment) আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শক্ত ভিত্তি দেবে। তবে কাঠামোগত সংস্কার (structural reform) ও রাষ্ট্রীয় ব্যয়-আয় সামঞ্জস্যপূর্ণ করা ফ্রান্সের জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে, যা কার্যকর রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সম্ভব নয়।
তথ্যসূত্র
1 – https://www.ft.com/content/f9920a26-6750-11e9-9adc-98bf1d35a056
2 – https://www.imf.org/external/datamapper/NGDPDPC@WEO/USA/GBR/FRA
3 – https://www.cer.eu/sites/default/files/pbrief_JS_france_29.11.24.pdf
4 – https://www.economist.com/graphic-detail/2023/10/04/productivity-has-grown-faster-in-western-europe-than-in-america
5 – https://www.ippr.org/articles/now-is-the-time-to-confront-uk-s-investment-phobia
6 – https://www.strategie.gouv.fr/english-articles/20172027-improving-investment-foster-growth-critical-actions
7 – https://ifs.org.uk/data-items/investment-public-and-private-percentage-gdp-g7-countries
8 – https://www.imf.org/external/datamapper/exp@FPP/USA/FRA/JPN/GBR/SWE/ESP/ITA/ZAF/IND
Leave a Reply