গবেষকগণ পাখিদের “রেডনেস” জিন সনাক্ত করেছেন

MID FINCHES.png

বেশিরভাগ পাখির ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তারা যত বেশি লাল হবে তাদের জন্য ততই ভাল। পালকে, ঠোঁটে ও এমনকি নগ্ন ত্বকে উজ্জ্বল লাল বর্ণ পুরুষকে সঙ্গীকে আকর্ষণ করতে এবং প্রতিদ্বন্দীকে তাড়ানোর জন্য সাহায্য করে। কারেন্ট বায়োওজি জার্নালে সম্প্রতি দুটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণাগুলোতে গবেষকদের দলগুলো জিনের একটি ক্লাস্টার আবিষ্কার করেছেন  যা একটি এনজাইম তৈরি করে। এই এনজাইমটি রেড সিসকিন ও জেবরা ফিঞ্চ পাখিদ্বয়ের গৃহীত খাদ্য থেকে তৈরি হওয়া হলুদ পিগমেন্টকে লাল বর্ণের পিগমেন্টে পরিবর্তিত করে। এই জিনগুলো কালার ভিশন (বিভিন্ন রং দেখার ক্ষমতা) এবং ডিটক্সিফিকেশনেও  (বিষ নিষ্ক্রীয় করার ক্ষমতা) ভূমিকা রাখে।

ওয়াশিংটন ইউনিভারসিটি অব মেডিসিন এর জোসেফ করবো বলেন, “আমরা কেউ জানতাম না যে কেন লাল বর্ণের পাখিগুলো প্রজননগতভাবে অধিক সফল হয়। পাখিরা তাদের আহার থেকে (মূলত বীজ এবং ফল) হলুদ বর্ণের পিগমেন্ট ক্যারোটিনয়েড তৈরি করে। কিন্তু এই ক্যারোটিনয়েড থেকে কি করে তারা লাল বর্ণের পিগমেন্ট কিটোক্যারোটিনয়েড প্রস্তুত করে তা আমাদের অজানা ছিল”।  তাই করবোর দল অবার্ন ইউনিভারসিটির জিওফ্রে হিল এবং ইউনিভারসিটি ডো পোর্টো এর মিগুয়েল কারনেইরো এর সাথে মিলে রেড সিসকিন (Spinus cucullata), ইওলো ক্যানারি (Serinus canaria), এবং এদের এক শতক পুরোনো হাইব্রিড “রেড ফ্যাক্টর” ক্যানারি এর জিনোম সিকোয়েন্স করেন। এরপর এদের জিনোমগুলোকে কমপেয়ার করে তারা আবিষ্কার করেন যে, এই পাখিদের মধ্যে থাকা CYP2J19 নামক জিনটি এদের বর্ণ পরিবর্তনের জন্য দায়ী। এই জিনটি সাইটোক্রোম P450 এনজাইম নামে একটি এনজাইম তৈরি করে যা পাখিদের মাঝে এই পরিবর্তন ঘটায়। এই জিনটির নাম দেয়া হয়েছে “রেডনেস জিন”। লালবর্ণের পাখিগুলোতে এই জিনটি তাদের ত্বক, পালক, যকৃৎ, এবং চোখে অনেক বেশি হারে প্রকাশিত হয় যেকারণে এদের বর্ণ লাল হয়। অন্যদিকে হলুদ রং এর পাখিদের ক্ষেত্রে এই জিনটি কেবল চোখে প্রকাশিত হয় বলে তাদের ক্ষেত্রে কেবল চোখের রং-ই লাল হয়। করবো বলেন, “শিকারি পাখিদের ক্ষেত্রে এই জিনটি তাদের চোখের রেটিনায় লাল পিগমেন্ট তৈরি করে তাদের কালার ভিশন বা বর্ণ চিনতে পারার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যাই হোক, কেবল লাল পালকের পাখিরাই এই জিনটি প্রকাশ করতে সক্ষম হলেও নতুন আবিষ্কারটি বলছে, প্রায় সকল পাখির মধ্যেই এই জিনটির প্রকাশের সুপ্ত ক্ষমতা আছে। কিন্তু এই ক্ষমতাটি পাবার জন্য অর্থাৎ চোখের রেটিনা ছাড়াও শরীরের অন্যান্য অংশকে লাল বানানোর জন্য তাদেরকে অবশ্যই বিবর্তিত হতে হবে ”।

ইউনিভারসিটি অব কেম্ব্রিজ এর নিকোলাস মান্ডি এবং ইউনিভারসিটি অব গথেনবার্গ এর স্টাফান এন্ডারসন দ্বারা পরিচালিত আরেকটি দলও সাইটোক্রোম P450 জিন ক্লাস্টার খুঁজে পেয়েছেন। তারা জেব্রা ফিঞ্চ পাখির (Taeniopygia guttata) সাথে মিউট্যান্ট জেব্রা ফিঞ্চ পাখির জিনোমের তুলনা করেন। জেব্রা ফিঞ্চ পাখির ঠোঁট লাল বর্ণের। কিন্তু এর মিউট্যান্ট, মিউট্যান্ট জেব্রা ফিঞ্চ এর ঠোঁট হলুদ বর্ণের। তারা দেখেন, সাইটোক্রোম পি৪৫০ এনজাইম জিনের সাথে জড়িত জিনের মালটিপল মিউটেশনের কারণে তাদের বেলায় ঠোঁটে লাল বর্ণ প্রকাশিত হয় নি। ফলে তাদের ঠোঁট হলুদ হয়ে গেছে।

আবার দেখা গেছে, এই সাইটোক্রোম পি ৪৫০ এনজাইমটি লিভার বা যকৃৎ এ টক্সিক বা বিষাক্ত পদার্থগুলো মেটাবলিজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অর্থ হচ্ছে এই “রেডনেস জিন”টি পাখিদের কোয়ালিটিও বৃদ্ধি করে, যেকারণে লাল রঙ পাখিসমাজে ভাল কোয়ালিটির একটি চিহ্ন হয়ে যায়। আর এই বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্যটি ভাল জিনের একটি নির্দেশক হয়ে ওঠায় নারী পাখিরাও সঙ্গী নির্বাচনের সময় তাদেরকে পছন্দ করে।

http://www.cell.com/current-biology/abstract/S0960-9822(16)30401-8

http://www.cell.com/current-biology/abstract/S0960-9822(16)30400-6

– বুনোস্টেগস

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.