পরিবেশ এবং যৌন অভিমুখিতা

ভূমিকা

যৌন অভিমুখিতায় পরিবেশের প্রভাব কী সেই আলোচনা শুরু করার আগে যৌন অভিমুখিতা কী আর সেটায় পরিবেশের প্রভাব বলতে কী বোঝায় সেটা নিয়ে কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড আলোচনা করে নেয়াই লাগে। যৌন অভিমুখিতা দিয়েই শুরু করা যাক।

যৌন অভিমুখিতা (Sexual Orientation) কী?

যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) হলো একটি ব্যক্তির দীর্ঘস্থায়ী রোমান্টিক আকর্ষণ (romantic attraction) বা যৌন আকর্ষণের (sexual attraction) ধারা, যে আকর্ষণ বিপরীত লিঙ্গ বা যৌনতা (sex or gender), একই লিঙ্গ বা যৌনতা, অথবা উভয় লিঙ্গ বা একাধিক লিঙ্গের প্রতি হতে পারে। মানে কোন ব্যক্তি কোন লিঙ্গের প্রতি রোমান্টিক বা যৌন আকর্ষণ বোধ করে সেটাই তার যৌন অভিমুখিতা। এই ধারা সাধারণত হেটারোসেক্সুয়ালিটি (heterosexuality), হোমোসেক্সুয়ালিটি (homosexuality), এবং বাইসেক্সুয়ালিটি (bisexuality) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি, এসেক্সুয়ালিটি (asexuality), যেখানে অন্যদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভূত হয় না, কখনও কখনও এটি চতুর্থ একটি শ্রেণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এই শ্রেণীগুলো যৌন পরিচয় (sexual identity) এবং পরিভাষার (terminology) আরো সূক্ষ্ম দিক নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ প্যানসেক্সুয়াল (pansexual) বা পলিসেক্সুয়াল (polysexual) শব্দ ব্যবহার করতে পারে, আবার কেউ কোনো লেবেল ব্যবহার নাও করতে পারে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (American Psychological Association) মতে, যৌন অভিমুখিতা “কেবল আকর্ষণ, সংশ্লিষ্ট আচরণ, এবং সেই আকর্ষণ ভাগাভাগি করা সম্প্রদায়ের সদস্যত্বের ভিত্তিতে একজনের পরিচয়কেও বোঝায়।”

বৈজ্ঞানিক আচরণবিদ্যার (behavioral science) ক্ষেত্রে যৌন অভিমুখিতাকে বর্ণনার জন্য জেন্ডার বাইনারি (gender binary) ধারণার বিকল্প হিসেবে অ্যান্ড্রোফিলিয়া (androphilia) এবং গাইনোফিলিয়া (gynephilia) শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়। অ্যান্ড্রোফিলিয়া (androphilia) পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের প্রতি যৌন আকর্ষণকে বোঝায় এবং গাইনোফিলিয়া (gynephilia) নারীত্বের প্রতি যৌন আকর্ষণকে নির্দেশ করে।

যৌন পছন্দ (sexual preference) এবং যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) পরিভাষাগুলো প্রায় একই অর্থে ব্যবহৃত হয়, তবে মনস্তাত্ত্বিক গবেষণায় সাধারণত এদের পার্থক্য করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন বাইসেক্সুয়াল ব্যক্তি এক লিঙ্গের প্রতি অন্য লিঙ্গের তুলনায় বেশি যৌন পছন্দ করতে পারে। তবে, যৌন পছন্দ (sexual preference) কিছুটা স্বেচ্ছাচয়িত ভাবনা নির্দেশ করতে পারে, যেখানে যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) সাধারণত পছন্দ নয় বলে মনে করা হয়।

যৌন অভিমুখিতার কারণ নিয়ে এখনো একক কোনো তত্ত্ব ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেনি, তবে বিজ্ঞানীরা সাধারণত জৈবিক তত্ত্বগুলোর (biological theories) পক্ষে। যৌন অভিমুখিতার ক্ষেত্রে সামাজিক কারণগুলোর তুলনায় জৈবিক কারণগুলোর পক্ষে অধিক প্রমাণ রয়েছে, বিশেষত পুরুষদের ক্ষেত্রে। একটি প্রধান তত্ত্ব হলো গর্ভকালীন পরিবেশ (prenatal environment), যেখানে হরমোনের প্রভাব ভ্রূণের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। কোনো গবেষণাই দেখায়নি যে প্যারেন্টিং বা শৈশবকালীন অভিজ্ঞতা যৌন অভিমুখিতার বিকাশে ভূমিকা রাখে।

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বেশিরভাগ মানুষ হেটারোসেক্সুয়াল (heterosexual) হলেও, একটি ক্ষুদ্র অংশ হোমোসেক্সুয়াল (homosexual) বা বাইসেক্সুয়াল (bisexual) হিসেবে পরিচিত। একজনের যৌন অভিমুখিতা একটি ধারাবাহিকতার (continuum) মধ্যে থাকতে পারে, যেখানে এক প্রান্তে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি এবং অন্য প্রান্তে একই লিঙ্গের প্রতি একচেটিয়া আকর্ষণ দেখা যায়।

যৌন অভিমুখিতা প্রধানত জীববিজ্ঞান (biology), নৃবিজ্ঞান (anthropology), এবং মনস্তত্ত্বের (psychology) আওতায় অধ্যয়ন করা হয়। তবে এটি সমাজবিজ্ঞান (sociology), ইতিহাস (history) — যার মধ্যে সামাজিক নির্মাণ তত্ত্ব (social constructionist perspectives) অন্তর্ভুক্ত, এবং আইনতেও (law) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

পরিবেশের প্রভাব

তো উপরেই বলা হলো যে বিজ্ঞানীরা যৌন অভিমুখিতার ক্ষেত্রে মূলত বায়োলজিকাল প্রভাবে বেশি গুরুত্ব দেয়, পরিবেশগত প্রভাবের ক্ষেত্রে কম কেননা পরিবেশগত প্রভাবের পক্ষে প্রমাণ কম।

পরিবেশ এবং যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) এর মধ্যে সম্পর্ক একটি গবেষণার বিষয়। বিজ্ঞানীরা যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) এর সঠিক কারণ জানেন না, কিন্তু তাদের তত্ত্ব অনুযায়ী এটি জিনগত (genetic), হরমোনগত (hormonal) এবং পরিবেশগত প্রভাবের একটি জটিল আন্তঃক্রিয়ার ফল। তারা যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) কে কোনো পছন্দ হিসেবে দেখেন না।

জেনেটিক্স (genetics) এর ক্ষেত্রে, যেকোনো অ-জিনগত কারণকেই পরিবেশগত প্রভাব (environmental influence) হিসেবে ধরা হয়। তবে, পরিবেশগত প্রভাব (environmental influence) মানে এই নয় যে সামাজিক পরিবেশ যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) এর বিকাশে প্রভাব ফেলে বা অবদান রাখে। একটি বিশাল অ-সামাজিক পরিবেশ রয়েছে যা অ-জিনগত তবুও জৈবিক, যেমন জন্মপূর্ব বিকাশ (prenatal development) (মানে মায়ের পেটে থাকার সময় শিশুর বিকাশ), যা সম্ভবত যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) গঠনে সাহায্য করে। যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) এর গবেষণায়, কিছু গবেষক পরিবেশগত প্রভাবকে হরমোনগত প্রভাব (hormonal influences) থেকে আলাদা করে দেখেন, যেখানে অন্য গবেষকরা জন্মপূর্ব হরমোন (prenatal hormones) এর মতো জৈবিক প্রভাবকেও পরিবেশগত প্রভাবের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন।

এমন কোনো জোরালো প্রমাণ নেই যা থেকে বলা যায় শৈশবের প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা (early childhood experiences), অভিভাবকত্ব (parenting), যৌন নির্যাতন (sexual abuse), বা অন্য কোনো প্রতিকূল জীবনযাত্রা যৌন অভিমুখিতাকে (sexual orientation) প্রভাবিত করে। জন্ম-পরবর্তী সামাজিক পরিবেশের (post-natal social environment) প্রভাবের অনুমানগুলি দুর্বল, বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে। পিতামাতার মনোভাব শিশুদের প্রকাশ্যে তাদের যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) এর সাথে পরিচিত হতে প্রভাবিত করতে পারে। এমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রমাণ নেই যা থেকে বলা যায় যে, Parenting বা শৈশবের প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) কে প্রভাবিত করে, তবে গবেষণা শৈশবের লিঙ্গ অসংগতি (childhood gender nonconformity) এবং সমকামিতাকে (homosexuality) সম্পর্কিত করেছে। যদিও এটি পরে কুসংস্কার এবং ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে পাওয়া গেছে, একসময় মনে করা হতো যে সমকামিতা (homosexuality) শৈশবের অভিজ্ঞতা এবং সমস্যাযুক্ত সম্পর্ক (শৈশবের যৌন নির্যাতন সহ) থেকে সৃষ্ট ত্রুটিপূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের ফল। এই ধরনের অনুমানগুলি “রাজনৈতিক, নৈতিক এবং ধর্মতাত্ত্বিক ভিত্তির সাথে যুক্ত হয়েছে যার কারণে এটি বিশ্বাস করতে চাওয়া হয় যে এটি হতে পারে”।

যৌন অভিমুখিতা (Sexual orientation) এবং যৌন অভিমুখিতা পরিচয়ের মধ্যে তুলনা (sexual orientation identity)

প্রায়শই, যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) এবং যৌন অভিমুখিতা পরিচয়কে (sexual orientation identity) আলাদা করে দেখা হয় না, যা সঠিকভাবে যৌন পরিচিতি মূল্যায়ন এবং যৌন অভিমুখিতা পরিবর্তন করা সম্ভব কি না তা প্রভাবিত করতে পারে। যৌন অভিমুখিতা পরিচয় একজন ব্যক্তির জীবনকালে পরিবর্তিত হতে পারে এবং জৈবিক লিঙ্গ (biological sex), যৌন আচরণ (sexual behavior) অথবা প্রকৃত যৌন অভিমুখিতার (actual sexual orientation) সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতেও পারে, নাও হতে পারে। যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) স্থিতিশীল এবং বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে কিছু গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে কিছু মানুষ তাদের যৌন অভিমুখিতায় (sexual orientation) পরিবর্তন অনুভব করতে পারে এবং এটি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (American Psychological Association) যৌন অভিমুখিতা (একটি স্থায়ী আকর্ষণ) এবং যৌন অভিমুখিতা পরিচয়ের (যা একজন ব্যক্তির জীবনের যেকোনো সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে) মধ্যে পার্থক্য করে। বিজ্ঞানী এবং মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদাররা সাধারণত বিশ্বাস করেন না যে যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) একটি পছন্দ।

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (American Psychological Association) বলে যে “যৌন অভিমুখিতা এমন একটি পছন্দ নয় যা ইচ্ছামত পরিবর্তন করা যায় এবং যৌন অভিমুখিতা সম্ভবত পরিবেশগত (environmental), জ্ঞানীয় (cognitive) এবং জৈবিক (biological) কারণগুলোর একটি জটিল আন্তঃক্রিয়ার ফল … অল্প বয়সে গঠিত হয় … [এবং প্রমাণ ইঙ্গিত দেয়] জিনগত (genetic) বা জন্মগত হরমোনগত (inborn hormonal) কারণসহ জৈবিক কারণগুলো একজন ব্যক্তির যৌনতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে”। তারা বলেন যে “সাইকোথেরাপি (psychotherapy), সাপোর্ট গ্রুপ (support group) এবং জীবনের বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে যৌন অভিমুখিতা নয় বরং যৌন অভিমুখিতা পরিচিতি পরিবর্তিত হতে দেখা যায়”। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (American Psychiatric Association) বলে যে ব্যক্তিরা “তাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সচেতন হতে পারে যে তারা বিষমকামী (heterosexual), সমকামী (gay), লেসবিয়ান (lesbian) বা উভকামী (bisexual)”। এবং তারা “যেকোনো মনোরোগ চিকিৎসা, যেমন ‘রিপারেটিভ’ (reparative) বা ‘কনভার্সন’ থেরাপি (conversion therapy), যা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি যে সমকামিতা নিজেই একটি মানসিক ব্যাধি অথবা রোগীর তার সমকামী অভিমুখিতা পরিবর্তন করা উচিত এমন পূর্বানুমানের উপর ভিত্তি করে তৈরি, তার বিরোধিতা করে।” তবে তারা গে অ্যাফার্মেটিভ সাইকোথেরাপিকে (gay affirmative psychotherapy) উৎসাহিত করে।

উল্লেখ্য, গে অ্যাফার্মেটিভ সাইকোথেরাপি (Gay affirmative psychotherapy) হলো বিষমকামী (heterosexual) নন এমন ব্যক্তিদের জন্য, বিশেষ করে গে (gay) এবং লেসবিয়ান (lesbian) ক্লায়েন্টদের জন্য এক ধরণের সাইকোথেরাপি (psychotherapy), যা তাদের যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) সম্পর্কে স্বকীয়তা (authenticity) এবং আত্ম-স্বীকৃতির (self-acceptance) দিকে কাজ করার ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের স্বস্তির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, এবং তাদের বিষমকামীতে “পরিবর্তন” করার বা সমলিঙ্গের “ইচ্ছা এবং আচরণ” “নির্মূল বা হ্রাস” করার চেষ্টা করে না। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (American Psychological Association) বা APA গে অ্যাফার্মেটিভ সাইকোথেরাপির জন্য গাইডলাইন ও উপকরণ সরবরাহ করে। অ্যাফার্মেটিভ সাইকোথেরাপি (Affirmative psychotherapy) নিশ্চিত করে যে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের মতানুসারে সমকামিতা (homosexuality) বা উভকামিতা (bisexuality) কোনো মানসিক ব্যাধি নয়। প্রকৃতপক্ষে, গে (gay) পরিচয়কে গ্রহণ এবং সমর্থন করা অন্যান্য মানসিক অসুস্থতা (mental illnesses) বা মাদক দ্রব্য অপব্যবহার (substance abuse) থেকে পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। যে ক্লায়েন্টদের ধর্মীয় বিশ্বাস সমকামী আচরণের বিরুদ্ধে শিক্ষা দেয় বলে ব্যাখ্যা করা হয় তাদের সম্ভবত তাদের সম্ভাব্য পরস্পরবিরোধী ধর্মীয় এবং যৌন সত্তাকে একীভূত করার জন্য অন্য কোনো পদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে।

প্রসবপূর্ব পরিবেশ (Prenatal environment)

ভ্রূণের বিকাশের উপর হরমোনের প্রভাব যৌন অভিমুখিতার (sexual orientation) বিকাশের সবচেয়ে প্রভাবশালী কার্যকারণ অনুমান। সহজ ভাষায়, একজন ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যক্তি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থাতেই শুরু হয়। পুরুষদের মধ্যে Y-ক্রোমোজোমের উপস্থিতি অণ্ডকোষের (testes) বিকাশ ঘটায়, যা টেস্টোস্টেরন (testosterone) নিঃসরণ করে, প্রধান অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টর-অ্যাক্টিভেটিং হরমোন (androgen receptor-activating hormone), যা ভ্রূণ এবং ভ্রূণের মস্তিষ্ককে পুরুষালি করে তোলে। এই পুরুষালি প্রভাব পুরুষদের পুরুষ সাধারণ মস্তিষ্কের কাঠামোর দিকে ঠেলে দেয় এবং বেশিরভাগ সময়, মহিলাদের প্রতি আকর্ষণের দিকে নিয়ে যায়। এমন ধারণা করা হয়েছে যে সমকামী পুরুষরা মস্তিষ্কের মূল অঞ্চলে কম মাত্রার টেস্টোস্টেরনের সংস্পর্শে আসতে পারে, অথবা এর পুরুষালি প্রভাবের প্রতি বিভিন্ন মাত্রার গ্রহণক্ষমতা থাকতে পারে, অথবা সংকটকালে ওঠানামা অনুভব করতে পারে। মহিলাদের মধ্যে, এমন ধারণা করা হয় যে মূল অঞ্চলে উচ্চ মাত্রার টেস্টোস্টেরনের সংস্পর্শ সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এর সমর্থনে ডান হাতের আঙুলের অনুপাতের (finger digit ratio) গবেষণা রয়েছে, যা প্রসবপূর্ব টেস্টোস্টেরন এক্সপোজারের একটি চিহ্নিতকারী (marker) বলে মনে করা হয় (তবে পরবর্তী গবেষণা আঙুলের অনুপাতকে চিহ্নিতকারী হিসেবে ব্যবহারের সমালোচক)। দেখা গেছে যে লেসবিয়ানদের গড়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পুরুষালি আঙুলের অনুপাত রয়েছে, এমন একটি আবিষ্কার যা বিভিন্ন সংস্কৃতিতে গবেষণায় বহুবার পুনরাবৃত্তি হয়েছে, কিন্তু কখনও কখনও বিপরীতও হয়েছে, যেমন যখন জাতিগত বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। নৈতিক কারণে সরাসরি প্রভাব পরিমাপ করা কঠিন হলেও, প্রাণীদের উপর করা পরীক্ষা যেখানে বিজ্ঞানীরা গর্ভাবস্থায় সেক্স হরমোনের (sex hormones) সংস্পর্শকে পরিবর্তন করেন, তা নারী প্রাণীদের মধ্যে আজীবন পুরুষ-সাধারণ আচরণ এবং মাউন্টিং (mounting) এবং পুরুষ প্রাণীদের মধ্যে মহিলা-সাধারণ আচরণ সৃষ্টি করতে পারে।

ভ্রূণের বিকাশের সময় মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (maternal immune responses) পুরুষ সমকামিতা (male homosexuality) এবং উভকামিতা (bisexuality) সৃষ্টি করে বলে জোরালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৯০ এর দশক থেকে গবেষণা দেখিয়েছে যে একজন মহিলার যত বেশি ছেলে সন্তান থাকে, তত বেশি সম্ভাবনা থাকে যে পরবর্তী ছেলেরা সমকামী হবে। গর্ভাবস্থায়, পুরুষের কোষ মায়ের রক্ত ​​​​প্রবাহে প্রবেশ করে, যা তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাছে বহিরাগত। প্রতিক্রিয়ায়, সেগুলিকে নিরপেক্ষ করার জন্য অ্যান্টিবডি (antibodies) তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডিগুলি তখন ভবিষ্যতের পুরুষ ভ্রূণের উপর নির্গত হয় এবং Y-লিঙ্কড অ্যান্টিজেনগুলিকে (Y-linked antigens), যেগুলো মস্তিষ্কের পুরুষালিকরণে ভূমিকা রাখে সেগুলোকে দমন করতে পারে। এর ফলে মস্তিষ্কের সেই অংশগুলিকে নারী-সাধারণ অবস্থানে রাখে অথবা পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট করে। একজন মায়ের যত বেশি ছেলে থাকবে এই অ্যান্টিবডিগুলির মাত্রা তত বাড়বে, এইভাবে পরিলক্ষিত ফ্র্যাটারনাল বার্থ অর্ডার ইফেক্ট (fraternal birth order effect) তৈরি হবে। এই প্রভাবকে সমর্থন করার জন্য জৈব রাসায়নিক প্রমাণ ২০১৭ সালে একটি ল্যাব গবেষণায় নিশ্চিত করা হয়েছিল, যেখানে দেখা গেছে যে সমকামী পুত্রযুক্ত মায়েদের, বিশেষ করে যাদের বড় ভাই আছে, বিষমকামী পুত্রযুক্ত মায়েদের তুলনায় NLGN4Y Y-প্রোটিনের (NLGN4Y Y-protein) প্রতি অ্যান্টিবডির মাত্রা বেশি ছিল। জে. মাইকেল বেইলি (J. Michael Bailey) মায়ের রোগ প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়াকে পুরুষ সমকামিতার “কারণ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অনুমান করা হয় যে এই প্রভাব ১৫-২৯% সমকামী পুরুষের জন্য দায়ী, যেখানে অন্যান্য সমকামী এবং উভকামী পুরুষদের যৌন অভিমুখিতা জিনগত (genetic) এবং হরমোনগত (hormonal) মিথস্ক্রিয়ার কারণে বলে মনে করা হয়।

সামাজিকীকরণ তত্ত্ব (Socialization theories) ১৯০০ সালে প্রভাবশালী ছিল। এটি এই ধারণার পক্ষে ছিল যে শিশুরা “অবিভক্ত” হয়ে জন্মায় এবং লিঙ্গ ভূমিকা (gender roles) এবং যৌন অভিমুখিতায় (sexual orientation) সামাজিকীকরণ হয়। এর ফলে চিকিৎসা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় যেখানে নবজাতক এবং শিশু ছেলেদের খৎনার মতো দুর্ঘটনার পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেয়েতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এই পুরুষদের তখন ছেলেরা না বলে মহিলা হিসেবে প্রতিপালন করা হয়েছিল, যা প্রত্যাশার বিপরীতে, তাদের মেয়েলি বা পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট করেনি। প্রকাশিত সমস্ত ক্ষেত্রে যৌন অভিমুখিতা প্রদান করে নারীদের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হতে দেখা গেছে। এই পরীক্ষাগুলির ব্যর্থতা প্রমাণ করে যে সামাজিকীকরণ প্রভাব পুরুষদের মধ্যে মেয়েলি ধরণের আচরণ সৃষ্টি করে না, বা তাদের পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট করে না এবং জন্মের আগে ভ্রূণের মস্তিষ্কের উপর হরমোনের সাংগঠনিক প্রভাব স্থায়ী প্রভাব ফেলে। এগুলি ‘প্রকৃতি’র ইঙ্গিত, লালনপালনের নয়, অন্তত পুরুষ যৌন অভিমুখিতার ক্ষেত্রে।

প্রিওপটিক এলাকার যৌন দ্বিরূপী নিউক্লিয়াস (The sexually dimorphic nucleus of the preoptic area – SDN-POA) মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল যা মানুষ এবং বেশ কয়েকটি স্তন্যপায়ী প্রাণী (যেমন, ভেড়া/পুরুষ ভেড়া, ইঁদুর) এর পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে ভিন্ন হয় এবং হরমোন এক্সপোজারের লিঙ্গ পার্থক্যের কারণে ঘটে। INAH-3 অঞ্চলটি মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বড় এবং এটি যৌন আচরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বলে মনে করা হয়। ব্যবচ্ছেদ গবেষণায় দেখা গেছে যে বিষমকামী পুরুষদের তুলনায় সমকামী পুরুষদের INAH-3 উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট ছিল, যা নারী-সাধারণ দিকে (female typical direction) স্থানান্তরিত। এটি স্নায়ুবিজ্ঞানী সাইমন লেভে (Simon LeVay) প্রথম প্রদর্শন করেছিলেন এবং যা পুনরাবৃত্তি হয়েছে। তবে তহবিল এবং মস্তিষ্কের নমুনার অভাবে ব্যবচ্ছেদ গবেষণা বিরল।

গৃহপালিত ভেড়ার দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা গেছে যে ৬-৮% পুরুষ ভেড়ার জীবনভর সমকামী পছন্দ থাকে। পুরুষ ভেড়ার মস্তিষ্কের ব্যবচ্ছেদ করে মানুষের SDN এর সমতুল্য মস্তিষ্কের অঞ্চলে, ভেড়ার যৌন দ্বিরূপী নিউক্লিয়াস (ovine sexually dimorphic nucleus – oSDN) এ বিষমকামী অভিমুখী পুরুষ ভেড়ার তুলনায় সমকামী অভিমুখী পুরুষ ভেড়াদের মধ্যে অনুরূপ একটি ছোট (মেয়েলি) গঠন পাওয়া গেছে। ভেড়ার oSDN এর আকার প্রসবোত্তর নয়, বরং গর্ভে তৈরি হয় বলেও প্রমাণিত হয়েছে, যা যৌন আকর্ষণের জন্য মস্তিষ্কের পুরুষালিকরণে প্রসবপূর্ব হরমোনের ভূমিকা তুলে ধরে।

মানুষের অন্যান্য গবেষণায় মস্তিষ্কের ইমেজিং প্রযুক্তির উপর নির্ভর করা হয়েছে, যেমন ইভাঙ্কা সাভিক (Ivanka Savic) এর নেতৃত্বে গবেষণা যা মস্তিষ্কের গোলার্ধের তুলনা করেছে। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে বিষমকামী পুরুষদের ডান গোলার্ধ বাম দিকের চেয়ে ২% বড়, লেভে এটিকে একটি পরিমিত কিন্তু “অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। বিষমকামী মহিলাদের মধ্যে, দুটি গোলার্ধ একই আকারের ছিল। সমকামী পুরুষদের মধ্যে, দুটি গোলার্ধও একই আকারের ছিল, অথবা লিঙ্গ অস্বাভাবিক ছিল, যেখানে লেসবিয়ানদের মধ্যে, ডান গোলার্ধ বাম দিকের চেয়ে সামান্য বড় ছিল, যা পুরুষ দিকে একটি ছোট স্থানান্তর নির্দেশ করে।

বিবর্তনীয় জিনতত্ত্ববিদ উইলিয়াম আর. রাইস (William R. Rice) কর্তৃক প্রস্তাবিত একটি মডেল যুক্তি দেয় যে টেস্টোস্টেরন সংবেদনশীলতা বা অসংবেদনশীলতার একটি ভুলভাবে প্রকাশিত এপিজেনেটিক মোডিফায়ার (epigenetic modifier)। আর এই এপিজেনেটিক মোডিফায়ার মস্তিষ্কের বিকাশকে প্রভাবিত করে তা সমকামিতা ব্যাখ্যা করতে পারে এবং যমজ অসঙ্গতি সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। রাইস এবং অন্যান্যরা প্রস্তাব করেন যে এই এপিমার্কগুলি (epimarks) সাধারণত যৌন বিকাশকে প্রবাহিত করে, জনসংখ্যার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্টারসেক্স (intersex) পরিস্থিতি প্রতিরোধ করে, কিন্তু কখনও কখনও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মুছে ফেলতে ব্যর্থ হয় এবং বিপরীত যৌন পছন্দ সৃষ্টি করে। বিবর্তনীয় যুক্তিসঙ্গততার ভিত্তিতে, গ্যাভরিলেটস, ফ্রাইবার্গ এবং রাইস যুক্তি দেন যে একচেটিয়া সমকামী অভিমুখিতার সমস্ত প্রক্রিয়া সম্ভবত তাদের এপিজেনেটিক মডেলে ফিরে যায়। বর্তমান স্টেম সেল প্রযুক্তি (stem cell technology) দিয়ে এই অনুমান পরীক্ষা করা সম্ভব।

প্রমাণ আছে যে NLGN4X এবং NLGN4Y এর মিউটেশন (mutations) অটিজম স্পেকট্রাম কন্ডিশনের (autism spectrum conditions) সাথে যুক্ত এবং এই ধরনের অবস্থা অ্যাসেক্সুয়াল (asexual) লোকেদের মধ্যে বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং, NLGN4X/Y অন্যদের সাথে সামাজিক সংযোগ তৈরি সহ, সাধারণভাবে, স্নায়বিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে, যার মধ্যে যৌন/রোমান্টিক সংযোগও রয়েছে।

শৈশবের লিঙ্গ অসংগতি (Childhood Gender Nonconformity)

গবেষকরা দেখেছেন যে শৈশবের লিঙ্গ অসংগতি (Childhood Gender Nonconformity) (CGN) প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে সমকামিতার সবচেয়ে বড় পূর্বাভাসক। সমকামী পুরুষরা প্রায়শই মেয়েলি ছেলে হওয়ার কথা জানান, এবং সমকামী নারীরা প্রায়শই পুরুষালি মেয়ে হওয়ার কথা জানান। পুরুষদের ক্ষেত্রে, CGN প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে যৌন পছন্দের একটি শক্তিশালী পূর্বাভাসক, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে এই সম্পর্কটি তেমন ভালোভাবে বোঝা যায় না। জন্মগত অ্যাড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া (Congenital Adrenal Hyperplasia) (CAH) আক্রান্ত নারীরা (যা সেক্স স্টেরয়েড (sex steroids) উৎপাদনে প্রভাব ফেলে) পুরুষদের মতো খেলার আচরণ বেশি দেখায় এবং বিষমকামী আগ্রহ কম দেখায়। বেইলি মনে করেন যে শৈশবের লিঙ্গ অসংগতি (Childhood Gender Nonconformity) একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে পুরুষ সমকামিতা একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য – হরমোন, জিন এবং অন্যান্য প্রসবপূর্ব বিকাশের কারণগুলোর ফল। বেইলি বলেন যে ছেলেরা তাদের লিঙ্গ অসংগতির জন্য “পুরস্কৃত হওয়ার চেয়ে অনেক বেশি শাস্তি পায়”, এবং এই ধরনের আচরণ “কোনো উৎসাহ ছাড়াই, এবং বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রকাশ পায়”, যা এটিকে “সহজাতত্বের অপরিহার্য শর্ত” (sine qua non of innateness) করে তোলে। বেইলি লিঙ্গ অসংগতিপূর্ণ ছেলেদের “লিঙ্গ এবং যৌনতার উপর জৈবিক প্রভাবের পোস্টার চাইল্ড” হিসেবে বর্ণনা করেন, “আমরা কোনো একক জৈবিক মার্কার (biological marker) পরিমাপ করি বা না করি, এটি সত্য”।

ডারিল বেম ১৯৯৬ সালে “অপরিচিতই কামুক হয়ে ওঠে” (Exotic Becomes Erotic) (EBE) তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। বেম যুক্তি দেন যে জৈবিক কারণ, যেমন প্রসবপূর্ব হরমোন, জিন এবং নিউরোঅ্যানাটমি (neuroanatomy), শিশুদের এমন আচরণ করতে বাধ্য করে যা তাদের জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। লিঙ্গ অসংগতিপূর্ণ শিশুরা প্রায়শই বিপরীত লিঙ্গের খেলার সাথী এবং কার্যকলাপ পছন্দ করে। এর ফলে তারা তাদের সমলিঙ্গের বন্ধুদের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যখন শিশুরা কৈশোরে প্রবেশ করে, তখন “অপরিচিতই কামুক হয়ে ওঠে” যেখানে ভিন্ন এবং অপরিচিত সমলিঙ্গের বন্ধুদের সান্নিধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়, এবং সময়ের সাথে সাথে সেই সাধারণ উত্তেজনা কামুকতায় রূপান্তরিত হয়। ওয়েদারেল এট আল (Wetherell et al.) বলেন যে বেম “তার মডেলটিকে সকল ব্যক্তির জন্য একটি চূড়ান্ত বিধান হিসেবে নয়, বরং একটি গড় ব্যাখ্যা হিসেবে বোঝান”।

বেম (Bem)-এর তত্ত্বের দুটি সমালোচনা সাইকোলজিক্যাল রিভিউ (Psychological Review) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল, “বেম-এর উল্লেখ করা গবেষণা এবং অতিরিক্ত গবেষণাগুলো দেখায় যে এক্সোটিক বিকামস ইরোটিক (Exotic Becomes Erotic) তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত নয়।” বেম-এর সমালোচনা করা হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকের সমকামী পুরুষদের অযাচিত নমুনার ওপর নির্ভর করার জন্য এবং এমন উপসংহার টানার জন্য যা মূল তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। “মূল ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায় যে প্রায় সমস্ত প্রতিক্রিয়াকারী উভয় লিঙ্গের শিশুদের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন,” এবং মাত্র ৯% সমকামী পুরুষ বলেছিলেন যে “তাদের বন্ধুরা কেউই বা অল্প সংখ্যকই পুরুষ ছিল,” আর বেশিরভাগ সমকামী পুরুষ (৭৪%) জানিয়েছেন যে তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময় “একজন বিশেষ ঘনিষ্ঠ পুরুষ বন্ধুর” সঙ্গে ছিলেন।

তদুপরি, “৭১% সমকামী পুরুষ অন্য ছেলেদের থেকে ভিন্ন অনুভব করেছেন, তবে ৩৮% বিপরীতকামী পুরুষও একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। সমকামী পুরুষদের জন্য পার্থক্য বেশি হলেও এটি ইঙ্গিত দেয় যে একই লিঙ্গের সহপাঠীদের থেকে ভিন্ন অনুভব করাটা বিপরীতকামী পুরুষদের জন্যও সাধারণ ছিল।” বেম আরও স্বীকার করেছিলেন যে সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে বড় ভাই থাকার সম্ভাবনা বেশি (ফ্র্যাটার্নাল বার্থ অর্ডার ইফেক্ট [Fraternal Birth Order Effect]), যা পুরুষদের সঙ্গে অপরিচিত থাকার ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বেম ক্রস-কালচারাল (Cross-cultural) গবেষণার উল্লেখ করেছিলেন, যা ইবিই (EBE) তত্ত্বের দাবি খণ্ডন করে বলে মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ, পাপুয়া নিউ গিনির সাম্বিয়া (Sambia) গোত্রের মধ্যে দেখা যায় যে কিশোর বয়সে ছেলেদের মহিলাদের থেকে পৃথক রাখা হয় এবং তাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সমকাম যৌনাচার বাধ্যতামূলক করা হয় (তাদের ধারণা এটি পুরুষদের বৃদ্ধি ক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ)। কিন্তু যখন এই ছেলেরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তখন মাত্র সামান্য অংশ পুরুষদের সঙ্গে সমকামী আচরণ চালিয়ে যায়—যা যুক্তরাষ্ট্রে পর্যবেক্ষণ করা মাত্রার সমান।

লেভি উল্লেখ করেছিলেন যে, যদিও তত্ত্বটি “বিশ্বাসযোগ্য ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে,” তবুও তিনি বলেন তত্ত্বটি “প্রায় কোনো বাস্তব সমর্থন পায়নি।” সামাজিক মনোবিজ্ঞানী জাস্টিন লেহমিলার (Justin Lehmiller) বলেছেন যে বেম-এর তত্ত্ব “জৈবিক ও পরিবেশগত প্রভাবগুলোকে নির্বিঘ্নে যুক্ত করার জন্য প্রশংসিত হয়েছে” এবং “শৈশবের লিঙ্গ অ-অনুসারিতা প্রাপ্তবয়স্ক সমকামিতার অন্যতম শক্তিশালী পূর্বাভাস” হিসেবে কিছুটা সমর্থন পেয়েছে। তবে তিনি যোগ করেন, মডেলটির বৈধতা “বিভিন্ন কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং এটি বিজ্ঞানীরা প্রায়শই প্রত্যাখ্যান করেছেন।”

২০০৩ সালে, লোরেন গোতশাল্ক (Lorene Gottschalk) (যিনি নিজেকে একজন র‍্যাডিক্যাল ফেমিনিস্ট (Radical Feminist) বলে উল্লেখ করেছিলেন) শৈশবের লিঙ্গ অ-অনুসারিতা (gender nonconformity) এবং সমকামিতার সম্পর্কিত সাহিত্যিক তথ্যের মধ্যে রিপোর্টিং পক্ষপাত (Reporting Bias) থাকার সম্ভাবনা উত্থাপন করেন। গবেষকেরা এই পক্ষপাত অনুসন্ধান করেছেন, যেখানে শৈশবের বাড়ির ভিডিও এবং লিঙ্গ অ-অনুসারিতার স্ব-প্রতিবেদনের তুলনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায় যে লিঙ্গ অ-অনুসারিতা স্ব-প্রতিবেদনের সঙ্গে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, শৈশবকালেই উদ্ভাসিত হয়েছিল এবং তা প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত বহাল ছিল।

পরিবার এবং প্রতিপালন (Family and Upbringing)

সাধারণ (General)

জন্ম-পরবর্তী সামাজিক পরিবেশের যৌন পছন্দের উপর প্রভাবের অনুমানগুলি দুর্বল, বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে। এমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রমাণ নেই যা ইঙ্গিত দেয় যে অভিভাবকত্ব বা শৈশবের প্রথম দিকের অভিজ্ঞতা যৌন পছন্দকে প্রভাবিত করে। গবেষণা শৈশবের প্রথম দিকের লিঙ্গ অসংগতি (gender nonconformity) এবং সমকামিতাকে যুক্ত করেছে; দেখা গেছে যে সমকামী পুরুষরা, গড়ে, শৈশব থেকেই উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি মেয়েলি ছিলেন, যেখানে সমকামী নারীরা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি পুরুষালি ছিলেন। উভকামীরাও শৈশবের লিঙ্গ অসংগতির কথা জানান, কিন্তু সমকামী পুরুষ এবং নারীদের ক্ষেত্রে এই পার্থক্য যতটা বড়, তাদের ক্ষেত্রে ততটা নয়। প্রথম দিকের লিঙ্গ অসংগতি (gender nonconformity) ইঙ্গিতবাহী প্রমাণ যে ভিন্ন-যৌন অভিমুখিতা (non-heterosexual orientations) প্রথম দিকের জৈবিক কারণগুলির উপর নির্ভরশীল (জেনেটিক প্রভাব, প্রসবপূর্ব হরমোন, বা ভ্রূণের বিকাশের সময় অন্যান্য কারণ), যেহেতু এই লিঙ্গ-বহির্ভূত আচরণ সামাজিক পরিবেশ বা অভিভাবকদের কোনো প্রকার উৎসাহ ছাড়াই প্রকাশ পায়। অভিভাবক এবং প্রাপ্তবয়স্করা তাদের সন্তানদের মধ্যে এই লিঙ্গ অসংগতির প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে, যার ফলে শিশুদের প্রতি খারাপ ব্যবহারের হার বেশি হতে পারে। আগের অনুমানগুলোতে ধারণা করা হয়েছিল যে কিছু ভিন্ন-যৌন ব্যক্তির শৈশবের খারাপ ব্যবহারের শিকার হওয়ার কারণ হল তাদের ভিন্ন-যৌন অভিমুখিতা (non-heterosexual orientations), একটি তত্ত্ব যা আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষায় সমর্থিত হয়নি।

ভ্রাতৃত্বপূর্ণ জন্ম ক্রম (Fraternal Birth Order)

১৯৯০ এর দশক থেকে, প্রচুর গবেষণা প্রমাণ করেছে যে একই মায়ের কাছ থেকে একজন পুরুষের যত বেশি বড় জৈবিক ভাই থাকে, তার সমকামী হওয়ার সম্ভাবনা তত ২৮-৪৮% বেড়ে যায়। এই ঘটনাটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ জন্ম ক্রম প্রভাব (fraternal birth order effect) নামে পরিচিত। এই সম্পর্কটি দত্তক বা সৎ ভাইদের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না, তাই বিজ্ঞানীরা এটিকে একটি সামাজিক প্রভাবের পরিবর্তে পুরুষ ভ্রূণের বিকাশের প্রতি মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতিক্রিয়া বলে মনে করেন। অনুমান করা হয় যে ১৫% থেকে ২৯% সমকামী পুরুষ তাদের অভিমুখিতার জন্য এই প্রভাবের কাছে ঋণী, যদিও পুরুষ ভ্রূণের গর্ভপাতের কারণগুলি বিবেচনায় নিলে এটি আরও বেশি হতে পারে (যা গণনাতে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়)। ২০১৭ সালে, এই প্রভাবের জৈব রাসায়নিক প্রমাণ পাওয়া গেছে যা প্রমাণ করে যে পুত্রসন্তানদের মায়েদের, বিশেষ করে যাদের সমকামী পুত্র আছে, তাদের NLGN4Y প্রোটিনের (NLGN4Y proteins) অ্যান্টিবডির (antibodies) মাত্রা যাদের কোনো পুত্র নেই তাদের মায়েদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল। জীববিজ্ঞানী জ্যাক বালথাজার (Jacques Balthazart) বলেছেন যে এই আবিষ্কারটি “সামাজিকীকরণের অজানা কারণগুলির পরিবর্তে প্রসবপূর্ব জৈবিক প্রক্রিয়া দ্বারা যৌন পছন্দ গভীরভাবে প্রভাবিত হওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রমাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ করে”। এই প্রভাবটি প্রসবপূর্ব পরিবেশে ঘটে যাওয়া পুরুষদের যৌন পছন্দের উপর একটি অ-জেনেটিক প্রভাবের উদাহরণ। এই প্রভাবটির অর্থ এই নয় যে বেশ কয়েকটি পুরুষ গর্ভাবস্থার পরে সকল বা বেশিরভাগ পুত্রই সমকামী হবে, বরং প্রথম পুত্রসন্তানের ক্ষেত্রে সমকামী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২% থেকে বেড়ে দ্বিতীয় পুত্রের ক্ষেত্রে ৩%, তৃতীয় পুত্রের ক্ষেত্রে ৫% হয় (এবং প্রতিটি ক্রমাগত পুরুষ ভ্রূণের সাথে আরও শক্তিশালী হয়)।

যেসব ছেলেদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে মেয়ে হিসেবে বড় করা হয়েছে

১৯৬০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে, অনেক নবজাতক ও শিশু ছেলের লিঙ্গ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পরিবর্তন করে মেয়ে বানানো হয়েছিল, কেননা তারা ত্রুটিপূর্ণ লিঙ্গ নিয়ে জন্মেছিল, অথবা দুর্ঘটনায় তাদের লিঙ্গ হারিয়েছিল। অনেক সার্জন বিশ্বাস করতেন যে এই ধরনের পুরুষদের সামাজিকভাবে ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে মেয়ে বানালে তারা বেশি সুখী হবে। যৌন পছন্দ সম্পর্কিত তথ্য প্রদানকারী প্রকাশিত সাতটি ঘটনার সবকটিতেই, দেখা গেছে যে ব্যক্তিরা বড় হয়ে মহিলাদের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়েছে। পাবলিক ইন্টারেস্ট ইন সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স (Psychological Science in the Public Interest)-এ, জে. মাইকেল বেইলি সহ ছয়জন বিজ্ঞানী বলেছেন যে এটি একটি জোরালো প্রমাণ স্থাপন করে যে পুরুষদের যৌন পছন্দ আংশিকভাবে জন্মের আগে থেকেই নির্ধারিত হয়: যদি পুরুষদের যৌন পছন্দ সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতির কারণে হয় তবে আমরা এই ফলাফল আশা করব, এবং যদি এটি প্রতিপালনের কারণে হয় তবে আমরা যে ফলাফল আশা করব তার বিপরীত, সেক্ষেত্রে আমরা আশা করব যে এই ব্যক্তিদের কেউই প্রধানত মহিলাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে না। তারা দেখায় যে কীভাবে মনোসামাজিক উপায়ে পুরুষদের যৌন পছন্দের বিকাশকে ব্যাহত করা কতটা কঠিন।

তারা আরও যুক্তি দেয় যে এটি যৌন পছন্দের উপর সামাজিক পরিবেশের তাৎপর্য সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে, তারা বলে, “যদি কোনো পুরুষের শৈশবে লিঙ্গ কেটে তাকে মেয়ে হিসেবে প্রতিপালন করেও তাকে নির্ভরযোগ্যভাবে অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট করা না যায়, তাহলে অন্য কোন মনোসামাজিক হস্তক্ষেপ সম্ভবত সেই প্রভাব ফেলতে পারে?” আরও বলা হয়েছে যে ক্লোয়াকাল এক্সট্রফি (cloacal exstrophy) (যার ফলে লিঙ্গ বিকৃত হয়), অথবা অস্ত্রোপচারের দুর্ঘটনা, কোনোটিই প্রসবপূর্ব অ্যান্ড্রোজেনের অস্বাভাবিকতার সাথে সম্পর্কিত নয়, তাই এই ব্যক্তিদের মস্তিষ্ক জন্মের সময় পুরুষ-সংগঠিত ছিল। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন এবং মেয়ে হিসেবে প্রতিপালিত হওয়া সত্ত্বেও, চিহ্নিত সাতজনের মধ্যে ছয়জন ফলো আপে বিষমকামী পুরুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়েছে, গবেষকরা আরও যোগ করেছেন: “উপলব্ধ প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে এই ক্ষেত্রে, বাবা-মা এই শিশুদের মেয়ে হিসেবে এবং যতটা সম্ভব লিঙ্গ-বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপায়ে বড় করতে গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” বেইলি এট আল (Bailey et al.) পুরুষ সমকামিতার ক্ষেত্রে ‘প্রকৃতি’ বনাম ‘প্রতিপালন’-এর ( ‘nature’ versus ‘nurture’) প্রভাব পরিমাপের ক্ষেত্রে এই লিঙ্গ পরিবর্তনের ঘটনাগুলোকে “প্রায় নিখুঁত কোয়াসি-এক্সপেরিমেন্ট” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

শৈশবের যৌন নির্যাতন, হয়রানি বা প্রাথমিক অভিজ্ঞতা

যৌন নির্যাতন, হয়রানি বা শৈশবের প্রাথমিক যৌন অভিজ্ঞতা সমকামিতার কারণ হতে পারে—এই তত্ত্ব নিয়ে নানা জল্পনা থাকলেও, এর বৈজ্ঞানিক সমর্থন নেই (Scientific Support)। বরং গবেষণায় দেখা গেছে যে বিপরীতকামী নন (Non-Heterosexual) এমন ব্যক্তিরা, বিশেষ করে পুরুষেরা, শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। এর প্রধান কারণ তাদের লিঙ্গ-বৈসাদৃশ্যপূর্ণ আচরণ (Gender Nonconforming Behavior), যা শৈশব থেকেই দৃশ্যমান এবং প্রাপ্তবয়স্ক সমকামিতার একটি শক্তিশালী পূর্বাভাস (Strong Predictor)।

এই লিঙ্গ-বৈসাদৃশ্যপূর্ণ আচরণ তাদেরকে সনাক্তযোগ্য করে তোলে এবং এজন্য তারা অনেক সময় তরুণ বয়সেই সমলিঙ্গীয় অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারে। প্রবীণ সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি তাদের লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে বা লিঙ্গ-বৈসাদৃশ্য অপছন্দকারী অন্যান্যদের দ্বারা তারা নিপীড়িত হতে পারে। শৈশবকালীন যৌন নির্যাতন সাধারণত বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা অন্তর্ভুক্ত করে, যা সাধারণত ১৮ বছর বয়সের আগেই ঘটে, এবং এটি শুধুমাত্র প্রাথমিক শৈশবে সীমাবদ্ধ নয়। সমকামী পুরুষরা তাদের যৌন অভিমুখ (Sexual Orientation) গোপন রাখতে এবং উপলভ্য সঙ্গীর অভাবে কিশোর বয়সে বয়স-অসম সম্পর্ক (Age Discrepant Relationships)-এ জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এটি যৌন নির্যাতনের উদাহরণ হতে পারে, কিন্তু এটি তাদের যৌন অভিমুখের কারণ প্রমাণ করে না।

সংস্কৃতিগত গবেষণাগুলোও এই ধারণার বিরুদ্ধে কথা বলে যে প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা কোনো ব্যক্তির চূড়ান্ত যৌন অভিমুখ নির্ধারণ করে। নিউ গিনির সাম্বিয়া (Sambia) গোত্রের মধ্যে, ৭ থেকে ১০ বছর বয়সের মধ্যে ছেলেদের বাধ্যতামূলকভাবে পুরুষ প্রবীণদের সঙ্গে আচারভিত্তিক যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে হয়। এই অভ্যাস কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে, তবে এই ছেলেদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বিপরীতকামী পুরুষ হয়ে ওঠে। মাত্র একটি ছোট অংশ পুরুষ সমকামী হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে পাওয়া হার-এর সঙ্গে তুলনীয়।

ব্রিটিশ একক লিঙ্গের বোর্ডিং স্কুলে (Single-Sex Boarding Schools) পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই ধরনের স্কুলে সমকামিতার উচ্চহার থাকলেও, এই শিক্ষার্থীদের সমকামী হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় বেশি নয়।

নারীদের ক্ষেত্রে এই তত্ত্ব বলে যে যৌন নির্যাতন তাদের পুরুষদের প্রতি বিরূপ করে তুলতে পারে, ফলে তারা নারীদের কাছে সান্ত্বনা খুঁজতে পারে। অন্যদিকে, এটি পুরুষদের ক্ষেত্রে সমলিঙ্গীয় আকর্ষণ তৈরি করতে পারে—যা স্ববিরোধী (Contradictory) বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

নারীদের যৌন অভিমুখিতা সামাজিক বা বাহ্যিক প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে বলে কিছু প্রমাণ রয়েছে। তবে, গবেষণায় নানা বিভ্রান্তি (Confounders) রয়েছে, যা নিশ্চিত উপসংহারে পৌঁছাতে বাধা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য, যেমন সদ্ভাব (Agreeableness) বা ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা (Propensity to Risk-Taking), যা লেসবিয়ান নারীদের ক্ষেত্রে বেশি পাওয়া গেছে। এটি তাদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

২০১৬ সালের একটি পর্যালোচনায়, যেখানে জেনেটিকস (Genetics), মনোবিজ্ঞান (Psychology), জীববিদ্যা (Biology), স্নায়ুবিজ্ঞান (Neuroscience) এবং এন্ডোক্রিনোলজি (Endocrinology)-এর ছয়জন বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন, দেখা গেছে তারা যৌন অভিমুখ ব্যাখ্যার জন্য জৈবিক তত্ত্বগুলোর (Biological Theories) পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে তারা উল্লেখ করেছেন, “পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রে সামাজিক পরিবেশ (Social Environment) যৌন অভিমুখ এবং সংশ্লিষ্ট আচরণ প্রভাবিত করে—এটি আমাদের এবং অন্যান্যদের কাছে কম বিস্ময়কর হবে।” কিন্তু তারা যোগ করেছেন, “এই সম্ভাবনাকে বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত হতে হবে, অনুমানমূলক নয়।”

“শৈশবের নিপীড়ন কি যৌন অভিমুখিতা প্রভাবিত করে?” শিরোনামে ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় রবার্টস এবং তাঁর সহকর্মীরা (Roberts et al.) উল্লেখ করেন যে যৌন নিপীড়ন পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে, তবে নারীদের ক্ষেত্রে নয়। নিউরোসায়েন্টিস্ট সাইমন লেভে (Simon LeVay) এই উপসংহার নিয়ে বিতর্কের কথা উল্লেখ করেন, কারণ এতে একটি অস্বাভাবিক পরিসংখ্যানিক পদ্ধতির ওপর নির্ভর করা হয়েছিল এবং দাবি করা হয় যে তিনি এটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেননি। এই গবেষণার সমালোচনা করা হয়েছিল কারণ এটি পরিসংখ্যানিক ইনস্ট্রুমেন্টাল রিগ্রেশন (Statistical Instrumental Regression) প্রক্রিয়ায় অযৌক্তিক অনুমানের ওপর নির্ভর করেছিল।

জে. মাইকেল বেইলি এবং ড্রু বেইলি (J. Michael Bailey and Drew Bailey) মন্তব্য করেন যে, “রবার্টস এবং তার সহকর্মীদের ফলাফল শিশুদের নিপীড়ন প্রাপ্তবয়স্ক সমকামিতার কারণ হতে পারে এমন ধারণার পক্ষে কোনো সমর্থন দেয় না। বরং পুরুষ ও নারীদের মধ্যে পার্থক্যের প্যাটার্নটি বরং বিপরীত।” বেইলি উল্লেখ করেন যে, রবার্টসের ইনস্ট্রুমেন্টাল রিগ্রেশন এবং বিশ্লেষণ সম্ভবত জেনেটিক (Genetic) প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। রবার্টস তাঁর বিশ্লেষণে পিতামাতার বৈশিষ্ট্যগুলোকে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, যা ডিপ্রেশন (Depression) এবং নিউরোটিসিজম (Neuroticism)-এর মতো আচরণগত জেনেটিক প্রভাবের মাধ্যমে বিকৃত হয়। যখন জেনেটিক বিভ্রান্তিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তখন পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অ-বিপরীতকামী হওয়ার মধ্যে কোনো সংযোগ পাওয়া যায় না।

বেইলি আরও যুক্তি দেন, আগের গবেষণাগুলো দেখিয়েছে যে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের (Psychosocial Influences) প্রতি নারীদের যৌন অভিমুখিতা বেশি সংবেদনশীল হতে পারে, পুরুষদের নয়। তাই এটি অসম্ভাব্য যে যৌন নিপীড়ন শুধুমাত্র পুরুষদের যৌন অভিমুখিতায় প্রভাব ফেলবে এবং নারীদের নয়। বেইলির মতে, রবার্টসের উপসংহার সমকামী পুরুষদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে খাপ খায় না। কারণ সমকামী পুরুষরা সাধারণত তাদের প্রথম যৌন অভিজ্ঞতার অনেক আগেই একই লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। তিনি আরও বলেন, “পুরুষদের যৌন অভিমুখিতা বিকাশের প্রমাণ শৈশবকালীন প্রতিকূলতা প্রভাবিত করার আগেই নির্ধারিত হয়, সম্ভবত জন্মের আগেই।”

২০১৬ সালে লেভে উল্লেখ করেন যে, আরেকটি গবেষণা দল প্রমাণ পেয়েছে যে, সমকামী পুরুষদের মধ্যে শৈশবকালে যৌন নিপীড়নের উচ্চ হারের কারণ সম্ভবত তাদের লিঙ্গ-অ-অনুসারী আচরণের (Gender Nonconforming Behaviour) জন্য লক্ষ্যবস্তু হওয়া। এই গবেষণায় দেখা যায়, যারা শৈশবে লিঙ্গ-অ-অনুসারী ছিলেন, তারা সমকামী, উভকামী, এবং বিপরীতকামী পুরুষদের মধ্যে সমান হারে যৌন নিপীড়নের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে যারা শৈশবে সাধারণত পুরুষালি আচরণ করতেন, তারা যৌন নিপীড়নের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করার সম্ভাবনা অনেক কম।

লেভে উপসংহারে বলেন, “প্রমাণের ওজন দেখায় যে শৈশবকালীন নিপীড়ন সমকামিতার বিকাশে কারণগত ভূমিকা পালন করে না।”

গবেষণার ওপর প্রভাব বিস্তারকারী অন্যান্য বিভ্রান্তিকর বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে বিপরীতকামী পুরুষদের নিপীড়নের কথা কম রিপোর্ট করা, যা বিশেষ করে বিপরীতকামী পুরুষদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। অন্যদিকে, অ-বিপরীতকামী ব্যক্তিরা হয়তো তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আরও খোলামেলা হতে পারেন। যৌন সংখ্যালঘুরা “কারেকটিভ রেপ” (Corrective Rape)-এরও শিকার হতে পারেন, যা একটি ঘৃণামূলক অপরাধ। এই ধরনের ধর্ষণকারীর উদ্দেশ্য হলো ভুক্তভোগীকে বিপরীতকামী বানানো বা লিঙ্গগত মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখা।

যৌন নিপীড়নকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, “একজন প্রাপ্তবয়স্ক বা ১৮ বছরের কম বয়সী অন্য কারও সঙ্গে এমন যৌন অভিজ্ঞতা যা ব্যক্তি চাননি বা বুঝতে না পারার মতো কম বয়সী ছিলেন।” এটি বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ, যা ভিন্ন কারণ ও প্রভাব রাখে।

আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (American Psychiatric Association) জানায়: “…সমকামিতার জন্য কোনো নির্দিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক বা পারিবারিক গতিশীল কারণ চিহ্নিত করা যায়নি, শৈশবকালীন যৌন নিপীড়নের ইতিহাস সহ।” যৌন অভিমুখিতা গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জৈবিক তত্ত্বগুলোকে সমর্থন করেন, যা দীর্ঘ সময় ধরে প্রমাণ সঞ্চয় করছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই প্রমাণ বিশেষভাবে শক্তিশালী।

রাসায়নিক ব্যাহতকারী (Chemical Disruptors)

পরিবেশে উপস্থিত যৌগ, যেমন প্লাস্টিকের নরমকারক (ফ্যাথালেট এস্টার [Phthalate Esters]), যা প্রায়ই অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেনিক (Anti-androgenic) প্রভাব সৃষ্টি করে, মানব মস্তিষ্কের যৌন বিভাজনে প্রাকজন্মকালীন (Prenatal Development) সময়ে প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষকরা গর্ভাবস্থায় এই এন্ডোক্রাইন ব্যাহতকারীদের (Endocrine Disruptors) সংস্পর্শ এবং এর ফলে সন্তানদের পরবর্তী যৌন অভিমুখের (Sexual Orientation) মধ্যে সম্পর্ক অনুসন্ধান করছেন। যদিও বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। ঐতিহাসিক রেকর্ড থেকে জানা যায় যে শিল্পায়নের (Industrialisation) পূর্বে বিভিন্ন সময়ে, সংস্কৃতিতে এবং স্থানে সমকামী মানুষদের উপস্থিতি এবং স্বীকৃতি ছিল।

১৯৩৯ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে প্রায় ২০ লক্ষ গর্ভবতী মাকে একটি সিন্থেটিক ইস্ট্রোজেন (Synthetic Estrogen) হিসেবে পরিচিত ডাইইথাইলস্টিলবেস্ট্রল (ডিইএস [Diethylstilbestrol]) দেওয়া হয়েছিল, যা গর্ভপাত প্রতিরোধ করবে বলে মনে করা হয়েছিল। যদিও ডিইএস গর্ভপাত প্রতিরোধ করতে পারেনি, এটি যে নারীরা এই ওষুধটি গ্রহণ করেছিলেন তাদের কন্যাদের মধ্যে উভকামীতা (Bisexuality) এবং সমকামিতার (Homosexuality) সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে বলে রিপোর্ট করা হয়েছে।

অন্যান্য প্রসঙ্গ

ডেটা বিজ্ঞানী সেথ স্টিফেনস-ডেভিডোভিটজ (Seth Stephens-Davidowitz) জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে সমকামী পুরুষদের প্রকৃত উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয় না। কারণ ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি অনুসন্ধানের প্রায় ৫% অংশ সমকামী পুরুষদের পর্নোগ্রাফির জন্য, যা সব রাজ্যেই প্রায় সমান। এই ভিত্তিতে তিনি মনে করেন যে সমকামী পুরুষদের শহরে অভিবাসনের ব্যাপারটি অতিরঞ্জিত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, যে রাজ্যগুলোতে সমকামিতার বিরুদ্ধে সামাজিক কলঙ্ক রয়েছে, সেখানে “অনেক বেশি সমকামী পুরুষ সমাজে নিজেদের পরিচয় গোপন রাখেন।”

তথ্যসূত্র –

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.