Table of Contents
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল গ্রেপ্তার (সংক্ষিপ্ত) (১৫ জানুয়ারি, ২০২৫)
ইউক্রেনের দাবি: রাশিয়ায় দুইজন উত্তর কোরিয়ান সৈন্য আটক (সংক্ষিপ্ত) (১৩ জানুয়ারি, ২০২৫)
উত্তর কোরিয়ার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা (সংক্ষিপ্ত) (৭ জানুয়ারি, ২০২৫)
দক্ষিণ কোরিয়ার ইউন সুক ইওল গ্রেফতার এড়ানো চালিয়ে যাচ্ছেন (সংক্ষিপ্ত) (৩ জানুয়ারি, ২০২৫)
দক্ষিণ কোরিয়ার অশান্ত সময় (সংক্ষিপ্ত) (২ জানুয়ারি, ২০২৫)
প্রেসিডেন্ট ইউন-এর অভিশংসন: দক্ষিণ কোরিয়ার ভবিষ্যৎ কী? (১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪)
ভূমিকা
শনিবার, দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল (Yoon Suk Yeol) জাতীয় পরিষদ (national assembly) দ্বারা অভিশংসিত হয়েছেন। এটি এক নাটকীয় ঘটনাক্রমের সর্বশেষ ধাপ, যার সূত্রপাত হয়েছিল দুই সপ্তাহ আগে তার সামরিক শাসন (martial law) জারি করার ব্যর্থ চেষ্টার মাধ্যমে। এই লেখায় আলোচনা করা হবে কীভাবে এই অভিশংসন (impeachment) হয়েছে, পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী, এবং কেন দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা এখনো কিছুদিন স্থায়ী হতে পারে।
সারসংক্ষেপ ও পূর্বপ্রেক্ষাপট
মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে, প্রেসিডেন্ট ইউন (Yoon) চার দশক পর প্রথমবারের মতো দেশে সামরিক শাসন (martial law) জারির ঘোষণা দেন। তিনি দাবি করেন, বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদ (national assembly) সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই বারবার অভিশংসন প্রচেষ্টা ও বাজেট নিয়ে অবরোধমূলক ভূমিকা পালন করছে। এটিকে তিনি সামরিক শাসন জারির অজুহাত হিসেবে দাঁড় করান। কিন্তু অচিরেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। সামরিক বাহিনী আইনপ্রণেতাদের সামরিক শাসন বাতিলের উদ্যোগকে বাধা দিতে সংসদ ভবনে (parliament) মোতায়েন হলে, আইনপ্রণেতারা সেই রাত্রিতে দ্রুত একত্রিত হন এবং সামরিক শাসনাদেশ বাতিলের পক্ষে ভোট দেন। ফলস্বরূপ, সামরিক শাসন জারি করার প্রায় ছয় ঘণ্টার মাথায় ইউনকে (Yoon) এই আদেশ প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়।
প্রথমবার প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসনের চেষ্টা ব্যর্থ হয়, কারণ তার নিজ দলের (কনসারভেটিভ পিপল পাওয়ার পার্টি – Conservative People Power Party) যথেষ্ট সংখ্যক সংসদ সদস্য দলীয় অবস্থান থেকে সরে আসেননি। কিন্তু পরবর্তী সপ্তাহ জুড়ে ব্যাপক গণবিক্ষোভ অব্যাহত থাকে এবং ইউন পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানালে গত শনিবার আরেকটি অভিশংসন ভোট হয়। এবার ১২ জন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য দলীয় অবস্থান ভেঙে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিলে দুই-তৃতীয়াংশের শর্ত পূরণ হয়, এবং ইউনকে অভিশংসিত ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু এই অভিশংসনের ভোটই সবকিছুর ইতি টানেনি। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা এখানেই শেষ নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে।
অভিশংসন পরবর্তী প্রক্রিয়া
তো এখন কী ঘটবে? অভিশংসনের বিষয়টি এখন যাবে সাংবিধানিক আদালতে (Constitutional Court), যেখানে আদালতকে আগামী ১৮০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে অভিশংসন বহাল থাকবে কি না। এই সময়কালে প্রেসিডেন্ট ইউন (Yoon) তাঁর ক্ষমতা ও দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী হান ডক-সু (Han Deok Soo) আপাতত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট (acting President) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
যদি সাংবিধানিক আদালত অভিশংসন বাতিল করে, তাহলে ইউন তার পদে ফিরে যাবেন। তবে, যদি আদালত অভিশংসন বহাল রাখে, তাহলে রায়ের ৬০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ, পুরো প্রক্রিয়াটি আট মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে। তবে কিছু বিষয়ে ইঙ্গিত দেয় যে সময়সীমা আরো কম হতে পারে।
সময়সীমা সংক্রান্ত কারণসমূহ
দক্ষিণ কোরিয়ার অতীত অভিশংসন মামলাগুলো তুলনামূলকভাবে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে।
- ২০১৭ সালে, সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন-হে (Park Geun-hye) এর অভিশংসন বহাল রাখতে সাংবিধানিক আদালত প্রায় তিন মাস সময় নিয়েছিল।
- ২০০৪ সালে, প্রেসিডেন্ট নো মু-হিউন (Roh Moo-hyun) এর অভিশংসন বাতিলে প্রায় দুই মাস সময় লেগেছিল।
এছাড়াও আদালতের বর্তমান বিচারপতিদের সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ৯টি পদের মধ্যে ৬টি পদ পূরণ আছে। এর মধ্যে আবার দুইজন বিচারপতির মেয়াদ এপ্রিল মাসে শেষ হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স (Reuters) -এর বরাতে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আদালত এই মেয়াদোত্তীর্ণের আগেই রায় দিতে চাইতে পারে।
অভিশংসন বহাল রাখতে ৯ জন বিচারকের মধ্যে অন্তত ৬ জনের ভোট প্রয়োজন। কিন্তু এখন যেহেতু মাত্র ৬ জন বিচারক আছেন, তাদের সবাইকেই সম্মত হতে হবে অভিশংসন বহাল রাখার পক্ষে। বিচারক নিয়োগের তিনটি পদ খালি থাকা নিয়ে কিছু সংশয় ছিল, আদালত আদৌ মামলা এগিয়ে নিবে কিনা বা কীভাবে নেবে তা নিয়ে। তবে সোমবার আদালত জানিয়েছে, শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও তারা বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে এবং ২৭ ডিসেম্বর প্রথম শুনানি নির্ধারণ করা হয়েছে।
জাতীয় পরিষদও (national assembly) দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে খালি পদগুলো পূরণ করার চেষ্টা করছে। বছরের শেষ নাগাদ এই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। তবু, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া থেকে আলাদাভাবে ইউনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ (insurrection) ও ক্ষমতার অপব্যবহারের (abuse of power) জন্য একটি ফৌজদারি তদন্ত (criminal investigation) চলছে, যা অভিশংসনের চেয়েও তাড়াতাড়ি বিপত্তি ডেকে আনতে পারে।
অবিলম্বে সামনে কী অপেক্ষা করছে?
ধরে নিই অভিশংসন প্রক্রিয়া এখনো চলছে, দেশের ভবিষ্যৎ অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। জাতীয় নেতৃত্বের এই অনিশ্চয়তা এমন সময়ে ঘটছে যখন দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea) বিশ্বের অন্যান্য শক্তির সাথে জটিল সম্পর্ক মোকাবেলা করছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের (United States) গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হওয়ার কারণে, দক্ষিণ কোরিয়াকে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)-এর আবার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের বাস্তবতার মোকাবেলা করতে হবে।
ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্রুত দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে শুল্কারোপ (tariffs) করতে পারেন, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (trade surplus) প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর (US military) উপস্থিতির জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে অতিরিক্ত বিলিয়ন ডলার দাবি করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এইসব গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে একটি স্থায়ীভাবে ক্ষমতাসীন নেতা না থাকা, তার বদলে একজন সাময়িক ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট (acting President) দিয়ে দেশ চালানো কোনমতেই আদর্শ পরিস্থিতি নয়। ট্রাম্পের সাথে কাজ করতে গেলে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং আলোচনার কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—অস্থায়ী নেতৃত্ব এই প্রশ্নে দুর্বল অবস্থানে পড়বে।
দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক পালাবদল
যদি সাংবিধানিক আদালত অভিশংসন বহাল রাখে এবং নির্বাচন হয়, তাহলে ইউনের মেয়াদ প্রায় দুই বছর আগেই শেষ হয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বর্তমানে বামঘেঁষা (left-leaning) বিরোধী নেতা লি জে-মিয়ং (Lee Jae-myung) পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী বলে বিবেচিত।
লি (Lee) এমন একজন জনবাদী (populist) নেতা যাকে অনেকে বার্নি স্যান্ডার্স (Bernie Sanders) এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) – উভয়ের সাথেই তুলনা করেন। গত কয়েক বছরে তিনি বারবার শিরোনামে এসেছেন, ঠিক যেভাবে ইউন এসেছেন। ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লি খুবই সামান্য ব্যবধানে ইউনের কাছে হেরে যান—যা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে কাছাকাছি ফলের নির্বাচন ছিল। গত বছর, ইউনের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে লি ২৪ দিনের অনশন (hunger strike) পালন করেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে লি এক হত্যাচেষ্টার (assassination attempt) শিকার হন, যখন তার গলায় ছুরি মেরে আক্রমণ করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি বেঁচে যান।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, লি আদৌ নির্বাচন করতে পারবেন কিনা। কারণ তার বিরুদ্ধে আইনি ঝামেলা রয়েছে। তিনি সম্প্রতি নির্বাচনী আইন (electoral law) লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, যা কার্যকর থাকলে তাকে বছরের পর বছর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দিতে পারে। এখন বিষয়টি সময়ের হাতে—লি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। আপিলের কারণে যদি সময় পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে আকস্মিক নির্বাচন (snap election) হয়, লি যদি জয়ী হন, তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি আইনি রক্ষাকবচ (immunity) পাবেন।
এখানে আরেকটি স্বতন্ত্র গবেষণার বিষয় হতে পারে যে, লি প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্র (US), জাপান (Japan), উত্তর কোরিয়া (North Korea) এবং চীনের (China) সাথে সম্পর্ক কীরূপ হবে। তবে এতদূর ভাবার আগে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের জন্য।
সাম্প্রতিক মার্শাল ল বিষয়ক ঘটনা ও নাগরিক প্রতিরোধের সাফল্য
শেষে ফিরে তাকাই সাম্প্রতিক মার্শাল ল (martial law) জারি চেষ্টার দিকে। সময়ের সাথে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, ইউনের এই উদ্যোগ ছিল চরম অদ্ভুত ও অপরিকল্পিত। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ ও আইনপ্রণেতারা অবিশ্বাস্যরকম দ্রুত ও কার্যকরভাবে এই প্রয়াস প্রতিরোধ করেছে।
এর মধ্যে ছিল সংসদ সদস্যদের (lawmakers) সৈন্যবেষ্টিত সংসদ ভবনের বেড়া টপকানো, সংসদ কর্মচারী ও প্রতিবাদকারীদের (protesters) সৈন্যদের সামনে দৃঢ় অবস্থান, এবং পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে নাগরিকদের টানা বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীরা কেপপ (K-pop) লাইটস্টিক, ন্যাড়া মাথা (shaved heads), এমনকি শেষকৃত্যের ফুল (funeral flowers) পর্যন্ত ব্যবহার করে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান। অভিশংসনের ফল ঘোষণার পর বিক্ষোভকারীরা উল্লাসে মেতে ওঠে। কিন্তু আমরা যেমন ব্যাখ্যা করেছি, এবং বিক্ষোভকারীরাও জানেন, এই গল্প এখানেই শেষ নয়।
তথ্যসূত্র
Constitutional Court case and timeline:
https://www.reuters.com/world/asia-pacific/south-koreas-constitutional-court-decide-impeached-presidents-fate-2024-12-14/
https://en.yna.co.kr/view/AEN20241216002352315?section=national/politics
South Korea trade surplus:
https://www.reuters.com/markets/south-korean-trade-minister-sees-firms-investing-more-us-if-trump-imposes-2024-11-06/
Lee Jae-myung’s prospects:
https://www.bloomberg.com/news/articles/2024-12-15/yoon-s-fall-gives-nemesis-surprise-path-back-to-lead-south-korea
https://www.koreatimes.co.kr/www/nation/2024/12/113_388495.html
https://www.france24.com/en/live-news/20241215-south-korea-s-yoon-impeached-what-happens-next
Protest tactics:
https://www.theguardian.com/world/2024/dec/12/south-korea-martial-law-protests-k-pop-and-glow-sticks
https://apnews.com/article/south-korea-protesters-photo-gallery-yoon-b17f96063a2635ebc87f35ed9ab5ac5b
https://www.koreatimes.co.kr/www/nation/2024/12/113_388213.html
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক আইন জারির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন (১২ই ডিসেম্বর)
দক্ষিণ কোরিয়ায় (South Korea), প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল (Yoon Suk Yeol) সাম্প্রতিক সামরিক আইন (martial law) জারির সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইউন বলেছেন যে তিনি গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, বিরোধীদলের সংসদীয় একচেটিয়া ক্ষমতার কারণে গণতন্ত্র ধ্বংসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেটি ঠেকাতেই সামরিক আইন ঘোষণা করা হয়।
সামরিক আইন জারির পর থেকে প্রেসিডেন্ট ইউন ইমপিচমেন্ট (impeachment) চেষ্টা মোকাবিলা করেছেন এবং তা থেকে টিকে গেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি ইমপিচ হই বা তদন্তের সম্মুখীন হই, আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো।” তবে তার পক্ষে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ও তার মিত্ররা এখন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি। শনিবার দ্বিতীয়বারের মতো ইমপিচমেন্ট ভোট হবে, যার লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট ও তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো। মাত্র গতকালই পুলিশের প্রধান চো জি হো (Cho Ji Ho) এবং বিচার মন্ত্রী পার্ক সিউং জে-কে (Park Seung Jae) ইমপিচ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করতে সংসদে আরো বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা (২০০-র বেশি ভোট) প্রয়োজন, তবে অন্যান্য কর্মকর্তাদের ইমপিচ করতে কম সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট। এটি প্রেসিডেন্ট ইউনের জন্য অশনি সংকেত।
সূত্র –
পুলিশ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের অফিস রেইড করেছে (১১ই ডিসেম্বর)
এবার আমরা যাব দক্ষিণ কোরিয়ায়, যেখানে এখনো গত সপ্তাহের প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের (Yoon Suk Yeol) সামরিক আইন (martial law) জারির চেষ্টার পর থেকে দেশটি চরম অস্থিরতায় রয়েছে। আজ দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ প্রেসিডেন্ট ইউনের অফিসে অভিযান চালিয়েছে (raided) ক্রমবর্ধমান তদন্তের অংশ হিসাবে। ইউন এই সময় অফিসে উপস্থিত ছিলেন না, তবে সার্চ ওয়ারেন্টে তাকে একজন সন্দেহভাজন (suspect) হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ইউনের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী (Defence Minister) কিম জং হিউন (Kim Jong Hyun) গত রাত পুলিশ হেফাজতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাকে বাঁচানো গেছে এবং এখন তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। কিম, যিনি ইউনের ঘনিষ্ঠ আস্থা ভাজন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন, সামরিক আইন চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের (insurrection) সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের অভিযোগ এবং কর্তৃত্ব অপব্যবহার করে (abuse of authority) অধিকার বাধাগ্রস্ত করার জন্য।
বিরোধীদল যারা ইউনের এই পদক্ষেপকে একটি অভ্যুত্থান চেষ্টার (coup attempt) সাথে তুলনা করছে, তারা এই সপ্তাহান্তে আবারো ইমপিচমেন্ট (impeach) প্রস্তাব আনবে। গত সপ্তাহের প্রস্তাব ব্যর্থ হওয়ার পর এবার আশা করা হচ্ছে ইউনের নিজ দলের কিছু সংসদ সদস্য রাজনৈতিক ও জনমতের চাপে ইমপিচমেন্টে সমর্থন দেবে।
এই অস্থিরতার খবর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিরোনাম হয়েছে, এমনকি প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়াতেও (North Korea)। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা দক্ষিণে ক্রমবর্ধমান সামাজিক অস্থিরতার কথা উল্লেখ করে লিখেছে, “পুতুল” ইউন সুক ইওল, যিনি ইতিমধ্যে গুরুতর শাসনসংকট ও ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন, আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারি করে জনগণের ওপর ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসনের (fascist dictatorship) অস্ত্র বর্ষণ করেছেন।
তথসূত্র
- https://www.dw.com/en/south-korea-police-search-president-yoons-office/a-71018459
- https://apnews.com/article/south-korea-martial-law-3210438b8663fe609bfe4cb8b748a114
- https://www.reuters.com/world/asia-pacific/north-korea-reports-south-koreas-martial-law-crisis-first-time-2024-12-10/
ইউন সুক ইয়োলের অভিশংসন প্রচেষ্টায় ব্যর্থতা ও তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা (৯ই ডিসেম্বর)
দক্ষিণ কোরিয়ার সমস্যায় জর্জরিত রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইয়ল (President Yoon Suk Yeol) সপ্তাহান্তে সামান্য ব্যবধানে একটি অভিশংসন (impeachment) প্রস্তাব থেকে বেঁচে গেছেন। তবে দেশের রাজনৈতিক সংকট এখানেই থেমে নেই, কারণ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে এবং বিরোধীদল-নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদ (National Assembly) এই সপ্তাহে আবারো একটি অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপনের অঙ্গীকার করেছে।
রাষ্ট্রপতি ইউন (Yoon) গত সপ্তাহে আকস্মিকভাবে মঙ্গলবার রাতে সামরিক আইন (martial law) জারি করেন, যা ছয় ঘণ্টার টানা বিক্ষোভ এবং সংসদীয় বিরোধিতার (parliamentary opposition) জন্ম দেয়। পরবর্তীতে তিনি এই আদেশ তুলে নিতে বাধ্য হন। তার এই আচরণ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়।
ইউনকে অভিশংসন করতে জাতীয় পরিষদের ৩০০ সদস্যের মধ্যে ২০০ জনের সমর্থন প্রয়োজন। প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (Democratic Party) এবং অন্যান্য ছোট বিরোধী দলগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ১৯৫টি আসন ধারণ করে বলে ধারণা করা হয় (মূল পাঠে এ অংশ অসম্পূর্ণ ছিল, এখানে যৌক্তিক সংশোধন করা হলো)। অভিশংসন ভোটের সময় ইউন-এর দল পিপল পাওয়ার পার্টি (People Power Party) থেকে কিছু সদস্য ভোটে অংশ নেয়, তবে অন্য ১০৫ জন তা বয়কট করে। বয়কটের ফলে মোট ভোট ২০০ পর্যন্ত পৌঁছায়নি, তাই অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়নি।
শনিবার, রাষ্ট্রপতি ইউন তার কর্মকাণ্ডের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি আর কখনো সামরিক আইন জারি করবেন না। তবে বিরোধীপক্ষ অভিযোগ করছে যে তার দল আবারও একধরনের অভ্যুত্থান চেষ্টা করেছে। বিরোধীদলের অভিযোগ অনুযায়ী, ইউন ও তার পিপল পাওয়ার পার্টি এমন একটি পরিকল্পনা করেছিল যাতে রাষ্ট্রপতি ইউন বিদেশ ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেকে সরিয়ে রেখে তার প্রধানমন্ত্রীকে (prime minister) সাময়িকভাবে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিতে দেন। বিরোধীদলের ভাষায় এটি সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন (blatant constitutional violation) এবং কোন আইনগত ভিত্তি নেই। তারা ঘোষণা করেছে যে তারা প্রতি শনিবার অভিশংসন ভোট আনবে। এক্ষেত্রে তারা এই আশা করছে যে, চাপ অব্যাহত রেখে বিক্ষোভ চালিয়ে গেলে ইউন-এর দলের আরো সদস্য ভোটে অংশ নেবে।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার দুর্নীতি তদন্ত ব্যুরোর (Corruption Investigation Bureau) প্রধান প্রসিকিউটর (chief prosecutor) রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইয়ল এবং তার শীর্ষস্থানীয় কিছু কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা (travel ban) জারি করেছেন। রাষ্ট্রপতি ইউন এখন রাষ্ট্রদ্রোহ (treason) এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের (abuse of power) অভিযোগে তদন্তের অধীনে রয়েছেন।
তথ্যসূত্র
- https://www.bbc.co.uk/news/articles/cwydj9k7jkgo
- https://www.theguardian.com/world/2024/dec/09/south-korea-ruling-party-accused-of-second-coup-as-opposition-pushes-for-new-impeachment-vote
কেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট সামরিক আইন (Martial Law) ঘোষণা করেছিলেন? (৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪)
ভূমিকা
৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার গভীর রাতে, দক্ষিণ কোরিয়ার চাপে থাকা প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল (Yoon Suk Yeol) একটি চমকে দেওয়া ভাষণে দেশে সামরিক আইন (Martial Law) ঘোষণা করে বসেন। তিনি বলেন, কথিত “রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি”কে নির্মূল করবেন। এই পদক্ষেপ চার দশক আগে সামরিক শাসন (Military Rule) শেষ হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় আর দেখা যায়নি। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে, দক্ষিণ কোরিয়াকে সংকটে ফেলার মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যেই ইউন আবার তার সিদ্ধান্ত পাল্টে সামরিক আইন তুলে নেন। এটা এমন এক অভাবনীয় নাটকীয় মোড় যা মূলত কেউ কল্পনাও করেনি। এই নিবন্ধে ব্যাখ্যা করা হবে যে কী ঘটেছিল, কেন ইউন সামরিক আইন ঘোষণা করেছিলেন, কীভাবে তা এত দ্রুত ভেস্তে গেল, এবং এর ফলে তার ও দক্ষিণ কোরিয়ার ভবিষ্যতের গতিপথ কী হতে পারে।
সামরিক আইন ঘোষণার পটভূমি
প্রেসিডেন্ট ইউন বলেন যে তিনি ফ্রি রিপাবলিক অব কোরিয়া (Free Republic of Korea)-কে উত্তর কোরিয়ার (North Korean) সাম্যবাদী (Communist) শক্তির হুমকি থেকে রক্ষা করতে সামরিক আইন ঘোষণা করছেন। এছাড়াও তিনি বলেন, নির্লজ্জ প্রো-উত্তর কোরিয়ান (Pro North Korean) রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি, যারা আমাদের জনগণের স্বাধীনতা ও সুখ লুণ্ঠন করছে, তাদের নির্মূল করতে এবং স্বাধীন সাংবিধানিক শৃঙ্খলা (Constitutional Order) রক্ষা করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইউন আরও বলেন যে সামরিক আইনের মাধ্যমে তিনি ফ্রি রিপাবলিক অব কোরিয়াকে পুনর্গঠন ও রক্ষা করবেন এবং শীঘ্রই দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানোর লক্ষ্য রাখবেন।
‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ কারা?
তাহলে এই ভয়ঙ্কর ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ও ‘প্রো-উত্তর কোরিয়ান’ শক্তি কারা, যাদের সম্পর্কে ইউন বলছেন? এখানে তিনি আসলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দলের নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদ (National Assembly) অর্থাৎ পার্লামেন্টকে ইঙ্গিত করেছেন, যাদের তিনি অপরাধীদের আস্তানা বলে অভিহিত করেছেন।
এক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট হল ইউনের রক্ষণশীল (Conservative) দল ও দক্ষিণ কোরিয়ার লিবারেল (Liberal) বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (Democratic Party) মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। বিশেষ করে তারা পরের বছরের বাজেট (Budget) নিয়ে বিরোধে লিপ্ত এবং বিরোধী দল সরকারের একাধিক কর্মকর্তাকে (যার মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কিছু প্রসিকিউটর (Prosecutors) রয়েছে) ইমপিচ (Impeach) করার চেষ্টা করে আসছে। ইউনের ভাষ্য অনুযায়ী, তার প্রশাসন শুরু হওয়ার পর থেকে জাতীয় পরিষদ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ২২টি ইমপিচমেন্ট (Impeachment) প্রস্তাব পেশ করেছে, যা তিনি নজিরবিহীন (Unprecedented) বলে অভিহিত করেছেন। ইউন আরও বলেন, বিরোধী দলের এই “বিধানিক একনায়কত্ব” (Legislative Dictatorship) দেশকে পঙ্গু করে ফেলেছে এবং মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে (Liberal Democratic System) উচ্ছেদের প্রয়াসের সামিল।
সামরিক আইন (Martial Law) কী?
সামরিক আইন হল এক প্রকার জরুরি অবস্থা, যেখানে সামরিক কর্তৃপক্ষ (Military Authorities) সাময়িকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। দেশের সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ (Army Chief of Staff) পার্ক ইউন সু (Park Eun Soo) দ্রুতই সামরিক আইন কমান্ডের (Martial Law Command) প্রধান হিসেবে নিশ্চিত হন। এরপর এই কমান্ড দ্রুত একটি ডিক্রি (Decree) জারি করে, যেখানে সমস্ত রাজনৈতিক কার্যকলাপ, জাতীয় পরিষদ ও রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড, এবং যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ (Protest) নিষিদ্ধ করা হয়। সকল গণমাধ্যম (Media) ও প্রকাশনার উপর সামরিক আইন কমান্ডের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ধর্মঘট (Strike) ও কাজ বন্ধ (Work Stoppage) করাও নিষিদ্ধ হয়। নির্দেশনা অমান্যকারীদের গ্রেপ্তার (Arrest), আটক (Detain) ও তল্লাশি (Search) করা এবং সামরিক আইন অ্যাক্ট (Martial Law Act) অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার নিয়মও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবিধান (Constitutionally speaking) অনুসারে, প্রেসিডেন্ট যুদ্ধকালীন (Wartime), যুদ্ধ-সদৃশ পরিস্থিতি (War-like Situations) বা অন্য কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ জাতীয় জরুরি অবস্থায় সামরিক আইন ঘোষণা করতে পারেন, যেখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় সামরিক বাহিনীর ব্যবহার দরকার। আপনি নিজেই বিচার করে দেখতে পারেন এই শর্ত পূরণ হয়েছিল কিনা। তবে অনুমেয় যে বিরোধী দল তাৎক্ষণিকভাবে একে অসাংবিধানিক (Unconstitutional) বলে নিন্দা করে। শুধু বিরোধী দলই নয়, প্রেসিডেন্ট ইউনের নিজের দল পিপল পাওয়ার পার্টির (People Power Party) প্রধানও একে প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেন। এমনকি সিউলের (Seoul) মেয়র, যিনি ইউনের দলেরই, তিনিও এর বিরোধিতা করেন।
সামরিক আইন ঘোষণার পরের বিশৃঙ্খলা
জাতীয় পরিষদের সামনে দ্রুত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যেখানে প্রতিবাদকারীরা (Protesters) জড়ো হয় এবং পুলিশ (Police) ও সৈন্যরা (Soldiers) তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করে। লাইভ সম্প্রচারে (Live Footage) দেখা যায়, সামরিক আইন প্রয়োগকারী সৈন্যরা জাতীয় পরিষদ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করছে, আর সেখানে পার্লামেন্ট স্টাফরা (Parliament Aides) অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (Fire Extinguisher) স্প্রে করে ও অস্থায়ী ব্যারিকেড (Makeshift Barricade) তৈরি করে তাদের ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
তবুও, সামরিক আইন ঘোষণার প্রায় আড়াই ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় পরিষদের ৩০০ আইন প্রণেতার (Lawmakers) মধ্যে অর্ধেকের বেশি কোনভাবে চেম্বারে উপস্থিত হতে সক্ষম হন। অনেকে সামরিক ব্যারিকেড টপকাতে দেয়ালের ওপর দিয়ে উঠেছেন বলে জানা যায়। শেষ পর্যন্ত তারা প্রায় ১৯০-০ ভোটে সামরিক আইন ঘোষণার বিরোধিতা করে প্রস্তাব পাস করেন। এই প্রস্তাবে ইউনের নিজের দলের ১৮ জন সদস্যও সায় দেন। সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদের এই ভোটের প্রতি প্রেসিডেন্ট ইউনের আইনি বাধ্যবাধকতা (Legally Had to Comply) ছিল। এরপর দীর্ঘ সময় ইউন নীরব থাকেন। আইন প্রণেতারা জাতীয় পরিষদেই অবস্থান করেন, আর বিক্ষোভ রাতভর চলতে থাকে।
সামরিক আইন প্রত্যাহার
অবশেষে রাত প্রায় ৪:৩০-এ ইউন লাইভ সম্প্রচারে ঘোষণা করেন যে জাতীয় পরিষদের ভোটের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তিনি সামরিক আইন দায়িত্বে থাকা সৈন্যদের ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং এর ফলে সরকার সামরিক আইন প্রত্যাহার করেছে। অর্থাৎ সামরিক আইন ঘোষণার মাত্র ছয় ঘণ্টা পরই তা তুলে নেওয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট ইউনের এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী?
এখন স্বাভাবিক প্রশ্ন ওঠে, ইউন আসলে কী ভাবছিলেন?
বৃহত্তর প্রেক্ষাপট হল, ২০২২ সালে নির্বাচিত রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইউন অত্যন্ত অপ্রিয় (Deeply Unpopular)। তার প্রশাসন বিরোধী দলের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় পরিষদের কারণে কার্যত অচল। বিরোধী দল সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইনসভার নির্বাচনে (Legislative Election) ব্যাপক বিজয় অর্জন করে, যা ইউনকে কার্যত অক্ষম (Lame Duck) অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তার মেয়াদের বাকি সময় কোনো সহজ পথ খোলা নেই।
ইউন ও তার স্ত্রীকে (Wife) দুর্নীতির (Corruption) অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিরোধী দল অভিযোগ করে যে প্রসিকিউটররা এই দুর্নীতির অভিযোগ সঠিকভাবে তদন্ত না করায় তাদের ইমপিচ করার চেষ্টা চলছে। বিরোধী দল ইউনের প্রস্তাবিত বাজেট থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ কেটে দেওয়ার চেষ্টা করছে, বিশেষত প্রেসিডেন্টের কার্যালয় (Presidential Office), জাতীয় প্রসিকিউশন (National Prosecutors) ও পুলিশের (Police) বাজেটে। অনেকের মতে, এর উদ্দেশ্য হল প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে খর্ব করা।
এ অবস্থায় ইউনের এই সামরিক আইন পদক্ষেপকে খুব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ (High Stakes Gamble) চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা দিয়ে তিনি বিরোধী পক্ষকে দমন করে নিজের অবস্থান শক্ত করতে চেয়েছিলেন। তবে স্ব-উদ্যোগে ক্ষমতা দখলের (Attempted Self-Coup) প্রয়াস হিসেবে এটি ছিল অত্যন্ত দুর্বলভাবে পরিকল্পিত। হয়তো এতে তার মন্ত্রিসভার কিছু সদস্য ও সামরিক বাহিনীর কিছু অংশের সমর্থন ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রায় কারো সমর্থন এটি পাননি। শোনা যাচ্ছে যে ইউনের ঘনিষ্ঠ মহল ছাড়া আর কাউকে বিষয়টি আগে জানানো হয়নি।
জনপ্রতিনিধিদের (Lawmakers) পার্লামেন্টে ঢুকতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মধ্যরাতের সেই সময়েও সাধারণ মানুষ ও আইন প্রণেতারা দ্রুতগতিতে সংঘটিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। এমনকি ইউনের কল্পিত সফল অবস্থা হলেও তাকে সামরিক দমন-পীড়ন (Military Repression) করে আইন প্রণেতা ও প্রতিবাদকারীদের চেপে রাখতে হতো, যা বিশাল গণআন্দোলন (Mass Protest) সৃষ্টি করতে বাধ্য। দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্র (Democracy) দীর্ঘ সংগ্রামের ফল। ১৯৫০ থেকে ৮০’র দশক পর্যন্ত দেশটিতে একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান (Coup), হত্যাকাণ্ড (Assassination), একনায়কতন্ত্র (Dictatorship), গণঅভ্যুত্থান (Uprising), এবং গণহত্যা (Massacre) ঘটেছে। সামরিক আইন কথাটি তাই মানুষের মনে খুবই তীব্র আবেগ সৃষ্টি করে। শেষবার সামরিক আইন জারি হওয়ার পর গাওয়াংজুতে (Gwangju) সৈন্যরা শত শত গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীকে হত্যা করেছিল। সেই স্মৃতি এখনো অনেক কোরিয়ানের জীবনে জীবন্ত।
ফলাফল ও ভবিষ্যত
ফলে বলা যায়, ইউন ইতোমধ্যেই একজন দুর্বল ও চাপে থাকা প্রেসিডেন্ট ছিলেন, কিন্তু এক রাতেই তিনি তার বাকি সামান্য ক্ষমতার ভিত্তিটুকুও ধ্বংস করে ফেললেন। ৪ ডিসেম্বর বুধবার সকালে সূর্য ওঠার সময় দেখা গেল ইউনের পদত্যাগ (Resignation) দাবী তীব্রতর হয়েছে এবং বিরোধী দল ইতোমধ্যেই ইমপিচমেন্ট (Impeachment) প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া বরাবরই নেতাদের ইমপিচ (Impeach) ও বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে সক্রিয় ঐতিহ্য বজায় রেখেছে, তাই অনুমান করা কঠিন নয় যে ইউনকেও সেই ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে।
তথ্যসূত্র
Yoon’s declaration and martial law decree:
https://www.yna.co.kr/view/AKR20241203158900001?section=politics/all&site=major_news01_related
https://www.reuters.com/world/asia-pacific/full-text-south-koreas-martial-law-decree-2024-12-03/
South Korean constitution:
https://elaw.klri.re.kr/eng_service/lawView.do?lang=ENG&hseq=1
Response from Yoon’s party:
https://koreajoongangdaily.joins.com/news/2024-12-03/national/politics/Martial-law-is-wrong-Han-Donghoon-pledges-to-stop-Yoon-Suk-Yeol/2191865
https://www.koreaherald.com/view.php?ud=20241204050003
Protests, parliament and u-turn:
https://www.reuters.com/world/asia-pacific/south-korea-president-yoon-declares-martial-law-2024-12-03/
https://apnews.com/article/south-korea-yoon-martial-law-997c22ac93f6a9bece68454597e577c1
https://www.yna.co.kr/view/AKR20241204019252001?section=politics/all&site=topnews01
Yoon approval rating:
https://www.donga.com/en/article/all/20241109/5275177/1
Opposition vs Yoon context:
https://www.bbc.co.uk/news/articles/c0lgw1pw5zpo
https://www.ft.com/content/6fefcb5a-98a5-4e60-a989-fcc0d84625f9
Yoon kept many in dark about plans:
https://www.hani.co.kr/arti/politics/politics_general/1170767.html
Gwangju massacre, 1980:
https://en.wikipedia.org/wiki/Gwangju_Uprising
Opposition moves to impeach Yoon:
https://en.yna.co.kr/view/AEN20241204010951315?section=national/politics
Leave a Reply