ওয়ার্ল্ড নিউজ ডেইলি

Table of Contents

৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

দক্ষিণ আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের হুমকি

মেক্সিকো ও কানাডার ওপর মার্কিন শুল্ক আরোপ ৩০ দিন পিছিয়ে দেওয়া

ফ্রান্সে আরেকটি অনাস্থা ভোটের প্রস্তুতি

যুক্তরাজ্যে অভিযুক্ত প্রাক্তন সৈনিকের সাজা

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

শুল্কযুদ্ধের সূচনা করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে ইলন মাস্কের দ্বারা ইউএসএইড (USAID) বন্ধের সম্ভাবনা?

ইইউর প্রতিরক্ষা বৈঠক ও সম্ভাব্য খরচ বৃদ্ধি

বেলজিয়ামে নতুন সরকার গঠন ও প্রধানমন্ত্রীর রদবদল

৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • ব্রেক্সিটের পাঁচ বছর: সর্বশেষ জনমত ও দেশটির হতাশা
  • চীনের বিশাল সামরিক স্থাপনা: বেইজিংয়ের (Beijing) নিকটবর্তী প্রকল্প
  • ট্রাম্পের মন্তব্য ও ওয়াশিংটন ডিসির বিমান দুর্ঘটনা
  • মিয়ানমারের সামরিক জান্তার জরুরি অবস্থা আরও ছয় মাস বৃদ্ধি

ব্রেক্সিটের পাঁচ বছর: সর্বশেষ জনমত ও দেশটির হতাশা (সংক্ষিপ্ত) (৩১ জানুয়ারি, ২০২৪)

নতুন এক জনমত জরিপ (poll) প্রকাশ করেছে ইউগভ (YouGov), যেখানে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্রেক্সিট (Brexit) নিয়ে অনুশোচনার হার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৫% মনে করছেন যে, যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার সিদ্ধান্তটি ছিল ‘ভুল’। অন্যদিকে মাত্র ৩০% মানুষ (যা গত নভেম্বরে প্রাপ্ত হার থেকে ৩ পয়েন্ট কম) এখনো মনে করেন যে, যুক্তরাজ্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক গণভোটে (referendum) ব্রিটিশ জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু তখনকার উত্তপ্ত প্রচারণায় যে-সব প্রতিশ্রুতি ও ধারণা তুলে ধরা হয়েছিল, তার অনেকগুলো এখনও বাস্তবে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে জটিলতা, শ্রমবাজারে ব্যাপক রদবদল ও উত্তর আয়ারল্যান্ড সঙ্কট—এসব মিলিয়ে নাগরিকদের বড় অংশ ব্রেক্সিটকে নিয়ে এখন অনুতপ্ত।

YouGov-এর জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যারা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন তাদের মধ্যেও একাংশ এখন মত বদলাচ্ছেন। যদিও ঠিক কতো শতাংশ সেই ভোটাররা মত বদলেছেন তা জরিপে স্পষ্ট করে উল্লেখ নেই, তবে সামগ্রিকভাবে প্রায় ৫৫% মানুষের এই অনুশোচনা প্রমাণ করে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার কার্যক্রমটি বহু মানুষের প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে।

পেছনের গল্প: কীভাবে বাস্তবায়িত হলো ব্রেক্সিট (Brexit)

২০১৬ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে জনতার রায় আসে ‘ইইউ ত্যাগ’ (Leave the EU)। তবে বাস্তবে ইইউ-তে থাকা ও বের হয়ে যাওয়ার মধ্যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছিল। চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল চূড়ান্ত প্রস্থানের আগে, যা ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শেষ হয়। কিন্তু যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট কার্যকর হয় (২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি), তার পরেও ছিল দীর্ঘস্থায়ী আলোচনার ধাপ।

শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন টেরেসা মে (Theresa May)। তিনি ব্রেক্সিট নিয়ে বহু আলোচনা, সংসদীয় বিতর্ক ও একটি চূড়ান্ত প্রত্যাহার চুক্তি (Withdrawal Agreement) তৈরিতে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। সেই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল নর্দার্ন আইরিশ ব্যাকস্টপ (Northern Irish backstop)। ব্যাকস্টপের মূল কথা ছিল, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্রের (Republic of Ireland) মধ্যে যেন কঠিন সীমান্ত (Hard Land Border) তৈরি না হয়, সেজন্য উত্তর আয়ারল্যান্ডকে অন্তত আংশিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিঙ্গেল মার্কেটের (Single Market) অংশ রাখা। এ ছাড়া বিকল্প সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত পুরো যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাস্টমস ইউনিয়নে (EU Customs Union) রাখা হবে—এটাই ছিল মে-র প্রস্তাব।

কিন্তু বরিস জনসন (Boris Johnson), যিনি মে-র পরে প্রধানমন্ত্রী হন, ব্যাকস্টপ পদ্ধতিকে পুরোপুরি সমর্থন করতে চাননি। তার আশঙ্কা ছিল, এভাবে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে ইইউ-র সঙ্গে যুক্ত রেখে দিলে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং ব্রেক্সিটের মূল ভাবধারা ক্ষুণ্ণ হবে। তিনি একে একটি ‘অপূর্ণ’ বা ‘আংশিক’ ব্রেক্সিট বলে উল্লেখ করতেন। ফলে নতুন প্রস্তাবে জনসন চেয়েছিলেন, উত্তর আয়ারল্যান্ড শুধু পণ্যের ক্ষেত্রে সীমিত আকারে ইইউ সিঙ্গেল মার্কেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, কিন্তু শুল্ক বিষয়ে (Customs) যুক্ত থাকবে মূল ভূখণ্ডের (Mainland UK) সঙ্গেই।

ফলে তৈরি হয় আয়ারিশ সাগর সীমানা (Irish Sea border)। এর মাধ্যমে জাহাজে করে পণ্য প্রবেশ ও বহির্গমনের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অংশ ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যে এক ধরনের নতুন শুল্ক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হয়। যদিও এটি ব্রেক্সিটের কূটনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙতে সহায়তা করেছিল, তবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের কিছু ইউনিয়নপন্থী (Unionist) শক্তি এটিকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তাদের যুক্তি ছিল, এটি ভবিষ্যতে উত্তর আয়ারল্যান্ডকে লন্ডন থেকে আরো বিচ্ছিন্ন করবে।

পরে রিশি সুনাক (Rishi Sunak) প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর উিন্ডসর ফ্রেমওয়ার্ক (Windsor Framework) নামের একটি সংশোধিত সমঝোতা সই হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল উত্তর আয়ারল্যান্ড নিয়ে সৃষ্ট বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক জটিলতাগুলো আরও নমনীয়ভাবে সমাধান করা। তা-ও ব্রেক্সিট-পরবর্তী সম্পর্ক পুরোপুরি মসৃণ হয়ে ওঠেনি।

সামনের দিনগুলো: নতুন লেবার (Labour) সরকারের অবস্থান

ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এখন লেবার দলের কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer)। তার সরকার বারবার উল্লেখ করে আসছে যে, তারা ব্রেক্সিট চুক্তির বর্তমান শর্তাবলিকে (Terms of the Deal) আরও উন্নত করতে চান। তাদের লক্ষ্য ইইউ-র সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ককে নতুন করে মজবুত করা। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নে ফেরা সম্ভব নয় বলেই সরকার পক্ষ জানিয়েছে, তবু নতুন বাণিজ্য চুক্তি, ভ্রমণ নিয়ম সহজীকরণ এবং গবেষণা ও শিক্ষা খাতে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছে।

কিন্তু সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনো সন্দেহ রয়ে গেছে যে, সামনের পাঁচ বছরে লেবার সরকার ব্রেক্সিট পরিস্থিতিকে ইতিবাচক দিকে কতটা নিয়ে যেতে পারবে। যেহেতু অর্থনৈতিক মন্দা ও বেশ কিছু কাঠামোগত সমস্যা জর্জরিত করছে যুক্তরাজ্যকে, তাই লেবার সরকারের জন্য এটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র

চীনের বিশাল সামরিক স্থাপনা: বেইজিংয়ের (Beijing) নিকটবর্তী প্রকল্প (সংক্ষিপ্ত) (৩১ জানুয়ারি, ২০২৪)

এদিকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হচ্ছে, চীন (China) বেইজিংয়ের দক্ষিণপশ্চিমে (প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে) বিশাল সামরিক স্থাপনা গড়ে তুলছে বলে স্যাটেলাইট চিত্রে উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়েছে, এটি অন্তত ১,৫০০ একর (Acre) এলাকা জুড়ে নির্মিত হচ্ছে—যা আকারে যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগনের (Pentagon) তুলনায় অন্তত দশ গুণ বড়।

কেমন হতে পারে এই সামরিক কমপ্লেক্স (Military Complex)?

ফিনান্সিয়াল টাইমস (Financial Times) প্রাপ্ত স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, ওই এলাকায় অত্যন্ত গভীর গর্ত খোঁড়া হচ্ছে, যা বড় ধরনের ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার (Underground Bunker) তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে। সামরিক বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এটি চীনের সামরিক নেতৃত্বের জন্য একটি নিরাপদ স্থাপনা হবে, যেখানে যেকোনো সংঘাত বা এমনকি পারমাণবিক যুদ্ধ (Nuclear War) পরিস্থিতিতেও সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে।

চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (People’s Liberation Army – PLA) ২০২৭ সালে নিজেদের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার দ্রুত সম্প্রসারণ করছে—এমনটাই দাবি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার। এছাড়া চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping) নাকি নির্দেশ দিয়েছেন যে, ২০২৭ সালের আগেই PLA যেন তাইওয়ানে (Taiwan) আক্রমণের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে বিশাল এই প্রকল্পকে সামরিক দিক থেকে ‘ডুমসডে বান্কার’ (Doomsday Bunker) হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে চীনা নেতৃত্ব বড়সড় কোনো যুদ্ধের সময় আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নিতে পারবে।

স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষকদের মতে, সেখানে অসংখ্য সুড়ঙ্গ, খাল ও সংযোগপথ তৈরি হচ্ছে। তারা বলছেন, কমপক্ষে এক শ’র বেশি ক্রেন (Crane) দিয়ে পাঁচ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে এই বিশাল ভূগর্ভস্থ পরিকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্সের (Department of Defense) অধীন ন্যাশনাল জিওস্পেশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (National Geospatial Intelligence Agency) সাবেক এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, প্রকল্পের পরিসর এতই বড় যে, এটি সম্ভাব্যভাবে চীনের কেন্দ্রীয় যুদ্ধকালীন কমান্ড সেন্টার হয়ে উঠতে পারে।

চীনের পুরনো ওয়েস্টার্ন হিলস কমপ্লেক্স (Western Hills complex), যা শীতল যুদ্ধ (Cold War) সময়ে নির্মিত হয়েছিল, সম্ভবত এই নতুন স্থাপনার চেয়ে অনেক বেশি পুরনো প্রযুক্তিনির্ভর। কাজেই নতুন প্রকল্পে আধুনিক নিরাপত্তা ও যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে চীন তার সামরিক নেতৃত্বের সুরক্ষা বহুগুণ বাড়াতে পারে।

সূত্র

ট্রাম্পের মন্তব্য ও ওয়াশিংটন ডিসির বিমান দুর্ঘটনা (সংক্ষিপ্ত) (৩১ জানুয়ারি, ২০২৪)

যুক্তরাষ্ট্রে একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় হেলিকপ্টার ও একটি আমেরিকান এয়ারলাইন্স (American Airlines) আঞ্চলিক জেটের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যাতে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ওয়াশিংটন ডিসির (Washington, D.C.) কাছাকাছি এলাকায়। যদিও দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে তদন্ত চলছে।

তারপরও দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) হোয়াইট হাউসের প্রেস ব্রিফিং রুমে দাঁড়িয়ে কোনো রকম প্রমাণ বা তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়াই বলে বসেন যে, ‘ডাইভারসিটি, ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন (Diversity, Equality and Inclusion) স্কিম—সংক্ষেপে ডিইআই (DEI)—এর কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ তার ভাষায়, ‘বাইডেন প্রশাসনের (Biden Administration) সময়ে যেসব ঢিলেঢালা নিরাপত্তাবিধি রাখা হয়েছিল, সেগুলোই এই বিমান দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।’

তিনি আরও দাবি করেন যে, হেলিকপ্টারের পাইলটদের যোগ্যতা বা প্রশিক্ষণে ‘মানের ঘাটতি’ ছিল, এবং এটি ‘মানুষের সাধারণ বুদ্ধি’ দিয়েই বোঝা যায়। কিন্তু ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেইফটি বোর্ড (National Transport Safety Board – NTSB) স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এখনো তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ঠিক কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা নির্দিষ্ট করে বলার মতো কোনো তথ্য এখনো তাদের হাতে নেই।

ট্রাম্পের এ ধরনের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের প্রথাগত নীতি ভঙ্গ করেছে। সাধারণত মারাত্মক কোনো পরিবহন দুর্ঘটনা বা বিমান দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে মুখ খোলার এখতিয়ার একমাত্র NTSB-এর থাকে। প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোনো সরকারি কর্মকর্তা সরাসরি তদন্তের ফলাফলের আগেই মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু ট্রাম্প এবার সেই রীতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলেন।

সূত্র

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার জরুরি অবস্থা আরও ছয় মাস বৃদ্ধি (সংক্ষিপ্ত) (৩১ জানুয়ারি, ২০২৪)

অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে মিয়ানমার (Myanmar) ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের (Military Coup) মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চি (Aung San Suu Kyi)-র সরকারকে উৎখাত করা হয়। আজ সেই ঘটনার চার বছর পূর্তি প্রায় সামনে, তার আগের দিনই দেশটির সামরিক শাসকরা (Military Junta) আবারও ছয় মাসের জন্য জরুরি অবস্থা (State of Emergency) বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এটি নিয়ে সপ্তমবারের মতো জরুরি অবস্থা বৃদ্ধির ঘটনা ঘটল। সামরিক জান্তা বলছে, এখনও দেশের স্থিতিশীলতা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি, তাই নির্বাচনের (Election) আগে আরও সময় প্রয়োজন। সামরিক সরকার আগে বলেছিল, তারা ২০২৩ বা ২০২৪ সালের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। কিন্তু এখন তারা বলছে, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে নাগরিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা দরকার।’

অন্যদিকে, অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশটিতে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। সাধারণ নাগরিকরা, গণতন্ত্রপন্থী গেরিলা বাহিনী (Pro-democracy Resistance) ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন এখনো সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। বড় বড় জাতিগত গোষ্ঠী, যেমন কারেন (Karen) বা কাচিন (Kachin) — এদেরও নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী আছে, যারা স্থানীয়ভাবে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে। ফলে সামরিক জান্তা আসলে গোটা দেশের নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে পারছে না।

শুধু তা-ই নয়, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাংশ মনে করেন যে, সামরিক জান্তা যেই নির্বাচনই দিক না কেন, তা ‘প্রহসন’ (Sham) হবে। বহু রাজনৈতিক দল বা নেতা আগে থেকেই কারাগারে, নিষিদ্ধ বা গৃহবন্দি। অনেকে আবার সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণাও দিয়েছে।

জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ রাপোর্টিয়ার (UN Special Rapporteur on Human Rights in Myanmar) সাম্প্রতিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে, বিমান হামলা ও গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ খাদ্যসংকটে ভুগছে। তার কথায়, ‘বিরাট সংখ্যক মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।’

মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, স্থানীয় অর্থনীতি ও জনজীবন কার্যত ভেঙে পড়েছে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবা কার্যকরভাবে কাজ করছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে সামরিক জান্তা নির্বাচন দিলেও তা মূলত নিজেদের ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য একপাক্ষিক প্রক্রিয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

সূত্র

৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • ট্রাম্পের পরিকল্পনা: গুয়ান্তানামো বেতে অভিবাসী আটক শিবির
  • জার্মানিতে অভিবাসন বিতর্ক: CDU/CSU প্রস্তাবে AfD-এর সমর্থন
  • ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি তদন্তের মুখে
  • যুক্তরাষ্ট্রে রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের স্বাস্থ্য সচিব পদে শুনানি

ট্রাম্পের পরিকল্পনা: গুয়ান্তানামো বেতে অভিবাসী আটক শিবির

ঘোষণা এবং প্রস্তাবিত ধারণা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ঘোষণা করেছেন যে, তিনি ৩০,০০০ (thirty thousand) ধারণক্ষমতার একটি অভিবাসী আটক কেন্দ্র (migrant detention facility) তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত কিউবার (Cuba) গুয়ান্তানামো বে নৌ ঘাঁটিতে (Guantanamo Bay Naval Base) স্থাপন করা হবে। ট্রাম্প বলেন, এখানে “সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধী অনিয়মিত অভিবাসীরা (criminal illegal aliens) থাকবে, যারা আমেরিকান জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ,” এবং “সেখান থেকে বের হওয়া খুব কঠিন হবে।” অন্যদিকে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী (Secretary of Defence) পিট হেগসেথ (Pete Hegseth) জানিয়েছেন, এই ঘাঁটিটি ব্যবহার করে অভিবাসীদের সাময়িকভাবে আটক রাখা যাবে—যতক্ষণ না তাদের নিজ দেশে বা তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর (deport) ব্যবস্থা করা হয়।

গুয়ান্তানামো বে (Guantanamo Bay)-এর পটভূমি: গুয়ান্তানামো বে-তে বর্তমান আটক শিবির প্রথম তৈরি হয় ২০০২ সালে, জর্জ ডব্লিউ বুশ (Bush) প্রশাসনের সময়। “গ্লোবাল ওয়ার অন টেরর (global war on terror)” চলাকালে বিদেশি মিলিট্যান্ট সন্দেহভাজনদের (foreign militant suspects) রাখার জন্য এটি গড়ে তোলা হয়েছিল। বর্তমানে শিবিরটিতে মাত্র ১৫ জন বন্দি (prisoners) রয়েছেন। অতীতে এ শিবিরটি অত্যন্ত কঠোর ও নির্দয় আচরণ, নির্যাতন (torture), এবং “এনহ্যান্সড ইন্টারোগেশন (enhanced interrogation)” কৌশল ব্যবহারের অভিযোগে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। যেহেতু ঘাঁটিটি কিউবার মাটিতে অবস্থিত হলেও এটি সম্পূর্ণভাবে আমেরিকান নিয়ন্ত্রণাধীন, তাই আইনিভাবে এটি একধরনের ‘গ্রে এরিয়া (legal grey area)’—যেখানে নিয়মিত মার্কিন আইনি সুরক্ষা প্রয়োজনে প্রযোজ্য হয় না। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (Amnesty International) এই ঘোষণার পর জানায়, গুয়ান্তানামো বে হল “নির্যাতন এবং অভিযোগ ছাড়াই অনির্দিষ্টকাল ধরে আটক রাখার (indefinite detention without charge) প্রতীক।” তারা আরও বলে, ট্রাম্পের উচিত ছিল এই কারাগারটি বন্ধ করা (closing the prison), কিন্তু উল্টোভাবে তিনি এটি “অফশোর অভিবাসী আটক কেন্দ্রে (offshore immigrant detention facility) পরিণত করতে চাইছেন।” কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ ক্যানেল (Miguel Diaz Canel) এটিকে “নিষ্ঠুরতার একটি কাজ” বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেন, এটি “কিউবার অবৈধভাবে দখলকৃত অঞ্চলে” চলছে।
বিদ্যমান অভিবাসী আটক ব্যবস্থার বাস্তবতা: উল্লেখ্য, গুয়ান্তানামো বে-তে আগে থেকেই একটি আলাদা অভিবাসী আটক কেন্দ্র (migrant detention facility) রয়েছে, যা উচ্চ নিরাপত্তা বিশিষ্ট সামরিক কারাগার (military prison) থেকে ভিন্ন ও মূল শিবির থেকে আলাদা। নিউ ইয়র্ক টাইমস (New York Times) জানিয়েছে, গত কয়েক দশক ধরে এটি সমুদ্রপথে ধরা পড়া অভিবাসীদের রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর ব্যবহার কমে গিয়েছিল; ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মাত্র ৩৭ জন অভিবাসীকে এখানে আটক রাখা হয়। তবে এই আটক কেন্দ্রের গোপনীয়তা (secrecy), বিচ্ছিন্নতা (isolation), এবং প্রচলিত মার্কিন আইনি সুরক্ষার বাইরে পরিচালনার কারণে এখানে কী ঘটে, সে সম্পর্কে জনসাধারণের পরিষ্কার ধারণা নেই। গোপনীয়তা ও দায়বদ্ধতার (lack of accountability) অভাবের অভিযোগও রয়েছে। কিছু মানবাধিকার সংস্থা এখানে অমানবিক পরিবেশ ও দুর্ব্যবহারের কথা জানিয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সমালোচনা: এখনো স্পষ্ট নয়, ঠিক কবে এই ৩০,০০০ ধারণক্ষমতার শিবির তৈরি হবে বা কত খরচ পড়বে, কিংবা কারা কারা মূলত সেখানে পাঠানো হবে। পদে আসার পর থেকেই ট্রাম্প তৎপরভাবে অভিবাসীদের ওপর কঠোর অভিযান চালাচ্ছেন—যেমন দক্ষিণ সীমান্তে (southern border) জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা, সামরিক বাহিনী মোতায়েন, আশ্রয়ের পথ সংকুচিত (limiting pathways to asylum) করা, শরণার্থী (refugee) কর্মসূচি স্থগিত করা, এবং দেশজুড়ে ব্যাপক হারে নির্বাসন (deportation) তৎপরতা বাড়ানো। গুয়ান্তানামো বে-তে আটককেন্দ্র তৈরি করা সেই ধারারই আরেকটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই উদ্যোগের সমালোচনায় মুখর, তাদের আশঙ্কা—এটি মানবিক মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করবে, পাশাপাশি আটক অভিবাসীদের আইনি সহায়তা পাওয়া আরও দুরূহ হবে। কিউবার সরকারও এই পদক্ষেপকে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে, যদিও বহু বছর ধরে গুয়ান্তানামো বে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে।

সূত্র

জার্মানিতে অভিবাসন বিতর্ক: CDU/CSU প্রস্তাবে AfD-এর সমর্থন

পার্লামেন্টে (Parliament) প্রস্তাব ও পাস হওয়ার পটভূমি: জার্মানির চ্যান্সেলর (Chancellor) পদপ্রার্থী ফ্রিডরিশ মের্ত্‌জ (Friedrich Merz), যিনি রক্ষণশীল CDU/CSU (Christian Democratic Union/Christian Social Union) জোটের নেতা, সম্প্রতি কঠোর অভিবাসন-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। ঐ প্রস্তাবে বলা হয়েছিল—জার্মানির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ (border controls) স্থায়ী করা, সব আশ্রয়প্রার্থীকে (asylum seekers) সীমান্ত থেকেই ফেরত দেওয়া, ইত্যাদি। প্রস্তাবটি আনা হয় গত সপ্তাহে এক আফগান (Afghan) আশ্রয়প্রার্থীর হাতে মৃত্য়ু ঘটানো ছুরিকাঘাতের ঘটনার প্রেক্ষিতে। সংসদে ভোটের সময় CDU/CSU-এর পাশাপাশি ডানপন্থী দল AfD (Alternative für Deutschland), FDP (Free Democratic Party), এবং কিছু স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যও (independent MPs) প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এটি জার্মানির আধুনিক পার্লামেন্টের ইতিহাসে প্রথমবার ঘটল যে, কোনো বিল (motion) এককভাবে AfD-এর সমর্থনেই পাস হলো। ঐতিহাসিকভাবে, AfD-কে জার্মানির মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো এড়িয়ে চলে, একে সহযোগিতা করতে চায় না। তাই এটি একপ্রকার “ট্যাবু ভাঙার (breaking of a taboo)” ঘটনা হিসেবে দেখছেন অনেকে।

রাজনৈতিক বিতর্ক ও সমালোচনা: সরকারি জোটের (শাসনরত জোট) বামঘেঁষা দলগুলি—SPD (Social Democratic Party of Germany) ও গ্রিনস (Greens)—এই ঘটনায় কড়া সমালোচনা করেছে। এমনকি সাবেক চ্যান্সেলর ও সাবেক CDU নেত্রী অ্যাঙ্গেলা মার্কেল (Angela Merkel) নিজেও এই সহযোগিতাকে সমালোচনা করে বলেন, মের্জ নভেম্বর মাসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে AfD-এর সঙ্গে কোনোভাবেই বড় ধরনের গঠনমূলক সহযোগিতা করবেন না। কিন্তু এখন তিনি সেই কথা রাখেননি। এ ব্যাপারে মের্ত্‌জ বলছেন, “খারাপ মানুষেরা (the wrong people) সমর্থন দিচ্ছে বলেই যে প্রস্তাব ভুল, তা নয়।” তবে বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছে।

নির্বাচনী প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ জোটের জটিলতা: আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচন হবে, এবং জনমত জরিপে (polls) দেখা যাচ্ছে, CDU/CSU এগিয়ে থাকলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। ফলস্বরূপ, সরকার গঠনে জোট (coalition) দরকার হবে। মের্জ আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি AfD-এর সঙ্গে সরকার গঠন করবেন না। অন্যদিকে, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে AfD, যা একটি ডানপন্থী দল, অতীতে অভিবাসনবিরোধী অবস্থান ও বিতর্কিত কথাবার্তার জন্য সমালোচিত। যদি CDU/CSU এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে SPD-র সঙ্গে “গ্র্যান্ড কোয়ালিশন” (grand coalition) করার পথ হয়তো খুলতে পারে। তবে SPD নেতা ও বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস (Olaf Scholz) এই সাম্প্রতিক ঘটনায় মের্জের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানিয়েছেন। শলৎস বলেন, AfD-এর সমর্থন নিয়ে কোনো প্রস্তাব পাস করানোর পর CDU/CSU যদি SPD-এর কাছে সহযোগিতা চায়, তবে সেটা আর সহজ হবে না। তিনি “বিশ্বাসযোগ্যতার” (trust) সংকটের কথা উল্লেখ করে বোঝান, মের্ত্‌জের কথায় বা প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করা কঠিন। অতএব, জার্মানির ভবিষ্যৎ সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা বেড়েছে।

আরও পড়ুন – 

জার্মানির CDU/CSU পার্টির মেনিফেস্টো ব্যাখ্যা (৩০ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি তদন্তের মুখে

কী ঘটেছে?: ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সম্প্রতি রোমের (Rome) প্রসিকিউটরদের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। অভিযোগ হলো, তার সরকার এক লিবিয়ান (Libyan) যুদ্ধবাজ ওসামা আল মাসরি নাজিম (Osama al Masri Nagim)-কে ইতালি থেকে ফেরত পাঠিয়েছে, যাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (International Criminal Court, সংক্ষেপে ICC) মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ (crimes against humanity) মামলায় আসামি হিসেবে খুঁজছে। ICC জানিয়েছে, নাজিমকে তাদের কাছে হস্তান্তর না করে বরং লিবিয়ায় ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্তে তারা “স্তম্ভিত (dismay)” হয়েছে। নাজিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি প্রায় দশক জুড়ে পরিচালিত একটি আটক কেন্দ্র (detention centre)-এ একাধিক হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন (torture), ও যৌন নিপীড়নে (sexual assault) জড়িত ছিলেন।

মেলোনির অবস্থান ও আইনি প্রক্রিয়া: মেলোনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে জানিয়েছেন, নাজিমকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া ঠিকমতো না হওয়ায় ইতালির আপিল আদালত (appeals court) তার আটক বহাল রাখতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে আদালত তাকে মুক্তি ও বহিষ্কার (deport) করার নির্দেশ দেয়—মেলোনি বলেন, এই সিদ্ধান্তটি নিতেই হয়েছে, কারণ তিনি ইতালির জননিরাপত্তার জন্য হুমকি (threat to Italian public security)। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এত গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত একজন সন্দেহভাজনকে এইভাবে “কারিগরি (technicality)” কারণে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। ইতালির বিরোধী দলগুলো মেলোনির সমালোচনা করে বলছে, তিনি লিবিয়ার সঙ্গে অভিবাসন ঠেকানোর (block the departure of migrants) চুক্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে নাজিমকে ফেরত পাঠিয়েছেন—কারণ মেলোনির সরকার ২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইতালিতে অভিবাসী আগমন রোধকে অগ্রাধিকারের (key policy priority) তালিকায় রেখেছে।

তদন্ত ও সম্ভাব্য ফলাফল: এখন রোমের প্রধান প্রসিকিউটর মেলোনি, তার বিচার মন্ত্রী (justice minister) এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে (interior minister) “অপরাধে সহায়তা ও অর্থের অপব্যবহার (aiding in abetting a crime and misuse of public funds)”—এমন অভিযোগে তদন্ত করছেন। মেলোনির সমর্থকরা পাল্টা অভিযোগ করছে যে, ইতালির বিচারবিভাগ (Italian judiciary) দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের সঙ্গে একটি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে সংঘাতে জড়িত, এবং এখন তারা “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে (politically motivated)” এমন তদন্ত করছে। কীভাবে এই তদন্ত শেষ হবে বা কী শাস্তি হতে পারে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে রাজনৈতিকভাবে এটি মেলোনির সরকারের জন্য অস্বস্তিকর। কারণ একদিকে অভিবাসন ইস্যুতে তিনি কঠোর অবস্থান নিতে চান, অন্যদিকে মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক আদালতের চাপ উপেক্ষা করাও সহজ নয়।

সূত্র

যুক্তরাষ্ট্রে রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের স্বাস্থ্য সচিব পদে শুনানি

পরিচয় ও বিতর্কের সূচনা: সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির (John F. Kennedy) ভাতিজা রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র—একে সংক্ষেপে আরএফকে জুনিয়র (RFK Jr.) বলা হয়—তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাস্থ্যমন্ত্রী (health secretary) হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এই মনোনয়ন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তুমুল বিতর্ক চলছে। এই সপ্তাহে সিনেট (Senate)-এ তার প্রথম মনোনয়ন অনুমোদন শুনানি (confirmation hearing) অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ডেমোক্র্যাট (Democratic) আইনপ্রণেতারা (legislators) তাকে কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অন্যদিকে রিপাবলিকান (Republican) পক্ষ থেকে তুলনামূলকভাবে নমনীয় (softball questioning) প্রশ্ন করা হয়।

প্রধান বিতর্ক: ভ্যাকসিন (vaccine) বিরোধী অবস্থান: শুনানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন প্রসঙ্গ ছিল আরএফকে জুনিয়রের ভ্যাকসিনবিষয়ক অবস্থান। অতীতে তিনি বিভিন্ন বক্তব্যে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন যে, ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ (safe) ও কার্যকর (effective) নয়। শোনানিতে তিনি দাবি করেন, তিনি “ভ্যাকসিন-বিরোধী নন (not anti vaccine)”, বরং তিনি চান আরও কঠোর ও স্বচ্ছ গবেষণা (stringent studies) হোক। তিনি এটাও বলেন যে, তার আগের মন্তব্য—“কোনো ভ্যাকসিনই পুরোপুরি নিরাপদ ও কার্যকর নয়”—শুধুমাত্র ‘কনটেক্সট’ থেকে বিচ্ছিন্ন করে প্রকাশ করা হয়েছে। শুনানিতে সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন (Elizabeth Warren) উল্লেখ করেন—সামোয়া (Samoa) সফরে গিয়ে আরএফকে জুনিয়র যেসব বক্তব্য দিয়েছিলেন, সেগুলোর কারণে সেখানকার মানুষ হতেই পারে যে হাম (measles) ভ্যাকসিন নিতে নিরুৎসাহিত হয়েছে; এর ফলশ্রুতিতে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই শিশু (mostly children)। আরএফকে জুনিয়র অবশ্য একে অস্বীকার করেন, বলেন, তার বক্তব্য সামোয়ানদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেনি।
মজার মুহূর্ত: অ্যান্টি-ভ্যাক্স ওয়ানজি (onesies): শুনানিতে আরেকটি হাস্যরসাত্মক পর্ব ঘটে, যখন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স (Bernie Sanders) আরএফকে জুনিয়রের কাছে জানতে চান—তিনি কি ছোট শিশুদের জন্য প্রস্তুত করা সেই ওয়ানজিগুলো (onesies) সমর্থন করেন? কারণ আরএফকে জুনিয়রের সাবেক সংস্থা “চিলড্রেন’স হেলথ ডিফেন্স (Children’s Health Defence)” এগুলো বিক্রি করত, যেখানে অ্যান্টি-ভ্যাক্স স্লোগান (anti vaccine slogan) ছাপা ছিল। আরএফকে জুনিয়র সরাসরি জবাব দেননি, কিন্তু স্যান্ডার্স ও তিনি দু’জনেই ওষুধ নির্মাতা শিল্প (pharmaceutical industry) নিয়ে কঠোর সমালোচনামূলক মনোভাব পোষণ করেন। ওষুধের দাম অত্যধিক বেশি বলে তারা একমত হন। আরএফকে জুনিয়রের এই “পপুলিস্ট (populist)”, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে তুলে ধরার অবস্থানই সম্ভবত তার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক আকর্ষণ বলে মনে করা হয়।

পরবর্তী শুনানি ও সম্ভাব্য ফলাফল: শুনানির প্রথম পর্ব শেষে বোঝা যাচ্ছে, রিপাবলিকানরা সিনেটে (Senate) সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় (possessing a Senate majority), আরএফকে জুনিয়রের সম্মতি পাওয়া খুব একটা কঠিন হবে না—যদি না অন্তত তিনজন বা তার বেশি রিপাবলিকান তার বিপক্ষে ভোট দেন। পার্টি লাইনভিত্তিক ভোটাভুটিতে (party lines) রিপাবলিকানরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে তার নিয়োগ প্রক্রিয়া পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয় শুনানি (second confirmation hearing) পরে ওইদিনই হওয়ার কথা, এবং সেখানে ডেমোক্র্যাটদের ক্রমাগত চাপ বাড়াতে দেখা যেতে পারে। এদিকে ক্যারোলাইন কেনেডি (Caroline Kennedy), যিনি আরএফকে জুনিয়রের কাজিন ও যুক্তরাষ্ট্রের অস্ট্রেলিয়ায় সাবেক রাষ্ট্রদূত (former US Ambassador to Australia), শুনানির আগেই সিনেটরদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে আরএফকে জুনিয়রকে “বিপজ্জনক শিকারী (dangerous predator)” বলে আখ্যায়িত করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা এই বিষয়টি উল্লেখ করে তাকে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবু রিপাবলিকান পক্ষ আরএফকে জুনিয়রকে তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক প্রশ্ন করে—যা নিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, ট্রাম্পের অধীনে স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে এক ভ্যাকসিন-সন্দেহবাদী ব্যক্তির নিয়োগ আমেরিকার স্বাস্থ্যনীতিতে (health policy) কী প্রভাব ফেলবে, তা বড় প্রশ্ন।

সূত্র

২৯ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • সার্বিয়ায় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ: গণবিক্ষোভের প্রেক্ষাপট
  • যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অনুদান ও ঋণ স্থগিতের আদেশ আদালতে আটকে গেল
  • গ্রিনল্যান্ডের মাত্র ৬% বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হতে চান
  • ইসরায়েলের সিরিয়া অবস্থানে অনির্দিষ্টকাল অবস্থান
  • ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিজয়: কলম্বিয়ার নতি স্বীকার, চীনের সম্মতি ও মেক্সিকোর ভবিষ্যৎ অবস্থান
  • ইতালীয়-জার্মান অক্ষ: ইউরোপের নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা
  • ট্রাম্প ও স্টারমারের উষ্ণ সংলাপ ও প্রযুক্তি–অর্থনীতির জটিল খেলা
  • ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন ও ট্রাম্পের সম্পর্ক: নীতি, নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব
  • সার্বিয়ায় গণবিক্ষোভ: ভুচিচের বৈধতা প্রশ্নের মুখে
  • ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতি: পুতিনের জন্য অপ্রত্যাশিত ধাক্কা
  • ভন ডার লিয়েনের সবুজ এজেন্ডা চাপের মুখে

সার্বিয়ায় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ: গণবিক্ষোভের প্রেক্ষাপট

পদত্যাগের ঘোষণা: সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিলোশ ভুচেভিচ (Milos Vucevic) গতকাল (মঙ্গলবার) পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সার্বিয়ায় বহুমুখী ও ব্যাপক বিক্ষোভের (Mass Anti-Government Protests) ঢেউ উঠেছে, যা মূলত তিন মাস আগে নোভি সাদ (Novi Sad) শহরের একটি ট্রেন স্টেশনে (Train Station) সম্প্রতি সংস্কার করা ছাদ (Renovated Canopy) ধসে ১৫ জন মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়। যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল, সেটিকে ঘিরে প্রথমে ক্ষতিগ্রস্তদের স্মরণসভা (Commemorative Gatherings) হলেও, সরকারের দিক থেকে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধাচরণ যথেষ্ট না হওয়া ও স্টেশনের পুনর্নির্মাণ-সংক্রান্ত দলিলপত্র (Reconstruction Documents) প্রকাশ না করায় ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিক্ষোভকারীরা দায়ীদের জবাবদিহি (Indict) করার দাবি জানায়।

বিক্ষোভের বিস্তার: প্রথমদিকে ছোট পরিসরে শুরু হলেও, এই বিক্ষোভ এখন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ডিসেম্বরে (২০২৪) একটি বিক্ষোভে প্রায় ১,০০,০০০ মানুষ জড়ো হয়—এটি সার্বিয়ায় স্লোবোদান মিলোশেভিচ (Slobodan Milosevic) পতনের পর (২৫ বছর আগে) সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ বলে অনেকে অভিহিত করেন। প্রতিদিনই চলতে থাকা এই বিক্ষোভে গত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) শিক্ষার্থীরা (Students) সাধারণ ধর্মঘটের (General Strike) ডাক দেয়। সোমবার (২৭ জানুয়ারি), হাজারো মানুষ বেলগ্রেড (Belgrade)—সার্বিয়ার রাজধানীর—প্রধান মহাসড়কগুলোর (Main Highways) একটি অবরোধ করে। নোভি সাদে (Novi Sad) ruling party-র কার্যালয়ের সামনে যখন শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ (Protest Gathering) ডাকে, তখন সেখান থেকে দুজন সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী বেরিয়ে এসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আক্রমণ করে। এতে কয়েকজন গুরুতর আহত হন। এই সহিংস ঘটনার পরপরই প্রধানমন্ত্রী মিলোশ ভুচেভিচ পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং জানান, নোভি সাদের মেয়রও (Mayor of Novi Sad) পদত্যাগ করবেন। প্রাধান্য তুলে ধরে বলেন, “নোভি সাদে যা ঘটেছে, তার জন্য আমরা বাস্তবিকভাবে দায়বদ্ধ, তাই পদত্যাগ করছি এবং রাজনৈতিক মূল্য (Political Price) পরিশোধ করছি। এতে উত্তেজনা কমবে ও সংলাপ (Dialogue) ফিরবে বলে আশা করছি।”
নির্বাচনের সম্ভাবনা: সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুচিচ (Alexander Vucic) বলেন, ভুচেভিচের পদত্যাগের পর ১০ দিনের মধ্যে হয় নতুন নির্বাচন (New Elections) ডাকার, নয়তো নতুন সরকার (New Government) গঠন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

আরও দেখুন – সার্বিয়ার ভুচিচের শাসনের পতনের সম্ভাবনা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও রাশিয়া থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া (২৯ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অনুদান ও ঋণ স্থগিতের আদেশ আদালতে আটকে গেল

ট্রাম্পের আদেশ ও পরিণতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি আদেশ জারি করেন, যাতে ট্রিলিয়ন ডলারের (Trillions of Dollars) ফেডারেল অনুদান (Federal Grants) ও ঋণ (Loans) সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বলা হয়। এই পদক্ষেপ দ্রুত অস্থিরতা ও বিভ্রান্তি তৈরি করে, কারণ বাজেট ম্যানেজমেন্ট অফিসের (Office of Management and Budget, সংক্ষেপে OMB) ভারপ্রাপ্ত প্রধান (Acting Head) বিভিন্ন সংস্থাকে বলে দেন যে, সব আর্থিক অনুদান বা সহায়তা সাময়িকভাবে স্থগিত বা বিলম্বিত করতে হবে, যেন সেগুলো ট্রাম্পের “ওয়োক আইডিওলজি (Woke Ideology)” সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা যাচাই করা যায়। এই ব্যাপক পরিধির আদেশ স্বাভাবিকভাবেই মেডিকেইড (Medicaid) থেকে শুরু করে নানা সরকারি কর্মসূচিতে বিঘ্ন তৈরি করে। মানুষ চাকরি ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়ে।

আদালতের রায়: একটি মামলার (Lawsuit) প্রেক্ষিতে ইউএস ডিসট্রিক্ট জাজ (U.S. District Judge) লরেন এল. আলি খান (Lauren L. Ali Khan) এই আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত (Short Term Halt) করে দেন। তিনি বলেন, “সরকার নিজেও জানে না, ঠিক কোন কোন কর্মসূচি এই বিরতি (Pause) বা স্থগিতের আওতায় পড়তে যাচ্ছে।” তিনি আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি আরো স্থায়ী সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা (Democrats) এই আদেশের সমালোচনা করেছেন—এটি দেশের গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে এবং মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী কংগ্রেসের ক্ষমতার ওপর আঘাত। ২২টি রাজ্যের ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেল (Attorney General) একই ভাবে মামলা দায়ের করে বলেছেন, ট্রাম্প কংগ্রেসের বরাদ্দ (Allocated by Congress) অতিক্রম করেছেন। মেইনের স্বাধীন সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং (Angus King), যিনি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে কাজ করেন, একে অভিহিত করেন “আমেরিকার কংগ্রেসের ক্ষমতার ওপর ইতিহাসের সবচেয়ে স্পষ্ট আক্রমণ (Most Egregious Assault)”. একইসঙ্গে, ট্রাম্পের কর্মী ব্যবস্থাপনা অফিস (Office of Personnel Management) মঙ্গলবার জানান, তারা প্রায় ২০ লাখ ফেডারেল কর্মচারীকে (Federal Employees) স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত বেতন নেওয়ার (Resign But Be Paid) প্রস্তাব দিচ্ছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে ফেডারেল কর্মীসংখ্যা (Federal Workforce) কমানো ও “আদর্শগতভাবে অরুক্ষ” কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া। চারটি ভিত্তি বা মূলনীতি (Four Pillars) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে: অফিসে ফেরত (Return to Office), উচ্চতর নৈতিক মানদণ্ড (Enhanced Standards of Conduct), কর্মীদের বিশ্বস্ততা (Loyal and Trustworthy), ইত্যাদি।

সূত্র

গ্রিনল্যান্ডের মাত্র ৬% বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হতে চান

জনমতের জরিপ: ডেনিশ দৈনিক বেরলিংস্কে (Berlinski) পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ডের (Greenland) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চান না যে, তাদের স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ (Semi-Autonomous Island) যুক্তরাষ্ট্রের একটি অংশ হোক। পোলস্টাভারিয়ান (Polstavarian) নামের সংস্থা এই জরিপ পরিচালনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই বলেছেন যে, গ্রিনল্যান্ড মার্কিন নিরাপত্তার (US Security) জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ডেনমার্ককে (Denmark) এই অঞ্চল ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু জরিপের ফলে দেখা যাচ্ছে—শুধু ৬% মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হতে পক্ষে মত দিয়েছেন; ৯% এ বিষয়ে অনিশ্চিত।

গ্রিনল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসন: মেক্সিকোর চেয়ে বড় ভৌগোলিক আয়তনের (Landmass Larger than Mexico) গ্রিনল্যান্ডে জনসংখ্যা মাত্র ৫৭,০০০। দ্বীপটি ২০০৯ সালে ডেনমার্ক থেকে স্বায়ত্তশাসন (Self Governance) পায়, যা তাদের স্বাধীনতার (Independence) পথও উন্মুক্ত রেখেছে—জনগণ চাইলে গণভোট (Referendum) করে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বহুবার জানিয়েছেন, তারা “ড্যানিশ (Danes)” বা “আমেরিকান (Americans)” হতে চান না; বরং “গ্রিনল্যান্ডার (Greenlanders)” হতে চান।

কৌশলগত গুরুত্ব ও ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা: ডেনমার্ক ইতোমধ্যে আর্কটিক (Arctic) অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডের পিটুফিক স্পেস বেস (Pitufik Space Base)-এ একটি সামরিক ঘাঁটি (Military Base) রয়েছে, যা তাদের ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কীকরণ ব্যবস্থা (Missile Warning Systems) পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ থেকেই বোঝা যায়, ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান কতটা কৌশলগত।

আরও পড়ুন – 

কেন ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড নিয়ে এত আগ্রহী? (২৯ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

ইসরায়েলের সিরিয়া অবস্থানে অনির্দিষ্টকাল অবস্থান

ইসরায়েলের ঘোষণায়: ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ (Israel Katz) গতকাল ঘোষণা করেছেন, গত মাসে সিরিয়ায় (Syria) যেই কৌশলগত অবস্থান (Strategic Position) দখল করা হয়েছে, সেখানে ইসরায়েলি সৈন্যরা অনির্দিষ্টকাল অবস্থান করবে। তিনি বলছেন, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে যে কোনো “শত্রু বাহিনী (Hostile Forces)” গড়ে ওঠা ঠেকাতে ইসরায়েল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জায়গাটি হলো মাউন্ট হেরমোন (Mount Hermon), যা সিরিয়া-লেবানন সীমান্তের (Syria-Lebanon Border) কাছাকাছি একটি বিশাল পর্বতমালা। এখান থেকে দামেস্ক (Damascus) অঞ্চলের পাশাপাশি ইসরায়েল-অধিকৃত গোলান হাইটসের (Golan Heights) একটি বিস্তৃত এলাকা দেখা যায়। গোলান হাইটস ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে (The 1967 War) ইসরায়েল দখল করেছিল।

সিরিয়ার পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনী “অস্থায়ীভাবে” (Temporary Move) সিরিয়ার মধ্যকার একটি নিমর্ম অঞ্চলে (Demilitarised Buffer Zone) প্রবেশ করেছিল বলে জানান। তাদের যুক্তি ছিল, শত্রু বাহিনী যাতে এলাকায় ঢুকতে না পারে, সে জন্যই এই পদক্ষেপ। বাশার আল-আসাদের (Bashar al-Assad) শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পর (Power Vacuum) নানা ধরনের বলপ্রয়োগকারী গোষ্ঠী সিরিয়ার অভ্যন্তরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলে, এরা ওই ইউএন-নিয়ন্ত্রিত (UN-monitored) অঞ্চলেও ঢুকে পড়েছে। জাতিসংঘ (United Nations) ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন (Violation of International Agreements) বলে বিবেচনা করছে। জাতিসংঘের সিরিয়া-বিষয়ক দূতও সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এভাবে ইসরায়েলি সেনারা এগোতে থাকলে সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের (Peaceful Transition) সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ইসরায়েলের অবস্থান: ইসরায়েলি কর্মকর্তারা আগে বলেছিলেন, এই সামরিক পদক্ষেপ “সীমিত ও অস্থায়ী (Limited and Temporary)”, শুধু তাদের সীমান্ত রক্ষার (Security of Borders) স্বার্থে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্যাটজ জানাচ্ছেন, ইসরায়েল সেখানে দীর্ঘ সময় থাকতে পারে, যদি নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়। বহু দেশ ও সংস্থা এ নিয়ে উদ্বেগ জানালেও ইসরায়েল বলছে, তারা তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা এবং “দক্ষিণ সিরিয়ার অস্থিতিশীলতাকে (Volatile Region) নিয়ন্ত্রণের” স্বার্থে এই ব্যবস্থা নিচ্ছে।

সূত্র

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিজয়: কলম্বিয়ার নতি স্বীকার, চীনের সম্মতি ও মেক্সিকোর ভবিষ্যৎ অবস্থান

ভূমিকা

এই সপ্তাহের বিজয়ী হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। স্পষ্টতই, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তিনি একজন বড় উইনার। গত সপ্তাহে তিনি শপথ নিয়েছেন এবং এই সপ্তাহান্তে তার প্রথম বৈদেশিক নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য চিহ্নিত হয়েছে, যা হলো অভিবাসন (Immigration)।

এই সপ্তাহান্তে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর (Gustavo Petro) সাথে তার একটি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। মূলত যা ঘটেছিল তা হলো পেত্রো মূলত বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কলম্বিয়ান অভিবাসীদের ফেরত নিয়ে আসা ফ্লাইট কলম্বিয়ায় অবতরণ করতে পারবে না। তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। এবং এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে এই অভিবাসীদের অমানবিক পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল। যেমন, তাদের হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং কার্যত অপরাধীদের মতো আচরণ করা হয়েছিল। তাই তিনি বলেছিলেন, না, আপনারা অবতরণ করতে পারবেন না।

এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প তখন এক্সে (X) গিয়ে কলম্বিয়াকে বাণিজ্য শুল্কের (Tariffs) হুমকি দেন। এই শুল্কের হুমকিতে কলম্বিয়ান সরকার কিছুটা কেঁপে গিয়েছিল। এবং প্রাথমিক বিরোধ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, কলম্বিয়ান সরকার ট্রাম্পের সাথে একটি চুক্তিতে আসে যে এই অভিবাসীদের কলম্বিয়াতে ফেরত পাঠানো যেতে পারে।

এবং মূলত আমরা যখন ট্রাম্প এবং তার সমগ্র অভিবাসী পরিকল্পনা, প্রায় ১১ মিলিয়ন অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো এবং আঞ্চলিক দেশগুলিতে পাঠানোর কথা বলছি, তখন এটি তার জন্য একটি বড় জয়। বাস্তবতা হলো তিনি হুমকি দিতে পেরেছেন এবং এমনকি হুমকি কার্যকরও করতে হয়নি, শুধুমাত্র কলম্বিয়া এবং সম্ভবত ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশকেও তার পরিকল্পনা অনুসরণ করতে রাজি করাতে পেরেছেন। তাই সেই অর্থে এটি তার জন্য একটি বিজয়। 

গুস্তাভো পেত্রোর প্রতিক্রিয়া এবং অভিবাসন নীতিতে ট্রাম্পের জয়

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো কি খুব দ্রুত নতি স্বীকার করেছিলেন? পেত্রো কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টশিয়াল প্লেন প্রস্তাব করেছিলেন। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট ছিল নির্বাসিতদের গ্রহণ করা নিয়ে নয়, বরং তাদের পরিস্থিতি নিয়ে। পেত্রো সম্ভবত চেয়েছিলেন নির্বাসিতরা যেন সম্মানের সাথে এবং ভালো পরিস্থিতিতে কলম্বিয়ায় ফিরে আসে, তাই তিনি প্রেসিডেন্টশিয়াল প্লেন প্রস্তাব করেন। এর বিপরীতে, ট্রাম্পের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছিল যে কলম্বিয়াকে অবশ্যই নির্বাসিতদের গ্রহণ করতে হবে। শেষ পর্যন্ত, কলম্বিয়া নির্বাসিতদের গ্রহণ করতে রাজি হয় এবং তাদের প্রেসিডেন্টশিয়াল প্লেনের মাধ্যমে নিয়ে যায়।

যদিও এই ঘটনায় বিতর্কের কিছু অস্পষ্টতা ছিল, তবুও এটিকে ট্রাম্পের বিজয় হিসেবে দেখা উচিত। ট্রাম্পের অভিবাসন পরিকল্পনার প্রধান সমস্যা ছিল এই নির্বাসিতদের তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে দেশগুলোর সম্মতি আদায় করা। অনেক দেশ, বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলো, তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে সক্ষম নাও হতে পারে। হাইতির উদাহরণ টানা হয়, দেশটি কার্যত অকার্যকর রাষ্ট্র হওয়ায় সেখান থেকে নির্বাসিতদের ফেরত পাঠানো কঠিন। কলম্বিয়ার ক্ষেত্রেও প্রথমে এমন ধারণা ছিল যে, তারা হয়তো নির্বাসিতদের ফেরত নিতে রাজি হবে না।

তবে, প্রমাণ করা হয়েছে যে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে দেশগুলোকে নির্বাসিতদের ফেরত নিতে বাধ্য করা যেতে পারে। এটিকে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির একটি বড় সাফল্য হিসেবে মনে করা হয়। বিতর্কের ক্রম বা প্রক্রিয়া যাই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পেরেছেন।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। প্রশ্ন ছিল, এই পদ্ধতি অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও কাজ করবে কিনা। সম্প্রতি চীনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা চীনা অভিবাসীদের ফেরত নিতে চীন রাজি হয়েছে। যদিও চীনের উপর নতুন শুল্ক আরোপের মতো হুমকির পথে ট্রাম্প হাঁটতে পারবেন না, তবুও চীনের এই সম্মতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। সব মিলিয়ে এটি ট্রাম্পের জন্য একটি বড় বিজয়। কারণ, এটি তার অভিবাসন নীতির প্রধান বাধা দূর করতে সহায়ক হয়েছে এবং এক্ষেত্রে তার একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। দ্রুত এবং সামান্য বিতর্কের মধ্যে এই সমাধান আসায়, এটিকে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সম্পর্ক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে একটি বড় অংশ মেক্সিকোর নাগরিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি নির্বাসন প্রক্রিয়া আরও জোরদার করে, সেক্ষেত্রে মেক্সিকো কতজন নির্বাসিতকে ফেরত নিতে রাজি হবে, তা একটি বড় প্রশ্ন। নির্বাসন পরিকল্পনা কার্যকর হলে, এটি দুই দেশের সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। অতীতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মেক্সিকোর উপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে। মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলে মাদক কার্টেলের সমস্যা একটি উদ্বেগের কারণ। মেক্সিকোতে মাদক কার্টেলের প্রভাব এবং তাদের কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা হয়। কোনো কোনো মহল থেকে মেক্সিকোতে ‘নরম আক্রমণ’ চালানোর মতো প্রস্তাবনার কথাও শোনা গেছে।

চীন থেকে রপ্তানি বাণিজ্য রুট পরিবর্তনের মাধ্যমে মেক্সিকো হয়ে পণ্য পরিবহনের বিষয়টিতেও উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য বাণিজ্যের এই পথ পরিবর্তনের চেষ্টা দেখা যেতে পারে। মেক্সিকো কতজন নির্বাসিতকে গ্রহণ করবে, তা সম্ভবত অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা কী সুবিধা আদায় করতে পারবে তার উপর নির্ভর করবে। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে দর কষাকষি হতে পারে এবং এর ভিত্তিতেই ভবিষ্যতের সম্পর্ক নির্ধারিত হতে পারে।

ইতালীয়-জার্মান অক্ষ: ইউরোপের নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

ইতালীয়-জার্মান সমন্বয়ের সূচনা

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি (Giorgia Meloni) এই সপ্তাহে বিজয়ী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। যদিও এই সপ্তাহে সরাসরি বিরাট কোন ঘটনা ঘটে নি, তবুও ধারণা করা হচ্ছে যে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার ইউরোপীয় মিত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন। ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের (Musk) সাথে মেলোনির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মূল্যবান হয়ে উঠছে, কারণ ট্রাম্প যখন ইইউ (EU) এর সাথে সম্পর্ক খারাপ করছেন, তখন মনে করা যায় যে মেলোনি কার্যত ট্রাম্পের চিন্তা ও কৌশল বুঝতে সক্ষম। এদিকে, জার্মান নির্বাচনে (German election) ফ্রেডরিখ মের্ৎস (Friedrich Merz) জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফ্রান্সের রাজনৈতিক অচলাবস্থার (Political paralysis) মাঝে এই সম্ভাবনা ইউরোপে একটি নতুন ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করার মঞ্চ তৈরি করছে। ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালিতে মের্ৎস-মেলোনি জুটির সম্ভাবনা বিদ্যমান, কারণ তাদের রাজনীতির ধরন বেশ মিল রয়েছে। ঋণ ভাগাভাগির (Debt sharing) বিষয়ে মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও, মের্ৎস নিজেকে অভিবাসন কট্টোরপন্থী (Immigration hawk) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং মনে করা হচ্ছে যে অভিবাসন ও শিল্প নীতিতে তিনি ও মেলোনি একই কৌশল অবলম্বন করবেন।

ইউরোপে নেতৃত্বের শূন্যতা ও পরিবর্তনের ইঙ্গিত

ইউরোপে নেতৃত্বের শূন্যতার প্রমাণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। মাক্রোঁ (Macron) এই শূন্যতা পূরণে চেষ্টা করলেও, ফ্রান্সের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার অবস্থান কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, ফলে শূন্যতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতালির দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ইউরোপে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার, তবে ফরাসি-জার্মান দ্বৈত ক্ষমতার (French-German duopoly) কারণে তা সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। মাক্রোঁ যখন দৃশ্যপট থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন, তখন ইতালির জন্য সেই সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ছে, যদিও ফ্রান্সের রাজনীতির আগামী কালের মোড় কতটুকু পরিবর্তন হবে, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে।

নির্বাচনী প্রেক্ষাপট ও অভিবাসন নীতির কৌশল

জার্মানির আসন্ন ফেডারেল নির্বাচনে (Federal election) মের্ৎসের জয় নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। মের্ৎস ও মেলোনির মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, বিশেষ করে অভিবাসন নিয়ে মের্ৎসের কঠোর অবস্থান। তিনি এমনকি জার্মানিতে শেঙ্গেন (Schengen) চুক্তি স্থায়ীত্বহীন করে রাখার প্রস্তাব জানিয়েছেন, যার ফলে প্রতিবেশী ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে সীমান্ত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। শেঙ্গেন চুক্তির স্থগিতাকালে ইউরোপীয় প্রকল্পের ভিত্তি কিছুটা দুর্বল হতে পারে, তবে যদি তা স্থায়ীভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে রূপান্তরিত হয়, তাহলে একক বাজার (Single market) বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। জার্মানির বৃহত্তম দেশ হওয়ার কারণে এর প্রভাব ব্যাপক হবে। ইতালিতে মেলোনি সর্বদা অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা অবলম্বন করেছেন, আর মের্ৎসও প্রায় সেই দিকেই কাজ করবেন। যদিও মেলোনি ভূগোলগত দিক থেকে প্রধানত বহিরাগত সীমান্ত নিয়ে উদ্বিগ্ন, তথাপি দুই নেতার মধ্যে এই নীতিগত মিল লক্ষ করা যায়।

উত্তরাঞ্চলীয় ইতালি একটি উল্লেখযোগ্য শিল্প শক্তি হিসেবে বিবেচিত, যার তুলনায় জার্মান অর্থনীতি অনেকাংশে প্রতিযোগিতামূলক। ইউরোপের শিল্পায়ন হ্রাস (Deindustrialization) ও প্রতিযোগিতার দিক নিয়ে উদ্বেগের ছায়া রয়েছে। চীন (China) এই প্রতিযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের কারণ, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ভর্তুকিযুক্ত সুরক্ষাবাদ (Subsidized protectionism) বেড়েই চলেছে, যেখানে ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটরা (Democrats) আমেরিকান উৎপাদন পুনরুজ্জীবিত করতে সুরক্ষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন। তাই ইতালি ও জার্মানির অগ্রাধিকার প্রায় একই রকম হওয়া সম্ভব। মেলোনি সবুজ নীতি (Green skeptic) নিয়ে সন্দিহান অবস্থায় আছেন, ঠিক যেমন মের্ৎসও সবুজ নীতির প্রতি সংশয় প্রকাশ করেছেন। মের্কেল (Merkel) যেখানে ছিলেন, তার তুলনায় এই ইস্যুতে মের্ৎস ডানপন্থার দিকে ঝুঁকেছেন। অভিবাসন, শিল্পায়ন হ্রাস ও সবুজ পরিবর্তন (Green transition) – এই তিনটি প্রধান উদ্বেগই তাদের রাজনৈতিক কৌশলে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে এবং এগুলোই একটি নতুন ইতালীয়-জার্মান অক্ষের (Italian-German axis) ভিত্তি গড়তে সহায়তা করতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইতালির প্রভাব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, মারিও দ্রাঘির (Mario Draghi) কারণে। কমিশন (Commission) সম্ভবত এই সপ্তাহে দ্রাঘির রিপোর্ট (Draghi report) বাস্তবায়নের জন্য একটি রোডম্যাপ (Roadmap) প্রকাশ করবে, যা ইইউর মধ্যে ইতালীয় প্রভাবকে নীরবভাবে বাড়িয়েছে। ফরাসি-জার্মান সম্পর্ক (Franco-German relationship) যেমন আগে ছিল তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না, এবং এই দুর্বলতা একটি শূন্যতা তৈরি করেছে – যা পূরণে মেলোনি ভালো অবস্থানে রয়েছেন। তিনি ইউরোপে নরম শক্তি (Soft power) ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারে সফল হয়েছেন, বিশেষ করে অভিবাসন নীতিতে, যেখানে ইইউকে প্রভাবিত করে অভিবাসন চুক্তি (Migration pacts) ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা করেন। আলবেনিয়ার (Albania) সাথে স্বাক্ষরিত বিশাল জ্বালানি চুক্তিও ইতালির অবস্থানকে শক্তিশালী করছে। যদি মেলোনি অর্থনৈতিক পুনঃশিল্পায়নে সফল হন, তাহলে তিনি ও মের্ৎস ভবিষ্যতে ইইউকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সমবেতভাবে কাজ করার পথ সুগম করতে পারেন।

তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় পাওয়ার ডুও হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন। মেলোনি, জার্মানির মতো আরেকটি বড় শিল্পোন্নত দেশের সাথে অংশীদারিত্বের জন্য প্রস্তুত, যা তাকে অন্যান্য চরম সামাজিক বা সাংস্কৃতিকভাবে ডানপন্থী নেতাদের বিতর্ক থেকে পৃথক করে তোলে। ব্রাদার্স অফ ইতালি (Brothers of Italy) এএফডি-র (AfD) মত একই ধরণের দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। ইউরোপের বিভিন্ন দলের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান, তবে মের্ৎস ও মেলোনি নিজেদেরকে অনুরূপ সংস্কারকৃত মধ্য-ডানপন্থী (Center right) নেতারূপে তুলে ধরছেন, যারা আরও উগ্র ডানপন্থী নীতির বিরুদ্ধে কার্যকরী ফায়ারওয়াল (Firewalls) হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। জার্মানিতে সিডিইউ (CDU) এএফডিকে (AfD) সরিয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। তারা মূলত ইউরোপপন্থী (Pro European) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union) সমর্থক, যা চরম ডানপন্থী দলের তুলনায় অনেক বেশি প্রগতিশীল। তারা নিজেকে ‘সংস্কারকৃত ইউরোপীয়ান’ (Reformist Europeans) হিসেবে নিজেদের পরিচিত করতে চান, যাতে ইইউ থাকে কিন্তু সেটি একটি নির্দিষ্ট ও রাজনৈতিকভাবে টেকসই (Politically sustainable) দিক নিয়ে এগিয়ে যায়।

অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব ও ঋণ বিতর্ক

অর্থনীতির বিষয়টি দুটি মূল দিক থেকেই কাজ করছে। ইউরোপীয় শিল্পায়ন হ্রাসের উদ্বেগ থেকে উভয় পক্ষই তাদের উৎপাদন শিল্পকে রক্ষা করার জন্য ইইউর শক্তি কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। ইউরোপীয় যৌথ ঋণ (European common debt) বা ঋণ ভাগাভাগির প্রশ্নে উত্তেজনা বজায় আছে। ইতালি আরআরএফ (RRF) থেকে উপকৃত হয়েছে, যা ইউরোপীয় যৌথ ঋণের উদ্যোগ হিসেবে বিভিন্ন সংকট মোকাবেলায় সহায়তা করেছে। কিন্তু মের্ৎস সম্ভবত ইইউর যৌথ ঋণের বিরোধিতা করবেন, যা একটি ক্লাসিক সিডিইউ (CDU) অবস্থান। অভ্যন্তরীণ ঋণ বিরতির (Debt break) সংস্কারের দিকে কিছুটা উন্মুক্ততা প্রকাশ হলেও, ঋণ ভাগাভাগির বিষয়ে জার্মানিতে রাজনৈতিক সমর্থন কম পাওয়া যায়, কেননা অনেক জার্মান ভোটার এটিকে ইতালীয় ঋণে জার্মানির ভর্তুকি (Subsidizing) হিসেবে দেখেন। মিল ও অর্থনীতির প্রশ্নে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একসময় অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো দুর্বল দেশের ভর্তুকি দিত, কিন্তু এখন জার্মান অর্থনীতি স্থবির অবস্থায় রয়েছে – বছরে প্রায় ০% প্রবৃদ্ধি, আর ইতালীর অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো চলছে যদিও ঋণের বোঝা (Debt burden) অধিক। ঋণের খরচ বৃদ্ধিতে ফ্রান্সের মত সংকটের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে, যেখানে রাজনৈতিক স্থান সংকুচিত হয়। অধিকাংশ পূর্বাভাস অনুযায়ী, ইতালি আগামী কয়েক বছরে সামান্য ১% এরও বেশি প্রবৃদ্ধি উপভোগ করবে, মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) ২% এর নিচে থাকায় এবং জিডিপি-র (GDP) সাথে ঋণের অনুপাত পূর্বের মতো বাড়ছে না। ফলস্বরূপ, জার্মান ও ইতালীর অর্থনৈতিক অবস্থার বিভাজন পূর্বের তুলনায় কম স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যেখানে শক্তিশালী ইউরোপীয় অর্থনীতিগুলো দুর্বল অর্থনীতিগুলোর ভর্তুকি দিত।

উপসংহার

ইতালীয় ও জার্মান রাজনীতিতে উদ্ভাসিত নতুন অক্ষটি ইউরোপের ভবিষ্যৎ বিন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। মেলোনি ও মের্ৎসের মধ্যে নীতিগত মিল ও অভিবাসন, শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কৌশলে সমন্বয়ের ফলে তারা ইউরোপে একটি সমন্বিত ও সংস্কারকৃত নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভাজনের মাঝে, তাদের সমন্বয় ফরাসি-জার্মান দ্বৈত ক্ষমতার শূন্যতা পূরণে সহায়ক হবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ও টেকসই উন্নয়নে এক নতুন দিক উন্মোচন করবে।

আরও দেখুন –

ট্রাম্প ও স্টারমারের উষ্ণ সংলাপ ও প্রযুক্তি–অর্থনীতির জটিল খেলা

উষ্ণ ফোন কলে আন্তরিক সম্বাদ

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকেও (Keir Starmer) এই সপ্তাহের উইনার হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যার পেছনে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার একটি ফোন কল। ওয়েস্টমিনস্টারের সূত্রে জানা যায়, এই ফোন কলটি অত্যন্ত উষ্ণ এবং ব্যক্তিগত ছিল। ট্রাম্প স্টারমারকে জানিয়েছেন যে তিনি তার কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত সফল এবং ভাল কাজ করছেন। উভয়ের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতি (Gaza ceasefire) নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে স্টারমার ট্রাম্পের ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়েছেন যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে। এছাড়া, অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা চলাকালীন ট্রাম্প বক্সিং ডেতে (Boxing Day) স্টারমারের ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। এই উষ্ণ ও ব্যক্তিগত ফোন কলটি বেশ কয়েকজনকে চমকে দিয়েছে, বিশেষ করে যখন পূর্ব ধারণা ছিল যে ট্রাম্প এবং ইলন মাস্ক (Elon Musk) একই মতাদর্শে চলেন। মাস্কের পক্ষ থেকে স্টারমারের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ থাকলেও, এখন ট্রাম্প নিজে জানাচ্ছেন যে তিনি স্টারমারকে পছন্দ করেন এবং তার দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা রয়েছে। তাছাড়া, ট্রাম্পের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরের সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাজ্য (UK) অথবা সৌদি আরব (Saudi Arabia) উল্লেখ করা হচ্ছে, যা মার্কিন-যুক্তরাজ্যের বিশেষ সম্পর্কের জন্য এক ইতিবাচক মোড় প্রদান করছে।

রাজনৈতিক শাখা ও ব্যক্তিগত মতবিরোধ

ফারাজ (Farage) ও রিফর্ম ইউকে (Reform UK) সহ ব্যাডেনোক, ট্রাম্পের সুনজরে থাকার প্রচেষ্টায় থাকলেও, স্টারমারের প্রতি তাদের প্রচেষ্টা ততটা দৃঢ় নয়। তবুও, কোনো কারণে ট্রাম্প স্টারমারের প্রতি উষ্ণ মনোভাব দেখাচ্ছেন। তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরের সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে আবারও যুক্তরাজ্য অথবা সৌদি আরব সামনে এসেছে। ফারাজ যদিও ট্রাম্পের প্রশংসা করে থাকেন, তবে অন্য কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী পদক্ষেপ ছাড়াই ট্রাম্পকে শান্ত করে তোলার মতো কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এদিকে, ট্রাম্প কর্তৃক ইলন মাস্কের কিছু মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দুর্বল করে দেওয়ার ফলে মাস্ক ছোট ছেলেমেয়ের মতো আচরণ করছেন বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে, এবং মাস্কের বিষয়ে আরও কিছু প্রমাণ সামনে আসায় তাদের মধ্যে দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রেক্ষাপট

ট্রাম্পের প্রথম পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আমেরিকান বৈদ্যুতিক যানবাহন (Electric vehicle) উৎপাদনকারীদের উপর থেকে সমস্ত ভর্তুকি প্রত্যাহার করা, যা সরাসরি টেসলার (Tesla) উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। মাস্ক টুইটারে (Twitter) বা এক্সে (X) মন্তব্য করে থাকলেও, তিনি ট্রুথ সোস্যালে (Truth Social) তেমন কিছু করেননি। ট্রাম্প স্টারগেট ইনিশিয়েটিভকে (Stargate Initiative) সমর্থন করেছেন, যা ওপেনএআই (OpenAI), মাইক্রোসফট (Microsoft) এবং অন্যান্য কয়েক প্রতিষ্ঠানের যৌথ এআই উদ্যোগ হিসেবে গড়ে উঠেছে। মূলত, এই উদ্যোগের লক্ষ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে প্রথম এজিআই (AGI – Artificial General Intelligence) তৈরি করা, যা মাস্কের নিজস্ব এআই প্রকল্প, এক্সএআই (Xai)-এর সাথে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে পারে। মাস্ক ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যানের (Sam Altman) বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং দাবি করছেন যে, ওপেনএআই-এর এই প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ যথেষ্ট নয়।

মার্কিন-সমর্থিত এআই উদ্যোগ স্টারগেট এবং মাস্কের স্টারলিঙ্ক (Starlink) এর কারণে মনে হচ্ছে এটি ইচ্ছাকৃতভাবে একে অপরকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো। সাম্প্রতিক সময়ে, চীনা এআই (Chinese AI) ওপেনএআই-এর থিংকিং মডেল o1-এর সাথে সমান পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা মার্কিন এআই সংস্থাগুলোর উপর এবং সরাসরি ট্রাম্পের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। কারণ, তার অর্থনীতি শেয়ার বাজার (Stock market) এর সাথে সংযুক্ত থাকায় এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ (S&P 500) সূচকে বৃহৎ পতন ঘটায়। মার্কিন অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি প্রযুক্তি ও এআই নিয়ে উদ্দীপনা, যা কমে গেলে ট্রাম্পের অবস্থান আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

স্টারমারের কর্মপ্রদর্শন ইতিমধ্যে প্রশংসিত হচ্ছে, কারণ কয়েক সপ্তাহ আগে বন্ড বাজারে (Bond market) বিশৃঙ্খলা থাকলেও বর্তমানে অর্থনৈতিক ডেটা (Economic data) ইতিবাচক প্রমাণ দিচ্ছে। ঋণের খরচ হ্রাস পেয়েছে, আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF – International Monetary Fund) পূর্বাভাস প্রদান করেছে যে, যুক্তরাজ্য ইউরোপের মধ্যে দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি হবে এবং জি-৭ (G7) এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও দ্রুততম উন্নতি দেখাবে।

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন ও ট্রাম্পের সম্পর্ক: নীতি, নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব

ফোনকল থেকে আন্তর্জাতিক আলোচনায় নেতৃত্ব

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন (Mette Frederiksen) সম্পর্কে আলোচনা শুরু হচ্ছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সম্প্রতি ট্রাম্পের সাথে তার একটি ফোনকল হয় এবং সেই সময় ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে আবারও চাপ সৃষ্টি করেছেন। ফ্রেডেরিকসেন প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই; ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সবাই শান্ত থাকুন।” যতক্ষণ না গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ট্রাম্পের হুমকির পেছনে কোনো গুরুতর তথ্য প্রকাশ পায়, ততক্ষণ উদ্বেগের স্থান নেই।

এই পরিস্থিতিতে ফ্রেডেরিকসেনের নেতৃত্বের ধারাকে উদযাপন করা হয়। তিনি তার অবস্থানে দৃঢ়তা বজায় রেখে চলেছেন। ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও আর্কটিক অঞ্চলের বিষয়েও মার্কো রুবিওরের (Marco Rubio) সাথে তার আলোচনা হয়েছে, যেখানে উভয়ের কথোপকথন ফলপ্রসূ ছিল। ট্রাম্প প্রশাসন গ্রিনল্যান্ড নিয়ে আগ্রাসন এড়াতে কী পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এভাবে ফ্রেডেরিকসেন তার সেরাটা দিচ্ছেন।

তবে, এ বিষয়টি আলোচনায় আসায় কিছু প্রশ্নও জন্ম নেয়। ফ্রেডেরিকসেনকে নিয়ে বলা হয়, পরিস্থিতি কিছুটা ভুলভাবে পরিচালিত হয়েছে এবং তার প্রতিক্রিয়া খুবই নরম দেখা দিয়েছে। মনে করা হয়, ট্রাম্প ২০১৯ সালেও একই প্রস্তাব করেছিলেন; তখন তাকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। এবার নরম হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ডেনমার্ক শীঘ্রই স্বাধীনতা লাভের পথে। তার দৃষ্টি গ্রিনল্যান্ডের স্বায়ত্তশাসনের দিকে, যেখানে গ্রিনল্যান্ড স্বাধীন হয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারবে—যদি তারা আমেরিকার অংশ হতে চায় এবং ভোট দেয়, তবে তা হতে হবে।

নরম প্রতিক্রিয়া ও ট্রাম্পের চ্যালেঞ্জ

ফ্রেডেরিকসেনের প্রতিক্রিয়ায় সামান্য নরমতা প্রকাশ পায়। তিনি ডেনমার্কের মিত্র হিসেবে মূল্যবোধের উপর জোর দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আবেদন করার চেষ্টা করছেন। তবে, ট্রাম্পের সাথে এই রকম সমন্বয় করার পন্থাটি ভুল হিসেবে ধরা হচ্ছে, কেননা তা দুর্বলতা প্রদর্শন করে। ট্রাম্প ডেনমার্ককে এমনভাবে দেখাচ্ছেন, যেন একটি আশ্রিত রাজ্য। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া, যেখানে পূর্বের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়েছে, তা দুর্বলতার ইঙ্গিত হিসেবে গণ্য হবে। ট্রাম্প যতক্ষণ না ডেনমার্ক তার কথামতো চলে, ততক্ষণ তিনি চাপ দিতে থাকবেন।

একই সময়ে, গ্রীনল্যান্ডে ১.৫ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা করা হয়েছিল, যেখানে দুটি নতুন আইসব্রেকার জাহাজ, কয়েকটি ড্রোন ও দুটি কুকুরের স্লেজ টহলের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে ট্রাম্প হাসিমুখে প্রতিক্রিয়া দেখান এবং এমনভাবে উপস্থাপন করেন যেন—তাদের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়, বরং তারা কেবল আরও কুকুর যোগ করতে পারে। ট্রাম্পের এই প্রতিক্রিয়া এক ভুল পদক্ষেপ ছিল এবং এভাবে বক্তব্য দেওয়া উচিত হয়নি।

ট্রাম্প সম্ভবত ইউরোপের বাকি অংশে পরিস্থিতি কতটা খারাপভাবে গ্রহণ হচ্ছে, তা ছোট করে দেখাচ্ছেন। আমেরিকার আঞ্চলিক বিস্তারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ (America First) ধারণার আওতায় ডেনমার্ককে ১৮৬৭ সালে কেনার প্রস্তাব উঠে আসে এবং ১৯ ও ২০ শতকের বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক নীতি, স্বায়ত্তশাসন ও ঔপনিবেশিক প্রেক্ষাপট

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গ্রীনল্যান্ডকে কাছে মনে করা হলেও, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে। গ্রীনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতি, আধুনিক নিয়ম-কানুন এবং রাষ্ট্রগুলোর আত্মনির্ধারণ ও নিজেদের নিয়ম নির্ধারণের অধিকারের বিপরীতে।

এই ধরনের পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে আমেরিকার ভাবমূর্তি দুর্বল করে ফেলছে। গ্রীনল্যান্ড কেনাকে ঔপনিবেশিক পুনরুজ্জীবনের মতো করে তুলে ধরা হচ্ছে, যেখানে এ আচরণকে এমনভাবে দেখানো হচ্ছে যেন এটি কোনো বিশেষ বিষয় নয়, শুধু দখলের একটি ঘটনা। পানামার দখল বা ভবিষ্যতে কানাডার সম্ভাব্য আক্রমণের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। সভ্য সমাজে মানুষের আত্মনির্ধারণ ও নিজেদের ভূখণ্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত, যা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (Make America Great Again) ধারণার মাধ্যমে উপেক্ষিত হচ্ছে।

তবে ফ্রেডেরিকসেন কিছু ভুল পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে মনে করা হলেও, জনসমর্থন খারাপ সত্ত্বেও, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির প্রস্তাব না বলাতে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। একজন দেশীয় নেতা হিসেবে এবং বিশেষ করে ইউরোপের নেতাদের সামনে ট্রাম্পকে প্রতিহত করলে তা সঠিক কাজ হিসেবে গণ্য হবে। ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করে দেখিয়েছেন যে, এটি বিক্রয়ের বিষয় নয়—এতে তিনি দৃঢ় নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

ব্যবস্থাপনা, সতর্কতা ও সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া

সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার মধ্যে তার নরম প্রতিক্রিয়াটিই সবচেয়ে নরম বলে ধরা হচ্ছে। গ্রিনল্যান্ডকে সরাসরি নেয়া যাবে না, বরং তা বলার থেকেও সামান্য উপরে থাকছে। তবে, সতর্কতার বিষয় ছিল যেন বিশ্ব নেতা হিসেবে কেউ গণ্ডগোল না করে, আবার ট্রাম্পকে এতটা উত্তেজিত না করা হয় যেন তিনি ২৫% শুল্ক চাপিয়ে দেন বা সার্বভৌম ভূখণ্ডে আক্রমণ করেন। ফ্রেডেরিকসেন তার বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করছেন এবং ট্রাম্পকে অতিরিক্ত ক্ষুব্ধ করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন না। তিনি নর্ডিক দেশগুলোর সম্মিলিত নিরাপত্তা, ইউরোপীয় ঐক্য এবং গ্রিনল্যান্ডের বিষয়গুলোর দিকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে সামগ্রিক ঐক্যের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন।

পরিস্থিতির উন্নতি নাকি অবনমন হবে, তা নির্ভর করছে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে কী ঘটত তার উপর। ট্রাম্পকে যদি বিদায় হয়ে যেতে বলা হত, তাহলে সম্ভবত তিনি জাহাজ পাঠিয়ে বা আক্রমণ করে প্রতিক্রিয়া জানাতেন, যা একটি বড় ঘটনা হত। তবে, ধারণা করা হয় তিনি আক্রমণ করতেন না বা ডেনমার্কের উপর বিশাল শুল্ক চাপাতেন না। গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে অতিরিক্ত মনোযোগ দিলে আন্তর্জাতিক জনমত ট্রাম্পের বিপক্ষে ঘুরে আসতে পারে। অপ্রত্যাশিত হলেও, ২৫% শুল্ক চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যা ভালোভাবে সামলানো হয়েছে।

সার্বিয়ায় গণবিক্ষোভ: ভুচিচের বৈধতা প্রশ্নের মুখে

আলেকজান্ডার ভুচিচ (Aleksandar Vucic) এই সপ্তাহে দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত হলেন। তিনি নিজের এবং তার সরকারের উপর থেকে বৈধতা (Legitimacy) হারাচ্ছেন, কারণ সার্বিয়ার উত্তরাঞ্চলের একটি শহরের রেলওয়ে স্টেশনে ছাউনি ধসে যাওয়ার পরে গত তিন মাস ধরে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এই ঘটনায় ১৩ থেকে ১৫ জন মানুষ মারা গিয়েছিল। বিক্ষোভগুলো নিহতদের জন্য স্মরণসভা হিসেবে শুরু হলেও এখন তা বিশাল বিদ্রোহে বিস্ফোরিত হয়েছে। নাগরিক সমাজের (Civil society) পক্ষ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের মৌলিক দাবি হলো, যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিচার করা এবং দুর্নীতি ও আর্থিক বিষয়গুলোর সুরাহা করা। গত শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘট (General strike) পালিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও ধর্মঘটের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আজ, বেলগ্রেডের (Belgrade) প্রধান মোটরওয়ের একটি বড় অংশ অবরোধ করা হয়েছে এবং আরও বেশি সংখ্যক নাগরিক সমাজ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছে। প্রথমে শিক্ষার্থীরা যোগ দিতে ভয় পেলেও, চাকরি হারানোর ভয়ে সাধারণ ধর্মঘটে যোগ দিতে দ্বিধা বোধ করলেও, বর্তমানে ভীতির পরিবেশ কাটিয়ে মানুষ জেগে উঠছে এবং বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। সার্বিয়াতে (Serbia) এটি একটি বিশাল ঘটনা।

আরও পড়ুন –

সার্বিয়ার ভুচিচের শাসনের পতনের সম্ভাবনা, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও রাশিয়া থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া (২৯ জানুয়ারি, ২০২৫)

ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতি: পুতিনের জন্য অপ্রত্যাশিত ধাক্কা

ভ্লাদিমির পুতিনও (Vladimir Putin) এই সপ্তাহের একজন লুজার। এর কারণ হিসেবে মূলত ট্রাম্পের (Trump) ইউক্রেন নীতির (Ukraine policy) কথাই বলা যায়। মনে করা হচ্ছে ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতি যতটা আশা করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি ইউক্রেনপন্থী। যদিও এটিকে একেবারে দ্ব্যর্থহীনভাবে ইউক্রেনপন্থী বলা যায় না, কারণ মনে করা হচ্ছে মার্কো রুবিও (Marco Rubio) ঘোষিত বৈদেশিক সহায়তার (Foreign aid) নিষেধাজ্ঞায় ইউক্রেনও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

তবে সম্প্রতি দাভোসে (Davos) বক্তৃতায় ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন যে রাশিয়া (Russia) আলোচনার টেবিলে না আসা পর্যন্ত ইউক্রেনকে সমর্থন করা হবে। শান্তি আলোচনায় অভাবের জন্য রাশিয়াকে দোষ দেওয়া হয়েছে। একইসাথে সৌদি আরবকে (Saudi Arabia) অনুরোধ করা হয়েছে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমাতে সাহায্য করার জন্য, যাতে ইউক্রেনে যুদ্ধের অর্থায়নের সময় রাশিয়া কার্যত দেউলিয়া হয়ে যায়।

আশা করা হয়েছিল ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করবেন, যেমনটা তিনি প্রচারণার সময় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি, বরং পুতিনের দিকে ঘুরেছেন, যা ক্রেমলিনে (Kremlin) খারাপ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও, রাশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট (Economic woes) আরও খারাপ হতে পারে এবং তা নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

আরও পড়ুন –

ভন ডার লিয়েনের সবুজ এজেন্ডা চাপের মুখে

উরসুলা ভন ডার লিয়েনও (Ursula von der Leyen) এই সপ্তাহের লুজার। দাভোসে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে (World Economic Forum) ব্যবসায়ী লোকজন এবং অন্যান্য অংশীদারদের পক্ষ থেকে তার উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে (White House) প্রবেশের পরে ইইউর (EU) টেকসই এজেন্ডা (Sustainability agenda) কমিয়ে আনার জন্য এই চাপ আসছে।

এটি খারাপ খবর, কারণ উরসুলা ভন ডার লিয়েন ইইউর টেকসই এজেন্ডা চালিয়ে যাওয়া এবং গ্রিন ডিলকে (Green deal) সমর্থন করাকে তার প্রধান লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি করেছিলেন। এখন সেটার উপর এত বেশি চাপ আসাটা খারাপ।

মানুষজন ট্রাম্পের জলবায়ু বিরোধী (Anti climate) এজেন্ডা দেখে উৎসাহিত হয়েছে। ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী (Finance minister) ব্রুনো লে মেয়ার (Bruno Le Maire) ডের লিয়েনকে ইউরোপীয় পর্যায়ে পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি কর্পোরেট ডিউ ডিলিজেন্স (Corporate due diligence) এবং টেকসই প্রতিবেদন (Sustainability reporting) সম্পর্কিত একটি নতুন নির্দেশিকা (Directive) বিলম্ব করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

বর্তমানে ইউরোপে ডানপন্থী দলগুলো (Right wing parties) ভালো করছে, যাদের পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়ন্ত্রণমুক্তির (Deregulation) পক্ষে দৃঢ় নীতি রয়েছে। কৃষকদের বিক্ষোভের (Farmers protest) ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভন ডার লিয়েন কীটনাশক বিধি (Pesticide rules) এবং ডিজেল জ্বালানির উপর আইন শিথিল করেছিলেন। মনে করা হচ্ছে এটি শেষ পর্যন্ত তাকে একই পথে ঠেলে দেবে এবং সম্ভবত তিনি ইইউর কিছু সবুজ নীতি কমিয়ে আনবেন।

এটিকে ভালো পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। সবুজ রাজনীতির (Green politics) উপর থেকে মনোযোগ সরে গেছে। গত বছর ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন (European Parliament elections) এর সময় গ্রিন নিউ ডিলকে (Green New Deal) দুর্বল করা হলেও উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। দুর্বল সংস্করণটিও এখন চাপের মুখে পড়ছে।

গ্রিন নিউ ডিল যখন প্রথম ঘোষণা করা হয়েছিল, ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, শুধু ইউরোপেই নয়, আমেরিকা এবং অন্যান্য উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতেও গ্রিন নিউ ডিলের বিভিন্ন সংস্করণকে একটি সর্বব্যাপী সমাধান হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল সবুজ পরিবর্তন হবে, ইউরোপের পুনঃশিল্পায়ন হবে এবং নতুন সবুজ চাকরি তৈরি হবে। এই চাকরিগুলো পুরনো দিনের শিল্প চাকরির মতো মর্যাদাপূর্ণ, ভালো বেতনযুক্ত এবং স্থিতিশীল হবে এবং সম্ভবত অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করবে। কিন্তু সেটা একটু বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল।

সবুজ পরিবর্তন অনেক দিক থেকে সবসময় কঠিন হতে যাচ্ছিল। এটা কঠিন হবে না ভান করা রাজনৈতিক ব্যথা বিলম্বিত করার মতো। মের্ৎস তার কাজ আরও কঠিন করে তুলবেন, কারণ মের্ৎসও সবুজ নীতি নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠছেন।

শেঙ্গেন এলাকা নিয়ে মের্ৎসের অবস্থান এবং ঋণ ভাগাভাগির প্রতি বিতৃষ্ণা ভন ডার লিয়েনের কাজকে কঠিন করে তুলবে। তারা একই দলের এবং সম্ভবত প্রাক্তন সহকর্মী। মের্ৎস যদি শেঙ্গেন স্থায়ীভাবে স্থগিত করেন, তবে কার্যত একক বাজারের সমাপ্তি ঘটতে পারে। মের্কেল (Merkel) বর্তমান ইইউ তৈরি করেছেন, তবে বেশিরভাগ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃতিত্ব হেলমুট কোলের (Helmut Kohl)। হেলমুট কোল ছাড়া ইইউ থাকত না। তিনি ৮০ ও ৯০ দশকে সিডিইউর নেতা ছিলেন। সম্ভবত অন্য একজন সিডিইউ রাজনীতিবিদ দ্বারা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত হতে যাচ্ছে।

২৮ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • চীনের এআই রেইস: ডিপসিক (Deepseek) মডেলের প্রভাব
  • ডেনমার্কের ২ বিলিয়ন ডলারের আর্কটিক নিরাপত্তা প্যাকেজ
  • যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত বিদেশি সাহায্য স্থগিত
  • যুক্তরাজ্যে জেন জি তরুণদের মধ্যে কর্তৃত্ববাদপন্থী মানসিকতা বৃদ্ধি

চীনের এআই রেইস: ডিপসিক (Deepseek) মডেলের প্রভাব

নতুন এআই মডেলের উন্মোচন: চীন (China) মনে হচ্ছে এআই দৌড়ে (AI Race) এগিয়ে যাচ্ছে, ডিপসিক (Deepseek) নামের একটি চীনা সংস্থা তাদের নতুন এআই মডেল উন্মোচন করায়। এই মডেলটি মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অধিক উন্নত বলে জানা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ডিপসিক তাদের সর্বশেষ এআই চ্যাটবট (Chatbot) প্রকাশ করে, যা ওপেনএআইয়ের (OpenAI) চ্যাটজিপিটি (ChatGPT)-র মতো পারফরমেন্স দেখায়, কিন্তু কম কম্পিউটিং ক্ষমতা (Less Computing Power) ব্যবহার করে। এরপর সোমবার, তারা তাদের ছবি তৈরি করার (AI Image Generator) অগ্রসরতম সংস্করণ ইয়ানোস প্রো ৭বি (Yanos Pro 7B) উন্মোচন করে। ডিপসিক দাবি করে, এটি ওপেনএআইয়ের ডাল-ই (Dall-E) এবং স্টেবল ডিফিউশন (Stable Diffusion)-এর থেকেও ভালো কাজ করে।

প্রযুক্তি শেয়ারের বিপর্যয়: এই খবরে মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রযুক্তি খাতের শেয়ারমূল্য বড় আকারে পড়ে যায়। কিছু বিনিয়োগকারী ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্পুটনিক (Sputnik) স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঘটনার সঙ্গে তুলনা টানছেন, যেটি তখনকার পশ্চিমা দুনিয়ায় ব্যাপক ধাক্কা দিয়েছিল।কয়েকটি নির্দিষ্ট উদাহরণ:

  • এনভিডিয়া (Nvidia), যা একটি মার্কিন চিপ নির্মাতা (Chipmaking Firm), তাদের শেয়ারমূল্য প্রায় ১৭% পড়ে গেছে। এতে বাজারমূল্যে (Market Value) প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়, যা কোনো কোম্পানির জন্য ইতিহাসে সর্বোচ্চ লোকসানগুলোর একটি।
  • টেক-ভিত্তিক নাসডাক কম্পোজিট ইনডেক্স (NASDAQ Composite Index) ৩.১% পড়ে যায়, মাইক্রোসফট (Microsoft) ২.১% কমে এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ (S&P 500) ১.৫% হ্রাস পায়।
  • জার্মানির সিমেন্স এনার্জির (Siemens Energy) শেয়ার, যা এআই অবকাঠামোর জন্য ইলেকট্রিক্যাল হার্ডওয়্যার সরবরাহ করে, ২০% পড়ে যায়। ফ্রান্সের শ্নাইডার ইলেকট্রিক (Schneider Electric), যারা ডেটা সেন্টার সেবা নিয়ে বড় বিনিয়োগ রেখেছে, ৯.৫% কমে যায়।

কী কারণে গুরুত্বপূর্ণ: এটি এআই প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মার্কিন সিলিকন ভ্যালি (US Silicon Valley) এবং চীনের মধ্যে চলমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। উভয় পক্ষই সবচেয়ে উন্নত, কিন্তু কম খরচে এআই সিস্টেম তৈরিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ওপেনএআই (OpenAI)-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান (Sam Altman) ডিপসিক মডেল প্রসঙ্গে বলেছেন, এটি বেশ “ইমপ্রেসিভ (Impressive)”, বিশেষ করে যা তারা দামে দিতে পারছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ওপেনএআই উন্নততর মডেল আনবে এবং নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হওয়ায় তাদের উদ্ভাবন (Innovation) ত্বরান্বিত হবে। অল্টম্যান বলেন, “আমরা স্পষ্টতই আরো ভালো মডেল দিতে যাচ্ছি, এবং নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী আসায় আমরা আলোড়িত।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump), যিনি সদ্য “স্টারগেট (Stargate)” নামে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের এআই বিনিয়োগ প্রকল্প ঘোষণা করেছেন, তিনিও মন্তব্য করেন যে, এটি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। তার ভাষায়, “যদি কেউ কম খরচে একই ফল পেতে পারে, তবে সেটি ভালোই।”

সূত্র

ডেনমার্কের ২ বিলিয়ন ডলারের আর্কটিক নিরাপত্তা প্যাকেজ

গ্রিনল্যান্ড (Greenland) নিয়ে উত্তেজনা: ডেনমার্ক ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তা (Arctic Security) বাড়াতে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, তিনি গ্রিনল্যান্ডের (Greenland) ওপর নিয়ন্ত্রণ পেতে আগ্রহী। নতুন প্রতিরক্ষা প্যাকেজের (Defence Package) অংশ হিসেবে ডেনমার্ক আর্কটিক জলে (Arctic Waters) আরও তিনটি নতুন জাহাজ মোতায়েন করছে, যা গ্রিনল্যান্ডকে ঘিরে পেট্রোল বা সুরক্ষার কাজ করবে। একইসঙ্গে দীর্ঘ-পাল্লার ড্রোন (Long-range Drones) এবং স্যাটেলাইট সক্ষমতা (Satellite Capacity) বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া আসন্ন সপ্তাহগুলোতে আরও অর্থ বরাদ্দ আসতে পারে।

ট্রাম্পের দাবি ও ডেনমার্কের প্রতিক্রিয়া: এই পদক্ষেপের পেছনে প্রেক্ষাপট হলো—ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে, ডেনমার্ককে (Denmark) গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে। তিনি সামরিক শক্তি ব্যবহারের (Military Force) সম্ভাবনাও নাকচ করেননি। ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন, এখনকার প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি ট্রাম্পের ঘোষণার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং আর্কটিক ও উত্তর আটলান্টিকে (North Atlantic) নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাওয়ায় এটি প্রয়োজনীয়। যেহেতু বর্তমানে গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ডেনমার্কের হাতে, তাই এই বাড়তি সামরিক সক্ষমতা একদিকে মার্কিন “আগ্রাসন (Aggression)” রুখতে পারে, অন্যদিকে ট্রাম্পকে দেখাতে পারে, ডেনমার্ক নিজেরাই গ্রিনল্যান্ড রক্ষা করতে সক্ষম—ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা (American National Security) চিন্তা এখানে প্রাধান্য পায়। এই সপ্তাহের শেষদিকে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন (Mette Frederiksen) ফ্রান্স, জার্মানি ও ন্যাটোর (NATO) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন, যাতে ইউরোপীয় ঐক্য (European Unity) দৃঢ় হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত বিদেশি সাহায্য স্থগিত

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ: এক নির্বাহী আদেশ (Executive Order) জারি করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সমস্ত মার্কিন বিদেশি সাহায্য (Foreign Aid) সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, ব্যতিক্রম কেবল জরুরি খাদ্য সহায়তা (Emergency Food Assistance) এবং ইসরায়েল-ইইউ-ইজিপ্টের (Israel and EU Egypt) সামরিক সাহায্য (Military Aid)। এই স্থগিতাদেশ ৯০ দিনের জন্য কার্যকর, যার মাঝে সব কর্মসূচির কার্যকারিতা (Efficiency) ও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির (Foreign Policy Agenda) সাথে সামঞ্জস্যতা পর্যালোচনা করা হবে। ফলে বিশালসংখ্যক মানবিক উদ্যোগ (Humanitarian Initiatives)—যেমন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া মোকাবিলা, শিশুদের শিক্ষা, আইএসের (ISIS) যোদ্ধাদের বন্দিশিবির ব্যবস্থাপনা—সবই প্রভাবিত হচ্ছে।

পরিণতি ও প্রতিবাদ: দাতব্য সংস্থা অক্সফাম (Oxfam) বলছে, এই অর্থায়ন স্থগিতের ফলে দুর্ভিক্ষপীড়িত সুদানের (Sudan) মতো দেশে জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন চলে আসতে পারে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (Antonio Guterres) যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছেন, যেন কিছুসংখ্যক উদ্যোগে ছাড় (Exemptions) দেওয়া হয়, কারণ এটি কার্যত প্রায় সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করে দিচ্ছে। এরপর বেশ কয়েকটি প্রধান এনজিও (NGOs) ও সহায়তা সংস্থা ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে অচল হয়ে পড়তে পারে। ইউএসএইডের (USAID) ৬০ জন ঊর্ধ্বতন পেশাদার কর্মকর্তা (Career Work Officials) এখন বাধ্যতামূলক ছুটিতে (Placed on Leave) আছেন, কারণ একটি অভ্যন্তরীণ মেমোতে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, তারা ট্রাম্পের নীতিকে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সহায়তা-দাতা (Largest Humanitarian Donor)। ফলে এই “সহায়তার শূন্যতা” (Vacuum) সৃষ্টি হতে পারে, যা চীন (China) বা অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোর জন্য জায়গা করে দেবে। তবে ইউক্রেনের (Ukraine) সামরিক সাহায্য বন্ধ হয়নি বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি (Zelensky) জানিয়েছেন, যদিও ইউক্রেন এ স্থগিতাদেশের তালিকায় আনুষ্ঠানিক ছাড়ের মধ্যে নেই।

যুক্তরাজ্যে জেন জি তরুণদের মধ্যে কর্তৃত্ববাদপন্থী মানসিকতা বৃদ্ধি

গবেষণার ফলাফল: যুক্তরাজ্যের (UK) একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ প্রজন্মের (Gen Z), অর্থাৎ ১৩ থেকে ২৭ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে কর্তৃত্ববাদ (Authoritarianism)-পন্থী দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ছে। চ্যানেল ৪ (Channel 4) প্রকাশিত “Gen Z: Trends, Truth and Trust” শিরোনামের প্রতিবেদনটি বলছে:

  • ৫২% জেন জি (Gen Z) মনে করেন যুক্তরাজ্য আরও ভালো হতো, যদি একজন “শক্তিশালী নেতা (Strong Leader)” থাকতেন, যাকে সংসদ (Parliament) ও নির্বাচনের (Elections) ঝামেলা পোহাতে হতো না।
  • ৩৩% বলেন, যুক্তরাজ্য (UK) হয়তো আরো ভালো হতো, যদি সামরিক বাহিনী (Army) শাসনভার হাতে নিত।
  • ৪৭% মনে করেন, আমাদের সমাজব্যবস্থাকে (Society) সম্পূর্ণভাবে আমূল বদল করা উচিত “বিপ্লবের (Revolution)” মাধ্যমে।

প্রজন্মভেদে পার্থক্য: ৪৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে শুধু ৩৩% “বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজ বদল” বাক্যের সাথে একমত হয়েছেন, যেখানে জেন জির প্রায় অর্ধেক সায় দিয়েছে। শুধু কর্তৃত্ববাদবিষয়ক মনোভাবই নয়, এই গবেষণায় দেখা যায়, জেন জি পুরুষদের (Male Gen Z) মধ্যে নারীদের (Women) প্রতি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ৪৫% পুরুষ, যাদের বয়স ১৩ থেকে ২৭-এর মধ্যে, মনে করেন—নারীর সমতাকে (Women’s Equality) এত এগিয়ে নেওয়া হয়েছে যে এখন পুরুষরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

উদ্বেগ ও ভবিষ্যৎ প্রভাব: চ্যানেল ৪-এর প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স মান (Alex Mann) এই ফলাফল দেখে বলেছেন, “গণতন্ত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার (Disengagement from Democracy) স্পষ্ট প্রমাণ আছে, যা অনলাইন তথাকথিত পাইড পাইপারদের (Online Pied Pipers) দ্বারা আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে—যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সত্যকে বিকৃত করে। পাশাপাশি, পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিভেদ (Gender Divide) বাড়ছে, যা আমাদের সবার উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।”

সূত্র

২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • ডোনাল্ড ট্রাম্প  তার প্রথম আক্রমণাত্মক শুল্ক হুমকি বাস্তবায়ন: কলম্বিয়া-যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কবিরোধ ও অন্যান্য
  • রুয়ান্ডা-সমর্থিত বিদ্রোহীদের দ্বারা পূর্ব কঙ্গোর বৃহত্তম শহর দখল
  • হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় তাদের ধ্বংসস্তূপে ফিরে যাচ্ছেন
  • সুইডেন ও লাটভিয়ার মধ্যে সাবমেরিন কেবলে ‘নাশকতার’ সন্দেহ

ডোনাল্ড ট্রাম্প  তার প্রথম আক্রমণাত্মক শুল্ক হুমকি বাস্তবায়ন: কলম্বিয়া-যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কবিরোধ ও অন্যান্য

সংঘাতের সূত্রপাত: গত রাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোর (Gustavo Petro) মধ্যে একটি বড় মুখোমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানে (US Military Flights) কলম্বিয়ান অভিবাসীদের (Colombian Migrants) বহিষ্কার (Deportation) নিয়ে বিরোধ মোটামুটিভাবে রূপ নিতে যাচ্ছিল একটি পূর্ণমাত্রার বাণিজ্যযুদ্ধে (Trade War)। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে কলম্বিয়া যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী বহনকারী ফ্লাইটগুলোকে অবতরণ করতে বাধা দেয়। পেত্রো অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়ান অভিবাসীদের অপরাধীর মতো আচরণ করছে। ব্রাজিলের সরকারও (Brazil’s Government) একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, তারা তাদের নাগরিকদের আমেরিকায় বহিষ্কার (Deportation) করার সময় হাতকড়া পরানোর (Handcuffs) ঘটনায় প্রতিবাদ জানায়।

ট্রাম্পের জবাব: শুল্ক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার হুমকি: কলম্বিয়া যখন বিমানগুলোকে নামতে দেয়নি, তখন ট্রাম্প তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশ দেন যে, কলম্বিয়ার সকল আমদানি পণ্যের ওপর (Imports from Colombia) ২৫% শুল্ক (Tariffs) আরোপ করা হবে। হোয়াইট হাউস (White House) আরও হুঁশিয়ারি দেয়:

  1. কলম্বিয়ান নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা (Travel Ban)
  2. যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কলম্বিয়ান কর্মকর্তাদের (Colombian Officials) ভিসা বাতিল (Revoking of Visas)
  3. এবং অভিবাসী ও অ-অভিবাসী ভিসা (Immigrant and Non-Immigrant Visas) প্রক্রিয়া স্থগিত (Suspending Visa Processing) করা হতে পারে।

পাল্টা জবাবে পেত্রোও (Petro) যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। সামাজিক মাধ্যমে দুপক্ষের মধ্যে কথার লড়াই চলে। পেত্রো স্বয়ং ট্রাম্প এবং মার্কো রুবিওকে (Marco Rubio) আক্রমণ করে লেখেন যে, তিনি কখনোই “মার্কিন পতাকা পোড়াবেন না বা হাতকড়াপড়া অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠাতে সামরিক অভিযানে যাবেন না।”

সমঝোতা ও ফলাফল: কিন্তু কিছু ঘণ্টা পর দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ রূপে সমঝোতা হয়। হোয়াইট হাউস জানায়, কলম্বিয়া ট্রাম্পের সকল শর্ত মেনে নিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কলম্বিয়ান কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে, যতক্ষণ না প্রথম বহিষ্কৃত কলম্বিয়ানদের দল (Planeload of Colombian Deportees) সফলভাবে ফেরত পাঠানো হয়। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্কও (Proposed Tariffs) প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে কলম্বিয়া যদি চুক্তি না মানে তাহলে সেটি কার্যকর করা যেতে পারে।

অভিবাসন নীতি ও প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি বার্তা: ট্রাম্পের অভিবাসন কঠোরতা (Immigration Crackdown) নিয়ে ইতোমধ্যে নানা আলোচনা আছে—তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ১১০ লাখের (11 Million Undocumented Immigrants) মতো অনথিভুক্ত অভিবাসীদের ওপর বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আশপাশের দেশগুলোও (Countries in the Region) উদ্বিগ্ন। ট্রাম্প ইতোমধ্যে কানাডা (Canada) ও মেক্সিকোকেও (Mexico) শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, সীমান্তসংক্রান্ত (Border Issues) সমস্যা ও মাদক নিয়ে। মেক্সিকো বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে, যাতে প্রস্তাবিত শুল্ক (Proposed Tariffs) এড়ানো যায়। কলম্বিয়ার সাথে এই ‘প্রাথমিক বিজয় (Early Victory)’ দেখে অনেকেই বলছেন, হোয়াইট হাউসের কিছু কর্মকর্তা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানায়, “আজকের ঘটনা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল আমেরিকাকে (America) আবার সম্মান করা হচ্ছে। (America is Respected Again)”

সূত্র

রুয়ান্ডা-সমর্থিত বিদ্রোহীদের দ্বারা পূর্ব কঙ্গোর বৃহত্তম শহর দখল

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট: রুয়ান্ডান সমর্থিত এম২৩ (M23) বিদ্রোহী গোষ্ঠী পূর্ব কঙ্গোর বৃহত্তম শহর গোমা (Goma) দখল করেছে বলে জানা গেছে। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (DR Congo) এবং রুয়ান্ডার মধ্যে সম্পর্ক আরো খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত এতে পাওয়া যাচ্ছে। ২০২১ সালে এম২৩ বিদ্রোহ আবার মাথাচাড়া দেয়। তার পর থেকে কঙ্গোর খনিজসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চল জুড়ে তারা বিরাট এলাকা দখল করে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে আক্রমণ তীব্রতর হলে কয়েক লক্ষ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় (Displaced People)।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: গত সপ্তাহে সংঘাত বেড়ে যায়, যখন জাতিসংঘ (United Nations) মিশন এবং সদ্য যুক্ত সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (Southern African Development Community, সংক্ষেপে SADC) মিশনের অন্তত ১৩ জন শান্তিরক্ষী (Peacekeepers) এম২৩-এর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন। রবিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (UN Security Council) একটি জরুরি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য রুয়ান্ডার এম২৩-সমর্থনের নিন্দা জানায়। তারা এম২৩-কে গোমার দিকে অগ্রসর হওয়া বন্ধ করতে বলে। কিন্তু সোমবার সকালে এম২৩ ঘোষণা করে, তারা শহরটি (Goma) দখল করে নিয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রুয়ান্ডার প্রায় ৪০০০ সেনা (Troops) সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এম২৩-এর পক্ষে লড়ছে এবং রুয়ান্ডা কার্যত এম২৩-এর অপারেশনে নিয়ন্ত্রণ (De Facto Control) করছে। রুয়ান্ডার অবশ্য পূর্ব কঙ্গোতে একাধিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ আছে, বিশেষ করে মূল্যবান খনিজ সম্পদ-নির্ভর খনি অঞ্চল (Mining Operations) এম২৩-এর দখলে থাকায় রুয়ান্ডা সুবিধা পায়। কঙ্গো সরকারের দাবি, রুয়ান্ডা সীমান্ত পেরিয়ে সরাসরি মদদ দিচ্ছে। আবার রুয়ান্ডা বলছে, কঙ্গো নিজেও অস্থিরতায় ইন্ধন জোগাচ্ছে, যেমন, কঙ্গোর ভূখণ্ডে অবস্থানরত এফডিএলআরের (FDLR) মতো রুয়ান্ডাবিরোধী গোষ্ঠীকে সমর্থন করছে।

আঞ্চলিক উদ্যোগ: কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো (William Ruto) (যিনি ইস্ট আফ্রিকান কমিউনিটির (East African Community) বর্তমান চেয়ার) একটি যুদ্ধবিরতির (Ceasefire) ডাক দিয়েছেন। তিনি কঙ্গো ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে জরুরি আঞ্চলিক সম্মেলনের (Regional Summit) আয়োজনের কথা জানিয়েছেন।

সূত্র

হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় তাদের ধ্বংসস্তূপে ফিরে যাচ্ছেন

বন্ধ ছিল উত্তরে প্রবেশ: দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল (Israel) উত্তর গাজা (Northern Gaza) এলাকায় প্রবেশ বন্ধ রেখেছিল। সোমবার এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি (Palestinians) ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যাচ্ছেন। হামাস (Hamas) ও ইসরায়েল একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে, যেখানে বৃহস্পতিবার আরেক দফা বন্দি বিনিময় (Hostage Release) হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সপ্তাহান্তে দুটি দিন চুক্তি ঝুলে ছিল, কারণ বন্দি বিনিময়ের ক্রম (Order of Release) নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। এখন সেটি মীমাংসা হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ: ভিডিওতে দেখা যায়, সকাল ৭টা থেকেই লোকজন উপকূলীয় নেটজেরিম করিডোর (Coastal Netzerim Corridor) ব্যবহার করে পায়ে হেঁটে উত্তরের দিকে যাচ্ছেন। তবে যারা গাড়িতে করে ফিরতে চান, তাদের ব্যাপক কাগজপত্র পরীক্ষা (Inspection) ও ধীর গতির কারণে বেশ কয়েক দিন অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে। অনেকেই কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে অস্থায়ী ক্যাম্পে (Temporary Camps) বাস করছিলেন। তারা এখন ধ্বংসস্তূপ বা অর্ধেক ভাঙা বাড়িতে ফিরে গিয়ে নতুন করে বসবাস শুরু করবেন, যেহেতু বেশিরভাগ বাড়ি আর আগের অবস্থায় নেই।

ইসরায়েল-লেবানন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা বৃদ্ধি: রবিবার হোয়াইট হাউস ঘোষণায় জানায়, ইসরায়েল ও লেবানন (Lebanon) দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে যে, ইসরায়েলি সেনাদের দক্ষিণ লেবানন (Southern Lebanon) থেকে প্রত্যাহার (Withdrawal) করার সময়সীমা ফেব্রুয়ারি ১৮ পর্যন্ত বাড়ানো হবে। ইসরায়েলের বক্তব্য, লেবানন সেনা পুরোপুরি মোতায়েন করেনি (হেজবোল্লাহ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে)। লেবানন আবার দাবি করছে, ইসরায়েল সরে না গেলে তারা সেনা মোতায়েন করতে পারছে না। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (Health Ministry) তথ্য অনুযায়ী, রবিবার ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২২ জন লেবাননি নিহত হয়েছেন, যারা ইসরায়েলের ধীরগতির প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন। দাবি করা হয়, কিছু প্রতিবাদকারী হেজবোল্লাহর (Hezbollah) পতাকা উড়িয়েছিল, আর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা “ওয়ার্নিং শট (Warning Shots)” ছুড়েছে, কারণ বিক্ষোভকারীরা কিছু অঞ্চলে সন্দেহজনকভাবে কাছাকাছি চলে এসেছিল।

সূত্র

সুইডেন ও লাটভিয়ার মধ্যে সাবমেরিন কেবলে ‘নাশকতার’ সন্দেহ

ক্ষতিগ্রস্ত যোগাযোগ লাইন: সুইডেন (Sweden) সমুদ্রতলের (Undersea) একটি যোগাযোগ কেবল (Communications Cable) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নাশকতার (Sabotage) তদন্ত শুরু করেছে। এই কেবলটি সুইডেন ও লাটভিয়ার (Latvia) মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার, সুইডেনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (Exclusive Economic Zone)। মনে করা হচ্ছে, বাইরের কোনো হস্তক্ষেপে (External Interference) এটি ঘটেছে। লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী এভিকা সিলিনিয়া (Evica Seljina) জানিয়েছেন, লাটভিয়া ন্যাটো (NATO) ও অন্যান্য বাল্টিক রাষ্ট্রের (Baltic States) সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে। লাটভিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ এলভিআরটিসি (LVRTC) এবং ফাইবার অপটিক কেবল মালিকরা এ বিষয়ে অপরাধ তদন্তের জন্য অভিযোগ দায়ের করেছে।

ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া: গত সপ্তাহে ন্যাটো ঘোষণা করেছিল, তারা আরও বিমান টহল (Patrol Aircraft) ও নৌ ড্রোন (Naval Drones) পাঠাবে বাল্টিক সাগরে (Baltic Sea) গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষায়। সংস্থাটি রবিবার জানায়, ন্যাটোর জাহাজ ও বিমান বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সাগরতলে কেবল ও পাইপলাইনে সন্দেহজনক ক্ষতির বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। যেমন, ফিনিশ (Finnish) ও এস্তোনিয়ান (Estonian) মধ্যে পাওয়ার কেবল এবং চারটি টেলিকম কেবলে ক্ষতি হওয়ার পর ফিনল্যান্ড গত মাসে একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে।

সূত্র

২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • মার্কিন ফেডারেল বিচারকের দ্বারা ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নির্বাহী আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিতকরণ
  • বেলারুশে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং শুরু আগাম ভোট (Early Voting)
  • তালেবান নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের
  • ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে আরও সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা উত্তর কোরিয়ার
  • যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ম্যান্ডেলসন?: ট্রাম্পের বিরোধিতায় নিয়োগে অনিশ্চয়তা
  • যুক্তরাজ্যে পেনশন ট্রিপল লক: বহাল নাকি বিদায়?

মার্কিন ফেডারেল বিচারকের দ্বারা ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের নির্বাহী আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিতকরণ

জন্মসত্তা নাগরিকত্বের (Birthright Citizenship) ঐতিহাসিক ধারণা: যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪শ সংশোধনী (14th Amendment of the US Constitution) অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে (US Soil) জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব (US Citizenship) লাভ করে থাকেন। একে সাধারণভাবে জন্মসত্তা নাগরিকত্ব (Birthright Citizenship) বলা হয়। এটি দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার (Immigration System) একটি মৌলিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই সুবিধার ফলে কোনো ব্যক্তির বাবা-মায়ের নাগরিকত্ব যাই হোক না কেন, যদি তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে হয়, তবে সেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমেরিকান নাগরিক হতে পারে। বহু দশক ধরেই এটি বিতর্কিত ছিল না, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসন সংক্রান্ত রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়ে যাওয়ায় বিষয়টি আবারো চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ (Executive Order) ও তার প্রেক্ষাপট: ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (President Donald Trump) বেশ কিছু কঠোর অভিবাসন-সংক্রান্ত (Hardline Anti-Immigration) নির্দেশিকায় সই করেন। এর মধ্যে ছিল—

  • অনথিভুক্ত অভিবাসীদের (Undocumented Migrants) ব্যাপকহারে বিতাড়ন (Deportation),
  • শরণার্থীদের (Refugees) গ্রহণ সংখ্যা কমিয়ে আনা,
  • প্রধানত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের (Predominantly Muslim Countries) নাগরিকদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা (Travel Ban) আরোপ,
  • এবং সবশেষে জন্মসত্তা নাগরিকত্ব (Birthright Citizenship) বন্ধের ঘোষণা।

ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী যেকোনো শিশুই স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব হারাবে যদি তার বাবা-মায়ের মার্কিন নাগরিকত্ব না থাকে বা বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা (Legal Permanent Resident) না হন। এমনকি অস্থায়ী ভিসায় (Temporary Visa) যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ব্যক্তিদের সন্তানদের জন্যও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি কাজ (Work Visa), পড়াশোনা (Student Visa) বা ভ্রমণ (Tourist Visa) করার উদ্দেশ্যে স্বল্প সময়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন এবং সে সময়ে সন্তানের জন্ম হয়, তবে সেই সন্তান আর স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব পাবে না—এটাই ছিল ট্রাম্পের পরিকল্পনা।

মামলার (Lawsuit) সূত্রপাত: এই আদেশ ঘোষণার পরই চারটি ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত অঙ্গরাজ্যের (Democratic State Attorneys General) অ্যাটর্নি জেনারেল—ওয়াশিংটন (Washington), ওরেগন (Oregon), অ্যারিজোনা (Arizona) এবং ইলিনয় (Illinois)—মিলিতভাবে এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিভিন্ন নাগরিক অধিকার সংগঠন (Civil Rights Groups) একই ধরনের মামলা দায়ের করে। আইনজীবীরা যুক্তি দেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪শ সংশোধনী (14th Amendment) স্পষ্টভাবে বলে—“যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ বা প্রাকৃতিকীকরণ (Naturalized) যেকোনো ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।” কাজেই এই নির্বাহী আদেশ সরাসরি ১৪শ সংশোধনী লঙ্ঘন করছে এবং এটি অসাংবিধানিক। ওয়াশিংটনের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, যদি এই নির্বাহী আদেশ কার্যকর হয়, তবে হাজারো শিশুর নাগরিকত্বের অধিকার খর্ব হবে, যা “অসাংবিধানিক (Unconstitutional) এবং আমেরিকান মূল্যবোধের (Un-American) পরিপন্থী।” ট্রাম্প প্রশাসন (Trump Administration) অবশ্য পাল্টা যুক্তি দেখায় যে ১৪শ সংশোধনী “সর্বজনীনভাবে” (Universally) জন্মগ্রহণকারী সকলকে নাগরিকত্ব দিয়েছে বলে যে ব্যাখ্যা প্রচলিত, তা ঐতিহাসিকভাবে ভুল ব্যাখ্যা। এই আদেশ জারি করে তারা মূলত সংবিধানের বিতর্কিত দিকটি স্পষ্ট করতে চেয়েছিলেন বলে দাবি করে।

ফেডারেল বিচারকের (Federal Judge) আদেশ: ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ (বৃহস্পতিবার) সিয়াটল (Seattle) শহরের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট (U.S. District Court) বিচারক জন কুহনার (John Kouhner) উভয় পক্ষের যুক্তি শোনেন। পরদিন, ২৪ জানুয়ারি, তিনি একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (Restraining Order) জারি করে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আদালতের চূড়ান্ত রায় না দেওয়া পর্যন্ত নির্বাহী আদেশটি কার্যকর হবে না। হোয়াইট হাউস (White House) অবশ্য জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) আপিল করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওভাল অফিসে (Oval Office) এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “অবশ্যই আমরা আপিল করব। তারা এটি এমন এক বিচারকের সামনে নিয়ে গেছে যার রায় মোটেও অবাক করার মতো নয়।” আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে এবং সেখানে বড় ধরনের সাংবিধানিক বিতর্ক (Constitutional Debate) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সূত্র

বেলারুশে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং শুরু আগাম ভোট (Early Voting)

নির্বাচনের সময়সূচি ও বিতর্ক: বেলারুশে সদ্য শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন (Presidential Election)। সাধারণত নির্বাচন গ্রীষ্মের (Summer) সময় হবার কথা ছিল, কিন্তু সরকারি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেটি ছয় মাস এগিয়ে আনা হয়েছে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালীন সময়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ (Protests) বেড়ে যেতে পারে—এই আশঙ্কায় তারা নির্বাচনের তারিখ এগিয়ে নিয়ে এসেছে। আগাম ভোট (Early Voting) শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে (২১ জানুয়ারি, ২০২৫) এবং চলবে রবিবার (২৬ জানুয়ারি, ২০২৫) পর্যন্ত। পশ্চিমা বিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট (U.S. State Department) এই নির্বাচনের সমালোচনা করে বলছে, বর্তমান দমনমূলক পরিস্থিতিতে (Repressive Environment) কোনো অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।

লুকাশেঙ্কোর (Lukashenko) একনায়কতন্ত্র: বেলারুশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো (Alexander Lukashenko) দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন এবং তিনি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপি (Rigged Election) ও ব্যাপক সহিংসতার অভিযোগ উঠেছিল, যা তীব্র গণবিক্ষোভের জন্ম দেয়। সেসময় প্রায় ৭,৭০০ মানুষকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত (Politically Motivated Charges) করা হয়েছিল—তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদকারী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (Social Media) মন্তব্যকারী এবং এনজিওর (NGO) সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। হাজারো মানুষকে কারাগারে (Imprisoned) অথবা মানসিক হাসপাতালে (Psychiatric Wards) আটক রাখা হয়। মানবাধিকার সংস্থা ভিয়াজনার (Vyazna) তথ্যমতে, এখনো প্রায় ১,৩০০ রাজনৈতিক বন্দি (Political Prisoners) কারাগারে রয়েছেন। শুধু ২০২৪ সালেই ১,৭০০ জনের বেশি মানুষকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে অনেকে কারাবন্দিদের সহায়তার জন্য খাদ্য দেওয়ায় (Sending Food) অভিযুক্ত হন। ফলে, শত সহস্র বেলারুশিয়ান দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন (Fled the Country)। লুকাশেঙ্কো ক্রমে পুতিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি পুতিনের সঙ্গে ২০ বারেরও বেশি দেখা করেছেন এবং গত বছর বেলারুশে পুতিনকে তিনবার স্বাগত জানিয়েছেন।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নির্ভরতা: রাশিয়া এবং বেলারুশ উভয়ের ওপরেই পশ্চিমা বিশ্ব (Western Countries) নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) আরোপ করেছে। ফলে দুই দেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বেড়েছে। বেলারুশের অর্থনীতি (Belarusian Economy) গত বছরে প্রায় ৪% প্রবৃদ্ধি পেয়েছে, যার বড় কারণ রাশিয়ান বাজারে বেলারুশের পণ্যের চাহিদা, সস্তায় রুশ জ্বালানি তেল ও গ্যাস সরবরাহ, এবং রাশিয়ান ঋণ (Russian Loans) সহজলভ্য হওয়া। এসব কারণে, এবারের নির্বাচনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বরং লুকাশেঙ্কো নিজের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে আরও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন। পশ্চিমা বিশ্ব এই নির্বাচনকে “একটি প্রহসন (Sham)” বলে আখ্যায়িত করছে এবং এটি আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মানদণ্ড (Democratic Standards) পূরণ করবে না বলেই স্পষ্ট মতামত দিয়েছে।

সূত্র

তালেবান নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের

তালেবানের বিরুদ্ধে মামলার প্রেক্ষাপট: আফগানিস্তানে তালেবান (Taliban) পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিশেষ করে নারী ও কন্যাশিশুদের (Women and Girls) ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। তাদের শিক্ষা, কাজ ও স্বাধীন চলাচলের অধিকারে ব্যাপক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) প্রধান কৌঁসুলি (Chief Prosecutor) করিম খান (Karim Khan) তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা (Supreme Leader) হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (Habitullah Akhunzada) এবং আফগানিস্তানের প্রধান বিচারপতি (Chief Justice) আবদুল হাকিম হাক্কানি (Abdul Hakim Haqqani)–এই দুইজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা (Arrest Warrant) জারির অনুরোধ করেছেন। অভিযোগ করা হয়েছে যে, তারা লিঙ্গ ভিত্তিক নিপীড়ন (Persecution on Gender Grounds) এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের (Crimes Against Humanity) জন্য দায়ী।

অভিযোগের ধরন: আইসিসির (ICC) অভিশংসক দপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে চলমান এই নিপীড়ন অন্তত নিম্নোক্ত গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনকে (Severe Deprivations of Fundamental Rights) তুলে ধরে:

  • শারীরিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার অধিকার (Physical Integrity and Autonomy),
  • অবাধ চলাচলের অধিকার (Free Movement),
  • মতপ্রকাশের স্বাধীনতা (Free Expression),
  • শিক্ষার অধিকার (Right to Education),
  • ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের স্বাধীনতা (Private and Family Life),
  • এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অধিকার (Right to Free Assembly)।

যেসব নারী ও মেয়ে তালেবানদের কঠোর নিয়মের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয় বা যারা কন্যা-নারীদের পক্ষে কথা বলেন, তাদেরও একই নিপীড়নের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

সামনের পথ ও সম্ভাব্য ফলাফল: এটি আইসিসির প্রথম বৃহৎ উদ্যোগ যেখানে নারীদের বিরুদ্ধে কাঠামোগত নিপীড়নকে (Systemic Crimes Against Women) মুখ্য অভিযোগ হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। অনেক মানবাধিকার কর্মী এটিকে একটি “গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত (Important Moment)” হিসেবে দেখছেন। তবে বাস্তবে তালেবান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে, কারণ তালেবান নেতারা এমন দেশে বা অঞ্চলে সফর করেন না যেখানে তারা গ্রেপ্তারের (Arrest) শঙ্কায় পড়তে পারেন। তদুপরি, আফগানিস্তান বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক আইনের সহায়তায় সহজে প্রবেশাধিকার দেয় না। ফলে আইনি প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।

সূত্র

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে আরও সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনা উত্তর কোরিয়ার

দক্ষিণ কোরিয়ান সেনাবাহিনীর (South Korean Joint Chiefs of Staff) অভিযোগ: ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে (War in Ukraine) রাশিয়ান পক্ষে লড়াই করতে উত্তর কোরিয়া (North Korea) অতিরিক্ত সৈন্য পাঠাতে চলেছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ বাহিনী সদর দপ্তর (South Korean Joint Chiefs of Staff) জানিয়েছে। তারা এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে যে, পিয়ংইয়ং (Pyongyang) “ফলো-আপ ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত সৈন্য প্রেরণের প্রস্তুতি বাড়িয়ে দিচ্ছে।” যদিও তারা সুনির্দিষ্ট করে বলেনি ঠিক কতজন সৈন্য পাঠানো হবে অথবা কী ধরনের সামরিক সহায়তা তারা দেবে, তবে ধারণা করা হচ্ছে এর আগেও উত্তর কোরিয়া প্রায় ১১,০০০ সৈন্য রাশিয়ান পক্ষে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনে পাঠিয়েছে।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন (Kim Jong Un) ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্ববর্তী সম্পর্ক (Trump-Kim Relationship) বিশ্ব-রাজনীতিতে বহুল আলোচিত ছিল। একসময় তারা বাকযুদ্ধে জড়ালেও পরে ব্যক্তিগত বৈঠকে একে অপরকে চিঠি বিনিময় পর্যন্ত করেছেন। সম্প্রতি, ফক্স নিউজকে (Fox News) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আবারো কিম জং উনকে “স্মার্ট গাই (Smart Guy)” বলে উল্লেখ করেছেন। অনেকে ধারণা করছেন যে, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন হয়তো কোরীয় উপদ্বীপে (Korean Peninsula) তাদের পূর্বেকার কূটনৈতিক অবস্থান (Diplomatic Stance) পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলাফলে সম্ভাব্য প্রভাব: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia-Ukraine War) চলছে দীর্ঘদিন ধরে। রাশিয়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক চাপের মুখে রয়েছে, বিশেষ করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক সহায়তার ঘাটতির প্রেক্ষিতে। এ অবস্থায় উত্তর কোরিয়া বা অন্যান্য মিত্র দেশের (Allied Countries) কাছ থেকে অতিরিক্ত সৈন্য ও সরঞ্জাম পেলে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার শক্তি বাড়তে পারে। তবে সামরিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু ম্যানপাওয়ার বাড়ালেই রাশিয়ার যুদ্ধগত সাফল্য নিশ্চিত হবে না; এর পেছনে কৌশলগত সক্ষমতা (Strategic Capabilities) ও রসদ সরবরাহ (Logistics) বড় ভূমিকা রাখে।

সূত্র

যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ম্যান্ডেলসন?: ট্রাম্পের বিরোধিতায় নিয়োগে অনিশ্চয়তা

এখানে পিটার ম্যান্ডেলসনকে (Peter Mandelson) নিয়ে আলোচনা করা হবে, যিনি নিউ লেবার (New Labour) যুগে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং কেইর স্টারমারের অধীনে তার কিছুটা পুনরুত্থান হয়েছে।

স্টারমার তাকে যুক্তরাষ্ট্রে (US) নতুন UK রাষ্ট্রদূত (UK Ambassador) হিসেবে প্রস্তাব করেছেন, যাতে তিনি ট্রাম্পের (Trump) সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন। যদিও ম্যান্ডেলসনের নিয়োগ গত বছর ঘোষণা করা হয়েছিল, তবে আমরা এখন এটি নিয়ে আলোচনা করছি কারণ খবর রটেছে যে ট্রাম্প প্রশাসন ম্যান্ডেলসনকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

প্রত্যাখ্যান করার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া না থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র (US) যুক্তরাজ্যকে (UK) জানিয়ে দিতে পারে যে তারা ম্যান্ডেলসনকে চায় না এবং অন্য কাউকে বেছে নিতে বলতে পারে। ট্রাম্পের (Trump) ম্যান্ডেলসনকে প্রত্যাখ্যান করার পেছনে কয়েকটি কারণ আছে। প্রধান কারণ হলো ম্যান্ডেলসনকে চীনের (China) প্রতি বেশি বন্ধুভাবাপন্ন মনে করা হয়, যা ট্রাম্পের চীনবিরোধী অবস্থানের বিপরীত। ম্যান্ডেলসন গ্লোবাল কাউন্সিল (Global Counsel) নামে একটি উপদেষ্টা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যার ক্লায়েন্টদের মধ্যে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিও রয়েছে। এছাড়া, তিনি বাণিজ্য নীতিতে চীনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গুরুত্বের কথাও বলেছেন, যা ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের নীতির সঙ্গে মেলে না।

স্টারমারের (Starmer) ভুল ধারণা ছিল যে পিটার ম্যান্ডেলসন (Peter Mandelson) একজন রাজনৈতিক নিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের (US) সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো, তাই তিনি ট্রাম্পের (Trump) সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। কিন্তু ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টি (Republican Party) আগের চেয়ে এখন অনেক আলাদা। নিউ লেবার (New Labour) যুগে ম্যান্ডেলসন হয়তো সঠিক ব্যক্তি ছিলেন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ম্যান্ডেলসনকে ট্রাম্পের (Trump) সঙ্গে কাজ করার জন্য উপযুক্ত মনে করাটা স্টারমারের ভুল হিসাব ছিল।

ট্রাম্প সম্ভবত চাইবেন যে নাইজেল ফারাজকে (Nigel Farage) যুক্তরাজ্যের দূত করা হোক। যদিও ম্যান্ডেলসনকে (Mandelson) নিয়োগের প্রস্তাব ফারাজকে (Farage) ওই পদে বসানোর জন্য নয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র (US) এমন কাউকে চাইতে পারে যিনি অন্তত কিছুটা হলেও তাদের মতাদর্শের কাছাকাছি।

যুক্তরাষ্ট্রের (US) এমন চাপ দেওয়ার নজির খুব বেশি নেই। সাধারণত যুক্তরাজ্য (UK) রাজনৈতিক নিয়োগের পরিবর্তে পেশাদার কূটনীতিকদের (diplomats) রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠায়। তবে এর আগে কিম ড্যারিক (Kim Darroch) যখন রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তখন ট্রাম্পের (Trump) সঙ্গে তার বিরোধ হয়েছিল এবং তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। ড্যারিক ট্রাম্পকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও সেটি ছিল একজন বিদ্যমান রাষ্ট্রদূতকে সরানো, কিন্তু এবার নিয়োগের শুরুতেই আপত্তি জানানোর বিষয়টি ভিন্ন। দেখা যাক ম্যান্ডেলসন শেষ পর্যন্ত এই পদ পান কিনা।

যুক্তরাজ্যে পেনশন ট্রিপল লক: বহাল নাকি বিদায়?

যুক্তরাজ্যে পেনশন ট্রিপল লক (pension triple lock) প্রায় এক দশক ধরে চালু আছে এবং এটি ন্যায্য নাকি অন্যায়, তা নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে। কনজারভেটিভ পার্টির বর্তমান প্রধান কেমি ব্যাডেনক (Kemi Badenoch) সম্প্রতি ট্রিপল লক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি হয়তো বলতে চেয়েছেন যে পেনশন (pension) সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সচ্ছলতা পরীক্ষা (Means testing) করা হতে পারে। যদিও তিনি সরাসরি কিছু বলেননি, তবে তার মন্তব্যের পর এটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।

লিবারেল ডেমোক্র্যাট (Liberal Democrat) দলের একজন প্রাক্তন মন্ত্রী, যিনি ট্রিপল লক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন, তিনিও বলেছেন যে এই ব্যবস্থা অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকা উচিত নয়। তিনি মনে করেন যে বর্তমানে এটি সঠিক পদক্ষেপ, তবে ভবিষ্যতে এটি পরিবর্তন করা দরকার। এছাড়া, একটি পিটিশন (petition) চালু হয়েছে, যেখানে ৬০ বছর বয়সে পেনশন (pension) শুরু করা এবং জীবনযাত্রার খরচের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পেনশন (pension) বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে।

ট্রিপল লক (triple lock) হলো একটি সরকারি প্রতিশ্রুতি, যেখানে প্রতি বছর পেনশন (pension) বৃদ্ধির হার কমপক্ষে তিনটি বিষয়ের মধ্যে সর্বোচ্চটি হবে: মূল্যস্ফীতি (inflation), গড় আয়ের বৃদ্ধি (average earnings growth), অথবা ২.৫%। এই ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো পেনশনভোগীদের দারিদ্র্য (pensioner poverty) দূর করা। কোভিড-১৯ (Covid-19) এর সময় এই ব্যবস্থার কারণে পেনশন (pension) ১০-১১% পর্যন্ত বেড়েছিল।

ট্রিপল লক (triple lock) ব্যবস্থা চালু করার মূল কারণ ছিল পেনশনভোগীদের দারিদ্র্য দূর করা এবং এটি ব্যাপকভাবে সমর্থিত হয়েছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে এবং বিশেষ করে যখন থেকে পেনশন (pension) উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, তখন থেকে আন্তঃপ্রজন্ম সাম্য (intergenerational fairness) নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ এই নীতিটি রাষ্ট্রের জন্য অনেক ব্যয়বহুল। ধারণা করা হয় যে এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। কর্মক্ষম জনসংখ্যার তুলনায় যখন অবসরপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন রাষ্ট্রের উপর পেনশন (pension) দেওয়ার চাপও বাড়ে।

অনেকের মতে, ভবিষ্যতের প্রজন্ম বর্তমান প্রজন্মের মতো উদার পেনশন সহায়তা (generous pension support) নাও পেতে পারে। সরকার যখন অর্থ সাশ্রয়ের কথা বলে, তখন তারা বিভিন্ন খাতে কাট বা ব্যয় হ্রাসের কথা চিন্তা করে, কিন্তু ট্রিপল লক (triple lock) ব্যবস্থাটি প্রায় অস্পৃশ্য (untouchable) থেকে যায়।

বর্তমান জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের (cost of living crisis) সময়ে, যখন সরকার বিভিন্ন উপায়ে মানুষের উপর আর্থিক চাপ দিচ্ছে, তখন ট্রিপল লক (triple lock) নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অনেকে মনে করেন যে অসাধারণ (extraordinary) আর্থিক সংকটের সময়ে, বোঝা সবার উপর সমানভাবে ভাগ করা উচিত।

অনেকে যুক্তি দেন যে তারা পেনশন সিস্টেমে অবদান রেখেছেন এবং তাদের এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পেনশন (state pension) কোনো ভাণ্ডার নয় যেখানে আপনি টাকা জমা করেন এবং পরে তা ফেরত (reclaim) নিতে পারেন। এটা বর্তমান কর (current taxation) থেকে দেওয়া হয়। পেনশনের পরিমাণ (pension amount) এবং যোগ্যতা (eligibility) সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।

বর্তমান সরকার কি ট্রিপল লক (triple lock) নিয়ে কিছু পরিবর্তন করবে? বলা কঠিন। তবে এটা স্পষ্ট যে এই বিষয়ে সম্মতি তৈরি (building consensus) হচ্ছে যে কিছু একটা করা দরকার। ট্যাবু ভেঙেছে। তবে বর্তমান সরকার হয়তো কোনো পদক্ষেপ নেবে না, কারণ এখন সময়টা উপযুক্ত নয়। কিন্তু কোনো এক সময় হয়তো এই বিষয়ে কিছু করতেই হবে। যদি লেবার পার্টিকে (Labour Party) মরিয়াভাবে তহবিল বাড়াতে হয় বা অর্থ সাশ্রয় করতে হয়, তাহলে এটা একটা উপায় হতে পারে। তবে শীতকালীন জ্বালানি ভাতা (winter fuel allowance) নিয়ে তারা যে সমস্যায় পড়েছিল, তা হয়তো তাদের মনে থাকবে।

ট্রিপল লক (triple lock) ব্যবস্থায় হয়তো ভবিষ্যতে পরিবর্তন আসবে। সম্ভবত দ্বৈত লক (double lock) ব্যবস্থা চালু করা হতে পারে, যেখানে ২.৫% বৃদ্ধির বিষয়টি বাদ দেওয়া হতে পারে। অথবা গড় আয় এবং মূল্যস্ফীতি এই দুইয়ের মধ্যে যেটি বেশি, সেটিকে বৃদ্ধির ভিত্তি ধরা হতে পারে। সরকার হয়তো পুরো ব্যবস্থা বাতিল করবে না, কিন্তু পরিবর্তন আনবে।

পেনশন ট্রিপল লক (pension triple lock) আপাতত বহাল থাকছে বলেই মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতে কী হবে, তা বলা মুশকিল।

২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • আইরিশ পার্লামেন্টে বিশৃঙ্খলা ও নতুন সরকার গঠনে বাধা
  • পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযান
  • রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের  হুমকি: ইউক্রেন নিয়ে সমঝোতা না করলে আরও নিষেধাজ্ঞা
  • প্রিন্স হ্যারি ও দ্য সান পত্রিকার মধ্যে আইনি নিষ্পত্তি

আইরিশ পার্লামেন্টে বিশৃঙ্খলা ও নতুন সরকার গঠনে বাধা

সংক্ষিপ্ত পটভূমি: গতকালের ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল যে আয়ারল্যান্ডের নতুন সরকার ২২ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে শপথ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি, বরং ডেইল এরিন (Dáil Éireann) অর্থাৎ আইরিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে নাটকীয় ঘটনা ঘটে। এ নাটকীয় অবস্থার ফলে অধিবেশন স্থগিত করতে বাধ্য হন স্পিকার (Dáil Speaker)। প্রধানমন্ত্রীর (Taoiseach) মনোনয়ন স্থগিত হওয়ায় নতুন সরকার কার্যভার গ্রহণ করতে পারেনি।

কী ঘটেছিল ডেইল-এ: আইরিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ঐতিহ্যগত নিয়ম অনুযায়ী ফিয়ানা ফল (Fianna Fáil) নেতা মিহল মার্টিন (Micheál Martin)-কে নতুন টিশক বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করার কথা ছিল। প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি হিগিন্স (Michael D. Higgins) পরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ দেবেন—এটাই ছিল প্রক্রিয়া।

নভেম্বরের নির্বাচনের পরে: ফিয়ানা ফল ও ফাইন গেইল (Fine Gael), উভয়ই সেন্টার-রাইট (Centre-Right-ish) দল বলে পরিচিত, আগের সরকারের মতো আরেকটি জোট গঠন করে। পার্থক্য এই যে, আগেরবার তাদের সাথে গ্রিন পার্টি (Green Party) ছিল, আর এবার সেই জায়গায় কিছু স্বতন্ত্র আঞ্চলিক এমপি (Independent Regional Lawmakers) সমর্থন যোগাচ্ছে। সেই স্বতন্ত্র আঞ্চলিক এমপিরা চেয়েছিল একটি “টেকনিক্যাল গ্রুপ (Technical Group)” গঠন করতে, যাতে তারা সংসদে (Opposition Bench) বিরোধী দলের মতো কথা বলার সময় ও অন্যান্য সুবিধা পায়। ডেইলের স্পিকার ভেরোনা মারফি (Verona Murphy) এটি প্রাথমিকভাবে মেনে নিতে চাইলেও, মূল বিরোধী দল সিন ফেইন (Sinn Féin) এবং অন্য সব বিরোধীদল এর তীব্র বিরোধিতা করে। তাদের যুক্তি—যে এমপিরা স্পষ্টতই সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তারা কীভাবে বিরোধী বেঞ্চে বসে বিরোধী দলের জন্য বরাদ্দ সময় ও সুযোগ-সুবিধা নিতে পারে? বিষয়টি নিয়ে ডেইলে তুমুল হট্টগোল হয়, স্পিকার মারফি স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চেষ্টা করলেও বিরোধীপক্ষ প্রতিবাদ চালিয়ে যায়। ফলে এক পর্যায়ে ডেইলের অধিবেশন একবার নয়, চারবার স্থগিত করতে হয়। শেষমেশ কোনো সমাধান না হওয়ায় সেদিনের মতো অধিবেশন মুলতবি করা হয়। ফলে মিহল মার্টিনের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টিও স্থগিত হয়ে যায়।

প্রতিক্রিয়া:

  • মিহল মার্টিন বিরোধীদলকে দোষারোপ করেন—তারা নাকি আইরিশ সংবিধান (Irish Constitution) ভাঙার চেষ্টা করছে।
  • বিদায়ী টিশক ও মার্টিনের জোটসঙ্গী সাইমন হ্যারিস (Simon Harris) ঘটনাটিকে “পুরোপুরি লজ্জাজনক” বলে অভিহিত করেছেন।
  • অন্যদিকে, সিন ফেইন নেত্রী ম্যারি লু ম্যাকডোনাল্ড (Mary Lou Macdonald) পাল্টা অভিযোগ করেন যে ক্ষমতায় আসতে যাওয়া সরকারই স্বতন্ত্র ‘ক্রোনি’ (Cronies) সমর্থকদের বিরোধী বেঞ্চে (Opposition Bench) বসাতে চায়।

সর্বশেষ অবস্থা: ২৩ জানুয়ারি সকালে (আজকের তারিখে), আয়ারল্যান্ড এখনো নতুন সরকার পায়নি। পরিস্থিতি কীভাবে সমাধান হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকারপক্ষ বলছে, সরকার গঠন হয়ে গেলে গঠনতান্ত্রিক বিধি বা ‘স্ট্যান্ডিং অর্ডারে (Standing Orders)’ এই বিরোধ নিষ্পত্তি করা সম্ভব। কিন্তু বিরোধীপক্ষ আগে বিষয়টির সমাধান চাইছে, তারপরই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন। এই অবস্থায় স্পিকার আজকের (বৃহস্পতিবার) অধিবেশনে অস্থায়ীভাবে ওই স্বতন্ত্র আঞ্চলিক গ্রুপকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। উভয় পক্ষই বলছে, আজ সকালের ‘লিডারস মিটিং (Leaders’ Meeting)’ আশাব্যঞ্জক ছিল। হয়তো পাঠক এই প্রতিবেদন পড়ার সময় পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডে নতুন সরকার গঠিত হয়ে যেতে পারে—তবে গতকালের বিশৃঙ্খলার ইঙ্গিত দিচ্ছে, এ সংসদীয় মেয়াদকাল বেশ উত্তপ্ত হতে চলেছে।

সূত্র

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযান

সাম্প্রতিক ঘটনার সারসংক্ষেপ: ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (Israeli Security Forces) সম্প্রতি পশ্চিম তীরের (West Bank) জেনিন (Jenin) এলাকায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করেছে। বিশেষত গাজায় (Gaza) সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর, এখন ইসরায়েলিদের নজর পশ্চিম তীরের বিভিন্ন অংশে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই পশ্চিম তীরে ও গাজায় সংঘাতে ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে—ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের (Israel-Hamas War) ধাক্কায় সহিংসতা বাড়তে থাকে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি অঞ্চলে (Palestinian Territory) নিরাপত্তা বিষয়ক ধারণায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জেনিন ও তার আশপাশে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানে ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের সবাইকে আইডিএফ (IDF) “সন্ত্রাসী (Terrorists)” বলে বর্ণনা করেছে। এই অভিযানে পশ্চিম তীর জুড়ে ২৫ জনেরও বেশি সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:

  • ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Palestinian Foreign Ministry) অভিযানের তীব্র নিন্দা করে বলেছে, ইসরায়েলের বর্তমান ডানপন্থী সরকার এই “দখলদারি (Occupation)” আরও পোক্ত করতে চাইছে।
  • দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের (Financial Times) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরায়েলি সরকার বিশেষ করে বেৎজালেল স্মোটরিচ (Bezalel Smotrich)-এর মতো কট্টরপন্থী (Far Right) নেতাদের চাপে আছে। স্মোটরিচ চান গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির (Ceasefire) সিদ্ধান্ত বাতিল করতে, অন্যথায় তিনি জোট ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।
  • দাভোসে (Davos), ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে (World Economic Forum) জাতিসংঘ মহাসচিব (UN Secretary General) উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিম তীর দখলকৃত অঞ্চলে পূর্ণ “অ্যানেক্স” (Annex) করার চেষ্টা করতে পারে, যা নেতানিয়াহুর (Netanyahu) সরকারের চরম ডানপন্থী সদস্যদের অন্যতম রাজনৈতিক লক্ষ্য।

সূত্র

রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের  হুমকি: ইউক্রেন নিয়ে সমঝোতা না করলে আরও নিষেধাজ্ঞা

প্রেক্ষাপট: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি আবার ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন (দ্বিতীয় মেয়াদে), রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে (Vladimir Putin) সতর্ক করে বলেছেন—যদি ইউক্রেন যুদ্ধের মীমাংসা দ্রুত না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরেক দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।

  • বুধবার নিজের “ট্রুথ সোশ্যাল (Truth Social)” প্ল্যাটফর্মে ট্রাম্প লেখেন, “যদি আমরা দ্রুত কোনো চুক্তিতে না আসি, তাহলে রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য মিত্রদেশগুলোতে যেকোনো কিছু রপ্তানির উপর উচ্চ হারে কর, শুল্ক (Tariffs) ও নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) আরোপ করা হবে।”
  • ট্রাম্প আরও বলেন, “এই যুদ্ধ কখনোই শুরু হত না যদি আমি প্রেসিডেন্ট থাকতাম। কাজেই এখন সময় এসেছে এটা শেষ করার।”

অর্থমন্ত্রী মনোনীত স্কট বেসান্টের বক্তব্য: গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী (Treasury Secretary) পদপ্রার্থী স্কট বেসান্ট (Scott Besant) কংগ্রেসে শুনানিতে জানান, তিনি রাশিয়ান তেল কোম্পানিগুলোর (Russian Oil Majors) ওপর বিশেষ নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। উদ্দেশ্য হবে রুশ অর্থনীতিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া, যাতে পুতিন প্রশাসন আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য হয়।

সূত্র

প্রিন্স হ্যারি ও দ্য সান পত্রিকার মধ্যে আইনি নিষ্পত্তি

ঘটনা ও পটভূমি: যুক্তরাজ্যে, “দ্য সান (The Sun)” পত্রিকার প্রকাশক সম্প্রতি প্রিন্স হ্যারিকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়েছে, বেআইনি ফোন হ্যাকিং (Phone Hacking) ও ব্যক্তিগত জীবনে অনধিকার অনুপ্রবেশের (Unlawful Intrusion) অভিযোগের একটি মামলায়। এই আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড বেশ কিছুদিন ধরে চলে আসছিল, বিশেষ করে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে।

  • সংশ্লিষ্ট প্রকাশক কোম্পানি “নিউজগ্রুপ নিউজপেপার্স (NGN)” স্বীকার করেছে যে তারা প্রিন্স হ্যারির স্বর্গত মা প্রিন্সেস ডায়ানার (Princess Diana) ব্যক্তিগত জীবনেও ব্যাপকভাবে অনধিকার অনুপ্রবেশ করেছে।
  • হ্যারির অভিযোগ ছিল, এই সময়কালে “নিউজগ্রুপ নিউজপেপার্স” অন্তত ২০০টিরও বেশি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যার তথ্য অবৈধভাবে সংগৃহীত হয়।

ক্ষতিপূরণ ও বৃহত্তর প্রভাব: বলা হচ্ছে, সব মিলিয়ে “নিউজগ্রুপ নিউজপেপার্স” ফোন হ্যাকিং সংক্রান্ত মামলাগুলোতে ইতোমধ্যে ১ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। প্রিন্স হ্যারি এই মামলার মাধ্যমে শুধু নিজের জন্যই ন্যায়বিচার চাননি, বরং অন্যান্য আক্রান্ত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকেও এটি দৃষ্টান্তমূলক হতে পারে—এমনটাই ছিল তার বক্তব্য।

সূত্র

২২ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে চীনের দুশ্চিন্তা ও নতুন বাস্তবতা
  • আয়ারল্যান্ডে নতুন সরকার, পুরোনো রূপ
  • সাহেল অঞ্চলে (Sahel) ৫ জাতির ৫,০০০ সৈন্যের যৌথবাহিনী
  • ইতালিতে (Italy) লিবিয়ান “ওয়ারলর্ড” গ্রেপ্তার, আবার ছাড়া
  • ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন
  • ফ্রান্সের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: ম্যাক্রোঁর জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ও বিশ্বে বামপন্থীদের দুর্বল অবস্থানের ট্রেন্ড
  • সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর পতন? উল্ফ ক্রিস্টারসেনের রাজনৈতিক সংকট
  • বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দুর্বল নেতৃত্ব
  • ভ্লাদিমির পুতিনের রাজস্ব সংকট

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে চীনের দুশ্চিন্তা ও নতুন বাস্তবতা

ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) আবার হোয়াইট হাউসে (White House) ফিরে আসায়, চীন (China) আশঙ্কায় ছিল যে তারা গুরুতর বাণিজ্যিক প্রভাব মোকাবেলা করতে পারে—বিশেষ করে উচ্চ শুল্ক (Heavy Tariffs) আরোপের হুমকির কারণে। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদের দুই দিন পেরিয়ে, ট্রাম্পের প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো বেইজিংয়ের (Beijing) সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কার বাস্তবায়ন ঘটায়নি। এতে কিছু বিশ্লেষক বলছেন, “দ্বিতীয় ট্রেড ওয়ার” (Second Trade War) হয়তো এড়ানো সম্ভব হতে পারে।

ট্রাম্পের ক্যাম্পেইন প্রতিশ্রুতি (Campaign Pledges):

  • নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প বলেছিলেন, চীনা পণ্যে (Chinese Goods) ৬০% শুল্ক আরোপ করবেন, আর ক্ষমতা নেওয়ার পর “প্রথম দিনেই (Day One)” চীনের ওপর আরও ১০% শুল্ক চাপাবেন। কারণ তিনি চান বেইজিং ফেন্টানিলের (Fentanyl) পূর্ব-উপাদান (Precursor Drugs) প্রবাহ রোধ করুক।
  • কিন্তু অভিষেকের দিনে, সোমবার, তিনি এ জাতীয় শুল্ক আরোপ না করে বরং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি (US Trade Deficit) নিয়ে তদন্ত করে তার সমাধানে “বিশ্বব্যাপী সম্পূরক শুল্ক” (Global Supplemental Tariff) বা অন্য নীতি-উপায় নিতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

এতদিনে চীনা পক্ষ ভাবছিল, ট্রাম্প একেবারে সরাসরি ও দ্রুত বড় শুল্ক বসাবেন—কিন্তু বাস্তবে প্রথমে তিনি যাচাই-বাছাইয়ের পথে হাঁটছেন। যদিও ফেন্টানিল সংক্রান্ত অতিরিক্ত ১০% শুল্কের হুমকি তিনি আবারও দিয়েছেন, যা চীনা বাজারে কিছুটা অস্থিরতা (Shake Chinese Markets) সৃষ্টি করেছে।

ইউএস মিত্রদের ওপর শুল্ক: একই সময়ে, ট্রাম্প কানাডা (Canada) ও মেক্সিকোর (Mexico) ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা রেখেছেন—এটি এখনো এগোচ্ছে বলে খবর। আর মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে (Washington) তিনি আবার ইইউকেও (European Union) শুল্কের আওতায় আনবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাই চীনের প্রতি তুলনামূলক “কিছুটা নমনীয় অবস্থান” (Measured Responses) দেখে অনেকেই বলছেন, হয়তো ট্রাম্প আসলে সামঞ্জস্য (Negotiation) চাইছেন, বিরোধ (Confrontation) নয়।

চীনের দৃষ্টিকোণ: “চুক্তির সুযোগ”: ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের (Fudan University) আন্তর্জাতিক অধ্যয়ন ইনস্টিটিউটের (Institute of International Studies) এক অধ্যাপক মন্তব্য করেছেন যে চীনের তরফে “সতর্ক আশাবাদ (Cautious Optimism)” আছে—সম্ভবত একটা চুক্তি (Deal) হয়ে যেতে পারে। ট্রাম্প “শুল্ক আরোপ না করে,” বরং “বাণিজ্য ঘাটতি নিরীক্ষা (Investigate Trade Deficit)” করে তারপর পদক্ষেপ নেওয়ার যে কৌশল নিয়েছেন, তা ইঙ্গিত দেয় যে তিনি দীর্ঘমেয়াদী (Long Term) দিকগুলো দেখছেন, তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক (Immediate Punitive) পদক্ষেপ নয়।

টিকটক (TikTok) জড়িত চুক্তির সম্ভাবনা:

  • ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, টিকটকের (বর্তমানে চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স [ByteDance]-এর মালিকানাধীন) মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি (Sale to a US Entity) করলে হয়তো শুল্ক নিয়ে নমনীয়তা দেখাতে পারেন।
  • চীনে (China) অনেকেই বলছেন, এটা বড় কোনো আলোচনার অংশ হতে পারে—কিন্তু এখনো অফিশিয়াল কোনো আলোচনা শুরু হয়নি।

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উষ্ণতা (Bilateral Relations Warming):

  • ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping) ফোনে কথা বলেছেন—বাণিজ্য ও টিকটক নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
  • চীনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট (Vice President) ট্রাম্পের অভিষেকে উপস্থিত ছিলেন।
  • ডাভোসে (Davos), চীনের ভাইস-প্রিমিয়ার আবার “উইন-উইন সমাধান (Win-Win Solution)” চেয়েছেন বাণিজ্য বিরোধ এড়াতে—যদিও সরাসরি “যুক্তরাষ্ট্র” শব্দ বলেননি।
  • অন্যদিকে, কানাডার (Canadian) প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যে ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে তারা লড়বেন।

আগাম সতর্কতা: দ্বিতীয় ট্রেড ওয়ার নাও এড়ানো যেতে পারে: অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এখনই অতিমাত্রায় আশাবাদী হওয়া ঠিক নয়। এইচএসবিসির (HSBC) এশিয়া শাখার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রেড নিউম্যান (Fred Newman) বলেছেন, এটা এখনো একটা “হোল্ডিং প্যাটার্ন (Holding Pattern)”—তাৎক্ষণিক শুল্ক হয়তো এড়ানো গেছে, কিন্তু ভবিষ্যতে বিরোধ (Conflict) আবারও জোরালো হতে পারে।

সূত্র

আয়ারল্যান্ডে নতুন সরকার, পুরোনো রূপ

বুধবার আয়ারল্যান্ডে আরেকটি নতুন সরকার গঠন হচ্ছে—কিন্তু দেখতে প্রায় আগেরটার মতোই।

  • দেশটির নির্বাচন প্রায় দুমাস আগে শেষ হয়েছে, আর কোয়ালিশন চুক্তি (Government Formation Negotiations) লেগেছিল কয়েক সপ্তাহ।
  • দুই প্রধান মধ্য-ডানপন্থী দল (Fianna FáilFine Gael) আবার জোট গঠন করছে, সাথে কিছু স্বতন্ত্র সাংসদের (Independents) সমর্থনও পাচ্ছে।
  • ফিয়ানা ফেইল নেতা (Fianna Fáil Leader) মাইকেল মার্টিন (Micheál Martin) হবেন তাওইসিয়াচ (Taoiseach) বা প্রধানমন্ত্রী। তিনি আগেও (২০২০-২০২২) এই পদে ছিলেন।
  • আগেরবারের মতোই এটি হবে এক “রোটেটিং সরকার (Rotating Government)”—মার্টিন ২০২৭ সাল পর্যন্ত থাকবেন, এরপর পদটি ফিরবে ফিনে গেইল নেতা (Fine Gael Leader) সাইমন হ্যারিস (Simon Harris)-এর কাছে, যিনি ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। আপাতত হ্যারিস হবেন উপ-প্রধানমন্ত্রী (Deputy Prime Minister) ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী (Minister for Foreign Affairs)।

নভেম্বরের নির্বাচন ছিল এক বিরল দৃষ্টান্ত—যেখানে পদে থাকা সরকার (Incumbent Government) জনগণের ভোটে টিকে গেছে। আবারও এই দুই ঐতিহ্যবাহী প্রতিদ্বন্দ্বী দল একত্রে জোট গঠন করে সিঁন ফেইন (Sinn Féin)-কে ক্ষমতার বাইরে রাখল, যেটি এখনো প্রধান বিরোধীদল হিসেবে থাকছে।

আবাসন (Housing), অভিবাসন (Immigration), স্বাস্থ্যসেবা (Healthcare) ইত্যাদি ইস্যুতে সরকারকে সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

সূত্র

সাহেল অঞ্চলে (Sahel) ৫ জাতির ৫,০০০ সৈন্যের যৌথবাহিনী

মালির (Mali) অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, পাঁচটি সাহেল (Sahel) দেশ—মালি, বুরকিনা ফাসো (Burkina Faso), নাইজার (Niger), চাদ (Chad) ও গিনি (Guinea)—৫,০০০ সদস্যের একটি যৌথবাহিনী (Joint Force) তৈরি করবে।

  • মূল লক্ষ্য হল আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করা (Bolstering Regional Security)।
  • আল কায়েদা (Al-Qaeda) ও আইসিস (ISIS)-যুক্ত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে (Counterterrorism) এই বাহিনী নেতৃত্ব দেবে।
  • নাইজারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলছেন, এই বাহিনীর নিজস্ব বিমান শক্তি (Air Assets), সরঞ্জাম ও গোয়েন্দা সক্ষমতা (Intelligence Resources) থাকবে, এবং তারা “আলায়েন্স অব সাহেল স্টেটস (Alliance of Sahel States, সংক্ষেপে AES)” এর আওতায় কাজ করবে—মালি, বুরকিনা ফাসো ও নাইজারের গঠিত একটি সমঝোতা।
  • এর আগে, এ দেশগুলো পশ্চিম আফ্রিকার প্রধান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক গোষ্ঠী ইকোয়াস (ECOWAS) ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে।
  • ফরাসি সেনারা (French Troops) সাহেল ত্যাগ করার পর মালি নেতৃত্ব নিচ্ছে, যখন এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে। এই নতুন বাহিনী শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ দমন নয়, সামরিক অভ্যুত্থান (Military Juntas) পরবর্তী সরকারগুলোও চাইছে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা (Stability) বাড়াতে।

সূত্র

ইতালিতে (Italy) লিবিয়ান “ওয়ারলর্ড” গ্রেপ্তার, আবার ছাড়া

ইতালিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (International Criminal Court, ICC) জারি করা ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে এক লিবিয়ান যুদ্ধবাজ (Libyan Warlord) গ্রেপ্তার করা হয়, যদিও পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

  • “ওসামা আনজিম” (Osama Anjim), ওরফে ওসামা আল মাসরি (Osama al-Masri): তিনি ত্রিপোলির (Tripoli) রিফর্ম অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইন্সটিটিউশনের (Reform and Rehabilitation Institution) নেতা, যা মূলত বিশেষ প্রতিরক্ষা বাহিনী (Special Defence Forces, SDF) দ্বারা পরিচালিত বন্দিশিবিরের (Detention Centres) নেটওয়ার্ক।
  • এই বাহিনীর বিরুদ্ধে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে (Libyan Civil War) নানাবিধ নৃশংসতার অভিযোগ আছে। আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি (ICC’s Chief Prosecutor) এসবের জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন।
  • শোনা যাচ্ছে, আনজিমকে (Al Masri) রবিবার তুরিনে (Turin) গ্রেপ্তার করা হয়, তিনি সেদিন ইউভেন্টাস-মিলান (Juventus-Milan) ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন।
  • তবে তুরিনের আদালত (Turin Tribunal) গ্রেপ্তার অনুমোদন দেয়নি, ফলে তাকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং পরে লিবিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়। ইতালি ত্রিপোলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (Close Ties) রাখে, বিশেষ করে জ্বালানি (Energy) স্বার্থে।

সূত্র

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন

এই সপ্তাহের আলোচনার শুরুতেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সপ্তাহের সেরা উইনার হিসেবে ঘোষণা করা যায়। অনেকের কাছে এটা হয়তো গতানুগতিক পছন্দ মনে হতে পারে, কিন্তু এর পেছনে যথেষ্ট শক্তিশালী যুক্তি রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টের (President) দায়িত্ব গ্রহণের দিনটিতে ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা স্বাভাবিকভাবেই আনন্দে উদ্বেলিত ছিল। রবিবার ট্রাম্প একটি বিশাল বিজয় র‍্যালির (victory rally) আয়োজন করেছিলেন, যেখানে তার রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে ট্রাম্পের এই সপ্তাহের সাফল্যের পেছনে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি (Gaza ceasefire deal): যদিও গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি প্রযুক্তিগতভাবে জো বাইডেনের (Joe Biden) প্রেসিডেন্সির (Presidency) সময়ে হয়েছে, তবে অনেকেই মনে করেন যে এই চুক্তির পেছনে মূল অনুঘটক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার দল। ট্রাম্পের দল নেতানিয়াহুর উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করার ফলেই এই চুক্তি সম্ভব হয়েছে। ট্রাম্প এই কৃতিত্ব অনায়াসে নিজের বলে দাবি করতে পারেন এবং বলতে পারেন যে বাইডেন প্রশাসন যেখানে ১৫ মাস ধরে ব্যর্থ হয়েছে, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই সেই কাজ করে দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রচারণার (political campaign) ক্ষেত্রে এটা নিঃসন্দেহে ট্রাম্পের জন্য একটি বড় জয়। অনেকেই হয়তো আশা করেছিলেন যে ট্রাম্প ইসরায়েল-পন্থী (pro-Israel) হবেন এবং নেতানিয়াহুর সরকারকে সমর্থন করবেন। তবে বাস্তবে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ট্রাম্প প্রশাসন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়ে কার্যত সবাইকে চমকে দিয়েছেন। হয়তো এটা ট্রাম্পের একটি জনসংযোগের কৌশল ছিল, এবং ভবিষ্যতে তার মধ্যপ্রাচ্য নীতি (Middle East policy) হয়তো আরও বেশি ইসরায়েল-কেন্দ্রিক হবে। তবে এও হতে পারে, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি হয়তো দ্রুত একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো ইসরায়েলের (Israel) জন্য আরও বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, যেমন পশ্চিম তীর (West Bank) অধিগ্রহণ অথবা ইরানের (Iran) পারমাণবিক কর্মসূচিতে (nuclear program) হস্তক্ষেপ করা। এখনই ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি সম্পর্কে কোনো উপসংহারে আসাটা বোকামি হবে।

আরও পড়ুন – ট্রাম্প কি ইসরায়েলকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করলেন? (২০ জানুয়ারি, ২০২৫)

টিকটক নিষেধাজ্ঞা বিতর্ক (TikTok ban controversy): টিকটকের (TikTok) উপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়টি প্রথমবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকালেই শুরু হয়েছিল। সম্প্রতি, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (USA) টিকটক সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তখন আমেরিকান ব্যবহারকারীরা একটি বার্তা দেখতে পান। সেই বার্তায় টিকটক কর্তৃপক্ষ জানায় যে তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে। এর একদিন পরই টিকটক পুনরায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে এবং ব্যবহারকারীদের জানায় যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে তারা ফিরে আসতে পেরেছে। টিকটক কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল এবং তারা সচেতনভাবে ট্রাম্পের কাছে নিজেদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি (positive image) তুলে ধরতে চেয়েছিল। এর ফলস্বরূপ তরুণ প্রজন্মের (young generation) কাছে এই বার্তা পৌঁছাবে যে জো বাইডেন টিকটক নিষিদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে এসে তাদের প্রিয় প্ল্যাটফর্মটিকে বাঁচিয়েছেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প তরুণ ভোটারদের (young voters) মধ্যে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা লাভ করবেন, যা হয়তো চেয়ারম্যান মাওয়ের (Chairman Mao) জনপ্রিয়তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ট্রাম্প হয়তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তার পূর্বের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। ডেমোক্রেটরা (Democrats) ভেবেছিল রিপাবলিকানদের (Republicans) সাথে হাত মিলিয়ে চীনের (China) প্রভাব মোকাবেলা করবে, কিন্তু বাস্তবে রিপাবলিকানরাই শেষ মুহূর্তে পিছু হটে যায়। এই পরিস্থিতিতে রিপাবলিকানরা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন। এটা নিশ্চিত নয়, তবে ট্রাম্পের জন্য এটা নিঃসন্দেহে একটি রাজনৈতিক জয়। ট্রাম্পের এই অবস্থান পরিবর্তনে তাকে কি দ্বিচারী বা দুর্বল মনে হবে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন। সাধারণ মানুষ হয়তো মনে রাখবে না যে টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব প্রথম ট্রাম্পই এনেছিলেন। চীনের (China) উপর নরম হওয়ার অভিযোগ উঠলেও, ট্রাম্প যদি ক্ষমতায় এসে চীনের উপর নতুন করে বাণিজ্য শুল্ক (trade tariffs) আরোপ করেন, তবে টিকটক বিতর্কের বিষয়টি চাপা পড়ে যাবে। এদিকে ট্রাম্পের সমর্থকরা সম্ভবত তার এই অবস্থান পরিবর্তনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখবে। তবে আগামী একশ দিনের (hundred days) মধ্যে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে, যা হয়তো টিকটক বিতর্কের চেয়েও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে। ট্রাম্পের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জন্য নীতি পরিবর্তন করা অস্বাভাবিক কিছু নয়, এবং তার সমর্থকরা এটা মেনে নিতে অভ্যস্ত।

তাই সব মিলে বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিঃসন্দেহে এই সপ্তাহের সবচেয়ে বড় জয়ীদের (Biggest Winner) মধ্যে অন্যতম।

ফ্রান্সের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: ম্যাক্রোঁর জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ও বিশ্বে বামপন্থীদের দুর্বল অবস্থানের ট্রেন্ড

এরপর ফ্রান্সের (France) প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে (Emmanuel Macron) এই সপ্তাহের আরেকজন উইনার হিসেবে ঘোষণা করা যায়। সম্প্রতি ফরাসি পার্লামেন্টে (French Parliament) বামপন্থী জোট (left-wing coalition) প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আত্তালকে (Gabriel Attal) ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ম্যাক্রোঁর জন্য এটা একটা বড় রাজনৈতিক সাফল্য। গত কয়েক মাস ধরে ফ্রান্সে রাজনৈতিক অস্থিরতা (political instability) চলছিল, এবং এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর উপর অনাস্থা প্রস্তাব (motion of no confidence) ব্যর্থ হওয়া ম্যাক্রোঁকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।

বামপন্থী জোট চারটি দল নিয়ে গঠিত হলেও, সোশ্যালিস্ট পার্টি (Socialist Party), যারা এই জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল, শেষ মুহূর্তে অনাস্থা প্রস্তাবের (motion of no confidence) বিপক্ষে ভোট দেয়।  সোশ্যালিস্টদের এই পদক্ষেপ বামপন্থী জোটকে দুর্বল করে দিয়েছে, এবং এর ফলে ম্যাক্রোঁ সরকার বাজেট (budget) পাসের ক্ষেত্রে কিছুটা সুবিধা পাবে। কারণ এখন মনে হচ্ছে বিরোধী জোটের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে, এবং বাজেট নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান সম্ভব হতে পারে।

ফরাসি বামপন্থীদের মধ্যে বিভেদ নতুন কিছু নয়। প্রশ্ন হলো এই বিভেদ কি দীর্ঘস্থায়ী হবে, নাকি তারা আবার একত্রিত হতে পারবে। গত কয়েক বছরে তারা বহুবার নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়িয়েছে, আবার কখনো কখনো রাজনৈতিক প্রয়োজনে জোটও বেঁধেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ (Ukraine war) এবং গাজা সংঘাতের (Gaza conflict) মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। গত বছর অপ্রত্যাশিত জাতীয় নির্বাচনের (national election) কারণে তারা বাধ্য হয়ে জোটবদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ঐক্য বজায় রাখা কঠিন হবে।

সোশ্যালিস্ট পার্টি হয়তো ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে (Presidential election) সামনে রেখে এখন থেকে নিজেদের আলাদা রাজনৈতিক পরিচিতি (political identity) তৈরি করতে চাইছে। তারা হয়তো মনে করছে জোটের অংশীদার হয়ে থাকার চেয়ে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হতে পারে। তবে বামপন্থীরা যদি আলাদাভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তাহলে তাদের ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে, এবং এর সুযোগ নিয়ে মধ্য-ডানপন্থী (center-right) এবং ডানপন্থী (right-wing) দলগুলো লাভবান হবে।

ফরাসি রাজনীতিতে (French politics) স্থিতিশীলতা ফিরে আসা এখনো অনেক দূরের পথ। বামপন্থীদের এই দুর্বলতার উদাহরণ কেবল ফ্রান্সে নয়, বরং এটা বৈশ্বিক। স্পেনের (Spain) রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে তুলনা করে বলা যায়, ফ্রান্সের মতো স্পেনেও রাজনৈতিক বিভাজন দেখা যাচ্ছে, এবং অদূর ভবিষ্যতে এই দেশগুলোতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে কিনা, তা বলা কঠিন। স্পেনের (Spain) রাজনৈতিক অস্থিরতাও (political instability) এখন বেশ তুঙ্গে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও (Pedro Sanchez) বর্তমানে রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছেন এবং তার সরকার দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এদিকে জার্মানির (Germany) বামপন্থী দলগুলোও (left-wing parties) দুর্বল হয়ে গেছে। জার্মানির বামপন্থী দল ডি লিঙ্কে (Die Linke) বর্তমানে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে এবং তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকার। একসময় ইউরোপের (Europe) রাজনীতিতে দুটি প্রধান দলের (two-party system) প্রাধান্য ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেই কাঠামো ভেঙে গেছে। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন বাড়ছে, এবং এর ফলে বামপন্থী দলগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে ভোটাররা (voters) হয়তো শেষ পর্যন্ত নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই দুটি প্রধান দলের দিকে ঝুঁকবে। কারণ বহু দলীয় ব্যবস্থায় (multi-party system) ভোট ভাগাভাগি হয়ে যায়, এবং কোনো দলের পক্ষেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা (majority) পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবে ফরাসি বামপন্থীদের (French left) প্রসঙ্গে বলা যায়, বিভিন্ন দল হয়তো জোটবদ্ধ রাজনীতির (coalition politics) সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে পেরেছে, এবং তারা হয়তো আবার এককভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠার চেষ্টা করবে।

প্রশ্ন হচ্ছে বামপন্থীদের মধ্যে এই বিভাজন কি শুধুমাত্র ফ্রান্সের (France) চিত্র, নাকি এটা সমগ্র ইউরোপের (Europe) রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। বামপন্থীদের মধ্যে বিভাজন হয়তো একটু বেশি প্রকট হলেও, ডানপন্থী দলগুলোর (right-wing parties) মধ্যেও বিভাজন দেখা যাচ্ছে। বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে আদর্শগত (ideological) এবং নীতিগত (policy-based) মতপার্থক্য বেশি থাকার কারণে তাদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

রাজনৈতিক বিভাজনের (political fragmentation) কারণ হিসেবে বিশ্বায়নের (globalization) প্রভাবের কথাও উল্লেখ করা যায়। বর্তমান বিশ্বায়িত বাজার অর্থনীতিতে (globalized market economy) মধ্য-বামপন্থী (center-left) রাজনীতি করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ সম্পদ পুনর্বণ্টন (wealth redistribution) এবং সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের মতো বামপন্থী নীতিগুলো কার্যকর করতে হলে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির (international economics) কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। ফ্রান্সের (France) উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, সেখানেও সমাজতান্ত্রিক সরকারগুলো (socialist governments) অর্থনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক ঋণের (international debt) বোঝায় জর্জরিত ছিল।

কিউবার (Cuba) উদাহরণ টেনে বলা যায়, দেশটি বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন থেকেও বামপন্থী রাজনৈতিক মডেল (political model) ধরে রেখেছে। চীনের (China) প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা যায়, চীন এখনো পর্যন্ত তাদের অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ (state control) বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর (western countries) জন্য প্রায় অসম্ভব। বিশ্বায়ন এবং মুক্ত বাজার ব্যবস্থা (free market system) বামপন্থী রাজনীতির জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

যাই হোক, সব মিলে বলা যায় ম্যাক্রোঁ এই সপ্তাহে একজন উইনার।

আরও পড়ুন –

সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর পতন? উল্ফ ক্রিস্টারসেনের রাজনৈতিক সংকট

সুইডেনের (Sweden) প্রধানমন্ত্রী উল্ফ ক্রিস্টারসেন (Ulf Kristersson) এই সপ্তাহের একজন লুজার ধরা যায়। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, ক্রিস্টারসেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (national security advisor) হেনরিক ল্যান্ডারহোমের (Henrik Landerholm) সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারি এবং অন্যান্য বিতর্কিত বিষয়গুলো। ল্যান্ডারহোমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি (classified documents) সরিয়ে ফেলার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, এবং তিনি ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য সরকারি তহবিল (government funds) ব্যবহার করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই ধরনের কেলেঙ্কারি (scandal) যেকোনো সরকারের জন্যেই খারাপ বার্তা বহন করে।

উল্ফ ক্রিস্টারসেনের (Ulf Kristersson) দল সুইডিশ পার্লামেন্টে (Swedish Parliament) সংখ্যালঘু সরকার (minority government) পরিচালনা করছে, এবং তার ব্যক্তিগত জনসমর্থনও (public approval) খুব বেশি নয়। সব মিলিয়ে ক্রিস্টারসেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ (political future) বেশ অনিশ্চিত মনে হচ্ছে। সুইডেনে অভিবাসন সংকট (migration crisis) এবং ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (slow economic growth) ক্রিস্টারসেনের সরকারের জন্য অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

সব মিলে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উল্ফ ক্রিস্টারসেনের (Ulf Kristersson) রাজনৈতিক অবস্থান বর্তমানে দুর্বল হয়ে পড়েছে, এবং তাকে ‘ডাউনস’ অর্থাৎ লুজারদের তালিকাতেই রাখা যুক্তিযুক্ত হবে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দুর্বল নেতৃত্ব

ইজরায়েলের (Israel) প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে (Benjamin Netanyahu) এই সপ্তাহের লুজার হিসেবে ঘোষণা করা যায়। যদিও নেতানিয়াহুর গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি (Gaza ceasefire agreement) এবং জিম্মি মুক্তি (hostage release) আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক ঘটনা, সামগ্রিকভাবে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক নেতৃত্ব (political leadership) বর্তমানে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচ্ছন্ন চাপের কাছে নতি স্বীকার করে নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে বাধ্য হয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। গাজায় (Gaza) হামাসের (Hamas) সামরিক শক্তি এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী, এবং ইজরায়েল তার সামরিক অভিযানের (military operation) মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা বা দুর্বল করার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। এই সকল কারণ বিবেচনায় নেতানিয়াহুকে এই সপ্তাহের লুজার বলাই যুক্তিযুক্ত।

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও গাজার (Gaza) দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থা (governance) নিয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই। নেতানিয়াহু বা তার সরকার কোনো বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প প্রস্তাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে গাজায় আরও বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকট (political crisis) সৃষ্টি হতে পারে।

যুদ্ধবিরতির পর ইজরায়েলের ডানপন্থী (right-wing) রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে এবং বেন গভিরের (Ben Gvir) মতো কট্টরপন্থী (hardline) মন্ত্রীদের পদত্যাগের গুজবের কারণে নেতানিয়াহুর জোট সরকার (coalition government) আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবে জনমত সমীক্ষায় (opinion polls) দেখা যাচ্ছে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি (Likud party) এখনো যথেষ্ট জনপ্রিয়, এবং আগামী নির্বাচনে (elections) ভালো ফল করার সম্ভাবনা রাখে।

নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ মূলত গাজার দীর্ঘমেয়াদী পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। হামাস (Hamas) যদি গাজায় তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি ধরে রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সমস্যা আরও বাড়বে। পাশাপাশি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সাথে নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক (political relationship) কেমন হবে, সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ট্রাম্প হয়তো নেতানিয়াহুর উপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করতে পারেন, অথবা ইজরায়েলের (Israel) উপর নতুন কোনো শর্ত (conditions) চাপিয়ে দিতে পারেন। নেতানিয়াহুর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ইজরায়েলি সরকারের ডানপন্থী এবং কট্টরপন্থী অংশীদারদের সামলানো, যারা কোনো ধরনের রাজনৈতিক আপোষে (political compromise) রাজি নয় এবং তাদের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক লক্ষ্য (political goals) যে কোনো মূল্যে অর্জন করতে চায়।

গত বছরের ৭ই অক্টোবরের নজিরবিহীন হামলার (attack) পরেও নেতানিয়াহু এখনো পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে আছেন, এটাই হয়তো সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়। তবে এই সপ্তাহে তার রাজনৈতিক নেতৃত্ব দুর্বল হয়েছে, এবং তাই তাকে লুজারদের তালিকাতেই গণ্য করা উচিত।

আরও পড়ুন – ট্রাম্প কি ইসরায়েলকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করলেন? (২০ জানুয়ারি, ২০২৫)

ভ্লাদিমির পুতিনের রাজস্ব সংকট

এই সপ্তাহে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে (Vladimir Putin) লুজার হিসেবে ঘোষণা করা যায়। ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রিতা এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার জ্বালানি খাত (energy sector) বর্তমানে গভীর সংকটে নিমজ্জিত। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় রাজস্বের (state revenue) প্রধান উৎস হলো জ্বালানি তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি (oil and gas exports), কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার এই আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। বিশেষ করে, আমেরিকার নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো (economic sanctions) রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোর (oil companies) উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। পুতিন প্রশাসন এতদিন ধরে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো এড়িয়ে যেতে সক্ষম হলেও, বর্তমানে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি অর্থনৈতিক রিপোর্টে (economic report) দেখা গেছে যে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের বিশাল সামরিক ব্যয় (military expenses) মেটানোর জন্য রাষ্ট্রীয় বাজেট (state budget) এর পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণের (commercial bank loans) উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রাশিয়ার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো (commercial banks) বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানিকে (state-owned defense companies) ঋণ দিতে বাধ্য হয়েছে, যা অর্থনৈতিকভাবে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভবিষ্যতে এই ব্যাংকগুলোতে ব্যাপক ঋণ খেলাপি (loan defaults) হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এবং এর ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি (economy) দীর্ঘমেয়াদী সংকটে পতিত হতে পারে।

পুতিনের ইউরোপীয় মিত্রদের (European allies) দুর্বল হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। সার্বিয়ার মতো দেশ, যারা দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিল, তারাও এখন ধীরে ধীরে রাশিয়ার উপর থেকে অর্থনৈতিক নির্ভরতা (economic dependence) কমানোর চেষ্টা করছে। সার্বিয়ার গ্যাস ও তেল শিল্পে রাশিয়ার যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল, তা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

সাংস্কৃতিক প্রভাবের (cultural influence) দিক থেকেও ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) দুর্বল হয়ে পড়ছেন। একসময় পুতিনকে পশ্চিমা বিশ্বে (western world) ‘শক্তিশালী নেতা’ (strong leader) হিসেবে গণ্য করা হলেও, ইউক্রেন যুদ্ধের (Ukraine war) পর সেই ধারণা সম্পূর্ণভাবে পাল্টে গেছে। পুতিনপন্থী (pro-Putin) বুদ্ধিজীবী (intellectuals) এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও (political analysts) এখন আর সরাসরি পুতিনের প্রশংসা না করে ‘শান্তিকামী’ (pro-peace) অথবা ‘নিরপেক্ষ’ (neutral) হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।

এসব কারণে ভ্লাদিমির পুতিনকে (Vladimir Putin) এই সপ্তাহের লুজার হিসেবে ঘোষণা করা যায়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্রেজারি সেক্রেটারি (Treasury Secretary) পদে মনোনীত স্কট বেসান্ট (Scott Besant) সম্প্রতি রুশ নিষেধাজ্ঞার (Russian sanctions) বিষয়ে যে কঠোর মন্তব্য করেছেন, তা পুতিনের জন্য আরও একটি খারাপ সংকেত। ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেন ইস্যুতে বাইডেন প্রশাসনের (Biden administration) তুলনায় আরও কঠোর নীতি (tougher policy) অনুসরণ করতে পারে, এমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।

আরও দেখুন –

সপ্তাহের উইনার ও লুজারদের সম্পর্কে জানতে দেখুন – ২২ জানুয়ারি, ২৫: সপ্তাহের উইনার – ট্রাম্প, ম্যাক্রোঁ; লুজার – ক্রিস্টারসেন, নেতানিয়াহু, পুতিন (২২ জানুয়ারি, ২০২৫)

২১ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • ট্রাম্পের অভিষেকের প্রথম দিনে নির্বাহী আদেশের ঝড়
  • ইলন মাস্কের মঞ্চে বিতর্কিত অঙ্গভঙ্গি
  • কলম্বিয়ায় সহিংসতা বৃদ্ধি
  • যুক্তরাজ্যে স্টারমারের অন্যতম বড় ভাষণ

ট্রাম্পের অভিষেকের প্রথম দিনে নির্বাহী আদেশের ঝড়

সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে (Washington, D.C.) দুপুরের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। ক্যাপিটল ভবনে (Capitol Building) এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তার পরিবার, বন্ধু, বিলিয়নিয়ার (Billionaires), সমর্থক ও রাজনীতিবিদরা। অভিষেক ভাষণে (Inaugural Address) ট্রাম্প বলেন যে তার মেয়াদকালে আমেরিকা (America) “সোনালি যুগে” পা দেবে এবং “সাধারণ বুদ্ধির বিপ্লব (Revolution of Common Sense)” শুরু হবে।

শপথের একই দিনে তিনি একাধিক নির্বাহী আদেশ (Executive Orders) ও কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • ৬ জানুয়ারি (Jan 6) হামলায় জড়িত সবার সাধারণ ক্ষমা (Pardons): ট্রাম্প ১৫০০-এরও বেশি মানুষকে বিনা শর্তে (Unconditional Pardons) ক্ষমা করেছেন, যারা ২০২১ সালে ক্যাপিটল আক্রমণে (Attack on the Capitol) যুক্ত ছিল।
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি (Paris Climate Agreement) থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া: ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে (World Health Organisation) প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনি আবারও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন, অভিষেক ভাষণে “নতুন যুগের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান (Oil and Gas Exploration) শুরু” এবং “বাইডেন (Biden) আমলের পরিবেশগত নিয়ম” বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেন।
  • মাউন্ট ডেনালি (Mount Denali)-র নাম পরিবর্তন: ওবামা প্রশাসনে (Obama Administration) মাউন্ট ম্যাককিনলি (Mount McKinley)-এর নাম বদলে ডেনালি করা হয়েছিল; ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে সেটি পূর্বনামে ফিরিয়ে দিলেন।
  • মেক্সিকো উপসাগরের (Gulf of Mexico) নাম বদলে “গালফ অব আমেরিকা (Gulf of America)”: আন্তর্জাতিক মহলে এর কোনো বাস্তব আইনগত প্রভাব নেই, তবে ট্রাম্প বলেন এটি “আমেরিকান পরিচয়কে” শক্তিশালী করবে।
  • টিকটক নিষেধাজ্ঞা বিলম্বিত (Delay TikTok Ban Enforcement): আগের ফেডারেল নিষেধাজ্ঞার (Federal Ban) কার্যকারিতা অবিলম্বে বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছেন তিনি, যাতে টিকটক এখনই নিষিদ্ধ না হয়।
  • বিদেশি উন্নয়ন সহায়তা (Foreign Development Assistance) সাময়িক স্থগিত: পরবর্তী তিন মাসের জন্য নতুন কোনো মার্কিন বিদেশি উন্নয়ন সাহায্য বরাদ্দ হবে না।
  • “ডাইভারসিটি, ইকুইটি অ্যান্ড ইনক্লুশন (DEI)” কর্মসূচি বাতিল: ফেডারেল সরকারের বহুবিধ বিভাগে বিদ্যমান এই উদ্যোগগুলো শেষ করতে নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন।
  • ফেডারেল কর্মীদের অফিসে ফেরত পাঠানো: দূরবর্তী কাজ (Remote Work) এড়িয়ে সরাসরি কর্মস্থলে (In-Person Work) ফিরে আসতে বলছেন।
  • পশ্চিম তীরের (West Bank) বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) প্রত্যাহার: ইসরায়েলি বসতিগুলোর ওপর আগে জারি করা কিছু নিষেধাজ্ঞা তিনি বাতিল করে দিচ্ছেন।
  • যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগত নাগরিকত্ব (Birthright Citizenship) বিলুপ্তির উদ্যোগ: এর সাংবিধানিকতা (Constitutionality) নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই হতে পারে।

দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা (National Emergency at Southern Border): ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে (Southern Border with Mexico) জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। এর ফলে বড় আকারে অভিবাসন (Immigration) ও আশ্রয় (Asylum) সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে—যেমন:

  • চার মাসের জন্য শরণার্থী পুনর্বাসন (Refugee Resettlement) স্থগিত।
  • “রিমেইন ইন মেক্সিকো (Remain in Mexico)” নীতির পুনরায় কার্যকর।
  • মেক্সিকান কার্টেলগুলোকে (Mexican Cartels) সন্ত্রাসী হুমকি (Terrorism Threat) হিসেবে ঘোষণা করে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে (US Military) সীমান্ত নিরাপত্তায় (Border Security) যুক্ত করা।

কংগ্রেসে সাফল্য (Congressional Wins): সিনেট সর্বসম্মত সমর্থনে (Unanimously) মার্কো রুবিওকে (Marco Rubio) পররাষ্ট্রমন্ত্রী (Secretary of State) হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে—তিনি প্রথম ট্রাম্প মন্ত্রীসভার (Trump Cabinet) সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। সিনেট “লেক অ্যান্ড রাইলি অ্যাক্ট (Lake and Riley Act)” পাস করেছে, যেখানে অনথিভুক্ত অভিবাসীরা (Undocumented Migrants) চুরি, সশস্ত্র চুরি বা দোকানদারি চুরি (Shoplifting) অভিযোগে গ্রেপ্তার/আটক হলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এটি ৬৪-৩৬ ভোটে পাস হয়েছে, কিছু ডেমোক্র্যাট (Democrats) সমর্থন দিয়েছেন।

শুল্ক (Tariffs) সম্পর্কিত নতুন ঘোষণা: এর আগে শোনা গিয়েছিল, ট্রাম্প সাময়িকভাবে শুল্ক আরোপ থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু ওভাল অফিসে (Oval Office) সাংবাদিকদের তিনি জানান, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই শুল্ক আরোপ করা হবে।

এ হলো ট্রাম্পের প্রথম দিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ধারা। এ ছাড়া অভিষেক ভাষণে তিনি আরও বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—যেমন পানামা খাল (Panama Canal) “পুনর্দখল” করার অঙ্গীকার। এতকিছুর মধ্যে স্পষ্টতই ট্রাম্প দেখাচ্ছেন, তিনি কোনোভাবেই গতি কমাতে রাজি নন।

সূত্র

ইলন মাস্কের মঞ্চে বিতর্কিত অঙ্গভঙ্গি

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বাইরে, ইনাগুরেশন দিবসে (Inauguration Day) আরেকটি ঘটনা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। সোমবার বিকেলে ট্রাম্পের অভিষেক উদ্‌যাপনের সময় একটি র‍্যালিতে (Rally), বিলিয়নিয়ার ট্রাম্প-মিত্র ইলন মাস্ক মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি দুবার এমন একটি অঙ্গভঙ্গি করেন, যা অনেকের কাছে ফ্যাসিস্ট স্যালুট (Fascist Salute) বলে মনে হয়েছে।

  • মাস্ক দাবি করেন, এটি ছিল “কঠিন ও অদ্ভুত পদ্ধতিতে (Stiff and Awkward) ভিড়ের কাছে ভালোবাসা (Love) ছোড়া।”
  • অনেকে সাথে সাথে এটি নাৎসি স্যালুটের (Nazi Salute) সঙ্গে তুলনা করেন, বিশেষ করে পরপর দুবার করায় ‘ভুল করে একবার করেননি’ বলেই মন্তব্য ওঠে।
  • মাস্ক নিজে টুইট করে বলেন, “সবাইকে হিটলার (Everyone is Hitler) বলে দাগানোর প্রচেষ্টা একেবারেই পুরনো… ওদের আরও ভালো কূটকৌশল দরকার।”
  • তবে Rolling Stone-এর বরাত দিয়ে জানা যায়, ডানপন্থী চরমপন্থী (Right Wing Extremist) কিছু নেতা অনলাইনে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন—“ভুল না হোক, এ নিয়ে কান্নাকাটি দেখেই মজা পাচ্ছি”—ট্রাম্পের অভিষেকেই এরকম হতে দেখে তাদের উল্লাস।

সূত্র

কলম্বিয়ায় সহিংসতা বৃদ্ধি

কলম্বিয়া (Colombia) এখন নতুন করে সহিংসতায় জর্জরিত, যেখানে বামপন্থী গেরিলা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (National Liberation Army, ELN) এবং প্রাক্তন ফার্ক (FARC) যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়ছে। দুই পক্ষই ভেনেজুয়েলার (Venezuela) সীমান্তে কোকা পাতা খামারের (Coca Leaf Plantations) নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।

  • ইএলএন (ELN) সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব কলম্বিয়ায় বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালিয়েছে: ফলে ১০০ জনের বেশি নিহত, প্রায় ২০,০০০ লোক বাস্তুচ্যুত (Displaced)। জরুরি অবস্থা (State of Emergency) ঘোষণা করা হয়েছে।
  • শান্তি আলোচনা স্থগিত: সরকারের পক্ষ থেকে শুক্রবার জানানো হয়েছে, তারা ইএলএন-এর সঙ্গে চলমান শান্তি আলোচনা (Peace Talks) স্থগিত করছে—যা ২০২২ সালের শেষ দিকে শুরু হয়েছিল। কেননা, সরকার বলছে, ইএলএন যুদ্ধাপরাধ করছে (War Crimes) ও আন্তরিকভাবে শান্তি চায় না।
  • প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো (Gustavo Petro), যিনি ২০২২ সালে “সম্পূর্ণ শান্তি (Total Peace)” এজেন্ডা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন, ইএলএন-এর সাম্প্রতিক হামলাকে চলমান শান্তি প্রচেষ্টার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন। এখন তিনি কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছেন—“যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে, আর সেই পথেই তাদের সম্মুখীন হতে হবে।”

সূত্র

যুক্তরাজ্যে স্টারমারের অন্যতম বড় ভাষণ

যুক্তরাজ্যে (UK) প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer) সদ্য তার প্রধানমন্ত্রিত্বের (Premiership) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন, যার মূল বিষয়বস্তু সাউথপোর্ট হামলা (Southport Attack)—এক গণ-ছুরিকাঘাতের ঘটনা যেখানে তিন শিশু নিহত হয়।

  • এই হামলার প্রেক্ষিতে (Context of the Attack):
    • ঘটনার পর দেশজুড়ে দাঙ্গা (Riots) শুরু হয়, গুজব (Misinformation) ছড়িয়ে সহিংসতা আরও বেড়ে যায়।
    • এখন মূল অভিযুক্ত অ্যাক্সেল রাদুপুখানার (Axel Radupukhana) মামলা আদালতে গড়িয়েছে (Formally Moving Through the Courts)।
  • প্রিভেন্ট (Prevent) কর্মসূচির ব্যর্থতা:
    • স্টারমার জানান, হামলাকারীকে তিনবার “প্রিভেন্ট”-এ পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। এটি হলো যুক্তরাজ্যের এমন একটি কর্মসূচি, যেখানে সন্ত্রাসী মতাদর্শে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও নিরুৎসাহিত করা হয়।
    • কিন্তু সেখানে স্পষ্ট ব্যর্থতা (Failed) ছিল। স্টারমার বলেন, এটা “আত্মপক্ষ সমর্থনের বাইরে” উঠে আসে—যে এখানে রাষ্ট্রের একাধিক প্রতিষ্ঠানের (Institutions) দায়বদ্ধতা আছে।
    • তাই তিনি একটি জাতীয় তদন্ত (National Inquiry) ঘোষণা করবেন, যেখানে কোনো সংস্থার ব্যর্থতা আড়াল করা যাবে না।
  • সন্ত্রাসবাদের নতুন ধরন (Changing Face of Terrorism):
    • স্টারমার বলছেন, “সন্ত্রাসবাদ এখন বদলে গেছে”—একক ব্যক্তি, বিচ্ছিন্ন তরুণ পুরুষ, “নিজের ঘরে বা শয়নকক্ষে বসে” চরমপন্থায় আক্রান্ত হয়ে এ ধরনের ভয়াবহ কর্মকাণ্ড করছে।
    • তাই প্রয়োজনে আইন (Law) বদলাতে হবে, যাতে “নতুন ধরনের হুমকি” প্রতিরোধ করা যায়।

সূত্র

২০ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিষেক ও প্রথম দিনের পরিকল্পনা
  • যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক (TikTok) আবার চালু
  • ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি কার্যকর
  • মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলার অভিযোগ

ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিষেক ও প্রথম দিনের পরিকল্পনা

আজ, ২০ জানুয়ারি, ডোনাল্ড ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন। হোয়াইট হাউসে (White House) তার প্রথম দিনেই তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ (Executive Orders) সই করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে—যেগুলোর জন্য কংগ্রেসের (Congress) অনুমোদন দরকার নেই। ট্রাম্পের পরিকল্পনা হল প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ১০০টি নির্বাহী আদেশ পাস করার (“100 Order Plan”) উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা।

“১০০ অর্ডার প্ল্যান” (100 Order Plan):

  • এই পরিকল্পনার কথা চলতি মাসের গোড়ায় সিনেট রিপাবলিকানদের (Senate Republicans) সামনে উপস্থাপন করা হয়।
  • এতে ট্রাম্প ও তার দল বলেছেন যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি (U.S. Policy) রিসেট (Reset) করতে চায় এবং নির্বাচনী প্রচারে আমেরিকান ভোটারদের কাছে যে বড় প্রতিশ্রুতি (Significant Promises) দিয়েছিলেন, বিশেষ করে বাইডেনের (Joe Biden) নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাতিলের (Undo) কথা, তা অতি দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন।
  • সবাই আন্দাজ করছে, শপথ নেওয়ার পর যতটা দ্রুত সম্ভব তিনি এসব নীতি কার্যকর করবেন।

গত ডিসেম্বরে, নিজের কিছু ‘স্বৈরাচারী (Authoritarian) ও সহিংস (Violent) বক্তব্য’ নিয়ে সন্দেহ বাড়ায়, তখন ট্রাম্প আইওয়ায় (Iowa) জনসম্মুখে বলেন, “আমি একমাত্র প্রথম দিনই স্বৈরাচারী (Dictator) হব।” আবার সপ্তাহান্তে নিজের সমর্থকদের এক সমাবেশে (Rally) তিনি বলেছিলেন, “আমি ঐতিহাসিক গতি (Historic Speed) ও দৃঢ়তার সঙ্গে দেশের প্রতিটি সংকট ঠিক করব।” ইতোমধ্যে তিনি গাজায় (Gaza) যুদ্ধবিরতি (Ceasefire) হওয়ার কৃতিত্ব নিজেই দাবি করেছেন—যদিও সেটি রবিবার কার্যকর হয়েছে।

সকালের দিকে এই নির্বাহী আদেশগুলোর বিস্তারিত এখনো গোপন থাকলেও, ট্রাম্প ও তার শীর্ষ কর্মকর্তারা তাদের অগ্রাধিকারের (Priorities) দিকে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছেন:

  1. দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা (National Emergency at Southern Border)
    • ট্রাম্প বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মাপের বহিষ্কার কার্যক্রম (Deportation Effort) হবে।
    • বড় শহর এলাকায় (Metropolitan Areas) ইমিগ্রেশন অভিযান (Immigration Raids) খুব দ্রুতই শুরু হতে পারে।
  2. বাণিজ্য নীতি (Trade Policies)
    • ট্রাম্প সম্ভবত “ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ারস অ্যাক্ট (International Emergency Economic Powers Act)” ব্যবহার করে তাৎক্ষণিক শুল্ক (Tariffs) বসাতে পারেন।
    • তার দল “সেকশন ২৩২ (Section 232)” নিয়েও কাজ করছে, যার আওতায় আগে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম (Steel and Aluminium) আমদানিতে শুল্ক বসানো হয়েছিল।
  3. ৬ জানুয়ারির (January 6, 2021) সমর্থকদের বিচার:
    • যারা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে ক্যাপিটলে হামলা (Stormed the Capitol) করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে বিচার বাতিল বা নিষ্কৃতি দিতে পারেন ট্রাম্প।
  4. তেল ও গ্যাস খাতে (Oil & Gas) সমর্থন
    • নতুন লাইসেন্স (Licenses) দেওয়া, বিশেষ করে বিলিয়ন ডলারের এলএনজি (Liquefied Natural Gas) রপ্তানি টার্মিনালগুলো যেগুলো বাইডেন এক বছর আগে স্থগিত করেছিলেন, সেগুলো আবার শুরু করার নির্দেশ আসতে পারে।

সব মিলিয়ে, আগামী কয়েকটা দিন হবে পরীক্ষা—সংসদের (Congress) অনুমোদন ছাড়াই প্রেসিডেন্ট এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে কতদূর যেতে পারেন, সেটি দেখা যাবে। যদিও “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একদিনে শেষ করা” বা এমন অনেক প্রতিশ্রুতি হয়তো বাস্তবে ঘটবে না, কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থক ও সমালোচক সবাই এ সময় চোখ রাখছেন, পরবর্তী ক’দিন কী ঘটতে যাচ্ছে।

সূত্র

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক (TikTok) আবার চালু

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের সেবা (Service) পুনর্বহাল হয়েছে, যেটি রবিবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) যখন অ্যাপটিকে নিষিদ্ধ রাখার পক্ষে রায় দেয়। আদালত রায়ে বলেছে, “ডিভেস্ট অর ব্যান” আইন (Law) বাক স্বাধীনতার (Free Speech) আইন লঙ্ঘন করছে না।

টিকটক আবার চালু হওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ট্রাম্পের (President-Elect Trump)—অথবা এখন যেহেতু তিনি শপথ নিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প—ইঙ্গিত দেন যে তিনি নির্বাহী আদেশে (Executive Order) এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে (Pause) তুলে নেবেন প্রথম দিনেই।

টিকটক এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে: “তিনি প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা ও আশ্বাস দিয়েছেন আমাদের সেবাদাতাদের, যাতে তারা কোনো ধরনের শাস্তির মুখোমুখি না হয়। এর ফলে ১৭ কোটি আমেরিকান টিকটক ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন এবং ৭০ লক্ষ ছোট ব্যবসা (Small Businesses) এর ওপর নির্ভর করে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে।”

সূত্র

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি কার্যকর

রবিবার গাজায় (Gaza) ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি (Ceasefire) চালু হয়েছে। এতে প্রথম তিনজন ইসরায়েলিকে (Israelis) হামাসের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে; অন্যদিকে ইসরায়েলি জেল থেকে ৯০ জন ফিলিস্তিনিকে (Palestinians) মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ৩ ইসরায়েলি নারী:

  • এমিলি দামারি (Emily Damari), বয়স ২৮
  • রোমি গনেন (Romy Gonnen), বয়স ২৪
  • ডোরান স্টেইনব্রেখার (Doran Steinbrecher), বয়স ৩১

ওরা গাজায় ১৫ মাস ধরে বন্দি ছিলেন। ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িতে তোলার সময় তাদের ঘিরে ছিল বিশাল জনতা আর হামাস (Hamas) সদস্য। পরে তাদের ইসরায়েলে ফিরিয়ে আনা হয়, পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন হয়, স্বাস্থ্য পরীক্ষা (Medical Evaluation) করা হয়—শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।

এই ৩ জন হলেন সেই ৩৩ জন জিম্মির (Hostages) প্রথম দল, যাদেরকে “মানবিক শ্রেণি (Humanitarian Category)” বলে অভিহিত করা হয়েছে—নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রথমে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা। এমিলি দামারির মা বলেছেন, তিনি অবশেষে মেয়েকে সেইকথা দিতে পেরেছেন যেটি তিনি এত দিন ধরে স্বপ্ন দেখছিলেন। সেই সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে সব জিম্মি পরিবারে ফিরতে পারে।

যদিও এটা আনন্দের খবর, তবে বাকিদের পরিবার—যাদের কেউ কেউ মারা গেছেন বলে মনে করা হয় কিংবা এখনো বন্দি—তারা উদ্বেগে আছে। অপরদিকে— ৯০ জন ফিলিস্তিনি নারি ও শিশু (Women & Children) মুক্তি পেয়েছে— যাদের পশ্চিম তীর (West Bank) ও জেরুজালেম (Jerusalem) এর জেল থেকে ছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলেন খালিদ জাররাহ (Khalid Jarrah), যিনি পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (Popular Front for the Liberation of Palestine) সদস্য এবং “অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিটেনশন” (Administrative Detention) এ ছিলেন—বিনা অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে কারাবন্দি করার পদ্ধতি।

গাজায় (Gaza) এই যুদ্ধবিরতি একদিকে আশার সঞ্চার করেছে—কিছু মানুষ বলছে তারা ৪৭০ দিনে প্রথমবার শান্তিতে ঘুমোতে পেরেছেন—অন্যদিকে ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত (Palestinians Killed) হওয়ার শোক, ধ্বংস হওয়া বাড়িঘর (Destroyed Homes) না থাকায় উদ্বেগও বিরাজ করছে। অনেক পরিবার এখন গৃহহীন (Homeless)। জাতিসংঘের (UN) ত্রাণ বিষয়ক প্রধান বলেছেন, “মানবিক প্রয়োজন (Humanitarian Needs) এখন বিপুল,” এবং রবিবার অন্তত ৬৩০টি সাহায্যবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।

সূত্র

মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর বিমান হামলার অভিযোগ

শেষে, মিয়ানমারের (Myanmar) খবর: সামরিক জান্তা (Military Junta) সম্ভবত রাখাইন রাজ্যে (Rakhine) একটি অস্থায়ী বন্দিশিবিরে (Temporary Detention Area) বিমান হামলা (Airstrike) চালিয়েছে বলে জানা গেছে স্থানীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (Arakan Army) বরাতে।

তারা জানাচ্ছে, শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল প্রায় সাড়ে চারটায় (4:45 pm) সামরিক বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান (Military Jet) মারুক ইউ (Maruk Hugh) টাউনশিপে ওই শিবিরে বোমা ফেলে। সেখানে আটক ছিল সেনা সদস্যদের পরিবারের কিছু লোক (Family Members of Junta Soldiers)। স্পষ্ট নয়, এটি ভুলবশত (Mistargeted) নাকি ইচ্ছাকৃত। এই হামলায় ২৮ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে কমপক্ষে ৯ জন শিশু (Children), আর ২৫ জন আহত হয়েছেন। আরাকান আর্মি জানায়: “যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তারা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর (Myanmar’s Army) সেনা সদস্যদের পরিবারের লোকজন। আমরা তাদের যুদ্ধের সময় আটক করেছিলাম। মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখনই বোমাবর্ষণ করা হয়।”

সূত্র

১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা: নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় (Security Cabinet) ভোট
  • জাস্টিন ট্রুডোর উত্তরসূরি: মার্ক কার্নির প্রচারণা
  • সুদানের সেনাপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
  • ট্রাম্প কি সত্যিই গ্রিনল্যান্ড কিনতে পারবেন?
  • ইলন মাস্কের  ইউরোপ-নির্ভর বিতর্কিত অবস্থান
  • মার্ক জাকারবার্গের ‘ট্রাম্পঘেঁষা’ পুনর্জন্ম
  • বিগ টেক ও রাজনীতির টানাপোড়েন

গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা: নিরাপত্তা মন্ত্রিসভায় (Security Cabinet) ভোট

পরিপ্রেক্ষিত (Background): প্রায় ১৫ মাস ধরে ইসরায়েল ও হামাসের (Hamas) মধ্যে সংঘাত চলছে গাজা উপত্যকায় (Gaza Strip)। বহু বেসামরিক লোক হতাহত, এবং বহু ইসরায়েলি জিম্মি (Hostages) ধরে রাখা হয়েছে গাজায়, বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের (Palestinians detained in Israel) অবস্থান। বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি চেষ্টায় অচলাবস্থা দেখা গেছে।
আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠক (Cabinet Meeting Today)

  • ১৭ জানুয়ারি, শুক্রবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা (Security Cabinet) চূড়ান্তভাবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদন করার জন্য বসছে। পুরো মন্ত্রিসভার (Full cabinet) ভোট রবিবার রাতে হবে।
  • চুক্তিটি পাস হলে, একই দিন থেকে প্রথম ধাপে কিছু ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাবেন, আর ইসরায়েলি বন্দিশালায় থাকা কিছু ফিলিস্তিনির মুক্তিও হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতি (PM’s Office Statement): প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর (Benjamin Netanyahu) দপ্তর ১৬ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নিশ্চিত করে, গাজায় আটক থাকা জিম্মিদের ফেরতের বিষয়ে একটি “সমঝোতা” হয়েছে। ইসরায়েল সরকারের বক্তব্য—“আমরা যুদ্ধে আমাদের সব লক্ষ্য, জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা—পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” এর আগে নেতানিয়াহু অভিযোগ করেছিলেন, হামাস নাকি চুক্তির কিছু শর্ত থেকে সরে আসছে (Reneging)। যাহোক, এখন মনে হচ্ছে উভয়পক্ষ কিছুটা বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে।

রাজনৈতিক প্রভাব (Political Fallout): এই চুক্তি পাস হলে, ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতমার বেন গভির (Itmar Ben Gvir) সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। তিনি আগেই বলেছিলেন, “আমি গত এক বছরে বারবার এ চুক্তি নস্যাৎ করেছি,” ও এখন যদি চুক্তি পাস হয় তবে তিনি চলে যাবেন। তার দল “জিউইশ পাওয়ার” (Jewish Power) এবং আরেক ডানপন্থী নেতা বেজালেল স্মোটরিচ (Bezalel Smotrich) যদি এই সরকারের জোট ত্যাগ করে, তাহলে নেতানিয়াহুর জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে। উভয়পক্ষের জন্যই গাজায় যুদ্ধবিরতির খবর স্বস্তির, কারণ ইসরায়েলে অনেকেই জিম্মিদের ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন তেল আবিবে (Tel Aviv), আর গাজায় লাগাতার হামলায় বহু সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত।
শেষ মুহূর্তের সংঘাত (Ongoing Strikes): চুক্তি ঘোষণার পরেও ইসরায়েল গাজায় বোমাবর্ষণ চালিয়েছে—গত ১৫ মাসে নিহতের সংখ্যা ৪৬,৭০০-এরও বেশি ছাড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ। অনেকে সন্দেহ করছেন, এই শেষ মুহূর্তের হামলা হয়তো চাপ সৃষ্টির কৌশল।


বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া (Global Reaction):

  • বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) বলেন, “এই চুক্তি ইসরায়েলের আরব প্রতিবেশী (Arab neighbors) সহ সৌদি আরবের (Saudi Arabia) সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক (Normalization) এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।”
  • জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (UN Secretary General António Guterres) একে “গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জোর দিয়েছেন, “অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের (Occupied Palestinian territory) ঐক্য, ধারাবাহিকতা ও অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে।”

যদি চুক্তি যথারীতি বাস্তবায়ন হয়, তবে প্রথম ধাপটি (Multiple phases) সফল হবে কিনা তা নির্ভর করে উভয় পক্ষের আগ্রহ ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের (Donald Trump) মধ্যপ্রাচ্য নীতির ওপর। ইতোমধ্যে হামাস সামরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে ও ইসরায়েলেও সরকারী রাজনৈতিক ডামাডোল আছে। তাছাড়া, ট্রাম্প শপথ নেওয়ার আগেই যুদ্ধবিরতি সম্পন্ন হলে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রশাসনের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক সুসংহত থাকতে পারে।

সূত্র

জাস্টিন ট্রুডোর উত্তরসূরি: মার্ক কার্নির প্রচারণা

পটভূমি (Background): কানাডার (Canada) প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (Justin Trudeau) সম্প্রতি জনমত জরিপে ব্যাপক হারে জনপ্রিয়তা হারিয়ে ও দলীয় কোন্দলের মুখে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ৯ বছর শীর্ষপদে থাকার পর সরে যাওয়ায় লিবারেল পার্টি (Liberal Party) এখন নতুন নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্ধানে।

মার্ক কার্নির আবির্ভাব (Mark Carney’s Launch):

  • কানাডা ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (Bank of Canada, Bank of England) সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি (Mark Carney) আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।
  • তিনি এক জনসমাবেশে (Crowd in Edmonton, Alberta) ঘোষণা করেন, “আমাদের অর্থনীতি (Economy) ঠিক পথে ফেরানো আমার প্রধান লক্ষ্য।”
  • হাউজিং (Housing) সংকট, স্থবির মজুরি (Stagnant wages) সহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ জয়ের প্রতিশ্রুতি দেন।
  • নিজেকে “আউটসাইডার” হিসেবে তুলে ধরছেন, কারণ তিনি নির্বাচিত অফিসে কখনো ছিলেন না, সংসদেও (Parliament) তার কোনও আসন নেই। লিবারেল নেতা নির্বাচিত হলে তাকে সামনে সাধারণ নির্বাচনে (Federal elections) প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।

অন্য সম্ভাব্য প্রার্থী (Other Candidates):

  • সাবেক অর্থমন্ত্রী (Finance Minister) ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড (Chrystia Freeland) গত মাসে পদত্যাগ করেন, যার ফলে এই নেতৃত্বসংকট তৈরি হয়। মনে করা হচ্ছে, তিনিও শীঘ্রই প্রার্থী হবার ঘোষণা দেবেন।
  • আগামী ৯ মার্চ (March 9) লিবারেল নেতৃত্ব নির্বাচন। নতুন নেতা ও প্রধানমন্ত্রীকে এরপর অন্তর্বর্তী সময়ে বা নির্ধারিত নির্বাচনে যেতে হবে, যেখানে লিবারেলরা এখন কনজারভেটিভদের (Conservatives) চেয়ে ২০ পয়েন্ট পিছিয়ে।

সূত্র

সুদানের সেনাপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

নিষেধাজ্ঞার কারণ (Reason for Sanctions): বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করে, সুদানের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (Abdel Fattah El Burhan)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানবিক সহায়তা (Humanitarian aid) বাধাগ্রস্ত করা, স্কুল, বাজার, হাসপাতাল ইত্যাদিতে হামলা চালানোর অভিযোগ আছে। সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধে (Sudanese civil war) তিনি “যুদ্ধ বেছে নিয়েছেন, আলোচনায় না থেকে।” একই সঙ্গে এক সুদানি-ইউক্রেনীয় নাগরিক ও হংকং-ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, কারণ তারা সুদানের সেনাকে অস্ত্র সরবরাহে সাহায্য করেছে।

সুদানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (Sudan’s Conflict Background):

  • ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে (Coup) সেনাবাহিনী (Sudanese Army) ও র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (RSF) মিলিতভাবে বেসামরিক নেতৃত্বকে উৎখাত করে। তার আগে ২০১৯ সালে ওমর আল-বশিরকে (Omar al Bashir) হটানো হয়েছিল।
  • পরে বুরহান (Burhan) ও আরএসএফ নেতা মোহাম্মদ হামদান দাগালো (Mohammed Hamdan Dagalo, “Hemeti”) দুজনই ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান, ২০২৩ সালের এপ্রিলে (April 2023) নতুন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।
  • পশ্চিম দারফুরে (Darfur) জাতিগত সহিংসতা (Ethnically motivated killings) ও যৌন সহিংসতা (Sexual violence) বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে (September), জাতিসংঘ (UN) উভয় পক্ষকে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত করে।
  • এক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাষ্ট্র হামেতির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, কারণ আরএসএফ “গণহত্যা” (Genocide) সংঘটিত করছে বলে অভিযোগ—দুই দশকের মধ্যে দ্বিতীয়বার সুদানে এমন আনুষ্ঠানিক গণহত্যার ঘোষণা এলো।

সূত্র

যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ড: প্রতিরক্ষা চুক্তি ও ইউরোপের সাথে পুনরায় জোট

প্রতিরক্ষা চুক্তির মূলনীতি (Core of the Defence Treaty): ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer) পোল্যান্ড সফরে গেছেন। সেখানে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি (Defense treaty) হবে—যাতে সামরিক সহযোগিতা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য রোধে (Tackle disinformation) যৌথ উদ্যোগ নেওয়া হবে। ডাউনিং স্ট্রিট (Downing Street) এক বিবৃতিতে বলেছে, “এটি ইউরোপের সাথে যুক্তরাজ্যের ‘পুনরায় সংযোগের’ (Wider reset with Europe) অন্যতম স্তম্ভ,” যা ফ্রান্স ও জার্মানির সাথে সাম্প্রতিক চুক্তির ধারাবাহিক।

সাম্প্রতিক ইউরোপীয় দৃশ্যপট (Recent European Context):

  • কয়েক দিন আগে স্টারমার ইউক্রেনের (Ukraine) সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তি (Security deal) করেন, যেখানে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য ইউক্রেনে “শান্তিরক্ষী বাহিনী” (Peacekeeping troops) পাঠাতে পারে।
  • ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) শপথ নিলে ইউরোপীয় দেশগুলোকে “নিজেদের প্রতিরক্ষা”তে আরও ব্যয় করতে বলবেন, এ ঘোষণা আগেই দিয়েছেন।
  • স্টারমারের লেবার সরকার (Labour government) ক্ষমতায় আসার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন (Restoring relations)কে অন্যতম লক্ষ্য বলে ঘোষণা করে।
  • গত বছরে যুক্তরাজ্য-জার্মানি চুক্তি (UK-Germany bilateral treaty) স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেখানে যৌথ মিসাইল উন্নয়ন (Joint missile development), ব্যাল্টিক অঞ্চলে সামরিক মহড়া (Military exercises in the Baltics), স্কটল্যান্ডে (Scotland) সাবমেরিন হান্টিং প্লেন স্থাপনার অধিকার, আরও নানা সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত।
  • স্টারমার এস্তোনিয়ায় (Estonia) ইউকে-নেতৃত্বাধীন জয়েন্ট এক্সপেডিশনারি ফোর্স (Joint Expeditionary Force) বৈঠকে অংশ নেন, যেটি মূলত নর্ডিক (Nordic) ও ব্যাল্টিক (Baltic) দেশগুলোর ১০ সদস্যের এক ন্যাটো শাখা।

সূত্র

ট্রাম্প কি সত্যিই গ্রিনল্যান্ড কিনতে পারবেন?

শীতের ঝড়ো জানুয়ারি মাসে বেশিরভাগ মানুষই হয়তো ইতিমধ্যে তাদের বছরের শুরুতে করা অন্তত দু’টি নতুন প্রতিজ্ঞা (Resolutions) ভেঙে ফেলেছেন। তবু অনেকেই মানসিক শান্তি পেতে ‘রিটেইল থেরাপি’ (Retail Therapy)-র দিকে ঝুঁকছেন। মনে হচ্ছে, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পও (Donald Trump) ঠিক একই পথে হাঁটছেন—কিন্তু প্রশ্ন হলো, সবকিছু থাকা সত্ত্বেও এমন একজন মানুষের কেনাকাটার তালিকায় এখন কী থাকতে পারে? কেউ হয়তো বলবে, “একটা ফাউন্ডেশন (Foundation) যা তার গলায় মিশে যাবে”—তবে শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্পের পছন্দের তালিকায় রয়েছে সার্বভৌম রাষ্ট্র (Sovereign Nations)! আজকের আলোচনায় আমরা খুঁজে বের করব কেন ডেনমার্ক (Denmark) হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করছে: “WTF USA?”

মার্কিন প্রেসিডেন্টের গ্রিনল্যান্ড, কানাডা ও পানামা পরিকল্পনা: গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক “গ্রিনল্যান্ড,” “কানাডা” এবং “পানামা” প্রসঙ্গ। এ মাসের শুরুর দিকে মার-আ-লাগোতে (Mar-a-Lago) এক ফ্রিহুইলিং প্রেস কনফারেন্সে ট্রাম্প কয়েকটি বিস্ময়কর হুমকি ও প্রস্তাব দেন—

  1. গ্রিনল্যান্ড (Greenland): তিনি সামরিক শক্তি (Military Force) ব্যবহার করে এটি দখল করে নেওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি।
  2. পানামা খাল (Panama Canal): পানামায়ও একই রকম সামরিক হস্তক্ষেপের আভাস দেন।
  3. ডেনমার্ক (Denmark): গ্রিনল্যান্ড তাদের অধীনেই রয়েছে, তাই ডেনমার্ককে “খুব উঁচু হারে শুল্ক (Very High Tariffs)” আরোপের হুমকি দেন, যদি তারা গ্রিনল্যান্ড ছেড়ে না দেয়।
  4. কানাডা (Canada): তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রভাব (Economic Force) ব্যবহার করে কানাডাকে মার্কিন রাজ্যে পরিণত করার হুমকি দিয়েছেন।

শুনতে অবাস্তব লাগলেও, ট্রাম্পের মুখ থেকে এর আগেও এমন ‘বেপরোয়া’ (Bog Standard) কথা এসেছে। অনেকেই ভাবতে পারেন যে এ-সবই একধরনের চিরাচরিত ‘ট্রাম্পীয় ভুল’ (Trump Blunder)। কিন্তু আমরা যদি ইতিহাস দেখি, বুঝব যে বেশ কিছু মার্কিন রাজনীতিক বরাবরই আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের (International Norms and Law) প্রতি উদাসীন ছিলেন।

আন্তর্জাতিক আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব: যুক্তরাষ্ট্র (US) নানা আন্তর্জাতিক চুক্তিতে (International Treaties) স্বাক্ষর করতে অনাগ্রহী। কিংবা স্বাক্ষর করলেও তা সম্মান না করার ইতিহাসও রয়েছে। যেমন—

  • কেমিক্যাল ওয়েপনস কনভেনশন (Chemical Weapons Convention): স্বাক্ষরের পরও যুক্তরাষ্ট্রের নানা পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
  • ইরান পারমাণবিক চুক্তি (JCPOA): এটি থেকে হুট করেই যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে আসে, যাকে ইরান নিউক্লিয়ার ডিল নামেও ডাকা হয়।

এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের ‘পাশাপাশি ফল’ (Pros and Cons) রয়েছে:

  1. ইতিবাচক দিক (Pros): যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থানে থাকে যে তাদের আন্তর্জাতিক আইনের বাঁধনে ততটা জড়াতে হয় না। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে (Most Powerful Country) তারা অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে।
  2. নেতিবাচক দিক (Cons): সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্পষ্ট হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া (Russia) বা চীনের (China) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে, তখন তাদের নিজেদের ‘আইন অগ্রাহ্য’ মনোভাব সেই অভিযোগকে আংশিক দুর্বল করে দেয়। যেমন—
    • রাশিয়া ইউক্রেনের (Ukraine) সীমান্ত অতিক্রম করে আক্রমণ চালাচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ তোলে, কিন্তু অন্যদিকে ট্রাম্প প্রকাশ্যে পানামা আক্রমণের কথা বললে সেই অবস্থান তুলনামূলকভাবে ‘দৃঢ়’ থাকে না।
    • চীনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন (Human Rights Violations) ও সমুদ্রসীমা লঙ্ঘনের (Maritime Law Violations) দায়ে অভিযুক্ত করা হয়, অথচ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই সমুদ্র আইনের জাতিসংঘ কনভেনশনে (UN Convention on the Law of the Sea) সই করেনি।

এ ছাড়া গাজার (Gaza) চলমান যুদ্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহল যখন ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সের (IDF) কর্মকাণ্ডকে ‘ওয়ার ক্রাইমস’ (War Crimes) হিসেবে দেখছে, যুক্তরাষ্ট্র তখনও ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে গেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের এমন দ্বৈত মানদণ্ড (Double Standard) পররাষ্ট্রনীতিকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে।

বাস্তবতা বনাম সম্ভাব্য পরিণতি: মার্কিন সামরিক হুমকির মূল্যায়ন: যুক্তরাষ্ট্র আদৌ গ্রিনল্যান্ড বা পানামা দখল করতে যাচ্ছে কিনা, সে প্রশ্নে অনেকে বলছেন, “এটা চূড়ান্ত পাগলামি (Insane) হবে, তাই বাস্তবে হওয়ার সম্ভাবনা কম।” কিন্তু ট্রাম্পের এই মনোভাব আগামী চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্কের (Foreign Relations) ওপর কী প্রভাব ফেলবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা (Geopolitical Competition) সামাল দিতে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি কীভাবে আঞ্চলিক মিত্রদের আস্থা অর্জন করবে? ট্রাম্প হয়তো এখনো বিশ্বের মানচিত্রকে নিজের ব্যক্তিগত ‘রিস্ক’ (Risk) নামে এক বোর্ড গেমের মতো ভেবে দখলদারি করছেন না। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠজনেরা যে ইতোমধ্যে বিদেশের নানা বিতর্কিত রাজনৈতিক শক্তিকে (Controversial Political Forces) সমর্থন দিচ্ছেন, তা বেশ স্পষ্ট।

ইলন মাস্কের  ইউরোপ-নির্ভর বিতর্কিত অবস্থান

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এলন মাস্ক সম্প্রতি ইউরোপের কিছু ডানপন্থী (Right Wing) রাজনীতিকের প্রতি খোলাখুলি সমর্থন জানিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন। যেমন—

  • যুক্তরাজ্যের টমি রবিনসন (Tommy Robinson)
  • জার্মানির এএফডি (AfD) দলের নেতা অ্যালিস ওয়েইডেল (Alice Weidel)

এমনকি তিনি ‘যুক্তরাজ্যকে মুক্ত করার’ (Liberating the UK) কথাও তুলে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য ‘সাম্রাজ্যবাদী’ (Imperial Ambitions) উদ্যোগে আরেকটি মাত্রা যোগ করেছেন।

মিডিয়া ও জনমতের প্রতিক্রিয়া: মাস্কের ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক দর্শন ও মনস্তত্ত্ব (Psychology) নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। প্রশ্ন হলো—মাস্কের এই রাজনৈতিক ভূমিকা কোনো নতুন ঘটনা, নাকি আমরা বহু বছর ধরে যেভাবে রুপার্ট মারডকের (Rupert Murdoch) মতো ধনকুবেরদের সংবাদমাধ্যমের ওপর কর্তৃত্ব দেখেছি, সেটিরই নতুন সংস্করণ?

  • নতুন মত (New Argument): মাস্কের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ (X)-এ রাজনৈতিক বাকবিতণ্ডা (Political Debate) অত্যন্ত দ্রুত ও প্রছন্নভাবে উত্তাল হয়ে ওঠে, যা ডেইলি মেইলের (Daily Mail) শিরোনামকেও ছাড়িয়ে যায়। মাস্ক নিজে প্রতিদিন অগণিত টুইট করেন এবং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে সেগুলোকে ব্যাপকভাবে প্রচার করেন। তুলনা করলে, পুরোনো মিডিয়ায় মারডক বড় হরফে নিজস্ব মতামত বা কলাম ছাপাতে পারতেন, কিন্তু সেখানে সেই ‘আলগোরিদমিক’ বাড়তি-প্রচার ছিল না। এভাবে বলা হয়, মাস্ক গণতন্ত্রের (Democracy) জন্য হুমকি এবং সরকারকে (Government) উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
  • পুরনো মত (Old Argument): অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, “এতে নতুনত্বের কিছু নেই। এটা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে পুরনো পদ্ধতিরই রূপান্তর।” একসময় মুদ্রিত সংবাদপত্রগুলো (Print Media) ছিল ততটাই পক্ষপাতমূলক ও ‘উগ্র,’ আমরা হয়তো ভুলে গেছি। X-এ সাংবাদিকরা নিজেরাই অতিরিক্ত সময় কাটায়, তাই বিষয়টি বেশি ফুঁলে-ফেঁপে উঠছে। তাছাড়া X এখন দিন দিন ডানপন্থী প্রতিধ্বনি-কেন্দ্র (Right Wing Echo Chamber) হয়ে উঠছে, সেখানে সত্যিকারের ‘মেইনস্ট্রিম’ (Mainstream) প্রভাব কতটা আছে, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ।

সব মিলিয়ে, মাস্কের প্রভাব আসলে কতটা দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে, তা সময়ই বলে দেবে। তিনি কী আদৌ সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের জন্য নতুন কোনো হুমকি, নাকি পুরনো ধনকুবেরদের (Billionaires) প্রচলিত পদ্ধতিরই পুনরাবৃত্তি করছেন—এটা দেখার বিষয়। তবে যে কেউ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন, তাদের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ।

মার্ক জাকারবার্গের ‘ট্রাম্পঘেঁষা’ পুনর্জন্ম

মাস্ক একা নন। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে (White House) ফিরে আসার প্রস্তুতি শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে আরেক টেক-মহারথী মার্ক জাকারবার্গও (Mark Zuckerberg) দ্রুততার সঙ্গে তার অবস্থান পাল্টে নিচ্ছেন।

  • Meta প্রাধান্য: ফেসবুক (Facebook) ও ইনস্টাগ্রাম (Instagram)-এর মূল কোম্পানি মেটার প্রধান হিসেবে জাকারবার্গ একসময় তুলনামূলক প্রগতিশীল (Progressive) ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ‘ফ্রি স্পিচ’ (Free Speech) রক্ষায় দৃঢ়সংকল্পের কথা বলেছেন, অতি ডানপন্থী (Right Wing) রেডিও ও পডকাস্ট ব্যক্তিত্বদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।
  • জো রোগানের (Joe Rogan) পডকাস্টে উপস্থিতি: জাকারবার্গ সেখানে এসে ‘লিগেসি মিডিয়া’ (Legacy Media) নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন এবং ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ফ্যাক্ট চেকিং (Fact Checking) সীমিত বা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেন। ট্রাম্প ফ্যাক্ট চেকিং একেবারেই পছন্দ করেন না, ফলে জাকারবার্গের এই অবস্থান একরকম “ট্রাম্পের মন জয়” করার চেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
  • রাজনৈতিক অনুদান ও পদক্ষেপ: জাকারবার্গ ১০ লক্ষ ডলার (1 million USD) ট্রাম্পের অভিষেক তহবিলে (Inauguration Fund) দান করেছেন। তিনি নিক ক্লেগকে (Nick Clegg) সরিয়ে UFC চেয়ার ডানা হোয়াইট (Dana White) কে গুরুত্বপূর্ণ পদে এনেছেন, যিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

অনেকে হয়তো বলবেন, “জাকারবার্গ স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী (Self-Interested Opportunism) মনোভাব দেখাচ্ছেন—আগে তো তিনি প্রায় ‘প্রগতিশীল’ ছিলেন!” কিন্তু আসলে এটি শুধু জাকারবার্গের ব্যক্তিগত নজির নয়; পুরো ‘বিগ টেক’ (Big Tech) ক্ষেত্রেই ‘ট্রাম্পমুখী’ (Pro-Trump Pivot) রূপান্তর দেখা যাচ্ছে।

বিগ টেক ও রাজনীতির টানাপোড়েন

পূর্বে সিলিকন ভ্যালি (Silicon Valley) প্রায়ই ডেমোক্র্যাটদের (Democrats) শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হতো। ট্রাম্প নিজেও তার প্রথম মেয়াদে অভিযোগ করেছিলেন যে বিগ টেক তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন—

  1. এলন মাস্ক (Elon Musk): তিনি ২০২০ সালে বাইডেনকে (Biden) ভোট দিলেও এখন ট্রাম্পপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
  2. জেফ বেজোস (Jeff Bezos): ওয়াশিংটন পোস্ট (Washington Post)-এর মালিক বেজোস সম্প্রতি তার পত্রিকাকে (২০২৪ সালের প্রার্থী) কমলা হ্যারিসের (Kamala Harris) প্রতি সমর্থন ঘোষণায় বাধা দেননি ঠিকই, তবে কার্যত ডেমোক্র্যাটদের স্পষ্ট সমর্থন দিতে পিছপা হয়েছেন।
  3. কিথ রাবোইস (Keith Raboas): পেপ্যাল (PayPal) ও লিংকডইনের (LinkedIn) এক প্রাক্তন নির্বাহী, যিনি ২০১৬ সালে ট্রাম্পকে ‘সাইকোপ্যাথ’ (Sociopath) বলেছিলেন, তিনিই এখন ট্রাম্পের প্রচারণায় ১ মিলিয়ন ডলার দান করেছেন।

কেন এই পরিবর্তন?

  • চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান (Hawkish on China): বিগ টেক মনে করে চীন তাদের ব্যবসার জন্য হুমকি, বিশেষত এআই (AI) প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, যা বিগ টেকের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে।
  • বাইডেনের আমলে অ্যান্টিট্রাস্ট (Antitrust) তদন্ত: বিগ টেকের বাজার আধিপত্য নিয়ে বাইডেন প্রশাসন কঠোর হতে শুরু করে। ভয় ছিল, ডেমোক্র্যাটরা আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারেন।
  • ক্রিপ্টো ও এআই রেগুলেশন: বাইডেন উদীয়মান প্রযুক্তি (Emerging Technologies) যেমন ক্রিপ্টোকারেন্সি (Crypto), এআই ইত্যাদির ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যা অনেক প্রযুক্তি উদ্যোক্তার অপছন্দের বিষয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই “টেক ব্রো” (Tech Bros) বনাম “ট্রাম্প” সম্পর্ক কতদিন টিকবে? ট্রাম্পের মূল ভোটার—যারা তুলনামূলকভাবে কর্মজীবী শ্রেণি (Working Class)—তারা কি বিগ টেকের এই একচেটিয়া মুনাফা (Exorbitant Profits) ও শ্রমবাজারে (Labour Markets) এআই দ্বারা সৃষ্ট ব্যাঘাত মেনে নেবেন? নাকি ভোটারদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই অদ্ভুত মিত্রতা ভেঙে যেতে পারে?

১৬ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • বিদায়ী ভাষণে বাইডেনের সতর্কবার্তা: প্রযুক্তি বিলিয়নিয়ারদের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার হুঁশিয়ারি
  • গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি
  • ঐতিহাসিক বিরোধ নিরসনে ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের অগ্রগতি
  • বিলিয়নিয়ারদের মহাকাশ প্রতিযোগিতা: ব্লু অরিজিনের সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা
  • লেবাননে নতুন সরকার, সৌদি আরবের সামনে সুযোগের হাতছানি
  • শি জিনপিং এর অগ্রগতি: বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি
  • নাইজেল ফারাজ: মাস্ক বিতর্ক এবং রাজনৈতিক উত্থান
  • অ্যান্টনি অ্যালবানিজ: লুজার হিসেবে গণ্য হওয়ার কারণ
  • পেদ্রো সানচেজ: জনপ্রিয়তা হ্রাস এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
  • র‍্যাচেল রিভস: ঋণপত্রের ফলন বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক চাপ
  • নিকোলাস মাদুরো: বিতর্কিত নির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক নিন্দা

বিদায়ী ভাষণে বাইডেনের সতর্কবার্তা: প্রযুক্তি বিলিয়নিয়ারদের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতার হুঁশিয়ারি

জো বাইডেন তার বিদায়ী ভাষণে স্পষ্ট করে বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে একধরনের “টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স” (tech industrial complex) বা প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের উপর অনিয়ন্ত্রিত প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তিনি এই প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে “অলিগার্কি” (oligarchy) আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, “আজ আমেরিকায় এক অলিগার্কি গড়ে উঠছে—অত্যন্ত বিপুল সম্পদ, ক্ষমতা ও প্রভাব নিয়ে—যা আমাদের গোটা গণতন্ত্রকেই হুমকির মুখে ফেলেছে, আমাদের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার পথে বাধা তৈরি করছে।”

এই বক্তব্যকে অনেকে আমেরিকার ৩৪তম প্রেসিডেন্ট ডিউইট আইজেনহাওয়ার (Dwight Eisenhower)-এর ১৯৬১ সালের বিদায়ী ভাষণের সঙ্গে তুলনা করছেন। আইজেনহাওয়ার তার ভাষণে “মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স” (military-industrial complex) শব্দবন্ধকে জনপ্রিয় করেছিলেন, যা সামরিক বাহিনী ও শিল্পপতিদের অতি ঘনিষ্ঠ সংযোগের কারণে গণতান্ত্রিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। বাইডেন একইভাবে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে আধুনিক সময়ে সামরিক খাতের পাশাপাশি প্রযুক্তি খাতেরও অনিয়ন্ত্রিত প্রভাব বিপজ্জনক হতে পারে।

ভাষণের মূল উদ্বেগসমূহ: 

  • মিডিয়ার স্বাধীনতার সংকট (free press crisis): বাইডেন অভিযোগ করেন যে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে।
  • মিথ্যা তথ্য ও ভুল তথ্য (misinformation and disinformation) বৃদ্ধি: তিনি বলেন, “আমেরিকানরা আজ মিথ্যা ও ভুল তথ্যের প্রবল ঢলে চাপা পড়ে যাচ্ছে,” এবং এর ফলে ক্ষমতার অপব্যবহার সহজ হচ্ছে।
  • জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা: বাইডেনের দাবি, শক্তিশালী কিছু স্বার্থগোষ্ঠী জলবায়ু সংকট (climate crisis) মোকাবেলায় তার প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলি বাতিল করে দিতে চায়, যাতে তারা নিজেরা ক্ষমতা ও মুনাফা ধরে রাখতে পারে।

বাইডেন আরও স্পষ্ট করেন যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (social media) ক্ষেত্রেও সত্য আড়াল হওয়ার বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বিদায়ী ভাষণে তিনি মেটা (Meta), অ্যামাজন (Amazon) ও অন্যান্য প্রযুক্তি জায়ান্টের নাম সরাসরি না বললেও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা ফ্যাক্ট-চেকিং (fact-checking) ব্যবস্থাকে বাদ দেওয়ার মাধ্যমে ভুল তথ্যে (disinformation) প্রশ্রয় দিচ্ছে।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ধনী প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা: ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump), যিনি বাইডেনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন, তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে মার্ক জাকারবার্গ (Mark Zuckerberg), জেফ বেজোস (Jeff Bezos) ও ইলন মাস্ক (Elon Musk)-এর মতো বিলিয়নিয়ারদের। বাইডেনের অভিযোগ মতে, “সোশ্যাল মিডিয়া (social media) এখন সত্যকে মিথ্যার চাপে ছাপিয়ে দিতে দিচ্ছে—মিথ্যা বলা হচ্ছে ক্ষমতা ও মুনাফার জন্য।” উল্লেখ্য, মেটা ও অ্যামাজন দুটিই ট্রাম্পের অভিষেক (inauguration) অনুষ্ঠানের জন্য ১০ লক্ষ ডলার করে অনুদান দিয়েছে। জাকারবার্গ, বেজোস এবং মাস্ক সোমবার অনুষ্ঠেয় ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অভিযাত্রা: এই বিদায়ী ভাষণে বাইডেন তার নিজস্ব যাত্রা তুলে ধরেন—স্ক্রান্টন, পেনসিলভানিয়াতে (Scranton, Pennsylvania) কথা বলতে অক্ষম এক শিশু থেকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হওয়ার যাত্রা। তিনি বলেন, “আমি আমার হৃদয় ও আত্মা উজাড় করে দিয়েছি এই জাতির জন্য।” তিনি নিজের প্রশাসনের সফলতা হিসেবে চাকরি সৃষ্টির (job creation) হার, অবকাঠামো উন্নয়ন (infrastructure spending), স্বাস্থ্যসেবা (healthcare) উন্নয়ন এবং কোভিড-১৯ মহামারি থেকে বেরিয়ে আসার দিকগুলো উল্লেখ করেন। অবশেষে তিনি প্রচলিত একটি প্রেসিডেন্সিয়াল ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে আমেরিকানদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা সবাই এই জাতির মশাল রক্ষাকারী হিসেবে থাকুন।”

সূত্র

গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কাতারের (Qatar) প্রধানমন্ত্রী এক যৌথ ঘোষণায় জানিয়েছেন যে ইসরায়েল (Israel) ও হামাসের মধ্যকার ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে রবিবার থেকে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এই যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার আওতায় গাজায় আটক ৯৮ জন জিম্মিকে (hostages) মুক্তি দেওয়ার কথাও রয়েছে।

যে তিন-পর্যায়ের (three-phase) প্রস্তাব এই চুক্তির ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে, তা প্রথম গত বছরের মে মাসে বাইডেন সমর্থন দিয়েছিলেন। এর উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো—

  1. প্রথম পর্যায় (First Phase):
    • ৪২ দিনের একটি অস্থায়ী সংঘাত বিরতি।
    • এই পর্যায়ে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে আছেন নারী, প্রবীণ এবং আহতরা।
    • বিনিময়ে ইসরায়েলের জেলে বন্দী কতিপয় ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়া হবে, যদিও নির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
    • ইসরায়েলি সেনারা (IDF troops) গাজা থেকে কিছুটা পিছু হটবে এবং এই সময়ে মানবিক সাহায্য (aid) প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে।
  2. দ্বিতীয় পর্যায় (Second Phase):
    • একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি (permanent ceasefire) প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হবে।
    • বাকি সব জিম্মির মুক্তি, যার মধ্যে ইসরায়েলি সৈন্যরাও (Israeli soldiers) রয়েছেন, নিশ্চিত করা হবে।
    • ইসরায়েলি সেনারা পুরোপুরি গাজা এলাকা থেকে সরে যাবে।

এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে মাত্র তিন দিন বাকি থাকতেই, ইসরায়েল আজ গাজায় বিমান হামলা তীব্র করেছে বলে সংবাদে জানা গেছে। এতে অন্তত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) তার ডানপন্থী মিত্রদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন, যারা এই চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য তাকে আক্রমণ করছে। নেতানিয়াহু অভিযোগ করেছেন যে হামাস শেষ মুহূর্তে নতুন দাবি জানাচ্ছে এবং আগের অবস্থান থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।

যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরো কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে—

  • চুক্তির মেয়াদ: এই চুক্তি কতদিন বজায় থাকবে, তা স্পষ্ট নয়। আগামী প্রশাসন—ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা—ইসরায়েলের পক্ষে জোর সমর্থনকারী বলে পরিচিত। তাদের নীতিগত অবস্থান এই যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব প্রভাবিত করতে পারে।
  • গাজা পরিচালনার দায়িত্ব: গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর এখনো নেই। ২০০৭ সাল থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাসের হাতে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল কিংবা আরব রাষ্ট্রগুলো কেউই চায় না হামাস আগের মতো ক্ষমতায় থাকুক। অন্যদিকে ইসরায়েলি সরকার এখনো কোনো বিকল্প শাসনব্যবস্থার রূপরেখা হাজির করেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনি অথরিটি (Palestinian Authority)-র সঙ্গে কাজ করতে বললেও নেতানিয়াহু তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সূত্র

ঐতিহাসিক বিরোধ নিরসনে ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের অগ্রগতি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy) বুধবার আকস্মিকভাবে ওয়ারশ (Warsaw) সফরে গিয়েছিলেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের (Donald Tusk) সঙ্গে বৈঠক করতে। দুইপক্ষই জানিয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (Second World War) সময়কার কিছু হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত ঐতিহাসিক বিতর্কে তারা অগ্রগতির দিকে এগোচ্ছে।

পোল্যান্ড ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে ইউক্রেনের সবচেয়ে বলিষ্ঠ মিত্রদের একটি। কিন্তু অনেক বছর ধরেই তাদের মধ্যে ভলোহিনিয়া (Volhynia) অঞ্চলের গণহত্যা (Volhynia crime) নিয়ে তীব্র মতবিরোধ ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীরা বহু পোলিশ নাগরিককে হত্যা করেছিল, যা নিয়ে পোলিশরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ পুষে রেখেছে।

কিছুদিন আগে ডোনাল্ড টাস্ক ঘোষণা করেন যে তারা “ব্রেকথ্রু” (breakthrough) অর্জন করেছেন। এর অর্থ, ইউক্রেন পোল্যান্ডকে তাদের নিহত নাগরিকদের কবর খোঁজার ও উত্তোলনের (exhumation) অনুমতি দেবে। তারপর বুধবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে টাস্ক বলেন, “আমরা ভলোহিনিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি অভিন্ন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি,” এবং যোগ করেন যে তারা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কাজ করে যাবে।

পোল্যান্ডে অতি শীঘ্রই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে (আগামী মে মাসে)। টাস্কের দলের প্রার্থীকে ডানপন্থী দল ল অ্যান্ড জাস্টিস (Law and Justice Party)-এর পক্ষ থেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। ল অ্যান্ড জাস্টিস দলের প্রার্থী হলেন পোল্যান্ডের ইনস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল রিমেমব্রান্স (Institute of National Remembrance)-এর প্রধান। সুতরাং ঐতিহাসিক এসব ইস্যু নির্বাচনী রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

টাস্ক একই সঙ্গে জানান, পোল্যান্ড এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিলের (Council of the EU) সভাপতিত্ব করছে (চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুন পর্যন্ত), এবং এই অবস্থান থেকে তিনি ইউক্রেনের ইইউ (EU) সদস্যপদ প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করতে সহায়তা করবেন।

সূত্র

বিলিয়নিয়ারদের মহাকাশ প্রতিযোগিতা: ব্লু অরিজিনের সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা

বিলিয়নিয়ার জেফ বেজোসের মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন (Blue Origin) আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশনে সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে, যেখানে তাদের রকেট নিউ গ্লেন (New Glenn) পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছাতে পেরেছে। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স (SpaceX)-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই বেজোস দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পের উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছেন।

রকেট পরিচিতি:

  • ৩০ তলা সমান উচ্চতার এই রকেটের নাম নিউ গ্লেন (New Glenn), যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম মহাকাশচারী যিনি পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেন, সেই জন গ্লেনের (John Glenn) নামানুসারে এটি নামকরণ করা হয়েছে।
  • উৎক্ষেপণের স্থান ছিল কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন (Cape Canaveral Space Force Station) যা ফ্লোরিডায় (Florida) অবস্থিত।
  • সোমবার নির্ধারিত উৎক্ষেপণ একটি “ভেহিকেল সাবসিস্টেম ইস্যু” (vehicle subsystem issue)-র কারণে বাতিল করা হয়েছিল, পরে বৃহস্পতিবার ভোরে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়।

মিশনের ফলাফল:

  • প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল রকেটটিকে নিরাপদে কক্ষপথে (orbit) স্থাপন করা। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
  • ব্লু রিং পাথফাইন্ডার (Blue Ring Pathfinder) নামে একটি পেলোড (payload) কক্ষপথে সক্রিয় করা হয়, এবং কোম্পানির দাবি অনুযায়ী সেটি ভালোভাবে কাজ করছে।
  • তবে দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল পুনর্ব্যবহারযোগ্য (reusable) প্রথম ধাপের বুস্টারকে (booster) আটলান্টিক মহাসাগরে (Atlantic Ocean) অবস্থানরত একটি বার্জে অবতরণ করানো, কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়েছে। “So You’re Telling Me There’s a Chance” নামে পরিচিত এই বুস্টারটি অবতরণ করতে গিয়ে হারিয়ে গেছে।

এই আংশিক ব্যর্থতা সত্ত্বেও প্রথমবারের প্রচেষ্টায় কক্ষপথে পৌঁছানো ব্লু অরিজিনের জন্য বিশাল অগ্রগতি হিসেবে ধরা হচ্ছে। প্রায় এক দশক ধরে তারা এই নিউ গ্লেন রকেটের উন্নয়ন করে আসছে। স্পেস ডটকম (Space.com)-এর বরাত দিয়ে জানা গেছে, ভবিষ্যতে অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার (Project Kuiper) ইন্টারনেট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য নিউ গ্লেনকে ব্যবহার করা হতে পারে। প্রজেক্ট কুইপার (Project Kuiper) হলো অ্যামাজনের একটি উদ্যোগ, যা স্পেসএক্স-এর স্টারলিংক (Starlink) মেগা কনস্টেলেশন (mega constellation)-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পৃথিবীব্যাপী উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা সরবরাহের পরিকল্পনা করছে।

সূত্র

লেবাননে নতুন সরকার, সৌদি আরবের সামনে সুযোগের হাতছানি

লেবাননের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সৌদি আরবের জন্য নতুন সুযোগ: লেবানন দীর্ঘ দুই বছর রাষ্ট্রপতিবিহীন থাকার পর অবশেষে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছে এবং একই সাথে একজন প্রধানমন্ত্রীও নিয়োগ দিয়েছে। এর ফলে লেবাননে একটি সম্পূর্ণ সরকার গঠিত হয়েছে, যা গত দুই বছরে প্রথমবার ঘটলো। এই ঘটনাটি সৌদি আরবের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ লেবাননের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক বহু দশক ধরে জটিল এবং মিশ্র। ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকলেও, গত দশকে মূলত শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্কই বেশি দেখা গেছে। এর প্রধান কারণ লেবাননে ইরান ও হিজবুল্লাহর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, ২০১৭ সালে সৌদি আরব লেবাননের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে কার্যত অপহরণ করেছিল, যা ছিল একটি নজিরবিহীন ঘটনা। তবে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ লেবাননে ইরানের প্রভাব কমে আসার ইঙ্গিত দেয়। নবনির্বাচিত নেতৃত্ব হিজবুল্লাহর পছন্দের ছিলেন না এবং সম্ভবত সৌদি আরব এদের সমর্থন দিয়েছে। এই পরিস্থিতি লেবাননের সাথে সৌদি আরবের নতুন করে সম্পর্ক স্থাপনের সূচনা করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, সৌদি আরব লেবাননের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। লেবানন বর্তমানে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট, বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণ এবং কোভিড-১৯ মহামারী সহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। তাই আঞ্চলিক রাজনীতিতে সৌদি আরবের এই নতুন পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এছাড়াও, লেবাননের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি তার প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরব যাবেন, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। এটি একটি নতুন বন্ধুত্বের সূচনা অথবা নতুন জোট গঠনের মতো ঘটনা হতে পারে।

অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: যদি এই উদ্যোগ সফল হয়, তবে তা লেবাননের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক হবে। গত কয়েক বছরে লেবাননের অর্থনীতি যে গভীর সংকটে পড়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। বিশ্বব্যাংকের (World Bank) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছে যে, লেবাননের অর্থনৈতিক সংকট বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটগুলোর মধ্যে একটি। দেশটিতে মাথাপিছু জিডিপি (GDP) মাত্র কয়েক বছরে প্রায় ৭৫% কমে গেছে, যা সত্যিই বিপর্যয়কর। মুদ্রার মান কমেছে প্রায় ৯৮%। অন্যদিকে, সৌদি আরবের প্রচুর উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে, যা তারা বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ স্থান খুঁজছে। তেলের দাম বাড়ার কারণে সৌদি আরবের অর্থনীতি এখন বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। লেবানন তাদের জন্য একটি চমৎকার বিনিয়োগের ক্ষেত্র হতে পারে। তাই এটি একটি পারস্পরিক উপকারী সম্পর্ক তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (Mohammed bin Salman) এখন বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছেন। কারণ তেলের দাম ব্যারেল প্রতি প্রায় ৮২ ডলারে পৌঁছেছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়াও, গাজায় শান্তিচুক্তির বিষয়ে কিছু ইতিবাচক খবর শোনা যাচ্ছে, যা শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য একটি ভালো সংবাদ। গত বছরের ৭ই অক্টোবর থেকে সবাই বুঝতে পেরেছে যে, সৌদি আরব ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তির অপেক্ষায় আছে। এর পেছনে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক উভয় কারণই রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে দেখলে, এখানে উভয়পক্ষের জন্যই লাভ আছে। সৌদি আরবের হাতে প্রচুর অর্থ রয়েছে এবং তারা পেট্রোলিয়াম নির্ভর অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক উন্নত হলে তাদের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আসবে। এছাড়া, এটি ইরান বিরোধী জোটকে আরও শক্তিশালী করবে। সব মিলিয়ে, মোহাম্মদ বিন সালমান বর্তমানে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন।

শি জিনপিং এর অগ্রগতি: বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি  

শি জিনপিং এর ভাল অবস্থায় থাকার পেছনে কারণগুলো: চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (Xi Jinping) এই সপ্তাহে ভালো অবস্থানে আছেন। এর পেছনে তিনি দুটি প্রধান কারণ রয়েছে।

  • ট্রাম্পের মন্তব্য: চীনের জন্য অপ্রত্যাশিত সুবিধা: প্রথমত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) কিছু মন্তব্য চীনের জন্য অপ্রত্যাশিতভাবে ইতিবাচক হয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডা, গ্রিনল্যান্ড, পানামা এবং সম্ভবত মেক্সিকো আক্রমণের কথা বলেছেন। আমেরিকা ও চীনের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে একটি ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে, তবে ট্রাম্পের এই ধরনের মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে ভালোভাবে গৃহীত হয়নি। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো এর সমালোচনা করেছে, যা চীনের প্রতি ইউরোপের সমর্থন কিছুটা বাড়াতে পারে।
  • বাণিজ্য উদ্বৃত্তের নতুন রেকর্ড: অর্থনৈতিক পরাশক্তি: দ্বিতীয় কারণটি হল, চীনের বাণিজ্য সংক্রান্ত নতুন কিছু ডেটা প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত বছর চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা একটি নতুন রেকর্ড। এমনকি “কাউন্সিল অফ ফরেন রিলেশনস” (Council of Foreign Relations)-এর ব্র্যাড সেটস (Brad Setser) মনে করেন, চীনের প্রকৃত বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে। এর একটি কারণ হতে পারে, অনেক দেশ ট্রাম্পের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় চীন থেকে বেশি বেশি পণ্য আমদানি করছে। তবে এর পুরোটা শুধু নিষেধাজ্ঞার কারণে নয়, চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এখনো অনেক বেশি। এর মানে হল, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ চীনের উপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বজায় থাকাটা ট্রাম্পের জন্য ভালো খবর নয়।

বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পেছনের কারণ: অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও আন্তর্জাতিক বাজার: চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বাড়ার একটি কারণ হল, চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে গেছে। চীনের ব্যবসায়ীরা দেশের ভেতরে ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না, কারণ চীনের অর্থনীতিতে কিছু সমস্যা চলছে। তাই বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কিছুটা হলেও দুর্বল অর্থনীতির লক্ষণ হতে পারে। তবে চীনের রপ্তানি মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাড়ছে, কারণ ঐসব দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বাড়ছে, ফলে চীনা পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। ডলারের দাম বাড়ছে এবং ইউয়ানের দাম কমছে, যা চীনের জন্য রপ্তানি আরও সহজ করে দেবে। সব মিলিয়ে, এখন শি জিনপিংয়ের জন্য সময়টা বেশ ভালো। তবে চীনের অর্থনীতিতে সংকট এবং ট্রাম্পের সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো বিদ্যমান।

ট্রাম্পের প্রভাব এবং চীনের প্রস্তুতি: ট্রাম্পের চীনের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করবেন, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। ট্রাম্পের নীতিগুলো চীনের অর্থনীতিকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দেবে, নাকি চীনের উপর তার কঠোর নীতি কোনো কাজে আসবে না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে চীন সম্ভবত ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া এবং আমেরিকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিল। তাই তারা আগে থেকেই অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করেছে, বিশেষ করে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে তারা বাণিজ্যের জন্য নতুন পার্টনার খুঁজছে। ট্রাম্পের সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের ধাক্কা সামলানোর জন্য চীন এখন বেশ ভালোভাবে প্রস্তুত। তাই ধারণা করা যায়, শি জিনপিং ভালো অবস্থানেই থাকবেন।

নাইজেল ফারাজ: মাস্ক বিতর্ক এবং রাজনৈতিক উত্থান  

নাইজেল ফারাজের ভাল অবস্থানে থাকার কারণ: নাইজেল ফারাজ (Nigel Farage) এই সপ্তাহে ভালো অবস্থানে থাকা আরেকজন উইনার। রিফর্ম ইউকে-র (Reform UK) এই নেতার ভালো অবস্থানে থাকার পেছনে তিনি তিনটি কারণ রয়েছে –

  • ১. মাস্ক বিতর্ক: অপ্রত্যাশিত সুযোগ: প্রথমত, মাস্ক বিতর্কে নাইজেল ফারাজ বেশ ভালোভাবে উতরে গেছেন। গত সপ্তাহে মাস্ককে নিয়ে যুক্তরাজ্যে বেশ আলোচনা হয়েছিল। মাস্ক ফারাজকে বলেছিলেন, তার রিফর্ম ইউকে-র নেতা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ফারাজ এতে খুব একটা বিচলিত হননি, বরং তিনি মাস্কের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। মাস্ক সম্ভবত একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ফারাজের কাছে নতি স্বীকার করেছেন। মাস্ক বিতর্কের সুযোগ নিয়ে ফারাজ টমি রবিনসনের (Tommy Robinson) মতো বিতর্কিত লোকজনের কাছ থেকে নিজেকে আরও দূরে সরিয়ে নিয়েছেন।
  • ২. জনমত জরিপে অগ্রগতি: জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি: দ্বিতীয়ত, ইউগভের (YouGov) নতুন জনমত জরিপে দেখা গেছে, রিফর্ম ইউকে-র সমর্থন ২৫%-এ পৌঁছেছে, যা লেবার পার্টির ২৬% থেকে মাত্র ১% কম। কনজারভেটিভ পার্টি ২২% নিয়ে আরও পিছিয়ে আছে। এই জনমত জরিপ ফারাজের রাজনৈতিক উত্থানের একটি স্পষ্ট চিত্র দেখায়।
  • ৩. স্থানীয় নির্বাচনে মনোযোগ: ভবিষ্যৎ কৌশলের ইঙ্গিত: তৃতীয় কারণটি হল, রিফর্ম ইউকে স্থানীয় কাউন্সিলরদের উপর বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, যা আগামী নির্বাচনে তাদের জন্য খুব ফলপ্রসূ হতে পারে। বর্তমানে তাদের প্রায় ৫০ জন কাউন্সিলর আছেন এবং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কনজারভেটিভ পার্টি এবং অন্যান্য দল থেকে অনেক কাউন্সিলর রিফর্ম ইউকেতে যোগ দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতি ফারাজের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

মাস্ক বিতর্কের প্রভাব এবং রাজনৈতিক কৌশল: ফারাজ সম্পর্কে আলোচনায় আরও উঠে আসে যে, মাস্ক বিতর্কের শুরুতে মনে হয়েছিল, এটা ফারাজের জন্য খারাপ খবর হতে পারে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ফারাজ বেশ ভালোভাবে পরিস্থিতি সামলেছেন। বরং মাস্কের সঙ্গে এই বিতর্কের সুযোগ নিয়ে তিনি টমি রবিনসনের মতো বিতর্কিত লোকজনের কাছ থেকে নিজেকে আরও দূরে সরিয়ে নিলেন। যদিও তিনি মাস্কের কাছ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন, তবে জনমত জরিপের ফল বলছে, ফারাজ এখনো বেশ জনপ্রিয় এবং তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আলোচকগণ মনে করেন, মাস্ক খুব সহজেই তার মত পরিবর্তন করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে ফারাজ সেই অনুদান পেলেও পেতে পারেন। মাস্ক-ফারাজ (Musk-Farage) সম্পর্ক থেকে এটা স্পষ্ট যে, মাস্ক আসলে ফারাজকে যথেষ্ট সম্মান করেন।

কনজারভেটিভ পার্টির দুর্বলতা: ফারাজের জন্য সুযোগ: রিফর্ম ইউকের সমর্থন এখন ২৪% বা ২৫%, আর লেবার পার্টির ২৬%। রিফর্ম ইউকের জনপ্রিয়তা বাড়াটা অবশ্যই কনজারভেটিভদের জন্য খারাপ খবর। তবে এটা লেবার পার্টির জন্যও খুব একটা সুখকর নয়। কারণ রিফর্ম ইউকের উত্থান লেবার পার্টির ভোটব্যাঙ্কে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। যদিও রিফর্ম ইউকের ২৫% বা ২৬% সমর্থন মানে, তারা নির্বাচনে খুব বেশি আসন পাবে, এমনটা নয়। কারণ তাদের সমর্থকরা দেশের নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। তবে খুব শীঘ্রই স্থানীয় নির্বাচন আসছে, যেখানে তাদের প্রকৃত শক্তি পরীক্ষা করা যাবে। ফারাজ টমি রবিনসন থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও, মাস্কের থেকে কিন্তু খুব একটা দূরত্ব রাখেননি। অথচ মাস্ক যুক্তরাজ্যে খুব একটা জনপ্রিয় ব্যক্তি নন। নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই এবং রিফর্ম ইউকের পেছনে এখন অনেক শক্তি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু এই মোমেন্টাম কতদিন ধরে রাখতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে স্থানীয় নির্বাচনে ভালো ফল করলে তাদের মোমেন্টাম আরও বাড়বে এবং জাতীয় নির্বাচনেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কনজারভেটিভ পার্টির দুর্বলতাই এখন ফারাজের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ।

কনজারভেটিভ নেতৃত্বের সংকট এবং ডানপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ: আলোচনায় কনজারভেটিভ পার্টির দুর্বল নেতৃত্ব এবং সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয়। কেমি বাডেনোকের (Kemi Badenoch) নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং রবার্ট জেনরিকের (Robert Jenrick) মতো ডানপন্থী নেতার উত্থানের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলা হয়। তবে ডানদিকে ঝুঁকলে মধ্য-ডানপন্থী দলগুলোর দুর্বল হয়ে পড়ার আন্তর্জাতিক উদাহরণও দেওয়া হয়। ইউরোপের বর্তমান রাজনৈতিক ট্রেন্ড অনুযায়ী, চরম ডানপন্থী দলগুলো নিজেদেরকে আরও বৈধতা দান করার চেষ্টা করছে এবং মূলধারার রাজনীতিতে জায়গা করে নিচ্ছে। ফারাজও অর্থনৈতিক বিষয়ে ডানপন্থী থেকে ধীরে ধীরে বাম দিকে ঝুঁকছেন, এমনকি থেমস ওয়াটারকে (Thames Water) জাতীয়করণ করারও সমর্থন জানিয়েছেন। নাইজেল ফারাজের মতো একজন মানুষের মুখে পুঁজিবাদ-বিরোধী (anti-capitalist) কথা শোনাটা বেশ অদ্ভুত হলেও, এটাই বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা। ফারাজের সাফল্য মূলত তার নীতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার ভাবমূর্তি এবং মানুষের বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। মাস্ক বিতর্কের সময় তিনি যেভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, তা মানুষের মধ্যে তার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়েছে।

অ্যান্টনি অ্যালবানিজ: লুজার হিসেবে গণ্য হওয়ার কারণ  

অ্যান্টনি অ্যালবানিজকে (Anthony Albanese) লুজার হিসেবে দেখা যায়। এর প্রধান কারণ অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন নির্বাচন, যেখানে জনমত জরিপে অ্যালবানিজের দল, লেবার পার্টি , লিবারেল পার্টির থেকে সামান্য পিছিয়ে আছে। যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায় খুব শীঘ্রই নির্বাচন হতে চলেছে, তাই অ্যালবানিজকে লুজার হিসেবেই দেখা যায়।

অবশ্য জনমত জরিপের ফল খুব একটা খারাপ নয়। অস্ট্রেলিয়ার জনমত জরিপের ট্রেন্ড একটু ভিন্ন, যেখানে প্রধান দুই দলের সমর্থন দিন দিন কমছে। অ্যালবানিজের লেবার পার্টি লিবারেল পার্টির (Liberal Party) থেকে সামান্য পিছিয়ে থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা খুব খারাপ ফল নয়। অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি এখনো বেশ ভালো অবস্থানে আছে।

তবে অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মানুষ অর্থনীতি নিয়ে খুব একটা খুশি নয় এবং লেবার পার্টি বিদ্যুৎ বিল কমানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেনি। নির্বাচনের ফল অর্থনীতির উপর অনেকখানি নির্ভরশীল। একটা বিষয় এখানে উল্লেখ্য, তা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সংসদীয় মেয়াদ মাত্র তিন বছর।

পেদ্রো সানচেজ: জনপ্রিয়তা হ্রাস এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ  

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজকে (Pedro Sánchez)  তার লুজার হিসেবে ঘোষণা করা যায়। যদিও সানচেজকে তার বেশ আগ্রহ উদ্দীপক এবং কুল রাজনীতিবিদ মনে হয়, সাম্প্রতিক জনমত জরিপ অনুযায়ী, তার সোশ্যালিস্ট পার্টির সমর্থন কিছুটা কমে গেছে। অন্যদিকে, বিরোধী দল পিপলস পার্টি এখনো জনমত জরিপে প্রথম স্থানে আছে এবং চরম ডানপন্থী দল ভক্সও (Vox) আবার জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে।

সানচেজ সংখ্যালঘু জোট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যাদেরকে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী দল সমর্থন করে। এই দলগুলো সম্প্রতি বেশ সমস্যা করছে, বিশেষ করে বাজেট নিয়ে। গত বছর তারা বাজেট পাশ করতে পারেনি এবং ২০২৩ সালের বাজেট দিয়েই বছর পার করতে হয়েছে। এখনো পর্যন্ত তারা এই বছরের বাজেট পাশ করতে পারেনি এবং ২০২৩ সালের বাজেট-কেই আবার এই বছরে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

জুনটস (Junts)  নামে একটি কাতালান (Catalan) বিচ্ছিন্নতাবাদী দল সংসদীয় ভোটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তারা সানচেজের জন্য বেশ সমস্যা তৈরি করছে। জুনটস মূলত কনজারভেটিভ পার্টি এবং কাতালোনিয়া (Catalonia) ছাড়া অন্য সব বিষয়ে তারা বিরোধী দল-এর সাথে একাত্ম। সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে জুনটস পিপলস পার্টির সাথে জোট করে সরকারি উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। এটা সানচেজের জন্য খারাপ সংকেত, কারণ তাকে যদি অনাস্থা ভোট-এর মাধ্যমে অপসারণ করতে হয়, তাহলে জুনটসের ভোট লাগবে। তাই জুনটস যদি বিরোধী দল-এর সাথে হাত মেলায়, তাহলে সানচেজের জন্য বিপদ ঘণ্টা বাজতে শুরু করবে।

স্পেনের অর্থনীতি গত বছর পশ্চিম ইউরোপের চেয়ে ভালো প্রদর্শন করলেও, মুদ্রাস্ফীতি তুলনামূলকভাবে কম ছিল এবং জিডিপি (GDP) প্রবৃদ্ধি বেশ শক্তিশালী দেখাচ্ছিল। তবে এর বেশিরভাগই জনসংখ্যা চালিত এবং মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি মাঝারি মানের। এছাড়াও, দুর্নীতির কেলেঙ্কারি নিয়েও সানচেজ সরকারের উপর চাপ বাড়ছে, যা তার অবস্থানকে দুর্বল করে তুলেছে।

র‍্যাচেল রিভস: ঋণপত্রের ফলন বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক চাপ  

র‍্যাচেল রিভসকে (Rachel Reeves) এই সপ্তাহের লুজার হিসেবে উল্লেখ করা যায়। ঋণপত্র বা বন্ডের ইল্ড (yield) এর বৃদ্ধি তার জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এর মানে হল উচ্চ ধার নেওয়ার খরচ, যা র‍্যাচেল রিভসের জন্য ভয়ঙ্কর খবর। এর সাথে তার স্ব-আরোপিত আর্থিক নিয়ম এর যোগ রয়েছে। মার্চ মাসে পরবর্তী আর্থিক অনুষ্ঠানে তাকে সম্ভবত কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তার বিকল্প হল মূলত খরচ কমানো অথবা আরও বেশি কর আরোপ করা। তিনি আরও বেশি কর আরোপ করতে চান না এবং খরচ কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা ভোটারদের মধ্যে, বিশেষ করে লেবার ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।

স্টারমারের (Starmer) প্রেস কনফারেন্সে র‍্যাচেল রিভসের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি সরাসরি উত্তর দিতে পারেননি, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। বন্ডের ইল্ড বাড়ছে এবং এর মোকাবেলা করা রিভসের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতি এবং ম্যাক্রো ইকোনমি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান সম্পন্ন টর্স্টেন বেলের (Torsten Bell) মতো প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ লেবার দলে থাকলেও, রিভসের বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের অভ্যন্তরেও তার অবস্থান দুর্বল হতে পারে।

রিভস (Reeves) এবং স্টারমারের (Starmer) জুটি অনেকটা লিজ ট্রাসের (Liz Truss) মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে কিনা, সেটাও একটা প্রশ্ন এখানে।

নিকোলাস মাদুরো: বিতর্কিত নির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক নিন্দা  

ভেনেজুয়েলার নিকোলাস মাদুরোকেও (Nicolás Maduro) লুজার হিসেবে উল্লেখ করা যায়। তার কারণ ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট এবং বিতর্কিত নির্বাচন। মাদুরো সম্প্রতি তৃতীয় মেয়াদের জন্য ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং পরিসংখ্যানবিদরা নিশ্চিত করেছেন যে নির্বাচন কারচুপি করা হয়েছিল।

মাদুরোর প্রতিদ্বন্দ্বী এডমুন্ডো গনজালেজ (Edmundo González) ৬৭% ভোট নিয়ে জিতেছেন, কিন্তু মাদুরোর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। জি-৭ (G7) নেতারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অভাবের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। জানুয়ারীতে, কারচুপি করা নির্বাচন নিয়ে কথা বলার জন্য ৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদুরোর উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA), ইইউ (EU) এবং যুক্তরাজ্য (UK) আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

তবে এই যুক্তির বিপক্ষেও কিছু কথা বলা যায়। মাদুরো দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন এবং বিরোধী দলের নেতা এডমুন্ডো গনজালেজ (Edmundo González) নির্বাসনে আছেন, যা মাদুরোকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছে। মাদুরো অর্থনৈতিক সংকটকে একটি যুদ্ধ হিসেবে দেখাতে পেরেছেন, যা তার বিরুদ্ধে এবং ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু এসব যুক্তির বাইরে, ভেনেজুয়েলার মানুষের জন্য মাদুরোর এই ক্ষমতা ধরে রাখা ভালো কিছু নয়। দক্ষিণ আমেরিকার কিছু বামপন্থী নেতা, যেমন চিলির গ্যাব্রিয়েল বোরিক (Gabriel Boric) এবং কলম্বিয়ার গুস্তাভো পেট্রোও (Gustavo Petro) মাদুরোর নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মাদুরো ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছেন এবং দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন, যা তার দুর্বল অবস্থানের লক্ষণ।

১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • বাইডেনের কিউবা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার: নতুন যুগের ইঙ্গিত
  • দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল গ্রেপ্তার
  • যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি হ্রাস – কিন্তু আরও উদ্বেগ আছে
  • মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে টিকটক নিষেধাজ্ঞা ও “রেডনোট” এর উত্থান

বাইডেনের কিউবা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার: নতুন যুগের ইঙ্গিত

প্রেক্ষাপট: শুধু আর কয়েক দিন পরই প্রেসিডেন্ট বাইডেন হোয়াইট হাউস ছাড়বেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) আবার ক্ষমতায় বসবেন। এই সীমিত সময়ে বাইডেন প্রশাসন (Administration) এক বড় ঘোষণায় বলেছে, কিউবাকে (Cuba) “স্টেট স্পনসর অব টেররিজম” (State Sponsors of Terrorism) তালিকা থেকে সরানো হবে এবং দেশটির ওপর দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) শিথিল করা হবে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার (Normalising relations) দিকে এক বড় পদক্ষেপ। কিউবাকে প্রথম সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হয় ১৯৮২ সালে রোনাল্ড রেইগানের (Ronald Reagan) আমলে, যখন শীতল যুদ্ধ (Cold War) চলছিল। সেই সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন ছিল, সঙ্গে ছিল বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা (Trade embargo)। ২০০০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা (Barack Obama) কিউবাকে এই “সন্ত্রাসী রাষ্ট্র” তালিকা থেকে সরিয়ে দেন। কিন্তু ২০১৭ সালে ট্রাম্প (Trump) ক্ষমতায় এসে আবারও কিউবার প্রতি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। ২০২১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার অল্প আগে তিনি কিউবাকে আবার সন্ত্রাসী তালিকায় স্থান দেন, যুক্তি দেখান—“কিউবা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও ইউএস-এর সুবিচারের পরিপন্থী কাজ সমর্থন করে,” বিশেষ করে ভেনেজুয়েলার (Venezuela) নেতা নিকোলাস মাদুরোর (Nicolas Maduro) সমর্থনে। একই সঙ্গে তিনি আর্থিক নিয়মকানুন (Financial restrictions) আরও কঠোর করেন। কিউবা এটিকে “ছলনাময়, ভণ্ডামিপূর্ণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” বলে আখ্যা দেয়।
নতুন নীতি কেন এবং কী প্রভাব (Why & Impact)

বাইডেনের এই নতুন সিদ্ধান্ত:

  • কিউবাকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সরানো হচ্ছে, তাতে বড় প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের (Major banks and foreign investors) জন্য আইনত বাধা কমবে।
  • আর্থিক সহায়তা ও বাণিজ্যে (Financial assistance and trade) নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলে মানবিক সংগঠন, গির্জা (Church groups), মানবাধিকার সংগঠন (Human rights entities) সহজে কিউবাতে কাজ করতে পারবে।
  • এছাড়া কিউবায় বিপ্লবের সময় (Cuban Revolution) বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি মামলা বন্ধ রাখা হবে, যাতে ঐসব সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব (Property disputes) নিয়ে উত্তেজনা কমে।

কিউবার কর্মকর্তারা এটিকে স্বাগত জানিয়েছে—যদিও বলছে, “এটি সীমিত আকারে সঠিক পদক্ষেপ।” এর জবাবে, কিউবা ৫৫৩ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যাদের মধ্যে ২০২১ সালের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে (Anti-government protests) গ্রেপ্তার হওয়ারা আছেন।

ট্রাম্প আবার আসছেন—এটা কি টিকবে?: ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নিতে যাচ্ছেন; তিনি আগেই কিউবার ওপর কঠোর অবস্থানে ছিলেন। একবার ক্ষমতায় বসলে তিনি নির্বাহী আদেশের (Executive orders) মাধ্যমে সহজেই এই পদক্ষেপগুলোর অনেকটাই বাতিল (Nullify) করতে পারেন।

সূত্র

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল গ্রেপ্তার

ইতিহাসে প্রথমবার (First Sitting President Arrested): দক্ষিণ কোরিয়ায় এক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে—সেদেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল (Yoon Suk Yeol) গ্রেপ্তার হয়েছেন, অভিযোগ হচ্ছে, তিনি ডিসেম্বরের গোড়ায় সামরিক আইন (Martial law) জারি করার চেষ্টা করেছিলেন, যাকে ব্যর্থ সামরিক ক্যু হিসেবে দেখা হচ্ছে। আজ (বুধবার) দীর্ঘ সপ্তাহব্যাপী অচলাবস্থা শেষ হয়—যেখানে ইউনের দেহরক্ষীরা (Security detail) তদন্তকারীদের (Investigators) বাঁধা দেয়। অবশেষে দুর্নীতিবিরোধী তদন্ত সংস্থা (Corruption Investigation Office for high ranking officials – CIO) বারিকেড, কাঁটাতার কেটে ইউনের বাসভবনে ঢুকে তাকে আটক করে। একটি আগেভাগে ধারণকৃত ভিডিওতে ইউন তার গ্রেপ্তারকে “অবৈধ” বললেও “সহিংসতা এড়াতে” (Prevent violence) তিনি সহযোগিতা করবেন বলে জানান।

রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়া (Political Reaction): ইউনের সমর্থকরা বিক্ষোভে নেমেছেন, এই গ্রেপ্তারের নিন্দা করে। এদিকে বিরোধী পক্ষ উল্লাস করছে—যেন এটি “ন্যায়বিচারের জয়” (Victory for justice)। এখন তদন্তকারীদের হাতে ৪৮ ঘণ্টা সময় আছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের (Questioning)। তারপর অতিরিক্ত ওয়ারেন্ট লাগবে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এটা এক গুরুতর রাজনৈতিক সঙ্কটের (Political crisis) শুরু হতে পারে।

সূত্র

https://www.bbc.co.uk/news/articles/cg45zqz225vo

যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি হ্রাস – কিন্তু আরও উদ্বেগ আছে

ডিসেম্বরের ডেটা (December Data): যুক্তরাজ্যে ডিসেম্বরের মূল্যস্ফীতি (Inflation) ২.৫% এ নেমে এসেছে (যা নভেম্বরের ২.৬%-এর চেয়ে সামান্য কম)। অনেকে অবাক হয়েছে, কারণ পূর্বাভাসে এত দ্রুত নিম্নমুখী প্রবণতা আশা করা হয়নি।কিছু উপাদান যা ইনফ্লেশন কমাতে সাহায্য করেছে:

  • রেস্তোরাঁর (Restaurants) খাদ্য মূল্য কমা
  • হোটেলের (Hotels) দাম কমা
  • বিমান ভাড়ার (Airfares) প্রত্যাশার চেয়ে কম বৃদ্ধি

চ্যান্সেলর র‍্যাচেল রিভসের (Rachel Reeves) প্রতিক্রিয়া: এই খবরে বর্তমান চ্যান্সেলর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। হয়তো তিনি আগামী মাসে সুদের হার (Interest rate) কমাতে পারেন বলে গুঞ্জন আছে। তবে সামগ্রিক অর্থনীতির দিকে অন্য উদ্বেগ রয়েই গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সামনের কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি আবার বাড়তে পারে। যুক্তরাজ্যের ঋণ নেওয়ার খরচ (Government borrowing cost) অস্বাভাবিক বেড়েছে, যা “স্ট্যাগফ্লেশন” (Stagflation) এর দিকে ইঙ্গিত করে—যেখানে মন্দার সাথে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকে। চ্যান্সেলরের জন্য বছরটি কঠিন শুরু হয়েছে। তিনি কী পদক্ষেপ নেন অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে, সেটাই দেখার বিষয়।

সূত্র

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে টিকটক নিষেধাজ্ঞা ও “রেডনোট” এর উত্থান

টিকটক নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা (Potential TikTok Ban): নিরাপত্তা শঙ্কার (Security concerns) প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) শীঘ্রই সিদ্ধান্ত দেবে—টিকটককে সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা। আইন অনুযায়ী, যদি টিকটক (TikTok) নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে না পারে (যেমন বিক্রি করা বা নিবিড় নজরদারি), মার্চের মধ্যে অ্যাপ স্টোরগুলো থেকে টিকটক মুছে যেতে পারে।

বিকল্প অ্যাপ: রেডনোট (RedNote): বাইটড্যান্স (ByteDance)—টিকটকের মূল কোম্পানি—আরেকটি অ্যাপ “রেডনোট” (RedNote) চালায়, যেটি টিকটকের মতোই ছোট ভিডিও শেয়ারিং, কিন্তু “আরও কঠোর সেন্সরশিপ”। অনেক ক্রিয়েটর (Content creators) সম্ভাব্য টিকটক নিষেধাজ্ঞার ভয়ে রেডনোটে চলে যাচ্ছেন, যদিও রেডনোটে চীনা সাইবারসিকিউরিটি আইন (Chinese cybersecurity law) নিয়ে সমালোচনা বা শিনজিয়াং (Xinjiang) মানবাধিকার (Human rights) বিষয়ে সমালোচনা বরদাস্ত হয় না—নানা বিষয় সেন্সর করা হয়। একটি ফাঁস হওয়া (Leaked) নথিতে ইঙ্গিত আছে যে, রেডনোটে যেকোনো “বিতর্কিত বা অস্থিতিশীল বিষয়” সেন্সর করা হয়। তা সত্ত্বেও, রেডনোট শনিবার অ্যাপলের (Apple’s) ইউএস অ্যাপ স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড (Most downloaded app) হয়েছে, আর সম্ভাবনা আছে পুরা সপ্তাহ ধরেই থাকবে।

সূত্র

১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির চূড়ান্ত আলোচনা
  • টিকটকের ভবিষ্যৎ: ইলন মাস্কের সম্ভাব্য কেনার পরিকল্পনা
  • ইউরোপীয় ইউনিয়নে টেক জায়ান্টদের তদন্ত পুনর্বিবেচনা
  • মার্কিন বিচার বিভাগের ঘোষণা: ট্রাম্প ও ২০২০ সালের নির্বাচন

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির চূড়ান্ত আলোচনা

আলোচনার সূচনা ও প্রেক্ষাপট: মঙ্গলবার কাতারে গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি চূড়ান্ত বৈঠক শুরু হয়েছে বলে এক সূত্রে জানা গেছে, যে সূত্রটি এএফপি (AFP) সংবাদ সংস্থাকে বিষয়টি অবহিত করেছে। সূত্রটি জানায়, এই আলোচনার উদ্দেশ্য হলো গাজায় (Gaza) প্রায় ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে একটি চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করা। আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন ইসরায়েলের (Israel) বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা, বাইডেন (Joe Biden) ও ট্রাম্প (Donald Trump) উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূতরা (envoys) এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী। আলাদা বৈঠক হবে হামাসের (Hamas) সঙ্গেও। গাজায় এই দীর্ঘ সংঘাতের অবসান ঘটাতে অতীতে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো স্পষ্ট শর্ত নিয়ে মতবিরোধ বা অংশগ্রহণকারীদের অনুপস্থিতি ইত্যাদি কারণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দোষ দিয়েছে আলোচনাকে ব্যাহত করার জন্য। তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের আশা কিছুটা বেশি। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুজনেই ২০ জানুয়ারির মধ্যে কোনো একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (National Security Advisor) জেইক সুলিভান (Jake Sullivan) বলেন, “আমি কোনো নিশ্চয়তা বা পূর্বাভাস দিচ্ছি না। কিন্তু এটা এখনই সম্ভব, এবং আমরা এটি বাস্তবায়িত করতে কাজ করে যাব।” সেই একই দিনে ট্রাম্পও আশা প্রকাশ করেন যে সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া যেতে পারে।

প্রস্তাবিত তিন পর্বের চুক্তির খসড়া: এবারের আলোচনা মূলত তিন পর্যায়ের (three-phase proposal) একটি পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে এগোচ্ছে, যা ২০২৪ সালের মে মাসে মিশর (Egypt) ও কাতারের সাহায্যে খসড়া আকারে তৈরি করা হয়েছিল। হামাস এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বাইডেন প্রশাসন এটিকে পেশ করেছে। তবে ইসরায়েলের উগ্রপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী (National Security Minister) ইতমার বেন গাভির (Itmar Ben Gvir) এই চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করছেন। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে গত এক বছরে বেশ কয়েকবার এই উদ্যোগ ব্যর্থ করার চেষ্টা করেছেন। তাছাড়া অর্থমন্ত্রী (finance minister) বেজালেল স্মোটরিচ (Bezalel Smotrich) এবং বেন গাভির উভয়েই হুমকি দিয়েছেন যে, যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর হলে তারা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর (Benjamin Netanyahu) সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন। চুক্তির খসড়াটির মূল বিষয়বস্তু হলো—

  1. প্রথম পর্ব (First Phase):
    • ছয় সপ্তাহ বা প্রায় ৪২ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি।
    • হামাসের হাতে আটক ৩৪ জন জীবিত বন্দির (hostages) মুক্তি। বন্দিদের মধ্যে রয়েছেন নারী, শিশু, আহত ও প্রবীণ ব্যক্তিরা।
    • বিনিময়ে ইসরায়েলের জেলে থাকা কয়েকশো ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
    • ইসরায়েল গাজায় যথেষ্ট পরিমাণে সাহায্যসামগ্রী (aid) ঢুকতে দেবে। বাস্তুচ্যুত (displaced) ফিলিস্তিনিদের ঘরে ফিরতে অনুমতি দেবে। পাশাপাশি গাজা অঞ্চল থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার (phased withdrawal) শুরু করবে।
  2. দ্বিতীয় পর্ব (Second Phase):
    • হামাসের কাছে আটক বাকি পুরুষ ইসরায়েলি নাগরিক ও সৈন্যদের (soldiers) মুক্তি।
    • ইসরায়েল আরও কয়েকশো ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে।
    • ইসরায়েল গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে।
  3. তৃতীয় পর্ব (Third Phase):
    • নিহত ইসরায়েলি বন্দিদের দেহাবশেষ (dead Israeli captives) ফেরত দেওয়া হবে, যার বিনিময়ে নিহত ফিলিস্তিনিদের দেহাবশেষ ফেরত পাবে ফিলিস্তিনি পক্ষ।
    • ইসরায়েল গাজা উপত্যকার অবরোধ (blockade) প্রত্যাহার করবে।
    • হামাস তাদের সামরিক সক্ষমতা (military capabilities) পুনর্গঠনের চেষ্টা করবে না।

সম্ভাব্য সাফল্য ও জটিলতা: যদিও এখনো নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই যে আলোচনা সফল হবে কি না, দুই পক্ষের মধ্যেই ক্লান্তি (fatigue) দেখা যাচ্ছে। এক বছর ধরে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ইসরায়েলি নাগরিক যুদ্ধের অবসান চান। এমনকি প্রায় ২০০ জন আইডিএফ (IDF) সৈন্য একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, যদি যুদ্ধবিরতি (truce) চুক্তি না হয় তবে তারা আর যুদ্ধে অংশ নিতে ইচ্ছুক নন।এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক চাপ ও জনমত, দুই-ই চুক্তিকে ত্বরান্বিত করতে পারে। অন্যদিকে ইসরায়েলের সরকারের ভেতরকার মতানৈক্য, হামাসের শর্ত এবং বাইরের মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা—সবকিছুই চূড়ান্ত ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।

সূত্র

https://www.telegraph.co.uk/world-news/2025/01/14/israel-hamas-gaza-war-ceasefire-latest-news/
https://www.france24.com/en/live-news/20250114-gaza-talks-enter-final-round-in-qatar-source-briefed-on-negotiations
https://www.bbc.co.uk/news/articles/cd0jgnvkdyno
https://apnews.com/article/soldiers-israel-gaza-hostages-717c44de6c13e2b3af2e8b7fb77ebb16

টিকটকের ভবিষ্যৎ: ইলন মাস্কের সম্ভাব্য কেনার পরিকল্পনা

ইলন মাস্ক হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের (TikTok) কার্যক্রম কিনে নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী—এমন খবর ছড়িয়েছে কিছু সংবাদমাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে এমন একটি আইন রয়েছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ (national security concerns) মেটাতে টিকটককে তাদের মার্কিন কার্যক্রম বিক্রি করতে নির্দেশ দেয়। এই শর্ত মানা না হলে, মার্কিন অ্যাপ স্টোরগুলো (US App stores) থেকে টিকটক ব্লক হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অচিরেই সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) এ বিষয়ে রায় দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাইটড্যান্স (ByteDance), টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান, শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলে আসছে যে, “টিকটক বিক্রির জন্য নয়।” তবে ব্লুমবার্গ (Bloomberg)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষ একটি পরিকল্পনার কথা ভেবেছে, যেখানে ইলন মাস্ক টিকটকের মার্কিন কার্যক্রমের দায়িত্ব নেবেন। এর ফলে জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ মিটবে, আবার বাইটড্যান্স অন্য দেশে টিকটক পরিচালনার অধিকার ধরে রাখতে পারবে।

এই প্রস্তাব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বাইটড্যান্স জানায়, “আমাদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ কাল্পনিক (pure fiction) বিষয়ে কোনো মন্তব্য আশা করা উচিত নয়।” অন্যদিকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ করেছেন, যেন রায়ের বিষয়টি কিছুটা দেরি করে ঘোষণা করা হয়। তার যুক্তি, আইনি সমাধানের বদলে তিনি রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে চান।

সূত্র

https://www.telegraph.co.uk/us/news/2025/01/14/tiktok-report-possible-sale-elon-musk-pure-fiction/
https://www.bbc.co.uk/news/articles/cpqld79pxeqo

ইউরোপীয় ইউনিয়নে টেক জায়ান্টদের তদন্ত পুনর্বিবেচনা

ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাপল (Apple), গুগল (Google), মেটা (Meta) সহ নানা বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চলমান তদন্তগুলো পুনর্বিবেচনা করতে যাচ্ছে বলে ফাইন্যানশিয়াল টাইমস (Financial Times, FT) জানিয়েছে। এটি এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন এসব মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নতুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে যে, তারা যেন ইইউ-এর নানা নিয়ম-নিয়ন্ত্রণ (regulation) ও প্রয়োগমূলক ব্যবস্থা (enforcement) মোকাবেলায় হস্তক্ষেপ করে।

ফাইন্যানশিয়াল টাইমসকে একজন উচ্চপদস্থ ইইউ কূটনীতিক বলেছেন, “এই টেক অলিগার্করা (tech oligarchs) ট্রাম্পের এত ঘনিষ্ঠ যে নতুন করে আমাদের জন্য যেন একেবারেই নতুন খেলা (whole new ball game) শুরু হয়েছে। তারা আমাদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, সবকিছুই এখন অনিশ্চিত।”

জানা গেছে, ইইউ-এর ডিজিটাল মার্কেটস রেগুলেশন (Digital Markets Regulations) ২০২৪ সালের মার্চ থেকে যেসব মামলায় প্রয়োগ করা শুরু হয়েছিল, সেই সবগুলো মামলা এখন পর্যালোচনায় রাখা হয়েছে। যতদিন পর্যালোচনা চলবে, তদন্তের সিদ্ধান্ত ও সম্ভাব্য জরিমানা (fines) স্থগিত থাকবে।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি তদন্ত বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে গুগলের বিরুদ্ধে তাদের নিজস্ব অ্যাপ স্টোরের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিযোগীতা-বিরোধী পদক্ষেপ (anti-competitive favouring) নেওয়ার অভিযোগে একটি অগ্রসর পর্যায়ের তদন্ত চলছে। ইইউ-এর আইনপ্রণেতারা (lawmakers) ইউরোপীয় কমিশনকে (European Commission) অনুরোধ করছেন যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও শক্ত অবস্থান ধরে রাখে।

ফাইন্যানশিয়াল টাইমস আরও জানায়, এই চাপ আসছে মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ (Mark Zuckerberg) সহ আরও অনেকের তরফে। তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছেন যেন ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর বিশাল অঙ্কের জরিমানা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়। জাকারবার্গের বক্তব্য, ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো গত কয়েক বছরে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি জরিমানা আরোপ করেছে।

সূত্র

https://www.ft.com/content/2c1b6bfd-ce73-451d-8123-0df964266ae8

মার্কিন বিচার বিভাগের ঘোষণা: ট্রাম্প ও ২০২০ সালের নির্বাচন

মূল বক্তব্য: যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (Department of Justice) জানিয়েছে, সামনের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার যে অবৈধ চেষ্টা করেছিলেন, তাতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হতেন যদি গত বছরের নির্বাচনে তিনি পুনরায় না জিততেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলেও পরবর্তীতে ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। বিচার বিভাগের মতে, হারানো নির্বাচনের ফল বদলে দিতে তিনি স্থানীয় নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চাপ দিয়েছিলেন, মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়েছিলেন যে ভোট জালিয়াতি (election fraud) হয়েছে, এমনকি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির (January 6) ক্যাপিটল রায়টকে (riot) রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন।

মামলার পটভূমি: এই মামলায় স্পেশাল কাউন্সেল (special counsel) জ্যাক স্মিথ (Jack Smith) দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছিল যে ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে অসত্য তথ্য প্রচার করেছেন। অভিযোগ ছিল—

  1. তিনি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভোটের ফলাফল পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন।
  2. তিনি ৬ জানুয়ারির ঘটনাকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছিলেন, যেখানে বিক্ষোভ ও হাঙ্গামাকে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেসের সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করা যায় কি না, তা পরখ করেছিলেন।

ট্রাম্প বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। তিনি স্পেশাল কাউন্সেল স্মিথকে “পাগল” (deranged) বলে আখ্যায়িত করেন এবং তার অনুসন্ধানকে ভুয়া (fake) বলে উল্লেখ করেন। জ্যাক স্মিথ অবশ্য প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলেন যে, তিনি মামলার আইনগত ভিত্তি (merits of the prosecution) ও প্রমাণের যথেষ্টতা (strength of the case) নিয়ে সম্পূর্ণ আশাবাদী। তবে একমাত্র কারণ যে মামলা বন্ধ হয়ে গেছে, তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান (US Constitution) অনুযায়ী একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের (sitting president) বিরুদ্ধে একই সঙ্গে ফেডারেল অপরাধের বিচার চলানো যায় না।

সংবিধানগত সীমাবদ্ধতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: মার্কিন সংবিধানের অধীনে একজন বৈধভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে প্রেসিডেন্টের মেয়াদকালে কোনো ক্রিমিনাল মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা যায় না—এমন একটি মতবাদ (doctrine) দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। এই মতবাদের ভিত্তিতেই বর্তমান প্রশাসন বলছে যে, ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় মামলার কার্যক্রম থেমে গেছে। অবশ্য বিরোধীরা বলছেন, এটি আইনের স্পষ্ট ফাঁক (loophole) যা ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের বেআইনি কর্মের জন্য দায়মুক্তি দিতে পারে। অন্যদিকে ট্রাম্প ও তার সমর্থকেরা এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নাকচ করে দিচ্ছেন।

সূত্র

https://www.bbc.co.uk/news/articles/cpqld79pxeqo
https://www.ft.com/content/c381fbfa-8e10-4edf-88c7-783152e8c2c0

১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রাশিয়ান তেলে সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা
  • ইউক্রেনের দাবি: রাশিয়ায় দুইজন উত্তর কোরিয়ান সৈন্য আটক
  • ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট মাদুরোর তৃতীয় মেয়াদ
  • ক্রোয়েশিয়ায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত

বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেনের রাশিয়ান তেলে সবচেয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা

পটভূমি (Background): মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden)-এর মেয়াদ আর কয়েকদিনেই শেষ, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) শপথ নিতে যাচ্ছেন। এই সীমিত সময়েই হোয়াইট হাউস (White House) শুক্রবার এক ব্যাপক ঘোষণা দেয়—রাশিয়ার তেল বাণিজ্যের (Russian oil trade) ওপর এ যাবৎকালের সবচেয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা (Toughest sanctions) আরোপ করছে। লক্ষ্য হলো রাশিয়ার শক্তি (Energy) রাজস্বকে বড় আঘাত করা, যা প্রায় তিন বছর ধরে ইউক্রেনের (Ukraine) বিরুদ্ধে যুদ্ধের (War) মূল অর্থের জোগান দিচ্ছে।

কী নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলো? (Nature of the Sanctions): 

  • এই নিষেধাজ্ঞায় প্রায় ২০০টি প্রতিষ্ঠানের (Entities) ও ব্যক্তির (Individuals) নাম অন্তর্ভুক্ত: তেল ব্যবসায়ী (Traders) ও কর্মকর্তা, বিমা কোম্পানি (Insurance companies), অসংখ্য তেল ট্যাংকার (Oil tankers)।
  • গ্যাজপ্রম নেইফট (Gazprom Neft) ও সুরগুটনেফতেগাজ (Surgut Neftegas)—দুটি বড় রাশিয়ান তেল কোম্পানিকেও টার্গেট করা হয়েছে।

আগের নিষেধাজ্ঞায় কী ব্যর্থতা? (Previous Sanctions & Why They Fell Short): পশ্চিমা দেশগুলো (Western sanctions) আগে থেকে রাশিয়ান তেলের ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, কিন্তু সেগুলো স্পষ্টতই রাশিয়ার আয় (Revenue) কমাতে তেমন কার্যকর হয়নি। কেন?

  1. আংশিক ছাড় (Partial exemptions): কিছু ইউরোপীয় দেশ রাশিয়ান গ্যাস ও তেল আমদানিতে কিছুটা ছাড় (Exemptions) পেয়েছে।
  2. ফাঁকফোকর (Loopholes): রাশিয়ান তেল সরাসরি আমদানি করা নিষিদ্ধ হলেও “অন্যান্য পণ্য” বা তেল পরিশোধের পর নতুন নামের পেট্রোলিয়াম পণ্য কিনতে নিষেধাজ্ঞা ছিল না।
  3. নতুন ক্রেতা খোঁজা (Finding New Buyers): ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার পর রাশিয়া দ্রুত এশিয়ায় (Asia) নিজের তেল রপ্তানি ঘুরিয়ে নিতে পেরেছে।
  4. মূল্যসীমা (Price Cap): পশ্চিমারা রাশিয়ান তেলের দাম নির্দিষ্ট মাত্রায় সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করলেও (Price cap), তেল সরবরাহ হ্রাস পেলে গ্লোবাল মার্কেটে দাম বেড়ে অর্থনৈতিক সংকট আসতে পারে—এই ভয়ে সরাসরি নিষিদ্ধ (Ban) করেনি।

এখন নতুন কী ঘটছে?: মার্কিন বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিজের তেল উৎপাদন (Oil production) রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাই রাশিয়ান তেলের সরবরাহ বন্ধেও বৈশ্বিক বাজারে বিশাল চাপ পড়বে না। ফলে ওয়াশিংটন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপে “সাহসী” হয়েছে।

  • এর ফলে কারা রাশিয়ান তেল কিনতে পারবে, তা অনেকাংশে সীমিত করে দেওয়া হবে।
  • যদি ট্রাম্প (Trump) ক্ষমতায় এসে এ নিষেধাজ্ঞাগুলো অব্যাহত রাখেন, তবে রাশিয়ার রপ্তানি (Exports) সত্যিকারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে—যা আগের কোনও নিষেধাজ্ঞায় হয়নি।

আরও পড়ুন –

সূত্র

https://www.bloomberg.com/news/articles/2025-01-10/why-biden-s-farewell-sanctions-on-russian-oil-are-a-big-deal
https://www.aljazeera.com/news/2025/1/10/us-targets-russias-oil-sector-with-sweeping-sanctions

ইউক্রেনের দাবি: রাশিয়ায় দুইজন উত্তর কোরিয়ান সৈন্য আটক

গ্রেফতারের ঘটনা (The Capture Incident): ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy) জানিয়েছেন, তারা রাশিয়ার কুর্স্ক (Kursk) অঞ্চলে সংঘর্ষ চলাকালীন দুইজন উত্তর কোরিয়ান (North Korean) সৈন্য বন্দি করেছে। জেলেনস্কি বলছেন, এরা স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে “রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সামরিক সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।” জেলেনস্কি আরও প্রস্তাব করেছেন, যে কোনো দেশ ও সংস্থা যদি আলোচনার মাধ্যমে এই দুইজনকে ফিরিয়ে নিতে চায়, ইউক্রেন উত্তর কোরিয়ান সেনাদের পরিবর্তে রাশিয়ায় আটক ইউক্রেনীয় বন্দিদের (Ukrainian prisoners of war) ফেরত চাইবে। যেসব উত্তর কোরিয়ান সৈন্য “ফিরতে না চায়,” তাদের “সত্য প্রকাশে” (Spreading the truth about this war in Korean) একটি সুযোগ দেওয়া হবে।

এই সৈন্যদের অবস্থা (Their Status):

  • ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা (Security service) বলছে, দুইজনই এখন কিয়েভে (Kyiv) চিকিৎসাধীন (Medical care) এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
  • সাউথ কোরিয়ার (South Korea) গোয়েন্দা বিভাগের সাহায্য লাগছে, কারণ তারা কেবল কোরিয়ান ভাষা (Korean) বোঝে।
  • একজনের জন্ম ২০০৫ সাল এবং অন্যজন ২০০৩ সাল বলে জানা গেছে; তাদের মধ্যে একজন বলছেন, তারা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নয়, “প্রশিক্ষণের” (Training) জন্য রাশিয়ায় এসেছিলেন।
  • একজনের কাছে পাওয়া রুশ সামরিক পরিচয়পত্র (Russian military ID) অন্য কারো নামে, আরেকজনের কাছে কোনও পরিচয়পত্রই নেই।

সূত্র

https://www.theguardian.com/world/2025/jan/12/ukraines-capture-of-north-koreans-offers-rare-insight-into-russian-alliance-says-zelenskyy
https://www.bbc.co.uk/news/articles/cn57z316y02o

ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট মাদুরোর তৃতীয় মেয়াদ

আন্তর্জাতিক আপত্তি সত্ত্বেও শপথ (Inauguration Despite Fraud Allegations): সপ্তাহান্তে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো (Nicolas Maduro) তৃতীয় মেয়াদের (Third six-year term) জন্য শপথ নিয়েছেন, যদিও আন্তর্জাতিক মহলে নির্বাচন জালিয়াতির অভিযোগ (Election fraud) ছড়িয়ে আছে। দেশটির সংসদ ভবনে (Legislative palace) শপথ নিলে দেশীয় অন্দরে প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক নতুন নিষেধাজ্ঞার (Sanctions) সূত্রপাত হয়। জি৭ (G7) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা (Foreign ministers) এক বিবৃতিতে জানান, “মাদুরোর এই শপথ গণতান্ত্রিকভাবে বৈধ নয়; আমরা তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করাকে (Repressive grasp of power) নিন্দা করি।”

ভেনেজুয়েলার নির্বাচনের বিতর্ক (Electoral Controversy)

  • ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সরকারীভাবে মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করে ন্যাশনাল ইলেক্টোরাল কাউন্সিল (National Electoral Council)।
  • বিরোধী প্রার্থী এডমুন্ডো গঞ্জালেস (Edmundo Gonzalez) পাল্টা ডেটা প্রকাশ করে বলে, স্বেচ্ছাসেবকদের (Volunteers) সংগৃহীত ৮০% ভোটকেন্দ্রের ফলাফলে দেখা গেছে গঞ্জালেসের ৬৭% ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা।
  • যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ আরও বেশ কয়েকটি দেশ “গণতন্ত্র বিনষ্ট” ও “আইনের শাসন লঙ্ঘন” অভিযুক্ত করে ভেনেজুয়েলার অনেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) আরোপ করেছে।
  • সর্বশেষ, ইইউ আরও ১৫ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে—এতে মোট ৬৯ জন তালিকায়। যুক্তরাজ্যও ১৫ জনের ওপর।

মাদুরো সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এইসব নিষেধাজ্ঞা হলো আমাদের অর্থনীতিকে পঙ্গু (Cripple) করার পশ্চিমা যুদ্ধের অংশ।”

সূত্র

https://www.independent.co.uk/news/nicolas-maduro-ap-venezuela-dominican-republic-colombia-b2677347.html
https://www.gov.uk/government/news/g7-denounces-the-lack-of-democratic-legitimacy-of-todays-presidential-inauguration-in-venezuela
https://www.reuters.com/world/uk/britain-sanctions-15-venezuelan-individuals-linked-maduro-government-2025-01-10/
https://www.reuters.com/world/europe/eu-countries-broaden-sanctions-against-venezuela-2025-01-10/

ক্রোয়েশিয়ায় বর্তমান প্রেসিডেন্ট পুনঃনির্বাচিত

নির্বাচন ফলাফল (Election Results): সপ্তাহান্তে (শনিবার/রবিবার) ক্রোয়েশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জোরা মিলানোভিচ (Zora Milanovic) নামে একজন বামপন্থী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (Social Democrats)-এর নেতা ও ন্যাটোর সমালোচক (Critic of NATO)—বড় জয় পেয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় (Runoff round) তিনি দেশের সব কাউন্টিতে জয়ী হয়েছেন, জাগরেব (Zagreb) সহ, ৭৪%-এর বেশি ভোট। এইচডেজেড (HDZ) নামে মধ্য-ডানপন্থী দল, যা প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই প্লেনোভিচ (Andrej Plenovic) এর নেতৃত্বে আছে, তাদের প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন। এই HDZ ১৯৯১ সাল থেকে ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতিতে প্রধান শক্তি, কিন্তু বিশাল দুর্নীতির (Corruption) অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধীদের স্যাটায়ার ও সমালোচনার মুখে।

প্লেনোভিচ সরকারের অবনতি (Plenovic Government Under Pressure):

  • প্লেনোভিচ আগেই আগাম সংসদ নির্বাচন (Early parliamentary election) ডেকেছিলেন, সরকারী কৌঁসুলির (Attorney General) ঘুষ কেলেঙ্কারি (Corruption scandal) ও তারপরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ (Protests) সামাল দিতে।
  • প্রেসিডেন্ট মিলানোভিচ, যা ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত, নিজেই প্লেনোভিচকে ক্ষমতা থেকে সরাতে “প্রধানমন্ত্রিত্ব” (Premiership) দাবি করেছিলেন; তবে সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত HDZ সামান্য ব্যবধানে জয় পায়, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি (Falling short of a majority)।
  • নভেম্বরের এক কেলেঙ্কারিতে (Corruption case) সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জড়িত থাকায় HDZ আরও দুর্বল হয়। পাশাপাশি ইউরোপীয় পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিসের (European Public Prosecutor’s Office) সাথে বিবাদ বাধে, কেননা তারা সিস্টেমিক দুর্নীতির (Systemic graft) তদন্তে বাধা পাচ্ছিলো।

অর্থনৈতিক সমস্যাও যোগ হচ্ছে (Economic Struggles): ক্রোয়েশিয়া এখন বড় ধরনের শ্রমিক সংকটে (Labour shortage) ভুগছে, ইউরোজোনে (Eurozone) সবচেয়ে উচ্চ হারে মূল্যস্ফীতি (Inflation) দেখা গেছে গত নভেম্বরে। এতে HDZ জনপ্রিয়তা আরও হারাচ্ছে।

মিলানোভিচের বড় জয় প্রসঙ্গে (Milanovic’s Victory):

  • এসডিপি (SDP) নেতা বলেছেন, “এটি অ্যান্ড্রেই প্লেনোভিচের পতনের শুরু,” ইঙ্গিত করে যে সংসদীয় ক্ষমতার পালাবদলও ঘটতে পারে।
  • প্লেনোভিচ নাকি মিলানোভিচকে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা (Congratulations) জানাতে অস্বীকার করেছেন।

সূত্র

https://www.politico.eu/article/populist-incumbent-croatia-president-zoran-milanovic-hdz-party/
https://n1info.hr/english/news/excitement-in-milanovics-headquarters-i-hope-this-is-the-beginning-of-the-end-for-the-hdz/

১০ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • যুক্তরাজ্য-চীন সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন
  • যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে আইসিসি সংক্রান্ত বিল
  • ২০২৪ সাল: ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর
  • ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাবনা

যুক্তরাজ্য-চীন সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন

র‍্যাচেল রিভসের বেইজিং সফর (Chancellor Reeves’ Trip to Beijing): বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ব্রিটেনের চ্যান্সেলর (Chancellor) র‍্যাচেল রিভস (Rachel Reeves) চীনে গেছেন চীনা কর্মকর্তাদের (Chinese officials) সাথে “লো-কি” বা স্বল্পপ্রচারিত বৈঠকে অংশ নিতে। এই সফরের লক্ষ্য: চীনের সাথে সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের (UK) কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে।

রিভসের পরিকল্পনা:

  • তিনি চীনের অর্থমন্ত্রী “হে লি ফেং” (He Li Feng)-এর সঙ্গে বসবেন।
  • সেখানে সম্ভাব্য ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাতে (Financial cooperation) অধিকতর সহযোগিতা নিয়ে কথা বলবেন।

সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে গেছেন ১০ জন ব্যবসায়িক নির্বাহী (Business executives)—এদের মধ্যে আছেন এইচএসবিসি (HSBC)-এর চেয়ার মার্ক টাকার (Mark Tucker), ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের (Bank of England) গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি (Andrew Bailey), ফিনান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি (Financial Conduct Authority – FCA)-এর প্রধান নির্বাহী নিখিল রাঠি (Nikhil Rati) প্রমুখ।

কিছু খসড়া প্রস্তাব: দ্বিপাক্ষিক সংলাপ (Bilateral dialogue) চালু করা, যাতে পুঁজিবাজার (Capital markets) ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণ (Financial regulation) নিয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তোলা যায়।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা (Domestic & International Reactions)

  1. বিরোধী দল (Opposition Parties):
    • ব্রিটেনের কনসারভেটিভ (Conservatives) ও লিবডেম (Liberal Democrats) উভয়েই রিভসের চীন সফরের সমালোচনা করেছে।
    • তাদের বক্তব্য, “যুক্তরাজ্যের আসন্ন অর্থনৈতিক সংকট” যখন তুঙ্গে, তখন চ্যান্সেলরের দেশে থেকে সমাধান খোঁজার দরকার, বিদেশ সফর নয়।
  2. যুক্তরাষ্ট্রের (US) সম্ভাব্য অসন্তোষ:
    • ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি শপথ নিতে যাচ্ছেন (২০২৫ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে), চীনের বিরুদ্ধে বড় শুল্ক (Tariffs) আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
    • যুক্তরাজ্য যদি চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়, সেটা ট্রাম্প প্রশাসনের “চীনবিরোধী বাণিজ্যযুদ্ধ”–এর পরিকল্পনার বিপরীত হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের আর্থিক চ্যালেঞ্জ (UK’s Economic Woes):

  • সরকারী ঋণগ্রহণের খরচ (Government borrowing costs) ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
  • পাউন্ডের (Pound) মানও এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে নিচে।

রিভস চায়, চীনের বাজার বা চীনের সাথে আর্থিক সংযোগ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে কিছুটা গতি দেবে। তবে আমেরিকা থেকে শুল্কের চাপ এলে যুক্তরাজ্য চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে কীভাবে সেই দ্বন্দ্ব সামলাবে, সেটাই প্রশ্ন।

আরও পড়ুন –

ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক ও যুক্তরাজ্যের যুক্তরাষ্ট্র বনাম ইইউ দোটানা (২৪ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

https://www.politico.eu/article/britain-chancellor-rachel-reeves-china-trip-economy-donald-trump/
https://www.bbc.co.uk/news/articles/c5y7kr5p4lko
https://www.bloomberg.com/news/articles/2025-01-09/reeves-bids-to-deepen-china-ties-after-week-of-uk-market-turmoil?embedded-checkout=true

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে আইসিসি সংক্রান্ত বিল

কী বিল পাস হয়েছে?: মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ এক আইন পাস করেছে, যার ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (International Criminal Court – ICC) লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) আরোপ করা যাবে। কারণ আইসিসি ইসরায়েলের (Israel) প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) ও তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা (Arrest warrants) জারি করেছে। এই বিলে প্রেসিডেন্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,

  • যে কোনো ব্যক্তি (বিদেশি নাগরিক) যারা আইসিসির তদন্ত বা গ্রেফতারের সাথে আর্থিক বা পদক্ষেপে সহায়তা করে, তাদের সম্পদ আটকে (Freeze property assets) ও আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ (Deny visas) করা যাবে।
  • “প্রটেক্টেড পারসন” (Protected person) হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র (যেমন ইসরায়েল) সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা ও সামরিক ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে—যারা আইসিসির সদস্য নয়।

ভোটের ফলাফল ও পটভূমি (Voting & Context):

  • আইনটির নাম “ইলেজিটিমেট কোর্ট কাউন্টারঅ্যাকশন অ্যাক্ট” (Illegitimate Court Counteraction Act)।
  • রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ (Republican-controlled House) ২৪৩-১৪০ ভোটে এটি পাস করে। ৪৫ জন ডেমোক্র্যাট পক্ষে ভোট দিয়েছেন, কোনো রিপাবলিকান বিপক্ষে যাননি।
  • গত বছর ডেমোক্র্যাটিক-নিয়ন্ত্রিত সেনেটে (Democratic-controlled Senate) ব্যর্থ হয়েছিল, তবে এখন সেনেটেও রিপাবলিকানরা নিয়ন্ত্রণে, তাই এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এবং পরিশেষে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের (President Donald Trump) ডেক্সে স্বাক্ষরের জন্য যাবে।

বিধানটির যুক্তি ও প্রেক্ষাপট (Justification & Background): আইনের প্রণেতা টেক্সাসের রিপাবলিকান প্রতিনিধি চিপ রয় (Chip Roy) বলেন, “আমাদের মিত্র ইসরায়েল ও আমাদের নিজের জাতীয় নিরাপত্তার সুরক্ষায় এটি জরুরি,” কারণ আইসিসি হয়ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর (US service members) বিরুদ্ধেও মামলা করতে পারত। প্রসঙ্গত, আইসিসি নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে গাজা যুদ্ধে (War in Gaza) “জনগণকে অনাহারে রাখা (Starvation as a method of warfare), হত্যা (Murder), নির্যাতন (Persecution), ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা”—এসব অপরাধে অভিযুক্ত করেছে।

সূত্র

https://www.reuters.com/world/us-house-votes-sanction-international-criminal-court-over-israel-2025-01-09/
https://www.nytimes.com/2025/01/09/us/politics/icc-sanctions-house-israel.html

২০২৪ সাল: ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর

Copernicus Climate Change Service (C3S)-এর প্রতিবেদন (C3S Report): ইইউ-র কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (Copernicus Climate Change Service – C3S) নিশ্চিত করেছে, ২০২৪ সাল— টানা দ্বিতীয় বছরের মতো—অতীতের সব বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি উষ্ণ (Hottest year on record)।

  • এটি প্রথম ক্যালেন্ডার বর্ষ, যেখানে গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পযুগের (Pre-industrial levels) চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (1.5°C) অতিক্রম করেছে—ভূ-পৃষ্ঠের (Surface) তাপমাত্রা গড়ে ১.৬ ডিগ্রি (1.6°C) বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • ২০২৩-২৪ সময়ের গড় তাপমাত্রাও এই সীমা অতিক্রম করেছে। কিন্তু প্যারিস চুক্তির (Paris Agreement) লক্ষ্য “২০ বছরের গড়” ভিত্তিতে নির্ধারিত, তাই এখনও বলা যাবে না যে স্থায়ীভাবে এই সীমা পেরিয়ে গেছি।

কারণ ও প্রতিক্রিয়া (Cause & Implication):

  • গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ (Greenhouse gas emission) মানুষের কারণে বাড়ছে, এটা মূল চালিকাশক্তি।
  • কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা যেমন এল নিনো (El Niño) এই অসাধারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বাড়তি ভূমিকা রেখেছে।
  • C3S ডেপুটি ডিরেক্টরের মতে, “পরিবেশ যত উষ্ণ হয়, ক্ষতিকর আবহাওয়া (Hazardous extreme weather) ঘটার প্রবণতা তত বাড়ে,” যা মানুষের জীবন ও বাস্তুতন্ত্রকে (Ecosystem) ঝুঁকিতে ফেলে।

সূত্র

https://climate.copernicus.eu/copernicus-2024-first-year-exceed-15degc-above-pre-industrial-level
https://www.ft.com/content/fd914266-71bf-4317-9fdc-44b55acb52f6
https://www.dw.com/en/2024-was-officially-the-hottest-on-record/a-71255536

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাবনা

পটভূমি (Background): নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) গত রাতে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) সাথে বৈঠক আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ট্রাম্পের ভাষায়, “ইউক্রেনের (Ukraine) যুদ্ধ (War in Ukraine) এক ভয়াবহ জঞ্জাল (A bloody mess), সেটার সমাধান প্রয়োজন।”

সম্ভাব্য আলোচনার তারিখ ও কাঠামো (Possible Date & Framework): ট্রাম্প বলেছেন, হয়ত শপথ নেওয়ার (Inauguration on January 20) পর বৈঠক হতে পারে—পরিবেশ ঠিক হলে। ক্রেমলিন (Kremlin) মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ (Dmitry Peskov) জানিয়েছেন, “পুতিন এ বৈঠককে স্বাগত জানাবেন,” তবে এখনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আসেনি।


ইউক্রেন বিষয়ে উদ্বেগ (Concerns About Ukraine):

  • অনেকে আশা করছেন, হয়ত এর ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের (Russia-Ukraine war) কোন কূটনৈতিক সমাধান আসবে।
  • অন্যদিকে, ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা শঙ্কিত—ট্রাম্পের মধ্যে “রাশিয়া-মুখী সমাধান” প্রবল হতে পারে, যেখানে ইউক্রেনের স্বার্থ (Ukrainian interests) পুরোপুরি রক্ষা হবে না।
  • গতবার ট্রাম্প বলেছিলেন, “২০২২-এ আক্রমণের আগেই ইউক্রেনের উচিত ছিল রাশিয়ার কিছু দাবিতে সমঝোতা করা।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন সমর্থনকেও (U.S. support for Ukraine) বারবার সমালোচনা করেছেন।

পিউ রিসার্চ (Pew Research) ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দেখায়, ৪৮% রিপাবলিকান মনে করেন যুক্তরাষ্ট্র “ইউক্রেনকে অতিরিক্ত সহায়তা দিচ্ছে”—এই সংখ্যা আরো বেড়েছে বলে ধারণা। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে দাবি করেন, “২৪ ঘণ্টায় যুদ্ধ শেষ করতে পারবেন,” যদিও পরে বলেন, “৬ মাসের মধ্যে” সমাধান আনা বাস্তবসম্মত হতে পারে।

সূত্র

https://www.politico.eu/article/us-donald-trump-russia-vladimir-putin-meeting-set-up/
https://www.dw.com/en/donald-trump-says-set-to-meet-vladimir-putin/a-71261856

৯ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • অবশেষে লেবাননে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেষ্টায় সাফল্যের লক্ষণ
  • ইলন মাস্কের মন্তব্য: কীভাবে স্টারমারকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়?
  • লস অ্যাঞ্জেলেসে বিধ্বংসী দাবানল: অন্তত পাঁচজন নিহত
  • রোমানিয়া প্রেসিডেন্টর পুনরায় নির্বাচন: ৪ মে

অবশেষে লেবাননে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চেষ্টায় সাফল্যের লক্ষণ

দীর্ঘ দুই বছর অচলাবস্থা (Two Years of Deadlock): লেবাননে (Lebanon) প্রায় দুই বছর ধরে প্রেসিডেন্ট পদ শূন্য পড়ে আছে। সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন (Michel Aoun) ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে মেয়াদ শেষ করেন। কিন্তু দেশটির সংসদ (Parliament) রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্ধারণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। সবচেয়ে বড় বিতর্ক হিজবুল্লাহ (Hezbollah)-পন্থী ও বিরোধী ব্লকগুলোর মধ্যে সঙ্ঘাত। লেবাননের শাসনকাঠামো (Sectarian power sharing) অনুযায়ী, দেশটির প্রেসিডেন্ট অবশ্যই একজন ম্যারোনাইট খ্রিস্টান (Maronite Christian) হতে হবে। এর মধ্যে হিজবুল্লাহ ও তার মিত্ররা সাবেক মন্ত্রী সুলেইমান ফ্রানজিয়েকে (Suleiman Frangieh) সমর্থন করে আসছিলেন, যিনি সিরিয়ার (Syria) সাবেক প্রেসিডেন্ট আসাদের (Assad) ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

জেনারেল জোসেফ আউনের (Joseph Aoun) উত্থান (Joseph Aoun’s Emergence): তবে ২০২৪ সালে ইসরায়েলের (Israel) সঙ্গে সংঘাতে হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে পড়ে, আর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ গত মাসে ক্ষমতা হারান। এর ফলে হিজবুল্লাহর আন্তর্জাতিক প্রভাব কমেছে। নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, লেবাননের সেনাপ্রধান জোসেফ আউন (Joseph Aoun) সবার নজরে আসেন।

  • আমেরিকা (United States), সৌদি আরব (Saudi Arabia) ও ফ্রান্স (France)—তিন পক্ষই নাকি আউনকে সমর্থন করছে।
  • সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে থাকার কারণে আউনকে জাতীয়ভাবে জনপ্রিয় (Relatively uncontroversial) মনে করা হয়।
  • ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি (Ceasefire) হয়েছে, তা টিকিয়ে রাখতে আউনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বুধবার (এই সপ্তাহে) মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিজবুল্লাহ-সমর্থিত সুলেইমান ফ্রানজিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন এবং আউনকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। হিজবুল্লাহ এখনো সরাসরি “সমর্থন” ঘোষণা করেনি, তবে দলের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, “আমাদের কাছে জোসেফ আউনের প্রার্থিতায় কোনো ভেটো (Veto) নেই।”

ভোটের ফলাফল ও সম্ভাবনা (Voting Outcome & Possibility): আজকের (বৃহস্পতিবার) পার্লামেন্টে এটি ছিল ১৩তমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চেষ্টা। প্রথম রাউন্ডে জোসেফ আউন পেয়েছেন ৮৬ ভোট, যা ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতার (Two-thirds majority) থেকে কিছু কম।

  • দ্বিতীয় রাউন্ডে ৭১ ভোটেই জয় সম্ভব, তবে অন্য প্রার্থীর সমর্থকরা ওয়াকআউট (Walkout) বা অনুপস্থিত হলে কোরাম (Quorum) নাও পূরণ হতে পারে, ফলে নির্বাচন আটকে যেতে পারে।
  • স্থানীয় সময়ে স্পিকার একটি “দুই ঘণ্টার বিরতি” (Two-hour break) ঘোষণা করেন, যাতে আলোচনা চলতে পারে। এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত চূড়ান্ত ফলাফল অজানা।

লেবাননের সাংকটিক প্রেক্ষাপট (Lebanon’s Crisis Context):

  • ২০১৯-এর আর্থিক ধস (Financial collapse), ২০২০-তে বৈরুত বন্দরের (Beirut port) ভয়াবহ বিস্ফোরণ, কোভিড-১৯ মহামারি ও সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ (Widespread bombardment)—সব মিলে দেশটি কঠিন সময় পার করছে।
  • একটি স্থিতিশীল সরকার (Stable government) ও প্রেসিডেন্ট ছাড়া দেশটির পুনর্গঠন (Rebuilding effort) ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার (Economic recovery) আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

আরও দেখুন – সিরিয়ায় আসাদের শাসনের পতন হলো, এরপর কী? (৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪)

সূত্র

https://www.france24.com/en/middle-east/20250109-lebanon-set-to-elect-president-after-12-failed-bids-joseph-aoun-emerges-as-frontrunner
https://www.reuters.com/world/middle-east/with-hezbollah-weakened-lebanon-hold-presidential-vote-2025-01-08/
https://www.al-monitor.com/originals/2025/01/joseph-aoun-emerges-front-runner-lebanon-president-eve-vote

ইলন মাস্কের মন্তব্য: কীভাবে স্টারমারকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়?

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে টেক বিলিয়নিয়ারের স্বার্থ (Tech Billionaire’s UK Political Interest): টেসলা (Tesla) ও স্পেসএক্স (SpaceX) প্রধান ইলন মাস্ক (Elon Musk) গত ছ’মাসে স্পষ্টতই ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তিনি পশ্চিমা সভ্যতা “বিপন্ন” বলে নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব (Conspiracy theory) পুনরাবৃত্তি করেন এবং যুক্তরাজ্যের লেবার প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে আক্রমণ করছেন। সম্প্রতি নানা খবর বলছে, মাস্ক তার ঘনিষ্ঠ মহলে আলোচনা করেছেন, কীভাবে লেবার নেতা স্টারমারকে “আগেভাগে” ক্ষমতাচ্যুত (Removed from office) করা যায়—যেন পরবর্তী নির্বাচনের আগে তাকে সরিয়ে দেওয়া যায়।

স্টারমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ (Allegations Against Starmer): 

  • মাস্ক অভিযোগ করেন, স্টারমার একসময় ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের (Crown Prosecution Service) প্রধান ছিলেন (২০০৮-২০১৩), সেই সময়ে “গুমিং গ্যাং” (Grooming gangs) দ্বারা নারীদের ধর্ষণের (Rape) অভিযোগ ঠিকমতো ব্যবস্থা নেননি বলে মাস্ক সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছেন।
  • মাস্ক “বহুসংস্কৃতির প্রভাবকে” (Diverse cultural influences) পশ্চিমের জন্য হুমকি বলে ভাবছেন, সেইসাথে স্টারমারের দলকে “অতি-প্রগতিশীল” হিসেবে নিন্দা করছেন।

রিফর্ম ইউকের সঙ্গে যোগাযোগ (Talks with Reform UK): মাস্ক নাকি যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী “রিফর্ম ইউকে” (Reform UK) পার্টির সঙ্গে আর্থিক অনুদান (Donations) নিয়ে আলোচনা করছেন। এর আগে ওই দলের নেতা নাইজেল ফারাজ (Nigel Farage)-এর সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠতার খবর পাওয়া যায়।

ইউরোপের অন্য ডানপন্থীদের সঙ্গে সংযোগ (Livestream with German AfD): মাস্ক আজ বিকেলে জার্মানির (Germany) অতি-ডানপন্থী “আল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড” (AfD)-এর নেত্রী অ্যালিস ওয়াইডেলের (Alice Weidel) সঙ্গে এক্স (X, সাবেক টুইটার)-এ একটি লাইভস্ট্রিমে যুক্ত হবেন। জার্মানির কেন্দ্রীয় নির্বাচনের (February) আগেই মাস্কের এমন লাইভস্ট্রিম রক্ষণশীল ও মধ্য ডানপন্থী দলগুলোর মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
আরও দেখুন – কেন ইলন মাস্ক ব্রিটেন নিয়ে এত অবসেসড? (৭ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

https://www.ft.com/content/dd4b066c-30a1-4ce4-a95e-82c334a740cf
https://www.politico.eu/article/elon-musk-germany-far-right-afd-x-party-donald-trump-eu/

লস অ্যাঞ্জেলেসে বিধ্বংসী দাবানল: অন্তত পাঁচজন নিহত

আগুনের তীব্রতা (Intensity of the Fires): ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস (Los Angeles, California) ও আশপাশে ভয়াবহ দাবানল (Wildfire) ছড়িয়ে পড়েছে, এতে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন মারা গেছে (At least five people killed)। প্রায় এক লাখ লোককে বাড়িঘর ছেড়ে যেতে হয়েছে।

  • “সান্তা আনা উইন্ড” (Santa Ana winds) ঘণ্টায় ৭০ মাইলের (70 mph) ওপরে বেগে বইছে, আগুনকে দ্রুত ছড়িয়ে দিয়েছে।
  • “প্যালিসেডস ফায়ার” (Palisades fire) সবচেয়ে বেশি ধ্বংসাত্মক, ২৫ বর্গমাইল এলাকা গ্রাস করেছে, যা লস অ্যাঞ্জেলসের ইতিহাসে ভয়াবহ।

উদ্ধারকাজ ও ক্ষয়ক্ষতি (Rescue & Damages):

  • ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গেভিন নিউসাম (Gavin Newsom) “স্টেট অব ইমার্জেন্সি” ঘোষণা করেছেন, অতিরিক্ত তহবিল ও বাহিনী মোতায়েন করছেন।
  • লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার ডিপার্টমেন্ট (Los Angeles Fire Department) সব ছুটিতে থাকা দমকলকর্মীকে (Off-duty firefighters) ডেকেছে, ওরেগন (Oregon) ৩০০ জন, ওয়াশিংটন (Washington) ১৪৬ জন, অন্যান্য রাজ্য থেকেও ফায়ারফাইটার এসে যোগ দিচ্ছে।
  • এই দাবানলে আর্থিক ক্ষয় ৫২ থেকে ৫৭ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১.৭ কোটি বাসিন্দাকে দূষিত বাতাস (Air quality alerts) বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

রাজনৈতিক দায় ও প্রতিক্রিয়া (Political Blame Game):

  • নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নিউসামকে দোষারোপ করেছেন, বলছেন “স্টেটের পরিবেশবাদী নীতির কারণে” দাবানল বাড়ছে—যেমন, “জলপ্রবাহ পশু সংরক্ষণে” ব্যবহারে আগুন নেভাতে দেরি। নিউসাম এটিকে “পুরোপুরি কাল্পনিক (Pure fiction)” বলে নাকচ করেছেন।
  • লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র কারেন বাস (Karen Bass)-এর সমালোচনা হচ্ছে, তিনি দমকল দফতরের বাজেট ১.৭৬ কোটি ডলার কমিয়েছিলেন—এটি এখন বড় ধরনের ভুল হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

সূত্র

https://apnews.com/article/california-fires-things-to-know-winds-f93d41dc901e352b63e86ab67ef7790e
https://www.politico.com/news/2025/01/08/trump-musk-california-democrats-wildfires-00197080
https://www.nbclosangeles.com/news/california-wildfires/la-widlfires-budget-cuts-palisades-fire/3598438/

রোমানিয়া প্রেসিডেন্টর পুনরায় নির্বাচন: ৪ মে

রোমানিয়া আগামী ৪ মে (৪ মে) বাতিলকৃত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের (Presidential election) পুনরায় ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেছে। দ্বিতীয় রাউন্ড ১৮ মে-তে হবে। ইইউ (EU) ও ন্যাটো (NATO) উভয়ের নজর এখানে থাকবে।

২০২৪ সালের নভেম্বরে রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ড হয়, যেখানে আকস্মিকভাবে সামান্য পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অতি-ডান (Far-right) ও রুশপন্থী (Pro-Russian) প্রার্থী ক্যালিন জর্জেস্কু (Călin Georgescu) প্রায় ২৩% ভোট পান—পূর্বাভাস ছিল মাত্র ৫%। এটি আন্তর্জাতিকভাবে সবাইকে হতবাক করে।

তারপর গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশিত হয়, যেখানে দেখা যায় “বৃহৎ সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন,” অর্থায়নকৃত প্রভাবক (Paid influencers) ও চরমপন্থী গোষ্ঠী (Extremist groups) জর্জেস্কুকে এগিয়ে দিতে কাজ করেছে। সরাসরি রাশিয়া দায়ী কি না, অজানা, তবে খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ।

ফলে রোমানিয়ার সাংবিধানিক আদালত (Constitutional Court) সেই নির্বাচন বাতিল (Annul) করে ঘোষণা দেয়, ২০২৫ সালের বসন্তে নতুন ভোট হবে। কিন্তু জর্জেস্কুর জনপ্রিয়তা এখনো বিরাজমান, এমনকি বাড়তে পারে। যদি আদালত “অঘোষিত তহবিল” (Undeclared funding) নিয়ে তাকে অযোগ্য না করে, তিনি আবারও জিতে যেতে পারেন।

আরও দেখুন –

সূত্র

https://www.politico.eu/article/romania-election-2025-hungary-national-liberals-social-democrats-law-court/

৮ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • চীনের মুদ্রার মূল্য ১৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে
  • ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক ভঙ্গি: পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড ও কানাডা
  • জার্মানির উদ্যোগে সিরিয়া-নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে
  • মেটার নীতি পরিবর্তন: ট্রাম্পের প্রতি সৌজন্য?

চীনের মুদ্রার মূল্য ১৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে

সাম্প্রতিক অবস্থা (Recent Situation): চীনের ইউয়ান (Yuan) ডলারের (US dollar) বিপরীতে ৭.৩৩০১ হারে নেমে এসেছে, যা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন। বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির আশঙ্কার কারণেই এই দরপতন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি সম্ভবত চীনা পণ্যে (Chinese imports) বিপুল শুল্ক (Tariffs) আরোপ করবেন—সেটি হতে পারে ১০% থেকে ২৫%, এমনকি ৪০%-ও।

পটভূমি (Background): ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে, ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেবেন। এর আগের বার (প্রথম মেয়াদে) ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ (Trade war) শুরু করেছিলেন, ফলে উভয় পক্ষের পণ্যে উচ্চ শুল্ক বসানো হয়। এবারও এই সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Chinese central bank) ও স্টক এক্সচেঞ্জ (Stock exchanges) বিনিয়োগকারীদের (Investors) আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করলেও ইউয়ানের মান পড়ে যাচ্ছে। যেহেতু ইউয়ান সাধারণত সরকার কর্তৃক “টাইটলি কন্ট্রোল্ড” (Tightly controlled), ক্রমাগত তার মূল্য পড়ে যাওয়া উদ্বেগজনক।

বাজারের প্রতিক্রিয়া (Market Reaction):

  • চীনে সরকারি বন্ডের (Government bond) সুদ হার কমেছে (Bond yields have fallen)
  • স্টক বাজারে অস্থিরতা, CSI 300 ব্লু-চিপ ইনডেক্স (CSI 300 blue chip index) গত সপ্তাহে ৫% পড়ে গেছে, যা দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক পতন।
  • ৬ই জানুয়ারিতে এই ইনডেক্স দিনের মধ্যে ০.৯% কমে, শেষে ০.২% ক্ষতিতে বন্ধ হয়েছে।

অর্থনৈতিক সমস্যার অন্তর্নিহিত কারণ (Underlying Economic Woes):

  • চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শ্লথ হয়েছে, ঐতিহাসিক গড়ের চেয়ে অনেক নিচে।
  • গৃহস্থালির ব্যয় (Household spending) বা ভোগ প্রায় জিডিপির (GDP) ৪০% হলেও, তা বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে কম।
  • সম্পত্তি বাজার (Property market) দীর্ঘদিনের মন্দায় ভুগছে, সর্বোচ্চ স্তর থেকে দাম ৮% পড়ে গেছে।
  • সরকারের বেসরকারি খাত (Private sector) নিয়ন্ত্রণ কঠোর হওয়ায় ক্যাপিটাল “আউটফ্লো” (Capital outflows) বাড়ছে, মিলিয়নিয়াররাও দেশ ছেড়ে যাচ্ছে—প্রায় ১৫,০০০ মিলিয়নিয়ার ২০২৪ সালে দেশ ছেড়ে চলে গিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা।

বেইজিং (Beijing) ডিফ্লেশন (Deflation) ঠেকাতে ও কিছু খাত বাঁচাতে নানা প্রণোদনা (Stimulus) প্যাকেজ দিচ্ছে, কিন্তু বড় কোনো গতি আনা সম্ভব হয়নি। অনেকে ভেবেছিল, ২০২৪ সালে বড় ধরনের উদ্দীপক প্যাকেজ আসবে, কিন্তু তা না এসে স্থানীয় সরকারি ঋণের পুনর্বিন্যাস (Local government debt restructuring) করা হয়েছে।

বহু অর্থনীতিবিদ বলছেন, চীন হয়ত ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার পরই (২০ জানুয়ারি) বড় কোন ব্যয় পরিকল্পনা (Spending plan) ঘোষণা করবে, যাতে নতুন শুল্কের সম্ভাবনা বা বাণিজ্য পরিবেশ বোঝা যায়। চিনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকও (Central bank) হয়ত অপেক্ষামান অবস্থায় রয়েছে। ইউয়ানের মান বিন্দুমাত্রও শিথিল করলে (Easing the fix) বড় রকমের “সেল-অফ” (Sell-off) ঘটতে পারে—চীনের জন্য সেটি বিপর্যয়কর হবে।

সূত্র

https://www.theguardian.com/business/2025/jan/06/chinas-yuan-dollar-hits-low-trump-tariffs-csi-300
https://www.ft.com/content/db4739f2-9be3-403e-855e-382f684275fb
https://www.aljazeera.com/economy/2025/1/8/chinese-millionaires-eye-the-exit-as-economic-storm-clouds-gather

ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক ভঙ্গি: পানামা খাল, গ্রিনল্যান্ড ও কানাডা

পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ডের প্রতি নজর (Targeting Panama Canal & Greenland): যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা নেবেন। এর আগেই তিনি এক প্রেস কনফারেন্সে (Press conference) বলেছেন, পানামা খাল (Panama Canal) ও গ্রিনল্যান্ডকে (Greenland) যুক্তরাষ্ট্রের সীমানায় আনতে অর্থনৈতিক বা সামরিক চাপে ফেলতে পিছপা হবেন না।

  • পানামা খাল: “যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন” এই খালের মালিকানা, তিনি এতে কোনও ছাড় দিতে রাজি নন।
  • গ্রিনল্যান্ড: ডেনমার্কের (Denmark) অধীন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। ট্রাম্প বলেন, “আমেরিকার জাতীয় অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড দরকার।” না দিলেই ডেনমার্কের ওপর “খুব উচ্চ হারে শুল্ক” চাপাবেন বলে হুমকি।

গ্রিনল্যান্ড সরকার ও ডেনমার্ক এ প্রস্তাব একাধিকবার প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০১৯ সালেও ট্রাম্প এ আগ্রহ প্রকাশ করে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। এবার ট্রাম্প সরাসরি বলছেন, আমি অর্থনৈতিক বা সামরিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করা বন্ধ রাখব বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না।

কানাডাকেও যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য বানানোর হুমকি (Threatening to Make Canada a US State): ট্রাম্প কানাডার পণ্য—লাকড়ি ও ডেয়ারি (Lumber, dairy products)—উপর অত্যন্ত সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন এবং বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে কানাডাকে সুরক্ষা দিচ্ছে। সেই সীমান্ত (Border) তো কেবল এক কৃত্রিম রেখা (Artificially drawn line)।” ট্রাম্প মন্তব্য করেন, “কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য (51st state) হতে পারে,” এমনকি “আর্থিক চাপ (Economic force) ব্যবহার করে সেটা সম্ভব করা যেতে পারে।” তিনি বলেন, “সেইটা সত্যি চমৎকার হবে, না?” কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (Justin Trudeau) পাল্টা বলেছেন, “এর কোনও বাস্তব সম্ভাবনা নেই (Not a snowball’s chance in hell)।”

“The Gulf of Mexico” পরিবর্তন প্রস্তাব (Renaming “Gulf of Mexico”?): ওই একই বক্তব্যে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, “গালফ অব মেক্সিকো” (Gulf of Mexico) নতুন করে “গালফ অব আমেরিকা” (Gulf of America) নাম দেওয়া উচিত—একেবারেই অদ্ভুত এক মন্তব্য।সূত্রhttps://www.bbc.co.uk/news/articles/c4gzn48jwz2o
https://apnews.com/article/trump-biden-offshore-drilling-gulf-of-america-fa66f8d072eb39c00a8128a8941ede75
https://www.bbc.co.uk/news/articles/c4gzn4xx0q2o

জার্মানির উদ্যোগে সিরিয়া-নিষেধাজ্ঞা শিথিল হতে পারে

নিষেধাজ্ঞার পটভূমি (Context of Sanctions): ২০১১ সালে সিরিয়ার (Syria) প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ (Bashar al-Assad) প্রো-ডেমোক্রেসি আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন শুরু করার পর পশ্চিমা বিশ্ব (EU, US, UK) তার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) আরোপ করে। তা সময়ের সাথে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ (Civil war) রূপ নেয়।


নতুন নেতৃত্ব ও জার্মানির প্রস্তাব (New Leadership & Germany’s Proposal): সম্প্রতি সিরিয়ায় আহমেদ আল শাররার (Ahmed Al Sharrar) নামের এক নেতা ক্ষমতায় এসেছেন। জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রস্তাব করছে, নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হোক—বিশেষত ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের (Banking & energy) ওপর। এতে বিদ্যুৎ সংকট (Power shortages) লাঘব হবে এবং আর্থিক প্রবাহ (Financial flows) সহজ হবে। অনেকই মনে করছেন, আগামীর ব্রাসেলস (Brussels) মন্ত্রীপরিষদ বৈঠকে (Foreign ministers meeting) এই প্রস্তাব সমর্থন পাবে। এটা এমন এক সময়ে আসছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র (US) সম্প্রতি ৬ মাসের জন্য সিরিয়ার কিছু সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে, যেন মানবিক সহায়তা, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ব্যক্তিগত রেমিট্যান্স সহজ হয়।সূত্রhttps://www.ft.com/content/661e089a-e3db-4d4d-8fd9-0bb252ba58fc
https://www.reuters.com/world/europe/germany-pushing-eu-relax-sanctions-syria-ft-reports-2025-01-07/

মেটার নীতি পরিবর্তন: ট্রাম্পের প্রতি সৌজন্য?

মেটার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা (Meta’s Formal Announcement): মেটা (Meta) (যার অধীনে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও থ্রেডস (Threads)) সম্প্রতি বেশ কিছু “বিশাল” নীতি পরিবর্তন ঘোষনা করেছে, যা অনেকেই মনে করছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে করা হচ্ছে।মার্ক জাকারবার্গ (Mark Zuckerberg) বলেছেন,

  1. তৃতীয় পক্ষের ফ্যাক্ট চেকিং (Third-party fact-checking) প্রোগ্রাম বন্ধ করে তারা “কমিউনিটি নোট” (Community note style) ব্যবস্থায় যাবে (এক্স, পূর্বে টুইটার)-এর মতো।
  2. অভিবাসন, লিঙ্গ পরিচয় (Gender identity) প্রভৃতি বিষয়ে আগের সীমাবদ্ধতাগুলো (Restrictions) শিথিল করা হবে, “আরও বাক স্বাধীনতা” (More speech) দিতেই।
  3. কনটেন্ট মডারেশন (Content moderation) ও নিরাপত্তা দল (Safety team) ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সরিয়ে টেক্সাসে (Texas) নেওয়া হবে।
  4. রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের সঙ্গে সমন্বয় করে মেটা বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের সঙ্গেও “সেন্সরশিপ বিরোধ” (Anti-censorship) লড়বে।

মেটার বোর্ডে UFC প্রধান (Dana White) ও রিপাবলিকান প্রাধান্য:

  • UFC প্রধান ডানা হোয়াইট (Dana White)—ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের বন্ধু—মেটার পরিচালনা বোর্ডে যোগ দিচ্ছেন।
  • গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রধান হিসেবে (Global affairs) রিপাবলিকান নেতা জোয়েল ক্যাপলান (Joel Kaplan) দায়িত্ব পাচ্ছেন, নিক ক্লেগ (Nick Clegg)-এর জায়গায়।

প্রতিক্রিয়া (Reactions): মেটার এই পদক্ষেপ দেখে অনেকে বলছে, “ট্রাম্পের জয়কে সামনে রেখে মেটা একধরনের কৌশল নিল।” কারণ ট্রাম্প আগে ফেসবুক থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন (January 6 attack-এর পর), কিন্তু এখন আবার তার প্রভাব এড়াতে মেটা নতজানু হচ্ছে বলে সমালোচনা আছে।

  • প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য এ পদক্ষেপে খুশি।
  • তবে সাংবাদিক, ভুল তথ্য গবেষক (Misinformation researchers) ও বিভিন্ন সংগঠন বলে, “এতে বিপজ্জনক ভুল তথ্য (Dangerous misinformation) আরও ছড়াবে।”

অতিরিক্তভাবে, ননপ্রফিট পাবলিক সিটিজেন (Public Citizen) হুঁশিয়ারি দিয়েছে, “এবার ব্যবহারকারীরা তাদের নিউজ ফিডে আরও বিপজ্জনক ভুল তথ্য দেখতে পাবে।”

সূত্র

https://about.fb.com/news/2025/01/meta-more-speech-fewer-mistakes/
https://www.france24.com/en/live-news/20250108-big-tech-rolls-out-the-red-carpet-for-trump
https://www.theguardian.com/technology/2025/jan/07/meta-facebook-instagram-threads-mark-zuckerberg-remove-fact-checkers-recommend-political-content

৭ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • কানাডায় নতুন নেতা খোঁজে লিবারেল পার্টি
  • উত্তর কোরিয়ার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
  • গ্রিনল্যান্ডে ট্রাম্পপুত্রের সফর: আবারও “গ্রিনল্যান্ড ক্রয়” প্রসঙ্গ?
  • তিব্বতে ভূমিকম্প ও হিমালয় এলাকার অস্থিরতা

কানাডায় নতুন নেতা খোঁজে লিবারেল পার্টি

জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ: কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রায় এক দশক ক্ষমতায় থাকার পর পদত্যাগের ঘোষণা দেন। দীর্ঘ দিন ধরে চলা সরকারী কোন্দল, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আপত্তি এবং অভ্যন্তরীণ মনোমালিন্য—এ সবকিছু মিলিয়ে তার পদত্যাগের পথ সুগম হয়েছে। তাছাড়া জনমত জরিপগুলোতেও দেখা যাচ্ছে, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে (General election) লিবারেল পার্টির পরাজয় (Defeat) হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। পদত্যাগের ফলে এখন লিবারেল পার্টিকে দ্রুত নতুন নেতা বেছে নিতে হবে, যাতে তারা আগামী নির্বাচনে লড়তে পারে। সম্ভাব্য তারিখ এখনো ঠিক না হলেও, সময় কম।

ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড: স্বাভাবিক পছন্দ?: অনেকেই মনে করছেন, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী (Deputy Prime Minister) ও অর্থমন্ত্রী (Finance Minister) ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড (Chrystia Freeland) লিবারেল পার্টির পরবর্তী নেতা হিসেবে মূল দৌঁড়ে আছেন। তিনি দীর্ঘদিন ট্রুডোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন, কিন্তু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে মতবিরোধের কারণে গত মাসে পদত্যাগ করেন। ফ্রিল্যান্ড আরও সমালোচনা করেন যে, ট্রুডো নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) যখন কানাডার পণ্যের ওপর “উচ্চ শুল্ক” (Tariffs) আরোপের হুমকি দেন, তখন ট্রুডো যথেষ্ট কৌশলী ব্যবস্থা নিতে পারেননি। ফ্রিল্যান্ডের অতীত কার্যক্রম বলছে, তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী (Minister of Foreign Affairs) হিসেবে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো (USMCA) চুক্তির পুনরায় আলোচনাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় (Trade negotiations) তার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। অনেক লিবারেল এমপিও (MPs) তার পক্ষে সরাসরি সমর্থন দিয়েছেন, বিশেষ করে তিনি পদত্যাগের পর একটি ককাস বৈঠকে (Caucus meeting) দাঁড়িয়ে বিপুল করতালির সম্মুখীন হন। তবে এক সমস্যা হলো, ফ্রিল্যান্ড নিজ নির্বাচনী আসন (Riding) বিশ্ববিদ্যালয়-রোজডেল (University-Rosedale)–এ তার জয়ের সম্ভাবনা ধরে রাখা সহজ নাও হতে পারে। সাম্প্রতিক জরিপ অনুসারে, তিনি প্রায় ৬০% সম্ভাবনা নিয়ে এগোলেও, এটি যথেষ্ট নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।
মার্ক কার্নি: অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশপন্থী: লিবারেল পার্টির নেতৃত্বের দৌঁড়ে আরেকটি নাম শোনা যাচ্ছে, তিনি হলেন কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (Bank of Canada) সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি (Mark Carney)। তিনি কখনো নির্বাচিত অফিসে না থাকলেও, অর্থনীতি ও জলবায়ু (Climate) বিষয়ক অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ। জাতিসংঘের (UN) বিশেষ দূত (Special Envoy for Climate Action) হিসেবে কাজের মাধ্যমে পরিবেশসংক্রান্ত (Environmental) বিষয়ে তার মেধা প্রমাণিত। তবে কার্নির কিছু নীতিমালা, যেমন ফেডারেল কার্বন ট্যাক্স (Federal carbon tax policy)–এর পক্ষে অবস্থান, রক্ষণশীল (Conservative) সমর্থকদের বিরাগভাজন করতে পারে। তিনি বিরোধী নেতা পিয়েরে পয়লিয়েভের (Pierre Poilievre) দাবিগুলোকে “পরিকল্পনাহীন” দর্শন বলেও সমালোচনা করেছেন। আরেকটি বিষয় হলো, লিবারেল পার্টিতে “আনঅফিশিয়াল” ঐতিহ্য আছে—এখনো পর্যন্ত ফ্রান্সভাষী (Francophone) ও ইংরেজিভাষী (Anglophone) নেতারা পালাক্রমে আসেন। ট্রুডো ছিলেন ফ্রান্সভাষী, সুতরাং ফ্রিল্যান্ড বা কার্নি—যারা উভয়েই ইংরেজিভাষী—কোনো একজন পরবর্তী নেতা হতে পারেন। কার্নির বড় বাধা হলো, তিনি এখনো কোনও আসনে নির্বাচিত এমপি নন। লিবারেল পার্টির নেতা হতে গেলে হয়তো উপনির্বাচন জিততে হবে, বা নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিতে হবে।

অন্যান্য বিকল্প ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা: ফ্রিল্যান্ড ও কার্নি ছাড়াও কিছু মন্ত্রী, যেমন বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী (Foreign Affairs Minister), উদ্ভাবন মন্ত্রী (Minister for Innovation) ও নতুন অর্থমন্ত্রী (New Finance Minister) – তাদের নামও শোনা যাচ্ছে। যদিও তারা ফ্রিল্যান্ড বা কার্নির মতো জনসমর্থন বা পরিচিতির পর্যায়ে নেই। অবশ্য সামনে কী হবে তা যেসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে সেগুলো হলো:

  • লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনে কে জয়ী হবেন?
  • কানাডার আনুষ্ঠানিক নির্বাচন কবে হবে?
  • এনডিপি (NDP) অনাস্থা ভোটে কতটা দ্রুত সরকার পতন ঘটাবে?

আরও পড়ুন

কেন ট্রুডো পদত্যাগ করেছেন? পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে? (৭ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

https://www.bbc.co.uk/news/articles/c3904r98lnlo
https://www.telegraph.co.uk/world-news/2025/01/06/who-will-replace-justin-trudeau-as-prime-minister-of-canada/

উত্তর কোরিয়ার হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

উত্তর কোরিয়া (North Korea) আবারও আলোচনায় এসেছে—এইবার নতুন প্রজন্মের “ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ ব্যালিস্টিক মিসাইল” (Intermediate-range ballistic missile) পরীক্ষা করেছে, যার ডগায় ছিল হাইপারসনিক ওয়ারহেড (Hypersonic warhead)।

গত দুই মাসে প্রথমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র (Missile) ছুড়ল পিয়ংইয়ং (Pyongyang)। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন (Antony Blinken) তখন সিউলে (Seoul) অবস্থান করছিলেন, দক্ষিণ কোরিয়ান (South Korean) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন।

উত্তর কোরিয়া দাবি করছে, মিসাইলটি প্রায় শব্দের চেয়ে ১২ গুণ গতিতে (12 times the speed of sound) উড়তে সক্ষম, যা সহজে গুলি করে ফেলা বা আটকানো (Shoot down) কঠিন করে তুলবে।

পিয়ংইয়ং বলছে, এই নতুন অস্ত্র “প্রতিদ্বন্দ্বীদের” (Any rivals) বন্ধ রাখতে সক্ষম হবে।

দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea) এই পরীক্ষাকে স্পষ্ট উস্কানি হিসেবে দেখছে এবং কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেবে, সেটি এখন দেখার বিষয়।

সূত্র

https://www.bbc.co.uk/news/articles/crrwyv75g5xo

গ্রিনল্যান্ডে ট্রাম্পপুত্রের সফর: আবারও “গ্রিনল্যান্ড ক্রয়” প্রসঙ্গ?

ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র (Donald Trump Jr.), আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুত্র, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে গ্রিনল্যান্ড সফরে গেছেন। ট্রাম্প সিনিয়র (Trump Sr.) পূর্বে নিজের প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২০২১) গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাওয়ার কথা বলেছিলেন। গত ডিসেম্বরে আবার বলেছিলেন, “গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার (US national security) জন্য অপরিহার্য।”

ডেনমার্কের (Denmark) অধীন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডের সরকার এই প্রস্তাবে মোটেও আনন্দিত নয়। তাদের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি বলেছেন, “আমরা বিক্রির জন্য নই, গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডের জনগণের”।

ট্রাম্পের যুক্তি, “গ্রিনল্যান্ড ও এর জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হলে বিশাল উপকার পাবে,” কিন্তু স্পষ্টতই তার আসল লক্ষ্য ভূ-কৌশলগত (Strategic) গুরুত্ব। গ্রিনল্যান্ড ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মাঝে অবস্থিত, সেখানে একটি বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি (US base facility) আছে। ট্রাম্প কীভাবে বা আদৌ এই দাবিকে বাস্তবায়ন করতে চান, তা অজ্ঞাত—তবে দ্বিতীয় মেয়াদে (যা শপথের পরে শুরু হবে) তিনি বিষয়টি আবার উত্থাপন করতে পারেন।

আরও পড়ুন –

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আমেরিকার সীমানা বিস্তার: সম্ভাবনা ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব (৯ জানুয়ারি, ২০২৫)

অবশেষে কি ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড স্বাধীন হবে? (৮ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

https://www.bbc.co.uk/news/articles/c5yv10knyd9o

তিব্বতে ভূমিকম্প ও হিমালয় এলাকার অস্থিরতা

গতকাল (মঙ্গলবার) ভোরে তিব্বতে (Tibet) ৭.১ মাত্রার (Magnitude 7.1) ভূমিকম্প হয়, যেখানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৫ জন নিহত (Killed) ও ১৩০ জন আহত (Injured) হয়েছে বলে চীনা রাষ্ট্রয়ত্ত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। উদ্ধারকাজ জোরেশোরে চলছে; প্রায় ১৫০০ স্থানীয় দমকলকর্মী (Firefighters) ও উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। শীতবস্ত্র, কম্বল, ভাঁজ করা বিছানা ইত্যাদি সহায়তা পাঠানো হয়েছে।

তিব্বত দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের (China) এক পার্বত্য অঞ্চল, নেপাল (Nepal) ও ভূটানের (Bhutan) সীমান্তে। “তিব্বতি মালভূমি” (Tibetan Plateau) খুবই ভূমিকম্পপ্রবণ (Seismically active) অঞ্চল; ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের (Indian & Eurasian plates) সংঘর্ষে এখানে প্রায়ই কম্পন হয়।

এই ভূমিকম্প থেকে স্পষ্ট যে হিমালয়ের (Himalayas) উচ্চতা ও অববাহিকা মাঝেমধ্যেই তীব্র কম্পন সহ্য করে। এবারও পার্শ্ববর্তী নেপাল, ভূটান ও ভারতের কিছু অংশ কম্পন টের পেয়েছে, তবে নিহতের খবর সবই তিব্বতের অংশে। ঐতিহ্যগতভাবে পবিত্র নগরী চাকাসে (Chagasay) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত—সেখানে পারম্পরিক তিব্বতি ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ (পাঁচেন লামা বা Panchen Lama) সীট রয়েছে।

মাউন্ট এভারেস্টের (Mount Everest) চীনা অংশে স্কেনিক এরিয়া (Scenic area) আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, এই বিপর্যয় তিব্বত-চীন সম্পর্কের (Tibet-China relations) রাজনৈতিক দিক আরও একবার আলোচনায় এনেছে।

চীন ১৯৫০ সালে তিব্বত দখল ও সংযুক্ত (Invaded and annexed) করার পর থেকে সেখানে রাজনৈতিক টানাপোড়েন বজায় আছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীন তিব্বতির ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার (Religious & cultural freedom) ওপর আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে—যা রাজনৈতিক বন্দিত্ব (Political imprisonments), নিপীড়ন (Beatings) ও ভয়ভীতি সৃষ্টির (Intimidation) রিপোর্টে প্রতিফলিত। এবারও ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজে কতটুকু আন্তর্জাতিক সহায়তা (International aid) পাবে, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

সূত্র

https://www.theguardian.com/world/live/2025/jan/07/tibet-earthquake-live-updates-strong-quake-shigatse-city-nepal-bihar-latest-news
https://www.aljazeera.com/news/2025/1/7/earthquake-hits-tibets-shigatse-what-we-know-so-far
https://freetibet.org/freedom-for-tibet/occupation-of-tibet/

৬ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • অস্ট্রিয়ায় কোয়ালিশন সংকট: কট্টর ডানপন্থী দলে নজর
  • কানাডায় জাস্টিন ট্রুডোর সম্ভাব্য পদত্যাগ
  • যুক্তরাজ্যে ফারাজ-মাস্ক বিবাদ: “রিফর্ম ইউকে” থেকে সরে গেলেন মাস্ক
  • ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির ট্রাম্প-সাক্ষাৎ ও ইরান সংক্রান্ত টানাপোড়েন

অস্ট্রিয়ায় কোয়ালিশন সংকট: কট্টর ডানপন্থী দলে নজর

অস্ট্রিয়া হয়েছে ইউরোপের আরেকটি দেশ, যেটি এই সপ্তাহে কোয়ালিশন বিশৃঙ্খলায় (Coalition chaos) পড়েছে। দেশটির চ্যান্সেলর কার্ল নেইহামার (Karl Neyhammer) রোববার পদত্যাগ করেন, কারণ তিনি একটি “মধ্যপন্থী সরকার” (Centrist government) গঠনে ব্যর্থ হন। সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে অস্ট্রিয়ান সংসদীয় ভোটে (Legislative election) সবচেয়ে বেশি ভোট পায় কট্টর ডানপন্থী (Far-right) ফ্রিডম পার্টি অব অস্ট্রিয়া (FPO) —এরা প্রায় ২৮.৮% ভোট শেয়ার অর্জন করে, দ্বিতীয় স্থানে ছিল মধ্যডানপন্থী পিপলস পার্টি (People’s Party) ২৬.৩% নিয়ে।

কিন্তু, এফপিওর (FPO) “র‍্যাডিকাল” (Radical) এজেন্ডার কারণে অস্ট্রিয়ার মূলধারার (Mainstream centrist) দলগুলো কোয়ালিশন আলোচনা থেকে তাদের বাদ দিতে চেয়েছে। শেষ পর্যন্ত চ্যান্সেলর নেইহামারের জনগণের পার্টি (People’s Party) সামাজিক গণতন্ত্রী (Centre-left Social Democrats) ও লিবারেল নেয়োস (NeoS alliance) জোট গড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু “মূলনীতি নিয়ে মতবিরোধে” (Disagreements on key issues) তারা ব্যর্থ হন।

শনিবার নেইহামার পদত্যাগ করেন। রোববার জনগণের পার্টি অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে ক্রিশ্চিয়ান স্টকার (Christian Stocker)-কে নিয়োগ দেয়। নেইহামারের মতো স্টকারও আগে এফপিও’র সঙ্গে জোটে আপত্তি জানিয়েছিলেন, কিন্তু এখন বলছেন “পরিস্থিতি পাল্টে গেছে” (Circumstances have changed)। তিনি এফপিও নেতা হারবার্ট কিকেলের (Herbert Kickl) সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন বলে রোববার এক বিবৃতিতে জানান, যেখানে তিনি বলেন “আমরা অন্যান্য দলের সঙ্গে যেমন সিরিয়াস আলোচনা করেছি, তেমনই এফপিওর সঙ্গেও করব” এবং “পিপলস পার্টি নিজেদের দায়িত্ব এড়াবে না”।

এফপিও (Freedom Party of Austria) একটি ইউরোপসংশয়ী (Eurosceptic), রাশিয়া-মৈত্রীভাবাপন্ন (Pro-Russian), প্রতিষ্ঠানবিরোধী (Anti-establishment) দল। তাদের নির্বাচনী প্রচারে (Manifesto), যার শিরোনাম ছিল “ফোর্ট্রেস অস্ট্রিয়া” (Fortress Austria), মূলত “কঠোর অভিবাসনবিরোধী (Anti-immigration), ইসলামবিরোধী (Anti-Islam)” নীতি জোর দেওয়া হয়। এরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) আইন লঙ্ঘন করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক আশ্রয় প্রক্রিয়া (Political asylum) বন্ধ করার কথা বলে, হেইট স্পিচ (Far-right hate speech) নিয়ে যে সব আইন আছে, সেগুলো বাতিল করতে চায় এবং স্কুলে “রেইনবো কাল্ট” (Rainbow cult) বা এলজিবিটি-বিষয়ক সচেতনতা পাঠ বন্ধের দাবি জানায়। দলটি ইইউর (EU) গ্রিন ডিল (Green Deal) থেকেও অস্ট্রিয়াকে “মুক্ত” করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

দলটির জন্ম ১৯৫০-এর দশকে, কিছু সাবেক নাৎসি (Former Nazis) নেতা দ্বারা। অতীতে তাদের চরমপন্থী (Radical) অবস্থানের ফলে অস্ট্রিয়ার অন্য দলগুলো তাদের কোয়ালিশনে আনতে সম্মত ছিল না। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনের পর এফপিও সরকারে আসায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভূতপূর্ব কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা (Diplomatic sanctions) আরোপ করেছিল, যা পরে প্রত্যাহার করা হয়।

বর্তমানে যদিও, এফপিও হয়ত আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারে—হয় জনগণের পার্টির সঙ্গে জোট গড়ে, নতুবা নতুন নির্বাচন ডেকে (Fresh elections) সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাড়িয়ে সরাসরি সরকার গঠন করতে পারে। কারণ, জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে সেপ্টেম্বরের পর থেকে এফপিওর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে।

আরও পড়ুন –

গ্র্যান্ড কোয়ালিশন গঠন করা কি ব্যাড আইডিয়া? কী বলছে ইউরোপের রাজনীতি? (২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪)

সূত্র

https://www.reuters.com/world/europe/austrian-conservatives-hold-crisis-meeting-after-chancellor-quits-2025-01-05/
https://www.bbc.co.uk/news/articles/c8dqzj11mp0o
https://www.ft.com/content/8ced9456-eef9-4682-962f-44b94107120a
https://www.theguardian.com/world/2025/jan/05/austrias-president-to-meet-far-right-leader-amid-coalition-speculation

কানাডায় জাস্টিন ট্রুডোর সম্ভাব্য পদত্যাগ

কানাডায় ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শিগগিরই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। তার সরকারের অর্থমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী (Deputy Prime Minister and Finance Minister) ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড (Chrystia Freeland) গত মাসে পদত্যাগ করেন—এটি ছিল এক বছরের মধ্যে ট্রুডো সরকারের ৫ম মন্ত্রীর পদত্যাগ।

জানা গেছে, ফ্রিল্যান্ড সাম্প্রতিক “দুই মাসের ট্যাক্স হলিডে” (Tax holiday) নিয়ে ট্রুডোর সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন, কারণ বাজেট ঘাটতি (Budget deficit) বেড়ে চললেও ট্রুডো এই কর ছুটির সিদ্ধান্ত নেন। ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগপত্রে ইঙ্গিত থাকে, তিনি মনে করেন না ট্রুডো যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের (President Trump) সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবেন—যিনি ক্ষমতায় গিয়ে কানাডার ওপর “বিশাল শুল্ক” (Substantial tariffs) আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করে বলছেন, তিনি নাকি “কানাডার গভর্নর” (Governor of Canada) এবং কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের “৫১তম অঙ্গরাজ্য” (51st state) হতে পারে! ট্রুডো গত মাসে মার-এ-লাগো (Mar a Lago) সফরে গিয়েছিলেন সম্পর্কের উন্নতি করতে, কিন্তু ফল বিশেষ লাভ হয়নি।

ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগের পর ডজনখানেক লিবারেল এমপি (Liberal MPs) সরাসরি ট্রুডোর পদত্যাগ দাবি করেন, এবং এনডিপি (NDP)—যারা এতদিন ট্রুডো সরকারের পতন রোধে (Propped up the minority government) সহযোগিতা করেছে—এবার ঘোষণা দেয়, জানুয়ারিতে পার্লামেন্ট বসলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেবে। এতে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে বসন্তেই (Spring) নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা।

ফলে ট্রুডো বাধ্য হয়ে পদত্যাগের কথা ভাবছেন, এবং শীঘ্রই (সম্ভবত আজকেই, বা অচিরেই) সে ঘোষণা আসতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলে অবশ্যই তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যাবে।

আরও দেখুন –

কেন ট্রুডো পদত্যাগ করেছেন? পরবর্তীতে কী হতে যাচ্ছে? (৭ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

https://www.theguardian.com/world/live/2025/jan/06/justin-trudeau-cananda-quits-resigns-latest-live-news-updates
https://www.bbc.co.uk/news/live/clyjmy7vl64t

যুক্তরাজ্যে ফারাজ-মাস্ক বিবাদ: “রিফর্ম ইউকে” থেকে সরে গেলেন মাস্ক

যুক্তরাজ্যের রিফর্ম ইউকে (Reform UK) দলের নেতা নাইজেল ফারাজ (Nigel Farage) সম্প্রতি ইলন মাস্কের (Elon Musk) সরাসরি সমর্থন পেয়েছিলেন। গত কয়েক মাসে মাস্ক এক্স (X, পূর্বনাম টুইটার) প্ল্যাটফর্মে ফারাজের প্রশংসা করে বলেছেন, “শুধু রিফর্ম-ই ব্রিটেনকে বাঁচাতে পারে” (Only Reform can save Britain)। তিনি কনজারভেটিভ পার্টির (Tories) বিরুদ্ধে ফারাজের সমালোচনা শেয়ার করে যোগ করেন “ঠিক বলেছ… রিফর্ম-ই ব্রিটেনকে বাঁচাতে পারে” ইত্যাদি।

কিন্তু গত সপ্তাহান্তে (Weekend) দেখা গেছে, মাস্ক হঠাৎ ফারাজকে আর সমর্থন করছেন না। এর পেছনে টমি রবিনসন (Tommy Robinson)-সংক্রান্ত মতবিরোধ প্রধান কারণ বলে জানা যায়।

টমি রবিনসন (Tommy Robinson) যুক্তরাজ্যের কট্টর ডানপন্থী (Far-right) ব্যক্তিত্ব—যিনি আগে ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টি (British National Party) ও ইংলিশ ডিফেন্স লিগ (English Defence League)-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফারাজ বহুদিন চেষ্টা করেছেন নিজেকে ও তার দলকে রবিনসনের মতো ব্যক্তিদের থেকে দূরে রাখতে, কারণ তাদের “চরম” ভাবনা মূলধারার রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্যতা পেতে বাধা দেয়।

অপরদিকে, মাস্ক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন রবিনসন “রাজনৈতিক স্বার্থে সাজানো এক বিচারব্যবস্থার শিকার” (Victim of politicised justice system) এবং “একজন কার্যত রাজনৈতিক বন্দি” (Political prisoner)। ফারাজ তাতে অসম্মতি জানিয়ে বলেছেন “রবিনসন আমাদের প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই নন।” এতে মাস্ক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, “রিফর্ম পার্টি নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন… ফারাজের যা দরকার ছিল, তা নেই।”

ফারাজও হকচকিয়ে গেছেন, তিনি জবাবে বলেছেন, “এটি আমার জন্য চমক। ইলন অতুলনীয় মেধাবী, কিন্তু আমি ভিন্নমত পোষণ করি। আমার অবস্থান একই: রবিনসন রিফর্মের জন্য উপযুক্ত নন, আমি কখনো মূলনীতি বিক্রি করি না।” ফলে স্পষ্টতই, “রিফর্ম” পার্টির জন্য মাস্কের বড় অংকের অনুদান বা দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা আপাতত অনিশ্চিত।

আরও পড়ুন –

কেন ইলন মাস্ক ব্রিটেন নিয়ে এত অবসেসড? (৭ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

https://www.independent.co.uk/news/uk/politics/nigel-farage-elon-musk-reform-tommy-robinson-b2674267.html
https://news.sky.com/story/as-he-falls-out-with-farage-how-should-politicians-handle-elon-musk-13284306

 

ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির ট্রাম্প-সাক্ষাৎ ও ইরান সংক্রান্ত টানাপোড়েন

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি (Giorgia Meloni) গত সপ্তাহান্তে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মার-এ-লাগো (Mar a Lago) রিসর্টে নৈশভোজে মিলিত হন। শপথ গ্রহণের (Inauguration) আগে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চাচ্ছেন মেলোনি। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্পের (২০১৭–২০২১) সময় মেলোনি অনেকটা আলোচনার বাইরে ছিলেন—তখন তিনি লম্বা বিরোধী রাজনীতি করছিলেন। এখন ক্ষমতায় এসে তিনি ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্কের (Elon Musk) সঙ্গেও “ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব” গড়েছেন বলে খবর।

মেলোনির রাইট-উইং পার্টি “ব্রাদার্স অব ইতালি” (Brothers of Italy) আশা করে, আদর্শিক মিল থাকায় (Ideological affinity) মেলোনি-ট্রাম্প একসঙ্গে কাজ করতে পারবেন। হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবান (Viktor Orban) ও আর্জেন্টিনার হাভিয়ের মিলে-র (Javier Milei) মতো অন্যান্য ডানপন্থী ট্রাম্প সমর্থক নেতারাও ইতিমধ্যে মার-এ-লাগো সফর করেছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোও গেছেন, তবে তিনি গিয়েছেন “ট্যারিফ সংকট” (Tariff threat) মেটানোর চেষ্টা করতে।

মেলোনির এই সফরের সময়ই ইতালির পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে—ইরানের (Iran) সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে। সম্প্রতি ইরানে এক ইতালীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন, এর আগে ইতালি মার্কিন অভিযোগে (US allegations) এক ইরানি প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে, যিনি নাকি ড্রোন প্রযুক্তি (Drone technology) আমেরিকান সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য রপ্তানিতে যুক্ত ছিলেন। এতে ইরান ও ইতালির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, এবং রোম (Rome) কীভাবে এর মোকাবেলা করে, সেটিই ঠিক করবে ওয়াশিংটনের (Washington) সঙ্গে সম্পর্ক কেমন থাকবে।

আরও পড়ুন –

ইউরোপে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় মিত্র কারা? (১৩ নভেম্বর, ২০২৪)

সূত্র

https://www.ft.com/content/959e7958-744e-4fb9-81e2-a27b9d6d2626

৩ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • দক্ষিণ কোরিয়ার ইউন সুক ইওল গ্রেফতার এড়ানো চালিয়ে যাচ্ছেন
  • দামাস্কাস সফরের জন্য সিরিয়ায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা
  • গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রায় ৬৮ জন নিহত
  • জার্মানির পরবর্তী সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ত্‌জ ট্রাম্পকে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন

দক্ষিণ কোরিয়ার ইউন সুক ইওল গ্রেফতার এড়ানো চালিয়ে যাচ্ছেন

শুক্রবার (তারিখ স্পষ্টত ৩ জানুয়ারি), দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নাটকীয় অচলাবস্থা (standoff) চলে, যখন তদন্তকারীরা দেশটির ইমপিচ হওয়া (impeached) প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়েওল (Yoon Suk Yeol)-কে গ্রেফতারের চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ: গত মাসে সামরিক আইন (martial law) আরোপের ব্যর্থ চেষ্টা (botched attempt) ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহমূলক কার্যকলাপ (insurrection)।

ইয়ুন হলেন প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ান প্রেসিডেন্ট, যার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা (arrest warrant) জারি হলো। জানার বিষয়, প্রেসিডেন্টরা (South Korean presidents) সাধারণত ফৌজদারি মামলার (criminal charges) দায় থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত, তবে বিদ্রোহ (insurrection) অভিযোগের ব্যাপারে এমন সুরক্ষা নেই।

শুক্রবার কী ঘটেছিল?

  • দুর্নীতি-তদন্ত দফতর (Corruption Investigation Office for High Ranking Officials বা CIO) এবং পুলিশ কর্মকর্তা (police officers) একত্রে ইয়ুনের বাসভবন ও কর্মস্থলে (compound) এসে হাজির হন।
  • বাইরে ছিল ইয়ুনের সমর্থকদের (supporters) বড় জমায়েত, যারা ঘোষণা দিয়েছিল, তারা গ্রেফতার ঠেকাতে চাইবে। তারপর অফিসারদের সামনাসামনি লড়তে হয় প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি ফোর্সের (presidential security forces) সঙ্গে, যারা ইমপিচ হওয়া প্রেসিডেন্টকে রক্ষা করছিলো।
  • ভিতরে তারা সংখ্যায় ছিল কম—অনুপাত প্রায় দুই-এ-এক বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অর্ধশতাধিক বাস/গাড়ি (buses or cars) পথ আটকে রেখেছিল, প্রায় ২০০ জন প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস বা সামরিক সদস্য ঘিরে মানবশিল্ড তৈরি করেছিল।

সিআইও (CIO) এক বিবৃতিতে জানায়: “আমরা বুঝলাম যে গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করা বাস্তবে অসম্ভব, কারণ নিরাপত্তা বাহিনীর বাধা সৃষ্ট হচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে (on site personnel safety) আমরা অভিযানে বিরতি দিলাম। পরে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে, তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”

জাতীয় পুলিশ সংস্থা (National Police Agency) জানায়, তারা প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের প্রধান ও ডেপুটি প্রধানের বিরুদ্ধে “অফিসিয়াল ডিউটি বাধাগ্রস্ত করার” (obstructing official duty) অভিযোগে তদন্ত করবে। সিআইও বলে, তারা অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট চোই সাং মক (Choi Sang Mok)-কে অনুরোধ করবে যেন প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসকে পরোয়ানা বাস্তবায়নে সহায়তার নির্দেশ দেন।

পুরো ঘটনায় একটা মজার দিক হলো, ইয়ুনের কিছু সমর্থক (supporters) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) থেকে অনুপ্রাণিত বলে মনে হচ্ছিল। ইয়ুনের বাসভবনের বাইরে “স্টপ দ্য স্টিল (Stop the Steal)” স্লোগান লেখা ইংরেজি প্ল্যাকার্ড, পাশাপাশি মার্কিন পতাকার (US Flags) উপস্থিতি দেখা গেছে। জানি, ২০২০ সালে মার্কিন নির্বাচনের পর “Stop the Steal” ট্রাম্পপন্থীরা ব্যবহার করেছিল।

তেমনি, ইয়ুন তার সামরিক আইন বিতর্কের আগে-পরে যে কথাবার্তা বলেছেন, তাতে ট্রাম্পীয় ধাঁচ দেখা যায়—যেমন, তিনি “রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি (anti-state forces)” দমনের কথা বলছেন, কিংবা ২০২৪ সালের এপ্রিলে (April 2024) অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনের সততা (integrity) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন (সে নির্বাচনে তার রক্ষণশীল দল বড় হার স্বীকার করে)।

ট্রাম্প নিজে এখনো দক্ষিণ কোরিয়ার ঘটনার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে যখন তিনি এ মাসের শেষে (এই ঘটনাকালীন) দায়িত্ব নেবেন, অবস্থার পরিবর্তন হলে বা মন্তব্য করলে জানা যাবে।

আরও দেখুন –

সূত্র

https://en.yna.co.kr/view/AEN20250103000757315?section=national/politics
https://apnews.com/article/south-korea-yoon-martial-law-impeachment-detention-c8dc1758647979455dbf0d56e70369a4
https://www.reuters.com/world/supporters-south-koreas-yoon-adopt-stop-steal-hope-trump-will-help-2025-01-03/

দামাস্কাস সফরের জন্য সিরিয়ায় ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাসে পৌঁছেছেন, লক্ষ্য—দেশটির নতুন প্রশাসনের (new administration) সঙ্গে একটি নতুন সম্পর্কের সম্ভাবনা আলোচনার চেষ্টা। ফ্রান্সের (France) পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারো (Jean Noel Barrot) ও জার্মানির (Germany) পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক (Annalena Baerbock) সেখানে গেছেন আহমেদ আল শারা (Ahmed Al Sharra)-র সঙ্গে বৈঠকে। আহমেদ আল শারা, আগে ছিলেন আবু মোহাম্মদ আল জিলানি (Abu Mohamed al Jilani) নামে পরিচিত, যিনি “এইচটিএস (HTS)” নামের সংগঠনের নেতা।

বেয়ারবক বলছেন, “নতুন সিরিয়ান সমাজ (new Syrian society) যদি সব জাতি ও ধর্মের মানুষকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় (political process) সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ, অধিকার ও সুরক্ষা দিতে পারে, তাহলেই কেবল ইউরোপ সেই প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।” তবে পশ্চিমারা (western countries) এখনো সিরিয়ার ওপর আসাদ শাসনামলে (Assad regime) জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা (sanctions) তোলেনি, আর এইচটিএস (HTS) এখনো “সন্ত্রাসী সংগঠন (terror group)” হিসাবে তালিকাভুক্ত।

একমাত্র বড় পরিবর্তন—এইচটিএস আসাদকে উৎখাত করার পর আহমেদ আল শারার মাথার দাম (bounty) প্রায় $10 মিলিয়ন ছিল, সেটা আর নেই। এখন দেখা যাক পশ্চিমারা কতটা বাস্তবে সম্পর্কের পালাবদল ঘটাতে পারে।

আরও পড়ুন –

সূত্র

https://apnews.com/article/israel-hamas-war-syria-lebanon-news-01-03-2025-42c6306a579dba0ea4f94bd29fe09760
https://www.ft.com/content/67f6c4e1-d607-407d-9748-bfdf18d979cb

গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রায় ৬৮ জন নিহত

গতকাল ইসরায়েলের বিমান হামলায় (Israeli airstrikes) গাজা উপত্যকায় অন্তত ৬৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের মধ্যে হামাস পুলিশের কর্মকর্তা ও “মানবিক অঞ্চল (Israeli-declared humanitarian zone)” এ থাকা সাধারণ মানুষও আছেন। গাজা পুলিশের মহাপরিচালক (director general) ও তার সহকারী নিহত হন। হামাসের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “গাজায় পুলিশ প্রধানকে হত্যা করে ইসরায়েল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি আর মানবিক দুর্ভোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।”

বৃহস্পতিবারের নিহতের সংখ্যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোর মধ্যে অন্যতম উচ্চতম। অনেকে শীতের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় (damp winter weather) মানবিক অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আরও একটি হামলায় মধ্য গাজার (central Gaza) দেইর আল-বালাহ্ এলাকায় অন্তত ৮ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে স্থানীয় কমিটির সদস্যরাও ছিলেন—যারা ত্রাণের কনভয়গুলোর সুরক্ষায় কাজ করত। খান ইউনিসের (Khan Younis) পূর্বাঞ্চলে ৫ পুলিশ, মধ্য গাজার শরণার্থী শিবিরে (refugee camps) অন্তত ২৪ জন (শিশুসহ) নিহত হয়।

ইউএনআরডব্লিউএ (UN Agency for Palestinian Refugees)-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি (Philippe Lazzarini) টুইট (On X) করে বলেন, “নতুন বছরের শুরুতেই আমরা আবার দেখলাম: কোনো মানবিক জোন (humanitarian zone) আসলে নেই, নিরাপদ এলাকা তো দূরের কথা।”

অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর (Benjamin Netanyahu) কার্যালয় জানায়, তিনি মোসাদ (Mossad), শিন বেট (Shin Bet) ও সামরিক বাহিনীর (military) একটি প্রতিনিধিদলকে কাতারে (Qatar) পাঠিয়েছেন, যেন যুদ্ধবিরতি (ceasefire deal) নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যায়।

আরও দেখুন –

সূত্র

https://apnews.com/article/israel-palestinians-gaza-war-news-629fd97676ff7b07c8cc991f98244e68
https://www.reuters.com/world/middle-east/israeli-airstrike-kills-least-10-southern-gaza-medics-say-2025-01-02/

জার্মানির পরবর্তী সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ত্‌জ ট্রাম্পকে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন

জার্মানির (Germany) সম্ভাব্য পরবর্তী চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ (Friedrich Merz) প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) অফিসে এলে ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র (EU-US) বাণিজ্য চুক্তির পক্ষে জোর দিচ্ছেন—যাতে উভয় অঞ্চলই উপকৃত হয়, শুল্কযুদ্ধ (tariff spiral) এড়ানো যায়। ইউরোপের অনেকেই শঙ্কিত, ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট (America First)” নীতি ইউরোপীয় অর্থনীতিকে ক্ষতি করতে পারে, কারণ তিনি ইইউ পণ্যে শুল্ক (tariffs) বসানোর কথা বলেছেন, বিশেষ করে গাড়ি (cars) ও যন্ত্রপাতির (machinery) ওপর, যদি ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের তেল ও গ্যাস না কেনে।

এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জার্মানি—যা গাড়ি ও যন্ত্রপাতিতে বড় রপ্তানিকারক (major exporter)। এক গবেষণায় বলা, দ্বিতীয় ট্রাম্প মেয়াদে (second Trump term) যদি সত্যি শুল্কযুদ্ধ (trade war) শুরু হয়, জার্মান অর্থনীতি প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ইউরো হারাতে পারে। তাই মার্জ মনে করেন, ইইউকে (EU) নিজের প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে (restoring its declining competitiveness)—শুল্ক পাল্টা দেবে না, বরং উদ্ভাবন (innovation) ও সেরা পণ্য প্রস্তাবের মাধ্যমেই জবাব দেবে।

আরও দেখুন –

সূত্র

https://www.ft.com/content/ae2f3d15-45b5-4bc0-acd5-75e8227e6c71

২ জানুয়ারি, ২০২৫

ভূমিকা

  • ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস যুগের সমাপ্তি
  • দক্ষিণ কোরিয়ার অশান্ত সময়
  • ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সহায়তা (US aid) – বাইডেন বনাম আসন্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প
  • নিউ অর্লিন্সে গাড়ি হামলা ও আইসিস সংশ্লিষ্টতা

ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস যুগের সমাপ্তি

রাশিয়া একসময় ইউরোপে (Europe) ব্যাপক গ্যাস সরবরাহ করত—দশকের পর দশক ইউক্রেইনের (Ukraine) মধ্য দিয়ে সেই গ্যাস যেত। কিন্তু গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এটি বন্ধ হয়ে গেছে, কারণ ইউক্রেইন পাঁচ বছরের গ্যাস ট্রানজিট চুক্তি (gas transit agreement) নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঐ চুক্তি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) মোট গ্যাস আমদানির ৫% সরবরাহ করত।

চুক্তিটি ২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস জায়ান্ট গ্যাজপ্রম (Gazprom) রাশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাসরুট “ব্রাদারহুড পাইপলাইন (Brotherhood pipeline)” দিয়ে ইউরোপে গ্যাস পরিবহনের সুযোগ পেত। পাইপলাইনটি ইউক্রেইনের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত (সুধিয়া, Sudya) অতিক্রম করে দক্ষিণ-পশ্চিমে ডিনিপ্রো নদী (Dnipro river) পেরিয়ে শেষমেশ পশ্চিম দিকে উঝগোরড (Usgorod)-এর কাছে সীমান্ত পেরোত।

ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy) বলেছেন, “দেশগুলোর উচিত নয় জ্বালানির সামান্য মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা করা, যখন ইউক্রেইনবাসী রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের জীবন দিচ্ছে।” প্রসঙ্গত, ইইউ-র (EU) পক্ষ থেকে রাশিয়ান গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর (end reliance on Moscow) যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, সত্ত্বেও স্লোভাকিয়া (Slovakia), হাঙ্গেরি (Hungary) ও অস্ট্রিয়া (Austria) এই রুটে গ্যাস কিনে যাচ্ছিল। ২০২৩ সালে তাদের প্রায় ৬৫% গ্যাস এই রুটের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

এখন ইউরোপে গ্যাসের দাম (gas prices) সাম্প্রতিক দিনে বেড়েছে, আর যারা এখনও রাশিয়ান গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, তাদের মধ্যে এক পূর্ণমাত্রার জ্বালানি সংকটের (energy crisis) আশঙ্কা। গতকাল বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রো-রাশিয়ান অঞ্চল ট্রান্সনিসট্রিয়ায় (Transnistria) কেন্দ্রীয় হিটিং ও গরম পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। তারা ৩০ দিনের অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা (economic emergency) ঘোষণা করেছিল আগেই। মল্দোভাও (Moldova) নিজেরাই জরুরি অবস্থা জারি করেছে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয় এড়াতে।

ইউক্রেইনের জ্বালানিমন্ত্রী এই বন্ধকে “ঐতিহাসিক ঘটনা (historic event)” বলে উল্লেখ করেছেন, বলেছেন রাশিয়া তাদের বাজার হারাচ্ছে এবং আর্থিক ক্ষতির (financial losses) মুখে পড়বে। ইউক্রেইনীয় পাইপলাইন ব্যবহার করে গ্যাস বিক্রি করে রাশিয়া বছরে বিলিয়ন ডলার আয় করে, আর ইউক্রেইনও ট্রানজিট ফি হিসেবে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার পেয়ে থাকে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) তবু যুক্তি দিয়েছেন, “গ্যাজপ্রম ঠিকই টিকে যাবে,” আর স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, “ইইউ (EU)-ই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে,” রাশিয়া নয়। তিনি আগে বলেছিলেন, এই চুক্তি শেষ হওয়ার পর ইইউ-র খরচ বাড়বে, প্রতিযোগিতা কমবে (competitiveness), স্লোভাকিয়ায় (Slovakia) জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি পাবে। তিনি পাল্টা ব্যবস্থা (reciprocal measures) নেওয়ার কথাও বলেছেন, যেমন ইউক্রেইনে বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ করা। তবে ইউক্রেইনের জ্বালানিমন্ত্রী এই হুমকিকে “ব্লাফ” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন—যদি সত্যিই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধও করে, কিইভ (Kyiv) রোমানিয়া ও পোল্যান্ড (Romania and Poland) থেকে আমদানি করে সমাধান করতে পারবে। বাস্তবে, ওয়ারশ (Warsaw) ইতিমধ্যেই সহায়তার প্রস্তাব রেখেছে।

আরও দেখুন – ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস ট্রাঞ্জিট বন্ধ করল ইউক্রেইন, শীতে তীব্র জ্বালানি সংকটে ইউরোপ (৩ জানুয়ারি, ২০২৫)

সূত্র

https://www.themoscowtimes.com/2025/01/01/russian-gas-halt-leaves-transnistria-without-heating-amid-winter-freeze-a87499
https://www.politico.eu/article/robert-fico-vladimir-putin-cutting-off-russia-gas-to-the-eu/
https://www.politico.eu/article/no-new-russian-gas-deal-for-eu-vladimir-putin-viktor-orban-robert-fico-plead-for-renewal/

দক্ষিণ কোরিয়ার অশান্ত সময়

ক্রিসমাস ছুটির মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ঝড় তোলা ঘটনা ঘটে চলেছে। দেশটি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এভিয়েশন দুর্ঘটনার (aviation disaster) সম্মুখীন হয়েছে, যখন জেজু এয়ার ফ্লাইট (Jeju Air Flight) … (কিছু তথ্যসূচক স্থান অসম্পূর্ণ), ২৯ ডিসেম্বর রানওয়ে অতিক্রম করে কংক্রিটের কাঠামোর সঙ্গে ধাক্কা খায়, বহু মানুষের প্রাণহানি হয়।

দক্ষিণ কোরিয়া পুলিশ জেজু এয়ারের অফিস (Jeju Air’s offices) এবং মুয়ন এয়ারপোর্ট অপারেটরের (Muon Airport operator) অফিসে অভিযান চালায়, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার তদন্তের অংশ হিসেবে।

এদিকে দেশটির রাজনৈতিক নাটকও তীব্রতর হচ্ছে। ইমপিচ হওয়া প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল (Yoon Suk Yeol) ধরা পড়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও ‘শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের’ অঙ্গীকার করেছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা (arrest warrant) মঞ্জুর করেছে, অভিযোগঃ ক্ষমতার অপব্যবহার (abuse of power) ও সামরিক আইন (martial law) প্রয়োগের ব্যর্থ চেষ্টায় জড়িত থাকা। একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদের অনুরোধ অগ্রাহ্য করা ও অফিসে অনুসন্ধান আটকে দেওয়ার পর আদালত এই সিদ্ধান্ত নেয়। ইয়ুনের আইনজীবীরা বলেছেন, “পুলিশ যদি ওনাকে গ্রেফতার করতে আসে, প্রেসিডেনশিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস (Presidential Security Service) পাল্টা তাদের গ্রেফতার করতে পারে।” একই সময়ে ফৌজদারি তদন্তের পাশাপাশি সাংবিধানিক আদালতে (Constitutional Court) তার ইমপিচমেন্ট (impeachment) নিয়ে শুনানি চলছে।

এছাড়াও, বিরোধী-নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদ (national assembly) হান ডুক সু (Han Duk Soo)-কে ইমপিচ করেছে—যিনি প্রেসিডেন্টের পদে অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব নিয়েছিলেন—কারণ তিনি সাংবিধানিক আদালতে (Constitutional Court) শূন্যপদ পূরণ করেননি। দেশটির নতুন অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট অর্থমন্ত্রী চোই সাং মুক (Choi Sang Mook)—অতি অল্প কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী নেতা—এই সপ্তাহে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের শূন্যপদ পূরণে উদ্যোগী হবেন।

আরও দেখুন –

সূত্র

https://apnews.com/article/south-korean-yoon-martial-law-impeachment-detention-1779809dc6b2c7e5a9478bac17ca7585
https://www.theguardian.com/world/2024/dec/31/arrest-warrant-south-korea-president-yoon-suk-yeol-martial-law-ntwnfb
https://www.reuters.com/world/asia-pacific/south-koreas-acting-president-choi-appoint-two-constitutional-court-justices-2024-12-31/
https://www.reuters.com/world/asia-pacific/south-korea-police-raid-jeju-air-muan-airport-over-fatal-plane-crash-2025-01-02/

ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সহায়তা (US aid) – বাইডেন বনাম আসন্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (US) বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনে অতিরিক্ত ৫.৯ বিলিয়ন ডলারের (5.9 billion) সহায়তা পাঠিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের (Trump) শপথগ্রহণের আগে। উভয় প্রেসিডেন্টের ইউক্রেইন-নীতি ভিন্ন বলে প্রতীয়মান। বাইডেন বরাবরই পুতিনের (Putin) ‘অবৈধ আগ্রাসনের’ (illegal invasion) বিরুদ্ধে ইউক্রেইনকে সাহায্য করতে আগ্রহী, অন্যদিকে ট্রাম্প মার্কিন সামরিক সহায়তার সিদ্ধান্ত সমালোচনা করেছেন, হয়তো ধারণা করছেন তিনি ক্ষমতায় এলে এ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে।

বাইডেন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র নিরলসভাবে (relentlessly) কাজ করবে, ইউক্রেইনের অবস্থান (position) শক্তিশালী করার জন্য, যতদিন আমি অফিসে আছি।”

সূত্র

https://www.axios.com/2024/12/31/ukraine-aid-us-weapons-economic-package

নিউ অর্লিন্সে গাড়ি হামলা ও আইসিস সংশ্লিষ্টতা

গত ৪৮ ঘণ্টায় নিউ অর্লিন্সের ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে (French Quarter) ইচ্ছাকৃতভাবে এক ব্যক্তি গাড়ি চালিয়ে মানুষের ওপর উঠিয়ে দেন। এটি ঘটে নিউ ইয়ার্স ডেতে (New Year’s Day), অন্তত ১৫ জন মারা যান, বহুজন আহত। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির পেছনে কালো আইসিস (black ISIS) পতাকা উড়ছিল, তাই এটিকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম (act of terrorism) হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে।

এফবিআই (FBI) বলছে, হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে অভিযুক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (social media) ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে তিনি আইসিস থেকে অনুপ্রাণিত (inspired by ISIS) হয়ে হত্যার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এখনো তদন্ত চলছে অন্য কোনো সন্দেহভাজন আছে কি না—কারণ মনে করা হচ্ছে, তিনি হয়তো একা কাজ করেননি। তাদের সংগঠনের সাথে অন্য যোগসূত্র আছে কি না, পুলিশ তা খুঁজছে।

সেইসঙ্গে আরেকটি বিষয় তদন্তাধীন—হামলার কয়েক ঘণ্টা পর লাস ভেগাসের (Las Vegas) ট্রাম্প হোটেলের (Trump Hotel) বাইরে একটি টেসলা সাইবারট্রাক (Tesla cybertruck) বিস্ফোরণের ঘটনা। এই দুটো হামলার মধ্যে কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সূত্র

https://www.bbc.co.uk/news/live/cn4x88455qpt
https://www.cbsnews.com/news/new-orleans-vehicle-crash-bourbon-street-crowd-casualties-shooting/

২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

ভূমিকা (Introduction)

  • যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা সরকারী কার্যক্রম বন্ধ হওয়া ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে
  • সিরিয়ায় বিদ্রোহী নেতার সাথে পশ্চিমা সংলাপ
  • বাণিজ্য ঘাটতি কমানো নিয়ে ইইউকে ট্রাম্পের শুল্ক দেবার হুমকি
  • সিরিয়ার তেল শোধনাগার সংকট
  • যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা সরকারী কার্যক্রম বন্ধ হওয়া ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে

আজ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে। কংগ্রেস (Congress) সরকার খোলা রাখার উপায় খুঁজছে, কারণ রিপাবলিকান (Republican) নিয়ন্ত্রিত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস (House of Representatives) সম্প্রতি সর্বশেষ অর্থায়ন বিল (Funding Bill) নাকচ করে দিয়েছে, যদিও সেটিতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) সমর্থন ছিল। এই ঘটনায় রিপাবলিকান দলে (Republican Party) গভীর মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

এর আগে, রিপাবলিকান স্পিকার মাইক জনসন (Republican House Speaker Mike Johnson) দুই দলীয় সমঝোতায় (Bipartisan) একটি অর্থায়ন বিল নিয়ে এসেছিলেন, যা ডেমোক্র্যাটদের (Democrats) সমর্থনও পেয়েছিল। সেই বিলটি বর্তমান পর্যায়ে সরকারি সংস্থাগুলোর তহবিল বজায় রাখার পাশাপাশি ১০০ বিলিয়ন ডলার (Billion) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ত্রাণ তহবিল (Disaster Relief) এবং ১০ বিলিয়ন ডলার কৃষিখাতে সহায়তা (Farm Aid) দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। এছাড়াও এই বিলটিতে ছিল আরও কিছু অতিরিক্ত বিধান। কিন্তু প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টেড ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রধান মিত্র ইলন মাস্ক (Elon Musk) এই বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে বহু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা তাদের মত পাল্টে বিলটির বিরোধিতা করে। ফলস্বরূপ বিলটি বৃহস্পতিবার ১৭৪ ভোট পক্ষে এবং ২৩৫ ভোট বিপক্ষে বাতিল হয়।

এরপর একটি ‘প্ল্যান বি’ (Plan B) তৈরি করা হয়, যা ট্রাম্প এবং তার অনুসারীদের কাছে কিছুটা গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল। স্পিকার জনসনের সমন্বয়ে প্রস্তুতকৃত এই ‘প্ল্যান বি’ বিলটিতে ছিল তিন মাসের জন্য সরকারী ব্যয় মঞ্জুরির মেয়াদ-বৃদ্ধি, একই পরিমাণ দুর্যোগ তহবিল, কৃষি সহায়তা এবং ট্রাম্পের দাবী অনুযায়ী দু’বছরের জন্য ঋণসীমা (Debt Limit) স্থগিত রাখা। (ঋণসীমা বা ডেট লিমিট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঋণ গ্রহণের সর্বোচ্চ সীমা।) কিন্তু ট্রাম্পের এই ঋণসীমা স্থগিতের দাবী অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতার মধ্যে অস্বস্তি সৃষ্টি করে। ফলে ‘প্ল্যান বি’ বিলটিও বৃহস্পতিবারের ভোটে ব্যর্থ হয়।

এখন রিপাবলিকানরা ‘প্ল্যান সি’ (Plan C)-র খোঁজে রয়েছে, যখন সরকারী কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার সময়সীমা শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার পথে। এখনো অজানা, কীভাবে বা কখন সমঝোতা হবে। তবে এই নাটকীয় এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি ট্রাম্পের আসন্ন প্রেসিডেন্সিতে (Presidency) দুটি বিষয়কে স্পষ্ট করেছে। প্রথমত, ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টিকে তার মতবাদে ঢেলে সাজালেও, কংগ্রেসের রিপাবলিকানদের উপরে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। তাকে তার এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিলিয়নিয়ার (Billionaire) ও ট্রাম্পের মিত্র ইলন মাস্কের রাজনৈতিক প্রভাবও এখন অস্বীকার করা যাচ্ছে না। মাস্কের সক্রিয় প্রচেষ্টায় বহু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিলটির বিরুদ্ধে দাঁড়ান।

আরও দেখুন – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার আংশিক বন্ধের (shutdown) আশঙ্কা

তথ্যসূত্র

https://www.ft.com/content/c42ec427-307a-4fe2-a4b7-9a1fce2de30a
https://thehill.com/homenews/house/5049984-republicans-government-funding-scramble-shutdown-deadline/
https://edition.cnn.com/2024/12/19/politics/trump-johnson-government-funding/index.html

সিরিয়ায় বিদ্রোহী নেতার সাথে পশ্চিমা সংলাপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) সিরিয়ায় কূটনীতিকদের পাঠিয়েছেন, যারা এখন দেশটির কার্যত শাসক ইসলামী বিদ্রোহী নেতা আবু মোহাম্মদ আল জেলানির (Abu Mohammed Al Jelani) সাথে সাক্ষাৎ করবে। আল জেলানি তার আসল নাম আহমেদ আল শিরার (Ahmed Al Shirar) নামেও পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের (US State Department) মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা বার্ব রিলিফ (Barb Relief) শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে আল জেলানির সাথে মুখোমুখি আলোচনায় বসবেন। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও এইচটিএস (HTS – Hay’at Tahrir al-Sham) বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক সরাসরি যোগাযোগ, যে গোষ্ঠীটি দুই সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে (Bashar al Assad) ক্ষমতাচ্যুত করেছে।

এই সাক্ষাত এমন সময়ে হচ্ছে যখন আল জেলানি পশ্চিমা সরকারসমূহকে সিরিয়ার ওপর থেকে অবরোধমূলক নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এছাড়াও এইচটিএস ও এর নেতাদের ওপর ২০১৮ সাল থেকে চলে আসা সন্ত্রাসী (Terrorist) তালিকাভুক্তি বাতিলের আবেদন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে, যদি এইচটিএস অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসন (Inclusive Rule) ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, তবে তারা সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া বিবেচনা করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের এই সফর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে (Damascus) এসেছে এমন এক সময়ে যখন যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স (France) ও জার্মানি (Germany) এই সপ্তাহেই অনুরূপ সফর সম্পন্ন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) দামেস্কে তাদের লিগেশন (Legation – দূতাবাসের নিম্ন পর্যায়ের কূটনৈতিক দপ্তর) পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা করছে। তুরস্ক (Turkey) ও কাতার (Qatar) ইতোমধ্যেই নিজেদের দূতাবাস (যা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরুতে বন্ধ করে দিয়েছিল) পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছে।

আরও দেখুন –

তথ্যসূত্র

https://www.ft.com/content/f150e757-75ed-4846-898c-898e4865d54a

সিরিয়ার তেল শোধনাগার সংকট

সিরিয়ার সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার বানিয়াস (Banius Facility) অপরিশোধিত তেলের (Crude Oil) সরবরাহ সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। আগে ইরান (Iran) থেকে আসা তেল এর প্রায় ৯০% চাহিদা পূরণ করতো। বানিয়াস শোধনাগারের জেনারেল ম্যানেজার ইব্রাহিম মুসালাম (Ibrahim Musalam) নিশ্চিত করেছেন যে শোধনাগার (যা দৈনিক ১০০,০০০ ব্যারেল পরিশোধনে সক্ষম) গত শুক্রবার শেষবারের মতো পেট্রোল (Petrol) উৎপাদন করেছে।

বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ (Maintenance) কাজ চলছে, আগামীতে অপরিশোধিত তেল পাওয়া গেলে উৎপাদন পুনরায় শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ইরান-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে হটানোর পর সিরিয়ায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (Interim Government) গঠিত হয়েছে। এই সরকার আশা করছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হলে ইরান ব্যতীত অন্যান্য দেশ থেকেও তেল আমদানি করা যাবে। অন্তর্বর্তী পরিচালনা পরিষদ, যা মূলত স্যালভেশন গভর্নমেন্ট (Salvation Government) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত, আত্মবিশ্বাসী যে তারা শোধনাগারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে পারবে।

তবে চ্যালেঞ্জ এখনও প্রকট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন (Antony Blinken) জ্বালানি সংকটকে (Fuel Shortage) সিরিয়ার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দেশটি এখন মারাত্মক বিদ্যুৎ সংকটে (Electricity Shortage) ভুগছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শীতকালে (Winter) জ্বালানির চাহিদা সামলাতে এবং মৌলিক সেবা (Essential Services) পুনঃস্থাপনে হিমশিম খাচ্ছে। সিরিয়ায় আরেকটি শোধনাগার হোমস (Homs) এলাকায় রয়েছে, তবে সেটি কম ক্ষমতায় পরিচালিত হচ্ছে।

বর্তমান সরকার অপরিশোধিত তেল এবং পরিশোধিত তেলজাত পণ্য (Derivatives) আমদানির বিকল্প উপায় খুঁজছে, যাতে দেশটির জনগণ ভয়াবহ জ্বালানি সংকট থেকে রেহাই পায়।

আরও দেখুন –

তথ্যসূত্র

https://www.ft.com/content/9d65fb40-a389-42ad-b9c5-42533a276dde

বাণিজ্য ঘাটতি কমানো নিয়ে ইইউকে ট্রাম্পের শুল্ক দেবার হুমকি

শুক্রবার ট্রাম্প তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল (Truth Social)-এ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ইইউ (EU) যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে আমেরিকান তেল ও গ্যাস না কেনে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি (Trade Deficit) কমিয়ে না আনে, তবে তাদের ওপর শুল্ক (Tariffs) আরোপ করা হতে পারে।

এর আগে, ব্রাসেলস (Brussels) যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (Liquefied Natural Gas – LNG) কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে। রাশিয়া (Russia) ইউক্রেনে (Ukraine) পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে ইউরোপের জ্বালানি সরবরাহ সংকুচিত করার পর আমেরিকান গ্যাস ইউরোপের জন্য একটি জীবনরক্ষাকারী সম্পদে পরিণত হয়েছে। গত নভেম্বরে ইউরোপীয় কমিশনের (European Commission) প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন (Ursula von der Leyen) বলেছিলেন যে, ইইউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও গ্যাস কেনার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

ট্রাম্প ইতোমধ্যেই বেশিরভাগ আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইউরোপের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত (Trade Surplus) যুক্তরাষ্ট্রের সাথে থাকায়, তারা ট্রাম্পের এহেন পদক্ষেপের ফলে বড় ধরনের শুল্কের মুখে পড়তে পারে। ট্রাম্প ইতোমধ্যে কানাডা (Canada), মেক্সিকো (Mexico) এবং চীনের (China) ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর ইউরোপীয় শেয়ারবাজার (European Stocks) উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সর্ব-বিস্তৃত ইউরোপীয় স্টক্স ৬০০ ইনডেক্স (Stoxx 600 Index) ০.৮% হ্রাস পেয়েছে, যা গত তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সাপ্তাহিক পারফরম্যান্স। জার্মানির (Germany) ড্যাক্স (Dax) এবং ফ্রান্সের (France) CAC 40 উভয়ই প্রায় ১% কমে গেছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) সংক্রান্ত তথ্য ঘিরে, যা ভবিষ্যত সুদের হার (Interest Rates) নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও দেখুন –

তথ্যসূত্র

https://www.euractiv.com/section/eet/news/trump-wants-eu-to-buy-more-us-oil-and-gas-or-face-tariffs/
https://www.ft.com/content/9e485614-0080-4a09-8fcb-2df6c3d932a5

যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে

যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে সাবেক নিউ লেবার (New Labour) স্পিন ডক্টর (Spin Doctor) পিটার ম্যান্ডেলসন যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাজ্যের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত (Ambassador) হবেন। তিনি টনি ব্লেয়ার (Tony Blair) এবং গর্ডন ব্রাউন (Gordon Brown) সরকারের সময় স্পিন-নিউজ ব্যবস্থাপনায় সুপরিচিত হয়ে উঠেছিলেন, যার জন্য তাকে ‘দ্য প্রিন্স অব ডার্কনেস’ (The Prince of Darkness) উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

ম্যান্ডেলসন ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, যখন ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে (White House) প্রবেশ করবেন। সাধারণত যুক্তরাজ্যের যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত পদে পেশাদার কূটনীতিক বা বেসামরিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তাই ম্যান্ডেলসনের নিয়োগ কিছুটা ব্যতিক্রম। স্টারমার সরকার (Starmer Government) বলেছে, এই নিয়োগ দেখায় যে তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সম্পর্ককে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে, “আমরা এমন একজনকে পাঠাচ্ছি যিনি প্রধানমন্ত্রী’র ঘনিষ্ঠ, যার রাজনৈতিক ও নীতিগত অভিজ্ঞতা অতুলনীয়, বিশেষত বাণিজ্য (Trade) সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।”

তথ্যসূত্র

https://www.bbc.co.uk/news/articles/cpvnlxxp8jko
https://www.telegraph.co.uk/politics/2024/12/20/lord-mandelson-starmer-glenn-grothman-washington-dc/

১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

  • চীনের পারমাণবিক সক্ষমতার দ্রুত বৃদ্ধি
  • ব্রাজিলের মুদ্রার রেকর্ড দরপতন
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার আংশিক বন্ধের (shutdown) আশঙ্কা
  • যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতির নতুন তথ্য
  • ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ

চীনের পারমাণবিক সক্ষমতার দ্রুত বৃদ্ধি

পেন্টাগনের (Pentagon) সাম্প্রতিক “চায়না মিলিটারি পাওয়ার রিপোর্ট” (China Military Power report) অনুযায়ী, চীনের সক্রিয় পারমাণবিক ওয়ারহেড (nuclear warheads) এর সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। এটি মাত্র এক বছরে ২০% বৃদ্ধি এবং ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। পেন্টাগন বলছে, চীন সম্ভবত তাদের পারমাণবিক বাহিনীকে দ্রুত আধুনিকীকরণ, বৈচিত্র্যকরণ এবং সম্প্রসারণ চালিয়ে যাবে। অনুমান করা হচ্ছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে চীনের সক্রিয় পারমাণবিক ওয়ারহেড সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়ে যাবে এবং ২০৩৫ সাল পর্যন্ত এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

যদিও চীনের পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা এখনো যুক্তরাষ্ট্র (United States) ও রাশিয়ার (Russia) বিশাল ভাণ্ডারের তুলনায় নগণ্য। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া প্রতিটিরই ৫,৫০০টিরও বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে, যা বিশ্বে বিদ্যমান প্রায় ৯০% পারমাণবিক অস্ত্রেরই মালিক তারা।

পেন্টাগনের এই প্রতিবেদনে চীনা সামরিক বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (People’s Liberation Army বা PLA)-এর আধুনিকীকরণ ও সংস্কার প্রচেষ্টার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। অগ্রগতি সত্ত্বেও, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বাহিনীর মধ্যে এখনও উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে কমান্ডারদের দক্ষতার ঘাটতি (commander proficiency), দীর্ঘ-পাল্লার রসদ সরবরাহ (long distance logistics) এবং নগরযুদ্ধে (urban warfare) দক্ষতার অভাব।

চীনা সরকার PLA-এর মধ্যে ২০২৩ সালে শুরু করা একটি নতুন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান (anti corruption purge) পরিচালনা করছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের নির্বাহী পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন পেন্টাগনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী। এর মধ্যে ছিল তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু (Li Shangfu)-কে অপসারণও।

সামরিক খাতে চীনের বিপুল ব্যয় নিয়ে জানতে চাইলে এখানে যান।

পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে বিশ্বে আর্ম রেইসের সাম্প্রতিক বৃদ্ধি ও ইউএস এর পারমাণবিক ওয়ারহেড বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে এখানে যান।

সূত্র –

https://media.defense.gov/2024/Dec/18/2003615520/-1/-1/0/MILITARY-AND-SECURITY-DEVELOPMENTS-INVOLVING-THE-PEOPLES-REPUBLIC-OF-CHINA-2024.PDF
https://www.armscontrol.org/factsheets/nuclear-weapons-who-has-what-glance
https://www.ft.com/content/5290c045-09d1-4da1-844b-166bf227584b
https://www.nytimes.com/2024/12/18/world/asia/china-nuclear-buildup.html

ব্রাজিলের মুদ্রার রেকর্ড দরপতন

অর্থনৈতিক খবরে, ব্রাজিলের (Brazil) মুদ্রার দরপতন প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার (Luiz Inacio Lula da Silva) (যিনি লুলা (Lula) নামে অধিক পরিচিত) উপর আর্থিক সংস্কার (fiscal reform) বাস্তবায়নের চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। তার বামপন্থী সরকার (left wing government) ব্যয়মূলক (tax and spend policies) নীতি গ্রহণের পর ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে প্রতিরোধ দেখা দিয়েছে, ফলে সরকার এখন ব্যয়সংকোচনমূলক পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী।

এই সপ্তাহে ব্রাজিলের মুদ্রা “রিয়াল” (real) প্রায় ২% দর হারিয়েছে এবং মঙ্গলবার ডলারের বিপরীতে ৬.২১ রিয়ালে নেমে রেকর্ড নিম্নস্তরে পৌঁছেছে। এর ফলে ২০২৪ সালে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মুদ্রাটির দরপতন দাঁড়িয়েছে ২১%, যা জে.পি. মরগান (JP Morgan)-এর উদীয়মান বাজারের মুদ্রাসূচকে (emerging markets currency Index) বছরের সবচেয়ে খারাপ পারফরমার।

রিয়ালের দর ধরে রাখতে মঙ্গলবার ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Brazil’s central bank) জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরপর তৃতীয় দিন কারেন্সি ট্রেডিং অপারেশনে অংশ নেয় এবং ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করে। প্রসঙ্গত, বিনিয়োগকারীরা লুলার উদ্দীপনা প্যাকেজ (stimulus measures) এবং ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকারি ঋণ জিডিপির (GDP) প্রায় ১০% এর কাছাকাছি, যা অর্থনীতিবিদদের মতে জনঋণকে (public debt) অস্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।

যদিও লুলার পদক্ষেপগুলি প্রবৃদ্ধি (growth) বাড়িয়েছে, একইসঙ্গে তা মুদ্রাস্ফীতি (inflation) উস্কে দিয়েছে। এর জবাবে, ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (BCB) সুদের হার (interest rates) বাড়িয়ে তুলেছে। গত সপ্তাহে মূল সুদের হার এক শতাংশ পয়েন্টের বেশি বাড়ানো হয়েছে, যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। নীতিনির্ধারকরা ২০২৫ সালেও সুদের হার বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি বৈদেশিক বিনিয়োগ (foreign investment) আকর্ষণ করে রিয়ালকে রক্ষা করতে পারে, তবে স্বল্পমেয়াদে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমাবে এবং অর্থনৈতিক কষ্ট ডেকে আনবে।

ব্রাজিলের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক ইতিহাস ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পড়ুন – কেন ব্রাজিল সুপারপাওয়ার নয় (যদিও হওয়া উচিত!) (২৮ জুলাই, ২০২৪)

লুলার শাসনামলে ব্রাজিলের অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পড়ুন – লুলার আমলে ব্রাজিলের অর্থনৈতিক উন্নতির মূলে কাজ করছে মুলত “ভাগ্য” (১৮ অক্টোবর, ২০২৪)

সূত্র

https://www.ft.com/content/1c67dc52-4791-4c33-9412-6462b81b8078

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার আংশিক বন্ধের (shutdown) আশঙ্কা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (President elect Donald Trump) ওয়াশিংটন ডিসিকে (Washington, D.C.) চাপে রেখেছেন, সম্ভাব্য বড়দিনের (Christmas time) আগেই একটি দ্বিদলীয় বাজেট পরিকল্পনাকে (bipartisan budget plan) ভেস্তে দেওয়ার হুমকি দিয়ে। এই পরিকল্পিত বিলটি বর্তমান বাজেট বরাদ্দ বজায় রাখা, দুর্যোগ ত্রাণে (disaster relief) ১০০ বিলিয়ন ডলার এবং কৃষি সহায়তায় (farm aid) ১০ বিলিয়ন ডলার প্রদান করবে, পাশাপাশি আইনপ্রণেতাদের (lawmakers) বেতন বৃদ্ধি সহ (pay rise) নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত।

বুধবার, ট্রাম্প তার বিলিয়নিয়ার মিত্র এলন মাস্কের (Elon Musk) সাথে (যিনি সম্প্রতি সরকারি কার্যকারিতা বিভাগ (Department of Government Efficiency)-এর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন (tapped as head)) বিতর্কে যোগ দেন। সামাজিক মাধ্যম এক্স (X)-এ তার ২০০ মিলিয়নের বেশি অনুসারীদের সামনে একের পর এক পোস্ট করে তিনি বিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উসকে দেন। তিনি লেখেন “আপনার করের অর্থ অপহরণ বন্ধ করুন” (“stop the steal of your tax dollars”) এবং সমর্থকদের আইনপ্রণেতাদের সাথে যোগাযোগ করে বিলের বিরোধিতা করতে বলেন। তিনি আরও বলেন, যারা এই বাজেট বিলের পক্ষে ভোট দেবে তাদের পুনর্নির্বাচিত হওয়া উচিত নয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প পরবর্তীতে তার নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স (J.D. Vance)-এর সাথে যৌথ বিবৃতিতে বর্তমান বিলের বিরোধিতা করেন। তারা বলেন, কোনও ডেমোক্র্যাটিক ছাড় (Democrat giveaways) ছাড়া একটি সহজতর “স্টপগ্যাপ বিল” (stopgap bill) পাস করা উচিত। তারা আরও যোগ করেন যে এর বাইরে অন্য কিছু অনুমোদন করা “দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা” (betrayal of our country)। ট্রাম্প বিলটিতে ঋণের সীমা (debt ceiling) বাড়ানোর দাবিও তোলেন, যা তাকে ক্ষমতায় আসার পর ব্যয় ও করছাড় (tax cuts) দেওয়ার জন্য বেশি সুযোগ করে দেবে।

তবে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস (House) ক্ষীণ ব্যবধানে রিপাবলিকান (Republicans) নিয়ন্ত্রিত এবং সিনেট (Senate) ক্ষীণ ব্যবধানে ডেমোক্র্যাটদের (Democrats) নিয়ন্ত্রিত। ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন ছাড়া কোনও বিল পাস অসম্ভব। ট্রাম্পের এই হস্তক্ষেপ স্পিকার মাইক জনসনের (Mike Johnson) জন্য সবচেয়ে কঠিন, যিনি এই বাজেট পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন কিন্তু এখন ৩ জানুয়ারির (January 3rd) স্পিকারের পদে পুনরায় ভোটের আগে তার অবস্থান নড়বড়ে দেখাচ্ছে। ট্রাম্পের রাজনৈতিক “ব্রিংকসম্যানশিপ” (brinkmanship), মাস্কের বিশাল প্রভাব এবং কংগ্রেস ও ট্রাম্পের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা সম্ভবত ট্রাম্পের আগামীর প্রশাসনের একটি পূর্বাভাস।

সূত্র

https://thehill.com/homenews/administration/5047382-trump-government-spending-deal/
https://apnews.com/article/congress-budget-trump-musk-johnson-5dc9fd8672f9807189032811d4ab0528
https://www.reuters.com/world/us/us-house-speaker-defends-stopgap-spending-some-republicans-musk-balk-2024-12-18/

যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতির নতুন তথ্য

এবার যুক্তরাজ্যে (UK), যেখানে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (Bank of England) আবারও মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার তথ্য প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, নভেম্বর মাসে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে ২.৬% হয়েছে, যা অক্টোবরের ২.৩% থেকে বেশি।

এর একটি বড় প্রভাব হল যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এই সপ্তাহে সুদের হার কমাবে না। বরং ৪.৭৫% হারে সুদ বজায় রাখতে পারে। উল্লেখ্য, এ বছর ব্যাংক ইতোমধ্যেই দু’বার সুদের হার কমিয়েছে।

মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম চালক হল পরিবহন খাত (transport), যেখানে পেট্রোলের (petrol) লিটারপ্রতি দাম ০.৮ পেন্স বেড়েছে। এই খবর অর্থনীতিবিদ (economists) ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer) সম্ভাব্য তার অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রায় (milestone) পৌঁছাতে ব্যর্থ হতে পারেন।

ডেলয়েটের (Deloitte) অর্থনীতিবিদ ইয়ান স্টুয়ার্ট (Ian Stewart) ব্যাখ্যা করেছেন যে বড় ধরনের মুদ্রাস্ফীতি পতন (big declines in inflation) ইতোমধ্যেই পেছনে ফেলে এসেছি। আগামী বছর মুদ্রাস্ফীতি সম্ভবত ৩%-এর কাছাকাছি থাকবে, যা কেন্দ্রীয় লক্ষ্যমাত্রা ২%-এর চেয়ে বেশি। ৫%-এর বেশি হারে মজুরি বৃদ্ধি (wage growth) এবং সরকারি ব্যয়ের (government spending) উর্ধ্বগতি মুদ্রাস্ফীতিকে দীর্ঘ সময় ধরে বেশি মাত্রায় রাখার ঝুঁকি তৈরি করছে।

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির খারাপ অবস্থা সম্পর্কে জানতে – কেন এখন যুক্তরাজ্যের (UK) অর্থনীতি বেশ খারাপ দেখাচ্ছে (৯ ডিসেম্বর, ২০২৪)

আরও পড়ুন – যুক্তরাজ্যের (UK) অর্থনীতিতে ধস (১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪)

সূত্র

https://www.ft.com/content/06d172a6-5583-49f1-a2a3-76fb65091b4d
https://www.theguardian.com/business/2024/dec/18/uk-inflation-data-leaves-starmer-miles-off-goal-of-growth-felt-in-peoples-pockets

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ

এবার ইসরায়েল (Israel) নিয়ে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (Human Rights Watch বা HRW) গাজায় (Gaza) পানি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইসরায়েলকে গণহত্যামূলক কর্মের (act of genocide) সাথে যুক্ত করার অভিযোগ তুলেছে। এই অভিযোগে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে (deliberate actions) পরিষ্কার পানির সরবরাহ এতটা কমিয়ে দিয়েছে যে জনসংখ্যাকে দূষিত উৎসের পানি পান করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এর ফলে শিশুদের মধ্যে মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে।

এই কারণে HRW যুক্তি দিয়েছে যে ইসরায়েলের এই কার্যকলাপ বাস্তবে গণহত্যার সামিল। এর আগে এই মাসের শুরুর দিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (Amnesty International) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছিল।

ইসরায়েল অতীতে এমন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) এসব অভিযোগকে “মিথ্যা ও ন্যক্কারজনক” (false and outrageous) বলে বর্ণনা করেছেন।

আরও পড়ুন – অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল: যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনে গাজায় গণহত্যা (genocide) চালাচ্ছে ইসরায়েল

সূত্র

https://www.theguardian.com/world/2024/dec/19/israel-accused-of-act-of-genocide-over-restriction-of-gaza-water-supply-human-rights-watch

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

  • আয়ারল্যান্ড (Ireland)-ইসরায়েল (Israel) কূটনৈতিক বিরোধের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা
  • মরিশাস (Mauritius)-ইউকে (UK) চাগোস দ্বীপপুঞ্জ (Chagos Islands) সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে সংকট
  • ইরানে কঠোর হিজাব (hijab) আইনের কার্যকরকরণ স্থগিত
  • রাশিয়ায় জেনারেল হত্যার সন্দেহভাজন আটক: ইউক্রেনের সম্পৃক্ততা সন্দেহ

আয়ারল্যান্ড (Ireland)-ইসরায়েল (Israel) কূটনৈতিক বিরোধের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা

আয়ারল্যান্ড (Ireland) এবং ইসরায়েল (Israel)-এর মধ্যে বিদ্যমান কূটনৈতিক বিরোধ আরও গভীরতর হয়েছে। ইসরায়েল (Israel) সম্প্রতি ডাবলিনে (Dublin) অবস্থিত নিজেদের দূতাবাস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসরায়েলের (Israel) পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা’র (Gideon Saar) এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে আয়ারল্যান্ডের (Ireland) সরকারকে চিহ্নিত করেছেন, যাদের নীতিকে তিনি চরম পর্যায়ের “অ্যান্টি-ইসরায়েল (anti Israel)” বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েলি (Israeli) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী, আয়ারল্যান্ড (Ireland) ফিলিস্তিন (Palestinian) রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (International Criminal Court – ICC) ইসরায়েলি (Israeli) নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাকে সমর্থন করা, এবং আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার (International Court of Justice – ICJ)-এ ইসরায়েলের (Israel) বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) মামলাকে সহযোগিতা করা—এসবই ইসরায়েলের (Israel) প্রতি আয়ারল্যান্ডের (Ireland) শত্রুতামূলক মনোভাবের প্রমাণ।

ইসরায়েলের (Israel) ডাবলিন দূতাবাস জানায় যে আয়ারল্যান্ড (Ireland) বৈধ সমালোচনার সীমা অতিক্রম করেছে এবং তাদের কর্মকাণ্ড ও ভাষ্য ইসরায়েলকে (Israel) প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্যভাবে হেয় করার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে আয়ারল্যান্ডের (Ireland) তাইশাখ (Taoiseach) বা প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস (Simon Harris) ইসরায়েলের (Israel) এই পদক্ষেপকে “বিভ্রান্তিকর কূটনীতি (diplomacy of distraction)” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আপনি জানেন আমি কোন জিনিসটাকে নিন্দা করি? শিশু হত্যা। আমি মনে করি এটি নিন্দনীয়।” তিনি আরও বলেন, গাজায় (Gaza) যে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং আয়ারল্যান্ড (Ireland) বরাবরই ফিলিস্তিনিদের (Palestinians) পক্ষ অবলম্বন করে কথা বলে আসছে বলে তিনি গর্বিত।

এই বাদানুবাদের পর ইসরায়েলের (Israel) পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন হ্যারিসকে (Simon Harris) ইহুদিবিদ্বেষী (anti Semitic) বলে আখ্যায়িত করেন এবং ইসরায়েলের (Israel) বিরুদ্ধে উত্থাপিত শিশুদের উপবাসে রাখা বা সাহায্য পাঠাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। জবাবে সাইমন হ্যারিস (Simon Harris) জানান, তিনি ইসরায়েলি (Israeli) সরকারের কাছ থেকে আসা ব্যক্তি-নির্দিষ্ট এবং মিথ্যা অভিযোগের জবাব দেবেন না।

আয়ারল্যান্ডের (Ireland) প্রেসিডেন্ট মাইকেল ডি. হিগিন্স (Michael D. Higgins) অবশ্য ইসরায়েলি (Israeli) রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই ধরনের মন্তব্যের প্রত্যুত্তর দিয়েছেন। মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠানে, যেখানে তিনি ফিলিস্তিনি (Palestinian) রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করছিলেন, প্রেসিডেন্ট হিগিন্স বলেন, আয়ারল্যান্ডের (Ireland) জনগণকে ইহুদিবিদ্বেষী (antisemitism) বলা “গভীর অপবাদ (deep slander)”। তিনি বলেন, আয়ারল্যান্ড (Ireland) ইসরায়েলি (Israeli) প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর (Benjamin Netanyahu) কর্মপন্থা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, প্রতিবেশী তিনটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন ইত্যাদি কারণে তার বিরোধিতা করছে। আয়ারল্যান্ডের (Ireland) ইতিহাসের কারণে “উচ্ছেদ (dispossession), দখলদারিত্ব (occupation)” ইত্যাদি শব্দের মর্ম আয়ারল্যান্ডের (Ireland) মানসে গভীরভাবে প্রোথিত।

আইরিশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট (Irish Independent) পত্রিকা জানায়, আইরিশ সরকার (Irish government) এই বিরোধের সম্ভাব্য পরিণতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা উল্লেখ করে যে ইসরায়েল (Israel) দূতাবাস বন্ধের ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ডকে (Ireland) বিশেষভাবে বেছে নেওয়া হওয়াটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য (Middle East) থেকে আসা খবরে গাজায় (Gaza) যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকরা সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে হয়তো শিগগিরই একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। গাজা (Gaza) স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সোমবার জানান, গত ১৪ মাস ধরে চলা যুদ্ধের মধ্যে এখন পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

কেন আয়ারল্যান্ড হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে সবচেয়ে ফিলিস্তিনপন্থী সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে এখানে যান।

তথ্যসূত্র

https://www.rte.ie/news/ireland/2024/1217/1486987-ireland-israel/
https://www.independent.ie/irish-news/president-michael-d-higgins-says-it-is-slander-for-israeli-minister-to-accuse-irish-people-of-antisemitism-over-gaza-stance/a348839003.html
https://www.reuters.com/world/middle-east/israeli-foreign-minister-brands-irish-pm-antisemitic-2024-12-16/
https://news.un.org/en/story/2024/12/1158206

মরিশাস (Mauritius)-ইউকে (UK) চাগোস দ্বীপপুঞ্জ (Chagos Islands) সংক্রান্ত চুক্তি নিয়ে সংকট

যুক্তরাজ্য (United Kingdom – UK) সরকারের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা, কারণ মৌরিশাসের (Mauritius) নতুন প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ (Chagos Islands) নিয়ে ইউকের (UK) সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি তাদের সন্তুষ্ট করেনি। তিনি চুক্তিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছেন। মূল চুক্তিটি অক্টোবরে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেখানে ইউকে-র (UK) লেবার সরকার মৌরিশাসের (Mauritius) সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি দিয়েছিল। তবে ইউকে (UK) অন্তত ৯৯ বছরের জন্য দিয়েগো গার্সিয়া (Diego Garcia) দ্বীপের লিজ (lease) ধরে রাখত, যেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র (US)-ইউকে (UK) সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের অল্প কিছু পরেই মৌরিশাসে (Mauritius) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নতুন সরকার গঠিত হয়। নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নাভিন রামগুলান (Navin Ramgoolen) চুক্তির পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেন এবং মৌরিশিয়ান (Mauritian) সংসদে (parliament) মঙ্গলবার জানান, এই চুক্তি দেশটির প্রত্যাশিত সুবিধা দিতে পারবে না। তিনি লন্ডনে (London) পাল্টা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। যদিও তিনি পাল্টা প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত উল্লেখ করেননি, কিন্তু উল্লেখ করেছেন যে মৌরিশাস (Mauritius) এখনো যুক্তরাজ্যের (UK) সাথে একটি সমঝোতায় উপনীত হতে চায় এবং যুক্তরাজ্যের (UK) জবাব বর্তমানে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্য (UK) সরকার দাবি করেছে যে চুক্তিটি ভেঙে যাচ্ছে না, বরং নতুন মৌরিশিয়ান (Mauritian) সরকারের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যুক্তিসঙ্গত। তবে কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন যে বাইডেন প্রশাসন (Biden administration) যে চুক্তিকে সমর্থন দিয়েছিল, তা হয়তো ভাবি ট্রাম্প প্রশাসনের (Trump administration) অধীনে বাধাগ্রস্ত বা বিপন্ন হতে পারে।

তথ্যসূত্র

https://www.bbc.co.uk/news/articles/cm2ekk2pv1no
https://www.theguardian.com/world/2024/dec/17/uk-government-denies-rift-with-mauritian-pm-over-chagos-island-deal

ইরানে কঠোর হিজাব (hijab) আইনের কার্যকরকরণ স্থগিত

অন্য এক খবরে, ইরান (Iran) মহিলাদের জন্য কড়া হিজাব আইন কার্যকর স্থগিত করেছে। এই আইনে কঠোর শাস্তির বিধান ছিল যারা হিজাব পরিধান করতে অস্বীকার করে তাদের জন্য, পাশাপাশি যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এদের সেবা দিত তাদের জন্যও। আন্তর্জাতিক চাপ এবং ইরানের সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট মাসউদ পসেসকিয়ান (Massoud Possesskian)-এর বিরোধিতার পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি সতর্ক করেছিলেন যে কঠোর হিজাব আইন ২০২২ সালে মাহজো আমিনির (Mahzo Amini) মৃত্যুর পর যেসব বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল সেরকম আরো বিক্ষোভ উস্কে দিতে পারে।

মঙ্গলবার ইরানের (Iran) ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহরাম দাবিরি (Shahram Dabiri) ঘোষণা দেন যে আইনটি পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে (National Security Council), এবং এখন এই আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অনেক ইরানি (Iranian) নারী এখনও বাধ্যতামূলক হিজাব বিধি অমান্য করছেন, যা ইরানের (Iran) কঠোর ইসলামপন্থী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধের প্রতিফলন।

তথ্যসূত্র

https://www.dw.com/en/iran-temporarily-halts-strict-new-headscarf-law/a-71088907

রাশিয়ায় জেনারেল হত্যার সন্দেহভাজন আটক: ইউক্রেনের সম্পৃক্ততা সন্দেহ

গতকালের ডেইলি ব্রিফিং (Daily Briefing)-এর মূল খবরের হালনাগাদে জানা যাচ্ছে, রাশিয়া (Russia) বলছে তারা একজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে, যিনি মস্কোতে (Moscow) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইগর কুরিলভ (Igor Kurilov)-কে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার এই বোমা হামলার ঘটনায় ইগর কুরিলভ (Igor Kurilov) (যিনি রাশিয়ার (Russia) পারমাণবিক, জীবাণু ও রাসায়নিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান ছিলেন) তার বাসভবনের বাইরে নিহত হন। একই সাথে তার সহযোগীরাও নিহত হন। একটি ইলেকট্রিক স্কুটারে রাখা বোমাটি বিস্ফোরিত হয়।

ইউক্রেনের এসবিইউ (SBU) গোয়েন্দা সংস্থা এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। তারা অভিযোগ করে যে রাশিয়া (Russia) ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা রাশিয়া (Russia) অস্বীকার করে।

রাশিয়া (Russia) জানায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ইউক্রেনীয় বিশেষ পরিষেবার (Ukrainian special services) নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। এফএসবি (FSB) – রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার প্রকাশিত এক ভিডিওতে এক গম্ভীর চেহারার কৃষ্ণকেশী ব্যক্তি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে স্বীকারোক্তি দেন যে তাকে ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (European Union) প্রবেশের সুযোগের বিনিময়ে কুরিলভকে (Kirilov) হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

এফএসবি (FSB) জানায়, ইউক্রেনের (Ukraine) নির্দেশে ওই ব্যক্তি মস্কোতে (Moscow) গিয়েছিলেন এবং সেখানেই একটি হাতে-তৈরি বিস্ফোরক ডিভাইস (homemade explosive device) পান। সেটি তিনি একটি ইলেকট্রিক স্কুটারে স্থাপন করে কুরিলভের (Kirilov) অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের প্রবেশমুখে রেখে যান। এরপর তিনি একটি গাড়ি ভাড়া করেন এবং ড্যাশবোর্ডে একটি ক্যামেরা স্থাপন করেন, যা ইউক্রেনের দনিপ্রো (Dnipro) শহরে তার নির্দেশদাতাদের কাছে সরাসরি সম্প্রচার করছিল। এফএসবি (FSB)-র ভাষ্যমতে, যখন তারা দেখল কুরিলভ (Kirilov) বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন, তখন ওই ব্যক্তিকে দূরবর্তী নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

রাশিয়া (Russia) এই হত্যাকাণ্ডের জবাব দিতে অঙ্গীকার করেছে। এটি এমন একটি হত্যা, যা রাশিয়ান (Russian) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে শত্রুপক্ষের বেশ গভীরে গিয়ে পরিচালিত হয়েছে, এবং ইউক্রেনীয় (Ukrainian) কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার (Russia) নিরাপত্তা পরিষদের (Security Council) উপপ্রধান দিমিত্রি মেডভেদেভ (Dmitry Medvedev) নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে যারা আছে তাদের ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র

https://www.reuters.com/world/europe/russia-detains-suspect-over-murder-general-investigative-committee-says-2024-12-18/
https://www.ft.com/content/b3a24ce6-5d1a-4773-b6eb-96f5cf676a6b
https://www.bbc.co.uk/news/articles/cge9rv38x98o

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

  • মস্কোতে রাশিয়ান পরমাণু বাহিনীর প্রধান নিহত
  • কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সংকট
  • সিরিয়ার অপসারিত নেতা বাশার আল আসাদের নীরবতা ভাঙা
  • আর্জেন্টিনায় মন্দা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষণ

মস্কোতে রাশিয়ান পরমাণু বাহিনীর প্রধান নিহত

আজ (Today) রাশিয়ার পরমাণু বাহিনীর প্রধান (head of Russia’s nuclear forces) ইগর কিলিলভ (Igor Kililov), যিনি রাশিয়ান পারমাণবিক, রাসায়নিক ও জৈব প্রতিরক্ষা বাহিনীর (Nuclear, Chemical and Biological Defense Forces) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (Lt. Gen.) ছিলেন, মস্কো (Moscow) শহরে নিহত হয়েছেন। ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা (Security Service of Ukraine, SBU) মূল সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখনো পর্যন্ত কেউ দায় স্বীকার করেনি।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, আজ সকালে কিলিলভের মস্কোর বাসভবনের বাইরে স্কুটারে (scooter) রাখা বোমা বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন। ওই বিস্ফোরণে (explosion) কিলিলভের একজন সহকারীও নিহত হয়েছেন। এই হামলা ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ান আক্রমণ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে উচ্চপদস্থ কোনো রাশিয়ান সামরিক কর্মকর্তার মৃত্যু।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের অভিঘাত কাছাকাছি ভবনগুলিকে কাঁপিয়ে দেয়, জানালার কাঁচ চুরমার হয় এবং শrapnel (শ্র্যাপনেল) ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তকারী সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, বোমাটিতে প্রায় ১০০ থেকে ৩০০ গ্রাম টিএনটি (TNT) ছিল।

রাশিয়ার অনুসন্ধানী কমিটি (Investigative Committee) জানায় যে কিলিলভের হত্যাকাণ্ডের আগে ইউক্রেনের এসবিইউ (SBU) তাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে একটি নোটিশ ইস্যু করেছিল। অভিযোগ ছিল যে তিনি ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র (chemical weapons) ব্যবহার করেছিলেন। যদিও ইউক্রেন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘটনার ওপর মন্তব্য করেনি, একজন ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে কিলিলভকে লক্ষ্যবস্তু করা যুক্তিযুক্ত ছিল, কেননা অভিযোগ অনুযায়ী তার আদেশেই ৪,৮০০ বারের বেশি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল।

অপরদিকে মস্কো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিলিলভ যুক্তরাজ্যের (UK) নিষেধাজ্ঞার (sanctions) আওতায় ছিলেন, যা গত অক্টোবর মাসে তার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের দায়ে আরোপিত হয়েছিল। যুক্তরাজ্য তাকে ক্রেমলিনের (Kremlin) দুষ্প্রচারের (disinformation) একজন মুখপাত্র হিসেবেও চিহ্নিত করেছিল। তিনি প্রকাশ্যে করা বক্তব্যে (public briefings) নিয়মিত কিয়েভকে (Kyiv) রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার, নিউক্লিয়ার ডার্টি বোমা (nuclear dirty bomb) তৈরী এবং মশার মাধ্যমে রুশ বাহিনীতে ম্যালেরিয়া (malaria) ছড়ানোর ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে আসছিলেন।

তথ্যসূত্র –

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সংকট

সোমবার কানাডার (Canada) প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে চরম অস্বস্তিকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, কারণ তার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী (Deputy Prime Minister) ও অর্থমন্ত্রী (Finance Minister) ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড (Chrystia Freeland) আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন।

ফ্রিল্যান্ড তার পদত্যাগপত্র এক্স (X, সাবেক টুইটার) এ প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো গত শুক্রবার তাকে অর্থমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে বলেন। ফ্রিল্যান্ড এ ঘটনাকে তার প্রতি অনাস্থা হিসেবে দেখেন এবং জানান যে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি ট্রুডোর সঙ্গে মতানৈক্যে ছিলেন। ফ্রিল্যান্ড ইঙ্গিত দেন যে ট্রুডো যুক্তরাষ্ট্রের (US) নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) আরোপিত সম্ভাব্য শুল্ক হুমকি (tariff threats) মোকাবেলায় অক্ষম।

তিনি তার চিঠিতে সতর্কতার সুরে লেখেন যে তাদের সরকার শিগগিরই পতনের মুখে পড়বে। একটি ঐক্যবদ্ধ কানাডা (United Canada) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক হুমকির বিরুদ্ধে লড়তে পারবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ফ্রিল্যান্ডের পদত্যাগের পর কানাডীয় রাজনীতিবিদরা দ্রুত ট্রুডোর পদত্যাগের আহ্বান জানান। বিরোধী নেতা পিয়ের পোলিয়েভ (Pierre Poilievre) বলেন যে সরকার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে এবং ট্রুডোকে নির্বাচন আহ্বান করতে হবে। ব্লক কেবেকোয়া (Bloc Quebecois) নেতাও ট্রুডোকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে এবং ২০২৫ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন ডাকতে বলেন।

নতুন গণতান্ত্রিক পার্টির (New Democratic Party) নেতা জাগমিত সিং (Jagmeet Singh) ট্রুডোর পদত্যাগ দাবি করলেও সরকার ফেলার পক্ষে সরাসরি ভোট দেওয়ার কথা বলেননি, বরং “সব বিকল্প টেবিলে রয়েছে” বলে মন্তব্য করেন।

এমনকি ট্রুডোর নিজ দল, লিবারেল পার্টির (Liberal Party) ভেতরেও তিনি চরম অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। শোনা যাচ্ছে প্রায় ৬০ জন লিবারেল সংসদ সদস্য, অর্থাৎ দলের প্রায় ৪০%, একটি চিঠিতে সই করতে যাচ্ছেন, যেখানে ট্রুডোর নেতৃত্বে পরবর্তী নির্বাচনে যাওয়ার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হবে।

ট্রুডো পদত্যাগ করবেন কি না, সেটি সম্পূর্ণ তার নিজের ওপর নির্ভরশীল। তবে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় (British Columbia) উপনির্বাচনে (by election) লিবারেলদের হার এবং সেই আসন কনসারভেটিভদের (Conservatives) দখলে যাওয়া, ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রুডোর অবস্থানকে সবচেয়ে দুর্বল করে তুলেছে। তার স্বীকৃত জনপ্রিয়তা এখন বিশ্বের নিম্নতম Approval Ratingগুলোর (approval ratings) মধ্যে একটি।

কানাডায় ট্রুডোর কঠিন সময় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে যান।

তথ্যসূত্র

https://x.com/cafreeland/status/1868659332285702167/photo/1
https://www.cbc.ca/player/play/video/9.6593800
https://www.ipsos.com/en-ca/approval-trudeaus-performance-just-33-canadians-call-parliament-focus-cost-living

সিরিয়ার অপসারিত নেতা বাশার আল আসাদের নীরবতা ভাঙা

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা বাশার আল আসাদ, যিনি এক সপ্তাহ আগে দ্রুতগতিতে ক্ষমতা হারিয়েছেন, অবশেষে নীরবতা ভেঙেছেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্সির টেলিগ্রাম (telegram) চ্যানেলে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আসাদ জানান যে তিনি ৮ ডিসেম্বর দামেস্ক (Damascus) ত্যাগ করেন। এর এক দিন আগে বিরোধী বাহিনী (anti regime forces) শহরটি দখল করে, যার মাধ্যমে তার ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

আসাদ দাবি করেন যে তিনি বিদ্রোহী বাহিনীর (rebel forces) বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন এবং শেষ অবধি দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যে বিমানঘাঁটিতে (airbase) তিনি অবস্থান করছিলেন, সেখানে হামলার পর রুশ বাহিনী (Russian forces) তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তার অবস্থান আগে অজ্ঞাত ছিল, তবে রাশিয়া জানায় যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে আলোচনা শেষে আসাদ সিরিয়া ত্যাগ করেন।

বিবৃতিতে আসাদ বলেন, তিনি কখনও পদত্যাগ বা দেশত্যাগের মাধ্যমে আশ্রয় নেওয়ার চিন্তা করেননি এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য কখনও পদ চাননি। তবে কয়েক ডজন সূত্র রয়টার্সকে (Reuters) জানায় যে আসাদ অন্তত ২ ডিসেম্বর থেকেই দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজছিলেন এবং প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (UAE) আশ্রয় চাইলে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

তথ্যসূত্র

https://news.sky.com/story/ousted-syrian-leader-bashar-al-assad-issues-first-statement-since-fall-of-regime-13274940
https://www.reuters.com/world/middle-east/assads-final-hours-syria-deception-despair-flight-2024-12-13/

আর্জেন্টিনায় মন্দা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষণ

এবার নজর আর্জেন্টিনায়, যেখানে দেশের অর্থনীতি দীর্ঘ মন্দা (recession) শেষে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালে, আগের প্রান্তিকের তুলনায় দেশটির জিডিপি (GDP) ৩.৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালের শেষ দিকে মন্দায় পতিত হওয়ার পর এটি প্রথম প্রবৃদ্ধি।

জেপি মরগান (JP Morgan) বিশ্লেষকরা আশা করছেন যে ২০২৪ সালে আর্জেন্টিনার অর্থনীতি এখনো ৩% হ্রাস পাবে, তবে ২০২৫ সালে ৫.২% বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে। এই খবর আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই (Javier Milei)-এর জন্য স্বস্তি নিয়ে আসবে। তিনি ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক সরকারি ব্যয় কর্তন (spending cuts) এবং ডেরেগুলেশনের (deregulation) মাধ্যমে উচ্চ মাত্রার মুদ্রাস্ফীতি (inflation) নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন, ফলে আর্জেন্টিনার সার্বভৌম বন্ডের (sovereign bonds) মূল্য বেড়েছে।

তবে দক্ষিণ আমেরিকার (South American) এই দেশটিতে সবকিছু এখনো সুগম নয়। মিলেই ক্ষমতায় আসার পর রাজস্ব ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ নেন, কিন্তু ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে দারিদ্র্যের হার (poverty rate) ১১ পয়েন্ট বেড়ে ৫৩%-এ পৌঁছায়। এছাড়াও অনেক কাজ বাকি আছে। তাকে আর্জেন্টিনার মুদ্রা ও মূলধন নিয়ন্ত্রণ (capital and currency controls) তুলে নিতে হবে, যা বিদেশি বিনিয়োগ (foreign investment) বাধাগ্রস্ত করছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (central bank) রিজার্ভ বৃদ্ধির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে। এসব কাজ সহজ হবে না।

আর্জেন্টিনায় মিলেই-এর সাফল্য সম্পর্কে জানতে এখানে যান।

তথ্যসূত্র –

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ – সোমবার

  • কেন যুক্তরাজ্য CPTPP-তে যোগ দিল?
  • দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্ট
  • জার্মানিতে ওলাফ শলৎসের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট
  • জামাইকার রাজতন্ত্র বিলুপ্তির উদ্যোগ

কেন যুক্তরাজ্য CPTPP-তে যোগ দিল?

 

মূল কথা

বছরের পর বছর ধরে চলা আলোচনা এবং গত বছর একটি নীতিগত চুক্তি (in principle agreement) সম্পাদনের পর, অবশেষে যুক্তরাজ্য সিপিটিপিপি বা কমপ্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ অ্যাগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপে (Comprehensive and Progressive Agreement for Trans-Pacific Partnership) যোগদান করেছে। এর ফলে যুক্তরাজ্য এই ব্লকে যোগদানকারী প্রথম ইউরোপীয় দেশ।

সিপিটিপিপি কী?

সিপিটিপিপি (CPTPP) হলো একটি বিশাল ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (free trade agreement) যা অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনেই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, এবং এখন যুক্তরাজ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে।

প্রকৃতপক্ষে এই চুক্তির ধারণা ২০০৯ সালে বারাক ওবামার (Barack Obama) সময়ে উঠে আসে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা এই সিপিটিপিপিকে এশিয়ায় মার্কিন অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি স্তম্ভ হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। মূল পরিকল্পনা ছিল এত বড় একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে একটি বাণিজ্য ব্লক গড়ে তোলা, যাতে পরবর্তীতে চীন (China) যোগ দিতে আগ্রহী হয়। এরপর চীনের যোগদানের আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাঙ্ক্ষিত নিয়ম-কানুন যেমন মেধাস্বত্ব (intellectual property) সংরক্ষণ ও রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের (state-owned enterprises) নিয়ন্ত্রণের মত বিষয়গুলো চীনের ওপর চাপিয়ে দিতে পারত, যা সিপিটিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) প্রেসিডেন্ট হওয়ার মাত্র তিনদিন পরই এই ব্লক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেন, কারণ তিনি সাধারণত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (free trade deals) পছন্দ করতেন না। যদিও ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে গিয়েছিলেন, জাপান (Japan) বাকি দেশগুলোর সাথে এগিয়ে যায়।

সিপিটিপিপির বৈশিষ্ট্য

সিপিটিপিপি অন্যান্য ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টের মতই সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করে। এটি মূলত দুটি উপায়ে করে: কিছু নিয়মকানুনের মান একীভূত (harmonizing) করা এবং শুল্ক (tariffs) হ্রাস করা। সিপিটিপিপির সদস্যদের মধ্যে প্রায় সব ধরনের পণ্যে শুল্ক প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে, কিছু সংবেদনশীল পণ্যের (sensitive goods) ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে।

এই চুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটির উন্মুক্ততার নিয়ম (rules of origin) যা বিদেশি পণ্যকে সিপিটিপিপির আওতায় বিনা শুল্কে প্রবেশ করার সুযোগ রোধ করে।

কিন্তু সিপিটিপিপিকে বিশেষ করে তোলে এর ব্যাপকতা। এটি শুধু SPS (Sanitary and Phytosanitary) নিয়মকানুনের মান একীভূতকরণ ও শুল্ক হ্রাস করা পর্যন্ত সীমিত নয়, বরং এতে শ্রম অধিকার (labour rights), পরিবেশ সংরক্ষণ (environmental protections), রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ, এমনকি বেশ শক্তিশালী প্রয়োগ ব্যবস্থা (robust enforcement mechanism)-ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বেশির ভাগ ফ্রি ট্রেড চুক্তিতে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে, এসব বিষয় সাধারণত অন্তর্ভুক্ত হয় না।

যুক্তরাজ্যের যোগদানের পটভূমি

যুক্তরাজ্য ২০২১ সালের শুরুর দিকে সিপিটিপিপিতে যোগদানের আবেদন করে। তখন বরিস জনসন (Boris Johnson) নেতৃত্বাধীন সরকার ইইউ (EU) থেকে বেরিয়ে এসে (ব্রেক্সিট: Brexit) নতুন স্বাধীনতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর গত বছরের মার্চে ঋষি সুনাক (Rishi Sunak) এর প্রশাসনের অধীনে চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়।

চুক্তি সম্পাদনের পর বিশ্লেষকরা বলেন, এটি যুক্তরাজ্যের জিডিপিকে (GDP) ০.১% এরও কম বৃদ্ধি করবে। বিরোধী নেতা কিয়ার স্টার্মার (Keir Starmer) তখন এই চুক্তিকে ব্রেক্সিটজনিত অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় নগণ্য বলে অভিহিত করেছিলেন। তবুও লেবার (Labour) দল এখন এই চুক্তি এগিয়ে নিয়েছে, সম্ভবত এই যুক্তিতে যে ০.১% প্রবৃদ্ধিও কিছুটা হলেও লাভজনক।

সূত্র –

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্ট

শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল (Yoon Suk Yeol) জাতীয় সংসদ (National Assembly) কর্তৃক ইমপিচ হয়েছেন। অভিযোগ হলো, দুই সপ্তাহ আগে তিনি সামরিক শাসন (martial law) জারির একটি ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। গত এক সপ্তাহে এটি ছিল দ্বিতীয়বারের মত ইমপিচ প্রচেষ্টা। প্রথম প্রচেষ্টায় যথেষ্ট সংখ্যক ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলীয় (conservative party) সংসদ সদস্য ভাঙা রেওয়াজে ভোট না দেওয়ায় তা ব্যর্থ হয়েছিল।

কিন্তু সপ্তাহব্যাপী চলমান ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে শনিবার আবার ইমপিচমেন্ট ভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং এবার সফল হয়। প্রেসিডেন্টের নিজ দল থেকে ১২ জন সাংসদ বিরোধী দলের সাথে মিলে ভোট দেওয়ায় ২/৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা মাত্র চার ভোটের ব্যবধানে অর্জিত হয়।

ফলস্বরূপ, ইউন সাময়িকভাবে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বরখাস্ত (suspend) হয়েছেন এবং এখন বিষয়টি সাংবিধানিক আদালতে (Constitutional Court) যাবে। আদালত ছয় মাসের মধ্যে এই ইমপিচমেন্ট নিশ্চিত বা বাতিল করতে হবে। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister) ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

ইমপিচমেন্ট চূড়ান্তভাবে কার্যকর করতে নয় আসনের আদালতের অন্তত ছয়জন বিচারকের পক্ষে রায় দিতে হবে। বর্তমানে তিনটি আসন শূন্য, অর্থাৎ এখনকার ছয়জন বিচারক সবাই মিলে একমত হলেই ইমপিচমেন্ট চূড়ান্তভাবে গৃহীত হবে। যদি আদালত ইমপিচমেন্ট মেনে নেয়, তবে ইউন অফিসিয়ালি পদচ্যুত হবেন এবং ৬০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সাম্প্রতিক এই মার্শাল ল (martial law) নাটকের পেছনে আরও অনেক কিছু রয়েছে।

এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার জন্য এখানে যান।

সূত্র –

জার্মানিতে ওলাফ শলৎসের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট

এবার নজর জার্মানির দিকে। সেখানে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস (Olaf Scholz) আজ (সোমবার) বুন্দেস্ট্যাগে (Bundestag) একটি অনাস্থা ভোটে (confidence vote) পরাজিত হতে পারেন। অনাস্থা ভোটটি এসেছে তার কথিত “ট্রাফিক লাইট কোয়ালিশন” (traffic light coalition) ভেঙে যাওয়ার পর। এই কোয়ালিশন গঠিত হয়েছিল তার এসডিপি (SPD: Social Democratic Party), গ্রিনস (Greens) ও এফডিপি (FDP: Free Democratic Party) নিয়ে।

২০২১ সালে গঠিত এই কোয়ালিশন শুরু থেকেই মতবিরোধ ও রাজনৈতিক অন্তর্কলহে জর্জরিত ছিল। গত মাসের গোড়ার দিকে অর্থমন্ত্রী (Finance Minister) এবং এফডিপি নেতা ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনারকে (Christian Lindner) পদচ্যুত করার পর কোয়ালিশন পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।

এরপর শলৎস প্রতিশ্রুতি দেন তিনি একটি অনাস্থা ভোট আহ্বান করবেন। এটি গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে জমা পড়ে। আজ দুপুর নাগাদ তিনি বুন্দেস্ট্যাগে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেবেন এবং বিকেল ৪টার দিকে রোল কল ভোটে (roll call vote) এর মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারিত হবে।

অনেকেই ধারণা করছেন শলৎস পরাজিত হবেন। তবে শোনা যাচ্ছে, ডানপন্থী এএফডি (AfD: Alternative for Germany) দলের কয়েকজন সংসদ সদস্য কৌশলে শলৎসকে সমর্থন করতে পারেন। তাদের পরিকল্পনা হল শলৎসকে ক্ষমতায় রেখে আগামী সাধারণ নির্বাচনের (general election) দিন পিছিয়ে দেওয়া, যা এখন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। জরিপ অনুযায়ী কেন্দ্রে ডানপন্থী CDU (centre-right CDU) নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্টজ (Friedrich Merz) সম্ভবত সেই নির্বাচনে জয়ী হবেন।

যদি শলৎস অনাস্থা ভোটে পরাজিত হন, তবে ২৩শে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের তারিখ নিশ্চিত হবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী জার্মান চ্যান্সেলর ও সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে।

জার্মান গ্রিন (Green) পার্টির সমর্থন কেন সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে তা জানতে এখানে যান।

সূত্র –

জামাইকার রাজতন্ত্র বিলুপ্তির উদ্যোগ

জামাইকা (Jamaica) সম্প্রতি পার্লামেন্টে (Parliament) একটি বিল উত্থাপন করেছে যা রাজা তৃতীয় চার্লসকে (King Charles III) রাষ্ট্রপ্রধানের (head of state) পদ থেকে অপসারণ করে, দেশটিকে প্রজাতন্ত্রে (republic) রূপান্তর করার প্রস্তাব দেয়।

জামাইকা ১৯৬২ সাল থেকে স্বাধীন, তবে এর আগে এটি ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ (British colony)। স্বাধীনতার পরেও ব্রিটিশ রাজাকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে রাখা হয়েছিল, যার প্রতিনিধি ছিলেন গভর্নর জেনারেল (governor general)। তবে অনেকের কাছে এটি উপনিবেশিক আমলের (colonial legacy) স্মারক হিসেবে বিবেচিত।

জামাইকার আইনি ও সাংবিধানিক বিষয়ক মন্ত্রী (Minister of Legal and Constitutional Affairs) মার্লিন মালাহু ফোর্ট (Marlene Malahoo Forte) গত বুধবার বিলটি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এটি জামাইকান জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি। দ্য গার্ডিয়ান (The Guardian) পত্রিকাকে তিনি বলেন, “প্রতি বছর ৬ই অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস (Independence Day) উদ্‌যাপনের সময় আমরা স্বাধীনতার পর কী অর্জন করেছি এবং কী বাকি আছে তা নিয়ে ভাবি। প্রতি বছরই প্রশ্ন ওঠে, কবে আমরা রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে একজন জামাইকানকে রাষ্ট্রপ্রধান করব? দিনশেষে বিষয়টি দলীয় রাজনীতি নিয়ে নয়, জাতি ও জনগণের স্বার্থ নিয়ে, আমাদের দেশের স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করার ব্যাপার।”

বিলটি আইনে পরিণত হতে গেলে এটি যৌথ কমিটি (joint committee) দ্বারা পর্যালোচনা, পার্লামেন্টে ভোট এবং একটি জাতীয় গণভোট (national referendum) অতিক্রম করতে হবে। যদি পাস হয়, তবে একজন জামাইকান প্রেসিডেন্ট (Jamaican President) আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান হবেন, যা দেশের পূর্ণাঙ্গ প্রজাতন্ত্রে উত্তরণের চিহ্ন হবে।

সূত্র –

১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ – শুক্রবার

  • ম্যাক্রঁর আরেকজন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ
  • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেনের ক্ষমার (clemency) ঘোষণা
  • জর্জিয়ায় (Georgia) চলমান গণবিক্ষোভ ও ইউরোপীয় সাংসদদের (MEPs) উপস্থিতি
  • যুক্তরাজ্যের (UK) অর্থনীতিতে ধস
  • টোকিও সরকারের চার দিনব্যাপী কর্ম সপ্তাহ উদ্যোগ

ম্যাক্রঁর আরেকজন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট (President) ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ (Emmanuel Macron) এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পরামর্শ, জল্পনা এবং প্রত্যাশার পর অবশেষে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেছেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হলেন ফ্রাঁসোয়া বাইরু (François Bayrou)। এ নিয়ে বছরের শুরু থেকেই ফ্রান্সের এটি চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী। বাইরু হলেন মধ্যপন্থী ম্যাক্রঁ-সমর্থিত ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (Democratic Movement) পার্টির নেতা এবং তিনি ম্যাক্রঁর দীর্ঘদিনের মিত্র, যিনি ২০১৭ সালে ম্যাক্রঁ প্রথমবার প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানোর সময় তাকে সমর্থন করেছিলেন।

ম্যাক্রঁকে আবারও নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিতে হয়েছে কারণ তখনকার প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে (Michel Barnier) গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদের (National Assembly) অচলাবস্থায় (gridlock) ক্ষমতা হারান। মঙ্গলবার আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক পরামর্শের পর ম্যাক্রঁ নিজেকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা দেন নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের জন্য। কিন্তু তিনি সেই সময়সীমা অতিক্রম করেন। পরবর্তীতে শুক্রবার সকালে ঘোষণা দেওয়ার নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শুক্রবার সকাল গড়িয়ে দুপুর পার হওয়া পর্যন্তও কোন ঘোষণা আসেনি। শেষমেশ শুক্রবার সকালে ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদের সাথে দীর্ঘ এবং কথিতভাবে উত্তেজনাপূর্ণ বৈঠকের পর ম্যাক্রঁ ফ্রাঁসোয়া বাইরুকেই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন।

গত গ্রীষ্মের আকস্মিক আইনসভা নির্বাচনের (snap legislative election) পর থেকে ফ্রান্স রাজনৈতিক সংকটে রয়েছে। এই নির্বাচনে জাতীয় সংসদ তিনটি বড় ভাগে বিভক্ত হয়েছে – বাম, কেন্দ্র এবং ডানপন্থী ব্লক, যেখানে পরিষ্কার কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ মেলেনি। ম্যাক্রঁ একসময় ডানপন্থী মিশেল বার্নিয়েকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি আশায় ছিলেন যে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সংসদে বিপর্যস্ত হবেন না। কিন্তু বার্নিয়ে টিকেছিলেন মাত্র ৯০ দিন, তারপরে এক অনাস্থা ভোটে (no confidence vote) বাজেটসংক্রান্ত অচলাবস্থার (budgetary impasse) মধ্যে তাকে ক্ষমতা হারাতে হয়। এতে বার্নিয়ে ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্পকালীন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান।

বার্নিয়ের অপসারণের ফলে ২০২৫ সালের জন্য এখনো ফ্রান্সের অনুমোদিত বাজেট (budget) নেই। বছরের শেষের অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে আগামী সপ্তাহে আইনপ্রণেতারা একটি অস্থায়ী অর্থায়ন ব্যবস্থা (stopgap funding measure) পাস করতে পারেন, যা নতুন বছরের প্রারম্ভ পর্যন্ত ফ্রান্সকে চালিয়ে নিতে সহায়তা করবে। তবে দীর্ঘমেয়াদী বাজেটের সমাধান খোঁজা বাইরুর অগ্রাধিকারের তালিকার শীর্ষে থাকবে এবং সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। এখন প্রশ্ন হলো, বাইরু কি সত্যিই কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুঁজে পেতে সক্ষম হবেন, নাকি অন্তত বামপন্থী জোট ন্যূপেস (NUPES) (ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ পিপলস ফর দ্য এনভায়রনমেন্ট) অথবা ডানপন্থী উগ্র জাতীয় র‍্যালি (National Rally)-র মতো শত্রুভাবাপন্ন দলগুলোকে তার সরকার ফেলে দেওয়া থেকে নিবৃত্ত করতে পারবেন?

তবে বাইরুর ম্যাক্রঁ-ঘনিষ্ঠতা উভয় প্রান্তের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খুব একটা ভালোভাবে গৃহীত হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ফ্রান্সের সরকার পতন সম্পর্কে জানতে এখানে যান।

সূত্র – 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেনের ক্ষমার (clemency) ঘোষণা

বৃহস্পতিবার, বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট (outgoing US President) জো বাইডেন প্রায় ১,৫০০ জনের সাজা লঘু (commute) করেছেন এবং আরও ৩৯ জনকে পূর্ণ ক্ষমা (pardon) দিয়েছেন। এটিই আধুনিক আমেরিকার ইতিহাসে এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ক্ষমা প্রদান। বাইডেন বলেন, তিনি দয়া (mercy) দেখিয়েছেন তাদের প্রতি যারা অনুশোচনা ও সংশোধনের প্রক্রিয়ায় এগিয়ে গেছে। হোয়াইট হাউস (White House) জানিয়েছে, ৩৯ জন যাদের ক্ষমা করা হয়েছে তারা সবাই সহিংস নয় এমন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল। আর দেড় হাজার যাদের সাজা লঘু করা হয়েছে, তারা COVID-19 মহামারির (COVID 19 pandemic) সময় গৃহবন্দিত্ব (home confinement) অবস্থায় ছিল এবং সফলভাবে তাদের পরিবার ও সম্প্রদায়ে পুনঃএকীভূত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কাছে ক্ষমা বা সাজার লাঘব করার (commutation) ক্ষমতা থাকে। ক্ষমা (pardon) মানে দোষ ও শাস্তি থেকে পুরো মুক্তি দেওয়া, আর সাজার লাঘব (commute) মানে শাস্তির মেয়াদ কমানো বা বিলুপ্ত করা, তবে অপরাধের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া নয়। সাধারণত বিদায়ী প্রেসিডেন্টরা তাদের মেয়াদের শেষ দিকে এই ক্ষমা প্রদান করেন। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার ছেলে হান্টার বাইডেন (Hunter Biden)-কে ক্ষমা করায় (যিনি অস্ত্র ও কর সংক্রান্ত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন) সমালোচনার মুখে পড়েন।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press) জানিয়েছে, বাইডেন বিভিন্ন পক্ষের চাপের মুখে আছেন, যাতে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেওয়ার আগে ফেডারেল ডেথ রো (federal death row) সহ বহু ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন।

সূত্র –

জর্জিয়ায় (Georgia) চলমান গণবিক্ষোভ ও ইউরোপীয় সাংসদদের (MEPs) উপস্থিতি

গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জর্জিয়ায় বিশাল গণবিক্ষোভ (mass protests) চলছে পার্লামেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে। বৃহস্পতিবার ছয়জন ইউরোপীয় সংসদ সদস্য (European MEPs) জর্জিয়ায় গিয়েছেন সরকারের ইইউ (EU) অন্তর্ভুক্তি আলোচনা (accession talks) ২০২৮ সাল পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হওয়া একটি মিছিলে যোগ দিতে। এটি দেখায় যে বিরোধী আন্দোলন বর্তমানে কতটা গতিশীল।

এই ছয়জন ইউরোপীয় সংসদ সদস্য হলেন লিথুয়ানিয়ার রাসা জুকনেভিচেনি (Lithuania’s Rasa Juknevičienė) এবং পোল্যান্ডের মিখাল শেরবা (Poland’s Michał Szczerba), দুজনেই কেন্দ্র-ডানপন্থী ইউরোপীয় পিপলস পার্টির (European People’s Party) সদস্য; ফ্রান্সের নাতালি লোয়াজো (France’s Natalie Loiseau) এবং বারনার্ড গেত্তা (Bernard Guetta) সেন্ট্রিস্ট রিনিউ গ্রুপের (centrist Renew group) সদস্য; জার্মানির টোবিয়াস ক্রেমার (Germany’s Tobias Kramer), যিনি বামপন্থী সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাট (Socialist and Democrat) ব্লকের সদস্য; এবং নেদারল্যান্ডসের রেইনিয়ার ভ্যান লানশট (the Netherlands’ Reinier van Lanschot) যিনি গ্রিনস (Greens) দলের সদস্য।

এদিকে, পুলিশের তীব্র সহিংসতার (heavy police violence) খবর পাওয়া গেছে, যেখানে অন্তত ৪০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে আছে বিরোধী দলের নেতা ও অ্যাক্টিভিস্টরা। শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার কারণে চিকিৎসা নিয়েছে। ৫০ জনেরও বেশি সাংবাদিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই বিক্ষোভ মূলত শুরু হয়েছিল ২৬শে অক্টোবরের পার্লামেন্ট নির্বাচন ফলাফলকে কেন্দ্র করে, যেখানে রাশিয়া-সমর্থিত (pro Russian) ক্ষমতাসীন জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি (Georgian Dream Party) ৫৩% ভোট পেয়ে ক্ষমতায় থেকে যায়। কিন্তু নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে – ব্যালট বাক্সে কারচুপি (stuffing ballot boxes), ভোটকেন্দ্রে হয়রানি (harassment at polling stations) এবং জর্জিয়ান ড্রিম সমর্থকদের হাতে একাধিক ব্যালট পেপার দেওয়ার মতো ঘটনা।

সূত্র –

যুক্তরাজ্যের (UK) অর্থনীতিতে ধস

যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য আরও খারাপ খবর হলো, অক্টোবরে দেশটির জিডিপি (GDP) অপ্রত্যাশিতভাবে ০.১% হ্রাস পেয়েছে। এটি সেপ্টেম্বরেও একই অনুপাতে (০.১%) হ্রাস পেয়েছিল, যা কোভিড (COVID) মহামারির শুরু পরবর্তী প্রথম টানা দুই মাসের পতন।

অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স (Office for National Statistics)-এর অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বিভাগের পরিচালক বলেন, সার্বিকভাবে সেবা খাত (services) কোনো বৃদ্ধি দেখায়নি, উৎপাদন (production) ও নির্মাণ (construction) উভয়েই কমেছে। তেলের (oil) ও গ্যাস উত্তোলন (gas extraction), পাব (pubs) ও রেস্টুরেন্ট (restaurants) এবং খুচরা বিক্রি (retail) সবই দূর্বল মাস পার করেছে, যদিও টেলিকম (telecoms), লজিস্টিকস (logistics) এবং আইনি সংস্থা (legal firms) কিছুটা প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের শ্যাডো চ্যান্সেলর (Shadow Chancellor), কনজারভেটিভ (Conservative) মেল স্ট্রাইড (Mel Stride) বলেছেন, এই সর্বশেষ উপাত্ত চ্যান্সেলরের (Chancellor) সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব এবং অর্থনীতিকে ক্রমাগত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার ফলাফল। অন্যদিকে চ্যান্সেলর র‍্যাচেল রিভস (Rachel Reeves), যদিও স্বীকার করেছেন যে তথ্যগুলো হতাশাজনক, তবুও বলেছেন, “আমরা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (long term economic growth) নিশ্চিত করতে নীতি গ্রহণ করেছি।” এই সাম্প্রতিক তথ্য, যা অনেক সময় অস্থির এবং সংশোধন-সাপেক্ষ, লেবার (Labour) সরকারের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জের গভীরতাকে দেখায়। বিশেষ করে জুলাইয়ে সাধারণ নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসার পর তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে তাদের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে।

কেন এখন যুক্তরাজ্যের (UK) অর্থনীতি বেশ খারাপ দেখাচ্ছে এই ব্যাপারে আরও জানতে এখানে যান।

সূত্র –

টোকিও সরকারের চার দিনব্যাপী কর্ম সপ্তাহ উদ্যোগ

টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার (Tokyo Metropolitan Government) আগামী বসন্ত থেকে তাদের কর্মচারীদের জন্য চার দিনব্যাপী কর্ম সপ্তাহ (four day working week) চালু করবে। এই উদ্যোগ জাপানের (Japan) নিম্ন জন্মহার (low birth rate) সংশোধনে সহায়তা করার লক্ষ্যে গ্রহণ করা হচ্ছে। আগামী এপ্রিল থেকে কর্মীরা প্রতি সপ্তাহে তাদের পছন্দমতো একটি দিন অতিরিক্ত ছুটি নিতে পারবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বাড়তি নমনীয়তা (flexibility) এবং বেশি অবসর সময় শিশু লালন-পালনকে (child rearing) সহজতর এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকারগুলোর চার দিনব্যাপী কর্ম সপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার ফলে দেখা গেছে উৎপাদনশীলতা (productivity) বৃদ্ধি, কর্মী আকর্ষণ ও ধরে রাখার (retain staff) সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অসুস্থতার জন্য কর্মী অনুপস্থিতি (loss of work due to illness) হ্রাস পেয়েছে। তুলনামূলকভাবে, জাপানে একটি নজিরবিহীন জন্মহার সংকট (fertility crisis) রয়েছে, যাকে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা (Prime Minister Shigeru Ishiba) “নিঃশব্দ জরুরি অবস্থা (quiet emergency)” বলে উল্লেখ করেছেন, যা দেশের ভিত্তিমূলকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

জাপানের বর্তমান প্রজনন হার (fertility rate) ১.৩, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন হারগুলোর একটি। ২০২৪ সালে জাপানে জন্মগ্রহণকারী শিশুর সংখ্যা ৭,০০,০০০ এর নিচে নেমে যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা ১৮৯৯ সালে রেকর্ড রাখার শুরু থেকে কখনো ঘটেনি। এই উদ্বেগজনক প্রবণতা কাটাতে টোকিওর প্রচেষ্টায় বেশ কিছু নতুন ধরনের সমাধান চেষ্টা করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চলতি বছরের শুরুর দিকে মেট্রোপলিটন সরকার একটি ডেটিং অ্যাপ (dating app) চালু করেছে, যেখানে ব্যবহারকারীদের অঙ্গীকার করতে হয় যে তারা স্বল্পমেয়াদী সম্পর্কের জন্য নয়, বরং বিয়ে ও সন্তান নেওয়ার উদ্দেশ্যে সত্যিকারের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য এটি ব্যবহার করবে।

সূত্র –

১২ ডিসেম্বর ২০২৪ – বৃহস্পতিবার

  • শেঙ্গেনে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার পূর্ণ যোগদান
  • সিরিয়ায় কারাগারগুলো বন্ধ হচ্ছে
  • দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক আইন জারির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন
  • ইউরোপে ন্যাটো (NATO) ব্যয় বৃদ্ধি ও ইউকে-ইইউ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

শেঙ্গেনে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার পূর্ণ যোগদান

মূল কথা

বৃহস্পতিবার, ইউরোপীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীরা ১ জানুয়ারি ২০২৫ থেকে শেঙ্গেন মুক্ত চলাচল এলাকায় রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার পূর্ণাঙ্গ অন্তর্ভুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ১৪ বছরের দীর্ঘপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো। এর আগে, ২০২৪ সালের মার্চে, এই দুই দেশের বিমান ও সমুদ্রসীমায় পাসপোর্ট যাচাই বন্ধ করে তাদের আংশিকভাবে শেঙ্গেনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এখন পূর্ণ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ভূমি সীমানাগুলিও উন্মুক্ত হবে। এই পদক্ষেপের পথে শেষ বাধা ছিল অস্ট্রিয়া, যারা এতদিন ভেটো (veto) দিতে পারতো। কিন্তু শেষমেশ অস্ট্রিয়া এটি আটকালো না।

বুঝতে হবে, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া ২০০৭ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) সদস্য, কিন্তু ২০১০ সাল থেকে তারা শেঙ্গেনে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছিল। তবুও শরণার্থী ও অভিবাসন সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে বিভিন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্র তাদের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করে আসছিল। কিন্তু এখন কেন তাদের গ্রহণ করা হলো?

মূলত, তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ হাঙ্গেরি (Hungary) এটি তাদের ছয় মাসের ঘূর্ণায়মান ইউরোপীয় কাউন্সিল (EU Council) সভাপতিত্বকালে সবচেয়ে অগ্রাধিকার বিষয় হিসেবে তুলেছিল। হাঙ্গেরির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত যখন শেষমেশ বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া পূর্ণ শেঙ্গেন সদস্য হল। এতে কেবল বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার নাগরিকরা সুবিধা পাবে না, বরং সমগ্র ইইউ-ও (EU) উপকৃত হবে।

শেঙ্গেন (Schengen) জোনের পটভূমি

শেঙ্গেন (Schengen) এর ইতিহাস ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু, যখন লুক্সেমবার্গের কাছে শেঙ্গেন নামের একটি গ্রামে মুক্ত চলাচল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ সীমানায় চেকপয়েন্টগুলোর ধীরে ধীরে বিলুপ্তির প্রস্তাব ছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে আমস্টারডাম চুক্তি (Treaty of Amsterdam) দ্বারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইনের (EU law) মধ্যে মুক্ত চলাচলের এই নীতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বর্তমানে শেঙ্গেন এলাকা ইইউর প্রায় সর্বত্র বিস্তৃত, শুধু সাইপ্রাস (Cyprus) ও আয়ারল্যান্ড (Ireland) এর ব্যতিক্রম রয়েছে। এছাড়াও ইইউর বাইরের কিছু দেশ—আইসল্যান্ড (Iceland), নরওয়ে (Norway), সুইজারল্যান্ড (Switzerland), লিচটেনস্টাইন (Liechtenstein), অ্যান্ডোরা (Andorra), মোনাকো (Monaco), সান মারিনো (San Marino) ও ভ্যাটিকান সিটি (Vatican City)—শেঙ্গেনের অংশ।

শেঙ্গেনের ওপরে নতুন করে প্রশ্নচিহ্ন

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শেঙ্গেনের অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত সীমানার বৈধতা নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় পথে অনিয়মিত অভিবাসন বৃদ্ধি ও ইইউর অভ্যন্তরে সংগঠিত অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলশ্রুতিতে জার্মানি (Germany), ফ্রান্স (France), ডেনমার্ক (Denmark), সুইডেন (Sweden), নরওয়ে (Norway) ও অস্ট্রিয়া (Austria) সহ কয়েকটি শেঙ্গেন অন্তর্ভুক্ত দেশ অভ্যন্তরীণ সীমান্তে আবার চেকপয়েন্ট চালু করেছে। ইইউ আইনের আওতায় এটি করার সুযোগ রয়েছে, তবে সেটি হতে হবে একান্ত জরুরি পরিস্থিতিতে এবং স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা হিসেবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে এই জাতীয় পদক্ষেপ শেঙ্গেনের মূল নীতি—অভ্যন্তরীণ মুক্ত চলাচলকে হুমকির মুখে ফেলেছে। অস্ট্রিয়া, যারা ইইউর মুক্ত চলাচল নীতির অন্যতম কড়া সমালোচক, অনেক বছর ধরে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার অন্তর্ভুক্তি আটকে রেখেছিল। শেষপর্যন্ত অস্ট্রিয়া সরে এসেছে, তবে শর্ত দিয়েছে যে বুলগেরিয়া যেন তুরস্ক (Turkey) সীমানায় আরও বেশি সীমান্ত রক্ষী মোতায়েন করে।

সূত্র –

সিরিয়ায় কারাগারগুলো বন্ধ হচ্ছে

সিরিয়ায় সম্প্রতি ক্ষমতা দখলকারী বিদ্রোহীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের (Bashar al Assad) আমলে পরিচালিত beriberi-নৃশংস কারাগারগুলি বন্ধ করবে। এই কারাগারগুলো মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে “মানব বধ্যভূমি (human slaughterhouses)” নামে পরিচিত ছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়া অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (Syria Observatory for Human Rights) এর তথ্যানুযায়ী, এই কারাগারগুলোতে প্রায় ৬০,০০০ মানুষ নির্যাতিত ও নিহত হয়েছেন।

আসাদ সরকারের পতনের পর এই কারাগারগুলো খুলে দেয়া হয়েছে এবং পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদের খুঁজতে শুরু করেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের (Hayat Tahrir al Sham) নেতা আহমেদ আল শিরার (Ahmed Al Shirar), যিনি মোহাম্মদ আল জিলানি (Mohammed al Jilani) নামেও পরিচিত, নিশ্চিত করেছেন যে এই কারাগারগুলো বন্ধই থাকবে এবং নির্যাতন বা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ক্ষমার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

তিনি আরও বলেছেন, “আমরা তাদেরকে সিরিয়ায় খুঁজে বের করবো এবং যারা পালিয়েছে তাদের ফিরিয়ে আনতে অন্য দেশগুলোকে অনুরোধ করবো, যাতে আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারি।” পাশাপাশি আল শিরার আসাদের নিরাপত্তা বাহিনী ভেঙে দেয়ার কথাও বলেছেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও, যুক্তরাষ্ট্রের উপ পেন্টাগন প্রেস সেক্রেটারি (Deputy Pentagon Press Secretary) সাবরিনা সিং (Sabrina Singh) মন্তব্য করেছেন যে এই কথা ও প্রতিশ্রুতিগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে।

সূত্র – 

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক আইন জারির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন

দক্ষিণ কোরিয়ায় (South Korea), প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল (Yoon Suk Yeol) সাম্প্রতিক সামরিক আইন (martial law) জারির সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইউন বলেছেন যে তিনি গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, বিরোধীদলের সংসদীয় একচেটিয়া ক্ষমতার কারণে গণতন্ত্র ধ্বংসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেটি ঠেকাতেই সামরিক আইন ঘোষণা করা হয়।

সামরিক আইন জারির পর থেকে প্রেসিডেন্ট ইউন ইমপিচমেন্ট (impeachment) চেষ্টা মোকাবেলা করেছেন এবং তা থেকে টিকে গেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি ইমপিচ হই বা তদন্তের সম্মুখীন হই, আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো।” তবে তার পক্ষে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট ও তার মিত্ররা এখন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখোমুখি। শনিবার দ্বিতীয়বারের মতো ইমপিচমেন্ট ভোট হবে, যার লক্ষ্য প্রেসিডেন্ট ও তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো। মাত্র গতকালই পুলিশের প্রধান চো জি হো (Cho Ji Ho) এবং বিচার মন্ত্রী পার্ক সিউং জে-কে (Park Seung Jae) ইমপিচ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করতে সংসদে আরো বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা (২০০-র বেশি ভোট) প্রয়োজন, তবে অন্যান্য কর্মকর্তাদের ইমপিচ করতে কম সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট। এটি প্রেসিডেন্ট ইউনের জন্য অশনি সংকেত।

সূত্র – 

ইউরোপে ন্যাটো (NATO) ব্যয় বৃদ্ধি ও ইউকে-ইইউ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা

ইউরোপের ন্যাটো সদস্য দেশগুলো আগামী জুনে তাদের বাৎসরিক সামিটে প্রতিরক্ষা ব্যয় লক্ষ্য ৩% জিডিপি (GDP) পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করছে। ফাইনান্সিয়াল টাইমস (Financial Times)-কে দেওয়া তথ্য অনুসারে তিনটি সূত্র জানিয়েছে যে প্রস্তাবে স্বল্পমেয়াদে ২.৫% লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং দীর্ঘমেয়াদে এটি ৩% পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden) গত বছর থেকেই ইউরোপকে তাদের প্রতিরক্ষার জন্য আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর ফলে নীরব কিন্তু ধারাবাহিক কিছু আলোচনার মাধ্যমে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ন্যাটোর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান ২% লক্ষ্য এ বছর ৩২ সদস্য দেশের মধ্যে ২৩টি পূরণ করবে, যেখানে ২০১৮ সালে মাত্র ৬টি দেশ এই লক্ষ্যে পৌঁছেছিল। ন্যাটোর মহাসচিব (Secretary General) হিসেবে দায়িত্বে থাকা মার্ক রাটে (Mark Rutte) এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো মন্তব্য করেননি, তবে তিনি বলেছেন লক্ষ্য যেন বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি হয়।

একজন জার্মান কর্মকর্তা ফাইনান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছেন যে, “ইউক্রেনের (Ukraine) প্রতিরক্ষা এবং ন্যাটোর সর্বনিম্ন সামর্থ্যগত প্রয়োজনীয়তা পূরণের ক্ষেত্রে যত চ্যালেঞ্জ আছে, এই আলোচনা যেকোনো পরিস্থিতিতেই আসবে। আর পরবর্তী ন্যাটো সামিটই এই বিষয়টি উঠানোর জন্য আদর্শ সময়।”

 

এই খবর এমন সময় এসেছে যখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer) ইউরোপীয় কাউন্সিলের (European Council) নতুন প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তাকে (Antonio Costa) ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে (10 Downing Street) স্বাগত জানাচ্ছেন। তারা ইইউর সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবেন। এটি হবে ইউকে প্রধানমন্ত্রী এবং ইইউর শীর্ষ কর্মকর্তার মধ্যে প্রথম এ ধরণের বৈঠক। ফেব্রুয়ারিতে স্টারমার বেলজিয়ামে (Belgium) ইইউ নেতাদের সঙ্গে একটি নৈশভোজে যোগ দেবেন, যেখানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যু আলোচ্যসূচিতে থাকবে।

সূত্র –

১১ ডিসেম্বর, ২০২৪ – বুধবার

  • সিরিয়ার নতুন সরকার কে?
  • রোমানিয়ায় প্রো-ইইউ দলগুলো সরকার গঠন করেছে
  • পুলিশ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের অফিস রেইড করেছে
  • সুদান আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটির (IRC) ওয়াচলিস্টে দ্বিতীয়বারের মত প্রথম স্থানে

সিরিয়ার নতুন সরকার কে?

শুরু করছি সিরিয়া দিয়ে, যেখানে সদ্য নিযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ (Bashar al Assad)-এর ক্ষমতাচ্যুতির পর এখন জনগণের জন্য স্থিতিশীলতা ও শান্তির সময় এসেছে। সিরিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল বাসির (Mohammed Al Bashir) আল জাজিরাকে (Al Jazeera) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন।

আল বাসির এর আগে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহী প্রশাসনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বর্তমানে তিনি ইসলামপন্থী বিদ্রোহী সংগঠন এইচটিএস (HTS – Hayat Tahrir al Sham)-এর নিয়োগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। গত কয়েক সপ্তাহের বজ্রগতির সামরিক অভিযানে এইচটিএস সাবেক প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে।

তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, সিরিয়ার এই নতুন নেতারা কারা এবং তারা দেশের জন্য কী করতে চান? যদিও বাসির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষিত হয়েছেন, তবে সিরিয়ান রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনে করা হচ্ছে এইচটিএস নেতা আবু মোহাম্মদ আল জিলানি (Abu Mohammed Al Jilani) তথা আহমেদ আল শরার (Ahmed Al Sharar) নামে পরিচিত ব্যক্তিকে। আল শারা (Al Shara) বা জিলানি (Jilani) আল কায়েদার (Al Qaeda) সিরীয় শাখা আল নুসরা ফ্রন্টের (Al Nusra Front) সাবেক নেতা ছিলেন। তাকে আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর (U.S. State Department) একজন সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে এবং তার মাথার দাম ১ কোটি মার্কিন ডলার ঘোষণা করেছিল।

২০১৫ সালে কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে ইদলিব (Idlib) দখলে নিয়ে আসেন জিলানি। ২০১৭ সালে তিনি আল কায়েদার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে হায়াত তাহরির আল শাম (Hayat Tahrir al Sham – HTS) গঠন করেন। দীর্ঘ গল্প সংক্ষেপে বললে, জিলানি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে এইচটিএস-এর ক্ষমতা সংহত করেন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর ঘটান। এইচটিএস সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট (Syrian Salvation Government) নামে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে একটি বেসামরিক সরকার গঠন করে। জিলানি তখন রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরির চেষ্টায় মনোযোগী হন। তিনি নিজের ভাবমূর্তি পাল্টে আরো ব্যবসাবান্ধব (business-friendly) পোশাক পরা শুরু করেন, জনগণের সাথে সম্পৃক্ত হন, প্রশাসনিক কার্যক্রমে গুরুত্ব দেন, ধর্মীয় সহনশীলতা ও বহুত্ববাদ (pluralism) প্রচার করেন, এবং তার গোষ্ঠীর বৈধতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান।

গত সপ্তাহে দামেস্ক (Damascus) দখল ও আসাদকে অপসারণের পর আল শরার (জিলানি নামটি ত্যাগ করে তিনি এখন এই নামই ব্যবহার করছেন) আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিজেকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে উপস্থাপন করছেন, যার সাথে সিরিয়া এবং আন্তর্জাতিক মহল কাজ করতে পারে। তিনি সিএনএনকে (CNN) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিরিয়ার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করেন এবং বলেন, সিরিয়া এমন একটি শাসনব্যবস্থা ডিজার্ভ করে যা প্রাতিষ্ঠানিক (institutional) হবে, যেখানে কোনো একক শাসক ইচ্ছেমতো স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

বড় প্রশ্ন হলো, তিনি ও তার গোষ্ঠী কি তাদের এই পরিমিত ও মডারেটেড (moderated) বক্তব্যকে বাস্তবে পরিণত করতে পারবেন? কার্যকর পদক্ষেপই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নতুন সিরিয়ান নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাদের উপর আরোপিত সন্ত্রাসী (terrorist) তকমা উঠিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও।

এখানে মনে রাখা দরকার যে সিরিয়ার নতুন সরকার এখনো পুরো দেশ নিয়ন্ত্রণ করে না। গত কিছু দিনে আমরা দেখেছি ইসরায়েলি (Israeli) সামরিক বাহিনী গোলান হাইটস (Golan Heights)-এর সাবেক বাফার জোনের বাইরে জমি দখল করেছে এবং আসাদ পতনের পর থেকে সিরিয়াজুড়ে শত শত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ কৌশলগত সামর্থ্য ধ্বংস করা যায়।

অন্যদিকে, পূর্ব সিরিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল কুর্দি বাহিনী (Kurdish forces)-এর দখলে রয়ে গেছে এবং তুর্কি-সমর্থিত (Turkish-backed) বিদ্রোহীরা তুরস্কের (Turkey) সীমানা ঘেঁষা কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। এই বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সহযোগিতা আসাদ-পরবর্তী (post-Assad) সিরিয়ার রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত হল, কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফ (SDF – Syrian Democratic Forces) ঘোষণা করেছে যে তারা তুর্কি-সমর্থিত বিদ্রোহীদের সাথে উত্তরাঞ্চলীয় শহর মানবিজে (Manbij) একটি যুদ্ধবিরতি (ceasefire) চুক্তি করেছে, যাতে বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।

সূত্র – 

রোমানিয়ায় প্রো-ইইউ দলগুলো সরকার গঠন করেছে

এবার আসি রোমানিয়ায়, যেখানে প্রো-ইউরোপীয় (Pro European) রাজনৈতিক দলগুলো একটি প্রো-ইইউ (pro-EU) শাসনরত জোট গঠনে একমত হয়েছে, যাতে কড়া ডানপন্থী দলগুলোকে (hard right) সরকার গঠন থেকে বিরত রাখা যায়। প্রেক্ষাপট হিসেবে বলা যায়, রোমানিয়ায় ১লা ডিসেম্বর, ২০২৪-এ পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে শাসনরত বামপন্থী সোশ্যালিস্ট ডেমোক্র্যাটরা (Socialist Democrats) সবচেয়ে বেশি আসন জেতে, কিন্তু কয়েকটি চরম জাতীয়তাবাদী, ডানপন্থী, রুশ-মিত্র দল (ultranationalist right-wing Russian friendly parties) এক তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন জিতে নেয়।

সোমবার (9 ডিসেম্বর 2024 তারিখ ধারণা করা যেতে পারে, তবে মূল টেক্সটে স্পষ্ট নয়), সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা তাদের বর্তমান জোটসঙ্গী মধ্য-ডানপন্থী লিবারাল (Centre-Right Liberals) দল এবং কেন্দ্রবাদী বিরোধী সেভ রোমানিয়া ইউনিয়ন (Save Romania Union) ও একটি হাঙ্গেরীয় সংখ্যালঘু দলকে নিয়ে একটি প্রো-ইউরোপীয় সরকার গঠনে রাজি হয়েছে।

রোমানিয়া বর্তমানে একটি রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলা করছে, কারণ দেশের শীর্ষ আদালত (top court) নভেম্বর 2024-এর শেষদিকে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের (late November presidential election) প্রথম রাউন্ড বাতিল করে দিয়েছে, রাশিয়ান নির্বাচনী হস্তক্ষেপের অভিযোগের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ পুনঃনির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছে।

প্রো-ইউরোপীয় দলগুলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পুনরায় ভোটে (rerun) একটি একক প্রার্থীকে সমর্থন করার কথা বিবেচনা করছে, যাতে চরম ডানপন্থী উত্তরণের বিরুদ্ধে জয়লাভের সম্ভাবনা বাড়ে।

সূত্র – 

পুলিশ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের অফিস রেইড করেছে

এবার আমরা যাব দক্ষিণ কোরিয়ায়, যেখানে এখনো গত সপ্তাহের প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের (Yoon Suk Yeol) সামরিক আইন (martial law) জারির চেষ্টার পর থেকে দেশটি চরম অস্থিরতায় রয়েছে। আজ দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ প্রেসিডেন্ট ইউনের অফিসে অভিযান চালিয়েছে (raided) ক্রমবর্ধমান তদন্তের অংশ হিসাবে। ইউন এই সময় অফিসে উপস্থিত ছিলেন না, তবে সার্চ ওয়ারেন্টে তাকে একজন সন্দেহভাজন (suspect) হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে ইউনের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী (Defence Minister) কিম জং হিউন (Kim Jong Hyun) গত রাত পুলিশ হেফাজতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাকে বাঁচানো গেছে এবং এখন তিনি স্থিতিশীল অবস্থায় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। কিম, যিনি ইউনের ঘনিষ্ঠ আস্থা ভাজন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন, সামরিক আইন চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের (insurrection) সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের অভিযোগ এবং কর্তৃত্ব অপব্যবহার করে (abuse of authority) অধিকার বাধাগ্রস্ত করার জন্য।

বিরোধীদল যারা ইউনের এই পদক্ষেপকে একটি অভ্যুত্থান চেষ্টার (coup attempt) সাথে তুলনা করছে, তারা এই সপ্তাহান্তে আবারো ইমপিচমেন্ট (impeach) প্রস্তাব আনবে। গত সপ্তাহের প্রস্তাব ব্যর্থ হওয়ার পর এবার আশা করা হচ্ছে ইউনের নিজ দলের কিছু সংসদ সদস্য রাজনৈতিক ও জনমতের চাপে ইমপিচমেন্টে সমর্থন দেবে।

এই অস্থিরতার খবর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিরোনাম হয়েছে, এমনকি প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়াতেও (North Korea)। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা দক্ষিণে ক্রমবর্ধমান সামাজিক অস্থিরতার কথা উল্লেখ করে লিখেছে, “পুতুল” ইউন সুক ইওল, যিনি ইতিমধ্যে গুরুতর শাসনসংকট ও ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হয়েছিলেন, আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারি করে জনগণের ওপর ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসনের (fascist dictatorship) অস্ত্র বর্ষণ করেছেন।

সূত্র – 

সুদান আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটির (IRC) ওয়াচলিস্টে দ্বিতীয়বারের মত প্রথম স্থানে

আজ আন্তর্জাতিক রেসকিউ কমিটি বা আইআরসি (IRC) তাদের বার্ষিক জরুরি পরিস্থিতির ওয়াচলিস্ট (annual emergency watchlist) প্রকাশ করেছে, যেখানে সুদান (Sudan) দ্বিতীয় বছরের মতো শীর্ষস্থানে রয়েছে। আইআরসি জানিয়েছে, নির্মম গৃহযুদ্ধের কবলে থাকা সুদান মানবিক সংকটের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছেছে। বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র ১% সুদানে বাস করলেও, বৈশ্বিক মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয় জনগোষ্ঠীর ১০% এখন সুদানে রয়েছে। সুদান বিশ্বে সবচেয়ে বড় বাস্তুচ্যুতির (largest displacement) মুখোমুখি এবং কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের (famine) দিকে এগোচ্ছে।

আইআরসি নির্ধারিত শীর্ষ ১০টি মানবিক সংকটপূর্ণ দেশ হলো ক্রমানুসারে:

  1. সুদান (Sudan)
  2. অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চল (occupied Palestinian territory)
  3. মিয়ানমার (Myanmar)
  4. সিরিয়া (Syria)
  5. দক্ষিণ সুদান (South Sudan)
  6. লেবানন (Lebanon)
  7. বুরকিনা ফাসো (Burkina Faso)
  8. হাইতি (Haiti)
  9. মালি (Mali)
  10. সোমালিয়া (Somalia)

তালিকার পরের ভাগে রয়েছে আফগানিস্তান (Afghanistan), ইথিওপিয়া (Ethiopia), ইউক্রেন (Ukraine) ও ইয়েমেন (Yemen)-এর মতো দেশগুলো।

আইআরসি চারটি অন্তর্নিহিত বৈষম্যের কথা উল্লেখ করেছে, যা বৈশ্বিক ব্যবস্থায় সংকট সৃষ্টি করছে। এগুলো হলো:

  1. অধিক সংঘাত, কম কূটনীতি (more conflict and less diplomacy)
  2. বেসামরিক নাগরিক ও অবকাঠামোর ওপর নিয়মিত আক্রমণ (attacks on civilians and civilian infrastructure), যা ক্রমে যুদ্ধকৌশলের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে
  3. অধিক কার্বন নিঃসরণ ও জলবায়ু সংকটে ভুক্তভোগী জনগণের জন্য কম সহায়তা (more carbon emissions and less support for people suffering from the climate crisis)
  4. অধিক সম্পদ পুঞ্জীভূতকরণ ও কম দারিদ্র্য বিমোচন (more wealth accumulation and less poverty alleviation)

আইআরসি যে যে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • মানবিক সহায়তা ব্যবস্থার সংস্কার (reforming the humanitarian aid system)
  • ঋণের বোঝা লাঘব (relieving debt burdens)
  • বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও মানবিক প্রবেশাধিকার (improving civilian protections and humanitarian access) নিশ্চিতকরণ
  • জলবায়ু অভিযোজন ও স্থিতিশীলতায় বিনিয়োগ (investments in climate adaptation and resilience)
  • শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ অভিবাসনের পথ সম্প্রসারণ (expanding safe pathways for refugees)

সূত্র – 

১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ – মঙ্গলবার

  • ওয়াল স্ট্রিটে জটিল আর্থিক পণ্যের (complex financial products) মূল্যবৃদ্ধি
  • যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) মন্তব্য ও নীতিবিবৃতি
  • তাইওয়ান সংক্রান্ত বিষয়ে চীনা সামুদ্রিক মোতায়েন (maritime deployment)
  • ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর (Benjamin Netanyahu) বিচার
  • ইউনাইটেডহেলথ গ্রুপ (UnitedHealth Group)-এর এক নির্বাহীর হত্যায় সন্দেহভাজন গ্রেফতার

ওয়াল স্ট্রিটে জটিল আর্থিক পণ্যের (complex financial products) মূল্যবৃদ্ধি

ওয়াল স্ট্রিটে সাম্প্রতিক সময়ে জটিল আর্থিক পণ্যের (complex financial products) মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০০৭ সালের আর্থিক সংকট শুরুর আগের সময়ের পর এত বড় মুনাফার হার আর দেখা যায়নি। এর অর্থ হলো বিনিয়োগকারীরা এখন ভালো রিটার্নের আশায় অধিকতর অপ্রচলিত আর্থিক পণ্য (unusual financial products) খুঁজছেন, বিশেষ করে তখন যখন বাজারের অন্যান্য অংশ কিছুটা স্থবির বা ম্লান হয়ে আছে।

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (LSEG) তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারা বিশ্বে এসব গঠনমূলক আর্থিক লেনদেন (structured financial transactions) (যা মূলত এই জটিল আর্থিক পণ্যগুলোর অংশ) এর পরিমাণ ৩৮০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক-পঞ্চমাংশ বৃদ্ধি এবং ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বেশি। ২০২১ সালটি ছিল ২০০৭ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ শিখরপূর্ণ সময়।

এই জটিল পণ্যের বিস্তারিত খুঁটিনাটি না গিয়েও বলা যায়, এগুলোর অনেকগুলোই নির্দিষ্ট আয়ের উৎসের সাথে সংযুক্ত, যা আবার নির্দিষ্ট শিল্পখাতের রাজস্বের উপর নির্ভরশীল। ফাইন্যানশিয়াল টাইমস (FT) সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কিছু লেনদেন রেস্তোরাঁ চেইন উইংস্টপ (Wingstop)-এর ফ্রাঞ্চাইজি ফির (franchisee fee) রাজস্ব, এক্সনমোবিল (ExxonMobil)-সমর্থিত তেল কূপ থেকে তেল বিক্রি ও ক্লাউডএইচকিউ (CloudHQ)-এর প্রদত্ত কম্পিউটিং শক্তির চাহিদার সাথে সংযুক্ত ছিল।

এখন দেখার বিষয়, সামনের সপ্তাহ ও মাসগুলোতে এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে কিনা।

সূত্র –

যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) মন্তব্য ও নীতিবিবৃতি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) সম্প্রতি এনবিসির “মিট দ্য প্রেস” (Meet the Press) অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি গ্যারান্টি দিতে পারছেন না যে তার বাণিজ্যিক শুল্ক (trade tariffs) দেশের অভ্যন্তরে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করবে না। তাছাড়া, তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারেও ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেছেন।

নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প যুক্তি দিয়েছিলেন যে শুল্ক বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি (inflation) নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। যদিও এনবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি শুল্ককে “আমাদের ধনী করবে” বলে উল্লেখ করেছেন, তবু তিনি সরাসরি এই প্রতিশ্রুতি দেননি যে এতে মার্কিন ভোক্তাদের খরচ বাড়বে না। তিনি বলেছেন, “আমি কোনো কিছুই গ্যারান্টি দিতে পারি না। আমি আগামীকালকেও গ্যারান্টি দিতে পারি না।”

একই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, যেসকল কংগ্রেস সদস্য মার্কিন ক্যাপিটল (Capitol) দাঙ্গা নিয়ে তদন্ত করেছে, তাদের জেলে যাওয়া উচিত। যদিও পরক্ষণে তিনি কিছুটা নরম সুরে বলেন, “আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমি প্রধান আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা (chief law enforcement officer)। জানোই তো আমি প্রেসিডেন্ট, কিন্তু আমি এ বিষয়ে আগ্রহী নই।” এ বিষয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিনেই ক্যাপিটল দাঙ্গায় জড়িতদের সাধারণ ক্ষমা (pardon) দেওয়ার পরিকল্পনা নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র – 

তাইওয়ান সংক্রান্ত বিষয়ে চীনা সামুদ্রিক মোতায়েন (maritime deployment)

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় (Taiwan’s Defence Ministry) জানিয়েছে, চীনের সামুদ্রিক মোতায়েন সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়। এটা মূলত তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং টে (Lai Ching Te)-র হাওয়াই (Hawaii) ও গুয়াম (Guam) সফরের প্রতিক্রিয়ায় এসেছে। এই অঘোষিত সফরগুলো চীনের ক্ষোভ উস্কে দিয়েছে, কারণ বেইজিং তাইওয়ানকে (Taiwan) নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে।

বেইজিং এখনো কোনো সামরিক মহড়ার ঘোষণা দেয়নি বা এই মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তবে তাইওয়ানের গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি চিফ অব দ্য জেনারেল স্টাফ ফর ইন্টেলিজেন্স (Deputy Chief of the General Staff for Intelligence) মঙ্গলবার জানিয়েছেন, চীন বিপুল সংখ্যক জাহাজ মোতায়েন করেছে। তিনি আরও জানান, এই মোতায়েন এতটাই ব্যাপক যে এটি বাইরের শক্তিকে বাধা দিতে সক্ষম এবং পিপলস লিবারেশন আর্মির (PLA) সাম্প্রতিক কার্যকলাপ শুধু তাইওয়ানের ওপর সামরিক চাপই বাড়ায়নি, বরং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে (western Pacific) এর নৌসেনাদের উপস্থিতিও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে, লাই চিং টে’র সফরের পর সম্ভাব্য সামরিক মহড়া নিয়ে তাইওয়ান সোমবার থেকেই উচ্চ সতর্কাবস্থায় আছে। তারা মনে করছে, চীন কোনো না কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে।

সূত্র – 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর (Benjamin Netanyahu) বিচার

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) আজ প্রথমবারের মতো তার দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাকে ঘুষ (bribery), জালিয়াতি (fraud) এবং বিশ্বাসভঙ্গের (breaches of trust) অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যা তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। ৭৫ বছর বয়সী নেতানিয়াহু ২০১৯ সালে অভিযুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের ইতিহাসে দায়িত্বে থাকা কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার প্রথম নজির স্থাপন করেন।

অভিযোগগুলো তিনটি ফৌজদারি মামলার সঙ্গে যুক্ত। একটিতে অভিযোগ, তিনি অনুচিতভাবে লক্ষ লক্ষ ডলারের উপহার পেয়েছেন; অন্য দুইটিতে অভিযোগ, তিনি মিডিয়া টাইকুনদের (media tycoons) জন্য সুবিধাজনক বিধি-বিধান (advantageous regulation) করে তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সংবাদ কাভারেজ আদায় করেছেন।

ইসরায়েলি আইনে নেতানিয়াহুকে বিচার চলাকালীন পদত্যাগ করতে হবে না, এবং আপিল প্রক্রিয়া চলাকালীনও তিনি পদে থাকতে পারবেন। তেল আবিব ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে (Tel Aviv District Court) প্রবেশের সময় নেতানিয়াহুকে আত্মবিশ্বাসী হাসি হাসতে দেখা গেছে। তবে বিচার প্রক্রিয়া তার রাজনৈতিক কাজের সময়সূচীর উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তার সাক্ষ্যপ্রদান সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা করে, কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে। এই সময়ে ইসরায়েল একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধরত। তবুও নেতানিয়াহু বলছেন, তিনি মনে করেন যুদ্ধ এবং বিচারকার্য একযোগে চালানো সম্ভব।

২০২২ সালের নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর নেতানিয়াহুর সরকার বিচারব্যবস্থার ক্ষমতা কমানোর (judicial overhaul) উদ্যোগ নেয়, যা দেশটিতে গভীর মেরুকরণ ঘটায়। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই উদ্যোগ মূলত স্থগিত রয়েছে।

সূত্র – 

ইউনাইটেডহেলথ গ্রুপ (UnitedHealth Group)-এর এক নির্বাহীর হত্যায় সন্দেহভাজন গ্রেফতার

ইউনাইটেডহেলথ গ্রুপ (UnitedHealth Group)-এর এক নির্বাহী হত্যার অভিযোগে পাঁচ দিনব্যাপী খোঁজাখুঁজির পর একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্দেহভাজনের নাম লুইজি ম্যানজিওনে (Luigi Mangione), বয়স ২৬, তিনি মেরিল্যান্ড (Maryland)-এর বাসিন্দা। তাকে পেনসিলভানিয়ার (Pennsylvania) আল্টুনা (Altoona) শহর থেকে আটক করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি “ঘোস্ট গান (ghost gun)”, সাইলেন্সার (suppressor), ভুয়া নিউ জার্সি আইডি কার্ড (fake New Jersey ID card), এবং হাতে লেখা একটি নথি পাওয়া যায়, যেখানে পুলিশের ভাষ্যমতে কর্পোরেট আমেরিকার (corporate America) প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে (New York City) গত সপ্তাহে ইউনাইটেডহেলথকেয়ার (UnitedHealthcare) সিইও ব্রায়ান থম্পসন (Brian Thompson)-এর নিহত হওয়ার ঘটনা শুধু এই আটক অভিযানই নয়, হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক জল্পনা তৈরি করেছে। পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের স্থানে পাওয়া বুলেটের খোসাগুলোতে “deny”, “defend” এবং “depose” শব্দগুলো লেখা ছিল। বড় বড় মার্কিন স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানিগুলোর সমালোচকরা এ তিনটি শব্দকে “three Ds” হিসেবে অভিহিত করেন – অর্থাৎ রোগীদের দাবি পরিশোধ না করতে, প্রতিরোধ করতে এবং আইনি প্রক্রিয়ায় সংস্থার পক্ষে অবস্থান নিতে ব্যবহৃত কৌশল।

আটককৃত লুইজি ম্যানজিওনের আগে কোনো গ্রেফতার হয়নি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, তিনি বাল্টিমোরের (Baltimore) একটি স্বনামধন্য পরিবারের সন্তান, তার স্কুলে সর্বোচ্চ ফলাফল করে ভ্যালেডিক্টোরিয়ান (valedictorian) হন এবং পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (University of Pennsylvania) থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে (computer science) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল যেগুলো ম্যানজিওনের বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলো থেকে দেখা গেছে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তিনি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলেন। তার “এক্স (X)” অ্যাকাউন্টের ব্যানার ছবিতে সার্জারির পর পিঠের মেরুদণ্ডের এক্স-রে (X-ray) দেখা যায়, যাতে স্ক্রু ও প্লেট বসানো আছে। মার্কিন মিডিয়া সূত্রে জানা যায়, তার বন্ধুদের মতে, তার পিঠের সার্জারি হয়েছিল। এখনো স্পষ্ট নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় (US Healthcare system) তার অভিজ্ঞতা কি তার এই দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে কোনো ভূমিকা রেখেছিল কিনা।

সূত্র – 

৯ই ডিসেম্বর, ২০২৪ – সোমবার

  • ইউন সুক ইয়োলের অভিশংসন প্রচেষ্টায় ব্যর্থতা ও তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
  • সিরিয়ায় আসাদের পতন এবং নতুন যুগের সূচনা
  • রোমানিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল

ইউন সুক ইয়োলের অভিশংসন প্রচেষ্টায় ব্যর্থতা ও তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

দক্ষিণ কোরিয়ার সমস্যায় জর্জরিত রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইয়ল (President Yoon Suk Yeol) সপ্তাহান্তে সামান্য ব্যবধানে একটি অভিশংসন (impeachment) প্রস্তাব থেকে বেঁচে গেছেন। তবে দেশের রাজনৈতিক সংকট এখানেই থেমে নেই, কারণ বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে এবং বিরোধীদল-নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পরিষদ (National Assembly) এই সপ্তাহে আবারো একটি অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপনের অঙ্গীকার করেছে।

রাষ্ট্রপতি ইউন (Yoon) গত সপ্তাহে আকস্মিকভাবে মঙ্গলবার রাতে সামরিক আইন (martial law) জারি করেন, যা ছয় ঘণ্টার টানা বিক্ষোভ এবং সংসদীয় বিরোধিতার (parliamentary opposition) জন্ম দেয়। পরবর্তীতে তিনি এই আদেশ তুলে নিতে বাধ্য হন। তার এই আচরণ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দেয়।

ইউনকে অভিশংসন করতে জাতীয় পরিষদের ৩০০ সদস্যের মধ্যে ২০০ জনের সমর্থন প্রয়োজন। প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (Democratic Party) এবং অন্যান্য ছোট বিরোধী দলগুলো সম্মিলিতভাবে প্রায় ১৯৫টি আসন ধারণ করে বলে ধারণা করা হয় (মূল পাঠে এ অংশ অসম্পূর্ণ ছিল, এখানে যৌক্তিক সংশোধন করা হলো)। অভিশংসন ভোটের সময় ইউন-এর দল পিপল পাওয়ার পার্টি (People Power Party) থেকে কিছু সদস্য ভোটে অংশ নেয়, তবে অন্য ১০৫ জন তা বয়কট করে। বয়কটের ফলে মোট ভোট ২০০ পর্যন্ত পৌঁছায়নি, তাই অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়নি।

শনিবার, রাষ্ট্রপতি ইউন তার কর্মকাণ্ডের জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি আর কখনো সামরিক আইন জারি করবেন না। তবে বিরোধীপক্ষ অভিযোগ করছে যে তার দল আবারও একধরনের অভ্যুত্থান চেষ্টা করেছে। বিরোধীদলের অভিযোগ অনুযায়ী, ইউন ও তার পিপল পাওয়ার পার্টি এমন একটি পরিকল্পনা করেছিল যাতে রাষ্ট্রপতি ইউন বিদেশ ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেকে সরিয়ে রেখে তার প্রধানমন্ত্রীকে (prime minister) সাময়িকভাবে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিতে দেন। বিরোধীদলের ভাষায় এটি সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন (blatant constitutional violation) এবং কোন আইনগত ভিত্তি নেই। তারা ঘোষণা করেছে যে তারা প্রতি শনিবার অভিশংসন ভোট আনবে। এক্ষেত্রে তারা এই আশা করছে যে, চাপ অব্যাহত রেখে বিক্ষোভ চালিয়ে গেলে ইউন-এর দলের আরো সদস্য ভোটে অংশ নেবে।

এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার দুর্নীতি তদন্ত ব্যুরোর (Corruption Investigation Bureau) প্রধান প্রসিকিউটর (chief prosecutor) রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইয়ল এবং তার শীর্ষস্থানীয় কিছু কর্মকর্তার ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা (travel ban) জারি করেছেন। রাষ্ট্রপতি ইউন এখন রাষ্ট্রদ্রোহ (treason) এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের (abuse of power) অভিযোগে তদন্তের অধীনে রয়েছেন।

সূত্র –

সিরিয়ায় আসাদের পতন এবং নতুন যুগের সূচনা

সিরিয়ার এখন পতিত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সপ্তাহান্তে দেশত্যাগ করেন বিদ্রোহী বাহিনীর (rebel offensive) এক ঝড়ো অভিযানে, যা আসাদ পরিবারের ৫৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। আসাদের অবস্থান নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল, এমনকি তাকে দামেস্ক (Damascus) ত্যাগ করার সময় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার গুজবও ছড়ায়।

৮ই ডিসেম্বর রবিবার, রাশিয়ান (Russian) মিডিয়ায় ক্রেমলিন (Kremlin) সূত্র উল্লেখ করে জানানো হয় যে আসাদ ও তার পরিবার মস্কোতে পৌঁছেছে এবং মানবিক কারণে তাদেরকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই নাটকীয় পতন ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের (civil war) পর এলেও, মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটি বাস্তবে রূপ নেয়। ইদলিবভিত্তিক (Idlib-based) ইসলামী বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস (HTS) একে একে আলেপ্পো (Aleppo), হামা (Hama), হোমস (Homs) এবং শেষ পর্যন্ত দামেস্ক দখল করে নেয়। আসাদের প্রধান সমর্থক ইরান (Iran) ও রাশিয়া যখন সহায়তা দিতে অনাগ্রহী বা অক্ষম হয়ে ওঠে, তখনই এই পতন ঘটে।

সিরিয়ার ভেতরে এবং বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সিরীয়রা আসাদের পতন উদযাপন করছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরে আসাদ এবং তার পিতার মূর্তি টেনে নামানো হচ্ছে। পাশাপাশি কুখ্যাত সেডনায়া কারাগার (Sednaya prison) (যা “মানব কসাইখানা (human slaughterhouse)” নামে পরিচিত) সহ বেশ কিছু কারাগার খুলে দেওয়া হয়েছে। অনেক পরিবার এখন আশা করছে যে তারা বছরের পর বছর নিখোঁজ থাকা আপনজনদের সাথে মিলিত হতে পারবে।

এখন সিরিয়া স্পষ্টতই একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সবাই সতর্ক, কিন্তু দেশটি দীর্ঘ দিনের নৃশংস সংঘাত থেকে বেরিয়ে এসে নতুন করে কিছু গড়ার আশা দেখছে।

আসাদ সরকারের পতনের পর, ইসরায়েলের (Israel) প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) ঘোষণা করেন যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গোলান হাইটসের (Golan Heights) নিরস্ত্রীকরণ বাফার জোনে (demilitarized buffer zone) প্রবেশ করেছে এবং সাময়িকভাবে তা দখল করেছে। নেতানিয়াহু বলেন, আসাদ সরকারের পতনের ফলে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়েছে। আসাদের উৎখাত উদযাপন করলেও নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা আমাদের সীমান্তে (border) কোনো বৈরী শক্তির (hostile force) স্থায়ী অবস্থান মেনে নেব না।”

ইসরায়েলি সরকার জানায় যে তারা সিরিয়ার অভ্যন্তরে কিছু লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে কৌশলগত অস্ত্রব্যবস্থা (strategic weapon systems) এবং সন্দেহভাজন রাসায়নিক অস্ত্র (chemical weapons) কেন্দ্রও রয়েছে। তাদের যুক্তি, এসব যেন উগ্রপন্থীদের (extremists) হাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করাই ছিল লক্ষ্য।

সূত্র –

রোমানিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল বাতিল

এবার রোমানিয়ায় অবাক করা এক মোড় দেখা গেল। দেশটির সাংবিধানিক আদালত (Constitutional Court) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রথম পর্বের ফলাফল বাতিল করেছে। এই পর্বটি নভেম্বরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই পর্বের বিজয়ী ছিলেন কার্যত অচেনা, স্বাধীন প্রার্থী (independent candidate) এবং উগ্র ডানপন্থী (far right), রুশপন্থী (pro Russian) ব্যক্তিত্ব কালিন জর্জেস্কু (Kalin Georgescu)।

তবে নতুনভাবে উন্মোচিত এক বিশাল তথ্যভাণ্ডার থেকে এখন অভিযোগ উঠেছে যে রাশিয়া (Russia) সামাজিক মাধ্যম জুড়ে জর্জেস্কুর পক্ষে বিশাল প্রচারণা চালিয়েছে। রোমানিয়ার সাংবিধানিক আদালত, কোনো প্রার্থীর নাম উল্লেখ না করে, জানিয়েছে যে একজন প্রার্থী বিশেষ সুবিধা পেয়েছেন এবং এতে ভোটারদের প্রকৃত ইচ্ছা বিকৃত হয়েছে।

প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য বলা যায়, ২০২৪ সালের নির্বাচন রোমানিয়ার পোস্ট-কমিউনিস্ট (post communist) রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় চমক সৃষ্টি করেছিল। কারণ, দেশের দুটি প্রধান দল – বামপন্থী সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (Social Democrats) এবং মধ্য-ডানপন্থী লিবারাল (Liberals) দলের শীর্ষ নেতারা প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়েন। অন্যদিকে, সামান্য পরিচিত এক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক জর্জেস্কু ২২.৯% ভোট পেয়ে প্রথম হন, যেখানে নির্বাচনের আগে তিনি মাত্র প্রায় ৫% সমর্থনে ছিলেন।

জর্জেস্কু আদালতের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে বলেন যে আদালত গণতন্ত্রকে (democracy) বাতিল করছে, এবং এখন রোমানিয়ায় আর কিছুই সাংবিধানিক নেই। অন্যদিকে, রোমানিয়ার বর্তমান পশ্চিমাপন্থী (pro Western) রাষ্ট্রপতি ক্লাউস ইয়োহানিস (Klaus Johannes) এক বিবৃতিতে বলেন, সংবিধান (constitution) গণতন্ত্রকে সুরক্ষার (shield) জন্যই কাজ করে। অশান্ত সময়ে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শান্ত, প্রাজ্ঞ এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে কাজ করতে হয়।

তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন সেইভ রোমানিয়া ইউনিয়ন পার্টির (Save Romania Union Party) নেতা এলেনা লাসকনি (Elena Lasconi), যিনি দ্বিতীয় রাউন্ডে জর্জেস্কুর মুখোমুখি হতেন। তিনি বলেছেন যে এই সিদ্ধান্ত অবৈধ, অনৈতিক (immoral) এবং গণতন্ত্রের মূলকেই চূর্ণ করছে (crushes the very essence of democracy)। তার মতে, দ্বিতীয় রাউন্ড আগের পরিকল্পনামাফিক এগুনো উচিত ছিল।

ফলে, এখন নতুন তারিখ নির্ধারণ করে আবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

সূত্র 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.