Table of Contents
পরিচিতি
হাইপোথ্যালামিক–পিটুইটারি–অ্যাড্রেনাল এক্সিস (Hypothalamic–pituitary–adrenal axis বা HPA axis বা HTPA axis) হল মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুবিন্যাসীয় (neuroendocrine) ব্যবস্থা। এটি থ্যালামাসের নিচে অবস্থিত হাইপোথ্যালামাস (hypothalamus), হাইপোথ্যালামাসের নিচে মটরের দানা আকারের পিটুইটারি গ্রন্থি (pituitary gland), এবং কিডনির ওপরের দিকে অবস্থিত কোণাকৃতি অ্যাড্রেনাল বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থি (adrenal বা suprarenal glands)—এই তিনটির মধ্যে সরাসরি প্রভাব ও প্রতিফলনশীল আন্তঃক্রিয়ার একটি জটিল গঠন। এদের পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়ায় গঠিত ব্যবস্থা একসাথে HPA এক্সিস নামে পরিচিত।
HPA এক্সিস হল একটি মুখ্য স্নায়ুবিন্যাসীয় (neuroendocrine) ব্যবস্থা, যা দেহের স্ট্রেসের (stress) প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরিপাক (digestion), রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune responses), মেজাজ ও অনুভূতি (mood and emotions), যৌনক্রিয়া (sexual activity), এবং দেহে শক্তি সংরক্ষণ ও ব্যবহার (energy storage and expenditure) ইত্যাদি বহু প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এটি হল গ্ল্যান্ড (glands), হরমোন (hormones) এবং মধ্য-মস্তিষ্কের (midbrain) বিভিন্ন অংশের মধ্যে একটি সাধারণ যৌথ প্রক্রিয়া, যা সাধারণ মানিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা (General Adaptation Syndrome বা GAS)-কে নিয়ন্ত্রণ করে।
যদিও স্টেরয়েড হরমোন (steroid hormones) মূলত মেরুদণ্ডী প্রাণীতে তৈরি হয়, তবুও HPA এক্সিস ও কর্টিকোস্টেরয়েড (corticosteroids)-এর মানসিক চাপ-সংক্রান্ত (stress response) ভূমিকা এতটাই মৌলিক যে অনুরূপ ব্যবস্থা অমেরুদণ্ডী (invertebrates) ও এককোষী জীবেও (monocellular organisms) দেখা যায়।
HPA এক্সিস, হাইপোথ্যালামিক–পিটুইটারি–গোনাডাল (HPG) এক্সিস (Hypothalamic–pituitary–gonadal axis), হাইপোথ্যালামিক–পিটুইটারি–থাইরয়েড (HPT) এক্সিস (Hypothalamic–pituitary–thyroid axis) এবং হাইপোথ্যালামিক–নিউরোহাইপোফাইসিয়াল (hypothalamic–neurohypophyseal) ব্যবস্থা—এই চারটি হল প্রধান স্নায়ুবিন্যাসীয় ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি গ্রন্থি স্নায়ুবিন্যাসীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
অ্যানাটমি (Anatomy)
HPA এক্সিসের প্রধান উপাদানগুলি হল:[3]
- হাইপোথ্যালামাসের প্যারাভেন্ট্রিকুলার নিউক্লিয়াস (paraventricular nucleus): এখানে নিউরোএন্ডোক্রাইন (neuroendocrine) স্নায়ুকোষ রয়েছে, যা ভাসোপ্রেসিন (vasopressin) এবং কর্টিকোট্রোপিন-রিলিজিং হরমোন (CRH – Corticotropin-Releasing Hormone) সংশ্লেষ ও নিঃসরণ করে।
- পিটুইটারি গ্রন্থির অ্যান্টেরিয়র লোব (anterior lobe of the pituitary gland): CRH এবং ভাসোপ্রেসিন দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে পিটুইটারি গ্রন্থির অ্যান্টেরিয়র লোব অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রোপিক হরমোন (ACTH, একে আগে কর্টিকোট্রোপিন বলা হত) নিঃসরণ করে।
- অ্যাড্রেনাল কর্টেক্স (adrenal cortex): এটি ACTH উদ্দীপনার ফলে গ্লুকোকর্টিকোয়েড হরমোন (glucocorticoid hormones), মানুষের ক্ষেত্রে মূলত কর্টিসল (cortisol) উৎপাদন করে। উৎপন্ন গ্লুকোকর্টিকোয়েডগুলি পুনরায় হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি গ্রন্থিতে ক্রিয়াশীল হয়ে (নেগেটিভ ফিডব্যাক বা negative feedback) CRH ও ACTH উৎপাদন কমায়।
CRH ও ভাসোপ্রেসিন নিউরোসিক্রেটরি (neurosecretory) স্নায়ুতন্তুর প্রান্ত থেকে মিডিয়ান ইমিনেন্সে (median eminence) নিঃসৃত হয়। CRH হাইপোফাইসিয়াল স্টকের (hypophyseal stalk) পোর্টাল রক্তনালীর মাধ্যমে অ্যান্টেরিয়র পিটুইটারিতে পৌঁছে এবং ভাসোপ্রেসিন অ্যাক্সোনাল পরিবহণের (axonal transport) মাধ্যমে পোস্টেরিয়র পিটুইটারিতে যায়। সেখানে CRH ও ভাসোপ্রেসিন একসাথে কাজ করে কর্টিকোট্রোপ কোষ (corticotrope cells)-এ জমাকৃত ACTH নিঃসরণে সহায়তা করে। রক্তের মাধ্যমে ACTH অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির অ্যাড্রেনাল কর্টেক্সে গিয়ে দ্রুত কোলেস্টেরল (cholesterol) থেকে কর্টিকোস্টেরয়েড (corticosteroids) তৈরির প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করে। কর্টিসল হল প্রধান স্ট্রেস হরমোন, যা দেহের বহু কলায়, এমনকি মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কে কর্টিসল মিনারেলোকর্টিকোয়েড রিসেপ্টর (mineralocorticoid receptor) ও গ্লুকোকর্টিকোয়েড রিসেপ্টরের (glucocorticoid receptor) উপর কাজ করে, যা বিভিন্ন ধরণের নিউরনে প্রকাশিত হয়। গ্লুকোকর্টিকোয়েডের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যস্থল হল হাইপোথ্যালামাস, যা HPA এক্সিসের প্রধান নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র।[4]
ভাসোপ্রেসিনকে “জল সংরক্ষণকারী হরমোন” (water conservation hormone) বলা হয় এবং এটি অ্যান্টিডাইউরেটিক হরমোন (ADH – antidiuretic hormone) নামেও পরিচিত। দেহে পানিশূন্যতা হলে এটি নিঃসৃত হয় এবং কিডনিতে জল সংরক্ষণে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। এটি শক্তিশালী ভাসোকনস্ট্রিক্টর (vasoconstrictor) হিসেবেও কাজ করে।[5]
HPA এক্সিসের কার্যকারিতার সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিডব্যাক লুপ (feedback loops) হল:
- অ্যাড্রেনাল কর্টেক্সে উৎপাদিত কর্টিসল হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারিতে নেগেটিভ ফিডব্যাক দেয়। ফলশ্রুতিতে CRH ও ভাসোপ্রেসিন নিঃসরণ কমে এবং সরাসরি প্রোওপিওমেলানোকর্টিন (POMC – proopiomelanocortin) থেকে ACTH ও বিটা-এনডোরফিন (β-endorphins) উৎপাদনও কমে।
- অ্যাড্রেনাল মেডুলায় (adrenal medulla) উৎপাদিত এপিনেফ্রিন (epinephrine) ও নরএপিনেফ্রিন (norepinephrine) (E/NE), যা সিমপ্যাথেটিক উদ্দীপনা এবং কর্টিসলের স্থানীয় প্রভাবে (E/NE তৈরির জন্য এনজাইম বৃদ্ধি) উৎপন্ন হয়। E/NE পিটুইটারি গ্রন্থিতে পজিটিভ ফিডব্যাক দেয়, POMC বিভাজন বাড়ায়, ফলে ACTH ও β-endorphin উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
কার্যকারিতা (Function)
হাইপোথ্যালামাস থেকে CRH নিঃসরণ স্ট্রেস, শারীরিক কার্যকলাপ, অসুস্থতা, রক্তে কর্টিসলের মাত্রা এবং ঘুম-জাগরণ চক্র (sleep/wake cycle বা circadian rhythm)-এর দ্বারা প্রভাবিত হয়। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘুম থেকে ওঠার পর কর্টিসলের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ৩০-৪৫ মিনিটের মধ্যে চূড়ায় পৌঁছায়। এরপর তা ধীরে ধীরে দিনব্যাপী কমতে থাকে এবং বিকেলের শেষে আবার একটু বাড়ে। পরে রাতের শেষে কর্টিসল স্তর আবার কমতে থাকে এবং গভীর রাতে সর্বনিম্ন মাত্রায় পৌঁছায়। এটি দেহের বিশ্রাম-কার্যকলাপ চক্রের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।[6] অস্বাভাবিকভাবে সমতল (flattened) সারকাডিয়ান কর্টিসল চক্রকে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি সিনড্রোম (chronic fatigue syndrome), অনিদ্রা (insomnia) এবং বার্নআউট (burnout)-এর সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।[7][8][9]
HPA এক্সিস দেহের অনেক হোমিওস্ট্যাটিক (homeostatic) ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিপাকীয় ব্যবস্থা (metabolic system), কার্ডিওভাসকুলার ব্যবস্থা (cardiovascular system), রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system), প্রজনন ব্যবস্থা (reproductive system) এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (central nervous system)। শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক (psychosocial) প্রভাবকে একত্রিত করে HPA এক্সিস দেহকে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে, সম্পদ ব্যবহার করতে এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ করতে সাহায্য করে।[6]
অ্যামিগডালা (amygdala), হিপোক্যাম্পাস (hippocampus), প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (prefrontal cortex) এবং হাইপোথ্যালামাসের মতো মস্তিষ্ক অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ HPA এক্সিস সক্রিয়করণে সহায়তা করে।[10] অ্যামিগডালার ল্যাটারাল (lateral) অংশে আসা সংবেদী তথ্য প্রক্রিয়াকরণ হয়ে সেন্ট্রাল নিউক্লিয়াসে (central nucleus) যায়, সেখান থেকে ভয়ের প্রতিক্রিয়ার জন্য যুক্ত মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে সিগন্যাল প্রেরণ করে। হাইপোথ্যালামাসে ভয়জনিত সংকেত HPA এক্সিস ও সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র উভয়কে সক্রিয় করে।
স্ট্রেসের সময় কর্টিসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণও বাড়ে, যাতে “ফাইট বা ফ্লাইট” (fight or flight) প্রতিক্রিয়া সহজ হয়। এছাড়াও কর্টিসল অনাক্রম্য ব্যবস্থা (immune system)-র উচ্চ-মেটাবলিক কার্যকলাপ দমন করে, ফলস্বরূপ আরও বেশি গ্লুকোজ পাওয়া সম্ভব হয়।[6]
গ্লুকোকর্টিকোয়েডের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে, যার মধ্যে স্ট্রেস প্রতিক্রিয়ার মড্যুলেশন অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত গ্লুকোকর্টিকোয়েড ক্ষতিকর হতে পারে। তীব্র স্ট্রেসের সম্মুখীন মানুষ ও প্রাণীর হিপোক্যাম্পাসের (hippocampus) আকার হ্রাস পেতে দেখা গেছে, যা দীর্ঘস্থায়ী উচ্চমাত্রার গ্লুকোকর্টিকোয়েডের প্রভাবে ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। হিপোক্যাম্পাসের কার্যকারিতার ঘাটতি স্ট্রেসের উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় স্মৃতি সম্পদকে কমিয়ে দিতে পারে।[11]
রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা (Immune system)
HPA এক্সিস ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে দ্বি-মুখী যোগাযোগ ও ফিডব্যাক থাকে। ইন্টারলেউকিন-১ (IL-1), IL-6, IL-10 এবং TNF-আলফা (TNF-alpha)-এর মতো সাইটোকাইন (cytokines) HPA এক্সিস সক্রিয় করতে পারে। এর মধ্যে IL-1 সবচেয়ে শক্তিশালী। অন্যদিকে HPA এক্সিসের কর্টিসল নিঃসরণ উচ্চ মাত্রায় পৌঁছালে ইমিউন ও প্রদাহজনিত (inflammatory) প্রতিক্রিয়া দমন হয়। এটি অত্যধিক ইমিউন সক্রিয়তা থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহজনিত টিস্যুর ক্ষতি কমায়।[6]
সেন্ট্রাল নাভার্স সিস্টেম (CNS) কিছুটা ইমিউন প্রিভিলেজড (immune privileged), কিন্তু এটি রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা থেকেও প্রভাবিত হয়। CNS নিউরোএন্ডোক্রাইন পথের মাধ্যমে ইমিউন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে HPA এক্সিস অন্যতম। HPA এক্সিস শরীরজুড়ে প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়াগুলিকে সামঞ্জস্য করে।[12][13]
ইমিউন প্রতিক্রিয়ার সময় প্রোইনফ্লামেটরি সাইটোকাইন (যেমন IL-1) রক্তপ্রবাহে নিঃসৃত হয়ে রক্ত-মস্তিষ্ক বাধা (blood–brain barrier) অতিক্রম করতে পারে এবং মস্তিষ্কের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে HPA এক্সিসকে সক্রিয় করতে পারে।[13][14][15] প্রোইনফ্লামেটরি সাইটোকাইন ও মস্তিষ্কের পারস্পরিক ক্রিয়া নিউরোট্রান্সমিটারের (neurotransmitter) বিপাকীয় কার্যকলাপে পরিবর্তন আনতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি, অবসাদ ও মেজাজ পরিবর্তনের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।[13][14] HPA এক্সিসের ঘাটতি অ্যালার্জি (allergies) এবং প্রদাহজনিত/অটোইমিউন রোগ (inflammatory/autoimmune diseases) যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (rheumatoid arthritis) ও মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (multiple sclerosis)-এর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।[12][13][16]
যখন HPA এক্সিস কোন স্ট্রেসর (stressor) যেমন ইমিউন প্রতিক্রিয়া দ্বারা সক্রিয় হয় তখন উচ্চ মাত্রার গ্লুকোকর্টিকোয়েড নিঃসরণ হয়, যা ইমিউন প্রতিক্রিয়া দমন করে। এটি প্রোইনফ্লামেটরি সাইটোকাইন (যেমন IL-1, TNF alpha, এবং IFN gamma) নিঃসরণ কমায় এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি সাইটোকাইনের (যেমন IL-4, IL-10, IL-13) নিঃসরণ বাড়ায়, মনোসাইট (monocytes) ও নিউট্রোফিল (neutrophils)-এর মতো ইমিউন কোষে।[13][14][16][17]
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস ও তার সঙ্গে যুক্ত HPA এক্সিসের সক্রিয়তার ফলে ইমিউন ব্যবস্থার অস্থিরতা তৈরি হয় কিনা তা পরিষ্কার নয়; কিছু গবেষণায় ইমিউন সাপ্রেশন (immunosuppression) আবার কিছুতে ইমিউন হাইপারঅ্যাকটিভেশন (immune hyperactivation) দেখা গেছে।[17]
স্ট্রেস (Stress)
স্ট্রেস ও রোগ
HPA এক্সিস মেজাজজনিত রোগ (mood disorders) ও কার্যকরী অসুস্থতার (functional illnesses) নিউরোবায়োলজি ও প্যাথোফিজিওলজিতে জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে উদ্বেগজনিত সমস্যা (anxiety disorder), বাইপোলার ডিসঅর্ডার (bipolar disorder), অনিদ্রা (insomnia), পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD), বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (borderline personality disorder), ADHD, মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার (major depressive disorder), বার্নআউট (burnout), ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম (chronic fatigue syndrome), ফাইব্রোমায়ালজিয়া (fibromyalgia), ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (irritable bowel syndrome) এবং মদ্যপানজনিত আসক্তি (alcoholism)।[18][19] অনেক ক্ষেত্রেই এসব রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট (antidepressants) HPA এক্সিসের কাজকে স্বাভাবিক করতে সহায়তা করে।[20]
মানসিক স্ট্রেস সম্পর্কিত রোগগুলিতে লিঙ্গভেদে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন উদ্বেগ ও বিষণ্নতার ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়।[21] ইঁদুরের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্ত্রী ইঁদুর দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস সহ্য করতে ও প্রক্রিয়াকরণে দুর্বল হতে পারে, সম্ভবত গ্লুকোকর্টিকোয়েড রিসেপ্টর (glucocorticoid receptor) প্রকাশে কমতি ঘটা বা ডাউন রেগুলেশন হওয়া ও সাইটোসলে (cytosol) FKBP51 বাইন্ডিং প্রোটিনের (FKBP51 binding protein) অভাবের কারণে। এভাবে HPA এক্সিস ক্রমাগত সক্রিয় থাকলে স্ট্রেস বাড়তে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্ট্রেস-সম্পর্কিত অসুস্থতাকে আরও খারাপ করতে পারে।[22] বিশেষভাবে উক্ত গবেষণায় স্ত্রী ইঁদুরদের ক্ষেত্রে স্ট্রেস পরবর্তী HPA এক্সিসের সক্রিয়তা পুরুষদের তুলনায় বেশি ছিল। এই পার্থক্যগুলি হতে পারে টেস্টোস্টেরন (testosterone) ও ইস্ট্রোজেন (oestrogen)-এর বিপরীতমুখী ক্রিয়ার ফল। ইস্ট্রোজেন স্ট্রেসে ACTH ও CORT নিঃসরণ বাড়ায়, অন্যদিকে টেস্টোস্টেরন HPA এক্সিস সক্রিয়তা কমিয়ে ACTH ও CORT এর প্রতিক্রিয়া দমিয়ে রাখে।[23] তবে এই ক্ষেত্রে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
গবেষণায় বিভিন্ন ধরণের স্ট্রেস এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সেগুলির HPA এক্সিসের উপর প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে।[24] স্ট্রেসর শারীরিক (physical) বা সামাজিক (social) যে ধরনেরই হোক না কেন, উভয়েই HPA এক্সিস সক্রিয় করে, যদিও ভিন্ন পথে।[25] ডোপামিন (dopamine), সেরোটোনিন (serotonin) এবং নরএপিনেফ্রিন (norepinephrine) সহ বেশ কিছু মনোঅ্যামিন (monoamine) নিউরোট্রান্সমিটার HPA এক্সিস নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিটোসিন (oxytocin)-এর পরিমাণ বাড়লে—যেমন ইতিবাচক সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার কারণে—HPA এক্সিস দমন হয় এবং স্ট্রেস কমে যায়, ফলে ক্ষত নিরাময় (wound healing) প্রক্রিয়া উন্নত হয়।[26]
HPA এক্সিস স্তন্যপায়ী (mammals) ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীতে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, মাছের ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে অধস্তন হওয়া ক্রনিক স্ট্রেসের সাথে যুক্ত, যেটি কম আগ্রাসী আচরণ, নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং প্রভাবশালী মাছের দ্বারা আরোপিত ধারাবাহিক হুমকির ফলে হয়। সেরোটোনিন (5-HT) এই স্ট্রেস প্রতিক্রিয়ায় মূল সক্রিয় নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সেরোটোনিন বেড়ে গেলে প্লাজমা α-MSH (alpha-MSH) বেড়ে গিয়ে ত্বককে কালো করে (সামনয়েড মাছের ক্ষেত্রে এটি সামাজিক সংকেত), HPA এক্সিস সক্রিয় করে এবং আগ্রাসন দমিয়ে রাখে। রেইনবো ট্রাউটের (rainbow trout) খাদ্যে L-ট্রিপটোফ্যান (L-tryptophan, যা 5-HT এর পূর্ব পদার্থ) মিশিয়ে দিলে তারা কম আগ্রাসী ও স্ট্রেসে কম প্রতিক্রিয়াশীল হয়।[27] তবে গবেষণায় বলা হয়েছে, প্লাজমা কর্টিসল খাদ্যে L-ট্রিপটোফ্যান দেওয়ার ফলে পরিবর্তিত হয়নি। LY354740 (Eglumegad নামেও পরিচিত, যা মেটাবোট্রপিক গ্লুটামেট রিসেপ্টর 2 ও 3 এর একটি অ্যাগোনিস্ট) নামক ওষুধের ক্ষেত্রে দেখা গেছে এটি HPA এক্সিসে হস্তক্ষেপ করে। বনেট মাকাক (bonnet macaques, Macaca radiata)-এর ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী মুখে খাওয়া এই ওষুধ বেসলাইন কর্টিসল মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়; তাৎক্ষণিক ইনফিউশন করলে ইোহিম্বিন (yohimbine)-জনিত স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া কমে যায়।[28]
মানুষের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রনিক স্ট্রেস বিভিন্নভাবে HPA এক্সিস সক্রিয় করে, যা নির্ভর করে স্ট্রেসরের ধরন, ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য কারণের ওপর। অনিয়ন্ত্রিত, শারীরিক অঙ্গহানি বা আঘাতমূলক (traumatic) স্ট্রেসর সাধারণত চূড়ান্ত পর্যায়ে সমতল ধরনের কর্টিসল নিঃসরণ প্রোফাইল তৈরি করে—যেখানে সকালের কর্টিসল স্বাভাবিকের তুলনায় কম এবং সন্ধ্যায় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি—ফলে সারাদিনের মোট কর্টিসল নিঃসরণ বেশি হয়। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রনযোগ্য স্ট্রেসর সাধারণত সকালের কর্টিসল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উৎপাদন করে। স্ট্রেসর শেষ হওয়ার পর কর্টিসল নিঃসরণ ধীরে ধীরে কমে। PTSD রোগীদের ক্ষেত্রে কর্টিসল নিঃসরণ স্বাভাবিকের চেয়ে কম হতে দেখা যায়। ধারণা করা হয়, স্ট্রেসের প্রতি হরমোনগত প্রতিক্রিয়ার দুর্বলতা PTSD হওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে।[29]
HPA এক্সিস সম্পর্কিত হরমোনের সাথে ত্বকের কিছু রোগ এবং ত্বকের স্বাভাবিক সাম্যাবস্থার (homeostasis) সম্পর্ক পাওয়া গেছে। কিছু স্ট্রেস সম্পর্কিত ত্বকের রোগ এবং ত্বকের টিউমার (tumor) মস্তিষ্কে HPA এক্সিস হরমোনের অতিসক্রিয়তার সাথে সংশ্লিষ্ট।[30]
স্ট্রেস ও বিকাশ (Stress and development)
প্রি-নেটাল (Prenatal) স্ট্রেস
প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, জন্মের আগের স্ট্রেস (prenatal stress) HPA নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রাণী পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রি-নেটাল স্ট্রেস বয়স্ক হওয়ার পর একটি অতিপ্রতিক্রিয়াশীল (hyper-reactive) HPA স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। প্রি-নেটাল স্ট্রেসপ্রাপ্ত ইঁদুরগুলির বেসাল কর্টিকোস্টেরন (corticosterone) মাত্রা এবং সারকাডিয়ান ছন্দে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।[31] এছাড়াও, তারা আকস্মিক বা দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ হরমোন মাত্রা বজায় রাখে। এমন ইঁদুরের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি থাকে ও হিপোক্যাম্পাসে গ্লুকোকর্টিকোয়েড রিসেপ্টরের সংখ্যা কম থাকে।[32] মানুষের ক্ষেত্রে প্রসবকালীন দীর্ঘস্থায়ী মাতৃ-স্ট্রেস সন্তানের মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক ও ভাষিক বিকাশে মৃদু প্রভাব ফেলতে পারে, পাশাপাশি আচরণগত সমস্যা যেমন মনোযোগের ঘাটতি, স্কিজোফ্রেনিয়া (schizophrenia), উদ্বেগ ও বিষণ্নতার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। মাতৃ-নিজস্ব রিপোর্ট অনুযায়ী স্ট্রেসের সাথে শিশুর অধিক বিরক্তি, আবেগীয় ও মনোযোগগত সমস্যার সম্পর্ক পাওয়া গেছে।[33]
মানুষের মধ্যেও প্রি-নেটাল স্ট্রেস HPA নিয়ন্ত্রণে প্রভাব রাখে। প্রি-নেটাল স্ট্রেস আক্রান্ত শিশুদের কর্টিসল ছন্দ পরিবর্তিত হতে দেখা গেছে। উদাহরণস্বরূপ, মাতৃগর্ভে ডিপ্রেশনগ্রস্ত মায়ের সন্তানের কর্টিসল মাত্রা অস্বাভাবিক হতে পারে।[34] প্রি-নেটাল স্ট্রেস শিশুর বিষণ্নতার প্রবণতা ও স্বল্প মনোযোগসীমার সাথেও যুক্ত।[35]
প্রাথমিক জীবনের স্ট্রেস (Early life stress)
প্রাণী মডেলে প্রাথমিক জীবনের স্ট্রেসের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। দেখা গেছে, প্রাথমিক জীবনে মৃদু বা মাঝারি মাত্রার স্ট্রেসের অভিজ্ঞতা বয়সে ক্রমবিকাশে HPA নিয়ন্ত্রণ উন্নত করে এবং আজীবন স্ট্রেস প্রতিরোধী করে। বিপরীতে, অতি তীব্র বা দীর্ঘায়িত প্রাথমিক স্ট্রেস অতিপ্রতিক্রিয়াশীল HPA এক্সিস গড়ে তোলে এবং আজীবন স্ট্রেসের প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়ায়।[36] এক বহুল পুনরাবৃত্ত পরীক্ষায় দেখা গেছে, জন্মের প্রথম দুই সপ্তাহ যদি ইঁদুর শাবকদের নিয়মিত মানুষের হাতে ধরা হয় (মাঝারি স্ট্রেস), তবে বয়সকালে তাদের হরমোনগত ও আচরণগত স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া কম দেখা যায়। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় মায়ের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখলে (অতি তীব্র স্ট্রেস) পরবর্তীতে অধিকতর স্ট্রেস প্রবণতা দেখা যায়।[37]
এই ফলাফলের ব্যাখ্যায় কয়েকটি প্রস্তাবনা রয়েছে। একটি হলো, বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে রক্তে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা স্থায়ীভাবে HPA এক্সিসের ক্রিয়াশীলতার পরিমাপ নির্ধারণ করে দেয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত মাত্রার কর্টিকোস্টেরন-এ (corticosterone) প্রাথমিক এক্সপোজার পরবর্তীতে স্ট্রেস সহনশীলতা বাড়ায়, অন্যদিকে উচ্চ মাত্রার এক্সপোজার স্ট্রেস সংবেদনশীলতা বাড়ায়।[38]
আরেকটি সম্ভাবনা হল, মায়ের যত্ন (maternal care) HPA নিয়ন্ত্রণের মধ্যস্থতা করতে পারে। ইঁদুর শাবকদের ঘন ঘন ধরলে মা বেশি যত্ন (লেহন ও পরিচর্যা) করে। এই অতিরিক্ত যত্ন অন্তত দুটি উপায়ে HPA ক্রিয়া উন্নত করতে পারে। প্রথমত, মায়ের যত্ন দুধের ছানার জীবনের প্রথম দুই সপ্তাহের স্ট্রেস হাইপারেসপন্সিভ পিরিয়ড (SHRP – stress hyporesponsive period) বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই সময়ে HPA এক্সিস সাধারণত স্ট্রেসে প্রতিক্রিয়াশীল নয়। SHRP বজায় রাখা HPA বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের থেকে দীর্ঘ বিচ্ছেদ, যা SHRP ব্যাহত করে, স্থায়ী HPA ডিজরেগুলেশন (dysregulation) ঘটাতে পারে।[39] দ্বিতীয়ত, মাতৃযত্ন এপিজেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে গ্লুকোকর্টিকোয়েড রিসেপ্টর জিনের (glucocorticoid receptor gene) প্রকাশ পরিবর্তন করতে পারে, যা অভিযোজিত স্ট্রেস প্রতিক্রিয়ায় জরুরি।[36] একটি মানব গবেষণায় দেখা গেছে, মা-শিশু বিচ্ছেদের ভিডিও দেখে মায়েদের নিউরাল কার্যকলাপের ধরন গ্লুকোকর্টিকোয়েড রিসেপ্টর জিনের মিথাইলেশন (methylation) হ্রাসের সাথে যুক্ত ছিল, PTSD প্রেক্ষিতে যা প্রাথমিক জীবন স্ট্রেসের উপর নির্ভর করছে।[40]
মানুষের ওপর গবেষণায়, শৈশবে নিপীড়ন ভোগ করা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একটি মনস্তাত্ত্বিক স্ট্রেস টাস্কে ACTH মাত্রা বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে, যা সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি এবং বিষণ্নতা থাকলেও শৈশব নির্যাতনের ইতিহাস নেই এমন ব্যক্তিদের থেকেও বেশি।[41] অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশবে নির্যাতিত কিন্তু ডিপ্রেশন নেই এমন ব্যক্তিরা এক্সোজেনাস CRF প্রদানের পর স্বাভাবিক কর্টিসল নিঃসরণ ও উচ্চ ACTH প্রতিক্রিয়া দেখায়। অথচ শৈশব নির্যাতিত ও ডিপ্রেশনে ভোগা ব্যক্তিরা এক্সোজেনাস CRF এ কম ACTH প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা সাধারণত বিষণ্ন রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।[42]
হেইম (Heim) ও সহকর্মীরা প্রস্তাব করেছেন যে, শৈশবের মতো প্রাথমিক জীবনের স্ট্রেস HPA এক্সিসকে সংবেদনশীল করে তুলতে পারে, যার ফলে CRH নিঃসরণের সময় স্নায়বিক উত্তেজনার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। ক্রমাগত স্ট্রেসের মুখোমুখি হওয়ার ফলে সংবেদনশীল HPA এক্সিস অতিরিক্ত CRH নিঃসরণ করতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদে অ্যান্টেরিয়র পিটুইটারি CRH রিসেপ্টর ডাউন-রেগুলেটেড হয়, যা বিষণ্নতা ও উদ্বেগের লক্ষণ তৈরি করতে পারে।[42]
HPA এক্সিস আদিম মেরুদণ্ডী প্রাণী থেকেই উপস্থিত ছিল এবং এর বিবর্তনীয় প্রয়োজনীয়তার কারণে শক্তিশালী ইতিবাচক নির্বাচন দ্বারা রক্ষণাবেক্ষিত হয়েছে।[43] প্রি-নেটাল ও প্রারম্ভিক শিশু বয়সের পরিবেশ HPA এক্সিসের ক্রিয়াকে “প্রোগ্রাম” করে।[44][45][46] মাতৃ-স্ট্রেস (Maternal stress) ও যত্নের তারতম্য প্রারম্ভিক জীবন প্রতিকূলতা সৃষ্টি করতে পারে, যা পরবর্তী জীবনে স্ট্রেস ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।[44][45] প্রাণী মডেলে (যেমন ইঁদুর ছানাকে মা যেভাবে লেহন ও পরিচর্যা করে) দেখানো হয়েছে, মাতৃযত্ন শাবকের স্নায়ুজৈবিক, শারীরিক ও আচরণগত বিকাশে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। যখন মাতৃযত্ন হৃদ্পিণ্ডের প্রতিক্রিয়া, ঘুম-জাগরণ ছন্দ এবং গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ উন্নত করে, তখন এটি HPA এক্সিসের সক্রিয়তা দমন করে। এইভাবে মাতৃযত্ন নবজাতকের স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া কমায়, ভবিষ্যতে স্ট্রেসের প্রতি সংবেদনশীলতা নির্ধারণ করে। এই প্রোগ্রামিং প্রভাবগুলি চূড়ান্ত নয়। পরবর্তীতে জীবনের পরিবেশ প্রোগ্রাম করা HPA প্রতিক্রিয়া নিলেই তার ফলাফল নির্ধারিত হয়। যদিও HPA এক্সিসের মাধ্যমিক নিয়ন্ত্রকদের পরিচয় জানা গেছে, কিন্তু কীভাবে এই প্রোগ্রামিং প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় তা এখনও স্পষ্ট নয়।[47]
HPA এক্সিসের প্রোগ্রামিং ও পূর্বানুমানমূলক অভিযোজন (predictive adaptation) নিয়ে বিভিন্ন হাইপোথেসিস রয়েছে, যেমন—
(1) প্রেডিক্টিভ অ্যাডাপটেশন হাইপোথেসিস (Predictive adaptation hypothesis): এটি ডায়াথেসিস স্ট্রেস মডেলের বিপরীতে। এই হাইপোথেসিস অনুযায়ী, প্রাথমিক জীবনের অভিজ্ঞতা জিনগত ও এপিজেনেটিক পরিবর্তন ঘটায় যা ভবিষ্যৎ পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সহায়তা করবে। দীর্ঘস্থায়ী মাতৃ-স্ট্রেস বা কম মাতৃযত্ন পেলে শিশুর HPA এক্সিস এমনভাবে প্রোগ্রাম হয়ে যায় যে এটি ভবিষ্যতে উচ্চ-স্ট্রেস পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে।
(2) থ্রি-হিট কনসেপ্ট (Three-hit concept) of vulnerability and resilience: এখানে তিনটি পর্যায়ের “হিট” হল—জিনগত পূর্ববৃত্তি, প্রারম্ভিক জীবন পরিবেশ (প্রি-নেটাল ও পোস্টনেটাল), এবং পরবর্তী জীবনের পরিবেশ। এই তিনটির সমন্বয়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় কারও স্ট্রেসের প্রতি দৃঢ়তা বা ভঙ্গুরতা।
(3) মাতৃমধ্যস্থতা হাইপোথেসিস (Maternal mediation hypothesis): এই হাইপোথেসিস অনুযায়ী, মাতৃযত্নই HPA এক্সিসকে প্রাথমিক জীবনে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পরবর্তীতে স্ট্রেস প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে তোলে।[38][48][49]
HPA এক্সিস মানব ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর বিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কর্টিকোস্টেরয়েড উৎপাদন, যা HPA এক্সিস নিয়ন্ত্রণ করে, মস্তিষ্কের বিকাশ ও পরিবেশগত স্ট্রেসের সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন পরিবেশে উচ্চতর HPA প্রতিক্রিয়া হয়তো প্রাণীকে শিকারি বা পরিবেশগত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযোজনে সহায়তা করেছে। বর্তমান সমাজে, HPA এক্সিস সম্পর্কে ধারণা ও প্রাথমিক জীবনে এর প্রভাব মাতৃত্বকালীন ও শৈশব যত্নের গুরুত্ব বোঝাতে সাহায্য করে। এটি ভবিষ্যতে পরামর্শ, চিকিৎসা ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।[49]
তথ্যসূত্র
- Malenka, R. C., Nestler, E. J., & Hyman, S. E. (2009). Chapter 10: Neural and neuroendocrine control of the internal milieu. In A. Sydor & R. Y. Brown (Eds.), Molecular neuropharmacology: A foundation for clinical neuroscience (2nd ed., pp. 246, 248–259). McGraw-Hill Medical.
- Selye, H. (1974). Stress without distress. Lippincott.
- Natural Resources Defense Council. (2015, May 18). Getting to know the HPA axis. Retrieved August 8, 2023, from https://www.nrdc.org (Original work archived on August 10, 2023)
- Tasker, J. G., & Herman, J. P. (2011). Mechanisms of rapid glucocorticoid feedback inhibition of the hypothalamic–pituitary–adrenal axis. Stress, 14(4), 398–406. https://doi.org/10.3109/10253890.2011.586446
- Cuzzo, B., & Lappin, S. L. (2019). Vasopressin (Antidiuretic Hormone, ADH). In StatPearls. StatPearls Publishing. Retrieved October 19, 2019, from https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK470410/ (Original work archived on March 25, 2021)
- del Rey, A., Chrousos, G. P., & Besedovsky, H. O. (Eds.). (2008). The hypothalamus-pituitary-adrenal axis (Vol. 7, NeuroImmune Biology). Elsevier Science.
- MacHale, S. M., Cavanagh, J. T., Bennie, J., Carroll, S., Goodwin, G. M., & Lawrie, S. M. (1998). Diurnal variation of adrenocortical activity in chronic fatigue syndrome. Neuropsychobiology, 38(4), 213–217. https://doi.org/10.1159/000026543
- Backhaus, J., Junghanns, K., & Hohagen, F. (2004). Sleep disturbances are correlated with decreased morning awakening salivary cortisol. Psychoneuroendocrinology, 29(9), 1184–1191. https://doi.org/10.1016/j.psyneuen.2004.01.010
- Pruessner, J. C., Hellhammer, D. H., & Kirschbaum, C. (1999). Burnout, perceived stress, and cortisol responses to awakening. Psychosomatic Medicine, 61(2), 197–204. https://doi.org/10.1097/00006842-199903000-00012
- Freberg, L. (2015). Discovering behavioral neuroscience: An introduction to biological psychology (3rd ed.). Cengage Learning.
- Frankiensztajn, L. M., Elliott, E., & Koren, O. (2020). The microbiota and the hypothalamus-pituitary-adrenocortical (HPA) axis, implications for anxiety and stress disorders. Current Opinion in Neurobiology, 62, 76–82. https://doi.org/10.1016/j.conb.2019.12.003
- Marques-Deak, A., Cizza, G., & Sternberg, E. (2005). Brain-immune interactions and disease susceptibility. Molecular Psychiatry, 10(3), 239–250. https://doi.org/10.1038/sj.mp.4001643
- Otmishi, P., Gordon, J., El-Oshar, S., Li, H., Guardiola, J., Saad, M., Proctor, M., & Yu, J. (2008). Neuroimmune interaction in inflammatory diseases. Clinical Medicine: Circulatory, Respiratory, and Pulmonary Medicine, 2, 35–44. https://doi.org/10.4137/ccrpm.s547
- Tian, R., Hou, G., Li, D., & Yuan, T.-F. (2014). A possible change process of inflammatory cytokines in the prolonged chronic stress and its ultimate implications for health. The Scientific World Journal, 2014, 780616. https://doi.org/10.1155/2014/780616
- Hall, J., Cruser, d., Podawiltz, A., Mummert, D., Jones, H., & Mummert, M. (2012). Psychological stress and the cutaneous immune response: Roles of the HPA axis and the sympathetic nervous system in atopic dermatitis and psoriasis. Dermatology Research and Practice, 2012, 403908. https://doi.org/10.1155/2012/403908
- Bellavance, M.-A., & Rivest, S. (2014). The HPA-immune axis and the immunomodulatory actions of glucocorticoids in the brain. Frontiers in Immunology, 5, 136. https://doi.org/10.3389/fimmu.2014.00136
- Padgett, D., & Glaser, R. (2003). How stress influences the immune response. Trends in Immunology, 24(8), 444–448. https://doi.org/10.1016/S1471-4906(03)00173-X
- Spencer, R. L., & Hutchison, K. E. (1999). Alcohol, aging, and the stress response. Alcohol Research & Health, 23(4), 272–283.
- Smith, C. J., Emge, J. R., Berzins, K., Lung, L., Khamishon, R., Shah, P., Rodrigues, D. M., Sousa, A. J., Reardon, C., Sherman, P. M., Barrett, K. E., & Gareau, M. G. (2014). Probiotics normalize the gut-brain-microbiota axis in immunodeficient mice. American Journal of Physiology—Gastrointestinal and Liver Physiology, 307(8), G793–G802. https://doi.org/10.1152/ajpgi.00238.2014
- Pariante, C. M. (2003). Depression, stress and the adrenal axis. Journal of Neuroendocrinology, 15(8), 811–812. https://doi.org/10.1046/j.1365-2826.2003.01058.x
- Rosinger, Z., Jacobskind, J., Park, S., Justice, N., & Zuloaga, D. (2017). Distribution of corticotropin-releasing factor receptor 1 in the developing mouse forebrain: A novel sex difference revealed in the rostral periventricular hypothalamus. Neuroscience, 361, 167–178. https://doi.org/10.1016/j.neuroscience.2017.08.016
- Palumbo, M. C., Dominguez, S., & Dong, H. (2020). Sex differences in hypothalamic–pituitary–adrenal axis regulation after chronic unpredictable stress. Brain and Behavior, 10(4), e01586. https://doi.org/10.1002/brb3.1586
- Handa, R. J., Weiser, M. J., & Zuloaga, D. G. (2009). A role for the androgen metabolite, 5α-androstane-3β,17β-diol, in modulating oestrogen receptor β-mediated regulation of hormonal stress reactivity. Journal of Neuroendocrinology, 21(4), 351–358. https://doi.org/10.1111/j.1365-2826.2009.01840.x
- Douglas, A. J. (2005). Central noradrenergic mechanisms underlying acute stress responses of the hypothalamo–pituitary–adrenal axis: Adaptations through pregnancy and lactation. Stress, 8(1), 5–18. https://doi.org/10.1080/10253890500044380
- Engelmann, M., Landgraf, R., & Wotjak, C. T. (2004). The hypothalamic-neurohypophysial system regulates the hypothalamic–pituitary–adrenal axis under stress: An old concept revisited. Frontiers in Neuroendocrinology, 25(3–4), 132–149. https://doi.org/10.1016/j.yfrne.2004.09.001
- Detillion, C. E., Craft, T. K., Glasper, E. R., Prendergast, B. J., & DeVries, A. C. (2004). Social facilitation of wound healing. Psychoneuroendocrinology, 29(8), 1004–1011. https://doi.org/10.1016/j.psyneuen.2003.10.003
- Winberg, S., Øverli, Ø., & Lepage, O. (2001). Suppression of aggression in rainbow trout (Oncorhynchus mykiss) by dietary L-tryptophan. The Journal of Experimental Biology, 204(22), 3867–3876. https://doi.org/10.1242/jeb.204.22.3867
- Coplan, J. D., Mathew, S. J., Smith, E. L., et al. (2001). Effects of LY354740, a novel glutamatergic metabotropic agonist, on nonhuman primate hypothalamic–pituitary–adrenal axis and noradrenergic function. CNS Spectrums, 6(7), 607–612, 617. https://doi.org/10.1017/S1092852900002157
- Miller, G. E., Chen, E., & Zhou, E. S. (2007). If it goes up, must it come down? Chronic stress and the hypothalamic–pituitary–adrenocortical axis in humans. Psychological Bulletin, 133(1), 25–45. https://doi.org/10.1037/0033-2909.133.1.25
- Kim, J. E., Cho, B. K., Cho, D. H., & Park, H. J. (2013). Expression of hypothalamic–pituitary–adrenal axis in common skin diseases: Evidence of its association with stress-related disease activity. Acta Dermato-Venereologica, 93(4), 387–393. https://doi.org/10.2340/00015555-1557
- Koehl, M., Darnaudéry, M., Dulluc, J., Van Reeth, O., Le Moal, M., & Maccari, S. (1999). Prenatal stress alters circadian activity of hypothalamo–pituitary–adrenal axis and hippocampal corticosteroid receptors in adult rats of both gender. Journal of Neurobiology, 40(3), 302–315. https://doi.org/10.1002/(SICI)1097-4695(19990905)40:3<302::AID-NEU3>3.0.CO;2-7
- Weinstock, M., Matlina, E., Maor, G. I., Rosen, H., & McEwen, B. S. (1992). Prenatal stress selectively alters the reactivity of the hypothalamic-pituitary adrenal system in the female rat. Brain Research, 595(2), 195–200. https://doi.org/10.1016/0006-8993(92)91049-K
- Weinstock, M. (2008). The long-term behavioural consequences of prenatal stress. Neuroscience and Biobehavioral Reviews, 32(6), 1073–1086. https://doi.org/10.1016/j.neubiorev.2008.03.002
- Gutteling, B. M., de Weerth, C., & Buitelaar, J. K. (2004). Maternal prenatal stress and 4–6 year old children’s salivary cortisol concentrations pre- and post-vaccination. Stress, 7(4), 257–260. https://doi.org/10.1080/10253890500044521
- Buitelaar, J. K., Huizink, A. C., Mulder, E. J., de Medina, P. G., & Visser, G. H. (2003). Prenatal stress and cognitive development and temperament in infants. Neurobiology of Aging, 24(Suppl 1), S53–S60. https://doi.org/10.1016/S0197-4580(03)00050-2
- Flinn, M. V., Nepomnaschy, P. A., Muehlenbein, M. P., & Ponzi, D. (2011). Evolutionary functions of early social modulation of hypothalamic–pituitary–adrenal axis development in humans. Neuroscience & Biobehavioral Reviews, 35(7), 1611–1629. https://doi.org/10.1016/j.neubiorev.2011.01.005
- Liu, D., Diorio, J., Tannenbaum, B., et al. (1997). Maternal care, hippocampal glucocorticoid receptors, and hypothalamic–pituitary–adrenal responses to stress. Science, 277(5332), 1659–1662. https://doi.org/10.1126/science.277.5332.1659
- Macrì, S., & Würbel, H. (2006). Developmental plasticity of HPA and fear responses in rats: A critical review of the maternal mediation hypothesis. Hormones and Behavior, 50(5), 667–680. https://doi.org/10.1016/j.yhbeh.2006.06.015
- de Kloet, E. R., Sibug, R. M., Helmerhorst, F. M., Schmidt, M. V., & Schmidt, M. (2005). Stress, genes and the mechanism of programming the brain for later life. Neuroscience and Biobehavioral Reviews, 29(2), 271–281. https://doi.org/10.1016/j.neubiorev.2004.10.008
- Schechter, D. S., Moser, D. A., Paoloni-Giacobino, A., Stenz, L., Gex-Fabry, M., Aue, T., Adouan, W., Cordero, M. I., Suardi, F., Manini, A., & Sancho Rossignol, A. (2015). Methylation of NR3C1 is related to maternal PTSD, parenting stress and maternal medial prefrontal cortical activity in response to child separation among mothers with histories of violence exposure. Frontiers in Psychology, 6, 690. https://doi.org/10.3389/fpsyg.2015.00690
- Heim, C., Newport, D. J., Heit, S., Graham, Y. P., Wilcox, M., Bonsall, R., & Nemeroff, C. B. (2000). Pituitary-adrenal and autonomic responses to stress in women after sexual and physical abuse in childhood. JAMA, 284(5), 592–597. https://doi.org/10.1001/jama.284.5.592
- Heim, C., Newport, D. J., Bonsall, R., Miller, A. H., & Nemeroff, C. B. (2001). Altered pituitary-adrenal axis responses to provocative challenge tests in adult survivors of childhood abuse. American Journal of Psychiatry, 158(4), 575–581. https://doi.org/10.1176/appi.ajp.158.4.575
- Denver, R. J. (2009). Structural and functional evolution of vertebrate neuroendocrine stress systems. Annals of the New York Academy of Sciences, 1163(1), 1–16. https://doi.org/10.1111/j.1749-6632.2009.04433.x
- Oitzl, M. S., Champagne, D. L., van der Veen, R., & de Kloet, E. R. (2010). Brain development under stress: Hypotheses of glucocorticoid actions revisited. Neuroscience & Biobehavioral Reviews, 34(6), 853–866. https://doi.org/10.1016/j.neubiorev.2009.07.006
- Horton, T. H. (2005). Fetal origins of developmental plasticity: Animal models of induced life history variation. American Journal of Human Biology, 17(1), 34–43. https://doi.org/10.1002/ajhb.20092
- Matthews, S. G. (2000). Antenatal glucocorticoids and programming of the developing CNS. Pediatric Research, 47(3), 291–300. https://doi.org/10.1203/00006450-200003000-00003
- Champagne, F. A., Francis, D. D., Mar, A., & Meaney, M. J. (2003). Variations in maternal care in the rat as a mediating influence for the effects of environment on development. Physiology & Behavior, 79(3), 359–371. https://doi.org/10.1016/s0031-9384(03)00149-5
- Daskalakis, N. P., Bagot, R. C., Parker, K. J., Vinkers, C. H., & de Kloet, E. R. (2013). The three-hit concept of vulnerability and resilience: Toward understanding adaptation to early-life adversity outcome. Psychoneuroendocrinology, 38(9), 1858–1873. https://doi.org/10.1016/j.psyneuen.2013.06.008
- Roth, T. L., Matt, S., Chen, K., & Blaze, J. (2014). Bdnf DNA methylation modifications in the hippocampus and amygdala of male and female rats exposed to different caregiving environments outside the homecage. Developmental Psychobiology, 56(8), 1755–1763. https://doi.org/10.1002/dev.21218
Leave a Reply