অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া (Insomnia)

১৪শ শতকের চিকিৎসা পাণ্ডুলিপি "Tacuinum Sanitatis"-এ অনিদ্রার চিত্র

Table of Contents

ভূমিকা

অনিদ্রা (Insomnia), একটি ঘুমের ব্যাধি যা নিদ্রাহীনতা (sleeplessness) নামেও পরিচিত। এই ব্যাধিতে মানুষ ঘুমাতে সমস্যা বোধ করে।[1][11] তারা ঘুমাতে সমস্যা অনুভব করতে পারে। অথবা তারা যতক্ষণ ঘুমানো উচিত, ততক্ষণ ধরে ঘুমাতে পারে না।[1][9][12] অনিদ্রার কারণে পরদিন দিনের বেলায় সাধারণত নিদ্রালু ভাব থাকে। এছাড়াও শক্তি কমে যায় (low energy), বিরক্তি দেখা দেয় (irritability), এবং বিষণ্ন মেজাজ (depressed mood) তৈরি হয়।[1] এটি বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মনোযোগ ও শেখার ক্ষমতায় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।[9] অনিদ্রা স্বল্পমেয়াদী হতে পারে, যা কয়েক দিন বা সপ্তাহ স্থায়ী হয়। আবার এটি দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, যা এক মাসের বেশি সময় ধরে থাকে।[1] অনিদ্রা শব্দটি দুটি ভিন্ন সম্ভাবনা নির্দেশ করে। এটি হতে পারে অনিদ্রা ব্যাধি (Insomnia Disorder) অথবা অনিদ্রার উপসর্গ (insomnia symptoms)। অনেক সময় যাদৃচ্ছিকীকৃত নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা (randomized controlled trials) এবং সিস্টেমেটিক রিভিউগুলোর (systematic reviews) সংক্ষিপ্তসারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় না কোনটির কথা বলা হচ্ছে।[13]

অনিদ্রা স্বাধীনভাবে ঘটতে পারে। এটি অন্য কোনও সমস্যার ফলাফল হিসেবেও দেখা দিতে পারে।[2] বিভিন্ন অবস্থার কারণে অনিদ্রা হতে পারে। এর মধ্যে মানসিক চাপ (Psychological Stress), দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা (Chronic Pain), হৃদপিণ্ডের ব্যর্থতা (Heart Failure), হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism), হার্টবার্ন (Heartburn), অস্থির পা সিন্ড্রোম (Restless Leg Syndrome), মেনোপজ (Menopause), নির্দিষ্ট ওষুধ, ক্যাফেইন, নিকোটিন এবং অ্যালকোহলের মতো মাদকদ্রব্য অন্তর্ভুক্ত।[2][8] এডিএইচডি (ADHD) রোগীদের মধ্যে অনিদ্রা সাধারণ। এছাড়া অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যেও অনিদ্রা দেখা যায়।[14][15] অন্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে রাতের শিফটে কাজ করা এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea)।[9] অনিদ্রার নির্ণয় করা হয় ঘুমের অভ্যাস এবং অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করার মাধ্যমে।[3] ঘুমের অন্যান্য ব্যাধি খুঁজে বের করার জন্য ঘুমের পরীক্ষা করা হতে পারে।[3] স্ক্রিনিংয়ের সময় প্রশ্ন করা হতে পারে, “আপনি কি ঘুমাতে সমস্যা অনুভব করেন?” অথবা “আপনি কি ঘুমানো বা ঘুম ধরে রাখতে সমস্যায় পড়েন?”[9]

অনিদ্রার প্রথম সারির চিকিৎসা (first line treatments) হিসেবে সাধারণত ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি এবং জীবনধারার পরিবর্তন প্রয়োগ করা হয়। তবে এর কার্যকারিতা অনিশ্চিত হতে পারে।[5][7][16] ঘুমের স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে রয়েছে নিয়মিত ঘুমানোর সময় মেনে চলা। এছাড়া একটি শান্ত ও অন্ধকার ঘরে ঘুমানো, দিনের বেলায় সূর্যের আলো গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।[7] কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপি (Cognitive Behavioral Therapy) এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে।[6][17] ঘুমের ওষুধ সাহায্য করতে পারে। তবে এগুলো কখনও কখনও আঘাত, ডিমেনশিয়া এবং আসক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।[5][6] এই ধরনের ওষুধ চার বা পাঁচ সপ্তাহের বেশি সময়ের জন্য প্রস্তাবিত নয়।[6] বিকল্প চিকিৎসার (alternative medicine) কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তা স্পষ্ট নয়।[5][6]

প্রায় ১০% থেকে ৩০% প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যেকোনও সময়ে অনিদ্রায় ভোগেন। প্রায় অর্ধেক মানুষ এক বছরে একবার হলেও অনিদ্রার শিকার হন।[8][9][10] প্রায় ৬% মানুষের অনিদ্রা অন্য কোনও সমস্যার কারণে হয়না, বরঙ নিজেই একটি সমস্যা। এটি এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়।[9] ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে অনিদ্রার প্রকোপ বেশি। তরুণদের তুলনায় এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।[7] নারীদের মধ্যে অনিদ্রার প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় বেশি।[8] প্রাচীন গ্রিসের সময়কাল থেকেই অনিদ্রার বর্ণনা পাওয়া যায়।[18]

লক্ষণ এবং উপসর্গসমূহ (Signs and symptoms)

অনিদ্রার (Insomnia) সম্ভাব্য জটিলতা সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হলো।[19] অনিদ্রার প্রধান উপসর্গগুলো নিম্নরূপ:[20]

  • ঘুমাতে সমস্যা হয়। অনেক সময় আরামদায়ক ঘুমের অবস্থান খুঁজে পেতে অসুবিধা হয়।
  • রাতে ঘুম ভেঙে যায়। তারপর আবার ঘুমাতে পারা যায় না।[21] এছাড়া খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা হয়।
  • দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়। স্মরণশক্তিতে দুর্বলতা দেখা দেয়।
  • দিনের বেলায় ঘুম ঘুম লাগে। বিরক্তি, বিষণ্নতা বা উদ্বেগ অনুভব হয়।
  • দিনের বেলায় ক্লান্তি বোধ হয়। শক্তি কম থাকে।[22]
  • একাগ্রতার অভাব দেখা দেয়।
  • বিরক্তি হয়। অনেক সময় আগ্রাসী বা অসংযমী আচরণ দেখা দেয়।

স্লিপ অনসেট অনিদ্রা (Sleep Onset Insomnia) হলো রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হওয়ার সমস্যা। এটি উদ্বেগজনিত ব্যাধির (anxiety disorders) উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। ডিলে স্লিপ ফেজ ডিসঅর্ডার (Delayed Sleep Phase Disorder) প্রায়শই অনিদ্রা হিসেবে ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়। কারণ ঘুমের শুরু অনেক দেরিতে হয়। এই কারণে দিনের বেলায় জাগরণের সময় বৃদ্ধি পায়।[23]

অনেক রোগী রাতে ঘুমাতে অসুবিধা অনুভব করেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রাতে ঘুম ভেঙে যায় এবং পুনরায় ঘুমাতে সমস্যা হয়।[24] এই ধরনের রোগীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি পুনরায় ঘুমাতে পারেন না।[25]

প্রাতঃকালীন সময়ে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে (Early morning awakening) ওঠা একটি সাধারণ সমস্যা। এটি তখন ঘটে যখন মোট ঘুমের সময় ৬.৫ ঘণ্টার কম হয়। এমনকি ঘুম ভাঙার সময় কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে ঘটে। তারপর আবার ঘুমাতে পারা যায় না। প্রাতঃকালীন তাড়াতাড়ি জাগরণ ((Early morning awakening)) বিষণ্নতার একটি লক্ষণ।[26] উদ্বেগের (Anxiety) উপসর্গ অনিদ্রার কারণ হতে পারে। এই উপসর্গগুলোর মধ্যে উত্তেজনা থাকে। ভবিষ্যৎ নিয়ে বাধ্যতামূলক চিন্তা (compulsive worrying) দেখা যায়। অতিরিক্ত উদ্দীপনা (overstimulated) অনুভূত হয়। অতীত ঘটনা নিয়ে অতিরিক্ত বিশ্লেষণও (overanalyzing) দেখা দিতে পারে।[27]

ঘুমের খারাপ গুণমান (Poor sleep quality)

ঘুমের খারাপ গুণমানের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন, অস্থির পা সিন্ড্রোম (Restless Legs), স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea), বা প্রধান বিষণ্নতা (Major Depression)। খারাপ ঘুমের গুণমান তখন ঘটে, যখন ব্যক্তি পর্যায় ৩ বা ডেল্টা ঘুমে পৌঁছাতে পারে না। এই পর্যায়ের ঘুম পুনরুদ্ধারকারী বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।[28] প্রধান বিষণ্নতা (Major Depression) হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-অ্যাড্রেনাল (Hypothalamic–Pituitary–Adrenal) এক্সিস বা অক্ষের কার্যকারিতা পরিবর্তন করে। এর ফলে অতিরিক্ত কর্টিসল (Cortisol) নিঃসরণ হয়। এতে ঘুমের গুণমান খারাপ হতে পারে।

নোকটর্নাল পলিউরিয়া (Nocturnal Polyuria), অর্থাৎ রাতে অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া, ঘুমের গুণমান খারাপ করতে পারে।[29]

বিষয়গততা (Subjectivity)

অনিদ্রার কিছু ক্ষেত্রে এটি সত্যিকারের অনিদ্রা নয়। একে স্লিপ স্টেট মিসপারসেপশন (Sleep State Misperception) বলা হয়। এই ধরনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রায়ই স্বাভাবিক পরিমাণে ঘুমান।[30] তবে তারা মনে করেন যে তারা খুব কম ঘুমিয়েছেন অথবা একদমই ঘুমাননি। কারণ তাদের ঘুমের ধারণা অসম্পূর্ণ। তারা ভুলভাবে বিশ্বাস করেন যে তাদের ঘুমাতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে। এছাড়া তারা তাদের ঘুমের সময়কেও কম বলে বিবেচনা করেন।[30]

সমস্যাজনক ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার (Problematic Digital Media Use)

২০১৮ সালের আগস্টে, স্লিপ সায়েন্স অ্যান্ড প্র্যাকটিস (Sleep Science and Practice) একটি সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এই গবেষণায় ১৯টি গবেষণা অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যেখানে ২,৫৩,৯০৪ কিশোর-কিশোরীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার ঘুমের সময়কাল হ্রাস এবং ঘুমানোর সময় বেশি লাগার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত। এই সমস্যাগুলো বিশেষত ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সের কিশোরদের মধ্যে পাওয়া যায়।[31]

একই মাসে, স্লিপ সায়েন্স আরও ১২টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ প্রকাশ করে। এতে ভিডিও গেম খেলার সঙ্গে ঘুমের ফলাফল এবং ঘুমের পরের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার মধ্যে সম্পর্ক যাচাই করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ঘুমের সময় কমে যাওয়া, ঘুমাতে সময় বেশি লাগা, দ্রুত চোখের চলন (Rapid Eye Movement) এবং ধীর তরঙ্গ ঘুমের পরিবর্তন (slow-wave sleep), ঘুম ঘুম ভাব বৃদ্ধি (increased sleepiness) এবং নিজেকে ক্লান্ত অনুভব করা (self-perceived fatigue) ইত্যাদির সঙ্গে ভিডিও গেম খেলার সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া ঘুমের পর মনোযোগের অভাব (impaired post-sleep attention span) এবং বাচনিক স্মৃতির (verbal memory) দুর্বলতার সঙ্গেও ভিডিও গেম খেলার সম্পর্ক রয়েছে।[32]

২০১৯ সালের অক্টোবরে, স্লিপ মেডিসিন রিভিউস (Sleep Medicine Reviews) ২৩টি গবেষণার একটি সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে ৩৫,৬৮৪ জন অংশগ্রহণকারী ছিল। গবেষণায় দেখা যায়, ইন্টারনেট আসক্তির সঙ্গে ঘুমের সমস্যার এবং ঘুমের সময় হ্রাসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যানগত সম্পর্ক রয়েছে।[33] ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সাইকিয়াট্রি রিসার্চ (Psychiatry Research) ১৪টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, সমস্যাজনক স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে ঘুমের খারাপ গুণমানের ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। একইভাবে, উচ্চমাত্রার স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে ঘুমের খারাপ গুণমানেরও সম্পর্ক পাওয়া যায়।[34]

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে, স্লিপ মেডিসিন রিভিউস শিশুদের স্ক্রিন সময় (screen time) এবং ঘুমের ফলাফলের মধ্যে সম্পর্ক যাচাই করার জন্য ৩১টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ প্রকাশ করে। গবেষণায় দেখা যায়, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে স্ক্রিন সময়ের সঙ্গে খারাপ ঘুমের ফলাফলের সম্পর্ক রয়েছে। মেটা-অ্যানালাইসিসে দেখা যায়, ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে খারাপ ঘুমের ফলাফল বেশি দেখা যায়।[35] মার্চ ২০২০ সালে, ডেভেলপমেন্টাল রিভিউ (Developmental Review) ৯টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ প্রকাশ করে। এতে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে ঘুমের পরিমাণ এবং গুণমানের দুর্বল থেকে মধ্যম মাত্রার সম্পর্ক পাওয়া যায়।[36]

অক্টোবর ২০২০ সালে, আন্তর্জাতিক পরিবেশ গবেষণা এবং জনস্বাস্থ্য জার্নাল (International Journal of Environmental Research and Public Health) ৮০টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, বেশি স্ক্রিন সময়ের সঙ্গে টডলার এবং প্রি-স্কুল বয়সী শিশুদের ঘুমের সময় হ্রাসের সম্পর্ক রয়েছে।[37] একই সময়ে, জার্নাল অব বিহেভিয়রাল অ্যাডিকশনস (Journal of Behavioral Addictions) ৪০টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে ৩৩,৬৫০ জন পোস্ট-সেকেন্ডারি শিক্ষার্থী অংশ নেয়। গবেষণায় দেখা যায়, মোবাইল ফোন আসক্তি এবং খারাপ ঘুমের গুণমানের দুর্বল থেকে মধ্যম মাত্রার ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।[38]

এপ্রিল ২০২১ সালে, স্লিপ মেডিসিন রিভিউস ৩৬টি ক্রস-সেকশনাল গবেষণা এবং ৬টি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ২৪টি ক্রস-সেকশনাল গবেষণা এবং ৫টি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণায় ঘন ঘন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সঙ্গে খারাপ ঘুমের ফলাফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে।[39]

জুন ২০২১ সালে, ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকিয়াট্রি (Frontiers in Psychiatry) ৩৪টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে ৫১,৯০১ জন অংশগ্রহণকারী ছিল। গবেষণায় দেখা যায়, সমস্যাজনক গেমিং এবং ঘুমের সময়কাল, খারাপ ঘুমের গুণমান, দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব এবং অন্যান্য ঘুমের সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে।[40]

সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে, বিএমসি পাবলিক হেলথ (BMC Public Health) ৪৯টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহারের সঙ্গে বিভিন্ন ঘুমের ফলাফলের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় ঘুমের সময় কমে যাওয়ার সঙ্গে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহারের শক্তিশালী সম্পর্ক পাওয়া যায়। এছাড়া ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ঘুমের সময় কমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি পাওয়া যায়।[41]

ডিসেম্বর ২০২১ সালে, ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউরোসায়েন্স (Frontiers in Neuroscience) জানুয়ারি ২০০০ থেকে এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত প্রকাশিত ১২টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ প্রকাশ করে। গবেষণায় দেখা যায়, যেসব প্রাপ্তবয়স্কদের গেমিং আসক্তি স্কোর বেশি, তাদের ঘুমের পরিমাণ কম এবং গুণমান খারাপ। এছাড়া তাদের ঘুমের সময় দেরিতে হওয়া এবং দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাব ও অনিদ্রার স্কোর বেশি থাকে। এই স্কোরগুলো কম গেমিং আসক্তি বা নন-গেমারদের তুলনায় বেশি।[42]

জানুয়ারি ২০২২ সালে, আর্লি চাইল্ডহুড রিসার্চ কোয়ার্টারলি (Early Childhood Research Quarterly) ২৬টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহারের সঙ্গে প্রাথমিক শৈশবে দুর্বল ঘুমের একটি দুর্বল কিন্তু পরিসংখ্যানগতভাবে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে।[43]

মে ২০২২ সালে, জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডারস (Journal of Affective Disorders) ২৯টি গবেষণার মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে ২০,০৪১ জন অংশগ্রহণকারী ছিল। গবেষণায় দেখা যায়, মোবাইল ফোন আসক্তি এবং ঘুমের ব্যাধির মধ্যে দুর্বল থেকে মধ্যম মাত্রার সম্পর্ক রয়েছে। মোবাইল ফোন আসক্তি রয়েছে এমন কিশোরদের মধ্যে ঘুমের ব্যাধি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।[44]

অগাস্ট ২০২২ সালে, আন্তর্জাতিক পরিবেশ গবেষণা এবং জনস্বাস্থ্য জার্নাল ১৬টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে ৮,০৭৭ জন অংশগ্রহণকারী ছিল। গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত বিন্জ-ওয়াচিং এবং ঘুমের সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় এই সম্পর্ক আরও শক্তিশালী ছিল।[45]

অক্টোবর ২০২২ সালে, রিপোর্টস ইন পাবলিক হেলথ (Reports in Public Health) ২৩টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, কিশোরদের মধ্যে অতিরিক্ত ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সঙ্গে খারাপ ঘুমের গুণমান, রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া, ঘুমের দীর্ঘ বিলম্ব, এবং দিনের বেলায় ঘুম ঘুম ভাবের সম্পর্ক রয়েছে।[46]

ডিসেম্বর ২০২২ সালে, স্লিপ এপিডেমিওলজি (Sleep Epidemiology) কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় স্ক্রিন সময় এবং ঘুমের সমস্যার মধ্যে সম্পর্ক যাচাই করার জন্য ১৮টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ প্রকাশ করে। গবেষণায় দেখা যায়, লকডাউনের সময় স্ক্রিন সময় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ঘুমের সময়কাল, ঘুমের গুণমান, ঘুমানোর বিলম্ব এবং জেগে ওঠার সময়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।[47]

মার্চ ২০২৩ সালে, জার্নাল অব ক্লিনিকাল স্লিপ মেডিসিন (Journal of Clinical Sleep Medicine) ১৭টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে ৩৬,৪৮৫ জন অংশগ্রহণকারী ছিল। গবেষণায় দেখা যায়, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের সঙ্গে খারাপ ঘুমের গুণমান, ঘুমের অভাব, এবং ঘুমাতে সময় বেশি লাগার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।[48]

এপ্রিল ২০২৩ সালে, স্লিপ মেডিসিন রিভিউস ৪২টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহারের সঙ্গে ঘুমের সময়কাল কমে যাওয়া এবং খারাপ ঘুমের গুণমানের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে রাতের বেলা বা শোবার সময় ব্যবহারের সঙ্গে খারাপ ঘুমের ফলাফল পাওয়া যায়। তবে সাধারণ স্ক্রিন ব্যবহার, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহার এবং সামাজিক মাধ্যমের ক্ষেত্রে সম্পর্ক পাওয়া গেলেও টেলিভিশন, গেম কনসোল এবং ট্যাবলেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।[49]

জুলাই ২০২৩ সালে, হেলথকেয়ার (Healthcare) ১৬টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, নোমোফোবিয়া (Nomophobia) এবং অনিদ্রার মধ্যে সহসম্পর্কের সহগ ছিল ০.৫৬।[50]

সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে, পিএলওএস ওয়ান (PLOS One) ১৬টি গবেষণার সিস্টেমেটিক রিভিউ এবং মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্মার্টফোন আসক্তি এবং ঘুমের মধ্যে সম্পর্ক যাচাই করা হয়। দেখা যায়, ৫৭% অংশগ্রহণকারীর ঘুমের গুণমান খারাপ এবং ৩৯% অংশগ্রহণকারীর স্মার্টফোন আসক্তি ছিল। সহসম্পর্কের সূচক ছিল ০.৩।[51]

একই সময়ে, কম্পিউটারস ইন হিউম্যান বিহেভিয়ার (Computers in Human Behavior) ২৩টি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণার মেটা-অ্যানালাইসিস প্রকাশ করে। এতে ১,১৬,৪৩১ জন কিশোর-কিশোরী অংশগ্রহণ করে। গবেষণায় দেখা যায়, কম্পিউটার, স্মার্টফোন, সামাজিক মাধ্যম এবং টেলিভিশন ব্যবহারের সঙ্গে কিশোর-কিশোরীদের পরবর্তীকালে ঘুমের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।[52]

কারণ (Causes)

অনেক ধরণের শারীরিক বা মানসিক অবস্থার কারণে অনিদ্রা (Insomnia) হতে পারে, আবার কখনো কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াও অনিদ্রা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিকে প্রাইমারি ইনসোমনিয়া (Primary Insomnia) বলে।[53] প্রাইমারি ইনসোমনিয়া শুরুতে কোনো নির্দিষ্ট কারণ দিয়ে শুরু হলেও সেই কারণ মিটে যাওয়ার পরও অনিদ্রা থেকে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কাজ বা জীবনযাত্রায় স্ট্রেসফুল (stressful) একটি ঘটনার পর অনিদ্রা শুরু হতে পারে। পরে সেই স্ট্রেসের (stress) সমস্যা সমাধান হয়ে গেলেও অনিদ্রা চলতে থাকে। এ ধরনের ক্ষেত্রে মূলত ঘুম না হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা বা ভয়ই অনিদ্রাকে বাঁচিয়ে রাখে, বাইরের কোনো কারণ নয়।[54]

অনিদ্রার লক্ষণগুলো নিম্নোক্ত কারণে বা অবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে:

  • ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের গোলমাল, যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া (sleep apnea) বা আপার এয়ারওয়ে রেজিস্ট্যান্স সিন্ড্রোম (upper airway resistance syndrome)[55]
  • সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগ (psychoactive drugs) বা উদ্দীপক (stimulants) জাতীয় পদার্থের ব্যবহার, যেমন কিছু ওষুধ, ভেষজ উপাদান, ক্যাফেইন (caffeine), নিকোটিন (nicotine), কোকেইন (cocaine), অ্যামফেটামিন (amphetamines), মিথাইলফেনিডেট (methylphenidate), অ্যারিপিপ্রাজোল (aripiprazole), এমডিএমএ (MDMA), মোডাফিনিল (modafinil), অথবা অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন[56]
  • অ্যালকোহল (alcohol) বা অন্যান্য সিডেটিভ (sedatives) থেকে ব্যবহার বা তা থেকে বিরত থাকা, যেমন উদ্বেগ কমানোর বা ঘুমের ওষুধ (বেঞ্জোডায়াজেপিন – benzodiazepines) বন্ধ করা[56]
  • ব্যথানাশক (pain-relievers) যেমন ওপিওয়েড (opioids) ব্যবহার বা তা থেকে বিরত থাকা[56]
  • হৃদরোগ (Heart disease)[57]
  • রেস্টলেস লেগস সিন্ড্রোম (Restless legs syndrome), যা ঘুমের শুরুতে অনিদ্রা তৈরি করতে পারে অস্বস্তিকর অনুভূতির কারণে, যেখানে পা বা শরীরের অন্য অঙ্গ নাড়াতে হয় এই অস্বস্তি কমানোর জন্য[58]
  • পিরিয়ডিক লিম্ব মুভমেন্ট ডিসঅর্ডার (Periodic limb movement disorder – PLMD), যা ঘুমের সময় ঘটে এবং ঘুমের মধ্যে অজান্তে জাগরণ তৈরি করতে পারে[59]
  • ব্যথা (Pain): কোনো আঘাত বা অবস্থা যা ব্যথার সৃষ্টি করে তা স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে ঘুমানোর পথে বাধা হতে পারে এবং ঘুম ভাঙিয়েও দিতে পারে[60]
  • হরমোনগত পরিবর্তন (Hormone shifts), যেমন মাসিক শুরুর আগে বা মেনোপজ (menopause)-এর সময়[61]
  • জীবনের ঘটনা (Life events), যেমন ভয়, স্ট্রেস (stress), উদ্বেগ (anxiety), আবেগগত বা মানসিক চাপে থাকা, কাজের সমস্যা, অর্থনৈতিক চাপ, সন্তানের জন্ম, শোক (bereavement)[58]
  • পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা (Gastrointestinal issues), যেমন হার্টবার্ন (heartburn) বা কোষ্ঠকাঠিন্য (constipation)[62]
  • মানসিক, নিউরোবিহেভিয়ারাল, বা নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার (Neurodevelopmental disorders), যেমন বাইপোলার ডিসঅর্ডার (bipolar disorder), ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন (clinical depression), জেনারালাইজড অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডার (generalized anxiety disorder), পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD), স্কিজোফ্রেনিয়া (schizophrenia), অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD), অটিজম (autism), ডিমেনশিয়া (dementia)[63]: 326 , ADHD,[64] এবং FASD
  • সার্কেডিয়ান রিদম (circadian rhythm)-এর ব্যাঘাত, যেমন শিফট ওয়ার্ক (shift work) বা জেট ল্যাগ (jet lag), যা দিনের কোনো কোনো সময় ঘুম আনতে বাধা দেয় এবং অন্য কোনো সময়ে অত্যধিক ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা তৈরি করে। দীর্ঘমেয়াদী সার্কেডিয়ান রিদম ডিসঅর্ডারে একইরকম উপসর্গ দেখা যায়।[56]
  • কিছু স্নায়বিক সমস্যা (Neurological disorders), যেমন মস্তিষ্কে ক্ষত (brain lesions) বা অতীতে ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরি (traumatic brain injury)[65]
  • কিছু মেডিকেল কন্ডিশন (Medical conditions), যেমন হাইপারথাইরয়েডিজম (hyperthyroidism)[2]
  • অতিরিক্ত মাত্রায় ওভার-দ্য-কাউন্টার বা প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইডস (sedative or depressant drugs) ব্যবহার, যা রিবাউন্ড ইনসোমনিয়া (rebound insomnia) তৈরি করতে পারে[56]
  • দুর্বল স্লিপ হাইজিন (Poor sleep hygiene), যেমন শোবার ঘরে শব্দ (noise) বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ[56]
  • একটি বিরল জিনগত সমস্যা (rare genetic condition), যা প্রিয়ন-ভিত্তিক (prion-based) এবং স্থায়ী ও শেষ পর্যন্ত মরণঘাতী অনিদ্রা সৃষ্টি করে, একে ফেটাল ফ্যামিলিয়াল ইনসোমনিয়া (fatal familial insomnia) বলা হয়[66]
  • শারীরিক ব্যায়াম (Physical exercise): অ্যাথলিটদের (athletes) মধ্যে অনেকসময় ব্যায়াম-induced অনিদ্রা দেখা যায়, যেখানে ঘুম আসতে বেশি সময় লাগে[67]
  • কৃত্রিম উৎস থেকে আসা নীল আলো (blue light), যেমন মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিন[68]
  • ক্রনিক পেইন (Chronic pain)[69][70]
  • লোয়ার ব্যাক পেইন (Lower back pain)[70]
  • অ্যাজমা (Asthma)[70]

পলিসমনোগ্রাফি (polysomnography) ব্যবহার করে করা ঘুম গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ঘুম ব্যাহত হয় তাদের রাতে কর্টিসল (cortisol) ও অ্যাড্রেনোকর্টিকোট্রপিক হরমোন (adrenocorticotropic hormone) এর মাত্রা বেশি থাকে।[71] তাদের শরীরে বিপাকীয় হার (metabolic rate) বেশি থাকে, যা স্বেচ্ছায় ঘুম ব্যাহত করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। পজিট্রন ইমিশন টোমোগ্রাফি (PET) স্ক্যানের মাধ্যমে মস্তিষ্কের বিপাকীয় হার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের দিনে ও রাতে মস্তিষ্কের বিপাকীয় হার বেশি। এই পরিবর্তনগুলো দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রার কারণ না ফলাফল, তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন থেকে গেছে।[72]

জেনেটিক (Genetics)

অনিদ্রার বংশগত হার (heritability) পুরুষদের মধ্যে প্রায় ৩৮% এবং মহিলাদের মধ্যে ৫৯% পর্যন্ত হতে পারে।[73] একটি জিনোম-ওয়াইড অ্যাসোসিয়েশন স্টাডি (GWAS) তে ৩টি জিনোমিক লোকাই (genomic loci) এবং ৭টি জিন চিহ্নিত করা হয়েছে যা অনিদ্রার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, এবং দেখা গেছে যে অনিদ্রা অত্যন্ত পলিজেনিক (polygenic)।[74] বিশেষ করে MEIS1 জিন উভয় লিঙ্গেই অনিদ্রার সাথে শক্তিশালী ইতিবাচক সম্পর্ক প্রদর্শন করেছে। এই গবেষণা দেখিয়েছে যে অনিদ্রার জিনগত কাঠামো মানসিক রোগ (psychiatric disorders) এবং বিপাকীয় বৈশিষ্ট্যের (metabolic traits) সাথে দৃঢ়ভাবে ওভারল্যাপ করে।

এছাড়াও অনুমান করা হয় যে এপিজেনেটিক্স (epigenetics) অনিদ্রাকে প্রভাবিত করতে পারে, কেননা এটি ঘুম নিয়ন্ত্রণ ও মস্তিষ্কের স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া উভয়কেই নিয়ন্ত্রণ করে এবং মস্তিষ্কের প্লাস্টিসিটি (brain plasticity)-তেও প্রভাব ফেলে।[75]

সাবস্ট্যান্স-ইনডিউসড (Substance-induced)

অ্যালকোহল-ইনডিউসড (Alcohol-induced)

অনেক সময় অনিদ্রা দূর করতে মানুষ অ্যালকোহল ব্যবহার করে ঘুম আনার চেষ্টা করে। কিন্তু অ্যালকোহল ব্যবহার নিজেই অনিদ্রার কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে অ্যালকোহল সেবন NREM স্টেজ ৩ এবং ৪ এর ঘুমের সময়কে কমায় এবং REM ঘুম কমিয়ে REM ঘুমের বিভাজন (fragmentation) ঘটায়। ঘুমের স্তরগুলোর মধ্যে ঘন ঘন স্থানান্তর ঘটে; মাথাব্যথা, প্রস্রাবের প্রয়োজন, পানিশূন্যতা (dehydration), এবং অতিরিক্ত ঘামার কারণে জাগরণ হতে পারে। গ্লুটামিন রিবাউন্ড (Glutamine rebound) নামের ঘটনাও এখানে ভূমিকা রাখে। যখন কেউ অ্যালকোহল পান করে, তখন অ্যালকোহল দেহের প্রাকৃতিক উদ্দীপক গ্লুটামিন (glutamine) কে দমন করে। যখন অ্যালকোহল বন্ধ করা হয়, তখন শরীর স্বাভাবিক মাত্রার চেয়েও বেশি গ্লুটামিন উৎপাদন করে।

গ্লুটামিনের এই বৃদ্ধি মস্তিষ্ককে উত্তেজিত রাখে যখন ব্যক্তি ঘুমানোর চেষ্টা করে, ফলে গভীর ঘুমে পৌঁছানো কঠিন হয়।[76] দীর্ঘমেয়াদী অ্যালকোহল গ্রহণ বন্ধ করার পর তীব্র অনিদ্রা দেখা দিতে পারে এবং তখন জীবন্ত (vivid) স্বপ্ন হতে পারে। উইথড্রয়াল (withdrawal) চলাকালে REM ঘুম সাধারণত অতিরিক্ত মাত্রায় প্রকাশ পায় যা রিবাউন্ড এফেক্ট (rebound effect) নামে পরিচিত।[77]

ক্যাফেইন (Caffeine)

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ক্যাফেইন ঘুমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা উদ্বেগ (anxiety) তৈরি করতে পারে।[78] দৈনিক মাত্র ১০০ মিগ্রা ক্যাফেইন (যেমন ৬ আউন্স কফি বা ২-৩টি ১২ আউন্স ক্যাফেইনযুক্ত সফট ড্রিঙ্ক) ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যারা নিয়মিত ক্যাফেইন সেবন করেন না, তাদের ঘুমের ব্যাঘাতে ক্যাফেইনের সহনশীলতা (tolerance) কম থাকে।[79] কিছু কফি পানকারী এর অস্বস্তিকর ঘুম-ভাঙানো প্রভাবের প্রতি সহনশীলতা তৈরি করতে পারে, আবার অনেকের ক্ষেত্রেই তা ঘটে না।[80]

বেঞ্জোডায়াজেপিন-ইনডিউসড (Benzodiazepine-induced)

অ্যালকোহলের মতোই বেঞ্জোডায়াজেপিন (benzodiazepines), যেমন অ্যালপ্রাজোলাম (alprazolam), ক্লোনাজেপাম (clonazepam), লোরাজেপাম (lorazepam), এবং ডায়াজেপাম (diazepam), স্বল্পমেয়াদে অনিদ্রা নিরাময়ে ব্যবহৃত হয় (প্রেসক্রাইবড বা স্ব-ঔষধীকরণ), কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এগুলো ঘুমের মান খারাপ করে। বেঞ্জোডায়াজেপিন ঘুম আনতে সহায়তা করলেও (NREM স্টেজ ১ ও ২ দমন করে), ঘুমের মধ্যে ঘুমের কাঠামো (sleep architecture) বিঘ্নিত করে: ঘুমের সামগ্রিক সময় কমিয়ে দেয়, REM ঘুম দেরি করে, এবং গভীর স্লো-ওয়েভ স্লিপ (deep slow-wave sleep) হ্রাস করে। অথচ এই গভীর ঘুমই সবচেয়ে বেশি পুনরুজ্জীবনকারী (restorative) অংশ, যা শক্তি ও মেজাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।[81][82][83]

ওপিওয়েড-ইনডিউসড (Opioid-induced)

ওপিওয়েড (opioid) যেমন হাইড্রোকোডোন (hydrocodone), অক্সিকোডোন (oxycodone), এবং মর্ফিন (morphine) ব্যথা নিরাময় ও ঘুমানোর ক্ষমতার জন্য অনিদ্রা, বিশেষত ব্যথাসংক্রান্ত অনিদ্রা নিরাময়ে ব্যবহৃত হতে পারে। ওপিওয়েড ঘুমের কাঠামো ভেঙে দিতে পারে এবং REM ও স্টেজ ২ ঘুম কমিয়ে দিতে পারে। ব্যথা কমিয়ে এবং ঘুমের অনুভূতি এনে ওপিওয়েড কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপযোগী হতে পারে।[60] তবে ওপিওয়েডের ওপর নির্ভরশীলতা দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।[84]

ঝুঁকি উপাদান (Risk factors)

অনিদ্রা সব বয়সী মানুষের মধ্যে দেখা গেলেও নিচের গ্রুপগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি:

  • ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি
  • মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার (Mental health disorder) ইতিহাস আছে, যেমন ডিপ্রেশন
  • আবেগগত স্ট্রেস (Emotional stress)
  • রাতের শিফটে কাজ করা (Working late night shifts)
  • বিভিন্ন টাইম জোন অতিক্রম করে ভ্রমণ (Traveling through different time zones)[12]
  • দীর্ঘমেয়াদী অসুখ, যেমন ডায়াবেটিস (diabetes), কিডনি রোগ (kidney disease), ফুসফুসের রোগ (lung disease), আলঝেইমার (Alzheimer’s), বা হূদরোগ (heart disease)[86]
  • অ্যালকোহল বা মাদকের অপব্যবহার
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রিফ্লাক্স ডিজিজ (Gastrointestinal reflux disease)
  • অতিরিক্ত ধূমপান (Heavy smoking)
  • কাজের চাপ (Work stress)[87]
  • নিম্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা (Individuals of low socioeconomic status)[88]
  • নগর জনপদ (Urban Neighborhoods)[88]
  • পারিবারিক চাপ (Household stress)[88]

মেকানিজম (Mechanism)

অনিদ্রার (insomnia) মেকানিজম ব্যাখ্যা করার জন্য মূলত দু’টি প্রধান মডেল রয়েছে: কগনিটিভ (cognitive) এবং ফিজিওলজিক্যাল (physiological)। কগনিটিভ মডেলে বলা হয় যে ক্রমাগত কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা (rumination) ও মানসিক উত্তেজনা (hyperarousal) মানুষকে ঘুমাতে বাধা দেয় এবং এ থেকেই অনিদ্রার একটি পর্ব সৃষ্টি হতে পারে।

ফিজিওলজিক্যাল মডেলটি অনিদ্রায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের তিনটি প্রধান পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে: প্রথমত, তাদের প্রস্রাবে বৃদ্ধি পাওয়া কর্টিসল (cortisol) এবং ক্যাটেকোলামিন (catecholamines)-এর মাত্রা, যা হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-অ্যাড্রিনাল (HPA) এক্সিস (axis)-এর সক্রিয়তা ও জাগ্রত অবস্থার লক্ষণ নির্দেশ করে; দ্বিতীয়ত, অনিদ্রায় আক্রান্তদের মস্তিষ্কে জাগ্রত অবস্থায় ও এনআরইএম (NREM) ঘুমের সময় সাধারণের তুলনায় বেশি গ্লুকোজ ব্যবহারের লক্ষণ; এবং তৃতীয়ত, তাদের শরীরের সামগ্রিক মেটাবলিজম এবং হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি পাওয়া। এই তিনটি পর্যবেক্ষণ একত্রে নির্দেশ করে যে অনিদ্রার পেছনে জাগ্রত অবস্থা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (arousal system), কগনিটিভ সিস্টেম এবং এইচপিএ (HPA) এক্সিস-এর ডিসরেগুলেশন (deregulation) কাজ করছে। [9][89] তবে এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে হাইপারএরাউজাল (hyperarousal) অনিদ্রার কারণ, না কি ফল। অনিদ্রায় অনিয়মিত মাত্রায় নেয়া (inhibitory) নিউরোট্রান্সমিটার গাবা (GABA)-এর পরিবর্তিত মাত্রা পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু ফলাফলসমূহ অসংগত এবং এত ব্যাপকভাবে বিদ্যমান একটি নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা পরিবর্তনের তাৎপর্য এখনো অজানা। অনিদ্রা সারকাডিয়ান (circadian) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হয় কিনা বা জাগ্রত হওয়ার ওপর নির্ভরশীল কোনো প্রক্রিয়া এর দ্বারা চালিত কিনা, সে বিষয়ে গবেষণার ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কিছু লেখায় দেহের কোর টেম্পারেচার (core temperature)-এর ভিত্তিতে সারকাডিয়ান রিদমের অস্বাভাবিকতার (deregulation) কথা উল্লেখ করা হয়েছে। [90] ইইজি (electroencephalogram)-তে বেটা (beta) তরঙ্গ বৃদ্ধি ও ডেল্টা (delta) তরঙ্গের ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে; কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ এখনও অনিশ্চিত। [91]

মেনোপজ-উত্তীর্ণ (post-menopausal) প্রায় অর্ধেক নারী ঘুমের সমস্যা অনুভব করেন, এবং সাধারণভাবে নারীদের মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাত পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এটি আংশিকভাবে হলেও হরমোন মাত্রার পরিবর্তনের কারণে ঘটে, বিশেষ করে মেনোপজের সময় ও পরবর্তী সময়ে। [61][92]

নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সেক্স হরমোন (sex hormones)-এর পরিবর্তন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাতের মাত্রা বাড়াতে পারে। [93]

রোগনির্ণয় (Diagnosis)

চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনিদ্রা (Insomnia) মূল্যায়নের জন্য অ্যাথেন্স ইনসমনিয়া স্কেল (Athens Insomnia Scale) ব্যবহৃত হয়।[94] এটি ঘুমের আটটি ভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর এই তথ্যের ভিত্তিতে একজন ব্যক্তির ঘুমের ধরণ নির্ণয় করা হয়।

যে কোনও ঘুমের সমস্যার নির্ণয়ের জন্য যোগ্য ঘুম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এতে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। প্রথমে চিকিৎসার অতীত ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা করতে হয়। এর ফলে অনিদ্রার সম্ভাব্য অন্যান্য কারণ বাদ দেওয়া যায়। এরপর সম্পূর্ণ ঘুমের ইতিহাস সংগ্রহ করতে হয়। এই ইতিহাসে ঘুমের অভ্যাস, ওষুধের ব্যবহার (প্রেসক্রিপশন এবং নন-প্রেসক্রিপশন), অ্যালকোহল সেবন, নিকোটিন এবং ক্যাফেইনের পরিমাণ, সহ-বিদ্যমান রোগ (co-morbid illnesses) এবং ঘুমের পরিবেশ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।[95] ঘুমের অভ্যাস নির্ণয়ের জন্য ঘুমের ডায়েরি রাখা যেতে পারে। ডায়েরিতে বিছানায় যাওয়ার সময়, মোট ঘুমের সময়, ঘুম আসতে কত সময় লাগে, কতবার ঘুম ভাঙে, ওষুধের ব্যবহার, ঘুম থেকে ওঠার সময় এবং সকালে কেমন লাগে, এই তথ্যগুলো থাকতে হবে।[95] ঘুমের ডায়েরির বিকল্প হিসেবে আউট-পেশেন্ট অ্যাক্টিগ্রাফি (Out-patient Actigraphy) ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি অ-আক্রমণাত্মক যন্ত্র (non-invasive device) ব্যবহার করে এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে চলাফেরা মাপার মাধ্যমে ঘুমের ধরণ নির্ণয় করে।[96]

যারা ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য নিয়মিতভাবে পলিসমনোগ্রাফি (Polysomnography) পরীক্ষা করা উচিত নয়।[97] তবে যাদের অনিদ্রার পাশাপাশি অন্য উপসর্গ রয়েছে, তাদের জন্য এই পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea), স্থূলতা (Obesity), গলা মোটা হওয়া, বা ওরোফ্যারিংক্স (Oropharynx)-এ অতিরিক্ত মাংসের উপস্থিতি।[97] সাধারণত অনিদ্রা নির্ণয়ে এই পরীক্ষা প্রয়োজন হয় না। বিশেষত, কর্মরত মানুষের জন্য অনিদ্রা প্রায়শই কাজের সময়সূচি পরিবর্তন এবং ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি উন্নতির মাধ্যমে নিরাময় করা যায়।[97]

কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অনিদ্রা নির্ণয়ের জন্য রাতে ঘুমের পরীক্ষা করতে হয়। এই পরীক্ষার মধ্যে সাধারণত পলিসমনোগ্রাম (Polysomnogram) এবং মাল্টিপল স্লিপ লেটেন্সি টেস্ট (Multiple Sleep Latency Test) অন্তর্ভুক্ত থাকে। ঘুমের চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা আইসিএসডি (ICSD) অনুযায়ী ৮১টি প্রধান ঘুমের সমস্যা নির্ণয় করতে পারেন।[98] কিছু রোগীর ক্ষেত্রে, যেমন দেরিতে ঘুমানোর পর্যায়জনিত ব্যাধি (Delayed Sleep Phase Disorder), প্রাথমিক অনিদ্রা হিসেবে ভুল নির্ণয় হতে পারে। যদি কেউ নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে বা ঘুম থেকে উঠতে সমস্যা অনুভব করে, কিন্তু ঘুমিয়ে যাওয়ার পর স্বাভাবিক ঘুমের ধারা থাকে, সেক্ষেত্রে তা সারকেডিয়ান রিদম ডিজর্ডারের (Circadian Rhythm Disorder) এর কারণে হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে অনিদ্রা অন্য কোনও রোগ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা মানসিক সমস্যার সাথে সম্পর্কিত থাকে। প্রায় অর্ধেক নির্ণীত অনিদ্রার সঙ্গে মনোরোগের সম্পর্ক রয়েছে।[99] যারা বিষণ্নতায় (depression) ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে অনিদ্রাকে সহ-বিদ্যমান সমস্যা (co-morbid condition) হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, মাধ্যমিক সমস্যা হিসেবে নয়। অনিদ্রা সাধারণত মানসিক উপসর্গের আগে দেখা দেয়।[99] বাস্তবে, এটি সম্ভব যে অনিদ্রা পরবর্তী সময়ে মানসিক রোগের বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি হতে পারে।[9] বিষণ্নতায় আক্রান্তদের মধ্যে ৬০% থেকে ৮০% মানুষের অনিদ্রা দেখা যায়।[100] এর কারণ আংশিকভাবে বিষণ্নতার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধও হতে পারে।[100]

অনিদ্রার কারণ নির্ধারণ করা সবসময় প্রয়োজনীয় নয়।[99]

ডিএসএম-৫ ক্রাইটেরিয়া

ডিএসএম-৫ (DSM-5) এর মানদণ্ড:

ডিএসএম-৫ অনুযায়ী অনিদ্রার (Insomnia) ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে। এই মানদণ্ডগুলো নিম্নরূপ:[101]

ঘুমের পরিমাণ বা গুণগত মান নিয়ে প্রধানত অসন্তোষের অভিযোগ থাকতে হবে। এর সঙ্গে নিম্নলিখিত এক বা একাধিক উপসর্গ থাকতে পারে:

  • ঘুম শুরু করতে অসুবিধা। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি দেখা যেতে পারে যতক্ষণ না অভিভাবকের হস্তক্ষেপ ছাড়া ঘুম শুরু করা সম্ভব হয়।
  • ঘুম ধরে রাখতে অসুবিধা। এতে ঘন ঘন জেগে ওঠা বা জেগে ওঠার পর আবার ঘুমাতে সমস্যা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি অভিভাবকের হস্তক্ষেপ ছাড়া ঘুমাতে না পারার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
  • সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে জেগে ওঠা এবং পুনরায় ঘুমাতে না পারা।

অতিরিক্তভাবে:

  • এই ঘুমের ব্যাঘাত সামাজিক, পেশাগত, শিক্ষাগত, একাডেমিক, আচরণগত বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে মানসিক চাপ বা অক্ষমতা সৃষ্টি করে।
  • ঘুমের সমস্যাটি সপ্তাহে অন্তত তিন রাত ঘটে।
  • এই সমস্যা অন্তত তিন মাস ধরে বিদ্যমান থাকে।
  • ঘুমের সমস্যা যথাযথ ঘুমের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ঘটে।
  • এই অনিদ্রার সমস্যা অন্য কোনও ঘুম-জাগরণ সম্পর্কিত ব্যাধির (sleep-wake disorder) যেমন, নারকোলেপসি (Narcolepsy), শ্বাসজনিত ঘুমের ব্যাধি, সময়চক্র ঘুম-জাগরণ ব্যাধি (Circadian Rhythm Sleep-Wake Disorder), অথবা প্যারাসমনিয়া (Parasomnia) এর কারণে হয়েছে বলে ব্যাখ্যা করা যায়না। এটি কেবল এসবের ক্ষেত্রেই ঘটে না।
  • এই অনিদ্রা কোনও পদার্থের শারীরিক প্রভাবের, যেমন, মাদক বা ওষুধের অপব্যবহারের কারণে ঘটে না।

ডিএসএম-৪-টিআর (DSM-IV-TR) এ অনিদ্রার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে ডিএসএম-৫ এর তুলনায় উপসর্গগুলো সম্পর্কে সেখানে বিস্তারিত বিবরণ নেই। ডিএসএম-৪-টিআর এ ‘সকালে তাড়াতাড়ি জেগে ওঠা’ উপসর্গের পরিবর্তে ‘অপুনরুদ্ধারযোগ্য ঘুম’ (Nonrestorative Sleep) উল্লেখ করা হয়েছিল। ডিএসএম-৪-টিআর এ উপসর্গের সময়কাল অস্পষ্ট ছিল। সেখানে উল্লেখ ছিল যে উপসর্গগুলো এক মাস ধরে থাকতে হবে। ডিএসএম-৫ এ উল্লেখ করা হয়েছে যে উপসর্গগুলো অন্তত তিন মাস ধরে থাকতে হবে এবং সপ্তাহে অন্তত তিন রাত থাকতে হবে। (Gillette)

প্রকরণ

অনিদ্রাকে (Insomnia) তিনভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। এগুলো হলো ক্ষণস্থায়ী (Transient), তীব্র (Acute) এবং দীর্ঘস্থায়ী (Chronic) অনিদ্রা।

  • ক্ষণস্থায়ী অনিদ্রা (Transient insomnia) এক সপ্তাহের কম সময় স্থায়ী হয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন, অন্য কোনও রোগের কারণে, ঘুমের পরিবেশে পরিবর্তনের কারণে, ঘুমের সময়সূচির পরিবর্তন, তীব্র বিষণ্নতা (Severe Depression), অথবা মানসিক চাপের (Stress) কারণে। এর পরিণতি হিসেবে নিদ্রালু ভাব এবং মানসিক ও শারীরিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এই প্রভাবগুলো ঘুমের অভাবজনিত সাধারণ প্রভাবের মতোই।[102]
  • তীব্র অনিদ্রা (Acute insomnia) এক মাসের কম সময় স্থায়ী হয়। এটি নিয়মিতভাবে ভালোভাবে ঘুমাতে না পারার অবস্থাকে বোঝায়। এতে ঘুম শুরু করতে বা ধরে রাখতে সমস্যা হতে পারে। এমনকি প্রাপ্ত ঘুমটি রিফ্রেশিং নাও হতে পারে বা খারাপ মানের হতে পারে। পর্যাপ্ত সুযোগ এবং উপযুক্ত পরিবেশ থাকার পরও এই সমস্যা দেখা দেয়। ফলে দিনের বেলায় কার্যক্রমে সমস্যা সৃষ্টি হয়।[103] অতিরিক্ত উত্তেজনা (Hyperarousal) তীব্র অনিদ্রার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। কারণ, এটি শরীরের ‘লড়াই বা পালাও’ (Fight-or-flight) প্রতিক্রিয়া সক্রিয় করে। যখন আমরা মানসিক চাপ বা বিপদের সম্মুখীন হই, তখন শরীর স্বাভাবিকভাবেই আরও সতর্ক হয়ে যায়। এই সতর্কতা ঘুমাতে এবং ঘুম ধরে রাখতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই উত্তেজিত অবস্থাটি স্বল্প সময়ের জন্য সহায়ক হতে পারে, তবে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে তা তীব্র অনিদ্রার কারণ হতে পারে।[104] তীব্র অনিদ্রাকে স্বল্পমেয়াদী অনিদ্রা (Short Term Insomnia) বা মানসিক চাপজনিত অনিদ্রা (Stress Related Insomnia) নামেও পরিচিত।[105]
  • দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা (Chronic insomnia) এক মাসের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়। এটি অন্য কোনও রোগের কারণে হতে পারে অথবা একটি প্রাথমিক ব্যাধি হিসেবে উপস্থিত হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রার সাধারণ কারণগুলির মধ্যে রয়েছে স্থায়ী মানসিক চাপ (Persistent Stress), আঘাত (Trauma), কাজের সময়সূচি, খারাপ ঘুমের অভ্যাস, ওষুধ, এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা।[106] কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি, বিছানায় অতিরিক্ত সময় জাগ্রত থাকা, বা শোবার আগে উত্তেজনামূলক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রার কারণ হতে পারে। এই আচরণগুলি শর্তাধীন জাগ্রত অবস্থার (Conditioned Wakefulness) সৃষ্টি করে।[104] যাদের স্ট্রেস হরমোনের (Stress Hormones) মাত্রা বেশি থাকে বা সাইটোকাইন (Cytokines) এর মাত্রায় পরিবর্তন ঘটে, তাদের দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।[107] এর প্রভাব ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। এতে পেশীর ক্লান্তি (Muscular Weariness), হেলুসিনেশন (Hallucination), এবং মানসিক অবসাদ (Mental Fatigue) হতে পারে।[102]

প্রতিরোধ (Prevention)

অনিদ্রা প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হতে পারে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (Cognitive Behavioral Therapy – CBT), [17] ওষুধ (medications), [108] এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তন। [109]

জীবনযাত্রায় কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা, যেমন প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগা, একটি স্থিতিশীল রুটিন তৈরি করতে পারে যা অনিদ্রা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। [12] ঘুমানোর আগের কয়েক ঘণ্টা ভারী ব্যায়াম এবং ক্যাফেইনযুক্ত (caffeinated) পানীয় পরিহার করা উচিত; তবে দিনে আগে ব্যায়াম করা উপকারী হতে পারে। [109] ঘুমের স্বাস্থ্য (sleep hygiene) উন্নত করার জন্য অন্যান্য অভ্যাসগুলোও সহায়ক হতে পারে: [109][110]

  • সম্ভব হলে ঘুমের সময়দিনে (ন্যাপ) কমানো বা এড়িয়ে চলা
  • শোবার সময় ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা
  • শোবার আগে বড় খাবার, প্রচুর পানীয়, মদ্যপান (alcohol), বা নিকোটিন (nicotine) গ্রহণ এড়ানো
  • সাদা শব্দ (white noise) অথবা শান্তিদায়ক অন্য উপায়ে নিজেকে ঘুমের উপযোগীভাবে শান্ত করা
  • শোবার ঘরকে ঘুমের জন্য উপযুক্ত করা: ঘর অন্ধকার, ঠান্ডা রাখা, এবং ঘড়ি, মোবাইল বা টেলিভিশনের মতো যন্ত্রপাতি বিছানার আশপাশে না রাখা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • ঘুমানোর আগে প্রশান্তিদায়ক (relaxing activities) কিছু করা

পরিচালনা (Management)

অনিদ্রার চিকিৎসার আগে অবশ্যই এর অন্তর্নিহিত চিকিৎসা ও মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলোর নির্ণয় করা উচিত। [111] একবার এরকম কারণসমূহ বাদ দেয়ার পর সাধারণত প্রথম সারিতে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) প্রয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। [112] এটি দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রার ক্ষেত্রে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। [17] অন্যান্য চিকিৎসার তুলনায়, CBT-এর উপকারী প্রভাব থেরাপি বন্ধ হওয়ার পরেও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। [113]

ওষুধ মূলত স্বল্পমেয়াদি অনিদ্রার লক্ষণ কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়; দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা এখনও পরিষ্কার নয়। [8] বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। [114][115][108] অনেক চিকিৎসক দীর্ঘমেয়াদে প্রেসক্রিপশন স্লিপিং পিল (sleeping pills)-এর উপর নির্ভর করতে নিরুৎসাহিত করেন। [109] এছাড়া অনিদ্রার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য চিকিৎসা-সমস্যা যেমন বিষণ্নতা (depression), শ্বাসকষ্ট (breathing problems), ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা (chronic pain) শনাক্ত ও চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ। [109][116] ২০২২ সাল পর্যন্তও বহু অনিদ্রায় আক্রান্ত ব্যক্তি পর্যাপ্ত ঘুম বা অনিদ্রার যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে জানা গেছে। [117][118]

ওষুধ ছাড়া চিকিৎসা (Non-medication based)

ওষুধ ছাড়া কৌশলগুলো অনিদ্রা চিকিৎসায় হিপনোটিক (hypnotic) ওষুধের সমান কার্যকারিতা প্রদর্শন করতে পারে, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে আরও ভাল ফল দিতে পারে। হিপনোটিক ওষুধ মাত্র স্বল্পমেয়াদে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ দীর্ঘমেয়াদে নির্ভরতা (dependence) ও ওষুধ বন্ধ করার পর রিবাউন্ড উইথড্রয়াল (rebound withdrawal) এবং সহনশীলতা (tolerance) সমস্যা দেখা দিতে পারে। [119]

ওষুধ ছাড়া কৌশলগুলো দীর্ঘস্থায়ী উন্নতি আনে এবং অনিদ্রা মোকাবিলায় প্রথম সারির এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে সুপারিশ করা হয়। বিহেভিয়ারাল স্লিপ মেডিসিন (Behavioral Sleep Medicine – BSM) ওষুধ নয় এমন চিকিৎসার মাধ্যমে অনিদ্রা মোকাবিলার চেষ্টা করে। BSM কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘুমের স্বাস্থ্যরক্ষণ (sleep hygiene), স্টিমুলাস কন্ট্রোল (stimulus control), বিহেভিয়ারাল ইন্টারভেনশন (behavioral interventions), স্লিপ-রেস্ট্রিকশন থেরাপি (sleep-restriction therapy), প্যারাডক্সিক্যাল ইন্টেনশন (paradoxical intention), রোগী শিক্ষা (patient education), এবং রিলাক্সেশন থেরাপি (relaxation therapy)। [120] উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঘুমের ডায়েরি রাখা, বিছানায় জেগে থাকা সময় কমানো, রিলাক্সেশন অনুশীলন, নিয়মিত ঘুমের সময়সূচি ও জাগরণের সময় বজায় রাখা। বিহেভিয়ারাল থেরাপি রোগীকে নতুন ঘুমের অভ্যাস তৈরি করতে সহায়তা করে, যা ঘুমের গুণগতমান ও স্থিতিশীলতা উন্নত করে। বিহেভিয়ারাল থেরাপিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস শেখা, লাইট থেরাপি (light therapy) গ্রহণের মাধ্যমে দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা, এবং সারকাডিয়ান ঘড়ি (circadian clock) নিয়ন্ত্রণে আনা। [116]

সংগীত (music) প্রাপ্তবয়স্কদের অনিদ্রা উন্নত করতে পারে। [121] ইইজি বায়োফিডব্যাক (EEG biofeedback) অনিদ্রা নিরাময়ে কার্যকর বলে দেখা গেছে, এতে ঘুমের সময়কাল ও গুণগতমান উভয়ই উন্নত হয়। [122] সেল্ফ-হেল্প থেরাপি (Self-help therapy) (যেখানে ব্যক্তিরা নিজেরাই থেরাপির ধাপগুলি অনুসরণ করতে পারেন) প্রাপ্তবয়স্ক অনিদ্রায় আংশিক থেকে মাঝারি উন্নতি ঘটাতে পারে। [123]

স্টিমুলাস কন্ট্রোল থেরাপি (Stimulus control therapy) হল এমন একটি পদ্ধতি, যা এমন রোগীদের জন্য ব্যবহৃত হয় যারা বিছানা বা ঘুমকে নেতিবাচক অনুভূতির সাথে যুক্ত করে ফেলেছেন। স্টিমুলাস কন্ট্রোল থেরাপিতে ঘুমের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাই একে কখনও কখনও স্লিপ হাইজিনের সাথে সমার্থকভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিছানা কেবলমাত্র ঘুম এবং যৌনক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে, পড়াশোনা বা টিভি দেখার জন্য নয়; প্রতিদিন একই সময়ে জাগা (সপ্তাহান্তেও), কেবলমাত্র যখন ঘুমন্ত অনুভূত হয় তখনই বিছানায় যাওয়া; বিছানায় গিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে (~২০ মিনিটের মধ্যে) ঘুম না এলে বিছানা ছেড়ে অন্য কোনো কার্যকলাপ শুরু করা; ঘুমানোর জন্য অত্যধিক চেষ্টা ও দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনা; রাতের বেলা উজ্জ্বল আলো এড়ানো; এবং দিনের বেলা ঘুমানো পরিহার করা। [124]

স্টিমুলাস কন্ট্রোল থেরাপির একটি অংশ হলো স্লিপ রেস্ট্রিকশন (sleep restriction), যা বিছানায় কাটানো সময়কে আসলে ঘুমানোর সময়ের সাথে সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করে। এই পদ্ধতিতে কঠোর ঘুম-জাগরণ সময়সূচি বজায় রাখতে হয় এবং দিনে নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্যই ঘুমানোর অনুমতি দেওয়া হয়, যাতে হালকা মাত্রায় ঘুমের অভাব তৈরি হয়। সম্পূর্ণ চিকিৎসা প্রায় ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে এবং এর মধ্যে ব্যক্তিকে তার আসল ঘুমানোর ক্ষমতার সর্বনিম্ন পরিমাণ সময়ের জন্য ঘুমাতে বাধ্য করা হয়। পরে, যদি সক্ষম হয় (অর্থাৎ ঘুমের দক্ষতা উন্নত হয়), তবে ধীরে ধীরে (~১৫ মিনিট করে) ঘুমানোর সময় সামান্য এগিয়ে আনা হয়, যাতে শরীর তার অভ্যন্তরীণ ঘুমের ঘড়ি পুনর্বিন্যস্ত করতে পারে। উজ্জ্বল আলো থেরাপি (Bright light therapy) অনিদ্রার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। [125]

প্যারাডক্সিক্যাল ইন্টেনশন (Paradoxical intention) একটি কগনিটিভ পুনর্গঠন কৌশল, যেখানে অনিদ্রাগ্রস্তকে ঘুমানোর চেষ্টা না করে বরং জেগে থাকার চেষ্টা করতে বলা হয়। ধারণা হলো, ঘুম অনিদ্রারোগীর জন্য একটি “পারফরম্যান্স টাস্ক” হয়ে দাঁড়ালে উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। এই কৌশলে ঘুমানোর সক্রিয় চেষ্টা না করায় উদ্বেগ কমে এবং ঘুম না হওয়ার দুশ্চিন্তা হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে এটি ঘুমানোর প্রচেষ্টা ও পারফরম্যান্স উদ্বেগ কমায় এবং ঘুম শুরু হতে বিলম্বের ব্যক্তিগত ধারণা ও ঘুমের ঘাটতির বাড়াবাড়ি রকমের অনুমানও হ্রাস করে। [126]

স্লিপ হাইজিন (Sleep hygiene)

স্লিপ হাইজিন বলতে বোঝায় ঘুমের উন্নতি সাধনকারী সব ধরনের আচরণ। এগুলো এমন অভ্যাস তৈরি করে যা ঘুমের জন্য সুষ্ঠু ভিত্তি গড়ে তোলে এবং অনিদ্রা প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রার ক্ষেত্রে শুধু স্লিপ হাইজিন যথেষ্ট নাও হতে পারে। সাধারণত স্লিপ হাইজিনকে অনিদ্রার ক্ষেত্রে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপির (CBT-I) একটি অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। [96][6] প্রস্তাবিত অভ্যাসের মধ্যে রয়েছে ক্যাফেইন, নিকোটিন ও অ্যালকোহল গ্রহণ কমানো, ঘুমের পর্বগুলোকে নিয়মিত ও দক্ষ করা, ওষুধের ব্যবহার ও দিনের বেলা ঘুমানো কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম করা, এবং ইতিবাচক ঘুমের পরিবেশ নিশ্চিত করা। [127] একটি ইতিবাচক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করাও অনিদ্রার উপসর্গ কমাতে সহায়ক হতে পারে। [128] অন্যদিকে, আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন (AASM) দ্বারা পরিচালিত একটি পদ্ধতিগত পর্যালোচনায় (systematic review) বলা হয়েছে যে অনিদ্রার ক্ষেত্রে ঘুমের স্বাস্থ্য (sleep hygiene) নির্দিষ্ট করে প্রেসক্রাইব করা উচিত নয়, কারণ এর কার্যকারিতার কোনো প্রমাণ নেই এবং এটি কার্যকর চিকিৎসা বিলম্বিত করতে পারে। বরং কার্যকর থেরাপি, যেমন CBT-I, প্রাধান্য দেওয়া উচিত। [16]

কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (Cognitive behavioral therapy)

কিছু প্রমাণ আছে যে দীর্ঘমেয়াদে CBT-I, বেনজোডায়াজেপিনস (benzodiazepines) ও ননবেঞ্জোডায়াজেপিনস (nonbenzodiazepines)-এর তুলনায় অনিদ্রা চিকিৎসায় আরও কার্যকর। [129] এই থেরাপিতে রোগীকে উন্নত ঘুমের অভ্যাস শেখানো হয় এবং ঘুম সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলো দূর করা হয়। সাধারণ ভুল ধারণা ও প্রত্যাশাগুলো যা সংশোধন করা হয়, সেগুলো হল:

  • অবাস্তব ঘুমের প্রত্যাশা
  • অনিদ্রার কারণ সম্পর্কে ভুল ধারণা
  • অনিদ্রার পরিণতি অতিরঞ্জিত করা
  • দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থেকে সৃষ্ট কর্মদক্ষতা-সংক্রান্ত উদ্বেগ

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে CBT-I-এর সাথে স্টিমুলাস কন্ট্রোল ও রিলাক্সেশন থেরাপি মিলিয়ে ব্যবহার করলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়। হিপনোটিক ওষুধ স্বল্পমেয়াদি অনিদ্রায় সমান কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর কার্যকারিতা হ্রাস পায় সহনশীলতার কারণে। অন্যদিকে CBT-I থেরাপি বন্ধ হওয়ার পরও দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব বজায় রাখতে পারে। [130][131] হিপনোটিক ওষুধ যোগ করলে অতিরিক্ত কোনো সুবিধা হয় না। দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে CBT-I ফার্মাকোলজিকাল হিপনোটিক ড্রাগের তুলনায় শ্রেয়তর। এমনকি স্বল্পমেয়াদে জোলপিডেম (zolpidem)-এর মতো স্বল্পমেয়াদি ওষুধের সাথে তুলনা করেও CBT-I উল্লেখযোগ্যভাবে শ্রেয়তর। তাই অনিদ্রার ক্ষেত্রে প্রথম সারির চিকিৎসা হিসেবে CBT-I সুপারিশ করা হয়। [132]

CBT-I-এর সাধারণ ফর্মগুলোর মধ্যে আছে স্টিমুলাস কন্ট্রোল থেরাপি, স্লিপ রেস্ট্রিকশন, স্লিপ হাইজিন, উন্নত ঘুমের পরিবেশ, রিলাক্সেশন প্রশিক্ষণ, প্যারাডক্সিক্যাল ইন্টেনশন, এবং বায়োফিডব্যাক। [133]

CBT হল অনিদ্রার ক্ষেত্রে ভালোভাবে গৃহীত থেরাপির ধরন, কারণ এর কোনো পরিচিত নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। অন্যদিকে, ওষুধ ব্যবহার করলে নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। [134] তবে, CBT-এর অসুবিধা হলো এতে সময় ও উৎসাহ প্রয়োজন হয়। [135]

অ্যাকসেপট্যান্স অ্যান্ড কমিটমেন্ট থেরাপি (Acceptance and commitment therapy – ACT)

অ্যাকসেপট্যান্স অ্যান্ড কমিটমেন্ট থেরাপি (ACT) এবং মেটাকগনিশনভিত্তিক চিকিৎসাপদ্ধতি অনিদ্রার বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। [136] ACT ঘুমনোর আচরণগত পরিবর্তনে আস্থা রাখে না, কারণ সেগুলোকে “ঘুমানোর চেষ্টা” হিসেবে ধরা হয় – যা ঘুমের জন্য আরও বেশি “সংগ্রাম” সৃষ্টি করে এবং স্নায়ুতন্ত্রের উত্তেজনা বাড়ায়, ফলে হাইপারএরাউজাল আরোও বেড়ে যায়। [137] ACT-এর দৃষ্টিভঙ্গি বলছে যে অনিদ্রার সাথে সম্পর্কিত নেতিবাচক অনুভূতিগুলোকে গ্রহণ করা, সময়ের সাথে সাথে ঘুমের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে। এই পদ্ধতিতে মাইন্ডফুলনেস (mindfulness) অনুশীলন গুরুত্বপূর্ণ, যদিও এটি ঘুম আনার উদ্দেশ্যে নয় (কারণ সেটিও ঘুমের চেষ্টা), বরং দীর্ঘমেয়াদি একটি অনুশীলন যা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে ঘুমের প্রাকৃতিক সুযোগ তৈরি করে।

CBT-I ও ACT-এর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো বিছানায় জেগে থাকার সময়ের ব্যাপারে তাদের মতাদর্শে পার্থক্য। CBT-I বিছানায় জেগে থাকার সময় কমানোর পরামর্শ দেয়, কারণ এটি নিদ্রা ও জাগরণকে জোড়া লাগায়। ACT-এর মতে বিছানায় সময় কাটানো এড়ালে ঘুমের ওপর চাপ বেড়ে যায় এবং স্নায়ুতন্ত্র আরও উত্তেজিত হয়। [137]

গবেষণায় দেখা গেছে যে “ACT প্রাইমারি এবং কোমরবিড অনিদ্রা এবং ঘুমের গুণমান উন্নত করতে উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর, এবং অনিদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নতিতে এটি একটি উপযোগী চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে”। [138]

ইন্টারনেট ভিত্তিক হস্তক্ষেপ (Internet interventions)

CBT খুবই কার্যকর হলেও, চিকিৎসকের অভাব, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অপ্রতুলতা, এবং ব্যয়জনিত কারণে এর বিস্তার সীমিত। [139] একটি সম্ভাব্য সমাধান হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া, যা এই কার্যকর থেরাপিটিকে আরও সহজলভ্য ও কম ব্যয়বহুল করতে পারে। ইন্টারনেট ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। [140] যদিও বেশিরভাগ স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট সাধারণ তথ্য সরবরাহ করে, [140][141] ইন্টারনেট ভিত্তিক হস্তক্ষেপ বিকাশ ও মূল্যায়ন নিয়ে গবেষণা ক্রমবর্ধমান। [142][143]

এই অনলাইন প্রোগ্রামগুলো সাধারণত আচরণগত চিকিৎসাভিত্তিক, যা ইন্টারনেটের জন্য উপযোগী করে কাঠামোবদ্ধ করা হয়েছে। এগুলো সাধারণত উচ্চ মাত্রায় কাঠামোবদ্ধ; স্বয়ংক্রিয় বা মানুষ সমর্থিত; কার্যকর সরাসরি চিকিৎসা থেকে উদ্ভূত; ব্যবহারকারীর জন্য ব্যক্তিগতকৃত; ইন্টারেক্টিভ; গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন, অডিও, সম্ভব হলে ভিডিও দ্বারা সমৃদ্ধ; এবং ফলো-আপ ও প্রতিক্রিয়া প্রদানের জন্য ডিজাইন করা। [143]

কম্পিউটার ভিত্তিক CBT অনিদ্রার ক্ষেত্রে ভালো প্রমাণিত হয়েছে। [144]

ওষুধ (Medications)

অনেকেই অনিদ্রার জন্য স্লিপিং ট্যাবলেট ও অন্য সিডেটিভ (sedatives) ওষুধ ব্যবহার করেন। কিছু স্থানে ৯৫%-এর বেশি ক্ষেত্রে ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। [145] তবে, এগুলো দ্বিতীয় সারির চিকিৎসা। [146] ২০১৯ সালে, মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (US FDA) এসজোপিক্লোন (eszopiclone), জ্যালেপ্লন (zaleplon), এবং জোলপিডেম (zolpidem)-এর জন্য সতর্কবার্তা জারি করে। কারণ অস্বাভাবিক ঘুম সংক্রান্ত আচরণের ফলে গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি, যার মধ্যে ঘুমের মধ্যে হাঁটা বা ঘুমন্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর মতো ঘটনা অন্তর্ভুক্ত। [147]

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রেসক্রিপশন স্লিপিং এইডের ব্যবহার বয়সের সাথে বাড়ে। ২০০৫–২০১০ সালের মধ্যে, ২০ বা তদূর্ধ্ব মার্কিন প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৪% গত ৩০ দিনে প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইড নিয়েছিলেন। ২০–৩৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় ২%, ৫০–৫৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ৬%, এবং ৮০ বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে ৭%। নারীদের (৫%) মধ্যে এই হার পুরুষদের (৩%) তুলনায় বেশি। নন-হিস্পানিক শ্বেতাঙ্গ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে (৫%) এই হার নন-হিস্পানিক কৃষ্ণাঙ্গ (৩%) ও মেক্সিকান-আমেরিকান (২%) প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে বেশি। নন-হিস্পানিক কৃষ্ণাঙ্গ ও মেক্সিকান-আমেরিকানদের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো পার্থক্য নেই। [148]

অ্যান্টিহিস্টামিন (Antihistamines)

প্রেসক্রিপশন ড্রাগের বিকল্প হিসেবে, স্বল্পমেয়াদি অনিদ্রায় সাধারণ মানুষ ওটিসি (OTC) অ্যান্টিহিস্টামিন যেমন ডিফেনহাইড্রামিন (diphenhydramine) বা ডক্সিলামিন (doxylamine) থেকে কিছুটা উপশম পেতে পারেন। [149] ডিফেনহাইড্রামিন ও ডক্সিলামিন অ-প্রেসক্রিপশন স্লিপ এইডে বহুল ব্যবহৃত হয়। এগুলো বর্তমানে সহজলভ্য সর্বাধিক কার্যকর ওটিসি সিডেটিভ, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, এবং যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায়, এবং কিছু প্রেসক্রিপশন হিপনোটিকের চেয়ে বেশি ঘুমঘোর আনতে সক্ষম। [150] তবে সময়ের সাথে এদের কার্যকারিতা কমে আসতে পারে এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক (anticholinergic) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া) দেখা দিতে পারে। আসক্তি সাধারণত না হলেও নির্ভরতাজনিত (dependence) সমস্যা এবং ওষুধ বন্ধ করলে রিবাউন্ড ইফেক্ট (rebound effects) হতে পারে। [151] তবে যাদের অনিদ্রা রেস্টলেস লেগস সিন্ড্রোম (restless legs syndrome)-এর কারণে, তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিহিস্টামিনে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। [152]

অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট (Antidepressants)

যদিও অনিদ্রা বিষণ্নতার একটি সাধারণ লক্ষণ, অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট ঘুমের সমস্যার চিকিৎসায় কার্যকর, তা বিষণ্নতা থাকুক বা না থাকুক। সব অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট ঘুম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, তবে কিছু যেমন অ্যামিট্রিপটিলিন (amitriptyline), ডক্সেপিন (doxepin), মার্টাজাপিন (mirtazapine), ট্রাজোডন (trazodone), ও ট্রাইমিপ্রামিন (trimipramine) তাৎক্ষণিক সিডেটিভ প্রভাব ফেলে এবং অনিদ্রার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। [153] ২০২০-এর দশকের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাজোডন ঘুমের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রেসক্রিপশনকৃত ড্রাগ ছিল, যদিও এটি ঘুমের জন্য অনুমোদিত নয়। [154]

অ্যামিট্রিপটিলিন, ডক্সেপিন, ও ট্রাইমিপ্রামিনের অ্যান্টিহিস্টামিনার্জিক, অ্যান্টিকোলিনার্জিক, অ্যান্টিঅ্যাড্রেনার্জিক, ও অ্যান্টিসেরোটোনার্জিক প্রভাব রয়েছে। অপরদিকে মার্টাজাপিন মূলত অ্যান্টিহিস্টামিনার্জিক ও অ্যান্টিসেরোটোনার্জিক এবং ট্রাজোডন মূলত অ্যান্টিঅ্যাড্রেনার্জিক ও অ্যান্টিসেরোটোনার্জিক। মার্টাজাপিন ঘুম আসতে সময় কমায়, ঘুমের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং যারা বিষণ্নতা ও অনিদ্রায় ভুগছেন তাদের মোট ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। [155][156]

আগোমেলাটিন (agomelatine), যা একটি মেলাটোনার্জিক অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট (melatonergic antidepressant) এবং ঘুমের উন্নতি করে কিন্তু দিনের ঘুমকাতরতা বাড়ায় না বলে দাবি করা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়ায় বিষণ্নতার চিকিৎসায় অনুমোদিত, কিন্তু ঘুমের সমস্যার জন্য অনুমোদিত নয়। [157][158][159] যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষার পর ২০১১ সালের অক্টোবরে এর উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়। [160][161]

২০১৮ সালের কোক্রেন রিভিউ অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি অনিদ্রার চিকিৎসায় অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট ব্যবহারের নিরাপত্তা অনিশ্চিত এবং দীর্ঘ সময়ের ব্যবহারের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। [162]

মেলাটোনিন অ্যাগোনিস্ট (Melatonin agonists)

মেলাটোনিন (melatonin) এবং রামেল্টিওন (ramelteon)-এর মতো মেলাটোনিন রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট (melatonin receptor agonists) অনিদ্রার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তবে মেলাটোনিনের কার্যকারিতা সাধারণত দুর্বল। [163] এটি ঘুম আসতে প্রায় ৬ মিনিট কম সময় লাগতে সহায়তা করতে পারে বলে নিম্নমানের প্রমাণ রয়েছে। [163] রামেল্টিওন ঘুম আসা বা মোট ঘুমের সময় বাড়াতে সক্ষম কিনা স্পষ্ট নয়। [163]

১৯৯৯–২০০০ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মেলাটোনিন ব্যবহারের হার ছিল ০.৪%, যা ২০১৭–২০১৮ সালে প্রায় ২.১%-এ পৌঁছায়। [164]

স্বল্পমেয়াদি ব্যবহারে মেলাটোনিন সাধারণত নিরাপদ এবং নির্ভরতাহীন বলেই দেখা গেছে, তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। [165]

মেলাটোনিনের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত: [165]

  • মাথাব্যথা
  • মাথা ঘোরা
  • বমি বমি ভাব
  • দিনের বেলায় ঝিমুনি

প্রলংড-রিলিজ মেলাটোনিন (Prolonged-release melatonin) বয়স্কদের ঘুমের গুণমান বাড়াতে পারে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে। [166][167]

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা অটিজম স্পেকট্রামে (autism spectrum) বা শিক্ষণ অক্ষমতা, এডিএইচডি (ADHD) বা অনুরূপ স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছেন, তারা মেলাটোনিন থেকে উপকার পেতে পারেন, কারণ এসব সমস্যার কারণে ঘুম আসতে বিলম্ব হয়। উদাহরণস্বরূপ, ADHD আক্রান্ত শিশুদের হাইপারঅ্যাকটিভিটির কারণে ঘুমোতে দেরি হয় এবং তারা দিনের বেশিরভাগ সময় ক্লান্ত থাকে। এডিএইচডি চিকিৎসায় ব্যবহৃত উত্তেজক ওষুধও (stimulants) ঘুমের সমস্যা বাড়াতে পারে। এই কারণে, এসব শিশুদের শোবার আগে মেলাটোনিন দেওয়া তাদের ঘুমোতে সাহায্য করতে পারে। [168]

বেঞ্জোডায়াজেপিন (Benzodiazepines)

অনিদ্রার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ওষুধ হলো বেঞ্জোডায়াজেপিনগুলো। [63]:363 বেঞ্জোডায়াজেপিন অনিদ্রার ক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেসান্টের চেয়ে বেশি কার্যকর নয়। [170] দীর্ঘমেয়াদি বেঞ্জোডায়াজেপিন ব্যবহারকারীদের ঘুম স্বাভাবিক অনিদ্রাগ্রস্তদের চেয়ে উন্নত নয়, বরং তাদের রাতের বেলা জেগে ওঠার প্রবণতা বেশি। [171] অনেকেই মনে করেন যে এই ওষুধগুলো জনস্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের জন্য অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি তৈরি করে এবং দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতার প্রমাণের অভাব রয়েছে। এই ওষুধগুলো কেবল অল্প ক’দিনের জন্য সর্বনিম্ন কার্যকর ডোজে ব্যবহার করা এবং সম্ভব হলে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পরিহার করা উত্তম। [172] ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অনিদ্রায় ভোগা রোগীদের মধ্যে বেঞ্জোডায়াজেপিন প্রেসক্রিপশন ২৪% থেকে ১১%-এ কমেছে, একইসময়ে ননবেঞ্জোডায়াজেপিনের প্রথম মুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে। [173]

বেঞ্জোডায়াজেপিন ও ননবেঞ্জোডায়াজেপিন ঘুমের ওষুধগুলো একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যেমন দিনের বেলা ক্লান্তি, গাড়ি দুর্ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্ঘটনা, কগনিটিভ দুর্বলতা, পড়ে যাওয়া ও ফ্র্যাকচার। বয়স্করা এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতি বেশি সংবেদনশীল। [174] কিছু বেঞ্জোডায়াজেপিন স্বল্পমেয়াদে ঘুম ধরে রাখতে সহায়তা করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এগুলো সহনশীলতা, শারীরিক নির্ভরতা, ওষুধ বন্ধ করার পর উত্তোলন সিন্ড্রোম (withdrawal syndrome), এবং সুস্থ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। বেঞ্জোডায়াজেপিন, অ্যালকোহলের মতোই, গভীর ঘুমের সময় কমিয়ে হালকা ঘুম বাড়িয়ে দেয়। [175] আরও একটি সমস্যা হলো স্বল্পমেয়াদী হিপনোটিক ওষুধের নিয়মিত ব্যবহারে দিনের বেলা উদ্বেগ বেড়ে যেতে পারে। [176] যথেষ্ট প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও বেঞ্জোডায়াজেপিনের প্রেসক্রিপশন বাড়তে থাকে, সম্ভবত এদের আসক্তি উদ্রেককারী বৈশিষ্ট্যের কারণে। [177] সাধারণভাবে দীর্ঘমেয়াদে বেঞ্জোডায়াজেপিন ব্যবহার অনুপযুক্ত এবং ধীরে ধীরে বন্ধ করা উচিত, কারণ দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বেশি। [178][179]

বেঞ্জোডায়াজেপিনগুলো GABAA রিসেপ্টরের সাথে আনসিলেক্টিভভাবে বেঁধে যায়। [170] কিছু তত্ত্ব অনুসারে, কিছু বেঞ্জোডায়াজেপিনের (হিপনোটিক বেঞ্জোডায়াজেপিন) α1 সাবইউনিটে বেশি কার্যক্ষমতা রয়েছে যা sedation, মোটর ইমপেয়ারমেন্ট, শ্বাসরোধ, অ্যামনেসিয়া, অ্যাটাক্সিয়া, এবং ড্রাগ-সিকিং বিহেভিয়ার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, α2 সাবইউনিট মডুলেশন অ্যানজাইওলাইটিক (anxiolytic) ক্রিয়ার সাথে যুক্ত। তাই কিছু বেঞ্জোডায়াজেপিন অনিদ্রার চিকিৎসায় অন্যগুলোর চেয়ে বেশি উপযোগী হতে পারে। [128]

জেড-ড্রাগ (Z-Drugs)

ননবেঞ্জোডায়াজেপিন বা জেড-ড্রাগ (Z-drugs) যেমন জোলপিডেম, জ্যালেপ্লন, জোপিক্লোন (zopiclone), এবং এসজোপিক্লোন হালকা থেকে মাঝারি অনিদ্রার জন্য ব্যবহৃত হয়। এরা বেঞ্জোডায়াজেপিনের মতো কাজ করে। ঘুম আসার সময় সামান্য কমাতে পারে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রোফাইল তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর হতে পারে। [180] ১৯৯২ সালে মার্কিন বাজারে আসার পর থেকে অনিদ্রারোগীদের মধ্যে ননবেঞ্জোডায়াজেপিন প্রেসক্রিপশন ১৯৯৩ সালের ২.৩% থেকে ২০১০ সালে ১৩.৭%-এ বৃদ্ধি পেয়েছে। [173]

ওরেক্সিন অ্যান্টাগোনিস্ট (Orexin antagonists)

ওরেক্সিন রিসেপ্টর অ্যান্টাগোনিস্ট (orexin receptor antagonists) হলো তুলনামূলক নতুন শ্রেণীর ঘুমের ওষুধ, এর মধ্যে রয়েছে সুভোরেক্সান্ট (suvorexant), লেম্বোরেক্সান্ট (lemborexant), এবং ডারিদোরেক্সান্ট (daridorexant), যেগুলো অনিদ্রার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, যেখানে ঘুম আসা বা ঘুম ধরে রাখায় সমস্যা থাকে। [181][182] এরা মস্তিষ্কের জাগরণ সংকেতগুলো বন্ধ করার মাধ্যমে কাজ করে এবং আসক্তির ঝুঁকি ছাড়াই ঘুমের উন্নতির দাবি করে। বাজারে বিদ্যমান তিনটি ডুয়াল ওরেক্সিন রিসেপ্টর অ্যান্টাগোনিস্ট (DORA) হলো বেলসোমরা (Belsomra) – মের্ক (Merck), ডেইভিগো (Dayvigo) – Eisai, এবং কুভিভিক (Quviviq) – Idorsia। [154]

অ্যান্টিসাইকোটিক (Antipsychotics)

কিছু অ্যাটিপিক্যাল অ্যান্টিসাইকোটিক (atypical antipsychotics), বিশেষ করে কুয়েটিয়াপিন (quetiapine), ওলানজাপিন (olanzapine), এবং রিসপেরিডন (risperidone) অনিদ্রার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। [183][184] কিন্তু সাধারণত এসব ওষুধ ব্যবহার করার সুপারিশ করা হয় না, কারণ প্রমাণে উল্লেখযোগ্য উপকারিতা দেখা যায় না, বরং বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে। [183][185][186][187] ২০২২ সালের একটি বিশাল পর্যালোচনায় দেখা গেছে কুয়েটিয়াপিন স্বল্পমেয়াদে অনিদ্রার উন্নতিতে কোনো উপকার করে না। [188] এমনকি স্বল্প ডোজে এটি গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে, যেমন ডিসলিপিডেমিয়া (dyslipidemia) ও নিউট্রোপেনিয়া (neutropenia)। [189][190] বয়স্কদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি। [193]

অন্যান্য সেডেটিভ (Other sedatives)

গাবাপেন্টিনয়েডস (gabapentinoids) যেমন গাবাপেন্টিন (gabapentin) ও প্রেগাবালিন (pregabalin) ঘুম উন্নতি করতে পারে, কিন্তু সাধারণত অনিদ্রার চিকিৎসায় নিয়মিত ব্যবহার করা হয় না। [194] অ্যালকোহল সংশ্লিষ্ট অনিদ্রায় গাবাপেন্টিন কার্যকর নয়। [195][196]

বার্বিচুরেটস (barbiturates), যা একসময় ব্যবহৃত হতো, এখন অনিদ্রার চিকিৎসায় আর সুপারিশ করা হয় না আসক্তি ও অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে। [197]

তুলনামূলক কার্যকারিতা (Comparative effectiveness)

অনিদ্রার চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতা ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার। [188] বেঞ্জোডায়াজেপিন, জেড-ড্রাগ, সিডেটিভ অ্যান্টিডিপ্রেসান্ট, অ্যান্টিহিস্টামিন, কুয়েটিয়াপিন, ওরেক্সিন রিসেপ্টর অ্যান্টাগোনিস্ট, এবং মেলাটোনিন রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্টদের মধ্যে তুলনা করে দেখা গেছে ওরেক্সিন অ্যান্টাগোনিস্ট লেম্বোরেক্সান্ট (lemborexant) এবং জেড-ড্রাগ এসজোপিক্লোন (eszopiclone) কার্যকারিতা, সহনীয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে সবচেয়ে ভালো প্রোফাইল দেখায়। [188]

বিকল্প চিকিৎসা (Alternative medicine)

ভ্যালেরিয়ান (valerian), কাভা (kava), ক্যামোমিল (chamomile), এবং ল্যাভেন্ডার (lavender)-এর মতো ভেষজ পণ্য অনিদ্রার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়েছে। [198][199][200][201] তবে, এগুলো কার্যকর ও নিরাপদ বলে কোনো উচ্চমানের প্রমাণ নেই। [198][199][200][201] একই অবস্থা গাঁজা ও কানাবিনয়েডস (cannabis and cannabinoids)-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। [202][203][204] একিউপাংচার (acupuncture) অনিদ্রায় উপকারী কিনা, তা স্পষ্ট নয়। [205]

প্রগনোসিস (Prognosis)

একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জরিপে দেখা গেছে, যারা প্রতি রাতে প্রায় ৭ ঘণ্টা ঘুমান, তাদের মৃত্যুহার সর্বনিম্ন। ৬ ঘণ্টার কম বা ৮ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। গুরুতর অনিদ্রা (নারীদের ক্ষেত্রে ৩.৫ ঘণ্টার কম, পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪.৫ ঘণ্টার কম ঘুম) মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ১৫% বাড়ায়, অন্যদিকে প্রতিরাতে ৮.৫ ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমানোও মৃত্যুঝুঁকি ১৫% বাড়ায়। [206]

এই গবেষণায় সরাসরি নির্ধারণ করা কঠিন যে কোনো ব্যাধি যা ঘুম কমিয়ে দেয় তা-ই অকালমৃত্যুর কারণ, নাকি ঘুমের অভাব নিজেই অকালমৃত্যুর কারণ। তীব্র অনিদ্রায় মৃত্যুহার বৃদ্ধির বেশিরভাগটাই অন্যান্য বিদ্যমান সমস্যার জন্য দায়ী। অনিদ্রা ও ঘুমের সময়ের প্রভাব বাদ দিয়ে, স্লিপিং পিল ব্যবহারের সাথেও মৃত্যুহারের বৃদ্ধির সম্পর্ক পাওয়া গেছে। [206]

৬.৫ থেকে ৭.৫ ঘণ্টা ঘুম সবচেয়ে কম মৃত্যুহারের সাথে সম্পর্কিত। এমনকি ৪.৫ ঘণ্টা ঘুমালেও মৃত্যুহার খুব বেশি বাড়ে না। সুতরাং বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে হালকা থেকে মাঝারি অনিদ্রা দীর্ঘায়ু কমায় না। গুরুতর অনিদ্রায় খুব সামান্য মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। [206] কেন ৭.৫ ঘণ্টার বেশি ঘুমালে মৃত্যুহার বাড়ে, তা অস্পষ্ট। [206]

সংক্রামকতা ও পরিসংখ্যান (Epidemiology)

যে কোনো সময়ে প্রায় ১০% থেকে ৩০% প্রাপ্তবয়স্ক অনিদ্রায় ভোগেন এবং এক বছরে প্রায় অর্ধেক মানুষই অনিদ্রার অভিজ্ঞতা লাভ করেন, যা একে সবচেয়ে সাধারণ ঘুমের ব্যাধি করে তুলেছে। [9][8][10][207] প্রায় ৬% লোকের অনিদ্রা থাকে যা অন্য কোনো সমস্যার কারণে নয় এবং এক মাসের বেশি স্থায়ী হয়। [9] ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে অনিদ্রার হার বেশি। [7] নারীদের মধ্যে এর হার পুরুষদের তুলনায় বেশি। [8] অনিদ্রা নারীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় প্রায় ৪০% বেশি সাধারণ। [208]

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিদ্রার হার সাধারণ জনগণের তুলনায় বেশি। [209]

সমাজ ও সংস্কৃতি (Society and culture)

“অনিদ্রা” এর ইংরেজি প্রতিশব্দ “Insomnia” শব্দটি ল্যাটিন থেকে এসেছে: in + somnus (“নিদ্রাহীন”) এবং -ia একটি নামসূচক প্রত্যয়।

জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমে কিছু মানুষের কথা বলা হয়, যারা নাকি কখনো ঘুমায় না, যেমন থাই এনগক (Thái Ngọc) ও আল হারপিন (Al Herpin)। [210] হর্ন (Horne) লিখেছেন “প্রত্যেকেই ঘুমায় এবং তা প্রয়োজন”, এবং সাধারণভাবে এটি সত্য বলেই মনে হয়। তবে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৫ সালে গুলিবিদ্ধ হওয়া পল কের্ন (Paul Kern)-এর কেস উল্লেখ করেছেন, যিনি ১৯৫৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নাকি আর কখনো ঘুমাতে পারেননি। [210] কের্নের ঘটনা সম্পূর্ণ অনন্য, একক একটি কেস হিসেবেই বিবেচিত হয়।

তথ্যসূত্র

  1. National Heart, Lung, and Blood Institute. (2022, March 24). What is insomnia? Health Topics. Retrieved November 26, 2023, from https://www.nhlbi.nih.gov/health-topics/insomnia
  2. National Heart, Lung, and Blood Institute. (2011, December 13). What causes insomnia? NHLBI. Retrieved August 9, 2016, from https://www.nhlbi.nih.gov/
  3. National Heart, Lung, and Blood Institute. (2011, December 13). How is insomnia diagnosed? NHLBI. Retrieved August 9, 2016, from https://www.nhlbi.nih.gov/
  4. Watson, N. F., & Vaughn, B. V. (2006). Clinician’s guide to sleep disorders. CRC Press. ISBN: 978-0-8493-7449-4
  5. National Heart, Lung, and Blood Institute. (2011, December 13). How is insomnia treated? NHLBI. Retrieved August 9, 2016, from https://www.nhlbi.nih.gov/
  6. Qaseem, A., Kansagara, D., Forciea, M. A., Cooke, M., & Denberg, T. D. (2016, July). Management of chronic insomnia disorder in adults: A clinical practice guideline from the American College of Physicians. Annals of Internal Medicine, 165(2), 125–133. https://doi.org/10.7326/M15-2175
  7. Wilson, J. F. (2008, January). In the clinic. Insomnia. Annals of Internal Medicine, 148(1), ITC13–1–ITC13–16. https://doi.org/10.7326/0003-4819-148-1-200801010-01001
  8. World Health Organization. (n.d.). Dyssomnias (pp. 7–11). Retrieved January 25, 2009, from https://www.who.int/ (Archived PDF from original on March 18, 2009)
  9. Roth, T. (2007, August). Insomnia: Definition, prevalence, etiology, and consequences. Journal of Clinical Sleep Medicine, 3(5 Suppl), S7–S10. https://doi.org/10.5664/jcsm.26929
  10. Tasman, A., Kay, J., Lieberman, J. A., First, M. B., & Riba, M. (2015). Psychiatry (4th ed., Vol. 2, p. 4253). John Wiley & Sons. ISBN: 978-1-118-75336-1
  11. Insomnia: Causes, symptoms, and treatments. (2020, July 16). Medical News Today. Retrieved July 25, 2024, from https://www.medicalnewstoday.com/
  12. Punnoose, A. R., Golub, R. M., & Burke, A. E. (2012, June). Insomnia. JAMA, 307(24), 2653. https://doi.org/10.1001/jama.2012.6219
  13. Banno, M., Tsujimoto, Y., Kohmura, K., Dohi, E., Taito, S., Someko, H., … Hayashino, Y. (2022, September). Unclear insomnia concept in randomized controlled trials and systematic reviews: A meta-epidemiological study. International Journal of Environmental Research and Public Health, 19(19), 12261. https://doi.org/10.3390/ijerph191912261
  14. Wynchank, D., Ten Have, M., Bijlenga, D., Penninx, B. W., Beekman, A. T., Lamers, F., … Kooij, J. J. S. (2018, March 15). The association between insomnia and sleep duration in adults with Attention-Deficit Hyperactivity Disorder: Results from a general population study. Journal of Clinical Sleep Medicine, 14(3), 349–357. https://doi.org/10.5664/jcsm.6976
  15. Cortesi, F., Giannotti, F., Ivanenko, A., & Johnson, K. (2010, July–August). Sleep in children with autistic spectrum disorder. Sleep Medicine, 11(7), 659–664. https://doi.org/10.1016/j.sleep.2010.01.010
  16. Edinger, J. D., Arnedt, J. T., Bertisch, S. M., Carney, C. E., Harrington, J. J., Lichstein, K. L., … Zee, P. C. (2021, February). Behavioral and psychological treatments for chronic insomnia disorder in adults: An American Academy of Sleep Medicine systematic review, meta-analysis, and GRADE assessment. Journal of Clinical Sleep Medicine, 17(2), 263–298. https://doi.org/10.5664/jcsm.8988
  17. Trauer, J. M., Qian, M. Y., Doyle, J. S., Rajaratnam, S. M., & Cunnington, D. (2015, August). Cognitive behavioral therapy for chronic insomnia: A systematic review and meta-analysis. Annals of Internal Medicine, 163(3), 191–204. https://doi.org/10.7326/M14-2841
  18. Attarian, H. P. (2003). Clinical handbook of insomnia (chapter 1). Springer Science & Business Media. ISBN: 978-1-59259-662-1
  19. Mayo Clinic. (n.d.). Insomnia > Complications. Retrieved May 5, 2009, from https://www.mayoclinic.org/ (Archived on February 8, 2009)
  20. Consumer Reports, Drug Effectiveness Review Project. (2012, January). Evaluating new sleeping pills used to treat insomnia: Comparing effectiveness, safety, and price. Best Buy Drugs. Retrieved June 4, 2013, from https://www.consumerreports.org/ (Archived PDF on December 9, 2013)
  21. Chaudhary, N. S., Grandner, M. A., Jackson, N. J., & Chakravorty, S. (2016, October 9). Caffeine consumption, insomnia, and sleep duration: Results from a nationally representative sample. Nutrition, 32(11–12), 1193–1199. https://doi.org/10.1016/j.nut.2016.04.005
  22. Symptoms. (n.d.). Retrieved April 15, 2019, from https://web.archive.org/ (Archived on April 15, 2019)
  23. Kertesz, R. S., & Cote, K. A. (2011). Event-related potentials during the transition to sleep for individuals with sleep-onset insomnia. Behavioral Sleep Medicine, 9(2), 68–85. https://doi.org/10.1080/15402002.2011.557989
  24. Cormier, R. E. (1990). Sleep disturbances. In H. K. Walker, W. D. Hall, & J. W. Hurst (Eds.), Clinical Methods: The History, Physical, and Laboratory Examinations (3rd ed.). Butterworths. PMID: 21250242
  25. Doghramji, K. (2007). Clinical Management of Insomnia (p. 28). Professional Communications, Inc. ISBN: 978-1-932610-14-7
  26. Morin, C. (2003). Insomnia: A clinician’s guide to assessment and treatment (p. 16). Kluwer Academic/Plenum Publishers. ISBN: 978-0-306-47750-8
  27. What causes insomnia? (n.d.). Archived April 15, 2019. Retrieved April 24, 2019, from https://web.archive.org/
  28. (2009, December 22). What happens when you sleep? Retrieved February 24, 2017, from https://www.nhlbi.nih.gov/ (Archived March 5, 2017)
  29. Adler, C. H., & Thorpy, M. J. (2005, June). Sleep issues in Parkinson’s disease. Neurology, 64(12 Suppl 3), S12–20. https://doi.org/10.1212/WNL.64.12_suppl_3.S12
  30. Harvey, A. G., & Tang, N. K. (2012, January). (Mis)perception of sleep in insomnia: A puzzle and a resolution. Psychological Bulletin, 138(1), 77–101. https://doi.org/10.1037/a0025730
  31. Mei, X., Zhou, Q., Li, X., Jing, P., Wang, X., & Hu, Z. (2018). Sleep problems in excessive technology use among adolescent: A systematic review and meta-analysis. Sleep Science and Practice, 2(9). https://doi.org/10.1186/s41606-018-0028-9
  32. Peracchia, S., & Curcio, G. (2018). Exposure to video games: effects on sleep and on post-sleep cognitive abilities. A systematic review of experimental evidences. Sleep Science, 11(4), 302–314. https://doi.org/10.5935/1984-0063.20180046
  33. Alimoradi, Z., Lin, C. Y., Broström, A., Bülow, P. H., Bajalan, Z., Griffiths, M. D., & Pakpour, A. H. (2019). Internet addiction and sleep problems: A systematic review and meta-analysis. Sleep Medicine Reviews, 47, 51–61. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2019.06.004
  34. Jiaxin, Y., Xi, F., Xiaoli, L., & Yamin, L. (2020). Association of problematic smartphone use with poor sleep quality, depression, and anxiety: A systematic review and meta-analysis. Psychiatry Research, 284, 112686. https://doi.org/10.1016/j.psychres.2019.112686
  35. Janssen, X., Martin, A., Hughes, A. R., Hill, C. M., Kotronoulas, G., & Hesketh, K. R. (2020). Associations of screen time, sedentary time and physical activity with sleep in under 5s: A systematic review and meta-analysis. Sleep Medicine Reviews, 49, 101226. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2019.101226
  36. Mac Cárthaigh, S., Griffin, C., & Perry, J. (2020). The relationship between sleep and problematic smartphone use among adolescents: A systematic review. Developmental Review, 55, 100897. https://doi.org/10.1016/j.dr.2020.100897
  37. Li, C., Cheng, G., Sha, T., Cheng, W., & Yan, Y. (2020). The relationships between screen use and health indicators among infants, toddlers, and preschoolers: A meta-analysis and systematic review. International Journal of Environmental Research and Public Health, 17(19), 7324. https://doi.org/10.3390/ijerph17197324
  38. Li, Y., Li, G., Liu, L., & Wu, H. (2020). Correlations between mobile phone addiction and anxiety, depression, impulsivity, and poor sleep quality among college students: A systematic review and meta-analysis. Journal of Behavioral Addictions, 9(3), 551–571. https://doi.org/10.1556/2006.2020.00057
  39. Alonzo, R., Hussain, J., Stranges, S., & Anderson, K. K. (2021). Interplay between social media use, sleep quality, and mental health in youth: A systematic review. Sleep Medicine Reviews, 56, 101414. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2020.101414
  40. Kristensen, J. H., Pallesen, S., King, D. L., Hysing, M., & Erevik, E. K. (2021). Problematic gaming and sleep: A systematic review and meta-analysis. Frontiers in Psychiatry, 12, 675237. https://doi.org/10.3389/fpsyt.2021.675237
  41. Lund, L., Sølvhøj, I. N., Danielsen, D., & Andersen, S. (2021). Electronic media use and sleep in children and adolescents in western countries: a systematic review. BMC Public Health, 21(1), 1598. https://doi.org/10.1186/s12889-021-11640-9
  42. Kemp, C., Pienaar, P. R., Rosslee, D. T., Lipinska, G., Roden, L. C., & Rae, D. E. (2021). Sleep in habitual adult video gamers: A systematic review. Frontiers in Neuroscience, 15, 781351. https://doi.org/10.3389/fnins.2021.781351
  43. Mallawaarachchi, S. R., Anglim, J., Hooley, M., & Horwood, S. (2022). Associations of smartphone and tablet use in early childhood with psychosocial, cognitive and sleep factors: A systematic review and meta-analysis. Early Childhood Research Quarterly, 60, 13–33. https://doi.org/10.1016/j.ecresq.2021.12.008
  44. Zhang, J., Zhang, X., Zhang, K., Lu, X., Yuan, G., Yang, H., … Wu, X. (2022). An updated meta-analysis on the relationship between mobile phone addiction and sleep disorder. Journal of Affective Disorders, 305, 94–101. https://doi.org/10.1016/j.jad.2022.02.008
  45. Alimoradi, Z., Jafari, E., Potenza, M. N., Lin, C. Y., Wu, C. Y., & Pakpour, A. H. (2022). Binge-watching and mental health problems: A systematic review and meta-analysis. International Journal of Environmental Research and Public Health, 19(15), 9707. https://doi.org/10.3390/ijerph19159707
  46. da Silva, S. S., da Silveira, M. A., de Almeida, H. C., do Nascimento, M. C., Dos Santos, M. A., & Heimer, M. V. (2022). Use of digital screens by adolescents and association on sleep quality: a systematic review. Cadernos de Saúde Pública, 38(10), e00300721. https://doi.org/10.1590/0102-311XEN300721
  47. Drumheller, K., & Fan, C. W. (2022). Unprecedented times and uncertain connections: A systematic review examining sleep problems and screentime during the COVID-19 pandemic. Sleep Epidemiology, 2, 100029. https://doi.org/10.1016/j.sleepe.2022.100029
  48. Chu, Y., Oh, Y., Gwon, M., Hwang, S., Jeong, H., Kim, H. W., … Shin, C. (2023). Dose-response analysis of smartphone usage and self-reported sleep quality: A systematic review and meta-analysis of observational studies. Journal of Clinical Sleep Medicine, 19(3), 621–630. https://doi.org/10.5664/jcsm.10392
  49. Brautsch, L. A., Lund, L., Andersen, M. M., Jennum, P. J., Folker, A. P., & Andersen, S. (2023). Digital media use and sleep in late adolescence and young adulthood: A systematic review. Sleep Medicine Reviews, 68, 101742. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2022.101742
  50. Daraj, L. R., AlGhareeb, M., Almutawa, Y. M., Trabelsi, K., & Jahrami, H. (2023). Systematic review and meta-analysis of the correlation coefficients between nomophobia and anxiety, smartphone addiction, and insomnia symptoms. Healthcare, 11(14), 2066. https://doi.org/10.3390/healthcare11142066
  51. Leow, M. Q., Chiang, J., Chua, T. J., Wang, S., & Tan, N. C. (2023). The relationship between smartphone addiction and sleep among medical students: A systematic review and meta-analysis. PLOS ONE, 18(9), e0290724. https://doi.org/10.1371/journal.pone.0290724
  52. Pagano, M., Bacaro, V., Crocetti, E. (2023). “Using digital media or sleeping … that is the question.” A meta-analysis on digital media use and unhealthy sleep in adolescence. Computers in Human Behavior, 146, 107813. https://doi.org/10.1016/j.chb.2023.107813
  53. Moawad, H. (2020). Primary insomnia: A lifelong problem. Psychiatric Times. Retrieved December 29, 2022.
  54. Meadows, G. (2015). The sleep book: How to sleep well every night (p. 21). Orion Publishing Group.
  55. Edinger, J. D. (2013). Insomnia, an issue of sleep medicine clinics. Elsevier Health Sciences. p. 389. ISBN: 978-0-323-18872-2
  56. University of Maryland Medical Center. (n.d.). Insomnia. Retrieved July 11, 2013. (Archived on July 3, 2013)
  57. Taylor, D. J., Mallory, L. J., Lichstein, K. L., Durrence, H. H., Riedel, B. W., & Bush, A. J. (2007, February). Comorbidity of chronic insomnia with medical problems. Sleep, 30(2), 213–218. https://doi.org/10.1093/sleep/30.2.213
  58. Mayo Clinic. (n.d.). Insomnia causes. Retrieved July 11, 2013. (Archived on October 21, 2013)
  59. National Heart, Lung, and Blood Institute. (n.d.). Restless legs syndrome/periodic limb movement disorder. Retrieved July 11, 2013. (Archived on August 3, 2013)
  60. Ramakrishnan, K., & Scheid, D. C. (2007, August). Treatment options for insomnia. American Family Physician, 76(4), 517–526. PMID: 17853625
  61. Santoro, N., Epperson, C. N., & Mathews, S. B. (2015, September). Menopausal symptoms and their management. Endocrinology and Metabolism Clinics of North America, 44(3), 497–515. https://doi.org/10.1016/j.ecl.2015.05.001
  62. National Heart, Lung, and Blood Institute. (n.d.). What causes insomnia? Retrieved July 11, 2013. (Archived on July 3, 2013)
  63. Geddes, J., Price, J., McKnight, R., Gelder, M., & Mayou, R. (2012). Psychiatry (4th ed.). Oxford University Press. ISBN: 978-0-19-923396-0
  64. Bendz, L. M., & Scates, A. C. (2010, January). Melatonin treatment for insomnia in pediatric patients with attention-deficit/hyperactivity disorder. The Annals of Pharmacotherapy, 44(1), 185–191. https://doi.org/10.1345/aph.1M365
  65. Ouellet, M. C., Beaulieu-Bonneau, S., & Morin, C. M. (2006). Insomnia in patients with traumatic brain injury: Frequency, characteristics, and risk factors. The Journal of Head Trauma Rehabilitation, 21(3), 199–212. https://doi.org/10.1097/00001199-200605000-00001
  66. Schenkein, J., & Montagna, P. (2006, September). Self management of fatal familial insomnia. Part 1: What is FFI? MedGenMed, 8(3), 65.
  67. Shi, Y., Zhou, Z., Ning, K., & Liu, J. (2004). The epidemiological survey of exercise-induced insomnia in Chinese athletes. Pre-Olympic Congress. Athens. (Archived on September 9, 2009)
  68. Schmerler, J. (n.d.). Q&A: Why is blue light before bedtime bad for sleep? Scientific American. Retrieved October 19, 2018. (Archived on February 16, 2021)
  69. Roth, T. (2007, August). Insomnia: Definition, prevalence, etiology, and consequences. Journal of Clinical Sleep Medicine, 3(5 Suppl), S7–10. https://doi.org/10.5664/jcsm.26929
  70. Sleep Foundation. (2021). What causes insomnia? Retrieved February 26, 2021. (Archived April 15, 2019)
  71. Hirotsu, C., Tufik, S., & Andersen, M. L. (2015, November). Interactions between sleep, stress, and metabolism: From physiological to pathological conditions. Sleep Science, 8(3), 143–152. https://doi.org/10.1016/j.slsci.2015.09.002
  72. Mendelson, W. B. (2008). New research on insomnia: Sleep disorders may precede or exacerbate psychiatric conditions. Psychiatric Times, 25(7).
  73. Lind, M. J., Aggen, S. H., Kirkpatrick, R. M., Kendler, K. S., & Amstadter, A. B. (2015, September). A longitudinal twin study of insomnia symptoms in adults. Sleep, 38(9), 1423–1430. https://doi.org/10.5665/sleep.4982
  74. Hammerschlag, A. R., Stringer, S., de Leeuw, C. A., Sniekers, S., Taskesen, E., Watanabe, K., … Posthuma, D. (2017, November). Genome-wide association analysis of insomnia complaints identifies risk genes and genetic overlap with psychiatric and metabolic traits. Nature Genetics, 49(11), 1584–1592. https://doi.org/10.1038/ng.3888
  75. Palagini, L., Biber, K., & Riemann, D. (2014, June). The genetics of insomnia – evidence for epigenetic mechanisms? Sleep Medicine Reviews, 18(3), 225–235. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2013.05.002
  76. Perry, L. (2004, October 12). How hangovers work. HowStuffWorks. Retrieved November 20, 2011.
  77. Lee-chiong, T. (2008, April 24). Sleep Medicine: Essentials and Review. Oxford University Press. p. 105. ISBN: 978-0-19-530659-0
  78. O’Callaghan, F., Muurlink, O., & Reid, N. (2018, December 7). Effects of caffeine on sleep quality and daytime functioning. Risk Management and Healthcare Policy, 11, 263–271. https://doi.org/10.2147/RMHP.S156404
  79. Johns Hopkins Medicine. (2003, July 9). Information about caffeine dependence. Caffeinedependence.org. (Archived May 23, 2012)
  80. Fredholm, B. B., Bättig, K., Holmén, J., Nehlig, A., & Zvartau, E. E. (1999, March). Actions of caffeine in the brain with special reference to factors that contribute to its widespread use. Pharmacological Reviews, 51(1), 83–133.
  81. Ashton, H. (2005, May). The diagnosis and management of benzodiazepine dependence. Current Opinion in Psychiatry, 18(3), 249–255. https://doi.org/10.1097/01.yco.0000165594.60434.84
  82. Morin, C. M., Bélanger, L., Bastien, C., & Vallières, A. (2005, January). Long-term outcome after discontinuation of benzodiazepines for insomnia: A survival analysis of relapse. Behaviour Research and Therapy, 43(1), 1–14. https://doi.org/10.1016/j.brat.2003.12.002
  83. Poyares, D., Guilleminault, C., Ohayon, M. M., & Tufik, S. (2004, June 1). Chronic benzodiazepine usage and withdrawal in insomnia patients. Journal of Psychiatric Research, 38(3), 327–334. https://doi.org/10.1016/j.jpsychires.2003.10.003
  84. Asaad, T. A., Ghanem, M. H., Samee, A. M., & El-Habiby, M. M. (2011). Sleep profile in patients with chronic opioid abuse. Addictive Disorders & Their Treatment, 10, 21–28. https://doi.org/10.1097/ADT.0b013e3181fb2847
  85. Mayo Clinic. (n.d.). Insomnia – Symptoms and causes. Retrieved February 5, 2018. (Archived January 24, 2018)
  86. Risk factors for insomnia. (n.d.). Retrieved April 14, 2019. (Archived February 19, 2020)
  87. Lichstein, K. L., Taylor, D. J., McCrae, C. S., & Ruiter, M. E. (2010, November). Insomnia: epidemiology and risk factors. In Principles and Practice of Sleep Medicine (5th ed.). Elsevier Inc. pp. 827–837.
  88. Billings, M. E., Cohen, R. T., Baldwin, C. M., Johnson, D. A., Palen, B. N., Parthasarathy, S., … Redline, S. (2021, March). Disparities in sleep health and potential intervention models: A focused review. Chest, 159(3), 1232–1240. https://doi.org/10.1016/j.chest.2020.09.249
  89. Bonnet, M. H. (2009, April). Evidence for the pathophysiology of insomnia. Sleep, 32(4), 441–442. https://doi.org/10.1093/sleep/32.4.441
  90. Levenson, J. C., Kay, D. B., & Buysse, D. J. (2015, April). The pathophysiology of insomnia. Chest, 147(4), 1179–1192. https://doi.org/10.1378/chest.14-1617
  1. Mai, E., & Buysse, D. J. (2008, January 1). Insomnia: Prevalence, impact, pathogenesis, differential diagnosis, and evaluation. Sleep Medicine Clinics, 3(2), 167–174. https://doi.org/10.1016/j.jsmc.2008.02.001
  2. Shaver, J. L., & Woods, N. F. (2015, August). Sleep and menopause: A narrative review. Menopause, 22(8), 899–915. https://doi.org/10.1097/GME.0000000000000499
  3. Lord, C., Sekerovic, Z., & Carrier, J. (2014, October). Sleep regulation and sex hormones exposure in men and women across adulthood. Pathologie-Biologie, 62(5), 302–310. https://doi.org/10.1016/j.patbio.2014.07.005
  4. Soldatos, C. R., Dikeos, D. G., & Paparrigopoulos, T. J. (2000, June). Athens Insomnia Scale: Validation of an instrument based on ICD-10 criteria. Journal of Psychosomatic Research, 48(6), 555–560. https://doi.org/10.1016/S0022-3999(00)00095-7
  5. Passarella, S., & Duong, M. (2008). Diagnosis and treatment of insomnia. [No further publication details provided.]
  6. Schutte-Rodin, S., Broch, L., Buysse, D., Dorsey, C., & Sateia, M. (2008, October). Clinical guideline for the evaluation and management of chronic insomnia in adults. Journal of Clinical Sleep Medicine, 4(5), 487–504. https://doi.org/10.5664/jcsm.27286
  7. American College of Occupational and Environmental Medicine. (2014, February). Five things physicians and patients should question. Choosing Wisely: An Initiative of the ABIM Foundation. [No direct URL provided]
  8. Thorpy, M. J. (2012, October). Classification of sleep disorders. Neurotherapeutics, 9(4), 687–701. https://doi.org/10.1007/s13311-012-0145-6
  9. Wilson, S. J., Nutt, D. J., Alford, C., Argyropoulos, S. V., Baldwin, D. S., Bateson, A. N., … British Association for Psychopharmacology. (2010, November). British Association for Psychopharmacology consensus statement on evidence-based treatment of insomnia, parasomnias and circadian rhythm disorders. Journal of Psychopharmacology, 24(11), 1577–1601. https://doi.org/10.1177/0269881110379307
  10. Luca, A., Luca, M., & Calandra, C. (2013). Sleep disorders and depression: Brief review of the literature, case report, and nonpharmacologic interventions for depression. Clinical Interventions in Aging, 8, 1033–1039. https://doi.org/10.2147/CIA.S47230
  11. American Psychiatric Association. (2013). Sleep wake disorders. In Diagnostic and statistical manual of mental disorders (5th ed.). American Psychiatric Association.
  12. Roth, T., & Roehrs, T. (2003). Insomnia: Epidemiology, characteristics, and consequences. Clinical Cornerstone, 5(3), 5–15. https://doi.org/10.1016/S1098-3597(03)90031-7
  13. [Organization not specified]. (n.d.). Insomnia – sleeplessness, chronic insomnia, acute insomnia, mental … [Web resource]. [Archived March 29, 2008]
  14. Vargas, I., Nguyen, A. M., Muench, A., Bastien, C. H., Ellis, J. G., & Perlis, M. L. (2020, January). Acute and chronic insomnia: What has time and/or hyperarousal got to do with it? Brain Sciences, 10(2), 71. https://doi.org/10.3390/brainsci10020071
  15. [About.com]. (n.d.). Acute insomnia – What is acute insomnia. Sleepdisorders.about.com. [Archived March 29, 2013]
  16. Sleep Foundation. (2020, August 31). Types of insomnia. [Archived July 14, 2022; Retrieved July 15, 2022]
  17. Simon, H. (n.d.). In-depth report: Causes of chronic insomnia. The New York Times. [Archived November 8, 2011; Retrieved November 4, 2011]
  18. Abad, V. C., & Guilleminault, C. (2018, September). Insomnia in elderly patients: Recommendations for pharmacological management. Drugs & Aging, 35(9), 791–817. https://doi.org/10.1007/s40266-018-0569-8
  19. Mayo Clinic. (2016, October 15). Insomnia: Diagnosis and treatment. [Archived October 4, 2017; Retrieved October 11, 2018]
  20. Pathak, N. (2017, January 17). Insomnia (acute & chronic): Symptoms, causes, and treatment. WebMD. [Archived October 11, 2018; Retrieved October 11, 2018]
  21. Wortelboer, U., Cohrs, S., Rodenbeck, A., & Rüther, E. (2002). Tolerability of hypnosedatives in older patients. Drugs & Aging, 19(7), 529–539. https://doi.org/10.2165/00002512-200219070-00006
  22. van Straten, A., van der Zweerde, T., Kleiboer, A., Cuijpers, P., Morin, C. M., & Lancee, J. (2018, April). Cognitive and behavioral therapies in the treatment of insomnia: A meta-analysis. Sleep Medicine Reviews, 38, 3–16. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2017.02.001
  23. National Institutes of Health. (2005). NIH State-of-the-Science Conference Statement on manifestations and management of chronic insomnia in adults. NIH Consensus and State-of-the-Science Statements, 22(2), 1–30.
  24. Sateia, M. J., Buysse, D. J., Krystal, A. D., Neubauer, D. N., & Heald, J. L. (2017, February). Clinical practice guideline for the pharmacologic treatment of chronic insomnia in adults: An American Academy of Sleep Medicine clinical practice guideline. Journal of Clinical Sleep Medicine, 13(2), 307–349. https://doi.org/10.5664/jcsm.6470
  25. Riemann, D., & Perlis, M. L. (2009, June). The treatments of chronic insomnia: A review of benzodiazepine receptor agonists and psychological and behavioral therapies. Sleep Medicine Reviews, 13(3), 205–214. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2008.06.001
  26. Merrigan, J. M., Buysse, D. J., Bird, J. C., & Livingston, E. H. (2013, February). JAMA patient page. Insomnia. JAMA, 309(7), 733. https://doi.org/10.1001/jama.2013.524
  27. Sleep Foundation. (2021, October 25). Sleep statistics – facts and data about sleep 2022. [Archived July 15, 2022; Retrieved July 15, 2022]
  28. Drake, C. L., Roehrs, T., & Roth, T. (2003, December). Insomnia causes, consequences, and therapeutics: An overview. Depression and Anxiety, 18(4), 163–176. https://doi.org/10.1002/da.10151
  29. National Prescribing Service. (2010, February 1). Addressing hypnotic medicines use in primary care. NPS News, 67.
  30. Kirkwood, C. K. (1999). Management of insomnia. Journal of the American Pharmaceutical Association, 39(5), 688–696. https://doi.org/10.1016/s1086-5802(15)30354-5
  31. Jespersen, K. V., Pando-Naude, V., Koenig, J., Jennum, P., & Vuust, P. (2022, August). Listening to music for insomnia in adults. The Cochrane Database of Systematic Reviews, 2022(8), CD010459. https://doi.org/10.1002/14651858.CD010459.pub3
  32. Lake, J. A. (2006). Textbook of Integrative Mental Health Care. Thieme Medical Publishers. p. 313. ISBN: 978-1-58890-299-3
  33. van Straten, A., & Cuijpers, P. (2009, February). Self-help therapy for insomnia: A meta-analysis. Sleep Medicine Reviews, 13(1), 61–71. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2008.04.006
  34. Lande, R. G., & Gragnani, C. (2010, December). Nonpharmacologic approaches to the management of insomnia. The Journal of the American Osteopathic Association, 110(12), 695–701.
  35. van Maanen, A., Meijer, A. M., van der Heijden, K. B., & Oort, F. J. (2016, October). The effects of light therapy on sleep problems: A systematic review and meta-analysis. Sleep Medicine Reviews, 29, 52–62. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2015.08.009
  36. Kierlin, L. (2008, November). Sleeping without a pill: Nonpharmacologic treatments for insomnia. Journal of Psychiatric Practice, 14(6), 403–407. https://doi.org/10.1097/01.pra.0000341896.73926.6c
  37. Ellis, J., Hampson, S. E., & Cropley, M. (2002, May). Sleep hygiene or compensatory sleep practices: An examination of behaviours affecting sleep in older adults. Psychology, Health & Medicine, 7(2), 156–161. https://doi.org/10.1080/13548500120116094
  38. Lecturio Medical Concept Library. (n.d.). Insomnia. [Archived June 24, 2021; Retrieved 2021-06-24]
  39. Mitchell, M. D., Gehrman, P., Perlis, M., & Umscheid, C. A. (2012, May). Comparative effectiveness of cognitive behavioral therapy for insomnia: A systematic review. BMC Family Practice, 13, 40. https://doi.org/10.1186/1471-2296-13-40
  40. Jacobs, G. D., Pace-Schott, E. F., Stickgold, R., & Otto, M. W. (2004, September). Cognitive behavior therapy and pharmacotherapy for insomnia: A randomized controlled trial and direct comparison. Archives of Internal Medicine, 164(17), 1888–1896. https://doi.org/10.1001/archinte.164.17.1888
  41. Morin, C. M., Colecchi, C., Stone, J., Sood, R., & Brink, D. (1999, March). Behavioral and pharmacological therapies for late-life insomnia: A randomized controlled trial. JAMA, 281(11), 991–999. https://doi.org/10.1001/jama.281.11.991
  42. Miller, K. E. (2005). Cognitive behavior therapy vs. pharmacotherapy for insomnia. American Family Physician, 72(2), 330.
  43. Ramakrishnan, K., & Scheid, D. C. (2007, August). Treatment options for insomnia. American Family Physician, 76(4), 517–526.
  44. Krystal, A. D. (2009, August). A compendium of placebo-controlled trials of the risks/benefits of pharmacological treatments for insomnia: The empirical basis for U.S. clinical practice. Sleep Medicine Reviews, 13(4), 265–274. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2008.08.001
  45. Matthews, E. E., Arnedt, J. T., McCarthy, M. S., Cuddihy, L. J., & Aloia, M. S. (2013, December). Adherence to cognitive behavioral therapy for insomnia: A systematic review. Sleep Medicine Reviews, 17(6), 453–464. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2013.01.001
  46. Ong, J. C., Ulmer, C. S., & Manber, R. (2012, November). Improving sleep with mindfulness and acceptance: A metacognitive model of insomnia. Behaviour Research and Therapy, 50(11), 651–660. https://doi.org/10.1016/j.brat.2012.08.001
  47. Meadows, G. (2015). The sleep book: How to sleep well every night (pp. 2–7). Orion Publishing Group.
  48. Salari, N., Khazaie, H., Hosseinian-Far, A., Khaledi-Paveh, B., Ghasemi, H., Mohammadi, M., … Jalali, R. (2020, August). The effect of acceptance and commitment therapy on insomnia and sleep quality: A systematic review. BMC Neurology, 20(1), 300. https://doi.org/10.1186/s12883-020-01883-1
  49. Edinger, J. D., & Means, M. K. (2005, July). Cognitive-behavioral therapy for primary insomnia. Clinical Psychology Review, 25(5), 539–558. https://doi.org/10.1016/j.cpr.2005.04.003
  50. Fox, S., & Fallows, D. (2005, October 5). Digital divisions. Pew Internet & American Life Project. [Archived October 21, 2005]
  51. Rabasca, L. (2000). Taking telehealth to the next step. Monitor on Psychology, 31, 36–37.
  52. Marks, I. M., Cavanagh, K., & Gega, L. (2007). Hands-on Help: Computer-Aided Psychotherapy. Psychology Press. ISBN: 978-1-84169-679-9
  53. Ritterband, L. M., Gonder-Frederick, L. A., Cox, D. J., Clifton, A. D., West, R. W., & Borowitz, S. M. (2003). Internet interventions: In review, in use, and into the future. Professional Psychology: Research and Practice, 34(5), 527–534. https://doi.org/10.1037/0735-7028.34.5.527
  54. Cheng, S. K., & Dizon, J. (2012). Computerised cognitive behavioural therapy for insomnia: A systematic review and meta-analysis. Psychotherapy and Psychosomatics, 81(4), 206–216. https://doi.org/10.1159/000335379
  55. Charles, J., Harrison, C., & Britt, H. (2009, May). Insomnia. Australian Family Physician, 38(5), 283. [Archived PDF on March 12, 2011]
  56. Qaseem, A., Kansagara, D., Forciea, M. A., Cooke, M., & Denberg, T. D. (2016, July). Management of chronic insomnia disorder in adults: A clinical practice guideline from the American College of Physicians. Annals of Internal Medicine, 165(2), 125–133. https://doi.org/10.7326/m15-2175
  57. U.S. Food and Drug Administration. (2019, April 30). FDA adds Boxed Warning for risk of serious injuries caused by sleepwalking with certain prescription insomnia medicines. [Archived May 2, 2019]
  58. Chong, Y., Fryer, C. D., & Gu, Q. (2013, August). Prescription sleep aid use among adults: United States, 2005-2010. NCHS Data Brief (127), 1–8.
  59. Consumer Reports, Drug Effectiveness Review Project. (2012, January). Evaluating newer sleeping pills used to treat insomnia. Best Buy Drugs, 3, 8, 11. [Archived PDF on December 9, 2013]
  60. DrugBank. (n.d.). Doxylamine (DB00366). [Archived December 3, 2009]
  61. Lie, J. D., Tu, K. N., Shen, D. D., & Wong, B. M. (2015, November). Pharmacological treatment of insomnia. P & T, 40(11), 759–771.
  62. National Institute of Neurological Disorders and Stroke. (n.d.). Restless Legs Syndrome Fact Sheet. [Archived July 28, 2017]
  63. Bertschy, G., Ragama-Pardos, E., Muscionico, M., Aït-Ameur, A., Roth, L., Osiek, C., … Bondolfi, G. (2005, January). Trazodone addition for insomnia in venlafaxine-treated, depressed inpatients: A semi-naturalistic study. Pharmacological Research, 51(1), 79–84. https://doi.org/10.1016/j.phrs.2004.06.007
  64. Dunleavy, K. (2023, April 7). Idorsia petitions DEA to de-schedule its insomnia drug—plus Merck and Eisai rivals. Fierce Pharma. [Archived August 31, 2023]
  65. Winokur, A., DeMartinis, N. A., McNally, D. P., Gary, E. M., Cormier, J. L., & Gary, K. A. (2003, October). Comparative effects of mirtazapine and fluoxetine on sleep physiology measures in patients with major depression and insomnia. The Journal of Clinical Psychiatry, 64(10), 1224–1229. https://doi.org/10.4088/JCP.v64n1013
  66. Schittecatte, M., Dumont, F., Machowski, R., Cornil, C., Lavergne, F., & Wilmotte, J. (2002). Effects of mirtazapine on sleep polygraphic variables in major depression. Neuropsychobiology, 46(4), 197–201. https://doi.org/10.1159/000067812
  67. Le Strat, Y., & Gorwood, P. (2008, September). Agomelatine, an innovative pharmacological response to unmet needs. Journal of Psychopharmacology, 22(7 Suppl), 4–8. https://doi.org/10.1177/0269881108092593
  68. European Medicines Agency. (n.d.). Summary of Product Characteristics for Agomelatine. [Archived PDF on October 29, 2014]
  69. Servier Laboratories Pty Ltd. (2013, September 23). VALDOXAN® Product Information. [Archived March 24, 2017]
  70. Scrip Intelligence. (2011, October 25). Novartis drops future blockbuster agomelatine. [Archived November 11, 2011]
  71. Servier UK. (2006, March 29). Servier and Novartis sign licensing agreement for agomelatine. [Archived April 16, 2009]
  72. Everitt, H., Baldwin, D. S., Stuart, B., Lipinska, G., Mayers, A., Malizia, A. L., … Espie, C. A. (2018, May). Antidepressants for insomnia in adults. The Cochrane Database of Systematic Reviews, 2018(5), CD010753. https://doi.org/10.1002/14651858.CD010753.pub2
  73. Brasure, M., MacDonald, R., Fuchs, E., Olson, C. M., Carlyle, M., Diem, S., … Wilt, T. J. (2015, December). Management of insomnia disorder. AHRQ Comparative Effectiveness Reviews. PMID 26844312.
  74. National Institutes of Health (NIH). (2022, February 28). Use of melatonin supplements rising among adults. [Archived June 29, 2022]
  75. Mayo Clinic. (n.d.). Pros and cons of melatonin. Retrieved May 1, 2024.
  76. Lyseng-Williamson, K. A. (2012, November). Melatonin prolonged release: in the treatment of insomnia in patients aged ≥55 years. Drugs & Aging, 29(11), 911–923. https://doi.org/10.1007/s40266-012-0018-z
  77. Lemoine, P., & Zisapel, N. (2012, April). Prolonged-release formulation of melatonin (Circadin) for the treatment of insomnia. Expert Opinion on Pharmacotherapy, 13(6), 895–905. https://doi.org/10.1517/14656566.2012.667076
  78. Sánchez-Barceló, E. J., Mediavilla, M. D., & Reiter, R. J. (2011). Clinical uses of melatonin in pediatrics. International Journal of Pediatrics, 2011, 892624. https://doi.org/10.1155/2011/892624
  79. [No specific author for Temazepam reference given.] (n.d.). Temazepam. [Archived May 30, 2013]
  80. Buscemi, N., Vandermeer, B., Friesen, C., Bialy, L., Tubman, M., Ospina, M., … Vohra, S. (2007, September). The efficacy and safety of drug treatments for chronic insomnia in adults: A meta-analysis of RCTs. Journal of General Internal Medicine, 22(9), 1335–1350. https://doi.org/10.1007/s11606-007-0251-z
  81. Ohayon, M. M., & Caulet, M. (1995, May). Insomnia and psychotropic drug consumption. Progress in Neuro-Psychopharmacology & Biological Psychiatry, 19(3), 421–431. https://doi.org/10.1016/0278-5846(94)00023-B
  82. “What’s wrong with prescribing hypnotics?”. (2004, December). Drug and Therapeutics Bulletin, 42(12), 89–93. https://doi.org/10.1136/dtb.2004.421289
  83. Kaufmann, C. N., Spira, A. P., Alexander, G. C., Rutkow, L., & Mojtabai, R. (2016, June). Trends in prescribing of sedative-hypnotic medications in the USA: 1993–2010. Pharmacoepidemiology and Drug Safety, 25(6), 637–645. https://doi.org/10.1002/pds.3951
  84. Glass, J., Lanctôt, K. L., Herrmann, N., Sproule, B. A., & Busto, U. E. (2005, November). Sedative hypnotics in older people with insomnia: Meta-analysis of risks and benefits. BMJ, 331(7526), 1169. https://doi.org/10.1136/bmj.38623.768588.47
  85. Tsoi, W. F. (1991, March). Insomnia: Drug treatment. Annals of the Academy of Medicine, Singapore, 20(2), 269–272.
  86. Montplaisir, J. (2000, August). Treatment of primary insomnia. CMAJ, 163(4), 389–391.
  87. Carlstedt, R. A. (2009). Handbook of Integrative Clinical Psychology, Psychiatry, and Behavioral Medicine: Perspectives, Practices, and Research. Springer. pp. 128–130. ISBN: 978-0-8261-1094-7.
  88. Lader, M., Cardinali, D. P., & Pandi-Perumal, S. R. (2006). Sleep and sleep disorders: A neuropsychopharmacological approach. Landes Bioscience/Eurekah.com. p. 127. ISBN: 978-0-387-27681-6.
  89. Authier, N., Boucher, A., Lamaison, D., Llorca, P. M., Descotes, J., & Eschalier, A. (2009). Benzodiazepine withdrawal. Therapie, 64(6), 365–370. https://doi.org/10.2515/therapie/2009051
  90. Huedo-Medina, T. B., Kirsch, I., Middlemass, J., Klonizakis, M., & Siriwardena, A. N. (2012, December). Effectiveness of non-benzodiazepine hypnotics in treatment of adult insomnia: Meta-analysis of data submitted to the Food and Drug Administration. BMJ, 345, e8343. https://doi.org/10.1136/bmj.e8343
  91. Jacobson, L. H., Hoyer, D., & de Lecea, L. (2022, January). Hypocretins (orexins): The ultimate translational neuropeptides. Journal of Internal Medicine, 291(5), 533–556. https://doi.org/10.1111/joim.13406
  92. [FDA prescribing information highlight] (n.d.). [Archived PDF on September 12, 2014]
  93. Thompson, W., Quay, T. A., Rojas-Fernandez, C., Farrell, B., & Bjerre, L. M. (2016, June). Atypical antipsychotics for insomnia: A systematic review. Sleep Medicine, 22, 13–17. https://doi.org/10.1016/j.sleep.2016.04.003
  94. Morin, A. K. (2014, March 1). Off-label use of atypical antipsychotic agents for treatment of insomnia. Mental Health Clinician, 4(2), 65–72. https://doi.org/10.9740/mhc.n190091
  95. American Psychiatric Association. (2013, September). Five Things Physicians and Patients Should Question. Choosing Wisely: An initiative of the ABIM Foundation. [Archived December 3, 2013]
    • American Association of Clinical Endocrinologists, North American Association for the Study of Obesity. (2004, February). Consensus development conference on antipsychotic drugs and obesity and diabetes. Diabetes Care, 27(2), 596–601. https://doi.org/10.2337/diacare.27.2.596
    • Maglione, M., Maher, A. R., Hu, J., Wang, Z., Shanman, R., Shekelle, P. G., … Gore, R. (2011, September). Off-label use of atypical antipsychotics: An update. AHRQ Comparative Effectiveness Reviews. PMID 22132426.
    • Nasrallah, H. A. (2008, January). Atypical antipsychotic-induced metabolic side effects: Insights from receptor-binding profiles. Molecular Psychiatry, 13(1), 27–35. https://doi.org/10.1038/sj.mp.4002066
  96. Coe, H. V., & Hong, I. S. (2012, May). Safety of low doses of quetiapine when used for insomnia. The Annals of Pharmacotherapy, 46(5), 718–722. https://doi.org/10.1345/aph.1Q697
  97. Maglione, M., Maher, A. R., Hu, J., Wang, Z., Shanman, R., Shekelle, P. G., … Morton, S. C. (2011). Off-Label Use of Atypical Antipsychotics: An Update. Comparative Effectiveness Reviews, No. 43. Rockville: Agency for Healthcare Research and Quality.
  98. De Crescenzo, F., D’Alò, G. L., Ostinelli, E. G., Ciabattini, M., Di Franco, V., Watanabe, N., … Cipriani, A. (2022, July). Comparative effects of pharmacological interventions for the acute and long-term management of insomnia disorder in adults: A systematic review and network meta-analysis. The Lancet, 400(10347), 170–184. https://doi.org/10.1016/S0140-6736(22)00878-9
  99. Pillinger, T., McCutcheon, R. A., Vano, L., Mizuno, Y., Arumuham, A., Hindley, G., … Howes, O. D. (2020, January). Comparative effects of 18 antipsychotics on metabolic function in patients with schizophrenia. The Lancet. Psychiatry, 7(1), 64–77. https://doi.org/10.1016/s2215-0366(19)30416-x
  100. Yoshida, K., & Takeuchi, H. (2021, March). Dose-dependent effects of antipsychotics on efficacy and adverse effects in schizophrenia. Behavioural Brain Research, 402, 113098. https://doi.org/10.1016/j.bbr.2020.113098
  101. Højlund, M., Andersen, K., Ernst, M. T., Correll, C. U., & Hallas, J. (2022, October). Use of low-dose quetiapine increases the risk of major adverse cardiovascular events: Results from a nationwide active comparator-controlled cohort study. World Psychiatry, 21(3), 444–451. https://doi.org/10.1002/wps.21010
  102. Højlund, M. (2022, September 12). Low-dose Quetiapine: Utilization and Cardiometabolic Risk (Thesis). Syddansk Universitet. https://doi.org/10.21996/mr3m-1783
  103. Conn, D. K., & Madan, R. (2006). Use of sleep-promoting medications in nursing home residents: Risks versus benefits. Drugs & Aging, 23(4), 271–287. https://doi.org/10.2165/00002512-200623040-00001
  104. Atkin, T., Comai, S., & Gobbi, G. (2018, April). Drugs for insomnia beyond benzodiazepines: Pharmacology, clinical applications, and discovery. Pharmacological Reviews, 70(2), 197–245. https://doi.org/10.1124/pr.117.014381
  105. National Institute for Health and Care Research (NIHR). (2022, October 17). Review finds little evidence to support gabapentinoid use in bipolar disorder or insomnia. NIHR Evidence. https://doi.org/10.3310/nihrevidence_54173
  106. Hong, J. S., Atkinson, L. Z., Al-Juffali, N., Awad, A., Geddes, J. R., Tunbridge, E. M., & Harrison, P. J. (2022, March). Gabapentin and pregabalin in bipolar disorder, anxiety states, and insomnia: Systematic review, meta-analysis, and rationale. Molecular Psychiatry, 27(3), 1339–1349. https://doi.org/10.1038/s41380-021-01386-6
  107. Aschenbrenner, D. S., & Venable, S. J. (2009). Drug Therapy in Nursing. Lippincott Williams & Wilkins. p. 277. ISBN: 978-0-7817-6587-9
  108. Leach, M. J., & Page, A. T. (2015, December). Herbal medicine for insomnia: A systematic review and meta-analysis. Sleep Medicine Reviews, 24, 1–12. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2014.12.003
  109. Kim, J., Lee, S. L., Kang, I., Song, Y. A., Ma, J., Hong, Y. S., … Yun, C. H. (2018, May). Natural products from single plants as sleep aids: A systematic review. Journal of Medicinal Food, 21(5), 433–444. https://doi.org/10.1089/jmf.2017.4064
  110. Meolie, A. L., Rosen, C., Kristo, D., Kohrman, M., Gooneratne, N., Aguillard, R. N., … Fayle, R. (2005, April). Oral nonprescription treatment for insomnia: An evaluation of products with limited evidence. Journal of Clinical Sleep Medicine, 1(2), 173–187. https://doi.org/10.5664/jcsm.26314
  111. Wheatley, D. (2005, July). Medicinal plants for insomnia: A review of their pharmacology, efficacy and tolerability. Journal of Psychopharmacology, 19(4), 414–421. https://doi.org/10.1177/0269881105053309
  112. Bhagavan, C., Kung, S., Doppen, M., John, M., Vakalalabure, I., Oldfield, K., … Sarris, J. (2020, December). Cannabinoids in the treatment of insomnia disorder: A systematic review and meta-analysis. CNS Drugs, 34(12), 1217–1228. https://doi.org/10.1007/s40263-020-00773-x
  113. Suraev, A. S., Marshall, N. S., Vandrey, R., McCartney, D., Benson, M. J., McGregor, I. S., & Lintzeris, N. (2020, October). Cannabinoid therapies in the management of sleep disorders: A systematic review of preclinical and clinical studies. Sleep Medicine Reviews, 53, 101339. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2020.101339
  114. Gates, P. J., Albertella, L., & Copeland, J. (2014, December). The effects of cannabinoid administration on sleep: A systematic review of human studies. Sleep Medicine Reviews, 18(6), 477–487. https://doi.org/10.1016/j.smrv.2014.02.005
  115. Cheuk, D. K., Yeung, W. F., Chung, K. F., & Wong, V. (2012, September). Acupuncture for insomnia. The Cochrane Database of Systematic Reviews, 2012(9), CD005472. https://doi.org/10.1002/14651858.CD005472.pub3
  116. Kripke, D. F., Garfinkel, L., Wingard, D. L., Klauber, M. R., & Marler, M. R. (2002, February). Mortality associated with sleep duration and insomnia. Archives of General Psychiatry, 59(2), 131–136. https://doi.org/10.1001/archpsyc.59.2.131
  117. American Psychiatric Association. (n.d.). What are sleep disorders? Psychiatry.org. [Archived October 27, 2022]
  118. Lamberg, L. (2007). Several sleep disorders reflect gender differences. Psychiatric News, 42(8), 40. https://doi.org/10.1176/pn.42.10.0040
  119. Jiang, X. L., Zheng, X. Y., Yang, J., Ye, C. P., Chen, Y. Y., Zhang, Z. G., … Ling, W. (2015, December). A systematic review of studies on the prevalence of insomnia in university students. Public Health, 129(12), 1579–1584. https://doi.org/10.1016/j.puhe.2015.07.030
  120. Horne, J. (2016). Sleeplessness: Assessing Sleep Need in Society Today. Springer. p. 114, 116. ISBN: 978-3-319-30572-1.

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.