কিছু লোক তাদের বিশ্বাসের অভাবকে ব্যাখ্যা করার সময় তুলনামূলক ‘মিরাপদ’ অবস্থানে থাকার জন্য বলতে পছন্দ করেন, “আমি একজন এথিয়েস্ট নই, আমি একজন এগনস্টিক”। অনেকেই এগনস্টিকদেরকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকা ব্যক্তি বা এখনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেননি এমন ব্যক্তি বলে ভেবে থাকেন। কিন্তু এগনস্টিসিজম কোন স্বাধীন চিন্তাধারা নয় যা এথিয়েজম-থিজমের মধ্যে বা বাইরে অবস্থান করে। আর এটা এথিয়েজমের সাথে মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ নয় (অর্থাৎ এথিয়েজম, এগনস্টিসিজম সম্পূর্ণ ভিন্ন নয়, এদের একে অপরের উপর অংশত উপরিপাতন বা ওভারল্যাপ করা যায়)। এগনস্টিসিজম এথিয়েজমের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়। এথিয়েজম হল “আপনি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?” এই প্রশ্নের উত্তর। অন্যদিকে এগনস্টিসিজম হল, “আপনি কি কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কিনা এটা জানেন?” এই প্রশ্নের উত্তর। আর তাই, একজন ব্যক্তির পক্ষে একই সাথে এথিয়েস্ট এবং এগনস্টিক হওয়া সম্ভব। আপনি যদি একই সাথে এথিয়েস্ট এবং এগনস্টিক হন তাহলে আপনি দাবী করেন না যে, এরকম কোন চূরান্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই যার দ্বারা নির্দিষ্টভাবে ঈশ্বরের প্রতিটি সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা যায়, আবার আপনি এটাও বিশ্বাস করেন না যে, কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে। (লেখক এই অবস্থানের ব্যক্তিদেরকে এগনস্টিক এথিয়েস্ট বলেন যারা একই সাথে এথিয়েস্ট এবং এগনস্টিক হন। তাদের অবস্থানটির নাম হল এগনস্টিক এথিয়েজম।)
**এগনস্টিসিজমের ব্যাখ্যা
এগনস্টিক শব্দটি এসেছে একটি গ্রীক মূল থেকে যার অর্থ হচ্ছে “জ্ঞানহীন”। একজন ব্যক্তি অনেক বিষয়ে এগনস্টিক হতে পারেন। কিন্তু এটার সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহার দেখা যায় ধর্মীয় বিশ্বাসের বেলায়। যখন ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রশ্ন আসে, তখন দুটি মৌলিক অবস্থানের সূচনা ঘটে যাদের মধ্যে যেকোন একটিকে গ্রহণ করতে হয়। এটা অনুসারে, হয় আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারেন, অথবা অবিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু যদি আপনি অপশনগুলোকে আরও একটু নীরিক্ষণ করেন তাহলে আপনি জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে মোট চারটি অবস্থান দেখতে পারবেন:
১। নস্টিক থিস্ট: আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন এবং এটা যে সত্য এই বিষয়ে আপনার “জ্ঞান” আছে (বা এটা যে সত্য তা আপনি জানেন)।
২। এগনস্টিক থিস্ট: আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন কিন্তু “জানেননা” যে এটা সত্যি কিনা (অর্থাৎ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে আপনার জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও আপনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন)।
৩। নস্টিক এথিয়েস্ট: ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটা “জেনে” আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেন যে ঈশ্বর নেই এবং তাই আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না)।
৪। এগনস্টিক এথিয়েস্ট: ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই এটা না জেনেই আপনি ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেন (অর্থাৎ আপনি জানেননা যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে কি নেই কিন্তু আপনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না।)
তৃতীয় অবস্থানকে “নস্টিক এথিয়েজম” বলা হয়। এই নস্টিক এথিয়েজমকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে, “আমি বিশ্বাস করি এবং “জানি” যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই”। অন্যদিকে চতুর্থ অবস্থানটিকে “এগনস্টিক এথিয়েজম” বলা হয়। এটা বলে, “ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, এতে আমি বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমি এটা জানিনা যে ঈশ্বরের অনস্তিত্ব সত্য কিনা”। এই দুই দাবীর পার্থক্য সূক্ষ্ম কিন্তু এটাকে বোঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
**অবিশ্বাস করা আর অন্য কিছুতে বিশ্বাস করা এক নয়
একজন নাস্তিককে ঈশ্বর নেই এটা প্রমাণ করতে বলা হলে এটা ধরেই নেয়া হয় যে সেই নাস্তিক লোকটি “ঈশ্বর নেই” এই কথাটিতে বিশ্বাস করেন। নস্টিক এথিয়েস্টরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এথিয়েস্টদের মধ্যে অনেক এগনস্টিক আথিয়েস্টও আছেন যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এটাও নিশ্চিতভাবে দাবী করেন না। দুটোই বৈধভাবে নাস্তিক্যবাদ বা এথিয়েজম। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এথিয়েজম বা নাস্তিক্যবাদ এবং অজ্ঞেয়বাদ বা এগনস্টিসিজম সম্পূর্ণভাবে দুটি আলাদা বিষয় নয়।
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এটাই কাউকে নাস্তিক শ্রেণীভুক্ত করার জন্য যথেষ্ট। কোন কিছুতে বিশ্বাসহীনতা মানেই এই নয় যে এটাকে মিথ্যা বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। এটার কেবল এই অর্থই থাকতে পারে যে এটা যে সত্য সে বিষয়ে আপনি নিশ্চিত নন। উদাহরণস্বরূপ আপনার একজন বন্ধু বিশ্বাস করতে পারে যে ফোর্ড বিশ্বের সবচেয়ে ভাল গাড়ির কোম্পানি। আপনার এই বিষয়ে কোন বিশেষ মতামত বা ভাবনা নেই। আপনি বিশ্বাস করেন না যে ফোর্ড অন্য কোন ব্র্যান্ডের গাড়ির চেয়ে ভাল, কিন্তু এটা যে বিশ্বের সবচেয়ে ভাল কার ব্র্যান্ড না আপনি এটাও জানেন না। এই পরিস্থিতিতে আপনি আপনার বন্ধুটির দাবীর বিষয়ে এগনস্টিক বা অজ্ঞেয়বাদী।
**দ্য বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায়
ধরুন, আমি আপনার কাছে একটি অসম্ভব দাবী নিয়ে এলাম। সেটা হল, “আমার কাছে একটি দুই ফুট লম্বা লেপ্রিকন (এক ধরণের পরী) আছে। এটা আমার ক্লোজেটে থাকে। কেবলমাত্র আমিই এই লেপ্রিকনকে দেখতে পারি আর এই লেপ্রিকনের অস্তিত্বের কোন ফিজিকাল এভিডেন্স নেই।” কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয় যে এই লেপ্রিকনটির কোন অস্তিত্ব নেই, কিন্তু আমি এটারও কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে পারছি না যে এই লেপ্রিকনের কোন অস্তিত্ব আছে। আর এই ধরণের দাবীকেই আনফলসিফায়াবল ক্লেইম বা অপ্রমাণে অসম্ভব দাবী বলা হয়।
যখন একটি আনফলসিফায়াবল ক্লেইম করা হয়, তখন বার্ডেন অব প্রুফ বা প্রমাণের দায় তার উপরের বর্তায় যে ব্যক্তি দাবীটি করেছেন। অন্যথায় এবসার্ডিটি বা বিমূর্ততার সূচনা ঘটে। উদাহরণস্বরূপ আনফলসিফায়াবল ক্লেইম সংক্রান্ত একটি থট এক্সপেরিমেন্টের কথাই চিন্তা করুন যাদের মধ্যে পড়ে “ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার”, “ইনভিজিবল পিংক ইউনিকর্ন”, স্যাগানের “দ্য ড্রাগন ইন মাই গ্যারেজ” এবং “রাসেলস টিপট”। এই প্রত্যেকটি থট এক্সপেরিমেন্টেই পূর্ববর্তী উদাহরণের লেপ্রিকনের মত কোন না কোন আশ্চর্যজনক এবং অসম্ভব প্রাণীর কথা বলা হয়েছে যাদের অস্তিত্ব সম্পূর্ণভাবে অপ্রমাণ করা যায় না।
আর এখানেই এগনস্টিসিজম একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হয়ে দাঁড়ায়। এগনস্টিক এথিয়েস্টগণ স্বীকার করেন যে, তারা ঈশ্বরকে নির্দিষ্টভাবে অপ্রমাণ করতে পারবেন না। কিন্তু তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপর সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবকে চোখে আঙ্গুলে দেখিয়ে দিতে পারেন এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
**কিছু দাবীকে অপ্রমাণ করা যায়
উপরের যুক্তিগুলো কেবল আনফলসিফায়াবল ক্লেইম বা যে দাবীগুলোকে সত্য বা মিথ্যা বলে প্রমাণ করা যায় না তারদের উপরেই প্রয়োগ করা যায়। যখন এই যুক্তিগুলো বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসে প্রযুক্ত হয় তখন অনেক ধর্মীয় দাবীগুলোই তুলনামূলক নিশ্চয়তার সাথে অপ্রমাণ করা সম্ভব। কারণ সেই দাবীগুলো নিজে থেকেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এগুলো যুক্তির মুখে এমনিতেই ভেঙ্গে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, আব্রাহামিক গড ইহুদি, খ্রিস্টান এবং মুসলিমদের দ্বারা উপাসিত হন। ধরুন আব্রাহামিক গড একই সাথে সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান এবং সর্বমঙ্গলময়। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য আমরা যে জগৎকে দেখছি তাতে একই সাথে থাকতে পারে না বা কোএক্সিস্ট করতে পারে না। যখন বড় বড় দূর্যোগ ঘটে এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায় তখন ঈশ্বরের পক্ষে একই সাথে সর্বমঙ্গলময় এবং সর্বশক্তিমান হওয়াটা অসম্ভব হয়ে যায়।
হয় সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এরকম দূর্যোগ আটকানোর কোন ক্ষমতা নেই অথবা এই সর্বমঙ্গলময় ঈশ্বর পৃথিবীতে মানুষের দুঃখ দুর্দশা সম্পর্কে একেবারেই ভাবনাচিন্তা করেন না। সুতরাং ঈশ্বরের প্রতিটি সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব নাও হতে পারে তবে ঈশ্বরের কিছু কিছু স্ববিরোধী সংজ্ঞাকে অপ্রমাণ করা সম্ভব।
**স্পেক্ট্রাম অব থিস্টিক প্রোবাবিলিটি অথবা আস্তিকীয় সম্ভাবনার বর্ণালী
আমাদের জীবনের অনেক বিষয়ের মতই থিজম এবং এথিয়েজমকে স্ট্রিক্ট বাইনারিতে না ফেলে একটি স্পেক্ট্রাম বা বর্ণালীতে ফেলতে হয় (অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে হয় আস্তিক নয় নাস্তিক এভাবে শ্রেণীবিভক্ত না করে তাকে থিজম থেকে এথিয়েজম পর্যন্ত বর্ণালীর কোন একটি অবস্থানে রাখার কথা বলা হচ্ছে)। রিচার্ড ডকিন্স তার বিখ্যাত বই “দ্য গড ডিল্যুশন” এ এই স্পেক্ট্রাম অব থিস্টিক প্রোবাবিলিটি এর ধারণাটি দেন। এখানে থিজম থেকে এথিয়েজম পর্যন্ত মোট সাতটি অবস্থানের কথা বলা হয়েছে:
১। স্ট্রং থিজম: ব্যক্তি সন্দেহবিহীনভাবে জানেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে।
২। ডি ফ্যাক্টো থিজম: ব্যক্তি একশভাগ নিশ্চিন্ত নন যে ঈশ্বর আছেন কিন্তু মনে করেন তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক বেশি এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে ভেবেই জীবন অতিবাহিত করেন।
৩। উইক থিজম: ব্যক্তি সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত নন কিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসের দিকে ঝুঁকে থাকেন।
৪। পিওর এগনস্টিসিজম অথবা কমপ্লিট ইমপারশালিটি: ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা, তার সত্য হবার সম্ভাবনা ও মিথ্যা হবার সম্ভাবনা ব্যক্তির কাছে সমান।
৫। উইক এথিয়েজম: ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্বের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত নন কিন্তু স্কেপ্টিসিজমের দিকে তিনি ঝুঁকে থাকেন।
৬। ডি ফ্যাক্টো এথিয়েজম: ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই এব্যাপারে ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে পজিটিভ নন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা অনেক কম বলে মনে করেন এবং ঈশ্বর বলে কিছু নেই ভেবেই জীবন অতিবাহিত করেন।
৭। স্ট্রং এথিয়েজম: ব্যক্তি শতভাগ নিশ্চিন্ত যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই।
ডকিন্সের মতে, এথিয়েস্টদের মধ্যে ৭ম অবস্থানের চেয়ে ৬ষ্ঠ অবস্থানটাই বেশি দেখা যায়। যদি আপনাকে নিজের বিশ্বাসকে ডকিন্সের স্কেলে রেট করতে বলা হয় তাহলে আপনি নিজেকে কোন অবস্থানে ফেলবেন?
(এই লেখাটি আরমিন নবাবির লেখা প্রবন্ধ “Atheism vs Agnosticism: What is the difference?” এবং তার লেখা বই “Why There Is No God: Simple Responses to 20 Common Arguments for the Existence of God” এর একাংশের সংমিশ্রণে লেখা হয়েছে)
l want to translate your this article into assamese to publish in facebook
I beg your permission to do so
– Anjan Saikia
ok 🙂