যে সকল জেনেটিক কন্ডিশন অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সম্প্রতি চিকিৎসকগণ তার প্রোগ্রেশন বা বেড়ে ওঠা থামিয়ে দিতে এবং এই রোগের রোগীদের দৃষ্টির আরও উন্নতি করার জন্য নতুন একটি পদ্ধতির আবিষ্কার করেছেন। শুধু তাই নয়, এই ফলাফলটি অন্তত চার ঘণ্টা স্থায়ী ছিল যা আশা জাগিয়েছে যে জেনেটিক রিলেটেড ব্লাইন্ডনেস বা জিনঘটিত অন্ধত্বেরও চিকিৎসা সম্ভব।
জিন থেরাপির ব্যবহার নিঃসন্দেহে একটি মহৎ চিকিৎসা। চিকিৎসকগণ সিস্টিক ফাইব্রোসিস এর হাজার হাজার রোগীর জন্য কয়েক দশক ধরে এরকম একটি চিকিৎসা বের করতে চাচ্ছেন যা মাত্র একটি ফল্টি জিনের কারণে হয়। এটা নিয়ে পূর্বে অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষা হয়েছে কিন্তু কোনবারই ফলাফল স্থায়ী হয় নি, বরং ফলাফল অনেক সীমিত ছিল। ক্কিন্তু সাম্প্রতিক পরীক্ষাটি থেকে দেখা যায় যে, রোগীর চোখে যে পরিবর্তন আসে তা অনিশ্চিতভাবে স্থায়ী।
এই আবিষ্কারের পরিচালক ডঃ স্টিফেন ক্যাডিক বলেন, “জিনগত অন্ধত্বে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তিকে ফিরিয়ে দেয়াটা একটি যুগান্তকারী মেডিকেল এইভমেন্ট। এটাই প্রথমবার, যেখানে আমরা দৃশটির স্থায়ী পরিবর্তন দেখলাম কেবল এক রাউন্ড চিকিৎসাতেই। এটা সত্যিই নতুন এক যুগের দিকে আরেকটি পদক্ষেপ যেখানে জিন থেরাপি দৈনন্দিন চিকিৎসারই একটি অংশ হতে চলেছে”।
জিন থেরাপিটি ব্যবহার করা হয়েছে করয়েডেরেমিয়া নামক একটি জেনেটিক কন্ডিশনে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে। এই রোগটি যুক্তরাজ্যের প্রতি পঞ্চাশ হাজার লোকের একজনকে আক্রান্ত করে। কেবলমাত্র একটি জিনের ভুল মিউটেশনের কারণে এই রোগটি হয়ে থাকে। যেসব হতভাগ্যের এই মিউটেশনটি ঘটে তার চোখের রেটিনাল ফটোরিসেপ্টর নষ্ট হয়ে যাবার ফলে তার দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। এভাবে আস্তে আস্তে আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণভাবে অন্ধ হয়ে যায়। নতুন গবেষণা অনুযায়ী ছয়জন ব্যক্তিকে সর্বাধুনিক চিকিৎসাটি দেয়া হয়। এর ফলাফল নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এই চিকিৎসাটি করা হয় সরাসরি রেটিনার লাইট সেন্সিটিভ সেলে বা আলোক সংবেদি কোষে একটি ইঞ্জিনিয়ার্ড ভাইরাসকে ইনজেক্ট করে। এই ভাইরাসটির মধ্যে সঠিক জিনট ছিল। ভাইরাসটি এরপর হস্ট সেলের ডিএনএতে সঠিক জিনটিকে সংযুক্ত করে। এই নতুন জিনটি রোগীর ভুল জিনটির ক্ষতিপূরণ করে। গবেষকরা ভেবেছিলেন এই চিকিৎসাটি কেবল ব্লাইন্ডনেস এর অগ্রগতি থামিয়ে দিতে সক্ষম হতে পারে। এটা তারা ছয়জন রোগীর তিনজনের মধ্যে দেখতে পান। অন্য তিনজনের মধ্যে দুজনের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়ভাবে দৃষ্টি শক্তির উন্নতি দেখা গেছে। ষষ্ঠ জনের বেলায় দুর্ভাগ্যবশত এটা কাজ করেনি। এই ট্রিটমেন্টে কেবল ভাইরাসের লোয়ার ডোজ বা নিম্নমাত্রার ডোজ দেয়া হয়েছিল।
এই থেরাপিতে চিকিৎসা নেয়া প্রথম রোগী হলেন জোনাথন ওয়াট, জিন থেরাপির ফলে যার বাম চোখের দৃষ্টিশক্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, “আমার বাম চোখটি অনেক বেশি উন্নতি করেছে যা এখন আমি বেশিরভাগ সময়ই ব্যবহার করছি। এটা খুব লক্ষণীয় হারেই উন্নতি করেছে। এটা সত্যিই চমৎকার একটি বিষয়। এই জন রেডক্লিফ রিসার্চ গ্রুপের গবেষণার একটি অংশ হতে পারে আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে করছি। অন্যদের সাহায্যের জন্য আমার জীবন অবদান রাখবে ভেবে আমি অনেক আনন্দিত”।
http://www.nejm.org/doi/full/10.1056/NEJMc1509501
http://www.eurekalert.org/pub_releases/2016-04/uoo-gts042816.php
https://www.theguardian.com/science/2015/jul/03/gene-therapy-cystic-fibrosis-2020-scientists
http://www.eurekalert.org/pub_releases/2016-04/uoo-gts042816.php
http://www.popsci.com/gene-therapy-has-long-lasting-effect-on-congenital-blindness
– বুনোস্টেগস
Leave a Reply