১৯৯৭ সালের ইউএন ওয়াটারকোর্সেস কনভেনশন, বাংলাদের লাভ, কেন স্বাক্ষর করেনি

চুক্তিটি

১৯৭০ সালে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক আইন কমিশনকে (ILC) অনুরোধ করেছিল, যাতে তারা পানির ব্যবহার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা প্রস্তুত করে, যা হেলসিঙ্কি নিয়মের (Helsinki Rules) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। হেলসিঙ্কি নিয়মগুলি ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল, তবে এগুলি সেই জলাধারগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিল যা নিষ্কাশন অববাহিকার সাথে সংযুক্ত ছিল না। ILC ১৯৯৪ সালে তাদের প্রকল্প সম্পন্ন করার পর, জাতিসংঘের ষষ্ঠ কমিটি তাদের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে নেভিগেশনের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন আন্তর্জাতিক জলপথগুলির (মানে দুই দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদী, ভূগর্ভস্ত জলপথ ইত্যাদি) আইন সংক্রান্ত কনভেনশনের খসড়া তৈরি করে। ১৯৯৭ সালের ২১ মে সাধারণ পরিষদ ১০৬ ভোটের বিপরীতে মাত্র তিনটি বিরোধিতার সাপেক্ষে এই নথিটি গ্রহণ করে। ভারতসহ ২৭টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়মানুযায়ী জাতিসংঘ আইনটিকে প্রয়োজনীয় মনে করে এই শর্ত আরোপ করে যে অন্তত ৩৫টি দেশ নীতিগতভাবে অনুমোদন বা ‘রেটিফিকেশন’ করে স্বাক্ষর করলে এটি একটি আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হবে। ১৭ আগস্ট ২০১৪-এ পর্যাপ্তসংখ্যক দেশ প্রস্তাবনাটিতে স্বাক্ষর করায় তা আন্তর্জাতিক আইনে পরিণত হয়। মানে খসড়া তৈরি হওয়ার পর থেকে, কনভেনশনটি ১৭ আগস্ট ২০১৪ তারিখে কার্যকর হতে ১৭ বছরের বেশি সময় নিয়েছিল।

তো এটাই হচ্ছে জাতিসংঘ জলপথ কনভেনশন (UN Watercourses Convention) বা নাব্যতাহীন আন্তর্জাতিক জলপথের ব্যবহার সম্পর্কিত আইন কনভেনশন (The Convention on the Law of Non-Navigational Uses of International Watercourses) নামক আন্তর্জাতিক চুক্তি। এই চুক্তি আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রমকারী সমস্ত জলপথের ব্যবহার এবং সংরক্ষণ সম্পর্কিত, যার মধ্যে পৃষ্ঠতলের পানি বা সারফেইস ওয়াটার এবং ভূগর্ভস্থ পানি বা গ্রাউন্ডওয়াটার (surface and groundwater) উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। “পানির জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং মানব আচরণের প্রভাব নিয়ে সচেতনতা” (Mindful of increasing demands for water and the impact of human behavior) থেকে, জাতিসংঘ বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জল সম্পদ সংরক্ষণ এবং পরিচালনা করতে এই নথিটি খসড়া করে।

এই চুক্তিটি মাত্র ৩৬টি রাষ্ট্র দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে, যার ফলে বেশিরভাগ দেশ, বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো, এর আওতার বাইরে রয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও, কনভেনশনটিকে আন্তর্জাতিক পানি সম্পর্কিত আইন প্রতিষ্ঠায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক আইন কমিশন (International Law Commission) দ্বারা প্রস্তাবিত একটি আইন নিয়ে জাতিসংঘ পর্যালোচনা শুরু করে। এটি আন্তর্জাতিক জলপথ কনভেনশনের উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেই করা হয় যেটা তখনও অনুমোদিত হয়নি বা কার্যকর হয়নি। তবে জাতিসংঘ এটিকে অবিলম্বেই আইনে পরিণত করেনি, এর পরিবর্তে এটিকে একটি গাইডলাইন বা নির্দেশিকা হিসাবে গ্রহণ করার কথা বিবেচনা করা হয়।

চুক্তিটির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো

এই চুক্তিটি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর এমন একটি বাধ্যবাধকতা (obligation) আরোপ করতে চেয়েছিল, যাতে তারা কোনো জলসম্পদ (water resource) নিয়ে আগ্রহী অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর তাদের কর্মের প্রভাব (impact) বিবেচনা করে এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী উপাদান (factors) যেমন জনসংখ্যার আকার (population size) এবং অন্যান্য সম্পদের প্রাপ্যতা (availability of other resources) মাথায় রেখে জলসম্পদটি ন্যায্যভাবে ভাগাভাগি (equitably share) করে। চুক্তিটির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো –

  • চুক্তিটির আওতায়, যেসব সদস্য রাষ্ট্র অভিন্ন জলসম্পদ (water resource) শেয়ার করে, তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আরোপিত হয়। প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে সেই জলপথের অবস্থা (condition of the watercourse) এবং এর জন্য তাদের পরিকল্পিত ব্যবহার (planned uses) সম্পর্কে অন্যান্য অংশীদার রাষ্ট্রগুলিকে তথ্য (information) সরবরাহ করতে হবে। এর উদ্দেশ্য হলো, অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া যাতে তারা এই ব্যবহারের প্রভাব পর্যালোচনা করতে পারে এবং যদি সেই ব্যবহার ক্ষতিকারক (harmful) বলে মনে হয়, তাহলে তারা আপত্তি জানাতে পারে।
  • চুক্তিটি এই শর্তে একটি রাষ্ট্রকে জরুরি প্রয়োজনে (urgent need) অবিলম্বে একটি জলপ্রবাহ (watercourse) ব্যবহার করার অনুমতি দেয় যে, রাষ্ট্রটি অন্য অংশীদার রাষ্ট্রগুলিকে এই ব্যবহারের (use) এবং এর জরুরিতার (urgency) বিষয়ে অবিলম্বে অবহিত করবে।
  • যদি কোনো রাষ্ট্রের দ্বারা অভিন্ন জলসম্পদ ব্যবহার অন্য রাষ্ট্রগুলির জন্য ক্ষতিকারক বলে মনে হয়, তাহলে চুক্তিটি সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধান (mutually acceptable solution) খুঁজে বের করার জন্য আলোচনার প্রয়োজনীয়তা আরোপ করে। প্রয়োজনে, সংশ্লিষ্ট নয় এমন রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কাছে (international organizations) যেমন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (International Court of Justice) মধ্যস্থতার (arbitration) জন্য আবেদন করা যেতে পারে।
  • চুক্তিটি রাষ্ট্রগুলিকে দূষণ (pollution) বা জলপথে অ-স্থানীয় প্রজাতির (species not native) আগমনের মতো সম্ভাব্য ক্ষতির (damage) নিয়ন্ত্রণে যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ (reasonable steps) নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। 
  • যদি কোনো সদস্য রাষ্ট্রের কার্যকলাপের ফলে যৌথভাবে ব্যবহৃত জলসম্পদে (shared water resource) ক্ষতি হয়, তবে চুক্তিটি সেই রাষ্ট্রকে ক্ষতি মেরামতের (remedy the damage) বা ক্ষতিগ্রস্ত অংশীদার রাষ্ট্রগুলিকে ক্ষতিপূরণ (compensation) দেওয়ার দায়িত্ব (responsibility) দেয়।
  • চুক্তিটি প্রাকৃতিক কারণে জলপথে সৃষ্ট ক্ষতির (natural damage), যেমন খরা (drought) বা ভূমিক্ষয় (erosion), ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ বিধান (provisions) অন্তর্ভুক্ত করে। এছাড়াও, অংশীদার রাষ্ট্রগুলিকে অবিলম্বে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে বন্যা (flooding) বা জলবাহিত রোগের (waterborne diseases) মতো জরুরি অবস্থার (emergency conditions) বিষয়ে অবহিত করার বাধ্যবাধকতা দেয়, যা তাদের প্রভাবিত করতে পারে।

চুক্তিটি নিয়ে বিতর্ক

চুক্তিটি নিয়ে বিতর্কও আছে, যেকারণে অনেক দেশ এখনও তাতে স্বাক্ষর করেনি। চুক্তিটির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের শিরোনাম হচ্ছে “গুরুতর ক্ষতি না করার বাধ্যবাধকতা” (Obligation not to cause significant harm)। এখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলির জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যে, তারা “তাদের অঞ্চলগুলোতে একটি আন্তর্জাতিক জলপথ (international watercourse) ব্যবহার করার সময় … অন্যান্য জলপথ রাষ্ট্রগুলিতে (other watercourse states) গুরুতর ক্ষতি (significant harm) করতে পারে এমন যেকোন সম্ভাবনা রোধ করার জন্য সমস্ত উপযুক্ত পদক্ষেপ (appropriate measures) গ্রহণ করবে” এবং যে কোনো ধরনের ক্ষতির জন্য অভিন্ন জলপথের রাষ্ট্রগুলিকে ক্ষতিপূরণ (compensation) প্রদান করবে।

ম্যাকজর্জ স্কুল অফ ল’র (McGeorge School of Law) স্টিফেন ম্যাকক্যাফ্রি (Stephen McCaffrey) এর মতে, এটি কনভেনশনের “সবচেয়ে বিতর্কিত ধারা”। এটির বিরোধিতার মূল কারণ হচ্ছে, একটি রাষ্ট্রের তার দেশের জলপথ ব্যবহারের বৈধ প্রয়োজন থাকতে পারে যা অন্য দেশগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটা ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি নিম্নলিখিত উদাহরণটি প্রদান করেন:

ধরা যাক … উজানে অবস্থিত রাষ্ট্র “ক” তার পর্বতপূর্ণ ভূখণ্ডের কারণে তার জলসম্পদের (water resources) উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নয়ন করেনি। জলপথের নিম্নবর্তী রাষ্ট্র “খ” এবং “গ”-এর ভূপ্রকৃতি তুলনামূলকভাবে সমতল, এবং তারা জলপথটি শতাব্দী ধরে, এমনকি হাজার বছর ধরে সেচের (irrigation) জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। এখন রাষ্ট্র “ক” তার জলসম্পদ হাইড্রোইলেকট্রিক (hydroelectric) এবং কৃষিকাজের (agricultural purposes) জন্য উন্নয়ন করতে চায়। কিন্তু “খ” ও “গ” রাষ্ট্রগুলো এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে, এটি তাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যবহারগুলিতে (established uses) গুরুতর ক্ষতি (significant harm) করবে।

ম্যাকক্যাফ্রি ইঙ্গিত দেন যে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল জাতিসংঘের ILC বা ইন্টারন্যাশনাল ল কমিশনের টেক্সটকে জাতিসংঘে প্রবেশ করার সময়, যেটা করার সময় ILC-এর “ন্যায্য ব্যবহার” (equitable utilization) এর মত টার্মগুলোকে বা রাষ্ট্রগুলোর বিভিন্ন প্রয়োজনের ভারসাম্যকে (balance) অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়। পরে এটার উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ তার এই “ক্ষতি না করার বাধ্যবাধকতা” (obligation to do no harm) এর ধারণাটি শক্তিশালী করে। আর সেখান থেকেই এই বিতর্কের সূত্রপাত।

চুক্তিটি স্বাক্ষর করায় বাংলাদেশের লাভ, কেন স্বাক্ষর করা হয়নি

বাংলাদেশ এই চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেনি, আর এটাই খুব আশ্চর্যজনক, কেননা বাংলাদেশের জন্য এই চুক্তি অন্যান্য যেকোনো রাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর না করায় ভারতের স্বার্থ জড়িত তাই ভারত এটিতে কখনই স্বাক্ষর করবে না। তাই এই জলপথ কনভেনশনের চুক্তি মানা তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ এই আইনে স্বাক্ষর করলে অন্তত আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে আরজি পেশ করতে পারত। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশ যে তা করেনি তার পেছনে ব্যাখ্যা একটাই – ভারতের চাপ, ভারতকে অখুশি করার ঝুঁকি। এই চাপ কত বড় তা বোঝা যায় যখন আমরা দেখি ২০০১ থেকে ২০০৬ এর বিএনপি সরকারের আমলেও চুক্তিতে স্বাক্ষর করা হয়নি।

বাংলাদেশের উচিৎ অবিলম্বে আন্তর্জাতিক নদী আইনটি স্বাক্ষর করা, আর এর ভিত্তিতে প্রয়োজনে আদালতে যাওয়া। এর মাধ্যমে সরাসরি কোন সমাধান না এলেও বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি লাভ হতে পারে। প্রথমত, বাংলাদেশ এই আইনে স্বাক্ষর করলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার অধিকার পাবে, যা পানির সমস্যা নিয়ে অন্তত আরজি পেশ করার সুযোগ তৈরি করবে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বাংলাদেশের দাবি ও সমস্যাগুলিকে আরও দৃশ্যমান করা যাবে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর এই দিকগুলো পরবর্তীতে এই অভিন্ন নদী নিয়ে বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি অর্জনে ভূমিকা রাখবে।

তথ্যসূত্র

  • Brahic, C. (2008, November 8). Can legislation stop the wells running dry? *New Scientist*, (2681). https://doi.org/10.1016/S0262-4079(08)62793-1
  • Dellapenna, J. W. *The Berlin rules on water resources: The new paradigm for international water law*. Universidade do Algarve. [dead link]
  • Islam, M. S. (2024, August 31). ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে কেন সমাধান সম্ভব নয়, নিজেরা বাঁধ দিলে কী হবে? *Prothom Alo*. https://www.prothomalo.com/opinion/column/nh4s6gxuai
  • McCaffrey, S. (1999). International groundwater law: Evolution and context. In S. M. A. Salman (Ed.), *Groundwater: Legal and policy perspectives: Proceedings of a World Bank seminar* (pp. 152). World Bank Publications.
  • McCaffrey, S. *Chapter 2: The UN Convention on the Law of Non-Navigational Uses of International Watercourses* (PDF). United Nations Economic Commission for Europe. Retrieved February 12, 2009, from [URL]
  • McCaffrey, S. (1997). *Convention on the Law of Non-Navigational Uses of International Watercourses* (PDF). United Nations. Retrieved February 12, 2009, from [URL]
  • McCaffrey, S. *Chapter 2: The UN Convention on the Law of Non-Navigational Uses of International Watercourses* (pp. 20-21).
  • Raj, K., & Salman, S. M. A. (1999). International groundwater law and the World Bank policy for projects on transboundary groundwater. In S. M. A. Salman (Ed.), *Groundwater: Legal and policy perspectives: Proceedings of a World Bank seminar* (pp. 173). World Bank Publications.
  • United Nations. (2014)Convention on the Law of the Non-Navigational Uses of International Watercourses: Entry into Force1. Retrieved from https://treaties.un.org/doc/Publication/CN/2014/CN.271.2014-Eng.pdf
  • United Nations. (2014)Convention on the Law of the Non-Navigational Uses of International Watercourses: Entry into Force1. Retrieved from https://treaties.un.org/doc/Publication/CN/2014/CN.271.2014-Eng.pdf

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.