Table of Contents
ফল গাই (Fall Guy)
ভূমিকা
ফল গাই (Fall Guy) হল একটি প্রচলিত বাক্যাংশ, যা এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায় যার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে এবং মিথ্যাভাবে দোষ চাপানো হয় অন্য পক্ষের দোষ এড়ানোর জন্য।
উৎপত্তি
সাধারণ
ফল গাই (Fall Guy) শব্দটির উৎপত্তি অজানা এবং বিতর্কিত। অনেক সূত্র এটিকে ২০ শতকের গোড়ার দিকে স্থাপন করে, যদিও কেউ কেউ এর আগের উৎপত্তির দাবি করেন। এপ্রিল ২০০৭ সালে, উইলিয়াম সাফায়ার (William Safire) এর উৎপত্তি খুঁজে বের করার জন্য একটি অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন।
ফল গাই (Fall Guy) শব্দটি অপরের দোষ ঢাকতে দোষারোপ করা ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় এবং এটি ১৯২০ এর দশকের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পপুলার কালচারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। ১৯২৫ সালে এটি একটি ব্রডওয়ে নাটকের (Broadway Play) শিরোনাম ছিল, দ্য ফল গাই (The Fall Guy), যা জেমস গ্লিসন (James Gleason) এবং জর্জ অ্যাবট (George Abbott) দ্বারা রচিত এবং ভবিষ্যত হলিউড চরিত্র অভিনেতা আর্নেস্ট ট্রুক্স (Ernest Truex) এবং ডরোথি প্যাটারসন (Dorothy Patterson) অভিনীত। এটি ১৯৩০ সালে হলিউড দ্বারা একটি অপরাধমূলক চলচ্চিত্রে (Crime Film) রূপান্তরিত হয়েছিল, যেখানে একটি গ্যাংস্টার একজন নিরীহ ব্যক্তিকে মাদকদ্রব্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার করে এবং পরে তাকে দোষারোপ করা হয়। এটি ক্রাইম-ডমিনেটেড ফিল্ম নোয়ার (Film Noir) যুগের মাঝামাঝি থেকে ১৯৪০ এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৫০ এর দশকের শুরুর দিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
একটি সম্পর্কিত ব্যবহার ছিল “holding the bag”, অর্থাৎ কোনো অপরাধের সময় অন্যরা পালিয়ে যাওয়ার পর দোষারোপ করা বা চুরি করা পণ্য সহ ধরা পড়া। এটি “ব্যাগহোল্ডার” (Bagholder) শব্দটির দিকে নিয়ে যায়, যার দ্বারা একটি প্রতারণামূলক বিনিয়োগ প্রকল্পের শিকারকে বোঝায়। একটি সম্পর্কিত শব্দ ছিল “প্যাটসি” (Patsy), যা দ্বারা সাধারণত এমন কাউকে বোঝায় যাকে আগে থেকেই দোষারোপ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
ত্রুটিপূর্ণ টি-পট ডোম সংযুক্তি
একটি প্রস্তাবনা যেটি পপুলার কালচারে তৈরি হয়েছে কিন্তু উইলিয়াম সাফায়ার (William Safire) দ্বারা বাতিল করা হয়েছে, তা হল শব্দটির উৎপত্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন জি. হার্ডিং (U.S. President Warren G. Harding) এর প্রশাসনের সময় থেকে, যখন আলবার্ট বি. ফল (Albert B. Fall), নিউ মেক্সিকো (New Mexico) এর মার্কিন সেনেটর ছিলেন যিনি হার্ডিং-এর সময়ের মধ্যে সেক্রেটারি অফ দ্য ইন্টেরিয়র (Secretary of the Interior) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ও কুখ্যাত টি-পট ডোম স্ক্যান্ডাল (Teapot Dome Scandal) এর সাথে জড়িত ছিলেন।
মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে
১৯৪০ এর দশকে ফল গাই (Fall Guy) শব্দটি একটি নতুন অর্থ লাভ করতে শুরু করে, যার দ্বারা দায়িত্ব নেওয়ার জন্য দায়ী একজন ব্যক্তিকে বোঝায়। ১৯৪০ এর দশকে প্রকাশিত একটি পত্রিকা “Isolationism is not dead” একটি বেনামী সম্পাদকীয়কে উদ্ধৃত করে, যেখানে বলা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র (US) কে “ফল গাই” (Fall Guy) হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যা বোঝায় যে তাকে পুরো দায়িত্ব বহন করতে হবে।
১৯৫০ এর দশকের মধ্যে শব্দটির ব্যবহার পরিবর্তিত হয়েছিল এবং ইউনিয়ন (Unions) এবং শিল্প সমাজ (Industrial Society) এর প্রসঙ্গে নিম্ন স্তরের কর্মচারীকে বোঝাতে শুরু করে, যাকে চাকরির বা পরিস্থিতির মধ্যে অপ্রিয় কাজগুলো দেওয়া হয়।
১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকের মধ্যে, ফল গাই (Fall Guy) শব্দটি “whipping boy” এর পরিবর্তে ব্যবহার করা শুরু হয়, যার দ্বারা এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায় যাকে নির্দিষ্টভাবে দায়ী করা বা শাস্তি দেওয়ার মতো কাউকে না পাওয়া গেলে রিচুয়ালি বা আচারগতভাবে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই বারবার কোন দোষের জন্য দায়ী করা হয়। রবার্ট বুলার্ড (Robert Bullard) ১৯৬০ সালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাপত্র “পলিটিক্স অফ পলিউশন” (Politics of Pollution) এ উল্লেখ করেন যে পাবলিক অফিসিয়ালরা ল্যান্ডফিলের সমালোচনার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার জন্য “ফল গাই” (Fall Guy) খুঁজে পেয়েছিলেন, যারা “ফেডারেল সরকার, রাজ্য সরকার এবং ব্যক্তিগত নিষ্পত্তি কোম্পানি” এর মতো নামহীন চরিত্র ছিল।
উদাহরণসমূহ
“ফল গাই” (Fall Guy) শব্দের কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারের উদাহরণ নিম্নরূপ:
- জন এফ কেনেডি (John F. Kennedy) এর হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত লি হার্ভি অসওয়াল্ড (Lee Harvey Oswald)-কে ঐতিহ্যবাহী অপরাধমূলক অর্থে “ফল গাই” (Fall Guy) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যদিও এই হত্যাকাণ্ড একটি রাজনৈতিক ঘটনাও ছিল, যা লেখক জোয়াকিম জোস্টেন (Joachim Joesten) তার ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত বই Oswald, Assassin or Fall Guy? (ওসওয়াল্ড, অ্যাসাসিন বা ফল গাই?) এর শিরোনামে উল্লেখ করেছেন।
- নিউ টাইমস (New Times) পত্রিকায় জোস্টেনের বই পর্যালোচনা করে আমেরিকান সাংবাদিক ভিক্টর পারলো (Victor Perlo) এই ধারণাটিকে পুনরায় জোর দিয়েছিলেন যে অসওয়াল্ড “ফল গাই” (Fall Guy) ছিলেন, যে ধরনের পুরুষরা সম্ভবত হত্যাকাণ্ডের বিবরণ পরিকল্পনা করেছিলেন তাদের ভাষায় বলতে গেলে।
- সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জন মিচেল (John Mitchell) দাবি করেছিলেন যে তাকে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে “ফল গাই” (Fall Guy) হিসেবে দাঁড় করানো হচ্ছে, ঐতিহ্যগত অর্থে যাকে “হাং আউট টু ড্রাই” বা “হোল্ডিং দ্য ব্যাগ” বলা হয়।
- টেরেন্স মোরান (Terence Moran) তার Public Doublespeak: On Mistakes and Misjudgments (পাবলিক ডাবলস্পিক: ভুল এবং ভুল রায়ের উপর) বইয়ে এই শব্দটি রিচার্ড নিক্সন (Richard Nixon) এবং জন ডিন (John Dean) এর একটি ট্রান্সক্রিপ্টের উল্লেখে ব্যবহার করেছেন। এছাড়া তিনি দ্য মাল্টিজ ফ্যালকন (The Maltese Falcon) চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য উল্লেখ করেছেন যেখানে যুবক বন্দুকধারী উইলমার (Wilmer) কে ফল গাই হবার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়।
- ইরান-কনট্রা কেলেঙ্কারির (Iran–Contra scandal) প্রসঙ্গে, ১৯৮৭ সালে কংগ্রেসের একটি অধিবেশনে প্রতিনিধি লুইস স্টোকস (Louis Stokes) উল্লেখ করেন যে অলিভার নর্থ (Oliver North) তার কাজের জন্য যারা তাকে পরিচালনা করেছিল তাদের রক্ষা করার জন্য একটি “ফল গাই” (Fall Guy) হিসেবে থাকতে বেছে নিয়েছিলেন।
স্কেপগোটিং (Scapegoating)
পরিচিতি
স্কেপগোটিং (Scapegoating) হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ করা হয় এবং পরবর্তীতে নেতিবাচক আচরণের শিকার করা হয়। স্কেপগোটিং (Scapegoating) ব্যক্তিদের মধ্যে, গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, গোষ্ঠী থেকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হতে পারে।
স্কেপগোট (Scapegoat) হতে পারে প্রাপ্তবয়স্ক, শিশু, ভাইবোন, কর্মচারী, সহকর্মী, জাতিগত, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় গোষ্ঠী, অথবা দেশ। একটি হুইপিং বয় (Whipping Boy), আইডেন্টিফাইড পেশেন্ট (Identified Patient) বা ফল গাই (Fall Guy) স্কেপগোটের (Scapegoat) বিভিন্ন রূপ।
স্কেপগোটিং (Scapegoating) এর উৎস হলো বাইবেলের বই লেভিটিকাস-এর ১৬ নম্বর অধ্যায়ে বর্ণিত প্রায়শ্চিত্তের স্কেপগোট (Scapegoat) আচার, যেখানে একটি ছাগল (বা গাধা)-কে সমস্ত সম্প্রদায়ের পাপ বহন করে মরুভূমিতে ছেড়ে দেওয়া হয়, যা পুরোহিতের দ্বারা ছাগলের মাথায় রাখা হয়েছিল।
ব্যক্তিগত স্তরে
সাধারণ কথা
স্কেপগোটিং (Scapegoating) এর একটি মেডিকেল সংজ্ঞা হলো: এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে প্রক্ষেপণ (projection) বা স্থানচ্যুতি বা ডিসপ্লেসমেন্ট (displacement) প্রক্রিয়াগুলি ব্যবহার করা হয়, যাতে আক্রমণাত্মকতা, শত্রুতা, হতাশা ইত্যাদির অনুভূতিগুলি অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি কেন্দ্রীভূত হয়; এখানে দোষারোপের পরিমাণ অন্যায়ভাবে ঠিক করা হয়। স্কেপগোটিং (Scapegoating) হলো একটি শত্রুতামূলক কৌশল, যা প্রায়শই একটি সম্পূর্ণ গোষ্ঠীকে অল্প সংখ্যক সদস্যদের অনৈতিক বা অশোভন আচরণের ভিত্তিতে চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। স্কেপগোটিং (Scapegoating) এর সাথে গিল্ট বাই এসোসিয়েশন (Guilt by association) এবং স্টেরিওটাইপিং (Stereotyping) সম্পর্কিত।
ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন স্কেপগোটেড (Scapegoated) গোষ্ঠীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রায় প্রতিটি সম্ভাব্য গোষ্ঠী: লিঙ্গ, ধর্ম, বিভিন্ন জাতি, জাতি, বা যৌন অভিমুখিতা, ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাসের লোকজন, বা সংখ্যাগরিষ্ঠদের থেকে আচরণে ভিন্ন ব্যক্তিরা। তবে, স্কেপগোটিং (Scapegoating) বিভিন্ন সংস্থা, যেমন সরকার, কর্পোরেশন, বা বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উপরও প্রযোজ্য হতে পারে।
এর আর্কিটাইপ (Its archetype)
ইয়ুংগিয়ান (Jungian) বিশ্লেষক সিলভিয়া ব্রিনটন পেরেরা (Sylvia Brinton Perera) এই মিথটিকে ছায়া (shadow) এবং অপরাধবোধের (guilt) প্রাচীন ধাঁচের সাথে সংযুক্ত করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে ব্যক্তি একটি আর্কিটাইপাল (archetypal) স্তরে এর অভিজ্ঞতা লাভ করে। প্রাচীন সামাজিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি সম্প্রদায়কে তার অতীতের খারাপ কাজগুলি থেকে মুক্ত করে পবিত্র জগতে পুনরায় সংযুক্ত করার জন্য, বাইবেলীয় (biblical) রীতিতে পাপবোধের (scapegoat) প্রতীক হিসেবে এই ছায়ার উদ্ভব ঘটে। এতে দুটি ছাগল এবং প্রাক-ইহুদীয় (pre-Judaic), ফলেন অ্যাঞ্জেল আজাজেল (Azazel)-এর ভূমিকা থাকে। তবে আধুনিক ছায়া জটিলতায় (scapegoat complex), “শক্তি ক্ষেত্রটি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে” এবং লিবিডো (libido) “সচেতনতা থেকে পৃথক হয়ে গেছে।” আজাজেল-এর ভূমিকা পরিবর্তিত হয়ে ছায়ার ভিক্টিমের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী হয়ে ওঠে।
উদাহরণস্বরূপ, নিখুঁত নৈতিক কোড (perfectionist moral code) ভাঙার দায়ভার আক্রমণাত্মক স্কেইপগোটারদের (scapegoaters) দ্বারা ভিক্টিমের (victim) উপর চাপানো হতে পারে। এই স্কেইপগোটাররা (scapegoaters) প্রায়শই নিজেরাই আঘাতপ্রাপ্ত এবং নির্দয় সুপারইগো (superego) অভিযোগকারীর (accusers) মতো কাজ করেন, যাদের মানসিকতা ভঙ্গুর (brittle personas) এবং তারা নিজেদের ছায়াগুলিকে (shadows) চেতনার বাইরে সরিয়ে রাখেন। পরে এই ছায়াগুলোই ভিক্টিমের (victim) উপর প্রক্ষেপিত (projected) হয়। এর ফলে, ভিক্টিম (victim) অপরাধবোধের (unworthiness) গভীর যন্ত্রণায় নিমজ্জিত হয়ে চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেন, ছায়া (shadow) এবং অতিপ্রাকৃত অপরাধবোধের (transpersonal guilt) ভারে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন এবং আত্ম-সমঝোতার (self-understanding) যন্ত্রণা থেকে পালিয়ে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। চিকিৎসার (therapy) অংশ হিসেবে ভিক্টিমের (victim) আহত আত্মবিশ্বাস (ego) পুনর্গঠনে স্ব-রক্ষামূলক কৌশল (self-protective skills) শেখানো হতে পারে এবং তার অন্তর্নিহিত সততা (inner integrity) খুঁজে বের করার জন্য পথনির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে, যাতে ভিক্টিম (victim) নিজের সত্তার (own voice) সন্ধান পান।
প্রক্ষেপণ (Projection)
ইন্টারগ্রুপ সংঘাতের স্কেইপগোট তত্ত্ব (Scapegoat Theory of Intergroup Conflict)
ইন্টারগ্রুপ সংঘাতের স্কেইপগোট তত্ত্ব (Scapegoat Theory) ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে বিদ্বেষ (prejudice) ও সহিংসতা (violence) বৃদ্ধি পায়, যা সাধারণত বাইরের গোষ্ঠীগুলির (outgroups) বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৮৮২ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী সহিংসতার (racist violence) ঘটনাগুলি অর্থনৈতিক দুর্দশার (economic despair) সাথে সম্পর্কিত ছিল। বিশেষ করে, সেই সময়ের প্রধান পণ্য (principal product) তুলার দাম (cotton price) এবং শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের বিরুদ্ধে লিঞ্চিংয়ের (lynchings) সংখ্যা মধ্যে সম্পর্ক −০.৬৩ থেকে −০.৭২ পর্যন্ত ছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি (poor economic conditions) শ্বেতাঙ্গদের বাইরের গোষ্ঠীর (outgroup) বিরুদ্ধে তাদের হতাশা (frustrations) প্রকাশের জন্য প্ররোচিত করেছিল।
একটি গোষ্ঠী হিসেবে স্কেইপগোটিং (scapegoating) করার জন্য, অভ্যন্তরীণ সদস্যদের (ingroup members) প্রয়োজন হয় তাদের সমস্যার জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য (specific target) নির্বাচন করা, যাদের উপর তারা দোষ চাপাতে পারে।
ব্যবস্থাপনায় (management) স্কেইপগোটিং (scapegoating) হলো একটি প্রচলিত প্রথা যেখানে নিচু স্তরের কর্মচারীদের (lower staff employees) দোষারোপ করা হয় শীর্ষ নির্বাহীদের (senior executives) ভুলের জন্য। এটি প্রায়শই ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনায় (upper management) দায়িত্বশীলতার অভাবের (lack of accountability) কারণে ঘটে।
স্কেইপগোট প্রক্রিয়া (Scapegoat Mechanism) ও মিমেটিক থিওরি
সাহিত্য সমালোচক (literary critic) এবং দার্শনিক (philosopher) কেনেথ বার্ক (Kenneth Burke) প্রথমে স্কেইপগোট প্রক্রিয়া (scapegoat mechanism) পরিভাষাটি তৈরি করেন এবং তার বই Permanence and Change (১৯৩৫) এবং A Grammar of Motives (১৯৪৫)-এ এটি বর্ণনা করেন। এই কাজগুলি কিছু দার্শনিক নৃবিজ্ঞানীদের (philosophical anthropologists) প্রভাবিত করেছিল, যেমন আর্নেস্ট বেকার (Ernest Becker) এবং রেনে জিরার্দ (René Girard)।
রেনে জিরার্দের (René Girard) মিমেটিক থিওরি অফ ডিজায়ার বা আকাঙ্ক্ষার অনুকরণ তত্ত্ব (mimetic theory of desire) মানব আচরণ এবং সংস্কৃতির একটি গভীর ব্যাখ্যা, যা মিমেসিস (mimesis) ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত। মিমেসিস (mimesis) অর্থাৎ অনুকরণ হলো জিরার্দের মতে মানুষের আকাঙ্ক্ষার মূল ভিত্তি। জিরার্দের মতে, মানুষ সরাসরি কোনো কিছু আকাঙ্ক্ষা করে না, বরং অন্যের আকাঙ্ক্ষাকে অনুকরণ করে। এই ঘটনাটিকে তিনি “অনুকরণমূলক আকাঙ্ক্ষা” বা মিমেটিক ডিজায়ার (mimetic desire) বলে অভিহিত করেন এবং এটি তার তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করেন: “মানুষ এমন এক সত্তা যে জানে না কী আকাঙ্ক্ষা করবে, এবং সে তার সিদ্ধান্ত নিতে অন্যদের দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমরা অন্যদের আকাঙ্ক্ষাকে অনুকরণ করে তা আকাঙ্ক্ষা করি।”
মিমেটিক থিওরির দুটি প্রধান অংশ রয়েছে: আকাঙ্ক্ষা নিজেই এবং এর ফলে সৃষ্ট স্কেইপগোটিং (scapegoating)। আকাঙ্ক্ষা ত্রিকোণীয় প্রকৃতির (triangular nature), যেখানে তিনটি প্রধান উপাদান থাকে: আকাঙ্ক্ষাকারী (subject), আকাঙ্ক্ষার বস্তু (object), এবং মডেল বা প্রতিদ্বন্দ্বী (model or rival) । উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন ব্যক্তি এমন কিছু চায় যা তার বন্ধু চায়, তবে এই দু’জনের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়, এবং তারা একই বস্তু বা লক্ষ্যবস্তুর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। দুই বা ততোধিক পক্ষের মধ্যে একই বস্তুর বা লক্ষ্যবস্তুর জন্য ঘটে, তখন এটি এভাবে আকাঙ্ক্ষার একটি ত্রিকোণ (triangulation of desire) তৈরি করে। এই ত্রিকোণের ফলে, পক্ষগুলির মধ্যে সংঘাত (conflict) শুরু হয়, কারণ তারা সবাই একই জিনিসের জন্য প্রতিযোগিতা করে। এর ফলে, সমাজে সংঘাতের সৃষ্টি হয়, যা মিমেটিক সংক্রমণ (mimetic contagion) নামে পরিচিত। যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একই অবজেক্টের প্রতি আকাঙ্ক্ষা করে এবং সেই আকাঙ্ক্ষার ফলে সংঘর্ষ বা প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়, তখন সেই সংঘর্ষ সমগ্র সমাজ বা গোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে, আর ছড়িয়ে পড়ার অবস্থাটাই হলো এই মিমেটিক সংক্রমণ।
এই সংঘর্ষ এবং উত্তেজনা যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে তা আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে এবং সমাজের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে মিমেটিক সংক্রমণ এমন একটি অবস্থায় পৌঁছে যায় যেখানে সমাজ বিপদের মুখে পড়ে। যখন সমাজের মধ্যে এই উত্তেজনা বেড়ে যায় এবং তা সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন একটি সমষ্টিগত মানসিকতা গড়ে ওঠে যেখানে সবাই নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের প্রকৃত উৎসকে খুঁজতে চেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবে, প্রত্যেকের মধ্যে নিজস্ব আকাঙ্ক্ষার সংঘর্ষ থাকায়, এই সংঘর্ষের জন্য নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে দোষারোপ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে, সমাজের এককভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নির্বাচিত করা হয় যাকে সেই সংঘর্ষের মূল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়—এবং তাকে ‘স্কেইপগোট’ বা বলির পাঁঠা বানানো হয়। এভাবে এ ধরনের পরিস্থিতিতে, সমস্যার সমাধান হিসেবে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে বা দলকে দোষারোপ করার প্রক্রিয়া, অর্থাৎ স্কেইপগোট প্রক্রিয়া (scapegoat mechanism), সক্রিয় হয়ে ওঠে। এটি সেই সময় যখন কোন ব্যক্তি বা গ্রুপকে সমস্যার মূল কারণ (cause of the trouble) হিসেবে বেছে নেয়া হয় এবং তাকে বা তাদেরকে গোষ্ঠী থেকে বহিষ্কার (expelled) বা হত্যা (killed) করা হয়। এভাবে এদের স্কেইপগোট (scapegoat) করা হয়। সামাজিক শৃঙ্খলা (social order) পুনরুদ্ধার হয় কারণ মানুষ সন্তুষ্ট হয় যে তারা তাদের সমস্যার মূল কারণ দূর করেছে, এবং চক্রটি পুনরায় শুরু হয়।
এই স্কেইপগোটিংয়ের মাধ্যমে সমাজের অন্যান্য সদস্যরা তাদের নিজেদের মধ্যে থাকা হিংসা এবং সংঘর্ষকে সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দেয় এবং তাকে ত্যাগ বা বলি দিয়ে তাদের মধ্যে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করে। এটি একটি মানসিক এবং সামাজিক প্রক্রিয়া যেখানে একটি প্রতীকি বলির মাধ্যমে সংঘর্ষের সমাধান করা হয় এবং সমষ্টিগত শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তাহলে, কারও আকাঙ্ক্ষায় সংঘর্ষের কারণে অন্য কেউ স্কেইপগোটেড হবে, কারণ সমাজের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট উত্তেজনা এবং হিংসা থেকে মুক্তি পেতে একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দোষারোপ করে তাকে বলির পাঁঠা বানায়। এটি একটি প্রাচীন সামাজিক ব্যবস্থা যা মানব সভ্যতার শুরু থেকেই বিদ্যমান।
জিরার্দের মতে, স্কেইপগোটিং (scapegoating) একটি গোষ্ঠীর (group) জন্য মানসিক প্রশান্তি (psychological relief) হিসেবে কাজ করে। এই স্কেইপগোট প্রক্রিয়ার উদাহরণ হিসেবে তিনি নাসরতের যিশুর (Jesus of Nazareth) ঘটনাকে উল্লেখ করেন, যিনি খ্রিস্টধর্মের কেন্দ্রীয় চরিত্র (central figure in Christianity)। যিশুর স্কেইপগোটিং এবং অন্যান্য স্কেইপগোটিং এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো, যিশুর পুনরুত্থান (resurrection) তাঁকে নির্দোষ শিকার (innocent victim) হিসেবে প্রমাণিত করে, যা মানবজাতিকে (humanity) তাদের সহিংস প্রবণতাগুলি (violent tendencies) সম্পর্কে সচেতন করে এবং সেই প্রক্রিয়ার চক্রটি ভেঙে দেয়। এর ফলে, জিরার্দের কাজ ক্রিস্টাস ভিক্টর প্রায়শ্চিত্ত তত্ত্বের (Christus Victor atonement theory) পুনর্গঠন (reconstruction) হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
যদিও স্কেইপগোট মেকানিজম কার্যকরভাবে শান্তি পুনরুদ্ধার করতে পারে, এটি তখনই সম্ভব যখন স্কেইপগোটকে অপসারণের সমস্ত অংশগ্রহণকারীরা বিশ্বাস করে যে সে দোষী। তাকে হত্যা করার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে সে প্রতিশোধ নিতে পারবে না। একবার সে চলে গেলে, শান্তি দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়, যা তার “দোষ” নিশ্চিত করে। তবে, এই শান্তি সহিংসতা থেকে উদ্ভূত, এবং সহিংসতাকে সহিংসতার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার এই প্রক্রিয়া সভ্যতার শুরু থেকে চলে আসছে।
জিরার্দ বিশ্বাস করতেন যে আমরা সত্যিই এই অনুকরণমূলক আকাঙ্ক্ষা থেকে পালাতে পারি না, এবং তা থেকে পালানোর যে কোনো প্রচেষ্টা আপনাকে মিমেসিসের খেলার অন্য স্তরে নিয়ে যাবে। স্কেইপগোটিং এর সহিংসতা শেষ করতে একটি নতুন আকাঙ্ক্ষা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে, এই আকাঙ্ক্ষার মডেলকে অবশ্যই স্কেইপগোট করার প্রবণতার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।
তথ্যসূত্র –
Leave a Reply