আমেরিকান সাইকো (চলচ্চিত্র) ও পেট্রিক বেটম্যান

চলচ্চিত্রটির থিয়েট্রিকাল রিলিজ পোস্টার

(বোল্ড করা শব্দগুলোর ব্যাখ্যা টীকা অংশে আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে)

Table of Contents

আমেরিকান সাইকো (চলচ্চিত্র)

ভূমিকা

আমেরিকান সাইকো (American Psycho) হলো ২০০০ সালের একটি ব্যঙ্গাত্মক হরর চলচ্চিত্র, যার পরিচালনা করেন মেরি হারন (Mary Harron) এবং যিনি গুইনেভির টার্নার (Guinevere Turner) এর সাথে মিলে যৌথভাবে এর চিত্রনাট্যটাও রচনা করেন। ব্রেট ইস্টন এলিস (Bret Easton Ellis) এর ১৯৯১ সালের একই নামের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে ক্রিশ্চিয়ান বেল (Christian Bale) অভিনয় করেছেন প্যাট্রিক বেটম্যান (Patrick Bateman) চরিত্রে, যিনি নিউ ইয়র্ক সিটির একজন বিনিয়োগ ব্যাংকার বা ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হিসেবে দ্বৈত জীবন যাপন করেন, যেখানে তিনি একদিকে একজন সিরিয়াল কিলারও। চলচ্চিত্রটিতে উইলেম ড্যাফো (Willem Dafoe), জারেড লেটো (Jared Leto), জোশ লুকাস (Josh Lucas), ক্লোয়ি সেভিগনি (Chloë Sevigny), সামান্থা ম্যাথিস (Samantha Mathis), কারা সেমোর (Cara Seymour), জাস্টিন থেরো (Justin Theroux), এবং রিস উইদারস্পুন (Reese Witherspoon) সহায়ক ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রটি হরর এবং ব্ল্যাক কমেডি (black comedy)-কে মিশ্রিত করে ১৯৮০-এর দশকের ইয়াপি সংস্কৃতি এবং ভোক্তাবাদ বা কনজিউমারিজমকে ব্যঙ্গ করে, যা বেটম্যান চরিত্রের মাধ্যমে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

এলিস তার বিতর্কিত উপন্যাসটিকে চলচ্চিত্রে রূপান্তর করা অসম্ভব বলে বিবেচনা করেছিলেন, তবে প্রযোজক এডওয়ার্ড আর. প্রেসম্যান (Edward R. Pressman) এটি নির্মাণের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং ১৯৯২ সালে এর চলচ্চিত্র নির্মাণের অধিকার কিনে নেন। স্টুয়ার্ট গর্ডন (Stuart Gordon), ডেভিড ক্রোনেনবার্গ (David Cronenberg), এবং রব ওয়েইস (Rob Weiss) এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনার কথা ভেবেছিলেন, তবে হারন এবং টার্নার ১৯৯৬ সালে চিত্রনাট্য লেখার কাজ শুরু করেন। তারা একটি ১৯৮০-এর দশকের প্রেক্ষাপটের চলচ্চিত্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা উপন্যাসের ব্যঙ্গাত্মকতাকে জোর দেয়। প্রাক-প্রযোজনার সময়টি ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ছিল; হারন বেটম্যান চরিত্রে বেলকে বেছে নেন, তবে বিতরণকারী লায়ন্স গেট ফিল্মস (Lions Gate Films) এই ভূমিকায় লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (Leonardo DiCaprio)-কে চেয়েছিল, যার ফলে হারনকে বরখাস্ত করা হয় এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন অলিভার স্টোন (Oliver Stone)। পরে স্টোন এবং ডিক্যাপ্রিও সৃজনশীল মতপার্থক্যের কারণে প্রকল্প থেকে সরে যান, ফলে হারনকে পুনরায় নিয়োগ করা হয় এবং বেলকে কাস্ট করার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে টরন্টো এবং নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রধান ফটোগ্রাফি শুরু হয়।

আমেরিকান সাইকো ২১ জানুয়ারি ২০০০ সালে সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে (Sundance Film Festival) প্রিমিয়ার হয় এবং ১৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে থিয়েটারে মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক পর্যালোচনা লাভ করে, বিশেষ করে বেলের অভিনয় এবং চিত্রনাট্যের প্রশংসা করা হয়, এবং ৭ মিলিয়ন ডলারের বাজেটে ৩৪ মি।লিয়নেরও বেশি আয় করে। এটি পরবর্তীতে একটি কাল্ট ফলোয়িং (cult following) এবং সমসাময়িক মিম সংস্কৃতিতে (meme culture) শক্তিশালী উপস্থিতি অর্জন করে। একটি সরাসরি-ভিডিও সিক্যুয়াল, আমেরিকান সাইকো ২ (American Psycho 2), ২০০২ সালে মুক্তি পায়, যদিও এর সাথে মূল চলচ্চিত্রের সম্পর্ক সামান্যই।

কাহিনী

১৯৮৭ সালে, বিনিয়োগ ব্যাংকার প্যাট্রিক বেটম্যান (Patrick Bateman) তার বেশিরভাগ সময় জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় খাবার খেয়ে কাটান, নিজের বাগদত্তা ইভলিন উইলিয়ামস (Evelyn Williams) এবং তার ধনী সহযোগীদের সামনে নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য। যাদের অধিকাংশকেই তিনি ঘৃণা করেন। একটি ব্যবসায়িক বৈঠকে, বেটম্যান এবং তার সহযোগীরা তাদের ব্যবসায়িক কার্ডগুলি প্রদর্শন করেন এবং তাদের নকশা নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। তার সহকর্মী পল অ্যালেনের (Paul Allen) কার্ডের উৎকৃষ্টতায় ক্ষুব্ধ হয়ে, বেটম্যান রাতে একটি অলি গলিতে একজন গৃহহীন ব্যক্তি এবং তার কুকুরকে খুঁজে পেয়ে তাদের হত্যা করেন। অ্যালেন, যিনি বেটম্যানকে অন্য একজন সহকর্মী বলে ভুল করেন, ক্রিসমাস পার্টির পরে ডিনারের পরিকল্পনা করেন। বেটম্যান অ্যালেনের ধনী জীবনযাপন এবং ডরসিয়া নামে একটি অত্যন্ত বিশেষ রেস্তোরাঁয় রিজার্ভেশন পাওয়ার ক্ষমতা নিয়ে বিরক্ত হন, যেখানে বেটম্যান প্রবেশ করতে পারেন না। বেটম্যান অ্যালেনকে মদ্যপান করান, তাকে তার অ্যাপার্টমেন্টে প্রলুব্ধ করেন এবং তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেন। বেটম্যান লাশটি সরিয়ে ফেলেন এবং অ্যালেনের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে তার অ্যানসারিং মেশিনে একটি বার্তা রেকর্ড করেন, যাতে বলা হয় যে অ্যালেন লন্ডনে চলে গেছেন।

প্রাইভেট তদন্তকারী ডোনাল্ড কিমবল (Donald Kimball) অ্যালেনের নিখোঁজ হওয়া সম্পর্কে বেটম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং উল্লেখ করেন যে অ্যালেনকে লন্ডনে দেখা যেতে পারে। বেটম্যান দুজন যৌনকর্মী, ক্রিস্টি (Christie) এবং সাব্রিনাকে (Sabrina) তার অ্যাপার্টমেন্টে আমন্ত্রণ জানান, যেখানে তারা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়। তারপর তিনি তাদের নির্যাতন করেন, তাদের টাকা দেন, এবং তাদের চলে যেতে বলেন। কিছুক্ষণ পর, বেটম্যানের সহকর্মী লুইস কারুথার্স (Luis Carruthers) একটি নতুন ব্যবসায়িক কার্ড প্রকাশ করেন, তখন বেটম্যান তাকে একটি ব্যয়বহুল রেস্তোরাঁর বাথরুমে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করেন। কারুথার্স এই চেষ্টাকে একটি যৌন আগ্রহ হিসেবে ভুল বুঝে বেটম্যানের প্রতি তার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন, যেটা দেখে বেটম্যান ঘৃণায় পালিয়ে যান। কিমবল, যিনি এখন বেটম্যান সম্পর্কে সন্দেহপ্রবণ, দ্বিতীয়বারের মতো তার সাক্ষাৎকার নেন। পরে, বেটম্যান একজন মডেলকে হত্যা করেন এবং তার বিচ্ছিন্ন মাথাটি তার ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন। পরের দিন, বেটম্যান তার সচিব জিনকে (Jean) তার অ্যাপার্টমেন্টে আমন্ত্রণ জানান। বেটম্যান যখন জিনকে একটি নেল গান দিয়ে হত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন তিনি তার অ্যানসারিং মেশিনে ইভলিনের একটি বার্তা পান এবং থেমে যান।

বেটম্যান কিমবলের সাথে দুপুরের খাবার খান, যিনি প্রকাশ করেন যে বেটম্যানের একজন সহকর্মী দাবি করেছেন যে অ্যালেনের নিখোঁজ হওয়ার দিনে তিনি বেটম্যানের সাথে ডিনার করেছেন, যা বেটম্যানের অ্যালিবাইকে দৃঢ় করে। কিমবল মন্তব্য করেন যে অ্যালেনের কোনো বন্ধুর দ্বারা তাকে হত্যার ধারণাটি কোনো কারণ ছাড়াই বিশ্বাসযোগ্য নয়; উত্তরে বেটম্যান নার্ভাসভাবে হাসেন। বেটম্যান ক্রিস্টিকে অ্যালেনের অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যান, যেখানে তিনি তার পরিচিত এলিজাবেথকে (Elizabeth) ড্রাগ দেন এবং তার সাথে এবং ক্রিস্টির সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন। যখন বেটম্যান এলিজাবেথকে হত্যা করেন, ক্রিস্টি পালানোর চেষ্টা করেন এবং একটি এক্সিট খুঁজতে গিয়ে বেশ কয়েকটি লাশ আবিষ্কার করেন। বেটম্যান তাকে তাড়া করেন এবং একটি সিঁড়ি দিয়ে পালানোর সময় তার ওপর একটি চলমান চেইনসো ফেলে দেন। কিছুক্ষণ পর, বেটম্যান ইভলিনের সাথে তার বাগদান ভেঙে দেন।

বেটম্যান যখন একটি এটিএম ব্যবহার করছেন, তখন তিনি একটি বেড়াল দেখতে পান। এটিএমটি তারপর “Feed Me A Stray Cat” লেখাটি প্রদর্শন করে। বেটম্যান বেড়ালটিকে গুলি করার প্রস্তুতি নেন, কিন্তু হঠাৎ একটি নারী তাকে বাধা দেন; পরিবর্তে তিনি নারীটিকে গুলি করেন। পুলিশ তাকে তাড়া শুরু করে, কিন্তু বেটম্যান একজন অফিসারকে গুলি করেন এবং একটি প্যাট্রোল কার উড়িয়ে দেন, অন্য পুলিশদের হত্যা করেন। বেটম্যান একজন নিরাপত্তারক্ষী এবং একজন ঝাড়ুদারকে হত্যা করেন এবং তার অফিসে লুকিয়ে পড়েন। তিনি তার আইনজীবী, হ্যারল্ড কার্নসকে (Harold Carnes) ফোন করেন এবং আতঙ্কিতভাবে একটি ভয়েসমেইল রেখে যান যাতে তিনি তার সমস্ত হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরের দিন সকালে, বেটম্যান অ্যালেনের অ্যাপার্টমেন্টে যান সেটি পরিষ্কার করতে, কিন্তু দেখেন এটি খালি এবং বিক্রির জন্য দেয়া হয়েছে। একজন রিয়েলটর বেটম্যানকে সংকেতপূর্ণভাবে জানান যে অ্যাপার্টমেন্টটি অ্যালেনের নয় এবং তাকে চলে যেতে এবং ফিরে না আসার জন্য অনুরোধ করেন।

হিস্টেরিয়ার (hysteria) মধ্যে, বেটম্যান জিনকে ফোন করেন এবং তারপর তার সহকর্মীদের সাথে মধ্যাহ্নভোজের জন্য দেখা করতে যান। এদিকে, জিন বেটম্যানের অফিসে একটি জার্নালে হত্যা এবং বিকৃতির গ্রাফিক চিত্রাবলী খুঁজে পান। বেটম্যান কার্নসকে দেখেন এবং তার ভয়েসমেইল সম্পর্কে উল্লেখ করেন। কার্নস বেটম্যানকে অন্য একজন ব্যক্তি বলে ভুল করেন এবং তার স্বীকারোক্তিটিকে একটি রসিকতা হিসেবে উড়িয়ে দেন। বেটম্যান স্পষ্ট করেন যে তিনি কে এবং আবার হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন, কিন্তু কার্নস বলেন যে তিনি সম্প্রতি লন্ডনে অ্যালেনের সাথে ডিনার করেছেন, যা বেটম্যানের দাবিগুলোকে অসম্ভব করে তোলে। ক্লান্ত এবং অনিশ্চিত বেটম্যান তার বন্ধুদের কাছে ফিরে আসেন। তারা ডিনারের রিজার্ভেশন নিয়ে আলোচনা করেন এবং রোনাল্ড রিগান (Ronald Reagan) একজন নিরীহ বৃদ্ধ মানুষ নাকি একজন লুকানো সাইকোপ্যাথ সে সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করেন। বেটম্যান, তার অপরাধগুলি বাস্তব ছিল নাকি কল্পনা, তা নিয়ে অনিশ্চিত, বুঝতে পারেন যে তিনি যে শাস্তি চান তা কখনো পাবেন না। বেটম্যান বর্ণনা করেন যে তিনি ক্রমাগত ব্যথায় আছেন এটার জন্য যে, তিনি চান তার ব্যথা অন্যদের ওপর প্রযুক্ত হোক, এবং তার স্বীকারোক্তি অর্থহীন হয়ে গেছে।

ক্রিটিকদের প্রতিক্রিয়া

আমেরিকান সাইকো (American Psycho) প্রথমে সানড্যান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়, যেখানে এটি দর্শক এবং সমালোচকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে; কেউ কেউ এর লেখনী এবং ক্রিশ্চিয়ান বেলের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ এর সহিংস প্রকৃতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। থিয়েটারিকভাবে মুক্তির পর, চলচ্চিত্রটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনায় ইতিবাচক পর্যালোচনা পায়, যার মধ্যে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস একে “একটি কঠোর এবং নির্মম হরর কমেডি ক্লাসিক” (“mean and lean horror comedy classic”) বলে আখ্যায়িত করে। রটেন টমেটোসে (Rotten Tomatoes) চলচ্চিত্রটির ১৫৪টি রিভিউয়ের উপর ভিত্তি করে ৬৮% অনুমোদন রেটিং রয়েছে, এবং গড় রেটিং ৬.২/১০। ওয়েবসাইটটির সমালোচকদের সম্মতিতে বলা হয়েছে: “যদিও আমেরিকান সাইকো ব্রেট ইস্টন এলিসের উপন্যাসের তীব্র ব্যঙ্গাত্মকতা থেকে কিছুটা কম পড়েছে, এটি এখনও তার নিজস্ব ভীতিকর এবং রসিকতার মিশ্রণ খুঁজে পেয়েছে, আংশিকভাবে ক্রিশ্চিয়ান বেলের উপযুক্ত ভয়ঙ্কর অভিনয়ের জন্য।” মেটাক্রিটিক (Metacritic) ৩৫ জন সমালোচকের উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রটিকে ১০০ এর মধ্যে ৬৪ স্কোর দিয়েছে, যা “সাধারণত অনুকূল পর্যালোচনা” নির্দেশ করে। সিনেমাস্কোর (CinemaScore) দ্বারা সমীক্ষা করা দর্শকরা চলচ্চিত্রটিকে A+ থেকে F স্কেলে গড়ে “D” গ্রেড দিয়েছেন।

রজার এবার্ট (Roger Ebert) চলচ্চিত্রটিকে চারটির মধ্যে তিনটি তারকা দিয়েছেন, এবং হারন (Harron) এবং টার্নার (Turner) এর নারীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছেন, কারণ তারা বেটম্যানকে (Bateman) মনস্তাত্ত্বিকভাবে ব্যতিক্রমী হিসেবে নয় বরং একটি নির্দিষ্ট ধরনের স্বার্থপর, অহংকারী পুরুষের আচরণ হিসেবে চিত্রিত করেছেন যাকে চরম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার্ট বেলকে “নায়কোচিত” বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ তিনি চরিত্রটিকে পুরোপুরি বিরক্তিকর অবস্থায় আনন্দের সাথে এগিয়ে যেতে দেন, কোনোরকম আত্মরক্ষার প্রবৃত্তি ছাড়াই; এখানে আত্মরক্ষার কোনো প্রবৃত্তি নেই, যা একজন ভালো অভিনেতার একটি চিহ্ন। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের (Los Angeles Times) জন্য তার পর্যালোচনায় কেনেথ তুরান (Kenneth Turan) লিখেছেন: “কঠিন সত্যটি হলো যে দর্শকরা যত বেশি নিজেদের প্রধান চরিত্র বেটম্যানের মতো মডেল করতে পারবেন, তত বেশি তারা পর্দায় প্রদর্শিত সহিংসতার মানবিক বাস্তবতা থেকে নিজেদের দূরে রাখতে সক্ষম হবেন এবং এটি সব কিছু ঠান্ডা রসিকতা হিসেবে গ্রহণ করবেন, ততই তারা এই নিষ্ফল, অর্থহীন কাজটি উপভোগ করতে পারবেন।” নিউজউইক ম্যাগাজিনের (Newsweek) ডেভিড অ্যানসেন (David Ansen) লিখেছেন: “কিন্তু ‘৮০-এর দশকের অর্থনৈতিক বস্তুবাদ (materialism), নারসিসিজম (narcissism) এবং লোভের সংস্কৃতির বিশ্লেষণের এক ঘণ্টা পর, চলচ্চিত্রটি নিজেকে পুনরাবৃত্তি করতে শুরু করে। এটি আরও ভয়ঙ্কর এবং অতিপ্রাকৃত হয়ে ওঠে, তবে আরও আকর্ষণীয় নয়।” দ্য ভিলেজ ভয়েস (The Village Voice) এর জন্য তার পর্যালোচনায়, জে. হোবারম্যান (J. Hoberman) লিখেছেন: “যদি কিছু হয়, তবে বেল অতিরিক্ত সচেতন। তিনি তার অভিনয়ের চারপাশে হারন যে উদ্ধৃতি চিহ্নগুলি রেখেছেন, তার মধ্যে কাজ করার জন্য আগ্রহী।”

রোলিং স্টোনের (Rolling Stone) পিটার ট্র্যাভার্স (Peter Travers) লিখেছেন: “যখনই হারন চকচকে পৃষ্ঠের নিচে খনন করে এমন অনুভূতিগুলি খুঁজে পান যা এখনও অচেতন হয়নি, তখন ভীতিকর এবং হাস্যকর আমেরিকান সাইকো এখনও একটি কাঁচা স্নায়ুকে স্পর্শ করতে পারে।” স্লেট ম্যাগাজিনে (Slate magazine) কিছুটা ইতিবাচক পর্যালোচনায়, ডেভিড এডেলস্টেইন (David Edelstein) উপন্যাসের তুলনায় চলচ্চিত্রে সহিংসতা এবং যৌন সামগ্রীর হ্রাসের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, যে মুহূর্তে বেটম্যান তার সচিবকে বাঁচান, তখন “এই একমাত্রিক চলচ্চিত্রটি একটি ফুলের মতো প্রস্ফুটিত হয়।” ওয়েন গ্লেইবারম্যান (Owen Gleiberman) এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি (Entertainment Weekly) এর জন্য চলচ্চিত্রটিকে “A−” রেটিং দিয়ে লিখেছেন: “উপন্যাসটিকে ‘৮০-এর দশকের নস্টালজিয়ার একটি চরম ব্যতিক্রমী অনুশীলনের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে, হারন এই চলমান বছরগুলিকে কেবল মস্তিষ্কপ্রক্ষালনকারী-ভোক্তা/ফ্যাশন/ইমেজ সংস্কৃতির জন্য একটি টেমপ্লেটে রূপান্তর করেছেন যা এগুলি থেকে উদ্ভূত হয়েছে। তিনি এমন একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন যা সত্যিই আজকের একটি উপকথা।” টাইম ম্যাগাজিনের (Time magazine) রিচার্ড করলিস (Richard Corliss) লিখেছেন: “হারন এবং সহ-চিত্রনাট্যকার গুইনেভির টার্নার বইটি বুঝতে পারেন এবং তারা চান যে তাদের চলচ্চিত্রটি শিষ্টাচারের একটি সময়কালীন কমেডি হিসেবে বোঝা হোক।” A.O. স্কট (A.O. Scott) (দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস) চলচ্চিত্রটির প্রশংসাও করেছেন।

ব্লাডি ডিসগাস্টিং (Bloody Disgusting) তাদের “শতাব্দীর সেরা ২০টি হরর চলচ্চিত্রের তালিকা”-তে চলচ্চিত্রটিকে ১৯ নম্বরে স্থান দিয়েছে, যেখানে নিবন্ধটি প্রশংসা করেছে “ক্রিশ্চিয়ান বেলের ভীতিকর/অন্ধকারভাবে হাস্যকর পালা সিরিয়াল কিলার/ম্যানহাটান ব্যবসায়ী প্যাট্রিক বেটম্যান চরিত্রে, একটি ভূমিকা যা পেছনে তাকালে অন্য কোনো অভিনেতা দ্বারা অভিনয় করা সম্ভব হতো না। … এর সেরা সময়ে, চলচ্চিত্রটি আমাদের নিজস্ব আত্মমুগ্ধতা এবং যে অগভীর আমেরিকান সংস্কৃতি থেকে এটি উদ্ভূত হয়েছিল তাকে তীক্ষ্ণ কার্যকারিতার সাথে প্রতিফলিত করে। এর বেশিরভাগ কৃতিত্ব পরিচালক মেরি হারনকে দেওয়া যেতে পারে, যার অস্বাভাবিক প্রবণতা এলিসের অনন্য শৈলীর একটি ভালো পরিপূরক।”

মূল লেখক এলিস (Ellis) বলেছেন, “আমেরিকান সাইকো এমন একটি বই যা আমি মনে করিনি চলচ্চিত্রে রূপান্তর করা প্রয়োজন,” কারণ “চলচ্চিত্র মাধ্যম উত্তর চায়,” যা বইটিকে “অসীমভাবে কম আকর্ষণীয় করে তুলবে।” তিনি আরও বলেন যে, বইটি ঘটনাগুলিতে অস্পষ্টতা যোগ করার এবং বেটম্যানের বর্ণনাকারী হিসেবে নির্ভরযোগ্যতা আনার চেষ্টা করেছিল, চলচ্চিত্রটি তাদের সম্পূর্ণ আক্ষরিক করে তুলেছিল এবং শেষে বিষয়টি বিভ্রান্ত করেছে। ২০১৪ সালে মার্ক মারনের (Marc Maron) সাথে WTF পডকাস্টে উপস্থিতির সময়, এলিস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে চলচ্চিত্রটির প্রতি তার অনুভূতি নেতিবাচকের তুলনায় অধিকতর মিশ্রিত। তিনি তার মতামত পুনর্ব্যক্ত করে বলেন যে, একজন অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী বা আনরিলায়েবল ন্যারেটর (Unreliable narrator) হিসেবে বেটম্যানের ধারণাটি বই-এর পৃষ্ঠা থেকে পর্দায় সম্পূর্ণ সফলভাবে রূপান্তরিত হয়নি, এবং তিনি যোগ করেন যে বেটম্যানের বর্ণনা এতটাই অনির্ভরযোগ্য ছিল যে, এমনকি তিনি নিজেও, বইয়ের লেখক হিসেবে, জানতেন না বেটম্যান সত্যি ঘটনা বর্ণনা করছেন নাকি মিথ্যা বলছেন বা কল্পনা করছেন। এলিস এটির প্রশংসা করেছেন যে চলচ্চিত্রটি সেইসব দর্শকদের জন্য রসিকতাকে পরিষ্কার করেছে যারা উপন্যাসের সহিংসতাকে সুস্পষ্ট নারীবিদ্বেষ (misogyny) হিসেবে ভুল বুঝেছিল, যেটাকে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরঞ্জিত ব্যঙ্গাত্মক হিসেবে চেয়েছিলেন, এবং তিনি এটা পছন্দ করেছেন যে, এটি তার উপন্যাসকে “দ্বিতীয় জীবন” দিয়েছে নতুন পাঠকদের কাছে পরিচয় করানোর মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত, এলিস বলেছেন “চলচ্চিত্রটি ঠিকঠাক ছিল, চলচ্চিত্রটি ঠিকঠাক ছিল। আমি শুধু মনে করিনি যে, এটি তৈরি করা প্রয়োজন ছিল।”

২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে, চলচ্চিত্রটি একটি উল্লেখযোগ্য কাল্ট অনুসারী (cult following) অর্জন করেছে, যা ২০১০-এর দশকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বৃদ্ধি পেয়েছে।

উত্তরাধিকার

সিক্যুয়েল

একটি সরাসরি-ভিডিও সিক্যুয়েল, American Psycho 2 ছিল মর্গান জে. ফ্রিম্যান (Morgan J. Freeman) পরিচালিত এবং মিলা কুনিস (Mila Kunis) অভিনীত, যা ২০০২ সালে মুক্তি পায়। সিক্যুয়েলটির মূল চলচ্চিত্রের সাথে একমাত্র সংযোগ হলো প্যাট্রিক বেটম্যানের (Patrick Bateman) মৃত্যু, যা একটি ফ্ল্যাশব্যাকে সংক্ষিপ্তভাবে দেখানো হয় (মাইকেল ক্রেমকো (Michael Kremko) দ্বারা অভিনীত, যিনি একটি মুখোশ পরেছিলেন)। চলচ্চিত্রটি American Psycho উপন্যাসের লেখক ব্রেট ইস্টন এলিস (Bret Easton Ellis) দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। ২০০৫ সালে, কুনিস চলচ্চিত্রটি নিয়ে লজ্জা প্রকাশ করেন এবং সিক্যুয়েলের ধারণার বিরুদ্ধে কথা বলেন।

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

ফিনিশ মেলোডিক ডেথ মেটাল ব্যান্ড চিলড্রেন অফ বডম (Children of Bodom) তাদের ২০০৩ সালের অ্যালবাম Hate Crew Deathroll এর দুটি গানের মধ্যে একটি সংযোগ হিসেবে চলচ্চিত্রের শেষের মনোলোগ “My pain is constant and sharp and I do not hope for a better world for anyone” ব্যবহার করেছে।

চলচ্চিত্রটির প্রভাব কেনি ওয়েস্টের (Kanye West) মিউজিক ভিডিও “Love Lockdown” এবং মেরুন ফাইভ-এর (Maroon 5) মিউজিক ভিডিও “Animals” এ দেখা যায়।

২০১৩ সালে, এফএক্স (FX) এবং লায়ন্সগেট (Lionsgate) American Psycho চলচ্চিত্রের একটি টেলিভিশন সিরিজ বিকাশ করছিল, যা চলচ্চিত্রটির সিক্যুয়েল হিসেবে কাজ করবে। এটি বর্তমান সময়ে স্থাপিত হওয়ার কথা ছিল, যেখানে প্যাট্রিক বেটম্যান তার ৫০-এর দশকে, একজন শিক্ষানবিসকে (Andrew Low) তার মতো করে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। ২০২৪ সালের হিসাবে, এটি সম্ভবত বাতিল হয়ে গেছে বা উন্নয়নমূলক সমস্যার মধ্যে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চরিত্র বেটম্যান ভুলবশত এডমুন্ড কেম্পার (Edmund Kemper) এর একটি উদ্ধৃতি এড গেইনের (Ed Gein) কাছে অর্পণ করে, যা পরে অন্যদের দ্বারা এভাবে ভুল বোঝা হয়েছে; বেটম্যান বলে: “তুমি জানো এড গেইন নারীদের সম্পর্কে কী বলেছিল? … তিনি বলেছিলেন ‘যখন আমি একটি সুন্দরী মেয়েকে রাস্তায় হাঁটতে দেখি, আমি দুটি জিনিস ভাবি। আমার এক অংশ চায় তাকে বাইরে নিয়ে যেতে, তার সাথে কথা বলতে, খুব ভালো এবং মিষ্টি হতে এবং তাকে সঠিকভাবে ট্রিট করতে … [অন্য অংশটি কল্পনা করে] তার মাথা একটি লাঠিতে কেমন দেখাবে’।”

ফানি অর ডাই (Funny or Die) “Hip to be Square” দৃশ্যটি হিউ লুইস (Huey Lewis)-কে বেটম্যানের চরিত্রে এবং “উইয়ার্ড আল” ইয়ানকোভিচকে (Weird Al Yankovic) অ্যালেনের চরিত্রে নিয়ে পুনরায় তৈরি করে। এই দৃশ্যে, লুইস চলচ্চিত্র American Psycho এর শিল্পমূল্য নিয়ে আলোচনা করেন এবং প্রকৃত দৃশ্যটি দেখান। এটি ইয়ানকোভিচকে হত্যা করে শেষ হয়, লুইস বলে “Try parodying one of my songs now, you stupid bastard!” তারপর ভিডিওটি “I Want a New Duck” গানটি বাজায়, যা ইয়ানকোভিচের হিউ লুইস অ্যান্ড দ্য নিউজ (Huey Lewis and the News) এর গান “I Want a New Drug” এর প্যারোডি।

আমেরিকান মেটালকোর ব্যান্ড আইস নাইন কিলস (Ice Nine Kills) তাদের ২০২১ সালের অ্যালবাম The Silver Scream 2: Welcome to Horrorwood এর জন্য চলচ্চিত্রের উপর ভিত্তি করে “Hip to Be Scared” গানটি লিখেছে এবং এতে ফিচার করে পাপা রোচ (Papa Roach) এর ভোকালিস্ট জ্যাকোবি শাডিক্স (Jacoby Shaddix)।

চলচ্চিত্রটি প্রায়ই ইন্টারনেট মিমের (memes) বিষয় হয়ে থাকে এবং কেউ কেউ বলেছেন যে এর থিম এবং ব্যঙ্গাত্মক প্রকৃতির কারণে এটি প্রাসঙ্গিক। অন্যদিকে, প্যাট্রিক বেটম্যান চরিত্রটি “সিগমা মেল” (sigma male) এবং “হাসল কালচার” (hustle culture) এর ক্যাপিটালিস্ট আদর্শগুলির প্রতি আকৃষ্ট পুরুষদের মধ্যে আন্তরিক প্রশংসা অর্জন করেছে, যদিও চলচ্চিত্রটি মূলত পুঁজিবাদ এবং সমাজে পুরুষদের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে।

প্যাট্রিক বেটম্যান

ভূমিকা

প্যাট্রিক বেটম্যান চরিত্রে ক্রিশ্চিয়ান বেল (২০০০)

প্যাট্রিক বেটম্যান (Patrick Bateman) হলো ব্রেট ইস্টন এলিস (Bret Easton Ellis) দ্বারা সৃষ্ট একটি চরিত্র। তিনি এলিসের ১৯৯১ সালের উপন্যাস American Psycho এর ভিলেন প্রোটাগনিস্ট এবং অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হিসেবে পরিচিত, এবং ২০০০ সালের একই নামের ফিল্ম এডাপ্টেশনে ক্রিশ্চিয়ান বেল (Christian Bale) এই চরিত্রে অভিনয় করেন। বেটম্যান একজন ধনী এবং অর্থনৈতিক বস্তুবাদী ইয়াপি (yuppie) এবং ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগ ব্যাংকার, যিনি গোপনে একজন সিরিয়াল কিলার হিসেবে জীবনযাপন করেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি এলিসের অন্যান্য উপন্যাস এবং তাদের চলচ্চিত্র ও নাট্য অভিযোজনেও সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থিত হয়েছেন।

উপন্যাস প্রকাশের পর বেটম্যানের প্রতি প্রাথমিকভাবে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, তা পরে জেন জি (Gen Z) প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। তরুণ দর্শকদের মধ্যে চলচ্চিত্রটির কাল্ট অনুসারী (cult following) বেটম্যানকে একটি সাংস্কৃতিক প্রতীকে বা কালচারাল আইকনে (Cultural icon) পরিণত করেছে। তিনি সেই চরিত্র হিসেবে দেখা হয়েছেন যিনি সিগমা মেল (sigma male) সংস্কৃতির উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইন্টারনেট সংস্কৃতি (Internet culture) এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের উত্থান বেটম্যানের চরিত্রকে মিম সংস্কৃতির (meme culture) ক্ষেত্রে নিয়ে গেছে। বেটম্যানের আইকনিক উক্তি, মুখের অভিব্যক্তি এবং স্মরণীয় দৃশ্যগুলি বিভিন্ন অনলাইন কমিউনিটিতে মিম আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, যা তার সাংস্কৃতিক গুরুত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে।

জীবনী এবং প্রোফাইল

American Psycho এর শুরুতে, বেটম্যান একজন ২৭ বছর বয়সী সফল বিশেষজ্ঞ, যিনি মিথ্যা ওয়াল স্ট্রিট বিনিয়োগ ফার্ম পিয়ার্স অ্যান্ড পিয়ার্স (Pierce & Pierce) এ মর্জার এবং অধিগ্রহণে (mergers and acquisitions) কাজ করেন (এটি The Bonfire of the Vanities উপন্যাসের শেরম্যান ম্যাককয়ের ফার্মও)। তিনি ম্যানহাটনের আপার ওয়েস্ট সাইডে, আমেরিকান গার্ডেনস বিল্ডিংয়ের ১১ তলায়, ৫৫ ওয়েস্ট ৮১স্ট স্ট্রিটে থাকেন, যেখানে তিনি অভিনেতা টম ক্রুজের (Tom Cruise) প্রতিবেশী। তার গোপন জীবনে, বেটম্যান একজন সিরিয়াল কিলার, যিনি সহকর্মী, গৃহহীন ব্যক্তি এবং যৌনকর্মীদের হত্যা করেন। উপন্যাসে তার অপরাধগুলোর মধ্যে ধর্ষণ, নির্যাতন, নেক্রোফিলিয়া, এবং ক্যানিবালিজমের মতো ঘৃণ্য কাজ অন্তর্ভুক্ত, গ্রাফিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

বেটম্যান ২৩ অক্টোবর ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ধনী পরিবার থেকে আসেন। তার বাবা-মায়ের একটি বাড়ি রয়েছে লং আইল্যান্ডে, এবং তিনি নিউপোর্টে একটি সামার হাউসের কথা উল্লেখ করেছেন। তার বাবা-মা কিছুদিন আগে তালাকপ্রাপ্ত হন, এবং তার মা অসুস্থ হয়ে এখন একটি স্যানাটোরিয়ামে থাকেন। তার বাবা, যিনি এলিসের পূর্ববর্তী উপন্যাস The Rules of Attraction এ প্রথম উপস্থিত হন, কানেকটিকাটে একটি এস্টেটে বড় হয়েছেন এবং এখন ম্যানহাটনের কার্লাইল হোটেলে একটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক। তাকে মৃত বলে মনে করা হয়, কারণ উপন্যাসে তাকে শুধুমাত্র অতীত কালের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে মেরি হারনের ২০০০ সালের অভিযোজনে, উল্লেখ করা হয়েছে যে বেটম্যানের বাবা “প্রায় সংস্থাটি মালিকানাধীন”, যেখানে বেটম্যান কাজ করেন, যা বোঝায় যে বেটম্যানের বাবা এখনও জীবিত। বেটম্যানের ছোট ভাই শন (Sean) ক্যামডেন কলেজে পড়াশোনা করে এবং The Rules of Attraction এর একজন প্রধান চরিত্র, যেখানে প্যাট্রিক বেটম্যান প্রথম পরিচয় করানো হয়। বেটম্যান প্রস্তুতি বিদ্যালয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য ফিলিপস এক্সেটার একাডেমিতে (Phillips Exeter Academy) পড়াশোনা করেছেন। তিনি হার্ভার্ড কলেজ (Harvard College) এবং হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল (Harvard Business School) থেকে স্নাতক হন এবং তারপর নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলে আসেন।

উপন্যাসের শেষের দিকে, তিনি বিশ্বাস করেন যে তিনি তার সহকর্মী পল অ্যালেন (পল ওয়েন উপন্যাসে) হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হতে চলেছেন এবং তার আইনজীবীর অ্যানসারিং মেশিনে তার সকল অপরাধ স্বীকার করে একটি বার্তা রেখে যান। তবে, যখন তিনি একটি পার্টিতে তার আইনজীবীর সাথে দেখা করেন, তখন সেই ব্যক্তি তাকে অন্য কেউ হিসেবে ভুল করেন এবং তাকে বলেন যে বার্তাটি একটি রসিকতা ছিল, কারণ তিনি কয়েকদিন আগেই অ্যালেনের সাথে দেখা করেছিলেন। বেটম্যান বুঝতে পারেন যে তিনি যে শাস্তি এবং খ্যাতি চান তা কখনো তার নাগালের মধ্যে আসবে না, এবং তিনি অর্থহীন জীবনে আটকে আছেন: “This is not an exit” (এটি কোনো প্রস্থান নয়)।

ব্যক্তিত্ব

এলিসের লেখায়, প্যাট্রিক বেটম্যান (Patrick Bateman) ইয়াপি (yuppie) লোভের চূড়ান্ত রূপ; তিনি ধনী, আত্মকেন্দ্রিক, এবং যৌনতা, মাদকদ্রব্য, এবং প্রদর্শনমূলক ভোক্তাবাদের প্রতি আসক্ত। তার সমস্ত বন্ধুদের একই রকম দেখতে লাগে, এতটাই যে তিনি প্রায়শই একে অন্যের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। তার বন্ধুরাও প্রায়শই তাকে অন্য কারো সাথে গুলিয়ে ফেলে। যদিও বেটম্যান তার ধনী জীবনধারার প্রায় প্রতিটি বৈশিষ্ট্য, যেমন তার ডিজাইনার পোশাক, ওয়ার্কআউট রুটিন, ব্যবসায়িক কার্ড, মদ্যপ পানীয়, জটিল উচ্চ-মানের স্টেরিও এবং হোম থিয়েটার সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে অত্যন্ত যত্নশীলভাবে বিশদ বর্ণনা করতে মেতে থাকেন, তিনি তার নিজের বন্ধুদের, সহকর্মীদের, বা পরিচিতদের চিনতে পারেন না।

বেটম্যান একজন সমানভাবে ধনী এবং অগভীর নারী বা শ্যালো উইম্যান ইভলিন উইলিয়ামসের (Evelyn Williams) সাথে বাগদত্তা এবং তার একজন উপপত্নী রয়েছে, যার নাম কোর্টনি লরেন্স (Courtney Lawrence), যিনি লুইস কারুথার্স (Luis Carruthers) এর বান্ধবী। লুইস কারুথার্স একজন গোপন সমকামী বা ক্লোজেটেড হোমোসেক্সুয়াল, যাকে বেটম্যান ঘৃণা করেন, এবং তিনি নিয়মিত যৌনকর্মী এবং ক্লাবে দেখা হওয়া নারীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন, যাদের মধ্যে অনেকেই শেষ পর্যন্ত তার শিকার হয়। তার জীবনে একমাত্র নারী (এবং সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি) যার প্রতি তিনি কোনো ধরনের অনুভূতি পোষণ করেন, তিনি হলেন তার সচিব, জিন (Jean)। তিনি মনে করেন যে জিন তার জীবনে একমাত্র ব্যক্তি যিনি সম্পূর্ণভাবে অগভীর নন, তাই তিনি তাকে প্রলুব্ধ করতে বা হত্যা করতে পারেন না। তিনি তাকে নৈমিত্তিকভাবে “Jean, my secretary who is in love with me” বলে স্বীকার করেন এবং বর্ণনায় তাকে এমন কেউ হিসেবে পরিচয় করান যার সাথে তিনি “কোনো একদিন হয়তো বিয়ে করতে পারেন।”

ঐশ্বর্য এবং উচ্চ সামাজিক মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও, বেটম্যান ক্রমাগত উদ্বিগ্নতা এবং নিম্ন-আত্মমর্যাদার অনুভূতিতে ভুগছেন। তিনি তার অনেক শিকারকে হত্যা করেন কারণ তারা তাকে অপ্রতুল মনে করে, সাধারণত তাদের তার চেয়ে ভালো রুচি থাকার কারণে। তাকে অন্যদের দ্বারা ঘৃণা করা হয়। তার বন্ধুরা তাকে “the boy next door” বলে উপহাস করে, তার নিজের আইনজীবী তাকে “bloody ass-kisser… a brown-nosing goody-goody” বলে উল্লেখ করেন, এবং তাকে প্রায়ই তার সামাজিক বৃত্তের বাইরের লোকেরা “yuppie trash” বলে খারিজ করে দেন। বেটম্যান প্রায়ই তার নিজের মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং তার মাঝে মাঝে সাইকোসিসের (Psychosis) আক্রমণ হয়, যার সময় তিনি হেলুসিনেশনে (Hallucination) ভোগেন। এটি পাঠকদের জন্য খোলা রাখা হয়েছে যে বেটম্যান আসলে যেসব অপরাধের বর্ণনা দেন তা তিনি করেন কিনা, নাকি তিনি কেবল তা কল্পনা করছেন; অতএব, তিনি একজন অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী বা আনরিলায়েবল ন্যারেটর

গল্পের চূড়ান্ত পর্যায় বা ক্লাইম্যাক্সে, বেটম্যান তার আইনজীবীকে ফোন করেন এবং তার সমস্ত অপরাধ স্বীকার করে একটি দীর্ঘ, বিশদ বার্তা রেখে যান। পরে, তিনি তার আইনজীবীর সাথে দেখা করেন, যিনি তাকে অন্য কারো সাথে গুলিয়ে ফেলেন এবং স্বীকারোক্তিকে একটি রসিকতা হিসেবে খারিজ করেন, যখন তিনি দাবি করেন যে তিনি বেটম্যানের একজন শিকারকে হত্যার পর কয়েক দিন আগে ডিনারে নিয়ে গেছেন, যা বেটম্যানের কর্মকাণ্ডের সম্ভাব্য বাস্তবতাকে দর্শকদের ব্যাখ্যার জন্য খোলা রাখে।

যদিও বেটম্যান প্রায়ই দাবি করেন যে তিনি আবেগবিহীন, তিনি একই সাথে অত্যন্ত রাগ, আতঙ্ক বা শোকের মুহূর্তগুলি অনুভব করেন—”কান্নার প্রান্তে”—প্রায়শই তুচ্ছ অসুবিধার কারণে যেমন ভিডিও টেপগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা মনে রাখা বা ডিনারের রিজার্ভেশন পাওয়ার চেষ্টা করা। একটি শিকারকে টুকরো টুকরো করার মাঝখানে, তিনি ভেঙে পড়েন এবং কাঁদতে কাঁদতে বলেন যে তিনি “কেবল ভালোবাসা পেতে চান।” তিনি এই আবেগগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সাইকোট্রপিক্স, যেমন জেনেক্স (Xanax) গ্রহণ করেন। তিনি প্রকাশ্যে সহনশীলতা, সমতা, এবং “প্রথাগত নৈতিক মূল্যবোধ” এর দর্শন প্রচার করেন কারণ তিনি মনে করেন এটি তাকে আরও পছন্দনীয় করবে, তবে তিনি প্রকৃতপক্ষে প্রচণ্ড বর্ণবাদী, সমকামীবিদ্বেষী, এবং ইহুদীবিদ্বেষী

বেটম্যান তার উদ্বেগের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে অতি আত্মপ্রেম এবং ব্যক্তিগত সাজসজ্জার প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেন। তিনি সর্বাধিক ফ্যাশনেবল, ব্যয়বহুল পোশাক এবং আনুষাঙ্গিক কিনে থাকেন, যার মধ্যে রয়েছে সালভাতোরে ফেরাগামো (Salvatore Ferragamo), অ্যালান ফ্লাসার (Alan Flusser) এবং ভ্যালেন্টিনো (Valentino) স্যুট, অলিভার পিপলস (Oliver Peoples) গ্লাসেস এবং জঁ পল গলতিয়ে (Jean Paul Gaultier), লুই ভুটন (Louis Vuitton), এবং বোটেগা ভেনেটা (Bottega Veneta) লেদার গুডস, যেগুলোকে তিনি কেনেন ও ভোগ করেন তার বিশৃঙ্খল জীবনে কিছুটা “নিয়ন্ত্রণ” আনার একটি উপায় হিসেবে। একইভাবে, যদিও তিনি প্রায়ই মানুষের নাম এবং পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত থাকেন, তিনি তাদেরকে কী পরিধান করে এবং তাদেরকে কেমন দেখায় তার ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করেন কারণ তাদেরকে এরকম লেবেল এবং স্টেরিওটাইপের শর্তে “বোঝা” সহজ হয়। বেটম্যানের অ্যাপার্টমেন্টটাও এর সাজসজ্জা এবং রুচির দিক থেকে দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, যেখানে লেটেস্ট সঙ্গীত, খাদ্য, এবং শিল্প রয়েছে।

বেটম্যান কমবেশি নির্বিচারে হত্যা করেন, কোনো নির্দিষ্ট ধরনের শিকার পছন্দ করেন না, এবং হত্যার জন্য কোনো নির্দিষ্ট বা পছন্দের পদ্ধতিও নেই। উপন্যাস জুড়ে, তিনি পুরুষ, নারী, প্রাণী, এবং এক ক্ষেত্রে, একটি শিশুকে হত্যা করেন। বেটম্যান নারীদের মূলত নিছক যৌন আনন্দের জন্য হত্যা করেন, প্রায়শই যৌনমিলনের সময় বা তার পরপরই। তিনি পুরুষদের হত্যা করেন কারণ তারা তাকে বিরক্ত করে বা তাকে হীনমন্য বোধ করায়। শিশুর ক্ষেত্রে, বেটম্যান দেখতে চেয়েছিলেন যে তিনি এটি উপভোগ করবেন কিনা, কিন্তু সন্তুষ্ট হননি, কারণ শিশুর মৃত্যু অনেক লোককে প্রভাবিত করবে না যেভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যু করবে। এক সময়ে, তিনি তার অপরাধগুলো তার বন্ধুদের, সহকর্মীদের, এবং এমনকি সম্পূর্ণ অচেনা লোকদের কাছে স্বাভাবিকভাবে স্বীকার করেন (“I like to dissect girls, did you know I’m utterly insane?”) শুধুমাত্র দেখার জন্য যে তারা আসলেই তাকে শুনছে কিনা। তারা হয় শোনে না, বা তারা মনে করে যে তিনি রসিকতা করছেন।

আমেরিকান সাইকোর বাইরে

প্যাট্রিক বেটম্যান প্রথমবার ব্রেট ইস্টন এলিসের ১৯৮৭ সালের উপন্যাস The Rules of Attraction এ উপস্থিত হন (যেখানে তার ভাই শন (Sean) প্রধান চরিত্র); এখানে তার একজন সিরিয়াল কিলার হওয়া নিয়ে কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। এলিসের ১৯৯৮ সালের উপন্যাস Glamorama-তেও বেটম্যানের একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি দেখা যায়, যেখানে তার আর্মানি (Armani) স্যুটে “অদ্ভুত দাগ” ছিল। বেটম্যান American Psycho 2000 ই-মেইলে হাজির হন, যা চলচ্চিত্রটির বিজ্ঞাপন প্রচারণার অংশ হিসেবে লেখা হয়েছিল। যদিও এগুলো প্রায়শই এলিসের দ্বারা রচিত বলে ভুল ধরা হয়, আসলে সেগুলো এক বা একাধিক অজ্ঞাতনামা লেখক দ্বারা লেখা হয়েছিল এবং এগুলো প্রকাশের আগে এলিসের অনুমোদন নেয়া হয়েছিল। American Psycho 2000 মূল উপন্যাসের একটি ধরনের “ই-সিক্যুয়েল”। ই-মেইলগুলো ২০০০ সালে ঘটে, উপন্যাসের এক দশক পরে। বেটম্যান “ডক্টর এম” এর সাথে মনোরোগ চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি তার সাবেক সচিব জিনকে বিয়ে করেছেন এবং তাদের ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে, প্যাট্রিক বেটম্যান জুনিয়র (P.B.)। গল্পে, বেটম্যান থেরাপি, জিন থেকে বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়া, খুনের প্রতি তার নতুন অনুভূতি এবং তার ছেলেকে আদর্শ হিসেবে দেখার বিষয়ে আলোচনা করেন। শেষে, প্রকাশ করা হয় যে “আসল” বেটম্যান, যিনি “ই-মেইল লিখেছেন”, তিনি চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করা কোম্পানির মালিক।

এলিসের ২০০৫ সালের উপন্যাস Lunar Park এ বেটম্যান হাজির হন, যেখানে কাল্পনিক ব্রেট ইস্টন এলিস স্বীকার করেন যে American Psycho যেন তার নিজের লেখা নয়, বরং একটি হিংসাত্মক আত্মার বলা শব্দসমূহ। এই ভূত—বেটম্যান—এলিসের বাড়িতে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। একটি চরিত্র হ্যালোইনের পার্টিতে প্যাট্রিক বেটম্যানের পোশাক পরে আসে, এবং একজন অনুকরণকারী হত্যাকারী (কপিক্যাট কিলার) বেটম্যানকে তার মডেল হিসেবে গ্রহণ করে বলে মনে হয়। উপন্যাসের শেষের দিকে, এলিস বেটম্যান চরিত্রকে মোকাবেলা করার এবং নিয়ন্ত্রণ করার উপায় হিসেবে “শেষ” বেটম্যান গল্প লিখেন, যা তিনি বেটম্যানের মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যাগুলোকে সমাধান করার জন্য তৈরি করেছিলেন। সেখানে বেটম্যান, কার্যত, একটি নৌকার ডকে আগুনে পুড়ে মারা যান।

মিডিয়াতে

যদিও এলিস এবং হ্যারন উভয়ের জন্যই ক্রিশ্চিয়ান বেল (Christian Bale) প্রথম পছন্দ ছিলেন, বেলের এজেন্ট তাকে বলেছিলেন যে চরিত্রটি গ্রহণ করাকে তিনি “পেশাদার আত্মহত্যা” হবে বলে মনে করেন। প্রযোজকরা কিয়ানু রিভস (Keanu Reeves), এডওয়ার্ড নর্টন (Edward Norton), এবং ব্র্যাড পিটের (Brad Pitt) মতো অভিনেতাদেরও এই ভূমিকা প্রস্তাব করেছিলেন। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (Leonardo DiCaprio) চরিত্রটি অভিনয় করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু এলিস (যেমনটি American Psycho ডিভিডিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে) মনে করেছিলেন যে ডিক্যাপ্রিওকে এক্ষেত্রে খুবই তরুণ দেখাবে, বিশেষ করে Titanic এর পরে। এছাড়াও, তার ম্যানেজাররা মনে করেছিলেন যে চরিত্রটি “অত্যন্ত হিংসাত্মক” এবং এটি তার ক্যারিয়ারে ক্ষতি করতে পারে। বেটম্যান চরিত্রে উমা থারম্যানের (Uma Thurman) ভাই ডেচেন থারম্যান (Dechen Thurman) ২০০০ সালের ডকুমেন্টারি This Is Not an Exit: The Fictional World of Bret Easton Ellis এ উপস্থিত হন। মাইকেল ক্রেমকো (Michael Kremko) American Psycho 2 সিক্যুয়েলে বেটম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যেখানে চরিত্রটিকে তার ভাবি শিকার বা ভিক্টিম হত্যা করে। এই চলচ্চিত্রটিতে বেটম্যান চরিত্রটির এরকম উপস্থিত হওয়া ছাড়া, সিক্যুয়েলের সাথে পূর্ববর্তী ছবির অন্য কোনো সংযোগ নেই এবং এটি এলিস এই সিকুয়ালটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

২০০২ সালে লেখা ব্রেট ইস্টল এলিসের আরেকটি গ্রন্থ The Rules of Attraction এর ফিল্ম এডাপ্টেশনের জন্য চরিত্রের সাথে দৃশ্যগুলি চিত্রায়িত হয়েছিল। একটি সাক্ষাৎকারে এলিস প্রকাশ করেছিলেন যে পরিচালক রজার অ্যাভারি (Roger Avary) বেলকে চরিত্রটি পুনরায় অভিনয় করার প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু বেল প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, এবং অ্যাভারি এলিসকে নিজেই বেটম্যান চরিত্রে অভিনয় করার অনুরোধ করেছিলেন। এলিস তা প্রত্যাখ্যান করেন, উল্লেখ করে যে তিনি “এটি এমন একটি ভয়ানক এবং কৌশলগত ধারণা” মনে করেছিলেন এবং অ্যাভারি শেষ পর্যন্ত ক্যাসপার ভ্যান ডিয়েন (Casper Van Dien) এর সাথে দৃশ্যগুলি চিত্রায়িত করেছিলেন। তবে, দৃশ্যগুলি শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের চূড়ান্ত সংস্করণ থেকে কেটে ফেলা হয়েছিল। ২০০৯ সালে ব্ল্যাক বুকের (Black Book) একটি সাক্ষাৎকারে পরিচালক মেরি হ্যারন (Mary Harron) বলেন, “আমরা আলোচনা করেছিলাম যে [চরিত্র] প্যাট্রিক বেটম্যান কতটা মঙ্গলগ্রহের অধিবাসীর মতো ছিল, যেন সে অন্য কোনও গ্রহ থেকে এই পৃথিবীতে এসেছে এবং মানুষের কাজকর্ম দেখে তাদের মতো করে আচরণ করার চেষ্টা করছে, এবং একদিন [ক্রিশ্চিয়ান] আমাকে ফোন করে বললেন যে তিনি টম ক্রুজকে (Tom Cruise) ডেভিড লেটারম্যান (David Letterman) এর শোতে দেখেছিলেন, এবং ক্রুজের মধ্যে এই চরিত্রের ক্ষেত্রে খুবই তীব্র বন্ধুত্বপূর্ণতা ছিল, যেখানে তার চোখের পেছনে কিছুই ছিল না (সহানুভূতি-সহমর্মিতার অভাব বোঝানো হচ্ছে, যার ফলে সেই বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাব এক রকম মেকি হয়ে যাচ্ছে), এবং তিনি এই শক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।” Doctor Who তারকা ম্যাট স্মিথ (Matt Smith) ২০১৩ সালে উপন্যাসের মঞ্চনাটকের সংস্করণে এই চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন, যার সঙ্গীত ও গীত রচনা করেছেন ডানকান শেইক (Duncan Sheik) এবং বইটি লিখেছেন রবার্তো আগুইর-সাকাসা (Roberto Aguirre-Sacasa), যা লন্ডনের আলমেইদা থিয়েটারে (Almeida Theatre) প্রদর্শিত হয়েছিল। ২০১৬ সালে, বেঞ্জামিন ওয়াকার (Benjamin Walker) ব্রডওয়ে প্রোডাকশনে বেটম্যান চরিত্রে অভিনয় করেন, যা ২১ মার্চ – ৫ জুন, ২০১৬ পর্যন্ত চলে।

টেলিভিশন সিরিজ Riverdale এ, কেভিন কেলার (Kevin Keller) (ক্যাসি কট (Casey Cott) দ্বারা অভিনীত) “Chapter One Hundred and Twelve: American Psychos” শীর্ষক ষষ্ঠ মৌসুমের একটি পর্বে American Psycho এর একটি মিউজিক্যাল প্রোডাকশনে বেটম্যান চরিত্রে অভিনয় করেন। শোটাইম (Showtime) সিরিজ Dexter এ, প্রধান চরিত্র ডেক্সটার মর্গান (Dexter Morgan), যিনি নিজেও একজন সিরিয়াল কিলার, এম-৯৯ (M-99) সংগ্রহ করতে “Dr. Patrick Bateman” নামটি ব্যবহার করেন। ভিডিও গেম Criminal Case এ ক্রিশ্চিয়ান বেটম্যান (Christian Bateman) নামে একটি পুনরাবৃত্ত চরিত্র রয়েছে (যার নামগুলি ক্রিশ্চিয়ান বেল এবং প্যাট্রিক বেটম্যানের সংমিশ্রণ), যা এই চরিত্রটির মডেলে নির্মিত। আমেরিকান মেটালকোর ব্যান্ড আইস নাইন কিলস (Ice Nine Kills) তাদের অ্যালবাম The Silver Scream 2: Welcome to Horrorwood এর জন্য ফিল্ম এডাপ্টেশনের ওপর ভিত্তি করে “Hip to Be Scared” শিরোনামের একটি গান প্রকাশ করেছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে, ঘোষণা করা হয়েছিল যে ২০০০ সালের চলচ্চিত্রের একটি রিমেক তৈরির কাজ চলছে। একজন স্ক্রিনরাইটারের সন্ধান চলছে এবং চলচ্চিত্রটি আধুনিক সময়ের উপর স্থাপিত হবে।

টীকা

সংস্কৃতি সংক্রান্ত

ভোক্তাবাদ (Consumerism)

ভোক্তাবাদ (Consumerism) হলো একটি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে অনেক ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার অধিগ্রহণের চেয়ে বেশি কিছু অর্জন করা এবং এটি ঐতিহ্যবাহী মর্যাদা প্রদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি শিল্প বিপ্লবের আগে পশ্চিম ইউরোপে উদ্ভূত হয় এবং ১৯০০ সালের দিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থনীতিতে, ভোক্তাবাদ এমন নীতিগুলোর দিকে নির্দেশ করে যা ভোগকে গুরুত্ব দেয়। এটি এমন একটি ধারণা যে, ভোক্তাদের মুক্ত পছন্দ উৎপাদকদের পণ্যের উৎপাদন এবং উৎপাদনের উপায়গুলিকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করে, এবং তাই একটি সমাজের অর্থনৈতিক সংগঠনকে নির্দেশ করে। ভোক্তাবাদকে সমালোচক মূলত দু প্রকারের – (১) এমন ব্যক্তিরা দ্বারা যারা অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের অন্য উপায় বেছে নেন (যেমন, সরল জীবনযাপন বা ধীর গতির জীবনযাপন) এবং (২) পরিবেশবিদরা যারা পৃথিবীর ওপর ভোক্তাবাদের প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।

বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই বলেন যে ভোক্তাবাদের শারীরিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেমন প্রবৃদ্ধির বাধ্যবাধকতা এবং অতিরিক্ত ভোগ, যা পরিবেশের ওপর বৃহত্তর প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে রয়েছে সরাসরি প্রভাব, যেমন প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত শোষণ বা একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্য থেকে প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য, এবং এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন। একইভাবে, কিছু গবেষণা এবং সমালোচনা ভোক্তাবাদের সমাজবিজ্ঞানগত প্রভাবের দিকে মনোনিবেশ করে, যেমন শ্রেণী বাধাগুলোর  (class barriers) পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং অসমতার সৃষ্টি।

অর্থনৈতিক বস্তুবাদ (Economic Materialism)

অর্থনৈতিক বস্তুবাদকে (Economic Materialism) এমন একটি ব্যক্তিগত মনোভাব হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে যা বস্তুগত সম্পদ অর্জন এবং ভোগ করার প্রতি গুরুত্ব দেয়, অথবা এটি একটি যুক্তিসঙ্গত বিশ্লেষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে যা ব্যাখ্যা করে কিভাবে শারীরিক সম্পদকে ভোগ্য পণ্য হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়। “ম্যাটেরিয়ালিস্টিক” (Materialistic) শব্দটি যখন একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বা একটি সমাজকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, তখন তা প্রায়ই নেতিবাচক বা সমালোচনামূলক অর্থে ব্যবহৃত হয়। একে অধিকারলিপ্সাও (Acquisitiveness) বলা হয়, এবং এটি প্রায়শই এমন একটি মূল্যবোধের সঙ্গে যুক্ত থাকে যা সামাজিক মর্যাদাকে সম্পদ দ্বারা নির্ধারিত বলে মনে করে (দৃশ্যমান ভোগ বা Conspicuous Consumption), পাশাপাশি এই বিশ্বাসের সাথে যে, সম্পদ সুখ প্রদান করতে পারে, যা মূলত পুঁজিবাদ (Capitalism) দ্বারা প্রচারিত একটি মিথ। পরিবেশবাদ (Environmentalism) বস্তুবাদের (Materialism) বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বস্তুবাদের সংজ্ঞা কিভাবে এবং কেন সম্পদ সংগ্রহ করা হয় এবং বস্তুগত বস্তু তৈরি করা হয় তা যুক্তিসঙ্গতভাবে গঠন করা হয় – তার সাথে সম্পর্কিত। “সাফল্য বস্তুবাদ” বা সাকসেস মেটারিয়ালিজম (Success Materialism) আলোকায়িত আত্মস্বার্থের (Enlightened Self-Interest) একটি বাস্তবসম্মত রূপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যা বাজারভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজের চরিত্র সম্পর্কে আন্তরিক বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করে গঠিত।

প্রদর্শনমূলক ভোক্তাবাদ (“conspicuous consumption”)

সমাজবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে, প্রদর্শনমূলক ভোক্তাবাদ (“conspicuous consumption”) শব্দটি সেই ভোক্তা অভ্যাসকে বর্ণনা এবং ব্যাখ্যা করে যেখানে ব্যক্তি ব্যবহারযোগ্যতা বা প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা না করে উচ্চতর মানের, মূল্যের, বা অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় এবং ব্যবহার করেন। ১৮৯৯ সালে, সমাজবিজ্ঞানী থর্স্টেইন ভেবলেন (Thorstein Veblen) এই শব্দটি তৈরি করেছিলেন, যার দ্বারা তিনি অর্থ ব্যয় করা এবং বিলাসবহুল পণ্য ও সেবা (যা উচ্চ মানের এবং মূল্যবান) ক্রয় করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতার—আয়ের এবং সংগৃহীত সম্পদের—প্রকাশ করেন। প্রদর্শনমূলক ভোক্তার জন্য, অব্যবহৃত আয়ের প্রকাশ একটি অর্থনৈতিক উপায় যাতে করে তিনি নির্দিষ্ট সামাজিক মর্যাদা অর্জন বা বজায় রাখতে পারেন। ভেবলেনের সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিগোচর ভোগের বিকাশ আরও কিছু অর্থনৈতিক আচরণের সন্ধান দিয়েছিল, যেমন “invidious consumption” (হিংসাপ্রবণ ভোগ), যা অন্যদের মধ্যে ঈর্ষা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে বিলাসবহুল পণ্য ব্যবহার করা; এবং “conspicuous compassion” (দৃষ্টিগোচর করুণা), যা দাতা তার খ্যাতি এবং সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর জন্য প্রকাশ্যে দান করেন। এভাবে ভোক্তাবাদের সামাজিক-অর্থনৈতিক চর্চাগুলো প্রদর্শনমূলক ভোগ থেকে উদ্ভূত হয়।

ইয়াপি (Yuppie)

ইয়াপি (Yuppie) হলো “যুবা শহুরে পেশাদার” (young urban professional) বা “যুবা ঊর্ধ্বগামী পেশাদার” (young upwardly-mobile professional) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি ১৯৮০ এর দশকের শুরুর দিকে শহরে কাজ করা একজন যুবা পেশাদার ব্যক্তির জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ। প্রথমবারের মতো এই শব্দটি ১৯৮০ সালে ব্যবহৃত হয়েছিল, যখন এটি একটি নিরপেক্ষ জনসংখ্যাগত লেবেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে ১৯৮০ এর দশকের মধ্য থেকে শেষের দিকে, যখন “ইয়াপি প্রতিক্রিয়া” (yuppie backlash) গড়ে উঠেছিল, যা জেন্ট্রিফিকেশনের (gentrification) মতো বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, তখন কিছু লেখক এই শব্দটি নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেন।

হাসল সংস্কৃতি (Hustle Culture)

হাসল সংস্কৃতি (Hustle Culture) বার্নআউট সংস্কৃতি (Burnout Culture) এবং গ্রাইন্ড সংস্কৃতি (Grind Culture) নামেও পরিচিত। এর দ্বারা সেই মানসিকতাকে বোঝায় যেখানে একজন ব্যক্তিকে তার পেশাগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিদিন সবসময় কাজ করতে হবে বলে মনে করা হয়। এটি ওয়ার্ক এথিকের ধারণার সাথে সম্পর্কিত। ওয়ার্ক এথিক বা কর্মনীতির (Work Ethic) ধারণা হলো এই যে, কাজ এবং অধ্যবসায়ের একটি নৈতিক উপকারিতা রয়েছে এবং এটি চরিত্র এবং ব্যক্তিগত দক্ষতাকে শক্তিশালী করার একটি অন্তর্নিহিত ক্ষমতা, গুণ বা মূল্য। কাজ করার ইচ্ছা বা সংকল্প এমন মূল্যবোধের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে যা কাজের গুরুত্ব বা কঠোর পরিশ্রমের ওপর কেন্দ্রীভূত। এই মূল্যবোধের সামাজিক প্রভাব কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে চরিত্রকে উন্নত করতে সহায়তা করে, যা একজন ব্যক্তির কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রাচীন গ্রিসে, কাজকে একটি বোঝা হিসেবে দেখা হতো এবং তাদের জন্য কাজের জন্য ব্যবহৃত শব্দটি ছিল “পোনোস” (Ponos), যা ল্যাটিন শব্দ “পোয়েনা” (Poena) এর সঙ্গে সম্পর্কিত, যার অর্থ দুঃখ। হিব্রু ভাষায়, কাজকে শ্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত করা হতো, যা কঠিন মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহের শ্রমসাধ্য কাজকে বোঝায়। এটিকে আদম ও ইভের (Adam and Eve) পাপের পরিণতি হিসেবে দেখা হতো। বাইবেলে, জেনেসিস (Genesis) ৩:১৯ এ এই প্রতিফলন পাওয়া যায়, যেখানে বলা হয়েছে যে তাদের পাপের কারণে, “তোমার কপালের ঘামের বিনিময়ে তুমি তোমার খাদ্য অর্জন করবে যতক্ষণ না তুমি মাটিতে ফিরে যাও।”

২১শ শতকে, বিশেষ করে ২০০৮ সালের গ্রেট রিসেশন (Great Recession) এর কারণে, অতিরিক্ত কাজ করা ছোট প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যারা মনে করেছিল যে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সফলতা অর্জনের জন্য তাদের দীর্ঘ সময় কাজ করতে হবে এবং একটি সাইড বিজনেস শুরু করতে হবে। “রাইজ-এন্ড-গ্রাইন্ড সংস্কৃতি” (Rise-and-Grind Culture) এর ইতিবাচক চিত্রায়ন (বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে) দ্রুত বেশি কঠোর, দ্রুত, এবং দীর্ঘ সময় কাজ করার প্রচলন স্বাভাবিক করে তোলে। ২০০৬ সালে, র‍্যাপার রিক রস (Rick Ross) তার হিট গান “হাসলিন'” (Hustlin’) এর মাধ্যমে বিখ্যাত হন, যা তার অর্থ ও ক্ষমতা অর্জনের তীব্র প্রচেষ্টার বিষয়ে ছিল। অনেক মানুষের, বিশেষ করে মিলেনিয়াল (Millennials) এবং জেন জি (Gen Z) প্রজন্মের জন্য, নিরবচ্ছিন্ন এবং ক্রমাগত কাজ করা, পাশাপাশি সাইড হাসল (Side Hustles) এবং ফ্রিল্যান্স গিগস (Freelance Gigs) গ্রহণ একটি জীবনযাত্রার পদ্ধতি। তবে হাসল সংস্কৃতির (Hustle Culture) চারপাশে বিতর্ক রয়ে গেছে: এটি কি জীবনে “সফল হওয়ার” সেরা, দ্রুততম, এবং হয়তো একমাত্র উপায়, নাকি এটি দ্রুত বার্নআউট (Burnout) এর দিকে নিয়ে যায়?

কাল্ট ফলোয়িং (Cult Following)

একটি কাল্ট ফলোয়িং (Cult Following) হলো ভক্তদের একটি দল, যারা কোনো ব্যক্তি, ধারণা, বস্তু, আন্দোলন, বা কাজের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত। আর এক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তু হয় প্রায়শই কোনো শিল্পী (Artist), বিশেষ করে কোনো পরিবেশন শিল্পী বা কোনো মাধ্যমের একটি শিল্পকর্ম। পরবর্তীতে এ ধরনের শিল্পকর্মকে প্রায়শই কাল্ট ক্লাসিক (Cult Classic) বলা হয়। কোন চলচ্চিত্র, বই, সঙ্গীত, টেলিভিশন সিরিজ, বা ভিডিও গেম, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, কাল্ট ফলোয়িং আছে বলে মনে করা হয় যখন এটি একটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত উত্সাহী ভক্তগোষ্ঠী ধারণ করে। কাল্ট ফলোয়িং-এর একটি সাধারণ উপাদান হলো ভক্তদের আবেগপূর্ণ সংযুক্তি, যারা প্রায়শই নিজেদের এবং অন্যান্য ভক্তদের একটি সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করেন। কাল্ট ফলোয়িং সাধারণত নিশ মার্কেট (Niche Market) এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। কাল্ট মিডিয়া প্রায়ই আন্ডারগ্রাউন্ড সংস্কৃতি (Underground Culture) এর সঙ্গে যুক্ত হয় এবং এগুলোকে সাধারণ জনগণ দ্বারা প্রশংসিত হওয়ার জন্য বা বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার জন্য অত্যধিক অদ্ভুত বা বিরোধী প্রতিষ্ঠানের (Anti-Establishment) বলে বিবেচনা করা হয়।

অনেক কাল্ট ভক্তরা তাদের এই বিনোদনের প্রতি আনুগত্যকে বর্ণনা করার সময় এক ধরণের বিদ্রুপের সঙ্গে প্রকাশ করেন। কখনও কখনও, এই কাল্ট ফলোয়িংগুলি ক্যাম্প ফলোয়িং (Camp Following) এর সীমানা অতিক্রম করে। ভক্তরা প্রায়শই ফ্যান্ডমের (Fandom) একটি সাবসংস্কৃতির (Subculture) সঙ্গে জড়িত হন, হয় কনভেনশন (Conventions), অনলাইন সম্প্রদায়ের মাধ্যমে, বা সিরিজ-সম্পর্কিত কল্পকাহিনী লেখা, পোশাক তৈরি, রেপ্লিকা প্রপ এবং মডেল তৈরি, বা ফরম্যাট এবং চরিত্র থেকে তাদের নিজস্ব অডিও বা ভিডিও প্রযোজনাগুলি তৈরি করার মতো কার্যক্রমের মাধ্যমে।

সাংস্কৃতিক প্রতীক (Cultural Icon)

সাংস্কৃতিক প্রতীক (Cultural Icon) হলো এমন একজন ব্যক্তি বা একটি নিদর্শন, যাকে একটি সংস্কৃতির সদস্যরা সেই সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। এই চিহ্নিতকরণের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে বিষয়ভিত্তিক, এবং “প্রতীক” হিসেবে বিচার করা হয় এই ভিত্তিতে যে তারা কতটা সঠিকভাবে সেই সংস্কৃতির আসল প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। যখন কোনো ব্যক্তি একটি সাংস্কৃতিক প্রতীককে উপলব্ধি করে, তারা এটিকে সেই সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সাথে সম্পর্কিত তাদের সাধারণ ধারণাগুলির সাথে সম্পর্কিত করে। সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলোকে অন্য একটি সংস্কৃতির দ্বারা সেই সংস্কৃতির চর্চার একটি প্রামাণিক উপস্থাপনা হিসেবেও চিহ্নিত করা যেতে পারে। পপুলার কালচার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে, “আইকনিক” (Iconic) শব্দটি মানুষ, স্থান এবং বস্তুর একটি বিস্তৃত পরিসর বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। কিছু ভাষ্যকার বিশ্বাস করেন যে “আইকনিক” শব্দটির ব্যবহার অত্যধিক হচ্ছে।

জেনারেশন জি (Generation Z)

জেনারেশন জি (Generation Z) জেন জি (Gen Z) বা জুমার্স (Zoomers) নামেও পরিচিত। এরা হলো মিলেনিয়ালদের (Millennials) পরবর্তী এবং জেনারেশন আলফার (Generation Alpha) পূর্ববর্তী জনসংখ্যাগত দল। গবেষক এবং জনপ্রিয় মিডিয়া সাধারণত ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষের বছরগুলোকে জন্মের সূচনা বছর এবং ২০১০-এর দশকের প্রথম দিকে জন্মের শেষ বছর হিসেবে চিহ্নিত করে, এবং সাধারণভাবে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের জেনারেশন জি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। জেনারেশন জি-এর বেশিরভাগ সদস্যই কনিষ্ঠ বেবি বুমারদের (Baby Boomers) বা জেনারেশন এক্সের (Generation X) সন্তান।

জেনারেশন জি-এর সদস্যরা, যারা কমবেশি ইন্টারনেট এবং পোর্টেবল ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছে, তাদের প্রায়শই “ডিজিটাল নেটিভ” (Digital Natives) বলা হয়। তবে, পর্দার সামনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর নেতিবাচক প্রভাবগুলি কিশোরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট, যা ছোট বাচ্চাদের তুলনায় বেশি। আগের প্রজন্মের তুলনায়, জেনারেশন জি-এর সদস্যরা তাদের পূর্বসূরিদের তুলনায় ধীর গতিতে জীবনযাপন করতে পারে, যখন তারা একই বয়সের ছিল, কিশোর বয়সে গর্ভধারণের হার কম এবং তারা মদ্যপান কম করে, তবে অন্যান্য মনঃসামাজিক মাদক কম ব্যবহার করে না। জেনারেশন জি-এর কিশোর-কিশোরীরা আগের প্রজন্মের তুলনায় একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং চাকরির সম্ভাবনা নিয়ে বেশি চিন্তিত এবং তারা ১৯৬০-এর দশকের সমসাময়িকদের তুলনায় বিলম্বিত প্রতিদান বা ডিলেইড গ্রেটিফিকেশনের করার ক্ষেত্রে বেশি দক্ষ, যদিও উল্টো দিকের আশঙ্কা ছিল। কিশোরদের মধ্যে সেক্সটিং-এর (Sexting) প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে; তবে এর পরিণতি এখনও ভালোভাবে বোঝা যায়নি। যুব-উপসংস্কৃতিগুলো (Youth Subcultures) পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি, তবে তারা তুলনামূলকভাবে শান্ত হয়েছে।

২০১০ এবং ২০২০-এর দশকের যুব সংস্কৃতিতে নস্টালজিয়া (Nostalgia) একটি বড় থিম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী, মেয়েদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হওয়ার গড় বয়স ২০শ শতকের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা তাদের কল্যাণ এবং ভবিষ্যতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। এছাড়াও, জেনারেশন জি-এর কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অ্যালার্জির (Allergies) প্রবণতা সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় বেশি; মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও বেশি সচেতনতা এবং নির্ণয়ের হার বেড়েছে এবং ঘুমের ঘাটতির (Sleep Deprivation) বিষয়টি আরও বেশি রিপোর্ট করা হয়েছে। অনেক দেশে, জেন জি-এর তরুণ-তরুণীরা বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা এবং মানসিক ব্যাধি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আগের প্রজন্মের তুলনায় বেশি সম্ভাবনা দেখায়। বিশ্বজুড়ে, জেনারেশন জি-এর সদস্যরা আগের তুলনায় ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলিতে বেশি সময় ব্যয় করছে এবং বই পড়ায় কম সময় দিচ্ছে, যার ফলে তাদের মনোযোগের ব্যাপ্তি, শব্দভাণ্ডার, একাডেমিক পারফরম্যান্স এবং ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক অবদানের উপর প্রভাব পড়ছে। এশিয়ায়, ২০০০ এবং ২০১০-এর দশকে, শিক্ষাবিদরা সাধারণত সেরা শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের পুষ্টি জুগিয়েছে; পশ্চিম ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে, জোর দেওয়া হতো দুর্বল শিক্ষার্থীদের ওপর। ২০১০-এর দশকে, পূর্ব এশিয়ার এবং সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছিল।

ইন্টারনেট সংস্কৃতি (Internet Culture)

ইন্টারনেট সংস্কৃতি (Internet Culture) হলো এমন একটি প্রায়-গোপন সংস্কৃতি যা ইন্টারনেটের নিয়মিত এবং সক্রিয় ব্যবহারকারীদের মধ্যে গড়ে ওঠে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এই ব্যবহারকারীদেরকে প্রায়ই নেটিজেন (Netizens) বলা হয়, যারা মূলত অনলাইন সম্প্রদায়গুলির (Online Communities) সদস্য হিসেবে একে অপরের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করেন। অর্থাৎ, এটি এমন একটি সংস্কৃতি যার প্রভাব “কম্পিউটার স্ক্রিন দ্বারা পরিচালিত” এবং তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information Communication Technology), বিশেষত ইন্টারনেট দ্বারা প্রভাবিত। ইন্টারনেট সংস্কৃতি বিভিন্ন অনলাইন সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে ঘন ঘন মিথস্ক্রিয়া এবং যোগাযোগ, বিনোদন, ব্যবসা এবং অবসরের জন্য এই সম্প্রদায়গুলির ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভূত হয়। এই ধরনের প্রাথমিক অনলাইন সম্প্রদায়গুলো সাধারণত বেনামী (Anonymous) এবং ছদ্মনামী (Pseudonymous) ব্যবহারকারীদের আগ্রহ এবং শখের চারপাশে কেন্দ্রীভূত ছিল, যারা ইন্টারনেটের প্রাথমিক ব্যবহারকারী ছিল এবং সাধারণত এদের মধ্যে একাডেমিক, প্রযুক্তিগত, অত্যন্ত নিশ বা এমনকি সাধারণ বিরোধীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আগ্রহ ছিল। ইন্টারনেট সংস্কৃতির সর্বজনীন প্রকৃতি এর বিভিন্ন উপাদানের গবেষণার দিকে পরিচালিত করেছে, যেমন বেনামিতা (Anonymity) বা ছদ্মনামিতা (Pseudonymity), সামাজিক মাধ্যম (Social Media), গেমিং (Gaming) এবং নির্দিষ্ট সম্প্রদায়গুলো, যেমন ফ্যানডম (Fandoms)। এটি অনলাইন পরিচয় (Online Identity) এবং ইন্টারনেট গোপনীয়তা (Internet Privacy) সম্পর্কে প্রশ্নও উত্থাপন করেছে।

ইন্টারনেট মিম (Internet Meme)

ইন্টারনেট মিম (Internet Meme), বা সহজভাবে মিম (/miːm/, MEEM), হলো একটি সাংস্কৃতিক উপাদান (যেমন একটি ধারণা, আচরণ, বা শৈলী) যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে, প্রায়শই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ইন্টারনেট মিমগুলি বিভিন্ন রূপ নিতে পারে, যেমন চিত্র, ভিডিও, GIF এবং অন্যান্য ভাইরাল সংবেদন। মিমগুলির বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে প্যারোডি (Parody) হওয়ার প্রবণতা, আন্তঃপাঠ্যতা (Intertextuality) এর ব্যবহার, ভাইরাল প্যাটার্নে (Viral Pattern) তাদের প্রচার এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের বিবর্তন। এই নামটি ১৯৭২ সালে রিচার্ড ডকিন্স (Richard Dawkins) প্রস্তাবিত মিমের ধারণা থেকে এসেছে। মাইক গডউইন (Mike Godwin) ১৯৯৩ সালে “ইন্টারনেট মিম” (Internet Meme) শব্দটি তৈরি করেন যখন তিনি মেসেজবোর্ড, ইউজেনেট (Usenet) গ্রুপ এবং ইমেইলের মাধ্যমে মিমগুলি ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। ইউটিউব (YouTube), টুইটার (Twitter), ফেসবুক (Facebook), এবং ইনস্টাগ্রাম (Instagram) এর মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে, মিমগুলি আরও বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অধিকতর সাম্প্রতিক ধারাগুলির মধ্যে রয়েছে “ড্যাঙ্ক” (Dank) এবং সরিয়ালিস্ট মিম (Surrealist Meme), পাশাপাশি ভাইন (Vine) এবং টিকটক (TikTok)-এ আপলোড করা সংক্ষিপ্ত ভিডিও। মিমগুলি ইন্টারনেট সংস্কৃতির (Internet Culture) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি একটি বিকশিত গবেষণা ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এগুলি বিভিন্ন প্রসঙ্গে উপস্থিত হয়, যেমন বিপণন (Marketing), অর্থনীতি (Economics), অর্থ (Finance), রাজনীতি (Politics), সামাজিক আন্দোলন (Social Movements), ধর্ম (Religion) এবং স্বাস্থ্যসেবা (Healthcare)। যদিও কেউ কেউ যুক্তি দেন যে মিমগুলি ন্যায্য ব্যবহার বা ফেয়ার ইউজ (Fair Use) সুরক্ষার দাবিদার, পূর্ববর্তী কাজগুলি থেকে মিডিয়া ব্যবহারের কারণে এটি কখনও কখনও কপিরাইট (Copyright) সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

সিগমা পুরুষ (Sigma Male)

সিগমা পুরুষ (Sigma Male) বা শুধুমাত্র সিগমা (Sigma) হলো ইন্টারনেটের ভাষায় ব্যবহৃত একটি শব্দ, যা প্রায়ই এমন একজন পুরুষের আর্কিটাইপ বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয় যিনি একজন “একলা নেকড়ে” বা লোন ওলফ (Lone Wolf)। যদিও এই নামটি ২০১০-এর দশকে ম্যানোস্ফিয়ার (Manosphere) মেসেজ বোর্ডগুলির একটি পণ্য, তবে এই শব্দটি ইন্টারনেট সংস্কৃতিতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং ২০২০-এর দশকের গোড়ার দিক থেকে এটি একটি ইন্টারনেট মিম হয়ে উঠেছে। সাধারণত “সবচেয়ে বিরল” ধরনের পুরুষ হিসেবে বিবেচিত, সিগমা পুরুষকে প্রায়ই একটি আর্কিটাইপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় যা আলফা পুরুষের (Alpha Male) মতো হলেও আলফা পুরুষের বিপরীতে, সিগমা পুরুষরা আরও অন্তর্মুখী (Introverted) হন এবং তারা নিজেদের উপর প্রভুত্ব করতে চান, অন্য কথায় “স্বয়ং নিয়ন্ত্রণ” (Self-Mastery) অর্জন করতে চান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, এই শব্দটি প্রায়ই চলচ্চিত্র এবং টিভি শো-এর পুরুষ চরিত্র বা সেলিব্রিটিদের প্রতি পুরুষত্বের আদর্শায়ন (Idolization) বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। বিকল্পভাবে, এই শব্দটির একটি বিদ্রূপাত্মক এবং ব্যঙ্গাত্মক অর্থ ধারণ করেছে যা ম্যানোস্ফিয়ার এবং সিগমা গ্রাইন্ডসেট (Sigma Grindset) ধারণার উপহাস করতে ব্যবহৃত হয়। ২০২৩ সালে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম টিকটক (TikTok) এ #sigma হ্যাশট্যাগটি ৪৬ বিলিয়নেরও বেশি ভিউ অর্জন করে।

ক্লোজেটেড

“Closeted” এবং “in the closet” শব্দগুলো এমন এলজিবিটি (LGBT) ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত হয় যারা তাদের যৌন অভিমুখিতা (Sexual Orientation) বা লিঙ্গ পরিচয় (Gender Identity) এবং এর সাথে সম্পর্কিত দিকগুলো, যেমন যৌন পরিচয় (Sexual Identity) এবং যৌন আচরণ (Sexual Behavior), প্রকাশ করেননি। এই রূপকটি “coming out” এর সাথে যুক্ত এবং কখনও কখনও একত্রিত হয়, যেখানে “coming out” অর্থাৎ নিজের যৌনতা বা লিঙ্গ পরিচয় অন্যদের সামনে প্রকাশ করার কাজ বোঝায়, যা থেকে “coming out of the closet” বাক্যাংশটি তৈরি হয়।

চলচ্চিত্র-ভিত্তিক বিষয় সংক্রান্ত

হরর (Horror)

হরর (Horror) একটি চলচ্চিত্রের ঘরানা যা বিনোদনের উদ্দেশ্যে দর্শকদের মধ্যে ভয় (Fear) বা বিতৃষ্ণা (Disgust) সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। হরর চলচ্চিত্রগুলি প্রায়ই অন্ধকার বিষয়বস্তু (Dark Subject Matter) অনুসন্ধান করে এবং অপরাধমূলক বিষয় (Transgressive Topics) বা থিমগুলি (Themes) নিয়ে কাজ করতে পারে। সাধারণ উপাদানগুলির (Elements) মধ্যে রয়েছে দানব (Monsters), প্রলয়ংকরী ঘটনা (Apocalyptic Events) এবং ধর্মীয় (Religious) বা লোকবিশ্বাস (Folk Beliefs)।

হরর চলচ্চিত্রের (Horror Films) অস্তিত্ব এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে রয়েছে। চলচ্চিত্রের বিকাশের আগে প্রেরণাগুলির মধ্যে বিভিন্ন সংস্কৃতির লোককাহিনী (Folklore), ধর্মীয় বিশ্বাস (Religious Beliefs) এবং কুসংস্কার (Superstitions) এবং এডগার অ্যালান পো (Edgar Allan Poe), ব্রাম স্টোকার (Bram Stoker) এবং মেরি শেলি (Mary Shelley) এর মতো লেখকদের গথিক (Gothic) এবং হরর সাহিত্য (Horror Literature) অন্তর্ভুক্ত। নির্বাক চলচ্চিত্র (Silent Films) এবং জার্মান এক্সপ্রেশনিজমের (German Expressionism) মূল থেকে, ড্রাকুলা (Dracula) (১৯৩১) মুক্তির পর হরর (Horror) একটি কোডিফাইড ঘরানায় (Codified Genre) পরিণত হয়। পরবর্তী দশকগুলিতে বডি হরর (Body Horror), কমেডি হরর (Comedy Horror), স্ল্যাশার চলচ্চিত্র (Slasher Films), স্প্লাটার চলচ্চিত্র (Splatter Films), অতিপ্রাকৃত হরর (Supernatural Horror) এবং মনস্তাত্ত্বিক হরর (Psychological Horror) সহ বেশ কয়েকটি উপ-ধারা (Sub-genres) আবির্ভূত হয়েছে। এই ঘরানাটি বিশ্বব্যাপী তৈরি হয়েছে, বিভিন্ন অঞ্চলে বিষয়বস্তু (Content) এবং শৈলীতে (Style) বৈচিত্র্যময়। জাপান (Japan), কোরিয়া (Korea), ইতালি (Italy) এবং থাইল্যান্ড (Thailand) এর সিনেমাতে হরর (Horror) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক (Social) এবং আইনি (Legal) বিতর্কের বিষয় হওয়া সত্ত্বেও, কিছু হরর চলচ্চিত্র (Horror Films) এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি (Franchises) বড় বাণিজ্যিক সাফল্য (Commercial Success) পেয়েছে, সমাজকে প্রভাবিত করেছে এবং কয়েকটি জনপ্রিয় সংস্কৃতির (Popular Culture) আইকন (Icons) তৈরি করেছে।

ব্ল্যাক কমেডি (Black Comedy)

ব্ল্যাক কমেডি (Black Comedy) ব্ল্যাক হিউমার (Black Humor), ব্লীক কমেডি (Bleak Comedy), ডার্ক কমেডি (Dark Comedy), ডার্ক হিউমার (Dark Humor), গ্যালোস হিউমার (Gallows Humor) বা মরবিড হিউমার (Morbid Humor) নামেও পরিচিত। এটি হলো এমন এক ধরনের কমেডি যা সাধারণত ট্যাবু বলে বিবেচিত বিষয়গুলিকে হালকাভাবে উপস্থাপন করে, বিশেষ করে এমন বিষয়গুলোকে যেগুলোকে সাধারণত গুরুতর বা বেদনাদায়ক বলে মনে করা হয়। লেখক এবং কৌতুক অভিনেতারা প্রায়শই এটি অস্বস্তি সৃষ্টি করা, গভীর চিন্তাকে উস্কে দেওয়া এবং দর্শকদের বিনোদিত করার জন্য একটি সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করেন। এই কারণে, উদাহরণস্বরূপ, কল্পকাহিনিতে ব্ল্যাক কমেডি এমন একটি ধারাকে বোঝাতেও ব্যবহৃত হতে পারে যেখানে ডার্ক হিউমার একটি মূল উপাদান। কার্টুনিস্ট চার্লস অ্যাডামস (Charles Addams) এই ধরনের হাস্যরসের জন্য বিখ্যাত ছিলেন, যেমন, একটি ছেলেকে তার শয়নকক্ষকে চুরি করা ওয়ার্নিং সাইনগুলোকে সাজিয়ে রাখতে দেখানো, যেগুলোর মধ্যে ছিল “NO DIVING – POOL EMPTY”, “STOP – BRIDGE OUT” এবং “SPRING CONDEMNED।”

ব্ল্যাক কমেডি ব্লু কমেডি (Blue Comedy) থেকে ভিন্ন—যা সাধারণত অশ্লীল বিষয়গুলির উপর বেশি মনোনিবেশ করে, যেমন নগ্নতা, যৌনতা, এবং দেহের তরল—এবং সরাসরি অশ্লীলতার থেকেও আলাদা। যেখানে ব্ল্যাক কমেডি একটি তুলনামূলকভাবে বিস্তৃত শব্দ যা বিভিন্ন গুরুতর বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত হাস্যরসকে কভার করে, সেখানে গ্যালোস হিউমার সাধারণত মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত বা মৃত্যুর মতো পরিস্থিতির সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। ব্ল্যাক হিউমার মাঝে মাঝে গ্রোটেস্ক (Grotesque) ধারার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। সাহিত্য সমালোচকরা প্রাচীন গ্রীকদের সময়কার লেখক অ্যারিস্টোফেনেসের (Aristophanes) মতো লেখকদের সঙ্গে ব্ল্যাক কমেডি এবং ব্ল্যাক হিউমারকে যুক্ত করেছেন।

অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী (Unreliable Narrator)

সাহিত্য (Literature), চলচ্চিত্র (Film), এবং অন্যান্য শিল্পকর্মে, একজন অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী (Unreliable Narrator) হলেন সেই বর্ণনাকারী যাকে বিশ্বাস করা যায় না, যার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ (Credibility is Compromised)। তারা কথাসাহিত্য (Fiction) এবং চলচ্চিত্রে (Film) পাওয়া যায় এবং শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক চরিত্র (Mature Characters) পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। যদিও অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীরা প্রায়শই ফার্স্ট-পারসন বর্ণনাকারী (First-Person Narrators) হন, তবুও চলচ্চিত্র (Film) এবং টেলিভিশনের (Television) প্রসঙ্গে সেকেন্ড-পারসন (Second-Person) এবং থার্ড-পারসন (Third-Person) অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর (Unreliable Narrators) অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, যা কখনও কখনও সাহিত্যে (Literature) ও পাওয়া যায়।

“অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী” (Unreliable Narrator) পরিভাষাটি ওয়েন সি. বুথ (Wayne C. Booth) তার ১৯৬১ সালের বই The Rhetoric of Fiction এ প্রথম প্রবর্তন করেন। জেমস ফেলান (James Phelan) বুথের ধারণাকে প্রসারিত করে “বন্ডিং আনরিলায়াবিলিটি” (Bonding Unreliability) পরিভাষাটি প্রস্তাব করেছেন, যা সেই পরিস্থিতিগুলি বোঝায় যেখানে অবিশ্বাস্য বর্ণনাটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনাকারীকে কাজটির কল্পিত শ্রোতার (Envisioned Audience) নিকটবর্তী করে, এবং এর ফলে কল্পিত লেখক (Implied Author) এবং এই “লেখকীয় শ্রোতা”র (Authorial Audience) মধ্যে একটি সংযোগমূলক যোগাযোগ (Bonding Communication) সৃষ্টি হয়।

কখনও কখনও বর্ণনাকারীর অনির্ভরযোগ্যতা (Unreliability) তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গল্পের শুরুতেই বর্ণনাকারী হয়ত একটি স্পষ্ট মিথ্যা (Plainly False) বা বিভ্রান্তিকর দাবি (Delusional Claim) করতে পারে বা স্বীকার করতে পারে যে তিনি মারাত্মক মানসিক অসুস্থতায় (Severely Mentally Ill) ভুগছেন, অথবা গল্পটির নিজস্ব কাঠামোতে বর্ণনাকারীকে একটি চরিত্র হিসাবে উপস্থাপন করা হতে পারে, যেখানে চরিত্রটির অবিশ্বাস্যতার (Unreliability) ক্লু দেওয়া হয়। একটি আরও নাটকীয় পদ্ধতিতে (Dramatic Use), অবিশ্বাস্যতার প্রকাশ (Revelation) গল্পের শেষের দিকে বিলম্বিত করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে, পাঠকরা আবিষ্কার করেন যে আগের বর্ণনায় (Foregoing Narrative) বর্ণনাকারী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য (Vital Pieces of Information) লুকিয়ে রেখেছিলেন বা খুবই বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছিলেন (Greatly Misrepresented)। এমন একটি মোড়ের সমাপ্তি (Twist Ending) পাঠকদের গল্পের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিজ্ঞতাকে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে। কিছু ক্ষেত্রে, বর্ণনাকারীর অবিশ্বাস্যতা কখনও সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় না বরং কেবল ইঙ্গিত দেওয়া হয়, পাঠকদের মনে সন্দেহ তৈরি হয় যে বর্ণনাকারীকে কতটুকু বিশ্বাস করা উচিত এবং কিভাবে গল্পটি ব্যাখ্যা করা উচিত।

অপরাধ ও মনস্তত্ত্ব সংক্রান্ত

সিরিয়াল কিলার (Serial Killer)

সিরিয়াল কিলার (Serial Killer) বা সিরিয়াল মডারার (Serial Murderer) হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি দুই বা ততোধিক মানুষকে হত্যা করেন, এবং এই হত্যাকাণ্ডগুলো একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ঘটে। সিরিয়াল কিলারদের মানসিক সন্তুষ্টি (Psychological Gratification) হলো হত্যাকাণ্ডের প্রাথমিক প্রেরণা, এবং অনেক সিরিয়াল হত্যাকাণ্ডে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কও জড়িত থাকে, যা হত্যাকাণ্ডের প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (FBI) মতে, সিরিয়াল কিলারদের প্রেরণা হিসেবে ক্রোধ (Anger), রোমাঞ্চ-অন্বেষণ (Thrill-Seeking), আর্থিক লাভ (Financial Gain), এবং মনোযোগ আকর্ষণ (Attention Seeking) থাকতে পারে এবং এই প্রেরণাগুলির ভিত্তিতে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে সাধারণত কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য, যেমন ডেমোগ্রাফিক প্রোফাইল (Demographic Profile), চেহারা, লিঙ্গ বা বর্ণের মিল থাকতে পারে। যদিও সিরিয়াল কিলারদের গণহত্যাকারী (Mass Murderer), স্প্রি কিলার (Spree Killer), বা চুক্তিবদ্ধ হত্যাকারীর (Contract Killer) থেকে আলাদা একটি শ্রেণিবিভাগ হিসেবে দেখা হয়, তবুও এদের মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে মিল পাওয়া যায়।

নার্সিসিজম (Narcissism)

নার্সিসিজম (Narcissism) হলো একটি আত্মকেন্দ্রিক ব্যক্তিত্বের ধরণ যা নিজস্ব প্রয়োজন এবং নিজস্ব সম্পর্কে অতিরিক্ত ব্যস্ততা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, যা প্রায়শই অন্যদের ক্ষতির কারণ হয়। নার্সিসিজম একটি ধারাবাহিকতা বা কন্টিন্যুইটিতে বিদ্যমান থাকে যা সাধারণ থেকে অস্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত। অনেক মনোবিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে মানুষের মধ্যে একটি মাঝারি পরিমাণের নার্সিসিজম স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর, তবে এর অধিকতর চরম রূপও রয়েছে, যা বিশেষভাবে দেখা যায় এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যারা অত্যধিক আত্মমগ্ন বা যারা নার্সিসিস্টিক ব্যক্তিত্ব ব্যাধি (Narcissistic Personality Disorder, NPD) এর মতো মানসিক রোগে ভুগছেন। এই ধরনের চরম নার্সিসিজম তখন প্যাথলজিকাল (Pathological) হয়ে ওঠে, যা কার্যকরী প্রতিবন্ধকতা (Functional Impairment) এবং মনোসামাজিক অক্ষমতার (Psychosocial Disability) দিকে নিয়ে যায়।

নেক্রোফিলিয়া (Necrophilia)

নেক্রোফিলিয়া (Necrophilia) নেক্রোফিলিজম (Necrophilism), নেক্রোল্যাগনিয়া (Necrolagnia), নেক্রোকোইটাস (Necrocoitus), নেক্রোক্লেসিস (Necrochlesis), এবং থানাটোফিলিয়া (Thanatophilia) নামেও পরিচিত। এটি হলো মৃতদেহের প্রতি যৌন আকর্ষণ বা মৃতদেহের সাথে যৌন কর্মকাণ্ড। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর আন্তর্জাতিক রোগ শ্রেণীবিন্যাস (ICD) ডায়াগনস্টিক ম্যানুয়াল এবং আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (American Psychiatric Association) এর ডায়াগনস্টিক এবং স্ট্যাটিস্টিক্যাল ম্যানুয়াল (DSM) অনুযায়ী একটি প্যারাফিলিয়া (Paraphilia) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ।

মানব ভক্ষণ বা হিউম্যান ক্যানিবালিজম (Human Cannibalism)

মানব ভক্ষণ বা হিউম্যান ক্যানিবালিজম (Human Cannibalism) হলো মানুষের মাংস বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গ খাওয়ার কাজ বা চর্চা। যিনি এই কাজ করেন তাকে বলা হয় “ক্যানিবাল” (Cannibal)। “ক্যানিবালিজম” (Cannibalism) শব্দটির অর্থ সম্প্রসারণ করে প্রাণিবিদ্যায়ও ব্যবহার করা হয়, যেখানে প্রাণীরা তাদের নিজের প্রজাতির অন্য ব্যক্তিদের অংশ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। অ্যানাটমিক্যালি আধুনিক মানুষ, নিঅ্যান্ডারথাল (Neanderthals), এবং হোমো অ্যান্টেসেসর (Homo Antecessor) প্রায়-পুরাতাত্ত্বিক যুগে (Pleistocene) কিছু পরিমাণে ক্যানিবালিজম চর্চা করেছিল বলে জানা যায়। প্রাচীন মিশর এবং রোমান যুগে, এবং পরবর্তীতে তীব্র দুর্ভিক্ষের সময়ে, মিশরে ক্যানিবালিজমের চর্চা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। লেসার অ্যান্টিলিসের (Lesser Antilles) আইল্যান্ড ক্যারিবস (Island Caribs), যাদের নাম থেকে “ক্যানিবাল” শব্দটির উৎপত্তি, তাদের মানুষের মাংস ভক্ষক হিসেবে দীর্ঘস্থায়ী খ্যাতি ছিল, যা ১৭শ শতাব্দীতে তাদের কিংবদন্তির নথিভুক্তির মাধ্যমে পুনরায় নিশ্চিত করা হয়। তবে, এই কিংবদন্তিগুলোর সঠিকতা এবং তাদের সংস্কৃতিতে প্রকৃত ক্যানিবালিজমের প্রচলন নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ক্যানিবালিজমের প্রচলন ভালোভাবে নথিভুক্ত হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফিজি (যাকে একসময় “ক্যানিবাল আইলস” নামে ডাকা হতো), অ্যামাজন বেসিন (Amazon Basin), কঙ্গো, এবং নিউজিল্যান্ডের মাওরি জনগণ। নিউ গিনি (New Guinea) এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জের (Solomon Islands) কিছু অংশে ক্যানিবালিজমের চর্চা করা হতো, এবং মেলানেশিয়ার (Melanesia) এবং কঙ্গো বেসিনের (Congo Basin) কিছু অংশে মানব মাংস বাজারে বিক্রি করা হতো। প্রাথমিক আধুনিক ইউরোপে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মানবদেহের অংশ বা রক্ত খাওয়ার একটি ক্যানিবালিজমের রূপ প্রচলিত ছিল। এই চর্চা ১৭শ শতাব্দীতে তার শিখরে পৌঁছেছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে ১৯শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত চলমান ছিল। ক্যানিবালিজম মাঝে মাঝে দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত লোকদের শেষ অবলম্বন হিসেবে চর্চা করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে ডোনার পার্টি (Donner Party) (১৮৪৬–১৮৪৭), হোলোডোমোর (Holodomor) (১৯৩২–১৯৩৩), এবং উরুগুয়ান এয়ার ফোর্স ফ্লাইট ৫৭১ (Uruguayan Air Force Flight 571) এর দুর্ঘটনা (১৯৭২), যার পর বেঁচে থাকা লোকেরা মৃতদের দেহ খেয়েছিল। এছাড়াও, কিছু লোক যৌন আনন্দের জন্য ক্যানিবালিজমে লিপ্ত হয়েছে, যেমন আলবার্ট ফিশ (Albert Fish), ইসেই সাগাওয়া (Issei Sagawa), জেফ্রি ডাহমার (Jeffrey Dahmer), এবং আরমিন মিউওয়েস (Armin Meiwes)।

ক্যানিবালিজমকে বিভিন্ন সাম্প্রতিক যুদ্ধে, বিশেষত লাইবেরিয়া এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে, চর্চা করা হয়েছে এবং তা তীব্রভাবে নিন্দিত হয়েছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত পাপুয়া নিউ গিনিতে সাংস্কৃতিক কারণে ক্যানিবালিজম চর্চা করা হতো। ক্যানিবালিজম সংস্কৃতিগত আপেক্ষিকতার সীমাকে পরীক্ষা করে বলে দাবি করা হয়েছে কারণ এটি নৃতত্ত্ববিদদের চ্যালেঞ্জ করে “মানব আচরণের গ্রহণযোগ্যতার সীমার বাইরে কি, তা সংজ্ঞায়িত করতে”। কিছু পণ্ডিত যুক্তি দিয়েছেন যে ক্যানিবালিজমকে কোথাও কখনও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য প্রথা হিসেবে প্রমাণ করার জন্য কোনো শক্ত প্রমাণ নেই, কিন্তু এই ধরনের মতামতকে বাস্তব প্রমাণের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে সাধারণত প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

উদ্বিগ্নতা বা এনজাইটি (Anxiety)

উদ্বিগ্নতা বা এনজাইটি (Anxiety) হল এমন একটি আবেগ যা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার (Inner Turmoil) অস্বস্তিকর অবস্থার দ্বারা চিহ্নিত এবং প্রত্যাশিত ঘটনাগুলোর (Anticipated Events) প্রতি আশঙ্কার অনুভূতি অন্তর্ভুক্ত করে। উদ্বিগ্নতা ভয়ের (Fear) থেকে আলাদা, কারণ ভয় হল বর্তমান বিপদের (Present Threat) প্রতি আবেগগত প্রতিক্রিয়া (Emotional Response) হিসেবে সংজ্ঞায়িত, যেখানে উদ্বিগ্নতা হল ভবিষ্যতের (Future) বিপদের প্রত্যাশা। এটি প্রায়ই এমন স্নায়বিক আচরণের (Nervous Behavior) সাথে যুক্ত থাকে যেমন একজায়গায় পায়চারি করা (Pacing Back and Forth), দেহের অস্বস্তি (Somatic Complaints), এবং অতি-চিন্তা (Rumination)। উদ্বিগ্নতা হল একটি উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তার অনুভূতি, যা সাধারণত একটি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া (Overreaction) হিসেবে দেখা দেয় এবং সাধারণত লক্ষ্যহীন হয়, এমন একটি পরিস্থিতিতে যা কেবল বিষয়গতভাবে বিপজ্জনক (Menacing) বলে মনে হয়। এটি প্রায়ই পেশী টান (Muscular Tension), অস্থিরতা (Restlessness), ক্লান্তি (Fatigue), শ্বাস নিতে অক্ষমতা (Inability to Catch One’s Breath), পেটে চাপ (Tightness in the Abdominal Region), বমি বমি ভাব (Nausea), এবং মনোসংযোগের সমস্যার (Problems in Concentration) সাথে যুক্ত হয়।

উদ্বিগ্নতা ঘনিষ্ঠভাবে ভয়ের সাথে সম্পর্কিত, যা একটি বাস্তব বা অনুমিত তাৎক্ষণিক হুমকির প্রতি (Fight-or-Flight Response) প্রতিক্রিয়া; উদ্বিগ্নতা ভবিষ্যতের হুমকির প্রত্যাশার সাথে যুক্ত যা ভীতি বা আশঙ্কা (Dread) সৃষ্টি করে। যারা উদ্বিগ্নতার সম্মুখীন হন তারা প্রায়ই অতীতের উদ্বিগ্নতা উৎপাদক পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকেন। উদ্বিগ্নতার অনুভূতি বিশেষ ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিকাশজনিত সময়ের (Developmentally Appropriate Time-Periods) বাইরেও অব্যাহত থাকতে পারে এবং একাধিক উদ্বিগ্নতাজনিত বিকৃতি বা এনজাইটি ডিজর্ডারতে (Anxiety Disorders) পরিণত হতে পারে, যেমন সাধারণীকৃত উদ্বিগ্নতাজনিত ডিজর্ডার (Generalized Anxiety Disorder), প্যানিক ডিজর্ডার (Panic Disorder)। উদ্বিগ্নতাজনিত ডিজর্ডার (মানসিক ডিজর্ডার হিসেবে) এবং উদ্বিগ্নতা (স্বাভাবিক আবেগ হিসেবে) এর মধ্যে পার্থক্য হল, উদ্বিগ্নতাজনিত ডিজর্ডারতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায় ৬ মাস বা শিশুদের ক্ষেত্রে আরও কম সময়ের জন্য অতিরিক্ত বা স্থায়ীভাবে উদ্বিগ্নতার সম্মুখীন হন। উদ্বিগ্নতাজনিত ডিজর্ডারগুলি সবচেয়ে স্থায়ী মানসিক সমস্যাগুলির মধ্যে একটি এবং প্রায়ই কয়েক দশক ধরে থাকে। উদ্বিগ্নতা অন্যান্য মানসিক ডিজর্ডারতেও অনুভূত হতে পারে, যেমন অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিজর্ডার (Obsessive-Compulsive Disorder), পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (Post-Traumatic Stress Disorder)

আত্ম-মর্যাদা (Self-Esteem)

আত্ম-মর্যাদা (Self-Esteem) হল নিজের মূল্য, ক্ষমতা বা নৈতিকতার প্রতি আত্মবিশ্বাস। এটি নিজের সম্পর্কে বিশ্বাস (যেমন, “আমি ভালোবাসার যোগ্য”, “আমি মূল্যবান”), ও সেই সাথে আবেগগত অবস্থাকে (Emotional States) অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন বিজয়, হতাশা, গর্ব, এবং লজ্জা। স্মিথ এবং ম্যাকি এটিকে সংজ্ঞায়িত করে বলেন, “স্ব-ধারণা (Self-Concept) হল আমরা নিজেদের সম্পর্কে কী ভাবি; আত্ম-মর্যাদা হল নিজের প্রতি ইতিবাচক বা নেতিবাচক মূল্যায়ন, যেমন আমরা এটি সম্পর্কে কী অনুভব করি।” আত্ম-মর্যাদার ধারণাটি (Construct of Self-Esteem) মনোবিজ্ঞানে একটি কাম্য ধারণা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, কারণ এটি বিভিন্ন ইতিবাচক ফলাফলের সাথে যুক্ত, যেমন: একাডেমিক সাফল্য, সম্পর্কের সন্তুষ্টি, সুখ, এবং অপরাধমূলক আচরণের নিম্ন হার। উচ্চ আত্ম-মর্যাদার সুবিধাগুলি (Benefits of High Self-Esteem) মধ্যে উন্নত মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য, এবং কম অপরাধমূলক আচরণের হার অন্তর্ভুক্ত, যেখানে নিম্ন আত্ম-মর্যাদার ক্ষতিগুলি (Drawbacks of Low Self-Esteem) মধ্যে উদ্বেগ, একাকীত্ব, এবং মাদকাসক্তির প্রতি অধিক ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত। আত্ম-মর্যাদা নির্দিষ্ট একটি গুণাবলীর ক্ষেত্রে বা সামগ্রিকভাবে প্রযোজ্য হতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা সাধারণত আত্ম-মর্যাদাকে একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য (Trait Self-Esteem) হিসেবে বিবেচনা করেন, যদিও স্বাভাবিক, স্বল্পমেয়াদী পরিবর্তনও (State Self-Esteem) বিদ্যমান থাকে। আত্ম-মর্যাদার প্রতিশব্দ বা কাছাকাছি প্রতিশব্দগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: আত্ম-মূল্য (Self-Worth), আত্ম-সম্মাননা (Self-Regard), আত্ম-সম্মান (Self-Respect), এবং আত্ম-অখণ্ডতা (Self-Integrity)।

নিম্ন আত্ম-মর্যাদা (Low Self-Esteem)

নিম্ন আত্ম-মর্যাদা (Low Self-Esteem) বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন জেনেটিক কারণ, শারীরিক চেহারা বা ওজন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ আবেগগত অভিজ্ঞতা, সামাজিক অপমান, সহপাঠীর চাপ বা হয়রানি। নিম্ন আত্ম-মর্যাদাযুক্ত একজন ব্যক্তি নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির কিছু প্রদর্শন করতে পারেন:

  • প্রচণ্ড আত্ম-সমালোচনা এবং অসন্তোষ।
  • সমালোচনার প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা, সমালোচকদের প্রতি বিরক্তি এবং আক্রমণাত্মক অনুভূতি।
  • দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা এবং ভুলের প্রতি অতিরিক্ত ভয়।
  • অতিরিক্ত খুশি করার ইচ্ছা এবং কাউকে অখুশি করার অনিচ্ছা।
  • পরিপূর্ণতা অর্জনের চেষ্টা, যা প্রায়ই হতাশার দিকে নিয়ে যায় যখন তা অর্জিত হয় না।
  • নিউরোটিক অপরাধবোধ, অতীতের ভুলগুলোর মাত্রা বাড়িয়ে দেখানো।
  • ভাসমান শত্রুতা এবং সাধারণ প্রতিরক্ষা মনোভাব এবং উত্তেজনা কোনো নিকটবর্তী কারণ ছাড়াই।
  • হতাশাবাদ এবং সাধারণ নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
  • ঈর্ষা, হিংসা বা সাধারণ বিরক্তি।
  • অস্থায়ী ব্যর্থতাকে স্থায়ী, অসহনীয় অবস্থা হিসেবে দেখা।

নিম্ন আত্ম-মর্যাদাযুক্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই নিজেদের সমালোচনা করে থাকেন। কিছু ব্যক্তি অন্যদের অনুমোদন এবং প্রশংসার উপর নির্ভর করে আত্মমূল্যায়ন করেন। অন্যরা তাদের সফলতার ভিত্তিতে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা মাপে: তারা সফল হলে নিজেদের গ্রহণ করবে, কিন্তু ব্যর্থ হলে করবে না। দীর্ঘমেয়াদী নিম্ন আত্ম-মর্যাদাযুক্ত ব্যক্তিরা মানসিক ব্যাধির উচ্চতর ঝুঁকিতে থাকে; এবং এই আচরণ মানসিক উপসর্গ গঠনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। মেটাকগনিটিভ থেরাপি (Metacognitive Therapy), ইএমডিআর (EMDR) কৌশল, মাইন্ডফুলনেস-ভিত্তিক কগনিটিভ থেরাপি (Mindfulness-Based Cognitive Therapy), র‍্যাশনাল ইমোটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (Rational Emotive Behavior Therapy), কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (Cognitive Behavioral Therapy) এবং ট্রেইট ও কনস্ট্রাক্ট থেরাপিগুলো (Trait and Construct Therapies) রোগীর আত্ম-মর্যাদা উন্নত করতে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে।

সাইকোসিস (Psychosis)

সাইকোসিস (psychosis) হলো মনের একটি অবস্থা যা বাস্তব এবং অবাস্তবের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণে অসুবিধা তৈরি করে। এর উপসর্গগুলোর মধ্যে বিভ্রম (delusions) এবং অলীক প্রত্যক্ষণ বা হেলুসিনেশন (hallucinations) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এছাড়াও, অসংলগ্ন বক্তৃতা এবং পরিস্থিতির সাথে বেমানান আচরণও এর লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া, ঘুমের সমস্যা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, অনুপ্রেরণার অভাব এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধা দেখা দিতে পারে। সাইকোসিস গুরুতর প্রতিকূল ফলাফল আনতে পারে।

সাইকোসিসের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন:

প্রসূতিপর সাইকোসিস (postpartum psychosis) নামে এক ধরনের সাইকোসিস সন্তান জন্মদানের পর দেখা দিতে পারে।

ডোপামিন (dopamine) নামক নিউরোট্রান্সমিটারটি সাইকোসিসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। তীব্র সাইকোসিসকে প্রাথমিক (primary) বলা হয় যখন এটি মানসিক অবস্থার ফলাফল হিসেবে দেখা দেয় এবং গৌণ (secondary) বলা হয় যখন এটি অন্য কোনো শারীরিক অবস্থা বা মাদকের কারণে ঘটে। মানসিক স্বাস্থ্য শর্তের নির্ণয় করার সময় অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলি বাদ দেওয়া প্রয়োজন। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম রোগ, টক্সিন, বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি কারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে পরীক্ষা করা হতে পারে।

সাইকোসিসের চিকিৎসায় এন্টিসাইকোটিক ওষুধ (antipsychotic medication), মনোচিকিৎসা (psychotherapy), এবং সামাজিক সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসা ভালো ফলাফল দিতে পারে। ওষুধগুলো সাধারণত মাঝারি প্রভাব ফেলে। ফলাফল নির্ভর করে অন্তর্নিহিত কারণের উপর।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩% মানুষ তাদের জীবনের কোনো এক পর্যায়ে সাইকোসিসের শিকার হয়। এই অবস্থাটি কমপক্ষে খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে হিপোক্রেটিস (Hippocrates) দ্বারা এবং সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে মিশরীয় ইবার্স প্যাপিরাসে (Ebers Papyrus) বর্ণনা করা হয়েছে।

হেলুসিনেশন (Hallucination)

হেলুসিনেশন (Hallucination) হল এমন একটি উপলব্ধি যা কোনও বাহ্যিক উদ্দীপনার (External Stimulus) অনুপস্থিতিতে ঘটে এবং এটি বাস্তবতার (Reality) একটি বাধ্যতামূলক অনুভূতি প্রদান করে। হেলুসিনেশন (Hallucination) হল মস্তিষ্কের জাগ্রত অবস্থা (Brain Wakefulness) এবং REM ঘুমের (REM Sleep) দুটি সচেতন অবস্থার একটি সংমিশ্রণ। এগুলি বেশ কয়েকটি সম্পর্কিত ঘটনাগুলির থেকে ভিন্ন, যেমন স্বপ্ন (Dreaming), যা জাগ্রত থাকার (Wakefulness) সাথে সম্পর্কিত নয়; ছদ্মভ্রম (Pseudohallucination), যা বাস্তব উপলব্ধির (Real Perception) অনুকরণ করে না এবং সঠিকভাবে অবাস্তব হিসেবে বোঝা যায়; বিভ্রম (Illusion), যা বিকৃত বা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা বাস্তব উপলব্ধির (Real Perception) সাথে সম্পর্কিত; এবং মানসিক চিত্র (Mental Imagery), যা বাস্তব উপলব্ধির (Real Perception) অনুকরণ করে না এবং স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রণের (Voluntary Control) অধীনে থাকে। হেলুসিনেশন (Hallucination) “মিথ্যাবিশ্বাসী উপলব্ধি” (Delusional Perception) থেকে আলাদা, যেখানে একটি সঠিকভাবে অনুভূত এবং ব্যাখ্যা করা উদ্দীপনাকে অতিরিক্ত তাৎপর্য দেওয়া হয়।

হেলুসিনেশন (Hallucination) যে কোনও ইন্দ্রিয় পদ্ধতিতে (Sensory Modality)—দৃশ্যমান (Visual), শ্রাব্য (Auditory), ঘ্রাণ (Olfactory), স্বাদগ্রহণ (Gustatory), স্পর্শন (Tactile), প্রোপ্রিওসেপ্টিভ (Proprioceptive), ইকুইলিব্রিওসেপ্টিভ (Equilibrioceptive), নোসিসেপ্টিভ (Nociceptive), থার্মোসেপ্টিভ (Thermoceptive) এবং ক্রোনোসেপ্টিভ (Chronoceptive)—ঘটতে পারে। একাধিক ইন্দ্রিয় পদ্ধতিতে ঘটলে হেলুসিনেশনকে মাল্টিমোডাল (Multimodal) বলা হয়।

একটি মৃদু হেলুসিনেশনকে বিঘ্ন (Disturbance) বলা হয়, এবং এটি উপরের বেশিরভাগ ইন্দ্রিয়ে ঘটতে পারে। এগুলির মধ্যে হতে পারে পার্শ্বীয় দৃষ্টিতে (Peripheral Vision) কিছু নড়াচড়া দেখা বা ক্ষীণ শব্দ বা কণ্ঠস্বর শোনা। শ্রাব্য হেলুসিনেশন (Auditory Hallucination) স্কিজোফ্রেনিয়ায় (Schizophrenia) খুব সাধারণ। এগুলি উপকারী (যেমন, বিষয়টিকে নিজের সম্পর্কে ভালো কিছু বলা) বা ক্ষতিকারক (যেমন, বিষয়টিকে অভিশাপ দেওয়া) হতে পারে। ৫৫% শ্রাব্য হেলুসিনেশন ক্ষতিকারক প্রকৃতির, উদাহরণস্বরূপ, মানুষ বিষয়টির সম্পর্কে কথা বলছে, সরাসরি তার সাথে কথা বলছে না। শ্রাব্য হেলুসিনেশনের (Auditory Hallucination) মতো, এর দৃশ্যমান সমকক্ষও বিষয়টির পিছনে থাকতে পারে, যা সাধারণত শত্রুতামূলক উদ্দেশ্য নিয়ে তাকানো বা দেখার অনুভূতি তৈরি করতে পারে। প্রায়শই, শ্রাব্য হেলুসিনেশন এবং এর দৃশ্যমান সমকক্ষ একসাথে অনুভূত হয়।

হিপনাগজিক হেলুসিনেশন (Hypnagogic Hallucination) এবং হিপনোপম্পিক হেলুসিনেশন (Hypnopompic Hallucination) স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। হিপনাগগিক হেলুসিনেশন (Hypnagogic Hallucination) ঘুমিয়ে পড়ার সময় এবং হিপনোপম্পিক হেলুসিনেশন (Hypnopompic Hallucination) জাগ্রত হওয়ার সময় ঘটে। হেলুসিনেশন (Hallucination) মাদক ব্যবহার, ঘুমের অভাব, মানসিক রোগ, স্নায়বিক রোগ এবং ডেলিরিয়াম ট্রেমেন্স (Delirium Tremens) এর সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। অনেক হেলুসিনেশন (Hallucination) স্লিপ প্যারালাইসিসের (Sleep Paralysis) সময়ও ঘটে।

“হেলুসিনেশন” (Hallucination) শব্দটি নিজেই ১৭ শতকের চিকিৎসক স্যার থমাস ব্রাউন ১৬৪৬ সালে ইংরেজি ভাষায় প্রবর্তন করেছিলেন, যা ল্যাটিন শব্দ “অলুসিনারি” থেকে এসেছে, যার অর্থ “মনে ঘুরে বেড়ানো”। ব্রাউন হেলুসিনেশনকে (Hallucination) একটি দৃষ্টি হিসেবে উল্লেখ করেছেন যা “বিকৃত এবং তার বস্তুকে ভুলভাবে গ্রহণ করে”।

সাইকোঅ্যাকটিভ ও সাইকোট্রপিক ড্রাগ (Psychoactive Drug)

সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগ (Psychoactive Drug), মানসিক-পরিবর্তনকারী ড্রাগ (Mind-Altering Drug), বা চেতনা-পরিবর্তনকারী ড্রাগ (Consciousness-Altering Drug) হল একটি রাসায়নিক পদার্থ যা মস্তিষ্কের কার্যক্রম পরিবর্তন করে এবং উপলব্ধি (Perception), মেজাজ (Mood), চেতনা (Consciousness), জ্ঞান (Cognition), বা আচরণে (Behavior) পরিবর্তন ঘটায়। সাইকোট্রপিক ড্রাগ (Psychotropic Drug) শব্দটি প্রায়ই একইভাবে ব্যবহৃত হয়, যদিও কিছু সূত্র এতে আরও সংকীর্ণ সংজ্ঞা প্রদান করে। এই পদার্থগুলি ব্যবহার করা হয় চিকিৎসা (Medically), বিনোদনমূলক (Recreationally), উদ্দেশ্যমূলকভাবে কর্মক্ষমতা উন্নত করা বা কারও চেতনায় পরিবর্তন আনার জন্য; আধ্যাত্মিক (Spiritual) বা শামানিক (Shamanic) উদ্দেশ্যে এন্টিওজেন হিসেবে; অথবা গবেষণার (Research) জন্য, যার মধ্যে সাইকেডেলিক থেরাপিও (Psychedelic Therapy) এর ব্যবহারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিছু সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগের চিকিৎসাগত গুরুত্ব রয়েছে, যা চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা নির্ধারণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যানেসথেটিকস (Anesthetics), অ্যানালজেসিকস (Analgesics), অ্যান্টিকনভালসান্ট (Anticonvulsant) এবং অ্যান্টিপারকিনসোনিয়ান ড্রাগ (Antiparkinsonian Drugs) পাশাপাশি স্নায়বিক মানসিক ব্যাধি (Neuropsychiatric Disorders) যেমন ডিপ্রেশন (Antidepressants), উদ্বেগ (Anxiolytics), মনোচিকিৎসা (Antipsychotics) এবং উদ্দীপক ওষুধ (Stimulant Medications) এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিছু সাইকোঅ্যাকটিভ পদার্থকে ডিটক্সিফিকেশন (Detoxification) এবং পুনর্বাসন কর্মসূচিতে (Rehabilitation Programs) ব্যবহৃত হয় যা অন্য সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগগুলির প্রতি আসক্ত (Addiction) বা নির্ভরশীল ব্যক্তিদের জন্য।

সাইকোঅ্যাকটিভ পদার্থগুলি প্রায়শই চেতনা এবং মেজাজের (Consciousness and Mood) বিষয়গত পরিবর্তনগুলি ঘটায় (যদিও এগুলি নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে) যা ব্যবহারকারীরা উপভোগ্য এবং আনন্দদায়ক (যেমন, উচ্ছ্বাস বা শিথিলতার অনুভূতি) বা নিরপেক্ষভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য বা পরিমাপযোগ্য উপায়ে সুবিধাজনক (যেমন, বর্ধিত সতর্কতা) বলে মনে করেন, যার ফলে এই প্রভাবগুলি বিভিন্ন মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। পুরস্কৃত (Rewarding) এবং ইতিবাচকভাবে রিইনফোর্সমেন্ট এগুলোর প্রতি আসক্তি (Addiction) তৈরি করার সম্ভাবনা রাখে—যদিও নেতিবাচক ফলাফল সত্ত্বেও বাধ্যতামূলক ড্রাগ ব্যবহার ঘটে। তাছাড়া, কিছু পদার্থের ধারাবাহিক ব্যবহার শারীরিক বা মানসিক নির্ভরতা (Physical or Psychological Dependence) বা উভয়ই উৎপন্ন করতে পারে, যা শরীরবৃত্তীয় (Somatic) বা মানসিক-আবেগীয় প্রত্যাহার অবস্থার (Psychological-Emotional Withdrawal States) সাথে সম্পর্কিত। ড্রাগ পুনর্বাসনের (Drug Rehabilitation) প্রচেষ্টায় আসক্তি কমানোর জন্য মনোচিকিৎসা (Psychotherapy), সহায়ক গোষ্ঠী (Support Groups), এবং অন্যান্য সাইকোঅ্যাকটিভ পদার্থের সংমিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। বিপরীতে, কিছু সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগ এতই অপ্রিয় হতে পারে যে ব্যক্তি সেই পদার্থটি আর কখনো ব্যবহার করতে চায় না। এটি বিশেষত কিছু ডেলিরিয়েন্টস (Deliriants) যেমন জিমসন উইড (Jimson Weed), শক্তিশালী ডিসোসিয়েটিভস (Dissociatives) যেমন সালভিয়া ডিভিনোরাম (Salvia Divinorum), এবং ক্লাসিক সাইকেডেলিকস (Classic Psychedelics) যেমন এলএসডি (LSD), সিলোসাইবিন (Psilocybin) এর ক্ষেত্রে সত্য, যা “ব্যাড ট্রিপ” (Bad Trip) এর রূপ নিতে পারে।

সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগের অপব্যবহার (Misuse), নির্ভরতা (Dependence), এবং আসক্তি (Addiction) আইনি ব্যবস্থা এবং নৈতিক বিতর্কের (Moral Debate) কারণ হয়েছে। উৎপাদন, সরবরাহ এবং প্রেসক্রিপশন (Prescription) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমস্যাযুক্ত চিকিৎসাগত ড্রাগ ব্যবহারের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করা হয়; সাইকোঅ্যাকটিভ ড্রাগের চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টাগুলিকে সাধারণত “মাদক যুদ্ধ” (War on Drugs) বলা হয়। এছাড়াও, এই ড্রাগগুলির অতিরিক্ত ব্যবহারের (Overuse) বিষয়ে এবং তাদের উৎপাদনকারীদের (Manufacturers) দ্বারা বিপণনের (Marketing) বিষয়ে নৈতিক উদ্বেগ উঠেছে। কিছু নির্দিষ্ট ড্রাগের (যেমন, ক্যানাবিস) বিনোদনমূলক ব্যবহারের অপরাধমুক্তি (Decriminalization) বা বৈধকরণের (Legalization) জন্যও জনপ্রিয় প্রচারাভিযান (Popular Campaigns) চলছে।

অ্যালপ্রাজোলাম (Alprazolam) ও জ্যানাক্স (Xanax)

অ্যালপ্রাজোলাম (Alprazolam), যা ব্র্যান্ড নাম জ্যানাক্স (Xanax) এবং অন্যান্য নামে বিক্রি হয়, একটি দ্রুত কার্যকরী এবং মাঝারি সময়ের জন্য প্রভাবশালী ট্রাঙ্কুইলাইজার (Tranquilizer) যা ট্রায়াজোলোবেঞ্জোডিয়াজেপিন (Triazolobenzodiazepine) রাসায়নিক গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত, যা বেনজোডিয়াজেপিন (Benzodiazepine) নামে পরিচিত। অ্যালপ্রাজোলাম সাধারণত উদ্বেগজনিত ব্যাধি (Anxiety Disorders) বিশেষত প্যানিক ডিসঅর্ডার (Panic Disorder) এবং জেনারেলাইজড অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডার (Generalized Anxiety Disorder বা GAD) পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য ব্যবহারের মধ্যে কেমোথেরাপি-উদ্দীপিত বমি ভাবের চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা অন্যান্য চিকিৎসার সাথে মিলিত হয়ে ব্যবহৃত হয়। GAD এর উন্নতি সাধারণত এক সপ্তাহের মধ্যে ঘটে। অ্যালপ্রাজোলাম সাধারণত মুখে (Orally) গ্রহণ করা হয়।

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে তন্দ্রা (Sleepiness), বিষণ্ণতা (Depression) বা আবেগের দমন, মোটর দক্ষতায় (Motor Skills) মৃদু থেকে তীব্র হ্রাস, হেঁচকি (Hiccups), সংবেদনশীলতা বা পরিবেশের সাধারণ সচেতনতা হ্রাস, শুষ্ক মুখ (Dry Mouth), হৃৎস্পন্দন হ্রাস, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপের দমন (CNS Suppression), বিচারশক্তির হ্রাস (বিশেষ করে উচ্চতর মাত্রায়), মেমরি গঠনে হ্রাস, নতুন তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা হ্রাস, এবং ডোজের উপর নির্ভর করে আংশিক থেকে সম্পূর্ণ স্মৃতিভ্রংশ (Anterograde Amnesia)। কিছু তন্দ্রা এবং ক্লান্তি কয়েক দিনের মধ্যে উন্নতি করতে পারে।

অ্যালপ্রাজোলাম হঠাৎ কমিয়ে দিলে উইথড্রয়াল সিম্পটম বা প্রত্যাহার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

অ্যালপ্রাজোলাম ১৯৭১ সালে আপজন কোম্পানিতে (Upjohn Company) জ্যাকসন হেস্টার জুনিয়র দ্বারা উদ্ভাবিত হয় এবং ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত হয়। এটি একটি শিডিউল IV নিয়ন্ত্রিত পদার্থ এবং একটি সাধারণভাবে অপব্যবহৃত ড্রাগ। এটি একটি জেনেরিক ওষুধ হিসেবে উপলব্ধ। ২০২১ সালে, এটি যুক্তরাষ্ট্রে ৪২-তম সর্বাধিক নির্ধারিত ওষুধ ছিল, যার জন্য ১৫ মিলিয়নেরও বেশি প্রেসক্রিপশন ছিল।

সেক্সুয়াল স্যাডিজম ডিসঅর্ডার (Sexual Sadism Disorder)

সেক্সুয়াল স্যাডিজম ডিসঅর্ডার (Sexual Sadism Disorder) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে অন্য মানুষের উপর তার অনিচ্ছায় অত্যন্ত ব্যথা, কষ্ট বা অপমানের প্রতিক্রিয়ায় তীব্র যৌন উত্তেজনা অনুভূত হয়। এই অবস্থাটি বর্ণনা করার জন্য আরও কিছু শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি এমন অন্যান্য অবস্থার সঙ্গে ওভারল্যাপ হতে পারে যেগুলোতে ব্যথা সৃষ্টি করা জড়িত। এটি এমন পরিস্থিতি থেকে পৃথক যেখানে সম্মতিসূচক ব্যক্তিরা হালকা বা অনুকৃত ব্যথা বা অপমানকে যৌন উত্তেজনার জন্য ব্যবহার করেন। “স্যাডিজম” এবং “স্যাডিস্ট” শব্দগুলো ফরাসি লেখক এবং লিবারটিন মার্কুইস দে সাডের (Marquis de Sade) নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যিনি যৌনকেন্দ্রিক নির্যাতন এবং সহিংসতার বর্ণনা দিয়ে একাধিক উপন্যাস লিখেছিলেন।

অপমান (Humiliation)

অপমান (Humiliation) হলো অহংকারের হ্রাস যা লজ্জা সৃষ্টি করে বা কাউকে নম্রতা বা আত্মসমর্পণের অবস্থায় নামিয়ে আনে। এটি এমন একটি আবেগ যা একজন ব্যক্তি অনুভব করেন যখন তার সামাজিক মর্যাদা জোরপূর্বক বা ইচ্ছাকৃতভাবে কমে যায়। এটি ভীতি প্রদর্শন, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন বা প্রতারণার মাধ্যমে ঘটানো যেতে পারে, অথবা যখন কোনো ব্যক্তি সামাজিক বা আইনীভাবে অগ্রহণযোগ্য কাজ করে এবং তা প্রকাশ পায়, তখন বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। যেখানে নম্রতা (Humility) এককভাবে অহংকার কমানোর একটি মাধ্যম হিসেবে চাওয়া যেতে পারে, সেখানে অপমানের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য ব্যক্তিদের জড়িত থাকতে হয়, যদিও তা সরাসরি বা ইচ্ছাকৃতভাবে হতে নাও পারে। অপমান বর্তমানে একটি সক্রিয় গবেষণার বিষয় এবং এটি মানব সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল মূল গতিশীলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা ব্যক্তিগত, আন্তঃব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রভাব ফেলে।

বৈষম্যমূলক বা পক্ষপাতমূলক আচরণ সংক্রান্ত

নারীবিদ্বেষ (Misogyny)

নারীবিদ্বেষ (Misogyny) হল নারীদের বা মেয়েদের প্রতি ঘৃণা, অবজ্ঞা বা পক্ষপাত। এটি এমন একটি ধরনের লিঙ্গবৈষম্য যা নারীদের পুরুষদের তুলনায় নিম্ন সামাজিক অবস্থানে রাখে, ফলে পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক ভূমিকা বজায় থাকে। নারীবিদ্বেষ হাজার হাজার বছর ধরে ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়েছে। এটি বিশ্বব্যাপী শিল্প, সাহিত্য, মানব সমাজ কাঠামো, ঐতিহাসিক ঘটনা, পৌরাণিক কাহিনী, দর্শন এবং ধর্মে প্রতিফলিত হয়েছে।

নারীবিদ্বেষের একটি উদাহরণ হল নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, যার মধ্যে গার্হস্থ্য সহিংসতা এবং সবচেয়ে চরম রূপে নারীবিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসবাদ এবং নারী হত্যা (Femicide) অন্তর্ভুক্ত। নারীবিদ্বেষ প্রায়ই যৌন হয়রানি, জবরদস্তি এবং নারীদের নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মানসিক কৌশলগুলির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, এবং নারীদের সম্পূর্ণ নাগরিকত্ব থেকে আইনী বা সামাজিকভাবে বাদ দিয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে, নারীবিদ্বেষ নারীদের নিম্নতর অবস্থান গ্রহণ করার জন্য পুরস্কৃত করে।

নারীবিদ্বেষকে মানুষের দ্বারা, প্রধানত পুরুষদের দ্বারা ধারণ করা একটি মনোভাব ও এবং একটি বিস্তৃত সাংস্কৃতিক রীতি বা ব্যবস্থা হিসেবে বোঝা যেতে পারে। কখনও কখনও নারীবিদ্বেষ সুস্পষ্ট এবং সাহসী উপায়ে প্রকাশ পায়; অন্য সময়ে এটি অধিকতর সূক্ষ্ম বা এমনভাবে ছদ্মবেশে থাকে যা প্লসিবল ডিনায়াবিলিটি বা সম্ভাব্য অস্বীকৃতির (যার ফলে নারীবিদ্বেষী ব্যক্তি দাবি করতেই পারে যে তার আচরণ নারীবিদ্বেষী ছিলনা, তিনি অন্য কিছু বুঝিয়েছিলেন) সুযোগ দেয়।

নারীবাদী চিন্তা অনুসারে, নারীবিদ্বেষের মধ্যে নারীদের গুণাবলির প্রত্যাখ্যানও অন্তর্ভুক্ত। এটি নারীদের সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান, কাজ, শখ বা অভ্যাসকে ঘৃণার চোখে দেখে। এটি পুরুষদের যে কোন নারীত্ব বা অমার্জিত গুণাবলির প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে। বর্ণবাদ এবং অন্যান্য পক্ষপাত নারীবিদ্বেষকে শক্তিশালী করতে পারে এবং এর সাথে ওভারল্যাপ হতে পারে।

অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধান অনুসারে ইংরেজি শব্দ “Misogyny” ১৭শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গ্রিক শব্দ misos ‘ঘৃণা’ + gunē ‘নারী’ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। দ্বিতীয় তরঙ্গের নারীবাদ (Second-wave feminism) ১৯৭০-এর দশকে এটি জনপ্রিয় না হওয়া পর্যন্ত শব্দটি খুব কমই ব্যবহৃত হত।

বর্ণবাদ বা রেসিজম

বর্ণবাদ (Racism) হলো বর্ণ বা জাতিগত ভিত্তিতে মানুষদের প্রতি বৈষম্য এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ। বর্ণবাদ সামাজিক কর্মকাণ্ড, প্রথা, বা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় (যেমন: বর্ণবৈষম্য ব্যবস্থা) প্রকাশিত হতে পারে, যা পক্ষপাত বা অস্বস্তির অভিব্যক্তিকে বৈষম্যমূলক প্রথায় সমর্থন করে। বর্ণবাদী প্রথার পিছনের মতাদর্শ সাধারণত এই ধারণার উপর ভিত্তি করে যে মানুষদের আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত করা যায়, যারা সামাজিক আচরণ এবং স্বতন্ত্র ক্ষমতায় ভিন্ন এবং যাদেরকে নিম্ন বা উচ্চ শ্রেণীতে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। বর্ণবাদী মতাদর্শ সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশ পেতে পারে। এর সাথে সম্পর্কিত সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে নেটিভিজম (Nativism), বিদেশভীতি (Xenophobia), অন্যান্যতা (Otherness), পৃথকীকরণ (Segregation), বৈষম্যমূলক শ্রেণীকরণ (Hierarchical Ranking), শ্রেষ্ঠত্ববাদ (Supremacism) এবং সম্পর্কিত সামাজিক প্রপঞ্চসমূহ। বর্ণবাদ সমান সুযোগের ভিত্তিতে (আনুষ্ঠানিক সমতা) বা বিভিন্ন রেইস (Race) বা জাতিগত গোষ্ঠীর জন্য ফলাফলের সমতা (Substantive Equality) এর উপর ভিত্তি করে রেইসিয়াল (Racial) সমতার লঙ্ঘনের দিকে ইঙ্গিত করে।

যদিও সমসাময়িক সামাজিক বিজ্ঞানে রেইস (Race) এবং জাতিগত গোষ্ঠীর (Ethnicity) ধারণাগুলোকে আলাদা বলে মনে করা হয়, জনপ্রিয় ব্যবহার এবং পুরানো সামাজিক বিজ্ঞান সাহিত্যে এই দুটি শব্দের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যেখানে তাদের সমতুল্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। “জাতিগত গোষ্ঠী” (Ethnicity) প্রায়ই এমন একটি অর্থে ব্যবহৃত হয় যা প্রথাগতভাবে “রেইস” (Race) এর সাথে সংযুক্ত থাকে, অর্থাৎ গোষ্ঠীর অপরিহার্য বা অন্তর্নিহিত গুণাবলী (যেমন: যৌথ পূর্বপুরুষ বা যৌথ আচরণ) অনুযায়ী মানব গোষ্ঠীগুলিকে বিভক্ত করা। বর্ণবাদ (Racism) এবং বর্ণ বৈষম্য (Racial Discrimination) প্রায়ই জাতিগত বা সাংস্কৃতিক ভিত্তিতে বৈষম্য বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, যেসব পার্থক্যগুলি বর্ণ হিসেবে বর্ণনা করা হয় কি না তার ওপর নির্ভর করে না। জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রপুঞ্জের বর্ণ বৈষম্যের সব রূপ নির্মূলকরণের সম্মেলনের মতে, “বর্ণগত” (Racial) এবং “জাতিগত” (Ethnic) বৈষম্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এটি আরও উল্লেখ করে যে, রেইসিয়াল পার্থক্যের ভিত্তিতে উচ্চতার দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল, নৈতিকভাবে নিন্দনীয়, সামাজিকভাবে অন্যায় এবং বিপজ্জনক। সম্মেলনে আরও ঘোষণা করা হয় যে, বর্ণ বৈষম্যের কোনো বৈধতা নেই, কোথাও, তত্ত্বে বা প্রথায়।

বর্ণবাদ (Racism) প্রায়শই একটি আপেক্ষিক আধুনিক ধারণা হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যার মধ্যে ৩য় শতকে খ্রিস্টপূর্বে নথিভুক্ত ইহুদি-বিরোধী বর্ণবাদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের যুগে বিকশিত হয়েছে, পুঁজিবাদ দ্বারা রূপান্তরিত হয়েছে, এবং আটলান্টিক দাস বাণিজ্যের একটি প্রধান চালিকা শক্তি ছিল। এটি ১৯শ ও ২০শ শতাব্দীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণগত পৃথকীকরণের একটি প্রধান শক্তি ছিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যের। পশ্চিমা সংস্কৃতির ১৯শ ও ২০শ শতকের বর্ণবাদ বিশেষভাবে নথিভুক্ত এবং বর্ণবাদ সম্পর্কিত গবেষণা ও ভাষ্যগুলির একটি রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। বর্ণবাদ যেমন হলোকাস্ট (Holocaust), আর্মেনীয় গণহত্যা (Armenian Genocide), রুয়ান্ডান গণহত্যা (Rwandan Genocide) এবং ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীন রাষ্ট্রে সার্বদের গণহত্যার মতো গণহত্যাগুলিতে ভূমিকা পালন করেছে, তেমনি আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের জনসংখ্যা স্থানান্তরসহ ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক প্রকল্পগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আদিবাসী জনগণ প্রায়ই বর্ণবাদী মনোভাবের শিকার হয়েছেন এবং এখনও হচ্ছেন।

হোমোফোবিয়া বা সমকাম-বিদ্বেষ

হোমোফোবিয়া (Homophobia) হলো সমকামিতা বা যারা নিজেকে লেসবিয়ান, গে, বা বাইসেক্সুয়াল (LGBTQ+) হিসেবে চিহ্নিত করে বা যাদের এমনভাবে দেখা হয় তাদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব এবং অনুভূতির একটি পরিসর। এটি ঘৃণা, পক্ষপাত, বিরক্তি, বিদ্বেষ বা প্রতিকূলতার রূপে প্রকাশিত হতে পারে, যা প্রায়ই অযৌক্তিক ভয়ের উপর ভিত্তি করে এবং কখনও কখনও ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।

হোমোফোবিয়া এমন সমালোচনামূলক এবং শত্রুতাপূর্ণ আচরণে প্রকাশ পায় যা অ-হেটারোসেক্সুয়াল যৌন অভিমুখিতার (Sexual Orientation) ভিত্তিতে বৈষম্য এবং সহিংসতার (Violence) দিকে নিয়ে যায়। এর প্রকারভেদগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক হোমোফোবিয়া (Institutionalized Homophobia), যেমন ধর্মীয় হোমোফোবিয়া (Religious Homophobia) এবং রাষ্ট্র-স্পন্সরড হোমোফোবিয়া (State-Sponsored Homophobia), এবং অভ্যন্তরীণ হোমোফোবিয়া (Internalized Homophobia) যেটি সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ অনুভবকারী মানুষদের দ্বারা অনুভূত হয়।

সনাক্তযোগ্য LGBT গোষ্ঠীগুলোর প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের নির্দিষ্ট নাম রয়েছে, যেমন: লেসবোফোবিয়া (Lesbophobia) হলো লেসবিয়ানদের (Lesbian) বিরুদ্ধে হোমোফোবিয়া এবং লিঙ্গবৈষম্যের (Sexism) সংযোগ, গে-ফোবিয়া (Gayphobia) গে পুরুষদের (Gay Men) প্রতি অপ্রিয় বা ঘৃণার অভিব্যক্তি, বাইফোবিয়া (Biphobia) বাইসেক্সুয়ালিটি (Bisexuality) এবং বাইসেক্সুয়াল মানুষের (Bisexual People) বিরুদ্ধে লক্ষ্যযুক্ত, এবং ট্রান্সফোবিয়া (Transphobia) ট্রান্সজেন্ডার (Transgender) এবং ট্রান্সসেক্সুয়াল মানুষদের (Transsexual People) এবং লিঙ্গ ভিন্নতা বা লিঙ্গ ভূমিকার অসঙ্গতি (Gender Nonconformity) উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়।

২০১০ সালে FBI ন্যাশনাল প্রেস অফিস দ্বারা প্রকাশিত হেট ক্রাইম পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ঘৃণামূলক অপরাধের ১৯.৩ শতাংশ যৌন অভিমুখিতা পক্ষপাত দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এছাড়াও, ২০১০ সালের সাউদার্ন পভার্টি ল রিসার্চ সেন্টারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, FBI-এর ১৯৯৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত জাতীয় হেট ক্রাইম পরিসংখ্যান থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে LGBT লোকেদের মধ্যে সহিংস ঘৃণামূলক অপরাধের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা যেকোনো অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর তুলনায় অনেক বেশি।

অ্যান্টিসেমিটিজম বা ইহুদিবিদ্বেষ

অ্যান্টিসেমিটিজম (Antisemitism) হলো ইহুদিদের প্রতি শত্রুতা, পক্ষপাত বা বৈষম্য। এটি বর্ণবৈষম্যের (Racism) একটি রূপ, এবং যিনি এটি ধারণ করেন তাকে অ্যান্টিসেমাইট (Antisemite) বলা হয়। মূলত, অ্যান্টিসেমিটিক প্রবণতা ইহুদিদের একটি জাতি হিসেবে বা ইহুদিধর্ম (Judaism) সম্পর্কিত নেতিবাচক মনোভাব দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। প্রথম ক্ষেত্রে, সাধারণত বর্ণগত অ্যান্টিসেমিটিজম (Racial Antisemitism) হিসেবে উপস্থাপিত হয়, যেখানে একজন ব্যক্তির শত্রুতা এই বিশ্বাস দ্বারা চালিত হয় যে ইহুদিরা একটি স্বতন্ত্র জাতি, যাদের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি ত্রুটিপূর্ণ বা সমাজে পছন্দের গুণাবলির তুলনায় নিম্নতর। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, ধর্মীয় অ্যান্টিসেমিটিজম (Religious Antisemitism) নামে পরিচিত, যা দ্বারা একজন ব্যক্তির শত্রুতা তার ধর্মের ইহুদি এবং ইহুদিধর্ম সম্পর্কে ধারণার দ্বারা চালিত হয়, যা সাধারণত অন্য ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে, যারা নিজেদেরকে ইহুদিবাদের উত্তরসূরি বিশ্বাস হিসেবে উপস্থাপন করে এবং ইহুদিদের ইহুদিধর্ম থেকে সরে আসার প্রত্যাশা করে।

অ্যান্টিসেমিটিজম বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হতে পারে, যা ইহুদি নির্যাতনের (Jewish Persecution) মাত্রায় বিভিন্ন হতে পারে। কম মারাত্মক দিক থেকে, এটি ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা বা বৈষম্যের প্রকাশ হিসেবে প্রকাশিত হতে পারে, যা সহিংসতা দ্বারা সঙ্গী হতে পারে বা না-ও হতে পারে। সবচেয়ে চরম দিক থেকে, এটি পোগ্রাম (Pogrom) বা গণহত্যার (Genocide) রূপে প্রকাশিত হতে পারে, যা রাষ্ট্রের দ্বারা সমর্থিত হতে পারে বা না-ও হতে পারে। যদিও “অ্যান্টিসেমিটিজম” শব্দটি ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত সাধারণ ব্যবহারে আসেনি, এটি পূর্বের এবং পরবর্তী অ্যান্টি-ইহুদি ঘটনাগুলোর (Anti-Jewish Incidents) জন্যও প্রযোজ্য। উল্লেখযোগ্য অ্যান্টিসেমিটিক নির্যাতনের ঘটনাগুলির মধ্যে রয়েছে ১০৯৬ সালে রাইনল্যান্ড গণহত্যা, ১২৯০ সালে বহিষ্কারের আদেশ, ১৩৪৮ থেকে ১৩৫১ সালের মধ্যে ব্ল্যাক ডেথের সময় ইউরোপীয় ইহুদি নির্যাতন, ১৩৯১ সালে স্পেনের ইহুদি গণহত্যা, স্প্যানিশ ইনকুইজিশনের ক্র্যাকডাউন এবং ১৪৯২ সালে স্পেন থেকে ইহুদিদের বহিষ্কার, ১৬৪৮ থেকে ১৬৫৭ সালের মধ্যে ইউক্রেনে কসাক গণহত্যা, ১৮২১ থেকে ১৯০৬ সালের মধ্যে রাশিয়ান সাম্রাজ্যে বিভিন্ন অ্যান্টিসেমেটিক পোগ্রাম, ১৮৯৪ থেকে ১৯০৬ সালের মধ্যে ড্রেফাস কেলেঙ্কারি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানির দ্বারা সংঘটিত হলোকাস্ট এবং বিভিন্ন সোভিয়েত অ্যান্টিসেমেটিক নীতি।

ঐতিহাসিকভাবে, বিশ্বের বেশিরভাগ সহিংস অ্যান্টিসেমিটিক ঘটনাগুলি খ্রিস্টান ইউরোপে ঘটেছে। তবে, ২০শ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে, আরব বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অ্যান্টিসেমিটিক ঘটনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যা মূলত ইউরোপীয় অ্যান্টিসেমিটিক ষড়যন্ত্র তত্ত্বের অধীনে উদ্ভূত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে, “নিউ অ্যান্টিসেমিটিজম” (New Antisemitism) নামক একটি ধারণা বিভিন্ন সময়ে উত্থাপিত হয়েছে। এই মতানুসারে, যেহেতু ইসরায়েল একটি ইহুদি রাষ্ট্র, তাই অ্যান্টি-জায়নিজমের (Anti-Zionist) অবস্থানগুলোতে অ্যান্টিসেমিটিক মনোভাব থাকতে পারে।

রুট শব্দ সেমাইট (Semite) হওয়ার কারণে, এটি একটি বিভ্রান্তিকর শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা ভুলভাবে “সেমিটিক মানুষদের” প্রতি বর্ণগত বিদ্বেষ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যদিও এই দলটি একটি অবলুপ্ত ঐতিহাসিক বর্ণ ধারণা। এই ধরনের ব্যবহার ত্রুটিপূর্ণ; “অ্যান্টিসেমিটিসম” শব্দটি প্রথম ১৮৭৯ সালে জার্মানিতে ছাপা হয়েছিল এবং এটি শুধুমাত্র ইহুদি-বিরোধী অনুভূতির জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

তথ্যসূত্র –

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.