আমরা অপ্টিমিসজম এবং পেসিমিজম এর কথা জানি। বাংলায় এদের যথাক্রমে আশাবাদ ও দুঃখবাদ বলা হয়। অপ্টিমিস্টরা সবসময় পজিটিভ চিন্তা করে আর পেসিমিস্টরা করে নেগেটিভ চিন্তা। উদাহরণস্বরূপ একটি গ্লাসে যদি সম্পূর্ণ পানিতে ভরা না থাকে তাহলে অপ্টিমিস্টরা হয়তো চিন্তা করবে গ্লাসের বাকি অংশেও পানি বাষ্পীভূত আছে, সুতরাং গ্লাসে সম্পূর্ণভাবে পানি আছে বলা যায়। অন্যদিকে পেসিমিস্টরা গ্লাসের ৯৯.৯৯% অংশ পানিতে ভরা থাকলেও হয়তো বলবে যেহেতু গ্লাসের ১০০ ভাগে পানি নেই সুতরাং গ্লাসেটিতে পানি আছে বলা যাবে না, বলতে হবে গ্লাসটির একটি অংশ জুড়ে পানি আছে।
যাইহোক, অপ্টিমিজম আর পেসিমিজমের ব্যাপারটা সম্পূর্ণভাবে আমাদের ইচ্ছার উপর না, এটা জিনগত ব্যাপার। দেখা গেছে সেরেটোনিন নিঃসরণের সাথে সম্পর্কিত কিছু জিন পজিটিভ ইমেজ তৈরির সাথে সম্পর্কিত। আবার অক্সিটোসিন রিসেপ্টরের জিনের সাথেও এর সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে অপটিমিস্টরা করোনারি আরটারি বাইপাসের পর পেসিমিস্টদের তুলনায় কম হাসপাতালে জান, এদের হায়ার একাডেমিক এচিভমেন্ট বেশি, সোশিও ইকোনমিক স্ট্যাটাসও ভাল। কিন্তু সব কিছুই ভাল না, এদের অনেকেই অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন ও বেশি ধূমপানের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে পেসিমিস্টরা ভাল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করায় শেষ হাসি হাসেন।
কিন্তু তবুও মানুষ অপ্টিমিস্ট হিসেবেই হার্ডঅয়ার্ড হয়েছে। বিবর্তনের এর দ্বারা প্রকৃতি পেসিমিস্টদের যথেষ্ট ফিল্টারিং করে মানুষ তৈরি করেছে। দেখা গেছে পৃথিবীর ৮০ শতাংশ মানুষ অপটিমিস্ট যেখানে ২০ শতাংশ মানুষ পেসিমিস্ট। অপ্টিমিস্টদের পপুলেশন বেশি থাকার ব্যাপারকে অপটিমিজম বায়াস বলে। অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষই আমরা নেগেটিভ জিনিসের চেয়ে পজিটিভ জিনিস এস্টিমেট করি। যেমন পৃথিবীতে ডিভোর্স রেট ৪০ শতাংশ হবার পরও কোন সদ্যবিবাহিত দম্পতিই আশা করে না যে তাদের ভবিষ্যতে ডিভোর্স হতে পারে। সব সময় আমরা আশা করি যে ভবিষ্যতে আমাদের টাকাকড়ি, সোশাল স্ট্যাটাস, পড়াশুনা সবই আরও ভাল হবে।
ব্রেইনের দিকে যদি দেখি, দেখা যায় পজিটিভ থিংকিং এর বিষয়গুলো হয় বাম হেমিস্ফিয়ারে আর নেগেটিভ থিংকিং এর বিষয়গুলো হয় ডান হেমিস্ফিয়ারে। কিন্তু লেফট হেমিস্ফিয়ারই চিন্তার সময় বেশি একটিভিটি দেখায়। সুতরাং দেখা যায় ব্রেই সবসময় পজিটিভ ব্যাপারগুলোই বেশি চুজ করে আর নেগেটিভ ব্যাপারগুলোকে ইগনোর করে। আর তাই গ্লাস যদি অর্ধেক পানিতে ভরা থাকে তাহলে কোন কিছু না ভেবে গ্লাসের পানি নষ্ট না করে খেয়ে ফেলব। এটা আমাদের আরেকটি কমন সেইং মনে করিয়ে দেয় যে, নেয়া, দেয়া অপেক্ষা ভাল।
Leave a Reply