ভারতের চাকরির সংকট ও সমাধানের রাস্তা

বর্তমান চাকরির বাজারের অবস্থা (Current State of the Job Market)

ভারতের চাকরির বাজারের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করা কঠিন। একটা উদাহরণ হচ্ছে, এয়ার ইন্ডিয়া প্রায় ২,২০০ চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়েছিল, যা মূলত রক্ষণাবেক্ষণ (maintenance) এবং লোডিং কাজের সাথে সম্পর্কিত। বেতন ছিল ২২,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা। কিন্তু গত মঙ্গলবার ২৫,০০০ এর বেশি চাকরিপ্রার্থী মুম্বাই এয়ারপোর্টে এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসে জমায়েত হয়েছিল। এরা প্রায় পদপিষ্ট হতে যাচ্ছিল। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত সপ্তাহে গুজরাট থেকে আরেকটি ভিডিও প্রকাশিত হয় যেখানে শত শত লোককে একটি বেসরকারী সংস্থার নিয়োগ অভিযানে দেখা গেছে। এ ধরনের চিত্র সাধারণত একটিই জিনিস নির্দেশ করে – বেকারত্ব (unemployment) বাড়ছে।

বেকারত্বের পরিসংখ্যান (Unemployment Statistics)

প্রথমে সংখ্যাগুলি দেখা যাক। ভারতে প্রায় ৩০% স্নাতক একটি চাকরি খুঁজে পাচ্ছেন না, যা বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ হারের মধ্যে একটি। আর সামগ্রিক বেকারত্বের (overall unemployment) কী অবস্থা? মে ২০২৪-এ এটি ছিল প্রায় ৭%, কিন্তু জুনে এটি বেড়ে ৯.২% এ পৌঁছেছে। এই সংখ্যাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে ভারতে একটি চাকরির সংকট রয়েছে। তবে সরকার দাবি করেছে যে তারা গত ১০ বছরে ১২.৫ কোটি চাকরি সৃষ্টি করেছে। RBI-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চাকরির বাজারে ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি ৮% এরও বেশি বেড়েছে।

প্রবৃদ্ধি এবং চাকরি সৃষ্টির মধ্যে বৈষম্য (Disparity Between Growth and Job Creation)

এটি দুটি প্রশ্ন উত্থাপন করে। এক, এই প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও কেন চাকরির বাজারের অবস্থা এত খারাপ কেন? এবং দুই, কীভাবে এটি সমাধান করা যেতে পারে?

প্রথম প্রশ্নটি প্রথমে দেখা যাক। ভারতের প্রবৃদ্ধি মূলত পুঁজি-নিবিড় শিল্প (capital-intensive industries) দ্বারা চালিত। এর অর্থ কী? এর অর্থ এমন শিল্প যা বিকাশের জন্য অর্থ বা মেশিনের প্রয়োজন, প্রয়োজনীয়ভাবে বেশি কর্মীর নয়। ধরা যাক একটি জুতার কারখানায় ১০০ জন কর্মী রয়েছে। মালিক একটি নতুন মেশিন কিনেছেন যা উত্পাদনকে দ্রুত করে তোলে। হয়তো আগে কারখানাটি ৫০০ জোড়া জুতা তৈরি করত, আর এখন তারা ১,০০০ জোড়া তৈরি করছে। তাই, নতুন চাকরি যোগ না করেই প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়েছে। এটি ভারতে ঘটছে; প্রবৃদ্ধি ততটা চাকরি সৃষ্টিতে অনুবাদিত হচ্ছে না।

চাকরির সংকট সমাধান (Addressing the Job Crisis)

চীন মডেল থেকে শেখা (Learning from the China Model)

এটি আমাদের দ্বিতীয় প্রশ্নে নিয়ে আসে: আমরা কীভাবে এটি সমাধান করব? অনেক বিশেষজ্ঞ চীন মডেলের দিকে ইঙ্গিত করেন: একটি শ্রম-নিবিড় উৎপাদন খাত (labor-intensive manufacturing sector) তৈরি করা। এটি একটি চেইন প্রতিক্রিয়া হিসাবে ভাবুন – আরও বিনিয়োগ (investments), আরও কারখানা (factories), আরও চাকরি (jobs), আরও আউটপুট (output)।

বিনিয়োগ বাড়ানো (Boosting Investments)

প্রথম ধাপের দিকে ফোকাস করা যাক: আরও বিনিয়োগ (investment)। এটি কোথা থেকে আসবে? গত বছর বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ (FDI) ৪৩% হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালে FDI তালিকায় ভারত অষ্টম স্থানে ছিল, কিন্তু গত বছর দেশটি ১৫তম স্থানে নেমে এসেছে। ২০১৯ সালে বিদেশী সংস্থাগুলি ভারতে $১৮ বিলিয়ন বিনিয়োগ করেছিল, যা ২০২৩ সালে $৪৪ বিলিয়ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন আমরা বেসরকারী বিনিয়োগের (private investments) দিকে আসি। ভারতীয় সংস্থাগুলি ভারতের অর্থনীতিতে কতটা বিনিয়োগ করছে? তেমন নয়। ২০১১ সাল থেকে বেসরকারী বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। সরকার এটি উল্টানোর জন্য ২০১৯ সালে কর্পোরেট কর (corporate tax) কমানোর চেষ্টা করেছিল, তবে বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই, প্রথম অগ্রাধিকার হল এটি মোকাবেলা করা। যদি আপনি আরও বিনিয়োগ চান, তবে আপনাকে সংস্কারগুলি (reforms) বাস্তবায়ন করতে হবে, এটি ব্যবসা করার সহজতা (ease of doing business), শ্রম সংস্কার (labor reforms) বা ভূমি সংস্কার (land reforms) হোক। যদি না হয়, আপনি আরও চাকরি তৈরি করতে পারবেন না।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে (MSME) সমর্থন করা (Supporting Small and Medium Enterprises)

দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হল ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME)। তারা ভারতের চাকরির বাজারের মেরুদণ্ড (backbone), ভারতের ৬২% চাকরি তৈরি করে। কিন্তু সম্প্রতি, তারা মন্দার সম্মুখীন হয়েছে। গত তিন বছরে প্রায় ২৫,০০০ MSME বন্ধ হয়ে গেছে। তাই, সরকারকে সেগুলি পুনরুজ্জীবিত করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে, হয়তো সস্তা ঋণ (cheaper loans), আরও রাষ্ট্রের ভর্তুকি (state subsidies) বা বৃহত্তর কর ছাড়ের (tax cuts) মাধ্যমে।

শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নত করা (Enhancing Education and Skills)

তৃতীয় অগ্রাধিকার হল শিক্ষা (education)। নতুন প্রযুক্তি (new technology) দ্বারা চাকরির বাজারকে পুনর্গঠন করা হচ্ছে, এবং নতুন চাকরি তৈরি হবে। লক্ষ্য হওয়া উচিত এই নতুন ধরণের চাকরির জন্য প্রস্তুত থাকা। দুর্ভাগ্যবশত, ভারতের সিস্টেম যথেষ্ট দ্রুত অভিযোজন করছে না। অন্যথায়, IIT গুলিতে চাকরি সংকট কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? যদি ভারতের শীর্ষস্থানীয় কলেজগুলি অভিযোজিত না হতে পারে, অন্যদের কী আশা থাকতে পারে?

মহিলাদের জন্য চাকরির দিকে ফোকাস করা (Focusing on Jobs for Women)

চতুর্থ অগ্রাধিকার হলো মহিলাদের জন্য চাকরির দিকে ফোকাস করা। ভারতের মহিলা শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ (female labor force participation) ৩২%। ভিয়েতনামে এটি ৭৫%, এবং চীনে এটি ৭১%। স্পষ্টতই, এই ব্যবধানের জন্য সামাজিক কারণ রয়েছে। ভারতকে তার মহিলাদের শিক্ষিত ও দক্ষ করতে ফোকাস করতে হবে। যদি না হয়, তাহলে চাকরির সংকট অর্ধেক সমাধান হয়েই থেকে যাবে।

উপসংহার (Conclusion)

অবশ্যই, এগুলি কেবল কয়েকটি পরামর্শ। আমরা এখানে একটি খুব জটিল বিষয় নিয়ে কথা বলছি। এটি একটি নীতির সাথে সমাধান করা যাবে না। এটি একটি জাতীয়, সুসংগত প্রচারাভিযানের প্রয়োজন হবে। কিন্তু ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার ভারতের জন্য সত্যিই আর কোনো বিকল্প নেই। যদি সরকার তাড়াহুড়ো না করে, তাহলে জনমিতিক লভ্যাংশ একটি জনমিতিক বোমায় পরিণত হতে পারে।

তথ্যসূত্র –

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.