ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল ও গিল্ট ট্রিপিং

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল

ভূমিকা

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (Emotional Blackmail) এবং FOG (ভয় (Fear), বাধ্যবাধকতা (Obligation), এবং অপরাধবোধ (Guilt)) শব্দগুলো জনপ্রিয় করেছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুশান ফরোয়ার্ড (Susan Forward)। এগুলো সম্পর্কে বলার আগে একটা বিষয় পরিষ্কার করে নেই, এগুলো মানব সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত জিনিস। যেমন একটা সম্পর্কের মধ্যে একরকম ক্রিয়ামূলক গতিশীলতা (transactional dynamics) কাজ করে, এই ডাইনামিক্সটা দেয়া নেয়ার, আমি একজনের জন্য কিছু করলে আমিও এক্সপেক্ট করব সে আমার প্রয়োজনে সহায়তা করবে। একটা ট্রাঞ্জেকশনাল ডাইনামিক্স থাকেই কোন সম্পর্কে। আর এর মাধ্যমেই সম্পর্কগুলো টিকে থাকে। এমনকি কোন বস্তুগত স্বার্থ ছাড়াও একসাথে জাস্ট আড্ডা দেয়া, সময় কাটানোতেও একটা এবস্ট্রাক্ট স্বার্থ থাকেই যা দুজনকেই এবস্ট্রাক্ট বেনিফিট দেয়। যদি কেউ দেখে তার সম্পর্ক তার স্বার্থে কাজ করছে না, তখন সে সম্পর্ক থেকে আকর্ষণ হারায়। যাই হোক, অনেক সময় দেখা যায় সবসময় বা কোন বিশেষ সিচুয়েশনে সম্পর্কের দু’জনের মধ্যে একজন হয়ে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারী (controller) ও একজন হয়ে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রিত (controlled)। যদি এরকম হয় তাহলে সেই সম্পর্কে ক্রিয়ামূলক গতিশীলতা বা ট্রাঞ্জেকশনাল ডাইনামিক্সটা কিরকম হবে সেটার সাথেই এই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল ও FOG এর কনসেপ্টগুলো সম্পর্কিত।

এই গতিশীলতাগুলি বোঝা তাদের জন্য উপকারী যারা অন্য কারো নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ থেকে নিজেদের মুক্ত করার চেষ্টা করছেন এবং তাদের নিজের প্রবণতাগুলির সাথে মোকাবেলা করতে চান যা অন্যদের জন্য তাদেরকে অস্বস্তিকর (uncomfortable), অপ্রিয় (undesirable), বোঝাস্বরূপ (burdensome) বা আত্মত্যাগমূলক (self-sacrificing) কাজ করতে তাদের বাধ্য করে।

শুরুতেই যে FOG শব্দটির কথা উল্লেখ করা হলো তা হচ্ছে একটি এক্রোনিম যা Fear (ভয়), Obligation (বাধ্যবাধকতা) এবং Guilt (অপরাধবোধ) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুশান ফরোয়ার্ড (Susan Forward) এই শব্দটি জনপ্রিয় করেছেন। FOG তত্ত্বটি বলে যে নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিরা সম্পর্কের মধ্যে এই তিনটি আবেগকে ব্যবহার করে অন্য ব্যক্তিকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করে। এখানে FOG তত্ত্বের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হল:

  1. ভয় (Fear): নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি তার আচরণ বা হুমকির মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিকে ভয় পাইয়ে দেয়। এটি সেই পরিস্থিতি তৈরি করে যেখানে নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি ভয় পায় যে সে নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির রাগ বা প্রতিশোধের শিকার হবে। উদাহরণস্বরূপ, নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি হুমকি দিতে পারে যে সে সম্পর্ক ছিন্ন করবে বা সামাজিকভাবে অপমান করবে যদি নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি তার ইচ্ছা অনুসারে কাজ না করে।
  2. বাধ্যবাধকতা (Obligation): নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিকে দায়িত্ব বা বাধ্যবোধের মাধ্যমে প্রভাবিত করে। নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় যে তার নির্দিষ্ট দায়িত্ব বা বাধ্যবোধ রয়েছে যা তাকে নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির ইচ্ছা পূরণে বাধ্য করে। উদাহরণস্বরূপ, নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিকে বলা হতে পারে যে সে পরিবারের ভালোর জন্য বা সম্পর্কের স্বার্থে নির্দিষ্ট কাজ করতে বাধ্য।
  3. অপরাধবোধ (Guilt): নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিকে অপরাধবোধের মধ্যে ফেলতে চেষ্টা করে। নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি যদি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে, তবে তাকে অপরাধবোধে ভুগতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিকে মনে করিয়ে দেওয়া হতে পারে যে তার কোন আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিকে কতটা কষ্ট দিচ্ছে বা সমস্যায় ফেলছে।

এই তিনটি আবেগ (ভয়, বাধ্যবাধকতা এবং অপরাধবোধ) একসাথে মিলে একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি করে যা নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির ইচ্ছানুযায়ী কাজ করতে বাধ্য করে। FOG তত্ত্বটি বোঝা এবং এর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা নিজেদেরকে এমন নিয়ন্ত্রণমূলক সম্পর্ক থেকে মুক্ত করতে চান।

সাধারণ ধারণা

“ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল” (Emotional Blackmail) শব্দটির প্রথম নথিভুক্ত ব্যবহার ১৯৪৭ সালে জাতীয় মহিলা ডিনস অ্যাসোসিয়েশনের (National Association of Deans of Women) জার্নালে “ডিসিপ্লিন অ্যান্ড গ্রুপ সাইকোলজি” (Discipline and Group Psychology) প্রবন্ধে পাওয়া যায়। এই শব্দটি শিক্ষকদের দ্বারা প্রায়ই ব্যবহৃত এক ধরনের সমস্যাযুক্ত শ্রেণীকক্ষ নিয়ন্ত্রণ মডেল বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়েছিল। আর্জেন্টিনার চিকিৎসক এবং নারীবাদবিরোধী লেখক এসথার ভিলার (Esther Vilar) ১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে “ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল” (Emotional Blackmail) শব্দটি ব্যবহার করে কিছু মায়েদের মধ্যে দেখা যায় এমন একটি প্যারেন্টিং কৌশল বর্ণনা করেছিলেন।

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (Emotional Blackmail) সাধারণত দুটি মানুষের মধ্যে ঘটে, যাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত বা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক (parent and child, spouses, siblings, or two close friends) রয়েছে। শিশুরাও তাদের নিজের স্বার্থ এবং স্ব-উন্নয়ন (self-development) প্রচার করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ এবং ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (Emotional Blackmail) ব্যবহার করে।

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলাররা (Emotional Blackmailers) তাদের সম্পর্কের মধ্যে ভয় (fear), বাধ্যবাধকতা (obligation) এবং অপরাধবোধ (guilt) ব্যবহার করে, নিশ্চিত করে যে অন্যরা তাদের সাথে বিরোধিতা করতে ভয় পাবে, তাদের ইচ্ছার প্রতি বাধ্যবাধকতা অনুভব করবে এবং বিরোধিতা করলে অপরাধবোধে আক্রান্ত হবে। তারা জানে যে তাদের কাছের কেউ ভালোবাসা, অনুমোদন বা পরিচয় এবং আত্মসম্মানের নিশ্চিতকরণ (confirmation of identity and self-esteem) চায়, তাই ব্ল্যাকমেইলাররা (Blackmailers) হয়তো এগুলো প্রত্যাখ্যান করার হুমকি দেবে (যেমন, ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান) বা এগুলো সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেয়, ও তাদেরকে তাদের সম্মতি দিয়ে এগুলো অর্জন করতে বাধ্য করে। ভয়, বাধ্যবাধকতা বা অপরাধবোধ সাধারণত “FOG” (Fear, Obligation, Guilt) নামে পরিচিত। FOG একটি কৃত্রিম আদ্যক্ষর যা “fog” (কুয়াশা) শব্দটির সাথে মিলিয়ে তৈরি হয়েছে, যেখানে এটি কোন পরিস্থিতিকে বা কারো চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়াকে অস্পষ্ট এবং বিভ্রান্ত করে।

যিনি নিয়ন্ত্রণমূলকভাবে কাজ করছেন তিনি প্রায়ই অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু চান যা চাওয়া বৈধ। তারা হয়তো ভালোবাসা, নিরাপত্তা, মূল্যবান অনুভব, প্রশংসা, সমর্থন, প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি অনুভব করতে চাইতে পারে। এটি সমস্যা নয়। সমস্যাটি এখানে যে, তারা যা চায় তা পাওয়ার জন্য কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে। এখানে তারা এই কাজগুলো করার সময় অন্যদের প্রয়োজনের প্রতি অসংবেদনশীল থাকে, আর এটাই সমস্যার।

চাপের মধ্যে, একজন নিয়ন্ত্রিত ব্যক্তি একরকম জিম্মি হয়ে উঠতে পারে, অন্যের ব্রেকডাউন ঠেকানোর জন্য একরক দায়িত্ববোধের হুমকি বা থ্রেট ফিল করতে পারে। আর সেই হুমকির চাপে কোন কাজ করতে বাধ্য হতে পারে। ডরিস লেসিং (Doris Lessing) একে যে “এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক কুয়াশা” (psychological fog) হিসাবে বর্ণনা করেছেন তাতে আটকে গিয়ে সে ব্ল্যাকমেইলারকে তার সিদ্ধান্ত এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে দিতে পারে।

একটি রোমান্টিক সম্পর্কে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (Emotional Blackmail) শাস্তির মত হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি অপ্রিয় বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলার (Emotional Blackmailer) হুমকি দিতে পারে যে যদি তাদের সঙ্গী বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করে, সে আর্থিক সম্পদ ধরে রাখবে বা তাদের সন্তানদের সাথে কখনও যোগাযোগ করতে দেবে না। এই ধরনের কাজগুলো ভিক্টিমকে ক্রুদ্ধ করতে পারে কারণ তারা মনে করে যে তারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এবং সুস্থভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাতে অক্ষম।

প্রকারভেদ

ফরওয়ার্ড (Forward) এবং ফ্রেজিয়ার (Frazier) চারটি ব্ল্যাকমেইলের ধরন চিহ্নিত করেছেন, প্রতিটির নিজস্ব মেন্টাল ম্যানিপুলেশনের (mental manipulation) ধরন রয়েছে:

প্রকার উদাহরণ
শাস্তিদাতা হুমকি (Punisher’s threat) তারা তোমার জন্য যে রান্নাটা করেছে সেটা খেয়ে নাও, নাহলে তারা তোমাকে আঘাত করবে।
স্ব-শাস্তিদাতা হুমকি (Self-punisher’s threat) তারা তোমার জন্য যে রান্নাটা করেছে সেটা খেয়ে নাও, নাহলে তারা নিজেদের আঘাত করবে।
ভোগান্তিকারীর হুমকি (Sufferer’s threat) তারা তোমার জন্য যে রান্নাটা করেছে সেটা খেয়ে নাও। তারা এটি নিজের জন্য সংরক্ষণ করেছিল। এখন তাদের কী হবে তারা জানে না।
প্রলুব্ধকারীর হুমকি (Tantalizer’s threat) তারা তোমার জন্য যে রান্নাটা করেছে সেটা খেয়ে নাও, নাহলে পরে তুমি পরে খুব সুস্বাদু একটা ডেজার্ট নাও পেতে পারো।

আবেদনগুলির বিভিন্ন স্তর রয়েছে—যেমন কিছু আবেদনের সামান্য প্রভাব থাকে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা ব্যক্তিগত সততার সাথে জড়িত, কিছু প্রধান জীবন সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে এবং কিছু আবেদন বিপজ্জনক বা অবৈধ হতে পারে।

প্যাটার্ন এবং বৈশিষ্ট্য

আসক্তি (Addictions)

আসক্তরা প্রায়ই বিশ্বাস করেন যে নিয়ন্ত্রণ করাই জীবন সাফল্য এবং সুখ অর্জনের উপায়। যারা এই নিয়মটি অনুসরণ করেন তারা এটি একটি বেঁচে থাকার দক্ষতা বা সারভাইভাল স্কিল হিসেবে ব্যবহার করেন, যা তিনি সাধারণত শৈশবে শিখেছেন। তারা মনে করে, যতক্ষণ তারা নিয়ম তৈরি করবে, ততক্ষণ কেউ তাদেরকে তাদের অনুভূতি দিয়ে কর্নারে ঠেলে দিতে পারবে না।

মানসিক অসুস্থতা (Mental Illness)

যারা কিছু মানসিক অবস্থায় ভুগছেন তাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের (controlling behavior) প্রবণতা থাকে, যার মধ্যে রয়েছে প্যারানয়েড ব্যক্তিত্বের ব্যাধি বা প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিজর্ডার (paranoid personality disorder), বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিজর্ডার (borderline personality disorder) এবং নার্সিসিস্টিক পারসোনালিতি ডিজর্ডার (narcissistic personality disorder)।

বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিজর্ডারে (borderline personality disorder) যারা ভুগছেন তাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (emotional blackmail) ব্যবহার করার সম্ভাবনা বিশেষভাবে বেশি। তাদের ক্রিয়াকলাপগুলি প্রায়ই কোন কনশাস প্ল্যান বা সচেতন পরিকল্পনার বদলে ইম্পালস (খেয়াল) হয় এবং ভয় ও একরকম মরিয়া হতাশার (desperate sense of hopelessness) দ্বারা চালিত হতে পারে।

কোডিপেন্ডেন্সি (Codependency)

কোডিপেন্ডেন্সিতে প্রায়ই নিজের প্রয়োজনের তুলনায় অন্যদের প্রয়োজনের প্রতি অত্যধিক মনোযোগ দেওয়ার প্রবণতা জড়িত থাকে। কোডিপেন্ডেন্সি যে কোনও ধরণের সম্পর্কের মধ্যে ঘটতে পারে, যার মধ্যে পরিবার, কাজ, বন্ধুত্ব এবং রোমান্টিক, সহকর্মী বা সম্প্রদায়ের সম্পর্কও অন্তর্ভুক্ত।

আফ্লুয়েঞ্জা এবং শিশু (Affluenza and Children)

আফ্লুয়েঞ্জা (Affluenza) হল একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি সমাজে তার অবস্থান বা সামাজিক মর্যাদা নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত থাকে এবং অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে চেষ্টা করে। অলিভার জেমস (Oliver James) এর মতে, এই মানসিক অবস্থার উৎপত্তি শৈশবে ঘটে, যেখানে শিশুরা তাদের মায়ের (বা পিতামাতার) ভালোবাসা এবং মনোযোগ পেতে একটি বিশেষ আচরণ করতে বাধ্য হয়।

এই প্রসঙ্গে, শৈশবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (emotional blackmail) হল একটি পরিস্থিতি যেখানে মা তাদের সন্তানদের ভালোবাসা এবং মনোযোগ পেতে শর্ত তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, মায়ের ভালোবাসা পেতে শিশুকে এমন আচরণ করতে হয় যা মায়ের বা পিতামাতার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। এই ধরনের শর্তাধীন ভালোবাসা এবং আচরণের কারণে শিশুরা বড় হলে তাদের মধ্যে সামাজিক মর্যাদা নিয়ে উদ্বেগ এবং অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে চলার প্রবণতা তৈরি হয়।

এটি স্পষ্টতই বোঝায় যে, শিশুদের শৈশবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের (emotional blackmail) শিকার হওয়ার ফলে, বড় হয়ে তারা আফ্লুয়েঞ্জা (Affluenza) তে ভুগতে পারে, যেখানে তারা সমাজে তাদের অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং অন্যদের সাথে সামাজিক মর্যাদায় পাল্লা দিয়ে চলার চেষ্টা করে।

অ্যাসার্টিভনেস ট্রেনিং (Assertiveness Training)

অ্যাসার্টিভনেস ট্রেনিং মানুষকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলারের (emotional blackmailer) সাথে ফলহীন বাক-বিতণ্ডা বা ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত না হওয়ার জন্য উত্সাহিত করে, ও একটি নিরপেক্ষ বক্তব্য বারবার বলতে শেখায়, যেমন “আমি বুঝতে পারছি আপনি কীভাবে এটি অনুভব করছেন,” অথবা, খাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হলে, “না ধন্যবাদ, আমি ক্ষুধার্ত নই।” তাদেরকে তাদের বিবৃতিগুলিকে নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে রাখতে শেখানো হয় যাতে তারা জোরপূর্বক তাগাদা, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (emotional blackmail), বা ধমকানোতে সম্মত না হয়।

উদ্ধার (Recovery)

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (emotional blackmail) প্রতিরোধের জন্য কিছু কৌশল রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত সীমানা (personal boundaries) শক্তিশালী করা, দাবির প্রতিরোধ (resisting demands), একটি শক্তিশালী বিবৃতি (power statement) তৈরি করা – চাপের সামনে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা – এবং পুরানো অভ্যাসগুলি ভাঙার জন্য সময় এর ব্যবস্থা করা। ব্ল্যাকমেইলার ভিক্টিমের সেলফ বা আত্ম এর যে স্বায়ত্তশাসিত অংশগুলি অগ্রাহ্য করেছিল তার সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করা সহজ নয়। একজন ব্যক্তি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের (emotional blackmail) কারণে অপরাধবোধ অনুভব করতে পারেন, যদিও তিনি এই অপরাধবোধকে প্ররোচিত এবং অযৌক্তিক হিসাবে স্বীকার করেন; তবুও তিনি অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ থেকে বিরত থাকতে এবং ব্ল্যাকমেইলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করতে সক্ষম হতে পারেন।

বন্ধুত্বপূর্ণভাবে ম্যানিপুলেশন উপেক্ষা করলে এটি একসময় বাড়াবাড়ি রকমের তীব্রতা লাভ করতে পারে এবং এর ফলে বিচ্ছেদের হুমকি, অথবা “পাগল” বা “গৃহ-ভঙ্গকারী” (home wrecker) হওয়ার অভিযোগও শুনতে হতে পারে।

সাংস্কৃতিক উদাহরণ

অ্যাঞ্জেলা কার্টার (Angela Carter) বলেছেন, বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট (Beauty and the Beast)-এ বিস্টের করা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলকে (emotional blackmail) মহিমান্বিত করা হয়েছে, তার টারগেট বিউটি (Beauty)-কে নিয়ন্ত্রণ করার উপায় হিসাবে। ঔপন্যাসিক ডরিস লেসিং (Doris Lessing) দাবি করেছেন যে, “আমি পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে (emotional blackmail) একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিলাম।”

সমালোচনা

ড্যানিয়েল মিলার (Daniel Miller) আপত্তি করেন যে জনপ্রিয় মনোবিজ্ঞানে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (emotional blackmail) ধারণাটি অন্যদের প্রতি যে কোন ধরনের সহানুভূতি বা বিবেচনার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসাবে অপব্যবহার করা হয়েছে।

এই গতিশীলতাকে “ব্ল্যাকমেইল” এবং “ম্যানিপুলেশন” এর মতো উস্কানিমূলক শব্দ দিয়ে লেবেল করা সহায়ক নাও হতে পারে কারণ এই দুটোই মেরুকৃত বা পোলারাইজড এবং এগুলোতে প্রায়শই পূর্বপরিকল্পনা এবং বিদ্বেষপূর্ণ অভিপ্রায় থাকেনা। নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ (Controlling behavior) এবং নিয়ন্ত্রিত হওয়া (being controlled) দুটি ব্যক্তির মধ্যে একটি লেনদেন যেখানে উভয়ই একটি অংশ পালন করে।

গিল্ট ট্রিপিং (Guilt tripping)

গিল্ট ট্রিপিং (Guilt tripping) হল এক ধরনের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল (emotional blackmail) যা প্রায়ই অন্য লোকদের আবেগ এবং অপরাধবোধ বা দায়িত্বের অনুভূতি উপর ভিত্তি করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়। এটি একটি বিষাক্ত আচরণের (toxic behavior) রূপ হতে পারে যা একজন ব্যক্তির মঙ্গল এবং তাদের সম্পর্কের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্য ব্যক্তির মধ্যে গিল্ট ট্রিপ তৈরি করা একটি ম্যানিপুলেশন (manipulation) হিসাবে বিবেচিত হতে পারে, যেখানে এটি একটি অনুধাবিত অপরাধের (perceived transgression) জন্য শাস্তির (punishment) রূপে ব্যবহৃত হয়। এই অনুধাবিত অপরাধ বা পারসিভড ট্রান্সগ্রেশনটা আসলে করা হয়নি, কিন্তু নিয়ন্ত্রণকারী এমন ভিক্টিমের ওপর এমন ফিলিংস তৈরি করবে যাতে সে মনে করবে তার দ্বারা অপরাধ হয়ছে ও এর জন্য সে গিলটি বা অপরাধী, অর্থাৎ এভাবেই তার মধ্যে অপরাধবোধ তৈরি করা হয় বা তাকে গিল্ট ট্রিপে ফেলা হয়।

জর্জ কেটি সাইমন (George K. Simon) গিল্ট ট্রিপকে একটি বিশেষ ধরনের ভীতি প্রদর্শনের কৌশল (intimidation tactic) হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। একজন ম্যানিপুলেটর (manipulator) বিবেকবান শিকারকে (conscientious victim) ইঙ্গিত দেয় যে তারা যথেষ্ট কেয়ার করে না, বা খুব স্বার্থপর আচরণ করছে। এর ফলে সাধারণত ভিক্টিম খারাপ অনুভব করে, নিজেদেরকে একটি আত্ম-সন্দেহময়, উদ্বিগ্ন এবং বশ্যতাপূর্ণ অবস্থানে রাখে।

গিল্ট ট্রিপ নিয়ে সীমিত গবেষণা রয়েছে, এবং এই গবেষণাগুলি মূলত পিতামাতা-সন্তান সম্পর্কের (parent-child relationships) গিল্ট ট্রিপের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।

তথ্যসূত্র

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.