অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনায় মানুষ বেশি দিন বাঁচে, তাদের সন্তানদের সংখ্যা বেশি হয়, বডি ফ্যাট বা চর্বি বেশি থাকে এবং পাকস্থলি ছোট হয়। আর আমাদের মস্তিষ্কও অন্যান্য প্রাইমেটদের চেয়ে বড়। কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যিটি শ্রমগতভাবে যথেষ্ট ব্যয়বহুল। আর নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত নতুন গবেষণাটি বলছে, কেবল দ্রুত শ্বসন বা ফাস্টার মেটাবলিজমই একে সম্ভব করে তুলেছে।
প্রত্যেক প্রাণীকেই তার শক্তিকে বৃদ্ধি, প্রজনন এবং নিয়ন্ত্রণের কাজে বণ্টন করতে হয়। আর এটার জন্য প্রায়ই তাদের শক্তিকে ব্যালেন্স করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন একটি স্মল রোডেন্ট যদি তার বডি ম্যাস বা দেহ-ভরের তুলনায় বেশি পরিমাণে প্রজনন করে তাহলে তার লাইফস্প্যান বা আয়ুও কমে যায়। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এই শক্তির বণ্টনের বেলায় ব্যতিক্রম দেখা যায়। আমরা প্রায়ই অনেক সন্তানের জন্ম দেই কিন্তু তারপরও প্রাইমেটদের মধ্যে আমাদের লাইফস্প্যান বা আয়ুই সবচেয়ে বেশি আর আমাদের মস্তিষ্কও সবচেয়ে বড়।
আমাদের শক্তির খরচের এই ভিন্নতা কেন এবং এখানে কোন মেকানিজমটি কাজ করে তা বোঝার জন্য হান্টার কলেজের হারমান পন্টজার এর নেতৃত্বে একটি বড় আন্তর্জাতিক দল গবেষনা শুরু করে। তারা ১৪১ জন মানুষের দৈনন্দিন শক্তির খরচ পরিমাপ করেন। সেই সাথে পরিমাপ করেন আমাদের জানা সকল গ্রেট এপদের স্যাম্পলদের শক্তির খরচের পরিমাণও। এক্ষেত্রে ২৭টি শিম্পাঞ্জি, ৮টি বনবো, ১০টি গোরিলা এবং ১১টি ওরাংওটান এর স্যাম্পল নেয়া হয়। যেসব মানুষদের নিয়ে গবেষণা করা হয় তারা ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ঘানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিসিলি ও জামাইকার লোকজন। আর অন্যান্য গ্রেট এপরা ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এর চিড়িয়াখানা ও স্যাংচিউয়ারির। গবেষকদের দলটি ৭ থেকে ১০ দিন ধরে স্যাম্পলদের মুত্র ও লালা সংরক্ষণ করেন আর বাকি কাজগুলো অন্যান্য দিনের মতই চলছিল।
তারা আবিষ্কার করেন, মানুষ বিবর্তনের দ্বারা অনেক দ্রুতগতির মেটাবলিক রেট (দ্রুত শ্বসনিক হার) এবং একটি বড় এনার্জি বাজেট পেয়েছে। অর্থাৎ মানুষের মাঝে মেটাবলিক রেট অন্যান্য গ্রেট এপদের তুলনায় বেশি। ফলে মানুষের মাঝে কম সময়ে অধিক শক্তির উৎপাদন ঘটে এবং খরচের জন্য মানুষের প্রয়োজনীয় শক্তিও পরিমাণে বেশি থাকে। আমাদের এক দিনে মোট শক্তির খরচ বা টোটাল এনার্জি এক্সপেন্ডিচার (total energy expenditure or TEE) ওরাংওটান, গোরিলা এবং শিম্পাঞ্জি ও বনবোদের থেকে যথাক্রমে ৮২০, ৬৩৫ এবং ৪০০ কিলোক্যালরি বেশি।
আমাদের এনার্জি এক্সপেন্ডিচার এর এই বৃদ্ধির কারণ হল আমাদের বেসাল মেটাবলিক রেট বেশি। এটা হল সেই পরিমাণ শক্তি যা আমাদের শরীরের বিশ্রাম অবস্থায় প্রয়োজন হয়। এর অর্থ হল আমাদের দেহের অঙ্গের মেটাবলিক এক্টিভিটিও অনেক বেশি।
আবার গবেষকগণ আবিষ্কার করেছেন, অন্যান্য এপদের তুলনায় মানুষের শরীরে বডি ফ্যাটের পরিমাণও বেশি। সম্ভবত আমাদের মাঝে অধিক টোটাল এনার্জি এক্সপেন্ডিচারের বিবর্তনের সাথে সাথে অধিক বডি ফ্যাট পারসেন্টেজের কো-ইভোল্যুশন বা সহবিবর্তন ঘটেছে। কারণ আমাদের শরীরের এই বাড়তি শক্তি উৎপাদনের জন্য জন্য বডি ফ্যাটের রিজার্ভ ফুয়েল বা জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। গবেষণাটির লেখক বলেন, “এই অধিক মেটাবলিক রেট এবং শক্তির বণ্টনের এই পরিবর্তন মানুষের জীবনেতিহাসে মস্তিষ্কের আকারের বৃদ্ধির বিবর্তনের জন্য প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল”।
http://www.nature.com/nature/journal/vaop/ncurrent/full/nature17654.html
– বুনোস্টেগস
Leave a Reply