ডিনায়াল (ফ্রয়েড) ও ডিনায়ালিজম

Table of Contents

ডিনায়াল (ফ্রয়েড)

ভূমিকা

ডিয়ায়াল, অস্বীকার বা ত্যাগ (Denial or abnegation, জার্মান ভাষায় Verleugnung, Verneinung) হল একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া বা ডিফেন্স মেকানিজম যা মনোবিশ্লেষক সিগমুন্ড ফ্রয়েড (Sigmund Freud) দ্বারা প্রস্তাবিত হয়েছিল, যেখানে একজন ব্যক্তি এমন একটি সত্যের মুখোমুখি হয় যা গ্রহণ করা খুব অস্বস্তিকর এবং এর ফলে ব্যক্তি তা গ্রহণ না করে প্রত্যাখ্যান করে, জোর দিয়ে যে এটি সত্য নয় যদিও স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

এক্ষেত্রে ব্যক্তি তিনটি কাজ করতে পারেন :

  1. সিম্পল ডিনায়াল (simple denial): বিরক্তিকর সত্যের বাস্তবতাকে পুরোপুরি অস্বীকার করা।
  2. মিনিমাইজেশন (minimisation): সত্যটি স্বীকার করা কিন্তু এর গুরুত্ব অস্বীকার করা (অস্বীকার (denial) এবং যুক্তিকরণের (rationalization) একটি সংমিশ্রণ)।
  3. প্রোজেকশন বা প্রক্ষেপন (projection): সত্য এবং গুরুত্ব উভয়ই স্বীকার করা কিন্তু অন্য কাউকে বা কিছু অন্য কিছুকে দোষারোপ করে দায়িত্ব অস্বীকার করা।

বর্ণনা

ডিনায়াল বা অস্বীকারের (Denial) তত্ত্ব প্রথমে আন্তরিকভাবে গবেষণা করেছিলেন আনা ফ্রয়েড (Anna Freud)। তিনি ডিনায়ালকে অপরিণত মনের একটি প্রক্রিয়া হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছিলেন কারণ এটি বাস্তবতা থেকে শেখার এবং কোপিং করা বা বিষয়টার সাথে এঁটে ওঠার ক্ষমতার সাথে দ্বন্দ্ব করে। এদিকে পরিণত মনের মধ্যে যদি ডিনায়াল দেখা দেয়, তবে তা প্রায়শই মৃত্যু (death), মুমূর্ষু অবস্থা (dying) এবং ধর্ষণের (rape) সাথে সম্পর্কিত। সাম্প্রতিক গবেষণায় এই ধারণার পরিসর এবং উপযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে। এলিজাবেথ কুবলার-রস (Elisabeth Kübler-Ross) ডিনায়ালকে মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর (dying patient) মনস্তত্ত্বের (psychology) পাঁচটি ধাপের (stages) প্রথম ধাপ হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন এবং এরপর ধারণাটি প্রসারিত করে এখন, মৃত্যুর খবর শুনে সারভাইভার বা বেঁচে যাওয়াদের প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।

অনেক সমসাময়িক মনোবিশ্লেষক (psychoanalysts) ডিনায়ালকে (denial) একটি কোপিং চক্রের (coping cycle) প্রথম ধাপ হিসাবে বিবেচনা করেন। যখন একটি অস্বস্তিকর পরিবর্তন (unwelcome change) ঘটে, যেমন কোনো ধরনের ট্রমা (trauma), প্রথমে অবিশ্বাসের প্রবণতা (impulse to disbelieve) কোপিং এর কাজ শুরু করে। একটি সুস্থ মনের (healthy mind) মধ্যে, এই ডিনায়াল ধীরে ধীরে বৃহত্তর চেতনার দিকে উঠে আসে। চেতনার (consciousness) ঠিক নিচে এটি একটি অবচেতন চাপের (subconscious pressure) আকারে উপস্থিত হয়। কোপিং প্রক্রিয়ার (coping mechanism) সময় এটি অবদমন বা রিপ্রেশন (repression) হিসেবে কাজ করে, যখন ব্যক্তি ট্রমার (trauma) সাথে পুরোপুরি মুখোমুখি হওয়ার জন্য আবেগগত সম্পদ (emotional resources) সংগ্রহ করে। একবার মুখোমুখি হলে, ব্যক্তি একটি স্টেইজ বা ধাপে এসে ট্রমার (trauma) সাথে ডিল করে, যে স্টেইজ গ্রহণযোগ্যতা (acceptance) বা আলোকিতকরণ (enlightenment) নামে পরিচিত, আর এটি ইস্যুর পরিসর এবং থেরাপিস্টের (therapist) চিন্তাধারার স্কুলের (school of thought) উপর নির্ভর করে। এই ধাপটির পরে, ট্রমাটি একবার যথেষ্টভাবে মোকাবেলা করা হলে বা আপাতত মোকাবেলা করা হলে, সেটাকে (trauma) আবার সম্পূর্ণ সচেতনতা (conscious awareness) থেকে দূরে সরে যেতে হবে। সচেতন মন থেকে বাদ দিয়ে, সূক্ষ্মীকরণ বা সাবলিমেশনের (sublimation) প্রক্রিয়ায় একটি ভারসাম্য জড়িত থাকে যা সম্পূর্ণভাবে ভুলে যাওয়া বা সম্পূর্ণভাবে স্মরণ করার মধ্যে থাকে না। যদি এটিতে একটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার (protracted illness) মতো একটি চলমান প্রক্রিয়া (ongoing process) জড়িত থাকে তবে ট্রমাটি চেতনার (consciousness) মধ্যে পুনরায় উদ্ভাসিত হতে পারে। বিকল্পভাবে, সূক্ষ্মীকরণ (sublimation) সম্পূর্ণ সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে, যেখানে ট্রমা অবশেষে ভুলে যাওয়ার মধ্যে ডুবে যায়। কখনও কখনও পুরো চক্রটিকে আধুনিক পরিভাষায় ডিনায়াল (denial) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা শুধুমাত্র এর একটি ধাপের সাথে পুরো চক্রকে গুলিয়ে ফেলে। আরেকটা বিষয় আরও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে যে, ডিনায়াল (denial) এবং ডিনায়াল চক্রের (cycle of denial) পদগুলি কখনও কখনও একটি অস্বাস্থ্যকর, অকার্যকর সমাধানহীন কোপিং চক্রের (unresolved coping cycle) সাথে সম্পর্কিত, বিশেষত আসক্তি (addiction) এবং বাধ্যবাধকতার (compulsion) সাথে।

মনোবিশ্লেষণ তত্ত্ব (psychoanalytic theory) দ্বারা প্রস্তাবিত কিছু অন্যান্য প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়ার (defense mechanisms) (যেমন অবদমন (repression)) বিপরীতে ডিনায়ালের (denial) সাধারণ অস্তিত্ব যাচাই করা বেশ সহজ, এমনকি অ-বিশেষজ্ঞদের জন্যও। ডিনায়াল (denial) সবচেয়ে বিতর্কিত প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়াগুলোর (defense mechanisms) মধ্যে একটি, কারণ এটি সহজেই অবাঞ্ছনীয় তত্ত্ব (unfalsifiable theories) তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো সাবজেক্ট (subject) (যাকে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে) এমন কিছু বলে বা করে যা ইন্টারপ্রিটারের (interpreter) (যে বিশ্লেষণ করছে) তত্ত্বকে (theory) ভুল প্রমাণ করতে পারে, তবে সেই ইন্টারপ্রেটার সেই কথা বা কাজগুলোকে তার তত্ত্বের ভুল হিসেবে গ্রহণ না করে বরং সাবজেক্টের ডিনায়ালে (denial) থাকা বলে ব্যাখ্যা করতে পারে। অর্থাৎ, যে কোনো কিছু যা তার তত্ত্বের বিরোধিতা করে, সেগুলোকে কেবলই ডিনায়াল (denial) হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, এবং এতে তত্ত্বটি ভুল হয়ে থাকলেও আর ভুল বলে প্রমাণিত হবে না। তবে, গবেষকরা উল্লেখ করেছেন যে কিছু সমর্থিত শিশু যৌন নির্যাতনের (child sexual abuse) ক্ষেত্রে, ভুক্তভোগীরা (victims) কখনও কখনও আংশিক স্বীকারোক্তি (partial confessions) এবং প্রত্যাখ্যানের একটি সিরিজ তৈরি করে তাদের নিজস্ব ডিনায়াল (denial) এবং নির্যাতনকারীদের (abusers) বা পরিবারের সদস্যদের ডিনায়ালের (denial) সাথে লড়াই করার জন্য।

আইনি সেটিংয়ে (legal setting) ডিনায়াল থিওরি (denial theory) ব্যবহার সাধারণত সাবধানে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং বিশেষজ্ঞদের শংসাপত্র যাচাই করা হয়। আদালতে যখন ডিনায়াল থিওরি প্রয়োগ করা হয়, তখন এটি নিশ্চিত করা হয় যে যারা এই তত্ত্বটি ব্যবহার করছে তারা যথাযথভাবে প্রশিক্ষিত এবং যোগ্য। এভাবে, “কেউ ডিনায়ালে রয়েছে” এই সাধারণ অভিযোগটি আদালতে গ্রহণযোগ্যতা পায় না যদি না এটি বিশেষজ্ঞ দ্বারা যথাযথভাবে প্রমাণিত হয়।”অস্বীকারকারী” (denier) হিসাবে “অপরাধবোধের সূত্র” (formulaic guilt) ইংরেজি বিচারক (judge) এবং একাডেমিকদের দ্বারা নিন্দিত হয়েছে। প্রধান আপত্তি হল যে অস্বীকার তত্ত্বটি (denial theory) সেই ধারণার উপর ভিত্তি করে যে অস্বীকারকারী ব্যক্তি আসলেই সত্যকে অস্বীকার করছে। এটি বিচারক (judge) এবং জুরি (jury)-কে বিচারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, অর্থাৎ তাদের কাজ হলো সত্য নির্ধারণ করা। যখন অস্বীকার তত্ত্ব ব্যবহৃত হয়, তখন এটি যেন ধরে নেয় যে অস্বীকারকারী ব্যক্তি মিথ্যা বলছে, যা বিচারক ও জুরির নিরপেক্ষভাবে বিচার করার ক্ষমতাকে হরণ করে।

ডিনায়াল (denial) বিশেষ করে ম্যানিয়া (mania), হাইপোম্যানিয়া (hypomania) এবং সাধারণত ম্যানিক পর্যায়ে (manic stage) বাইপোলার অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডার (bipolar affective disorder) এর লোকেদের মধ্যে দেখা যায়। এই অবস্থায়, একজন ব্যক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্লান্তি (fatigue), ক্ষুধা (hunger), নেতিবাচক আবেগ (negative emotions) এবং সাধারণ সমস্যাগুলি (problems in general) অস্বীকার করতে পারে, যতক্ষণ না সে শারীরিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ম্যানিক অবস্থায় থাকা ব্যক্তিরা তাদের সমস্যা বা অস্বস্তি অস্বীকার করে চলতে থাকে যতক্ষণ না তাদের শরীর এতটাই ক্লান্ত হয়ে যায় যে তারা আর চালিয়ে যেতে পারে না।

অস্বীকার এবং অস্বীকৃতি (Denial and Disavowal)

ফ্রয়েড (Freud) ডিজাভাওয়াল (disavowal) (“Verleugnung”) ও ডিনায়াল (denial) (“Verneinung”) শব্দ দ্বারা দুটো ভিন্ন জিনিস মিন করেছিলেন। ডিজাভাওয়াল এর ক্ষেত্রে ব্যক্তির ডিফেন্স বা প্রতিরক্ষা এমন কিছু অস্বীকার করা বা ডিনায়াল নিয়ে গঠিত যা ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে এবং এটি তিনি যা স্পষ্টত অস্বীকার করছেন তা নিশ্চিত করার একটি উপায়। ফ্রয়েডের জন্য ডিজাভাওয়াল মনোবিকারের (psychoses) সাথে সম্পর্কিত, যেখানে ডিনায়াল একটি স্নায়বিক প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া (neurotic defense mechanism)। ফ্রয়েড তার ক্লিনিক্যাল কাজকে মনোবিকার (psychosis) এর ক্ষেত্রের বাইরেও প্রসারিত করেছেন। “ফেটিশিজম” (Fetishism) (১৯২৭) এ, তিনি দুজন যুবকের ক্ষেত্রে রিপোর্ট করেছিলেন যারা তাদের পিতার মৃত্যুকে অস্বীকার করেছিল। ফ্রয়েড উল্লেখ করেছেন যে তাদের মধ্যে কারোরই মনোবিকার (psychosis) ছিলনা, যদিও “বাস্তবতার একটি অংশ যা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা অস্বীকৃত (disavowed) হয়েছে, যেমন ফেটিশিস্টদের মধ্যে নারীর ক্যাস্ট্রেশনের (castration) ডিনায়াল দেখা যায়।”

প্রকারভেদ

সত্যের অস্বীকার (Denial of Fact)

এই ধরনের ডিনায়ালে কেউ প্রতারণার (deception) মাধ্যমে একটি সত্য (fact) এড়িয়ে যায়। এই মিথ্যাবাদীতা (lying) হতে পারে একটি সরাসরি মিথ্যা বলার (commission) মাধ্যমে, আবার হতে পারে কোন কিছু বর্ণনা করার সময় কোন কিছু ইচ্ছাকৃতভাবে কোন উদ্দেশ্যে বাদ দেয়ার (omission) মাধ্যমে, বা হতে পারে মিথ্যাভাবে কিছুতে সম্মত হওয়ার (assent) মাধ্যমে। কেউ যদি সত্যের ডিনায়ালে থাকে, তারা সাধারণত তাদের বা অন্যদের জন্য কষ্টদায়ক হতে পারে এমন সত্যগুলি এড়ানোর জন্য মিথ্যা ব্যবহার করছে।

দায়িত্বের অস্বীকার (Denial of Responsibility)

এই ধরনের ডিনায়ালে ব্যক্তিগত দায়িত্ব (responsibility) এড়ানো জড়িত:

  • অভিযোগ করা (Blaming): দায়িত্ব (culpability) এড়ানোর একটি সরাসরি বিবৃতি এবং এটি সত্যের অস্বীকারের (denial of fact) সাথে ওভারল্যাপ হতে পারে।
  • হ্রাস করা বা মিনিনাইজিং (Minimizing): একটি কাজের প্রভাব বা ফলকে সেটা আসলে যতটা ক্ষতিকর (harmful) হতে পারে তার চেয়ে কম ক্ষতিকর দেখানোর চেষ্টা করা।
  • ন্যায়সঙ্গত করা (Justifying): যখন কেউ একটা জিনিস বা পথ বা অপশন নিজের জন্য ঠিক বা সিলেক্ট বা পছন্দ করে, এবং তখন তাদের দৃষ্টিতে পরিস্থিতিতে যা সঠিক তার ভিত্তিতে সেই পছন্দটিকে গ্রহণযোগ্য দেখানোর চেষ্টা করে।
  • পুনরাবৃত্তি (Regression): যখন কেউ তাদের বয়সের তুলনায় পূর্বের একটি কম পরিপক্ক বা শিশুসুলভ পর্যায়ে ফিরে যায়।

কেউ দায়িত্বের অস্বীকার ব্যবহার করলে তারা সাধারণত নিজেদের থেকে মনোযোগ সরিয়ে সম্ভাব্য ক্ষতি বা ব্যথা এড়ানোর চেষ্টা করছে।

প্রভাবের অস্বীকার (Denial of Impact)

প্রভাবের অস্বীকারে (denial of impact) একজন ব্যক্তি তাদের বা অন্যদের ক্ষতি সম্পর্কে চিন্তা করা বা বোঝা এড়িয়ে যায়, অর্থাৎ পরিণতির অস্বীকার (denial of consequences) দেখায়। এটি সেই ব্যক্তিকে অপরাধবোধ (guilt) অনুভব করা এড়াতে সক্ষম করে এবং এটি তাকে অন্যদের প্রতি অনুশোচনা (remorse) বা সহানুভূতি (empathy) বিকাশ থেকে বিরত রাখতে পারে। প্রভাবের অস্বীকার খারাপ সিদ্ধান্ত থেকে ব্যথা বা ক্ষতির অনুভূতি কমায় বা দূর করে।

সচেতনতার অস্বীকার (Denial of Awareness)

এই ধরনের অস্বীকার (denial) ব্যথা (pain) কমানোর চেষ্টা করে এইভাবে যে, ব্যক্তি দাবি করে যে তার সচেতনতার স্তর (level of awareness) কিছু প্রশমক ভেরিয়েবলের (mitigating variable) জন্য কমে গিয়েছিল। এটি সাধারণত দেখা যায় আসক্তি পরিস্থিতিতে (addiction situations), যেখানে মাদক বা অ্যালকোহল অপব্যবহার (drug or alcohol abuse) একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, এটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা (mental health issues) বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলার জন্য ব্যবহৃত ওষুধের (pharmaceutical substances) সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। এই ধরনের অস্বীকার দায়িত্বের অস্বীকারের (denial of responsibility) সাথে ওভারল্যাপ (overlap) করতে পারে।

ডিনায়ালিজম (Denialism)

ভূমিকা

মানব আচরণের মনোবিজ্ঞানে, ডিনায়ালিজম (denialism) হল একজন ব্যক্তির এমন একটি পছন্দ যেখানে তিনি মানসিকভাবে অস্বস্তিকর সত্যকে বিশ্বাস করা এড়াতে বাস্তবতাকে অস্বীকার করেন। ডিনায়ালিজম (denialism) হল এমন একটি আচরণ যেখানে একজন ব্যক্তি বাস্তবতা অস্বীকার করে মানসিকভাবে অস্বস্তিকর সত্যকে এড়াতে চান। এটি একটি অযৌক্তিক কর্ম, যেখানে ব্যক্তি এমন তথ্য বা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করতে অস্বীকার করেন যা পরীক্ষামূলকভাবে যাচাইযোগ্য এবং প্রমাণিত। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি এমন কোনও ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করেন যা আসলে ঘটেছে এবং যার বৈজ্ঞানিক বা প্রমাণিত ভিত্তি রয়েছে।

বিজ্ঞানে, ডিনায়ালিজম (denialism) হল মৌলিক তথ্য এবং ধারণাগুলির প্রত্যাখ্যান যা একটি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ঐকমত্যের (scientific consensus) অখণ্ড, সু-সমর্থিত অংশ এবং এদের পরিবর্তে মৌলিক (radical), বিতর্কিত (controversial) বা মনগড়া (fabricated) ধারণাগুলিকে সমর্থন করে। হলোকাস্ট ডিনায়াল (Holocaust denial) এবং এইডস ডিনায়ালিজম (AIDS denialism) বিষয়বস্তুর তথ্য এবং বাস্তবতাকে অস্বীকার করা নির্দেশ করে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অস্বীকার (climate change denial) দ্বারা সেই ডিনায়ালকে বোঝানো হয় যেখানে পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তনের (climate change) বাস্তব এবং ঘটমান ঘটনাটির অস্বীকার যা প্রধানত সাম্প্রতিক ভূতাত্ত্বিক সময়ে মানব কার্যকলাপ দ্বারা সৃষ্ট। ডিনায়ালিজমের রূপগুলি এই সাধারণ বৈশিষ্ট্যটি উপস্থাপন করে যে ব্যক্তি খুব প্রকট ও শক্তিশালী প্রমাণগুলি অস্বীকার করেন এবং ঐক্যমতের (consensus) অস্তিত্ব অস্বীকার করার প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক বিতর্ক (political controversy) সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন।

ডিনায়ালিজমের (denialism) প্রেরণা এবং কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ধর্ম (religion), স্বার্থ (self-interest) (অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বা আর্থিক), এবং মানসিক প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া বা ডিফেন্স মেকানিজম (defense mechanisms) যা মানসিকভাবে বিরক্তিকর তথ্য এবং ধারণাগুলির বিরুদ্ধে ডিনায়ালিস্টের (denialist) মনকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়; এমন বিরক্তিকে মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় কগনিটিভ ডিসোন্যান্স (cognitive dissonance) বলা হয়।

সংজ্ঞা ও কৌশল

নৃতাত্ত্বিক (anthropologist) দিদিয়ার ফাসিন (Didier Fassin) ডিনায়াল (denial) এবং ডিনায়ালিজম (denialism) এর মধ্যে পার্থক্য করেন। তিনি ডিনায়ালকে সংজ্ঞায়িত করেছেন “বাস্তবতা এবং সত্য অস্বীকার করার অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষণ” হিসেবে, এবং ডিনায়ালিজমকে সংজ্ঞায়িত করেছেন “একটি আদর্শিক অবস্থান যেখানে একজন পদ্ধতিগতভাবে বাস্তবতা এবং সত্যকে অস্বীকার করেন।”

ব্যক্তি এবং সামাজিক গোষ্ঠীগুলি যখন কোনও প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে যা মূলধারার এবং বৈজ্ঞানিক ঐকমত্যের উপর নির্ভর করে থাকে, তারা ডিনায়ালিজমে (denialism) জড়িত থাকে যখন তারা তর্ক এবং বৈধ বিতর্কের চেহারা দিতে রেটোরিকাল কৌশল ব্যবহার করে, যেখানে তেমন কোন যুক্তিই থাকেনা। এটি একটি প্রক্রিয়া যা একটি বৈধ বিতর্কের চেহারা বজায় রাখতে নিম্নলিখিত পাঁচটি কৌশলের একটি বা তার অধিকে ব্যবহার করে পরিচালিত হয়:

  1. ষড়যন্ত্র তত্ত্ব (Conspiracy theories) – তথ্য বা পর্যবেক্ষণকে বাতিল করে দিয়ে প্রতিপক্ষদের সত্যকে দমনের ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত বলে ধারণা করা।
  2. চেরি পিকিং (Cherry picking) – চেরি পিকিং হল এমন একটি কৌশল যেখানে কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠী তাদের ধারণাকে সমর্থন করে এমন অস্বাভাবিক বা ব্যতিক্রমী তথ্য বা প্রমাণ বেছে নেয়। এই প্রক্রিয়ায়, তারা এমন একটি সমালোচনামূলক গবেষণা বা পেপার নির্বাচন করে যা তাদের মতামতকে সমর্থন করে। এছাড়াও, তারা এমন পুরানো, ত্রুটিপূর্ণ, বা অবমাননাকৃত গবেষণা বা পেপার ব্যবহার করে যা তাদের প্রতিপক্ষের মতামতকে দুর্বল বা ভিত্তিহীন দেখানোর চেষ্টা করে। এই কৌশলটি ব্যবহার করে, তারা তাদের নিজেদের তত্ত্বকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করার চেষ্টা করে, যদিও সেই তথ্য বা প্রমাণগুলি সাধারণত মূলধারার বৈজ্ঞানিক ঐকমত্যের সাথে মেলে না।
  3. মিথ্যা বিশেষজ্ঞ (False experts) – আলোচ্য ফিল্ডের একজন বিশেষজ্ঞ বা অন্য ফিল্ডের একজন বিশেষজ্ঞকে অর্থ প্রদান করা যাতে তারা সমর্থনকারী প্রমাণ বা বিশ্বাসযোগ্যতা যোগ করতে পারেন। এটির ফলে প্রকৃত বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের প্রান্তিকীকরণও ঘটে।
  4. গোলপোস্ট সরানো (Moving the goalposts) – একটি নির্দিষ্ট দাবির প্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রদত্ত প্রমাণকে বাতিল করা এবং ক্রমাগত অন্য কিছু (প্রায়ই পূরণ করা যায় না এমন) প্রমাণের দাবি করা।
  5. অন্যান্য যৌক্তিক ভ্রান্তি (Other logical fallacies) – সাধারণত মিথ্যা উপমা, পরিণতি আবেদন, স্ট্রম্যান, বা রেড হেরিং এর মধ্যে একটি বা একাধিক।

বিভিন্ন ধরনের ডিনায়ালিজমের (denialism) সাধারণ কৌশলগুলির মধ্যে প্রমাণের ভুল উপস্থাপনা, মিথ্যা সমতুল্যতা বা ফলস ইকুইভ্যালেন্স, অর্ধ-সত্য এবং সোজা মিথ্যা অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারক এডউইন ক্যামেরন (Edwin Cameron) উল্লেখ করেছেন যে ডিনায়ালিস্টদের দ্বারা ব্যবহৃত একটি সাধারণ কৌশল হল “চিত্র এবং পরিসংখ্যানের অনিবার্য অনির্ধারিততাকে বড় খেলা বানানো।” ইতিহাসবিদ তানার আকচাম (Taner Akçam) উল্লেখ করেছেন যে ডিনায়ালিজম (denialism) সাধারণত সত্যের অস্বীকৃতি হিসেবে দেখা হয়, তবে প্রকৃতপক্ষে এটি এমন একটি অস্পষ্ট অঞ্চলে ঘটে যেখানে সত্য এবং মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট নয়। ডিনায়ালিজম (denialism) সেই অস্পষ্ট অঞ্চলে কার্যকর হয় এবং এটির নিজস্ব তথ্য (facts) এবং নিজস্ব সত্য (truth) থাকে যা ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক সত্যের বিপরীতে থাকে। সহজ ভাষায়, ডিনায়ালিজম (denialism) বাস্তব ঘটনা বা সত্যকে অস্বীকার করে এবং নিজের মত করে তথ্য তৈরি করে যা তাদের বিশ্বাসকে সমর্থন করে।

লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের (London School of Economics) অ্যালেক্স গিলেস্পি (Alex Gillespie) ভাষায় ডিনায়ালিজম (denialism) কিভাবে ভাষায় অর্জিত হয় তার রেটোরিকাল কৌশলগুলির উপর ফোকাস করে এবং বিঘ্নিত তথ্য অস্বীকার করার জন্য ভাষাগত এবং বাস্তব প্রতিরক্ষামূলক কৌশলগুলির পর্যালোচনা করেছেন। এই কৌশলগুলি তিনটি প্রতিরক্ষার স্তর হিসাবে ধারণাগত করা হয়েছে:

  1. এড়িয়ে চলা (Avoiding) – বিঘ্নিত তথ্যের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন হল এটি এড়ানো।
  2. অবমূল্যায়ন করা (Delegitimizing) – মেসেঞ্জারকে আক্রমণ করার দ্বিতীয় প্রতিরক্ষা লাইন, উত্সের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুন্ন করা।
  3. সীমাবদ্ধ করা (Limiting) – চূড়ান্ত প্রতিরক্ষা লাইন, যদি বিঘ্নিত তথ্য এড়ানো বা অবমূল্যায়ন করা না যায়, তবে বিঘ্নিত ধারণাগুলির প্রভাব যুক্তিসঙ্গত করা এবং সীমিত করা।

২০০৯ সালে লেখক মাইকেল স্পেক্টার (Michael Specter) গ্রুপ ডিনায়ালিজম (group denialism) কে সংজ্ঞায়িত করেছেন “যখন একটি সম্পূর্ণ সমাজের অংশ, প্রায়ই পরিবর্তনের ট্রমা মোকাবেলা করে, বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যায় একটি অধিকতর আরামদায়ক মিথ্যার পক্ষে।”

প্রেস্ক্রিপ্টিভ এবং পোলেমিক দৃষ্টিভঙ্গি

যদি বিতর্কের এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ডিনায়ালিজম (denialism) এর অভিযোগ করে, তাহলে তারা বিতর্কটিকে ফ্রেমিং করে। এটি হয় কারণ ডিনায়ালিজম (denialism) এর অভিযোগ প্রেস্ক্রিপ্টিভ (prescriptive) এবং পোলেমিক (polemic) দুইই: প্রেস্ক্রিপ্টিভ (prescriptive) কারণ এতে যে দাবি অস্বীকার করা হয়েছে তা সত্য বলে নির্দেশ করে; পোলেমিক (polemic) কারণ অভিযুক্ত ব্যক্তি ইঙ্গিত দেন যে উপস্থাপিত প্রমাণের আলোকে অব্যাহত অস্বীকৃতি অন্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের (Exeter University) দর্শনের অধ্যাপক এডওয়ার্ড স্কিডেলস্কি (Edward Skidelsky) লিখেছেন, “‘ডিনায়াল’ (denial) এর অভিযোগ গুরুতর, যা হয় ইচ্ছাকৃত অসততা বা আত্মপ্রতারণা বা সেলফ ডিসেপশন নির্দেশ করে। যে বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে তা ইঙ্গিত করে যে এটি এতটাই সত্য যে ডিনায়ার (denier) অবশ্যই কুচক্রীতা, বিদ্বেষ বা ইচ্ছাকৃত অন্ধত্ব দ্বারা চালিত হতে হবে।” তিনি প্রস্তাব করছেন যে, ঐতিহাসিক এবং বৈজ্ঞানিক বিতর্কের আরও এলাকায় ডিনায়ার (denier) শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা এনলাইটেনমেন্ট (The Enlightenment) যুগের একটি বড় সাফল্যকে বিপন্ন করছে। এনলাইটেনমেন্টের (The Enlightenment) অন্যতম প্রধান অর্জন ছিল ঐতিহাসিক এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে ধর্মীয় মতবাদ এবং কুসংস্কার থেকে মুক্ত করা। কিন্তু ডিনায়াল (denial) এবং ডিনায়ার (denier) শব্দের ব্যবহার বাড়ার ফলে, এই স্বাধীনতার ওপর প্রভাব পড়ছে এবং ধীরে ধীরে এটি আবার ধর্মমতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। সহজ ভাষায়, তিনি বলছেন যে এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করে বিতর্কে অংশগ্রহণ করলে, এটি বিজ্ঞান ও ইতিহাসের উপর ধর্মীয় বা কুসংস্কারমূলক নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

কিছু লোক প্রস্তাব করেছেন যে হলোকাস্ট (Holocaust) ডিনায়ালের বিষয়টি ভালোভাবে জানা থাকার কারণে, যারা ডিনায়ালিস্ট (denialist) শব্দটি অন্যান্য বিতর্কের এলাকায় ব্যবহার করেন তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাদের প্রতিপক্ষকে হলোকাস্ট ডিনায়ারদের (Holocaust deniers) চেয়ে কম ভালো দেখানোর চেষ্টা করেন। তবে, রবার্ট গ্যালো (Robert Gallo) এবং তার সহকর্মীরা এই শেষের তুলনাকে সমর্থন করেছেন, এটি উল্লেখ করে যে এইডস ডিনায়ালিজম (AIDS denialism) হলোকাস্ট ডিনায়ালের (Holocaust denial) মতোই একটি মিথ্যা বিজ্ঞান, যা “একটি বিশাল সংখ্যক গবেষণার বিরুদ্ধে যায়।”

রাজনীতি এবং বিজ্ঞান

জলবায়ু পরিবর্তন

জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার বা ক্লাইমেট চেজ ডিনায়াল (Climate change denial) (এটিকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং ডিনায়াল (global warming denial)ও বলা হয়) হল একটি সায়েন্স ডিনায়াল (science denial) যাকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈজ্ঞানিক ঐক্যমত্যকে প্রত্যাখ্যান করা, স্বীকার করতে অস্বীকার করা, বিতর্ক করা বা এর বিরুদ্ধে লড়াই করার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। যারা ডিনায়াল প্রচার করেন তারা সাধারণত একে বিজ্ঞানমূলক বিতর্কের এপিয়ারেন্স দেওয়ার জন্য আলঙ্কারিক কৌশল বা রেটোরিকাল ডিভাইস ব্যবহার করেন যেখানে কোনও যুক্তি নেই। ক্লাইমেট চেঞ্জ ডিনায়াল (climate change denial) এর মধ্যে মানুষের দ্বারা জলবায়ু পরিবর্তনের পরিমাণ, এর প্রকৃতি এবং মানব সমাজে প্রভাব, এবং মানব ক্রিয়াকলাপ দ্বারা গ্লোবাল ওয়ার্মিং অভিযোজনের সম্ভাবনা সম্পর্কে অযৌক্তিক সন্দেহ অন্তর্ভুক্ত। একটি ছোট পরিসরে, ক্লাইমেট চেঞ্জ ডিনায়াল (climate change denial) তখনও হতে পারে যখন মানুষ বিজ্ঞান গ্রহণ করে কিন্তু তা তাদের বিশ্বাস বা ক্রিয়ার সাথে মেলাতে ব্যর্থ হয়। বেশ কয়েকটি গবেষণা এই অবস্থানগুলিকে ডিনায়ালিজম (denialism), ছদ্মবিজ্ঞান (pseudoscience), বা প্রোপাগান্ডা (propaganda) রূপে বিশ্লেষণ করেছে।

অনেক বিষয় যা বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ে নিষ্পত্তি হয়েছে, যেমন গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য মানুষের দায়িত্ব, তা এখনও রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিকভাবে প্রেরিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা কমিয়ে দেখানো, খারিজ করা বা অস্বীকার করা হয়। এগুলো টিপিকাল ঘটনা যাকে একাডেমিক এবং বিজ্ঞানীরা ক্লাইমেট চেঞ্জ ডিনায়াল (climate change denial) বলে অভিহিত করেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা রিপোর্ট করেছেন যে সরকার এবং তেল শিল্প তাদের কাজকে সেন্সর বা দমন করার এবং বৈজ্ঞানিক ডেটা লুকানোর জন্য চাপ দিচ্ছে, জনসমক্ষে বিষয়টি আলোচনা না করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফসিল ফুয়েল লবির (fossil fuels lobby) প্রকাশ্যে বা গোপনে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর বৈজ্ঞানিক ঐক্যমত্য বা সায়েন্টিফিক কনসেন্সাসকে দুর্বল বা অসম্মান করার প্রচেষ্টাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এইচআইভি/এইডস (HIV/AIDS)

এইডস ডিনায়ালিজম (AIDS denialism) হলো এই ধারণার অস্বীকৃতি যে হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV) অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিন্ড্রোম (AIDS) এর কারণ। এইডস ডিনায়ালিজম (AIDS denialism) কে সবচেয়ে ভোকাল এন্টি-সায়েন্স ডিনায়াল মুভমেন্টগুলির (anti-science denial movements) মধ্যে একটি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিছু ডিনায়ালিস্ট (denialists) HIV এর অস্তিত্ব অস্বীকার করে, আবার কিছু তা মেনে নেয় কিন্তু বলে যে এটি একটি ক্ষতিকর ভাইরাস নয় এবং AIDS এর কারণ নয়। যতদূর ডিনায়ালিস্টরা (denialists) AIDS কে একটি বাস্তব রোগ হিসাবে স্বীকার করে, তারা এটি বিনোদনমূলক মাদক ব্যবহার, অপুষ্টি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, এবং অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সংমিশ্রণের কারণে হয় বলে দাবি করে, কিন্তু HIV সংক্রমণের কারণে নয়। তবে, HIV যে AIDS সৃষ্টি করে তার প্রমাণ বৈজ্ঞানিকভাবে চূড়ান্ত এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় এইডস ডিনায়ালিস্টদের (AIDS-denialist) দাবিগুলিকে ত্রুটিপূর্ণ যুক্তি, চেরি পিকিং (cherry picking), এবং পুরাতন বৈজ্ঞানিক ডেটার ভুল উপস্থাপনা হিসাবে প্রত্যাখ্যান করে এবং উপেক্ষা করে। বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় দ্বারা এই যুক্তিগুলি প্রত্যাখ্যান করার পরে, এইডস ডিনায়ালিস্ট (AIDS-denialist) উপকরণ এখন মূলত ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।

সাউথ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট থাবো এমবেকি (Thabo Mbeki) এইডস ডিনায়ালিজম (AIDS denialism) কে সমর্থন করেছিলেন, ঘোষণা করেছিলেন যে AIDS মূলত দারিদ্র্য দ্বারা সৃষ্ট। তার প্রেসিডেন্সির সময় প্রায় ৩৬৫,০০০ মানুষ AIDS এ মারা গিয়েছিল; অনুমান করা হয় যে প্রায় ৩৪৩,০০০ অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা যেত যদি সঠিক চিকিৎসা উপলব্ধ থাকত।

কোভিড-১৯ (COVID-19)

“কোভিড-১৯ ডিনায়ালিজম” (COVID-19 denialism) বা শুধুমাত্র “কোভিড ডিনায়ালিজম” (COVID denialism) বলতে তাদের চিন্তাভাবনাকে বোঝায় যারা COVID-19 মহামারীর বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, অন্ততপক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত COVID মৃত্যুর ডেটা অস্বীকার করে। COVID-19 মহামারীটি জাল, অতিরঞ্জিত, বা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এমন দাবিগুলি ছদ্মবিজ্ঞান (pseudoscience)। কিছু বিখ্যাত ব্যক্তি যারা COVID-19 ডিনায়ালিজম (COVID-19 denialism) এ জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে ইলন মাস্ক (Elon Musk), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump), এবং ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো (Bolsonaro) রয়েছেন।

বিবর্তন (Evolution)

ধর্মীয় বিশ্বাস একজন ব্যক্তিকে বিবর্তন (evolution) এর বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বৈধতাকে অস্বীকার করতে প্ররোচিত করতে পারে। বিবর্তন (evolution) বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায় এবং একাডেমিয়াতে একটি নিঃসন্দেহে সত্য হিসাবে বিবেচিত হয়, যেখানে বিবর্তনের সমর্থন প্রায় সার্বজনীন, তবুও এই দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়ই বাইবেলের বর্ণনাকারীদের (biblical literalists) দ্বারা বিরোধিত হয়। বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি প্রায়ই জেনেসিসের (Genesis) সৃষ্টির মিথের (creation myth) একটি আক্ষরিক ব্যাখ্যা হিসাবে উপস্থাপিত হয়। অনেক মৌলবাদী খ্রিস্টান সৃষ্টি বিজ্ঞান (creation science) এবং বুদ্ধিমান ডিজাইন (intelligent design) এর ব্যানারে সৃষ্টিতত্ত্ব (creationism) কে বাস্তবতা হিসাবে শিক্ষা দেয়। সৃষ্টি তত্ত্বের (creationism) সাথে সাধারণত যে বিশ্বাসগুলি মিলে যায় তার মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক বন্যার মিথ (global flood myth), ভূ-কেন্দ্রিকতা (geocentrism), এবং বিশ্বাস যে পৃথিবী মাত্র ৬,০০০–১০,০০০ বছর পুরানো। এই বিশ্বাসগুলি বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ে ছদ্মবিজ্ঞান (pseudoscience) হিসাবে দেখা হয় এবং ব্যাপকভাবে ত্রুটিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

সমতল পৃথিবী (Flat Earth)

পৃথিবী সমতল এবং পৃথিবীর প্রায় গোলাকৃতি এবং সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে এমন পুরাতন বিশ্বাসগুলো ও এগুলোর বিরুদ্ধে সমস্ত বিপুল প্রমাণের অস্বীকৃতি ২১শ শতাব্দীতেও টিকে আছে। আধুনিক সমতল-পৃথিবী তত্ত্বের সমর্থকরা (flat-Earthers) কোন ধরনের বিপরীত প্রমাণ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, সমস্ত মহাকাশযাত্রা এবং মহাকাশ থেকে তোলা ছবিগুলোকে প্রতারণা হিসাবে খারিজ করে এবং সমস্ত সংস্থা এবং এমনকি বেসরকারী নাগরিকদেরও “সত্য লুকানোর” ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনে। তারা আরও দাবি করে যে কোনও প্রকৃত স্যাটেলাইট পৃথিবীর চারপাশে আবর্তিত হয় না, যে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (International Space Station) নকল এবং সমস্ত সরকার এই মহা প্রচ্ছন্নতার মধ্যে মিথ্যা বলছে। কিছু সমতল-পৃথিবী তত্ত্বের সমর্থক বিশ্বাস করেন যে অন্যান্য গ্রহ এবং নক্ষত্রও প্রতারণা।

আধুনিক সমতল-পৃথিবী মডেলের (flat-earth model) অনুসারীরা প্রস্তাব করেন যে একটি গম্বুজাকৃতির ফার্মামেন্ট (dome-shaped firmament) একটি ডিস্ক-আকৃতির পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে। তারা স্যামুয়েল রোবোথামের (Samuel Rowbotham) পরামর্শ অনুসরণ করে দাবি করতে পারে যে সূর্য পৃথিবীর উপরে মাত্র ৩,০০০ মাইল (৪,৮০০ কিমি) উচ্চতায় অবস্থিত এবং চাঁদ এবং সূর্য পৃথিবীর উপরে প্রদক্ষিণ করে, তার চারপাশে নয়। আধুনিক সমতল-পৃথিবী তত্ত্বের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন যে অ্যান্টার্কটিকা (Antarctica) একটি মহাদেশ নয় বরং একটি বিশাল বরফের স্তর, যার প্রাচীর ১৫০ ফুট (৪৬ মিটার) বা তারও বেশি উঁচু, যা পৃথিবীর পরিধি ঘিরে রেখেছে এবং সবকিছু (সবচেয়ে সমুদ্রের জল সহ) পতন থেকে রক্ষা করে।

সমতল-পৃথিবীর সমর্থকরা আরও দাবি করেন যে কেউ অ্যান্টার্কটিকার উপরে উড়তে বা অনুসন্ধান করতে পারবে না, সত্ত্বেও বিপরীত প্রমাণ রয়েছে। তাদের মতে, সমস্ত ছবি এবং ভিডিও যেখানে জাহাজগুলো দিগন্তের নিচে ডুবে যায় এবং শহরের আকাশচিত্র এবং মেঘের তলদেশ দিগন্তের নিচে দেখা যায়, যা পৃথিবীর বাঁক প্রকাশ করে, সেগুলো সবই বিকৃত, কম্পিউটার-জেনারেটেড, বা কোনভাবে নকল। তাই, কোন বৈজ্ঞানিক বা অভিজ্ঞতামূলক প্রমাণ প্রদান করা হোক না কেন, সমতল-পৃথিবীর সমর্থকরা উপসংহারে আসে যে এটি কোনভাবে মিথ্যা বা পরিবর্তিত।

যখন মহাকর্ষ (gravity), সূর্যাস্ত (sunsets), জোয়ার (tides), গ্রহণ (eclipses), দূরত্ব এবং অন্যান্য মাপজোখের মতো অন্যান্য পর্যবেক্ষিত ঘটনাগুলির সাথে যুক্ত করা হয় যা সমতল পৃথিবী মডেলকে চ্যালেঞ্জ করে, দাবিদাররা সাধারণত গৃহীত ব্যাখ্যার পরিবর্তে খণ্ডিত মডেলগুলি ব্যবহার করে যা দৃষ্টিকোণ (perspective), ভর (mass), ভাসা (buoyancy), আলো (light) বা অন্যান্য শারীরিক সিস্টেমগুলি কিভাবে কাজ করে তা বিকৃত বা অতিসরলীকৃত করে। এই খণ্ডিত প্রতিস্থাপনগুলি খুব কমই একে অপরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, ফলে অনেক সমতল-পৃথিবীর দাবিদাররা একমত হন যে এই ধরনের ঘটনাগুলি “রহস্য” থেকে যায় এবং আরও তদন্ত প্রয়োজন। এই উপসংহারে, অনুসারীরা সাধারণত গৃহীত গোলাকার পৃথিবী মডেল ছাড়া সমস্ত ব্যাখ্যা গ্রহণে উন্মুক্ত থাকে, যা বিতর্ককে অজ্ঞতা থেকে ডিনায়ালিজমে (denialism) পরিণত করে।

জেনেটিকালি মোডিফাইড ফুডস (Genetically Modified Foods)

একটি বৈজ্ঞানিক ঐক্যমত্য রয়েছে যে বর্তমানে উপলব্ধ জেনেটিকালি মোডিফাইড (GM) ফসল থেকে প্রাপ্ত খাবারগুলি প্রচলিত খাবারের তুলনায় মানব স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ঝুঁকি তৈরি করে না, তবে প্রতিটি GM খাবার প্রবর্তনের আগে ক্ষেত্রভিত্তিক পরীক্ষার প্রয়োজন। তবুও, সাধারণ মানুষ বিজ্ঞানীদের তুলনায় GM খাবারগুলিকে নিরাপদ মনে করার সম্ভাবনা অনেক কম। GM খাবারের আইনি এবং নিয়ন্ত্রক অবস্থা দেশভেদে পরিবর্তিত হয়, কিছু জাতি এগুলিকে নিষিদ্ধ বা সীমিত করে এবং অন্যরা বিভিন্ন মাত্রার নিয়মের সাথে এগুলিকে অনুমোদন করে।

মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জেনেটিকালি মোডিফাইড (GM) খাবারের বিরোধীদের মধ্যে ৭০% এরও বেশি লোক তাদের বিরোধিতায় একদম অনড়। তারা GM খাবার খাওয়ার কথা চিন্তা করলেই প্রচণ্ড বিরক্তি অনুভব করেন এবং এই খাবারগুলি নিরাপদ কিনা তা প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন না। সহজ কথায়, তারা GM খাবারের বিরুদ্ধে এতটাই দৃঢ় অবস্থানে থাকে যে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তাদের মতামত পরিবর্তন করতে পারে না।

স্ট্যাটিনস (Statins)

স্ট্যাটিন ডিনায়ালিজম (Statin denialism) হলো কোলেস্টেরল-হ্রাসকারী ওষুধের একটি শ্রেণীর চিকিৎসাগত মূল্যের অস্বীকৃতি। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের (Cleveland Clinic) কার্ডিওলজিস্ট স্টিভেন নিসেন (Steven Nissen) মন্তব্য করেছেন, “আমরা আমাদের রোগীদের মন ও হৃদয়ের জন্য ওয়েবসাইটগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধে হেরে যাচ্ছি…” যারা অপ্রমাণিত চিকিৎসা থেরাপি প্রচার করে। হারিয়েট হল (Harriet Hall) স্ট্যাটিন ডিনায়ালিজমের (Statin denialism) একটি বর্ণালী দেখেন যা ছদ্মবৈজ্ঞানিক দাবী থেকে শুরু করে উপকারের অবমূল্যায়ন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অতিরঞ্জন পর্যন্ত বিস্তৃত, যা সমস্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের পরিপন্থী।

মানসিক রোগের অস্বীকার (Mental Illness Denial)

মানসিক রোগ বা মানসিক ব্যাধি অস্বীকার হলো যেখানে একজন ব্যক্তি মানসিক ব্যাধির অস্তিত্ব অস্বীকার করেন। উভয় গম্ভীর বিশ্লেষক এবং ছদ্মবৈজ্ঞানিক আন্দোলনগুলি নির্দিষ্ট ব্যাধির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করে। কিছু পেশাদার গবেষক মানসিক রোগ যেমন বিষণ্নতা সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন এবং যুক্তি দেন যে এর সমাধান ব্যক্তির মস্তিষ্কে নয়, সমাজের একটি ত্রুটিকে ঠিক করার মধ্যে রয়েছে। কিছু মানুষ নিজেরা মানসিকভাবে অসুস্থ হবার পরেও অস্বীকার করতে পারে, নির্দিষ্ট বিশ্লেষকরা যুক্তি দেন যে এই ডিনায়ালিজম সাধারণত নার্সিসিস্টিক ইনজুরি দ্বারা পরিচালিত হয়। অ্যান্টি-সাইকিয়াট্রি আন্দোলন যেমন সায়েন্টোলজি (Scientology) মানসিক রোগ অস্বীকার করে এবং মনোরোগবিদ্যার বিকল্প অনুশীলন প্রচার করে।

নির্বাচন অস্বীকার (Election Denial)

নির্বাচন অস্বীকার হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের ফলাফলের মিথ্যা অস্বীকৃতি। স্টেসি অ্যাব্রামস (Stacey Abrams) ২০১৮ সালের জর্জিয়ার গভর্নর নির্বাচনের জন্য অস্বীকার করেছিলেন যে এটি “মুক্ত এবং সুষ্ঠু নির্বাচন” ছিল না এবং “প্রায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ” মামলায় $২২ মিলিয়ন ব্যয় করেছিলেন। ২০২০ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর থেকে ২০২০ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পর্কে একটি চলমান চুরি হওয়া নির্বাচন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে।

ইতিহাসচর্চা (Historiography)

ঐতিহাসিক নাকচবাদ (Historical negationism) বা স্বীকৃত ঐতিহাসিক তথ্যের অস্বীকৃতি (denialism) ইতিহাসবিদদের মধ্যে প্রধান উদ্বেগের একটি বিষয় এবং এটি প্রায়শই গ্রহণযোগ্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি বিকৃত বা মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। অতীতকে পুনরায় সংশোধন করার চেষ্টা করার সময়, নাকচবাদীরা (negationists) সঠিক ঐতিহাসিক আলোচনায় অগ্রহণযোগ্য কৌশল ব্যবহার করে, যেমন পরিচিত নকল দলিলগুলি আসল (genuine) হিসাবে উপস্থাপন করা, আসল দলিলগুলির প্রতি অবিশ্বাস করার জন্য উদ্ভাবনী কিন্তু অযৌক্তিক কারণগুলি উদ্ভাবন করা, বই এবং উৎসগুলিকে এমন সিদ্ধান্ত আরোপ করা যা বিপরীত রিপোর্ট করে, পরিসংখ্যানগত সিরিজগুলি হেরফের (manipulating) করে নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে পাঠ্যগুলি ভুল অনুবাদ (mistranslating) করা।

কিছু দেশ, যেমন জার্মানি (Germany), নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির নাকচবাদকে অপরাধ (criminalized) হিসেবে গণ্য করেছে, অন্যদিকে কিছু দেশ বিভিন্ন কারণে আরও সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করে, যেমন বাকস্বাধীনতার সুরক্ষা (protection of free speech)। অন্যরা নাকচবাদী (negationist) মতামতকে বাধ্যতামূলক করে, যেমন ক্যালিফোর্নিয়া (California), যেখানে স্কুলের শিশুদের ক্যালিফোর্নিয়া গণহত্যার (California genocide) বিষয়ে শিক্ষা থেকে স্পষ্টভাবে বিরত রাখা হয়েছে।

আর্মেনিয়ান গণহত্যা অস্বীকার (Armenian Genocide Denialism)

আর্মেনিয়ান গণহত্যা অস্বীকার (Armenian genocide denial) হল এই দাবি যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান সাম্রাজ্য (Ottoman Empire) এবং এর শাসক দল, কমিটি অব ইউনিয়ন অ্যান্ড প্রগ্রেস (Committee of Union and Progress – CUP), তার আর্মেনিয়ান নাগরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যা (genocide) চালায়নি—এটি প্রচুর প্রমাণ দ্বারা নথিভুক্ত এবং বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ পণ্ডিত দ্বারা স্বীকৃত। অপরাধীরা যখন গণহত্যা চালাচ্ছিল, তখন তারা এটি অস্বীকার করেছিল, দাবি করেছিল যে অটোমান সাম্রাজ্যের আর্মেনিয়ানদের সামরিক কারণে পুনর্বাসিত (resettled) করা হয়েছিল, নির্মূল (exterminated) করা হয়নি। গণহত্যার পরিণামে, দোষারোপমূলক দলিলগুলি পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস (systematically destroyed) করা হয়েছিল, এবং ২০২৩ পর্যন্ত তুরস্কের (Turkey) প্রতিটি সরকার এবং ১৯৯১ সাল থেকে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের (Republic of Azerbaijan) নীতি ছিল এই অস্বীকার।

CUP এর কর্মগুলি ন্যায়সঙ্গত করার জন্য ব্যবহৃত যুক্তিগুলি ধার করে, আর্মেনিয়ান গণহত্যার অস্বীকার (denial) এই ধারণার উপর নির্ভর করে যে আর্মেনিয়ানদের “পুনর্বাসন” (relocation) ছিল যুদ্ধের সময় সাম্রাজ্যের অস্তিত্বকে হুমকি দেয় এমন একটি বাস্তব বা পারসিভড আর্মেনিয়ান বিদ্রোহের (uprising) প্রতিক্রিয়ায় একটি বৈধ রাষ্ট্র পদক্ষেপ। অস্বীকারকারীরা (deniers) দাবি করে যে CUP এর উদ্দেশ্য আর্মেনিয়ানদের হত্যা করা ছিল না বরং পুনর্বাসন করা ছিল। তারা দাবি করে যে মৃত্যুর সংখ্যা অতিরঞ্জিত (exaggerated) বা অন্যান্য কারণের জন্য মৃত্যু আরোপ করে, যেমন কথিত গৃহযুদ্ধ (civil war), রোগ (disease), খারাপ আবহাওয়া (bad weather), দুষ্ট স্থানীয় কর্মকর্তারা (rogue local officials), বা কুর্দি এবং দস্যুদের ব্যান্ড (bands of Kurds and outlaws)। ইতিহাসবিদ রোনাল্ড গ্রিগর সুনি (Ronald Grigor Suny) প্রধান যুক্তিটি সারসংক্ষেপ করেছেন এইভাবে “কোন গণহত্যা ছিল না, এবং আর্মেনিয়ানরাই এর জন্য দায়ী ছিল”।

এই অস্বীকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলির মধ্যে একটি হল যে এই গণহত্যা তুর্কি জাতি-রাষ্ট্রের (Turkish nation-state) প্রতিষ্ঠার সক্ষম করেছিল। এর অস্বীকৃতি তুরস্কের প্রতিষ্ঠাকালীন মিথগুলির (founding myths) বিরোধী হবে। ১৯২০ এর দশক থেকে, তুরস্ক আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি (official recognition) বা অন্যান্য দেশে এটির উল্লেখ প্রতিরোধ করার জন্য কাজ করেছে; এই প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে লবিং (lobbying), গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি (creation of research institutes) এবং ভয় দেখানো এবং হুমকি (intimidation and threats) অন্তর্ভুক্ত ছিল। অস্বীকার এছাড়াও তুরস্কের অভ্যন্তরীণ নীতিতে প্রভাব ফেলে এবং তুর্কি স্কুলে শেখানো হয়; কিছু তুর্কি নাগরিক যারা গণহত্যা স্বীকার করে তাদের “তুর্কিত্বকে অপমান” (insulting Turkishness) করার জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। গণহত্যা অস্বীকারের (denial) জন্য তুরস্কের শতাব্দী দীর্ঘ প্রচেষ্টা ইতিহাসের অন্যান্য গণহত্যার ঘটনা থেকে এটিকে আলাদা করে। আজারবাইজানও (Azerbaijan) গণহত্যাকে অস্বীকার করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এর স্বীকৃতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। তুরস্কের বেশিরভাগ নাগরিক এবং রাজনৈতিক দলগুলি রাষ্ট্রের অস্বীকার নীতিকে সমর্থন করে। গণহত্যার অস্বীকার তুরস্কে কুর্দিদের (Kurds) বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতার অবদান রেখেছে। ২০১৪ সালে EDAM, একটি তুর্কি থিংক ট্যাঙ্ক (think-tank) দ্বারা পরিচালিত ১৫০০ জন মানুষের একটি জরিপে দেখা গেছে যে ৯ শতাংশ তুর্কি নাগরিক গণহত্যাকে স্বীকার করে।

হলোকাস্ট অস্বীকার (Holocaust Denialism)

হলোকাস্ট অস্বীকার (Holocaust denial) বলতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপে নাৎসি (Nazis) বাহিনী কর্তৃক ৫ থেকে ৬ মিলিয়ন ইহুদি হত্যার অস্বীকৃতিকে বোঝায়। এই প্রসঙ্গে, এই শব্দটি গণহত্যা অস্বীকারের (genocide denial) একটি উপসেট, যা একটি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অস্বীকৃতি (denialism) রূপে চিহ্নিত।

নাকবা অস্বীকার (Nakba Denialism)

নাকবা অস্বীকার (Nakba denial) বলতে নাকবার (Nakba) সময় ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল (ethnic cleansing) এর ঘটনাকে ছোট করে দেখা, অস্বীকার করা এবং ভুলভাবে বর্ণনা করার প্রচেষ্টা বোঝায়, যেখানে সব ফিলিস্তিনিদের চার-পঞ্চমাংশ তাদের জমি থেকে বিতাড়িত হয়ে নির্বাসিত হয়েছিল।

স্রেব্রেনিকা গণহত্যা অস্বীকার (Srebrenica Massacre Denialism)

সোনজা বিসেরকো (Sonja Biserko), হেলসিঙ্কি কমিটি ফর হিউম্যান রাইটস ইন সার্বিয়ার (Helsinki Committee for Human Rights in Serbia) সভাপতি, এবং এডিনা বেচিরেভিচ (Edina Bečirević), ইউনিভার্সিটি অব সারায়েভোর (University of Sarajevo) ফ্যাকাল্টি অব ক্রিমিনালিস্টিকস, ক্রিমিনোলজি এবং সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক, সার্বিয়ান সমাজে স্রেব্রেনিকা গণহত্যা (Srebrenica massacre) অস্বীকারের সংস্কৃতির দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যা অনেক রূপ ধারণ করেছে এবং বিশেষ করে রাজনৈতিক আলোচনা, মিডিয়া, আইন এবং শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান।

তথ্যসূত্র –

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.