ধর্ষণের ভিক্টিম যখন পুরুষ

Table of Contents

পুরুষের ধর্ষণ (Rape of Males)

কিছু ধর্ষণ বা অন্যান্য যৌন সহিংসতার শিকার পুরুষ। অনুমান করা হয় যে প্রায় প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন পুরুষ শৈশবে যৌন নির্যাতনের (sexual abuse) শিকার হয়েছেন। ঐতিহাসিকভাবে, ধর্ষণকে একমাত্র নারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হত এবং সংজ্ঞায়িত করা হত। এই বিশ্বাস এখনও বিশ্বের কিছু অংশে বিদ্যমান, তবে এখন পুরুষের ধর্ষণ (rape of males) সাধারণত অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং অতীতের তুলনায় এ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়।

পুরুষের দ্বারা যৌন নির্যাতনের রিপোর্ট (report sexual abuse) করার সম্ভাবনা মহিলাদের তুলনায় অনেক কম। পুরুষের ধর্ষণ (rape of males) এখনও একটি নিষিদ্ধ বা ট্যাবু বিষয় এবং এটি বিষমকামী (heterosexual) ও সমকামী (homosexual) উভয় পুরুষের মধ্যেই নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে। সম্প্রদায় বা কমিউনিটি এবং সেবা প্রদানকারীরা প্রায়শই পুরুষ রেইপ ভিক্টিমদের প্রতি তাদের যৌন অভিমুখিতা (sexual orientation) এবং তাদের অপরাধীদের লিঙ্গের (gender) উপর ভিত্তি করে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়। একটি শক্তিশালী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, পুরুষ ভিক্টিমদের জন্য তারা যে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে তা রিপোর্ট করা কঠিন হতে পারে। তারা আশঙ্কা করতে পারে যে মানুষ তাদের যৌন অভিমুখিতা নিয়ে সন্দেহ করবে এবং তাদের সমকামী হিসেবে লেবেল দেবে, বিশেষত যদি তারা একজন পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়, অথবা তাদের ধর্ষণের শিকার হবার ব্যাপারটাকেই অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। অনেক পরিসংখ্যানে পুরুষদের ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা কম থাকে, কারণ পুরুষেরা যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের রিপোর্ট করতে অনিচ্ছুক থাকে। বেশিরভাগ সময়, পুরুষ শিকাররা তাদের ভিকটিমাইজেশন লুকিয়ে রাখার এবং অস্বীকার করার চেষ্টা করে, যেমন মহিলাদের ক্ষেত্রে হয়, যদি না তারা গুরুতর শারীরিক আঘাত পান। পরবর্তীকালে, পুরুষ শিকাররা যখন চিকিৎসা বা মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার (medical or mental health services) এর জন্য চেষ্টা করে ও তাদের আঘাতগুলি ব্যাখ্যা করতে যায় সেই ব্যাখ্যা খুব অস্পষ্ট হতে পারে।

গবেষণা এবং পরিসংখ্যান (Research and Statistics)

সাধারণ

বিভিন্ন সরকারি জরিপ সূত্র (government survey sources) বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে একটি নির্দিষ্ট বছরে পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক এবং যুব বন্দীরা (male adult and youth inmates) বন্দী মহিলাদের (incarcerated females) তুলনায় অনেক গুণ বেশি যৌন নির্যাতনের (sexual victimizations) শিকার হয়। পুরুষ এবং মহিলা বন্দীরা যৌন নির্যাতনের অধিকাংশ জাতীয় জরিপে (national surveys of sexual victimization) অন্তর্ভুক্ত নয়।

বিভিন্ন সরকারি জরিপ সূত্রের (government survey sources) দিকে তাকালে, একটি নির্দিষ্ট বছরে পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক এবং যুব বন্দীরা বন্দী মহিলাদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার হন। পুরুষ এবং মহিলা বন্দীদের উপর যৌন নির্যাতনের অধিকাংশ জাতীয় জরিপে অন্তর্ভুক্ত নয়।

গবেষণা অনুযায়ী পুরুষ-ভিকটিম ধর্ষণ নিয়ে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য কাজ পাওয়া যায়নি, যা মূলত পুরুষ শিশুদের (male children) উপরই কেন্দ্রীভূত ছিল। সংশোধনাগারে (correctional facilities) যৌন নির্যাতন নিয়ে গবেষণা ১৯৮০ সালের শুরুতে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু এর পূর্ববর্তী বছরে এই ধরনের কোনো গবেষণা ছিল না। বেশিরভাগ রিপোর্ট নারী শিকারদের ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের উপরই কেন্দ্রীভূত।

শুধুমাত্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু অন্যান্য ধরনের পুরুষদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা (sexual violence against men) বিবেচনা করা হয়েছে। ২০১০-২০১২ সালের ন্যাশনাল ইনটিমেট পার্টনার অ্যান্ড সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স সার্ভে-তে (National Intimate Partner and Sexual Violence Survey) আটলান্টা, জর্জিয়া, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (Centers for Disease Control – CDC) “মেড টু পেনিট্রেট” (being made to penetrate) নামে একটি যৌন সহিংসতার বিভাগ মূল্যায়ন করেছে যা এমন ঘটনা অন্তর্ভূক্ত করে যেখানে ভিক্টিমদেরকে শারীরিক শক্তি বা জবরদস্তি দ্বারা জোরপূর্বক কাউকে (নারী বা পুরুষ বা অন্য যে লিঙ্গেরই হোক) পেনিট্রেট করতে (যোনিতে, পায়ুতে বা মুখে) বাধ্য করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয়, বা যখন ভিক্তিম মাদকাসক্ততার কারণে বা অন্য কারণে সম্মতি দিতে অক্ষম থাকে তখন তাকে দিয়ে পেনিট্রেট করানো হয়। ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১.৭১৫ মিলিয়ন (২০১০: ১.২৬৭ মিলিয়ন) পুরুষ রিপোর্ট করেছেন যে তারা পূর্ববর্তী ১২ মাসে কাউকে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, যা একই সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হওয়া ১.৪৭৩ মিলিয়ন (২০১০: ১.২৭০ মিলিয়ন) নারীর সমান। CDC এর গবেষণায় ধর্ষণ (rape) এবং “মেড টু পেনিট্রেট” (being made to penetrate) এর সংজ্ঞাগুলি অত্যন্ত একই রকম ভাষায় শব্দযুক্ত ছিল।

পুরুষের দ্বারা পুরুষ ধর্ষণ (Male-on-Male Rape)

পুরুষের দ্বারা পুরুষ ধর্ষণ (male-on-male rape) ব্যাপকভাবে কলঙ্কিত হয়েছে। মনোবিজ্ঞানী সারা ক্রোমের (psychologist Sarah Crome) মতে, ১০ জনের মধ্যে ১ জনেরও কম পুরুষ অন্য পুরুষের দ্বারা তার ধর্ষণ হবার কথা রিপোর্ট করে। একটি গ্রুপ হিসেবে, পুরুষ ধর্ষণের শিকাররা সেবা এবং সমর্থনের অভাবের কথা জানিয়েছেন, এবং আইনি ব্যবস্থা প্রায়ই এই ধরনের অপরাধ মোকাবেলা করতে সঠিকভাবে প্রস্তুত নয়। যুক্তরাজ্যে (United Kingdom), মহামারীসংক্রান্ত গবেষণায় (epidemiological studies) ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে সমকামী এবং কলেজ সম্প্রদায়গুলিতে পুরুষ ধর্ষণের হার বেশি।

কয়েকটি গবেষণা যুক্তি দেয় যে পুরুষের দ্বারা পুরুষ বন্দী ধর্ষণ (male-on-male prisoner rape), সেইসাথে নারীর দ্বারা নারী বন্দী ধর্ষণ (female-on-female prisoner rape), সাধারণ জনসংখ্যার ধর্ষণের তুলনায় অধিকতর কম ঘন ঘন রিপোর্ট করা হয়। পুরুষের দ্বারা পুরুষদের ধর্ষণকে (rape of men by men) যুদ্ধের সময় সন্ত্রাসের অস্ত্র হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে (যেমন: War rape)। উদাহরণস্বরূপ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে (Syrian Civil War) পুরুষ বন্দীরা যৌন নির্যাতনের (sexual abuse) শিকার হয়েছিল, যেমন ভাঙা কাঁচের বোতলে বসতে বাধ্য করা, তাদের যৌনাঙ্গে ভারী জলের ব্যাগ বাঁধা, বা অন্য বন্দীর ধর্ষণ দেখতে বাধ্য করা।

নারীর দ্বারা পুরুষ ধর্ষণ (Female-on-Male Rape)

নারীর দ্বারা পুরুষ ধর্ষণ (female-on-male rape) নিয়ে অন্যান্য ধরণের যৌন সহিংসতার তুলনায় কম গবেষণা হয়েছে। নারীর দ্বারা পুরুষ যৌন সহিংসতার প্রাদুর্ভাব এবং এর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব সম্পর্কে পরিসংখ্যান বিভিন্ন গবেষণায় অসামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি গবেষণায় (Hannon et al.) দেখা গেছে যে ২৩.৪% নারী এবং ১০.৫% পুরুষ রিপোর্ট করেছেন যে তারা ধর্ষিত হয়েছেন, যখন ৬.৬% নারী এবং ১০.৫% পুরুষ রিপোর্ট করেছেন যে তারা ধর্ষণের প্রচেষ্টার শিকার হয়েছেন। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (Centers for Disease Control and Prevention – CDC) ২০১০-২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ১৭ জন পুরুষের মধ্যে একজন (৫.৯%) তাদের জীবনে কোনো এক সময় জোরপূর্বক কাউকে যৌনভাবে প্রবেশ করানোর বা পেনিট্রেট করানোর (made to penetrate) শিকার হয়েছেন (২০১০ সালে ৪.৮% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে)। জরিপে আরও দেখা গেছে যে পুরুষ শিকাররা প্রায়ই শুধুমাত্র মহিলা অপরাধীদের (female perpetrators) রিপোর্ট করেছেন, যেমন জোরপূর্বক প্রবেশ করানো (2012: 78.5%, 2010: 79.2%), যৌন জবরদস্তি (sexual coercion) (2012: 81.6%, 2010: 83.6%), এবং অবাঞ্ছিত যৌন যোগাযোগ (unwanted sexual contact) (2012: 53.0%, 2010: 53.1%)। যেসব পুরুষ শিকার নিজে পেনিট্রেটেড হয়ে (অর্থাৎ তার নিজের পায়ু বা মুখে কোন কিছু প্রবিষ্ট হবার ফলে) ধর্ষিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৮৬.৫% শুধুমাত্র পুরুষ অপরাধীদের (male perpetrators) রিপোর্ট করেছেন (২০১০ সালের পূর্ববর্তী গবেষণায় প্রকাশিত ৯৩.৩% থেকে কম)। (নারীদের দ্বারা ডিল্ডো বা কোন বস্তু বা যন্ত্র দ্বারা পায়ুপথে বা মুখে প্রবিষ্ট হওয়া সম্ভব)। ২০০৮ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্রাইম ভিকটিমাইজেশন সার্ভের (United States National Crime Victimization Survey) ৯৮ জন পুরুষের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় অর্ধেক পুরুষ (৪৬%) যারা কোনো না কোনো ধরনের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তারা মহিলাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন।

নারীর দ্বারা পুরুষ যৌন অসদাচরণ সম্পর্কে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ (US Dept. of Justice) তাদের উদ্বোধনী বিবৃতিতে (পৃষ্ঠা ৫) রিপোর্ট করে: “প্রায় ৪.৪% কারাবন্দী (prison inmates) এবং ৩.১% জেল বন্দী (jail inmates) রিপোর্ট করেছেন যে তারা গত ১২ মাসে বা ফ্যাসিলিটিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে, যদি ১২ মাসের কম হয়, অন্য বন্দী বা ফ্যাসিলিটি কর্মীদের দ্বারা এক বা একাধিক যৌন নির্যাতনের (sexual victimization) ঘটনার শিকার হয়েছেন।” নারীর দ্বারা পুরুষ যৌন অসদাচরণ সম্পর্কে (পৃষ্ঠা ২৫) বলা হয়েছে: “যেসব ৩৯,১২১ পুরুষ কারাবন্দী কর্মীদের যৌন অসদাচরণের শিকার হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৬৯% নারী কর্মীদের (female staff) সাথে যৌন ক্রিয়াকলাপের কথা জানিয়েছেন; আরও ১৬% নারী ও পুরুষ উভয় কর্মীদের সাথে যৌন ক্রিয়াকলাপের কথা জানিয়েছেন (তালিকা ১৮)।” এবং “প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ জেল বন্দী (male jail inmates) যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, বলেছেন যে কর্মী অপরাধী ছিল নারী (৬৪%)।”

নারীর দ্বারা পুরুষের যৌন নির্যাতনের শিকাররা (male victims of sexual abuse by females) প্রায়ই সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং আইনি দ্বৈত মান বা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের (social, political, and legal double standards) মুখোমুখি হন। শিকাগোতে (Chicago) সিয়েরা রসের (Cierra Ross) একজন পুরুষের ওপর যৌন নির্যাতনের (sexual assault) ঘটনা জাতীয় শিরোনাম পেয়েছিল, এবং রসকে গুরুতর অপরাধমূলক যৌন নির্যাতন (aggravated criminal sexual abuse) এবং সশস্ত্র ডাকাতির (armed robbery) দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং তার জামিন নির্ধারণ করা হয়েছিল $৭৫,০০০। একটি অনুরূপ ঘটনার মধ্যে রয়েছে জেমস ল্যান্ড্রিথ (James Landrith), যিনি একটি হোটেল কক্ষে মদ্যপানের কারণে অচেতন অবস্থায় একজন মহিলা পরিচিতের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হন (made to penetrate), যখন তার ধর্ষক (rapist) তাকে বলেছিলেন যে সে গর্ভবতী এবং শিশুর ক্ষতি হতে পারে এমন কিছু না করতে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীর দ্বারা পুরুষ বিধিবদ্ধ ধর্ষণের বেশ কয়েকটি বহুল প্রচারিত ক্ষেত্রে স্কুল শিক্ষকরা তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীদের সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক জড়িত (দেখুন মেরি কে লেটারনিউ এবং দেবরা লাফাভে)। এমন ঘটনাও ঘটেছে যেখানে বিধিবদ্ধ ধর্ষণের শিকার একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে সেই নারী গর্ভবতী হওয়ার পরে বিচারক সেই ধর্ষক নারীকে শিশু সহায়তা প্রদানের জন্য আদেশ দিয়েছিলেন (দেখুন হার্মিসম্যান বনাম সেয়ার)।

পুরুষ ধর্ষণ শিকারদের সম্পর্কে মিথ

পুরুষরা দুর্বল নয় (Males Are Not Vulnerable)

পুরুষতান্ত্রিক লিঙ্গ সামাজিকীকরণের (masculine gender socialization) মাধ্যমে ধারণা করা হয় যে পুরুষরা, এমনকি অল্পবয়সী পুরুষরা ধর্ষণের শিকার হতে পারে না, বা তারা দুর্বল নয়। কিছু সমাজে, পুরুষ শিশুর কান্না করাকে লজ্জাজনক এবং অপমানজনক হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কারণ পুরুষ স্টেরিওটাইপ (male stereotype) পুরুষদের আত্মরক্ষার সক্ষম হিসেবে চিত্রিত করে, যা সব সময় সঠিক নয়। ছোট ছেলেরা দুর্বল হতে পারে এবং অপরাধীদের কাছে দুর্বল হতে পারে, যারা সাধারণত শক্তিশালী হয়। অপরাধীরা অর্থ বা অন্যান্য প্রলোভন ব্যবহার করে শিশুকে নির্যাতন করতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষও প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে অসহায় হতে পারে, বা প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে ভয় পেতে পারে।

পুরুষরা সবসময় যৌনতা চায় (Males Always Want Sex)

একটি সাধারণ সামাজিক বিশ্বাস হল যে একজন পুরুষ যদি উত্তেজিত হয় বা অর্গাজম হয় তবে এটি তার ইচ্ছা এবং যৌন কার্যকলাপ উপভোগ করার লক্ষণ। রয় জে. লেভিন (Roy J. Levin) এবং উইলি ভ্যান বারলো (Willy Van Berlo) জার্নাল অফ ক্লিনিকাল ফরেনসিক মেডিসিনে (Journal of Clinical Forensic Medicine) লিখেছেন যে সামান্য যৌনাঙ্গ উদ্দীপনা বা চাপ উত্তেজনা তৈরি করতে পারে “যদিও কোনো নির্দিষ্ট যৌন উদ্দীপনা উপস্থিত না থাকে”। উত্তেজনা মানে এই নয় যে পুরুষরা যৌনতায় সম্মতি দিয়েছে। পুরুষরা এমনকি আঘাতজনক বা বেদনাদায়ক যৌন পরিস্থিতিতেও উত্তেজিত হতে পারে, এবং এটি সম্মতির (consent) নির্দেশ দেয় না।

মহিলাদের ইরেক্টাইল প্রতিক্রিয়ার (female erectile response) মতো, পুরুষদের ইরেক্টাইল প্রতিক্রিয়াও (male erectile response) অনৈচ্ছিক (involuntary), অর্থাৎ একজন পুরুষকে উত্তেজিত (Arousal) হতে হবে না তার লিঙ্গ উত্থিত হওয়ার জন্য; যান্ত্রিক উদ্দীপনাই (mechanical stimulation) যথেষ্ট। উত্তেজনা (Arousal) এবং উদ্দীপনা (stimulation) আলাদা জিনিস। উদ্দীপনা একটি উত্তেজনার প্রতি শারীরিক প্রতিক্রিয়া। পুরুষরা শারীরিকভাবে উদ্দীপিত হতে পারে এবং উত্তেজিত না হয়েও ইরেকশন সৃষ্টি করতে পারে। পুরুষরা ভয় পেয়ে এবং ভীতি প্রদর্শন করে ইরেকশন পেতে পারে, বিশেষত যদি ব্যক্তি বয়স্ক বা কর্তৃত্বশালী হয়।

আঘাতের প্রভাব (Traumatization)

একটি ধারণা হল যে পুরুষরা নির্যাতনের অভিজ্ঞতায় নারীদের তুলনায় কম আঘাতপ্রাপ্ত হয়; এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বাস যে পুরুষরা কম নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। গবেষণা দেখায় যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব উভয় লিঙ্গের জন্য ক্ষতিকারক এবং পুরুষরা বিশেষ করে সামাজিক কলঙ্ক (social stigma) এবং তাদের ভিক্টিমাইজড হবার অবিশ্বাস, অর্থাৎ তারা ধর্ষিত হয়ে সেই বিষয়ে অবিশ্বাস (disbelief of their victimization) দ্বারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এওগান এবং রিচার্ডসন (Eogan and Richardson) উল্লেখ করেছেন যে পুরুষ শিকাররা মহিলাদের শিকারদের তুলনায় বেশি তীব্র ক্রোধ (intense anger) অনুভব করে, যদিও উভয়েই ধর্ষণের পরে একই রকমের মানসিক যন্ত্রণার (distress) মধ্যে দিয়ে যায়। ফ্রেজিয়ার (Frazier) ১৯৯৩ সালে ৭৪ জন পুরুষ এবং ১,৩৮০ জন মহিলা ধর্ষণ শিকারের উপর গবেষণা করেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন যে ধর্ষণের পরপরই পুরুষ শিকারদের মধ্যে বিষণ্ণতা (depression) এবং শত্রুভাবাপন্নতা (hostility) নারীদের তুলনায় বেশি।

ট্রমা পুনরুদ্ধার পরামর্শদাতা স্টেফানি বেয়ার্ড (trauma recovery counselor Stephanie Baird) বলেন যে যারা শিশু হিসাবে যৌন মনোযোগের (sexual attention) অভিজ্ঞতা লাভ করে তারা প্রায়ই এটি “আমি একজন স্টাড (খুব সুদর্শন ও যৌনতায় সফল এমন বোঝায়), আমি অমুকের সাথে যৌনতা লাভ করেছিলাম…” হিসাবে ব্যাখ্যা করে, মানে নিজেদের ভিক্টিমাইজেশনকে একভাবে নিজেদের সাফল্য হিসেবে ব্যাখ্যা করে। বেয়ার্ড ব্যাখ্যা করেন যে তারা এটি করে যাতে মনে হয় যে তাদের কিছু ক্ষমতা (power) এবং বক্তব্য (say) ছিল। কার্পেন্টার (Carpenter) (২০০৯, মেজে, ১৯৮৭ উল্লেখ করে) বলেন যে “পুরুষের এরকম অস্বীকার (denial) এবং নিয়ন্ত্রণ (control) এর কোপিং মেকানিজম তাদের পরবর্তী মানসিক সমস্যার (psychiatric problems) জন্য আরও প্রবণ করে তোলে এবং সাহায্য চাওয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।”

যৌন অভিমুখিতা (Sexual Orientation)

পুরুষ ধর্ষণ শিকারদের প্রায়ই দুর্বল বা সমকামী (gay) হিসাবে চিহ্নিতকরণের ভয় থাকে, বা তারা বিশ্বাস করতে পারে যে তাদের উপর আক্রমণ তাদের নারীসুলভ চেহারার কারণে হয়েছে, যার ফলে অন্য পুরুষেরা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। তাদের মনে হয়, এর ফলে অন্যেরা তাদের যৌন অভিমুখিতা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন না যে অকাল যৌন অভিজ্ঞতা পরবর্তী যৌন অভিমুখিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণা দ্বারা দেখা যায় যে যদিও অনেক অপরাধীর ক্ষেত্রেই তাদের নিজস্ব যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা ছিল, বেশিরভাগ যৌন নির্যাতনের শিকাররা কিশোর অপরাধী হয়ে উঠবে না। তবে, সমকামী এবং উভকামী পুরুষরা ধর্ষণের শিকার হতে পারে, এবং ১৩.২% উভকামী পুরুষ এবং ১১.৬% সমকামী পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে ধর্ষণের ইতিহাস রিপোর্ট করেছে।

সশস্ত্র সংঘাতের সময় (During Armed Conflict)

যুদ্ধের সময় পুরুষদের ধর্ষণের ঘটনা কিছু অংশে প্রচলিত বলে জানা গেছে, যেমন গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (Democratic Republic of Congo), যা ১৯৯৭ সালে একটি গৃহযুদ্ধের শিকার হয়েছিল।

আফ্রিকা জুড়ে, ধর্ষণের শিকার পুরুষরা প্রায়ই সামাজিক কলঙ্কের (social stigmatization) সম্মুখীন হন এবং “দুর্বল” (weak) এবং ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য উপহাসের (ridicule) শিকার হন। তাদের সমকামিতার (homosexuality) অভিযোগও করা হতে পারে (যা এই অঞ্চলের অনেক দেশে অবৈধ)। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কঙ্গো থেকে আগত পুরুষ শরণার্থীরা যখন উগান্ডায় চিকিৎসা চেয়েছিলেন, তখন তাদের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগে মামলা করা হয়েছিল, ২০১২ সালে দি ইকোনমিস্ট (The Economist) রিপোর্ট করেছিল।

উত্তর উগান্ডায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্রোহী দলগুলির দ্বারা সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে চলমান আক্রমণ হয়েছে। এই সংঘাতগুলির সময়, বেসামরিক পুরুষদের প্রায়ই আক্রমণ, অপহরণ, ধর্ষণ এবং বিদ্রোহী দলের হয়ে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকাররা প্রায়ই তাদের অভিজ্ঞতার ফলে গুরুতর শারীরিক, মানসিক এবং মানসিক আঘাতের (physical, emotional, and psychological trauma) মুখোমুখি হয়।

প্রভাব (Effects)

শারীরিক প্রভাব (Physical Effects)

যৌন নির্যাতন গুরুতর মানসিক এবং প্রায়ই শারীরিক আঘাতের (physical trauma) কারণ হয়। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যৌন নিপীড়নের শিকারদের মধ্যে ৩১.৫% মহিলা এবং ১৬.১% পুরুষ বলেছেন যে তারা নির্যাতন থেকে অ-যৌনাঙ্গ আঘাত (non-genital injuries) পেয়েছেন।

পুরুষ শিকাররা আরও বেশি অতিরিক্ত আঘাত পেয়েছেন এবং অপরাধীর দ্বারা অস্ত্র দিয়ে হুমকি দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সবচেয়ে ঘন ঘন লক্ষণ এবং আঘাতগুলি হল টানযুক্ত মাথাব্যথা (tension headaches), আলসার (ulcers), বমি বমি ভাব (nausea), কোলাইটিস (colitis), গলার ঘষা (abrasions to the throat), কালো চোখ (black eyes) এবং ভাঙা হাড় (broken bones)। সটারম্যাক এবং সহকর্মীদের (Stermac and colleagues) ২০০৪ সালের গবেষণায় দেখা গেছে যে হাসপাতালে যৌন নির্যাতন কেন্দ্রে যাওয়া পুরুষ শিকারদের ৪৫% কোনও না কোনও ধরণের শারীরিক আঘাত (২৫% নরম টিস্যুর আঘাত, ২০% কাটা) পেয়েছিল।

হাসপাতালের জরুরি কক্ষের (hospital emergency rooms) তথ্য দেখায় যে পুরুষ ধর্ষণ শিকাররা মহিলাদের তুলনায় বেশি অ-যৌনাঙ্গ আঘাতের (non-genital injuries) শিকার হন এবং যদি আঘাতগুলি উল্লেখযোগ্য না হয় তবে তারা চিকিৎসা সেবা নেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। হজ এবং ক্যান্টার (Hodge and Canter) ১৯৯৮ সালে রিপোর্ট করেছেন যে সমকামী পুরুষ শিকারদের (homosexual male victims) বিপরীতকামী পুরুষ শিকারদের (heterosexual male victims) তুলনায় গুরুতর আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কখনও কখনও ধর্ষণের ফলে শিকাররা যৌন সংক্রামিত রোগে (sexually transmitted disease) সংক্রামিত হতে পারে, তবে এটি বিরল এবং শুধুমাত্র একটি ছোট অংশের পুরুষ শিকারদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

মানসিক প্রভাব (Psychological Effects)

ধর্ষণের শিকার, পুরুষ এবং মহিলা উভয়ই, তাদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের রিপোর্ট করতে কঠিন মনে করতে পারেন। একটি মিথ আছে যে একজন পুরুষ যৌন নির্যাতনের শিকার নিজেই অপরাধী হয়ে উঠবে। এই মিথটি ভিক্টিমদের জন্য খুবই ক্ষতিকারক, তাদের মানসিক অবস্থার জন্য এবং মানুষ তাদের সাথে এই বিশ্বাসের জন্য খারাপভাবে আচরণ করতে পারে, সেজন্যেও। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ডোনোভান (Elizabeth Donovan) বলেছেন যে পুরুষদের উপর অতিরিক্ত বোঝা থাকে এমন একটি সমাজের মুখোমুখি হওয়ার যেখানে তাদের সাথে ধর্ষণ ঘটতে পারে সেটা তারা বিশ্বাস করে না। পুরুষ ভিক্টিমদের উপর সামাজিক কলঙ্ক (social stigmatization) আরোপিত হয় যা ক্ষতিকারক এবং এটিকে ‘সেকেন্ডারি ভিক্টিমাইজেশন’ (secondary victimization) হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি ধর্ষণের কম রিপোর্টিং এবং ধর্ষণ পরবর্তী মানসিক আঘাত বা ট্রমার (post-rape trauma) সাথে সম্পর্কিত; পুরুষ ভিক্টিমরাও পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের (post-traumatic stress disorder) শিকার হতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু ভিক্টিম তাদের আক্রমণগুলি রিপোর্ট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারণ তারা ‘গোপন সমকামী’ (closet homosexual), উভকামী (bisexual), বা যৌনাচারে লিপ্ত (promiscuous) হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার ভয় পায়।

ধর্ষণের শিকারদের দোষারোপ করার বিষয়ে, গবেষকরা ১৯৯৩ সালে একটি পরীক্ষা করেছিলেন এবং দেখতে পেয়েছিলেন যে পরিসংখ্যানগতভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরুষ ধর্ষণের শিকারদেরকে দোষারোপ করার প্রবণতা দেখায়, এমনকি যখন ধর্ষণের শিকার একজন পুরুষ ছিল তখনও।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব (Long-term Effects)

যেসব পুরুষ যৌন নির্যাতনের শিকার হননি তাদের তুলনায় যারা ১৮ বছর বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তাদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেশি থাকে, যার মধ্যে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (post-traumatic stress disorder) এবং বিষণ্নতার (depression) লক্ষণ অন্তর্ভুক্ত; মদ্যপান (alcoholism) এবং মাদকের (drug abuse) অপব্যবহার; আত্মহত্যার চিন্তা এবং আত্মহত্যার প্রচেষ্টা; অন্তরঙ্গ সম্পর্কের সমস্যা; এবং স্কুল এবং কাজে দুর্বলতা।

লিঙ্গ প্রত্যাশা বা জেন্ডার এক্সপেক্টেশনের (gender expectations) কারণে, একজন পুরুষ শিশুর যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি সৃষ্টি করতে পারে:

  • তার পুরুষত্বকে শারীরিক এবং যৌনভাবে প্রমাণ করার চাপ (শক্তিশালী হওয়া এবং বিপজ্জনক বা সহিংস আচরণে লিপ্ত হওয়া; একাধিক মহিলা যৌন সঙ্গীর সাথে থাকা)।
  • লিঙ্গ এবং যৌন পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি।
  • নিজেকে একজন অযোগ্য পুরুষ বলে মনে করা।
  • তার পুরুষত্বে শক্তি, নিয়ন্ত্রণ, এবং আস্থা হারানোর অনুভূতি।
  • ঘনিষ্ঠতা এবং সান্নিধ্যের সমস্যাগুলি।
  • যৌন সমস্যা।
  • ‘সমকামী’ বা ‘গে’ হয়ে যাওয়ার ভয়।
  • সমকামিতা-বিদ্বেষ (homophobia)।

আত্মহত্যার সম্ভাবনা (Suicide Possibility)

যৌন নির্যাতনের শিকার পুরুষদের আত্মহত্যার হার অন্যান্য পুরুষদের তুলনায় ১৪ থেকে ১৫ গুণ বেশি। ম্যাকডোনাল্ড এবং তিজেরিনো তাদের গবেষণায় পেয়েছেন যে কতিপয় অংশগ্রহণকারী উল্লেখ করেছেন যে এমন পরিস্থিতি ছিল যেখানে তারা এতটাই খারাপ অনুভব করেছিলেন যে তারা আত্ম-আঘাতমূলক আচরণে লিপ্ত হয়েছিলেন, যার মধ্যে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এবং/অথবা আত্মহত্যার চিন্তা অন্তর্ভুক্ত ছিল। একটি গবেষণাও রয়েছে যা দেখায় যে ধর্ষণের শিকাররা আত্মহত্যা করার কথা বিবেচনা করার সম্ভাবনা ৪.১ গুণ বেশি এবং আত্মহত্যা করার সম্ভাবনা ১৩ গুণ বেশি অন্য যে কোনো অপরাধের শিকারদের তুলনায়।

পুরুষদের আত্মহত্যার হার মহিলাদের তুলনায় অনেক বেশি। একটি সাধারণ ব্যাখ্যা প্রাধান্যপূর্ণ পুরুষত্ব বা হেজিমনিক ম্যাসকুলিনিটি (hegemonic masculinity) এবং নারীত্বের (femininity) সামাজিক নির্মাণের উপর নির্ভর করে। আত্মহত্যা এবং লিঙ্গ সম্পর্কে সাহিত্যের পর্যালোচনায়, পুরুষ আত্মহত্যার হার ঐতিহ্যবাহী লিঙ্গ ভূমিকার (gender roles) শর্তে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। পুরুষ লিঙ্গ ভূমিকা শক্তি, স্বাধীনতা এবং ঝুঁকি নেওয়ার আচরণের উচ্চতর স্তরের উপর জোর দেয়। এই লিঙ্গ ভূমিকার জন্য প্রায়শই পুরুষরা আত্মঘাতী অনুভূতি এবং বিষণ্নতার জন্য সাহায্য চাওয়া থেকে বিরত থাকে।

নিরাময় থেরাপি (Healing Therapy)

যৌন নির্যাতনের শিকারদের ধর্ষণের পরে ব্যাপক আবেগীয় এবং মানসিক নিরাময়ের প্রয়োজন, তবে পুরুষ বেঁচে থাকা শিকাররা তাদের কেস প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক হতে পারেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ডোনোভান বলেছেন; “পুরুষদের উপর অতিরিক্ত বোঝা থাকে এমন একটি সমাজের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে যা বিশ্বাস করে না যে ধর্ষণ তাদের সাথে ঘটতে পারে … একেবারেই।”

প্রাদুর্ভাব (Prevalence)

যুক্তরাষ্ট্র (United States)

১৯৯৫ সালে, আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন পুরুষ ধর্ষণকে ‘নিঃশব্দ-হিংসাত্মক মহামারি’ (silent-violent epidemic) হিসেবে বর্ণনা করেছিল। ২০১০ সালের CDC প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রায় ১ জনে ৫ জন মহিলা এবং ৭১ জনে ১ জন পুরুষ যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ষিত হয়েছে বা ধর্ষণের প্রচেষ্টার শিকার হয়েছে, যেখানে ৪.৮% পুরুষ (প্রতি ২১ জনে ১ জন) জানিয়েছে যে তারা জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অন্য কাউকে অনুপ্রবেশ করা বা পেনিট্রেট করার জন্য বাধ্য হয়েছিল। এছাড়াও, CDC উল্লেখ করেছে যে প্রতিবেদনের পূর্ববর্তী ১২ মাসে ১.২৭০ মিলিয়ন নারী এবং ১.২৬৭ মিলিয়ন পুরুষ ধর্ষিত হয়েছে বা অন্য কাউকে অনুপ্রবেশ বা পেনিট্রেট করানোর জন্য বাধ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যৌন সহিংসতার ঘটনাগুলি বিশেষ করে পুরুষ ভিক্টিমদের মধ্যে খুবই কম রিপোর্ট করা হয়, যা একটি অনুমানের দিকে পরিচালিত করে যে প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত বেশি।

ট্রমা পুনরুদ্ধার পরামর্শদাতা স্টেফানি বেয়ার্ড (Stephanie Baird) “হট-ফর-টিচার বা বেবিসিটার কমপ্লেক্স” (hot-for-teacher or babysitter complex) উল্লেখ করেছেন যা আধুনিক আমেরিকান সংস্কৃতিতে একটি জনপ্রিয় মোটিফ। এই সংস্কৃতি একটি পুরুষ কিশোরের জন্য এমনকি এটা বোঝাও কঠিন করে তোলে যে তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে সম্মতির অর্থ হল “বয়স, মন, সুস্থ শরীরের হওয়া যাতে অন্য ব্যক্তির সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার বিষয়ে একটি অবগত সিদ্ধান্ত নিতে পারে”, যেখানে শিশুরা সম্মতি দিতে পারে না।

বিভিন্ন গবেষণা অনুমান করে যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৬ জনের মধ্যে কমপক্ষে ১ জন পুরুষ জীবদ্দশায় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

যুক্তরাজ্য (United Kingdom)

২০১৪ সালে, যুক্তরাজ্য সরকারের পরিসংখ্যান অনুমান করে যে প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে প্রায় ৭৮,০০০ মানুষ ধর্ষণ বা ধর্ষণের প্রচেষ্টার শিকার হয়, যার মধ্যে প্রায় ৯,০০০ পুরুষ। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে এখানে রিপোর্ট করার হারটি অনেক কম, আর তা বিশেষ করে পুরুষ শিকারদের মধ্যে আরও কম। ২০১১-২০১২ সালে পুলিশে প্রায় ১,২৫০ পুরুষ শিকার ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে, বিচার মন্ত্রণালয় যৌন নির্যাতনের শিকার পুরুষদের পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদানের জন্য £৫০০,০০০ বরাদ্দ করেছে।

চীন (China)

কোনো আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা হয়নি। তবে, জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রপুঞ্জের ২০১৩ সালের এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরে পুরুষ ও সহিংসতার উপর বহুদেশীয় গবেষণা (Multi-Country Study on Men and Violence) প্রকাশ করেছে যে চীনে সমীক্ষা করা পুরুষদের ৩% স্বীকার করেছেন যে তাদের জীবদ্দশায় অন্য একজন পুরুষ দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে (যা সব ধর্ষণের শতাংশ হিসেবে ১৪.৪% প্রস্তাব করে)।

তাইওয়ান (Taiwan)

তাইওয়ানে ২০১২ সালে রিপোর্ট করা যৌন নির্যাতনের শিকার ১২,০৬৬ জনের মধ্যে ১,৩৩৫ জন পুরুষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখিয়েছে যে ৭,৬০৮ নাবালক ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ১,০৬৩ জন ছেলে। এই অপরাধগুলির সংখ্যা বাড়তে থাকায় এটি প্রতিরোধ করতে, তাইওয়ানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌন শিক্ষার উপর একটি সংক্ষিপ্ত চলচ্চিত্র প্রকাশ করেছে। নেটিজেন (ইন্টারনেট ব্যবহারকারী) এবং তাইওয়ানের শিক্ষার্থীরা এটিকে কৌতুকের বিষয় হিসাবে বিবেচনা করছে। তবে, ন্যাশনাল একাডেমি অফ এডুকেশনাল রিসার্চ সেক্রেটারি-জেনারেল কুও কুং-পিন বলেছেন যে ভিডিওটি তরুণদের কাছ থেকে মনোযোগ পাওয়ার জন্য তার উদ্দেশ্য অর্জন করেছে যাতে তাদের মনে করিয়ে দেওয়া যায় যে পুরুষদেরও ধর্ষণ করা যেতে পারে।

ভারত (India)

ভারতে পুরুষদের ধর্ষণ (male rape) সাধারণত রিপোর্ট করা হয় না। এই কারণে, কিছু কর্মী এবং গবেষণা সংস্থা, যেমন নিউ দিল্লির থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর সিভিল সোসাইটির জাই বিপ্রা (Jai Vipra at the New Delhi think-tank Centre for Civil Society), যুক্তি দেন যে ধর্ষণ আইনের শব্দগুলি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ (gender-neutral) হওয়া উচিত। এই মতামতের বিরোধিতা করেন কিছু মানবাধিকার কর্মী (human rights advocates) এবং নারী অধিকার কর্মীরা (women’s rights activists)। মুম্বাই-ভিত্তিক মানবাধিকার আইনজীবী (human rights lawyer) ফ্লাভিয়া অ্যাগনেস (Flavia Agnes) ইন্ডিয়া টাইমসকে (India Times) বলেছেন, “আমি ধর্ষণ আইনকে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করি। সরকার যখন শিশু ধর্ষণ আইন লিঙ্গ-নিরপেক্ষ করেছে তখন আমরা এর বিরোধিতা করেছিলাম… লিঙ্গ-নিরপেক্ষ করা হলে, ধর্ষণ আইনগুলির প্রতিরোধমূলক মূল্য থাকবে না এবং এটি বিচারকদের (judges) জন্য আদালতে (court) আরও জটিল হয়ে উঠবে।” আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী (international human rights lawyer) এবং কর্মী বৃন্দা গ্রোভার (Vrinda Grover) একই নিবন্ধে উদ্ধৃত করেছেন: “মহিলাদের দ্বারা পুরুষদের ধর্ষণের (rape) ঘটনা নেই। আমি মনে করি না যে পুরুষরা মহিলাদের মতো গুরুতর যৌন সহিংসতার (sexual violence) মুখোমুখি হচ্ছে। মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার নৃশংসতা (brutality) এবং তীব্রতা (intensity) বিবেচনা করুন।”

ইন্দোনেশিয়া (Indonesia)

ইন্দোনেশিয়ান শিশু সুরক্ষা কমিশন (Komisi Perlindungan Anak Indonesia, KPAI) প্রতিবেদন করে যে প্রতি বছর প্রায় ৪০০ ইন্দোনেশিয়ান শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, উভয়ই তাদের পরিবার এবং অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা। KPAI সেক্রেটারি জেনারেল এরলিন্ডা বলেছেন, “যৌন সহিংসতার শিকার শিশুদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ পুরুষ, কারণ ছেলেরা যৌন অপরাধীদের শিকার হওয়ার জন্য সংবেদনশীল, কারণ তারা পেডোফাইলদের দ্বারা সহজেই প্রলুব্ধ হয়।”

এমায়ারতিনি (Emayartini) (২০১৩) ছয়জন কিশোর ছেলেকে ধর্ষণের জন্য কারাদণ্ড প্রাপ্ত প্রথম ইন্দোনেশিয়ান মহিলা হন। তাকে প্রায় মানসিক ব্যাধি আছে বলে মনে করা হয়েছিল। পুরুষ ধর্ষকদের মতো ধর্ষণ বিরোধী আইনের অধীনে নয়, বরং তিনি ২০০২ সালের শিশু সুরক্ষা আইন নং ২৩ এর অধীনে শাস্তি পান।

জাতীয় আইন (National Laws)

যুক্তরাষ্ট্র (United States)

FBI-এর ইউনিফর্ম ক্রাইম রিপোর্টে ২০১২ সালে ধর্ষণের (rape) সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল: “ভিক্টিমের সম্মতি ব্যতীত যেকোনো শরীরের অংশ বা বস্তুর সাথে যোনি (vagina) বা পায়ুর (anus) অল্পমাত্রায়ও অনুপ্রবেশ, বা অন্য ব্যক্তির যৌন অঙ্গে (sex organ) মুখমন্ডলীয় অনুপ্রবেশ (oral penetration)।” পূর্ববর্তী সংজ্ঞা ১৯২৭ সাল থেকে পরিবর্তিত হয়নি এবং এটি যৌন নিপীড়ন সচেতনতা গোষ্ঠীগুলির মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল কারণ এটি এমন ভুক্তভোগীদের বাইরে রেখেছিল যারা সংজ্ঞার সাথে মেলেনি – “নারীর (female) ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক জ্ঞান (carnal knowledge)।” “ফোর্সিবল রেপ” (forcible rape) এর পুরানো সংজ্ঞাটি যোনিতে অনুপ্রবেশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল, কিন্তু নতুন সংজ্ঞায় জোরপূর্বক পায়ু বা মুখমন্ডলীয় অনুপ্রবেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পুরানো সংজ্ঞা, “নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক জ্ঞান”, জোরপূর্বক মুখমন্ডলীয় বা পায়ু অনুপ্রবেশ, নারীদের অন্যান্য বস্তুর সাথে ধর্ষণ বা পুরুষের (male) ধর্ষণ অন্তর্ভুক্ত করেনি।

এই নতুন সংজ্ঞাটি পুরুষ ধর্ষণ শিকারদের তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা চাওয়ার জন্য উত্সাহিত করে এবং সেই যৌন নির্যাতনগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করে যা পূর্বে ধর্ষণের সংজ্ঞার মধ্যে ছিল না। এই সংজ্ঞা পরিবর্তনের ভিত্তি হল মার্কিন বিচার বিভাগ (U.S. Department of Justice) এবং CDC-এর মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির পরিসংখ্যান। CDC-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ৭১ জনে ১ জন পুরুষ ধর্ষিত হয়েছে বা ধর্ষণের প্রচেষ্টার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। এই গবেষণায় মুখমন্ডলীয় এবং পায়ু অনুপ্রবেশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল তবে কারাগারের (prison) পুরুষ বা অনুপ্রবেশের জন্য বাধ্য করা পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। লিঙ্গ-নিরপেক্ষ আইন (gender-neutral laws) ধর্ষণ খুব কমই পুরুষদের ক্ষেত্রে ঘটে এমন ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং অন্যান্য আইন ধর্ষণ শব্দটি সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়েছে।

যুক্তরাজ্য (United Kingdom)

আগে, ইংরেজি আইন (English law) পুরুষদের ধর্ষণকে একটি অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করত না এবং এটি অমতানুসূচক বাগারি (non-consensual buggery) হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছিল। কনভিক্টেড ধর্ষক (convicted rapist) (নারীর)কে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া যেতে পারে, বলেছেন সারভাইভার্স (Survivors) সংগঠনের চেয়ারম্যান হেনরি লিক (Henry Leak), যখন বাগারি কেবল সর্বাধিক ১০ বছরের শাস্তি বহন করত। তবে এখন আর এটি সত্য নয়; ১৯৯৪ সালের ক্রিমিনাল জাস্টিস অ্যান্ড পাবলিক অর্ডার অ্যাক্ট (Criminal Justice and Public Order Act 1994) ধারা ১৪২ ছিল এই বিকাশের নেতৃত্বদানকারী এবং পুরুষ শিকার ধর্ষণকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম আইন; এবং ২০০৩ সালের যৌন অপরাধ আইন (Sexual Offences Act 2003) বলে যে “মুখ (mouth), পায়ু (anus) বা যোনিতে (vagina) [আসামির] লিঙ্গ (penis) দ্বারা অনুপ্রবেশ” ধর্ষণের জন্য যথেষ্ট। আর ভি ইসমাইল [২০০৫] অল ইআর ২১৬ আরও শাস্তি দেওয়ার সময় “মুখ, পায়ু বা যোনি” মধ্যে পার্থক্য প্রতিরোধ করেছে। যৌন অপরাধ (স্কটল্যান্ড) আইন ২০০৯ (Sexual Offences (Scotland) Act 2009) এবং যৌন অপরাধ (উত্তর আয়ারল্যান্ড) অর্ডার ২০০৮ (Sexual Offences (Northern Ireland) Order 2008) অনুযায়ী পুরুষরা উভয়ই অপরাধী এবং শিকার হতে পারে। তবে, যুক্তরাজ্যের সমস্ত অংশে একজন মহিলাকে আইনি ভাবে ‘ধর্ষণ’-এর জন্য অভিযুক্ত করা যাবে না (তাকে যৌন নির্যাতন (sexual assault), অনুপ্রবেশ দ্বারা আক্রমণ (assault by penetration) বা সম্মতি ছাড়া যৌন কার্যকলাপের (causing sexual activity without consent) কারণ হিসাবে অভিযুক্ত করা যেতে পারে, যার মধ্যে পরবর্তী দুটি সর্বাধিক শাস্তি বহন করে)।

চীন (China)

২০১৫ সালের আগে, চীনের (China) সংশোধিত ফৌজদারি আইনের (revised Criminal Law) ২৩৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে যে ধর্ষণের অপরাধ শুধুমাত্র নারীদের বিরুদ্ধে করা যেতে পারে। এটি মহিলাদের যৌন স্বায়ত্তশাসনের অধিকার রক্ষা করে কিন্তু পুরুষদের নয়। ২০১১ সালে, একজন বেইজিং নিরাপত্তা প্রহরীকে অপরাধী হিসেবে প্রথমবারের মতো একজন পুরুষের উপর যৌন নির্যাতনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, কিন্তু তাকে ধর্ষণ নয়, ইচ্ছাকৃত আঘাতের (intentional injury) জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, এক বছরের কারাদণ্ড এবং ক্ষতিপূরণ হিসাবে ২০,০০০ ইউয়ান ($৩,০২৬) প্রদান করতে বলা হয়েছিল। দোষী ধর্ষককে কমপক্ষে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।

চীনের শিশু সুরক্ষা নির্দেশিকা (child protection guidelines) অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের শাস্তি বাড়িয়েছে, কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের সমান সুরক্ষা দেয় না। উভয় লিঙ্গের শ্লীলতাহানিকে বর্তমানে সমানভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, কিন্তু ছেলেদের ধর্ষকদের শুধুমাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের সর্বাধিক শাস্তি নিয়ে শিশু শ্লীলতাহানি করার (child molestation) জন্য অভিযুক্ত করা যেতে পারে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে, ২৭টি এনজিও যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলেদের সমান সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করার আহ্বান জানিয়েছে।

১ নভেম্বর, ২০১৫ পর্যন্ত, ১৪ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধগুলি prosecuted করা যেত না যদি না এটি শারীরিক আক্রমণও অন্তর্ভুক্ত করত, যার ক্ষেত্রে কেবল শারীরিক উপাদানটি শাস্তিযোগ্য ছিল। যাইহোক, “জোরপূর্বক অশ্লীলতা” (forcible indecency) অপরাধমূলক আর্টিকেল ২৩৭ (Article 237) এর একটি সংশোধনী আইনের সেই অংশটিকে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ করে তুলেছে। পুরুষদের ধর্ষণের অন্তর্গত অপরাধগুলি এই ধারার অধীনে বিচার করা যেতে পারে, অপরাধীদের সর্বাধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হবে।

ভারত (India)

ভারতীয় দণ্ডবিধি (Indian Penal Code), ধারা ৩৭৭ (Section 377), একমাত্র ধারা যা সমস্ত অমতানুসূচক শারীরিক অনুপ্রবেশকে অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করে, যার মধ্যে পুরুষ দ্বারা পুরুষ অনুপ্রবেশ (male-on-male penetration) অন্তর্ভুক্ত।

অস্বাভাবিক অপরাধ (Unnatural offences): যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে যে কোন পুরুষ (man), মহিলা (woman) বা পশুর (animal) সাথে প্রকৃতির বিপরীতে শারীরিক মিলন করে, তাকে আজীবন কারাদণ্ড (imprisonment for life) বা দশ বছরের জন্য কারাদণ্ড এবং জরিমানা করা হবে। ব্যাখ্যা: অনুপ্রবেশ (penetration) এই ধারা বর্ণিত অপরাধের জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক মিলন গঠনের জন্য যথেষ্ট।

এই ধারা উভয় সম্মতিমূলক (consensual) এবং জোরপূর্বক সডোমিকে (forcible sodomy) শাস্তি দেয় যা দশ বছরের সর্বনিম্ন থেকে আজীবন কারাদণ্ডে শাস্তিযোগ্য। দিল্লি হাইকোর্ট (Delhi HC) উল্লেখ করেছে যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা (Section 377 of Indian Penal Code) অসম্মতিপূর্ণ পেনাইল (non-consensual penile), অ-যোনি (non-vaginal) যৌন এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পেনাইল অ-যোনি যৌন আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এই ধারা সডোমাইট (sodomite), পেডোফাইল (pedophile) এবং জোফাইলদের (zoophile) শাস্তি দেওয়ার জন্য আহ্বান করা যেতে পারে।

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা (Section 375 of Indian Penal Code) অনুসারে ধর্ষণের সংজ্ঞায় (definition of rape) পুরুষ ভিক্টিম (male victims) অন্তর্ভুক্ত নয়। ভারতীয় সরকার (Indian government) (২০১২) পুরুষ ভিক্টিমদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ হিসাবে “ধর্ষণ” এর সংজ্ঞা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু এই পদক্ষেপটি সমালোচিত হয়েছিল কারণ এটি মহিলা ধর্ষণের শিকারদের (female rape victims) স্বার্থ আরও ক্ষতি করবে।

২০১৩ সালের ফৌজদারি আইন (Criminal Law) (সংশোধনী) অধ্যাদেশে (Amendment Ordinance), ধর্ষণ (rape) এবং যৌন হয়রানির (sexual harassment) অপরাধগুলি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ (gender-neutral) ছিল। “ধর্ষণ” শব্দটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং এর পরিবর্তে “যৌন নিপীড়ন” (sexual assault) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু নারীবাদী গোষ্ঠীগুলির (feminist groups) তীব্র আপত্তি উঠেছিল যা ভারতীয় সরকারকে “ধর্ষণ” শব্দটি পুনরুদ্ধার করতে এবং ঘোষণা করতে বাধ্য করেছিল যে কেবল পুরুষরাই মহিলাদের ধর্ষক হতে পারে।

ইন্দোনেশিয়া (Indonesia)

ইন্দোনেশিয়ার ফৌজদারি বিধি (Indonesian Penal Code) (Kitab Undang-undang Hukum Pidana) অনুযায়ী, পুরুষরা ধর্ষণের শিকার হতে পারে না। ধারা ২৮৫ (Section 285) অনুসারে, ধর্ষণ একটি নারীর (female) বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা (sexual violence) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে যার জন্য সর্বাধিক ১২ বছরের কারাদণ্ড (imprisonment for a maximum of 12 years) রয়েছে, যেখানে ধারা ২৮৯ (Section 289)-এ “অশ্লীল কর্ম” (vulgar actions) এর শিকারকে পুরুষ (male) বা মহিলা (female) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি এবং শাস্তি সর্বাধিক ৯ বছরের কারাদণ্ড (imprisonment for a maximum of 9 years)। ধারা ২৮৫-এ (Section 285) R. Soesilo-এর মন্তব্যটি বলেছে যে আইন প্রণেতাদের এমন কোনো শাস্তি নির্ধারণ করার প্রয়োজন ছিল না যা পুরুষদের সাথে মিলিত হতে বাধ্য করে। এটি এই কারণে নয় যে এমন কর্ম সম্ভব নয়, বরং এই কাজটি পুরুষ ভিক্টিমদের জন্য ক্ষতিকর বা খারাপ কিছু করে না, যেমন গর্ভাবস্থা (pregnancy)।

নিউজিল্যান্ড (New Zealand)

নিউজিল্যান্ডে (New Zealand), “ধর্ষণ” (rape) শব্দটি শুধুমাত্র সেই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে যেখানে একজন পুরুষ (male) একজন মহিলার (female) দ্বারা অনুপ্রবিষ্ট হয়। মহিলারা (females) পুরুষ দ্বারা নারী ধর্ষণের (male-on-female rape) মতো একই মাত্রায় শাস্তিযোগ্য হতে পারে।

ফিলিপাইনস (Philippines)

১৯৩০ সালের সংশোধিত ফৌজদারি বিধির (Revised Penal Code of 1930) ১৯৯৭ সালের সংশোধনের আগে, পুরুষ ধর্ষণের শিকারদের (male rape victims) ফিলিপাইনের (Philippine) আইনে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আইনের ২৬৬-এ (Article 266-A) অনুচ্ছেদটি “যৌন নিপীড়নের একটি কাজ” (an act of sexual assault) হিসাবে ধর্ষণকে সংজ্ঞায়িত করে যেকোনো ব্যক্তি দ্বারা “তার লিঙ্গ (penis) অন্য ব্যক্তির মুখ (mouth) বা পায়ুমুখে (anal orifice) প্রবেশ করানো” বা “যে কোনো যন্ত্র বা বস্তু (instrument or object) অন্য ব্যক্তির যৌনাঙ্গ (genital) বা পায়ুমুখে (anal orifice) প্রবেশ করানো।” ১৯৯৭ সালের সংশোধনীটি পুরুষদের ধর্ষণের আইনি স্বীকৃতি দিয়েছিল, উভয়ই অন্য পুরুষ (males) এবং মহিলাদের (females) দ্বারা।

তবে ছেলেদের ধর্ষণের (rape of boys) অপরাধের জন্য এবং মেয়েদের (girls) একই কাজ করার জন্য শাস্তির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আইনের দ্বারা ছেলেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ যৌন নিপীড়ন (sexual assault) দ্বারা ধর্ষণ হিসাবে বিবেচিত হয়, যা ছয় থেকে ১২ বছরের কারাদণ্ডের (six to 12 years of imprisonment) কম শাস্তি বহন করে, যেখানে মেয়েদের (girls) বিরুদ্ধে ধর্ষণকে আজীবন কারাদণ্ড (life imprisonment) দেওয়া হয়।

সিঙ্গাপুর (Singapore)

সিঙ্গাপুর (Singapore) আইনে পুরুষ ধর্ষণের শিকারদের (male rape victims) স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। একজন পুরুষ ধর্ষণের শিকার পেনাল কোডের S375(1)-এর (S375(1), Penal Code) অধীনে ধর্ষণের শিকার হিসাবে বিবেচিত হয় না, যা ধর্ষণকে একজন পুরুষের দ্বারা তার লিঙ্গ (penis) দিয়ে একজন মহিলার (woman) যোনির (vagina) অনুপ্রবেশ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে তার সম্মতি ছাড়া। অন্যান্য শরীরের অঙ্গগুলির অনুপ্রবেশ ধর্ষণ নয় বরং একটি বেআইনি যৌন অনুপ্রবেশ (unlawful sexual penetration) (S376(1), পেনাল কোড)। উভয় অপরাধের শাস্তি একই: ২০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড (imprisonment for a term of up to 20 years) এবং জরিমানা (fine) বা বেত্রাঘাত (caning) (S375(2) এবং S376(4), পেনাল কোড)।

তথ্যসূত্র –

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.