নিওলিবারালিজম (Neoliberalism)

Table of Contents

ভূমিকা

সংজ্ঞা ও প্রেক্ষাপট : নিওলিবারালিজম (Neoliberalism) বা নিও-লিবারালিজম (neo-liberalism) একটি পরিভাষা যা বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে উনিশ শতকের মুক্তবাজার পুঁজিবাদের (free-market capitalism) ধারণার রাজনৈতিক পুনরুত্থানকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়। এই পরিভাষার বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক সংজ্ঞা রয়েছে এবং প্রায়শই নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। একাডেমিক ব্যবহারে, পরিভাষাটি প্রায়শই অনির্ধারিত থাকে বা বিভিন্ন ধরনের ঘটনা বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়, তবে প্রধানত এটি বাজারভিত্তিক সংস্কারের (market-based reforms) কারণে সমাজের রূপান্তরকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়।

অর্থনৈতিক দর্শন: একটি অর্থনৈতিক দর্শন হিসেবে, নিওলিবারালিজম (Neoliberalism) ১৯৩০-এর দশকে ইউরোপীয় উদারপন্থী পণ্ডিতদের মধ্যে উদ্ভূত হয়েছিল যখন তারা গ্রেট ডিপ্রেশনের (Great Depression) পর বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রবণতায় ক্লাসিক্যাল লিবারালিজমের (classical liberalism) কেন্দ্রীয় ধারণাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত এবং পুনর্নবীকরণের চেষ্টা করছিল। ক্লাসিক্যাল লিবারালিজমের (classical liberalism) অর্থনৈতিক নীতির কারণে ১৯৩০-এর দশকের শুরুতে ঘটে যাওয়া অর্থনৈতিক ব্যর্থতাগুলির পুনরাবৃত্তি এড়ানোর প্রচেষ্টা ছিল এই নীতিগুলির প্রণয়নের অন্যতম কারণ।

নীতিনির্ধারণে প্রভাব : নীতিনির্ধারণে, নিওলিবারালিজম (Neoliberalism) প্রায়শই পোস্ট-যুদ্ধকালীন ঐকমত্য এবং নিও-কেইনেসীয় অর্থনীতির (neo-Keynesian economics) স্ট্যাগনেশনের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার পর একটি প্যারাডাইম পরিবর্তনের (paradigm shift) অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের (USSR) পতন এবং ঠাণ্ডা যুদ্ধের (Cold War) সমাপ্তিও নিওলিবারালিজমের (Neoliberalism) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বব্যাপী বিজয়ের সম্ভাবনাকে সম্ভব করেছিল।

নীতিমালা এবং কার্যক্রম : নিওলিবারালিজম (Neoliberalism) প্রায়শই অর্থনৈতিক উদারীকরণ (economic liberalization) নীতির সাথে যুক্ত, যার মধ্যে বেসরকারিকরণ (privatization), নিয়ন্ত্রণমুক্তি (deregulation), ভোক্তা পছন্দ (consumer choice), বিশ্বায়ন (globalization), মুক্ত বাণিজ্য (free trade), মুদ্রানীতি (monetarism), কঠোরতা (austerity), এবং সরকারি ব্যয় হ্রাস (reductions in government spending) অন্তর্ভুক্ত, যার লক্ষ্য হলো অর্থনীতি এবং সমাজে বেসরকারি খাতের ভূমিকা বৃদ্ধি করা। নিওলিবারাল প্রকল্পটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক চরিত্রেরও (political in character)।

পরিভাষার ব্যবহার : মুক্ত বাজার নীতির সমর্থকদের দ্বারা পরিভাষাটি খুব কমই ব্যবহৃত হয়। ১৯৮০-এর দশকে চিলিতে অগাস্তো পিনোশের (Augusto Pinochet) অর্থনৈতিক সংস্কারের সাথে সম্পর্কিত হয়ে একাডেমিক ব্যবহারে প্রবেশ করার সময় এটি দ্রুত নেতিবাচক অর্থ অর্জন করে এবং প্রধানত বাজার সংস্কার (market reform) এবং লাসে-ফেয়ার পুঁজিবাদের (laissez-faire capitalism) সমালোচকদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়। স্কলাররা এটিকে মন্ট পেলরিন সোসাইটির (Mont Pelerin Society) সাথে কাজ করা অর্থনীতিবিদদের তত্ত্বের সাথে যুক্ত করেছিলেন, যাদের মধ্যে ফ্রিডরিখ হায়েক (Friedrich Hayek), মিল্টন ফ্রিডম্যান (Milton Friedman), লুডউইগ ভন মিজেস (Ludwig von Mises) এবং জেমস এম. বুকানান (James M. Buchanan) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, পাশাপাশি রাজনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারক যেমন মার্গারেট থ্যাচার (Margaret Thatcher), রোনাল্ড রিগান (Ronald Reagan) এবং অ্যালান গ্রিনস্প্যান (Alan Greenspan) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

নতুন অর্থে নিওলিবারালিজম (Neoliberalism) শব্দটি যখন স্প্যানিশ-ভাষী পণ্ডিতদের মধ্যে সাধারণ ব্যবহার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তখন এটি ইংরেজি ভাষার রাজনৈতিক অর্থনীতির অধ্যয়নে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৪ সালে, নাফটা (NAFTA) এর পাসেজ এবং চিয়াপাসে (Chiapas) এই বিকাশের প্রতিক্রিয়ায় জাপাতিস্তাদের (Zapatistas) সাথে, পরিভাষাটি বিশ্বব্যাপী প্রচলনে প্রবেশ করে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে নিওলিবারালিজম (Neoliberalism) নিয়ে গবেষণা বৃদ্ধি পেয়েছে।

পরিভাষা

উৎপত্তি

“নিওলিবারালিজম” (neoliberalism) শব্দটির প্রথম দিকের একটি ইংরেজি ব্যবহার ১৮৯৮ সালে ফরাসি অর্থনীতিবিদ চার্লস গিড (Charles Gide) দ্বারা ইতালীয় অর্থনীতিবিদ ম্যাফিও পান্তালেওনির (Maffeo Pantaleoni) অর্থনৈতিক বিশ্বাসগুলো বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। এর আগে ফরাসিতে “নেও-লিবেরালিজম” (néo-libéralisme) শব্দটি বিদ্যমান ছিল। পরে এই শব্দটি অন্যান্যদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়, যাদের মধ্যে ১৯৫১ সালে ক্লাসিক্যাল লিবারাল অর্থনীতিবিদ (classical liberal economist) মিল্টন ফ্রিডম্যান (Milton Friedman) তার প্রবন্ধ “Neo-Liberalism and its Prospects” এ ব্যবহার করেন।

১৯৩৮ সালে কলোক ওয়াল্টার লিপম্যান (Colloque Walter Lippmann) এ “নিওলিবারালিজম” (neoliberalism) শব্দটি প্রস্তাবিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত কিছু নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক বিশ্বাস বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু করে। এই সমাবেশে নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) ধারণাটি নির্ধারণ করা হয়েছিল যে, এটির মধ্যে “মূল্য প্রক্রিয়ার অগ্রাধিকার (priority of the price mechanism), মুক্ত উদ্যোগ (free enterprise), প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা (the system of competition) এবং একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ রাষ্ট্র (a strong and impartial state)” অন্তর্ভুক্ত। লুইস রুজিয়ে (Louis Rougier) এবং ফ্রিডরিখ হায়েকের (Friedrich Hayek) মতে, নিওলিবারাল (neoliberal) প্রতিযোগিতা একটি সফল ব্যক্তিদের এলিট কাঠামো (elite structure) প্রতিষ্ঠা করবে যা সমাজে ক্ষমতা গ্রহণ করবে। এই এলিটরা বিদ্যমান প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের (representative democracy) স্থলে আসবে যা সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে কাজ করে।

নিওলিবারাল হওয়ার অর্থ ছিল রাষ্ট্র হস্তক্ষেপের (state intervention) সাথে আধুনিক অর্থনৈতিক নীতি সমর্থন করা। নিওলিবারাল রাষ্ট্র হস্তক্ষেপবাদের (state interventionism) সাথে ক্লাসিক্যাল লিবারালদের (classical liberals) লাসে-ফেয়ার শিবিরের (laissez-faire camp) বিরোধিতা ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ক্লাসিক্যাল লিবারাল অর্থনীতিবিদ লুডউইগ ভন মিজেস (Ludwig von Mises) লাসে-ফেয়ার অর্থনীতির প্রবক্তা ছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন যে রাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কম থেকে কম হস্তক্ষেপ করা উচিত। ফলে, নিওলিবারাল ধারণা অনুযায়ী যে রাষ্ট্রকে কিছু ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে হবে, তা মিজেসের মতো লাসে-ফেয়ার সমর্থকদের দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে ছিল। ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকের বেশিরভাগ পণ্ডিতরা নিওলিবারালিজমকে (neoliberalism) সামাজিক বাজার অর্থনীতি (social market economy) এবং এর প্রধান অর্থনৈতিক তাত্ত্বিকদের সাথে যেমন ওয়াল্টার ইউকেন (Walter Eucken), উইলহেম রোপকে (Wilhelm Röpke), আলেক্সান্ডার রুস্টো (Alexander Rüstow) এবং আলফ্রেড মুলার-আর্ম্যাক (Alfred Müller-Armack) এর সাথে যুক্ত করে বুঝতেন। যদিও হায়েকের (Hayek) সাথে জার্মান নিওলিবারালদের (German neoliberals) বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পর্ক ছিল, তার নাম তখনকার সময়ে নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) সাথে খুব কমই উল্লেখ করা হতো কারণ তার অধিকতর মুক্ত বাজারের (pro-free market) অবস্থান।

অগাস্টো পিনোশেটের (Augusto Pinochet) সামরিক শাসনের সময় (১৯৭৩–১৯৯০) চিলিতে, বিরোধী পণ্ডিতরা এই শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করেন চিলির অর্থনৈতিক সংস্কার (economic reforms) এবং এর প্রবক্তাদের (দ্য শিকাগো বয়েজ বা The Chicago Boys) বর্ণনা করতে। যখন এই নতুন অর্থ স্প্যানিশ-ভাষী পণ্ডিতদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এটি ইংরেজি ভাষার রাজনৈতিক অর্থনীতির (political economy) অধ্যয়নে ছড়িয়ে পড়ে। একটি গবেষণায় ১৪৮টি একাডেমিক প্রবন্ধের মধ্যে দেখা গেছে যে নিওলিবারালিজম (neoliberalism) প্রায় কখনই সংজ্ঞায়িত হয় না, বরং এটি আদর্শবাদ (ideology), অর্থনৈতিক তত্ত্ব (economic theory), উন্নয়ন তত্ত্ব (development theory) বা অর্থনৈতিক সংস্কার নীতি (economic reform policy) বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রধানত অপমানসূচক পরিভাষা (term of abuse) হিসেবে এবং/অথবা ক্লাসিক্যাল লিবারালিজমের (classical liberalism) সাথে প্রায় অভিন্ন একটি লাসে-ফেয়ার বাজার মৌলবাদ (laissez-faire market fundamentalism) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে, পরিভাষার সুনির্দিষ্ট অর্থ এবং সামাজিক বিজ্ঞানে এর উপযোগিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিভিন্ন ধরনের বাজার অর্থনীতির (market economies) সংখ্যাবৃদ্ধির কারণে।

অর্থনৈতিক দর্শনের বাইরে “নিওলিবারালিজম” (neoliberalism) পরিভাষাটি ১৯৭০-এর দশকের আধুনিক আমেরিকান লিবারালিজম (modern American liberalism) থেকে উদ্ভূত একটি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক আন্দোলন বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। রাজনৈতিক ভাষ্যকার ডেভিড ব্রুকস (David Brooks) এর মতে, বিশিষ্ট নিওলিবারাল রাজনীতিবিদদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির (Democratic Party of the United States) আল গোর (Al Gore) এবং বিল ক্লিনটন (Bill Clinton) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। নিওলিবারালরা দুটি ম্যাগাজিন, দ্য নিউ রিপাবলিক (The New Republic) এবং দ্য ওয়াশিংটন মান্থলি (The Washington Monthly) এর চারপাশে সংগঠিত হয়েছিল এবং প্রায়ই থার্ড ওয়ে (Third Way) নীতিগুলিকে সমর্থন করেছিল। এই সংস্করণের নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) “গডফাদার” ছিলেন সাংবাদিক চার্লস পিটার্স (Charles Peters), যিনি ১৯৮৩ সালে “এ নিওলিবারালস ম্যানিফেস্টো” (A Neoliberal’s Manifesto) প্রকাশ করেছিলেন।

বর্তমান ব্যবহার

ইতিহাসবিদ এলিজাবেথ শেরমার (Elizabeth Shermer) যুক্তি দিয়েছেন যে ১৯৭০-এর দশকে বাম-ঝোঁক বিশিষ্ট একাডেমিকদের মধ্যে “নিওলিবারালিজম” (neoliberalism) পরিভাষাটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, যা “শেষ বিংশ শতাব্দীর একটি প্রচেষ্টা বর্ণনা ও নিন্দা করতে ব্যবহৃত হয়েছিল, যেখানে নীতিনির্ধারক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞ এবং শিল্পপতিরা সামাজিক-গণতান্ত্রিক সংস্কারগুলির নিন্দা করেন এবং নির্দ্বিধায় মুক্তবাজার নীতিগুলি বাস্তবায়ন করেন।” অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ফিলিপ ডব্লিউ ম্যাগনেস (Phillip W. Magness) উল্লেখ করেন যে, ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো (Michel Foucault) এটি প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার পর ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি একাডেমিক সাহিত্যতে এর পুনরায় আবির্ভাব ঘটে।

সাধারণভাবে, যখন আমরা ‘নিওলিবারালিজম’ উল্লেখ করি, তখন আমরা সাধারণত সমাজের নতুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থা বোঝাতে থাকি যা বাজার সম্পর্ককে জোর দেয়, রাষ্ট্রের ভূমিকা পুনঃনির্ধারণ করে এবং ব্যক্তিগত দায়িত্বকে গুরুত্ব দেয়। অধিকাংশ পণ্ডিতরা একমত যে নিওলিবারালিজমকে ব্যাপকভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় প্রতিযোগিতামূলক বাজারের প্রসার হিসেবে যা জীবনের সকল ক্ষেত্রে, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমাজ অন্তর্ভুক্ত করে।

নিওলিবারালিজম বর্তমানে বাজারমুখী সংস্কার নীতিগুলিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যেমন “মূল্য নিয়ন্ত্রণ বিলোপ, পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ, বাণিজ্য বাধা কমানো” এবং অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের প্রভাব কমানো, বিশেষ করে বেসরকারীকরণ এবং মিতব্যয়িতার (austerity) মাধ্যমে। এটি সাধারণত যুক্তরাজ্যের মার্গারেট থ্যাচার (Margaret Thatcher) এবং যুক্তরাষ্ট্রের রোনাল্ড রেগানের (Ronald Reagan) অর্থনৈতিক নীতিগুলির সাথে সম্পর্কিত।

কিছু পণ্ডিত উল্লেখ করেছেন যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিওলিবারালিজমের বেশ কয়েকটি স্বতন্ত্র ব্যবহার রয়েছে:

উন্নয়ন মডেল হিসেবে (As a Development Model): নিওলিবারালিজমের উন্নয়ন মডেলটি কাঠামোবাদী অর্থনীতির (structuralist economics) প্রতি প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে ওয়াশিংটন কনসেনসাসের (Washington Consensus) পক্ষে অবস্থান নেয়। কাঠামোবাদী অর্থনীতি এমন একটি তত্ত্ব যা দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ এবং পরিকল্পনার গুরুত্বকে জোর দেয়। নিওলিবারাল উন্নয়ন মডেলটি বাজারমুখী সংস্কারের মাধ্যমে এই ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে, যেমন বেসরকারীকরণ, বাজারের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ এবং বাণিজ্য বাধা হ্রাস। এটি বিশ্বাস করে যে অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য বাজারের শক্তিগুলি মুক্তভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা উচিত যেখানে ব্যক্তিগত খাত বৃদ্ধি পেতে পারে।

ওয়াশিংটন কনসেনসাস (Washington Consensus): ওয়াশিংটন কনসেনসাস (Washington Consensus) হল দশটি অর্থনৈতিক নীতি সংক্রান্ত প্রস্তাবনার একটি সেট, যা ওয়াশিংটন, ডি.সি.-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund, IMF), বিশ্বব্যাংক (World Bank) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় (United States Department of the Treasury) দ্বারা সংকটগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য প্রচারিত “মানক” বা স্ট্যান্ডার্ড সংস্কার প্যাকেজ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পরিভাষাটি প্রথম ১৯৮৯ সালে ইংরেজ অর্থনীতিবিদ জন উইলিয়ামসন (John Williamson) দ্বারা ব্যবহৃত হয়। প্রস্তাবনাগুলি মুক্তবাজার প্রচারের নীতিগুলি অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন বাণিজ্য উদারীকরণ (trade liberalization), বেসরকারীকরণ (privatization) এবং আর্থিক উদারীকরণ (finance liberalization) । এতে রাজস্ব ঘাটতি কমানো এবং মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসের জন্য আর্থিক ও মুদ্রানীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। উইলিয়ামসনের পরিভাষা ব্যবহারের পর, এবং তার স্পষ্ট বিরোধিতা সত্ত্বেও, ওয়াশিংটন কনসেনসাস পরিভাষাটি একটি দ্বিতীয়, বিস্তৃত অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, যা একটি শক্তিশালী বাজার-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি একটি সাধারণ অভিমুখকে বোঝায় (যা কখনও কখনও বাজার মৌলবাদ বা নিওলিবারালিজম হিসেবে বর্ণনা করা হয়)। উইলিয়ামসন দুটি বিকল্প সংজ্ঞার মধ্যে পার্থক্যের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেছেন যে তার মূল দশটি প্রস্তাবনা সংকীর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত এবং ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, যাকে তিনি “মাদারহুড এবং আপেল পাই” (অর্থাৎ, সবাই গ্রহণযোগ্য) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে পরবর্তীকালে যেভাবে ওয়াশিংটন কনসেনসাস পরিভাষাটি বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, যা একটি নিওলিবারাল ঘোষণাপত্র (neoliberal manifesto) হিসেবে দেখা হয়েছে, সেটি “ওয়াশিংটনে কখনই কোনো ঐক্যমত্য (consensus) উপভোগ করেনি বা অন্য কোথাও তেমনটা হয়নি” এবং এটি কার্যত অপ্রচলিত বা মৃত বলে বিবেচিত হতে পারে। ওয়াশিংটন কনসেনসাসের আলোচনা দীর্ঘকাল ধরে বিতর্কিত ছিল। আংশিকভাবে এটি পরিভাষার অর্থ নিয়ে ঐকমত্যের অভাবকে প্রতিফলিত করে, তবে জড়িত নীতিগুলির যোগ্যতা এবং পরিণতি সম্পর্কে বাস্তব পার্থক্যও রয়েছে। কিছু সমালোচক মূল কনসেনসাসের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন যাতে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বৈশ্বিক বাজারের সাথে সংযুক্ত করা এবং উদীয়মান বাজারে রূপান্তরিত করার উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে, যা তারা মনে করেন অভ্যন্তরীণ বাজারের শক্তির প্রভাব বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়েছে, সম্ভবত রাষ্ট্রের মূল কার্যক্রমে প্রভাব ফেলার শাসন ব্যবস্থার ক্ষতির জন্য। অন্য কিছু মন্তব্যকারীদের মতে, সমস্যাটি হল ওয়াশিংটন কনসেনসাসে কি অনুপস্থিত। তাদের মতে, প্রস্তাবনাগুলির মধ্যে নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত নেই:

  • প্রতিষ্ঠান গঠন (Institution-building): সমাজে শক্তিশালী এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় নীতি এবং পদক্ষেপগুলির অভাব রয়েছে।
  • সমান সুযোগ (Equal Opportunity): সমাজের সবচেয়ে দুর্বল এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলির অভাব রয়েছে।
  • সামাজিক ন্যায়বিচার (Social Justice): সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং সবাইকে সমানভাবে সুযোগ প্রদান করার জন্য লক্ষ্যযুক্ত প্রচেষ্টা নেই।
  • দারিদ্র্য বিমোচন (Poverty Reduction): দারিদ্র্য দূর করার জন্য এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়নের সুযোগ বাড়ানোর জন্য লক্ষ্যযুক্ত পদক্ষেপের অভাব রয়েছে।

এই কারণে, তারা মনে করেন যে ওয়াশিংটন কনসেনসাস কেবলমাত্র বাজারের শক্তিকে জোর দেওয়ার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, যা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীতে প্রভাব ফেলে এবং সমাজের দুর্বলদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়।

একটি মতাদর্শ হিসেবে (As an Ideology): একটি মতাদর্শ হিসেবে নিওলিবারালিজম স্বাধীনতাকে (freedom) একটি সর্বব্যাপী সামাজিক মূল্য (overarching social value) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। এটি বিশ্বাস করে যে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং বাজারের স্বাধীনতা সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ। এই মতাদর্শটি রাষ্ট্রের কার্যাবলীকে একটি ন্যূনতম রাষ্ট্রে (minimal state) সীমাবদ্ধ করতে চায়, যেখানে রাষ্ট্রের ভূমিকা শুধুমাত্র মৌলিক পরিষেবা প্রদান এবং বাজারের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য। এটি সামাজিক সেবাগুলির বেসরকারীকরণ, বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রতিযোগিতার উপর জোর দেয়।

একটি জননীতির হিসেবে (As a Public Policy): একটি জননীতির (public policy) হিসেবে নিওলিবারালিজম নিম্নলিখিত নীতিগুলির মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে:

  • সরকারি অর্থনৈতিক খাত বা সেবার বেসরকারীকরণ (Privatization of Public Economic Sectors or Services): নিওলিবারাল নীতির আওতায়, সরকারি মালিকানাধীন সম্পদ ও পরিষেবাগুলিকে বেসরকারীকরণ করা হয়, যার ফলে ব্যক্তিগত খাতের হাতে স্থানান্তরিত করা হয়। এর ফলে সরকারি খাতের আকার হ্রাস পায় এবং ব্যক্তিগত খাতের কার্যকলাপ বাড়ে।
  • বেসরকারি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (Deregulation of Private Corporations): নিওলিবারাল নীতিতে বেসরকারি ব্যবসা এবং কর্পোরেশনগুলির উপর সরকারের নিয়ম ও বিধিনিষেধ হ্রাস করা হয়। এর ফলে বাজারের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায় এবং নতুন উদ্যোগের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
  • সরকারি বাজেট ঘাটতি এবং পাবলিক ওয়ার্কসে ব্যয়ের তীব্র হ্রাস (Sharp Decrease of Government Budget Deficits and Reduction of Spending on Public Works): এই নীতির মাধ্যমে, সরকারী ব্যয়ের হ্রাস এবং বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। এর ফলে রাষ্ট্রের ব্যয় কমে যায় এবং বাজেটের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। এর সাথে সাথে, পাবলিক ওয়ার্কস বা সরকারি প্রকল্পের উপর ব্যয়ও কমানো হয়, যা সরকারের অর্থনৈতিক দায়িত্বকে হ্রাস করে এবং ব্যক্তিগত খাতকে উৎসাহিত করে।

এই সব নীতির মাধ্যমে, নিওলিবারালিজম ব্যক্তিগত খাতের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে এবং বিশ্বাস করে যে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রতিযোগিতা সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

নিওলিবারালিজম শব্দটির অর্থ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানী ফ্রেড এল. ব্লক (Fred L. Block) এবং মার্গারেট সোমার্স (Margaret Somers) দাবি করেছেন যে, মুক্তবাজার ধারণার প্রভাবকে কী বলা উচিত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে যা ১৯৮০-এর দশক থেকে নিউ ডিল (New Deal) কর্মসূচি এবং নীতিগুলির প্রত্যাহারের সপক্ষে ব্যবহৃত হয়েছে: নিওলিবারালিজম, লাসে-ফেয়ার (laissez-faire) বা “মুক্ত বাজার মতাদর্শ”। অন্য একাডেমিকদের মতে, নিওলিবারালিজম একটি রাজনৈতিক দর্শন যা মূলধন সঞ্চয়ের প্রক্রিয়াগুলিকে “মুক্ত” করতে চায়। অন্যদিকে, ফ্রান্সিস ফক্স পিভেন (Frances Fox Piven) নিওলিবারালিজমকে মূলত হাইপার-ক্যাপিটালিজম (hyper-capitalism) হিসেবে দেখে থাকেন। রবার্ট ডব্লিউ. ম্যাকচেসনি (Robert W. McChesney) নিওলিবারালিজমকে “গ্লাভস ছাড়া পুঁজিবাদ” (capitalism with the gloves off) হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে বলেন যে, সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এই পরিভাষাটি সম্পর্কে খুব কমই জানে। লেস্টার স্পেন্স (Lester Spence) নিওলিবারালিজম (neoliberalism) তত্ত্বটি ব্ল্যাক রাজনীতিতে (Black Politics) বর্তমান কিছু প্রবণতার সমালোচনা করার জন্য ব্যবহার করেন। ব্ল্যাক রাজনীতি বলতে আফ্রিকান-আমেরিকান বা কালো মানুষের রাজনৈতিক আন্দোলন, সচেতনতা এবং ক্ষমতার প্রসারকে বোঝানো হয়, যা তাদের অধিকার, সমতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করে। এই আন্দোলনগুলিতে, বিশেষত আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে রাজনৈতিক প্রবণতাগুলি দেখা যায়, সেগুলিকে বোঝানোর জন্য তিনি নিওলিবারালিজমের সমালোচনা করেন। স্পেন্সের মতে, নিওলিবারালিজম একটি সাধারণ ধারণা প্রচার করে যে সমাজ সবচেয়ে ভালভাবে কাজ করে যখন এর মানুষ এবং প্রতিষ্ঠানগুলি বাজার নীতির (market principles) সাথে কাজ করে বা কাজ করার জন্য আকৃতিবদ্ধ হয়। অর্থাৎ, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগ, প্রতিযোগিতা এবং বাজারের শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং এই ধারণাটি ব্ল্যাক রাজনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা স্পেন্স তার কাজের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন।

নিউ ডিল (New Deal): নিউ ডিল (The New Deal) ছিল একটি সিরিজ প্রোগ্রাম, পাবলিক ওয়ার্ক প্রকল্প, আর্থিক সংস্কার এবং নিয়মাবলী যা প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট (Franklin D. Roosevelt) দ্বারা ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে চালু করা হয়েছিল যাতে মহামন্দা (Great Depression) থেকে দেশটিকে উদ্ধার করা যায়। এটি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়েছিল যে মন্দাটি বাজারের অন্তর্নিহিত অস্থিতিশীলতার কারণে ঘটেছিল এবং অর্থনীতিকে যুক্তিসঙ্গত এবং স্থিতিশীল করতে সরকারী হস্তক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল। মুখ্য ফেডারেল প্রোগ্রাম এবং সংস্থাগুলির মধ্যে ছিল সিভিলিয়ান কনজারভেশন কর্পস (Civilian Conservation Corps, CCC), ওয়ার্কস প্রগ্রেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Works Progress Administration, WPA), সিভিল ওয়ার্কস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Civil Works Administration, CWA), ফার্ম সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Farm Security Administration, FSA), ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিকভারি অ্যাক্ট অফ ১৯৩৩ (National Industrial Recovery Act of 1933, NIRA) এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Social Security Administration, SSA), যা কৃষক, বেকার, যুবক এবং বৃদ্ধদের জন্য সহায়তা প্রদান করেছিল। নিউ ডিলে ব্যাংকিং শিল্পে নতুন বাধা এবং সুরক্ষাগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং অর্থনীতিকে পুনরায় উদ্দীপিত করার প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত ছিল যখন মূল্যগুলি তীব্রভাবে কমে গিয়েছিল। নিউ ডিল প্রোগ্রামগুলিতে কংগ্রেস দ্বারা পাস করা আইন এবং ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের প্রথম মেয়াদকালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাহী আদেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রোগ্রামগুলি ইতিহাসবিদদের মতে “৩ আর” (3 R’s) উপর ফোকাস করেছিল: বেকার এবং দরিদ্রদের জন্য ত্রাণ (relief), অর্থনীতিকে স্বাভাবিক মাত্রায় পুনরুদ্ধার (recovery), এবং আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার (reform) যাতে পুনরায় একটি মন্দা প্রতিরোধ করা যায়। নিউ ডিল একটি রাজনৈতিক পুনর্মিলন সৃষ্টি করেছিল, যা ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ (১৯৩৩ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত নয়টি প্রেসিডেন্টিয়াল মেয়াদের মধ্যে সাতটি মেয়াদে হোয়াইট হাউস ধরে রাখা) করে তোলে যার ভিত্তি ছিল প্রগতিশীল ধারণা, দক্ষিণ, বড় শহরের মেশিন এবং নতুনভাবে ক্ষমতায়িত শ্রম ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠী। রিপাবলিকানরা বিভক্ত ছিল, প্রগতিশীল রিপাবলিকানরা সমর্থন করেছিল কিন্তু রক্ষণশীলরা পুরো নিউ ডিলকে ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রতি শত্রু হিসেবে দেখেছিল। নিউ ডিলের কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক পুনর্মিলন (realignment) নিউ ডিল জোটে (New Deal coalition) পরিণত হয়েছিল, যা ১৯৬০ এর দশক পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আধিপত্য করেছিল। এই জোটটি ডেমোক্রেটিক পার্টিকে শক্তিশালী করেছিল এবং তাদের প্রগতিশীল ধারণাগুলি, দক্ষিণ, বড় শহরের মেশিন এবং নতুনভাবে ক্ষমতায়িত শ্রম ইউনিয়ন ও বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীগুলির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। অন্যদিকে, বিরোধী রক্ষণশীল জোট (conservative coalition) ১৯৩৭ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত দেশীয় বিষয়ে কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল, যা মূলত নিউ ডিলের নীতিগুলির বিরোধিতা করেছিল।

ফিলিপ মিরোস্কির (Philip Mirowski) মতে, নিওলিবারালিজম বাজারকে সর্বশ্রেষ্ঠ তথ্য প্রক্রিয়াকরণকারী হিসেবে দেখে, যা যেকোনো মানবিক সত্তার চেয়ে উচ্চতর। তাই এটি সত্যের বিচারক হিসেবে বিবেচিত হয়। অ্যাডাম কোটস্কো (Adam Kotsko) নিওলিবারালিজমকে রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্ব (political theology) হিসাবে বর্ণনা করেছেন, কারণ এটি শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক নীতির এজেন্ডার সূত্র নয় বরং এটি একটি নৈতিক নীতিতে পরিণত করে যা “একটি সম্পূর্ণ জীবনধারা এবং একটি সামগ্রিক বিশ্বদৃষ্টি” (holistic worldview) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যেভাবে পূর্ববর্তী পুঁজিবাদের মডেলগুলি করেনি।

নিওলিবারালিজম লিবারালিজম থেকে পৃথক কারণ এটি লাসে-ফেয়ার অর্থনৈতিক নীতির প্রচার করে না, বরং এটি অত্যন্ত নির্মাণবাদী (constructivist) এবং সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাজার-সদৃশ সংস্কার আনতে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের (strong state) পক্ষে থাকে। নৃতাত্ত্বিক জেসন হিকেল (Jason Hickel) বিশ্বাস করেন যে নিওলিবারালিজম (neoliberalism) সম্পূর্ণ মুক্ত বাজারের (free market) পক্ষে রাষ্ট্রের (state) সম্পূর্ণ হস্তক্ষেপ বন্ধ করে দেয় না। বরং, তিনি যুক্তি দেন যে একটি বৈশ্বিক ‘মুক্ত বাজার’ (global ‘free market’) তৈরি করতে এবং স্থিতিশীল করতে, অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা (active role) এবং হস্তক্ষেপ (intervention) প্রয়োজন। এটি মুক্ত বাজারের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে হতে পারে, তবে হিকেল বলেন যে বাস্তবে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া নিওলিবারালিজম তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না। নাওমি ক্লেইন (Naomi Klein) উল্লেখ করেছেন যে, নিওলিবারালিজমের তিনটি নীতিগত স্তম্ভ হল “পাবলিক স্ফিয়ারের বেসরকারীকরণ, কর্পোরেট খাতের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ এবং আয় ও কর্পোরেট করের হ্রাস, যা সরকারি ব্যয় কেটে পরিশোধ করা হয়।”

কিছু পণ্ডিতের মতে, নিওলিবারালিজম (neoliberalism) শব্দটি প্রায়শই সমালোচকদের দ্বারা একটি অপমানসূচক পরিভাষা (pejorative term) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি সামাজিক এবং রাজনৈতিক লেখায় অন্যান্য পরিভাষাগুলির চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, যেমন মনেটারিজম (monetarism), যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দেয়; নিওকনজারভেটিজম (neoconservatism), যা একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা ১৯৬০-এর দশকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং সাধারণত মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং হস্তক্ষেপমূলক পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে থাকে; ওয়াশিংটন কনসেনসাস (Washington Consensus), যা উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য বাজারমুখী অর্থনৈতিক নীতির একটি সেট; এবং ‘মার্কেট রিফর্ম’ (market reform), যার দ্বারা বাজারকে আরও মুক্ত এবং প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য গৃহীত বিভিন্ন নীতি এবং সংস্কারকে বোঝায়। নিওলিবারালিজম এই পরিভাষাগুলির তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয় এবং এটি প্রায়শই নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, The Handbook of Neoliberalism অনুসারে, পরিভাষাটি “বাজারমুখী নীতিগুলির একটি সর্বব্যাপী সেট চিহ্নিত করার একটি উপায় হয়ে উঠেছে যা সামাজিক, রাজনৈতিক, পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক সমস্যাগুলির একটি বিস্তৃত পরিসরের জন্য দায়ী।” যারা নিওলিবারাল নীতিগুলির (neoliberal policies) পক্ষে যুক্তি দেন, তারা পরিভাষাটি (term) অপমানসূচক বা নেতিবাচক অর্থে ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, নিওলিবারালিজম (neoliberalism) শব্দটি প্রায়শই নেতিবাচক বা অপমানসূচক অর্থে ব্যবহৃত হয়, যা নীতিগুলির প্রকৃত অর্থ বা গুরুত্বকে বিকৃত করে। উদাহরণস্বরূপ, হ্যান্ডবুক আরও যুক্তি দেয় যে “পরিভাষার এই ধরণের অস্পষ্টতা [সংশ্লিষ্টতা] এর বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতাকে হ্রাস করে। যদি নিওলিবারালিজম গত কয়েক দশকের সমাজের রূপান্তরকে বোঝার একটি উপায় হিসাবে কাজ করে, তবে এই ধারণাটিকে আনপ্যাক করার প্রয়োজন।” ইতিহাসবিদ ড্যানিয়েল স্টেডম্যান জোনস (Daniel Stedman Jones) অনুরূপভাবে বলেছেন যে পরিভাষাটি “বেশিরভাগ সময়ে গ্লোবালাইজেশন এবং বারবার আর্থিক সংকটের সাথে সম্পর্কিত ভয়াবহতার জন্য একটি ক্যাচ-অল শর্টহ্যান্ড হিসাবে ব্যবহৃত হয়।”

কিছু লেখক উল্লেখ করেছেন যে ‘নিওলিবারাল’ (neoliberal) পরিভাষাটি প্রায়শই বামপন্থীদের (leftists) দ্বারা অপমান বা গালি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দটি তারা লিবারালদের (liberals) আক্রমণ করার জন্য এবং এমন ধরনের লিবারালিজমের (liberalism) নিন্দা করতে ব্যবহার করেন, যেগুলির সাথে বামপন্থীরা একমত নয় বা যেগুলি বামপন্থীদের আদর্শের বিপরীতে অবস্থান করে। ব্রিটিশ সাংবাদিক উইল হাটন (Will Hutton) নিওলিবারাল পরিভাষাটিকে “একটি অচেতন বামপন্থী অপমান” বলেছেন যা “আলোচনাকে স্তব্ধ করে দেয়”। অন্যদিকে, অনেক পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে এটি একটি অর্থবহ সংজ্ঞা ধরে রেখেছে। The Guardian এ লেখা স্টিফেন মেটক্যালফ (Stephen Metcalf) উল্লেখ করেছেন যে ২০১৬ সালের IMF পেপার “Neoliberalism: Oversold?” এর প্রকাশনা “পরিভাষাটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক গালি বা একটি পরিভাষা ছাড়া অন্য কিছু হিসেবে দেখায়”। গ্যারি গার্স্টল (Gary Gerstle) যুক্তি করেন যে নিওলিবারালিজম একটি বৈধ পরিভাষা, এবং এটি “পুঁজিবাদের শক্তিকে মুক্ত করার জন্য স্পষ্টভাবে আহ্বান করে এমন একটি বিশ্বাস” হিসাবে বর্ণনা করেন। নিওলিবারালিজম (neoliberalism) এবং ঐতিহ্যবাহী রক্ষণশীলতার (traditional conservatism) মধ্যে পার্থক্য হল, রক্ষণশীলতা ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করার পক্ষপাতী, অর্থাৎ, এটি বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলিকে সুরক্ষিত ও উন্নত করার চেষ্টা করে। অন্যদিকে, নিওলিবারালিজম (neoliberalism) যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে বাধা হিসেবে দেখে যা তার লক্ষ্য অর্জনের পথে থাকে এবং সেই বাধা দূর করতে চায়।

ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানিটোবার ভূ-রাজনৈতিক অর্থনীতি গবেষণা গোষ্ঠীর পরিচালক রাধিকা দেশাই (Radhika Desai) যুক্তি করেন যে বিশ্ব পুঁজিবাদ (global capitalism) ১৯১৪ সালে তার শীর্ষে পৌঁছেছিল, দুটি মহাযুদ্ধ, পুঁজিবাদ-বিরোধী (anti-capitalist) বিপ্লব এবং কেইনসিয়ান (Keynesian) সংস্কারের সময়কালের ঠিক আগে। তিনি বলেন, নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাদকে তার একসময় উপভোগ করা প্রাধান্যে পুনরুদ্ধার করা। তবে, এই প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হয়েছে এবং সমসাময়িক নিওলিবারাল পুঁজিবাদ (neoliberal capitalism) ধীরে ধীরে একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় তৈরি করেছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে বাড়তি অসাম্য (increased inequalities), সামাজিক বিভাজন (societal divisions), অর্থনৈতিক দুর্দশা (economic misery) এবং অর্থবহ রাজনীতির (meaningful politics) অভাব দেখা দিয়েছে।

প্রাথমিক ইতিহাস

ওয়াল্টার লিপম্যান কলোকিয়াম

গ্রেট ডিপ্রেশনের (The Great Depression) বা মহামন্দার ১৯৩০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস করেছিল এবং উচ্চ বেকারত্ব এবং ব্যাপক দারিদ্র্য সৃষ্টি করেছিল। সেই সময়ে গ্রেট ডিপ্রেশনকে এটিকে অর্থনৈতিক উদারনীতির (economic liberalism) একটি ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হত। এই ক্ষতিগ্রস্ত মতাদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য, ২৫ জন উদারনৈতিক বুদ্ধিজীবীদের একটি দল, যার মধ্যে ওয়াল্টার লিপম্যান (Walter Lippmann), ফ্রিডরিখ হায়েক (Friedrich Hayek), লুডউইগ ফন মিজেস (Ludwig von Mises), উইলহেলম রোপকে (Wilhelm Röpke), আলেকজান্ডার রুস্টো (Alexander Rüstow), এবং লুইস রুজিয়ে (Louis Rougier) এর মতো বিশিষ্ট একাডেমিক এবং সাংবাদিকরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, ওয়াল্টার লিপম্যান কলোকিয়াম (Walter Lippmann Colloquium) সংগঠিত করেন। এই কলোকিয়ামের নামকরণ করা হয় লিপম্যানের সম্মানে, তার প্রো-মার্কেট বই An Inquiry into the Principles of the Good Society এর ফরাসি অনুবাদের প্রকাশনার নামে। ১৯৩৮ সালের আগস্ট মাসে প্যারিসে মিলিত হয়ে তারা একটি নতুন উদারনৈতিক প্রকল্পের আহ্বান জানায়, যার জন্য “নিওলিবারালিজম” (neoliberalism) শব্দটি প্রথমবার ব্যবহার করা হয়।

যদিও বেশিরভাগই সম্মত হয়েছিল যে লাসে-ফেয়ার অর্থনীতি (laissez-faire economics) প্রচারকারী বর্তমান উদারনীতি ব্যর্থ হয়েছে, রাষ্ট্রের সঠিক ভূমিকা নিয়ে গভীর মতবিরোধ দেখা দেয়। রুস্টো (Rüstow) এবং লিপম্যানকে (Lippmann) কেন্দ্র করে থাকা একটি দল “সত্যিকারের (তৃতীয় পথ) নিওলিবারালদের” (true (third way) neoliberals) জন্য অর্থনীতির উপর শক্তিশালী রাষ্ট্র তত্ত্বাবধানের আহ্বান জানায়, অন্যদিকে মিজেস (Mises) এবং হায়েককে (Hayek) কেন্দ্র করে থাকা একটি পুরানো স্কুলের উদারনৈতিক দল কেবলমাত্র বাজারে প্রবেশের বাধা দূর করার জন্য রাষ্ট্রের বৈধ ভূমিকার উপর জোর দেয়। রুস্টো (Rüstow) লিখেছিলেন যে হায়েক এবং মিজেস সেই উদারনীতির অবশিষ্টাংশ যা গ্রেট ডিপ্রেশন সৃষ্টি করেছিল, অন্যদিকে মিজেস (Mises) অন্য দলের সমালোচনা করে বলেছিলেন যে তারা যে অর্ডোলিবারালিজম (ordoliberalism) প্রচার করেছিল তা সত্যিকার অর্থে “অর্ডো-হস্তক্ষেপবাদ” (ordo-interventionism)।

(অর্ডোলিবারালিজম নিয়ে পরে লেখা হয়েছে)

মতবিরোধ এবং তহবিলের অভাবে, কলোকিয়াম প্রধানত অকার্যকর ছিল। নিওলিবারাল ধারণাগুলি প্রচারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা, যেমন কলোকিয়ামের অংশগ্রহণকারী উইলহেলম রোপকে (Wilhelm Röpke) এর একটি নিওলিবারাল ধারণাগুলির পত্রিকা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) প্রাদুর্ভাবের কারণে কলোকিয়ামের প্রচেষ্টা চাপা পড়েছিল এবং প্রায়শই ভুলে যাওয়া হয়েছিল। তবুও, কলোকিয়াম নিওলিবারাল আন্দোলনের প্রথম সভা হিসেবে কাজ করেছিল। এটি পরবর্তীকালে যুদ্ধের পরে অনেক উপস্থিত সদস্যের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মন্ট পেলেরিন সোসাইটির (Mont Pelerin Society) অধিকতর সফল প্রচেষ্টার পূর্বসূরী হিসেবে কাজ করেছিল। মন্ট পেলেরিন সোসাইটি নিওলিবারাল চিন্তাধারার বিকাশ এবং প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এবং বিশ্বব্যাপী নীতি প্রণেতাদের প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়।

মন্ট পেলেরিন সোসাইটি

নিওলিবারালিজমের গুরুত্ব মন্ট পেলেরিন সোসাইটি (Mont Pelerin Society) প্রতিষ্ঠার সাথে ১৯৪৭ সালে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে ফ্রিডরিখ হায়েক (Friedrich Hayek), মিল্টন ফ্রিডম্যান (Milton Friedman), কার্ল পপার (Karl Popper), জর্জ স্টিগলার (George Stigler) এবং লুডউইগ ভন মিজেস (Ludwig von Mises) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বার্ষিক সভাগুলোতে এই সোসাইটি ক্লাসিক্যাল লিবারাল এবং নিওলিবারাল বুদ্ধিজীবীদের একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। প্রথম সম্মেলনটি ১৯৪৭ সালে অনুষ্ঠিত হয় এবং তা প্রায় অর্ধেক আমেরিকান অংশগ্রহণকারী নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তবে ১৯৫১ সালের মধ্যে ইউরোপীয়রা নেতৃত্বে আসেন এবং ইউরোপ এই সম্প্রদায়ের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

মন্ট পেলেরিন সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এমন একটি সময়ে যখন বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বাড়ছিল এবং নিওলিবারালদের নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করার কয়েকটি পথ ছিল। সোসাইটি নিওলিবারালদের জন্য একটি “র‌্যালিং পয়েন্ট” হয়ে ওঠে, যেমন মিল্টন ফ্রিডম্যান উল্লেখ করেছেন, উদারনীতিবাদ এবং পুঁজিবাদের বিচ্ছিন্ন সমর্থকদের একত্রিত করে। তারা বিশ্বাস করত যে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বিকশিত বিশ্বে সমষ্টিবাদী প্রবণতা থেকে হুমকির সম্মুখীন ছিল, যা তারা তাদের লক্ষ্য বিবৃতিতে তুলে ধরেছিলেন।

সভ্যতার কেন্দ্রীয় মূল্যবোধগুলি (central values of civilization) বিপদের মধ্যে রয়েছে। পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে মানব মর্যাদা (human dignity) এবং স্বাধীনতার (freedom) প্রয়োজনীয় শর্তগুলি ইতিমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অন্যান্য অঞ্চলে, এগুলি বর্তমান নীতির প্রবণতার (current tendencies of policy) বিকাশ থেকে ক্রমাগত হুমকির মুখে রয়েছে। ব্যক্তি (individual) এবং স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীর (voluntary group) অবস্থান ইচ্ছেমতো ক্ষমতার প্রসারণের (extensions of arbitrary power) দ্বারা ধীরে ধীরে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এমনকি পশ্চিমা মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান অধিকার, যেমন চিন্তার স্বাধীনতা (freedom of thought) এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা (freedom of expression) সংখ্যালঘু অবস্থানে সহনশীলতার অধিকার (privilege of tolerance) দাবি করে এমন মতবাদের প্রসারের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, যা কেবল একটি ক্ষমতার অবস্থান (position of power) প্রতিষ্ঠা করতে চায় যাতে তারা তাদের নিজস্ব মতাদর্শ ব্যতীত অন্য সব দৃষ্টিভঙ্গিকে দমন এবং নিশ্চিহ্ন করতে পারে। এই গোষ্ঠী মনে করে যে এই বিকাশগুলি এমন একটি ইতিহাসের দৃষ্টিভঙ্গির বৃদ্ধি দ্বারা উৎসাহিত হয়েছে যা সমস্ত পরম নৈতিক মানদণ্ডকে (absolute moral standards) অস্বীকার করে এবং আইন শাসনের (rule of law) ইচ্ছাকৃততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এছাড়াও, তারা বিশ্বাস করে যে ব্যক্তিগত সম্পত্তি (private property) এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারের (competitive market) উপর আস্থার পতনের ফলে এই প্রবণতাগুলি উৎসাহিত হয়েছে। এই গোষ্ঠীর একমাত্র লক্ষ্য হল সাধারণ আদর্শ এবং বিস্তৃত ধারণাগুলিতে অনুপ্রাণিত মনগুলির মধ্যে মত বিনিময়ের (exchange of views) মাধ্যমে মুক্ত সমাজের সংরক্ষণ এবং উন্নতিতে অবদান রাখা।

সোসাইটি (Mont Pelerin Society) একটি নিওলিবারাল বিকল্প বিকাশ করতে চেয়েছিল, যা একদিকে গ্রেট ডিপ্রেশনের (Great Depression) সময় ধ্বসে পড়া লাসে-ফেয়ার (laissez-faire) এর এবং অন্যদিকে নিউ ডিল উদারনীতি (New Deal liberalism) এবং ব্রিটিশ সামাজিক গণতন্ত্রের (British social democracy) সমষ্টিবাদী প্রবণতাগুলির (যা তাদের মতে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জন্য হুমকি ছিল) বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। তারা বিশ্বাস করত যে শাস্ত্রীয় উদারনীতি ব্যর্থ হয়েছে কারণ এটি ধারণাগত ত্রুটিতে পূর্ণ ছিল যা শুধুমাত্র একই রকম মানসিকতা সম্পন্ন বুদ্ধিজীবীদের একটি গভীর আলোচনার মাধ্যমে নির্ণয় এবং সংশোধন করা যেতে পারে। তবে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল যে উদারনীতির ব্যক্তিবাদ এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতে হবে এবং সমষ্টিবাদে পরিণত হওয়া উচিত নয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নিওলিবারাল প্রবণতা

মন্ট পেলেরিন সোসাইটি (Mont Pelerin Society) গঠনের পর কয়েক দশক ধরে, সোসাইটির ধারণাগুলি রাজনৈতিক নীতির মূলধারার বাইরে ছিল, কিছু সংখ্যক চিন্তাকেন্দ্র (think-tanks) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ ছিল এবং শুধুমাত্র জার্মানির অর্ডোলিবারালদের (ordoliberals) সাথে সীমিত সাফল্য অর্জন করেছিল, যারা অর্থনীতিতে শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রভাবের প্রয়োজনীয়তা বজায় রেখেছিল। ১৯৭০-এর দশকের একাধিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং সংকট না আসা পর্যন্ত নিওলিবারাল নীতির প্রস্তাবগুলি ব্যাপকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। এই সময়ের মধ্যে, নিওলিবারাল চিন্তাধারা বিবর্তিত হয়েছিল। মন্ট পেলেরিন সোসাইটির প্রাথমিক নিওলিবারাল ধারণাগুলি বড় হতাশার (Great Depression) পরে সরকারী হস্তক্ষেপ বৃদ্ধির প্রবণতা এবং লাসে-ফেয়ার অর্থনীতির মধ্যে একটি মধ্যপন্থা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল যা অনেকেই বিশ্বাস করেছিল যে এই মহামন্দা ঘটিয়েছে।

মিল্টন ফ্রিডম্যান তার প্রাথমিক প্রবন্ধ “Neo-liberalism and Its Prospects” এ লিখেছিলেন, “নিওলিবারালিজম ঊনবিংশ শতাব্দীর উদারপন্থী ব্যক্তির মৌলিক গুরুত্বের ওপর জোর দেবে, তবে এটি এই শেষের জন্য মাধ্যম হিসেবে ঊনবিংশ শতাব্দীর লাসে-ফেয়ার লক্ষ্যকে প্রতিস্থাপন করবে প্রতিযোগিতামূলক শৃঙ্খলা” এর লক্ষ্যে, যা “ব্যবস্থাকে পুলিশ করতে, প্রতিযোগিতার জন্য অনুকূল শর্ত স্থাপন করতে এবং একচেটিয়া প্রতিরোধ করতে, একটি স্থিতিশীল মুদ্রার কাঠামো প্রদান করতে এবং তীব্র দুঃখ এবং দুর্দশা উপশম করতে” সীমিত রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ প্রয়োজন”। ১৯৭০-এর দশকের মধ্যে, নিওলিবারাল চিন্তাধারা – যার মধ্যে ফ্রিডম্যানের চিন্তাধারাও অন্তর্ভুক্ত ছিল – প্রায় একচেটিয়াভাবে বাজার উদারকরণ (market liberalization) এবং অর্থনীতিতে প্রায় সব ধরনের রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় নিবদ্ধ ছিল।

নিওলিবারাল সংস্কারের অন্যতম প্রাথমিক এবং প্রভাবশালী পরিবর্তনটি ১৯৭০-এর দশকের শুরুর দিকে চিলিতে একটি অর্থনৈতিক সংকটের পর ঘটেছিল। প্রেসিডেন্ট সালভাদর অ্যালেন্দের অধীনে কয়েক বছর ধরে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণের পর, ১৯৭৩ সালের অভ্যুত্থান যা একনায়ক অগাস্টো পিনোচেটের অধীনে একটি সামরিক জান্তা প্রতিষ্ঠা করেছিল, ফলে চিলিয়ান অর্থনীতিবিদদের একটি দল দ্বারা প্রস্তাবিত একাধিক বিস্তৃত নিওলিবারাল অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়িত হয়, যাকে “শিকাগো বয়েজ” (Chicago Boys) বলা হয়। এই “নিওলিবারাল প্রকল্প” ছিল “নিওলিবারাল রাষ্ট্র গঠনের প্রথম পরীক্ষা” এবং অন্যত্র নিওলিবারাল সংস্কারের জন্য একটি উদাহরণ প্রদান করেছিল।

১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে, রিগান প্রশাসন এবং থ্যাচার সরকারের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে স্থবির মুদ্রাস্ফীতি (stagflation) মোকাবিলায় একাধিক নিওলিবারাল অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়িত হয়। নিওলিবারাল নীতিগুলি গ্রেট রিসেশন পর্যন্ত আমেরিকান এবং ব্রিটিশ রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে। ব্রিটিশ এবং আমেরিকান সংস্কারের পর, নিওলিবারাল নীতিগুলি বিদেশে রপ্তানি করা হয়, ল্যাটিন আমেরিকা, এশিয়া-প্যাসিফিক, মধ্যপ্রাচ্য এবং চীন উল্লেখযোগ্য নিওলিবারাল সংস্কার বাস্তবায়ন করে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund) এবং বিশ্ব ব্যাংক (World Bank) অনেক উন্নয়নশীল দেশে ঋণের উপর সংস্কার প্রয়োজনীয়তা চাপিয়ে দিয়ে, একটি প্রক্রিয়া হিসাবে কাঠামোগত সমন্বয়ের (structural adjustment) মাধ্যমে নিওলিবারাল সংস্কারগুলি উৎসাহিত করে।

ইউরোপ

জার্মানি

প্রথমে পশ্চিম জার্মানিতে (West Germany) নিওলিবারাল (neoliberal) ধারণা বাস্তবায়িত হয়েছিল। লুডভিগ এরহার্ড (Ludwig Erhard) ও তাঁর আশেপাশের অর্থনীতিবিদরা ১৯৩০ এবং ১৯৪০-এর দশকে যে তত্ত্বগুলি তৈরি করেছিলেন, তা পশ্চিম জার্মানির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (Second World War) পর পুনর্গঠনে অবদান রেখেছিল। এরহার্ড মন্ট পেলারিন সোসাইটির (Mont Pelerin Society) সদস্য ছিলেন এবং অন্যান্য নিওলিবারালদের (neoliberals) সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে তাকে সাধারণত নিওলিবারাল হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় এবং তিনি এই শ্রেণীবিভাগ মেনে নিয়েছিলেন।

অর্ডোলিবারেল ফ্রাইবুর্গ স্কুল (ordoliberal Freiburg School) ছিল আরও বাস্তবমুখী। জার্মান নিওলিবারালরা (German neoliberals) স্বীকার করেছিলেন যে প্রতিযোগিতা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটায়। তবে তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে লেসে-ফেয়ার (laissez-faire) রাষ্ট্রনীতি প্রতিযোগিতাকে বাধা দেয়, কারণ শক্তিশালী দুর্বলকে গ্রাস করে এবং একচেটিয়া এবং কার্টেলগুলি প্রতিযোগিতার স্বাধীনতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। তারা একটি সু-উন্নত আইনগত ব্যবস্থা এবং সক্ষম নিয়ন্ত্রক যন্ত্রপাতির সমর্থন করেছিল। যদিও তারা সম্পূর্ণ ব(Keynesian) কর্মসংস্থান নীতি বা বিস্তৃত কল্যাণ রাষ্ট্রের (welfare state) বিরোধিতা করেছিল, জার্মান নিওলিবারাল তত্ত্বটি ছিল অর্থনৈতিক দক্ষতার সাথে মানবিক এবং সামাজিক মূল্যবোধকে সমানভাবে স্থাপন করার ইচ্ছা। আলফ্রেড মুলার-আর্মাক (Alfred Müller-Armack) “সামাজিক বাজার অর্থনীতি” (social market economy) শব্দগুচ্ছটি তৈরি করেছিলেন যাতে ধারণাটির সাম্যবাদী এবং মানবিক দিকটি জোর দেওয়া যায়। ওয়াল্টার ইউকেন (Walter Eucken) বলেছিলেন যে “সামাজিক নিরাপত্তা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার আমাদের সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ উদ্বেগ।”

এরহার্ড (Erhard) জোর দিয়েছিলেন যে বাজার নিজেই সামাজিক (social) এবং এটি করতে আলাদা কিছু করার প্রয়োজন নেই। তিনি আশা করেছিলেন যে ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধি জনগণকে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা স্বনির্ভরতার মাধ্যমে পরিচালনা করতে সক্ষম করবে এবং বিস্তৃত কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা শেষ করবে। ভল্কস্কাপিটালিজম (Volkskapitalismus) নামে কিছু প্রচেষ্টা ছিল ব্যক্তিগত সঞ্চয় বাড়ানোর জন্য। যদিও জনসাধারণের বৃদ্ধ বয়সের বীমার গড় অবদান বেশ কম ছিল, তবে এটি এখনও জার্মান জনসংখ্যার জন্য বৃদ্ধ বয়সের আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল। তাই উদারনৈতিক বক্তৃতা সত্ত্বেও ১৯৫০-এর দশকে কল্যাণ রাষ্ট্রের একটি “অনিচ্ছুক সম্প্রসারণ” দেখা গিয়েছিল। ১৯৫৭ সালের পেনশন সংস্কার জার্মান কল্যাণ রাষ্ট্রের একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ এনেছিল যা ইতিমধ্যে ওটো ভন বিসমার্কের (Otto von Bismarck) অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রস্টউ (Rüstow), যিনি “নিওলিবারাল” (neoliberalism) লেবেলটি তৈরি করেছিলেন, সেই উন্নয়ন প্রবণতাটি সমালোচনা করেছিলেন এবং একটি আরও সীমিত কল্যাণ কর্মসূচির জন্য চাপ দিয়েছিলেন।

হায়েক (Hayek) “সামাজিক বাজার অর্থনীতি” (social market economy) শব্দটি পছন্দ করেননি, তবে ১৯৭৬ সালে তিনি বলেছিলেন যে তার কিছু বন্ধু জার্মানিতে সেই ধরণের সামাজিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সফল হয়েছিলেন যা তিনি প্রচার করছিলেন। হায়েকের দৃষ্টিতে, সামাজিক বাজার অর্থনীতির বাজার অর্থনীতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের (social justice) লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ লক্ষ্য। মন্ট পেলারিন সোসাইটিতে (Mont Pelerin Society) জার্মান নিওলিবারালদের (German neoliberals) সঙ্গে তার বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, লুডভিগ ভন মিজেস (Ludwig von Mises) বলেছিলেন যে এরহার্ড (Erhard) এবং মুলার-আর্মাক (Müller-Armack) জার্মান অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি মহান উদারপন্থী কাজ করেছিলেন এবং একে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি পাঠ” বলে অভিহিত করেছিলেন। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, মিজেস বিশ্বাস করেছিলেন যে অর্ডোলিবারেলরা (ordoliberals) প্রায় সোশ্যালিস্টদের মতোই খারাপ। হ্যান্স হেলউইগের (Hans Hellwig) এরহার্ড মন্ত্রক এবং অর্ডোলিবারেলদের হস্তক্ষেপকারী অতিরিক্ততা সম্পর্কে অভিযোগের উত্তরে, মিজেস লিখেছিলেন: “সামাজিক বাজার অর্থনীতির রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের প্রকৃত চরিত্র সম্পর্কে আমার কোনো ভ্রান্তি নেই”। মিজেসের মতে, এরহার্ডের শিক্ষক ফ্রাঞ্জ ওপেনহাইমার (Franz Oppenheimer) “প্রেসিডেন্ট কেনেডির হার্ভার্ড পরামর্শদাতাদের (Schlesinger, Galbraith, etc.) নতুন ফ্রন্টিয়ার লাইনের শিক্ষা দিয়েছিলেন”।

জার্মানিতে, প্রথমে নিওলিবারালিজম (neoliberalism) ছিল অর্ডোলিবারেলিজম (ordoliberalism) এবং সামাজিক বাজার অর্থনীতি (social market economy) উভয়েরই সমার্থক। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মূল শব্দ নিওলিবারালিজম (neoliberalism) ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল কারণ সামাজিক বাজার অর্থনীতি (social market economy) ছিল অনেক বেশি ইতিবাচক শব্দ এবং ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকের অর্থনৈতিক অলৌকিক (Wirtschaftswunder) মানসিকতায় এটি আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছিল।

জার্মানিতে অর্ডোলিবারালিজম

অর্ডোলিবারালিজম (Ordoliberalism) হলো অর্থনৈতিক উদারপন্থার (economic liberalism) জার্মান রূপ যা মুক্ত বাজারের (free market) সম্ভাব্য ফলাফলের কাছাকাছি ফলাফল নিশ্চিত করতে সরকারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়, তবে এটি কল্যাণ রাষ্ট্রের (welfare state) পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান নেয় না।

অর্ডোলিবারাল ধারণা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মান সামাজিক বাজার অর্থনীতি (social market economy) এবং এর সাথে যুক্ত অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের (Wirtschaftswunder) ভিত্তি স্থাপন করেছিল। “অর্ডোলিবারালিজম” (Ordoliberalismus) শব্দটি ১৯৫০ সালে হিরো মোয়েলার (Hero Moeller) দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং এটি একাডেমিক জার্নাল ORDO-র সাথে সম্পর্কিত।

অর্ডোলিবারালরা নিজেদের ক্লাসিক্যাল লিবারালদের (classical liberals) থেকে পৃথক করে। বিশেষত, ওয়াল্টার ইউকেন (Walter Eucken), যিনি ফ্রান্স বোহম (Franz Böhm) এর সাথে অর্ডোলিবারালিজম এবং ফ্রাইবার্গ স্কুলের (Freiburg School) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, তিনি নিওলিবারালিজম (neoliberalism) প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

অর্ডোলিবারালরা সামাজিক বাজার অর্থনীতির (social market economy) ধারণা প্রচার করেছিলেন, যা বাজারের প্রতি রাষ্ট্রের একটি শক্তিশালী ভূমিকা আহ্বান করে এবং যা নিওলিবারালিজম পরিভাষার সাথে যুক্ত ধারণাগুলির থেকে অনেক দিক দিয়ে ভিন্ন। এটি একটি কৌতুকজনক ঘটনা যে নিওলিবারালিজম শব্দটি প্রথম ১৯৩৮ সালে কলোক ওয়াল্টার লিপম্যান (Colloque Walter Lippmann) এ আলেকজান্ডার রুস্তো (Alexander Rüstow) দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল, যিনি আজকে একজন অর্ডোলিবারাল হিসেবে বিবেচিত হন।

সংযুক্ত ইতিহাসের কারণে, অর্ডোলিবারালিজমকে কখনও কখনও “জার্মান নিওলিবারালিজম” (German neoliberalism) বলা হয়। এটি বিতর্ক, আলোচনা এবং উভয় অর্থনৈতিক স্কুলের সমালোচনায় পরিভাষা এবং ধারণাগুলির ঘন ঘন বিভ্রান্তি এবং মিশ্রণের দিকে পরিচালিত করে। ১৯৯১ সালে রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ মিশেল অ্যালবার্ট (Michel Albert) ক্যাপিটালিজম কন্ট্রা ক্যাপিটালিজম (Capitalisme Contre Capitalisme) প্রকাশ করেন এবং ২০০১ সালে পিটার এ. হল (Peter A. Hall) এবং ডেভিড সোস্কিস (David Soskice) ভ্যারাইটি অফ ক্যাপিটালিজম (Varieties of Capitalism) প্রকাশ করেন এবং উভয়েই ধারণাগুলিকে পৃথক করে নতুন পরিভাষা লিবারাল মার্কেট ইকোনমি (liberal market economy) এবং কোঅর্ডিনেটেড মার্কেট ইকোনমি (coordinated market economy) বিকশিত করেন যাতে নিওলিবারালিজম এবং অর্ডোলিবারালিজমের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত হয়।

অর্ডোলিবারালিজমের বিকাশ

এই তত্ত্বটি ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ফ্রাইবার্গ স্কুলের (Freiburg School) জার্মান অর্থনীতিবিদ এবং আইন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বিকশিত হয়েছিল, যেমন ওয়াল্টার ইউকেন, ফ্রান্স বোহম, হান্স গ্রসম্যান-ডর্থ (Hans Grossmann-Doerth) এবং লিওনার্ড মিক্স (Leonhard Miksch)।

অর্ডোলিবারাল ধারণাগুলি (কিছু পরিবর্তনের সাথে) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মান সামাজিক বাজার অর্থনীতি তৈরির দিকে পরিচালিত করেছিল। তারা বিশেষভাবে জার্মানিতে একটি দৃঢ় প্রতিযোগিতা আইন (strong competition law) গঠনে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছিলেন। দৃঢ় প্রতিযোগিতা আইন (strong competition law) বলতে এমন আইন বোঝায় যা বাজারে প্রতিযোগিতার স্বাস্থ্যকর এবং ন্যায্য পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করে। এই আইনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার নিয়ম ভঙ্গকারী একচেটিয়া এবং শক্তিশালী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যাতে বাজারে ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোও টিকে থাকতে পারে এবং ভোক্তারা উপকৃত হয়। তবে সামাজিক বাজার অর্থনীতি এমন অর্থনীতিতে প্রয়োগ করা হয়েছিল যেখানে কর্পোরেটিজম ইতিমধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল, তাই অর্ডোলিবারাল ধারণাগুলি তত্ত্বের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠাতারা যতটা কল্পনা করেছিলেন ততটা বিস্তৃত ছিল না।

১৯৬০-এর দশক থেকে, অর্থনীতি এবং আইনশাস্ত্রে অর্ডোলিবারাল প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে; তবে অনেক জার্মান অর্থনীতিবিদ আজও নিজেদের অর্ডোলিবারাল হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেন, ORDO এখনও প্রকাশিত হয় এবং ফ্রাইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ এখনও অর্ডোলিবারালিজম শেখায়। এছাড়াও, কিছু ইনস্টিটিউট এবং ফাউন্ডেশন যেমন ওয়াল্টার ইউকেন ইনস্টিটিউট (Walter Eucken Institut) এবং স্টিফটং অর্ডনুংসপলিটিক (Stiftung Ordnungspolitik) অর্ডোলিবারাল ঐতিহ্যে নিযুক্ত রয়েছে।

জার্মানির ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (Free Democratic Party, FDP) একটি ঐতিহ্যগত এবং অর্ডোলিবারালিজমের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সমর্থক। এই দলটি উইলহেলম রোপকে (Wilhelm Röpke) এবং আলেকজান্ডার রুস্তোর অর্থনৈতিক তত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। ঐতিহাসিক FDP দলের বিশিষ্ট সদস্য অটো গ্রাফ ল্যাম্বসডর্ফ (Otto Graf Lambsdorff), যিনি ফেডারেল অর্থনীতির মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, বিশেষভাবে অর্ডোলিবারালিজমের (ordoliberalism) প্রবক্তা ছিলেন।

বাস্তবায়ন

১৯৫৬ সালে লুডউইগ এরহার্ড (Ludwig Erhard) এবং কনরাড অ্যাডেনাওয়ার (Konrad Adenauer) এর অর্ডোলিবারালিজমের (Ordoliberalism) ধারণাগুলি যুদ্ধ-পরবর্তী পশ্চিম জার্মানির অর্থনৈতিক মডেলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। জার্মানিতে অর্ডোলিবারালিজম সামাজিক বাজার অর্থনীতি (social market economy) নামে পরিচিত হয়।

জার্মানিতে অর্ডোলিবারাল মডেলটি কনরাড অ্যাডেনাওয়ারের (Konrad Adenauer) সরকারের অধীনে শুরু হয়েছিল। তার সরকারের অর্থনীতি মন্ত্রী লুডউইগ এরহার্ড, একজন পরিচিত অর্ডোলিবারাল এবং ফ্রাইবার্গ স্কুলের (Freiburg School) অনুগামী ছিলেন। অ্যাডেনাওয়ারের অধীনে, কিছু মূল্য নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং ছোট ব্যবসা এবং কর্পোরেশনের উপর কর কমানো হয়েছিল। তাছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা (social security) এবং পেনশন (pensions) বৃদ্ধি করা হয়েছিল যাতে একটি সামাজিক ভিত্তি আয় (social base income) প্রদান করা যায়। অর্ডোলিবারালরা বলেছেন যে এই নীতিগুলি অর্থনৈতিক অলৌকিক ঘটনা (Wirtschaftswunder) ঘটিয়েছে।

তত্ত্ব

অর্ডোলিবারাল তত্ত্বের (Ordoliberal theory) মতে, রাষ্ট্রকে অর্থনীতির জন্য একটি যথাযথ আইনগত পরিবেশ (legal environment) তৈরি করতে হবে এবং বাজারের নীতিগুলির (market principles) সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিযোগিতার একটি স্বাস্থ্যকর স্তর (healthy level of competition) বজায় রাখতে হবে। এটিই এর বৈধতার ভিত্তি (foundation of its legitimacy)। উদ্বেগ হল যে, যদি রাষ্ট্র সক্রিয়ভাবে প্রতিযোগিতা উন্নীত করার পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে একচেটিয়া (monopoly) বা অলিগোপলি (oligopoly) শক্তি সহ ফার্মগুলি উদ্ভূত হবে, যা বাজার অর্থনীতির (market economy) দ্বারা প্রদত্ত সুবিধাগুলিকে ক্ষুণ্ণ করবে এবং সম্ভবত ভালো সরকারের (good government) ক্ষতি করবে, যেহেতু শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি (economic power) রাজনৈতিক শক্তিতে (political power) রূপান্তরিত হতে পারে।

স্টিফেন প্যাডজেটের (Stephen Padgett) মতে, “অর্ডোলিবারালিজমের (Ordoliberalism) একটি কেন্দ্রীয় মূলনীতি (central tenet) হল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় একটি স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত শ্রম বিভাজন (clearly defined division of labor), নির্দিষ্ট দায়িত্ব নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ করা। মুদ্রানীতি (monetary policy) একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (central bank) দায়িত্ব হওয়া উচিত যা মুদ্রা স্থিতিশীলতা (monetary stability) এবং নিম্ন মুদ্রাস্ফীতি (low inflation) নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং স্বাধীন অবস্থার (independent status) মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত। রাজস্ব ও ব্যয়ের ভারসাম্য (balancing tax revenue against government expenditure) রক্ষা করা সরকারের (government) কাজ, আর সমষ্টিগত অর্থনৈতিক নীতি (macro-economic policy) নিয়োগকর্তা (employers) ও ট্রেড ইউনিয়নদের (trade unions) কাজ।” রাষ্ট্রকে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (economic order) গঠন করতে হবে, অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াগুলি (economic processes) নির্দেশ করার পরিবর্তে, এবং অর্ডোলিবারালরা তাদের তত্ত্বগুলিকে সমর্থন করার জন্য নাৎসিবাদ (Nazism), কেইনসিয়ানিজম (Keynesianism) এবং সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের (Soviet socialism) তিনটি নেতিবাচক উদাহরণ ব্যবহার করেছিলেন। এটি সামষ্টিকতাবাদ (collectivism) এবং লাসে-ফেয়ার উদারপন্থার (laissez-faire liberalism) মধ্যে একটি তৃতীয় পথ (third way) হিসেবে বিবেচিত হয়।

অর্ডোলিবারালের সামাজিক বাজার ধারণা (social market idea) তৃতীয়-পন্থী সামাজিক গণতন্ত্রের (third-way social democracy) মতো, যেমন নিউ লেবার সরকারের (New Labour government) অধীনে, বিশেষ করে টনি ব্লেয়ারের (Tony Blair) প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়। তবে কয়েকটি প্রধান পার্থক্য রয়েছে। তারা উভয়েই সমাজতন্ত্র (socialism) এবং পুঁজিবাদের (capitalism) মধ্যে একটি মধ্যপন্থী অবস্থানের ধারণা (moderate stance) অনুসরণ করে, অর্ডোলিবারাল সামাজিক বাজার মডেল (social market model) প্রায়ই ন্যায্য প্রতিযোগিতা (fair competition) প্রতিষ্ঠার জন্য বেসরকারি উদ্যোগ (private enterprise) এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণকে (government regulation) একত্রিত করে, যেখানে তৃতীয়-পন্থী সামাজিক গণতন্ত্র মডেল একাধিক অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ মুক্তির (economic deregulation) দিকে নজর দেয়।

অর্ডোলিবারালরা ভাইটাল রিসোর্স যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ন্যূনতম কনফিগারেশন বা পরিবর্তনের (minimum configuration of vital resources) এবং প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন (progressive taxation) অনুসরণ করার জন্য পরিচিত। তারা জনসেবা (public services) এবং অন্যান্য পাবলিক ফার্ম যেমন টেলিযোগাযোগ পরিষেবা (telecommunication services) বেসরকারীকরণের (privatization) ওপর জোর দেয়; সম্পদের পুনর্বণ্টন (wealth redistribution) এবং ন্যূনতম মজুরি আইনকে (minimum wage laws) নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি হিসেবে বিবেচনা করে যা এই অর্থনৈতিক মডেল (economic model) এবং সামাজিক বাজার অর্থনীতির (social market economy) মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।

সমালোচনা

সেবাশ্চিয়ান ডুলিয়েন (Sebastian Dullien) এবং উলরিকে গ্যুরোট (Ulrike Guérot) এর মতে, অর্ডোলিবারালিজম জার্মানির ইউরোপীয় সার্বভৌম ঋণ সংকটে (European sovereign-debt crisis) পদ্ধতির কেন্দ্রে রয়েছে, যা প্রায়ই অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে।

উল্লেখ্য, ইউরোপীয় সার্বভৌম ঋণ সংকট (European sovereign-debt crisis) ২০০৯ সালের পর শুরু হয়, যখন ইউরোপের কিছু দেশ বিশেষ করে গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন এবং সাইপ্রাস, তাদের ঋণ পরিশোধ করতে অসুবিধায় পড়ে। এই সংকটটি ইউরোজোন (Eurozone) অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এবং ঋণগ্রস্ত দেশগুলির জন্য কঠোর ঋণ পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন হয়। অর্ডোলিবারালিজম (Ordoliberalism) হল একটি অর্থনৈতিক দর্শন যা বাজারের প্রতিযোগিতা এবং স্থিতিশীলতার উপর গুরুত্ব দেয় এবং মনে করে যে রাষ্ট্রের উচিত অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা নয় বরং সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। অর্ডোলিবারালিজমের মূল ধারণাগুলি হল কঠোর আর্থিক নীতি, ঋণ সীমাবদ্ধতা, এবং বাজেটের শৃঙ্খলা।  ডুলিয়েন (Dullien) এবং গ্যুরোট (Guérot) মনে করেন যে অর্ডোলিবারালিজম জার্মানির সার্বভৌম ঋণ সংকট মোকাবেলায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে কারণ:

  • কঠোর আর্থিক নীতি (Austerity Measures): জার্মানি ঋণগ্রস্ত দেশগুলির জন্য কঠোর আর্থিক নীতি এবং বাজেট কমানোর (budget cuts) পক্ষে ছিল। অর্ডোলিবারালিজমের তত্ত্ব অনুযায়ী, বাজেট ঘাটতি (budget deficit) কমানো এবং রাজস্ব ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। এর ফলে, ঋণগ্রস্ত দেশগুলিকে কঠোর আর্থিক সংস্কার (austerity reforms) করতে হয়েছে, যা প্রায়ই স্থানীয় অর্থনীতিতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।
  • ঋণ সীমাবদ্ধতা (Debt Limitations): অর্ডোলিবারালিজমের আরেকটি মূল নীতি হল ঋণের সীমাবদ্ধতা। জার্মানি এবং অন্যান্য ইউরোজোন দেশগুলি ঋণগ্রস্ত দেশগুলিকে ঋণ সীমাবদ্ধতা এবং বাজেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের ঋণ পুনর্গঠনের জন্য চাপ দিয়েছে।
  • প্রতিযোগিতা এবং স্থিতিশীলতা (Competition and Stability): অর্ডোলিবারালিজম প্রতিযোগিতা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর জোর দেয়। এর ফলে জার্মানি মনে করেছিল যে ঋণগ্রস্ত দেশগুলির উচিত তাদের অর্থনীতি আরও প্রতিযোগিতামূলক করা এবং সুশৃঙ্খল আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।

এই পদ্ধতির কারণে, ডুলিয়েন (Dullien) এবং গ্যুরোট (Guérot) মনে করেন যে জার্মানির অর্ডোলিবারাল নীতি প্রায়ই অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করেছে, কারণ এই নীতিগুলি স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছিল এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে।

যুক্তরাজ্য

১৯৭৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কনজারভেটিভ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার (Margaret Thatcher) একাধিক নিওলিবারাল নীতি (neoliberal policies) বাস্তবায়ন করেন, যার মধ্যে কর হ্রাস (tax reduction), বিনিময় হার সংস্কার (exchange rate reform), নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (deregulation) এবং বেসরকারীকরণ (privatisation) অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার উত্তরসূরি জন মেজর (John Major) এই নীতিগুলিকে অব্যাহত এবং সমর্থন করেন। যদিও লেবার পার্টি (Labour Party) এর বিরোধিতা করেছিল, কিছু পণ্ডিতের মতে, টনি ব্লেয়ারের (Tony Blair) অধীনে ১৯৯৭ সালে নিউ লেবার যুগে (New Labour era) লেবার পার্টি ক্ষমতায় ফিরে আসার পরও এই নীতিগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গৃহীত এবং অপরিবর্তিত ছিল।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মুক্ত বাজার চিন্তাকেন্দ্র এবং লবিং গ্রুপ অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউট (Adam Smith Institute), যা ১৯৭৭ সালে গঠিত হয়েছিল এবং উপরের উল্লিখিত নিওলিবারাল নীতিগুলির একটি প্রধান চালিকা শক্তি ছিল, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তাদের লিবার্টারিয়ান (libertarian) লেবেলকে নিওলিবারাল (neoliberal)-এ পরিবর্তন করে।

অর্থনীতিবিদ ডেনজাউ (Denzau) এবং রয় (Roy) এর মতে, “কেইন্সিয়ান (Keynesian) ধারণা থেকে নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) দিকে পরিবর্তন নিউ ডেমোক্র্যাট (New Democrats) এবং নিউ লেবারের (New Labour) উভয়ের রাজস্ব নীতি কৌশলকে প্রভাবিত করেছে… রিগান (Reagan), থ্যাচার (Thatcher), ক্লিনটন (Clinton) এবং ব্লেয়ার (Blair) সকলেই মোটামুটি একই নিওলিবারাল বিশ্বাস গ্রহণ করেছিলেন।”

উত্তর আমেরিকা

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) সাম্প্রতিক ইতিহাসগুলি প্রায়শই ১৯৫০-এর দশকের নগর পুনর্নবীকরণ নীতিগুলির সাথে এর উৎপত্তি যুক্ত করে। তবে মার্ক্সবাদী অর্থনৈতিক ভূগোলবিদ ডেভিড হার্ভে (David Harvey) যুক্তি দেন যে, ১৯৭০-এর দশকের জ্বালানি সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্রে নিওলিবারাল নীতিগুলির উত্থান ঘটে। তিনি বিশেষ করে লুইস পাওয়েলের (Lewis Powell) ১৯৭১ সালের গোপন মেমোরেন্ডামকে চেম্বার অফ কমার্সে (Chamber of Commerce) এর রাজনৈতিক উত্থানের মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এটি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের কাছে একটি আহ্বান ছিল যাতে মুক্ত বাজার ব্যবস্থার সমালোচনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। এটি নিওলিবারাল নীতিগুলির পক্ষে কনজারভেটিভ এবং লিবার্টারিয়ান সংগঠন ও চিন্তাকেন্দ্রগুলির উত্থানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যেমন বিজনেস রাউন্ডটেবিল (Business Roundtable), দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশন (The Heritage Foundation), ক্যাটো ইনস্টিটিউট (Cato Institute), সিটিজেনস ফর এ সাউন্ড ইকোনমি (Citizens for a Sound Economy), অ্যাকিউরেসি ইন অ্যাকাডেমিয়া (Accuracy in Academia) এবং ম্যানহাটন ইনস্টিটিউট ফর পলিসি রিসার্চ (Manhattan Institute for Policy Research)। পাওয়েলের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি একটি আদর্শগত যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠছিল এবং তিনি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছিলেন যা রালফ ন্যাডার (Ralph Nader) এবং বড় ব্যবসায়ের বিরোধীদের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় ধারণাগুলির প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করতে পারে।

প্রারম্ভিক নিওলিবারালদের মধ্যে ছিলেন মাইকেল কিন্সলি (Michael Kinsley), চার্লস পিটার্স (Charles Peters), জেমস ফ্যালোজ (James Fallows), নিকোলাস লেম্যান (Nicholas Lemann), বিল ব্র্যাডলি (Bill Bradley), ব্রুস বাবিট (Bruce Babbitt), গ্যারি হার্ট (Gary Hart), এবং পল টসাঙ্গাস (Paul Tsongas)। এদের প্রায়ই “আটারি ডেমোক্র্যাটস” (Atari Democrats) বলা হতো, যারা আমেরিকান লিবারালিজমকে (American liberalism) পুনর্গঠিত করতে সাহায্য করেছিলেন, যার চূড়ান্ত রূপ ১৯৯২ সালে বিল ক্লিনটনের (Bill Clinton) নির্বাচনের মাধ্যমে দেখা যায়। এই নতুন লিবারালরা মধ্য শতাব্দীর প্রগতিশীল শ্রম সংগঠক ওয়াল্টার রিউথার (Walter Reuther), অর্থনীতিবিদ জন কেনেথ গ্যালব্রেইথ (John Kenneth Galbraith) বা এমনকি প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ আর্থার শ্লেসিঞ্জারের (Arthur Schlesinger) নীতি ও কর্মসূচির সাথে একমত ছিলেন না।

নিওলিবারালিজমের প্রাথমিক শিকড় ১৯৭০-এর দশকে কার্টার প্রশাসনের (Carter administration) সময় স্থাপিত হয়, যখন ট্রাকিং, ব্যাংকিং এবং এয়ারলাইন শিল্পের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (deregulation) হয়েছিল, এবং ফেডারেল রিজার্ভের (Federal Reserve) চেয়ারম্যান হিসেবে পল ভলকারকে (Paul Volcker) নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এই প্রবণতা ১৯৮০-এর দশকে রিগান প্রশাসনের (Reagan administration) সময় অব্যাহত থাকে, যার মধ্যে কর হ্রাস, প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, আর্থিক নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (financial deregulation) এবং বাণিজ্য ঘাটতির (trade deficit) সম্প্রসারণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৭০-এর দশকে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে আলোচনা করা সরবরাহ-পক্ষ অর্থনীতির (supply-side economics) ধারণাগুলি ১৯৮০ সালের যৌথ অর্থনৈতিক কমিটির প্রতিবেদনে (Joint Economic Committee report) চূড়ান্ত রূপ পায়। এটি রিগান প্রশাসন দ্বারা গৃহীত হয়, এবং কংগ্রেস রিগানের মূল প্রস্তাব অনুসরণ করে ১৯৮১ সালে ফেডারেল আয়কর ২৫% হ্রাস করে।

ক্লিনটন প্রশাসন (Clinton administration) নিওলিবারালিজমকে গ্রহণ করে NAFTA (North American Free Trade Agreement) এর পাসেজ সমর্থন করে, ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (deregulation of the financial sector) অব্যাহত রেখে কমোডিটি ফিউচার্স মডার্নাইজেশন অ্যাক্ট (Commodity Futures Modernization Act) এবং গ্লাস-স্টিগল অ্যাক্টের (Glass-Steagall Act) বাতিলের মাধ্যমে এবং পার্সোনাল রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড ওয়ার্ক অপর্চুনিটি অ্যাক্ট (Personal Responsibility and Work Opportunity Act) এর মাধ্যমে কল্যাণ রাষ্ট্রে কাটছাঁট করে। আমেরিকান ইতিহাসবিদ গ্যারি গার্স্টলে (Gary Gerstle) লিখেছেন যে, রিগান ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে নিওলিবারাল শৃঙ্খলার আদর্শিক স্থপতি ছিলেন, তবে ক্লিনটন ছিলেন এর মূল সুবিধাদাতা, যার ফলে ১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে এই শৃঙ্খলা প্রাধান্য পায়। ক্লিনটন প্রশাসনের নিওলিবারালিজম রিগানের নিওলিবারালিজম থেকে ভিন্ন ছিল কারণ ক্লিনটন প্রশাসন সামরিকবাদ, পারিবারিক মূল্যবোধ, বহুসংস্কৃতিবাদের বিরোধিতা এবং পরিবেশগত সমস্যাগুলির প্রতি অবহেলার বিষয়ে নব্য রক্ষণশীল অবস্থানগুলি থেকে নিওলিবারালিজমকে মুক্ত করেছিল।

নিউ ইয়র্কের সাংবাদিক জোনাথন চেইট (Jonathan Chait) ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নিওলিবারালদের দ্বারা হাইজ্যাক করা হয়েছে এমন অভিযোগকে অস্বীকার করেন, বলেছিলেন যে এর নীতিগুলি মূলত নিউ ডিল (New Deal) থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে। পরিবর্তে, চেইট বলেন যে এই অভিযোগগুলি মিথ্যা দ্বৈততার (false dichotomy) উপস্থাপনা থেকে উত্থিত হয়েছে, যা মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং সমাজতন্ত্রের মধ্যে ভুল পার্থক্য করে, মিশ্র অর্থনীতিকে উপেক্ষা করে। আমেরিকান নারীবাদী দার্শনিক ন্যান্সি ফ্রেজার (Nancy Fraser) বলেন যে আধুনিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি একটি “প্রগতিশীল নিওলিবারালিজম” (progressive neoliberalism) গ্রহণ করেছে, যা তিনি “আর্থিকীকরণ এবং মুক্তির প্রগতিশীল-নিওলিবারাল জোট” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। ইতিহাসবিদ ওয়াল্টার শেইডেল (Walter Scheidel) বলেন যে উভয় দলই ১৯৭০-এর দশকে মুক্ত বাজার পুঁজিবাদকে (free-market capitalism) প্রচার করার দিকে সরে এসেছিল, এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ১৯৯০-এর দশকে আর্থিক নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ বাস্তবায়নে সহায়ক ছিল।

২০০৮ সালের গ্রেট রিসেশনের (Great Recession) পর যুক্তরাষ্ট্রে নিওলিবারালিজমের প্রতি সমর্থন হ্রাস পায়, এবং কিছু লোক বিশ্বাস করে যে ট্রাম্পের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট প্রচারাভিযান (Trump’s 2016 presidential campaign) নিওলিবারাল বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সফল হয়েছিল। বামপন্থী বিশ্লেষকরা ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে একইভাবে এর বিরুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

লাতিন আমেরিকা

১৯৮০-এর দশকে, লাতিন আমেরিকার (Latin America) অনেক সরকার নিওলিবারালিজম (neoliberalism) নীতিগুলি গ্রহণ করেছিল।

চিলি

চিলি ছিল প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি যারা নিওলিবারাল (neoliberal) সংস্কার বাস্তবায়িত করেছিল। মার্ক্সবাদী অর্থনৈতিক ভূগোলবিদ ডেভিড হার্ভে (Marxist economic geographer David Harvey) ১৯৭০-এর দশকে চিলিতে ব্যাপক নিওলিবারাল (neoliberal) সংস্কারের বর্ণনা দিয়েছেন “নিওলিবারাল রাষ্ট্র গঠনের প্রথম পরীক্ষা” (the first experiment with neoliberal state formation) হিসাবে, যা পরে যুক্তরাজ্য (Britain) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (United States) নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) দিকে মোড় নেওয়ার জন্য সহায়ক প্রমাণ সরবরাহ করেছিল। একইভাবে, ভিনসেন্ট বেভিনস (Vincent Bevins) বলেছেন যে অগাস্টো পিনোশে (Augusto Pinochet) এর অধীনে চিলি “বিশ্বের প্রথম নিওলিবারাল অর্থনীতির (neoliberal economics) পরীক্ষামূলক ক্ষেত্র” হয়ে ওঠে।

চিলিতে নিওলিবারাল (neoliberal) নীতিগুলির দিকে মোড় নেওয়া শুরু হয়েছিল শিকাগো বয়েজ (Chicago Boys) দ্বারা, একটি নির্বাচিত চিলিয়ান ছাত্রদের দল যারা ১৯৫৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Chicago) অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করতে আমন্ত্রিত হয়েছিল। তারা সরাসরি মিল্টন ফ্রিডম্যান (Milton Friedman) এবং তার শিষ্য আর্নল্ড হারবারগারের (Arnold Harberger) অধীনে পড়াশোনা করেছিল এবং ফ্রিডরিখ হায়েকের (Friedrich Hayek) সাথে পরিচিত হয়েছিল। চিলিতে ফিরে আসার পর, তাদের নিওলিবারাল (neoliberal) নীতি প্রস্তাবনা – যা বিস্তৃত নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (deregulation), বেসরকারীকরণ (privatization), উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় সরকারি ব্যয়ের কাটছাঁট (reductions to government spending to counter high inflation) এবং অন্যান্য মুক্ত বাজার নীতিগুলির (free-market policies) উপর কেন্দ্রিত ছিল – কয়েক বছর ধরে চিলির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারার প্রান্তে ছিল, কারণ সালভাদর অয়েন্দে (Salvador Allende) এর প্রেসিডেন্সি (১৯৭০-১৯৭৩) অর্থনীতির একটি সমাজতান্ত্রিক পুনঃঅভিমুখতা নিয়ে আসে।

অয়েন্দের প্রেসিডেন্সির সময়, চিলি একটি গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি ১৫০% এর কাছাকাছি ছিল। দীর্ঘ সময়ের সামাজিক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার পর, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (United States) কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং গোপন চাপের পর, চিলির সশস্ত্র বাহিনী এবং জাতীয় পুলিশ একটি অভ্যুত্থানে (coup d’état) অয়েন্দে সরকারকে উৎখাত করে। তারা একটি দমনমূলক সামরিক জান্তা (repressive military junta) প্রতিষ্ঠা করে, যা বিরোধীতা সহিংসভাবে দমন করার জন্য পরিচিত, এবং সেনাবাহিনী প্রধান অগাস্টো পিনোশেকে জাতির সর্বোচ্চ প্রধান (Supreme Head) নিযুক্ত করে। তার শাসনকে পরে ১৯৮০-এর একটি বিতর্কিত গণভোটের (plebiscite) মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছিল, যা একটি নতুন সংবিধান (constitution) অনুমোদিত হয়েছিল যা পিনোশেকে আরও আট বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি (President) হিসাবে রাখার নিশ্চয়তা দিয়েছিল – বর্ধিত ক্ষমতার সাথে – যার পরে তিনি পুনর্নির্বাচন গণভোটের মুখোমুখি হবেন।

শিকাগো বয়েজ (Chicago Boys) সামরিক একনায়কত্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রভাব পায় এবং তারা ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করে। অয়েন্দের সমর্থিত ব্যাপক জাতীয়করণ (extensive nationalization) এবং কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক কর্মসূচির (centrally planned economic programs) বিপরীতে, শিকাগো বয়েজ ১৯৭০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে রাষ্ট্রের উদ্যোগগুলির দ্রুত এবং ব্যাপক বেসরকারীকরণ (privatization of state enterprises), নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (deregulation) এবং বাণিজ্য বাধার উল্লেখযোগ্য হ্রাস (reductions in trade barriers) করে। ১৯৭৮ সালে, শ্রম সম্পর্ক (labor relations), পেনশন (pensions), স্বাস্থ্য (health) এবং শিক্ষার (education) মতো ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা (competition) এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ (individualism) সঞ্চার করতে এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা আরও হ্রাস করার নীতি প্রবর্তিত হয়েছিল। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ব্যাংক (central bank) উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির মোকাবেলায় সুদের হার ৪৯.৯% থেকে ১৭৮% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।

এই নীতিগুলি শক থেরাপির (shock therapy) মতো কাজ করে, যা চিলিকে একটি সুরক্ষিত বাজার (protected market) এবং শক্তিশালী সরকারি হস্তক্ষেপের (strong government intervention) অর্থনীতি থেকে দ্রুত রূপান্তরিত করে একটি মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে (liberalized, world-integrated economy), যেখানে বাজার শক্তিগুলিকে বেশিরভাগ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের পথনির্দেশ করতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। মুদ্রাস্ফীতি (inflation) হ্রাস পায়, ১৯৭৪ সালে ৬০০% এর উপরে থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে ৫০% এর নিচে এবং ১৯৮২ সালের অর্থনৈতিক সংকটের (economic crisis) ঠিক আগে ১০% এর নিচে নেমে আসে; জিডিপি (GDP) প্রবৃদ্ধি ১০% বৃদ্ধি পায়। তবে, মজুরি (wages) এবং শ্রমিক শ্রেণীর সুবিধাগুলি হ্রাস পাওয়ায় বৈষম্য (inequality) বেড়ে যায়।

১৯৮২ সালে, চিলি আবার একটি গুরুতর অর্থনৈতিক মন্দার (economic recession) সম্মুখীন হয়। এর কারণ বিতর্কিত হলেও, বেশিরভাগ পণ্ডিতরা বিশ্বাস করেন যে লাতিন আমেরিকার ঋণ সংকট (Latin American debt crisis) (যা প্রায় সমস্ত লাতিন আমেরিকাকে আর্থিক সংকটে ফেলেছিল) এর প্রধান কারণ ছিল। কিছু পণ্ডিত যুক্তি দেন যে শিকাগো বয়েজের নিওলিবারাল (neoliberal) নীতিগুলি সংকট বাড়িয়েছিল (উদাহরণস্বরূপ, জিডিপির শতাংশ হ্রাস অন্য কোনও লাতিন আমেরিকান দেশের তুলনায় বেশি ছিল) বা এমনকি এটি ঘটিয়েছিল; উদাহরণস্বরূপ, কিছু পণ্ডিত সেই সময়ের উচ্চ সুদের হার (high interest rates) সমালোচনা করেন যা – মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল করার সময় – বিনিয়োগ (investment) বাধাগ্রস্ত করেছিল এবং ব্যাংকিং শিল্পে ব্যাপক দেউলিয়া অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। অন্যান্য পণ্ডিতরা সরকারের নিওলিবারাল এজেন্ডা (neoliberal agenda) থেকে বিচ্যুতিকে দোষারোপ করেন; উদাহরণস্বরূপ, সরকার চিলিয়ান পেসো (Chilean peso)-কে মার্কিন ডলারের (US dollar) সাথে সংযুক্ত করেছিল, যা শিকাগো বয়েজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছিল, যা অর্থনীতিবিদদের বিশ্বাস অনুযায়ী পেসোর অতিমূল্যায়নের (overvalued peso) দিকে নিয়ে যায়।

মন্দার পর, চিলিয়ান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (economic growth) দ্রুত বৃদ্ধি পায়, অবশেষে ৫% থেকে ১০% এর মধ্যে স্থিতিশীল হয় এবং লাতিন আমেরিকার গড়কে উল্লেখযোগ্যভাবে ছাড়িয়ে যায়। এছাড়াও, বেকারত্ব (unemployment) হ্রাস পায় এবং ১৯৮৪ সালে দারিদ্র্যসীমার (poverty line) নিচে বসবাসরত জনসংখ্যার শতাংশ ৫০% থেকে ১৯৮৯ সালের মধ্যে ৩৪% এ নেমে আসে। এটি মিল্টন ফ্রিডম্যানকে (Milton Friedman) সময়টিকে “চিলির অলৌকিক ঘটনা” (Miracle of Chile) বলে অভিহিত করতে প্ররোচিত করেছিল, এবং তিনি এই সাফল্যগুলিকে শিকাগো বয়েজের নিওলিবারাল (neoliberal) নীতিগুলির জন্য কৃতিত্ব দিয়েছিলেন। কিছু পণ্ডিত এই সাফল্যগুলিকে ব্যাংকিং শিল্পের পুনঃনিয়ন্ত্রণ (re-regulation of the banking industry) এবং দারিদ্র্য (poverty) দূরীকরণের জন্য ডিজাইন করা কিছু লক্ষ্যযুক্ত সামাজিক কর্মসূচির (targeted social programs) সাথে যুক্ত করেছেন। অন্যরা বলছেন যে ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে বৈষম্য (inequality) বেড়েছে: জনসংখ্যার প্রায় ৪৫% দারিদ্র্যসীমার (poverty line) নিচে নেমে গিয়েছিল, যখন ধনী ১০% তাদের আয় ৮৩% বৃদ্ধি পেয়েছিল। চিলিয়ান অর্থনীতিবিদ আলেজান্দ্রো ফক্সলে (Chilean economist Alejandro Foxley) অনুসারে, পিনোশে (Pinochet) ১৯৯০ সালে তার ১৭ বছরের মেয়াদ শেষ করার সময়, প্রায় ৪৪% চিলিয়ান পরিবার দারিদ্র্যসীমার (poverty line) নিচে বসবাস করছিল।

পিনোশে জান্তার (Pinochet junta) দ্বারা বছরের পর বছর দমন করা সত্ত্বেও, ১৯৮৮ সালে একটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন (presidential election) অনুষ্ঠিত হয়, যা ১৯৮০ সালের সংবিধান (constitution) দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল (যদিও পিনোশে সংবিধান সংশোধন করার চেষ্টা করে আরেকটি গণভোট (plebiscite) না করে)। ১৯৯০ সালে, প্যাট্রিসিও আইলউইন (Patricio Aylwin) গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হন, যা সামরিক একনায়কত্বের (military dictatorship) অবসান ঘটায়। পিনোশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর গ্রহণের কারণগুলি অনেক। হায়েক (Hayek) যুক্তি দেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে নিওলিবারাল (neoliberal) সংস্কারগুলি যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (economic freedom) এনেছিল তা, পিনোশে (Pinochet) সরকারের ওপর ধীরে ধীরে চাপ সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে সময়ের সাথে সাথে রাজনৈতিক স্বাধীনতা (political freedom) বৃদ্ধি পায় এবং অবশেষে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত (restoration of democracy) হয়। চিলিয়ান পণ্ডিত জাভিয়ের মার্টিনেজ (Chilean scholars Javier Martínez) এবং আলভারো ডিয়াজ (Alvaro Díaz) এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে চিলিতে দীর্ঘ গণতন্ত্রের ঐতিহ্য রয়েছে। তারা দাবি করেন যে পিনোশে শাসনের পতন এবং গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন মূলত বৃহৎ পরিসরের গণ বিদ্রোহের (mass rebellion) কারণে হয়েছিল, যা অবশেষে দলীয় অভিজাতদের (party elites) বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগুলি (institutional mechanisms) ব্যবহার করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করেছিল।

১৯৯০-এর দশকে, নিওলিবারাল (neoliberal) অর্থনৈতিক নীতিগুলি আরও বিস্তৃত এবং গভীরতর হয়, যেগুলোর মধ্যে একতরফা শুল্ক হ্রাস (unilateral tariff reductions) এবং লাতিন আমেরিকার (Latin American) বেশ কয়েকটি দেশ এবং কানাডার (Canada) সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (free trade agreements) গ্রহণ করা হয়। একই সময়ে, দশকটি দারিদ্র্য এবং নিম্নমানের আবাসন সমস্যার (poor quality housing) মোকাবেলার জন্য সামাজিক কর্মসূচির (social programs) উপর সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ১৯৯০-এর দশক জুড়ে, চিলি উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখে, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত গড়ে ৭.৩% বৃদ্ধি পায়। আইএমএফ জার্নাল ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (IMF journal Finance & Development) এর জন্য লেখা এডুয়ার্ডো আনিনাত (Eduardo Aninat) ১৯৮৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে চিলির ইতিহাসে “দীর্ঘতম, শক্তিশালী এবং সবচেয়ে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির সময়কাল” বলে অভিহিত করেছেন। ১৯৯৯ সালে এশীয় আর্থিক সংকট (Asian financial crisis) দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্ষিপ্ত মন্দা ছিল, ২০০০ সালে প্রবৃদ্ধি আবার শুরু হয় এবং গ্রেট রিসেশন (Great Recession) পর্যন্ত প্রায় ৫% থাকে।

সংক্ষেপে, ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকের নিওলিবারাল (neoliberal) নীতিগুলি – একটি দমনমূলক কর্তৃত্ববাদী সরকার (repressive authoritarian government) দ্বারা শুরু – চিলির অর্থনীতিকে একটি সুরক্ষিত বাজার (protected market) থেকে উচ্চ বাণিজ্য বাধা এবং ব্যাপক সরকারি হস্তক্ষেপের সাথে বিশ্বের অন্যতম উন্মুক্ত মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে (free-market economy) রূপান্তরিত করে। লাতিন আমেরিকার ঋণ সংকটের (Latin American debt crisis) সময় চিলি সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক মন্দার (economic bust) মুখোমুখি হয়েছিল, তবে এটিও সবচেয়ে শক্তিশালী পুনরুদ্ধারগুলির (robust recoveries) মধ্যে একটি ছিল, ১৯৮০ সালে জিডিপি প্রতি ব্যক্তির আয়ের ক্ষেত্রে (GDP per capita) সবচেয়ে দরিদ্র লাতিন আমেরিকান দেশ থেকে ২০১৯ সালে সবচেয়ে ধনী দেশে পরিণত হয়। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে এশিয়ান সংকট পর্যন্ত গড় বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (economic growth) ছিল ৭.২%, ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ৩.৫%, এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত প্রকৃত আয় (real income) বৃদ্ধির গড় ছিল ৫% – যা লাতিন আমেরিকার গড়কে ছাড়িয়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। ১৯৭০ এবং ১৯৮৫ সালের মধ্যে চিলিতে শিশু মৃত্যুহার (infant mortality rate) ১০০০ প্রতি ৭৬.১ থেকে ২২.৬ এ নেমে আসে, যা লাতিন আমেরিকার সর্বনিম্ন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বেকারত্ব (unemployment) হ্রাস পেয়েছিল, তবে এটি দক্ষিণ আমেরিকার গড়ের চেয়ে বেশি ছিল (যা স্থবির ছিল)। এবং চিলিয়ানদের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য (economic inequality) বৃদ্ধি পেয়েছে এমন জনসাধারণের ধারণা সত্ত্বেও, চিলির গিনি সহগ (Gini coefficient) ১৯৮৭ সালের ৫৬.২ থেকে ২০১৭ সালে ৪৬.৬-এ নেমে এসেছে। এটি লাতিন আমেরিকার গড়ের কাছাকাছি, চিলি এখনও ওইসিডি (OECD)-এর মধ্যে সর্বাধিক গিনি সহগের একটি দেশ, যা বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলির একটি সংস্থা যা চিলিকে অন্তর্ভুক্ত করে তবে বেশিরভাগ অন্যান্য লাতিন আমেরিকান দেশ নয়। তদুপরি, গিনি সহগ কেবল আয়ের বৈষম্য (income inequality) পরিমাপ করে; চিলির মিশ্রিত বৈষম্য রেটিং রয়েছে ওইসিডি-এর বেটার লাইফ ইনডেক্স (OECD’s Better Life Index) এ, যা কেবল আয় ছাড়াও আবাসন এবং শিক্ষা (housing and education) এর মতো আরও অনেক ফ্যাক্টর অন্তর্ভুক্ত করে। এছাড়াও, ১৯৬৯ সালে চিলির জনসংখ্যার দারিদ্র্যসীমার নিচে (poverty line) বসবাসের শতাংশ ছিল ১৭%, যা ১৯৮৫ সালে বেড়ে ৪৫% এ পৌঁছে যায়, একই সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আবাসনের (education, health and housing) জন্য সরকারি বাজেট গড়ে ২০% এরও বেশি হ্রাস পেয়েছিল। যুগটি অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার (economic instability) দ্বারাও চিহ্নিত ছিল।

সামগ্রিকভাবে, নিওলিবারাল (neoliberal) সংস্কারের প্রভাব সম্পর্কে পণ্ডিতদের মতামত মিশ্রিত। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক (CIA World Factbook) বলেছে যে চিলির “সুস্থ অর্থনৈতিক নীতিগুলি” (sound economic policies), যা ১৯৮০-এর দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে বজায় রাখা হয়েছে, “চিলিতে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে (steady economic growth) অবদান রেখেছে এবং দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে কমিয়ে দিয়েছে,” এবং কিছু পণ্ডিত এই সময়কালকে “চিলির অলৌকিক ঘটনা” (Miracle of Chile) বলেও অভিহিত করেছেন। অন্যান্য পণ্ডিতরা এটিকে একটি ব্যর্থতা বলে অভিহিত করেছেন যা আয়ের বন্টনে চরম বৈষম্যের দিকে পরিচালিত করেছিল এবং গুরুতর সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষতির (severe socioeconomic damage) সৃষ্টি করেছিল। এই পরিবর্তনগুলি কতটা নিওলিবারাল (neoliberal) অর্থনৈতিক নীতির ফলাফল ছিল এবং কতটা অন্যান্য কারণগুলির ফলাফল ছিল তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে; বিশেষত, কিছু পণ্ডিতরা যুক্তি দেন যে ১৯৮২ সালের সংকটের পরে ১৯৭০-এর দশকের শেষের “বিশুদ্ধ” নিওলিবারালিজম (pure neoliberalism) একটি সামাজিক বাজার অর্থনীতি (social market economy) গঠনের দিকে মনোনিবেশ করে যা নিওলিবারাল (neoliberal) এবং সামাজিক কল্যাণ নীতিগুলির (social welfare policies) মিশ্রণ ছিল।

২০১৯-২০ চিলি বিক্ষোভের (Chilean protests) প্রতিক্রিয়ায়, ২০২০ সালের অক্টোবরে একটি জাতীয় গণভোট (national plebiscite) অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে চিলির সংবিধান (constitution) পুনর্লিখিত হবে কিনা তা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পিনোশে যুগের সংবিধানকে (Pinochet-era constitution) প্রতিস্থাপন করার জন্য একটি নতুন সংবিধানের জন্য “অনুমোদন” (approve) বিকল্পটি ৭৮% ভোট পায়। তবে, সেপ্টেম্বর ২০২২-এ, পুনর্লিখিত সংবিধান (rewritten constitution) অনুমোদনের গণভোটটি ৬১% ভোটে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

পেরু

পেরুর অর্থনীতিবিদ হার্নান্ডো দে সোটো (Hernando de Soto), লাতিন আমেরিকার (Latin America) প্রথম নিওলিবারাল (neoliberal) সংগঠনগুলির মধ্যে একটি, ইনস্টিটিউট ফর লিবার্টি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (Institute for Liberty and Democracy বা ILD) এর প্রতিষ্ঠাতা, ও তিনি রোনাল্ড রিগানের প্রশাসন (Ronald Reagan’s administration) থেকে সহায়তা পেতে শুরু করেছিলেন। ন্যাশনাল এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (National Endowment for Democracy’s Center for International Private Enterprise বা CIPE) তার ILD-কে অর্থায়ন প্রদান করেছিল। প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্সিয়ার (President Alan García) অর্থনৈতিক নীতি পেরুকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, ফলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস পায়। গার্সিয়ার অধীনে, পেরু হাইপারইনফ্লেশন এবং গেরিলা গ্রুপ শাইনিং পাথ (Shining Path) এর সাথে বর্ধিষ্ণু সংঘাতের সম্মুখীন হয়, যা দেশটিকে উচ্চ স্তরের অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যায়। পেরুর সশস্ত্র বাহিনী গার্সিয়া প্রশাসনের জাতীয় সংকট মোকাবিলায় অক্ষমতায় হতাশ হয়ে পড়ে এবং তার সরকারকে উৎখাত করার জন্য একটি পরিকল্পনা – প্ল্যান ভেরডে (Plan Verde) প্রস্তুত করতে শুরু করে।

সামরিক বাহিনীর প্ল্যান ভেরডে (Plan Verde) এর সাথে অর্থনীতির উপর বোঝা হিসেবে বিবেচিত দরিদ্র এবং আদিবাসী পেরুভিয়ানদের (Peruvians) “সম্পূর্ণ নির্মূল” করার বিষয়টি জড়িত ছিল, সেই সাথে জড়িত ছিল দেশটির মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ বা সেন্সরশিপ এবং পেরুতে একটি নিওলিবারাল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৯০ সালের পেরুর সাধারণ নির্বাচনের (Peruvian general election) প্রচারণার সময়, আলবার্তো ফুজিমোরি (Alberto Fujimori) প্রথমে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মারিও ভার্গাস লোসার (Mario Vargas Llosa) প্রস্তাবিত নিওলিবারাল (neoliberal) নীতির বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। পেরুর ম্যাগাজিন ওইগা (Peruvian magazine Oiga) জানিয়েছে যে, নির্বাচনের পরে, সশস্ত্র বাহিনী ফুজিমোরির পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি পূরণের ইচ্ছার বিষয়ে অনিশ্চিত ছিল, যদিও তারা ফুজিমোরির উদ্বোধনের আগে তাকে এই অপারেশনে সম্মত করার পরিকল্পনা করেছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পরে, ফুজিমোরি তার প্রচারণার অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ত্যাগ করেন, তার নির্বাচনী প্রতিযোগী ভার্গাস লোসার থেকে আরও আগ্রাসী নিওলিবারাল নীতি গ্রহণ করেন। ফুজিমোরির সম্মতিতে, প্ল্যান ভেরডে (Plan Verde) অনুযায়ী অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা দুই বছর ধরে প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং অবশেষে ১৯৯২ সালের পেরুর অভ্যুত্থানের (Peruvian coup d’état) সময় কার্যকর করা হয়েছিল, যা অবশেষে একটি বেসামরিক-সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল।

ফুজিমোরির উদ্বোধনের পরপরই, তার সরকার ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯০ তারিখে পলিসি অ্যানালাইসিস, প্ল্যানিং এবং ইমপ্লিমেন্টেশন প্রজেক্ট (Policy Analysis, Planning and Implementation Project বা PAPI) এর জন্য ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (United States Agency for International Development বা USAID) থেকে $৭১৫ মিলিয়ন অনুদান পায় যা “দেশের অর্থনৈতিক নীতি সংস্কার সমর্থন করতে” তৈরি হয়েছিল। দে সোটো (de Soto) ফুজিমোরির জন্য প্রভাবশালী প্রমাণিত হয়েছিল, যিনি পেরুর অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার (deregulating) জন্য দে সোটোর সমর্থন পুনরাবৃত্তি করতে শুরু করেছিলেন। ফুজিমোরির অধীনে, দে সোটো রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছিলেন। দে সোটো “শক থেরাপি” (shock therapy) হিসেবে পেরুর অর্থনীতির জন্য একটি নীতি সুপারিশ করেছিলেন, যার মধ্যে ৩০০% কর বৃদ্ধি, অনিয়ন্ত্রিত মূল্য এবং ২৫০টি রাষ্ট্রের মালিকানাধীন সংস্থার বেসরকারীকরণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। দে সোটোর নীতিগুলি দরিদ্র পেরুভিয়ানদের জন্য তাৎক্ষণিক কষ্টের কারণ হয়েছিল যারা নিয়ন্ত্রিত মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি দেখতে পেয়েছিল। যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত তারা মূল্য এত বেশি বৃদ্ধি পেতে দেখেছিল যে তারা আর খাদ্য কেনার সামর্থ্য রাখত না। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছিল যে দে সোটো পেরুর সমাজের পতনের পক্ষে ছিলেন, অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন যে ফুজিমোরির নীতিগুলিকে সমর্থন করার জন্য একটি নাগরিক সংকট প্রয়োজন ছিল। অবশেষে, ফুজিমোরি এবং দে সোটোর মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হয় যখন দে সোটো সরকারে নাগরিকদের আরও বেশি সম্পৃক্ততার সুপারিশ করেছিলেন, যা ফুজিমোরির দ্বারা অসম্মতি পেয়েছিল।

USAID অবশেষে ১৯৯৩ সালের পেরুর সংবিধান (Peruvian constitution) পুনর্লিখনের ক্ষেত্রে ফুজিমোরি সরকারের সাথে সহায়তা করবে, এজেন্সিটি ১৯৯৭ সালে উপসংহারে পৌঁছেছিল যে এটি “আইন প্রণয়নের পাঠ্য প্রস্তুতি” এবং “একটি বেসরকারি খাতের পরামর্শদাতার ভূমিকার উদ্ভব”-এ অবদান রেখেছিল। দে সোটো দ্বারা প্রচারিত এবং ফুজিমোরি দ্বারা বাস্তবায়িত নীতিগুলি অবশেষে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং মুদ্রাস্ফীতি হারের হ্রাস ঘটায়, যদিও ১৯৯৮ সালে পেরুর দারিদ্র্যের হার অনেকাংশে অপরিবর্তিত থাকে যেখানে জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছিল।

ফাউন্ডেশন ফর ইকোনমিক এডুকেশনের (Foundation for Economic Education) মতে, USAID, ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড (United Nations Population Fund বা UNFPA) এবং নিপ্পন ফাউন্ডেশন (Nippon Foundation) ফুজিমোরি সরকারের নির্বীজন (sterilizations) প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছিল। ই. লিয়াজিন রিপোর্ট করেছেন যে ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত, USAID “পেরুর জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দায়িত্ব নিয়েছিল” এবং এই সময়ে জোরপূর্বক নির্বীজন (forced sterilizations) করা হয়েছিল। ফুজিমোরি সরকারের অধীনে ১৯৯০-এর দশকে কমপক্ষে ৩০০,০০০ পেরুভিয়ান জোরপূর্বক নির্বীজনের শিকার হয়েছিল, যার বেশিরভাগ পিএনএসআরপিএফ (PNSRPF) দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। নির্বীজনের নীতির ফলে একটি প্রজন্মগত পরিবর্তন ঘটে যার ফলে একটি ছোট তরুণ প্রজন্ম তৈরি হয়েছিল যা গ্রামীণ এলাকায় অর্থনৈতিক উদ্দীপনা প্রদান করতে পারে না, যা এই অঞ্চলে আরও দারিদ্র্য সৃষ্টি করে।

যদিও সাম্প্রতিক দশকগুলিতে পেরুর অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান উন্নত অর্থনৈতিক ডেটা দেখায়, ১৯৯০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অর্জিত সম্পদ পুরো দেশে বিতরণ করা হয়নি; উন্নত রাজধানী শহর লিমা (Lima) এবং অনুরূপ উপকূলীয় অঞ্চলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছিল, যখন গ্রামীণ প্রদেশগুলি দরিদ্র রয়ে গেছে। পেরুর পন্টিফিকাল ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির (Pontifical Catholic University of Peru) সমাজবিজ্ঞানী মারিটজা পারেডেস (Maritza Paredes) বলেছেন, “মানুষ দেখছে যে সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ গ্রামে রয়েছে কিন্তু সমস্ত সুবিধা লিমায় কেন্দ্রীভূত।” ২০২০ সালে, পেরুতে কোভিড-১৯ মহামারী (COVID-19 pandemic) এই বৈষম্যগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল, পন্টিফিকাল ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অফ পেরুর (Pontifical Catholic University of Peru) রাজনৈতিক বিজ্ঞানী প্রফেসর ফারিদ কাহহাত (Professor Farid Kahhat) বলেছেন, “পেরুতে বাজার সংস্কার দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল দিয়েছে … তবে মহামারীটি বিশেষ করে পেরুতে যা উন্মোচন করেছে তা হল যে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে যখন জনসেবার মর্মান্তিক অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি – বিশেষত স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে।” ২০২১ সালের পেরুর সাধারণ নির্বাচনে (Peruvian general election) পেদ্রো কাস্তিলোর (Pedro Castillo) প্রার্থীতায় গ্রামীণ ও শহুরে পেরুভিয়ানদের মধ্যে বৈষম্যগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল, যার বেশিরভাগ সমর্থন দেশের বাইরের অংশে অর্জিত হয়েছিল। কাস্তিলো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জয়লাভ করেন, নিউ ইয়র্ক টাইমস তার বিজয়কে দেশের প্রতিষ্ঠানের “সবচেয়ে স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান” বলে জানিয়েছিল।

আর্জেন্টিনা

১৯৬০-এর দশকে, লাতিন আমেরিকার (Latin America) বুদ্ধিজীবীরা অর্ডোলিবারেলিজম (ordoliberalism) ধারণার প্রতি মনোযোগ দিতে শুরু করেন; তারা প্রায়ই এই চিন্তাধারাকে নির্দেশ করার জন্য স্প্যানিশ শব্দ “নিওলিবারালিজমো” (neoliberalismo) ব্যবহার করতেন। তারা বিশেষ করে জার্মানির সামাজিক বাজার অর্থনীতি (social market economy) এবং অর্থনৈতিক অলৌকিকতা (Wirtschaftswunder বা “economic miracle”) দ্বারা মুগ্ধ হন এবং তাদের নিজস্ব দেশে অনুরূপ নীতি প্রয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা করেন। ১৯৬০-এর দশকের আর্জেন্টিনায় (Argentina) নিওলিবারালিজম (neoliberalism) মানে একটি দর্শন ছিল যা সম্পূর্ণ লেসে-ফেয়ার (laissez-faire) মুক্ত বাজার পুঁজিবাদের চেয়ে বেশি পরিমিত এবং সামাজিক বৈষম্যকে কমাতে এবং একচেটিয়ার প্রবণতা প্রতিহত করতে রাষ্ট্রের নীতির ব্যবহারকে সমর্থন করত।

১৯৭৬ সালে, হোসে আলফ্রেডো মার্টিনেজ দে হোজ (José Alfredo Martínez de Hoz) এর নেতৃত্বাধীন সামরিক একনায়কত্বের (military dictatorship) অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আর্জেন্টিনায় প্রথম নিওলিবারাল (neoliberal) প্রোগ্রাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ছিল। তারা একটি আর্থিক কৃচ্ছ্রসাধনের (fiscal austerity) পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যা মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় মুদ্রা মুদ্রণ হ্রাস করে। এটি অর্জনের জন্য, মজুরি হিমায়িত করা, মানে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল; তবে, তারা মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সক্ষম হয়নি, যার ফলে শ্রমজীবী শ্রেণির প্রকৃত মজুরি হ্রাস পায়। তারা বাণিজ্য নীতি উদারীকরণ করেছিল যাতে বিদেশী পণ্যগুলি অবাধে দেশে প্রবেশ করতে পারে। আর্জেন্টিনার শিল্প (যা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আর্তুরো ফ্রন্ডিজির (Arturo Frondizi) অর্থনৈতিক নীতির পর ২০ বছর ধরে উন্নতির পথে ছিল) বিদেশী পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতা করতে না পারায় দ্রুত হ্রাস পায়। এই ব্যবস্থার ফলে দারিদ্র্যের হার ১৯৭৫ সালে ৯% থেকে ১৯৮২ সালের শেষে ৪০% এ বেড়ে যায়।

১৯৮৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত, ডোমিঙ্গো ক্যাভালো (Domingo Cavallo) আরও নিওলিবারাল (neoliberal) নীতি বাস্তবায়ন করেন। এই সময়, সরকারি সেবাগুলির বেসরকারীকরণ (privatization of public services) প্রধান লক্ষ্য ছিল, যদিও আর্থিক নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (financial deregulation) এবং বিদেশী দেশগুলির সাথে মুক্ত বাণিজ্য পুনরায় প্রয়োগ করা হয়েছিল। শ্রম বাজারের নমনীয়তা বৃদ্ধি সহ, বেকারত্বের হার ১৮.৩% এ নেমে আসে। নীতিগুলির প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি মিশ্রিত ছিল; কিছু বেসরকারীকরণ স্বাগত জানানো হলেও, অনেকেই এটি জনগণের স্বার্থে নয় বলে সমালোচনা করেন। প্রতিবাদের ফলে পুলিশের হাতে ২৯ জনের মৃত্যু হয়।

মেক্সিকো

১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে, লাতিন আমেরিকার অন্যান্য অনেক দেশের মতো, মেক্সিকোও (Mexico) একটি ঋণ সংকটের (debt crisis) সম্মুখীন হয়। ১৯৮৩ সালে, প্রাতিষ্ঠানিক বিপ্লবী পার্টি (Institutional Revolutionary Party বা PRI) শাসিত মেক্সিকান সরকার আইএমএফ (IMF) থেকে ঋণ গ্রহণ করে। আইএমএফ-এর শর্তগুলির মধ্যে মেক্সিকোর রাষ্ট্র-চালিত শিল্পগুলিকে বেসরকারীকরণ, তাদের মুদ্রার মূল্য হ্রাস, বাণিজ্য বাধাগুলি হ্রাস করা এবং সরকারি ব্যয় সীমিত করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই নীতিগুলি মেক্সিকোর অর্থনীতিকে স্বল্পমেয়াদে স্থিতিশীল করার লক্ষ্য ছিল। পরে, মেক্সিকো এই নীতিগুলিকে প্রসারিত করার চেষ্টা করেছিল যাতে প্রবৃদ্ধি এবং সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (Foreign Direct Investment বা FDI) উৎসাহিত হয়।

আইএমএফ-এর নিওলিবারাল (neoliberal) সংস্কারগুলি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত PRI-কে বিভক্ত করে, ডানপন্থীরা নিওলিবারাল নীতি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল এবং বামপন্থীরা তা চায়নি। ১৯৮৮ সালে ক্ষমতায় আসা কার্লোস সালিনাস দে গোরতারি (Carlos Salinas de Gortari) নিওলিবারাল সংস্কারগুলির উপর জোর দেন। তার নীতিগুলি ব্যাংকিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (deregulating the banking system) এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির বেসরকারীকরণ (privatizing commercial banks) দ্বারা আর্থিক খাতকে উন্মুক্ত করে। যদিও এই নীতিগুলি কিছুটা প্রবৃদ্ধি এবং FDI উৎসাহিত করেছিল, প্রবৃদ্ধির হার মেক্সিকোর পূর্ববর্তী সরকারগুলির চেয়ে কম ছিল এবং বিদেশী বিনিয়োগের বৃদ্ধি বেশিরভাগই বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ছিল।

১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি, এমিলিয়ানো জাপাতার (Emiliano Zapata) নামে নামকরণ করা জাপাতিস্তা ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (Zapatista Army of National Liberation) মেক্সিকান সরকারের বিরুদ্ধে চিয়াপাস অঞ্চলে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। তাদের দাবিগুলির মধ্যে ছিল আদিবাসী মেক্সিকানদের (indigenous Mexicans) অধিকার এবং উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (North American Free Trade Agreement বা NAFTA) বিরোধিতা, যা রাষ্ট্র এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি কৌশলগত জোটকে সুসংহত করেছিল। NAFTA, একটি বাণিজ্য চুক্তি যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর মধ্যে, মেক্সিকোর বাণিজ্য উদারীকরণের প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়ক ছিল।

১৯৯৪ সালে, জাপাতিস্তা বিদ্রোহ (Zapatista rebellion) এবং NAFTA বাস্তবায়নের একই বছরে, মেক্সিকো একটি আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়। এই সংকট, যা “তেকিলা সংকট” (Tequila Crisis) নামেও পরিচিত ও এটি ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে পেসোর (peso) অবমূল্যায়ন দিয়ে শুরু হয়। বিনিয়োগকারীদের সন্দেহ নেতিবাচক জল্পনা-কল্পনার দিকে নিয়ে যায় এবং তারা তাদের মূলধন নিয়ে পালিয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়াতে বাধ্য হয়, যা ঋণগ্রহীতারা আর তাদের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ব্যাংকিং সিস্টেমের পতন ঘটায়।

সালিনাসের পরে, আর্নেস্তো সেডিলো (Ernesto Zedillo) (১৯৯৫-২০০০) তার পূর্বসূরির অনুরূপ অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখেন। সংকট সত্ত্বেও, সেডিলো নিওলিবারাল নীতি চালিয়ে যান এবং বিশ্বব্যাংক (World Bank) এবং আইএমএফ-এর সাথে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই নীতিগুলির ফলে এবং ১৯৯৪ সালের মন্দার কারণে, মেক্সিকোর অর্থনীতি স্থিতিশীলতা লাভ করে। ২০০১ বা ২০০৮ সালের মন্দা মেক্সিকোর অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক শক্তিগুলির কারণে হয়নি। বাণিজ্য নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি FDI; তবে, মেক্সিকোর ব্যবসায়িক চক্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সিঙ্ক হওয়ার কারণে, এটি বহিরাগত অর্থনৈতিক চাপের প্রতি অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। FDI মেক্সিকোর উত্তর এবং মধ্যাঞ্চলকে উপকৃত করেছিল, যখন দক্ষিণ অঞ্চলটি বিনিয়োগের প্রবাহ থেকে অনেকাংশে বাদ পড়েছিল। সংকটের ফলে ব্যাংকগুলি মূলত বিদেশিদের হাতে চলে যায়।

PRI-এর ৭১ বছরের শাসনের অবসান ঘটে যখন ২০০০ সালে জাতীয় অ্যাকশন পার্টির (National Action Party বা PAN) ভিসেন্টে ফক্স (Vicente Fox) নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ফক্স এবং তার উত্তরসূরি ফেলিপে ক্যালডেরন (Felipe Calderón) PRI সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলি থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বিচ্যুত হননি। তারা আর্থিক ব্যবস্থা বেসরকারীকরণ এবং বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে থাকে। উল্লেখযোগ্য বিরোধিতা সত্ত্বেও, ২০১২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি এনরিক পেনা নিয়েতো (Enrique Peña Nieto) তেল এবং বিদ্যুৎ শিল্পগুলির বেসরকারীকরণের (privatization) জন্য আইন পাশ করেন। এই সংস্কারগুলি ১৯৮০-এর দশকে মেক্সিকোতে কল্পনা করা নিওলিবারাল (neoliberal) লক্ষ্যগুলির সফল বাস্তবায়নের সমাপ্তি চিহ্নিত করেছিল।

ব্রাজিল

ব্রাজিল ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে নিওলিবারাল নীতিগুলি (neoliberal policies) গ্রহণ করে, যা বামপন্থী কর্মী দলের (Worker’s Party) সমর্থন লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯০ সালে ট্যারিফ হার ৩২% থেকে ১৯৯৪ সালে ১৪% এ কমিয়ে আনা হয়েছিল। এই সময়ে, ব্রাজিল তার আমদানি প্রতিস্থাপন শিল্পায়ন (import substitution industrialization) নীতি থেকে সরে এসে একটি আরও উন্মুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে যায়, যেখানে ব্যাপক বেসরকারীকরণ (privatization) চালু হয়। বাজার সংস্কার এবং বাণিজ্য সংস্কারের ফলে মূল্য স্থিতিশীলতা (price stability) এবং পুঁজির দ্রুত প্রবাহ (inflow of capital) ঘটেছিল, তবে আয়ের বৈষম্য (income inequality) এবং দারিদ্র্যের (poverty) উপর এর তেমন প্রভাব পড়েনি। এর ফলে, এই সময়কালে ব্যাপক প্রতিবাদ অব্যাহত ছিল।

এশিয়া-প্যাসিফিক

দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান এবং সিঙ্গাপুর

পণ্ডিতরা, যারা পূর্ব এশিয়ায় (East Asia) দ্রুত শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে উন্নয়নমূলক রাষ্ট্রের (developmental state) মূল ভূমিকার উপর জোর দিয়েছিলেন, এখন যুক্তি দেন যে দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea), তাইওয়ান (Taiwan) এবং সিঙ্গাপুর (Singapore) উন্নয়নমূলক রাষ্ট্র থেকে প্রায় নিওলিবারাল (close-to-neoliberal) রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তাদের যুক্তি বৈজ্ঞানিক বিতর্কের বিষয়।

চীন

মাও জেদং (Mao Zedong) এর ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর পর, দেং জিয়াওপিং (Deng Xiaoping) দেশটিকে ব্যাপক বাজার-কেন্দ্রিক সংস্কারের (market-centered reforms) মাধ্যমে নেতৃত্ব দেন, যার স্লোগান ছিল শাওকাং (Xiǎokāng), যা নিওলিবারালিজমকে (neoliberalism) কেন্দ্রীভূত কর্তৃত্ববাদের (centralized authoritarianism) সাথে মিশিয়ে দেয়। এই সংস্কারগুলি কৃষি, শিল্প, শিক্ষা এবং বিজ্ঞান/প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রিত ছিল।

বিশেষজ্ঞরা বিতর্ক করেন যে কীভাবে ঐতিহ্যবাহী মাওবাদী (Maoist) কমিউনিস্ট মতবাদগুলি নতুন নিওলিবারাল ধারণাগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রূপান্তরিত হয়েছে। যেকোনো ক্ষেত্রে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (Chinese Communist Party) অর্থনৈতিক এবং ব্যবসায়িক নীতি নির্ধারণে একটি প্রধান শক্তি হিসাবে রয়ে গেছে। ২০ শতক জুড়ে, হংকং (Hong Kong) চীনের মধ্যে অসামান্য নিওলিবারাল উদাহরণ ছিল।

তাইওয়ান

তাইওয়ান নিওলিবারাল ধারণার (neoliberal ideas) প্রভাবের একটি উদাহরণ। এই নীতিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (United States) দ্বারা উৎসাহিত হয়েছিল, তবে অন্যান্য অনেক দেশের মতো জাতীয় অর্থনীতির ব্যর্থতার কারণে এ নীতিগুলি বাস্তবায়ন করা হয়নি।

জাপান

১৯৮০ সালের পর থেকে জাপানের শাসক দল, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (Liberal Democratic Party বা LDP), নিওলিবারাল নীতিগুলির (neoliberal policies) মূল কেন্দ্রে ছিল। এই নীতিগুলির ফলে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ ভিত্তি পরিত্যাগ করা এবং টোকিও (Tokyo) শিল্প-অর্থনৈতিক অঞ্চলের কেন্দ্রিক গুরুত্বকে জোর দেওয়া হয়। জাপানের কৃষি খাতের জন্য নিওলিবারাল প্রস্তাবগুলি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ হ্রাস করা, চাল এবং অন্যান্য কৃষি পণ্যের উচ্চ মূল্যের সুরক্ষা শেষ করা এবং কৃষকদের বৈশ্বিক বাজারের মুখোমুখি করা আহ্বান জানায়। ১৯৯৩ সালের উরুগুয়ে রাউন্ড (Uruguay Round) আলোচনায় চালের বাজার উন্মুক্ত হয়। নিওকনজারভেটিভ নেতারা সরকারি ভর্তুকি প্রাপ্ত খামারগুলির সম্প্রসারণ, বৈচিত্র্যকরণ, নিবিড়করণ এবং কর্পোরেটাইজেশনের (corporatization) আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে, শাসক এলডিপি সিদ্ধান্ত নেয় যে ছোট কৃষকদের আর ভর্তুকি দিয়ে সুরক্ষা দেওয়া হবে না। ছোট অপারেটররা এটিকে বড় কর্পোরেট কৃষির প্রতি পক্ষপাতিত্ব হিসাবে দেখেছিল এবং রাজনৈতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ জাপানকে (Democratic Party of Japan বা DPJ) সমর্থন করে, যার ফলে জাতীয় নির্বাচনে এলডিপি পরাজিত হয়।

দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ায়, নিওলিবারালিজম (neoliberalism) অর্থনৈতিক নীতির উপর জাতীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করার প্রভাব ফেলেছিল। এই নীতিগুলি জনপ্রিয় ছিল কারণ তারা ঐতিহাসিকভাবে খুব শক্তিশালী চেবোল (chaebol) পরিবার-নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলিকে দুর্বল করেছিল।

ভারত

ভারতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ২০১৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং নিওলিবারাল অর্থনৈতিক নীতিগুলি (neoliberal economic policies) বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এই প্রতিশ্রুতি জাতীয় রাজনীতি এবং পররাষ্ট্রনীতিকে রূপদান করে এবং ভারতকে পূর্ব এশিয়ায় (East Asia) অর্থনৈতিক আধিপত্যের জন্য চীন (China) এবং জাপানের (Japan) সাথে প্রতিযোগিতার দিকে নিয়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ায় নিওলিবারাল অর্থনৈতিক নীতিগুলি (neoliberal economic policies), যা সেই সময়ে “অর্থনৈতিক যুক্তিবাদ” (economic rationalism) বা “অর্থনৈতিক মৌলবাদ” (economic fundamentalism) নামে পরিচিত ছিল, ১৯৮০-এর দশক থেকে লেবার পার্টি (Labor Party) এবং লিবারেল পার্টি (Liberal Party) উভয় সরকারের দ্বারাই গ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বব হক (Bob Hawke) এবং পল কিটিং (Paul Keating) এর লেবার সরকার অর্থনৈতিক উদারীকরণের (economic liberalisation) উপর কেন্দ্রিত একটি অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি অনুসরণ করেছিল। এই সরকারগুলি সরকারি কর্পোরেশনগুলিকে বেসরকারীকরণ, ফ্যাক্টর মার্কেটগুলিকে নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ, অস্ট্রেলিয়ান ডলারকে (Australian dollar) ভাসমান করা এবং বাণিজ্য সুরক্ষা হ্রাস করেছিল।

আরেকটি প্রধান নীতি ছিল অ্যাকর্ড (accords), যা সামাজিক নীতি যেমন মেডিকেয়ার (Medicare) এবং পেনশন (superannuation) এর বাস্তবায়নের বিনিময়ে ইউনিয়নগুলির সাথে একটি চুক্তি ছিল যা ধর্মঘট, মজুরির দাবি এবং প্রকৃত মজুরি হ্রাসের ক্ষেত্রে সম্মত হয়েছিল। হাওয়ার্ড সরকার (Howard government) এই নীতিগুলিকে অব্যাহত রেখেছিল, একইসাথে ইউনিয়নের ক্ষমতা হ্রাস, কল্যাণ কাটছাঁট এবং সরকারি ব্যয় হ্রাস করেছিল।

কিটিং (Keating) ফেডারেল ট্রেজারার থাকাকালীন সময়ে নীতি প্রবর্তনের উপর ভিত্তি করে, ১৯৯২ সালে একটি বাধ্যতামূলক পেনশন গ্যারান্টি সিস্টেম (superannuation guarantee system) বাস্তবায়ন করেছিলেন যাতে জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধি পায় এবং ভবিষ্যতে বৃদ্ধ বয়সের পেনশনের জন্য সরকারের দায়বদ্ধতা হ্রাস পায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছিল, ছাত্রদেরকে উচ্চশিক্ষা অবদান স্কিম (Higher Education Contribution Scheme বা HECS) নামে একটি পুনরায় অর্থপ্রদানযোগ্য ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ফি প্রদানের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল এবং পূর্ণ ফি প্রদানকারী ছাত্র, বিশেষ করে বিদেশী ছাত্রদের ভর্তি করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আয়ের বৃদ্ধি করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল। ২০০৯ সালে, রুড লেবার সরকার (Rudd Labor government) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশীয় পূর্ণ ফি প্রদানকারী ছাত্রদের ভর্তি বাতিল করে।

শরণার্থীদের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের রাজধানী শহরগুলোতে অভিবাসনের ফলে মূলধন প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যেমন যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবানন এবং ভিয়েতনাম থেকে। পরবর্তীতে মূল ভূখণ্ড চীন থেকে অর্থনৈতিক অভিবাসীরাও, সাম্প্রতিক সীমাবদ্ধতার আগে পর্যন্ত, সম্পত্তি বাজারে উল্লেখযোগ্যভাবে বিনিয়োগ করেছিল।

নিউজিল্যান্ড

নিউজিল্যান্ডে (New Zealand), চতুর্থ লেবার সরকার (Fourth Labour Government) প্রধানমন্ত্রীর (Prime Minister) নেতৃত্বে ডেভিড ল্যাঞ্জ (David Lange) নিওলিবারাল অর্থনৈতিক নীতিগুলি (neoliberal economic policies) বাস্তবায়ন করেছিল। এই নিওলিবারাল নীতিগুলিকে সাধারণত “রোজারনোমিকস” (Rogernomics) বলা হয়, একটি পোর্টম্যানটিও “রোজার” এবং “ইকোনমিকস” থেকে, কারণ ল্যাঞ্জ ১৯৮৪ সালে রজার ডগলাস (Roger Douglas)-কে অর্থমন্ত্রী (minister of finance) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

ল্যাঞ্জের সরকার একটি গুরুতর পেমেন্ট সঙ্কটের (balance of payments crisis) উত্তরাধিকারী হয়েছিল যা পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী রবার্ট মুলডুন (Prime Minister Robert Muldoon) দ্বারা বাস্তবায়িত মজুরি এবং মূল্যের উপর দুই বছরের স্থগিতাদেশের ফলাফল ছিল, যিনি একটি বিনিময় হার বজায় রেখেছিলেন (যা অনেক অর্থনীতিবিদ এখন বিশ্বাস করেন যে এটি টেকসই ছিল না)। উত্তরাধিকারী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ল্যাঞ্জকে “আমরা খুবই একটি পোলিশ শিপইয়ার্ডের মতো পরিচালিত হচ্ছিলাম” মন্তব্য করতে প্ররোচিত করে। ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪-এ, ল্যাঞ্জের সরকার একটি অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলন (Economic Summit) আয়োজন করে নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতির অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য, যা ট্রেজারি বিভাগের দ্বারা পূর্বে প্রস্তাবিত নাটকীয় অর্থনৈতিক সংস্কারের আহ্বান জানায়।

একটি সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছিল যা নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ এবং ট্যারিফ ও ভর্তুকি অপসারণ নিয়ে গঠিত ছিল। এর ফলে নিউজিল্যান্ডের কৃষি সম্প্রদায়ের উপর তাত্ক্ষণিক প্রভাব পড়ে, যারা কৃষকদের জন্য ভর্তুকি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একটি পেনশন সারচার্জ (superannuation surcharge) চালু করা হয়েছিল, যদিও পেনশন হ্রাস না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, যার ফলে শ্রমিকরা প্রবীণদের কাছ থেকে সমর্থন হারিয়েছিল। আর্থিক বাজারগুলিও নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছিল, সুদের হার, ঋণদান এবং বৈদেশিক মুদ্রার উপর বিধিনিষেধ অপসারণ করে। মার্চ ১৯৮৫-এ, নিউজিল্যান্ড ডলার ভাসমান (New Zealand dollar floated) করা হয়। এছাড়াও, বেশ কয়েকটি সরকারি বিভাগকে রাষ্ট্র-স্বত্বাধিকারী উদ্যোগে (state-owned enterprises) রূপান্তর করা হয়েছিল, যার ফলে উল্লেখযোগ্য চাকরি ক্ষতি ঘটে: ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশনে (Electricity Corporation) ৩,০০০; কয়লা কর্পোরেশনে (Coal Corporation) ৪,০০০; বনায়ন কর্পোরেশনে (Forestry Corporation) ৫,০০০; এবং নিউজিল্যান্ড পোস্টে (New Zealand Post) ৮,০০০।

নিউজিল্যান্ড একটি বৈশ্বিক অর্থনীতির অংশ হয়ে ওঠে। অর্থনীতির ফোকাস উৎপাদনশীল খাত থেকে আর্থিক খাতে স্থানান্তরিত হয় কারণ বিদেশী অর্থ দেশের মধ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। আর্থিক মূলধন শিল্প মূলধনের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন শিল্প থেকে প্রায় ৭৬,০০০ চাকরি হারায়।

মধ্যপ্রাচ্য

১৯৬০-এর দশকের শেষ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে (Middle East) একাধিক নিওলিবারাল সংস্কার (neoliberal reforms) বাস্তবায়িত হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, মিশর (Egypt) প্রায়ই নিওলিবারাল নীতিগুলির (neoliberal policies) বাস্তবায়নের সাথে যুক্ত, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত (Anwar Sadat) এর ১৯৭০-এর দশকের ‘ওপেন-ডোর’ নীতির (open-door policies) এবং ১৯৮১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত হোসনি মুবারকের (Hosni Mubarak) পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কারগুলির ক্ষেত্রে। এই পদক্ষেপগুলি, যা আল-ইনফিতাহ (al-Infitah) নামে পরিচিত, পরে সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তিউনিসিয়ায় (Tunisia), নিওলিবারাল অর্থনৈতিক নীতিগুলি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং কার্যত একনায়ক জিন এল আবিদিন বেন আলির (Zine El Abidine Ben Ali) সাথে যুক্ত; তার শাসনাবলীতে স্পষ্ট হয়েছিল যে অর্থনৈতিক নিওলিবারালিজম (economic neoliberalism) কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলির সাথে সহাবস্থান করতে পারে এবং এমনকি উৎসাহিতও হতে পারে। উপসাগরীয় অঞ্চলে (Gulf) বিশ্বায়ন (globalisation) এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিক্রিয়াগুলি নিওলিবারাল বিশ্লেষণাত্মক কাঠামোর মাধ্যমে অধ্যয়ন করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ

১৯৮০-এর দশকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund বা IMF) এবং বিশ্বব্যাংক (World Bank) এর দ্বারা নিওলিবারাল নীতিগুলির (neoliberal policies) গ্রহণ বিশ্বব্যাপী নিওলিবারাল সংস্কারের (neoliberal reform) বিস্তারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ পেতে, উন্নয়নশীল বা সংকটময় দেশগুলোকে বেসরকারীকরণ (privatization), বাণিজ্য উদারীকরণ (trade liberalization), শক্তিশালী ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার প্রয়োগ এবং সরকারি ব্যয় হ্রাস সহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে সম্মত হতে হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটি কাঠামোগত সমন্বয় (structural adjustment) নামে পরিচিত হয়ে ওঠে এবং এর মূলনীতি ওয়াশিংটন কনসেনসাস (Washington Consensus) হিসাবে পরিচিত হয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন (European Union বা EU)-কে কখনও কখনও নিওলিবারাল সংস্থা (neoliberal organization) হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কারণ এটি মুক্ত বাণিজ্য (free trade) এবং চলাচলের স্বাধীনতা (freedom of movement) সহজতর করে, জাতীয় সুরক্ষাবাদকে (national protectionism) ক্ষয় করে এবং জাতীয় ভর্তুকিগুলি সীমিত করে। অন্যদিকে, কিছু বিশ্লেষক যুক্তি দেন যে EU পুরোপুরি নিওলিবারাল নয় কারণ এটি তার সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে তাদের কল্যাণ নীতি (welfare policies) বিকাশের সুযোগ দেয়।

ঐতিহ্য বা ট্রেডিশন

অস্ট্রিয়ান স্কুল

অস্ট্রিয়ান স্কুল (Austrian School) অর্থনৈতিক চিন্তাধারার একটি স্কুল যা ১৯ শতকের শেষ এবং ২০ শতকের শুরুর দিকে ভিয়েনায় (Vienna) উদ্ভূত হয়েছিল, যা ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে অর্থনৈতিক ঘটনা অধ্যয়ন করে। ২১ শতকে, এই শব্দটি ক্রমবর্ধমানভাবে অস্ট্রিয়ান অর্থনীতিবিদ লুডভিগ ভন মিজেস (Ludwig von Mises) এবং ফ্রিডরিখ হায়েকের (Friedrich Hayek) মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হয়েছে, যা সরকারের অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপের সমালোচনা অন্তর্ভুক্ত করে এবং নিওলিবারাল চিন্তাধারার সাথে এই স্কুলকে যুক্ত করেছে।

এই স্কুলের সাথে যুক্ত অর্থনীতিবিদরা, যেমন কার্ল মেঙ্গার (Carl Menger), ইউজেন বোহম ভন বাওয়ার্ক (Eugen Böhm von Bawerk), ফ্রিডরিখ ভন উইজার (Friedrich von Wieser), ফ্রিডরিখ হায়েক (Friedrich Hayek) এবং লুডভিগ ভন মিজেস (Ludwig von Mises), অনেক উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক তত্ত্বের অবদান রেখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিষয়গত মূল্য তত্ত্ব (subjective theory of value), মূল্য তত্ত্বে মার্জিনালিজম (marginalism in price theory), ফ্রিডরিখ ভন উইজারের সুযোগ খরচ তত্ত্ব (theories on opportunity cost), ইউজেন ভন বোহম-বাওয়ার্কের সময় পছন্দ তত্ত্ব (theories on time preference), এবং অর্থনৈতিক গণনা সমস্যার (economic calculation problem) সূত্রপাত। সাবেক ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান অ্যালান গ্রিনস্প্যান (Alan Greenspan) ২০০০ সালে স্কুলের উদ্ভাবকদের সম্পর্কে বলেন, “অস্ট্রিয়ান স্কুল তাদের সময় থেকে অনেক দূরে পৌঁছেছে এবং আমার মতে, সম্ভবত কীভাবে বেশিরভাগ মূলধারার অর্থনীতিবিদদের [যুক্তরাষ্ট্রে] চিন্তায় একটি অপরিবর্তনীয় প্রভাব ফেলেছে।”

শিকাগো স্কুল

শিকাগো স্কুল অফ ইকোনমিকস (Chicago school of economics) অর্থনৈতিক চিন্তাধারার একটি নব্যধ্রুপদী বা নিওক্লাসিকাল স্কুল যা অর্থনীতিবিদদের একাডেমিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান, যার মূল কেন্দ্র শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Chicago) অধ্যাপকগণ। শিকাগো ম্যাক্রোইকোনমিক তত্ত্ব (Chicago macroeconomic theory) কাইনেশিয়ানিজমকে (Keynesianism) প্রত্যাখ্যান করে মনেটারিজম (monetarism) গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি নিওক্লাসিকাল ম্যাক্রোইকোনমিক্স (new classical macroeconomics) এর দিকে ঝুঁকে পড়ে যা যৌক্তিক প্রত্যাশার (rational expectations) ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত ছিল। এই স্কুলটি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত, যেমন মিল্টন ফ্রিডম্যান (Milton Friedman), জর্জ স্টিগলার (George Stigler), রোনাল্ড কোস (Ronald Coase) এবং গ্যারি বেকার (Gary Becker)। ২১ শতকে, অর্থনীতিবিদ মার্ক স্কুসেন (Mark Skousen) ফ্রিডরিখ হায়েককে (Friedrich Hayek) একজন মূল অর্থনীতিবিদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যিনি ২০ শতকে এই স্কুলকে প্রভাবিত করেছিলেন।

এই স্কুলটি সরকারী হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকার উপর জোর দেয় এবং সাধারণত বাজারের নিয়ন্ত্রণকে অকার্যকর হিসাবে প্রত্যাখ্যান করে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির (central banks) দ্বারা অর্থ সরবরাহের নিয়ন্ত্রণের (monetarism) ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করে। যদিও স্কুলটির সাথে নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) সংযোগকে কখনও কখনও এর সমর্থকরা প্রতিরোধ করে, এর অর্থনীতিতে সরকারী হস্তক্ষেপ হ্রাস এবং লেসে-ফেয়ার (laissez-faire) মতাদর্শের উপর জোর দেওয়ার কারণে শিকাগো স্কুল এবং নিওলিবারাল অর্থনীতির মধ্যে একটি সংযুক্তি গড়ে উঠেছে।

ওয়াশিংটন কনসেনসাস

ওয়াশিংটন কনসেনসাস (Washington Consensus) নিওলিবারালিজমের সাথে প্রায়ই যুক্ত একটি মানক নীতি প্রেসক্রিপশনের সেট যা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund বা IMF), বিশ্বব্যাংক (World Bank) এবং মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (US Department of Treasury) দ্বারা সংকটময় উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য বিকাশিত হয়েছিল। এই প্রেসক্রিপশনগুলি প্রায়শই IMF এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণের শর্ত হিসাবে যুক্ত থাকে এবং বাজার উদারীকরণ (market liberalization) এর উপর ফোকাস করে, বিশেষ করে বাণিজ্য বাধা হ্রাস, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলির বেসরকারীকরণ এবং সরকারি বাজেট ঘাটতি হ্রাসের উপর। উইলিয়ামসন (Williamson) নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) সাথে তার নীতির যে কোনো সংযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এই শব্দটির ব্যবহার নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন যে, তার প্রস্তাবিত মূল ১০টি পয়েন্ট ছিল আর্থিক শৃঙ্খলা (fiscal discipline) এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার (macroeconomic stabilization) মডেল হিসেবে। এগুলি মনেটারিজম (monetarism), সরবরাহ-পক্ষ অর্থনীতি (supply-side economics), বা একটি সর্বনিম্ন রাষ্ট্র (minimal state) এর সাথে সম্পর্কিত নয়, যেগুলি উইলিয়ামসনের মতে নিওলিবারাল মডেলের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

রাজনৈতিক নীতির দিকসমূহ

নিওলিবারাল নীতিগুলি (neoliberal policies) অর্থনৈতিক উদারীকরণের (economic liberalization) চারপাশে কেন্দ্রিত, যার মধ্যে বাণিজ্য বাধা হ্রাস এবং মুক্ত বাণিজ্য (free trade) বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য নীতিগুলি, শিল্পের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (deregulation of industry), রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগগুলির বেসরকারীকরণ (privatization of state-owned enterprises), সরকারি ব্যয় হ্রাস (reductions in government spending), এবং মনেটারিজম (monetarism) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নিওলিবারাল তত্ত্বে বলা হয়েছে যে মুক্ত বাজার (free markets) অর্থনৈতিক দক্ষতা (economic efficiency), অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (economic growth) এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন (technological innovation) উৎসাহিত করে। রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ, এমনকি যদি এই ঘটনাগুলি উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে হয়, সাধারণত অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা (economic performance) খারাপ করে তোলে বলে বিশ্বাস করা হয়।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা (Economic and political freedom)

অনেক নিওলিবারাল চিন্তাবিদ যুক্তি দেন যে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা (economic and political freedom) একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। মিল্টন ফ্রিডম্যান (Milton Friedman) তার বই Capitalism and Freedom এ যুক্তি দেন যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (economic freedom), নিজেই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হওয়ার পাশাপাশি, রাজনৈতিক স্বাধীনতার (political freedom) জন্যও প্রয়োজনীয় শর্ত। তিনি দাবি করেন যে কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ সবসময় রাজনৈতিক দমন (political repression) এর সাথে থাকে। তার মতে, একটি নিয়ন্ত্রণমুক্ত বাজার অর্থনীতিতে (unregulated market economy) সব লেনদেন স্বেচ্ছায় হয় এবং এটি মানুষের জন্য অনেক ধরনের পছন্দের সুযোগ দেয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি দমনমূলক রাজনৈতিক নেতাদের জন্য একটি মৌলিক হুমকি সৃষ্টি করে, কারণ এটি তাদের অর্থনৈতিকভাবে মানুষকে বাধ্য করার ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের নির্মূলের মাধ্যমে, অর্থনৈতিক ক্ষমতা রাজনৈতিক ক্ষমতা থেকে পৃথক হয় এবং উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। ফ্রিডম্যানের মতে, প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদ (competitive capitalism) সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ব্যক্তিগত বাজারে উৎপাদনশীলতার ভিত্তিতে লেনদেন হয়। এর ফলে, বাজারের শক্তিগুলি সংখ্যালঘুদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের জাতি, ধর্ম বা অন্যান্য অপ্রাসঙ্গিক কারণে বৈষম্য করতে পারে না, যা তাদের বৈষম্য থেকে রক্ষা করে। ফ্রিডরিখ হায়েক (Friedrich Hayek) তার বই The Road to Serfdom এ একটি অনুরূপ যুক্তি প্রদান করেন: “অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র মানব জীবনের একটি খাতের নিয়ন্ত্রণ নয় যা অন্যদের থেকে পৃথক করা যেতে পারে; এটি আমাদের সমস্ত লক্ষ্য অর্জনের উপায়গুলির নিয়ন্ত্রণ।”

মুক্ত বাণিজ্য (Free trade)

নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) একটি কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য হল মুক্ত বাণিজ্যের (free trade) সমর্থন। মুক্ত বাণিজ্যকে সক্ষম করার নীতিগুলি, যেমন উত্তর আমেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (North American Free Trade Agreement বা NAFTA), প্রায়শই নিওলিবারালিজমের সাথে যুক্ত। নিওলিবারালরা যুক্তি দেন যে মুক্ত বাণিজ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (economic growth) প্রচার করে, দারিদ্র্য হ্রাস করে, তুলনামূলক সুবিধার (comparative advantage) ফলস্বরূপ নিম্ন মূল্য উত্পাদন করে, ভোক্তার পছন্দ সর্বাধিক করে এবং স্বাধীনতার জন্য অপরিহার্য। তারা বিশ্বাস করেন যে দুই পক্ষের মধ্যে স্বেচ্ছাচারী বাণিজ্য (voluntary trade) সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ করা উচিত নয়। সম্পর্কিতভাবে, নিওলিবারালরা যুক্তি দেন যে প্রোটেকশনিজম (protectionism) ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর, যারা পণ্যের জন্য উচ্চ মূল্য দিতে বাধ্য হবে; এটি মানুষকে সম্পদের অপব্যবহার করতে প্ররোচিত করে; বিনিয়োগকে বিকৃত করে; উদ্ভাবনকে স্তব্ধ করে; এবং ভোক্তা এবং অন্যান্য শিল্পের ব্যয়ে নির্দিষ্ট শিল্পগুলিকে সমর্থন করে।

মনেটারিজম (Monetarism)

মনেটারিজম (Monetarism) হল একটি অর্থনৈতিক তত্ত্ব যা সাধারণত নিওলিবারালিজমের সাথে যুক্ত। এটি মিল্টন ফ্রিডম্যান (Milton Friedman) দ্বারা প্রণীত, যা অর্থ সরবরাহের (money supply) সামষ্টিক অর্থনৈতিক দিকগুলির উপর মনোযোগ দেয়, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকিংয়ের (central banking) প্রভাবগুলির উপর। এটি যুক্তি দেয় যে অর্থ সরবরাহের অতিরিক্ত সম্প্রসারণ স্বভাবতই মুদ্রাস্ফীতি (inflationary) এবং আর্থিক কর্তৃপক্ষের (monetary authorities) উচিত প্রধানত মূল্য স্থিতিশীলতা (price stability) বজায় রাখার উপর মনোনিবেশ করা, এমনকি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মতো অন্যান্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলির খরচে হলেও।

মনেটারিজম প্রায়শই অর্থনীতিবিদ পল ভলকার (Paul Volcker) এর চেয়ারম্যানশিপের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (U.S. Federal Reserve) এর নীতিগুলির সাথে যুক্ত, যা উচ্চ সুদের হারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে, যে নীতিগুলো ১৯৭০-এর এবং ১৯৮০-এর দশকের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি শেষ করার জন্য ব্যাপকভাবে কৃতিত্ব পায় এবং ১৯৮০-১৯৮২ সালের মন্দার (1980–1982 recession) কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। মনেটারিজম চিলিতে বিশেষভাবে শক্তিশালী ছিল, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় (যা ৬০০% এর উপরে চলে গিয়েছিল) সুদের হার বাড়িয়েছিল। এটি মুদ্রাস্ফীতি ১০% এর নিচে নামাতে সফল হয়েছিল, তবে এর ফলে চাকরির ক্ষতিও হয়েছিল।

সমালোচনা

নিওলিবারালিজম (neoliberalism) একাডেমিক, সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা এবং বাম ও ডান উভয় রাজনৈতিক দলের কর্মীদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছে। নিওলিবারালিজমের তত্ত্ব বা বাস্তব প্রয়োগের উল্লেখযোগ্য সমালোচকরা হলেন অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগ্লিটজ (Joseph Stiglitz), অমর্ত্য সেন (Amartya Sen), মাইকেল হাডসন (Michael Hudson), হা-জুন চ্যাং (Ha-Joon Chang), রবার্ট পলিন (Robert Pollin), টমাস পিকেটি (Thomas Piketty), এবং রিচার্ড ডি. ওলফ (Richard D. Wolff); ভাষাবিজ্ঞানী নোম চমস্কি (Noam Chomsky); ভূগোলবিদ ও নৃবিজ্ঞানী ডেভিড হার্ভে (David Harvey); স্লোভেনিয়ান মহাদেশীয় দার্শনিক স্লাভোয় জিজেক (Slavoj Žižek); রাজনৈতিক কর্মী ও জনবুদ্ধিজীবী কর্নেল ওয়েস্ট (Cornel West); মার্ক্সবাদী নারীবাদী গেইল ডাইনস (Gail Dines); ব্রিটিশ সঙ্গীতশিল্পী ও রাজনৈতিক কর্মী বিলি ব্র্যাগ (Billy Bragg); লেখক, কর্মী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা নাওমি ক্লেইন (Naomi Klein); ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস (Pope Francis); সাংবাদিক এবং পরিবেশ কর্মী জর্জ মনবিয়ট (George Monbiot); বেলজিয়ান মনোবিজ্ঞানী পল ভেরাহেগ (Paul Verhaeghe); সাংবাদিক ও কর্মী ক্রিস হেজেস (Chris Hedges); রক্ষণশীল দার্শনিক রজার স্ক্রুটন (Roger Scruton); এবং বিকল্প-বিশ্বায়ন আন্দোলন (alter-globalization movement), যার মধ্যে ATTAC এর মতো গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত।

২০০৮ সালের মহামন্দার (Great Recession) প্রভাব নিওলিবারালিজমের সমালোচনার একটি নতুন প্রবাহ উত্থাপন করেছে।

বাজার মৌলবাদ (Market fundamentalism)

নিওলিবারাল চিন্তাধারা প্রায়ই সমালোচিত হয়েছে এমন বিশ্বাসের জন্য যা বাজারের দক্ষতা, কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক পরিকল্পনার তুলনায় বাজারের শ্রেষ্ঠত্ব, বাজারের স্ব-সংশোধন ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রদানের ক্ষেত্রে বাজারের ক্ষমতার প্রতি অযাচিত বিশ্বাস হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান (Paul Krugman) যুক্তি দিয়েছেন যে নিওলিবারাল প্রচারিত “লেসে-ফেয়ার নিরঙ্কুশবাদ” (laissez-faire absolutism) একটি বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশে অবদান রেখেছে যেখানে বাজারের প্রতি বিশ্বাস এবং সরকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রায়ই প্রমাণকে অগ্রাহ্য করে। রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ওয়েন্ডি ব্রাউন (Wendy Brown) আরও এগিয়ে গিয়ে বলেছেন যে নিওলিবারালিজমের প্রধান উদ্দেশ্য হল “জীবনের সমস্ত দিকের অর্থনৈতিকীকরণ”।

বেশ কয়েকজন পণ্ডিত যুক্তি দিয়েছেন যে, বাস্তবে, এই “বাজার মৌলবাদ” (market fundamentalism) এমন সামাজিক পণ্যগুলির অবহেলা করেছে যা অর্থনৈতিক সূচক দ্বারা ধরা পড়ে না, গণতন্ত্রের ক্ষয়, অসংযত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রচার এবং সামাজিক ডারউইনিজম, এবং অর্থনৈতিক অদক্ষতা সৃষ্টি করেছে। কিছু সমালোচক দাবি করেন যে নিওলিবারাল চিন্তাধারা অর্থনৈতিক সূচক যেমন জিডিপি প্রবৃদ্ধি (GDP growth) এবং মুদ্রাস্ফীতিকে (inflation) সামাজিক কারণগুলির উপরে অগ্রাধিকার দেয় যা সহজে পরিমাপযোগ্য নয়, যেমন শ্রম অধিকার (labor rights) এবং উচ্চশিক্ষার (higher education) প্রবেশাধিকার। এই অর্থনৈতিক দক্ষতার উপর গুরুত্ব আরোপ অন্যান্য, সম্ভবত আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলি বিপন্ন করতে পারে বা শোষণ এবং সামাজিক অবিচারকে প্রচার করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, নৃবিজ্ঞানী মার্ক ফ্লেমিং (Mark Fleming) যুক্তি দেন যে যখন একটি পরিবহন ব্যবস্থার কর্মক্ষমতা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দক্ষতার (economic efficiency) শর্তে মূল্যায়ন করা হয়, তখন শক্তিশালী শ্রমিকদের অধিকারকে (workers’ rights) সর্বাধিক কর্মক্ষমতার প্রতিবন্ধকতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এই দাবিটি সান ফ্রান্সিসকো মিউনিসিপাল রেলওয়ে (San Francisco Municipal Railway বা Muni) এর একটি কেস স্টাডি দিয়ে সমর্থন করেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধীরগতির প্রধান নগর পরিবহন ব্যবস্থা এবং সময় মতো পারফরম্যান্সের হার সবচেয়ে খারাপগুলির মধ্যে একটি। তিনি দাবি করেন যে এই খারাপ পারফরম্যান্সটি কাঠামোগত সমস্যাগুলির কারণে, যেমন পুরানো বহর এবং রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা। তিনি যুক্তি দেন যে নিওলিবারাল বিশ্বদর্শন পরিবহন চালক এবং তাদের শ্রমিক ইউনিয়নকে আলাদা করে দেখেছে, চালকদের অসম্ভব ট্রানজিট সময়সূচী মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য দোষারোপ করে এবং চালকদের জন্য অতিরিক্ত খরচকে অর্থের অপচয় হিসাবে বিবেচনা করে যা সিস্টেমের গতি এবং পারফরম্যান্স কমায়। এর ফলে চালকদের ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সহিংস আক্রমণ এবং নির্মম জনসাধারণের কুৎসা প্রচারণা শুরু হয়, যা অবশেষে প্রস্তাবনা জি (Proposition G) এর পাস হওয়ার ফলে চালকদের ইউনিয়নের ক্ষমতা গুরুতরভাবে হ্রাস করে।

আমেরিকান পণ্ডিত ও সাংস্কৃতিক সমালোচক হেনরি গিরোক্স (Henry Giroux) অভিযোগ করেন যে নিওলিবারাল বাজার মৌলবাদ (market fundamentalism) একটি বিশ্বাসকে উৎসাহিত করে যে বাজার শক্তিগুলি সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সংগঠিত করা উচিত, যার মধ্যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবন অন্তর্ভুক্ত এবং এটি একটি সামাজিক ডারউইনিস্ট নৈতিকতাকে (social Darwinist ethic) প্রচার করে যা সামাজিক চাহিদার উপরে আত্মস্বার্থকে উত্তোলিত করে। মার্ক্সবাদী অর্থনৈতিক ভূগোলবিদ ডেভিড হার্ভে (David Harvey) যুক্তি দেন যে নিওলিবারালিজম অসংযত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে (unbridled individualism) প্রচার করে যা সামাজিক সংহতির (social solidarity) জন্য ক্ষতিকর।

অর্থনৈতিক উদারীকরণের (economic liberalization) সমর্থকরা প্রায়ই উল্লেখ করেছেন যে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (economic freedom) বৃদ্ধি রাজনৈতিক স্বাধীনতার (political freedom) উপর প্রত্যাশা বাড়ায়, তবে কিছু পণ্ডিত অ-গণতান্ত্রিক কিন্তু বাজার-উদার (market-liberal) শাসনব্যবস্থা এবং বাজার প্রক্রিয়াগুলি দ্বারা গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষয়কে এই চরিত্রায়নের ইতিহাস-বিরোধী প্রমাণ হিসাবে দেখেন। কিছু পণ্ডিত যুক্তি দেন যে নিওলিবারাল ফোকাস এমনকি গণতন্ত্রের (democracy) মৌলিক উপাদানগুলিকে দুর্বল করে দিতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার (University of Pennsylvania) নৃবিজ্ঞানী ক্রিস্টেন ঘডসি (Kristen Ghodsee) যুক্তি দেন যে ঠাণ্ডা যুদ্ধের (Cold War) শেষের দিকে পশ্চিমা শক্তিগুলির বিজয়ী মনোভাব এবং সমস্ত বামপন্থী রাজনৈতিক আদর্শকে স্তালিনবাদের (Stalinism) অতিরিক্ততার সাথে যুক্ত করার প্রবণতা নিওলিবারাল মুক্ত-বাজার পুঁজিবাদকে (free-market capitalism) শূন্যস্থান পূরণের সুযোগ করে দেয়। এর ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্কার দুর্বল হয়, এবং প্রাক্তন পূর্ব ব্লক (Eastern Bloc) এবং পশ্চিমের অনেক অংশে অর্থনৈতিক দুর্দশা, বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক অসমতা বৃদ্ধি পায়, যা চরম জাতীয়তাবাদের পুনরুত্থানকে উস্কে দেয়। কস্তাস প্যানায়োটাকিস (Costas Panayotakis) যুক্তি দেন যে নিওলিবারালিজমের দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক অসমতা রাজনৈতিক ক্ষমতার অসমতা তৈরি করে, গণতন্ত্রকে দুর্বল করে এবং নাগরিকদের অর্থপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের ক্ষমতাকে হ্রাস করে।

অর্থনৈতিক দক্ষতার (economic efficiency) উপর ফোকাস থাকা সত্ত্বেও, কিছু সমালোচক অভিযোগ করেন যে নিওলিবারাল নীতিগুলি প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক অদক্ষতা সৃষ্টি করে। একটি সরকারী মালিকানাধীন একচেটিয়া সংস্থার প্রতিস্থাপন বেসরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলির দ্বারা অর্থনীতির মাপের দক্ষতাগুলির (economies of scale) সাথে সম্পর্কিত অদক্ষতাগুলি হ্রাস করতে পারে। কাঠামোগতভাবে, কিছু অর্থনীতিবিদ যুক্তি দেন যে নিওলিবারালিজম একটি ব্যবস্থা যা খরচকে সামাজিকীকরণ করে এবং লাভকে বেসরকারিকরণ করে। তারা যুক্তি দেন যে নিওলিবারাল নীতিগুলি সামাজিকভাবে ক্ষতিকর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলির জন্য ব্যক্তিগত দায়িত্বকে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে, এই ক্ষতি কমাতে সরকারকে অর্থনীতিতে পশ্চাদমুখী নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হতে পারে, যা মূলত বেসরকারি ব্যক্তিদের অপব্যবহারের কারণে তৈরি হয়।

আমেরিকান রাজনৈতিক ধর্মতত্ত্ববিদ অ্যাডাম কোৎসকো (Adam Kotsko) যুক্তি দেন যে সমসাময়িক ডানপন্থী পপুলিজম, যেমন ব্রেক্সিট (Brexit) এবং ট্রাম্প প্রশাসন (Trump Administration), নিওলিবারালিজমের একটি “বিপথগামী” রূপের প্রতিনিধিত্ব করে, যা এর মূল তত্ত্বগুলি গ্রহণ করে কিন্তু এগুলিকে নতুন, প্রায় “প্যারোডিক” চরম পর্যায়ে ঠেলে দেয়।

অসমতা (Inequality)

যুক্তরাষ্ট্রে (United States) সম্পদ বৈষম্য ১৯৮৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন যে নিওলিবারাল নীতিগুলি (neoliberal policies) অর্থনৈতিক অসমতা বৃদ্ধি করেছে এবং বৈশ্বিক দারিদ্র্যকে তীব্রতর করেছে। সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ (Center for Economic and Policy Research বা CEPR) এর ডিন বেকার (Dean Baker) ২০০৬ সালে যুক্তি দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে বৃদ্ধি পাওয়া অসমতার পিছনে প্রধান কারণ ছিল নিওলিবারাল নীতির একটি সিরিজ, যেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল মুদ্রাস্ফীতিবিরোধী পক্ষপাত, শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবা শিল্পে মুনাফা অর্জন।

অর্থনীতিবিদ ডেভিড হাওয়েল (David Howell) এবং মামাদু ডায়ালো (Mamadou Diallo) যুক্তি দেন যে নিওলিবারাল নীতিগুলি একটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির দিকে অবদান রেখেছে যেখানে ৩০% কর্মী কম মজুরি পান (পূর্ণকালীন কর্মীদের জন্য মধ্যম মজুরির দুই-তৃতীয়াংশের চেয়ে কম) এবং শ্রমশক্তির ৩৫% অপূর্ণভাবে নিযুক্ত রয়েছে, যখন দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার মাত্র ৪০% যথাযথভাবে নিযুক্ত। নিওলিবারালিজমের বৈশ্বিকীকরণের জন্য “প্রিকারিয়াট” (precariat) নামে একটি নতুন সামাজিক শ্রেণির উদ্ভবের জন্য দায়ী করা হয়েছে, যারা তীব্র সামাজিক-অর্থনৈতিক অনিরাপত্তা এবং বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি।

যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প সম্পর্কের নিওলিবারাল রূপান্তর ইউনিয়নের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে এবং নিয়োগকর্তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। অনেকেই মনে করেন এটি প্রিক্যারিটির বৃদ্ধি ঘটিয়েছে, যা প্রতি বছর প্রায় ১২০,০০০ অতিরিক্ত মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ভেনিজুয়েলায় (Venezuela), ভেনিজুয়েলা সংকটের (Venezuelan crisis) পূর্বে শ্রম বাজারের নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ (deregulation) বেশি অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান এবং শিল্প দুর্ঘটনা ও পেশাগত রোগের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটায়। সুইডেনে (Sweden) মাত্র ৬% কর্মী ওসিডি (OECD) এর মাপকাঠিতে নিম্ন মজুরির (low wages) সাথে যুক্ত। কিছু পণ্ডিতরা যুক্তি দেন যে সুইডেনে নিওলিবারাল সংস্কারগুলির (neoliberal reforms) কারণে, বিশেষ করে পাবলিক সেবার বেসরকারীকরণ (privatization of public services) এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধার (state benefits) হ্রাসের ফলে, আয় বৈষম্য (income inequality) সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে, সুইডেন ওসিডির (OECD) সদস্য দেশগুলির মধ্যে আয় বৈষম্যের ক্ষেত্রে দ্রুততম বৃদ্ধির দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

আইএমএফ (IMF) এর গবেষকদের ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন নিওলিবারাল নীতিগুলির জন্য অর্থনৈতিক অসমতা বৃদ্ধির সমালোচনা করে। যদিও প্রতিবেদনে নিওলিবারালিজমের প্রশংসা করা হয়েছে, তবে এটি উল্লেখ করেছে যে কিছু নিওলিবারাল নীতি, বিশেষ করে পুঁজির স্বাধীনতা (freedom of capital) এবং রাজস্ব সংহতকরণ (fiscal consolidation), “বর্ধিত অসমতা” এর দিকে নিয়ে গেছে, যা “স্থায়ী [অর্থনৈতিক] সম্প্রসারণকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।” প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে নিওলিবারাল নীতিগুলির বাস্তবায়ন তিনটি অশান্তিকর উপসংহারে পৌঁছেছে:

  1. উন্নত প্রবৃদ্ধির (economic growth) শর্তে সুবিধাগুলি একটি অনেক দেশের (wide range of countries) ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করা কঠিন।
  2. বর্ধিত অসমতা (increased inequality) এর ফলে যে ক্ষতিকর প্রভাবগুলো দেখা যায়, তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। এই ক্ষতিকর প্রভাবগুলো নিওলিবারাল এজেন্ডার (neoliberal agenda) কিছু দিকের প্রবৃদ্ধি (growth) এবং সমতার (equity) প্রভাবগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখার সমস্যাগুলি তুলে ধরে। সহজ কথায়, এই ক্ষতিকর প্রভাবগুলো দ্বারা বোঝায় যে, প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য নিওলিবারাল নীতিগুলি প্রয়োগ করার ফলে সমতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
  3. বর্ধিত অসমতা (increased inequality) প্রবৃদ্ধির স্তর (level of growth) এবং স্থায়িত্বকে (sustainability) ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমনকি যদি প্রবৃদ্ধি নিওলিবারাল এজেন্ডার (neoliberal agenda) একমাত্র বা প্রধান উদ্দেশ্য হয়, তবুও এই এজেন্ডার সমর্থকদের বিতরণমূলক প্রভাবগুলির (distributional effects) প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

কিছু পণ্ডিত মনে করেন যে নিওলিবারাল নীতিগুলির মাধ্যমে বৃদ্ধি পাওয়া অসমতা একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির মতো গোপন উদ্দেশ্য নয়। মার্ক্সবাদী অর্থনৈতিক ভূগোলবিদ ডেভিড হার্ভে (David Harvey) নিওলিবারালিজমকে একটি “শ্রেণি প্রকল্প” (class project) হিসাবে বর্ণনা করেছেন যা “কর্পোরেট পুঁজিবাদী শ্রেণি দ্বারা পরিচালিত”, এবং তার বই A Brief History of Neoliberalism এ যুক্তি দিয়েছেন যে নিওলিবারালিজম অর্থনৈতিক এলিটদের শ্রেণি শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদ জেরার্ড ডুমেনিল (Gérard Duménil) এবং ডমিনিক লেভি (Dominique Lévy) মনে করেন যে “উচ্চ শ্রেণির ক্ষমতা, আয় এবং সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং বৃদ্ধি” নিওলিবারাল এজেন্ডার প্রধান উদ্দেশ্য। অর্থনীতিবিদ ডেভিড এম. কোটজ (David M. Kotz) যুক্তি দেন যে নিওলিবারালিজম “মূলত শ্রমের উপর পুঁজির সম্পূর্ণ আধিপত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত”। এলিজাবেথ এস. অ্যান্ডারসন (Elizabeth S. Anderson) লেখেন যে নিওলিবারালিজম “অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা বেসরকারি ব্যবসায়, নির্বাহীদের এবং অত্যন্ত ধনী ব্যক্তিদের কাছে স্থানান্তরিত করেছে” এবং “এই সংগঠনগুলি এবং ব্যক্তিরা আরও বেশি করে অন্য সকলকে শাসন করছে।”

সমাজবিজ্ঞানী থমাস ভলস্কো (Thomas Volscho) যুক্তি দেন যে নিওলিবারালিজমের আরোপ যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭০-এর দশকে পুঁজিবাদী এলিটদের দ্বারা একটি সচেতন রাজনৈতিক আন্দোলনের ফলে উদ্ভূত হয়েছিল, যারা দুটি স্ব-ঘোষিত সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল: পুঁজিবাদের বৈধতা এবং শিল্পে লাভজনকতার হার হ্রাস। পিটার গোয়ান (Peter Gowan) তার বই The Global Gamble এ যুক্তি দিয়েছেন যে “নিওলিবারালিজম” শুধুমাত্র একটি মুক্ত বাজার মতাদর্শ ছিল না বরং “একটি সামাজিক প্রকৌশল প্রকল্প” ছিল। বিশ্বব্যাপী, এটি মূল দেশগুলির পণ্য এবং আর্থিক প্রবাহের জন্য একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অর্থনীতি উন্মুক্ত করা বোঝাত। দেশের মধ্যে (domestically), নিওলিবারালিজম (neoliberalism) এর অর্থ হলো সামাজিক সম্পর্কের পুনর্গঠন, যা ঋণদাতা (creditors) এবং ভাড়াটে মালিকদের (rentiers) স্বার্থের পক্ষে কাজ করে। এর ফলে, উৎপাদনশীল খাত (productive sector) আর্থিক খাতের (financial sector) অধীনস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়াও, নিওলিবারাল নীতিগুলি কাজের জনসংখ্যার (working population) বৃহৎ অংশ থেকে সম্পদ (wealth), ক্ষমতা (power), এবং নিরাপত্তা (security) কে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করে।

জোনাথন হপকিনের (Jonathan Hopkin) মতে, ১৯৮০-এর দশকে নিওলিবারাল এজেন্ডা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিয়েছিল, যা এটিকে “বাজারের নির্দয় শক্তির অধীনস্থ সমাজের চরমতম উদাহরণ” করে তুলেছে। তিনি যুক্তি দেন যে এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অসমতা “ধনী গণতন্ত্রগুলির জন্য অভূতপূর্ব স্তরে” পৌঁছেছে এবং উল্লেখ করেন যে গড় আয় “বিশ্বমানের দ্বারা খুবই উচ্চ” হলেও, মার্কিন নাগরিকরা “তাদের (গরিব দেশের নাগরিকদের) তুলনায় বেশি বস্তুগত কষ্টের সম্মুখীন হয়”। এই উন্নয়নগুলি, আর্থিক অস্থিরতা এবং সীমিত রাজনৈতিক পছন্দ সহ, যুক্তরাষ্ট্রকে রাজনৈতিক মেরুকরণ, অস্থিরতা এবং বিদ্রোহের দিকে নিয়ে গেছে।

২০২২ সালে Perspectives on Psychological Science এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যেসব দেশে নিওলিবারাল প্রতিষ্ঠানগুলির নীতির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে, সেসব দেশের জনগণের মনস্তত্ত্ব এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে তারা বড় আকারের আয় বৈষম্য সহ্য করতে বেশি ইচ্ছুক, এমনকি তারা তা অধিক সমানাধিকারমূলক ফলাফলের চেয়ে বেশি পছন্দ করে।

কর্পোরাটোক্রেসি (Corporatocracy)

কিছু প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন যে নিওলিবারাল নীতিগুলি (neoliberal policies) কর্পোরেশনগুলির (corporations) ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সম্পদকে উর্ধ্ব শ্রেণির (upper classes) দিকে সরিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, জেমি পেক (Jamie Peck) এবং অ্যাডাম টিকেল (Adam Tickell) যুক্তি দেন যে শহুরে নাগরিকরা (urban citizens) ক্রমশ দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক শর্তগুলি আকার দেওয়ার ক্ষমতা হারাচ্ছেন, যা প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতির (competitive economy) সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলি দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund বা IMF) এবং বিশ্বব্যাংক (World Bank), দুটি প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যা প্রায়শই নিওলিবারাল মতাদর্শ (neoliberal ideology) প্রচার করে নিওলিবারাল নীতিগুলিকে বিশ্বব্যাপী অগ্রসর করার জন্য সমালোচিত হয়েছে। লিবার্টারিয়ান জার্নাল The Freeman এর সম্পাদক শেলডন রিচম্যান (Sheldon Richman) যুক্তি দেন যে IMF সমস্যাগ্রস্ত দেশগুলিতে কর্পোরাটিস্ট-স্বাদযুক্ত (corporatist-flavored) ‘নিওলিবারালিজম’ আরোপ করেছে। তিনি বলেন যে IMF এর ব্যয় কমানো (spending cuts) এবং কর বাড়ানোর নীতি (tax increases), পাশাপাশি পিতৃপ্রতিম অতিরাষ্ট্রীয় আমলাদের (paternalistic supranational bureaucrats) অধীনতা, উন্নয়নশীল বিশ্বে “দীর্ঘমেয়াদী নির্ভরতা (long-term dependency), চিরস্থায়ী ঋণ (perpetual indebtedness), নৈতিক ঝুঁকি (moral hazard) এবং রাজনৈতিককরণ (politicization)” সৃষ্টি করেছে, যা “বাস্তব বাজার সংস্কার” (real market reform)-কে ব্যাহত করেছে এবং “সত্যিকারের উদারতাবাদের” (genuine liberalism) কারণকে পিছনে ফেলেছে।

কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটির (Colorado State University) অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক রামা বাসুদেবান (Ramaa Vasudevan) বলেন যে নিওলিবারাল যুগে (neoliberal era) যুক্তরাষ্ট্রের প্রচারিত বাণিজ্য নীতি (trade policies) ও চুক্তিগুলি (treaties), পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক এবং IMF দ্বারা পরিচালিত বেলআউটগুলি (bailouts), কর্পোরেট পুঁজিকে (corporate capital) বাণিজ্য সুরক্ষা (trade protections) বা জাতীয় সীমানা (national borders) দ্বারা বাধাগ্রস্ত না হয়ে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারণ করতে সহায়তা করেছে। বাসুদেবান বলেন, এই বিশ্বব্যাপী কর্পোরেট পুঁজির সম্প্রসারণ, “লাভজনকতার চাহিদাগুলির সাথে সর্বাধিক অনুকূল একটি বৈশ্বিক শ্রম বিভাগ (global division of labor) পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে” যা “একটি নির্মম, বৈশ্বিক নিম্নমুখী প্রতিযোগিতা” (brutal, global race to the bottom)-কে সহজতর করেছে।

ডেনমার্কের সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ (Center for Global Development Research)-এর সিনিয়র ফেলো মার্ক আর্থার (Mark Arthur) লিখেছেন যে নিওলিবারালিজমের প্রভাব “এন্টাই-কর্পোরাটিস্ট” (anti-corporatist) আন্দোলনের উদ্ভব ঘটিয়েছে। এই “এন্টাই-কর্পোরাটিস্ট” আন্দোলন কর্পোরেশন (corporations) এবং বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলি (global institutions) সরকারের কাছ থেকে যে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে তা পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনের চারপাশে গঠিত। তিনি বলেন যে অ্যাডাম স্মিথের (Adam Smith) “মাইন্ডফুল মার্কেটের নিয়ম” (rules for mindful markets) ছিল এই এন্টাই-কর্পোরেট আন্দোলনের ভিত্তি, “যার ফলে সরকার কর্পোরেশনগুলিকে প্রতিবেশীর সুখকে ব্যাহত করা থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল।”

গণগ্রেফতার (Mass incarceration)

অনেক পণ্ডিত যুক্তরাষ্ট্রে (United States) দরিদ্র জনগণের গণগ্রেফতারকে (mass incarceration) নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) উত্থানের সাথে সংযুক্ত করেছেন। সমাজবিজ্ঞানী লোইক ওয়াকান্ট (Loïc Wacquant) এবং মার্ক্সবাদী অর্থনৈতিক ভূগোলবিদ ডেভিড হার্ভে (David Harvey) যুক্তি দেন যে দারিদ্র্যকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং গণগ্রেফতার (mass incarceration) একটি নিওলিবারাল নীতি (neoliberal policy)। এই নীতি অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক জনগণের মধ্যে সামাজিক অস্থিরতা (social instability) মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। অর্থাৎ, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর সামাজিক অসন্তোষ এবং অস্থিরতা দমনের উদ্দেশ্যে এই নীতিগুলি বাস্তবায়ন করা হয়। ওয়াকান্টের মতে, এই পরিস্থিতি অন্যান্য নিওলিবারাল নীতির বাস্তবায়নের ফলে উদ্ভূত হয়েছে, যা সামাজিক কল্যাণ রাষ্ট্রের (social welfare state) পুনর্গঠন, দণ্ডমূলক ওয়ার্কফেয়ারের (punitive workfare) উত্থান, শহুরে এলাকাগুলির (urban areas) জেন্ট্রিফিকেশন বৃদ্ধি, পাবলিক ফাংশনের বেসরকারীকরণ (privatization of public functions), অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণমুক্তির (economic deregulation) মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেণির জন্য সম্মিলিত সুরক্ষার সংকোচন এবং কম মজুরির অনিশ্চিত মজুরি শ্রমের (precarious wage labor) উত্থানকে সহজতর করেছে। বিপরীতে, উচ্চতর সমাজের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে উচ্চ শ্রেণি এবং কর্পোরেশনগুলির অর্থনৈতিক অপরাধ যেমন প্রতারণা (fraud), আত্মসাৎ (embezzlement), ভেতরের লেনদেন (insider trading), ক্রেডিট এবং বীমা প্রতারণা (credit and insurance fraud), অর্থ পাচার (money laundering) এবং বাণিজ্য ও শ্রম কোডের (commerce and labor codes) লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহনশীল।

ওয়াকান্টের মতে, নিওলিবারালিজম সরকারকে সংকুচিত করে না, বরং একটি “সেন্টর স্টেট” (centaur state) স্থাপন করে, যেখানে শীর্ষে থাকা ব্যক্তিদের জন্য কম সরকারি তত্ত্বাবধান এবং নিচের স্তরের ব্যক্তিদের জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকে। ওয়াকান্টের তত্ত্বের উপর প্রসারণ করে, ডার্টমাউথ কলেজের (Dartmouth College) সমাজবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ জন এল. ক্যাম্পবেল (John L. Campbell) প্রস্তাব করেন যে বেসরকারীকরণের (privatization) মাধ্যমে কারাগার ব্যবস্থা সেন্টার স্টেটের (centaur state) উদাহরণ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন যে “একদিকে এটি নিম্নবিত্তকে শাস্তি দেয়, যারা কারাগারে ভর্তি হয়; অন্যদিকে, এটি উচ্চবিত্তকে লাভবান করে, যারা কারাগারের মালিক, এবং মধ্যবিত্তকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়, যারা কারাগার চালায়।” এছাড়াও, তিনি যুক্তি দেন যে কারাগার ব্যবস্থা আউটসোর্সিংয়ের (outsourcing) মাধ্যমে কর্পোরেশনগুলিকে উপকৃত করে, কারণ বন্দীরা “কিছু মার্কিন কর্পোরেশনের জন্য ধীরে ধীরে কম মজুরির শ্রমিকের উৎস হয়ে উঠছে।” ক্যাম্পবেল যুক্তি দেন যে বেসরকারীকরণ এবং আউটসোর্সিং উভয়ের মাধ্যমে, শাস্তিমূলক রাষ্ট্র (penal state) নিওলিবারালিজমকে প্রতিফলিত করে।

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের (York University) রাজনৈতিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড ম্যাকন্যালি (David McNally) যুক্তি দেন যে সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচিতে ব্যয় কমানো হয়েছে, কিন্তু নিওলিবারাল যুগে (neoliberal era) কারাগার নির্মাণে ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ার (California) “বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কারাগার নির্মাণ কর্মসূচি” রয়েছে। পণ্ডিত বার্নার্ড হারকোর্ট (Bernard Harcourt) যুক্তি দেন যে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণে অদক্ষ কিন্তু পুলিশিং এবং শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষ এই নিওলিবারাল ধারণা “গণগ্রেফতার” এর দিকে ধাবিত করেছে। ওয়াকান্ট এবং হারকোর্ট উভয়েই এই ঘটনাকে “নিওলিবারাল পেনালিটি” (Neoliberal Penality) হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

আর্থিকীকরণ (Financialization)

নিওলিবারাল নীতির (neoliberal policies) বাস্তবায়ন এবং ১৯৭০-এর দশকে নিওলিবারাল অর্থনৈতিক তত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা অনেক একাডেমিকদের দ্বারা আর্থিকীকরণের (financialization) মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, যার ফলাফল হিসেবে গ্রেট রিসেশন (Great Recession) ঘটেছে। বিশেষ করে, রিগ্যান প্রশাসন (Reagan administration) দ্বারা মুদ্রাবাদ (monetarism) এবং সরবরাহ-পক্ষ অর্থনীতির (supply-side economics) মতো বিভিন্ন নিওলিবারাল মতাদর্শগুলি সরকারি নীতিতে রূপান্তরিত করা হয়েছিল, যা সরকারী নিয়ন্ত্রণ হ্রাস এবং ট্যাক্স-অর্থায়িত রাষ্ট্র (tax-financed state) থেকে ঋণ-অর্থায়িত রাষ্ট্রে (debt-financed state) পরিবর্তনের ফলাফল ছিল। যদিও শিল্পের মুনাফাযোগ্যতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১৯৬০-এর দশকের সর্বোচ্চ সময়ে পুনরুদ্ধার করা যায়নি, ওয়াল স্ট্রিট (Wall Street) এবং আর্থিক পুঁজির (finance capital) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা রাষ্ট্রের ঋণ-অর্থায়নের কারণে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১৬ সালের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) একটি রিপোর্ট কিছু নিওলিবারাল নীতিকে বিশ্বজুড়ে আর্থিক সংকটের অবনতি ঘটানোর জন্য দায়ী করে, যা সংকটকে বড় এবং আরও ক্ষতিকর করে তুলেছে।

বিশ্বায়ন (Globalization)

নিওলিবারালিজমকে (neoliberalism) প্রায়ই পণ্ডিতরা বিশ্বায়নের (globalization) উৎসাহদাতা হিসেবে দেখেন, যা ব্যাপক সমালোচনার বিষয়। গত অর্ধ শতাব্দীতে হাজার হাজার বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ চুক্তি ‘ইনভেস্টর-স্টেট বিতর্ক নিষ্পত্তি’ (investor-state dispute settlement বা ISDS) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিশেষ অধিকার দিয়েছে, যাতে তারা ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পারে যখন একটি সরকার ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে, পরিবেশ সুরক্ষিত করতে বা একটি পারমাণবিক বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে আইন পাস করে।

নিওলিবারালিজমের বিশ্বায়নের ফলে “প্রিকারিয়াট” (precariat) নামক একটি নতুন শ্রেণীর উদ্ভব ঘটেছে, যারা অফশোরিং এবং বৈশ্বিক নিম্নমুখী প্রতিযোগিতার কারণে তীব্র সামাজিক-অর্থনৈতিক অনিরাপত্তা এবং বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি হয়েছে।

২০২২ সালে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জ (Global Environmental Change) জার্নালে জেসন হিকেল (Jason Hickel) এবং তার সহলেখকরা যুক্তি দেন যে নিওলিবারাল বিশ্বায়নের (neoliberal globalization) যুগে গ্লোবাল নর্থ (Global North) এবং গ্লোবাল সাউথের (Global South) মধ্যে অসম বিনিময় (unequal exchange) ঘটেছে। তাদের গবেষণা অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে গ্লোবাল সাউথ থেকে গ্লোবাল নর্থে কাঁচামাল (raw materials), শক্তি (energy) এবং শ্রমের (labor) মোট ২৪২ ট্রিলিয়ন ডলার (২০১০ সালের স্থায়ী মুদ্রায়) নেট স্থানান্তর হয়েছে।

অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ (Economic Nationalism)

নিওলিবারালিজমের সমালোচকরা মনে করেন যে এটি জাতীয় সার্বভৌমত্বকে (sovereignty) দুর্বল করে কসমোপলিটানিজম (cosmopolitanism) এবং বিশ্বায়নের (globalization) পক্ষে অবস্থান নেয়। নিওলিবারালিজম অভিবাসনকে (immigration) সমর্থন করে, বিপরীতে ডানপন্থী পপুলিস্ট রাজনৈতিক দলগুলি অভিবাসনের বিরোধিতা করে।

নিওলিবারালিজম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিগুলিতে (free trade agreements) বিনিয়োগকারী-রাষ্ট্র বিতর্ক নিষ্পত্তি (investor–state dispute settlement)-কে সমর্থন করে, যা সার্বভৌম অপ্রতিরোধ্যতা (sovereign immunity) এবং জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ সুরক্ষা এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত সংস্কার এবং আইন প্রণয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষমতাকে লঙ্ঘন করে বলে সমালোচিত হয়েছে।

সাম্রাজ্যবাদ (Imperialism)

অনেক পণ্ডিত অভিযোগ করেছেন যে নিওলিবারালিজম (neoliberalism) সাম্রাজ্যবাদকে (imperialism) উৎসাহিত করে বা আড়াল করে। উদাহরণস্বরূপ, ইউনিভার্সিটি অফ শেফিল্ডের (University of Sheffield) রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক রুথ জে. ব্লেকলি (Ruth J. Blakeley) অভিযোগ করেন যে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ঠাণ্ডা যুদ্ধের (Cold War) সময় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ এবং গণহত্যার উসকানি দিয়েছিল, যা পুঁজিবাদ এবং নিওলিবারালিজমের বিস্তারকে উন্নয়নশীল বিশ্বে সমর্থন এবং প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ব্লেকলি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার (Indonesia) ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য (UK) পুঁজিবাদী এলিটদের স্বার্থকে শত শত হাজার ইন্দোনেশিয়ানের মানবাধিকারের (human rights) উপরে রেখেছিল, ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর সমর্থন করে গণহত্যা চালিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্দোনেশিয়া (Communist Party of Indonesia) এবং তার বেসামরিক সমর্থকদের নির্মূল করার সময়।

ইতিহাসবিদ ব্র্যাডলি আর. সিম্পসন (Bradley R. Simpson) উল্লেখ করেন যে এই গণহত্যার অভিযান ছিল “নিওলিবারাল নীতির একটি অপরিহার্য ভিত্তি যা পশ্চিমা দেশগুলি সুকার্নো (Sukarno) ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে ইন্দোনেশিয়ায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।” ভূগোলবিদ ডেভিড হার্ভে (David Harvey) যুক্তি দেন যে নিওলিবারালিজম একটি পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদের উৎসাহ দেয় যা আর্থিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলি থেকে সম্পদ আহরণে কেন্দ্রিভূত।

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য (Global Health)

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নিওলিবারাল পন্থা স্বাস্থ্যসেবা শিল্পের বেসরকারীকরণ (privatization) এবং বাজারে সরকারি হস্তক্ষেপ হ্রাসের পক্ষে এবং সরকারের পরিবর্তে বেসরকারি সংস্থা (NGOs) এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন আইএমএফ (IMF) এবং বিশ্বব্যাংকের (World Bank) উপর নির্ভর করে। এই পন্থা উল্লেখযোগ্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে, যেমন টিআরআইপিএস চুক্তি (TRIPS Agreement) গ্লোবাল সাউথের (Global South) জন্য অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের অ্যাক্সেসকে বাধাগ্রস্ত করে (যেমন এইডস এবং COVID-19 মহামারির সময়)।

ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের (University of Washington) গ্লোবাল হেলথের অধ্যাপক জেমস পিফার (James Pfeiffer) মোজাম্বিকে (Mozambique) বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ দ্বারা ব্যবহৃত স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (SAPs) এর সমালোচনা করেছেন, যা সরকারী স্বাস্থ্য ব্যয় হ্রাস করে এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলিকে (NGOs) সরকারের দ্বারা পূর্বে পূরণকৃত সেবা শূন্যতা পূরণ করতে বাধ্য করে। গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (Global Financial Integrity) সিনিয়র অর্থনীতিবিদ রিক রোডেন (Rick Rowden) আইএমএফের মুদ্রাবাদী পন্থার সমালোচনা করেছেন, যা মূল্য স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক সংযমকে অগ্রাধিকার দেয়, যা তিনি অপ্রয়োজনীয়ভাবে কঠোর ছিল এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ বাড়াতে বাধা দিয়েছিল অভিযোগ করেন।

উন্নত পুঁজিবাদী বিশ্বে, ডিলান সুলিভান (Dylan Sullivan) এবং জেসন হিকেল (Jason Hickel) এর মতে, নিওলিবারাল দেশগুলি যেমন যুক্তরাষ্ট্র (United States) তুলনামূলকভাবে সাধারণ কল্যাণ রাষ্ট্রযুক্ত সামাজিক গণতান্ত্রিক দেশগুলির (বিশেষ করে নর্ডিক দেশগুলি) চেয়ে নিম্নতর স্বাস্থ্য ফলাফল এবং বেশি দারিদ্র্যের সম্মুখীন। কিছু মন্তব্যকারী নিওলিবারালিজমকে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার জন্য দায়ী করেছেন, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে গণগোলাগুলি (mass shootings), গৃহহীনতার (homelessness) বৃদ্ধি, হতাশার কারণে মৃত্যু (deaths of despair), সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, প্রতিযোগিতা এবং একাকীত্বের অনুভূতি।

পরিবেশগত প্রভাব

ইউরোপীয় ইউনিয়ন-মারকোসুর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (European Union–Mercosur free trade agreement), যা বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলগুলির (largest free trade areas) মধ্যে একটি গঠন করবে, তা পরিবেশবাদী কর্মী (environmental activists) এবং আদিবাসী অধিকার প্রচারকদের (indigenous rights campaigners) দ্বারা নিন্দিত হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে বাণিজ্য-নেতৃত্বাধীন, অনিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক কার্যকলাপ (unregulated economic activity) এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শিথিল রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ (lax state regulation) পরিবেশগত অবক্ষয়ের (environmental degradation) দিকে পরিচালিত করেছে। এছাড়াও, নিওলিবারালিজমের অধীনে উত্সাহিত উত্পাদন পদ্ধতিগুলি দীর্ঘমেয়াদে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাপ্যতা হ্রাস করতে পারে এবং তাই বিশ্বের সীমিত ভৌগোলিক স্থানের (limited geographical space) মধ্যে টেকসই (sustainable) নাও হতে পারে।

রবার্ট ফ্লেচারের (Robert Fletcher) ২০১০ সালের রচনায়, “Neoliberal Environmentality: Towards a Poststructuralist Political Ecology of the Conservation Debate,” তিনি যুক্তি দেন যে সংরক্ষণে (conservation) মতাদর্শের সংঘাত রয়েছে; একদিকে রয়েছে গভীর পরিবেশবাদ (deep ecology) এবং সুরক্ষামূলক প্যারাডাইম (protectionist paradigms) এবং অন্যদিকে রয়েছে সম্প্রদায় ভিত্তিক সংরক্ষণ প্রচেষ্টা (community based conservation efforts)। উভয় পন্থায় সমস্যা রয়েছে এবং প্রায়শই তারা সংরক্ষণ কাজ যথাযথভাবে করতে ব্যর্থ হয়। ফ্লেচার মনে করেন যে সামাজিক বিজ্ঞানগুলি উভয় পন্থার সমালোচনা করতে এবং এই পন্থাগুলিকে একত্রিত করতে পারে, যা মতাদর্শের ত্রিভুজ নয় বরং একটি বর্ণালী গঠন করে। পুঁজিবাদ (capitalism) এবং সংরক্ষণের (conservation) মধ্যে সম্পর্কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ বেশিরভাগ সংরক্ষণ প্রচেষ্টাকে পরিচালিত করে একটি নিওলিবারাল কাঠামো (neoliberal framework)।

অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ই. রিস (William E. Rees) বলেন যে “নিওলিবারাল প্যারাডাইম (neoliberal paradigm) পৃথিবীর ভাঙনের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে” কারণ এটি অর্থনীতি (economy) এবং পরিবেশকে (ecosphere) সম্পূর্ণ আলাদা সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করে এবং পরিবেশকে উপেক্ষা করে। মার্ক্সবাদী অর্থনৈতিক ভূগোলবিদ ডেভিড হার্ভে (David Harvey) যুক্তি দেন যে নিওলিবারালিজম প্রজাতির বর্ধিষ্ণু বিলুপ্তির হারের (extinction rate) জন্য দায়ী। তিনি পর্যবেক্ষণ করেন যে “নিওলিবারালাইজেশনের যুগও পৃথিবীর সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুতগামী গণবিলুপ্তির যুগ।” আমেরিকান দার্শনিক এবং প্রাণী অধিকার কর্মী স্টিভেন বেস্ট (Steven Best) বলেন যে তিন দশকের নিওলিবারাল নীতিগুলি “সমস্ত ইকোসিস্টেমের উপর আক্রমণ বাড়িয়েছে।” নিওলিবারালিজম “কমন্সের ট্র্যাজেডি” (tragedy of the commons)-কে ব্যক্তিগত মালিকানার যুক্তিতে পরিণত করেছে।

নিকোলাস ফির্জলি (Nicolas Firzli) বলেছেন যে ফ্রিডম্যান মতবাদ (Friedman doctrine), যা নিওলিবারাল যুগকে সংজ্ঞায়িত করেছে, কোম্পানিগুলিকে পরিবেশের (environment) প্রতি উদ্বেগ উপেক্ষা করতে উত্সাহিত করতে পারে। ফির্জলি জোর দিয়ে বলেন যে বিচক্ষণ, ফিডুসিয়ারি-চালিত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির সিইওদের দ্বারা নেওয়া পদক্ষেপগুলির পরিবেশগত, সামাজিক এবং কর্পোরেট প্রশাসনিক (environmental, social and corporate governance) পরিণতি উপেক্ষা করতে পারে না।

সমালোচক নোয়েল কাস্ট্রি (Noel Castree) নিওলিবারালিজম (neoliberalism) এবং জৈব-ভৌত পরিবেশের (biophysical environment) মধ্যে সম্পর্কের উপর মনোনিবেশ করেন এবং ব্যাখ্যা করেন যে নিওলিবারাল সমালোচকরা উৎপাদক (producers) এবং ভোক্তাদের (consumers) মধ্যে সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুক্ত বাজারকে (free market) সর্বোত্তম উপায় হিসেবে দেখেন এবং বৃহত্তর স্বাধীনতার সর্বাধিকতাকেও একটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেন। কাস্ট্রি আরও যুক্তি দেন যে বাজারগুলি ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সর্বাধিকতা নিশ্চিত করবে এই ধারণাটি ভুল।

প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ (conservation of natural resources) এবং ব্যবস্থাপনাও নিওলিবারাল নীতি (neoliberal policies) এবং উন্নয়নের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সংরক্ষণ সাধারণত উৎপাদনের বিপরীত (antithesis of production) হিসাবে বিবেচিত হলেও, বিশ্বব্যাপী নিওলিবারালিজম শিফটের সাথে, সংরক্ষণ প্রোগ্রামগুলি একটি “পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি” (mode of capitalist production)-তে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (private entities), এনজিও (NGOs), সম্পদের পণ্যীকরণ (commodification of resources) এবং উদ্যোক্তাবাদের (entrepreneurship) উপর নির্ভর করে করা হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের পণ্যীকরণের (commodification of natural resources) মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ নিওলিবারাল টুল (neoliberal tool) হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

নিওলিবারাল সংরক্ষণের (neoliberal conservation) একজন পণ্ডিত এবং সমালোচক ড্যান ক্লুস্টার (Dan Klooster) মেক্সিকোতে বন সার্টিফিকেশন (forest certification) নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন যা নিওলিবারাল সংরক্ষণ নেটওয়ার্কের সামাজিক-পরিবেশগত পরিণতি (socio-environmental consequences) প্রদর্শন করেছে। এই উদাহরণে, বৈশ্বিক বাজার (global markets) এবং টেকসইভাবে উত্সাহিত পণ্যগুলির (sustainably-sourced products) জন্য আকাঙ্ক্ষা মেক্সিকান কোম্পানিগুলির দ্বারা বন সার্টিফিকেশন প্রোগ্রামের (forest certification programs) গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে। এই সার্টিফিকেশনগুলি প্রয়োজন যে বন ব্যবস্থাপকরা কাঠ সংগ্রহের পরিবেশগত এবং সামাজিক দিকগুলি উন্নত করেন এবং বিনিময়ে তারা আন্তর্জাতিক বাজারে (international markets) প্রবেশাধিকারের সুবিধা পান। আজ, মেক্সিকোতে লগিং করা ১২ শতাংশ বন একটি সার্টিফিকেশনের অধীনে রয়েছে। তবে, অনেক ছোট লগিং ব্যবসা সার্টিফিকেশনের ব্যয় (costs of certification) এবং বাজারের মূল্য ও চাহিদা (market prices and demand) মোকাবেলা করতে অক্ষম। ক্লুস্টার এই সংরক্ষণ উদাহরণটি ব্যবহার করে দেখান যে সংরক্ষণের পণ্যীকরণের (commodification of conservation) সামাজিক প্রভাবগুলি (social impacts) ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে। একদিকে, সার্টিফিকেশন প্রযোজক (producers), সার্টিফায়ার (certifiers) এবং ভোক্তাদের (consumers) নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে যা বন শিল্পের (forestry industry) কারণে সৃষ্ট সামাজিক-পরিবেশগত বৈষম্যগুলির (socio-environmental disparities) বিরুদ্ধে কাজ করে, অন্যদিকে এটি উত্তর-দক্ষিণ বিভাজন (North-South divisions) আরও প্রশস্ত করতে পারে।

ধর্মীয় বিরোধিতা

ক্যাথলিক রাজনৈতিক বিজ্ঞানী (Catholic political scientist) আলবার্ট বিকাজ (Albert Bikaj) নিওলিবারাল মুক্ত বাজারের (free market) ধারণাকে “মৌলিকভাবে নায়ালিস্টিক” (fundamentally nihilistic) বলে মনে করেন কারণ এটি মুনাফা-কেন্দ্রিক, খ্রিস্টান নীতিশাস্ত্রকে অবহেলা করে এবং মানব মর্যাদা (human dignity), সাধারণ মঙ্গল (common good), পরিবেশ (environment) এবং সভ্যতাকে (civilisation) ক্ষতিগ্রস্ত করে। তার ৮৪ পৃষ্ঠার পাপাল এক্সহর্টেশন ইভানগেলি গাউডিয়ামে (apostolic exhortation Evangelii gaudium), ক্যাথলিক পোপ ফ্রান্সিস (Catholic Pope Francis) অনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদকে (unfettered capitalism) “একটি নতুন অত্যাচার” হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বিশ্বের নেতাদের দরিদ্রতা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন, তিনি বলেন: “কিছু লোক এখনও ট্রিকল-ডাউন তত্ত্বগুলিকে রক্ষা করে যা মনে করে যে একটি মুক্ত বাজার দ্বারা উত্সাহিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (economic growth) অনিবার্যভাবে বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তর ন্যায়বিচার (justice) এবং অন্তর্ভুক্তি (inclusiveness) আনতে সফল হবে। এই মতামত, যা কখনই বাস্তব দ্বারা নিশ্চিত হয়নি, তারা অর্থনৈতিক ক্ষমতা ধারণকারী ব্যক্তিদের ভালত্বের উপর এবং প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পবিত্রতায় একটি অমার্জিত এবং সরল বিশ্বাস প্রকাশ করে। ইতিমধ্যে, বঞ্চিতরা এখনও অপেক্ষা করছে।”

এন্টাই-নিওলিবারালিজম ও নিওলিবারালিজমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধিতা

অ্যান্টি-নিওলিবারালিজম (anti-neoliberalism) বা পোস্ট-নিওলিবারালিজম হচ্ছে একটি ধারণার সেট যা নিওলিবারালিজম (neoliberalism) এবং ওয়াশিংটন কনসেনসাস (Washington Consensus) দ্বারা মূর্ত অর্থনৈতিক নীতির প্রত্যাখ্যান দ্বারা চিহ্নিত। পোস্ট-নিওলিবারালিজমের সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে একাডেমিক বিতর্ক থাকলেও, এটি প্রায়ই নিওলিবারালিজমের অতিরিক্ততা বা ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া হিসাবে অর্থনৈতিক প্রগতিশীলতার (economic progressivism) সাথে সম্পর্কিত হয়, যা জাতীয়করণ (nationalization) এবং সম্পদ পুনর্বিতরণ (wealth redistribution) থেকে সুরক্ষাবাদ (protectionism) এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির (trade unions) পুনরুজ্জীবনের (revival) প্রতি আগ্রহী হতে পারে; এটি সাধারণভাবে বামপন্থী রাজনীতিকে (left-wing politics) ইঙ্গিত করে।

এই আন্দোলনটি লাতিন আমেরিকাতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে, যেখানে ২০০০ এর দশকে পিংক টাইড (pink tide) বামপন্থী সরকারগুলির দিকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছিল। পোস্ট-নিওলিবারাল সরকারের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে বলিভিয়ার (Bolivia) প্রাক্তন সরকার এবং ইকুয়েডরের (Ecuador) রাফায়েল কোরেয়ার (Rafael Correa) সরকার। এমনও দাবি করা হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের (United States) জো বাইডেন প্রশাসন (Joe Biden administration) পোস্ট-নিওলিবারাল বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।

ইতিহাস

বলিভিয়ার (Bolivia) প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস (Evo Morales) প্রায়ই পোস্ট-নিওলিবারালিজমের সাথে যুক্ত। পোস্ট-নিওলিবারালিজমের ধারণা ১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকের পিংক টাইড (pink tide) সময় উত্থাপিত হয়, যেখানে হুগো শাভেজ (Hugo Chávez) এবং ইভো মোরালেসের মতো বামপন্থী লাতিন আমেরিকান নিওলিবারাল সমালোচকরা ক্ষমতায় আসেন। গবেষকদের মতে, ১৯৯৯ সালে ভেনিজুয়েলার (Venezuela) রাষ্ট্রপতি হিসেবে শাভেজের নির্বাচন পিংক টাইড এবং পোস্ট-নিওলিবারাল আন্দোলনের একটি সুস্পষ্ট সূচনা চিহ্নিত করে। তার নির্বাচনের পরে, রাফায়েল কোরেয়া (Rafael Correa), নেস্টর কির্চনার (Néstor Kirchner), ইভো মোরালেস এবং পোস্ট-নিওলিবারাল আন্দোলনের সাথে যুক্ত অন্যান্য নেতারা ২০০০ এবং ২০১০ এর দশকে লাতিন আমেরিকায় নির্বাচিত হন। ২০২০ এর দশকে, ২০২১ সালের চিলির সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী চিলির নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি গ্যাব্রিয়েল বরিক (Gabriel Boric) দেশের নিওলিবারাল অর্থনৈতিক মডেল শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি বলেন: “যদি চিলি নিওলিবারালিজমের উত্সস্থল হয়, তবে এটি তার কবরও হবে।”

যদিও পোস্ট-নিওলিবারালিজমের ধারণা লাতিন আমেরিকার সাথে একচেটিয়াভাবে সম্পর্কিত নয়, তবে এটি অঞ্চলটির সাথে বৃহত্তরভাবে সম্পর্কিত। পোস্ট-নিওলিবারালিজম রাজনৈতিক স্পেকট্রামের ডান দিকের সমালোচনা লাভ করেছে; ডানপন্থী (right-wing) এবং চরম ডানপন্থী (far-right) সমালোচকরা দাবি করেছেন যে এই শব্দটি অস্পষ্ট এবং জনতোষণবাদী বা পপুলিস্ট (populistic), এবং “পোস্ট-নিওলিবারাল” নীতিগুলি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

মতাদর্শ

পোস্ট-নিওলিবারালিজম সেই দেশগুলিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা মৌলিকভাবে পরিবর্তন করতে চায় যেখানে ওয়াশিংটন কনসেনসাস (Washington Consensus) একসময় বিদ্যমান ছিল। এটি অর্জনের জন্য, লাতিন আমেরিকায় পোস্ট-নিওলিবারাল নেতারা বেশ কয়েকটি শিল্পের জাতীয়করণের (nationalization) পক্ষে কথা বলেছেন, বিশেষত গ্যাস (gas), খনির (mining), এবং তেল শিল্পগুলির (oil industries) জাতীয়করণের জন্য। পোস্ট-নিওলিবারালিজম কল্যাণ সুবিধার (welfare benefits) সম্প্রসারণ, দারিদ্র্য হ্রাসে বৃহত্তর সরকারি বিনিয়োগ (greater governmental investment) এবং অর্থনীতিতে বর্ধিত রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ (increased state intervention) এর পক্ষেও সমর্থন করে।

রাজনৈতিক বিজ্ঞানে বিরোধিতা

রাজনৈতিক বিজ্ঞানে (political science), নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) প্রতি অসন্তোষকে রাজনীতি থেকে বিমুখতার (de-politicization) এবং বিরোধী-রাজনৈতিক অনুভূতির (anti-political sentiment) বৃদ্ধি হিসেবে দেখা হয়, যা পাল্টা জনতাবাদী রাজনীতি (populist politics) এবং পুনরায় রাজনীতিকরণের (re-politicization) জন্য উৎসাহিত করতে পারে।

নিওলিবারালিজমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধিতা

নিওলিবারালিজমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধিতার কিছু উদাহরণ:

  1. ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার (University of Pennsylvania) নৃবিজ্ঞানী (ethnographer) এবং রাশিয়ান ও পূর্ব ইউরোপীয় অধ্যয়নের অধ্যাপক ক্রিস্টেন ঘডসি (Kristen Ghodsee) তার গবেষণায় যুক্তি দেন যে নিওলিবারাল পুঁজিবাদের (neoliberal capitalism) বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ প্রাক্তন কমিউনিস্ট ব্লকের (Communist bloc) অনেক অংশে “রেড নস্টালজিয়া” (red nostalgia) তৈরি করেছে। তিনি বলেন যে “গণতন্ত্রের সাথে আসা রাজনৈতিক স্বাধীনতাগুলি নিয়ন্ত্রণহীন মুক্ত বাজার পুঁজিবাদের (unregulated, free-market capitalism) সবচেয়ে খারাপ ধরণের সাথে যুক্ত ছিল, যা দৈনন্দিন জীবনের ছন্দকে সম্পূর্ণভাবে অস্থিতিশীল করেছিল এবং যেখানে একসময় আরামদায়ক পূর্বাভাসযোগ্যতা ছিল সেখানে অপরাধ, দুর্নীতি এবং বিশৃঙ্খলা এনেছিল,” যা শেষ পর্যন্ত চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের (extremist nationalism) পুনরুত্থানকে উস্কে দিয়েছিল।
  2. লাতিন আমেরিকায় (Latin America), সহস্রাব্দের সূচনায় বামপন্থী সরকারগুলিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা “গোলাপী জোয়ার” (pink tide) নিওলিবারাল আধিপত্য (neoliberal hegemony) এবং ওয়াশিংটন কনসেনসাসের (Washington Consensus) “কোন বিকল্প নেই” (TINA) ধারণার বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা যেতে পারে।
  3. ২০০৩ সালে, দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) কৃষক এবং কোরিয়ান অ্যাডভান্সড ফার্মার্স ফেডারেশনের (Korean Advanced Farmers Federation) প্রাক্তন সভাপতি লি কিউং-হে (Lee Kyung-hae) কানকুন, মেক্সিকোতে (Cancun, Mexico) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (World Trade Organization) এক সভার সময় তার হৃদয়ে ছুরিকাঘাত করে আত্মহত্যা করেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের কৃষকদের জন্য ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন।
  4. ইউরোপে (Europe) এন্টাই-অস্টেরিটি পার্টির (আক্ষরিক – বিরোধী-অবসাদ দলের) (anti-austerity parties) উত্থান এবং ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে গ্রীক সংসদীয় নির্বাচনে (Greek legislative elections) সাইরিজার (SYRIZA) বিজয় কিছু লোককে “নিওলিবারালিজমের শেষ” ঘোষণা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
  5. ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (U.S. presidential election), রিপাবলিকান পার্টির (Republican Party) ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির (Democratic Party) বার্নি স্যান্ডার্স (Bernie Sanders) উভয়ই নিওলিবারালিজমের বিরোধিতা করে প্রচারণা চালান, যার মধ্যে ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (Trans Pacific Partnership) এবং অফশোরিংয়ের (offshoring) বিরোধিতা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
  6. ২০১৮ সালে, ফ্রান্সে (France) ইয়েলো ভেস্টস (yellow vests) প্রতিবাদ এবং ২০১৯-২০২১ সালের চিলির (Chilean) প্রতিবাদগুলি সরাসরি নিওলিবারাল সরকার এবং নীতির বিরুদ্ধে উদ্ভূত হয়েছিল, যার মধ্যে ব্যক্তিগতকরণ (privatization) এবং ব্যয় সংকোচনের (austerity) নীতি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা জীবনের ক্রমবর্ধমান খরচ, ব্যক্তিগত ঋণের বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্য দায়ী ছিল।
  7. ২০১৯ সালে, নিওলিবারাল সংস্কার, নীতি এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিশ্বজুড়ে পাঁচটি মহাদেশের বহু দেশে সংঘটিত হয়েছে, যেখানে অনেকগুলির মধ্যে ব্যয় সংকোচন, ব্যক্তিগতকরণ এবং শ্রমজীবী শ্রেণির উপর কর বৃদ্ধি বিরোধিতার একটি সাধারণ থিম ছিল।
  8. ২০২১ সালের চিলির সাধারণ নির্বাচনে (Chilean general election), নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি গ্যাব্রিয়েল বরিক (Gabriel Boric) দেশের নিওলিবারাল অর্থনৈতিক মডেল (neoliberal economic model) শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি বলেন “যদি চিলি নিওলিবারালিজমের উত্সস্থল হয়, তবে এটি তার কবরও হবে।”

শ্রমিক ইউনিয়নের দমন (Repression of Workers’ Union)

যদিও নিওলিবারালিজম নিজে শ্রমিক ইউনিয়নের (workers’ union) দমনকে সরাসরি নির্দেশ করে না, বৈশ্বিক বাণিজ্য (global trading) শ্রমিক ইউনিয়নের দমন থেকে উপকৃত হয়। যুক্তরাজ্যের (UK) সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং নিওলিবারালিজমের (neoliberalism) পরিচিত নেত্রী মার্গারেট থ্যাচার (Margaret Thatcher) একটি সিরিজ নীতি প্রণয়ন করেন যা শ্রমিক ইউনিয়নের শক্তি এবং প্রভাব এবং বিভিন্ন সামাজিক সুবিধা হ্রাস করে। বিবিসি নিউজ (BBC News) অনুসারে, থ্যাচার “এক প্রজন্মের জন্য প্রায় শ্রমিক ইউনিয়নের ক্ষমতা ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল।”

নিওকনজারভেটিজমের সাথে সম্পর্ক

নিওকনজারভেটিভিজম

নিওকনজারভেটিভিজম (neoconservatism) একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা ১৯৬০ এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (United States) এবং যুক্তরাজ্যে (United Kingdom) শুরু হয়। এই আন্দোলন ফরেইন পলিসি হক বা “বিদেশনীতি বাজপাখিদের” (foreign policy hawks) মধ্যে শুরু হয়েছিল যারা ক্রমবর্ধমান শান্তিবাদী ডেমোক্রেটিক পার্টি (Democratic Party) এবং ১৯৬০-এর দশকের নিউ লেফট (New Left) এবং কাউন্টারকালচার (counterculture) এর সাথে অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছিল। নিওকনজারভেটিভরা সাধারণত একতরফাভাবে গণতন্ত্রের প্রচার (promotion of democracy) এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপবাদের (interventionism) পক্ষে থাকে, যা “শক্তির মাধ্যমে শান্তি” (peace through strength) এর সামরিক এবং বাস্তববাদী দর্শনের উপর নির্ভর করে। তারা সাধারণত কমিউনিজম (communism) এবং রাজনৈতিক চরমপন্থার (political radicalism) বিরোধিতা করে।

নিওকনজারভেটিভিজমের অনেক অনুসারী ১৯৬০, ১৯৭০, ১৯৮০, ১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের সময় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে, এবং জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের সময় তাদের প্রভাব সর্বাধিক ছিল যখন তারা ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণ (2003 invasion of Iraq) প্রচার এবং পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে একটি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের বিশিষ্ট নিওকনজারভেটিভদের মধ্যে পল উলফোভিটজ (Paul Wolfowitz), এলিয়ট আব্রামস (Elliott Abrams), রিচার্ড পার্ল (Richard Perle), পল ব্রেমার (Paul Bremer), এবং ডগলাস ফেইথ (Douglas Feith) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (United States) সহ-রাষ্ট্রপতি ডিক চেনি (Dick Cheney) এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড (Donald Rumsfeld) নিজেদের নিওকনজারভেটিভ (neoconservatives) হিসাবে চিহ্নিত করেননি, তারা জর্জ ডব্লিউ বুশের (George W. Bush) পররাষ্ট্রনীতির (foreign policy) প্রধান দিকগুলি নকশা করার ক্ষেত্রে নিওকনজারভেটিভ কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন; বিশেষত তারা ইসরায়েলের (Israel) সমর্থন, আরব বিশ্বে (Arab World) আমেরিকান প্রভাবের (American influence) প্রচার এবং “ওয়ার অন টেরর” (War on Terror) শুরু করার ক্ষেত্রে। বুশ প্রশাসনের দেশীয় এবং বিদেশী নীতি নিওকনজারভেটিভিজমের সাথে যুক্ত প্রধান মতাদর্শীদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল, যেমন বার্নার্ড লুইস (Bernard Lewis), লুলু শোয়ার্টজ (Lulu Schwartz), রিচার্ড এবং ড্যানিয়েল পাইপস (Richard and Daniel Pipes), ডেভিড হোরোভিটজ (David Horowitz), রবার্ট কাগান (Robert Kagan) ইত্যাদি।

নিওকনজারভেটিভিজমের সমালোচকরা (critics) এই শব্দটি ব্যবহার করে এমন পররাষ্ট্রনীতি এবং যুদ্ধ বাজপাখিদের (war hawks) বর্ণনা করতে যারা আক্রমণাত্মক সামরিকবাদ (aggressive militarism) বা নিও-ইম্পেরিয়ালিজমের (neo-imperialism) সমর্থন করে। ঐতিহাসিকভাবে, নিওকনজারভেটিভ শব্দটি তাদের উল্লেখ করে যারা ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে অ্যান্টি-স্তালিনিস্ট বাম (anti-Stalinist left) থেকে আমেরিকান রক্ষণশীলতার (American conservatism) দিকে আদর্শগত যাত্রা করেছিল। এই আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক শিকড় ছিল নরমান পোডহোরেটজ (Norman Podhoretz) দ্বারা সম্পাদিত ম্যাগাজিন কমেন্টারি (Commentary)-তে। তারা নিউ লেফটের (New Left) বিরুদ্ধে কথা বলেছিল, এবং সেইভাবে আন্দোলনটিকে সংজ্ঞায়িত করতে সহায়তা করেছিল।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিওলিবারালিজমের সাথে সম্পর্ক

যদিও নিওকনজারভেটিভিজম প্রধানত পররাষ্ট্রনীতির (foreign policy) সাথে সম্পর্কিত, অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক নীতি নিয়েও এটি কিছু আলোচনা রয়েছে। নিওকনজারভেটিভিজম সাধারণত মুক্ত বাজার (free markets) এবং পুঁজিবাদের (capitalism) সমর্থন করে, সরবরাহ-পক্ষ অর্থনীতির (supply-side economics) পক্ষে থাকে, তবে এটি ক্লাসিক্যাল লিবারালিজম (classical liberalism) এবং ফিসকাল কনজারভেটিজমের (fiscal conservatism) সাথে কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে। ইরভিং ক্রিস্টল (Irving Kristol) বলেন যে নিওকনজারভেটিভরা বাজেটের ঘাটতি (budget deficits) নিয়ে বেশি চিন্তিত নয় এবং হায়েকের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে যে সমাজ এবং জনকল্যাণে সরকারের প্রভাব বৃদ্ধির ফলে “দাসত্বের পথ” তৈরি হয়।

ক্রিস্টল যুক্তি দেন যে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে কখনও কখনও সরকারি হস্তক্ষেপ (government intervention) এবং বাজেটের ঘাটতি (budget deficits) প্রয়োজন হতে পারে। তথাকথিত “পুঁজিবাদের সাথে পুনর্মিলন” এর পরে, স্ব-চিহ্নিত “নিওকনজারভেটিভরা” প্রায়ই একটি হ্রাসপ্রাপ্ত কল্যাণ রাষ্ট্রের (reduced welfare state) পক্ষে থাকত, তবে এর বিলোপের (elimination) পক্ষে নয়।

নিওকনজারভেটিভ মতাদর্শ জোর দেয় যে যদিও মুক্ত বাজারগুলি কার্যকরভাবে বস্তুগত পণ্য (material goods) সরবরাহ করে, তারা মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক নির্দেশিকা (moral guidance) দেয় না। তারা বলে যে নৈতিকতা কেবল ঐতিহ্যে (tradition) পাওয়া যায় এবং বাজারগুলি এমন প্রশ্ন তোলে যা কেবল অর্থনীতির (economics) দ্বারা সমাধান করা যায় না, যুক্তি দিয়ে: “তাই, অর্থনীতি আমাদের জীবনের অংশ মাত্র, এটি আমাদের সমাজকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নির্দেশ দিতে দেওয়া উচিত নয়।” সমালোচকরা নিওকনজারভেটিভিজমকে একটি যুদ্ধবাজ এবং “বীরত্বপূর্ণ” মতাদর্শ বলে মনে করে যা “বণিক” এবং “বুর্জোয়া” গুণাবলীর বিরোধী এবং তাই “অ্যান্টি-ইকোনমিক চিন্তার একটি বিকল্প”। রাজনৈতিক বিজ্ঞানী জিভ স্টার্নহেল (Zeev Sternhell) বলেন: “নিওকনজারভেটিভিজম সফলভাবে আমেরিকানদের অধিকাংশকে বিশ্বাস করাতে পেরেছে যে একটি সমাজের প্রধান প্রশ্নগুলি অর্থনৈতিক নয়, এবং সামাজিক প্রশ্নগুলিই আসলে নৈতিক প্রশ্ন।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.