Table of Contents
ভূমিকা
পশ্চিমা শিল্পে, প্রিমিটিভিজম এমন একটি নান্দনিক আদর্শ যা অনুকরণ বা পুনঃসৃষ্টি দ্বারা প্রাচীন সময়, স্থান এবং মানুষের অভিজ্ঞতাকে পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল। পশ্চিমা দার্শনিকতায়, প্রিমিটিভিজম প্রস্তাব করে যে প্রাচীন সমাজের মানুষদের নৈতিকতা এবং নৈতিকতা শহুরে মূল্যবোধের তুলনায় উচ্চতর।
ইউরোপীয় শিল্পে, প্রিমিটিভিজমের মধ্যে এশিয়ান, আফ্রিকান এবং অস্ট্রেলেশিয়ান জনগোষ্ঠীদের শিল্প থেকে নেওয়া টেকনিক, মোটিফ এবং শৈলীর অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাদেরকে পশ্চিমা শহুরে সভ্যতার তুলনায় আদিম হিসাবে বিবেচনা করা হতো। উদাহরণস্বরূপ, চিত্রশিল্পী পল গগ্যাঁ (Paul Gauguin) তার চিত্রগুলিতে তাহিতিয়ান (Tahitian) চিত্রকল্প ব্যবহার করেছিলেন, যা উনিশ শতকের শেষের দিকে আধুনিক শিল্পের বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একটি ধারা রূপে, প্রিমিটিভিজম বর্ণবাদী স্টেরিওটাইপগুলো পুনরুৎপাদন ও স্থায়ী করেছিল, যেমন “নোবেল স্যাভেজ” (“noble savage”) ধারণা, যা ঔপনিবেশিকরা অশ্বেতাঙ্গ মানুষের উপর শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক শাসনকে ন্যায্যতা দিতে ব্যবহার করেছিল।
এছাড়া, প্রিমিটিভিজম ঐসব চিত্রকলার কৌশল, মোটিফ এবং শৈলীকে চিহ্নিত করে যা অভাঁ গার্দ আন্দোলনের আগে প্রাধান্য পেয়েছিল এবং এতে হেনরি রুসোর মতো শৌখিন শিল্পীদের দ্বারা তৈরিকৃত নায়িভ আর্ট এবং লোকশিল্প অন্তর্ভুক্ত।
প্রিমিটিভিজমের দর্শন
প্রিমিটিভিজম (Primitivism) একটি ইউটোপিয়ান (utopian) শিল্পধারা যা প্রকৃতির শারীরিক জগত এবং মানবতার প্রাথমিক অবস্থা (state of nature) কে উপস্থাপন করে, এবং এটি দুটি শৈলীতে বিভক্ত: (i) কালানুক্রমিক প্রিমিটিভিজম (chronological primitivism) এবং (ii) সাংস্কৃতিক প্রিমিটিভিজম (cultural primitivism)। ইউরোপে, কালানুক্রমিক প্রিমিটিভিজম একটি প্রাচীন জীবনযাত্রার নৈতিক শ্রেষ্ঠত্বকে প্রস্তাব করে, যা প্রকৃতির সাথে প্রাক-সমাজবদ্ধ সমাজের সাদৃশ্যের একটি সোনালী যুগের মিথ দ্বারা উপস্থাপিত হয়, যেমনটি ইউরোপীয় শিল্প এবং কবিতার প্যাস্টোরাল (Pastoral) ধারায় চিত্রিত হয়েছে।
ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক প্রিমিটিভিজমের উল্লেখযোগ্য উদাহরণগুলির মধ্যে ইগর স্ট্রাভিনস্কির সঙ্গীত, পল গগাঁর তাহিতীয় চিত্রকর্ম, এবং পাবলো পিকাসোর আফ্রিকান পর্বের শিল্পকর্ম অন্তর্ভুক্ত। স্ট্রাভিনস্কির দ্য রাইট অফ স্প্রিং (The Rite of Spring, ১৯১৩) প্রিমিটিভিস্ট প্রোগ্রাম সঙ্গীত যা পৌত্তলিকতার (Paganism) উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, বিশেষত প্রাক-খ্রিস্টীয় রাশিয়ায় মানব বলিদানের আচার। স্ট্রাভিনস্কি কঠোর সঙ্গত (harsh consonance) এবং বেসুরো সুর (dissonance) এবং উচ্চ, পুনরাবৃত্ত রিদম ব্যবহার করেন, যা সঙ্গীতের আধুনিকতায় ডায়োনিসিয়ান স্বতঃস্ফূর্ততার (Dionysian spontaneity) একটি মোড তৈরি করে। সমালোচক ম্যালকম কুক উল্লেখ করেছেন যে দ্য রাইট অফ স্প্রিং প্রিমিটিভিজমের রূপ এবং অনুশীলনে উভয় ক্ষেত্রেই নিযুক্ত ছিল, যদিও এটি পশ্চিমা ধ্রুপদী সঙ্গীতের প্রযুক্তিগত অনুশীলনের মধ্যেই ছিল।
১৭শ শতাব্দী : আলোকায়ন যুগে (Age of Enlightenment) বুদ্ধিজীবীরা আদিবাসী জনগণকে ইউরোপীয় সংস্কৃতির রাজনৈতিক সমালোচনার একটি আদর্শ হিসেবে দেখতেন। ইতালিয়ান বুদ্ধিজীবী জিয়ামবাতিস্তা ভিকো (Giambattista Vico) যুক্তি দিয়েছিলেন যে আদিম, অ-ইউরোপীয়দের জীবন প্রকৃতির নান্দনিক প্রেরণার সাথে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল, যা কবিতার জন্য অনুপ্রেরণা ছিল, তাতে তাদের জীবন ছিল সভ্য, আধুনিক মানুষের শিল্পকলার তুলনায় উন্নততর। ভিকো হোমারের মহাকাব্যিক কবিতা এবং বাইবেলের শিল্পমূল্যগুলিকে সাধারণ ভাষায় লেখা আধুনিক সাহিত্যের সাথে তুলনা করেছিলেন।
১৮শ শতাব্দী : প্রোলেগোমেনা টু হোমার (Prolegomena to Homer, ১৭৯৫) গ্রন্থে পণ্ডিত ফ্রিডরিখ অগাস্ট উলফ (Friedrich August Wolf) হোমারের কবিতা এবং বাইবেলের ভাষাকে লোকশিল্পের উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন যা মৌখিক ঐতিহ্য বা ওরাল ট্রেডিশনের মাধ্যমে বাহিত ও সংরক্ষিত হয়েছিল। ভিকো এবং উলফের ধারণাগুলি ১৯ শতকের গোড়ার দিকে জোহান গটফ্রিড হের্ডার (Johann Gottfried Herder) দ্বারা আরও বিকশিত হয়, যদিও চিত্রকলার উপর এই ধারণাগুলির সীমিত প্রভাব ছিল।
১৯শ শতাব্দী : ১৯শ শতাব্দীতে, ইতিহাসবিদরা বিভিন্ন যুগকে তাদের নিজ নিজ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিচার ও মূল্যায়ন করায় ইতিহাসবাদের (Historicism) উদ্ভব ঘটে। এর ফলে নিওক্লাসিসিজম এবং নাজারেন আন্দোলনের মতো নতুন শিল্প আন্দোলনের সৃষ্টি হয়, যা ঐতিহাসিক বিশ্বস্ততায় নিবেদিত ছিল। নাজারেনরা রাফায়েলের আগের ইতালীয় ভক্তিমূলক চিত্রকর্ম দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল। নাজারেন শিল্পীরা পরিষ্কার আউটলাইন, উজ্জ্বল রং এবং অনেক ডিটেইলিং এর ব্যবহার করতেন, যা রাফায়েলের পরবর্তী একাডেমিক চিত্রাঙ্কনের বিপরীত ছিল। প্রি-রাফায়েলাইটরা, জন রাস্কিন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, রাফায়েলের আগের চিত্রশিল্পীদের প্রশংসা করতেন এবং বাইরে চিত্রাঙ্কনের সুপারিশ করতেন। ১৯শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ফটোগ্রাফিক ক্যামেরা এবং অ-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি ভিজ্যুয়াল আর্টের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। ফটোগ্রাফি শৈল্পিক বাস্তববাদের (artistic Realism) বিকাশের দিকে নিয়ে যায়, যখন অ-ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি রেনেসাঁ শিল্পের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, যা মানব জগতের থেকে আলাদা বিভিন্ন জগতের অস্তিত্বের প্রস্তাব দিয়েছিল।
আধুনিকতাবাদী আদিমতাবাদ (Modernist Primitivism)
আধুনিক শিল্পের বিকাশে আদিমতাবাদের (Primitivism) একটি বিশেষ প্রভাব ছিল। আফ্রিকান মাস্কের (African mask) শৈল্পিক প্রভাব Pablo Picasso-এর বিখ্যাত চিত্রকর্ম Les Demoiselles d’Avignon (১৯০৭)-এ স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এটি প্রমাণ করে যে, ১৫ থেকে ১৭ শতকের আবিষ্কারের যুগে (Age of Discovery) পশ্চিম ইউরোপীয় আবিষ্কারকরা এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার জনগোষ্ঠী ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়ে যেভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, তা শিল্পকলার ধারায়ও ছাপ ফেলেছিল। সেই সময়ের আবিষ্কারকরা অন্যান্য সংস্কৃতির সাথে যে পার্থক্যগুলি দেখেছিলেন, তা তাদের মনে এক ধরনের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি তৈরি করেছিল। এই অনুভূতির কারণে তারা মনে করেছিল যে, তারা অন্য সংস্কৃতির মানুষের থেকে উন্নত এবং সভ্য। এই ধারণা থেকেই উপনিবেশবাদের (colonialism) জন্ম হয়েছিল, যেখানে শক্তিশালী দেশগুলি তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য অন্যান্য দেশের উপর শাসন এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল।
আলোকায়নের যুগে (Age of Enlightenment), এই আবিষ্কারকদের অ-ইউরোপীয়দের (non-European Other) সাথে সাক্ষাত দার্শনিকদের মধ্যে মধ্যযুগীয় বিশ্বাসের ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল। মানুষ, সমাজ এবং প্রকৃতির স্থায়ী প্রকৃতি সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যানধারণাগুলি নিয়ে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। ইউরোপের সভ্যতার সাথে যারা প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে জীবনযাপন করা অ-সভ্য প্রাকৃতিক মানুষের সাথে তুলনা এই সন্দেহকে আরও গভীর হয়েছিল। এই সময়ে ইউরোপীয় চিন্তাবিদরা তাদের নিজস্ব সমাজের সীমাবদ্ধতাগুলি নিয়ে পুনর্বিবেচনা শুরু করেছিলেন এবং আদিম সমাজগুলির জীবনধারার সাথে তুলনা করে নতুন ধারণাগুলি গড়ে তুলেছিলেন।
১৮ শতকে, পশ্চিমা শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা ইতিহাসের মধ্যে আরও গভীরভাবে অভিব্যক্তিমূলক ও স্থায়ী মানব প্রকৃতি এবং সাংস্কৃতিক কাঠামো অনুসন্ধানে অংশ নিয়েছিলেন। তারা ভৌগলিক আবিষ্কারকদের দ্বারা সম্মুখীন হওয়া আদিম জাতির সংস্কৃতি অধ্যয়ন করে এই অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের লুটপাটের মধ্যে উপনিবেশায়িত জাতির শিল্পকর্মও অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা আদিম শৈলীর প্রকাশ ও রূপায়ণের বৈশিষ্ট্য ধারণ করত। এতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল রেখার দৃষ্টিকোণ বা পারস্পেক্টিভহীনতা, সরল রেখাচিত্র, হায়ারোগ্লিফ এর উপস্থিতি, ফিগারের বিকৃতি এবং বারবার সাজসজ্জার নিদর্শনের মাধ্যমে অর্থের প্রেরণ।
আধুনিকতাবাদী (Modernism) শিল্পীরা আদিম সংস্কৃতির মধ্যে এক ধরনের পবিত্রতা ও খাঁটিতার সন্ধান করেছিলেন, যা তাদের মতে আধুনিক ইউরোপীয় সভ্যতায় অনুপস্থিত ছিল। তারা বিশ্বাস করতেন যে আদিম সংস্কৃতির সরলতা এবং প্রকৃতির সাথে নিবিড় সংযোগ আধুনিক সমাজের জটিলতা এবং প্রযুক্তিগত প্রগতির মধ্যে হারিয়ে গেছে। এজন্য তারা আদিম শিল্পকর্ম এবং জীবনধারা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের শিল্পকর্মে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শৈলী যুক্ত করেছিলেন।
আধুনিকতাবাদী শিল্পী ও চিন্তাবিদরা এই আদিমতাবাদের মধ্যে একটি আদর্শিক অবস্থা খুঁজে পেয়েছিলেন, যা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাঠামো নিয়ে নতুন করে ভাবতে সহায়তা করেছিল। তারা এই আদিমতাবাদের মাধ্যমে আধুনিক জীবনের জটিলতা এবং বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে চেয়েছিলেন। তারা আদিম শিল্পের সরলতা, স্পষ্টতা এবং আবেগময়তার মধ্যে একটি সত্য ও খাঁটিতা খুঁজে পেয়েছিলেন, যা তাদের নিজের শিল্পকর্মে প্রতিফলিত করতে চেয়েছিলেন।
তাই, আধুনিকতাবাদী আদিমত্ব শুধু একটি শৈল্পিক আন্দোলন নয়, বরং এটি একটি দার্শনিক অনুসন্ধানও ছিল, যা আধুনিক জীবনের জটিলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে একটি সহজ, সরল এবং প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত জীবন খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। এটি শিল্পীদের জন্য একটি উপায় ছিল তাদের নিজস্ব সমাজের সীমাবদ্ধতাগুলি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করার এবং নতুন ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার।
পল গঁগ্যার প্রিমিটিভিজম
চিত্রশিল্পী পল গঁগ্যা (Paul Gauguin) ইউরোপের নগরজীবন ত্যাগ করে ফরাসি উপনিবেশ তাহিতিতে (Tahiti) বসবাস শুরু করেন। তাহিতিতে তিনি একটি আদিম জীবনধারা গ্রহণ করেন, যা ফ্রান্সের নগর-জীবনের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল। গঁগ্যা-এর আদিমতার সন্ধান ছিল খ্রিস্টধর্মের ব্যক্তিগত জীবনের কঠোর নিয়ম থেকে যৌন স্বাধীনতার অনুসন্ধান। এটি তার বিভিন্ন চিত্রকর্মে স্পষ্ট, যেমন Spirit of the Dead Watching (১৮৯২), Parau na te Varua ino (১৮৯২), Anna the Javanerin (১৮৯৩), Te Tamari No Atua (১৮৯৬) এবং Cruel Tales (১৯০২)।
গঁগ্যা-এর ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে তাহিতিকে যৌন স্বাধীনতার এক ইউটোপিয়া (utopia) হিসেবে দেখা হত, যেখানে ধর্মীয় যৌন নিষেধাজ্ঞাগুলি নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গি চারণভূমি বা প্যাস্টোরাল শিল্পের (pastoral art) সাথে মেলে যা গ্রামীণ জীবনকে নগর জীবনের চেয়ে উত্তম বলে ধারণা করে। প্যাস্টোরাল শিল্প ও আদিমতাবাদের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে, যা তার চিত্রকর্ম Tahitian Pastoral (১৮৯২) এবং Where Do We Come From? What Are We? Where Are We Going? (১৮৯৭–১৮৯৮)-এ স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
গঁগ্যা বলেছিলেন যে, তার চিত্রকর্মগুলি তাহিতির সমাজকে উদযাপন করে এবং তিনি তাহিতিকে ফরাসি উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে রক্ষা করছেন। তবে, ২০ শতকের উত্তর-উপনিবেশবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, নারীবাদী শিল্প সমালোচকরা বলেন যে, গঁগ্যা-এর কিশোরী প্রেমিকাদের গ্রহণ তার উপনিবেশবাদ-বিরোধিতার দাবিকে বাতিল করে দেয়। একজন ইউরোপীয় পুরুষ হিসেবে, তার যৌন স্বাধীনতা ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, যে ধারণা ফরাসি উপনিবেশবাদীরাই তাহিতি এবং তাহিতিয়ানদের নিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে, গঁগ্যা-এর শৈল্পিক আদিমতাবাদ ছিল একটি “জটিল বুনন যা জাতিগত ও যৌন কল্পনা এবং ক্ষমতার মধ্যে গঠিত, উভয়ই উপনিবেশবাদী ও পুরুষতান্ত্রিক”। ফরাসি উপনিবেশবাদীরা তাহিতি এবং তাহিতিয়ানদের সম্পর্কে যে কল্পনা তৈরি করেছিল, তা ইউরোপীয়দের দ্বারা আদিমতাকে অপর বা আদারের মতো করে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা ছিল, যা অ-ইউরোপীয় জনগণকে উপনিবেশিক অধীনস্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল।
গঁগ্যা-এর চিত্রকর্মে এই আদিমতার ধারণা এবং তার যৌন স্বাধীনতার অনুসন্ধান আধুনিক শিল্প ও সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তৈরি করেছিল। তার কাজগুলি আমাদেরকে এই প্রশ্নে নিয়ে আসে যে, আদিমতা এবং সাংস্কৃতিক অনুসন্ধান কি শুধুই একটি শিল্পী বা গবেষকের দৃষ্টিভঙ্গি, নাকি এটি একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে তার জটিলতা এবং বিতর্কের অংশ।
গঁগ্যা-এর তাহিতিতে থাকার সময়কাল তাকে প্রাচ্যের একটি রোমান্টিক এবং রূপকথার মতো দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণে প্ররোচিত করেছিল। তাহিতির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সেখানকার মানুষের সরল জীবনধারা এবং তাদের সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি গঁগ্যা-এর শিল্পে একটি গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তার চিত্রকর্মগুলোতে এই সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া এবং যৌন স্বাধীনতার খোঁজ একটি বিশেষ ধরনের শৈল্পিক ভাষা তৈরি করেছিল যা তাকে ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদী শিল্পীদের মধ্যে অনন্য স্থান দিয়েছিল।
তার চিত্রকর্মগুলো যেমন Mahana No Atua (১৮৯৪) এবং The Moon and the Earth (১৮৯৩) তাহিতির প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সেখানকার মানুষের জীবনধারার প্রশংসা করে। গঁগ্যা-এর শিল্পকর্ম শুধু তাহিতির জীবনধারা উদযাপন করেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি ইউরোপীয় দর্শকদের জন্য একটি নতুন এবং বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গির দ্বার খুলে দিয়েছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাদের নিজেদের সমাজের সীমাবদ্ধতা এবং কৃত্রিমতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল।
গঁগ্যা-এর তাহিতির জীবনে এবং তার শিল্পে এই আদিমতার সন্ধান আধুনিক শিল্প এবং সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার কাজগুলি আমাদেরকে এই চিন্তার দিকে পরিচালিত করে যে, শিল্প এবং সংস্কৃতির মধ্যে আদিমতার ভূমিকা কী এবং এটি কিভাবে আমাদের নিজেদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাঠামোকে পুনর্নির্মাণ করতে সাহায্য করতে পারে।
ফভস এবং পাবলো পিকাসো
১৯০৫-১৯০৬ সময়কালে, একটি শিল্পীগোষ্ঠী সাব-সাহারান আফ্রিকা (Sub-Saharan Africa) এবং ওশেনিয়ার (Oceania) শিল্পকলা অধ্যয়ন করতে শুরু করে। এই আকর্ষণ মূলত পল গঁগ্যা (Paul Gauguin) এর তাহিতি এবং তাহিতিয়ানদের চিত্রকর্মগুলির জনপ্রিয়তার কারণে ছিল। প্যারিসে গঁগ্যা-এর শিল্পকর্মের দুটি মরণোত্তর (posthumous) প্রদর্শনী, একটি ১৯০৩ সালে স্যালন দ’অতোমনে (Salon d’Automne) এবং অন্যটি ১৯০৬ সালে, শিল্পী মরিস দ্য ভ্লামিঙ্ক (Maurice de Vlaminck), আঁদ্রে দেরাঁ (André Derain), অঁরি মাতিস (Henri Matisse) এবং পাবলো পিকাসো (Pablo Picasso) এর মতো শিল্পীদের প্রভাবিত করেছিল।
বিশেষত, পাবলো পিকাসো আইবেরিয়ান ভাস্কর্য (Iberian sculpture), আফ্রিকান ভাস্কর্য (African sculpture), এবং আফ্রিকান ঐতিহ্যবাহী মাস্ক (African traditional masks), এবং এল গ্রেকো (El Greco) এর ম্যানারিস্ট চিত্রকর্মগুলি (Mannerist paintings) অধ্যয়ন করেছিলেন। এই নান্দনিক অধ্যয়নের ফলস্বরূপ পিকাসো তার বিখ্যাত চিত্রকর্ম Les Demoiselles d’Avignon (১৯০৭) অঙ্কন করেন এবং কিউবিজম (Cubism) এর ধারণা উদ্ভাবন করেন।
এই শিল্পীগোষ্ঠীকে ফভস (Fauves) বলা হত, যা ফরাসি শব্দ অর্থ “বন্য জন্তু”। ফভস আন্দোলনটি সাহসী রঙ, সরলকৃত আকার, এবং সোজাসাপটা শৈল্পিক প্রকাশের উপর গুরুত্বারোপ করেছিল। এই শিল্পীগণ গঁগ্যা-এর আদিমতাবাদের (Primitivism) ধারণা থেকে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাদের কাজের মধ্যে এই ধারণা প্রতিফলিত করেছিলেন।
পাবলো পিকাসো এই সময়কালে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠেন কারণ তিনি একাধিক সাংস্কৃতিক প্রভাব একত্রিত করে তার শৈল্পিক ভাষা তৈরি করেছিলেন। তার Les Demoiselles d’Avignon চিত্রকর্মটি সেই সময়ের শিল্প জগতকে বিস্মিত করে দিয়েছিল কারণ এটি একটি নতুন শৈল্পিক আন্দোলনের সূচনা করেছিল। কিউবিজম (Cubism) ছিল একটি র্যাডিক্যাল এবং বিপ্লবী শৈল্পিক ধারা, যা বাস্তবতা এবং স্থানিক সম্পর্কগুলিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছিল। এটি পরে আধুনিক শিল্পের অন্যতম প্রধান আন্দোলন হিসেবে পরিগণিত হয়েছিল।
এই শিল্পীদের কাজ এবং তাদের নান্দনিক অনুসন্ধান আধুনিক শিল্পের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সৃষ্টি করেছিল। তাদের সাহসী এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি শিল্পকলায় নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করেছিল, যা পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছিল।
উত্তর-উপনিবেশী আদিমতাবাদ (Anti-colonial Primitivism)
শিল্পে আদিমত্ব (Primitivism) সাধারণত পশ্চিমা শিল্পের একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে আদিমতাবাদী আদর্শবাদের কাঠামো অ-পশ্চিমা এবং উত্তর-উপনিবেশী (anti-colonial) শিল্পীদের শিল্পকর্মেও বিদ্যমান। আদিমতাবাদী কাজগুলি পশ্চিমা উপনিবেশায়িত জনগণের সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যানধারণার সমালোচনা করে, এবং প্রাক-উপনিবেশিক (pre-colonial) জীবনযাত্রার প্রতি আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। মানুষ যখন প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতি রেখে জীবনযাপন করত, সেই আদর্শ যুগের জন্য নস্টালজিয়া (nostalgia) হল এক ধরনের আকুলতা বা স্মৃতিচারণা, যা মনে করে যে সেই সময়টি ছিল সর্বোত্তম এবং সুখী। এই নস্টালজিয়া পশ্চিমা আধুনিকতার (Western modernity) দ্বারা উপনিবেশায়িত জনগণের উপর যে নেতিবাচক সাংস্কৃতিক প্রভাব পড়েছিল। অর্থাৎ, পশ্চিমা আধুনিকতার কারণে উপনিবেশায়িত জনগণের সংস্কৃতি, জীবনধারা এবং মূল্যবোধের যে ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে মুক্তির জন্য এবং পূর্বেকার আদর্শ যুগের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এই নস্টালজিয়া একটি প্রতিক্রিয়া।
উত্তর-উপনিবেশী শিল্পকর্মগুলি কেবল উপনিবেশবাদের সমালোচনা করে না, বরং এটি একটি ইতিবাচক ঐতিহাসিক যুগের পুনরুদ্ধার এবং পুনরুজ্জীবনের প্রচেষ্টা করে। এই শিল্পকর্মগুলি প্রাক-উপনিবেশিক সময়ের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সামাজিক সম্প্রীতি এবং প্রাকৃতিক সঙ্গতি তুলে ধরে। এই শিল্পীরা তাদের কাজের মাধ্যমে আদিমতার ধারণাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং উপনিবেশিক যুগের বিরুদ্ধবাদী ধারণাগুলিকে প্রতিহত করেন। উপনিবেশমুক্তির (decolonization) প্রক্রিয়াগুলি আদিমতাবাদের বিপরীত টেলিওলজির (reverse teleology) সাথে মিলিত হয়ে এমন স্থানীয় শিল্পকর্ম সৃষ্টি করে যা পশ্চিমা শিল্পীদের আদিমতাবাদী শিল্পকর্ম থেকে ভিন্ন এবং উপনিবেশিক ধ্যানধারণাগুলিকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করে। উপনিবেশমুক্তির (decolonization) প্রক্রিয়াগুলি হলো উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার এবং নিজের সংস্কৃতি ও পরিচয় পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা। আদিমতাবাদের (Primitivism) বিপরীত টেলিওলজি (reverse teleology) হল সেই ধারণা যা প্রাচীন বা প্রাক-উপনিবেশিক যুগকে একটি আদর্শ বা চূড়ান্ত গন্তব্য হিসেবে কল্পনা করে। এই দুই প্রক্রিয়া যখন মিলিত হয়, তখন এমন স্থানীয় শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয় যা পশ্চিমা শিল্পীদের আদিমতাবাদী শিল্পকর্ম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়। এই শিল্পকর্মগুলি উপনিবেশিক ধ্যানধারণাগুলির বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজ করে। পশ্চিমা শিল্পীরা আদিমতাবাদী শৈলী ব্যবহার করে উপনিবেশায়িত জনগণের সম্পর্কে যে প্রচলিত ধ্যানধারণা এবং কল্পনা তৈরি করেছিলেন, সেগুলি এই স্থানীয় শিল্পকর্মগুলি মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন হিসেবে প্রকাশ করে। বরং এই শিল্পকর্মগুলি উপনিবেশায়িত জনগণের প্রকৃত সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জীবনধারার একটি সঠিক এবং সম্মানজনক চিত্র তুলে ধরে।
উদাহরণস্বরূপ, উপনিবেশমুক্তির প্রক্রিয়া এবং বিপরীত টেলিওলজি যখন মিলিত হয়, তখন শিল্পীরা তাদের কাজের মাধ্যমে প্রাক-উপনিবেশিক যুগের সংস্কৃতির মহিমা, ঐক্য এবং সঙ্গতিকে তুলে ধরেন। তারা দেখাতে চান যে, উপনিবেশিক শাসনের আগে তাদের সমাজগুলি আরও সমৃদ্ধ, সম্প্রীতিময় এবং সাংস্কৃতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল। এইভাবে, তাদের শিল্পকর্মগুলি উপনিবেশিক ধ্যানধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে যা স্থানীয় জনগণের গর্ব এবং সম্মানের প্রতিনিধিত্ব করে।
একটি বিশেষ ধরনের শিল্পী আদিমতাবাদী ধারা হিসেবে, নেগ্রিতিউড (Négritude) আন্দোলনের শিল্পকর্মগুলি হারানো সোনালি যুগের (golden age) জন্য নস্টালজিয়া প্রকাশ করে। ১৯৩০-এর দশকে ফ্রাঙ্কোফোন (francophone) শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা শুরু হওয়া এই আন্দোলনটি আটলান্টিক মহাসাগরের উভয় পাশে সহজেই গৃহীত হয়েছিল এবং এটি আফ্রিকা মহাদেশ এবং আফ্রিকান প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। পশ্চিমা যুক্তিবাদ (Western rationalism) এবং ইউরোপীয় উপনিবেশবাদকে (European colonialism) প্রত্যাখ্যান করে, নেগ্রিতিউড শিল্পীরা প্রাক-উপনিবেশিক আফ্রিকাকে আদর্শ হিসেবে কল্পনা করে এমন শিল্পকর্ম তৈরি করেছিলেন, যা ইউরোপীয়দের আগমনের পূর্বে আরও সাংস্কৃতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ সমাজ হিসেবে উপস্থাপিত হয়।
নেগ্রিতিউড আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য শিল্পীদের মধ্যে কিউবার শিল্পী উইফ্রেডো ল্যাম (Wifredo Lam) অন্যতম, যিনি ১৯৩০-এর দশকে প্যারিসে পিকাসো (Picasso) এবং স্যুররিয়ালিস্টদের (surrealists) সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪১ সালে কিউবায় ফিরে আসার পর, ল্যাম মানুষের, প্রাণীদের এবং প্রকৃতির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে গতিশীল ট্যাবলু (tableaux) তৈরি করতে উত্সাহিত হন। তার চিত্রকর্ম The Jungle (১৯৪৩)-এ, ল্যাম-এর পলিমর্ফিজম (polymorphism) একটি ফ্যান্টাসি জঙ্গলের দৃশ্য তৈরি করে, যেখানে ইক্ষুর মধ্যে আফ্রিকান মোটিফগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি নেগ্রিতিউডের নব-আফ্রিকান আদর্শবাদ এবং টেবিল চিনির উৎপাদনের জন্য বাগান দাসত্বের ইতিহাসের মধ্যে সংযোগ প্রতিফলিত করে।
উত্তর-উপনিবেশী আদিমতাবাদ শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারায় পরিণত হয়েছিল, যা পশ্চিমা আদিমতাবাদের থেকে ভিন্ন ছিল। এই শিল্পীরা তাদের কাজের মাধ্যমে প্রাক-উপনিবেশিক সংস্কৃতির মহিমা এবং ঐক্যকে উদযাপন করতেন, যা তাদের নিজস্ব সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক এবং সম্মানজনক ঐতিহ্য তুলে ধরত। এটি উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করত, যা আধুনিক বিশ্বে তাদের স্থান এবং পরিচয়কে পুনঃস্থাপন করত।
উত্তর-উপনিবেশী আদিমতাবাদী শিল্পীরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি গর্ববোধ করতেন এবং তাদের কাজের মাধ্যমে উপনিবেশিক দখলদারিত্বের ফলশ্রুতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। তাদের শিল্পকর্মগুলি একটি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এবং জাতীয়তাবাদের (nationalism) অভিব্যক্তি ছিল। এই শিল্পীরা বিশ্বাস করতেন যে, প্রাক-উপনিবেশিক সময়ে তাদের সমাজগুলি ছিল আরও ন্যায়সঙ্গত, সমৃদ্ধ এবং সাংস্কৃতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ। তাদের শিল্পকর্মগুলি এই ধারণাকে প্রতিফলিত করত এবং একটি নতুন জাতীয় পরিচয় গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করত। এটি উপনিবেশবাদী শক্তির দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতি এবং সমাজের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজ করত। উত্তর-উপনিবেশী আদিমতাবাদী শিল্পীরা কেবলমাত্র পশ্চিমা শিল্পীদের আদিমতাবাদী কাজের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নয়, বরং একটি স্বাধীন সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি হিসেবে তাদের কাজগুলিকে উপস্থাপন করতেন। তাদের কাজগুলি তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির গভীরতা এবং ঐতিহ্যকে উদযাপন করত, যা একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের মাধ্যম হয়ে উঠেছিল।
সুতরাং, উত্তর-উপনিবেশী আদিমতাবাদ কেবলমাত্র একটি শৈল্পিক আন্দোলন নয়, বরং এটি একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা উপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ এবং তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার ছিল। এটি আধুনিক বিশ্বে তাদের নিজস্ব স্থান এবং পরিচয়কে পুনঃস্থাপিত করতে সহায়ক হয়েছিল এবং একটি নতুন জাতীয় চেতনা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
নিও-প্রিমিটিভিজম বা নব্যআদিমতাবাদ
নিও-প্রিমিটিভিজম (Neo-primitivism) ছিল একটি রুশ শিল্প আন্দোলন, যার নামকরণ করা হয়েছিল আলেকসান্দ্র শেভচেঙ্কো (Aleksandr Shevchenko) রচিত ৩১ পৃষ্ঠার পুস্তিকা নিও-প্রিমিটিভিজম (Neo-primitivizm) (১৯১৩) থেকে। নিও-প্রিমিটিভিজম (Neo-primitivism) শিল্প আন্দোলনটি একটি অবাঁ-গার্দ (avant-garde) আন্দোলনের ধরন হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি এক ধরনের নতুন আধুনিক চিত্রশৈলী হিসেবে প্রস্তাবিত হয়েছিল, যা বিভিন্ন শিল্পধারার উপাদানগুলোকে একত্রিত করে একটি সৃষ্টিশীল মিশ্রণ তৈরি করে। এই নতুন শৈলীটি পল সেজান (Paul Cézanne), কিউবিজম (Cubism), এবং ফিউচারিজমের (Futurism) উপাদানগুলোকে রুশ ঐতিহ্যবাহী ‘লোক শিল্প’ (folk art) শৈলী এবং মোটিফগুলির সাথে মিলিত করে তৈরি করা হয়েছিল। পল সেজান-এর শিল্পে যে সরলতা এবং গঠনমূলক নিরীক্ষা দেখা যায়, তা নিও-প্রিমিটিভিজমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল। সেজান-এর চিত্রকর্মে জ্যামিতিক আকার এবং স্থানিক বিন্যাসের উপর যে জোর দেওয়া হয়েছিল, তা নিও-প্রিমিটিভিজম শিল্পীদের জন্য একটি প্রেরণা হয়ে উঠেছিল। কিউবিজম, যা পিকাসো (Picasso) এবং ব্রাক (Braque) এর মতো শিল্পীদের দ্বারা বিকাশিত হয়েছিল, নিও-প্রিমিটিভিজমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল। কিউবিজমে বিষয়বস্তুর বিভিন্ন দিককে একত্রিত করে একটি সমতল এবং জ্যামিতিক ফর্মে উপস্থাপন করা হয়। নিও-প্রিমিটিভিজম শিল্পীরা এই কিউবিস্ট শৈলীকে তাদের কাজের মধ্যে সংযুক্ত করেছিলেন, যা তাদের চিত্রকর্মগুলিকে একটি সমসাময়িক এবং বিপ্লবী রূপ দিয়েছিল। ফিউচারিজম ছিল একটি ইতালীয় শিল্প আন্দোলন, যা গতিশীলতা, গতি এবং আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহকে প্রাধান্য দিয়েছিল। নিও-প্রিমিটিভিজম শিল্পীরা ফিউচারিজমের এই ধারণাগুলিকে গ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের চিত্রকর্মগুলিতে গতিশীলতা এবং গতির অনুভূতি যোগ করেছিলেন। রুশ ঐতিহ্যবাহী ‘লোক শিল্প’ শৈলী এবং মোটিফগুলি, বিশেষ করে রুশ আইকন (Russian icon) এবং লুবোক (lubok), নিও-প্রিমিটিভিজমের শৈল্পিক ভাষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। রুশ আইকন হলো ধর্মীয় চিত্রকর্ম যা সাধারণত খ্রিস্টধর্মের পবিত্র ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলিতে সাধারণত সরল এবং অমোঘ চিত্রাভাস ব্যবহার করা হয়, যা রুশ সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত। লুবোক হলো রুশ জনপ্রিয় চিত্রকর্ম এবং ছাপচিত্র, যা সাধারণ মানুষের জন্য তৈরি করা হত এবং এতে প্রায়শই রূপকথা, লোককাহিনী এবং দৈনন্দিন জীবনের দৃশ্য চিত্রিত হত। এই চিত্রগুলিতে সাধারণত জীবন্ত রং, সরল রেখাচিত্র এবং হাস্যরসাত্মক উপাদান ব্যবহার করা হত।
নিও-প্রিমিটিভিজম শিল্পীরা সেজান, কিউবিজম, এবং ফিউচারিজমের উপাদানগুলোকে রুশ ঐতিহ্যবাহী শৈলী এবং মোটিফগুলির সাথে মিলিত করে একটি নতুন এবং ভিন্ন শৈল্পিক ভাষা তৈরি করেছিলেন। তাদের কাজগুলি রুশ সংস্কৃতির গভীরতা এবং ঐতিহ্যকে উদযাপন করে এবং এক ধরনের সমসাময়িক সৃজনশীলতা প্রদান করে যা তাদের কাজগুলিকে আন্তর্জাতিক শিল্প জগতে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছিল। এই আন্দোলনের শিল্পকর্মগুলো প্রায়শই সাহসী রং, সরল নকশা এবং গভীর অভিব্যক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিষয়গুলি উপস্থাপন করত। এটি আধুনিক শিল্পের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল, যা রুশ ঐতিহ্যের সাথে আধুনিকতার একটি সংমিশ্রণ ঘটিয়ে একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের পথ তৈরি করেছিল।
নিও-প্রিমিটিভিজম ব্লু রোজ (Blue Rose) আন্দোলনের প্রতীকবাদী শিল্পকে প্রতিস্থাপন করেছিল। এই আন্দোলনের প্রারম্ভিক সময়ে এটি গ্রহণ করা হয়েছিল কারণ এর পূর্ববর্তী আন্দোলন অতীতের দিকে ফিরে তাকানোর প্রবণতা নিয়ে কাজ করেছিল এবং সৃজনশীল উৎকর্ষতার শীর্ষ অতিক্রম করেছিল। নিও-প্রিমিটিভিজমের একটি ধারণা এটিকে আদিমতাবাদ-বিরোধী আদিমতাবাদ (anti-primitivist Primitivism) হিসেবে বর্ণনা করে, কারণ এটি আদিমতাবাদের ইউরোসেন্ট্রিক (Eurocentric) সার্বজনীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিও-প্রিমিটিভিজমকে একটি সমসাময়িক সংস্করণ হিসেবে উপস্থাপন করে যা পূর্ববর্তী আদিমতাবাদী আলোচনাগুলিকে অস্বীকার করে।
নিও-প্রিমিটিভিজমের কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে সাহসী রংয়ের ব্যবহার, মৌলিক নকশা এবং অভিব্যক্তিশীলতা। পল গঁগ্যা (Paul Gauguin) এর কাজগুলিতে এই বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায়, যা জীবন্ত রঙ এবং সমতল আকার প্রদর্শন করে, তিন-মাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে। ইগর স্ট্রাভিনস্কি (Igor Stravinsky) আরেকজন নিও-প্রিমিটিভিজম শিল্পী, যিনি তার শিশুদের জন্য রচিত টুকরোগুলির জন্য পরিচিত, যা রুশ লোককথার উপর ভিত্তি করে ছিল। অনেক নিও-প্রিমিটিভিজম শিল্পী পূর্বে ব্লু রোজ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। নিও-প্রিমিটিভিজমের সাথে যুক্ত রুশ শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন:
- ডেভিড বারলিউক (David Burlyuk)
- মার্ক শাগাল (Marc Chagall)
- পাভেল ফিলোনভ (Pavel Filonov)
- নাতালিয়া গনচারোভা (Natalia Goncharova)
- মিখাইল লারিওনভ (Mikhail Larionov)
- কাজিমির মালেভিচ (Kasimir Malevich)
- আলেকসান্দ্র শেভচেঙ্কো (Aleksandr Shevchenko)
- ইগর স্ট্রাভিনস্কি (Igor Stravinsky)
নিও-প্রিমিটিভিজম একটি শিল্প আন্দোলন হিসেবে রুশ সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত এবং এটি স্থানীয় শৈল্পিক ঐতিহ্যের সাথে আধুনিক শিল্পের উপাদানগুলিকে সংযুক্ত করেছে। এই আন্দোলনের শিল্পকর্মগুলোতে সাহসী রং, সরল নকশা এবং গভীর অভিব্যক্তি প্রকাশ পায়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের সাথে মিলিত হয়ে একটি নতুন এবং ভিন্ন শৈল্পিক ভাষা তৈরি করেছিল। নিও-প্রিমিটিভিজমের শিল্পকর্মগুলোতে রুশ আইকন এবং লুবোকের মোটিফগুলি ব্যবহার করা হয়েছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি একটি গভীর শ্রদ্ধা এবং সংযোগ প্রকাশ করে। এই শিল্পীরা সেজান, কিউবিজম এবং ফিউচারিজমের উপাদানগুলিকে তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক উপাদানের সাথে মিশিয়ে একটি নতুন শৈল্পিক ভাষা তৈরি করেছেন, যা আধুনিক এবং ঐতিহ্যবাহী উভয়ই। এই আন্দোলনের শিল্পকর্মগুলো প্রায়শই সামাজিক এবং রাজনৈতিক বার্তাও বহন করত, যা রুশ সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করত। উদাহরণস্বরূপ, নাতালিয়া গনচারোভা এবং মিখাইল লারিওনভ তাদের কাজের মাধ্যমে রাশিয়ার গ্রামীণ জীবনের কষ্ট এবং সংগ্রামকে তুলে ধরেছিলেন। ইগর স্ট্রাভিনস্কির সঙ্গীত রুশ লোককথার উপর ভিত্তি করে ছিল এবং এটি নিও-প্রিমিটিভিজম আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তার সঙ্গীত রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী সুর এবং ছন্দকে আধুনিক সঙ্গীতের সাথে মিশিয়ে একটি নতুন শৈল্পিক অভিজ্ঞতা প্রদান করেছিল। নিও-প্রিমিটিভিজম আন্দোলন রুশ শিল্পের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এটি স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং সংযোগ প্রকাশ করে এবং আধুনিক শিল্পের উপাদানগুলিকে মিশিয়ে একটি নতুন শৈল্পিক ভাষা তৈরি করেছে। এই আন্দোলনের শিল্পকর্মগুলো রাশিয়ার সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাসের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এবং একটি নতুন সাংস্কৃতিক চেতনার সৃষ্টি করেছে, যা রুশ শিল্পীদের জন্য একটি গভীর প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আধুনিক শিল্পে আদিমত্ব সম্পর্কিত জাদুঘরের প্রদর্শনী
নভেম্বর ১৯১০ সালে, রজার ফ্রাই (Roger Fry) লন্ডনের গ্রাফটন গ্যালারিতে (Grafton Galleries) Manet and the Post-Impressionists শীর্ষক একটি প্রদর্শনী আয়োজন করেন। এই প্রদর্শনীতে পল সেজান (Paul Cézanne), পল গঁগ্যা (Paul Gauguin), অঁরি মাতিস (Henri Matisse), এডুয়ার মানে (Édouard Manet), পাবলো পিকাসো (Pablo Picasso) এবং ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ (Vincent Van Gogh) সহ আরও অনেকের কাজ প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য ছিল ফরাসি শিল্পের বিগত তিন দশকের বিকাশ প্রদর্শন করা। তবে লন্ডনের শিল্প সমালোচকরা এই প্রদর্শনী দেখে হতবাক হন। অনেকেই ফ্রাইকে ‘পাগল’ এবং ‘উন্মাদ’ বলে অভিহিত করেছিলেন এই ধরনের শিল্পকর্ম প্রকাশ্যে প্রদর্শনের জন্য। ফ্রাই-এর প্রদর্শনীটি আধুনিক শিল্পে আদিমত্বের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, যদিও তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তা করতে চাননি। আমেরিকান পণ্ডিত মারিয়ানা টোরগোভনিক (Marianna Torgovnick) এই প্রদর্শনীকে লন্ডনের শিল্প মঞ্চে আদিমত্বের “অভিষেক” বলে অভিহিত করেন।
১৯৮৪ সালে, নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্ট (The Museum of Modern Art) আধুনিক শিল্পে আদিমত্বের উপর একটি নতুন প্রদর্শনী আয়োজন করে। এই প্রদর্শনীতে স্পষ্ট সমস্যা তুলে ধরার পরিবর্তে, আধুনিক শিল্পীদের অনুপ্রেরণার জন্য অ-পশ্চিমা বস্তুর ব্যবহারের প্রশংসা করা হয়েছিল। প্রদর্শনীর পরিচালক উইলিয়াম রুবিন (William Rubin) রজার ফ্রাই-এর প্রদর্শনীকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আধুনিক শিল্পকর্মগুলি অ-পশ্চিমা বস্তুগুলির সাথে পাশাপাশি প্রদর্শন করেন। রুবিন বলেছিলেন, “তিনি ‘গোত্রীয়’ শিল্পের টুকরো নিয়ে ততটা আগ্রহী ছিলেন না যতটা তিনি আধুনিক শিল্পীরা এই শিল্পকে কীভাবে ‘আবিষ্কার’ করেছিলেন তার উপরে গুরুত্ব দিতে চেয়েছিলেন।” তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন যে এই দুটি ধরনের শিল্পের মধ্যে একটি ‘সম্পর্ক’ রয়েছে। পণ্ডিত জ্যাঁ-হুবের মার্টিন (Jean-Hubert Martin) যুক্তি দেন যে এই মনোভাব কার্যত ‘গোত্রীয়’ শিল্পের বস্তুগুলিকে “অবান্তর বা আধুনিকতাবাদী অবাঁ-গার্দের (Modernist avant-garde) পরিপূরক” হিসেবে স্থান দিয়েছিল। রুবিনের প্রদর্শনীটি চারটি ভিন্ন অংশে বিভক্ত ছিল: ধারণা (Concepts), ইতিহাস (History), সম্পর্ক (Affinities), এবং সমসাময়িক অনুসন্ধান (Contemporary Explorations)। প্রতিটি অংশ আধুনিক শিল্প এবং অ-পশ্চিমা ‘শিল্পের’ মধ্যে সংযোগগুলি দেখানোর জন্য একটি আলাদা উদ্দেশ্য পরিবেশন করেছিল।
২০১৭ সালে, মুসে দ্য ক্য দ্য ব্রানলি – জ্যাক শিরাক (Musée du Quai Branly – Jacques Chirac) প্যারিসের মুসে ন্যাশনাল পিকাসো (Musée National Picasso) এর সাথে সহযোগিতায় একটি বিশেষ প্রদর্শনী আয়োজন করে, যার নাম ছিল Picasso Primitif। প্রদর্শনীটির পরিচালক ইভ লে ফুর (Yves Le Fur) এই প্রদর্শনীটির মাধ্যমে একটি সংলাপ শুরু করতে চেয়েছিলেন যেখানে “পিকাসোর কাজগুলি – শুধুমাত্র তার প্রধান কাজগুলি নয় বরং তার নান্দনিক ধারণাগুলির পরীক্ষা-নিরীক্ষাও – অ-পশ্চিমা শিল্পীদের সমৃদ্ধ কাজগুলির সাথে মিলিত হবে।” Picasso Primitif প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য ছিল পিকাসোর কাজগুলিকে অ-পশ্চিমা শিল্পীদের কাজগুলির সাথে তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করা। এর মাধ্যমে প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি সংযোগ স্থাপন করা যেখানে পিকাসোর শিল্পকর্ম এবং অ-পশ্চিমা শিল্পীদের কাজগুলির মধ্যে সাদৃশ্য এবং পার্থক্য উভয়ই স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হবে। এই প্রদর্শনীটি পরিকল্পিত হয়েছিল এমনভাবে যাতে এটি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং নান্দনিক সমস্যা, যেমন নগ্নতা (nudity), যৌনতা (sexuality), আবেগ (impulses) এবং ক্ষতি (loss) – এই বিষয়গুলি কীভাবে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে প্রকাশিত হয়েছে তা প্রদর্শন করতে পারে। পিকাসো এবং অ-পশ্চিমা শিল্পীদের কাজগুলির মধ্যে এই বিষয়গুলির সমান্তরাল প্লাস্টিক সমাধানগুলি (parallel plastic solutions) দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রদর্শনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল এই বিষয়গুলির উপর আলোচনার মাধ্যমে শিল্পীদের অভিজ্ঞতা এবং সৃষ্টিশীলতার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করা। ইভ লে ফুর চেয়েছিলেন যে দর্শকরা এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেখুক কীভাবে পিকাসোর শিল্প এবং অ-পশ্চিমা শিল্প একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং কীভাবে তারা তাদের নিজ নিজ সংস্কৃতির সমস্যা এবং অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত করে। এই প্রদর্শনীটি পিকাসোর কাজগুলির গভীরতা এবং বৈচিত্র্য প্রদর্শনের পাশাপাশি অ-পশ্চিমা শিল্পীদের সমৃদ্ধ এবং মূল্যবান কাজগুলিরও প্রশংসা করা হয়েছিল। এর ফলে একটি নতুন এবং বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়েছিল যা আধুনিক শিল্পের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হয়। Picasso Primitif প্রদর্শনীটি এইভাবে পিকাসোর শিল্প এবং অ-পশ্চিমা শিল্পের মধ্যে একটি সংলাপ শুরু করেছিল যা দর্শকদের সামনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং নান্দনিক সমস্যা এবং তাদের সমাধানগুলি উপস্থাপন করেছিল। এটি আধুনিক শিল্পের বিবর্তন এবং তার নান্দনিক গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটি গভীর এবং সমৃদ্ধ অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছিল।
২০১৮ সালে, মন্ট্রিয়াল মিউজিয়াম অফ ফাইন আর্টস (Montreal Museum of Fine Arts) From Africa to the Americas: Face-to-Face Picasso, Past and Present শীর্ষক একটি প্রদর্শনী আয়োজন করে। এমএমএফএ (MMFA) এই প্রদর্শনীটি মুসে দ্য ক্য দ্য ব্রানলি – জ্যাক শিরাক এবং মুসে ন্যাশনাল পিকাসো – প্যারিস থেকে ৩০০টি কাজ এবং দলিল নিয়ে এসেছিল এবং Picasso Primitif প্রদর্শনীটিকে প্রসারিত ও উন্নত করেছিল। নাথালি বন্ডিল (Nathalie Bondil) ইভ লে ফুরের পিকাসোর কাজগুলিকে অ-পশ্চিমা শিল্প ও বস্তুর সাথে তুলনা করে প্রদর্শনের উপায়গুলির সমস্যাগুলি দেখেছিলেন এবং তা মোকাবেলার উপায় খুঁজে পান। এই প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিল, “একটি প্রধান প্রদর্শনী যা শিল্প ইতিহাসের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং পুনঃপাঠকে অনুপ্রাণিত করে।” প্রদর্শনীটি ১৯ শতকের শেষ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আফ্রিকা, ওশেনিয়া এবং আমেরিকার শিল্প সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির রূপান্তর পরীক্ষা করে। বন্ডিল জানতে চেয়েছিলেন কিভাবে নৃতাত্ত্বিক বস্তুগুলি শিল্প হিসেবে দেখা যায় এবং প্রশ্ন করেছিলেন, “কিভাবে একটি পিকাসো এবং একটি অজ্ঞাত মাস্ককে একই স্তরে প্রদর্শন করা যায়?”
এই প্রদর্শনীগুলি আধুনিক শিল্পে আদিমত্বের গুরুত্ব এবং বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর উপস্থাপনার পদ্ধতিগুলি বিশ্লেষণ করে। এগুলি আমাদেরকে বোঝার সুযোগ দেয় যে, কিভাবে অ-পশ্চিমা শিল্পের উপাদানগুলি আধুনিক শিল্পে প্রভাব ফেলেছে এবং কিভাবে এই প্রভাবগুলি প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
- Antliff, M., & Leighten, P. (1996). “Primitive” in Critical Terms for Art History, R. Nelson and R. Shiff (Eds.). Chicago: University of Chicago Press (rev. ed. 2003).
- Anttonen, P., Forselles, C. af, & Salmi-Niklander, K. (2018). Oral Tradition and Book Culture. Helsinki: Finnish Literature Society. p. 70. ISBN 978-951-858-007-5.
- Atkins, R. (1993). Artspoke. ISBN 978-1-55859-388-6.
- Bachus, N., & Glover, D. (2003). Beyond the Romantic Spirit 1880-1922. Los Angeles, CA: Alfred Music Publishing. p. 24. ISBN 978-0-7390-3217-6.
- Bachus, N., & Glover, D. (2006). The Modern Piano: The Influence of Society, Style, and Musical Trends on the Great Piano Composers. Los Angeles, CA: Alfred Music Publishing. p. 26. ISBN 0-7390-4298-X.
- Berlin, I. (1976). Vico and Herder. New York: Viking. p. 000.
- Bitterli, U., & Robertson, R. (1989). Cultures in Conflict: Encounters Between European and Non-European Cultures, 1492-1800. Stanford, CA: Stanford University Press. p. 12. ISBN 978-0-8047-2176-9.
- Blunt, A., & Pool, P. (1962). Picasso, the Formative Years: A Study of His Sources. Graphic Society.
- Bowlt, J. E. (1976). Russian Art, 1875-1975: A Collection of Essays. New York, NY: MSS Information Corporation. p. 94. ISBN 0-8422-5262-2.
- Brooker, P., & Thacker, A. (2013). The Oxford Critical and Cultural History of Modernist Magazines, Volume III. Oxon: Oxford University Press. p. 1289. ISBN 978-0-19-968130-3.
- Camayd-Freixas, E., & Gonzalez, J. E. (2000). Primitivism and Identity in Latin America: Essays on Art, Literature, and Culture. Tucson: University of Arizona Press. p. 16. ISBN 978-0-8165-2045-9.
- Connelly, S. F. (1999). The Sleep of Reason: Primitivism in Modern European Art and Aesthetics, 1725–1907. University Park: Pennsylvania State University Press.
- Cook, M. (2017-08-24). “A Primitivism of the Senses”. In Rogers, H., & Barham, J. (Eds.), The Music and Sound of Experimental Film. Oxford University Press. doi:10.1093/acprof/9780190469894.003.0003.
- Cooper, D. (1970). The Cubist Epoch. London: Phaidon in association with the Los Angeles County Museum of Art & the Metropolitan Museum of Art. ISBN 0-87587-041-4.
- Dalrymple Henderson, L. (1981). The Fourth Dimension and Non-Euclidean Geometry in Modern Art. Princeton University Press. p. 000.
- del Valle, A. (2015). “Primitivism in the Art of Ana Mendieta”. Tesis doctoral. Universitat Pompeu Fabra. Retrieved 8 July 2017.
- Diamond, S. (1974). In Search of the Primitive: A Critique of Civilization. New Brunswick: Transaction Publishers.
- Diamond, S. (2017). In Search of the Primitive: A Critique of Civilization. Oxon: Taylor & Francis. p. 159. ISBN 978-1-138-08779-8.
- Diamond 1974, p. 215.
- Etherington, B. (2018). Literary Primitivism. Stanford: Stanford University Press. p. 000.
- Flam, J., & Deutch, M. (Eds.). (2003). Primitivism and Twentieth-Century Art Documentary History. University of California Press.
- Foxcroft, N. H. (2019). The Kaleidoscopic Vision of Malcolm Lowry: Souls and Shamans. Lanham, MD: Rowman & Littlefield. p. 22. ISBN 978-1-4985-1657-0.
- Frances Spalding, “Roger Fry and His Critics in a Post-Modernist Age,” The Burlington Magazine 128, no. 1000 (1986): 490.
- Goldwater, R. (1967). Primitivism in Modern Art, Revised Edition. New York: Vintage. p. 0000.
- Goldwater, R. (2002). Primitivism in Modern Art. Belnap Press.
- Hamilton, A. C. (1997). The Spenser Encyclopedia. Toronto: University of Toronto Press. p. 557. ISBN 0-8020-2676-1.
- Hirsch, E. (2014). A Poet’s Glossary. New York: HMH. p. 485. ISBN 978-0-15-101195-7.
- Ian McGillis, “MMFA Show Shines a Light on How Picasso Tapped into Africa to Redefine Art in the 20th Century,” Montreal Gazette, May 4, 2018.
- Jean-Hubert Martin, The Whole Earth Show, interview by Benjamin H. D. Buchloh, July 1989.
- Li, V. (2006). The Neo-primitivist Turn: Critical Reflections on Alterity, Culture, and Modernity. Toronto: University of Toronto Press. pp. ix, 18, 19. ISBN 0-8020-9111-3.
- Lovejoy, A. O., & Boas, G. (1935). Primitivism and Related Ideas in Antiquity. Baltimore: Johns Hopkins Press.
- Lovejoy, A. O., & Boas, G. (1997). Primitivism and Related Ideas in Antiquity (With supplementary essays by W. F. Albright and P. E. Dumont). Baltimore and London: Johns Hopkins University Press.
- Marianna Torgovnick, Gone Primitive: Savage Intellects, Modern Lives, Nachdr. (Chicago: Univ. of Chicago Press, 1990), 104.
- Pagden, A. (1983). “The Savage Critic: Some European Images of the Primitive”, The Yearbook of English Studies, 13, 32–45.
- Redfield, R. (1971). “Art and Icon” in Anthropology and Art, C. Otten (Ed.). New York: Natural History Press.
- Rhodes, C. (1994). Primitivism and Modern Art. London: Thames and Hudson.
- Rubin, W., “Modernist Primitivism, 1984,” p. 320, in Primitivism: Twentieth Century Art, A Documentary History, Jack Flam and Miriam Deutch, editors.
- See Solomon-Godeau 1986, p. 314.
- Shevchenko, A. (1913). Neo-primitivizm: ego teoriia, ego vozmozhnosti, ego dostizheniia. Moscow: [s.n.].
- Solomon-Godeau, A. (1986). “Going Native: Paul Gauguin and the Invention of Primitivist Modernism” in The Expanded Discourse: Feminism and Art History, N. Broude and M. Garrard (Eds.). New York: Harper Collins.
- Solomon-Godeau 1986, p. 315.
- Solomon-Godeau 1986, p. 324.
- Stokes Sims, L. (2002). Wifredo Lam and the International Avant-garde, 1923–1982. University of Texas Press. p. 000.
- Torgovnick, M. (1991). Gone Primitive: Savage Intellects, Modern Lives. Chicago: University of Chicago Press.
- Victor, L. (2006). The Neo-primitivist Turn: Critical Reflections on Alterity, Culture, and Modernity. Toronto: University of Toronto Press. ISBN 0-8020-9111-3.
- William Rubin et al., eds. (1984). “Primitivism” in 20th Century Art: Affinity of the Tribal and the Modern. New York: Boston: Museum of Modern Art; Distributed by New York Graphic Society Books.
- Yves Le Fur, “Picasso Primitif,” Exhibition Leaflet, Musée du quai Branly – Jacques Chirac, 2017, 2.
- “From Africa to the Americas: Face-to-Face Picasso, Past and Present,” The Montreal Museum of Fine Arts, accessed December 3, 2018.
Leave a Reply