ইয়াসুকে: জাপানের আফ্রিকান সামুরাইয়ের গল্প

ভূমিকা

সেনগোকু জিদাই, ফিউডাল জাপানের যুদ্ধকালীন রাজ্য। এই যুগ আমাদের মনে এনে দেয় মহাকাব্যিক দুর্গ, অসাধারণ যুদ্ধ এবং মার্জিত কিমোনো ও শীর্ষ-কুঁচানো চুলে সজ্জিত স্থির সামুরাইদের ছবি, যারা তাদের আইকনিক কাটানা (Katana) ধারণ করে। যদি বলা হয় যে, এই প্রাচীন যোদ্ধা-অর্ডারের একজন সদস্য ছিলেন পূর্ব আফ্রিকা থেকে আসা একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, তাহলে কেমন লাগবে? এটি ইয়াসুকে-র কাহিনী, যিনি জাপানের বাইরে প্রথম ব্যক্তি যিনি দ্বৈত কাটানা (dual Katana) ধারণ করেছিলেন, এবং একমাত্র আফ্রিকান যিনি এটি করেছিলেন।

প্রেক্ষাপট

জাপানে পর্তুগিজ প্রভাব: আফ্রিকান সামুরাইয়ের গল্প শুরু করতে আমাদের প্রথমে প্রেক্ষাপট স্থাপন করতে হবে ১৫ শতকের প্রথম দিকে, যখন পর্তুগিজ সাম্রাজ্য এশিয়ান প্যাসিফিক জুড়ে তাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাণিজ্যিক পোস্টগুলো স্থাপন করেছিল। ১৫৪৩ সালে তারা দক্ষিণ জাপানে পৌঁছায়। জাপানীরা মিং চীন থেকে সিল্ক আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করত, এবং দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ক শীতল ছিল এবং তখন মিং সম্রাটের আদেশে বাণিজ্য নিষিদ্ধ ছিল। পর্তুগিজরা চীনে সিল্ক কিনে জাপানে নিয়ে এসে একটি বিশেষ বাণিজ্য স্থাপন করেছিল। এই ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা দুই এশিয়ান শক্তিশালী রাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে খুব ধনী হয়ে উঠেছিল। পর্তুগিজরা নাগাসাকিতে একটি বাণিজ্যিক বন্দর তৈরি করার অনুমতি পেয়েছিল, যা দ্রুত একটি বৃহৎ বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এবং যেখানে ইউরোপীয়রা যেত, তাদের পাদ্রীরাও সেখানে তাদের অনুসরণ করতে করতে এসে পড়ে। ক্যাথলিক সোসাইটি অফ জেসাস (Catholic Society of Jesus), যা জেসুইটস (Jesuits) নামেও পরিচিত, তা দক্ষিণ জাপানে একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি স্থাপন করেছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল সমস্ত জাপানকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা, ফ্রান্সিস জেভিয়ারের (Francis Xavier) মতো পাদ্রীদের নেতৃত্বে। তাদের প্রভাবের শীর্ষ সময়ে জাপানে কয়েকজন ডাইমিও লর্ড (Daimyo Lords) এবং ২০০,০০০-এরও বেশি জাপানি খ্রিস্টান জাপানে বাস করতো, প্রধানত কিউশু অঞ্চলে।

রহস্যময় ইয়াসুকে: অবশ্যই, পর্তুগিজ এবং তাদের জেসুইট সহকর্মীরা অন্যান্য মহাদেশেও তাদের প্রভাব বিস্তার করছিল। ১৫০০-এর দশকে পর্তুগিজরা আফ্রিকায় বর্তমান মোজাম্বিক নামে পরিচিত অঞ্চলটিতে তারা একটি শক্ত অবস্থান স্থাপন করেছিল। এখানে তারা স্থানীয় ক্রীতদাস বাণিজ্যে উৎসাহী অংশগ্রহণকারী হয়ে উঠেছিল, স্থানীয় প্রধানদের কাছ থেকে অনেক দরিদ্র লোকেদের অধিকার করে, যাদেরকে তারা তাদের বিশাল সামুদ্রিক সাম্রাজ্য জুড়ে শ্রমের জন্য পাঠাত। একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ যে ফিউডাল জাপানে একজন সামুরাই হয়ে উঠেছিল সেটাকে সত্য হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তবে, আমরা তার সম্পর্কে খুব কম জানি। তার জন্মভূমি, প্রাথমিক জীবন, এমনকি তার মূল নাম সম্পর্কেও আমাদের কাছে সঠিক তথ্য নেই। আমরা কেবলমাত্র তার জাপানি প্রদত্ত নাম জানি – ইয়াসুকে (Yasuke)। এই লেখাটিতে তার যে গল্পটি চিত্রিত করা হচ্ছে করেছি তা তার জীবনের কিছু তথ্যের উপর আমার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা। আমরা তার উৎস সম্পর্কে কেবলমাত্র তত্ত্বটাই জানি। কেউ কেউ বলে যে তিনি ১৫৫৫ সালের আশেপাশে মোজাম্বিকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যা তখন পর্তুগিজদের দ্বারা উপনিবেশায়িত ছিল। তিনি সম্ভবত মাকুয়া গোষ্ঠীর (Makua Peoples) লোক ছিলেন, যা একটি বান্টু ট্রাইব ছিল। তবে কেউ কেউ দাবি করেন যে তিনি ইথিওপিয়া থেকে এসেছিলেন এবং হাবশি গোষ্ঠীর (Habshi Peoples) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। যেটাই হোক না কেন, এই পূর্ব আফ্রিকান ব্যক্তির কাহিনী তার শৈশবে শুরু হয়, যেখানে তিনি সম্ভবত দাসত্ব বরণ করেন এবং স্থানীয় জেসুইটদের কাছে তাকে দাস হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তাকে খ্রিস্টধর্ম এবং ক্যাথলিক জীবনধারা শেখানো হয়েছিল এবং জেসুইট অর্ডারের বিশ্বাসগুলোতেই তাকে দীক্ষিত করা হয়। কিছু কাল পরে, ইয়াসুকে জেসুইট পরিদর্শক আলেসান্দ্রো ভ্যালিগনানোর (Alessandro Valignano) কাছে দেওয়া হয়। ভ্যালিগনানোর মিশন ছিল জাপানে জেসুইট কার্যকলাপের নিরীক্ষণ করা, তাই তিনি তার দাসদের সাথে পূর্ব দিকে যাত্রা করেন। এভাবে, ১৫৭৯ সালে পূর্ব আফ্রিকার এই নামবিহীন ব্যক্তিটি প্রথমবার জাপানের মাটিতে পা রাখেন, তার জেসুইট প্রভুর পেছন পেছন।

জাপান ইয়াসুকে : এখন, যে জাপানে তিনি পা রেখেছিলেন সেই জাপান সম্পর্কে একটু সংক্ষেপে বর্ণনা করা যাক। জাপানে তখন ওয়ারিং স্টেইট পিরিয়ড বা যুদ্ধরত রাষ্ট্রের সময়কাল চলে যা সেনগোকু জিদাই (Sengoku Jidai) নামে পরিচিত, আর ইয়াসুকে যখন জাপানে পা রাখেন তখন জাপান সেনগোকু জিদাই এর শীর্ষ পর্যায়ে। ১৪৬৭ সালে জাপান অনেক ছোট ছোট স্বাধীন সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত ছিল। তবে, ১৫৭৯ সালের মধ্যে, এই সামন্ত রাজ্যের বেশিরভাগই ওডা নোবুনাগা (Oda Nobunaga) নামক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ডাইমিও (Daimyo) এবং তার ভাসাল টয়োটোমি হিদেওশি (Toyotomi Hideyoshi) জয় করে নেয়। ১৫৮১ সালে ভ্যালিগনানো তার এই আফ্রিকান দাসটিকে, মানে ইয়াসুকে-কে কিয়োটো (Kyoto) নিয়ে আসেন, যা ছিল সেই সময়ে জাপানি সভ্যতার হৃদয় এবং ওডা নোবুনাগার রাজধানী। এই বান্টু ব্যক্তিটি সম্ভবত এত বড় ও ব্যস্ত মহানগর কখনও দেখেননি, তেমনি কিয়োটোর লোকেরাও কখনও তার মতো কাউকে দেখেনি। যখন নগর জুড়ে এই বিশালদেহী কয়লা-রঙের চামরার এই লোকটির গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তখন স্থানীয় কিয়োটোর বাসিন্দারা এতটাই কৌতূহলী হয়ে ওঠে যে তারা জেসুইট চার্চের দরজা ভেঙে ফেলেছিল শুধুমাত্র তাকে দেখার জন্য। খুব দ্রুত এই আফ্রিকানটি স্থানীয় সেলিব্রিটি হয়ে ওঠে, কারণ সাধারণ জনগণ শুধু তার গাঢ় ত্বকেই নয়, তার আকার এবং উচ্চতায়ও বিস্মিত হয়েছিল, কারণ তিনি গড় জাপানি পুরুষের চেয়ে এক ফুট বেশি লম্বা ছিলেন। এই রহস্যময় বিদেশীর ক্রমবর্ধমান খ্যাতি অবশেষে লর্ড নোবুনাগার কৌতূহলকে উদ্দীপ্ত করেছিল, যিনি জেসুইটদেরকে সেই আফ্রিকানকে তার সামনে উপস্থিত করার আদেশ দিয়েছিলেন। তাকে দেখে নোবুনাগা বিস্মিত হন। এই ওয়ারলর্ড বিশ্বাস করতে পারেননি যে এমন একজন মানুষ থাকতে পারে। তিনি ভাবলেন, এই লোকটা আসলে একজন পর্তুগিজ যার ত্বককে কালো কালি দিয়ে রঞ্জিত করা হয়েছে। তাই তিনি এই আফ্রিকানকে কোমর থেকে উপরে পর্যন্ত পোশাক খুলে একে ভালভাবে ঘসে মেজে স্নান করানোর আদেশ দেন। কিন্তু দেখা যায় এর ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই এতটা গাঢ়। এটি উপলব্ধি করার পরে, নোবুনাগা তার প্রতি প্রকৃত আগ্রহ দেখান, এবং তখনই এই আফ্রিকান অবশেষে তার জাপানি নামটি লাভ করেন – ইয়াসুকে।

সামুরাই হওয়ার পথে

শীঘ্রই ইয়াসুকে লর্ড নোবুনাগার কাছে কেবলমাত্র একটি অদ্ভুত বিষয়ের চেয়েও আরও বেশি কিছু হয়ে ওঠে। ডাইমিও (Daimyo) নবুনাগা ইয়াসুকের ব্যক্তিগত সততা এবং শারীরিক দক্ষতাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, ইয়াসুকে দশজন লোকের শক্তি ধারণ করে। ১৫৮১ সালের গ্রীষ্মে, নোবুনাগার এই অদ্ভুত বিদেশীর প্রতি প্রশংসা অনস্বীকার্য হয়ে উঠেছিল এবং তাই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়াসুকে তার সেবায় প্রবেশ করার অনুরোধ করেছিলেন। এখন এটি আনুষ্ঠানিক হয়ে গেল: বিনয়ী বান্টু (Bantu) অরিজিনের এই লোকটি একজন সামুরাই (Samurai) হয়ে উঠলেন। একজন সামুরাই যে সব সুবিধা পেতেন ইয়াসুকে তার সমস্ত সুবিধা লাভ করেন। তাকে একটি জমি এবং তার উপর একটি বাড়ি প্রদান করা হয়েছিল, সেই সাথে দেয়া হয়েছিল জাপানি পোশাক এবং একটি আনুষ্ঠানিক শর্ট কাটানা (Short Katana)। ধারণা করা হয় যে, তাকে বুশিডো কোড (Bushido Code) শেখানো হয়েছিল, এবং একজন সামুরাই হিসাবে কিভাবে যুদ্ধ করতে হয় তা শেখানো হয়েছিল। ইয়াসুকে নোবুনাগার প্রিয়তম দাসদের একজন হয়ে ওঠেন এবং তিনি তার সঙ্গে আহার করার বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত কয়েকজনের মধ্যে একজন ছিলেন। ইয়াসুকে তার নতুন প্রভুর সাথে শীঘ্রই সমস্ত জাপান জয় করার মিশনে যোগ দেন। তিনি সম্ভবত তেনমোকুজান (Tenmokuzan) যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, এবং নোবুনাগার বাহিনীর সাথে মিলে তিনি তীব্রভাবে যুদ্ধ করে তাকেদা ক্লানকে (Takeda Clan) ধ্বংস করেছিলেন। এটি ছিল একটি প্রথম ঘটনা যেখানে কোনো জাপানি যোদ্ধা আফ্রিকানের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, এবং নোবুনাগার নতুন সৈনিকের শক্তি এবং নৃশংসতা ছিল দেখার মতো। যুদ্ধে পর ইয়াসুকে নোবুনাগার পাশে চড়ে তার সদ্য বিজিত জমি পরিদর্শন করেন, এবং তখন এই বিদেশী জায়ান্টকে তাদের প্রভুর পাশে এমন মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে দেখে অনেকের মধ্যে কী বিস্ময় ছিল তা কল্পনা করা যায়। কিয়োটোতে ফিরে আসার পথে তিনি নোবুনাগার অনেক শক্তিশালী মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেছিলেন, যাদের নাম বর্তমানেও অনেক শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। এদের মধ্যে একজন লোক ছিলেন টোকুগাওয়া ইয়েয়াসু (Tokugawa Ieyasu), যিনি পরবর্তীতে একটা সময়ে সমস্ত জাপান জয় করবেন।

ইয়াসুকে এবং নোবুনাগা

১৫৮২ সালের জুনে, ইয়াসুকে এবং নোবুনাগা কিয়োটোতে ফিরে আসেন। নোবুনাগা তার সেনাবাহিনী বিভক্ত করেন এবং তাদের মোরি (Mori), উয়েসেগি (Uesegi) এবং হোজো (Hojo) ক্লানের ভূমি জয় করতে পাঠান। তিনি হোন্নো-জি (Honno-Ji) বৌদ্ধ মন্দিরে বিশ্রাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে অবসর গ্রহণ করেন। শুধুমাত্র শিল্পী, ব্যবসায়ী, কবি এবং দাসদের দ্বারা বেষ্টিত নোবুনাগা প্রায় অরক্ষিত ছিলেন। তবে ইয়াসুকে তার পাশে ছিলেন। শীঘ্রই বিপর্যয় আসতে চলেছিল। একটি শত্রু বাহিনী মন্দিরটিকে ঘিরে রেখেছিল। এটি সম্পূর্ণ বিস্ময়কর ছিল, কারণ নোবুনাগার কোনো শত্রুরই জানার কথা ছিল না যে তিনি সেখানে ছিলেন। নোবুনাগার সবচেয়ে বিশ্বাসী জেনারেলদের একজন আকেচি মিৎসুহিদে (Akechi Mitsuhide) তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তিনি জানতেন যে নোবুনাগা অবস্থা তখন দুর্বল ছিল, আর তাই যে মন্দিরে তিনি অবস্থান করছিলেন মিৎসুহিদে তা অবরোধ করেন। বিশ্বাসঘাতক মিৎসুহিদে বিশাল সংখ্যায় মন্দিরটি আক্রমণ করেন। ইয়াসুকে বাইরে ছুটে যান, কিছু দেহরক্ষী এবং দাসদের সাথে মিলে একটি মরিয়া যুদ্ধ করেন। তিনি সাহসীভাবে লড়াই করেছিলেন, কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। বিশৃঙ্খলা এবং আগুনের মধ্যে, নোবুনাগাকে সম্মানজনক আত্মহত্যা (Seppuku) করতে হয়েছিল, যাতে তিনি ধরা না পড়েন। কোনোভাবে, ইয়াসুকে আকেচির হাত থেকে পালাতে সক্ষম হন। তিনি একটি ঘোড়া খুঁজে পান এবং তাড়াহুড়ো করে নিঝো দুর্গে (Nijo Castle) যান, যেখানে নোবুনাগার পুত্র, ওডা নোবুতাদা (Oda Nobutada) তার বাহিনীকে সমবেত করেছিলেন। প্রভুকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হবার পর ইয়াসুকে এখন প্রভুর পুত্রকে রক্ষা করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। তিনি সময়মতো পৌঁছান, যুবক প্রভুর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, কিন্তু ঠিক তখনই বিশ্বাসঘাতক মিৎসুহিদে তাদের আক্রমণ করেন। ইয়াসুকে যুদ্ধে তীব্রভাবে লড়াই করেছিলেন, মিৎসুহিদের সামুরাইদের সঙ্গে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে অনেককে হত্যা করেছিলেন, কিন্তু আবারও এটি কোনো কাজে আসেনি। ওডা বাহিনী পরাজিত হয়েছিল, ওডা নোবুতাদা ধরা পড়েছিলেন ও সেপুকু বা সম্মানজনক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ইয়াসুকেও ধরা পড়েন, এবং মিৎসুহিদে তাকে সামনে উপস্থিত করেন। বিশ্বাসঘাতক জেনারেল এই কৃষ্ণাঙ্গ লোকটির প্রতি কেবল অবজ্ঞা প্রকাশ করেছিলেন, তাকে অমানবিক, প্রায় একটি জন্তুর মতো বলে ঘোষণা করেন। ইয়াসুকে তিনি জাপানি ছিলেন না বলে মিৎসুহিদে ঘোষণা করেন যে তাকে মারা যাবেন না, এবং পরিবর্তে তাকে কিয়োটোতে খ্রিস্টান চার্চে পাঠানো হয়েছিল।

পরবর্তী ঘটনা

আর তাই, প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একজন মহৎ সামুরাই হিসাবে সেবা করার পর ইয়াসুকে তার জেসুইট প্রভুদের কাছে ফিরে আসেন। কথিত আছে, খ্রিস্টানরা তার সঙ্গে পুনর্মিলন করতে পেরে ঈশ্বরের প্রশংসা করেছিল। হয়তো ইয়াসুকের গল্পের একটি সুখী সমাপ্তি ছিল, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমরা তা জানি না। এই ঘটনার পর তার অস্তিত্বের আর কোন রেকর্ড নেই, আর আমরা জানি না তার চূড়ান্ত পরিণতি কী হয়েছিল, তিনি জেসুইটদের সঙ্গে জাপান ত্যাগ করেছিলেন, সেখানেই মারা গিয়েছিলেন। তবে এটা বলতেই হয় যে, পূর্ব আফ্রিকার উপকূলে জীবনারম্ভ থেকে কিয়োটোর রাজসভার মহিমায়, দাস থেকে সামুরাই হওয়া পর্যন্ত ইয়াসুকের উত্থান একটি অনন্য ঘটনা। তিনি হয়তো দীর্ঘদিন ধরে সামুরাই ছিলেন না, এবং জাপানি জাতির উপর তার প্রভাব তার পর আসা অন্যান্য বিদেশীদের মতো তেমন বেশি, কিন্তু তার গল্প বিভিন্ন মিডিয়ার প্রেরণা হিসাবে কাজ করে, যেমন এনিমে “আফ্রো সামুরাই” (Afro Samurai) এবং গেমস “নিওহ” (Nioh)। ইয়াসুকে নিজের জন্যই হোক বা ইয়াসুকে যা প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সেটার জন্যই হোক, তিনি আজ অনেক জাপানি লোকেদের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছেন, এবং এটি একটি চমৎকার গল্প যা ইয়াসুকের মত সৌভাগ্য-বঞ্চিত লোকেদেরকে প্রেরণা প্রদান করতে পারে।

তথ্যসূত্র

  1. Lockley, T., & Girard, G. (2019). African Samurai: The True Story of Yasuke, a Legendary Black Warrior in Feudal Japan. Hachette Books. ISBN 075157158X, 9780751571585.
  2. Stanislaus, W. A. (2021). The Significance of Yasuke, the Black Samurai. Journal of African and Asian Studies. Link to article
  3. Winkler, L. (2024). Yasuke – The African Samurai. HeritageDaily. Link to article
  4. Smithsonian Learning Lab. (n.d.). Yasuke: The African Samurai. Learning Lab Collection
  5. NomadTreneur. (2023). The Untold Tale of Yasuke: The African Samurai in Japan. Link to article

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.