বিশ্বের খবরাখবর : জাপান

১৫ মে, ২০২৪ : জাপান কি অবশেষে অভিবাসনকে আলিঙ্গন করছে?

কূটনৈতিক ঝড়: বাইডেনের মন্তব্য: এই মাসের শুরুতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি কূটনৈতিক ঝড় সৃষ্টি করেন যখন তিনি দাবি করেন যে, আমেরিকার অর্থনীতি জাপানের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ আমেরিকা অভিবাসীদের স্বাগত জানাচ্ছে, যখন জাপান, বাইডেনের ভাষায়, “বিদেশি-ভীত” (xenophobic)। আশ্চর্যজনকভাবে, জাপান, যারা দীর্ঘদিনের মার্কিন মিত্র, এই মন্তব্যকে দুঃখজনক এবং অসত্য বলে বর্ণনা করে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: জাপানের অভিবাসন সন্দেহবাদিতা (Migrant Skepticism): বাইডেনের মন্তব্যের পক্ষে বিচার করা যাক, জাপান যে অনন্যভাবে অভিবাসন-সন্দেহবাদী (migrant-skeptic) তা জনপ্রিয় এবং কিছুটা সত্য। ঐতিহাসিকভাবে, জাপানে অভিবাসনের হার বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশের চেয়ে অনেক কম, এবং এটি তাদের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থবিরতা বা সাথে থাকা জনসংখ্যাগত সংকট সমাধানে সাহায্য করেনি। তবে, গত কয়েক বছরে বিষয়গুলি পরিবর্তিত হয়েছে, এবং জাপানি রাজনীতিবিদরা দৃঢ়ভাবে “অভিবাসন” (immigration) শব্দটি ব্যবহার না করলেও, জাপান নীরবে অভিবাসনের প্রতি অনেক বেশি ইতিবাচক হয়ে উঠেছে।

সাম্প্রতিক অভিবাসন নীতির পরিবর্তন: তাহলে, এই প্রবন্ধে আমরা জাপানের অভিবাসন নীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি, পরিবর্তনের পেছনের কারণগুলি, এবং এই হৃদয়ের পরিবর্তনটি জাপানের অর্থনৈতিক বা জনসংখ্যাগত সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারবে কিনা তা দেখব।

জাপানের কঠোর অভিবাসন নিয়ম: আসুন একটু ইতিহাস দিয়ে শুরু করি। মূলত জাপান সরকার এবং জনগণ জাপানকে একটি জাতিগতভাবে অভিন্ন জাতি-রাষ্ট্র (ethnically homogeneous nation-state) হিসাবে বিবেচনা করে। জাপানে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর অভিবাসন নিয়ম ছিল, বিশেষ করে স্থায়ী বাসস্থান বা নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে। খুব সম্প্রতি পর্যন্ত, জাপানের মোট বিদেশি জনসংখ্যা পুরো জনসংখ্যার ২% এরও কম ছিল, এবং এদের বেশিরভাগই হয় নিক্কেই অথবা জাইনিচি। নিক্কেইরা (Nikkei) হলো দক্ষিণ আমেরিকা, সাধারণত ব্রাজিল থেকে আসা জাতিগত জাপানি অভিবাসী, আর জাইনিচিরা (Zainichi) হলো কোরিয়ান বংশোদ্ভূত লোক যারা প্রধানত জাপানে জন্মগ্রহণ করেছে এবং শুধুমাত্র জাপানি ভাষায় কথা বলে কিন্তু কোরিয়ান পাসপোর্ট বহন করে কারণ জাপানে জন্মগত নাগরিকত্ব নেই এবং নাগরিকত্বের প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল এবং কঠিন)। প্রসঙ্গত, এটি গ্লোবাল গড় ৩.৫% এর প্রায় অর্ধেক, ওইসিডি গড় ৭% এর তুলনায় অনেক কম, এবং ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায় অনেক পিছনে, যেমন জার্মানি, যেখানে আজ মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫% বিদেশি।

শরণার্থী নীতি ও জনসংখ্যাগত সংকট: জাপানও উল্লেখযোগ্যভাবে কম শরণার্থী গ্রহণ করে, এবং যে কোন বছরে শরণার্থী হিসাবে স্বীকৃত আশ্রয়প্রার্থীদের অনুপাত সাধারণত ১% এরও কম। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে, জাপান মাত্র ৪৪ জন শরণার্থী গ্রহণ করে, যাদের সংখ্যা মোট আবেদনকারীদের মাত্র ০.৪% ছিল। প্রসঙ্গত, সেই একই বছরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৪৫৫,০০০ শরণার্থী গ্রহণ করে এবং জার্মানি প্রায় ৫৫,০০০ শরণার্থী গ্রহণ করে, যেগুলোর স্বীকৃতির হার ছিল যথাক্রমে মোট শরণার্থীর ৩০% এবং ২৬%।

অর্থনৈতিক বুম এবং শ্রমের অভাব: এখন স্পষ্টতই জাপানের এই নীতি সম্প্রতি চাপের শিকার হয়েছে, আর সেটা জাপানের জনসংখ্যাগত সংকটের (demographic crisis) কারণে। তবে তার আগেই, যখন জাপানের অর্থনীতি ৮০ এর দশকে বুম করছিল, জাপানের ব্যবসায়িক নেতারা শ্রমের অভাব পূরণের জন্য সরকারকে আরও বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন, বিশেষ করে তথাকথিত 3K কাজগুলিতে, যে কাজগুলোর মূলত কম মজুরির, কঠিন, এবং যেগুলোকে বেশিরভাগ জাপানিরা নিচু মনে করত। অন্যদিকে স্বল্পমেয়াদী দক্ষ শ্রম অভিবাসীদের জন্য (যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) জাপানের নীতি তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক বা ওয়েলকামিং ছিল, এবং এখনও আছে। কিন্তু জাপান সরকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অদক্ষ শ্রমিক গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিল, কারণ তাদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মতো পরিস্থিতি আবার ঘটতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ইউরোপে ব্যাপক শ্রমের অভাব দেখা দেয়, এবং সেই অভাব পূরণের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি শ্রমিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রাথমিকভাবে এই শ্রমিকদের অস্থায়ীভাবে থাকার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরে দেখা যায় যে তাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে থেকে যান এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এতে করে ইউরোপের সমাজে বেশ কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসে, যা অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা ও সমস্যার সৃষ্টি করে। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, জাপান সরকার অদক্ষ শ্রমিকদের প্রবেশে কঠোর নিয়মাবলী আরোপ করে, যাতে তারা নিশ্চিত করতে পারে যে এই শ্রমিকরা নির্দিষ্ট সময় শেষে ফিরে যাবেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য জাপানে থাকার কোন সুযোগ পাবেন না। এভাবেই তারা তাদের জনসংখ্যাগত এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করে।

বিতর্ক এবং বিধিনিষেধের শিথিলকরণ: যদিও ৯০ এর দশকে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি সংশোধনের মাধ্যমে এবং ১৯৯৩ সালে তথাকথিত টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম চালু করার মাধ্যমে অভিবাসন আইনের কিছুটা শিথিলকরণ ঘটেছিল, তবুও পরিসংখ্যানের খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি এবং মোট শ্রম শক্তিতে বিদেশি শ্রমিকের শেয়ার কখনই ৩% এর উপরে যায়নি। এর উপরে, টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কের পয়েন্ট হয়ে ওঠে। অস্থায়ী শ্রমিকদের সাথে খুব খারাপভাবে আচরণ করা হত, এবং ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র অধিদপ্তর (US State Department) সতর্ক করেছিল যে এটি মানব পাচারের একটি রূপ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। এই ইন্টার্নদের সুরক্ষার অভাবের পেছনে আংশিকভাবে যে কারণটি কাজ করেছিল তা ছিল, জাপান সরকার চায়নি অতিথি শ্রমিকরা স্থায়ীভাবে থেকে যাক, এবং তাদের ৯৭% তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে চলে গিয়েছিল।

জনসংখ্যাগত সংকট ও নীতির পরিবর্তন: তবে, গত কয়েক বছরে, জাপানের জনসংখ্যাগত সংকট শুরু হয়েছে এবং সরকার নীরবে তার অভিবাসন নিয়ম শিথিল করে চলেছে। জাপানের উর্বরতার হার—অর্থাৎ, প্রতিটি নারীর গড় সন্তানের সংখ্যা—৭০ এর দশকে ২.১ এর রিপ্লেসমেন্ট রেটের নিচে নেমে গিয়েছিল এবং আজ প্রায় ১.২ তে নেমে এসেছে। কিছু খুব উদার পরিবার-বান্ধব নীতির পরেও জাপানের শ্রম শক্তি ৯০ এর দশকে সঙ্কুচিত হতে শুরু করে, এবং ২০০০ এর দশকে জাপানের মোট জনসংখ্যা সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। জাপান তার শ্রমের অভাব সাময়িকভাবে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল নারীদেরকে শ্রম শক্তিতে নিয়ে এসে, কিন্তু এটি সর্বদাই একটি সাময়িক ব্যবস্থা ছিল, এবং ২০২২ সালে, শ্রম শক্তি আবার সঙ্কুচিত হতে শুরু করে।

শ্রমের অভাব (Labor Shortages) ও উদারীকরণ অভিবাসন নীতি: এটি জাপানের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে উঠেছে। গত এক দশকের বেশিরভাগ সময় ধরে জাপানের বেকারত্বের হার ৩% এর নিচে ছিল, এবং ৮৬% জাপানি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মী নিয়োগ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে জানিয়েছে। সমস্যা আরও তীব্র হওয়ার সাথে সাথে জাপান সরকার নীরবে এবং ধীরে ধীরে তার শ্রম অভিবাসন নীতির উদারীকরণ করেছে। ২০০০ এর দশকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামটিকে আরও শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রি অন্তর্ভুক্ত করার সম্প্রসারিত করা হয়েছিল, এবং সর্বাধিক থাকার সময় ৩ বছর থেকে ৫ বছরে বাড়ানো হয়েছিল। তবে, বড় পরিবর্তনটি ঘটে ২০১৯ সালে যখন জাপান সরকার নীরবে নির্দিষ্ট দক্ষ শ্রমিকদের জন্য একটি নতুন ভিসা তৈরি করে, যা এসএসডব্লিউ১ ভিসা নামে পরিচিত। মূলত, এটি বিদেশি নাগরিকদের যাদের টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে তাদের ১২টি নির্দিষ্ট খাতে (যা শ্রমের অভাবের ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে) জাপানে ৫ বছর পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দেয়

বিদেশি জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং নতুন ভিসা: জাপানের বিদেশি জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ২০১০-এর দশকের মধ্যভাগের এদের সংখ্যা ছিল ২ মিলিয়ন, আর মহামারীর আগে এই সংখ্যা প্রায় ৩ মিলিয়নে পউছে। তারপর, গত বছর, যখন অনেকের এসএসডব্লিউ১ (SSW1) ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছিল, তখন জাপানি ব্যবসায়ীরা সরকারকে জানায় যে তারা এই শ্রমিকদের প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হবে না, তাই সরকার সবচেয়ে বেশি চাহিদার এসএসডব্লিউ১ শ্রমিকদের জন্য একটি নতুন এসএসডব্লিউ২ ভিসা চালু করে। এখন এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, এই এসএসডব্লিউ২ (SSW2) শ্রমিকরা তাদের পরিবারকে জাপানে নিয়ে আসতে পারে, এবং এটি যে কোন সংখ্যকবার পুনর্নবীকরণ করা যায়, অর্থাৎ, এসএসডব্লিউ২ শ্রমিকরা স্থায়ীভাবে জাপানে থাকতে পারে। মূলত, এসএসডব্লিউ২ সীমিত ছিল নির্মাণ এবং জাহাজ নির্মাণ খাতে, কিন্তু জুনে, সরকার এটিকে আরও নয়টি অন্যান্য খাতে প্রসারিত করতে সম্মত হয়, যেগুলোর মধ্যে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন এমন সেবা খাত (hard-to-define service sector) অন্তর্ভুক্ত, এবং তারপরে তার বার্ষিক ভিসার সীমা ১৬০,০০০-কে দ্বিগুণ করা হয়।

স্থায়ী বাসস্থান এবং জনমতের ধারণা: এই প্রথমবারের মতো জাপান শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী বাসস্থান অনুমোদন করেছে, এবং এটি জাপানে বৃহত্তর স্কেলে অভিবাসনের দরজা খুলে দিচ্ছে। এখন এর পুরোটাই খুব নীরবে করা হয়েছে, এবং জাপানি কর্মকর্তারা মূলত কখনই “অভিবাসন” শব্দটি ব্যবহার করেন না, পরিবর্তে তারা সবাই লেবর বা শ্রম এর কথা বলছে। সম্ভবত এই অভিবাসনের ক্ষেত্রে জনমতের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তারা উদ্বিগ্ন, তাই তাদের এরকম আচরণ। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, জরিপগুলি ইঙ্গিত দেয় যে তাদের উদ্বেগগুলি ভিত্তিহীন হতে পারে। বেশিরভাগ জাপানি তাদের জনসংখ্যাগত সমস্যা সম্পর্কে খুব সচেতন এবং তাই আরও বেশি অভিবাসী-পন্থী হয়ে উঠেছে। এটা ঠিক যে, জাপানিদের সাথে অভিবাসী গ্রহণ করা দেশগুলোর লোকেদের অভিবাসন নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির তুলনাটা করা উচিৎ না, কারণ জাপানিরা এখনও অভিবাসনের নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে অভিজ্ঞ নয়। কিন্তু যেসব জরিপ করা হয়েছে সেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে জাপানি জনগণ এখন পুরো বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিবাসীপন্থী, এবং গত বছরের শেষের একটি জরিপে দেখা গেছে যে ৮৬% জাপানি পৌরসভা আরও বিদেশি শ্রমিক চায়।

বড় প্রশ্ন: এটি কি অনেক দেরি হয়ে গেছে?: আসল প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন এই অভিবাসন পলিসি জাপানের অর্থনীতিকে আসলেই রক্ষা করতে পারবে, নাকি খুব দেরি হয়ে গেছে। জাপানের জনসংখ্যাগত সংকট ইতিমধ্যেই বেশ ভয়াবহ, এবং দুর্বল ইয়েন এবং কয়েক দশকের অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে, জাপান অভিবাসীদের জন্য আর আগের মত অত আকর্ষণীয় গন্তব্য নয়। তবে সব শেষে বলতে হয়, এটা বিভিন্ন বিষয় যেমন অর্থনীতি, বাণিজ্যের ধরণ, জনমত, বিভিন্ন জনসংখ্যাগত বিষয়, ও অবশ্যই এআই ও রোবটিক্সের মত নতুন টেকনোলজিকাল রেভোল্যুশনের মত বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করবে। দেখা যাক…

তথ্যসূত্র : 

  1. https://www.japantimes.co.jp/news/2024/05/04/japan/politics/tokyo-biden-xenophobia-response/
  2. https://eastasiaforum.org/2023/11/23/why-wont-kishida-adopt-a-formal-immigration-policy/
  3. https://ceias.eu/zainichi-koreans-in-japan-exploring-the-ethnic-minoritys-challenges/
  4. https://www.noahpinion.blog/p/japan-is-not-a-xenophobic-country
  5. https://www.dw.com/en/germany-immigrants-made-up-over-18-of-2022-population/a-65383249
  6. https://www.nippon.com/en/in-depth/d00920/
  7. https://www.jcer.or.jp/english/historical-background-of-the-japanese-restrictive-immigration-policy
  8. https://thediplomat.com/2021/03/japans-changing-immigration-and-refugee-policy
  9. https://www.statista.com/statistics/612396/japan-total-labor-force/
  10. https://www.oecd.org/els/emp/1941679.pdf
  11. https://www.statista.com/statistics/263700/unemployment-rate-in-japan/
  12. https://www.japantimes.co.jp/news/2023/09/17/japan/society/japan-foreign-workers/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.