বিবর্তন নিয়ে প্রচলিত ১০টি ভুল ধারনা

truth is not democracy.jpg

জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব হচ্ছে বিবর্তনবাদ। পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ বুঝতেই শুধু নয়- প্রাণের বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী বুঝতেও বিবর্তনবাদ অপরিহার্য। অথচ এই বিবর্তনবাদই হচ্ছে মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী ভূল বোঝা তত্ত্ব। এই ভূল বোঝাবোঝির সিংহভাগই আসে বিবর্তন সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায়। বিবর্তনের বিপক্ষে ১০টি সবচেয়ে বেশিবার ব্যবহৃত হওয়া ভূল ধারণাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করবো আর সেগুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো।

ভুল ধারণা ১ – বিবর্তন শুধু একটা তত্ত্ব

এই মিথ্যাচারটিকে, যদি না সেটা অজ্ঞানতাবশত করা হয়ে থাকে; অনেকেই তর্কে তুলে আনেন। “বিবর্তন ফ্যাক্ট না, এটা একটা থিওরি মাত্র” বলে বোঝাতে চান বিবর্তন বিশ্বাসযোগ্য নয়! বিবর্তন ফ্যাক্ট এবং থিওরি দুটোই, নির্ভর করে আপনি কী নিয়ে কথা বলছেন তার।

সকল প্রাণী সরলতর প্রাণী থেকে কয়েক মিলিয়ন বছরে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান অবস্থানে এসেছে। সেই সরলতর প্রাণীকে বলা হয় LUCA (Last Universal Common Ancestor)- এটা একটা বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট। এই ফ্যাক্টের সত্যতা পাওয়া যায় ফসিলে, ডিএনএতে আর জৈবভূগোলে। আপনি ফসিল খুঁজতে যত গভীরে যাবেন তত সরলতর প্রাণীর ফসিল পাবেন। সরলতর প্রাণীদের ভীড়ে আপনি জটিল গঠনের ফসিল পাবেন না, কখনোই। একই গভীরতায় পাওয়া ফসিলরা একই রকম গঠনের হবে, জটিলতার দিক থেকে।

ডিএনএর গঠনও প্রচ্ছন্নভাবে বিবর্তনের প্রমাণ দিয়ে যায়। শিম্পাঞ্জীর সাথে মানুষের কার্যকর জীন ৯৯.৬% মিলে যায়। ইদুরের সাথে ৮০% মিলে যায়। এই শতকরা অনুপাত আবার একক পূর্বপুরুষের জীবনকালের সাথে সম্পর্কিত। এগুলো বিবর্তনকে ফ্যাক্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এবার দেখা যাক থিওরির অংশটা।

থিওরি হচ্ছে যা দিয়ে ফ্যাক্টকে বিশ্লেষণ করা হয়। The Theory of Evolution by the means of Natural Selection”, থিওরিটা হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের অংশটা।

অন্যভাবে বলতে গেলে, বিবর্তন হচ্ছে ফ্যাক্ট, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে সেটা ঘটে এটা হচ্ছে থিওরি। আরো কিছু থিওরি যদি আমরা দেখি তবে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে- The theory of universal gravity, The germ theory, The cell theory, The heliocentric theory, যেগুলো সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক সম্মানপ্রাপ্ত সত্য সেগুলোকেও থিওরিই বলা হয়।

চার্লস ডারউইন আর আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের আগেও অনেক প্রকৃতিবাদী-জীববিজ্ঞানী-দার্শনিক বিবর্তনের কথা বলে গেছেন। তারা যেটা পারেন নি সেটা হচ্ছে “কেনো” প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া। ডারউইন আর ওয়ালেস “কেনো” আর “কিভাবে” ব্যাখা করতে পেরেছেন। আর সেটাই তাদের অসাধারণ আর ক্ষেত্রবিশেষে ঘৃনার পাত্র করে তুলেছে।

ভুল ধারণা ২ – বানর/এপ থেকে মানুষের বিবর্তন হয়েছে

“যদি মানুষের বিবর্তন বানর/এপ থেকে হয় তাহলে এখনো কেনো বানর/এপ আছে?” প্রশ্নটি হতাশাজনক ভাবে ভুল।

মানুষ বানর বা এপ থেকে বিবর্তিত হয় নি। মানুষ এবং বানর/এপের একক একটা পূর্বপুরুষ ছিল। যদি সময় যাত্রা করে আমরা কয়েক মিলিয়ন বছর অতীতে যেতে পারি তবে আমরা আমাদের এপ-সদৃশ পূর্বপুরুষদের দেখতে পাবো। এদের জনসংখ্যা কয়েকটি ধারায় বিভক্ত হয়েছিল আর বিবর্তনের ভিন্ন ভিন্ন পথে যাত্রা শুরু করেছিল। একটা ধারায় আসা সর্বশেষ প্রাণী আমরা, আরেকটা ধারার সর্বশেষ প্রাণী শিম্পাঞ্জী। (সর্বশেষ বলতে সবচেয়ে নতুন প্রাণী বোঝানো হয়েছে- ধারা এখানেই শেষ হয়ে যায় নি। বিস্তারিত পাবেন “ভুল ধারনা ৭” এ)

তো শিম্পাঞ্জী আর মানুষের একক প্র-প্র-প্র-প্র…পিতামাতারা ৪-৬ মিলিয়ন বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছেন। এর পরে আসা মানবসদৃশ প্রাণীদের ১৪টির মতো ফসিল পাওয়া গেছে যেগুলো “ভুল ধারণা ৪”এ জানতে পারবেন।

 

ভুল ধারণা ৩ – তাপগতিবিদ্যার ২য় সুত্র বিবর্তনবাদের সাথে সাংঘর্ষিক

প্রায়ই যে কথাটা শোনা যায় সেটা হচ্ছে- “তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্র বিবর্তনকে সমর্থন করে না”। আসুন দেখি তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্র কি বলে-

“কোনো সিস্টেম নিন্মশক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে যেতে পারবে না, যদি না বাইরে থেকে শক্তির প্রবেশ না হয়।” অন্য ভাষায়- “সিস্টেমের disorder বাড়তেই থাকবে যদি না বাইরে থেকে order সরবরাহ করা হয়।”

ধরুন আপনি মইয়ের চড়ে মাটি থেকে ৫ফুট উচ্চতায় দাড়িয়ে আছেন, আপনার বন্ধু নিচে মাটিতে দাড়িয়ে আছেন। একজন পদার্থবিদের কাছে আপনার বন্ধুর চেয়ে আপনার potential energy বেশী হওয়ায় আপনি বেশী “ordered”। আপনার বন্ধুটির এনট্রপি (শক্তি রূপান্তরের অক্ষমতা বা অসম্ভাব্যতা বা শক্তির অপ্রাপ্যতা) আপনার চাইতে বেশী।

লক্ষ্য করুন- তাপগতিবিদ্যার ২য় সুত্রে কম শক্তিস্তর থেকে বেশী শক্তিস্তরে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ নাই, তবে শর্ত একটাই- বাইরে থেকে শক্তির সরবরাহ আসতে হবে। নিচে দাড়ানো আপনার বন্ধুটি মই চড়ে উপরের শক্তিস্তরে উঠার পথে কোনো বাধা নাই, তবে তাকে তার মাংসপেশীর শক্তি ক্ষয় করতে হবে। অন্য কথায়, শক্তি সরবরাহ করতে হবে।

আরেকভাবে দেখা যাক- বদ্ধ সিস্টেম- যেখানে বাইরে থেকে শক্তি প্রবেশ করানো যায় না, সেখানে এনট্রপির পরিবর্তন অসম্ভব। খোলা সিস্টেমে এনট্রপি বাইরে থেকে শক্তি নিয়ে পরিবর্তিত হতে পারে।

এবার ২য় সুত্রকে বিবর্তনের সাথে মিলিয়ে দেখা যাক। পৃথিবী খোলা সিস্টেম- নিকটবর্তী শক্তির আধার হচ্ছে সূর্য, যেখান থেকে আমরা প্রতিনিয়ত শক্তি পাচ্ছি। সূর্য ছাড়া প্রাণ অসম্ভব। সূর্যের তাপশক্তি ব্যবহার করে প্রাণীরা খাদ্য তৈরি করছে। সুতরাং তাপগতিবিদ্যার ২য় সুত্রের সাথে বিবর্তনবাদের কোন সংঘর্ষ নাই, বরং বিবর্তনবাদ তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্র মেনেই চলছে।

ভুল ধারণা ৪ – মিসিং লিংক নাই

Odontochelys একটি মধ্যবর্তি প্রাণীর ফসিল যেটা কচ্ছপ আর গিরগিটির মাঝামাঝি একটি প্রাণী ছিল। ছবিতে আমরা একটা গিরগিটির মত লম্বা লেজ আর কচ্ছপের মত খোলস দেখতে পাচ্ছি। 4.jpg

মিসিং লিংকগুলো আর মিসিং নয়, বিজ্ঞানীরা শত শত ফসিল পেয়েছেন যেগুলো একই সাথে দুটো প্রাণীর বৈশিষ্ট্য বহন করে। উদাহরণস্বরূপ- তিমি। স্তন্যপায়ী হয়েও তিমি পানিতে বেঁচে আছে মাছের মতো। তিমির কংকালে পায়ের হাড়গুলো এখনো বিদ্যমান, যা প্রমাণ করে তিমি বা তার কোনো পূর্বপুরুষ স্থলজ প্রাণী ছিল।

এছাড়াও Archaeopteryx, Confuciusornis, আর Jeholornis পাখি আর সরীসৃপ মধ্যবর্তী প্রাণীর ফসিল। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এই ফসিলগুলো প্রমাণ করে বিবর্তনবাদের সত্যতা। সৃষ্টিতত্ত্ববিদেরা এগুলোকে অস্বীকার করেন, তারা বলেন মধ্যবর্তী ফসিল বলে কিছু নাই, তবে তারা মিসিং লিংক দিয়ে বিবর্তনকে মিথ্যা প্রমাণ করতে চান। ফসিলের প্রমাণ দেখালেও তারা অস্বীকার করেন।

এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে এমন মানবসদৃশ প্রাণীর ফসিলগুলো হচ্ছে-

Sahelanthropus tchadensis

Ardipithecus ramidus

Australopithecus anamensis

Australopithecus afarensis

Kenyanthropus platyops

Australopithecus africanus

Australopithecus garhi

Australopithecus sediba

Australopithecus aethiopicus

Australopithecus robustus

Australopithecus boisei 

Homo habilis 

Homo georgicus 

Homo erectus 

Homo ergaster 

Homo antecessor 

Homo heidelbergensis 

Homo neanderthalensis 

Homo floresiensis 

45.jpg

ভুল ধারণা ৫- বিবর্তন বিজ্ঞান নয়, কারণ এটা প্রত্যক্ষ বা পরীক্ষা করা যায় না

ক্ষুদ্রতর পরিসরে বিবর্তন বহুবার প্রত্যক্ষ করা হয়েছে। ব্যাকটেরিয়ারা এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, বিজ্ঞানীরা সেটা প্রতিনিয়ত দেখে নতুন এন্টিবায়োটিক বানাচ্ছেন। গ্রান্ট আর গ্রান্টের করা ২০০২ সালের পরীক্ষায় আমরা দেখেছি খরার কারণে কিভাবে গ্যালাপাগোসের ফিঞ্চ পাখিদের ঠোঁটের পরিবর্তন হয়েছে।

যাই হোক- যখন কেউ এই দাবি করেন তখন তারা বোঝান দীর্ঘ পরিসরে বিবর্তন প্রত্যক্ষ করার কথা। তারা বলেন “মাইক্রোইভোলিউশন হতেই পারে, তবে সরীসৃপ কিভাবে মোরগে পরিণত হয় আমরা সেটা দেখতে চাই।”

প্রথমত- মাইক্রোইভুলূ্যশন আর ম্যাক্রোইভুলূ্যশনের মাঝে পার্থক্য খুব বেশী নয়। ক্ষুদ্র পরিসরে বিবর্তন হতে পারলে বৃহৎ পরিসরেও হতে পারে। অনেকগুলো মাইক্রোইভোলিউশন (মিউটেশন) মিলেই ম্যাক্রোইভোলিউশন হয়।

আর বিজ্ঞান মানেই যে প্রত্যক্ষ করতে হবে সেটা কিন্তু না। আপেক্ষিকতাবাদের প্রতিপাদ্য সময়কালের বক্রতা প্রত্যক্ষ করা আমাদের মত ত্রিমাত্রিক প্রাণীদের পক্ষে অসম্ভব, কিন্তু আমরা সময়কালের বক্রতার প্রমাণ ঠিকই বের করে নিয়েছি। বিজ্ঞানীরা তথ্য ধরে আগান, গোয়েন্দাদের মতো সূক্ষ প্রমাণ জড়ো করে বড় বড় রহস্য সমাধান করেন তাঁরা। বিজ্ঞান সবসময় প্রত্যক্ষ প্রমাণের উপর নির্ভর করে না।

বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা তথ্য-প্রমাণ জড়ো করে করে বলতে পারেন- মোরগ সরীসৃপ থেকে বিবর্তিত হয়েছে। ফসিল-ডিএনএ  ইত্যাদি তথ্য বিচার বিশ্লেষন করে তাঁরা আমাদের দেখান এটাই সত্য। তাঁরা বলেন- “পাখিরা যদি সরীসৃপ থেকে বিবর্তিত হয়ে থাকে তবে পাখিদের ডিএনএ সরীসৃপদের সাথে বেশী মিলবে।” পরে সেটার প্রমাণ হাজির করার পর তাঁরা উপসংহার টানেন। এটাকেই বলে scientific method!

ভুল ধারণা ৬- একক প্রাণীর বিবর্তন

প্রজাতির বিবর্তন হয়, একক প্রাণীর নয়। বিবর্তন হল নির্দিষ্ট সময়ে একটা প্রজাতির জীনগত গঠনে যে পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং, যেহেতু কোন একক প্রাণী তার জীনগত কাঠামোতে কোন পরিবর্তন আনতে পারে না, তার একক বিবর্তন সম্ভব নয়। যেমন, যদি কোন খরার সময় শুধুমাত্র বড় বীজসম্পন্ন গাছগুলো ছাড়া সকল বীজসম্পন্ন গাছ ধ্বংস হয়ে যায়, ছোট ঠোঁটের কোন পাখি ঐ খরার আদলে বিবর্তিত হতে পারবে না। অন্য ভাষায়, এটি বড় বীজ খাওয়ার জন্য তার জীনগত কাঠামোর পরিবর্তন করে তার ঠোঁটের আকার-আকৃতি বদলে ফেলতে পারবে না। জীববিজ্ঞানের ভাষায়, এটি অভিযোজিত হতে পারবে না। ফলাফলস্বরূপ, বড় ঠোঁটের পাখিগুলোর তুলনায় ছোট ঠোঁটের পাখিগুলো কম খাবার পাবে এবং কম সন্তানের জন্ম দেবে। এর মানে হলো, পরবর্তী প্রজন্মে বড় ঠোঁটের জন্য জীন বেশি থাকবে। সুতরাং সম্পূর্ণ প্রজাতির খরার সাথে খাপ খাওয়াতে বিবর্তিত এবং অভিযোজিত হবে, কোনো একক প্রাণী নয়।

ভুল ধারণা ৭- বিবর্তনের কোন লক্ষ্য আছে

মানুষ প্রায়ই বিবর্তন সম্পর্কে বলে যে, “কিছু সাধন করে ফেলায় চেষ্টারত”; নয়তো তারা প্রাইমেট এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের অন্য প্রাণীদের তুলনায় “বেশি বিবর্তিত” বলে আখ্যা দেয়। কিন্তু এ ধরণের বিবৃতিগুলো প্রবল সমস্যাযুক্ত কারণ তারা এটারই পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে বিবর্তনের কোন উদ্দেশ্য আছে, যা সত্য নয়। জীববিজ্ঞানীরা প্রায়ই বলেন যে, “বিবর্তন অন্ধ।” বিবর্তন যা করে তা হলো কোন জীব প্রজাতিকে তার বর্তমান পরিবেশ এবং জীবনপ্রণালীর সাথে অভিযোজিত করে তোলে। বিবর্তনের কোন উদ্দেশ্য নেই, এবং এটি কোন ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম নয়। সুতরাং, সহস্র প্রজন্মের জন্য নির্বাচিত বৈশিষ্ট্য পরিবেশের এ কোন পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

কারণ, বিবর্তন শুধু জীবকে তার বর্তমান পরিবেশ এবং জীবনপ্রণালীর সাথে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে, যেকোন এক প্রজাতিকে অন্যদের চেয়ে “বেশি বিবর্তিত” বলে আখ্যা দেওয়ার কোন মানে হয় না। যেমন, একটা বানর একটা মাছির চেয়ে বেশি বিবর্তিত নয় যে মাছি বানরটার পায়খানা থেকে  আর্দ্রতা পায়।  বানর অবশ্যই বেশি জটিল, কিন্তু এটি আসলে বেশি বিবর্তিত নয় কারণ বানর এবং মাছি দুজনই তাদের নিজ নিজ জীবনপ্রণালীর সাথে খুব ভালভাবেই খাপ খাইয়েছে। যদি আপনি বলতে চান যে বানরটা মাছিটার চেয়ে বেশি বিবর্তিত, তাহলে আপনি বলছেন যে বিবর্তনের উদ্দেশ্য আছে, যা ভুল।

পরিশেষে, এটা সৃষ্টিতত্ত্ববিদদের প্রচলিত সমালোচনা, “কিছু প্রজাতির উলটো বিবর্তন হয়েছে (যেমনঃ পেঙ্গুইনের ওড়ার ক্ষমতা হারানো, তিমির সাগরে ফিরে যাওয়া)”, এর ব্যাখ্যা দেয়। মনে হতে পারে যে বিবর্তনের নির্দিষ্ট লক্ষ রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে এটা শুধু জীবকে তার বর্তমান পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াচ্ছে। সুতরাং, একটা সময়ে, যখন ওড়ার প্রয়োজনীয়তা ছিল, বিবর্তন পাখিকে ওড়ার সামর্থ দিয়েছে। কিন্তু অ্যান্টার্কটিকায় যেসব পাখির বাস, ওড়ার বিদ্যার প্রয়োজনীয়তা তাদের এত বেশি ছিল না, যতটা ছিল সাঁতার এবং উষ্ণ থাকার বিদ্যার, যা বিবর্তন তাদের দিয়েছে ওড়ার ক্ষমতার পরিবর্তে এবং পেঙ্গুইন এসেছে।

ভুল ধারণা ৮- কিছু সিস্টেম বিবর্তনের জন্য খুব বেশিই জটিল

এটা বিবর্তনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে পুরনো সমালোচনা। এবং ইদানীং “সরলীকরণের অযোগ্য জটিলতা” নামে একে নিয়ে আবার কথা হচ্ছে।এর মূলকথা হল, কিছু সিস্টেম বিবর্তনের জন্য খুব বেশি জটীল কারণ সকল অংশ একত্রিত হবার আগ পর্যন্ত তারা কার্যকরী নয়। যেমন, একটা চোখের ছোট একটা অংশের অনুপস্থিতির জন্য চোখটা দেখতে পাবে না, একটা Bacterial Flagellum একটা প্রোটিনের অভাবে Flagellum এর মত আচরণে সক্ষম হবে না। সুতরাং, বিতর্কের মূলকথা হল, এই সিস্টেমগুলো বিবর্তিত হতে পারতো না কারণ সেখানে কোন কার্যকরী ধাপ থাকতো না, প্রকৃতি ঐ ধাপগুলো নির্বাচন করতে পারতো না। সমস্যা হল, এই বিতর্ক একটা বিষয়কে অবজ্ঞা করছে, “বিবর্তন অন্ধ”। বিবর্তনের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে নির্বাচিত হবার জন্য বৈশিষ্ট্যগুলোকে কার্যকরী হতে হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। বরং, যদি কোন বৈশিষ্ট্য কার্যক্ষম হয়, প্রকৃতি তাদের নির্বাচিত করবে। প্রকৃতপক্ষে, কেউ এখনো পুরোপুরি সরলীকরণের অযোগ্য কোন সিস্টেম খুঁজে বের করতে পারেনি, এবং জটিল সিস্টেমের বিবর্তন ব্যাখ্যায় আমাদের আছে বিবর্তন পদ্ধতি। যেমনঃ পূর্বে উল্লেখিত চোখের উদাহরণে, চোখটা শুধু কিছু আলোক সংবেদনশীল কোষ  যোগ করে নিত (অনেকটা চ্যাপ্টাকৃমির মত)।  তারা ঠিক চোখের মত কাজ করে না, কিন্তু এরপরও তারা কার্যক্ষম, সুতরাং প্রকৃতি তাদের জন্য নির্বাচন করবে। একইভাবে, যসব প্রোটিনের জন্য Flagellum এর উদ্ভব হয়, তারা কোষের অন্যান্য কাজগুলো করে, এমনকি আমরা এমন এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া খুঁজে পেয়েছি যা প্রতি ধাপকে কোষের জন্য কার্যক্ষম করে Flagellum এ রূপান্তরিত করবে, যদিও চূড়ান্ত ধাপই হবে একটি পরিপূর্ণ Flagellum। সুতরাং এটি সত্য নয় যে কিছু সিস্টেম বিবর্তনের জন্য খুব বেশিই জটিল।

ভুল ধারণা ৯- বিবর্তন মহাবিশ্বের প্রথম কোষের নির্মাণ বর্ণনা করে

আমরা প্রায়ই মানুষকে বলতে শুনি যে, “বিবর্তনবাদ সত্য নয় কারণ……ব্লা…ব্লা…ব্লা… বিগ ব্যাং,” অথবা কেন আমরা এখনো প্রথম কোষের নির্মাণ কিভাবে হয়েছিল তা বের করতে পারিনি, এমন আজবাজে কথা। এসব বিতর্কের সাথে বিবর্তনবাদের কোন সম্পর্কই নেই। বিগ ব্যাং তত্ত্ব মহাবিশ্বের আবির্ভাব নিয়ে এবং Abiogenesis জীবনের নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করে। বিবর্তন মঞ্চে আসে মূলত জীবনের উৎপত্তির পর। সুতরাং, যদি আপনি কোনভাবে বিগ ব্যাং বা Abiogenesis কে ভুল প্রমাণ করেও ফেলেন, আপনার পক্ষে এরপরও সম্ভব হবে না বিবর্তনকে ভুল প্রমান করা। প্রকৃতপক্ষে, কিছু মানুষ ভাবে প্রথম কোষটি ঈশ্বরের সৃষ্টি, তারা বিবর্তনবাদকেও তার জায়গা ছেড়ে দেয়। অন্য কথায়, তারা Abiogenesis কে না মানলেও বিবর্তনকে মেনে নিয়েছে (যদিও বিগ ব্যাং এবং Abiogenesis কে অস্বীকার করার মত কোন শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক কারণ নেই।)

 

ভুল ধারণা ১০- বিবর্তনের ভিত্তি হল বিশ্বাস

যারা এটা দাবি করেন তাদের কাছে আমি জানতে চাইব যে ঠিক কোন অংশটি আপনি মনে করেন স্রেফ বিশ্বাসভিত্তিক? ৫ম পয়েন্টে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, আমরা মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের বিবর্তন নিজের চোখে দেখিনি বলে বিবর্তনকে অবৈজ্ঞানিক বলে আখ্যা দেয়া যায় না। বরং বিবর্তন হচ্ছে বিজ্ঞানের সর্বাধিক স্বীকৃত ধারণাগুলোর একটি, এবং যদি আপনি আসলেই ‘Origin of the Species’ পড়ে থাকেন তো দেখবেন, এটি প্রমাণে পরিপূর্ণ। এছাড়াও, ডারউইন ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী বিজ্ঞানী এবং তিনি পরিষ্কার ভবিষ্যদ্বানী করে গেছেন যে তাঁর থিওরি সঠিক হলে পরবর্তীতে রিসার্চাররা কী কী ফলাফল পেতে পারেন। যেমন, তিনি স্পষ্টভাবে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন আমাদের মধ্যবর্তী ফসিল আবিষ্কারের কথা, এবং আমরা করেছি। কিছু জীব আছে, যাদের অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাওয়ার কয়েক যুগ আগেই বিবর্তন এদের ধারণা দিয়েছিল। এটি নিঃসন্দেহে এক অনন্য কৃতিত্ব। একইভাবে, বিবর্তন জেনেটিকস এবং ফসিল রেকর্ডের মধ্যেকার শক্তিশালী সম্পর্কের ধারণা করেছিল, এবং আবারো, এর ধারণা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং আপনি যদি দাবি করেন বিবর্তন স্রেফ বিশ্বাসভিত্তিক, আপনার কাছে আমি জানতে চাইব যে ঠিক কোন অংশটি আপনি মনে করেন শুধুমাত্র বিশ্বাসভিত্তিক, কারণ এর কোন দিক নেই যা আমি গবেষণামূলক তথ্য দিয়ে হাতেনাতে প্রমাণ দেখাতে পারব না।

44.jpg

– ডারউইনিস্ট

1 Comment

  1. মাএ এই সাইটটি খুঁজে পেয়েছি। বাংলা ভাষায় এমন সাইট কমই আছে । জেনে ভালো লাগলো যে এমন সাইটে সংখ্যা বাড়ছে

1 Trackback / Pingback

  1. biborton – jantechaiistore

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.