গাজায় স্থল আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি অর্থনীতি সঙ্কটের লক্ষণ দেখাতে শুরু করেছে। শেকেল এই বছরে সবচেয়ে দুর্বল পারফর্মিং মুদ্রাগুলির মধ্যে একটি, আর এখন এই মুদ্রা সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। উপরন্তু, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি স্থবিরতার সম্মুখীন হচ্ছে, কারণ যুদ্ধ-সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা ভোক্তাদের আস্থা হ্রাস করেছে। এখন এই ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি পরিস্থিতি অনুসারে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত নাও হতে পারে এবং ইসরায়েলের যে কোন স্থানীয় সংঘাত পরিচালনা করার আর্থিক ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু তারপরও আঞ্চলিক বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক বিভাজনের সম্ভাবনা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি উপস্থাপন করে।
এই প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলির আগেও এটি যে চাপের মুখোমুখি হয়েছিল এবং চলমান সংঘাতের সম্ভাব্য প্রভাবগুলি পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহাসিকভাবে, ইসরায়েলি অর্থনীতিকে দুটি স্বতন্ত্র পর্যায়ে বিভক্ত করা যেতে পারে: ১৯৪৮ থেকে ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সামাজিক গণতান্ত্রিক যুগ এবং ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে পুঁজিবাদী যুগ। দেশটির বর্তমান চিত্রের বিপরীতে, প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলে এখনকার তুলনায় অধিকতর বামপন্থী অর্থনীতি ছিল, যা যুদ্ধের ক্রমাগত হুমকি এবং কিববুতজিমের সমাজতান্ত্রিক প্রকৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এই পরিবেশ ডেভিড বেন-গুরিয়নের নেতৃত্বাধীন বামপন্থী লেবার পার্টির পক্ষে ছিল, যা ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে ইসরায়েলি রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ করে দেয়। ইসরায়েলের প্রাথমিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলির জন্য দেশটির সমাজতান্ত্রিক নীতি এবং প্রবিধানকে দায়ী করা হয়েছিল। তবে ১৯৮০-এর দশকে প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ কর্তৃক শুরু হওয়া নব্যউদারপন্থী সংস্কারের সাথে এর পরিবর্তন এসেছিল। ইসরায়েলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে কাজ করে পেরেজ সরকারী ব্যয় হ্রাস, সুদের হার বৃদ্ধি এবং শেকেলের অবমূল্যায়ন সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছিলেন। এই সংস্কারগুলি সফলভাবে ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা সমাধান করেছিল, যা ১৯৪৮ সালে প্রায় ৪৫০% এ পৌঁছেছিল। প্রাথমিক মন্দার পরে, ইসরায়েলের অর্থনীতি বার্ষিক প্রায় ৫% হারে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
অতএব, ইসরায়েলের বর্তমান অর্থনৈতিক চাপকে অবশ্যই দেশটির অর্থনৈতিক ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়নের আলোকে দেখা উচিত। ইসরায়েলি অর্থনীতিতে যুদ্ধের প্রভাব বহুমুখী, যার মধ্যে কেবল তাৎক্ষণিক আর্থিক উদ্বেগই নয়, সেই সাথে অর্থনৈতিক নীতি, ভোক্তা আস্থা বা কনজিউমার কনফিডেন্স এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবও রয়েছে। চলমান সংঘাত এবং আঞ্চলিক উত্তেজনার মুখে ইসরায়েলের অর্থনীতির ভবিষ্যত গতিপথ মূল্যায়নের জন্য এই ব্যাপারগগুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
ইসরায়েলের অর্থনৈতিক সংস্কারগুলি প্রায়শই দেশটির “ইকোনোমিক মিরাকলগুলোর” ভিত্তি হিসাবে প্রশংসিত হয়েছে। আর এই ব্যাপারটিকে প্রায়শই বামপন্থীদের চেয়ে ডানপন্থী অর্থনৈতিক নীতির পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ডানপন্থীরা বলে ওরাই বামপন্থী অর্থনীতির বিরুদ্ধে এইসব সংস্কার এনে এই উন্নয়নগুলো করেছে। এখন এটি সত্য যে এই সংস্কারগুলি অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে মূল ভূমিকা পালন করেছিল, এই ন্যারেটিভটি ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে উপেক্ষা করে যা ১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতার পরে শুরু হয়েছিল, বামপন্থী অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করেই। স্বাধীনতার পর ইসরায়েল মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত হয়। ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের পর ইউরোপ থেকে লাখ লাখ ইহুদি শরণার্থী এবং আরব বিশ্ব থেকে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর আগমন কঠিন চ্যালেঞ্জ এর সৃষ্টি করে। দেশটি মুখোমুখি হয় উচ্চ বেকারত্ব, মন্থর প্রবৃদ্ধি এবং সীমিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের। কিন্তু ১৯৫২ সাল থেকে ইসরায়েলের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। জিডিপি প্রায় ১০% গড় বার্ষিক বৃদ্ধি দেখেছে, এবং মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি আংশিকভাবে আমেরিকান সহায়তা এবং জার্মান ক্ষতিপূরণ দ্বারা চালিত হয়েছিল, তবে গুরুত্বপূর্ণভাবে, ইসরায়েলি সরকার কৌশলগতভাবে কৃষি, টেক্সটাইল এবং হীরা প্রক্রিয়াকরণ সহ মূল দেশীয় শিল্পগুলিকে সমর্থন এবং বৃদ্ধির জন্য তহবিলের এই প্রবাহকে বিনিয়োগ করেছিল। ১৯৫০ সালের মধ্যে, ইসরায়েলের মাথাপিছু জিডিপি যুক্তরাজ্যের প্রায় অর্ধেক ছিল; আর ১৯৭২ সালের মধ্যে, এটি যুক্তরাজ্যের জিডিপিকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিল।
যাইহোক, ১৯৭০ এর দশকে ইসরায়েলের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা যায় যা ঘটেছিল প্রাথমিকভাবে দুটি কারণে। প্রথমত, যুদ্ধের প্রভাব। ১৯৬৭ সালে আরব প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত সংঘাতে ইসরায়েল বিজয়ী হয়, কিন্তু ১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপুর যুদ্ধ একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। প্রাথমিক আরব অগ্রগতি প্রতিহত করতে ইসরায়েলের চূড়ান্ত সাফল্য সত্ত্বেও, এই যুদ্ধ জাতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছিল। ইসরায়েলের সামরিক ব্যয় তার জিডিপির ১০% এরও কম থেকে প্রায় ৩০% এ উন্নীত হয়। দ্বিতীয় কারণ ছিল তেল সংকট। ১৯৭৩ সালের যুদ্ধের পরে, সৌদি আরব এবং অন্যান্য আরব তেল রফতানিকারকরা তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার ফলে প্রায় রাতারাতি তেলের দাম ৩০০% বৃদ্ধি পায়। এই উচ্চতর দামগুলি ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, ইসরায়েলের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছিল, যা তেল আমদানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ইতিহাসের এই সময়টি দেশটির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, প্রতিকূলতা এবং স্থিতিস্থাপকতার একটি জটিল যাত্রাকে চিত্রিত করে। কৌশলগত সরকারী বিনিয়োগ এবং বাহ্যিক সহায়তা দ্বারা চালিত স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রাথমিক অর্থনৈতিক উত্থান ইসরায়েলের উন্নয়নের মঞ্চ তৈরি করেছিল। কিন্তু যুদ্ধ এবং তেল সংকট দ্বারা চিহ্নিত ১৯৭০ এর দশকের চ্যালেঞ্জগুলির কারণে দেশটিকে দিতে হয় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পরীক্ষা, যা বাহ্যিক ফ্যাক্টরগুলোর উপর দেশটির নির্ভরতা এবং তার অর্থনৈতিক পথে ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর প্রভাবকে তুলে ধরে।
ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ইতিহাসকে কার্যকরভাবে তিনটি পৃথক সময়কালে বিভক্ত করা যেতে পারে। প্রথমটি হল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক সময়কাল, যা ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। দ্বিতীয়টি, প্রায়শই যুদ্ধের সময়কাল হিসাবে পরিচিত, যা ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিস্তৃত। তৃতীয়টি হলো আধুনিক যুগ, যা ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে বর্তমান দিন পর্যন্ত বিস্তৃত। বিভাজন যাই হোক না কেন, ইসরায়েলের অর্থনৈতিক গতিপথ একটি সাফল্যের গল্প। আংশিকভাবে একটি সমৃদ্ধ প্রযুক্তি খাত দ্বারা চালিত দেশ ইসরায়েল এখন বিশ্বব্যাপী মাথাপিছু সর্বোচ্চ জিডিপির দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং দেশটি তার অঞ্চলের সবচেয়ে উন্নত দেশ হিসাবে বিবেচিত হয়।
তবে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশটির অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিচার বিভাগীয় সংস্কার এবং ইসরায়েলি রাজনীতির সামগ্রিক দিকনির্দেশনা দেশটির প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে তাদের কার্যক্রমকে বিদেশে স্থানান্তর করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এমনকি সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর আগে, ইসরায়েলি শেকেল বছরের সবচেয়ে খারাপ পারফর্মিং মুদ্রাগুলির মধ্যে একটি ছিল, আগস্টের মধ্যে প্রতি ডলারে প্রায় তিন শেকেল থেকে প্রায় চারে নেমে এসেছিল। যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনা শেকেলকে আরও দুর্বল করেছে, যা এখন ডলারের বিপরীতে চার শেকেল ছাড়িয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাকে সমর্থন করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা সত্ত্বেও এই পতন অব্যাহত রয়েছে। সম্ভাব্য যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অর্থায়নের জন্য ইসরায়েলি সরকারের ঋণ বাড়ানোর পরিকল্পনা অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। প্রধান ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডিস এন্ড ফিচ ইসরায়েলের ঋণের রেটিং সম্ভাব্য হ্রাসের জন্য পর্যালোচনা করছে। ইসরায়েলি ঋণ বীমা করার ব্যয়ও সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়া সম্ভবত আরও ব্যয়বহুল হবে।
তবুও, ইসরায়েল একটি স্থানীয় সংঘাত পরিচালনা করতে আর্থিকভাবে সক্ষম বলে মনে হয়। সম্ভাব্য মার্কিন সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বাদ দিলে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত। দেশের ঋণ-জিডিপি অনুপাত প্রায় ৬০%, এবং এর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার রয়েছে। এই বিষয়গুলো ইসরায়েলকে উল্লেখযোগ্য আর্থিক ছাড় প্রদান করে, এমনকি এটি দেশটির বর্তমান অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলির মধ্য দিয়ে ইজরায়েলকে যেতেও সহায়তা করে।
বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে যুদ্ধের সম্ভাব্য সম্প্রসারণ ইসরায়েলের জন্য দুভাবে ভালো চাপ তৈরি করতে পারে। প্রথমত, এই ধরনের যুদ্ধ-বৃদ্ধি সম্ভবত মুদ্রাস্ফীতির চাপকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। শেকেল ইতিমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়েছে, এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ধীর গতির অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির মধ্যে তার সরকারের হ্রাসপ্রাপ্ত এপ্রুভাল রেটিংকে উন্নত করার জন্য উচ্চ স্তরের সরকারী ব্যয় বজায় রাখার পাশাপাশি সামরিক ব্যয় বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করতে পারেন। একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ হ’ল সংঘাতের ফলে তেলের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা, যা ১৯৭৩ সালের পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, এই দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রভাবও ইসরায়েলের রাজনৈতিক পটভূমিতে সংঘাতের প্রভাব দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হবে। দেশটির অর্থনৈতিক এলিটরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে ইসরায়েলের ডানপন্থার দিকে এবং বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় সংস্কারের দিকে অগ্রসর হওয়া তার উচ্চ মূল্যের শিল্প, বিশেষত প্রযুক্তি খাতকে বিপন্ন করতে পারে। ডানপন্থায় আরও স্থানান্তর, ও অতি গোঁড়া ও রক্ষণশীল হারেদি ইহুদিদের (অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েলের জনসংখ্যার প্রায় ২৫% হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে) ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাব, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসাবে ইসরায়েলের মর্যাদা হ্রাস করতে পারে।
মূল বিষয়টি হল যে যুদ্ধের ফলে ইসরায়েলের ঐতিহাসিক ধর্মনিরপেক্ষ বনাম ঐতিহ্যবাদী বা ট্রেডিশনালিস্ট বিভাজন আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, বিশেষত কম ধর্মনিরপেক্ষতার দিকে চলমান জনসংখ্যার পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করে। ইসরায়েলের সামাজিক কাঠামোর এই ধরনের পরিবর্তন অনিবার্যভাবে তার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।
Leave a Reply