লেবানন ২০১৯ সাল থেকে একটি গুরুতর এবং চলমান সংকটের মুখোমুখি হয়েছে, যাকে একরকম নাটকীয় অর্থনৈতিক মন্দা দ্বারা চিহ্নিত করা যায়। এই সময়ের মধ্যে, লেবাননের মুদ্রার পতন হয়েছে, দেশের জিডিপি অর্ধেক হয়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৫০০০% বৃদ্ধি পেয়েছে, আর লক্ষ লক্ষ লোককে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। লেবাননের পতনের দ্রুততা এবং তীব্রতা বিস্ময়কর, যেখানে বিশেষত মাত্র কয়েক বছর আগে, লেবাননের অর্থনীতি সমৃদ্ধ ছিল। বিশেষ করে সমৃদ্ধ ছিল এর আর্থিক সেবা খাত, যেকারণে দেশটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ বলা হতো। আর এখন বিশ্বব্যাংক দেশটিকে ইতিহাসের তৃতীয় সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট হিসাবে চিহ্নিত করেছে। তাই এই লেখাটির লক্ষ্য হচ্ছে লেবাননের সংকটের শিকড় অনুসন্ধান করা হয়েছে, ২০১৯-পরবর্তী পতন এবং কেন লেবানন ইসরায়েলের সাথে সংঘাত মোকাবেলায় বিশেষভাবে সজ্জিত নয় তা সংক্ষিপ্তভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিশ্লেষণটি তিনটি অংশে বিভক্ত করা হবে: ১৯৯০ এর আগে, আজকের পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত।
১৯৯০-এর পূর্বের সময়কাল থেকে শুরু করা যাক। লেবানন তখন এখনকার অঞ্চলের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে, এটি মাউন্ট লেবানন মুতাসারিফাতে নামে পরিচিত ছিল, যা ছিল এর বর্তমান আকারের প্রায় অর্ধেক। অটোমান সাম্রাজ্য অঞ্চলটিকে আঞ্চলিক জাতিগত বিভাজনকে প্রতিফলিত করেই এভাবে ডিজাইন করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে, যখন ফ্রান্স এবং ব্রিটেন পরাজিত অটোমান সাম্রাজ্যকে বিভক্ত করে, তখন লেবাননের অঞ্চল প্রসারিত হয়। এই সম্প্রসারণের দুটি মূল কারণ ছিল ১৯১০-এর দশকে একটি বিধ্বংসী দুর্ভিক্ষের পরে স্থানীয় লেবানিজ নেতাদের স্বনির্ভরতা সম্পর্কে উদ্বেগ এবং ফ্রান্সের বৃহত্তর অঞ্চল নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা। সম্প্রসারণের মধ্যে বৈরুত, বেকা উপত্যকা এবং উত্তর ও দক্ষিণে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সম্প্রসারণ লেবাননের জনসংখ্যাকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে, সুন্নি মুসলিম জনসংখ্যাকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে এবং শিয়া জনসংখ্যাকে চারগুণ করে। ফলস্বরূপ, একসময় সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকা ম্যারোনাইট খ্রিস্টান দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫০% হয়ে যায়। তাদের জন্মহার মুসলিমদের জন্মহারের তুলনায় কম ছিল, আর স্বাভাবিকভাবেই তার অর্থ হচ্ছে তাদের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক আধিপত্যের ক্রমাগত হ্রাস। এটাই ঘটে, যার ফলে আন্তঃজাতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। মুসলমানরা আরও ভাল প্রতিনিধিত্বের দাবি করতে শুরু করে এবং জনসংখ্যার বিষয়টি এতটাই বিতর্কিত হয়ে ওঠে যে লেবানন ১৯৩২ সাল থেকে কোনও সরকারী জনগণনাই পরিচালনা করেনি।
বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় জুড়ে, লেবাননের রাজনৈতিক দৃশ্যপট খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব দ্বারা চিহ্নিত ছিল, খ্রিস্টান আধিপত্য বজায় রাখার লক্ষ্য চালিত হয়েছিল ফরাসি নীতি দ্বারা। এই উত্তেজনা ১৯৭৫ সালে একটি নৃশংস গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়েছিল, যা ছিল প্রাথমিকভাবে ম্যারোনাইট খ্রিস্টান অভিজাতদের এবং প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) সহ মুসলিম ও বামপন্থী গোষ্ঠীগুলির একটি জোটের মধ্যকার লড়াই। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে জর্ডান কর্তৃপক্ষের সাথে দ্বন্দ্বের পরে পিএলও প্রথমে জর্ডানে এবং পরে দক্ষিণ লেবাননে স্থানান্তরিত হয়েছিল। লেবাননের গৃহযুদ্ধ জটিল ছিল, তবে মূলত, পিএলও নেতৃত্বাধীন জোট প্রাথমিকভাবে ম্যারোনাইট খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে অপার হ্যান্ড অর্জন করেছিল, যার ফলে ১৯৭৭ সালের মধ্যে লেবাননের কার্যত বিভক্তি ঘটে, উত্তরে খ্রিস্টানদের এবং দক্ষিণে মুসলমানদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই পরিস্থিতি ইসরায়েল এবং সিরিয়া উভয়ের হস্তক্ষেপকে উত্সাহিত করেছিল। ইসরায়েল পিএলওর প্রভাব সীমিত করার চেষ্টা করেছিল, যখন সিরিয়া বর্তমান ম্যারোনাইট সরকারকে সমর্থন করার লক্ষ্য নিয়েছিল (কারণ সিরিয়ার সাথে ম্যারোনাইট খ্রিস্টানদের সম্পর্ক অনুকূল ছিল)। ১৯৯০ সালে TAFE চুক্তির মাধ্যমে সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে, এর মাধ্যমে একটি সেক্টেরিয়ান সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে। এই রাজনৈতিক সমাধান আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা আনে, লেবাননের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য বৈদেশিক সহায়তা এবং বিনিয়োগকে সক্ষম করে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত, লেবাননের মাথাপিছু জিডিপি ৬০% এরও বেশি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এটিকে সেই সময়ের মধ্যে এই অঞ্চলের অন্যতম ধনী দেশে পরিণত করেছে।
তবে দেশটি তখনো অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। সিরিয়া ২০০৫ সাল পর্যন্ত উত্তর লেবাননের বেশিরভাগ অংশে উপস্থিতি বজায় রেখেছিল এবং হিজবুল্লাহ দক্ষিণে একটি আধা-স্বাধীন সত্তা হিসাবে কাজ করেছিল। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, ব্যাপক বৈষম্য এবং আঞ্চলিক সংঘাতের প্রভাব, বিশেষ করে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ লেবাননের স্থিতিশীলতার জন্য চলমান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, এই ধরনের ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে লেবাননের সক্ষমতা ছিল উল্লেখযোগ্য। এই উত্তাল সময়ের মধ্য দিয়ে লেবাননের যাত্রা দেশটির অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক কারণগুলির জটিল পারস্পরিক ক্রিয়াকে তুলে ধরেছে যা তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপটকে নির্মাণ করে।
একসময় ‘মধ্যপ্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত লেবানন বেশ কয়েকটি কারণে অর্থনৈতিক উত্থানের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল। দেশটিতে একটি শক্তিশালী পর্যটন শিল্প ছিল এবং লেবানিজ প্রবাসীরা দেশে উল্লেখযোগ্য রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছিল। তবে লেবাননের অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল এর ফানানশিয়াল সেক্টর। লেবাননের অস্বচ্ছ ব্যাংকিং আইন, সুশিক্ষিত কর্মীবাহিনী এবং ডলার-ভিত্তিক আমানতের উচ্চ রিটার্ন মধ্যপ্রাচ্যের মূলধনকে আকৃষ্ট করেছে। এই বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ লেবাননের ডলার পেগ বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা দেশটিকে একটি অতিমূল্যায়িত লেবানিজ পাউন্ড বজায় রাখতে, বড় ঘাটতি চালাতে এবং উচ্চ ঋণ-জিডিপি অনুপাত পরিচালনা করার সুযোগ করে দেয়।
২০১০ এর দশকের গোড়ার দিকে যখন মূলধন প্রবাহ হ্রাস পেতে শুরু করে, তখন লেবাননের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার আমানত আকৃষ্ট করার জন্য ব্যতিক্রমী উচ্চ সুদের হার অফার করে, যা ছিল ১০% এরও বেশি! এই কৌশলটি, পরে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক একটি জাতীয় পঞ্জি স্কিম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যেখানে বিদ্যমান ডলারের উপর সুদ প্রদান এবং ডলারের পেগ বজায় রাখতে নতুন ডলার ব্যবহার করা জড়িত ছিল। ২০১৮ সালে নতুন ডলার প্রবাহ হ্রাস এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস করার সাথে সাথে সিস্টেমটি উন্মোচিত হতে শুরু করে। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে ২০১৯ সালের শেষের দিকে দ্রুত তহবিল প্রত্যাহার করা হয়েছিল এবং লেবানন ডলারের ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছিল। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকার পেট্রল, তামাক এবং হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার উপর কর প্রস্তাব করেছিল, যা ব্যাপক দাঙ্গা এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছিল।
লেবাননের সেক্টেরিয়ান সরকার কাঠামোর ফলে আইন প্রণয়ন পঙ্গু হয়ে যায় এবং এক শ্রেণীর রাজনৈতিক অভিজাতরা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। ২০২০ সালের গোড়ার দিকে লেবানিজ পাউন্ড তার মূল্যের ৭৫% হারিয়েছিল এবং জিডিপি উল্লেখযোগ্যভাবে সংকুচিত হয়েছিল। ইতিমধ্যে সংকটের মধ্যে থাকা লেবাননের অর্থনীতি আরও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-১৯ মহামারী সরকারের সীমিত আর্থিক সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। এরপর আগস্টে বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০২৩ সালে পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের সাথে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল, কারণ লেবানন জ্বালানি আমদানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এবং তারা রাশিয়া বা ইউক্রেন থেকে তার মোট ক্যালোরি খরচের এক চতুর্থাংশেরও বেশি সংগ্রহ করতো। বৈশ্বিক সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় লেবাননের ঋণ সংকট আরও গভীর হয়েছে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনের পরেও লেবাননের রাজনীতি অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির হার ২০০% ছাড়িয়ে গেছে এবং লেবাননের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজন দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থেকে অবশ্যই লেবাননের জন্য ইসরায়েল ও দক্ষিণাঞ্চলীয় লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যকার সংঘাত এফোর্ড করাটা সম্ভব নয়। কিন্তু ক্রুয়েল প্যারাডক্স এখানেই যে, এতদিনের পলিটিকাল ও ইকোনোমিক ক্রাইসিসের জন্য লেবাননের স্টেইট ক্যাপাসিটি বা রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা এতটাই কমে গেছে যে, এখন যে হিজবুল্লাহ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়াচ্ছে, লেবানন এদেরকে চাইলেও থামাতে পারবে না। আর এদিকে হিজবোল্লাহ এর ইজরায়েলে আক্রমণ দেশটির অর্থনীতিকে আরও ক্ষতির মুখে থেকে দিচ্ছে। এর জন্য সামনে লেবাননের জন্য হয়তো আরেক ধাপ সংকট অপেক্ষা করছে।
তবে হিজবুল্লাহর এই আক্রমণটা নিয়ে সম্পর্কিত ইনসাইট এখানে দিয়ে যাই, যা ধারণা দেবে যে আসলে কী হিজবুল্লাহকে এই যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে। হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হলেও হিজবুল্লাহ এবং ইরান হামাসের সরাসরি মিত্র নয়। হামাসের আক্রমণের চরম প্রকৃতি কেবল পশ্চিমেই নয়, আশ্চর্যজনকভাবে আরব বিশ্বের কিছু অংশেও ইসরায়েলের পক্ষে সমর্থন তৈরিতে সহায়তা করেছিল, যা রাজনৈতিকভাবে ইরানের তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ বা ‘এক্সিস অফ রেজিস্টেন্সকে’ অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। এর ফলে অনেকটা ইরানের মতো হিজবুল্লাহ এই হামলাকে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি নির্ণায়ক পাল্টা আক্রমণ এবং ইসরায়েলের সাথে স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টাকারীদের জন্য একটি সতর্কতা হিসাবে প্রশংসা করে, তবে তাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াটি উল্লেখযোগ্যভাবে সংরক্ষিত ছিল, যার লক্ষ্য ছিল সরাসরি সম্পৃক্ততা ছাড়াই হামাসের সাথে সংহতি প্রকাশ করা। যুদ্ধের ইচ্ছা হিজবুল্লাহর ছিলোনা। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে। হামাসের হামলার দুই সপ্তাহ পর ইরান বা হিজবুল্লাহর এই যুদ্ধে জড়িত হবার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। একটি খবরে বলা হয়, ইরান ইউএন এর মাধ্যমে ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছে, স্থল আক্রমণ অব্যাহত থাকলে ইরান হস্তক্ষেপ করতে পারে। এরপর ইরান সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের বোমা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ইরানকে ‘আগাম পদক্ষেপ’ নিতে হতে পারে। এর কিছুক্ষণ পর সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানি দূতাবাস হিব্রু ভাষায় একটি টুইট পোস্ট করে, যা একটি সংকটময় মুহূর্তের ইঙ্গিত দেয়। আইডিএফ এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে আর্টিলারি বিনিময়ও বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, বৈরুতে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইঙ্গিত দিয়ে বলেন যে, হিজবুল্লাহ উল্লেখযোগ্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুত, যা ইঙ্গিত দেয় যে হিজবুল্লাহর ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে জড়িত হবার সম্ভাবনা স্থল আক্রমণ হবে কিনা তার ওপর নির্ভরশীল থাকবে। স্থল আক্রমণ হয়, হিজবুল্লাহও ইজরায়েলের নর্দার্ন বর্ডারে আক্রমণ বৃদ্ধি করে। এখন সেখানেও একরকম যুদ্ধ চলছে।
সত্যি বলতে, ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে হিজবুল্লাহর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা সম্প্রতি দুটি প্রধান কারণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নতুন যুদ্ধ মন্ত্রিসভার অধীনে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপকতা উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রায় ৩০,০০০ হামাস জঙ্গিকে লক্ষ্য করে গাজার উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক স্থল আক্রমণের মাধ্যমে “পৃথিবী থেকে হামাসকে মুছে ফেলার” একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এই আগ্রাসী অবস্থান হিজবুল্লাহকে সতর্ক করে, যা হামলার সাথে সরাসরি জড়িত না হওয়া সত্ত্বেও হামাসকে নির্মূল করতে চায় না। সেই সাথে এই পরিস্থিতি হিজবুল্লাহর জন্য একটি কৌশলগত সুযোগ উপস্থাপন করে, কেননা গাজায় এই ধরনের বড় আকারের ইসরায়েলি অভিযান ইসরায়েলের সামরিক সম্পদকে উল্লেখযোগ্যভাবে চাপে ফেলবে, সম্ভবত অন্যান্য অঞ্চলে তাদের দুর্বল করে তুলবে। দ্বিতীয় কারণটি হ’ল আংশিকভাবে ইসরায়েলের গুরুতর সামরিক পদক্ষেপের ফলস্বরূপ দেশটির প্রতি বিশ্বব্যাপী জনসাধারণের অনুভূতি হ্রাস পাচ্ছে। গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যারেজের অবরুদ্ধকরণের ফলে উচ্চ বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক নিন্দা রয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন বজায় রাখলেও বেশিরভাগ আরব বিশ্ব এবং বৈশ্বিক দক্ষিণ বা গ্লোবাল সাউথের দেশগুলি ইসরায়েলের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে, ইউএন ইজরায়েলের এই কাজকে “অপমানজনক” হিসাবে বর্ণনা করেছে। ইউএন এর মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জোর দিয়ে বলেছেন, হামাসের হামলা ইজরায়েলের দিতে যাওয়া এই সম্মিলিত শাস্তি বা কালেকটিভ পানিশমেন্টকে ন্যায়সঙ্গত করে না। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজোগ গাজায় নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং ফিলিস্তিনিদের হামাসের বিরোধিতা করা উচিত ছিল বলে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও, নিরাপত্তা মন্ত্রী ইপমার বেনগাভির বিতর্কিতভাবে টুইট করেছেন যে গাজার উচিত সাহায্যের পরিবর্তে আরও বিস্ফোরক গ্রহণ করা।
গাজায় হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিজ্ঞা এবং গাজায় আক্রমণের বিরুদ্ধে এই গ্লোবাল সাপোর্ট হিজবুল্লাহকে যুদ্ধে জড়াতে অনুপ্রাণিত করে থাকবে। এসব ঘটনা হিজবুল্লাহ সহ তার মিত্রদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাথমিক রক্ষক হিসেবে নিজেদের অবস্থান গ্রহণের রাজনৈতিক সুযোগ এনে দেয়। হিজবুল্লাহ অনেক কম গণতান্ত্রিক চাপ বা নিজেদের অঞ্চলে জনগণের চাপের মুখোমুখি হয়, তবুও তারা এখনও জনমতের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন, যা সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক জোট লেবাননে তাদের সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। জনপ্রিয়তার গুরুত্ব উপলব্ধি করে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিজেদের জনপ্রিয়তার গুরুত্ব উপলব্ধি করে হিজবুল্লাহ এবং তার মিত্ররা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের এরকম অবস্থান গ্রহণকে জনগণের ওপর নিজেদের প্রভাব এবং সমর্থন পুনরুদ্ধারের উপায় হিসাবে দেখছে। এই অবস্থায় হিজবুল্লাহ মূলত লেবাননে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ দেখেছে, আর লেবাননের অর্থনৈতিক বিপত্তি আরও বৃদ্ধি করার রিস্ক নিয়েছে, আর তারা এটা করতে পারছে কারণ লেবাননের সেই রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা নেই যে তাদের এই আসন্ন ক্ষতির আটকাতে তারা হিজবুল্লাহকে ঠেকাতে পারে।
তথ্যসূত্র
1 – https://tradingeconomics.com/lebanon/consumer-price-index-cpi
2 – https://openknowledge.worldbank.org/server/api/core/bitstreams/d4c22ec3-de98-5d7f-bb6c-988964e1cea9/content
3 – https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_Lebanon
4 – https://en.wikipedia.org/wiki/Demographics_of_Lebanon
5 – https://www.britannica.com/place/Lebanon
6 – https://www.britannica.com/summary/Lebanese-Civil-War
7 – https://en.wikipedia.org/wiki/Black_September
8 – https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/9/93/6DayWarEnglish.png
9 – https://en.wikipedia.org/wiki/Taif_Agreement
10 – https://datacommons.org/tools/timeline#place=country%2FLBN%2Ccountry%2FSYR%2Ccountry%2FEGY%2Ccountry%2FJOR&statsVar=Amount_EconomicActivity_GrossDomesticProduction_Nominal_PerCapita
11 – https://www.ft.com/content/c15c88de-fa35-11e9-98fd-4d6c20050229
12 – https://www.reuters.com/markets/rates-bonds/lebanons-financial-crisis-how-it-happened-2022-01-23/
13 – https://openknowledge.worldbank.org/entities/publication/036d2419-d4d8-5abb-b25d-fa38d00a5f13
14 – https://en.wikipedia.org/wiki/Economy_of_Lebanon
15 – https://www.economist.com/middle-east-and-africa/2019/10/24/a-surge-of-public-anger-sends-lebanons-politicians-reeling
16 – https://today.lorientlejour.com/article/1348622/mercy-corps-raises-concern-over-impact-of-ukraine-war-on-lebanons-wheat-supply.html
17 – https://www.foodsecurityportal.org/node/1989
18 – https://tradingeconomics.com/lebanon/inflation-cpi
19 – https://neighbourhood-enlargement.ec.europa.eu/news/lebanon-eu60-million-humanitarian-aid-most-vulnerable-2023-03-30_en
Leave a Reply