এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, যেকোন সমাজের জন্যই একজন প্রেসিডেন্ট, প্রাইম মিনিস্টার, অধিপতি বা সম্রাট বা সর্বোপরি একজন দলনেতার প্রয়োজন। কিন্তু প্রায় দশ হাজার বছর আগে মানুষ যেকোন কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা ছাড়াই টিকে থাকতো।স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির পুরাতত্ত্ববিদগণ স্থাপত্যশিল্প এবং সম্মোহনকারী ওষুধের মাধ্যমে এই পরিবর্তন কিভাবে হয়েছিল তা বোঝার একদম কাছাকাছি পর্যায়ে চলে এসেছেন বলে মনে করেন।
তাদের গবেষণার মূল আর্কিওলজিক্যাল স্থান ছিল ৩০০০ বছরের পুরোনো পেরুভিয়ান এডেস এ অবস্থিত Chavin de Huanter নামক স্থান। এখানে Chavin নামক কালচারের বিকাশ ঘটেছিল হয়েছিল। এই সময়ে অন্যান্য সভ্যতাগুলোতেও কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল যেমন ইজিপ্টে ফারাওরা। যাই হোক,আর্কিওলজিস্টদের কাছে Chavin de Huantar স্থানটি প্রাচীন সমাজের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অর্কিওলজিস্ট জন রিক(এই গবেষণার প্রধান)বলেছেন, “৫০০০ বছরের বেশী এবং প্রায় ১০০০০ বছর আগে পৃথিবীর কোন স্থানেই কেউই কোন শাসন ব্যবস্থার অধীনে বসবাস করত না”।আজ আমরা সবাই আশা করি আমাদের সংগঠনের প্রয়োজন। সুতরাং এই শাসন ব্যবস্থা কিভাবে এল?
আর্কিওলজিস্টরা বিশ্বাস করেন যে, Chavin de huantar-এ যাজকদের একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু ছিল, যা প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থার সাংগাঠনিক কাজের উদাহরণ বলা যেতে পারে।শাসকেরা তাদের কর্তৃত্ব জাহির করত সম্মোহনকারী ওষুধ ব্যবহার করে, পাথরে স্থাপত্যশিল্পের মাধ্যেমে এবং কল্পনা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মূর্তিশিল্পের মাধ্যমে।
এখানে গবেশকদের দলটি কবরের পাথরের গায়ে খোঁদাই করে অংকিত সাইকোঅ্যাক্টিভ প্ল্যান্টস (যেখান থেকে সমোহনকারী ওষুধ প্রস্তুত করা হত), সম্মহনকারী ওষুধ এবং এগুলোর প্রভাবে প্রভাবিত মানুষের অবস্থার চিত্র খুঁজে পেয়েছেন । রিক বিশ্বাস করেন, এইগুলো ব্যবহার করা হত মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে যে তাদের দলপতিদের একটা স্বগীয় যোগাযোগ আছে। এতে তাদের মাঝে একটি ক্ষমতাধর অবস্থান তৈরি হত। এছাড়াও যাজকেরা তাদের আধিপত্য এবং দৈবিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য জমকালো স্থাপত্যশিল্প এবং অংকিত মূর্তিশিল্প ব্যবহার করত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল যে, এসময় তারা তাদের কৃর্তকাজকে কাঠ বা কাপড় জাতীয় জিনিসের বদলে পাথরে খোঁদাই করে রাখতে শুরু করে। রিক বিশ্বাস করেন, এই সাধারণ কাজটি তাদের কথাগুলোকে অস্থায়ী থেকে স্থায়ী এবং প্রমাণযোগ্য করেছে। তিনি বলেন “যাজকদের একটি নতুন পৃথিবী দরকার ছিল, যেখানে ধমীয় গুরু এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সত্ত্বার সাথে মিল রেখে স্থান, কাল ও পাত্র নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে চলবে-”। স্ট্যানফোর্ড ইনিভার্সিটির এক ইন্টারভিউতে তিনি আরো বলেন যে, “আমি তাদের হস্তশিল্পের দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পরে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এগুলো একটা উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। এগুলোর পরিকল্পনাকারী ও প্রস্তুতকারীগণ একটি বিষককে অর্জন করার জন্যই এতকিছু করেছিল। আর তা হল কর্তৃত্ব”।
http://news.stanford.edu/2016/04/25/stanford-archaeologist-traces-origins-authority-andes-peru/
– রঙ্গিন প্রজাপতি
Leave a Reply