বিলুপ্তির ঝুঁকিতে বিশ্বের ২০ শতাংশ উদ্ভিদ প্রজাতি

10[1]

বিশ্বের সকল উদ্ভিদ এবং তাদের অবস্থা খতিয়ে দেখতে বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো একটি প্রতিবেদনে প্রায় ৪০০,০০০টি পরিচিত প্রজাতি তালিকাভূক্ত করেছেন। এই উদ্বোধনী রিপোর্টে ভাস্কুলার গাছগুলোর (যেসকল উদ্ভিদে পানি ও খনিজ পদার্থ পরিবহনের জন্য জাইলেম, ফ্লোয়েম টিস্যু থাকে তাদেরকে ভাসকুলার উদ্ভিদ বলে) অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। তালিকায় কনিফার এবং ফার্ন সহ সপুষ্পক উদ্ভিদ আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই সমস্ত প্রজাতির উদ্ভিদ আমাদের দৈনিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও বর্তমানে প্রতি পাঁচটি প্রজাতির একটি বিলুপ্তির হুমকির সম্মুখীন। কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন ও বিভিন্ন আক্রমণকারী প্রাণীকে দায়ী করা হয়েছে।

রয়্যাল বোটানিক গার্ডেনের বিজ্ঞান ডিরেক্টর অধ্যাপক ক্যাথি উইলিস বলেন,”এটি বিশ্বের গাছপালার অবস্থানের উপর প্রথম বিশ্বব্যাপী হিসাব। আমরা ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন পাখি, সামুদ্রিক কচ্ছপ, বন, শহর, মা, বাপ-দাদা, শিশু, এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকের অবস্থা সম্পর্কে জানি, কিন্তু বর্তমানে গাছের কি অবস্থা এসম্পর্কে আমাদের কাছে তেমন ধারণা ছিল না। খাদ্য, ওষুধ, পোশাক, নির্মাণ সামগ্রী এবং জৈবজ্বালানি থেকে শুরু করে সবকিছুতে গাছপালার গুরুত্ব রয়েছে। এই প্রতিবেদনটি তাই গাছ এর অবস্থা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের অভাবকে পূর্ণ করবে”।

রিপোর্টটি শুধুমাত্র ভাস্কুলার উদ্ভিদসমূহের পরিচিত দেয়। আমাদের চারপাশের গাছপালার অধিকাংশই ভাসকুলার উদ্ভিদ। বৃক্ষ, কনিফার, এবং ফার্নের মতো উদ্ভিদ সহ বিভিন্ন প্রজাতির শেত্তলা, শৈবাল এবং liverworts ও সপুষ্পক উদ্ভিদের অন্তর্ভুক্ত। গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, প্রায় এক মিলিয়ন প্রজাতির নামকরণ করা সত্ত্বেও প্রতিটি উদ্ভিদ প্রজাতির গড়ে প্রায় ২.৭টির মতো ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে এবং অনেক প্রজাতি ভুল বসত একাধিকবার নামকরণ ও বর্ণনা করা হয়েছে।

সবকিছু বিবেচনা করে গবেষকরা সিদ্ধানতে উপনীত হন যে, প্রায় ৩৯০,৯০০টি উদ্ভিদ প্রজাতি বিজ্ঞানে পরিচিত। যার মধ্যে আনুমানিক ৩৬৯,৪০০টি প্রজাতি সপুষ্পক। তবুও, অধ্যাপক উইলিস অনুযায়ী এটি, “এটি কেবল একটি অংশ”। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর ছোট অর্কিড (শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা) থেকে শুরু করে অতি উচ্চ গাছের (১৫০ ফুট) প্রায় ২,০০০টি নতুন প্রজাতির বর্ণনা করা হয়েছিল। এর মধ্যে গ্যাবন ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের ১০০ টনের বেশি ওজনের গাছও রয়েছে।

এই রিপোর্টের স্ট্র্যাটেজিক আউটপুট লিডার স্টিভ বাকম্যান বলেন,”কিন্তু এখনও বিশ্বের একটি বৃহৎ অংশ রয়ে গেছে যেখানের গাছপালা সম্পর্কে পরিচিত সামান্য।  এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ এলাকার সনাক্তকরণ এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে উদ্ভিদের অবস্থান। একইভাবে, আমরা কেবল উদ্ভিদের জেনেটিক ডাইভারসিটির একটি অংশ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আর কেবল ১৩৯টি ভাস্কুলার উদ্ভিদের পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স আমাদের কাছে আছে। এই বিষয়ে আমাদের কাজ আরও বাড়াতে হবে।”

গবেষকেরা জানান যে, সকল পরিচিত প্রজাতির ২১ শতাংশ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে। মানুষেরা ওষুধ, খাদ্য, এবং বিভিন্ন উপকরণের জন্য ৩০,০০০টি ভিন্ন প্রজাতির উপর নির্ভর করে। উদ্ভিদ প্রজাতির রক্ষার জন্য আমাদের এসব এলাকার বিভিন্ন প্রজাতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

বর্তমান আধুনিক বিশ্বে উদ্ভিদগুলোর হুমকির মুখোমুখি হওয়ার কারণ হল কেবল বনাঞ্চল ধ্বংস ও জলবায়ু পরিবর্তন নয়, বরং আক্রমণকারী বিভিন্ন প্রজাতি এবং বিভিন্ন রোগও এর একটি বড় কারণ। বিশ্বের ৫,০০০ এরও বেশি প্রজাতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। এরা বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করছে এবং এতে কোটি কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোকে তালিকাভূক্ত করতে পারলে তাদের বাঁচিয়ে রাখার সুযোগ আছে।

Click to access embargo2016-nhjdkijkai02hf8sn.pdf

http://www.kew.org/discover/news/state-worlds-plants-report-released-kew?_ga=1.255759304.1314065370.1462880149

–সুস্মিতা দেব

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.