বর্তমান সময়ে সেল্ফি শুধু একটি শব্দই নয়, বর্তমানে এটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের একটি প্রধান উপায় হয়ে গেছে। কেমেরা যুক্ত স্মার্টফোনগুলোর সর্বব্যপকতার সাথেসাথে সেল্ফির প্রচার মহামারী আকার ধারণ করেছে।
ফ্লোরিডার স্টেট ইউনিভার্সিটির এক নতুন গবেষণায় জেসিকা রিজওয়ে এবং রাসেল ক্লেইটন দেখান, যারা নিজেদের শারীরিক আকার নিয়ে অধিক সন্তুষ্ট এবং শারীরিকভাবে দেখতে আকর্ষণীয় তারা ইনস্টাগ্রামে খুব বেশি পরিমাণে নিজেদের সেল্ফি দিয়ে থাকে। এটা মূলত লোক দেখানোর জন্যই করা হয় বলা যেতে পারে। অন্যদিকে তাদের সাথে তাদের সঙ্গীদের মাঝে হরহামেশাই দ্বন্দ্ব লেগে থাকে। মূলত সেলফিদাতাদের সঙ্গীরা সেলফিদাতাদের দ্বারা অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করায় এবং প্রচারিত ছবিগুলোতে মানুষের খারাপ মন্তব্যের কারণে অনেকটা হিংসাত্মক হয়ে ওঠেন।
এ থেকেই আমরা বলতে পারি যে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত ছবিগুলো সম্পর্কগুলোর প্রতিবন্ধক। গবেষকরা এই মতামত দেন যে, যখন একজন ব্যক্তি ক্রমাগতভাবে আকর্ষণীয় সেল্ফিগুলো পোস্ট করেন তখন তার সঙ্গী অনেকটা ভীতিকর ও হিংসাত্মক হয়ে ওঠেন। এটা দ্বন্দ্ব, প্রতারণা এমনকি সম্পর্ক বিচ্ছেদেরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
অতিমাত্রায় সেলফিপ্রদান নারসিসিজম এর লক্ষণ:
গবেষণায় দেখা যায় যে, নারসিসিস্টিক পুরুষেরা বিভিন্ন ছবির কারুকাজ করে নিজেদেরকে আরও বেশি আকর্ষণীয় ও মোহনীয় করে তুলে সেল্ফি পোস্ট করে থাকেন। নারসিসিস্টিক পুরুষেরা শুধুমাত্র ছবিই নয় এমনকি ডায়েট চার্ট সহ নিজেদের বিভিন্ন স্ট্যাটাস আপডেট করেন।
আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, স্ত্রী নারসিসিস্টিক হলে বিয়ের চার বছরের মাথায় স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ঘটতে শুরু করে (একই ব্যাপার নারসিসিস্টিক পুরুষদের বেলায় দেখা যায় নি)। এই কাপলদের বেলায় আবার বিয়ের ছয় মাসের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা যায় নি। গবেষকগণ এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, নারসিসিস্টদেরকে তাদের সঙ্গীরা সম্পর্কের শুরুর দিকে অনেক ভাল চোখে দেখে কারণ নারসিসিস্টরা নতুন সম্পর্কগুলোকে নিজেদের ইগো ভ্যালিডেশন বা অহংবোধ বৈধকরণের উপায় হিসেবে দেখে থাকেন। সময়ের সাথে সাথে নারসিসিস্টদের লো কমিটমেন্ট বা কথা দিয়ে কথা না রাখার আচরণ, আত্মকেন্দ্রিকতা এবং শত্রুভাবাপন্নতার ইত্যাদির কারণে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে দেখা যায়।
নারসিসিস্টদের সেলফি পোস্ট করাটা অন্যের সাথে সম্পর্ক তৈরির কারণ হয়ে উঠতে পারে, আবার প্রাথমিক দিকে সম্পর্ককে গভীরও করতে পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে এটা যন্ত্রণাদায়ক হতে শুরু করে যা সম্পর্কের বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যাই হোক, সেলফির সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ ও নারসিসিজম এর সম্পর্ক নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে পরবর্তী গবেষণাগুলো যাই বলুক না কেন, এই পর্যন্ত গবেষণার যা ফলাফল পাওয়া গেছে সে অনুসারে সেলফি প্রদানের সময় নিজেদের সম্পর্কগুলোর কথাও বিবেচনায় রাখা উচিৎ।
https://www.researchgate.net/publication/283730300_Instagram_Unfiltered_Exploring_Associations_of_Body_Image_Satisfaction_Instagram_Selfie_Posting_and_Negative_Romantic_Relationship_Outcomes
https://theconversation.com/facebook-stalking-your-ex-can-become-addictive-and-hurt-you-in-the-long-run-49515
– জংলী বিলাই
Leave a Reply