আমাদের সৌরজগৎ এর বাহিরে অন্য সৌরজগৎ এর গ্রহ প্রথম আবিষ্কারের পর থেকে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অনুরূপ গ্রহ খুঁজে চলেছেন। এপর্যন্ত এনিয়ে বেশ কিছু আশা জাগানো কাজ হয়েছে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার বৃদ্ধি ও সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে পৃথিবীর মত গ্রহ খুঁজে পাবার সম্ভাবনা বাড়ছে।
বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু গ্রহ খুঁজে পেলেও সেগুলোর দূরত্ব এতটাই বেশি যে, পর্যবেক্ষণ অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর হয়ে যায়।
বেলজীয় জ্যোতির্বিদগণ সম্প্রতি ৩টি সাম্ভাব্য পৃথিবীর মতো গ্রহ খুঁজে পেয়েছেন যেগুলো একটি অতিমাত্রায় ঠান্ডা বামন তারকা ট্রাপিষ্ট-১ কে (TRAPPIST-1) কেন্দ্র করে ঘুরছে। এটি আমাদের পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। গ্রহগুলোর আকৃতি নিতান্তই সাধারন, এর ব্যাস আমাদের পৃথিবী থেকে একটু বেশি। এগুলোই আমাদের খুঁজে পাওয়া প্রথম বামন নক্ষত্রের গ্রহ। এ পর্যবেক্ষণ এর ফলাফল বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী “Nature” এ প্রকাশিত হয়। এই আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল আমাদের মহাবিশ্বে নতুন ঠিকানার খোঁজ হিসেবে পাওয়া এই গ্রহগুলো আপাতভাবে কম দূরবর্তী, যেকারণে এগুলো আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য।
আমাদের খুঁজে পাওয়া অন্যান্য সাম্ভাব্য গ্রহগুলো আমাদের থেকে অনেক বেশি দূরে এবং সেগুলোর অধিকাংশই অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্রের চারদিকে ঘোরে। আর তাই সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা সাধ্যাতীত।
প্রকল্পটির পরিচালক ও মূল গবেষক লিডজ ইউনিভার্সিটির ডঃ মাইকেল গিলন বলেন “এই গ্রহগুলোর আকৃতি ও তাপমাত্রা পৃথিবী ও শুক্রের সমান যার কারণে সহজে আবহাওয়া ও ভূপৃষ্ঠের অবস্থা নির্নয় করা সম্ভব হয়েছে”। গবেষকগণের মত থেকে আমরা সহজেই গ্রহগুলোর ভূপৃষ্ঠ নিয়ে একটি পরিষ্কার ধারণা পাই।
প্রথম দর্শনে সৌরমন্ডলটি উপযোগী মনে নাও হতে পারে। ৩টির মধ্যে ২টি গ্রহ TRAPPIST-1B ও TRAPPIST-1C এর আবর্তনকাল যথাক্রমে ১.৫ ও ২.৪ বছর যা থেকে বোঝা যায় এদের কক্ষপথ এর দুরত্ব খুব বেশি নয়। তবে TRAPPIST-1D এর আবর্তনকাল প্রায় ৪.৫ বছর।
অন্যদিকে নক্ষত্রটির পৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাত্র ২৫৫০ কেলভিন (২২৭৭ ডিগ্রি সেঃ বা ৪১৩০ ডিগ্রি ফাঃ)। সুতরাং যেখানে গ্রহগুলো অগ্নিকুণ্ডের মতো অবস্থা হবার কথা। কিন্তু পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় সেখানে গ্রহগুলো অতিশয় ঠাণ্ডা। নক্ষত্রটির নিকটবর্তী দুটি গ্রহ যে পরিমাণ রেডিয়েশন পেয়ে থাকে তা আমাদের পৃথিবীতে প্রাপ্ত রেডিয়েশন থেকে ৪ গুন বেশি। অন্য আরেকটি গ্রহ যা আরও দূরে অবস্থিত সেখানে রেডিয়েশন এর মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই আরও কম। গ্রহগুলো সৌরজগৎ এর বাসযোগ্য বলয় বা গোল্ডিলক জোন এর প্রান্তে রয়েছে যেখানে পানি থাকার সম্ভবনা রয়েছে। গ্রহগুলো আদৌ কঠিন কি না তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি তবে TRAPPIST-1 ভারি মৌলে ভরপুর, যা থেকে বোঝা যায় এই গ্রহটির পরিবেশ কঠিন ভূপৃষ্ঠ তৈরী করতে সক্ষম।
গ্রহগুলোর ব্যাসার্ধ আমাদের পৃথিবীর তুলনায় যথাক্রমে ১.১১,১.৫ ও ১.১৬ গুন বেশি। অবস্থান, আয়তন এর হিসেবে বলা যায় গ্রহগুলো প্রাণ ধারণের উপযোগী। জায়গা অনুযায়ী গ্রহগুলোর তাপমাত্রার পরিসর বা রেঞ্জ পানির বাষ্প হবার তাপমাত্রা থেকে সামান্য বেশি হতে শুরু করে পানির বরফ হবার তাপমাত্রা থেকে কম।
যদিও পর্যবেক্ষণটি যুগান্তকারী কিন্তু কিছু বিষয় এখনো পরিষ্কার করে জানা সম্ভব হয়নি। যেমন গ্রহগুলোর ভর কী বা এগুলো কোন ধরনের পদার্থ দিয়ে গঠিত। কিন্তু আবিষ্কারটি নিঃসন্দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ গ্রহগুলো বিশেষ ধরনের নক্ষত্রের কাছে খুঁজে পাওয়া গেছে।
“কেন আমরা আমাদের আশেপাশের ছোট ও অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার নক্ষত্রের সৌরজগতে পৃথিবীর মত গ্রহ খুঁজছি?” এ প্রশ্নের উত্তরে ডঃ গিলনতার এক বিবৃতিতে বলেছেন “কারণটা খুব সাধারণ। বর্তমান প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ছোট নক্ষত্রের সৌরজগতে পৃথিবীর মত আকৃতির গ্রহগুলোতে আমরা কাঙ্ক্ষিত জীবন খুঁজে পেতে পারি। সুতরাং যদি আমরা মহাবিশ্বে অন্য কোথাও প্রাণ খুঁজতে চাই তাহলে এ ধরনের গ্রহগুলো দিয়েই আমাদের খোঁজা শুরু করতে হবে।”
হাবল টেলিস্কোপ গ্রহগুলো সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু তথ্য সরবরাহ করবে আর জেমস ওয়েব স্পেস টিম একটি ওয়েবসাইট তৈরী করবে যাতে সাধারন মানুষ উক্ত সৌরজগৎ ও তার গ্রহগুলো সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য সহজে জানতে পারে। এখনো উক্ত সৌরজগৎ ও তার গ্রহগুলো সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা কিন্তু বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে খুব শীঘ্রই আমরা গ্রহগুলো সম্পর্কে আরো জানতে পারব। কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত যে, আমাদের সুন্দর পৃথিবী আর অদ্বিতীয় নয়।
http://press.nature.com/?post_type=press_release&p=44701&WT.ec_id=PRESS&shunter=1458577077494
– লিংকিন ধ্রুব
Leave a Reply