সম্প্রতি ‘পার্সসোনালিটি এন্ড ইনডিভিজুয়াল ডিফারেন্স’ নামক জার্নালে সাইকোপ্যাথদের ব্যাপারে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, সাইকোপ্যাথিক প্রবণতাযুক্ত লোকদের কেউ কেউ অবিশ্বাস্য রকমের সৃজনশীল হতে পারে্ন। আপনাকে যদিও সৃজনশীল হওয়ার জন্য সাইকোপ্যাথ হতে হবে না, কিন্তু গবেষণাটি বলছে, নির্মম ও সাহসীভাবে চিন্তা করতে পারার ক্ষমতাটি নিশ্চিন্তভাবেই সাহায্য করে।
ফিলিপাইনের ডে লা সাল্লে ইউনিভার্সিটির এক দল সাইকোলজিস্ট তাদের গবেষণায় লিখেছেন,“আমরা দেখেছি, নিজের অনুভূতিকে বাঁধা না দেয়া সাইকোপ্যাথিক বোল্ডনেস বা সাহসের একটি রূপ। এটা সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব এবং সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়ার সাথে কার্যকরীভাবে সম্পর্কযুক্ত।
যদি আপনি আপনার এম্প্যাথি বা সহানূভূতিশীলতা বন্ধ করে দিতে সমর্থ হন, নিজেকে যেকোন উচ্চ আবেগতাড়িত সিধান্ত নিতে দেখেন এবং কোনও ধরণের দৃঢ় অনুশোচনা অনুভব করতে না দেখেন তাহলে সম্ভবত আপনি একজন সাইকোপ্যাথ। এই সাইকোপ্যাথি হল পারসোনালিটি ট্রেইট এর ডার্ক ট্রায়াড তিনটির একটি। অন্য দুটি হচ্ছে মাচিয়াভেলিয়ানিজম (নিজের উদ্দেশ্য সাধনে অন্যকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা)এবং নার্সিসিজম(নিজের মধ্যে একান্ত অভিনিবিষ্টতা)।
প্রকৃতপক্ষে কিছু সংখ্যক গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, আপনি যদি ন্যায্যভাবে মাচিয়াভেলিয়ান হন তাবে আপনার জন্য সাইকোপ্যাথ হওয়া বেশ উপকারী হতে পারে। অবশ্য এই নতুন গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, আনইনহিবিটেড সাইকোপ্যাথ (নিজের অনুভূতিকে দমন করেন না এমন সাইকোপ্যাথ) হওয়াটা ব্যক্তির সৃষ্টিশীল বুদ্ধিকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
প্রথমে ৫৩০ জন অংশগ্রহণকারীর উপর একটি পরীক্ষা নিয়ে দেখা হয় তারা ডার্ক ট্রায়াড স্পেক্ট্রামে কত স্কোর করে। যারা এই পরীক্ষায় বেশি স্কোর করেছে তারা সকলেই এই ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন যে, ‘প্রতিশোধ গ্রহণ দ্রুত ও কুৎসিত হওয়া উচিৎ’।
দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহনকারীদের ১০টি ভিন্ন সৃষ্টিশীল ক্ষেত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয় যেমন সাইন্টিফিক ডিসকভারি, রন্ধন শিল্প, ভিজুয়াল আর্ট, নাচ ইত্যাদি। এর পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন অর্জনের সাথে মিলে যায় এমন বাক্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। এই বাক্যগুলোর মধ্যে “আমি এই জায়গা থেকে শিক্ষা পেয়েছি” এধরণের ছোট অর্জন থেকে শুরু করে “আমার কাজটি ন্যাশনাল পাবলিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে” এধরণের বড় অর্জনের বাক্য ছিল।
এই দ্বিতীয় ধাপের ক্রিয়েটিভ এচিভমেন্ট কোয়েশ্চেনারির ডেটার সাথে ডার্ক ট্রায়াড টেস্টের স্কোরের তুলনা করা হয়। নারসিসিজমকে অনেকাংশেই এই ক্রিয়েটিভ এচিভমেন্ট কোয়েশ্চেনারি বা CAQ(Creative Achievement Queationnaire)এর ফলাফলের সাথে সম্পর্কিত করা যায়, যদিও লেখকের অন্যান্য স্টাডির কিছু রেফারেন্স দিয়েছেন যেখানে বলা হয়েছে নারসিসিস্টরা তাদের অর্জনগুলো বাড়িয়ে বলে, কখনও মিথ্যারও আশ্রয় নেয়।
সাইকোপ্যাথদেরকেও খুব ভালভাবেই CAQ এর ফলাফলের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা গেছে। নারসিসিস্টদের তুলনায় সাইকোপ্যাথরা কম মিথ্যা বলেন আর তাই তাদের এই সম্পর্কের সত্যতাটি বেশি দৃঢ়।
২৫০ জন কলেজ শিক্ষার্থীকে নিয়েও একই পরিক্ষা করা হয়েছিল, তবে এক্ষেত্রে তাদের কি ধরণের সাইকোপ্যাথেটিক বৈশিষ্ট্য আছে সেটা জানার জন্য এই গবেষণায় আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছিল। যাদের উচ্চ CAQ স্কোর ছিল তাদেরকে সাহসী হতে দেখা গেছে, তারা খুব কম ভয় পান, কম স্ট্রেস নেন এবং আবেগপ্রকাশেও বাঁধা দেন না, যার অর্থ হল তাদের আত্ম-নিয়ন্ত্রনে সমস্যা আছে এবং তারা বারবার সামাজিক নিয়ম নীতিকে অবহেলা করেন।
সুতরাং আপনি যদি জীবনে আরো সৃজনশীল ও সাহসী হতে চান তাহলে হয়তো ভেজালহীন সাইকোপ্যাথি আপনার সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে। মোটের উপর এই গবেষণাটি সাক্ষ্যপ্রমাণ দিচ্ছে যে সাইকোপ্যাথদেরকে নগন্য, গুরুত্বহীন বা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করাটা ঠিক নয়।
http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0191886916302355
– রঙ্গিন প্রজাপতি
Leave a Reply