এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল লাইফ বা এলিয়েন বলতে কিছু আছে কিনা তা বিজ্ঞান জগতের একটি অন্যতম বিতর্কিত বিষয়। যখন আমরা ভাবি, ‘আমরা কি একা?’ তখন কিভাবে আমাদের জীবন শুরু হল, আর এই বিশাল মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান এবং কাজ কী এটা ভেবে আমাদেরকে অবাক হতে হয়। সম্প্রতি এস্ট্রোবায়োলজি জার্নালে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কোন সভ্যতার অস্তিত্ব কোনদিন ছিল কিনা এটা হিসাব করার জন্য সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত বিভিন্ন এক্সোপ্লানেটকে (সৌরজগতের বাহিরের গ্রহ) ব্যবহার করা হয়। গবেষণাপত্রটির লেখকের পেসিমিস্টিক লিমিট বা নৈরাশ্যবাদী সীমা অনুযায়ী মানুষ এই মহাবিশ্বে প্রযুক্তিগতভাবে উৎকর্ষ একমাত্র প্রাণী (অর্থাৎ অন্যকোন উন্নত প্রাণী থাকবে না) হবে যদি একটি গ্রহে প্রযুক্তিগতভাবে উৎকর্ষ প্রাণী থাকার সম্ভাবনা ১০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ভাগের একভাগ হয়।
গবেষণাটির লেখক এডাম ফ্র্যাংক বলেন, “১০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন ভাগের এক ভাগ অনেক ছোট একটি সম্ভাবনা। কিন্তু আমার কাছে এই সম্ভাবনাটাই আমাদের পূর্বে যে কোন সময়ে বুদ্ধিমান এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনকারী প্রজাতির বিবর্তন নির্দেশ করে। আমাদের এই গবেষণাটির আগে, আপনি যদি কোন বাসযোগ্য গ্রহে উন্নত প্রযুক্তি তৈরিতে সক্ষম কোন প্রজাতির বিবর্তনের সম্ভাবনা এক ট্রিলিয়ন ভাগেরও একভাগ ধরতেন তাহলেও আপনাকে পেসিমিস্ট বা নৈরাশ্যবাদী হিসেবে বিবেচনা করা হত। কিন্তু আমাদের এই গবেষণাটি বলছে, এত ছোট সম্ভাবনা অনুমান করার পরও এক ট্রিলিয়ন ভাগের একভাগ সম্ভাবনা নির্দেশ করবে, এই পৃথিবীতে মানুষের সাথে যা ঘটেছে আমাদের মহাবিশ্বের গোটা কসমিক হিস্টোরিতে তা ১০ বিলিয়নবার ঘটেছে (অর্থাৎ এই গবেষণা অনুযায়ী উন্নত প্রযুক্তির প্রাণী থাকার সম্ভাবনা ১ ট্রিলিয়ন ভাগের একভাগ হলে মহাবিশ্বের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এরকম ১০ বিলিয়ন ক্ষেত্রে উন্নত প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে। এক্ষেত্রে ১ ট্রিলিয়ন ও ১০ বিলিয়ন এর গুণফল হল পেসিমিস্টিক লিমিট ১০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন)!”।
এই প্রোবাবিলিটি বা সম্ভাবনা তৈরি করা হয়েছে বিখ্যাত ড্রেকের সমীকরণ থেকে। ড্রেকের সমীকরণটি ইনটেলিজেন্ট লাইফের থাকতে পারে কি পারে না এব্যাপারে একটি সম্ভাবনাগত সমাধান দেয়ার চেষ্টা করে। এই সমীকরণটিতে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে সভ্যতার সংখ্যা পরিমাপ করার জন্য সাতটি প্রোবাবিলিস্টিক প্যারামিটার ব্যাবহার করা হয়। এই সমীকরণটির উদ্দেশ্য কখনই সঠিক সংখ্যাটি বের করা ছিল না, বরং ছিল এলিয়েন লাইফ সম্পর্কিত ডিবেটটির আরও উৎকর্ষসাধন করা।
এই গবেষণাটিতে ফ্র্যাংক ও তার সহকর্মী উডরাফ সুলিভান ড্রেকের ইকুয়েশনটিকে অনেকটাই সরল করেছেন। এক্ষেত্রে কোণ নির্দিষ্ট আয়তনে উন্নত সভ্যতার সংখ্যা হবে সেই আয়তনের বাসযোগ্য গ্রহের সংখ্যা ও সেই গ্রহগুলোর একটিতে উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করা কোন প্রাণীর থাকার সম্ভাবনা। সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত বিভিন্ন এক্সোপ্লানেটকে নিয়ে হিসাব নিকাশ করে তারা এই সম্ভাবনা বা পেসিমিস্টিক লিমিটটি বের করতে সক্ষম হয়েছেন।
ফ্র্যাংক বলেন, “একটি মৌলিক দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রশ্ন করা যায়, ‘এটা কি আগে কোথাও ঘটেছিল?’। আমরাই এই প্রশ্নের প্রথম একটি ইম্পিরিকাল বা পর্যবেক্ষণগত উত্তর দিতে সক্ষম হয়েছি। আর বিষ্ময়করভাবে উত্তরটি হল, সম্ভবত আমাদের স্থান ও কালই একমাত্র স্থান ও কাল নয় যেখানে কোন উন্নত সভ্যতার বিবর্তন ঘটেছে”।
http://online.liebertpub.com/doi/pdfplus/10.1089/ast.2015.1418
– ভেলোসিটি হেড
Leave a Reply