না, ওয়াগনারের বেলারুশ থেকে ইউক্রেন আক্রমণ করার সম্ভাবনা নেই, বিশেষ করে যখন প্রিগোজিন ও ওয়াগনার রাশিয়ায়!

প্রিগোজিন ও ওয়াগনার রাশিয়ায়

আগেও লিখেছি, আবারও লিখছি। প্রিগোজিন ২৫ হাজার সেনা নিয়ে রাশিয়ায় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। তার হাতে এই সৈন্যরা আছে। আর তাছাড়া বেলারুশে ওয়াগনারের অনেক সৈন্য থেকে গেছে যাদেরকে বেলারুশে নির্বাসিত হওয়া, রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বা নিজ দেশে ফায়ার যাবার অপশন দেয়া হয়। এখন যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থা ভালোনা, আর রুশ সেনাদের বেতনও তুলনামূলক কম। কাজেই বেলারুশে প্রিগোজিনের কাছে যাওয়াই তাদের জন্য ভাল অপশন ছিল, আর তাই হয়ে থাকবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, পুতিন কোনভাবে পুতিনের চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন, আর তাই তিনি বেলারুশে নেই!

ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইভগেনি প্রিগোজিন রাশিয়ায় ফিরে এসেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে বিদ্রোহের চেষ্টার পর থেকে ওয়াগনার বসের অবস্থান অজানা ছিল। মস্কোতে ওয়াগনার গ্রুপের কথিত অভ্যুত্থান থামাতে রাজি হওয়ার পর তিনি বেলারুশে চলে যেতে সম্মত হন। কেউ কেউ হয়তো ধরে নিয়েছেন যে, সেখানেই তিনি চলে গেছেন। কিন্তু ৪ঠা জুলাই তিনি রাশিয়ায় ফিরে এসেছেন বলে জানা গেছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ৪ জুলাই সেন্ট পিটার্সবার্গে পৌঁছান এবং তল্লাশির পরে তার কাছ থেকে জব্দ করা সমস্ত অস্ত্র ফেরত দেওয়া হয়। সেন্ট পিটার্সবার্গ ও লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের জন্য এফএসবির ডিরেক্টরেট ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এরপর প্রিগোজিন আর ফিরে যাননি। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো নিশ্চিত করেছেন যে প্রিগোজিন এখনও রাশিয়ায় রয়েছেন, বেলারুশের ভূখণ্ডে নেই। বেলারুশের একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল লুকাশেঙ্কোকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘প্রিগোজিন বর্তমানে সেন্ট পিটার্সবার্গে রয়েছেন।” ওয়াগনার কোথায় সেই উত্তরে তিনি বলেছেন, “এটি একটি রাশিয়ান সংস্থা তাই প্রশ্নটি স্পষ্টতই আমার জন্য নয়। আমি যতদূর জানতে পেরেছি তার যোদ্ধারা তাদের ক্যাম্পে রয়েছে।” যদিও তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, ওয়াগনারের প্রতি বেলারুশে তার কিছু যোদ্ধা মোতায়েনের প্রস্তাব এখনও বহাল রয়েছে। এমনকি তিনি তাদের কিছু পুরানো সোভিয়েত সামরিক স্থাপনাও অফার করেছেন।

পরে, রাশিয়ান সরকারকে রাশিয়ায় প্রিগোজিনের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। পুতিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ উত্তরে বলেন, ‘আমরা তার গতিবিধি অনুসরণ করি না। তা করার কোনো উপায় বা ইচ্ছা আমাদের নেই।” এটা খুবই অদ্ভুত যে, এক সপ্তাহ আগে যে ব্যক্তি রুশ সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিল, তার অবস্থান নিয়ে রুশ সরকার মাথা ঘামায় না। ধারণা করা হচ্ছে, পুতিনের সঙ্গে প্রেগোসিনের সম্পর্ক ছিন্ন হবে। প্রেগোসিন সম্ভবত পুতিনকে ক্ষমা করার জন্য এবং তার সারোগেটদের মাধ্যমে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে তিনি কখনই অবিশ্বস্ত ছিলেন না। হয়তো তিনি বলছেন, “সম্ভবত আমি কিছুটা অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি, সামনের সমস্ত ক্রিয়াকলাপ দ্বারা অত্যধিক উত্তেজিত হয়েছি, কখনই এটি আপনার এবং আপনার শক্তির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা উচিত নয়।” প্রিগোজিনের পুতিনের উপর কিছু অত্যন্ত ক্ষতিকারক লেভারেজ থেকে থাকতে পারে, যার ফলে তিনি পুতিনের সাথে তার চুক্তিটি এত স্পষ্টভাবে উপেক্ষা করতে পারেন।যাই

যাই হোক, এফএসবি ৬ জুলাই সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রিগোজিনের বিশাল এস্টেটে অভিযান চালিয়েছিল এবং কোনওভাবে ফুটেজটি জনসাধারণের কাছে ফাঁস হয়েছিল। তারা নগদ ১১১ মিলিয়ন ডলার, অস্ত্র, ছদ্মবেশ এবং প্রেগোসিনের কাছে থাকা একটি জাল পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে। সব মিলে এরা প্রিগোজিনের সেন্ট পিটার্সবার্গ প্রাসাদে অভিযান চালিয়ে জাল পাসপোর্ট, বন্দুক এবং আগ্নেয়াস্ত্র, একটি স্লেজহ্যামার, সোনার বার, একটি স্টাফড অ্যালিগেটর এবং তার শত্রুদের মাথা দেখানো একটি ফ্রেমযুক্ত ছবি, উইগ এবং ছদ্মবেশ পেয়েছে। সম্ভবত প্রিগোজিনকে অপমান করার চেষ্টা করার জন্য এই ছবিগুলি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করা হয়।

জানা গেছে, এর সবগুলোই প্রিগোজিনকে ফেরত দেওয়া হয়েছে, অন্তত এমনটাই দাবি করছে রুশ গণমাধ্যম। কিন্তু অন্য খবর দাবি করে যে তার জিনিসপত্র চুরি হয়েছিল এবং প্রিগোজিনের কাছে প্রমাণ রয়েছে। প্রিগোজিন দাবি করেছেন যে রাশিয়ান নিরাপত্তা বাহিনী তার বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র এবং অর্থ চুরি করেছে এবং তিনি গোপন নেটওয়ার্ক ক্যামেরায় চুরিগুলি রেকর্ড করেছেন। তিনি শীঘ্রই ফুটেজটি প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তার বাড়িতে সোনার বার, নগদ টাকার স্তূপ এবং উইগের চমৎকার সংগ্রহ সহ অনেক মূল্যবান জিনিস ছিল। তবে সূত্রের খবর হল প্রিগোজিনের সম্পদের কিছু অংশ এই অভিযানকারীরা আত্মসাৎ করেছে। সূত্র বলছে, অদূর ভবিষ্যতে প্রিগোজিন ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছে যে তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি তল্লাশির সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মূল্যবান জিনিসপত্র এবং অর্থ চুরি করেছে। এটি গোপন নজরদারি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে, যে ক্যামেরাটি তাদের নজরে আসেনি। রাশিয়ান পুলিশের অনুসন্ধান করা সম্পত্তি থেকে চুরি করার ব্যাপারটা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু যে বাড়িতে অনুসন্ধান করা হয়েছে তা প্রিগোজিনের বলেই ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং। মনে হচ্ছে প্রিগোজিন এফএসবির কিছু গুরুতর দুর্নীতি উন্মোচন করতে চলেছে।

এফএসবি’র দুর্নীতির কথা বলতে গেলে জেনারেল সুরোভিকিন এর কথাও বলতে হয় যিনি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন এবং এখন তিনি তার স্ত্রীর জন্মদিন মিস করেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ব্যক্তিগতভাবে এই তদন্তের তদারকি করছেন বলে জানা গেছে। তার ওপর প্রিগোজিনের অভ্যুত্থানে সহায়তা করা ও ইউক্রেইনীয়  অপারেটিভদের সম্পর্ক নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। টেলিগ্রাম সূত্রে জানা গেছে তাকে আটক রাখা হয়েছে। তার অধীনস্তদের নিয়েও তদন্ত করা হচ্ছে।

এছাড়াও, মনে হচ্ছে না যে ওয়াগনার বাহিনী এখনও রাশিয়ার বাইরে রয়েছে। প্রিগোজিনের সাথে পুতিনের চুক্তি অনুযায়ী ওয়াগনার বাহিনীর কাছে তিনটি বিকল্প ছিল: রুশ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি, বেলারুশে ফিরে যাওয়া, বা দেশে ফিরে যাওয়া। তবে কিছু প্রতিবেদন অনুসারে, মনে হচ্ছে এই চুক্তি সত্ত্বেও কিছু ওয়াগনার অফিস স্বাভাবিক ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ওয়াগনার বাহিনী রাশিয়ায় সক্রিয়ভাবে নিয়োগ অব্যাহত রেখেছে। রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা স্পেটসনাজের সঙ্গে শেয়ার করা মোলকিনো সামরিক ঘাঁটি ওয়াগনারের ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত। সেরেনার একজন রাশিয়ান সাংবাদিক ওয়াগনার বাহিনীতে  অন্তর্ভুক্ত হতে চাইবার অভিনয় করে ওয়াগনার বাহিনীর কাছে কল দিয়েছিল। এখানে ওয়াগনার রিক্রুটার তাকে ওয়াগনার রিক্রুটমেন্ট সংক্রান্ত তথ্য দেয়। এক পর্যায়ে সাংবাদিক বলেন, “আমি শুধু দুটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই। আমি বলতে চাচ্ছি, আমি পুতিনকে কিছু বলতে দেখছি যেখানে তিনি বলছেন, ওয়াগনার আসলে রাষ্ট্রদ্রোহী।” উত্তরে ওয়াগনার রিক্রুটার বলছেন, ” এখানে সবকিছু ঠিক আছে, … আমাদের পেছনে কেউ নেই, আর আমরা যদি রাষ্ট্রদ্রোহী হতাম তাহলে রাশিয়ায় থাকতাম না। আর কোনো প্রশ্ন?’ সাংবাদিক বলেন, “আমি জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম, তারা বলছে যে সবাইকে বেলারুশে যেতে হবে এবং কেউ আর ক্রাসনোডারে থাকবে না, এটিও কি অসত্য?” রিক্রুটার বলছেন, “যা কিছু করা হয়েছে তা ভালোর জন্যই করা হয়েছে। আপনি সব কিছু জানেন না, টেলিভিশনের তথ্য সবসময় সত্য হয় না। এগুলো বিভ্রান্তিকর হতে পারে। সুতরাং বেলারুশ না, সবকিছু ঠিক আছে, এটি এখনও মোলকিনোতে রয়েছে। আমাদের ঘাঁটি ক্রাসনান্দার অঞ্চলের ছোট শহর মোলকিনোতে।”

সোমবারে ওয়াগনার তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি বিজ্ঞাপন দেয় যার মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক সাংবাদিকের সাথে কথা বলার সময়ে একজন ওয়াগনার নিয়োগকারী স্বীকার করেছেন যে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি কঠিন হয়ে পড়েছে তবে ওয়াগনার এখনও প্রধানত রাশিয়াভিত্তিকই আছে, এবং তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তাদের নিয়মিত রাশিয়ান সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবারও কোনও পরিকল্পনা নেই। এদিকে বেলারুশে মিনস্ক থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ওসিপোভিচি শহরে ওয়াগনারের একটি কন্টিনজেন্ট থাকলেও সেখানে খুব বেশি সৈন্য আছে বলে মনে হচ্ছেনা।

ওয়াগনারের বেলারুশ থেকে ইউক্রেন আক্রমণ করার সম্ভাবনা নেই

ওয়াগনারের নাটকীয় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা আকস্মিকভাবে শেষ হওয়ার পরে, ক্রেমলিন দাবি করেছিল যে ওয়াগনার সৈন্যদের কাছে দুটি বিকল্প ছিল: হয় নিয়মিত রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া, আর তাদের নেতা প্রিগোজিন বেলারুশে প্রবেশ করলে তাকে অনুসরণ করা। এটি পোল্যান্ড এবং ইউক্রেন উভয় দেশেই কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। সোমবার পোল্যান্ড বেলারুশ সীমান্তে সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশ মোতায়েন করেছে এবং ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা গত মাসে ইকোনমিস্টকে বলেছিলেন যে, বেলারুশ থেকে ওয়াগনার নেতৃত্বাধীন আক্রমণের প্রত্যাশায় তারা উত্তরে পুনরায় সৈন্য মোতায়েন করেছে।

এখন বেলারুশ থেকে ইউক্রেনে আক্রমণ দ্বারা দুটো জিনিস বোঝাতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে ইন্টারনেটের এক কোণে পাওয়া একটি কন্সপিরেসি থিওরি – যা অনুসারে গত মাসের অভ্যুত্থানটি আসলে রাশিয়া এবং ক্রেমলিন কর্তৃক ইউক্রেনের নজরে না এনেই বেলারুশে ওয়াগনার সৈন্য পুনরায় মোতায়েন করার জন্য একটি পদক্ষেপ ছিল, এবং ইউক্রেন অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা উদযাপন করার সময় উত্তর ইউক্রেনে একটি সম্পূর্ণ নতুন ফ্রন্ট চালু করা হয়েছিল। এটি সত্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম, কেন তা নিয়ে আগেই লিখেছি। তাছাড়া পুতিন স্পষ্টতই একজন মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট নন, আর তার ইনসেনটিভগুলোও ঠিক মতো কাজ করছে না। পুতিন গত ১৮ মাস ধরে রাশিয়ার জনগণের কাছ থেকে যুদ্ধকে আড়াল করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, যে কারণে তিনি এটিকে একটি বিশেষ সামরিক অভিযান বলে অভিহিত করেছেন এবং রাশিয়াকে একটি সাধারণ সমাবেশে যেতে বাধা দিয়েছেন। তাহলে কেন তিনি মস্কোর দিকে একটি পাবলিক মোটরওয়েতে ভারী সাঁজোয়া বহর নিয়ে অভ্যুত্থানের নাটক সাজাবেন? যাতে সাধারণ রাশিয়ানদের কাছে যুদ্ধটিকে আগের চেয়ে আরও বেশি বাস্তব বলে মনে হয়? যা তিনি এতদিন ধরে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আসছেন?

আর এর দ্বারা দ্বিতীয় যে বিষয়টি এখানে বোঝানো হতে পারে, তা হচ্ছে, ওয়াগনার স্বাধীনভাবে বেলারুশ থেকে ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সম্ভবত ইউক্রেন এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন এবং এজন্যই তারা উত্তরে বেশি করে সৈন্য মোতায়েন করেছে। এটির সম্ভাবনা প্রথমটির চেয়ে বেশি, তবুও তিনটি কারণে একে অসম্ভব বলে মনে হয় –

প্রথমত, বেলারুশে ওয়াগনারের কাছে সত্যিকারের আক্রমণ চালানোর জন্য যথেষ্ট ফায়ার পাওয়ার রয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ওয়াগনারের সেনারা কেন রুশ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে চাইবে না তা বলা হয়েছে। আর তার মানে প্রিগোজিনের হাতে ২৫ হাজারেরও বেশি সেনা আছে। আর এত বেশি সেনা ইউক্রেইনের জন্য আসলেই বিপজ্জনক হতে পারত, কেননা ২৫হাজার সেনাকে ব্যবহার করে একটি ফুল অফেন্সিভ মঞ্চস্থ করা সম্ভব, বিশেষ করে যদি বেলারুশ তাদেরকে সাপোর্ট করে। কিন্তু যেমনটা শুরুতেই বলা হলো, প্রিগোজিন ও ওয়াগনার রাশিয়ায়। অন্যদিকে বেলারুশে ওসিপোভিচি শহরে ওয়াগনারের একটি কন্টিনজেন্ট থাকলেও সেখানে খুব বেশি সৈন্য আছে বলে মনে হচ্ছেনা। আর রিপোর্টগুলো বলছে, চুক্তির অংশ হিসাবে ওয়াগনার সৈন্যদেরকে তাদের সমস্ত ভারী অস্ত্র ত্যাগ করতে হয়েছিল। সুতরাং এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে বেলারুশে একটি নতুন ফ্রন্ট খোলার জন্য পর্যাপ্ত সৈন্য রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, যে কোনও আক্রমণের জন্য বেলারুশের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সুস্পষ্ট অনুমোদোনের প্রয়োজন হবে এবং এটি অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লুকাশেঙ্কোকে একটি সরু সুতা দিয়ে হাঁটতে হয়েছে। যদিও তিনি পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং অনেক দিক থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির উপর নির্ভরশীল, তবুও তিনি জানেন যে ইউক্রেন আক্রমণের জন্য বেলারুশীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় সমর্থন নেই এবং সেনা সমাবেশ করার যে কোনও প্রচেষ্টা বেলারুশে তার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। এমনকি যুদ্ধের শুরুতে এমন খবর পাওয়া গিয়েছিল যে লুকাশেঙ্কো ইউক্রেনে সৈন্য প্রেরণের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বেলারুশীয় সামরিক বাহিনীর হর্তাকর্তারা এতে অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন। পুতিন স্পষ্টতই লুকাশেঙ্কোকে ইউক্রেনে জড়িত হওয়ার জন্য একাধিকবার চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তবে লজিস্টিকসে কিছুটা সহায়তা করলেও লুকাশেঙ্কো এখন পর্যন্ত বেলারুশের সৈন্য মোতায়েনের বিরোধিতা করেছেন। যদি লুকাশেঙ্কো পুতিনকে না বলে থাকেন, তবে তিনি প্রোগোজিনকে হ্যাঁ বলবেন – এই সম্ভাবনা খুব কম, এবং লুকাশেঙ্কোর সম্মতি বা সমর্থন ছাড়া বেলারুশ থেকে যে কোনও ওয়াগনার আক্রমণ ঘটানো সত্যিই কঠিন হবে।

তৃতীয়ত, এ ধরনের ঘটনা আমরা আগেও দেখেছি। কয়েক মাস পর পর বেলারুশ থেকে একটি নতুন আক্রমণের গুজব শোনা যেত। উদাহরণস্বরূপ, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেলারুশের সৈন্যরা ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হয়, যার ফলে পূর্বে রাশিয়ার পর ইউক্রেইনের উত্তরেও যুদ্ধের একটি দ্বিতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনা সম্পর্কে কিয়েভে কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। গত মার্চে লুকাশেঙ্কো বলেছিলেন, ইউক্রেনের উসকানির জবাব দিতে হবে তার দেশকে। জুলাই মাসে লুকাশেঙ্কো দাবি করেছিলেন যে ইউক্রেন বেলারুশের সামরিক চৌকিগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং ন্যাটো বেলারুশের সীমান্ত অঞ্চলগুলি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে, আর এজন্য তিনি ইউক্রেনের সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করেছেন বলেও উল্লেখ করেন। আর অক্টোবরে, তিনি বেলারুশীয় এবং রাশিয়ান সৈন্যদের মধ্যে একটি যৌথ আঞ্চলিক বাহিনী বা আরজিএফ গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু একবারও কিছুই হয়নি। কারণ, যেটা বললাম, লুকাশেঙ্কো জানেন যে বেলারুশের অভ্যন্তরে ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের জন্য তেমন সমর্থন নেই, আর সেই সাথে বেলারুশ থেকে ইউক্রেইনে আক্রমণও সত্যিই কঠিন হবে। ইউক্রেনের মানচিত্র দেখলে মনে হতেই পারে যে, বেলারুশ থেকে ইউক্রেইনে আক্রমণ করাটা এখন খুবই দুর্দান্ত  একটা আইডিয়া। একদিকে ইউক্রেইন পূর্বে ও দক্ষিণে রুশ বাহিনী সামলাতে ব্যস্ত, অন্যদিকে বেলারুশের বোর্ডের থেকে কিভে পৌঁছতে নিপার নদী থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার অগ্রসর হতে হবে। কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। বেলারুশ-ইউক্রেনীয় সীমান্ত বরাবর ভূখণ্ডটি আসলে একটি ঘন জলাভূমি যেখানে প্রচুর জল এবং খুব কম রাস্তা রয়েছে। আক্রমণাত্মক অভিযান চালানোর জন্য এটি একটি ভয়ঙ্কর জায়গা, এবং ইউক্রেন গত কয়েক মাস ধরে ড্রোন দিয়ে অঞ্চলটি পর্যবেক্ষণ করছে, যার অর্থ কোনও আক্রমণকারী বাহিনী এই পথ দিয়ে কোনোরকম আকস্মিক আক্রমণও করতে পারবে না।

সর্বোপরি, বেলারুশ থেকে একটি নতুন আক্রমণ একেবারেই অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে যখন ওয়াগনার সৈন্যদের বেশিরভাগই এখনও দৃশ্যত রাশিয়া থেকে কাজ করছে।

তথ্যসূত্র

1 – https://www.economist.com/europe/2023/06/28/can-ukraine-capitalise-on-chaos-in-russia
2 – https://www.ft.com/content/68b98279-7904-4ffd-84b2-07fda79755f0
3 – https://t.me/ministry_of_defense_ua/631
4 – https://theconversation.com/ukraine-the-complex-calculations-that-will-decide-whether-belarus-enters-the-conflict-on-russias-side-179816
5 – https://tass.com/world/1474927
6 – https://www.aljazeera.com/news/2022/7/3/lukashenko-says-ukraine-fired-missiles-at-belarus-military-posts
7 – https://theconversation.com/ukraine-war-fears-that-belarus-might-invade-on-russias-side-are-growing-185416
8 – https://www.reuters.com/world/europe/ukrainian-swamps-make-attack-belarus-unlikely-now-2023-01-12/
9 – https://www.bbc.co.uk/news/world-europe-66118007
10 – https://metro.co.uk/2023/07/06/wagner-chief-yevgeny-prigozhin-pictured-in-wigs-after-palace-raided-19076934/

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.