যুক্তরাষ্ট্রের একটি বায়োটেক কোম্পানি বায়োকার্ক ইনকরপোরেশন ২০টি ব্রেইন ডেড রোগী নিয়ে একটি অতি বিতর্কিত গবেষণা করার নৈতিক অনুমতি পেয়েছে। অনুমতি প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ইনস্টিটিউশনাল রিভিউ বোর্ড। পরের বছর থেকে গবেষকগণ এদের মস্তিষ্ককে রিস্টার্ট বা পুনরায় চালু করার জন্য নার্ভাস সিস্টেম বা স্নায়ুতন্ত্রকে স্টিমুলেট করার পরিকল্পনা করেছেন। বায়োকার্ক (Bioquark Inc.) নামের এই কোম্পানিটি আশা করছে এই রিএনিমা (ReAnima) প্রোজেক্টে তাদের অংশগ্রহণ মানুষকে আংশিকভাবে মৃত্যু থেকে ফিরিয়ে আনা যায় কিনা তা উদঘাটন করতে সাহায্য করবে।
এক্ষেত্রে এটা জেনে রাখা প্রয়োজন, এই প্রচেষ্টাটি সত্যিকার অর্থে কতখানি বাস্তবসম্মত সেই বিষয়ে তেমন কোন সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। কিন্তু গবেষকদের এই প্যানেলে বেশ কয়েকজন দক্ষ গবেষক আছেন যাদের মধ্যে একজন হলেন ডঃ ক্যালিক্সটো মাকাডো। তিনি একজন বিখ্যাত নিউরোলজিকাল রিসার্চার এবং আমেরিকান একাডেমি অব নিউরোলজির একজন সদস্য। তিনি ব্রেইন ডেথ নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছেন।
দলটি অংশগ্রহণকারীদের উপর অনেকগুলো থেরাপির কম্বিনেশন প্রয়োগ করে পরীক্ষা করবেন। এইসব অংশগ্রহণকারীদেরকে মেডিকেলি ব্রেইন ডেড বলে সার্টিফাই করা হয়েছে এবং কিছু লাইফ সাপোর্ট মেশিন দিয়েই এদেরকে পচনের হাত থেকে বাঁচানো হচ্ছে। মস্তিষ্কে স্টেম সেল ইঞ্জেক্ট করা, স্পাইনাল কর্ডে উপকারী কেমিকেল প্রয়োগ করে এবং নার্ভ স্টিমুলেশন টেকনিক ব্যাবহার করে মানুষকে কোমা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এই টেকনিকগুলোকে এখন এই ব্রেইন ডেডদের উপর প্রয়োগ করা হবে।
প্রতিটি থেরাপি প্রয়োগ করে গবেষকদের দলটি অংশগ্রহণকারীদের নিউরোলজিকাল রিয়েকটিভেশন বা স্নায়ুর পুনরায় সক্রিয়করণ হচ্ছে কিনা দেখার জন্য কয়েক মাস ধরে তাদের ব্রেইন একটিভিটি লক্ষ্য করবেন। এক্ষেত্রে তাদের ফোকাস হবে আপার স্পাইনাল কর্ড। এটা ব্রেইনস্ট্রিমের সবচেয়ে নিচের অংশ এবং ব্যক্তির কার্ডিওরেস্পিরেটরি ফাংশন বা শ্বসনিক ক্রিয়াকলাপগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এই ক্রিয়াকলাপগুলো হল শ্বাসপ্রস্বাস এবং হৃদস্পন্দন যেগুলো নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বায়োকার্ক ইনকরপোরেশনের সি.ই.ও. ইরা প্যাস্টর বলেন, “এরকম জটিল উদ্যোগটিকে বোঝার জন্য আমরা বায়োলজিক রিজেনারেটিভ মেডিসিন টুলগুলোকে বর্তমান সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র স্টিমুলেট করার জন্য প্রয়োজনীয় মেডিকেল যন্ত্রগুলোর সাথে একীভূত করছি। আশা করছি আমরা দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই ফলাফল দেখতে পারব”।
আমাদের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রটি আসলে একটি বায়োইলেক্ট্রোকেমিকেল অঙ্গ। এখানে অঙ্গটি নিউরোট্রান্সমিটার নামে শরীরের ভেতরে বায়োলজিকালি তৈরি হওয়া একটি রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে যা সারা শরীরে ইলেক্ট্রিকাল সিগনাল প্রেরণ করে। কিন্তু গবেষকদের দলটিকে শুধুমাত্র ইলেক্ট্রিক কারেন্ট দিয়ে নিউরনগুলোকে স্টিমুলেট করলেই চলবে না। কোমায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও নিউরনগুলো ইলেক্ট্রিক স্টিমুলেশনে সারা দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু ব্রেইন ডেথের পর নিউরনগুলো ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। সুতরাং যেকোন রকম ‘রেজারেকশন’ বা ‘পুনর্জন্মের’ জন্য এই ব্রেইন দেডদের মাঝে নিউরনগুলোকে পুনর্জীবিত করতে হবে।
আর সেই কারণেই স্টেম সেলের ব্যবহার। স্টেম সেল হল আমাদের শরীরের সবচেয়ে প্রাথমিক কোষ যা থেকে যেকোন প্রকার কোষ তৈরি হতে পারে। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত হৃদপিণ্ড, অগ্নাশয়, চোখ এবং এমনকি মস্তিষ্ককে পুনর্জীবিত করার ক্ষেত্রে স্টেমসেলের ব্যবহার যথেষ্ট অগ্রগতি দেখিয়েছে, কিন্তু যেকোন হারিয়ে যাওয়া কোষকে(ক্ষয়ের কারণে) স্টেমসেল দিয়ে পুনরায় তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু করার আগে গবেষকদেরকে আরও অনেক দূর যেতে হবে।
ট্রায়ালগুলো শুরু হবে ভারতের উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপুরের অনুপম হসপিটালে। এই ধাপে ব্রেইন ডেডদেরকে বিভিন্ন পেপটাইডের মিশ্রণ দেয়া হবে। এই মিশ্রণ নিউরোট্রান্সমিটার এর মত কাজ করতে পারে। এদের সাথে দুই সপ্তাহ পরপর স্টেমসেলও ইনজেক্ট করা হবে।
ইরা প্যাস্টর জানান, “এটা একটা দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা যেখানে রোগীর পূর্ণ সুস্থতা কেবলই একটি সম্ভাবনা। কিন্তু অনুপম হসপিটালতির প্রথম গবেষণাটির ফোকাস সেটা নয়। যদিও এই গবেষণাটি আমাদের দূড়ান্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে”।
http://clinicaltrials.gov/ct2/show/NCT02742857?ter
http://www.telegraph.co.uk/science/2016/05/03/dead-could-be-brought-back-to-life-in-groundbreaking-project/
http://reanima.tech/about/
– ভেলোসিটি হেড
Leave a Reply