আবিষ্কৃত হল যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতিগুলোকে মুছে ফেলার উপায়

five friends_0.jpg

“মেন ইন ব্ল্যাক” চলচ্চিত্রের মত স্মৃতি মুছে ফেলার যন্ত্রটি শীঘ্রই আমাদের কাছে কল্পনা থেকে বাস্তবে পরিণত হতে পারে কারণ বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি সস্তা ও সরল উপায় আবিষ্কার করেছেন যার সাহায্যে অবাঞ্চিত স্মৃতিগুলোকে মুছে ফেলা সম্ভব। সাইকোনোমিক বুলেটিন এন্ড রিভিউ জার্নালে এটা নিয়ে করা গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটি অনুসারে, এই ভুলে যাওয়ার মূলে আছে উক্ত স্মৃতি সম্পর্কিত কনটেক্সটগুলোকে আমরা যেভাবে দেখি তার পরিবর্তন।

কনটেক্সট একটি বড় বিষয়। যেকোন নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপার্শ্বে আর যা কিছু ঘটে তাকে কনটেক্সট বলে। গবেষকদের মতে আমাদের মস্তিষ্কে স্মৃতিগুলোর বিন্যস্তকরণে এবং উদ্ধার প্রক্রিয়ায় এই কনটেক্সট এর একটি বিরাট অবদান রয়েছে। যেমন, আপনার যদি অনেক বেশি টাকিলা (একধরণের মদ) খাওয়ার পর খারাপ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে (টাকিলা নিজেই একটি মোটামোটি কার্যকরী স্মৃতিনাশক), তাহলে আরেক পেগ টাকিলা খাওয়ার সময় আপনার সেই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়তে পারে।

যারা অনেক বেশি সিরিয়াস ডিসট্রেসিং ইভেন্ট বা গভীর পীড়াদায়ক ঘটনার স্মৃতি বয়ে বেড়ান তাদের কখনও কখনও পোস্ট ট্রমেটিক স্ট্রেস ডিজর্ডার (post-traumatic stress disorder or PTSD) হয়। কিন্তু কিছু কনটেক্সচুয়াল ইঙ্গিত তাদেরকে এই বেদনাদায়ক স্মৃতি থেকে মুক্তি দিতে পারে। এধরণের রোগী যদি সেই কনটেক্স থেকে স্মৃতিগুলোকে আলাদা করতে পারেন তাহলে তারা PTSD থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হবেন।

এটা সম্ভব কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় ও ডার্থমাউথ কলেজের গবেষকগণ স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে একটি মেমোরি টেস্ট করেন। এখানে তাদেরকে কিছু শব্দের একটি লিস্ট দেয়া হয় যেগুলোকে তাদেরকে হয় মনে রাখতে নয় ভুলে যেতে বলা হয়। দুটি শব্দ দেখানোর মধ্যবর্তী সময়ে তাদেরকে পাহাড়, জঙ্গলের দৃষ্যের মত নানান প্রাকৃতিক দৃষ্য দেখানো হয় যাতে তারা এধরণের কনটেক্সচুয়াল ইঙ্গিতের সাথে সেই শব্দগুলোর স্মৃতিকে সমন্বয় করতে পারেন। যখন অংশগ্রহণকারীরা এটা করছিলেন তখন তাদের ব্রেইন একটিভিটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য গবেষকগণ ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (functional magnetic resonance imaging or fMRI) ব্যবহার করেন এবং তাদের এই কনটেক্সচুয়াল ছবিগুলো এনকোড করার সময় কি ধরণের নিউরাল প্যাটার্ন তৈরি হচ্ছে তা নোট করে রাখেন।

এরপর অংশগ্রহণকারীদেরকে লিস্টের শব্দগুলোকে স্মরণ করার চেষ্টা করতে বলা হয় আর এসময় গবেষকগণ পুনরায় fMRI ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীদের ব্রেইন একটিভিটি পরিমাপ করেন। দেখা যায়, যাদেরকে লিস্টের শব্দগুলোকে মনে রাখতে বলা হয়েছিল তাদের শব্দগুলো মনে করার সময়কার নিউরাল প্যাটার্ন কনটেক্সচুয়াল ছবিগুলো দেখার সময়কার নিউরাল প্যাটার্ন এর সাথে মিলে যাচ্ছে। এর দ্বারা এই বোঝা যাচ্ছে যে স্মৃতি এবং কনটেক্সট মস্তিষ্কে একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত।

যারা লিস্টের শব্দগুলোকে মনে রাখেননি, তারা যখন শব্দগুলোকে স্মরণ করার বৃথা চেষ্টা করছিলেন তাদের নিউরাল প্যাটার্নের সাথে পূর্বেরগুলো মেলেনি। এর অর্থ এই যে, তাদের মনে কনটেক্সট এবং ঘটনাটি একত্রে সংযুক্ত হতে পারে নি। এটাও দেখা যায় এই কনটেক্সট গুলোকে যে যত বেশি মনে রাখতে পারে, তার লিস্টের শব্দগুলোকে মনে রাখার ক্ষমতাও তত বেশি।

প্রধান গবেষক জেরেমি ম্যানিং বলেছেন, “এই পদ্ধতিটা অনেকটা দাদীকে মনে না রাখার জন্য দাদীর রান্নাকে মন থেকে মুছে ফেলার মত… ভুলে যাওয়ার এই মেকানিজমটি সনাক্ত করতে পারার কারণে এখন এটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন মেমোরি থেরাপির উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। আমরা যদি PTSD তে আক্রান্ত সৈনিকদের বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলোকে মুছে ফেলতে চাই বা নতুন কিছু শেখার জন্য পুরনো স্মৃতিগুলোকে ভুল যেতে চাই তাহলে আমরা সেই থেরাপিগুলোকে ব্যবহার করতে পারব”।

http://link.springer.com/article/10.3758%2Fs13423-016-1024-7#Bib1

http://www.eurekalert.org/pub_releases/2016-05/dc-ctt050516.php

– ভেলোসিটি হেড

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.