ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এ পশ্চিম বলকান অঞ্চলের অন্তর্ভুক্তি আলোচনা অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। ক্রোয়েশিয়ার কথা বাদ, তারা এই বছরের শুরুতে ইউরোজোনে যোগ দিয়েছে। যায় হোক, এই ইস্যুতে প্রথম শীর্ষ সম্মেলনের পর ২০ বছর হয়ে গেছে, যেখানে ইইউ পশ্চিম বলকানের জন্য পূর্ণ ইইউ সদস্যপদের সম্ভাবনা তৈরী করে। তখন প্রশ্ন এটা ছিল না যে এই অঞ্চলটি ইইউতে যোগ দেবে কিনা, প্রশ্ন ছিল কখন যোগ দেবে সেটা। তবে এখন মনে হচ্ছে, এই আলোচনাটিও তুরস্ক-ইইউ আলোচনার মতো আটকে আছে। অঞ্চলটি আটকে আছে তার সংঘাত-পরবর্তী অতীত এবং অনিশ্চিত ইউরোপীয় ভবিষ্যতের মধ্যে। এদিকে পশ্চিম বলকান অঞ্চলে জাতিগত উত্তেজনা বাড়ছে, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ক্রমাগত ভুগছে তার এনলারজমেন্ট ফেটিগে।
অন্তর্ভুক্তির ধীর গতিতে হতাশ হয়ে, আলবেনিয়া, উত্তর ম্যাসেডোনিয়া এবং সার্বিয়া শেষ পর্যন্ত ওপেন বলকান ইনিশিয়েটিভ নামে তাদের একটি নিজস্ব প্রকল্প স্থাপন করেছে, যার লক্ষ্য হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের চারটি স্বাধীনতার প্রতিলিপি তৈরি করা, মানে পণ্য, মূলধন, পরিষেবা এবং জনগণের অবাধ চলাচল, আর এসবের মধ্যে দিয়ে শেষ পর্যন্ত অন্যান্য পশ্চিম বলকান দেশগুলিকেও একীভূত করা। এর মাধ্যমে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও দেখাতে চায় যে পশ্চিম বলকানরা প্রকৃতপক্ষে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তুত, তবে এই উদ্যোগটিও থমকে গেছে বলে মনে হচ্ছে। কেন? প্রধানত কসোভোর উত্তেজনাপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। তাই এই পুরো প্রকল্পের পূর্বাভাস বর্তমানে খুব অস্পষ্ট।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্প্রসারণের ফেটিগ, পশ্চিম বলকানের দিকে আইনের শাসন এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত অগ্রগতির অভাব এই সংযুক্তি প্রক্রিয়ার ধীর গতির জন্য দায়ী। এমনকি যদি পশ্চিম বলকানদের এই আইনের শাসন আর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দিকগুলো যদি নিখুঁতও থাকে, তবুও অন্তর্ভুক্তি এখনও অসম্ভব হবে কারণ ইইউ এই মুহুর্তে সত্যিই “মেজাজ”” নেই। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাক্রোঁ আরও কোনও সম্প্রসারণ এর বিরুদ্ধে ভেটো দিয়েছেন, কারণ ইইউ এর অধিকতর সম্প্রসারণ ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সংহতির জন্য হুমকি হতে পারে, পরিবর্তে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, ইইউকে আরও কোনও সদস্য গ্রহণের আগে কিছু জিনিস পরিবর্তন করতে হবে। এর মধ্যে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ইউরোপীয় কমিশন উভয়ের সংস্কার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পশ্চিম বলকান দেশগুলির জন্য, ইইউ সদস্যপদ শান্তি এনে দেবে, সেই সাথে দেবে বিশাল আর্থিক সুবিধা, যা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে এস্তোনিয়া বা পোল্যান্ডের মতো ইইউ দেশগুলিতে, যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অসাধারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এসেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্যেও শান্তিপূর্ণ বলকান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশগুলোর ইইউ সদস্যপদ পশ্চিম বলকানদের রাশিয়ান এবং চীনা প্রভাব থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করবে। একক বাজারে প্রবেশাধিকারের প্রস্তাব এই অঞ্চলে গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং শান্তি নিষ্পত্তির জন্য আরও ভাল উৎসাহ সরবরাহ করতে পারে কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির বিপরীতে, এই অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব তৈরী একটি বাস্তব সম্ভাবনা।
তো অবস্থা যেখানে এই, যেখানে বলকান অঞ্চলে চলমান এবং ক্রমবর্ধমান সমস্যা বিরাজ করছে, এবং ইউরোপ থেকেও প্রতিরোধ দেখা দিচ্ছে, সেখানে এই অচলাবস্থার কি কোনও সমাধান আছে? ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তির উদ্বেগ শীঘ্রই দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, এবং ইউনিয়নের ব্যাগ ইতিমধ্যে ইউক্রেন এবং ইউনিয়নে তার সম্ভাব্য যোগদান নিয়ে পূর্ণ হয়ে গেছে। সেই সাথে গ্রিন নিউ ডিল এর ব্যাপার আছে, ইটা হল একটি স্বাধীন নিরাপত্তা নীতি এবং অধিকতর আর্থিক সংহতি বা ফিসকাল ইউনিয়নের দিকে একটি সাধারণ প্রবণতা বা জেনারেল ট্রেন্ড। তো এগুলো মাথায় রেখে, কিছু বিশ্লেষক শেষ পর্যন্ত পরামর্শ দিয়েছেন যে, যদি ইইউ শীঘ্রই পশ্চিম বলকানগুলি গ্রহণ করতে না পারে তবে তাদের এটি স্পষ্ট করা উচিত এবং এর পরিবর্তে পশ্চিম বলকানকে একটি দ্বি-পর্যায়ের বা টু-স্টেইজ অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়ার প্রস্তাব দেওয়া উচিত।
এখানে প্রথম পর্যায়ে এই অঞ্চলটিকে একক বাজারের সদস্যপদ প্রদান করা হবে, আর সেটা করা হবে মূলত ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের সদস্যপদ প্রদানের মাধ্যমে, অথবা একটি নতুন পশ্চিম বলকান ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে। মানে প্রাথমিকভাবে এই অঞ্চলের একক বাজারের সদস্যপদ মানে সিংগেল মার্কেট মেম্বারশিপ প্রদান করা আরকি। অবশ্য এটার জন্যেও এই অঞ্চলে আইনের শাসনকে শক্তিশালী করার প্রয়োজন হবে (যা এখনো নেই) কারণ যেকোনও দেশকে ইউরোপের একক ইউনিয়নে যোগদানের আগে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত সমস্ত শর্ত পূরণ করতে হবে। এরপর ইইউ আরও সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলে (তার ফেটিগ অতিক্রম করে), তারা এই দেশগুলিকে ইইউর পূর্ণ সদস্যপদ দিতে পারে।
ইইউ সদস্যপদের জন্য এই দুই স্তরের কৌশলটি নতুন নয়। ১৯৯৪ সালে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন এবং অস্ট্রিয়া ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে যোগদান করে এবং এক বছর পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হয়। যদিও পশ্চিম বলকান অঞ্চলের জন্য এই প্রক্রিয়াটি সম্ভবত এক বছরেরও বেশি সময় নেবে, তবে এটি একটি মধ্যবর্তী সমাধান সরবরাহ করতে পারে যা ইউরোপের বর্ধিত উদ্বেগকে ট্রিগার না করে এই অঞ্চলটিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে।
সেই সাথে এই টু-স্টেইজ কৌশলটি ইউক্রেন বা মলদোভার মতো অন্যান্য প্রার্থী দেশগুলিতেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই পদ্ধতির সমর্থকরা যুক্তি দেখান যে একক বাজারে প্রবেশাধিকারের প্রস্তাব এই অঞ্চলে গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং শান্তি নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে।
যাইহোক, এই পদ্ধতিটি পরোপুরি নিখুঁত সমাধান নয়, কারণ কোনও গ্যারান্টি নেই যে ইইউ কখনও তার এনলার্জমেন্ট ফেটিগ কাটিয়ে উঠবে। তদুপরি, একটি ঝুঁকি রয়েছে যে এই কৌশলের ফলে একটি দ্বি-স্তরযুক্ত ইউরোপ তৈরি করতে পারে যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক ছোট দেশই পছন্দ করবে না। তবুও, বর্তমান অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উভয় পক্ষের পক্ষে উপকারী হবে, তা যাই হোক না কেন।
তথ্যসুত্র
1 – https://ec.europa.eu/commission/presscorner/detail/en/DOC_03_3
https://www.europarl.europa.eu/factsheets/en/sheet/168/the-western-balkans
3 – https://www.eca.europa.eu/Lists/ECADocuments/SR22_01/SR_ROL-Balkans_EN.pdf page 33-37
4 – https://www.eca.europa.eu/Lists/ECADocuments/SR22_01/SR_ROL-Balkans_EN.pdf page 36
5 – https://www.reuters.com/article/us-eu-summit-balkans-idUSKBN1WX1CT
6 – https://www.rferl.org/a/balkan-eu-membership-summit-frustration/31912243.html
https://www.esiweb.org/proposals/offer-four-freedoms-balkans-ukraine-and-moldova
7 – https://www.esiweb.org/proposals/offer-four-freedoms-balkans-ukraine-and-moldova
Leave a Reply