কিভাবে ইলন মাস্ক মাত্র দু সপ্তাহেই টুইটার ধ্বংস করেছেন?!?

কিভাবে ইলন মাস্ক মাত্র দু সপ্তাহেই টুইটার ধ্বংস করেছেন?!?

ইলন মাস্ক হাতে একটি ঝাড়ু নিয়ে টুইটারের সদর দফতরে প্রবেশ করার মাত্র দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় হয়ে গেছে, এবং তখন থেকে মাস্ক সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে একটি বিশাল লেসন পেয়ে গেছেন। আর তা হচ্ছে,  ইন্টারনেট চালায় আসলে বিজ্ঞাপনদাতারা। এখন, ইলনকে খুব বুদ্ধিমান লোক বলে মনে হচ্ছে। নিশ্চই তিনি আগে থেকেই এটা জানতেন, কিন্তু মনে হচ্ছে আগে তিনি বুঝতে পারেন নি যে এটা কতটা বাস্তব। বিজ্ঞাপনদাতারাই যে ইন্টারনেট চালায়, তা বুঝতে YouTube এর দিকে একটু তাকান। গত বছর তারা মূলত বিজ্ঞাপন থেকে তাদের ২৮ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ফেসবুক তাদের অর্থের প্রায় ৯৭ শতাংশ বিজ্ঞাপন থেকে আয় করে, আর টুইটারের জন্য, এটি প্রায় ৯০ শতাংশ। কিন্তু ইলনের নিজের ব্যবসার সাথে এর তুলনা করে দেখুন। টেসলা তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনও দেয় না। স্পেসএক্স মূলত বিশাল চুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছে তাদের পরিষেবাগুলি বিক্রি করে। তার ডি বোরিং কোম্পানি আর নিউরোলিংকও ওরকমই বলতে গেলে, তেমন বিজ্ঞাপনের দিকে জাননা তিনি। তাই ব্যাপারটা আসলেই গুরুত্বর, টুইটার এবং বিজ্ঞাপনের বিশ্ব মাস্কের জন্য একেবারেই নতুন একটা জগৎ, আর এটাই ব্যাখ্যা করে যে বিজ্ঞাপনদাতারা কেন ইলনের দ্বারা এত আতঙ্কিত এবং কেন তারা এই সাইটটিকে দলবদ্ধভাবে পরিত্যাগ করছে। তাহলে আসুন বিজ্ঞাপনদাতাদের ভয় দেখানোর জন্য ইলন আসলে কী করেছিলেন এবং কেন বিষয়গুলোকে ঠিক পথে আনার জন্য তার কৌশলটি কার্যকর নাও হতে পারে তা নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

বিজ্ঞাপনদাতারা কেন টুইটার পরিত্যাগ করেছে তা বোঝার জন্য ডিজিটাল বিপণনের জায়গায় টুইটার আসলে কী তা আপনাকে প্রথমে বুঝতে হবে। সহজভাবে বলতে গেলে, খুব একটা ভাল নয়, টুইটারের রেকর্ড-ব্রেকিং ইউজারশিপ সম্পর্কে ইলনের সাম্প্রতিক গর্ব করে দেয়া টুইটটি সত্ত্বেও! বিগ ডগদের তুলনায় সাইটটিতে এখনও খুব কম মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। বিগ ডগদের মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎটি হলো ২.৯ বিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর ফেসবুক। এরপর রয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ইউজার নিয়ে ইউটিউব ও ২ বিলিয়ন ইউজার নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ। বিলিয়ন ক্লাবকে নিয়ে আরও আছে ১.৫ বিলিয়ন নিয়ে ইনস্টাগ্রাম, ১.২ বিলিয়ন নিয়ে উইচ্যাট, এবং ১ বিলিয়ন মান্থলি ইউজার নিয়ে আছে তুলনামূলকভাবে নিউবি টিকটক। আপনি হয়তো ভাবছেন এর কিছু পরেই টুইটারের নাম চলে আসবে, তাই না? একেবারেই না, এরপরে মেটা এর ফেইসবুক মেসেঞ্জার নামে আরেকটি এন্ট্রি আছে, যার পরে চীনের দৌইন নামে টিকটকের আরেকটি ভার্সন আছে, এরপর QQ, Weibo, kuaishou, Snapchat, Telegram, Pinterest-রা আছে, আর তারপর ৪৩৬ মিলিয়ন মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীদের সাথে টুইটারের নাম আসে। তো ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অবশ্যই নগন্য নয়, কিন্তু টুইটারের যে সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে তা বিবেচনা করে, অবশ্যই আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে, টুইটার নিয়ে আপনি যেমনটি আশা করেন তেমন বেশি ব্যবহারকারী এতে নেই। এমনকি স্ন্যাপচ্যাট এমন একটি সংস্থা যার সম্পর্কে মিলেনিয়ালরা তেমন জানেই না, এবং বুমাররাই এর কথা একটু আধটু মনে রেখেছে, সেখানেও মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা টুইটারের চেয়ে বেশি। এমনকি Pinterest! এটার ব্যবহারকারীর সংখ্যাও টুইটারের চেয়ে বেশি!

তো ইউজার এত কম হওয়া সত্ত্বেও টুইটারের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব, এর প্রভাব এত বেশি কেন? এর কারণ হচ্ছে টুইটার যাদেরকে আকৃষ্ট করে তারা – রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ট্রেন্ডসেটার এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা। এই লোকেরাই টুইটারকে কিছু উপায়ে একটি বাস্তব সুবিধা দেয়, কিন্তু সমস্যা হলো এদেরও টুইটারে তেমন বিশাল শ্রোতা নেই যা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে আছে, আর ঠিক সেজন্যই যেটা নিয়ে এই আলোচনাটি, বিজ্ঞাপনদাতারা কখনোই টুইটারকে সেভাবে গণ্য করেনি। কিছুটা এক্সট্রা ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য এটা ভালোই ছিল। কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড ও ডেমোগ্রাফিকে ইগনোর করে, এটা কখনোই বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে প্রাইমারি ফোকাস হয়ে ওঠেনি। আর এটাই টুইটারকে একটি ট্রিকি স্পটে এনে ফেলে। বিজ্ঞাপনদাতারা কখনোই টুইটারের প্রতি বেশি ইনভেস্টেড বা রিলায়েন্ট ছিলনা। তাই যদি কোন কারণে এরা ভয় পেয়ে যায়, তাহলে এদের টুইটারে আটকে থাকার কোনো কারণই থাকেনা। আর এই ব্যাপারটা আমরা অন্যান্য প্লাটফরর্মেও দেখেছি। ইউটিউবেও এরকম এডপোক্যালিপ্স এসেছিল, যখন বিজ্ঞাপনদাতারা দেখতে পান তাদের ব্র্যান্ড নেইমগুলো বাজে বাজে ভিডিওগুলোর সাথে দেয়া হচ্ছে। আর এতে উদ্বিগ্ন হয়ে বিজ্ঞাপনদাতারা ইউটিউব থেকে তাদের এডগুলো দ্রুত সরিয়ে নেয়। আর এটি নিঃসন্দেহে ইউটিউবের জন্য বড় রকমের ক্রাইসিস ছিল কারণ ইউটিউব তার বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে সাংঘাতিকভাবে নির্ভরশীল। প্রতি মাসে ২.৬ বিলিয়ন  মানুষ এতে আসে, এবং এটি এড স্পেন্ড এর একটি বিশাল অংশকে রিপ্রেজেন্ট করে। এখন বিজ্ঞাপনদাতারা ইউটিউবের ওপর প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু তারপরও তারা ভয় পেয়ে সেখান থেকে তাদের বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেয়, আর ইউটিউবের মতো এত ইউজারের সাইটেই যদি তা হয়ে থাকে তবে টুইটারে ভয় পেয়ে বিজ্ঞাপনদাতারা যে কি করবে তা বলাই বাহুল্য।

এখন বেচারা মাস্কও কিন্তু সেভাবে বলতে গেলে এখনও তেমন কিছু করেননি যাতে বিজ্ঞাপনদাতারা ভয় পেয়ে যান। হ্যাঁ, তিনি কিছু অদ্ভুত জিনিস ঘোষণা করেছেন বটে, তিনি কিছু হার্ড পলিটিকাল স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, এবং কিছু প্রচণ্ড বুমারসুলভ মিম শেয়ার করেছেন, কিন্তু বিজ্ঞাপনদাতাদের ক্ষেত্রে তিনি খুব একটা কিছু করেননি। কিন্তু এরপরও বিজ্ঞাপনদাতারা টুইটার থেকে তাদের টাকা সরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু কেন? আসলে ইলোন মাস্ক হচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে একসিস্টেন্সিয়াল রিস্কের আরেক নাম। তিনি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অধিকতর ফ্রি স্পিচ এর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিন্তু তিনি এটি যত বেশি করছেন, বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে তিনি ততো বেশি ভয়ানক হয়ে যাচ্ছেন। আর স্বাভাবিকভাবেই ইউটিউবে বাজে ভিডিওর সাথে এড যুক্ত হলেই যদি তাদের হজম না হয়, তাহলে টুইটারে ইলোন যেমনভাবে কম ব্র্যান্ড ফ্রেন্ডলি বিষয়গুলো চাইছেন তা তাদের একেবারেই হজম হবেনা। আর যদি তা নাও হয়, টুইটারের এই নতুন ওয়াইল্ড ওয়েস্ট প্রসপেক্টটাই বেশ ড্যামেজিং বলে তারা সেখান থেকে সরে আসবে। টুইটারের বিজ্ঞাপনদাতারা প্রায়ই এডভান্সই বড় আকারের এড স্পেইস কিনে রাখে। আর তাই, তারা যদি এই প্লাটফর্মের ফিউচার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়, তাহলে তারা সামনের বছরের জন্য কম এড স্পেইস কিনবে, বা কিনবেই না। এখন এই বিক্রয়গুলোর একটা বড় অংশই হয় টুইটারের দ্বারা আয়োজিত বিভিন্ন বিগ ইভেন্টের দ্বারা, যেমন ইলোনের টেইকওভারের আগেই টুইটারের নিউ ফ্রন্ট নামে একটা ইভেন্ট ছিল। কিন্তু এই বছরে ব্যাপারটা তেমন মসৃণ যায় নি। টুইটারের এক্সিকিউটিভরা ইলোনের নতুন এপ্রোচ ও পৰিৱৰ্তনগুলো নিয়ে বিজ্ঞাপনদাতাদেরকে রিএশিওর করতে পারেনি। কেননা তারা জানতোই না যে ইলোনের এই বিজনেসে ফিউচার প্ল্যান কি হতে যাচ্ছে। এদিকে ইতঃপূর্বে ইলোন যেসব মন্তব্য করেছিলেন তার ফলে টুইটারের মেজর এডভার্টাইজাররাই প্লাটফর্মটি থেকে তাদের বাজেট পুল করতে শুরু করে, আর এর ফলে বিজ্ঞাপনদাতারা টুইটার থেকে বিশাল অর্থ তুলে নেন।

আর এটা হবারই ছিল। মাস্ক দাবি করতেই পারেন যে, এটি এক রকম লেফট উইঙ্গার বা লিবারালদের ষড়যন্তমুলক এডভার্টাইজার এক্সোডাস ছিল, কিন্তু সত্যি বলতে ফ্রি মার্কেট ইকোনোমি এভাবেই কাজ করে। বিজ্ঞাপনদাতারা তাদের ব্র্যান্ডকে টুইটারে রাখার জন্য পে করছে, এটি একটি এক্সচেঞ্জ, একটি সার্ভিস। যদি এডভার্টাইজাররা তাদের বিজ্ঞাপনের সাথে থাকা এসোসিয়েশনকে পছন্দ না করে, মানে টুইটারের যে কন্টেন্টের সাথে তাদের বিজ্ঞাপন যুক্ত হচ্ছে সেটা পছন্দ না করে, অথবা যদি দেখে এটি তাদের ROI ক্যাল্কুলেশন বাজে হচ্ছে, মানে সেলের চেয়ে এড এর কস্ট বেশি হচ্ছে, তাহলে তারা তা সরিয়ে দেবে, আর ইলোন যেমন ফ্রি স্পিচ এর পক্ষে বলছে তাতে স্বাভাবিকভাবে বাজে ও অফেন্সিভ টুইটের পরিমাণ বেড়ে যাবে, আর এমন কন্টেন্টের সাথে বিজ্ঞাপন যুক্ত হলে তাতে হিতে বিপরীতই হতে পারে। এরফলে তাদের পক্ষে প্লাটফর্ম ত্যাগ করতে চাওয়াই স্বাভাবিক। এদিকে মাস্ক উল্টে টুইটারে বিজ্ঞাপন না দেয়ায় তাদের শেমিং করে টুইট করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, তার এই সব কাজ কতটা ইনএফেক্টিভ হতে পারে। আল্টিমেটলি এটি বিজ্ঞাপনদাতাদেরই হাতে যে, তারা তাদের ডলারকে কোথায় খাটাবে, আর ইলোন এখনও তেমন কোন পৰিৱৰ্তন না আনলেও কেবল টুইটারের ভবিষ্যৎ, ও ইলোন মাস্কের দ্বারা হওয়া বড় কোন পৰিৱর্তন সম্পর্কে তাদের আশঙ্কাই যথেষ্ট তাদের এড স্পেন্ডকে তুলে নেয়ার জন্য, যেখানে টুইটার কখনোই বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য সেভাবে প্রায়োরিটি ছিলই না।

তো এই সমস্যায় মাস্কের সল্যুশনটা কি? দেখে মনে হচ্ছে মাস্ক বিজ্ঞাপনদাতাদেরকে রিএশিওর করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলছেন, বিজ্ঞাপনদাতাদের ব্র্যান্ডগুলো এই প্লাটফর্মে নিরাপদই থাকবে। কিন্তু বেশিরভাগ বড় বড় এডভার্টাইজাররা যারা টুইটারের এড স্পেইসের একটা বড় অংশ কিনে নেয়, তাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য একটা টুইট যথেষ্ট নয়, অন্তত এটা বোঝানোর জন্য যথেষ্ট নয় যে ইতিপূর্বে ইরোটিক কমেন্ট করা মাস্ক এখন এইসব কনসার্নকে সিরিয়াসলি নিতে শুরু করেছেন। তাহলে যেখানে এডভার্টাইসররা টুইটারে টাকা কম ঢালতে চাইছে, সেখানে ইলন এখন ইউজার বেসের দিকে নজর দিয়েছেন, আর এটার গুরুত্বও আছে। ইউটিউবের দিকেই তাকান, তাদের নিজেদের পেইড টিয়ার অফ মেম্বারশিপ আছে, যাকে ইউটিউব প্রিমিয়াম বলে, সেটাই সাবস্ক্রাইব করলে এড ফ্রি ভিউইং এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া যায়, সেই সাথে আরও অনেক রকম পার্কও পাওয়া যায়, যেগুলোর জন্য ইউটিউব প্রিমিয়াম মেম্বাররা ইউটিউবে পে করে থাকে। এখন মাস্কও একই রকমভাবে তাদের প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট হিসেবে টুইটার ব্লু আনতে যাচ্ছেন, যাতে এর দ্বারা এডভার্টাইজারদের সরিয়ে নেয়া অর্র্থের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া। কিন্তু টুইটার ব্লু-তে এমন কি থাকছে? সেটাই সবচেয়ে কন্ট্রোভার্সাল বিষয়টি – ভেরিফিকেশন ব্যাজ।

বর্তমানে ৪ লাখেরও বেশি লোকের আইডির সাথে ব্লু ভেরিফিকেশন ব্যাজ রয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে, তাদের একাউন্টকে টুইটার ভ্যালিডেট করে ও নিশ্চিত করে যে তারা একরকম “রিয়্যাল ডিল”। আর এখন এটি একটি প্রেস্টিজিয়াস ক্লাবও বটে, এমন একটি ক্লাব যেখানে প্রবেশ করতে আপনাকে ইনভিটেশন পেতে হবে। কিন্তু মাস্ক এটাকে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন, পেয়িং ইউজারদেরকে এই ভেরিফিকেশন চেক অনুমোদন করছেন। কিন্তু এই ভেরিফিকেশন চেকের জন্য মাসে ৮ ডলার করে পে করার ব্যাপারটা কন্ট্রোভার্সাল হিসেবে দেখা গেছে। কিন্তু আপাতত সব ড্রামা ব্যাড দিয়ে এই কর বিজনেস প্রপোজিশনে একটু নজর দেয়া যাক। ভেরিফিকেশন তো আছেই (যা অলরেডি মানুষের ছিলই), সেই সাথে এই ব্লু ব্যাজের সাথে যে সব সুবিধা আসতে যাচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে, প্রায়োরিটি ভিসিবিলিটি, লংগার ভিডিওস (১০ মিনিটের বেশি, যার জন্য আপনাকে পে করা হবে না, যেমনটা ইউটিউব করে!), এড অর্ধেক হয়ে যাওয়া (কিন্তু কিসের অর্ধেক? আজ পর্যন্ত কেউ টুইটারের এড নিয়ে বিরক্ত হয়ে শুনিনি), শর্তসাপেক্ষে বিনা পেওয়ালের সুবিধা দিচ্ছেন (“যদি পাবলিশার আমাদের সাথে কাজ করতে রাজি হয়”)।

কিন্তু ৮ ডলারের বিনিময়ে এই সুবিধাগুলোও আহামরি কিছু না, বিশেষ করে যদি ইউটিউব প্রিমিয়ামের সাথে তুলনা করে দেখেন। ইউটিউবের প্রিমিয়াম সার্ভিস একটু বেশি এক্সপেন্সিভ হতে পারে, তারা ৮ ডলারের বিপরীতে ১২ ডলার চায়, কিন্তু টুইটারের চেয়ে এরা অনেক ভাল সুবিধা দেয়, যেমন এটা নিলে কোন এডই আসবে না, তার ওপর ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে ভিডিও শোনা যাবে, ভিডিও ডাউনলোড করা যাবে, আর ইউটিউব মিউজিক পাওয়া যাবে, যা দিয়ে তারা স্পটিফাই এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। আর এত এত সুবিধা দেবার পরও মাত্র ২০ মিলিয়ন মানুষই এই সুবিধা গ্রহণ করছে। মানে ইউটিউবের ২.৬ বিলিয়ন বা ২৬০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারীর মধ্যে মাত্র ২ কোটি মানুষ এই সুবিধা ব্যবহার করছে,অর্থাৎ মোট ব্যবহারকারীর ১%-ও পয়সা দিয়ে এই সুবিধাগুলো ব্যবহার করে না। এখন ইউটিউবের যে বিজনেস সাইজ, তাতে এই  ২ কোটির সাথে বছরে ১৪৪ ডলার গুণ করলে যে প্রায় ২.৯ বিলিয়ন ডলার আসে তা নেহাত কম নয়, ইউটিউবের জন্য ঠিকই আছে। কিন্তু টুইটারের সাইজের স্কেলে বিচার করলে, এটি তেমন কিছুই না। ধরে নিন বর্তমানে প্রতিটি ভেরিফাইড ইউজারই টুইটার ব্লুউ এর জন্য পে করল, কখনোই সবাই করবে না, তবুও ধরে নিচ্ছি। তো এই ৪২৩,০০০ লোক মাসে ৮ ডলার করে পে করলে, টুইটারের মান্থলি রেভিনিউ আসছে ৩.৪ মিলিয়ন ডলার, তো বছরে টুইটার ব্লু থেকে আসছে মাত্র ৪০ মিলিয়ন ডলার। তবে ইলন মাস্কের অনেক ফ্যান আছে, আর অনেক মানুষ ব্লু টিকের সিম্বলটি পছন্দও করে, তাই হয়তো দশ গুণ বেশি মানুষ এই ব্লু টুইটার গ্রহণ করবে। কিন্তু তারপরও বছরে মাত্র ৪০০ মিলিয়ন ডলারই কামাই হচ্ছে এখন থেকে। কিন্তু এটা এই কোম্পানির বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার ইনকামের তুলনায় বলতে গেলে কিছুই না, যা তারা ২০২১ সালে লাভ করেছিল। আর এর মধ্যে ৪.৫ বিলিয়ন ডলারই এসেছিল বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছ থেকে। তাই রেভিনিউ এর কথা ধরলে টুইটার ব্লু থেকে তেমন কিছুই আসছে না। আর বিজ্ঞাপনদাতারা টুইটার ত্যাগ করার ফলে যে ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে তা ফিল কাপ করা খুব কঠিন বলেই মনে হচ্ছে।

কিন্তু ইলন কি করেছেন? ফ্রি স্পিক নিয়ে তার এম্বিশন এডভার্টাইজারদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করে দিয়েছে। আর পেইড টিয়ারদের জন্য কিছু বিগ আইডিয়ার পরও মনে হচ্ছে, মাস্ক আসলে টুইটার মিনিয়াকদের সংখ্যাটাকে ওভারএস্টিমেট করেছেন, যারা এই ভ্যাকুয়ামকে ফিল করতে তাদের ওয়ালেট খুলতে রাজি। সব শেষে আবার বলতে হচ্ছে, বিজ্ঞাপনদাতারাই ইন্টারনেট চালায়।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.