দুই কোরিয়ায় বর্ধিষ্ণু উত্তেজনা, প্যাসিফিক আইল্যান্ডে চীন-মার্কিন প্রতিযোগিতা, ইউকে-তে বিপাকে লিজ ট্রাস, ভারতে অবিবাহিতের এবরশন বৈধ
৩০ সেপ্টেম্বর, ২২
১। দুই কোরিয়ার মধ্যে বর্ধিষ্ণু উত্তেজনা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব
গতকাল, উত্তর কোরিয়া খুব স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সমুদ্রে নিক্ষেপ করে পরীক্ষা করে, যার ফলে দেশটি তার বিরুদ্ধে ইউনাইটেড ন্যাশনস কর্তৃক আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে। এটা নিয়ে এই বছরে তাদের মোট ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে গেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট ইয়ুথ অব স্টাফ বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সক্রিয় উসকানিগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরোধ ও প্রতিক্রিয়ার সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে উত্তর কোরিয়ার বিচ্ছিন্নতা আরও বৃদ্ধি করবে। উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সালে তার প্রথম পারমাণবিক পরীক্ষার পর থেকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নিষেধাজ্ঞাগুলি বাড়িয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রতিবারই সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা হয়েছিল, যার অর্থ হলো সকল স্থায়ী নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন এবং রাশিয়া সেই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ভোট দিয়েছিল।
কিন্তু পরিস্থিতি এখন পালটে যাচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে নিরাপত্তা পরিষদে সাম্প্রতিক ফাটলের সুযোগ নিয়ে উত্তর কোরিয়া এখন তাদের অস্ত্র উন্নয়ন ও পরীক্ষামূলক কর্মসূচি জোরদার করছে। কিন্তু তারা এগুলো যত জোরদার করছে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা তত শক্তিশালী হচ্ছে। এটা আবার উত্তর কোরিয়া মানতে পারছে না। ফলে নিয়মিতভাবে এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়ার সমালোচনা করেছে, আর এগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্টাইল ইন্টেনশন এবং তাদের সামরিক সক্ষমতার বিকাশের প্রমাণ হিসেবে দেখিয়ে আসছে। কিন্তু তাতে দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু আসে যায়না। কোরিয়ান পেনিনসুলার আশপাশের এলাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার সমর্থনেই ইউএস তাদের সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে। মাত্র কয়েকদিন আগে, ২০টিরও বেশি আমেরিকান এবং সাউদ কোরিয়ান জাহাজ কোরিয়ান উপদ্বীপের উপকূলে চার দিনের মহড়া শুরু করেছে। এই মহড়ায় ইউএসএস রোনাল্ড রিগ্যান অংশ নেয়। ২০১৭ সালের পর থেকে এটাই ছিল কোরিয়ান পেনিনসুলার কাছে কোন ইউএস এয়ারক্রাফট কেরিয়ারের প্রথম ড্রিল।
যাই হোক, এগুলো সব ব্যাকগ্রাউন্ড কথাবার্তা। রিসেন্ট খবরগুলোর একটা উত্তর কোরিয়া নিয়ে, আরেকটা দক্ষিণ কোরিয়া নিয়ে। একদিকে গতকাল উত্তর কোরিয়া যেমন ব্যালিস্টিক মিসাইল টেস্ট করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করল, অন্যদিকে এর কয়েক ঘণ্টা পরই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছান। ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস দক্ষিণ কোরিয়ার মে মাসে দেশটির রাজধানীতে দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রেসিডেন্টের সাথে দেখা করেন, ও বলেন, তিনি মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া জোটকে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির একটি লিঞ্চপিন হিসাবে দেখেন… এই জোটের শক্তিকে শক্তিশালী করতেই তিনি দক্ষিন কোরিয়ায় এসেছেন। সফরের অংশ হিসেবে, হ্যারিস দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শনের প্রচেষ্টা হিসেবে ডিমিলিটারাইজড জোন বা DMZ দেখতে যান, সেখানে একজন দক্ষিণ কোরিয়ান কর্নেল তাকে উত্তর কোরিয়ার সামরিক স্থানগুলি দেখায়। এরপর নিকটবর্তী একটি ঘাঁটিতে তিনি মার্কিন সামরিক কর্মীদের সাথে দেখা করতে যান ও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাজের জন্য কৃতজ্ঞ। সব মিলে বলতে হয় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পেসিফিক অঞ্চলে নিজেদেরকে শক্তিশালী করছে, খেয়াল রাখতে হবে, জায়গাটা চীনেরও নিকটেই….
২। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে মার্কিন সহায়তা ও চীনের সাথে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা
এতদিন যাবত প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোতে চীনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা বেশ দৃশ্যমান। চীনের সাথে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সম্প্রতি একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে খবরে উঠে আসছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি আর তা মেনে নায়? তারাও বলেছে যে এসব তারা সমর্থন করবে না। নিঃসন্দেহেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য এবং যোগাযোগ সংযোগের বিষয়গুলোকে ফোকাস করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার মেরিটাইম ব্যাকইয়ার্ড হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এবারে তাই এই অঞ্চলগুলোকে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশগুলোর সাথে ভবিষ্যতের পার্টনারশিপের বিষয়ে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই অঞ্চলগুলোতে ধীরে ধীরে চীনা প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকার ফলে এখন ইউএস এখানে বড় আকারের ডলারের সহায়তা প্রদানের কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের ১৪টি দেশের নেতা ও প্রতিনিধিদের একটি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। ঘোষণার একটি অস্বাক্ষরিত খসড়ায় বলা হয়েছে যে নেতারা এই অঞ্চলের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেন যেখানে গণতন্ত্র বিকশিত হতে সক্ষম হবে। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, বাইডেন প্রশাসন দ্বীপগুলোর জন্য সম্প্রসারিত কর্মসূচিতে ৮৬০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের ঘোষণা দেবে। উল্লেখ্য গত দশ বছরে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে মোট ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বলা যায়, এখন প্রভাব সৃষ্টির প্রতিযোগিতা নিয়ে পশ্চিম মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে নতুন করে টেনশন তৈরি হচ্ছে।
৩। নতুন মিনিবাজেটের পর ইউকে-তে লিজ ট্রাসের ক্রমাগত জনপ্রিয়তা হ্রাস
ইউকে-তে সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত লিজ ট্রাসের মিনি বাজেটের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। সেখানে গ্রোথের দিকে ব্যাপকভাবে জোর দেয়া হয়েছে, এবং সমালোচকরা বলছে ইউকে-তে এটা করতে গিয়ে পূর্বে যেসব নেগেটিভ এফেক্টগুলো পড়েছিল সেগুলোকে ইগনোর করা হয়েছে। তারা আরও বলছে যে এর মাধ্যমে ধনিদের ব্যাপকভাবে সুবিধা দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে যেখানে ডলারের বিরুদ্ধে পাউন্ডের মূল্য অনেক পড়ে গেছে। যারা ভোট দিয়েছে তারাও বলছে যে এরকম ধনিদের পক্ষে রেডিক্যাল পলিসি চেঞ্জের জন্য ট্রাসকে তারা ভোট দেয়নি। এই নতুন মিনিবাজেটে ১৬১ বিলিয়ন পাউন্ডের ট্যাক্স কাট প্যাকেজ দেয়া হয়েছে, যা ১৯৭২ সালের পর এবারই প্রথম। সুতরাং পলিসিটা বেশ বৈপ্লবিকই ছিল। যাই হোক, সমালোচনার ঝড় যখন তুঙ্গে তখন লিজ ট্রাসের উচিৎ ছিল তার পলিসিকে ডিফেন্ড করা আর জনতাকে বারবার রিঅ্যাশিওর করা যে মার্কেট আর ভোটারদের অবস্থা সবই ভাল থাকবে। কিন্তু লিজ ট্রাস সেদিকটায় যাননি, যখন মানুষ তাকে প্রশ্ন করা শুরু করে। গতকাল where is Liz Truss? এর হ্যাশট্যাগ টুইটারে ট্রেন্ডিং হয়ে যায়। হয়তো লিজ ট্রাস হ্যাশট্যাগটি খেয়াল করেছেন, তাই তিনি সকালে বিভিন্ন বিবিসি লোকাল রেডিও এর ইন্টারভিউ-তে উপস্থিত ছিলেন। মানুষ ভেবেছিল ট্রাস হয়তো এই রেডিওগুলোতে উদ্বিগ্ন ব্রিটিশদের একটু আশ্বস্ত করবেন। কিন্তু না, তিনি করেন স্যাভেজারি। বিবিসি রেডিও ল্যাংকারশায়ারে তিনি গ্রাহামের লাইভ কোয়েশ্চেনের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন, প্রশ্নটি ছিল ফ্র্যাকিং বা তেল উত্তোলনের ক্ষেত্রে কনসেন্টের ভূমিকা কী? এরপর বিবিসি স্টোকে তিনি মর্টগেজের ব্যাপারে একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে একরকম ভাষাই হারিয়ে ফেলেন। তো এই হচ্ছে বর্তমানে ট্রাসের পরিস্থিতি। পোলে ট্রাসের কনজার্ভেটিভ পার্টি এখনও ১০ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে, আর সেটা বিবেচনা করে ট্রাসের তার কমিউনিকেশন স্কিলে সিরিয়াস ইমপ্রুভমেন্ট দরকার, বিশেষ করে যদি সে ২০২৪ এর পরও ক্ষমতায় থাকতে চায়…
৪। ভারতে অবিবাহিতের এবরশন সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্টীকরণ
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে সিঙ্গল এবং অবিবাহিত নারীরা আইনত ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করতে পারে, ঠিক যে অধিকারটি বিবাহিত নারীরাও পায়। সেই সাথে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কোনও নারীর বৈবাহিক অবস্থা তার গর্ভপাতের সিদ্ধান্তে বাধার সৃষ্টি করতে পারেনা। যদিও ১৯৭১ সাল থেকে ভারতে গর্ভপাত বৈধ, তবে এই আইনটি নারীদের কিছু বিশেষ গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ২০২১ সালের সংশোধিত আইন সম্পর্কে স্পষ্টতা চেয়ে করা একটি পিটিশনের জবাবে আদালতের এই সিদ্ধান্ত টি এসেছে। ২১ সালের সংশোধিত আইনে নারীদের বেশ কয়েকটি গ্রুপকে তালিকাভুক্ত করা হয়, তবে সিঙ্গল বা অবিবাহিত নারীদের ব্যাপারটি অন্তর্ভূক্ত ছিলনা। প্রধান বিচারপতি ডি. ওয়াই. চন্দ্রচূড় বলেন, “সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অধীনে রিপ্রোডাক্টিভ অটোনমি, ডিগনিটি ও প্রাইভেসির অধিকার একজন অবিবাহিত নারীকে বিবাহিত নারীর মতই সন্তান ধারণ বিষয়ক সিদ্ধান্তের অধিকার প্রদান করে।” সেই সাথে সুপ্রিম কোর্ট এও বলে যে, ধর্ষণের সংজ্ঞায় বৈবাহিক ধর্ষণও অন্তর্ভূক্ত থাকবে, যা এখনও ভারতে ক্রিমিনালাইজড নয়।
Leave a Reply