সোশ্যাল মিডিয়া কি মানুষকে বিষণ্ন করে ফেলছে?

shutterstock_106837823.jpg

যারা সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইটগুলো নিয়মিত ব্যবহার করেন তাদের অনেকেই বন্ধুদের আনন্দে ঈর্ষান্বিত বোধ করেন। এটা বেশি হয় যখন আপনি আপনার বাসায় একা বসে একটি বোরিং দিন কাটাচ্ছেন আর বাকি সবাই কোথাও পার্টি দিচ্ছে অথবা কোথাও জাকজমকভাবে ছুটির দিন কাটাচ্ছেন।

কিন্তু এধরণের অনুভূতি থেকে কি খারাপ কিছু হতে পারে? সোশ্যাল মিডিয়া কি আপনাকে বিষণ্ণ বা ডিপ্রেসড করে তুলতে পারে? যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর মেন্টাল হেলথ এব্যাপারে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদেরকে স্যাম্পল হিসেবে নিয়ে করা এই গবেষণাটিতে সোশ্যাল মিডিয়া এবং এবং বিষণ্নতার মাঝে একটি শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে সনাক্ত করা গেছে। গবেষণাটিতে পাওয়া গেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে সপ্তাহে যত বেশিবার ভিজিট করা হয় এবং যত বেশি সময় ধরে এটা ব্যবহার করা হয় বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন তত বৃদ্ধি পায়।

পূর্বের গবেষণাগুলো থেকে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল।  ফলাফলগুলো দেখে মনে হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে ডিপ্রেশন এর সম্পর্ক অনেক জটিল এবং এই সম্পর্ক বেশ কিছু ফ্যাক্টর দ্বারা প্রভাবিত হয়।  সোশ্যাল মিডিয়ার ভাল দিকগুলো হল এর দ্বারা আমরা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ অক্ষুণ্ন রাখতে পারি, বিশেষ করে যাদের সাথে তেমন দেখা করা সম্ভব হয় না, বা অন্য কোনভাবে যোগাযোগ করার কোন সুযোগ বা সময় যাদের ক্ষেত্রে নেই। আর এর খারাপ দিক হল সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের মাঝে একধরণের অপূর্ণতা বা অপ্রাপ্তিবোধ তৈরি করে।

সোশ্যাল মিডিয়া কেন ডিপ্রেশনের সাথে সম্পর্কিত এ বিষয়ে অনেক জটিল কারণ থাকতে পারে। যেমন এটাও সম্ভব যে, যে সব মানুষ অনেক ডিপ্রেসড তারাই হয়তো সামনাসামনি বা ফেস-টু-ফেস ইন্টারেকশনে না গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে নির্ভরশীল হতে চান। তাই বেশি মাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা ডিপ্রেশনের একটা কারণ না, বরং একটি সিম্পটমও বা লক্ষণও হতে পারে।

একটি অসন্তোষজনক সমাধান

আমরা সকলেই চাই অন্যদের পছন্দের বা ‘লাইকড’ হতে এবং অন্যদের কাছে এক্সেপটেড বা গ্রহণযোগ্য হতে। আর সোশ্যাল মিডিয়া আমাদেরকে এই চাহিদা পূরণের একটি রাস্তা খুলে দিয়েছে। “লাইক” হল সোশ্যাল মিডিয়া এর কারেন্সি বা মুদ্রা। যেসকল মানুষের কম সেলফ-এস্টিম বা “আত্মমর্যাদা” আছে তারা এই “আত্মমর্যাদা” বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হন বিভিন্নভাবে অন্যদের “লাইক” অর্জন করার চেষ্টা করেন। আর এদিক থেকে সোশ্যাল মিডিয়া অনেকটাই পপুলারিটি কনটেস্ট বা জনপ্রিয়তার প্রতিযোগীতার একটি মঞ্চ। অবশ্যই এই পপুলারিটি কনটেস্টে “জয়লাভ” স্বল্পসময়ের জন্য মনোবল বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু এটা “আত্মমর্যাদা” বৃদ্ধির জন্য একটি অনিশ্চিত উপায়।

নিজেদের সাথে অন্যদের তুলনা করা এওটি মানব প্রকৃতি। কখনও কখনও অন্যদের সাথে এই তুলনা করা আমাদের নিজেদের উন্নতির জন্য উৎসাহ প্রদান করে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা কাজ করে না, বিশেষ করে যখন কেউ বিষণ্নতাকেন্দ্রিক বা অবসাদের দিকে বেশি ধাবিত তাদের বেলায় এরকম তুলনা আরও ঋণাত্মক বা খারাপ প্রভাব ফেলে এবং তাদের আত্মমর্যাদা নষ্ট করে ফেলে। সোশ্যাল মিডিয়া এর একটি সমস্যা হল এখানে সবাই নিজেদের যে ইমেজ বা প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে তা সবসময়ই পজিটিভ, ইন্টারেস্টিং এবং এক্সাইটিং। বেশিরভাগ লোকই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে নিজেদের ভাল, সুন্দর এবং সুখকর মুহূর্তগুলোর ছবিই তুলে ধরেন, অন্যান্য সময়, খারাপ, অপ্রীতিকর বা দৈনন্দিক সাধারণ মূহুর্তগুলোকে বেশিরভাগ লোকই সোশ্যাল মিডিয়াতে তুলে ধরেন না। এক্ষাত্রে যদি কেউ তাদের জীবনের প্রতি অবশাদগ্রস্ত থাকেন, বিষণ্ন থাকেন তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া তার মধ্যে এমন ধারণার সঞ্চার করতে পারে যে অন্যান্য সকলেই তাদের চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ করে থাকে।

পুরোপুরি ক্ষতিকর নয়

অনেক বাবা-মাই সন্তানদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে অনেক চিন্তিত ও শঙ্কাগ্রস্ত। অনেককেই দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন প্রতিকূল অবস্থার শিকার হওয়া বিমর্ষ বা অশ্রুশিক্ত টিনেজ সন্তানকে সান্তনা দিতে। কিন্তু আমরা সোশ্যাল মিডিয়াকে পছন্দ করি বা না করি অনেকের ক্ষেত্রেই এখান থেকে বেরিয়ে আসার কোন উপায় থাকে না। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বেরিয়ে আসা মানে হল বন্ধুদের নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। আর তাই সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া কখনই যুক্তিসঙ্গত উপায় নয়।

আবার একই সাথে, আমরা সবাই সোশ্যাল মিডিয়াকে কিভাবে ব্যবহার করা হয়, কিভাবে ব্যবহার করা উচিৎ এবং মানুষের মনোভাব, আচরণ ও মানষিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জানি না। যতক্ষণ আমরা তা না জানি ততক্ষণ পর্যন্ত হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াকে বন্ধুদের সাথে সংযুক্ত থাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় বলে মনে করাই উচিৎ কিন্তু এই সোশ্যাল মিডিয়াকে আমাদের আত্মমর্যাদায় বেশি প্রভাব ফেলতে দেয়া উচিৎ নয়। আরেকটি বিষয় মনে রাখা উচিৎ যে, সবাই নিজেদের অনেক ভাল মূহুর্তগুলোকে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করলেও নিউজ ফিডের তথ্যগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আনন্দ, মজাদার বিষয়ের দিকে বায়াজড বা পক্ষপাতী হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে জীবনের কেবল ভাল দিকগুলোই প্রকাশিত হয়, আর এর মানে এই নয় যে অন্যেরা আপনার চেয়ে আরও ভাল ও মজাদার জীবনযাপন করছেন।

http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1002/da.22466/abstract

– ভেলোসিটি হেড

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.