সাইকোলজি বিভিন্ন জটিল, বিমূর্ত বিষয় নিয়েও কাজ করে থাকে। আর এই বিষয়গুলোর মধ্যে ফ্রি উইল বা স্বাধীন ইচ্ছা হল রিসার্চারদের কাছে একটি হট টপিক। পৃথিবীতে হয়তো এমন একজনও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নেই যিনি খুব কম সময়ের জন্য হলেও চিন্তা করেন নি যে আমাদের ফ্রি উইল আছে কি নেই।
সম্প্রতি সাইকোলোজিকাল সায়েন্স জার্নালে এই ফ্রি উইল সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদেরকে একটু পরে তাদের সামনে কী রং এর বৃত্ত দেখানো হবে তা অনুমান করতে বলা হয়। অর্থাৎ তাদের এমন কিছু করতে বলা হয় যা পুরোপুরি চান্স এর উপর নির্ভর করছে। গবেষকগণ দেখেন তাদের অনুমান বেশি সঠিক হয় যখন তাদেরকে অনুমান করার জন্য এক সেকেন্ডের মাত্র একটি অংশ দেয়া হয়।
ফলাফল দেখে মনে হতে পারে যে অংশগ্রহণকারীরা সাইকিক ছিলেন বা তাদের মধ্যে একধরণের মেন্টাল টাইম ট্রাভেল এফেক্ট এখানে কাজ করছে। অংশগ্রহণকারীরা অবচেতনভাবেই রং এর পরিবর্তন বুঝতে পারেন যা তাদের মেন্টাল চয়েজ তৈরি হবার আগেই ঘটে যায়। এরপরও তারা সবসময় ভেবেছেন যে পরিবর্তন হবার পূর্বেই তার ভবিষ্যদবাণী করতে পেরেছেন। কিন্তু আদতে তারা সঠিক উত্তর দিতে পেরেছিলেন কারণ তারা ইতিমধ্যেই সঠিক উত্তরটি অবচেতনভাবে জানতেন।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের পিএইচডির ছাত্র এডাম বিয়ার বলেন, “সম্ভবত আমাদের মন বা মাইন্ড পূর্বের ঘটনাগুলোকে পুনরায় লিখে থাকে। এই গবেষণাটি থেকে দেখা যায়, যখন খুব কম সময়ের স্কেলে এই কাজটি করা হয় তখন আমরা আমাদের চিন্তার পূর্বেই কোন কনশাস চয়েজ বা সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। আমাদের মন ইতিমধ্যেই অবচেতনভাবে উত্তরটি নির্ধারণ করে রাখে। আর তাই ফ্রি উইল বা স্বাধীন ইচ্ছা এখানে নিছকই বিভ্রম। এক্ষেত্রে আমরা যেটাকে নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছা বা নিজেদের সচেতন সিদ্ধান্ত বলে ভাবছি সেটা আসলে আমাদের অতীত অনুসারে আমাদের সাবকনশাস মাইন্ড বা অবচেতন মন দ্বারা পূর্বনির্ধারিত।
গবেষণাটিতে দুটি ভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। প্রথম পরীক্ষাটিতে পাঁচটি সাদা বৃত্ত নেয়া হয় যেগুলোর একটি র্যাপিড ফায়ার সিকোয়েন্সের ফলে লাল রং ধারন করে। মস্তিষ্ক এই গটনাটিকে সংরক্ষণ করে রাখে। এরপর অপেক্ষা করানো হয়। এরপর একটি বৃত্ত ক্রিমসন রং ধারণ করে। অংশগ্রহণকারীকে কিস্ট্রোকের সাহায্যে রেকর্ড করতে হয় তিনি সঠিক অনুমান করেছেন নাকি করেন নি অথবা চয়েজটি পূর্ণ করার জন্য সময় পেয়েছেন কিনা।
এই অনুমানগুলোর মধ্যে মাত্র শতকরা ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে সঠিক হওয়া উচিৎ। আর দেখা যায় এই হারটি কম বেশি রক্ষিত হয়। কিন্তু গেসিং করার সময় যখন সেকেন্ডের ভগ্নাংশে নামিয়ে আনা হয় তখন দেখা যায় এই অনুমানগুলোর সঠিক হবার হার শতকরা ৩০ শতাংশে উঠে গেছে।
দ্বিতীয় টেস্টটি করা হয়েছিল আরও ২৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক যুবক যুবতীদের নিয়ে। তাদেরকে অনুমান করতে হয়েছিল যে পূর্বের বৃত্তের রংটি পরের বৃত্তটির রং এর সাথে মিলবে নাকি মিলবে না। অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রতিটি অনুমানের ক্ষেত্রে সঠিক হবার সম্ভাবনা ছিল শতকরা ৫০ শতাংশ। যাই হোক, আরেকবার অনুমান নেয়ার সময় সেকেন্ডের ভগ্নাংশে আনা হয়েছিল তখন তাদের অনুমানের সঠিক হবার হার বেড়ে গিয়েছিল। এই ক্ষেত্রে তাদের সঠিক হবার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬২ শতাংশ।
তাদের একিউরেসি বা সঠিক হবার হার কম সময়ের ক্ষেত্রে বেড়ে গিয়েছিল কারণ অংশগ্রহণকারীগণ বর্ণ পরিবর্তন দেখতে পারছিলেন কিন্তু তা কেবলি সাবকনশাসলি বা অবচেতনভাবে। তাই তারা সঠিক উত্তরটি দেখার আগেই তার সম্পর্কে জেনে যেতেন। দুটি গবেষণাটি থেকেই তাদের মনে হয়েছিল উত্তর আসার পূর্বেই তারা তাদের মেন্টাল চয়েজগুলো করেছিলেন।
এই গবেষণাটির একটি সাম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল, যখন আমাদেরকে কোন তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আমাদের হাতে তখন সচেতনভাবে চয়েজ করার মত সময় থাকে না। এরকম তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় আমরা অবচেতনের কাছে আত্মসমর্পন করি, আর আমাদের অবচেতন মনই তখন আমাদের বদলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এমনকি তখনও যখন আমরা মনে করি আমরা নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
http://pss.sagepub.com/content/early/2016/04/27/0956797616641943.abstract
http://news.yale.edu/2016/05/02/you-may-have-already-decided-read-article
– বুনোস্টেগস
Leave a Reply