প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স, সন্তান গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে রয়েছে জিনের ভূমিকা

TOP FINCH

নারীদের ক্ষেত্রে জীবনের কিছু কিছু বিষয়ে যেমন কখন প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স করতে হবে, কখন পরিবার গঠন করতে হবে বা কখন প্রথম সন্তান নিতে হবে ইত্যাদি ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক জরুরি। আর এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি নির্ভর করে সোশ্যাল ফ্যাক্টরগুলোরগুলো যেমন তিনি কখন সঠিক পার্টনারের সাথে পরিচিত হয়েছেন, সোশ্যাল  প্রেশার বা সামাজিক চাপ কেমন, অর্থনৈতিক চাপ ইত্যাদির উপর। কিন্তু বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছেন এই যৌনতা বা প্রজননগত মাইলফলকটি আমাদের জিন দ্বারাও প্রভাবিত হয়।

সম্পতি নেচার জেনেটিক্স জার্নালে ১২৫,০০০ জনের উপরে করা একটি একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। এতে যেসব জিন ভেরিয়েন্টগুলো পিউবার্টি বা বয়োসন্ধিকাল শুরু করতে, প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স করতে ও প্রথম সন্তান নেবার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে সেগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ঘটনাগুলোর সময়কাল শিক্ষাগত সাফল্য, শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদিতে প্রভাব ফেলে।

শিশুদের বয়োসন্ধিকাল আট থেকে চৌদ্দ বছরের মধ্যে যেকোন সময়ে আসতে পারে। আর এর জীববিজ্ঞানগত কারণ জানা গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। পশু ও মানুষ উভয়ের উপরেই গবেষণা করেই জানা গেছে ব্রেইনে একটি জটিল মলিক্যুলার স্ট্রাকচার আছে যা সঠিক সময় আসা পর্যন্ত পিউবার্টি হরমোন বা বয়োসন্ধিকালের হরমোনগুলোকে আটকে রাখে। সেই সঠিক সময়টিতে মস্তিষ্ক থেকে আগত কেমিকেল মেসেঞ্জারগুলো নিঃসৃত হলে বিভিন্ন ধরণের ঘটনা ঘটতে শুরু করে যার ফলে সেক্স হরমোনগুলো তৈরি হতে শুরু করে এবং মানুষ রিপ্রোডাক্টিভ ম্যাচিউরিটি অর্জন করে।

মানুষের উপর জেনেটিক্স বিষয়ে গবেষণাগুলো অনেক জিনকেই সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে যেগুলো বয়োসন্ধিকালের সাথে সম্পর্কিত। এরকম জিনগুলোকে দুভাবে সনাক্ত করা যায়। প্রথমটি হল পিউবার্টি বা বয়োসন্ধিকালকে প্রভাবিত করে এমন রেয়ার ডিজর্ডারের রোগীদের নিয়ে গবেষণা করা আর দ্বিতীয়টি হল বৃহৎ পরিসরে পপুলেশন স্টাডি। প্রথমটি বেশি কার্যকরী কারণ এর মাধ্যমে যেসকল জিন ভেরিয়েন্টের কারণে  সময়ের অনেক পূর্বে পিউবার্টি আসে বা একেবারেই পিউবার্টি আসে না সেগুলো খুঁজে বের করা যায়।

পূর্বের গবেষণাগুলোতে পপুলেশন স্টাডিগুলো ব্যবহার করে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে অনেককে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা করা হয়েছিল। আর এরপর তাদের কমন জেনেটিক ডিফারেন্সগুলো যাচাই করে দেখার জন্য জিনোম ওয়াইড এসোসিয়েশন স্টাডি করা হয়। এতে জানা সম্ভব হয় এই লোকদের দ্বারা রিপোর্ট করা বয়োসন্ধিকাল কোন নির্দিষ্ট জিন ভেরিয়েন্ট এর সাথে সম্পর্কিত কিনা। এভাবে বেশ কিছু গবেষণার দ্বারা এরকম ১০০টিরও বেশি ভেরিয়েন্ট সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এগুলোর প্রত্যেকটিই পিউবার্টি টাইমিংকে কয়েক সপ্তাহের জন্য পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু সবগুলো জিন একসাথে অবদান রাখলে পিউবার্টি টাইম বা বয়োসন্ধিকালের গুরুতর হেরফের হয়ে যায়।

আমরা এখন জানি নেচার এবং নার্চার (প্রকৃতি ও পরিবেশ) উভয়ই পিউবার্টি টাইম বা বয়োসন্ধিকাল সমানভাবে প্রভাবিত করে। যেমন গবেষণা দেখাচ্ছে ওবিসিটি এবং অতিরিক্ত নিউট্রিশনের কারণে বাচ্চাদের সময়ের অনেক পূর্বেই বয়োসন্ধিকাল আসতে পারে।

জেনেটিক ফ্যাক্টরগুলো

যাই হোক, আমরা আমরা কখন প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স করব অথবা কখন প্রথম সন্তান নেব এর উপর বায়োলজিকাল এবং জেনেটিক ফ্যাক্টরগুলো সম্পর্কে আমরা অনেক কম জানি। আর এর কারণ হচ্ছে পূর্বের গবেষণাগুলোতে জেনেটিক্সের চাইতে পরিবেশ এবং পারিবারিক বিষয়গুলোতে বেশি ফোকাস করা হয়েছিল। কিন্তু ইউ.কে. বায়োব্যাংক এর উদ্বোধনের পর পাঁচ লাখেরও বেশি লোক নিয়ে একটি গবেষণা হয় যা আমাদের এই বিষয়ে জ্ঞানের অভাবকে পূর্ণ করেছে।

এই নতুন গবেষণায়, এই ডেটাগুলোকে ১২৫,০০০ জন লোকের পিউবার্টি নিয়ে করা গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছিল। এতে প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সের সাথে (অর্থাৎ কখন একজন নারী প্রথম কারও সাথে যৌন সম্পর্কে যাবে বা ভার্জিনিটি কখন হারাবে এই বিষয়ে তার নেয়া সিদ্ধান্তের সাথে) সম্পর্কিত ৩৮টি জিন ভেরিয়েন্ট সনাক্ত করা হয়। এই জিনগুলো সাধারণভাবে দুই রকমের। একটি ক্যাটাগরিতে পড়ে সেইসব জিনগুলো যেগুলোকে আমরা রিপ্রোডাক্টিভ বায়োলজি এবং পিউবার্টিকাল ডেভেলপমেন্ট এর অন্যান্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বলে জানি। যেমন এস্ট্রোজেন রিসেপ্টরকে রিপ্রোডাক্টিভ ট্র্যাকের কোষগুলোতে পাওয়া যায় আবার এটা ব্রেইনের বিহ্যাভিয়র কন্ট্রোল সেন্টারেও পাওয়া যায়। এস্ট্রোজেন রিসেপ্টরের সাথে সম্পর্কিত জিন এই ক্যাটাগরিতে পড়ে। অন্য গ্রুপটিতে সেই সব জিন আছে যেগুলো ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট ও পারসোনালিটিতে অবদান রাখে। যেমন CADM2 জিনটি ব্রেইন এক্টিভিটি নিয়ন্ত্রণ করে আবার আমাদের ঝুঁকি নেয়ার সিদ্ধান্তের উপরেও (কম বয়সে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে যাব কি যাব না, সন্তান নেব কি নেব না এইসব বিষয়ও এই ঝুঁকির অন্তর্গত) এর প্রভাব আছে। দেখা গেছে এই জিনটি ভার্জিনিটি হারানো এবং জীবনে অধিক সংখ্যক সন্তান নেয়ার সাথে সম্পর্কিত। একইভাবে MSRA নামে একটি জিন আছে যা আমরা কেমন খিটখিটে তার সাথে সম্পর্কিত। এই জিনটিও প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স এর বয়সের সাথেও সম্পর্কযুক্ত। দেখা যায় যেসকল মানুষ বেশি খিটখিটে তারা দেরি করে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে অংশগ্রহণ করেন। যাই হোক, কিভাবে এই জিনগুলো এরকম প্রজনন এর মাইলফলকগুলোকে অতিক্রম করতে সহায়তা করে তা জানার জন্য আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন। এটাও জানা সম্ভব হয়েছে যে এই মাইলফলকগুলোর ভেরিয়েন্টগুলোর শতকরা ২৫ শতাংশ জেনেটিক ডিফারেন্সগুলোর জন্য হয়।

জনস্বাস্থ্যে এর প্রয়োগ

রিপ্রোডাক্টিভ এজিং বা প্রজনন এর বয়স নিয়ে গবেষণা করার একটা কারণ হল, এই মাইলফলকটি প্রজননজনিত অনেক বিষয়েই প্রভাব ফেলে এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সাথে এর সম্পর্ক আছে। এপিডেমিওলজিকাল স্টাডিগুলো বা মহামারী সংক্রান্ত গবেষণাগুলো আমাদের দেখাচ্ছে, যাদের বয়োসন্ধিকাল খুব কম বয়সে শুরু হয় তারা বৃদ্ধ বয়সে বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ব্রেস্ট ক্যানসার প্রভৃতিতে আক্রান্ত হয়। এছাড়া কম বয়সে প্রথম সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স নারীর আচরণ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও অনেক খারাপ প্রভাব ফেলে।

মেন্ডেলিয়ান র‍্যান্ডমাইজেশন নামে একটি স্ট্যাটিস্টিকাল জেনেটিক্সে একটি টেকনিক আছে। এই টেকনিকটি মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে কজাল রিলেশনশপগুলো বা কার্যকারণ সম্পর্কগুলো পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এই টেকনিকটির আমাদের বলতে পারে যে এই ডায়াবেটিস, ব্রেস্ট ক্যানসার, হৃদরোগের মত মহামারীগুলো কোন বিশেষ জিনের কারণে হয় নাকি এরা নিছকই র‍্যান্ডম এসোসিয়েশন বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই টেকনিক ব্যবহার করেই এসব মহামারির সাথে জিনগুলোর সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়েছে। গবেষণা করে এটাও পাওয়া যায়, আর্লি পিউবার্টি বা সময়ের পূর্বে বয়োসন্ধিকাল বিভিন্ন রিস্ক টেকিং বিহ্যাভিয়র বা ঝুঁকি গ্রহণ সংক্রান্ত আচরণে প্রভাব ফেলে। এই ঝুঁকিগুলোর মধ্যে আছে কম বয়সে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স, তাড়াতাড়ি বাচ্চা নেয়া, বেশি বেশি সন্তান নেয়া ইত্যাদি।

সময়ের পূর্বে ভার্জিনিটি হারানো বা সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে জড়িত হওয়ায় যথেষ্ট হেলথ এবং সোশ্যাল রিস্ক থাকে। এখন এটা আর্লি পিউবার্টির সাথে সম্পর্কিত বলে প্রমাণিত হওয়ায় এই রিস্কগুলো কমানোর জন্য বিজ্ঞানীরা বলেন বাচ্চাদের আর্লি পিউবার্টিকে আটকানোর চেষ্টা করা উচিৎ। এজন্য ঠিক মত ডায়েট, ফিজিকাল এক্টিভিটি, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীগণ। গবেষণাটি বলছে এগুলো মেনে চললে তরুণীদের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, পড়াশুনা ভাল হবে আবার বার্ধ্যক্যেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম হবে।

http://nature.com/articles/doi:10.1038/ng.3551
http://www.nhs.uk/Livewell/puberty/Pages/puberty-signs.aspx
http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC2495948/

https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/?term=25231870

https://theconversation.com/losing-your-virginity-how-we-discovered-that-genes-could-play-a-part-58004

– বুনোস্টেগস

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.