ইহুদি দর্শন ও ফিলোজুডিয়াস

ইহুদি দর্শন

হেলেনিক সভ্যতা ও দর্শনের সঙ্গে জড়িত জাতিসমূহের মধ্যে ইহুদিরা ছিল কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী। সামাজিক দিক থেকে তারা অপরাপর জাতিসমূহ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। তারা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিল। জেহোভাকে তারা একমাত্র ঈশ্বর বলে স্বীকার করতো এবং বিশ্বাস করতো যে, জেহোভা কর্তৃক তারা বিশ্বের একমাত্র আদর্শ জাতি হিসেবে নির্বাচিত। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তাদের মনোভাব ছিল নিতান্তই বিরূপ। এসব কারণে দীর্ঘদিন হেলেনিক সভ্যতার আওতায় থাকার পরও তাদের মধ্যে এর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব পরিলক্ষিত হয় নি। কিন্তু তাই বলে গ্রিক-রোমান পরিবেশের প্রভাব থেকে তারা যে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিল, একথা বলা চলে না। যেসব বিদেশী সভ্যতা দ্বারা তারা পরিবৃত ছিল, আংশিকভাবে হলেও সেসব সভ্যতার সঙ্গে তাদের সংমিশ্রণ ঘটে। অবশ্য তাদের মধ্যে এমন একটি রক্ষণশীল শাখা ছিল, যা-কিনা তাদের প্রাচীন পরম্পরাগত চিন্তাধারা ও জীবনদর্শর্নকে আঁকড়ে ধরে রাখার পক্ষপাতী ছিল। তবে উদারপন্থী ইহুদিদের মতবাদ তাদের মতের চেয়ে অনেক বেশি প্রবল ছিল।

রোমানদের কাছে পরাজিত হওয়ার আগে থেকেই, অর্থাৎ প্রথম টলেমির রাজত্বকালেই দর্শনের আলোচনার জন্য সেখানে চতুষ্পাঠী প্রতিষ্ঠিত হয়। মিসরে বহু ইহুদি বাস করত। আলেকজান্দ্রিয়ায় প্রথম থেকেই একটি বিরাট ইহুদি উপনিবেশ ছিল। তাদের মধ্যে যাঁরা জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা করতেন, তারা গ্রিক দর্শন পাঠ করতেন। এর প্রধান কারণ ছিল এই যে, হেলেনিক সভ্যতার (বিশেষ করে গ্রিক দর্শনের) সঙ্গে হিব্রু চিন্তা ও সংস্কৃতির একটা নিবিড় সংযোগ ঘটেছিল। খ্রিস্টপূর্ব তিন শতক থেকেই সেখানকার ইহুদি চিন্তাবিদগণ গ্রিক দার্শনিকদের (বিশেষ করে প্লেটোর) চিন্তার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন, এবং তারা দেখতে পান যে, গ্রিক চিন্তা ও তাদের নিজস্ব মতাবলির মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। বস্তুত, মৌলিক হিব্রু রচনাবলির অনুবাদ ও ভাষ্যে যেসব শব্দ ও উপসর্গের ব্যবহার করা হয়েছিল, তাতে গ্রিক প্রভাব লক্ষণীয়। যেমন, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে সলোমন রচিত ‘বুক অব উইসডম’ গ্রন্থটি স্পষ্টতই গ্রিক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত ছিল। এবং তাতে স্বর্গীয় প্রজ্ঞাকে ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিফলন বলে যে মত দেয়া হয় তার সঙ্গে ফিলোর ‘লোগোস’ মতবাদের এবং পরবর্তীকালের প্লোটিনাসের মতবাদ ও খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্বের বেশ মিল দেখা যায়।

তবে হিব্রু ও গ্রিকরা দর্শনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে একই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখত না। দর্শন বলতে গ্রিকরা বুঝত এমন একটি নিরপেক্ষ স্বাধীন চিন্তাকে যার মাধ্যমে মানুষ পরমসত্তাকে জানতে পারে। পক্ষান্তরে ইহুদিদের মতে, জেহোভা পূর্বাহ্নেই পয়গম্বরদের মারফত সত্যকে ব্যক্ত করেছেন। এ অভিব্যক্ত সত্যকে বুদ্ধির কসরতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো প্রয়োজন নেই। বুদ্ধি বা দর্শনের একমাত্র কাজ ইহুদি পুরাণ (Old Testment)-এর প্রত্যাদেশের যৌক্তিক সমর্থনপ্রদান, সমালোচকদের আক্রমণ থেকে সত্যকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে নৈয়ায়িক ও তত্ত্বীয় যুক্তিপ্রদান।

এ থেকে বোঝা যায় যে, ইহুদি চিন্তাবিদগণ ঈশ্বর কিংবা জগৎ সম্পর্কিত জ্ঞানের জন্য গ্রিক দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হন নি; বরং দৈব সহায়তায় তারা যে সত্য সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন, গ্রিক দর্শনে সেই একই সত্যের অস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে ভেবেই তারা গ্রিক দর্শন পাঠে আগ্রহী ছিলেন। তাদের ধর্মীয় মতের সঙ্গে গ্রিক দর্শনের সাদৃশ্য দেখাতে গিয়ে কোনো কোনো ইহুদি দার্শনিক উগ্র মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন। যেমন : গ্রিক ও ইহুদি চিন্তার সম্পর্ক দেখাবার আগ্রহের আতিশয্যে এরিস্টবুলাস নামক খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের আলেকজান্দ্রিয়ার ইহুদি দার্শনিক একথা বলেছেন যে, প্রাচীন গ্রিক কবি ও দার্শনিকগণ, বিশেষ করে পিথাগোরাস প্লেটো ইহুদিদের ধর্মশাস্ত্র ওল্ড টেস্টামেন্ট-এর গ্রিক অনুবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। গ্রিক চিন্তাবিদদের ব্যবহৃত অমূর্ত ধারণা ও শব্দাবলি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন বলেই হয়তো এরিস্টবুলাস ইহুদি শাস্ত্রে ঈশ্বরের ওপর যেসব মানবীয় গুণ আরোপ করা হয়েছে, সেগুলোর রূপক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। যেমন, তার মতে ‘ঈশ্বরের হাত’ কথাটি ঈশ্বরের রূপক ব্যবহার। আবার সিনাই পবর্তে মুসার সামনে আগুনের আকারে ঈশ্বরের উপস্থিতির ব্যাপারটিকেও আক্ষরিক অর্থে না বুঝে, বুঝতে হবে এক প্রগাঢ় অভিজ্ঞতার অভিব্যক্তি হিসেবে।

এককালের গোঁড়া ইহুদিবাদের লীলাভূমি জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইনেও ক্রমশ হেলেনিক প্রভাব বিস্তারলাভ করে। প্যালেস্টাইন নিজেকে যে বৃহত্তর জগতের অধীন ও অংশ বলে দেখতে পেল, তার প্রভাব থেকে শুধু রাজনৈতিক দিক থেকেই নয়, সাংস্কৃতিক দিক থেকেও মুক্ত থাকতে পারলো না। স্বদেশে প্রত্যাগত ও হেলেনিক প্রভাবে প্রভাবিত উদারভাবাপন্ন ইহুদিরা প্রতি বছরই তাকে আক্রমণ করতে লাগল। ফলে তাকে গ্রিক ভাষা শিখতে হলো, এমনকি এর প্রাচীন হিব্রু নামগুলোও হেলেনিক প্রভাবে পরিবর্তিত হলো। সুতরাং খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের মধ্যেই প্যালেস্টাইনে বেশ কিছু সংখ্যক উদার হেলেনিকপন্থী ইহুদির সমাবেশ ঘটল। এ-ও সম্ভব যে (যদিও ব্যাপারটি নিয়ে দার্শনিকদের মধ্যে মতভেদ আছে) নব-পিথাগোরীয়দের সঙ্গে পরিচয়লাভের মাধ্যমে এসিন সম্প্রদায়ভুক্ত ইহুদিরা যথেষ্ট প্রভাবিত হয়েছিল। বস্তুত, এসিনরা নব-পিথাগোরীর মত বহুল পরিমাণে গ্রহণ করেছিল। এসিনরা ছিল সাম্যবাদী ও সংসারবিরাগী সন্ন্যাসী। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকেই তাদের অস্তিত্ব ছিল। তবে রাষ্ট্রীয় কোনো ব্যাপারে তারা লিপ্ত হতো না। তারা ছিল দাসত্বপ্রথা ও ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিরোধী। বিশেষ করে, তারা পুণ্যময় জীবন এবং প্রতিবেশী ও ঈশ্বরের ভালোবাসার কাঙাল ছিলেন। তাদের দার্শনিক মত ও জীবনযাত্রা প্রণালীর সঙ্গে আদি খ্রিস্টানদের মতের এত বেশি মিল ছিল যে, এ থেকে কেউ কেউ ধর্মযাজক জন, ফিলো, এমনকি স্বয়ং যিশুও তাদের সান্নিধ্যে এসেছিলেন বলে অনুমান করেন।

ফিলো (আনু. ২০ – ৫০ খ্রি.)

ফিলোজুডিয়াস ছিলেন ইহুদি দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম। তার জীবন সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। তিনি ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার অধিবাসী। তার জন্ম খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকের শেষের দিকে। শৈশবে তিনি উপযুক্ত শিক্ষার সব সুযোগ সুবিধা পেয়েছিলেন এবং যৌবনের প্রারম্ভেই গ্রিক দর্শনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তবে হিব্রু প্রশিক্ষণের প্রভাবই তার মধ্যে প্রবল ছিল। তিনি নিজেকে রক্ষণশীল বলে মনে করতেন। তার চিন্তায় হিব্রু পক্ষপাতিত্ব বিদ্যমান। এ জন্য তিনি কোনো অজুহাত দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেন নি। তার ইহুদি ঐতিহ্যকে নিয়েও তিনি লজ্জিত ছিলেন না; বরঞ্চ ইহুদি ধর্মকে তিনি আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মনে করতেন। তিনি মুসার অকাট্যতা স্বীকার করেন এবং ইহুদি পুরাণকে ঈশ্বরের প্রেরিত গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করতেন। তিনি সমগ্র জীবন দর্শনচর্চায় ব্যয় করেন। তার সমসাময়িকগণ তার গভীর জ্ঞান ও পাণ্ডিত্যে চমৎকৃত হন এবং লক্ষ করেন যে, জ্ঞানের গভীরতা তার ধর্মভক্তিকে বিঘ্নিত করে নি।

ফিলোর দর্শনে বুদ্ধিবাদ ও ধর্মের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ দেখা হয়া। গ্রিক দর্শনের ইতিহাসের সঙ্গে তার পরিচিতি এবং গ্রিক দর্শনের শিক্ষার প্রতি তার সহানুভূতির ফলে তিনি হেলেনিক ও হিব্রু চিন্তার ঘনিষ্ঠতা দেখাবার প্রয়াস পান। তার মতে, শুধু প্লেটো ও নব-পিথাগোরীয়গণই নয়, পূর্ববর্তী সব চিন্তাবিদ, সমকালীন স্টোয়িকরা, এমনকি সংশয়বাদীরাও তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মশাস্ত্রে বিধৃত খাঁটি সত্যের অনুমান করেছিলেন। তার মতে, দার্শনিক ও পয়গম্বরগণ ভিন্ন উপায়ে একই সত্যের সন্ধান পান। এমনকি বহুঈশ্বৰ্ব্ববাদকেও (যার প্রতি গোঁড়া ইহুদিদের বিতৃষ্ণার অবধি ছিল না) মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না। গ্রিক দেবতারা অশুভ শক্তি নয় ( হিব্রুরা গ্রিক দেবতাদের অশুভ বলে মনে করতেন), বরং অংশত প্রাকৃতিক ঘটনাবলির, আর কিছুটা প্রাচীন বীরপুরুষদের স্মৃতির ব্যক্তিত্ত্বায়িত রূপবিশেষ।

জ্ঞানবিদ্যার ক্ষেত্রে ফিলো সংবেদন ও বুদ্ধির পার্থক্যনির্দেশ করেন। দৃশ্যমান জগতের প্রতীয়মান বস্তু ও ঘটনাবলি সংবেদনের লক্ষ্য। অপরপক্ষে বুদ্ধির কাজ জ্ঞানকে সংবদ্ধ করা ও জীবনের সারবস্তুর ধারণা দেয়া। সংবেদন চায় জড়বস্তুর জ্ঞান দিতে, আর বুদ্ধি চায় অজড় পদার্থের জ্ঞান দিতে। ফিলোর মতে, জ্ঞানপ্রক্রিয়ায় একটি ক্রমোন্নতির ধারা বিদ্যমান। এখানে আমরা দৈহিক সংবেদন থেকে শুরু করে ঐশী জ্ঞানের সর্বোচ্চ স্তরে উপনীত হয়ে থাকি। এ থেকে বোঝা যায় বুদ্ধি নয়, স্বজ্ঞাই জ্ঞানের সর্বোচ্চ রূপ।

ঈশ্বরকে জানার উপায় কী? ফিলোর মতে, ঈশ্বর এত মহান এবং জগৎ থেকে তিনি এত দূরে অবস্থিত যে, সহজ অভিজ্ঞতা কিংবা বুদ্ধির সাহায্যে তাকে জানা অসম্ভব। তবে উপমা, উপাখ্যান ও রূপকের মাধ্যমে ঈশ্বর সসীমের মনে নিজেকে ব্যক্ত করে থাকেন। বাহ্য চেতনার স্তর অতিক্রম করে উচ্চতর ভাবসমাধির পর্যায়ে মানুষের পক্ষে দিব্যদর্শন বা ঐশীজ্ঞান লাভ সম্ভব। এ পর্যায়ে ঈশ্বরকে তার বিশুদ্ধ একত্বে দর্শন করা সম্ভব। বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও অনুশীলনের অবশ্যই একটি ভূমিকা আছে; তবে এর সাহায্যে ঐশীজ্ঞানলাভ করা যায় না। ঈশ্বরের স্বরূপের ন্যায় ঈশ্বরের জ্ঞানও অনির্বচনীয়। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষা কিংবা যুক্তিতর্কের সাহায্যে ঐশীজ্ঞান বর্ণনা করা যায় না। ঐশীজ্ঞানের সঙ্গে যে উচ্চতর অভিজ্ঞতা যুক্ত, তা আমাদের উচ্চতম চিন্তার নাগালের বাইরে।

নব-পিথাগোরীয়বাদে যে দ্বৈতবাদ বিদ্যমান, ফিলোর মতবাদে তার সংকেত রয়েছে। তবে ফিলোর চিন্তায় প্লেটোর শিক্ষাই প্রাধান্য পেয়েছে, যদিও প্লেটোর মতকে ফিলো স্টোয়িক মতের আলোকে সংশোধন করেছেন বলে মনে হয়। ঈশ্বরের অতিবর্তন (transcendence) এবং জগৎ ও ঈশ্বরের মধ্যকার ব্যবধানের কথা ফিলো তার পূর্বসূরিদের চেয়েও জোরের সঙ্গে ঘোষণা করেন। প্লেটোদর্শনে শুভের প্রত্যয়ের যেমন সংজ্ঞানির্দেশ সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি ঈশ্বরের সংজ্ঞানির্দেশও সম্ভব নয়। ঈশ্বর পরম সৌন্দর্য পবিত্রতা একত্ব প্রভৃতি সসীম গুণের অতীত ও ঊর্ধ্বে। ঈশ্বর সম্বন্ধে ফিলো এ ধরনের যেসব বিশেষণ ব্যবহার করেছেন তাদের অর্থ এই যে, প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বর নির্গুণ ও নিরুপাধি। তিনি মানুষের মতো নন। ঈশ্বর আবার স্বর্গ বা মর্তের কোনো বস্তুর মতোও নন; কেননা এসব বস্তু সসীম ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, অথচ ঈশ্বর অতীন্দ্রিয় ও মানবীয় বুদ্ধির অতীত । তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। সবকিছুকে তিনি বেষ্টন করে আছেন ঠিক, কিন্তু নিজে কোনো বস্তু দ্বারা বেষ্টিত নন। তিনি স্বয়ং তিনিই। তিনিই সব।

আমরা শুধু জানি যে, ঈশ্বর আছেন; কিন্তু তিনি যে ঠিক কী, তা জানা অসম্ভব। এজন্যই তার নাম জেহোভা। তবে তিনি সদাসৃজনশীল এবং যাবতীয় সসীম পদার্থের পূর্ণতার উৎস ও কারণ । তিনি সব বস্তুর পরিণতিকারণ। শক্তি ও কল্যাণ তার দুটি স্বরূপগত গুণ। সর্বোত্তম কল্যাণসাধনেই তিনি তার শক্তি ব্যবহার করে থাকেন। নব-পিথাগোরীয়দের ন্যায় ফিলো মনে করেন যে, ঈশ্বর এত উচ্চে এবং জগৎ থেকে এত দূরে অবস্থিত যে, তিনি সরাসরি কিছুই সৃষ্টি করেন না। সৃষ্টিকর্মের দায়িত্ব তিনি কিছু মধ্যবর্তী স্বর্গদূতের হাতে অর্পণ করেন, এবং এ ব্যাপারে তাদের প্রয়োজনীয় শক্তিপ্রদান করেন। এই শক্তিবলেই জগতের সৃষ্টি।

আগেই বলা হয়েছে, কল্যাণ ও শক্তি ঈশ্বরের দুটি প্রধান গুণ। আর এ দুয়ের সমবায়েই লোগোস গঠিত। লোগোস বলতে ফিলো বুঝেছেন এমন এক সৃজনশীল শক্তিকে যার মাধ্যমে জগতের সৃষ্টি। ঈশ্বরের সঙ্গে লোগোসের সম্পর্ক সম্বন্ধে ফিলো স্পষ্ট করে কিছু বলেন নি। লোগোসকে তিনি কখনো ঈশ্বর থেকে পৃথক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সত্তা বলে, কখনো ঈশ্বরের দূত বলে, কখনো আবার ঈশ্বরের প্রথম পুত্র বলে বর্ণনা করেছেন। আবার কখনো তিনি একে ঈশ্বরের গুণ, কখনো তার প্রত্যয় অথবা চিন্তা, কখনো আবার জগতে অনুস্যূত সার্বিক শক্তি ও প্রজ্ঞা বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

ঈশ্বর ও লোগোসের সঙ্গে স্বর্গদূতদের সম্পর্ক বিষয়েও ফিলোর মত স্পষ্ট নয়। কোথাও কোথাও স্বর্গদূতদের তিনি ঈশ্বরের ভৃত্য ও অনুচর এবং ঈশ্বর ও জগতের মধ্যস্থতাকারী সত্তা বলে বর্ণনা করেন। আবার কখনো কখনো তাদের স্রেফ অলৌকিক মনের ধারণা ও ক্রিয়া বলে বর্ণনা করেন। কিন্তু এ দু’রকম বর্ণনার মধ্যে তিনি সন্তোষজনক সামঞ্জস্যবিধান করতে পারেন নি। এসব শক্তি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ কি-না, ফিলো তা-ও স্পষ্ট করে বলেন নি। এ সব শক্তিকে তিনি লোগাসোর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন এবং লোগোসকে ঈশ্বরের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা বলে বর্ণনা করেছেন।

লোগোস ঈশ্বরের প্রতিনিধি ও দূত, জগতের সৃষ্টি ও শাসনের যন্ত্র, স্বর্গদূতদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, ঈশ্বরের প্রথম পুত্র এবং দ্বিতীয় ঈশ্বর। লোগোস জগতের প্যাটার্ন বা আদর্শ। জগতের সবকিছু তারই সৃষ্টি। লোগোসের অধীনস্থ অসংখ্য স্বর্গদূত ও উপদূত জগতের শাসন ও নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত। তাদের কেউ কেউ নক্ষত্ররাজিতে অবস্থান করে তাদের গতিপথ পরিচালনা করেন। কেউ কেউ আবার জগতের সংস্পর্শে এসে এবং ইন্দ্রিয়ের প্রভাবে মানুষের দেহগ্রহণ করে এবং মানুষে পরিণত হয়। সুতরাং বলা চলে যে, প্রতিটি মানবাত্মা অলৌকিক সত্তার অংশবিশেষ, অলৌকিক মনের প্রতিচ্ছবি এবং তার উৎপত্তিস্থল থেকে বিচ্যুত ইন্দ্রিয় ও দেহের নিগড়ে সাময়িকভাবে আবদ্ধ ঈশ্বরের শক্তিবিশেষ।

ফিলো জগতের সঙ্গে ঈশ্বরের সম্পর্ক স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেন নি। লোগোস যদি ঈশ্বর থেকে স্বতন্ত্র কোনো পুরুষ হয়ে থাকেন, তা হলে জগতে অনুষ্ঠিত তার কার্যকলাপ দ্বারা ঈশ্বরের সঙ্গে জগতের সম্পর্কের ব্যাখ্যা হয় না। আবার লোগোস যদি ঈশ্বরের গুণই হয়ে থাকে, তা হলে জগতে তার ক্রিয়াকলাপ ঈশ্বরের ক্রিয়াকলাপেরই নামান্তর হয়ে যায়। তবে ঈশ্বর জগতের অতীত, এবং জগতের স্পর্শে ঈশ্বর কলুষিত নন— একথা প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে ফিলো তার দর্শনে জড়ের অবতারণা করেন। তার মতে, জগতের সব অন্যায় ও অশুভের মূলে রয়েছে জড়। জড় চিরদিনই ঈশ্বরের বিরোধী। জড় সবসময় লোগোসের কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। সব অকল্যাণের জন্য জড়ই দায়ী। ফিলো বলেন, ঈশ্বর যেহেতু শুভ, সুতরাং তিনি শুধু কল্যাণেরই কর্তা; আর এ জন্যেই ইন্দ্রিয়জগতের কোনো অন্যায় অশুভ কিংবা অন্য কোনো অপূর্ণতার জন্য ঈশ্বরকে দায়ী করা চলে না। পূর্ব-অস্তিত্বশীল বিশৃঙ্খল জড় থেকে ঈশ্বর জগৎসৃষ্টি করেছিলেন। এদিক থেকে বলা চলে যে, জগতের শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই। জড়ের স্বভাব বর্ণনা করতে গিয়ে ফিলো প্লেটো ও স্টোয়িকদের মতের মাঝামাঝি মত পোষণ করেন। প্লেটোর ন্যায় তিনি জড়কে অসৃষ্ট, আকারহীন, নিষ্ক্রিয় ও বিশৃঙ্খল অসত্তা বলে বর্ণনা করেন। একইসঙ্গে আবার প্লেটোর ন্যায় তিনি জড়কে ভৌত বস্তুর উপাত্তপ্রদানকারী সত্তাবিশেষ বলেও বর্ণনা করেন। প্লেটো জড়কে শূন্যদেশের নামান্তর বলেছিলেন; কিন্তু স্টোয়িকদের ন্যায় ফিলো জড়কে গুণসম্পন্ন বলে মনে করেন। স্টোয়িকদের ন্যায় আবার তিনি জগৎকে সক্রিয় শক্তি দ্বারা পরিচালিত বলে অভিমত দেন।

নৈতিক জীবনকে ফিলো ধর্মীয় জীবন থেকে মুক্ত বলে মনে করতেন না। তার মতে, নৈতিক জীবন ধর্মের প্রারম্ভিক পর্ববিশেষ। একই কারণে বুদ্ধিকে অনপেক্ষ বলা চলে না। বুদ্ধি বিশ্বাসের চেয়ে নিকৃষ্ট। ক্ষমতা ক্ষণস্থায়ী; যশ সম্মান ইত্যাদি সবই দৈবাধীন। অনুরূপভাবে ধনসম্পদও আপতিক সৌভাগ্যের ব্যাপার। শুধু বিশ্বাসের কথা স্বতন্ত্র। বিশ্বাস মানুষকে যথাযথভাবে মহৎ করে তোলে, মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত এবং আধ্যাত্মিক জীবনকে সমৃদ্ধ করে।

মধ্যযুগের বিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করতেন যে, বিশ্বাস মানুষের মনে বিষণ্নতা সৃষ্টি করে। ফিলো এ মত প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, বিশ্বাস মানুষের মনকে আশা প্রত্যাশায় পরিপূর্ণ করে তোলে। একজন বিশ্বাসী মানুষের ধ্যান-ধারণা জীবনের ঘাত প্রতিঘাত দ্বারা বিঘ্নিত হতে পারে না, দুঃখকষ্টও তার আনন্দ কমাতে পারে না। পৃথিবীকে যিনি সঠিকভাবে বোঝেন, তিনি কখনো বিষণ্ন বা নৈরাশ্যবাদী হতে পারেন না। তার মন সর্বদা প্রশান্ত ও সুস্থির থাকে। প্রতি কাজেই তিনি থাকেন প্রফুল্ল। মোটকথা, বিজ্ঞজনের জীবন ঈশ্বরের ক্ষমতারই সাক্ষ্য বহন করে। মানুষ সর্বদাই অবাঞ্ছিত কামনার তাগিদ অনুভব করে। এ পরিস্থিতিতে ফিলোর নির্দেশ, আমরা যেন আত্যন্তিক ভোগবিলাসের অপকারিতা সম্পর্কে সতর্ক থাকি। তার মতে, দৈহিক সুখ মানুষের শত্রুস্বরূপ। দৈহিক সুখে নিমগ্ন না হয়ে আমাদের উচিত আত্মিক আনন্দের দিকে মনোনিবেশ করা।

প্লেটো ও পিথাগোরসের মতো ফিলো জীবাত্মার পতন, পুণ্যবানদের মরণোত্তর জীবন, পাপাত্মাদের নতুন দেহধারণ, ইচ্ছার স্বাধীনতা, ঈশ্বরের সঙ্গে মানবাত্মার সাদৃশ্য, জীবাত্মার বিভিন্ন অংশ প্রভৃতি বিষয় বর্ণনা করেছেন। ফিলোর মতে, স্বাধীনইচ্ছার অপব্যবহার থেকেই পাপের সৃষ্টি। প্রজ্ঞার নির্দেশ অমান্য করে দৈহিক সুখে নিমগ্ন হওয়ার অর্থই হলো স্বাধীনইচ্ছার অপব্যবহার করা এবং পাপে লিপ্ত হওয়া। দেহ আত্মার কবরস্বরূপ, দেহই যাবতীয় অশুভের আকর। দেহের প্রভাবেই পাপের সৃষ্টি। আমাদের সবার মধ্যেই আদিপাপ সংক্রমিত; কেননা আমরা সবাই দেহের অধিকারী। এমতাবস্থায় আমাদের সকলেরই উচিত প্রজ্ঞার নির্দেশ মান্য করা এবং ইন্দ্রিয়ের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। আমাদের উচ্চতর প্রকৃতির আদিনিবাস স্বর্গীয় জগৎ ; আর প্রজ্ঞার অনুশীলন দ্বারা দেহের নিগড়মুক্ত হয়ে স্বর্গে ফিরে যাওয়ার মধ্যেই চূড়ান্ত মুক্তি নিহিত।

ফিলোর মতে, নির্মল অনুধ্যান এবং ঈশ্বরের সঙ্গে মরমি সংযোগ জীবনের পরম লক্ষ্য। ব্যবহারিক জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অগ্রাহ্য করে এ লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। সংসারবিরাগী সন্ন্যাসজীবন পুণ্য ও পবিত্রতালাভের একমাত্র উপায় নয়। সামাজিক জীবনের আচার-অনুষ্ঠান ও আদানপ্রদানে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ থেকে এবং জড়ীয় কামনায় সংযম অনুশীলন করে আমরা পুণ্যবান হতে পারি। ফিলো বলেন, অনুধ্যানী জীবনে প্রবেশ করার আগে আমাদের উচিত প্রচলিত সাধারণ গুণাবলির অনুশীলন করা। পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী; কিন্তু যে ক’দিন আমরা এখানে আছি, সে ক’দিন আমাদের উচিত পার্থিব প্রয়োজনের তাগিদ মেটাবার চেষ্টা করা, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা, সমাজের অন্যান্য নাগরিকের সঙ্গে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বজায় রাখা। মোটকথা, ঈশ্বরের সেবা করার আগে আমাদের উচিত মানুষের সেবা করা।

ফিলোর মতে, আদর্শ বিশ্বনাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই আমাদের সব কার্যকলাপ পরিচালিত হওয়া উচিত। ধর্ম দ্বারা পরিচালিত ঈশ্বরতন্ত্র (theocracy) আদর্শ সরকার। ফিলো যে আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনা করেন, তা মুসার বিধির (Mosaic Code) ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। একে তিনি প্যাগান দার্শনিকদের কল্পিত রাজ্যের চেয়ে উত্তম বলে মনে করতেন। তার মতে, হিব্রু আইন স্বয়ং ঈশ্বর দ্বারা প্রত্যাদিষ্ট, সুতরাং এ আইন অকাট্য এবং অন্য সব আইনের চেয়ে উৎকৃষ্ট। একে কোনোদিনই বাতিল করা যাবে না। কেননা তা ঈশ্বরের তরফ থেকে মানুষের জন্য একটি উপঢৌকনস্বরূপ।

সর্বোত্তম রাষ্ট্র কাকে বলে ? সর্বোত্তম রাষ্ট্র কি গণতান্ত্রিক হবে, না অভিজাততান্ত্রিক হবে? ফিলোর মতে, এ রাষ্ট্রের থাকবে একটি মিশ্র সংবিধান। ঐশ্বরিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি হবে এ রাষ্ট্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ঈশ্বর বিশ্বের শুধু শাসকই থাকবেন না, মানুষের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিচালকও হবেন। এতে বোঝা যায় যে, ফিলোর কল্পরাজ্যের ধারণায় ক্যালভিনের সরকারবিষয়ক আদর্শের পূর্বাভাস রয়েছে। ফিলোর ন্যায় ক্যালভিনও ঈশ্বরতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। অবশ্য ফিলো ক্যালভিনের চেয়ে কম শুদ্ধাচারী ছিলেন, এবং আধ্যাত্মিক ব্যাপারে তিনি বাধ্যতার করতেন না।

ফিলো যে নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা সুবিচার ও শান্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ সমাজে কোনো যুদ্ধবিগ্রহ কিংবা কোনো শোষণের অস্তিত্ব থাকবে না; সব জাতি সমানভাবে ঈশ্বরের গুণকীর্তন করবে। ইতিহাস সম্পর্কে ফিলোর ধারণা ছিল নিতান্তই আশাবাদী। তার মতে, মানবজাতি একদিন কুসংস্কার ও ভয় থেকে মুক্তিলাভ করবে। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে অস্ত্র চালাবে না, বরং সবাই আধ্যাত্মিক আদর্শের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করবে।

ইতিহাস সম্পর্কে ফিলোর এ ধারণা প্রচলিত গ্রিক ধারণার চেয়ে স্বতন্ত্র। গ্রিক ইতিহাসবিদদের অধিকাংশের মতে, ইতিহাস বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির উত্থান-পতনের ভাষ্য। থ্যুকিডাইডিস প্রমুখ ইতিহাসবিদ কোনো অতীন্দ্রিয় কারণের সাহায্য না নিয়ে ইতিহাসের এক প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কী করে মানুষের প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে, তারা তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। ফিলোর পদ্ধতি ছিল স্বতন্ত্র। তার মতে, ইতিহাস ঈশ্বর কর্তৃক পরিচালিত। এর একটি নির্দিষ্ট শুরু ও নির্দিষ্ট শেষ রয়েছে। এভাবে দেখা যায় যে, ইতিহাস সম্পর্কে যে মধ্যযুগীয় ধারণা সেন্ট অগাস্টিনের ‘সিটি অব গড’ গ্রন্থে সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি পেয়েছিল, ফিলোর চিন্তায়ই সে ধারণার সূত্রপাত।

ফিলোর কোনো শিষ্য বা অনুসারী ছিল কি না, তা জানা যায় না। তবে হিব্রু চিন্তাবিদদের মধ্যেই নয়, নব-প্লেটোবাদীগণ, খ্রিস্টীয় ধর্মতাত্ত্বিকগণ এবং আরব দার্শনিকদের মধ্যে তার চিন্তার যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়। শুধু তা-ই নয়, পাশ্চাত্য সভ্যতার ইতিহাসে ফিলো এক নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন। নিছক বুদ্ধির ওপর নয়, বিশ্বাস ও প্রত্যাদেশের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তার এ পদ্ধতি। তাছাড়া প্রাচীন ধর্মতত্ত্বে ব্যবহৃত কলাকৌশলেও তার রূপক পদ্ধতির যথেষ্ট প্রভাব ছিল। বিশেষ করেও ইহুদি ধর্ম ও গ্রিক দর্শনের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধানের জন্য তিনি যে চেষ্টা করেছেন, তা শুধু আলেকজান্দ্রীয় ধর্মতাত্ত্বিকদেরকেই নয়, মধ্যযুগের খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনকেও প্রভাবিত করেছে। বস্তুত, ফিলো ধর্মীয় ও পার্থিব চিন্তার মধ্যে সমন্বয়সাধনের যে চেষ্টা করেছিলেন, তা থেকেই রচিত হয়েছিল মধ্যযুগীয় দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি। তার চিন্তায় মানবতাবাদের স্থলে এক ঈশ্বরতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণের উদ্ভব ঘটে এবং মানুষের যাবতীয় কার্যকলাপ, চিন্তা ও আদর্শের মানদণ্ড হিসেবে ঈশ্বর স্বীকৃতি পায়। খ্রিস্টীয় ধর্মতত্ত্বে তার লোগোস মতবাদের প্রতিধ্বনি শোনা যায়। অতিবর্তী ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে কী করে মধ্যস্থতা করা যায়, তাতে এর সুস্পষ্ট ইংগিত ছিল।

তথ্যসূত্র

  • পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড : থেলিস থেকে হিউম, ডঃ আমিনুল ইসলাম, মাওলা ব্রাদারস, ২০১৪

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.