(ডেভিড কিজের গ্রন্থটির ওপর অর্ণব রেজা এর লেখা সারমর্মের পুনর্বিন্যাস)
Table of Contents
পটভূমি
৫৩৫-৩৬ সালের এক্সট্রিম ওয়েদার ইভেন্ট ও লেইট অ্যান্টিক লিটল আইস এইজ
প্রথম প্লেগ মহামারি (৫৪১-৭৫০/৬৭ খ্রি.)
ডেভিড কিজ ও তার সিক্সথ সেঞ্চুরি ক্যাটাস্ট্রফি থিওরি
ডেভিড কিস (David Keys) হচ্ছেন লন্ডনের দৈনিক পত্রিকা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রত্নতত্ত্ব সংবাদদাতা, পাশাপাশি ঐতিহাসিক জলবায়ু পরিবর্তনের উপর একজন লেখক, এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়গুলির উপর টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলিতে একজন অবদানকারী। তিনি ২০০০ সালে খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর জলবায়ু বিপর্যয়ের উপর একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন Catastrophe: An Investigation into the Origins of the Modern World (বিপর্যয় : আধুনিক বিশ্বের উদ্ভব নিয়ে একটি তদন্ত) নামে, যা অ্যাকাডেমিয়ায় মিশ্র অভ্যর্থনা লাভ করেছিল। বইটিতে বলা হয়েছে যে, খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ খ্রিস্টীয় অঞ্চলসহ সমগ্র বিশ্বে পরিবর্তন ঘটায়, যা প্রাচীন সভ্যতার সমাপ্তিতে অবদান রাখে এবং একটি নতুন যুগের সূচনা ঘটায় যা এখন মধ্যযুগ নামে পরিচিত। বইটিতে অনুমান করে বলা হয় যে, জলবায়ু পরিবর্তনগুলি বিভিন্ন পৃথিবীর ইতিহাসের বিভিন্ন উন্নয়নেই অবদান রেখেছে, যেমন জাস্টিনিয়ানের প্লেগের উত্থান (৫৪১-৫৪৯), আভারদের পতন, পশ্চিমে মঙ্গোলিয়ান উপজাতিদের অভিবাসন, সাসানীয় সাম্রাজ্যের সমাপ্তি, গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতন, ইসলামের উত্থান, তুর্কি উপজাতির সম্প্রসারণ, এবং টিওটিহুয়াকানের (Teotihuacán) পতন। ২০০০ সালে, একটি 3BM টেলিভিশন প্রযোজনা সংস্থা (WNET এবং Channel Four এর জন্য) কীজের বইকে ব্যবহার করে “Catastrophe! How the World Changed” (বিপর্যয়! কিভাবে বিশ্ব পরিবর্তিত হয়েছিল) নামে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করে। পিবিএস এর সিক্রেটস অফ দ্য ডেড সিরিজের অংশ হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটি সম্প্রচারিত হয়েছিল।
কিজ এর কাজটি মাইক বেইলি এর লেখা ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ Exodus to Arthur : catastrophic encounters with comets এর সম্প্রসারণ ছিল। এক্সোডাস টু আর্থার গ্রন্থে খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতকের ঘটনার প্রাইমারি এভিডেন্স হিসেবে ডেন্ডোক্রোনলজি (৫৪০ খ্রিস্টাব্দের দিকে বৃক্ষের প্রস্থচ্ছেদে সরু রিং), গ্রিনল্যান্ডিক আইস কোরে অ্যাসিডিটি (যা ভলকানিক এক্টিভিটি নির্দেশ করে), সেই সাথে সূর্যের ক্ষীণ হয়ে আসা সহ জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত জন অফ এফিসাস, প্রোকপিয়াস ও ক্যাসিওডোরাসের বিবরণকে সামনে আনা হয়। ডেভিড কিজ এগুলোকে গ্রহণ করেন, এবং সেই সাথে পূর্ব এশিয়া থেকে তথ্যগুলো গ্রহণ করেন এবং সেই থিওরিটির একটি নিজস্ব সংস্করণের বিকাশ ঘটান। এই ঘটনার কারণ হিসেবে তিনি আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতকে দায়ী করেন যা সম্ভবত ক্রাকাতোয়ায় সংঘটিত হয়।
কিজের বইটি মিশ্র পর্যালোচনা লাভ করে, এবং মূলধারায় কিজের লেখার গ্রহণযোগ্যতার অভাব দেখা যায়। পাবলিশার্স উইকলি বইটির সমালোচনা করে লিখেছে যে “বড় দাবির জন্য বড় প্রমাণের দরকার হয়, তবুও কিজ তার থিসিসের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য ইতিহাসকে পুনরায় একত্রিত করেছেন, কারণগুলোর ব্যাখ্যাদানকারী ক্ষমতা নিয়ে অবিরাম ওভারওয়ার্ক করে গেছেন, বিষয়টি ভেলিকোভস্কির (Velikovsky) তত্ত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যেখানে বলা হয়েছিল ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে একটি ধূমকেতু পৃথিবীতে আঘাত করেছিল।” ম্যালকম ডাব্লিউ. ব্রাউনের দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউতে বইটির প্রধানত একটি সমালোচনামূলক পর্যালোচনা প্রদান করে। তাতে বলা হয়, “তবুও, এই বইটি অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা উচিত, কেবল একটি রিমাইন্ডার বা অনুস্মারক হিসাবে যে, সত্যিকারের বিপদের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন আমাদের এই পৃথিবীটিতে বেঁচে থাকাটা খুব সরু সুতোয় ঝুলন্ত অবস্থায় আছে”। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ কেন ডার্ক মন্তব্য করেছেন যে “বইটিতে উপস্থাপিত আপাত প্রমাণের বেশিরভাগই অত্যন্ত বিতর্কিত, এগুলো নিম্নমান বা ভুল উৎসের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। […] তবুও, বইটিতে যেভাবে বৈশ্বিক পরিসরের দিকটি নিয়ে আসা হয়েছে, এবং ব্যাপক পরিবর্তনের সময়কাল হিসেবে যেভাবে খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতককে জোর দেয়া হয়েছে সেই দিকগুলো উল্লেখযোগ্য, সেই সাথে বইটিতে বেশ কিছু অস্পষ্ট তথ্য রয়েছে যেগুলো অনেকের কাছেই নতুন হবে। কিন্তু বইটি তার কেন্দ্রীয় থিসিসটি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বইটি তাতে আলোচিত হওয়া অনেক পরিবর্তনেরই কোন বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করেনি।” প্রত্নতত্ত্ববিদ ব্রায়ান এম. ফাগান এটিকে “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা” এবং “একটি আকর্ষণীয় এবং, কখনও কখনও, বাধ্যতামূলক বা আমাদেরকে মানতে বাধ্য করে এমন আখ্যান (এবং ভাল টেলিভিশন শো)” হিসাবে উল্লেখ করেছেন, এবং উপসংহার টেনে বলেছেন যে, “স্বল্পমেয়াদী জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্বের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে কিজ সঠিক, কিন্তু, আমাদের জ্ঞানের বর্তমান অবস্থায়, এরকম নির্ধারক এবং কিছুটা চাঞ্চল্যকরভাবে লিখিত বিপর্যয়ের ধারণাটি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায়।”
গোকতুর্কদের দ্বারা পূর্ব এশিয়ায় আভারদের বিতারন এবং আভার ও স্লাভদের পুর্ব রোমান সাম্রাজ্যে আক্রমণ
প্রায় ১৫০ বছর শাসনের পর আভাররা ৫৪৫ সালে গোকতুর্ক নামে একটি তুর্কিক জাতির দ্বারা ক্ষমতাচূত হয় ও ৫৫২ সালে গোকতুর্করা মঙ্গোলিয়ার অধিপতি হলে আভাররা পূর্ব এশিয়া থেকে পশ্চিমদিকে পালাতে বাধ্য হয়। গোকতুর্করা ৫৪৫ সালে উত্তর চাইনিজ রাজত্বের সাথে সন্ধি করে এবং ৫৫১ সালে বিদ্রোহীদের হাত থেকে আভার শাসকদের রক্ষা করে। এরপর তারা আভার শাসককে তুর্ক খানের জন্য তার কন্যাদান করতে বলে। গর্বিত আভার শাসক রাজি না হলে তুর্করা আভারদের উপর আক্রমণ ও গণহত্যা চালায়। আভার নেতা আনাঘুই আত্মহত্যা করে। প্রচুর আভারকে দাস বানানো হয়। যাই হোক, গোকতুর্কদের আক্রমণ ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে আভাররা পূর্ব এশিয়া থেকে পালিয়ে পশ্চিমদিকে ৩০০০ মাইলের লম্বা যাত্রা শুরু করে এবং ৫৫৭-৫৫৮ সালে তারা ইউরোপে আক্রমণ করে বসে। ২০ বছরের মধ্যে তারা সমগ্র পূর্ব ইউরোপে আক্রমণ করে সেখানে রোমান শক্তিকে দূর্বল করে দেয়। ইউরোপে ঢুকে আভাররা রোমানদের বিরুদ্ধে স্লাভদেরকে তাদের সঙ্গী হিসেবে পায়। স্লাভরা তখন পোল্যান্ড ও পশ্চিম ইউক্রেনে থাকতো। ৫২০ সালের দিকে তারা রোমানিয়া অঞ্চলে বসতি স্থাপন শুরু করে। তারা মূলত কৃষিজীবী ছিল। ৫৩৬-৫৩৭ সালে স্লাভরা দানিয়ুব সীমান্তে ব্যাপকভাবে ঢুকে পড়ে এবং লুটপাটের পাশাপাশি বহু রোমান নাগরিককে দাস বানায় – যা রোমান ইতিহাসবিদ প্রকোপিয়াস লিখয়ে গেছেন। ৫৪৫ সালে যখন রোমান সম্রাজ্য প্লেগের প্রকোপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলো তখন আরেকটি স্লাভিক আক্রমণ হয়। এবারে ৫৫৭-৫৮ সালে আভাররা ইউরোপে চলে এলে স্লাভ আর আভারদের একত্রে মিলে আক্রমণের উদ্যোগ শুরু হয়। ৫৫৮-৫৫৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি নতুন স্লাভ আক্রমণ শুরু হয়। তবে এই হামলার কারণ, প্রকৃতি এবং মাত্রা বেশ আলাদা ছিল। এটিই ছিল সেই ঘটনা যেখানে মঙ্গোলিয়া থেকে আভারদের অভিবাসন রোমান সাম্রাজ্যের উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। ৫৬০ সালে আভাররা রোমান সরকারের কাছে জমি চেয়েছিল। তা না পেয়ে তারা হাঙ্গেরিতে ঢোকে। ৫৬০-৫৭০ এ আভারদের সহায়তায় স্লাভরা ইলবে নদী পর্যন্ত বসতী করে। আভাররা রোমানদের দুধেল গাভী ও স্লাভদের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। ৬৬৮ সালে আভাররা পূর্ব হাঙ্গেরি, পূর্ব জার্মানি, রোমানিয়া, মলদোভা ও পশ্চিম ইউক্রেন মিলিয়ে নতুন সম্রাজ্য গঠন করে, যেখানে আভারদের অংশীদার হয় স্লাভরাও। আজ আভাররা বিলুপ্ত হয়ে ইতিহাসের পাতায় কিন্তু তাদের কারণেই আধুনিক পূর্ব ইউরোপের স্লাভিক পরিচয় তৈরি হয়েছে।
এই পুরো ঘটনাটা কেন ঘটল তা অনুসন্ধান করতে গেলে ৫৩৫-৩৬ সালের পরিবেশ বিপর্যয়ে যেতে হয়। সাইবেরিয়ায় গাছের কান্ডাংশ থেকে প্রমাণ মিলেছে মঙ্গোলিয়া ৫৩৫-৫৪৫ এ বিগত ১৯০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ জলবায়ু বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, এতে ঘাস আবৃত স্তেপে ব্যাপক আকারে খরা ও দুর্ভিক্ষ দেখা যায়। তাই আভাররাই বেশি ক্ষতির শিকার হয় কারণ তারা স্তেপে থাকতো। কিন্তু তুর্কিকরা সেভাবে ক্ষতির শিকার হয়নি কারণ তারা স্তেপের উত্তরের পাহাড় ও জঙ্গলে থাকতো। তুর্কিকরা ঘাসের উপর নির্ভরশীল ছিলনা, এছাড়াও ঘন মেঘ পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত ঘটায়, যে জন্য তাদের ওপর এই বিপর্যয়ের প্রভাব কম ছিল। সেই অঞ্চলে তুর্কিকরা শিকার করা, পশু পালা ছাড়া ছাড়া বিভিন্ন ধাতব শাস্ত্র বানাত, ফলে তাদের অর্থনীতি ভাল অবস্থায় ছিল। কিন্তু সমস্যা হলো স্তেপনিবাসী আভারদের, কেননা আভার অর্থনীতি পুরোপুরি ঘোড়া নির্ভর ছিল। মাংস, দুধ, পনীর, কুমিস মদ সবই তারা ঘোড়া থেকে পেত। ঘোড়া পালার দক্ষতার কারণেই তারা বিগত ১৫০ বছর রাজত্ব করেছিলো। এই ঘোড়া নির্ভরতাই তাদের কাল হয়ে দাঁড়ায়। ঘোড়াদের হজমশক্তি কম। ৭৫% প্রোটিন তারা বের করে দেয়, যেখানে গবাদি পশু ৭৫% প্রোটিন হজম করতে সক্ষম। খরায় ঘাস মরে যায়, জীবন্ত ঘাসে ১৫% ও মৃত ঘাসে ৪% প্রোটিন থাকে। তাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঘাসের পুষ্টি কমে গেলে গবাদি পশু পালন ঘোড়া পালনের চেয়ে বেশি লাভজনক হয়ে ওঠে। খরার কারণে ৫৩০ এর দশকে মেয়ে ঘোড়া প্রয়োজনীয় দুধ উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পরে সেজন্য অনেক বাচ্চা ঘোড়া মারা পড়ে। সব মিলে এই বিপর্যয়ের ফলে আভারদের ঘোরার সংখ্যা কমে যায়, তাতে এদের অর্থনীতি যেমন দুর্বল হয়ে ওঠে, তেমনি এরা ঘোরার অভাবে সামরিক দিক দিয়েও দুর্বল হয়ে যায়। এজন্যই বিপর্যয়ের ফলেই অর্থনীতি ও সামরিক দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা গোকতুর্করা আভারদেরকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হয়, আর সেজন্যই তারা ইউরোপে পালিয়ে গিয়ে সেখানে বসতি স্থাপনের জন্য রোমানদের ওপর আক্রমণ করে। উল্লেখ্য এই খরার কারণেই স্তেপে ৮৪০ সালে খরায় উইঘুর খানাতের পতন ঘটে ও ৮৪০ সালে খরায় উইঘুর খানাতের পতন ঘটে। ৫৩৭-৫৩৮ সালে খরায় প্রচুর চৈনিকও মারা যায়। যাইহোক, এদিকে এই ৫৩৫-৫৩৬ সালের জলবায়ু পরিবর্তন স্লাভদেরকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এই বিপর্যয়ের ফলে পোল্যান্ড, ইউক্রেইন, রোমানিয়া অঞ্চলে তাদের কৃষির ক্ষতি হয় বলেই তারা দক্ষিণে সরে যেতে ও রোমান সাম্রাজ্যে আক্রমণ করতে বাধ্য হয়।
প্লেগ ও আভার-স্লাভ আক্রমণের যৌথ প্রভাবে বাইজান্টাইন-সাসানিয়ান যুদ্ধ ও বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের আর্থিক অবনতি
৫৪১-৬০২ সময়কালে কয়েক ডজন প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল, যার মধ্যে চারটি প্রধান মহামারীও ছিল। এতে রোমান সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় এক তৃতীয়াংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল, এবং এর জিএনপি কমপক্ষে ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল, সম্ভবত ১৫ শতাংশেরও বেশিই হ্রাস পেয়েছিল। এ ছাড়াও, সাম্রাজ্য বছরের পর বছর ধরে আভারদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য কয়েক মিলিয়ন সলিডি প্রদান করেছিল এবং বলকান অঞ্চলে আভার এবং স্লাভদের জমি দখলের ফলে ৫ মিলিয়নেরও বেশি সলিডি হারিয়েছিল। প্লেগ ও আভার-স্লাভ আক্রমণের যৌথ প্রভাবই ৬০২ সালে বাইজান্টাইন ও সাসানিয়ান সাম্রাজ্যকে বাইজান্টাইন-সাসানিয়ান যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল, যার ফলে ভূ-রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা বিনষ্ট হয় এবং তার ফলে পারস্যের সাথে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের যুদ্ধ বাঁধে। কোন সন্দেহ নেই যে রোমানদের সাথে পারস্যদের এক পর্যায়ে একটি যুদ্ধ বাঁধতই, কিন্তু ৬০২ সালের বিশেষ পরিস্থিতি, তার তারিখ, তার প্রকৃতি, এবং তার সময়কাল নির্ধারণ করে দেয়। পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যকে প্লেগের চেয়েও আরও বেশি ব্যয় করতে হয়েছিল। বিশ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে সাম্রাজ্যটি আনুমানিক ৪০ মিলিয়ন সোনার সলিডি (বর্তমানে প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের সমতুল্য) এর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। সাম্রাজ্যের পূর্ব দিক থেকে পারস্য তো এদের অঞ্চল দখল করছিলই, সেই সাথে আভার-স্লাভদের অগ্রযাত্রার কারণে সাম্রাজ্যটি পশ্চিম দিক থেকে অঞ্চল হারাচ্ছিল। আর আভারদের অগ্রযাত্রার কারণে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য আরও ৮ মিলিয়ন বা তারও বেশি সোনার সলিডি হারিয়েছিল। পার্সিয়ান বা আভারদের দ্বারা দখল করা অঞ্চলগুলির অতীতের প্লেগ থেকে ক্রমাগত ক্ষতিগুলি প্রায় ৫ মিলিয়ন সলিডিতে আসতে হবে। পারস্য যুদ্ধের শেষ চৌদ্দ বছরে (৬১৬-৬৩০ খ্রি.) রোমান সম্পদের ক্ষতি সত্যিকারের বিপর্যয়কর অবস্থায় পৌঁছেছিল, তখন প্রতি বছর সাম্রাজ্যকে গড়ে ৩.৫ মিলিয়ন সোনার সলিডি হারাতে হয়েছিল (বেশিরভাগই পারস্যের জমি দখলের কারণে), যা ছিল সাম্রাজ্যের বার্ষিক রাজকীয় রাজস্বের ৭০ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদে দেখা যায়, ৫৪১-৬৩১ সালের ৯০ বছরের সময়কালে মোট প্রায় ৯০ মিলিয়ন সোনার সলিডির ক্ষতি হয়েছে। আর এই ক্ষতির এক তৃতীয়াংশেরও বেশি হয়েছিল প্লেগের কারণে। পারস্য যুদ্ধ ছিল আংশিকভাবে প্লেগ-প্ররোচিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সৃষ্ট একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে সম্পদের উৎসের ক্ষতি আনুমানিক ৪০ মিলিয়নে পৌঁছে যায়। পারস্য যুদ্ধে সামরিক ব্যয়ের পরিমাণ ছিল লক্ষ লক্ষ সোনার সলিডি। আভার সুরক্ষা- অর্থ প্রদানের পরিমাণ প্রায় ৫ মিলিয়নে এসেছিল, যখন আভার / স্লাভ জমি দখলের কারণে সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ সম্ভবত ১৩ মিলিয়ন ছিল। প্লেগের ফলে শহুরে বাজারের পতনও হয়েছিল, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে দিয়েছিল। গ্রামীণ ও শহুরে সরকারী অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। বেশিরভাগ সরকারী মেইল পরিষেবা এবং হাইওয়ে রোড-স্টেশন সিস্টেমের বেশিরভাগই – বিশেষ করে এশিয়ায় – বন্ধ হয়ে গিয়েছিল.২ প্রতিরক্ষায় শহরগুলির কৌশলগত ভূমিকাও আংশিকভাবে প্লেগ-প্ররোচিত জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে হ্রাস পেয়েছিল। আভার বা আভার মিত্রদের কাছে বলকান হারিয়ে রোমানরা তার প্রধান সামরিক বাহিনী নিয়োগের ক্ষেত্রগুলির মধ্যে একটিকে হারিয়ে ফেলে- এবং প্লেগ প্রায়শই তাদের সংকীর্ণ ব্যারাকগুলিতে সাধারণ জনসংখ্যার চেয়ে বড় আকারে হানা দিতো।
বাইজান্টাইন-সাসানিয়ান যুদ্ধের ফলে সাসানীয়দের পতন, বাইজান্টাইনদের অঞ্চল হারানো ও ইসলামের সম্প্রসারণ
৬০২ থেকে ৬২৮ সাল পর্যন্ত এই ২৭ বছরের বাইজান্টাইন-সাসানীয় যুদ্ধের সবচেয়ে বিধ্বংসী প্রভাব ছিল এই যে, এই দীর্ঘদিনের বিধ্বংসী যুদ্ধ বাইজেন্টাইন ও সাসানিয়ান উভয় সাম্রাজ্যকে পঙ্গু করে দেয়। সাসানীয়রা অর্থনৈতিক পতন, খসরু দ্বিতীয় এর সেনাভিযান, ধর্মীয় অস্থিরতা, এবং প্রাদেশিক শাসকদের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা সাসানীয় সাম্রাজ্যকে আরও দুর্বল করে দেয়। হাওয়ার্ড-জনস্টন বলেন, “হেরাক্লিয়াসের বিজয় ও তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াগুলোর ফলে নিকট প্রাচ্যে খ্রীষ্টধর্মের প্রধান দুর্গগুলো সুরক্ষিত হয় ও এর পুরানো জরথুস্ট্রিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বী গুরুতরভাবে দুর্বল হয়ে যায়। পরবর্তী দুই দশকে আরবদের আরও অসাধারণ সামরিক অর্জনের দ্বারা তারা আরও ছায়া হয়ে যায়।” যাইহোক, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল, বলকান অঞ্চল মূলত স্লাভদের হাতে চলে যায়। হাতে রয়েছে। উপরন্তু, আনাতোলিয়া বারবার পারস্য আগ্রাসনের দ্বারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং ককেশাস, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, ফিলিস্তিন এবং মিশরে সম্প্রতি পুনরুদ্ধার করা অঞ্চলগুলির উপর সাম্রাজ্যের দখল পারস্য দখলদারিত্বের কয়েক বছর ধরে আলগা হয়ে গিয়েছিল। তাদের আর্থিক মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, বাইজেন্টাইনরা পারস্যদের সাথে যুদ্ধের সফল সেনাদেরকে অর্থ প্রদান করতে এবং নতুন সৈন্য নিয়োগ করতে অসুবিধায় পড়ে। ক্লাইভ ফস এই যুদ্ধকে বলেছেন, “এই প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায় যা এশিয়া মাইনরের প্রাচীনত্বের সমাপ্তি চিহ্নিত করে”। কোনও সাম্রাজ্যই তাদের অঞ্চলকে পুনরুদ্ধার করার খুব বেশি সুযোগ পায়নি। কারণ এই অঞ্চলগুলো কয়েক বছরের মধ্যে তারা আরবদের আক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিল, যা ইসলাম দ্বারা সদ্য একীকৃত হয়েছিল। হাওয়ার্ড-জনস্টন এই ঘটনাকে “মানব সুনামি” এর সাথে তুলনা করেছিলেন। জর্জ লিস্কার মতে, “অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত বাইজেন্টাইন-পার্সিয়ান দ্বন্দ্ব ইসলামের পথ খুলে দেয়”। সাসানীয় সাম্রাজ্য দ্রুত এই আক্রমণের শিকার হয় এবং সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। বাইজেন্টাইন-আরব যুদ্ধের সময়, ক্লান্ত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সিরিয়া, আর্মেনিয়া, মিশর এবং উত্তর আফ্রিকার পূর্ব ও দক্ষিণ প্রদেশগুলো হারাতে হয়, ফলে সাম্রাজ্যটি আনাতোলিয়া এবং বলকান ও ইতালির দ্বীপ ও পাদদেশগুলির একটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একটি আঞ্চলিক শাসনে হ্রাস পায়। যাইহোক, পারস্যের বিপরীতে, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য শেষ পর্যন্ত আরব আক্রমণ থেকে বেঁচে যায়, তার অবশিষ্ট অঞ্চলগুলি ধরে রাখে এবং ৬৭৪-৬৭৮ এবং ৭১৭-৭১৮ সালে তার রাজধানীর দুটি আরব অবরোধকে নির্ণায়কভাবে প্রতিহত করে। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ক্রীট এবং দক্ষিণ ইতালিতে তার অঞ্চলগুলিও পরবর্তী দ্বন্দ্বে আরবদের কাছে হারিয়েছিল, যদিও এগুলিও শেষ পর্যন্ত পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। যাইহোক, কিছু ক্ষতি স্থায়ী ছিল, যেমন স্পেনের ক্ষতি, স্পেনের অবশিষ্ট বাইজেন্টাইন হোল্ডিংস, যেগুলোকে ৬২৯ সালে ভিসিগোথরা জয় করেছিল। একইভাবে, ৮ম শতাব্দীতে কর্সিকা লোম্বার্ডরা বিজয় করে। বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জ, সার্ডিনিয়া এবং সিসিলিকে ১০ম শতাব্দীতে আরবরা দখল করে।
প্লেগ ও দুর্যোগে আরব উপদ্বীপের ক্ষতি
ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত, ইয়েমেন আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে শক্তিশালী স্থানীয় রাজনৈতিক শক্তি ছিল। কিন্তু ৫৩০ ও ৫৪০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বের জলবায়ুর অস্থিতিশীলতার সাথে সাথে ইয়েমেনে দুটি দুর্যোগ আঘাত হানে। সম্ভবত ৫৩৯ বা ৫৪০ সালের পর থেকে বুবোনিক প্লেগ ইয়েমেনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। অবশ্যই ৫৪০-এর দশকের মধ্যে এই রোগটি সেখানে পৌঁছেছিল। এবং দ্বিতীয়ত, মারিব বাঁধের ধসে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের কৃষি অর্থনীতি যথেষ্ট পরিমাণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কোরানে বর্ণিত ইরামের বন্যা এবং পরবর্তীতে অন্যায়কারীদের ভেসে যাওয়ার ঘটনাটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই একটি পরিচিত ঐতিহাসিক ঘটনাকে বোঝায় – তা হচ্ছে প্রাচীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাঁধটির ভাঙ্গন যা ইয়েমেনের শুষ্ক অভ্যন্তরে মারিবে অবস্থিত ছিল। বাঁধটি ছিল প্রাক-আধুনিক যুগে প্রকৌশলবিদ্যার অন্যতম কৃতিত্বগুলোর একটি। এটি প্রাক-আধুনিক সময়ে মানবতার দ্বারা অর্জিত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দর্শনীয় কৃতিত্বগুলির মধ্যে একটি ছিল। মূল বাঁধটি ৫৩ ফুট উঁচু, ২,০৪৬ ফুট লম্বা এবং বেসে কমপক্ষে ২০০ ফুট প্রশস্ত ছিল। এর প্রধান কাজ ছিল বন্যার পানিকে কেন্দ্রীভূত করা যাতে তারা একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছায় এবং ৩,৭০০ ফুট দীর্ঘ খালের মধ্যে ২ টি প্রধান স্লুইসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সেখান থেকে ১৫ টি সেকেন্ডারি স্লুইস এবং ১২১ টি টারশিয়ারি স্লুইসের মাধ্যমে শত শত মাইল খাল নিয়ে গঠিত একটি বিশাল সেচ ব্যবস্থায় পরিণত হতে পারে। কমপ্লেক্সটি চব্বিশ হাজার একর জমিতে সেচ দিত এবং ত্রিশ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার লোকের জনসংখ্যাকে সুবিধা দিত। মারিব শহরটি সাবার শক্তিশালী রাজ্যের রাজধানী ছিল (কখনও কখনও বাইবেলে শেবা বলে মনে করা হয়) খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর শেষের দিকে পর্যন্ত এবং তারপরে প্রাচীন সাবা হিমিয়ারীয়দের অধীন হয়ে যাওয়ার পরে সাবা এবং হিমিয়ার যুক্তরাজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
মারিব বাঁধ কমপ্লেক্সের অবনতি শেষ অধ্যায়টি সমাপ্ত হয় ৫৯০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি তার চূড়ান্ত পরিত্যাগের মাধ্যমে। পঞ্চাশ থেকে ষাট বছর ধরে বিস্তৃত একটি প্রক্রিয়া ছিল – একক বিপর্যয়ের পরিবর্তে সংযুক্ত ঘটনাগুলির একটি সিরিজ। যাইহোক, এই প্রক্রিয়াটি প্রাথমিকভাবে মধ্য-ষষ্ঠ শতাব্দীর জলবায়ু বিশৃঙ্খলার দ্বারা শুরু হয়েছিল। আর এই বিশৃঙ্খলার ঘটনায় কেবল খরাই নয়, চরম তীব্রতার সাথে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের ঝড়ও এর অন্তর্ভূক্ত ছিল বলে মনে করা হয়। এই অদ্ভুত জলপ্লাবনগুলির মধ্যে একটিতে এত বিপুল পরিমাণে জল উৎপন্ন হয়েছিল যে, ৫৪০-এর দশকের কোনও এক সময়, মহান মারিব বাঁধটি একশত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পথ দেখিয়েছিল। ঘটনাটি একটি রাজকীয় শিলালিপিতে রেকর্ড করা হয়েছিল, এবং এটি মেরামত করার জন্য সারা ইয়েমেন থেকে একটি কর্মশক্তিকে উত্থাপিত করতে হয়েছিল, তাই ক্ষতিটি এত গুরুতর ছিল। ঘটনাস্থলের প্রত্নতাত্ত্বিক কাজ থেকে জানা যায় যে বন্যার শক্তি অভূতপূর্ব ছিল। অবশ্যই কর্তৃপক্ষ অভূতপূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল যাতে এটি আবার ঘটতে না পারে। প্রথমবারের মতো, বাঁধটি শক্তিশালী করার জন্য পাথরের বড় ব্লকগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল। বাঁধের ভূতাত্ত্বিক তদন্তে জানা গেছে যে ৫৪০-এর দশকে বাঁধটি ফেটে যাওয়ার পর দশ বছরে, পলি জমার হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। বেসিনের একটি অংশে পলির মাত্রা এক দশকে প্রায় ত্রিশ ফুট বেড়েছিল। যদিও সংশ্লিষ্ট অববাহিকার অংশগুলি ভিন্ন এবং তাই পুরোপুরি তুলনীয় নয়, তবে এটি লক্ষণীয় যে ৪৫০ খ্রিস্টাব্দে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার পর ৫৪০-এর দশকের মধ্যে শত বা তারও বেশি বছরে, মাত্র ষোল ফুট পলি জমা হয়েছিল। ৫৫০-এর দশকের পরে মারিব সম্ভবত আর তার জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য সক্ষম ছিল না, এবং মরুদ্যানের মধ্যে অনেক গোষ্ঠী, সেইসাথে তাদের সাথে যোগাযোগকারী যাযাবর গোষ্ঠীগুলি যথাক্রমে তাদের বার্ষিক মাইগ্রেশন প্যাটার্নগুলি স্থানান্তরিত করতে বা ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করতে বাধ্য হত। তবুও, স্কেল-ডাউন মারিব বাঁধ কমপ্লেক্স, যা এখন জলাধারের উত্তরের অঞ্চলে জল দিচ্ছে, তার ব্যবহার অব্যাহত ছিল। যাইহোক, ৫৩০, ৫৪০ এবং ৫৫০-এর দশকের খরা পরিস্থিতি এবং বিরতিহীন ঝড়গুলি কেবল বাঁধ এবং জলাধারকেই নয়, বরং উচ্চভূমি এলাকার বাস্তুসংস্থানেরও ক্ষতি করেছিল, যা থেকে জল প্রবাহিত হয়েছিল। খরা অবশ্যই উচ্চভূমির অনেক গাছপালাকে হত্যা করেছে; ফলস্বরূপ, ক্ষয় নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়, এবং আরও বেশি করে পলি মারিব জলাধারের মধ্যে প্রবাহিত হয়। ৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে যখন বন্যা আবারও বাঁধ ভেঙে দেয়, তখন বিশাল কাঠামোটি পরিত্যক্ত হয়, মারিবের জনসংখ্যা যা ছিল তার ১/৫ বা ১/৬ নিচে নেমে আসে এবং মারিবে কৃষি উৎপাদন তার প্রাক-৫৩০-এর দশকের স্তরের ছায়া হয়ে যায়। মারিবের জনসংখ্যা হ্রাস, এবং ইয়েমেনের প্লেগ-আক্রান্ত জনসংখ্যা বাঁধটি মেরামতকরার বর্ধিত ব্যয় বহন করতে সক্ষম ছিল না। সুতরাং এটি ছিল প্রাচীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকৌশল অর্জনগুলির মধ্যে একটি যা ইতিহাসে প্রবেশ করেছিল। কোরান এবং অন্যান্য আরব সূত্র অনুসারে, মারিব বাঁধের অবনতি এবং চূড়ান্ত ধ্বংস প্রকৃতপক্ষে বিপুল সংখ্যক লোককে নতুন ভূমির সন্ধানে মারিব এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছিল। এভাবেই বলা হয় যে, বানু ঘাসান এবং আযদ- এই দুটি গোত্র উত্তর দিকে মধ্য আরবের মদিনা মরুদ্যানে চলে গেছে।
৫৩০ সালে মক্কায় দূর্ভিক্ষ হয়েছিলো। ইবনে ইসাকের লেখায় এগুলো পাওয়া যায়। মুহাম্মদের প্রোপিতামহ আমরের আমলে এই দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো। আল তাবারই দুজন ঐতিহাসিকের লেখা বর্ননা করেন যারা আমর কিভাবে মকার বাসিন্দাদের সে সময় সহায়তা করেছিলো তার ব্যাপারে লিখে গেছে। এতে তার সুনাম মক্কাবাসীর মধ্যে ছদিয়ে পড়ে। সম্ভবত ৫৩০-এর দশকের দুর্ভিক্ষে অর্জিত আমরের উচ্চ খ্যাতি, তার বংশধরদের সামাজিক অবস্থানকে দৃঢ় করতে সহায়তা করেছিল – শেষ পর্যন্ত তার প্রপৌত্র মুহাম্মাদ সহ। ৫৪০ এর দিকে ইয়েমেনে প্লেগের কথাও ইবনে ইসহাকের লেখায় পাওয়া যায়। ইয়েমেনে প্লেগ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে তার একটি প্রাথমিক উল্লেখ কুরআনের প্রথম দিকের অংশগুলির মধ্যে একটিতে পাওয়া যায়। প্লেগকে আকাশ থেকে পাঠানো একটি অভিশাপ হিসাবে দেখা হয়েছে, এবং গাঢ় আক্রান্ত ত্বক ঈশ্বর-প্রেরিত “আবাবিল পাখি” দ্বারা ফেলে দেওয়া পোড়ামাটির পাথর বা সিজ্জিল হিসাবে লেখা হয়েছে, কুরআন ইয়েমেনের ইথিওপিয়ার আকশুমাইট সম্রাজ্যের আব্রাহা নিয়ন্ত্রিত একটি সেনাবাহিনীর সাথে কী ঘটেছিল তা বর্ণনা করে যা ৫৫০ সালের দিকে মক্কাকে হুমকি দিচ্ছিল। ইবনে ইসহাক এই বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেন যে, সেনাবাহিনী যখন পিছু হটে, তখন “তারা ক্রমাগত পথের ধারে পড়ে যাচ্ছিল, প্রতিটি জলের গর্তের কাছে শোচনীয়ভাবে মারা যাচ্ছিল। মারিবে প্রত্নতত্ত্ববিদদের দ্বারা আবিষ্কৃত একটি শিলালিপিতে বলা হয়েছে যে ৫৪০-এর দশকে বাঁধের মেরামতের কাজ বিলম্বিত করতে হয়েছিল কারণ প্লেগদ্বারা শ্রমশক্তি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ইয়েমেন কমপক্ষে এক হাজার বছর ধরে আরবের অভ্যন্তরে প্রধান দেশীয় শক্তি ছিল। প্রকৃতপক্ষে, এর জনগণ সমগ্র আরব উপদ্বীপের জনসংখ্যার অর্ধেক ছিল, এবং এর পতন অবশ্যই সেখানে একটি বিশাল শক্তি শূন্যতা তৈরি করেছিল। অবশ্যই দুই প্রজন্মের মধ্যে আরবের অভ্যন্তরে ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু স্থানান্তরিত হয়েছিল, মুহাম্মাদের সহায়তায়, মদিনার মরুদ্যানের দিকে, একটি মধ্য আরবীয় শহর যা তখন পর্যন্ত আরবীয় ইহুদি উপজাতিদের দ্বারা প্রভাবিত ছিল।
প্রাচ্যে রোমান আনুগত্যের হ্রাস ও ইসলামের এগিয়ে আসা
যদিও মুহাম্মাদ ৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং মাত্র ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার মিশন শুরু করেন, তবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বহিরাগত কারণ তাকে প্রভাবিত করেছিল এবং তার সাফল্যের দিকে পরিচালিত করেছিল, তার মধ্যে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা পূর্ববর্তী দশক, ৫৩০-এর দশকের জলবায়ু বিপর্যয়ের মধ্যে তাদের উৎপত্তি হয়েছিল। ইসলামের অভ্যুদয়ের মূল কারণটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই ছিল বৃহত্তর বিশ্বে বিদ্যমান অনন্য রাজনৈতিক এবং ধর্মতাত্ত্বিক পরিস্থিতি যখন মুহাম্মদ তার ধর্মীয় ধারণাগুলি বিকাশ করছিলেন। তাঁর ধর্মীয় দর্শনের প্রথম দিকের অংশগুলি প্রথমে প্রণয়ন করা হয়েছিল, স্মৃতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা হয়েছিল, এবং তারপরে ৬১০-৬২০ খ্রিস্টাব্দে কুরআনের প্রাথমিক বিভাগগুলির আকারে লেখা হয়েছিল – যে দশকে আরব এবং সমগ্র বিশ্বে সবাই, সম্পূর্ণরূপে রোমান সাম্রাজ্যের মৃত্যুর সাক্ষী হওয়ার প্রত্যাশা করেছিল, সেই সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা যা আটশত বছর ধরে ভূমধ্যসাগরীয় বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। মনে হচ্ছিল যেন পুরো বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে চলেছে- এবং বেশীরভাগ মানুষই যদি তা না করেও থাকে, তারপরেও অনেকেই আপাতদৃষ্টিতে আসন্ন এই বিপর্যয়কে কেবল রাজনৈতিক ও সামরিক পরিভাষায় নয়, বরং ধর্মীয় ও মহাজাগতিক পরিভাষায়ও বিবেচনা করতো।
ইহুদি ও খ্রিষ্টান উভয়ই অবশ্যই ৬০৫-৬৩০ সালের পারস্যের যুদ্ধকে পূর্ববর্তী সংঘাতের চেয়েও মহাজাগতিক পরিভাষায় দেখেছিল। এবং সেই সময়ে, অনেকে ৬১০-৬২০ সালে সাম্রাজ্যের আপাতদৃষ্টিতে আসন্ন পতনকে (মুহাম্মাদের অভ্যুদয়ের সময়) মশীহের আগমন এবং বিশ্বের সমাপ্তির ঘোষণা হিসাবে দেখেছিল। প্রকৃতপক্ষে, ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যরা যখন জেরুজালেম দখল করে নেয়, তখন বলা হয় যে, “সমবেত ফেরেশতাগণ”, “ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরোধিতা” করতে অনিচ্ছুক, পবিত্র শহর ছেড়ে চলে যায়, কারণ সর্বশক্তিমান তা শত্রুকে দিয়েছিলেন, খ্রীষ্টীয় পাপ “ঈশ্বরের অনুগ্রহকে অতিক্রম করেছিল।” পারস্য যুদ্ধের আগে লেখা একটি খ্রীষ্টীয় ভবিষ্যদ্বাণী (কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে, এর ঠিক পরেই লেখা হয়েছিল) বলেছিল যে শীঘ্রই “সন্ধ্যা ছাড়া দিন” মানবজাতির জন্য আসবে এবং “পার্থিব শক্তির সমাপ্তি ঘটবে”।
ইহুদিরা ৭ম শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে রোমান সাম্রাজ্যের আপাতদৃষ্টিতে আসন্ন পতনকে প্রমাণ হিসাবে দেখেছিল যে “পশু” (পূর্বে পৌত্তলিক কিন্তু এখন খ্রিস্টান সাম্রাজ্য) ধ্বংস হয়ে গেছে এবং যে শেষ রোমান সম্রাট বা খ্রিস্টান পোপের ছদ্মবেশে শয়তান সে আসন্ন মশীহ দ্বারা নিহত হবে। তারা পারসিকদের (এবং কয়েক বছর পরে, আরবরা) এজেন্ট হিসাবে দেখেছিল যারা “রোমান জন্তুকে” ধ্বংস করতে সহায়তা করবে। ষষ্ঠ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে সহিংসতা এবং প্রায়শই মশীহ ইহুদি বিপ্লবী মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছিল এবং উৎসাহের সাথে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং ৭ম শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে সাম্রাজ্যের পতন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ওভারড্রাইভে চলে গিয়েছিল। ৬০৮ সালে এন্টিওকে, খ্রিস্টানদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরের প্রচেষ্টার সময় পার্সিয়ানরা শহরটিকে হুমকি দেওয়ার সাথে সাথে ইহুদিরা মহল্লায় একটি বড় বিদ্রোহ শুরু করে। প্রথমে ইহুদি বিদ্রোহীরা সফল হয়, এবং তাদের সম্প্রদায়ের মূল শত্রু, শহরের শক্তিশালী খ্রিস্টান পিতৃপুরুষ, আনাস্তাসিয়াসকে বন্দী করা হয়, হত্যা করা হয় এবং তার দেহ বিকৃত করা হয়। কিন্তু শীঘ্রই বিদ্রোহটি দমন করা হয়েছিল, এবং আটশত বছরের পুরানো এন্টিওকান ইহুদি সম্প্রদায়টি প্রায় সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।
জেরুজালেমের পতন এবং এডেসার (তুরস্কের আধুনিক উরফা) অবরোধের সময়, ইহুদি রোমান-বিরোধী, খ্রিস্টান-বিরোধী অংশগ্রহণ সমানভাবে সহিংস এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল। এবং ইসলামের জন্মের পরে, যখন প্রথম দিকের মুসলমানরা রোমান সাম্রাজ্যকে চূর্ণ করতে শুরু করেছিল, তখন যে ইহুদি সম্প্রদায়গুলি – নিপীড়িত এবং মশীহের মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছিল তারা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিল। কিছু যিহুদি ভেবেছিল যে মুহাম্মাদ স্পষ্টতই একজন নবী ছিলেন যিনি মশীহের জন্য পথ প্রস্তুত করতে এসেছিলেন। ৬৩৪ সালে প্যালেস্টাইনের সিকামিনুমের ইহুদিরা বলেছিল, “ক্যান্ডিডাটাস নামে একজন রোমান কর্মকর্তা মুসলিমদের দ্বারা নিহত হয় এবং তাতে ইহুদীরা খুব আনন্দিত হয়েছিল বলে উল্লেখ আছে। তারা আরও বলে যে একজন নবী আবির্ভূত হয়েছেন এবং মশীহ এর আগমনের ঘোষণা দিয়েছেন”। ইসলাম আদর্শগতভাবে তার সময়ের জন্য উপযুক্ত ছিল। সেটি ছিল নতুন ধর্ম যা সেই সময়ের অ্যাপোক্যালিপটিক পরিবেশ থেকে সরাসরি আবির্ভূত হয়েছিল। কুরআনের প্রারম্ভিক সূরাসমূহের (অধ্যায়সমূহ) একটি অত্যন্ত অ্যাপোক্যালিপটিক স্বাদ রয়েছে। মুহম্মদ বলেছেন যে, কেয়ামতের দিন ও তার পরে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে মনফ্যাসাইট খ্রিস্টান হেরেসি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং রোমানরা তা দমন করলে আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয়। মিশরীয়রা নিজেদের রোমান মনে করার পরিবর্তে প্রাচীন মিশরীয় ঐতিহ্য ও মধ্যপ্রাচ্যীয় জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। একটি কাহিনীতে জানা যায় একজন বিশপ পার্সিয়ান আর্মির আক্রমণ থেকে পালিয়ে এক ফারাও এর সমাধিতে আশ্রয় নেন। সেখানে ফারাও এর আত্মা তার সামনে এলে প্রথমে ভয় পেলেও পরে তাকে ব্যাপ্টাইজ করেন। এভাবেই আরব, মিশরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের বাকি জাতিগোষ্ঠী ধীরে ধীরে রোমান রাষ্ট্রের প্রটি তাদের আনুগত্য সরিয়ে নিতে থাকে।
তুর্কিদের উত্থান ও খাজার
যদিও আভার-সম্পর্কিত পরিবর্তনগুলি উন্মোচিত হতে মাত্র ১৫০ বছর সময় নিয়েছিল, তুর্কিরা বিশ্বে সমানভাবে নাটকীয় পরিবর্তনগুলি করতে প্রায় এক হাজার বছর সময় নিয়েছিল। ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মঙ্গোলিয়ায় একটি জলবায়ুগতভাবে প্ররোচিত রাজনৈতিক ও জাতিগত বিপ্লব কীভাবে এক হাজার বা তারও বেশি বছর পরে বোহেমিয়া থেকে বাংলাদেশে এত বেশি সংখ্যক মানবকে প্রভাবিত করেছিল? ঘটনাগুলির ক্রমটি জটিল ছিল, তবে যে ঘটনাটি এটিকে গতিশীল করে তোলে তা প্রায় অবশ্যই ৫৩০ এর দশকের জলবায়ু বিশৃঙ্খলা ছিল। গজনভী সম্রাজ্যের শুরু, খাজার (সেলজুকরা ইহুদি ইনফ্লুয়েন্সড ছিল এবং একজন আরব ঐতিহাসিকের মতে প্রথম সেলজুক খাঁড়া সিনাগগে প্রার্থনা করত, চুমানরাও ইহুদি প্রভাবিত ছিল), হাঙ্গেরিয়ানদের মধ্যে খাজার প্রভাব ছিল। ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে খাজার উপজাতিদের মধ্যে একটি, কাবাররা খাজার রাজার সাথে মতানৈক্যের পর খাজার হার্টল্যান্ড থেকে পালিয়ে যায়। খাজার জাতির অংশ হিসাবে এই উপজাতিটি প্রায় নিশ্চিতভাবে ইহুদি ছিল এবং এটি প্রাথমিক মাগিয়ারদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল। কিয়েভ সম্ভবত ৯ম শতাব্দীতে বা তার আগে ইহুদি খাজারদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল – ৮৮২ সালে ভাইকিংদের দ্বারা এটি দখল করার আগে।
খাজার সাম্রাজ্য একেশ্বরবাদী ছিল এবং ইসলামের পশ্চিমদিকে ছড়িয়ে পড়া রোধ করেছিল। যদি সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি না থাকত, তাহলে ইসলাম সম্ভবত পশ্চিমে পৌত্তলিক পূর্ব ইউরোপে ঢুকে পড়তো। খ্রিস্টীয় ৮ম ও ৯ম শতাব্দীতে পূর্ব ইউরোপ এবং পৌত্তলিক স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় ভাইকিংস পরে খ্রিস্টান হয়েছিল। ইসলামী সম্প্রসারণের উপর খাজার ব্লকের বাধা না থাকলে এরা খ্রিস্টান না হয়ে মুসলিম হয়ে উঠতে পারত। তাত্ত্বিকভাবে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, পূর্ব অস্ট্রিয়া, চেক এবং স্লোভাক ভূমি, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে এবং ভাইকিং পূর্ব ইংল্যান্ড সকলেই মুসলিম হতে পারত, যদি খাজার সাম্রাজ্য ইসলামী সম্প্রসারণকে বাধা না দিত। যদি খাজার সাম্রাজ্য ইসলামী সম্প্রসারণকে প্রতিরোধ না করত, তাহলে এটাও সম্ভব ছিল যে নরম্যানরা (মূলত ডেনমার্ক ভাইকিং) ১০৬৬ সালে ইংল্যান্ড জয় করার সময় পর্যন্ত দুইশত বছরে মুসলিম হতে পারত। আরবরা যদি এখন ইউক্রেন এবং রাশিয়া দখল করে নিত, তবে রুশ নামে পরিচিত একটি ভাইকিং জাতি রাশিয়া প্রতিষ্ঠার জন্য বাল্টিক থেকে দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে অগ্রসর সক্ষম হত না।
ব্রিটেইন ও আয়ারল্যান্ডে ক্ষতি ও ভাষা-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, আর্থারিয়ান রোমান্সের উদ্ভব, অ্যাংলো-স্যাক্সনদের ইংল্যান্ড দখল
ব্রিটেন সংগৃহীত গাছের মুলের অবশেষ প্রমাণ দেখায় যে ৫৩৫-৩৬ সালে গাছের বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল এবং ৫৫৫ সাল পর্যন্ত তা পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি। ৫৩৫-৫৫৫ সময়কালে প্রধান জলবায়ু সমস্যার ঘনত্ব ৪৮০ থেকে ৬৫০ বছরের মধ্যে আগে ও পরে ১৭০ বছরের সময়ের তুলনায় সাতগুণ বেশি ছিল। আইরিশ অ্যানালস বলে যে আয়ারল্যান্ডে ৫৩৮ সালে একটি দুর্ভিক্ষ (“রুটির ব্যর্থতা”) ছিল, প্রায় নিশ্চিতভাবে জলবায়ু সমস্যার কারণে। ব্রিটিশ আবহাওয়া অফিসের জরিপ ১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত হওয়া আবহাওয়ার তারতম্য নিয়ে -একটি আবহাওয়া কালপঞ্জি প্রকাশ করে যে, ৫৩৬ খ্রিষ্টাব্দে “টুইডে ভারী হতাহতের বন্যা” হয়েছিল; ৫৪৫ সালে একটি “তীব্র ঠান্ডা শীত” ছিল; ৫৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ২৫০ জন লোক “লন্ডনে ঝড়ে” নিহত হয়, যেখানে “অনেক বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছিল”; ৫৫০ সালে “বড় শিলা” স্কটল্যান্ডে পুলেটের ডিমের মতো পাথরহয়ে বর্ষিত হয়। ৫৫২ খ্রিষ্টাব্দে “স্কটল্যান্ডে পাঁচ মাসের জন্য ভয়াবহ বৃষ্টি” হয়; ৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দে “শীতকাল তুষারের সাথে এতটাই তীব্র ছিল ও পাখি এবং বন্য প্রাণীরা এতটাই বশীভূত হয়ে পড়েছিল যে তারা নিজেদেরকে হাত দিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়”; এবং ৫৫৫ সালে “ব্রিটেন জুড়ে তীব্র বজ্রপাত” হয়েছিল। ওয়েলশ অ্যানালস আসলে ৫৩০-এর দশকের দুর্ভিক্ষকে একই বাক্যে উল্লেখ করে যেখানে আর্থারের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে; ৫৩৭ এ ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডে সংঘটিত একটি গণমৃত্যু বলে অভিহিত করে। এই মরণশীলতা প্রায় নিশ্চিতভাবেই “রুটির ব্যর্থতা” (দুর্ভিক্ষ) হিসাবে একই ঘটনা ৫৩৬ এবং / অথবা ৫৩৮ সালে আলস্টারের অ্যানালস-এ উল্লেখ করা হয়েছে।
৫৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বুবোনিক প্লেগ পূর্ব আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্য ও ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, অবশেষে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের তীরে পৌঁছায়। আয়ারল্যান্ডে, অ্যানালস অফ আলস্টার রেকর্ড করে যে “একটি ভয়ংকর মহামারী” (একটি “মরণশীল ম্যাগনা”) ছড়িয়ে পড়ে। অভিজাতদের মধ্যে, কমপক্ষে ছয়জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব – ফিনিয়া, মোককু, তেলদুইব, কোলম, ম্যাক টেইল, সিনচেল এবং ইনিস সেল্ত্রার কোলাম – মারা যায় বলে মনে করা হয়। ওয়েলসে, ওয়েলশ অ্যানালস আরও প্রকাশ করে যে ৫৪৭ সালে (কিছু আধুনিক ঐতিহাসিকদের দ্বারা ৫৪৯ সংশোধন করা হয়েছে) Gwynedd এর রাজা, Maelgwn প্লেগে মারা যান। দুটি মূল স্থান এই রোগের জন্য প্রবেশের সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রাথমিক পয়েন্ট হিসাবে মনে করা হয়: উত্তর কর্নিশ উপকূলে টিন্টাগেল, এবং ব্রিস্টল চ্যানেল থেকে দুই মাইল দূরে ইয়ো নদীর উপর ক্যাডবেরি কংগ্রেসবেরি। উভয় জায়গারই সম্ভবত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে উৎপন্ন জাহাজগুলির সাথে সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এই টিন্টাগেল হলো রাজা আর্থারের ধারণার সাথে সম্পর্কিত পৌরাণিক স্থান। ৫ম শতাব্দীতে এবং ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমার্ধে একটি রাজকীয় দুর্গ ছিল বলে মনে হয়। এখানে রোমানদের সাথে ব্যাপক ব্যবসা বাণিজ্য হত। কর্নওয়াল, ডেভোনে বেশ কিছু এলাকা উজাড় হয়ে যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রাচীন রোমান শহর ভিরোকোনিয়াম (Wroxeter), যা জনসংখ্যার একটি বড় পতনের সম্মুখীন হয়েছে বলে মনে হয়, তারপর শহরের সম্পত্তি সীমানা একটি সম্পূর্ণ পূনর্গঠন করা হয়েছে।সাইট থেকে প্রাপ্ত প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে শহরের প্রধান বাজারটি অব্যবহৃত হয়ে পড়েছিল, সম্ভবত বাণিজ্য এবং গ্রাহকের সংখ্যা হ্রাসের কারণে। সম্ভবত ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বেশ কয়েকবার প্লেগের পুনরাবৃত্তি হয়েছিল এবং এই রোগের ফলে (এর আগে দুর্ভিক্ষের সাথে একত্রে) দক্ষিণ-পশ্চিম ব্রিটেনে (যা এখন দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস) ৬০ শতাংশ পর্যন্ত জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল। এটাও সম্ভব যে দক্ষিণ-পশ্চিম ব্রিটেন সহ উত্তর ইউরোপে, এই রোগটি মহাদেশের উষ্ণ, শুষ্ক দক্ষিণের তুলনায় আরও সহজে এবং আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। প্লেগ ব্যাকটেরিয়া স্যাঁতসেঁতে জলবায়ুতে অনেক ঘন্টা বেঁচে ছিল, শুষ্ক ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মাত্র কয়েক মিনিটের তুলনায়।
৫৩৮ থেকে ৫৫৩ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিল আয়ারল্যান্ডের জন্য এক দূর্যোগময় সময়ের একটি। ৫৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু বিশৃঙ্খলা আয়ারল্যান্ডে ফসলের ব্যর্থতা এবং দুর্ভিক্ষের দিকে পরিচালিত করেছিল। অ্যানালস অফ আলস্টার বলে যে ৫৩৮ সালে একটি “রুটির ব্যর্থতা” ছিল। এই ফসলের ব্যর্থতা আয়ারল্যান্ডে উদ্ভিদের বৃদ্ধির একটি বিশেষভাবে গুরুতর সামগ্রিক বিঘ্নের অংশ ছিল যা ৫৩৬ থেকে ৫৪০ সালের ট্রি-রিং রেকর্ড সাক্ষ্য দেয় – একটি রেকর্ড যা ক্রস-সেকশনিং এবং আইরিশ পিট বোজে আবিষ্কৃত জলাবদ্ধ প্রাচীন ওকসের ট্রাঙ্কগুলি বিশ্লেষণ করে সংকলিত হয়েছে। এরপর ৫৪০-এর দশকের গোড়ার দিকে বা মধ্যভাগে একটি ভয়াবহ মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। আইরিশ সূত্রগুলি এই দুর্যোগের জন্য দুটি পরস্পরবিরোধী তারিখ সরবরাহ করে। তাদের মধ্যে একজন, মধ্যযুগীয় ক্রোনিকাম স্কোটোরাম, ৫৪১ দেয়, একটি তারিখ যা ইঙ্গিত করে যে মহামারী (সম্ভবত গুটিবসন্ত বা অনুরূপ রোগ) ৫৩৮ দুর্ভিক্ষের দ্বারা উদ্ভূত হয়েছিল। সেই বছরে ফ্রান্স এবং স্পেন উভয়ই ইতিমধ্যে প্লেগ দ্বারা সংক্রামিত হয়েছিল এবং এটি সম্ভবত এই অঞ্চলগুলির যে কোনও একটি থেকে বা সরাসরি ভূমধ্যসাগর থেকে আয়ারল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়েছিল। ৫৫০ খ্রিষ্টাব্দে আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছিল-এবার প্রায় নিশ্চিতভাবেই প্লেগ। ইতিহাসে মরণশীল ম্যাগনা (গ্রেট ডেথ) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, এই রোগটি অবশ্যই জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, যার মধ্যে অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত এবং শাসক অভিজাতদের একটি বড় অংশ রয়েছে। অ্যানালস অফ আলস্টার আসলে পাঁচটি বিশিষ্ট ভিক্টিমের মৃত্যুর রেকর্ড করে – উত্তর-পূর্বের বাঙ্গোর থেকে সিনিয়র গির্জাম্যান, দক্ষিণে টিপ্পেরারি, পূর্বে ডাবলিন এলাকা এবং আয়ারল্যান্ডের কেন্দ্র ও পশ্চিমে লিনস্টার এবং লফ ডার্গ। সম্ভবত এই এক প্রাদুর্ভাবে গির্জার শীর্ষ স্তরের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ যাজক নিহত হয়েছিলেন। তারপর ৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দে, ৫৫০-এর প্রাদুর্ভাবের ভয়াবহতা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই, তৃতীয় মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। প্লেগের কারণে ঘন বসতিপুর্ন এলাকা উজাড় হলে অনুর্বর এলাকার ওয়ার লর্ডদের জন্য নতুন সুযোগ আসে এই উর্বর এলাকাগুল দখল করার। ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিপর্যয় জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে বাধ্য করেছিল। যেহেতু ঘন ঘন স্থানীয় যুদ্ধ হতে থাকে। ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে, এমনকি হতদরিদ্র কৃষকরাও তাদের অপেক্ষাকৃত নম্র বাসস্থানগুলির চারপাশে প্রতিরক্ষা নির্মাণ করতে শুরু করে।
৬ষ্ঠ শতাব্দীর প্লেগ বিপর্যয় প্রকৃতপক্ষে ওরাল ট্রেডিশন এবং সাহিত্যে সংরক্ষণ করা হতে পারে যা শতাব্দী পরে মধ্যযুগীয় আর্থারিয়ান রোম্যান্সের বিশেষ দিকগুলির জন্য সূত্র হিসাবে কাজ করেছিল, এটি নিয়ে বিশেষ করে তারা কাজ করেন যারা হলি গ্রেইলের সন্ধানের সাথে যুক্ত ছিলেন। “ওয়েস্ট ল্যান্ড” ধারণাটি ১২শ থেকে ১৫শ শতাব্দী পর্যন্ত কমপক্ষে অর্ধ ডজন আর্থারিয়ান রোম্যান্সের মধ্যে পাওয়া যায়। এটি একটি সম্পূর্ণ অ-আর্থারিয়ান, মধ্য-একাদশ শতাব্দীর ওয়েলশ মহাকাব্যের মধ্যেও পাওয়া যায় যা মাবিনোগি নামে পরিচিত এবং সম্ভবত ১২শ শতাব্দীর ব্রিটেনের রাজাদের ইতিহাসে, মনমাউথের জিওফ্রে দ্বারা রচিত। রাজা আর্থারের মৃত্যুর তারিখ বলা হয় ৫৩৭ সাল। আর্থারের মৃত্যুর জন্য দেয়া এই তারিখটিকে সম্ভবত কন্টিনেন্টাল ঐতিহাসিকরা কনস্টান্টিনোপল এবং ইউরোপে প্লেগ বিপর্যয়ের সূচনার কালের সাথে সঙ্গতি রেখেই দিয়েছেন। এটি আকর্ষণীয় যে আর্থারের মৃত্যুর জন্য “নির্বাচিত” তারিখগুলোর সবই প্রাকৃতিক দুর্যোগের তারিখগুলোর সাথে মিলে যায়। মধ্যযুগীয় আর্থারিয়ান রোম্যান্সকে দুর্ভিক্ষ এবং/অথবা রোগ এবং/অথবা যুদ্ধের সাথে যুক্ত হিসাবে দেখা হয় – ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মধ্য থেকে শেষের দিকে বাস্তব পরিস্থিতিগুলির একটি সম্ভাব্য উল্লেখযোগ্য প্রতিফলন, যেখানে দুর্ভিক্ষের পড় প্লেগ নেমে আসে, যার ফলে আক্রমণ এবং যুদ্ধ করা হয়েছিল। আপেক্ষিক কালপঞ্জি আর্থারিয়ান রোম্যান্সে কিছুটা ধোঁয়াশা, তবে সমস্ত উপাদান সেখানে রয়েছে। এমনকি যে ধরনের রোগ—অর্থাৎ প্লেগ—সেই রহস্যময় ক্ষতের প্রকৃতিতে ইঙ্গিত করা যেতে পারে, যা অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেশের রাজা ভোগ করেন। এই রাজকীয় ক্ষতটি – যা জাদুকরীভাবে জমিটি নষ্ট করে দেয় এবং তাই এটি সামগ্রিকভাবে ওয়েস্ট ল্যান্ডের প্রতীক – সাধারণভাবে উরু অঞ্চলে এবং বিশেষ করে কুঁচকির/যৌনাঙ্গ এলাকায় রক্তক্ষরণের আঘাত ছিল। ৬ষ্ঠ শতাব্দীর বাস্তব ঘটনাগুলিতে, এটি প্লেগ ছিল যা ওয়েস্ট ল্যান্ডের প্রধান কারণ ছিল, এবং প্লেগের মূল শারীরিক প্রকাশ ছিল বুবোস (দুর্দান্ত ফোঁড়া), যা রক্তাক্তভাবে খোলা ঘাতে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ করে কুঁচকিতে এবং বগলে। আর্থারিয়ান রোম্যান্স দ্য কোয়েস্ট ফর দ্য হোলি গ্রেইল (১৩শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে) প্রকৃতপক্ষে ওয়েস্ট ল্যান্ড প্রপঞ্চের বর্ণনায় “একটি মহান মহামারী” কে বোঝায়। প্রকৃতপক্ষে, ৫৪০-এর দশকের জন্য কনস্টান্টিনোপল এবং আনাতোলিয়া থেকে বিস্ময়করভাবে অনুরূপ ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে।
ওয়েলসের ম্যাবিনোগিতে বলা হয়েছে কিভাবে একটি যাদুকরী কুয়াশা উত্থাপিত হয়েছিল, তখন সবকিছু চলে গিয়েছিল – “কোনও প্রাণী, কোনও ধোঁয়া, কোনও আগুন, কোনও মানুষ, কোনও বাসস্থান নেই। রাজকীয় দরবারের ঘরগুলো “খালি, নির্জন, তাদের মধ্যে মানুষ বা জন্তু ছাড়া” ছিল। পরে, দুর্ভিক্ষের এক প্রতীকী হুমকি দেখা দেয়, যখন গমের সমস্ত কান জাদুকরীভাবে চুরি হয়ে যায় (ইঁদুরের একটি বাহিনী দ্বারা) যে ডালপালার উপর তারা বেড়ে উঠছিল তা থেকে: “ধূসর ভোরের মধ্যে কেবল নগ্ন ডালপালা” অবশিষ্ট ছিল। শেষ পর্যন্ত, এটি দেখা যায় যে এই প্রোটো-বর্জ্য জমিটি একটি মন্দ যাদুকর দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল, সম্ভবত মৃত্যুর প্রতীক, যাকে “দ্য গ্রে ওয়ান” বলা হয়। এখানে সাহিত্যিক ওয়েস্ট ল্যান্ড এবং ষষ্ঠ শতাব্দীর বাস্তবগুলির মধ্যে ভৌগোলিক মিল রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আর্থারিয়ান রোম্যান্স এবং অন্যান্য মধ্যযুগীয় সাহিত্য উত্সগুলির বেশিরভাগ ওয়েস্ট ল্যান্ড ওয়েলস বা আরও নির্দিষ্টভাবে, দক্ষিণ ওয়েলস বা লগ্রেস / লোগরিয়াতে অবস্থিত বলে মনে করা হয়। আরো সাধারণভাবে, ব্রিটেন বা Listenois (সম্ভবত ব্রিটেন বা ব্রিটেনের একটি অংশের জন্য অন্য নাম) ওয়েস্ট ল্যান্ডের অবস্থান হিসাবে উদ্ধৃত করা হয়। সাধারণভাবে আর্থারিয়ান রোম্যান্স – ওয়েস্ট ল্যান্ডের জন্য সাহিত্যিক পটভূমি – সমারসেট / দক্ষিণ ওয়েলস অঞ্চলের সাথে যুক্ত হতে থাকে। সুতরাং, ব্রিটেনের দক্ষিণ-পশ্চিম চতুর্ভুজকে প্রায়শই সেই অঞ্চল হিসাবে দেখা হয় যা অপচয় করা হয়েছিল – এবং এটি সম্ভবত ষষ্ঠ শতাব্দীর বাস্তব বিশ্বে (প্রধানত প্লেগের কারণে) যা ছিল তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১২শ শতাব্দীর শেষের দিকে, ফরাসি লেখক ক্রেটিয়েন ডি ট্রয়েস তার গ্রিলের গল্পে (কখনও কখনও কেবল পার্সেভাল নামেও পরিচিত) প্রথম সত্যিকারের আর্থারিয়ান ওয়েস্ট ল্যান্ডের বর্ণনা দিয়েছেন যা দুর্গ / শহর নায়ক, পার্সেভালের সাথে সম্পর্কিত, পবিত্র গ্রেইলের বাড়ি আবিষ্কারের ঠিক আগে পরিদর্শন করেন – তথাকথিত গ্রেইল ক্যাসল। যদিও ব্রিটিশ কেল্টিক শাসিত পশ্চিমের বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, অ্যাংলো-স্যাক্সন পূর্বাঞ্চল ছিল নিরাপদ। প্রায় নিশ্চিতভাবেই প্লেগটি দেশের অ্যাংলো-স্যাক্সন অংশে পৌঁছায়নি ৭ম শতাব্দীর আগে, মূলত, ৬ষ্ঠ শতাব্দীর ব্রিটেন একটি জাতিগতভাবে বিভক্ত ভূমি ছিল। সমসাময়িক ব্রিটিশ সন্ন্যাসী এবং ইতিহাসবিদ গিলডাস লিখেছিলেন যে তীর্থযাত্রীরা “ব্রিটেনের অসুখী বিভাজনের” কারণে প্রাচ্যের পবিত্র কবরগুলোও পরিদর্শন করতে সক্ষম হননি। প্রায় পুরো ষষ্ঠ শতাব্দীর (৫৯০-এর দশক পর্যন্ত) একজনও পশ্চিম ব্রিটিশ কেল্টিক সন্ন্যাসীকে প্রাচ্যের পৌত্তলিক অ্যাংলো-স্যাক্সনদের কাছে প্রচার করার চেষ্টা করার জন্য রেকর্ড করা হয়নি।
পাশ্চাত্যে, প্লেগ ৫৪৭ সালে আঘাত হেনেছিল, এবং রোগের স্বাভাবিক আচরণের কারণে এটি খুব সম্ভবত ৫৫০-এর দশকে আবার আঘাত হেনেছিল। খুব শীঘ্রই, অ্যাংলো-স্যাক্সন বসতি স্থাপনকারীরা অনেক ক্ষেত্রে একটি ডেমোগ্রাফিক এবং রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করার জন্য পশ্চিমে চাপ দিচ্ছিল। অ্যাংলো-স্যাক্সন অগ্রগতি, যা প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বন্ধ ছিল, এইভাবে পুনরায় শুরু হয়েছিল। ৫৬০-এর দশকে পশ্চিমে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকল-এ সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছিল যে ৫৫০-এর দশকে ঘটেছিল। ৫৭১ সালে দক্ষিণ মিডল্যান্ডগুলি স্যাক্সনদের কাছে পতিত হয়েছিল বলে মনে হয়, এবং ছয় বছর পরে গ্লুচেস্টার, সিরেন্সস্টার এবং বাথের পতন ঘটে। প্রায় একই সময়ে, স্যাক্সনরা ডরসেটের দিকে অগ্রসর হয়। ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জলবায়ু সংকট ও প্লেগের পর শত শত বছরে সংঘটিত জনতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন থেকে ইংল্যান্ডের জন্ম হয়। প্লেগ ছিল ইংল্যান্ডের ধাত্রী, কেবল ভূ-রাজনৈতিক অর্থেই নয়, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও। ডেমোগ্রাফিক ভ্যাকুয়াম, বা আংশিক ভ্যাকুয়াম, একটি পরিমাণে ব্যাখ্যা করে যে কেন কেল্টিককে ভাষাগত মানচিত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলা হয়েছিল যা বর্তমান ইংল্যান্ডে পরিণত হয়। প্রকৃতপক্ষে, ইংল্যান্ডের অধিবাসীদের দ্বারা একসময় যে ভাষায় কথা বলা হয়েছিল তা থেকে মাত্র দশটি সেল্টিক শব্দ ইংরেজিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। আইন, সরকার এবং এমনকি লোকঐতিহ্যের দিক থেকে, ইংল্যান্ড তার জার্মানীয় অতীতের উত্তরাধিকারের জন্য ঋণী, তার কেল্টিক নয়।
প্লেগ-প্ররোচিত ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পরে যে বিশৃঙ্খলা এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল তা নিরাপত্তা-সচেতন মানসিকতা তৈরি করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছিল। এটি আইরিশ ভাষাগত ও সাহিত্য সংস্কৃতির প্রকৃতি গঠনেও সহায়তা করেছিল। আধুনিক আইরিশ মূলত কেল্টিকের একটি ফর্মের একটি বিবর্তিত রূপ যা ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে অস্তিত্বে এসেছিল। সেই শতাব্দীর মধ্যভাগের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এবং প্লেগ মহামারীর আগে, আইরিশরা সাধারণ কেল্টিক (ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের সমস্ত জীবিত কেল্টিক ভাষার পূর্বপুরুষ) একটি ফর্ম কথা বলেছিল। ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি প্লেগ বিপর্যয়ের কারণে জনসংখ্যার ভারসাম্যের পরিবর্তনের কারণে এই ভাষাগত বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। দক্ষিণ ও পূর্ব আয়ারল্যান্ডের আরও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত পুরানো স্থাপনাটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, এবং পেরিফেরাল ওয়ারলর্ডরা এই ডেমোগ্রাফিক ইক্যুয়ালাইজেশনের সুবিধা গ্রহণ করার সাথে সাথে পরিধি থেকে বের হয়ে এসে নতুন উচ্চারণগুলি ভাষাগত শূন্যতার মধ্যে প্রবাহিত করেছিলো। অধিকন্তু, যেহেতু ছোট ঐতিহ্যবাহী সাক্ষর শ্রেণীটি সম্ভবত আকারে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছিল, তাই একটি আংশিক শাস্ত্রীয় বিচ্ছিন্নতা থাকতে পারে, যার পরে নতুন লেখকরা অ-প্রথাগত ভাষাগত প্রভাবগুলির জন্য আরও উন্মুক্ত হতেন। এমনকি আইরিশ কবিতার প্রকৃতিও পরিবর্তিত হয়েছিল, প্রাচীন আয়ারল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী দীর্ঘ-লাইনের মিটারগুলি ল্যাটিন খ্রিস্টান স্তোত্রগুলির উপর ভিত্তি করে লেখা মিটার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।
ফ্রান্স ও স্পেইনের ক্ষতি
গ্রেগরির শতাব্দীতে, এই রোগটি কমপক্ষে চারবার বর্তমান ফ্রান্সের কিছু অংশকে ধ্বংস করে দিয়েছিল: ৫৪৩-৫৪৪, ৫৭১-৫৭২, ৫৮১-৫৮৪ এবং ৫৮৮-৫৯০। এবং ঠিক যেমন এটি ব্রিটেনের ভবিষ্যত গঠনে সহায়তা করেছিল, মহামারীটি পরবর্তী ফরাসি ইতিহাসের প্রকৃতির উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয়। ৫ম শতাব্দীতে, যখন পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য জার্মানীয় আক্রমণকারীদের একটি আধিক্যের চাপে বিভক্ত হতে শুরু করে, ফ্রাঙ্করা উত্তর গলের কিছু অংশ দখল করে নেয় এবং ৫০৭ সালের মধ্যে ব্রিটানি, বার্গান্ডি এবং সুদূর দক্ষিণে (প্রোভেনস সহ) ব্যতীত বর্তমান ফ্রান্সের সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণে নেয়। ৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে বার্গান্ডি এবং প্রোভেন্সেরও পতন ঘটে এবং ফ্রাঙ্করা কেবল একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলতেই শুরু করে নি, বরং নিজেদেরকে পশ্চিমে রোমের উত্তরাধিকারী হিসাবেও দেখতে শুরু করেছিল। তারা রোমান আইন ও ভাষা, রোমান-শৈলীর সরকারী অনুশীলন এবং আদালত প্রোটোকল, রোমান ক্যাথলিক ধর্ম এবং এমনকি রোমান উপাধি গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এক গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্ময়কর দিক থেকে তারা রোমীয় দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেনি: তারা ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের সাবেক রোমান রাজনৈতিক শক্তির ঐতিহ্যবাহী উচ্চ-মর্যাদার আসনগুলোতে নিজেদের কে প্রতিষ্ঠিত করেনি। আর্লস এবং লিওনসের মহান রোমান প্রাসাদগুলি অব্যবহৃত ছিল – অন্তত ফ্রাঙ্কিশ রাজাদের দ্বারা।
৫৪৩ খ্রিষ্টাব্দে আর্লেস(এবং কোন সন্দেহ নেই যে অন্যান্য দক্ষিণের শহরগুলি) ধ্বংস হয়ে যায়। ৫৫০ বা ৫৬০-এর দশকে প্লেগ আবার দক্ষিণে আঘাত হানে, কারণ এটি ভূমধ্যসাগরের অন্যান্য অংশে আবার ছড়িয়ে পড়ে, তবে কোনও রেকর্ড বেঁচে থাকেনি। ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে এটি ক্লারমন্ট এবং আউভার্ন অঞ্চল, লিয়নস, বোর্হেস, ডিজন এবং চালন-সুর-সাওনকে ধ্বংস করে দেয়। এরপর ৫৮১-৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে এই রোগটি নারবোন, আলবি, নান্তেস এবং অন্যান্য নামবিহীন জেলাগুলির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, যখন ৫৮৮-৫৯০ সালে এটি মার্সেই, এভিগনন এবং রোন ভ্যালিকে লিওনস অঞ্চলের মতো উত্তরে ধ্বংস করে দেয়। ফ্র্যাঙ্কিশ রাজাদের উত্তর গলে থাকার সিদ্ধান্তটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করে যে প্যারিস অববাহিকা উদীয়মান ফরাসি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠবে। এটি সম্ভবত নিশ্চিত করেছিল যে ফ্রাঙ্কিশ রাজ্য আধুনিক ফ্রান্সে বিবর্তিত হবে। যেহেতু শহরগুলি গণমৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিল, প্লেগের ঘটনাটি জনসাধারণের প্রতিক্রিয়াকে উস্কে দিতে সহায়তা করেছিল। মানুষ ব্যক্তি হিসাবে তীর্থযাত্রী হওয়ার পরিবর্তে, সমগ্র শহুরে জনগোষ্ঠী গণ তীর্থযাত্রা শুরু করে। তীর্থযাত্রা একটি কর্পোরেট ক্রিয়াকলাপে পরিণত হয়েছিল, ভক্তি এবং প্রার্থনার শক্তিতে একটি সর্বজনীন অনুশীলন।
৫৪২ সালে প্রথম আবির্ভূত হয়ে, প্লেগটি ভিসিগোথিক-শাসিত স্পেনের উপর কমপক্ষে দুটি বড় প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো, এটি যথেষ্ট সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ধ্বংসের কারণ হয়েছিল। এটি ভিসিগোথিক শাসক শ্রেণী এবং তাদের রোমানো-স্প্যানিশ প্রজাদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যকে নষ্ট করেছে বলে মনে হয়। প্লেগ করদাতা এবং কর সংগ্রাহক উভয়কেই হত্যা করে কর রাজস্ব হ্রাস করেছে। বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষকে হত্যা করার পাশাপাশি, এটি রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তির বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিকেও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। শীর্ষে অস্বাভাবিকভাবে বড় সংখ্যক শূন্যপদ তৈরি হয় যা সহিংস প্রতিযোগিতার সূচনা করে। প্লেগের প্রাক্কালে ভিসিগোথিক-শাসিত স্পেনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ লক্ষ, যাদের মধ্যে মাত্র তিন লক্ষ ছিল ভিসিগোথ। ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীতে, মাত্র চারজন ভিসিগোথিক রাজাকে হত্যা করা হয়েছিল, তবুও প্লেগের প্রাদুর্ভাবের পরে বারো বছরের সময়কালে এই চারটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে তিনটি সংঘটিত হয়েছিল। রাজা থিউডিসকে ৫৪৮ সালে টলেডোতে তার প্রাসাদে হত্যা করা হয়েছিল। ৫৪৯ সালে সেভিলের একটি ভোজসভায় মাতাল অবস্থায় থিউডিগিজেলকে হত্যা করা হয়েছিল। তার উত্তরসূরি, আগিলা, ৫৫৪ সালে তার নিজের সৈন্যদের দ্বারা নিহত হন। ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ভিসিগোথিক রাজা হওয়া অবশ্যই একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা ছিল।
দুই আমেরিকান মহাদেশের ক্ষতি
১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে একজন আমেরিকান ট্রি-রিং বিশেষজ্ঞ, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালমোর লা মার্চে, ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্পিটো মাউন্টেন থেকে উচ্চ-উচ্চতার ব্রিস্টলেকোন পাইন গাছের রিং নমুনাগুলির একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা সংগ্রহ করেছিলেন যা জলবায়ুর অবনতির ইংগিত দেয় – সম্ভবত শীতল এবং শুষ্ক আবহাওয়া – ৫৩৫-৫৩৬ সালে শুরু হয়, ৫৩৯ এ আরও গুরুতর অবনতির দিকে যায়। ৫৫০-এর দশকের শেষের দিকে প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। ১৯৮০-এর দশকে ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা নেভাদা পর্বতমালা থেকে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের লুই স্কুডেরি কর্তৃক সংগৃহীত অন্যান্য প্রমাণগুলি একই রকম কথা বলেছিল, যদিও তথ্যগুলি বলে যে জলবায়ু অবনতির পর্বটি প্রায় ৫৭০ সাল পর্যন্ত বা আরও বেশি সময় ধরে চলেছিল।
দক্ষিণ আমেরিকাতে, প্রাচীন ফিৎজরোয়া কনিফার কাঠ থেকে প্রাপ্ত ট্রি-রিং ডেটা প্রকাশ করেছে যে ৫৪০ খ্রিস্টাব্দে তাপমাত্রার একটি নাটকীয় শীতলতা ঘটেছিল। এর প্রধান প্রমাণ চিলি থেকে এসেছে- তবে সম্প্রতি আর্জেন্টিনা থেকে সমর্থনকারী প্রমাণও পাওয়া গেছে। চিলির যে উপাদানগুলো দেশটির দক্ষিণে অবস্থিত লেনকা থেকে এসেছে, তাতে দেখা যায় যে, ৫৪০ জন গত ১,৬০০ বছরের শীতলতম গ্রীষ্মকাল কাটিয়েছেন। কলম্বিয়ার প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্লেমেন্সিয়া প্লাজাস এবং আন্না ফালচেট্টির একটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়টি পুরো ৩,৩০০ বছরের দীর্ঘ ক্রমের মধ্যে সবচেয়ে শুষ্ক সময় ছিল। ব্রাজিলের নিম্ন আমাজন অববাহিকায় এবং কলম্বিয়ার আন্দিজের হ্রদগুলিতে অনুরূপ প্রমাণ আবিষ্কৃত হয়েছিল। ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি জলবায়ু সমস্যা, তীব্র খরা এবং মাঝে মাঝে বিধ্বংসী বন্যার কারণে মোচে সভ্যতা নির্দয়ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিল।
Quelccaya হিমবাহ, এছাড়াও প্রধান এল নিনো ঘটনা ক্রমবর্ধমান ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায় ৪৯০ খ্রি., ৫২৬ খ্রি., ৫৫৬ খ্রি., ৫৮০ খ্রি., ৫৯০ খ্রি., ৫৯২ খ্রি. এবং ৬৩০ খ্রি.-তে। ৪৯০ থেকে ৫৯২ সালের মধ্যে, সত্যিকারের প্রধান এল নিনোগুলোর মধ্যে ব্যাবধানগুলো ছত্রিশ বছর থেকে ত্রিশ বছর, ত্রিশ বছর থেকে ২৪ বছর, তারপর দশে এবং অবশেষে দুই বছর পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। এটা প্রায় নিশ্চিত যে প্রলয়ংকারী আন্দিয়ান খরা (সি. ৫৪০-৫৭০) ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি জলবায়ু সংকটের অংশ ছিল, তবে এই সংকটটি ৬ষ্ঠ শতাব্দীর এল নিনোসের ফ্রিকোয়েন্সিকে ত্বরান্বিত করতে কোনও ভূমিকা পালন করেছিল কিনা তার নিশ্চয়তা কম। যাইহোক, বিশ্বব্যাপী সমস্যাগুলি প্রায় নিশ্চিতভাবেই এল নিনোসকে অন্যথায় অনেক বেশি গুরুতর করে তুলেছে।
দুই আমেরিকা মহাদেশের সভ্যতাসমূহে আমরা যাগ যজ্ঞ বলির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখি। তিওয়ানাকুর ধর্মীয় উত্তরাধিকার ইনকাদের মতাদর্শগত উত্তরাধিকার গঠনে সহায়তা করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, খ্রীষ্টধর্মের আবরণের নীচে, প্রাচীন আন্দিজ ধর্ম এখনও পেরু এবং বলিভিয়ার ষোল মিলিয়ন এমেরিন্ডিয়ানের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে বেঁচে আছে।
চীনের ক্ষতি ও একীকরণ
চীন ২২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২২০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলেও চীনের প্রকৃত একত্রীকরণ খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে রচিত হয়। ২২০ খ্রিশটাব্দের পরবর্তী ৩৬৯ বছরের বেশিরভাগ সময় দেশটি রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে বেশ কয়েকটি স্বাধীন রাষ্ট্রে (উত্তরে ষোলটি পর্যন্ত এবং দক্ষিণে মাত্র এক বা দুটি পর্যন্ত) বিভক্ত ছিল। দশম শতাব্দীতে মোট বিভক্তির ৬০ বছর এবং ১২শ ও ১৩শ শতাব্দীতে উত্তর-দক্ষিণ বিভাজনের ১৮০ বছর বাদে, চীন ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে প্রায় দেড় সহস্রাব্দের রাজনৈতিক ঐক্য উপভোগ করেছে। ৬ষ্ঠ শতকের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো এই ঐক্যের জন্য দায়ী, এবং এই কারণগুলোর মধ্যে ৫৩০-এর দশকের জলবায়ু বিপর্যয় ছিল অন্যতম।
৬ষ্ঠ শতাব্দীর চীনের একটি মহান ক্রনিকল নান শি, বা দক্ষিণ রাজবংশের ইতিহাস-এ লেখা হয় “”হলুদ ধূলিকণা বরফের মতো বৃষ্টি হয়েছে।” এর দ্বারা লেখক ৫৩৫ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে শুরু হওয়া ঘটনাগুলির একটি ভয়ানক এবং দুর্ভাগ্যজনক ক্রমের সূচনা বর্ণনা করে। ৫৩৬ সালের ডিসেম্বরে একই রকম চেন বা ধুলো জমার ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। ৫৩৭ সালের ১লা ফেব্রুয়ারিতে একটি তৃতীয় ঘটনা পাওয়া যায়, যেখানে বলা হয় “হুই বৃষ্টি হয়েছিল।” হই বলতে হলুদ রঙ বা ছাই বোঝায়। হই শব্দটি ৫৩৬ সালের ঘটনার আরেকটি রেকর্ডেও ব্যবহৃত হয়েছিল, যা সুই-শু বা সুই রাজবংশের ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এগুলো চীনে তীব্র জলবায়ু বিচ্যুতির সময়ের প্রথম প্রমাণ ছিল।
এরপর ৫৩৭ সালের জুলাই মাসে চীন তুষারপাতের কবলে পড়ে এবং আগস্টে তুষারপাত হয়। দক্ষিণ রাজবংশের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছে যে “জুলাই মাসে কিংঝু এবং অন্য একটি প্রদেশে তুষারপাত হয়েছিল” এবং “আগস্টে কিংঝুতে তুষারপাত হয়েছিল,” যা “ফসলকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।” কিংঝু, একটি নিম্ন-মিথ্যা প্রদেশ, প্রায় দক্ষিণ স্পেন এবং মধ্য ক্যালিফোর্নিয়ার মতো একই অক্ষাংশে অবস্থিত; গ্রীষ্মের তুষারপাত এবং তুষারপাত, স্বাভাবিক সময়ে, কার্যত অজানা ছিল। কিংঝৌ এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি প্রদেশে ফসল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, একটি ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফসলের ব্যর্থতা অবশ্যই দুই বছরের জন্য স্থায়ী হয়েছিল, কারণ ৫৩৮ সালের সেপ্টেম্বরে,”যেহেতু ইতিমধ্যে দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যু হয়েছে,” সেখানে ভাড়া এবং করের একটি ছাড় দেয়া হয়। উত্তর চীনা ইতিহাসে (বেই শি) একটি তীক্ষ্ণ জলবায়ু অবনতি দেখা যায় এবং সেখানে ৫৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে দুর্ভিক্ষের একটি সিরিজ নথিভুক্ত করা হয়েছে। উত্তর চীনে খরার কারণে শহরের গেটগুলিতে এবং প্রাসাদের হল গেট এবং সরকারী অফিসের গেটগুলিতে জল সরবরাহ করার কথা পাওয়া যায়। ৫৩৬ সালের সেপ্টেম্বরে উত্তর চীনা ভাষায় “বিয়ান, সি, ঝুও ও জিয়ান প্রদেশে শিলাবৃষ্টির পতন ঘটে” এবং “এক বিরাট দুর্ভিক্ষ” হয়। ডিসেম্বরের মধ্যে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে সরকারকে তদন্তের জন্য বিশেষ পরিদর্শক পাঠাতে হয়েছিল।
ক্ষুধার্ত উদ্বাস্তুরা তখন ইয়েলো নদীর উত্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। শানসি প্রদেশে একটি মহান দুর্ভিক্ষ ঘটে, এবং জনগণ বাধ্য হয়ে নরখাদক হয় এবং তখন সেখানকার জনসংখ্যার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মারা গিয়েছিল। পরের বছর মার্চ মাসে নয়টি প্রদেশে শিলাবৃষ্টি ও খরা দেখা দিয়েছিল, একটি বড় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল এবং যখন লোকেরা খাবারের সন্ধানে পালিয়ে গিয়েছিল। ৫৩৮ সালের গ্রীষ্মে শানডং প্রদেশের একটি বিশাল বন্যা হয়েছিল। জল এত উঁচুতে উঠেছিল যে “ব্যাঙগুলি গাছ থেকে ক্রক ক্রক করছিল”।
দক্ষিণ চীনের সম্রাট পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য স্বর্গের শক্তিগুলিকে আহ্বান করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে রাজ্যের প্রধান বার্ষিক কৃষি ধর্মীয় আচার, রাজকীয় গমের ক্ষেতের আনুষ্ঠানিক লাঙ্গলচাষ করেন। এই আচারের আগে একজন চীনা কৃষি দেবতাকে শস্য উৎসর্গ করা হয়েছিল। ৫ম শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় এই রাজকীয় লাঙ্গল প্রথাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল এবং ৬ষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম তৃতীয়াংশে খুব কমই সঞ্চালিত হয়েছিল। তারপর ৫৩৫ এ জলবায়ু দুর্যোগ এবং ফসল ব্যর্থতার কারণে দক্ষিণের সরকার বারবার এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করে। তখন থেকে ৫৪১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল (৫৩৯ ব্যতীত)।
ফসলের ব্যর্থতা এবং সামাজিক স্থানচ্যুতি ও দারিদ্র্যের ফলে দক্ষিণ চীনা রাজ্যের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে। কর ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছিল, সম্ভবত কারণ সংগ্রহ করার জন্য কোনও উদ্বৃত্ত সম্পদ ছিল না। দুর্ভিক্ষের কারণে বারোটি প্রদেশে প্রবর্তিত ৫৩৮ টি কর ক্ষমা করা হয়, ৫৪১ সালে তার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছিল, তবে এবার পুরো দক্ষিণ চীন জুড়ে এতি করা হয় পাঁচ বছরের জন্য তা বহাল থাকে। এর পরে এটিকে ৫৫১ সাল পর্যন্ত আরও তিনবার বাড়ানো হয়েছিল। কর ব্যবস্থার পতনের প্রাথমিক কারণটি অবশ্যই দুর্ভিক্ষের কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্য ছিল। পরে এই দারিদ্র্য অব্যাহত থাকায় এবং কর রাজস্বের অভাব কার্যকরভাবে শাসন করার সরকারের ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, এর ফলে জনপ্রিয় বিদ্রোহগুলি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। তিনটি বিদ্রোহের কথা জানা যায় – একটি জাতিগত, একটি সম্ভবত আংশিকভাবে ধর্মীয় এবং একটি রাজনৈতিক। কিন্তু সম্ভবত অনেক বিদ্রোহই ঘটেছিল যেগুলোর আর কোন রেকর্ড নেই। জাতিগত বিদ্রোহ প্রায় নিশ্চিতভাবেই এই মুহুর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বল অবস্থার উৎপত্তির জন্য দায়ী। এর উপকেন্দ্র ছিল ভিয়েতনামের হ্যানয় অঞ্চল, যা তখন দক্ষিণ চীনা রাজ্যের অংশ ছিল। লি ফেন (সম্ভবত একটি সিনিসাইজড ভিয়েতনামী) নামে একজন সাধারণ ব্যক্তির নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা ৫৪১ সালে স্থানীয় চীনা গভর্নরকে পরাজিত করে এবং তারপর দুই বছর পরে সম্রাটের পরিবারের একজন সদস্য, লিনাইয়ের প্রিন্সের নেতৃত্বে একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে। শীঘ্রই বিদ্রোহী নেতা, আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত হয়ে, নিজেকে সম্রাট বলতে শুরু করেন। কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক দিক থেকে ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ায়, বিদ্রোহ দমন করতে আরও দুই বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত- ৫৪৬ খ্রিষ্টাব্দে লি ফেনকে বন্দী করা হয় এবং একটি গুহায় নিক্ষেপ করা হয়, যেখানে সম্ভবত তিনি মারা যান। দ্বিতীয় বিদ্রোহটি সংক্ষিপ্ত ছিল, কিন্তু একদিক থেকে, সম্ভবত ভিয়েতনামের অভ্যুত্থানের চেয়েও বেশি গুরুতর ছিল। এটি ৫৪২ সালে ছড়িয়ে পড়ে, রাজধানী থেকে মাত্র তিনশো মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে, আনচেং শহরের কাছে একটি অঞ্চলকে গ্রাস করে। ভিয়েতনামী অভ্যুত্থানের মতো, আনচেং বিদ্রোহীরা প্রায় নিশ্চিতভাবেই কর-ক্ষুধার্ত কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছিল। বিদ্রোহীরা সম্ভবত দুর্ভিক্ষ এবং আসন্ন দারিদ্র্যকে সহস্রাব্দের ধর্মীয় পরিভাষায় দেখেছিল। প্রচলিত বৌদ্ধ বিশ্বাসে, পরবর্তী বুদ্ধ-মৈত্রেয়- পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য ফিরে আসবে যখন শেষ বুদ্ধের নৈতিক জ্ঞানার্জনের বার্তা বিস্মৃত হয়ে গেছে এবং বিশ্ব আবার সম্পূর্ণরূপে মন্দের মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছে। তখন তারা বুদ্ধের এই “দ্বিতীয় আগমনকে” আসন্ন বলে মনে করে। এটি এমন একটি জিনিস যা কেবল হাজার হাজার বছর পরে প্রয়োজন হবে। কিন্তু অপ্রচলিত “ধর্মদ্রোহী” বৌদ্ধধর্মে- তথাকথিত বাম পথ-এ মৈত্রেয় আরও শীঘ্রই প্রত্যাশিত ছিল। সম্ভবত আনচেং বিদ্রোহীরা এই ধরনের মশীহ মৌলবাদীদের অন্তর্ভুক্ত করেছিল যারা দারিদ্র্য ও দুর্ভোগের ক্রমবর্ধমান মাত্রাকে প্রমাণ হিসাবে বিবেচনা করেছিল যে বিশ্ব একটি সময়ের মধ্যে প্রবেশ করেছে। অন্ধকার ও ক্ষয় তাদের মশীহের আগমন আসন্ন করেছিল। তারা হয়তো তাদের বিদ্রোহকে তাদের পরিত্রাতার জন্য পথ প্রস্তুত হিসাবে দেখেছে। ৫৪২ সালের গোড়ার দিকে নান শি-তে বিদ্রোহটি বেশ সংক্ষিপ্ত। লিউ জিংগং এই বিদ্রোহ করেছিলেন। তার হাজার হাজার অনুসারীরা বর্তমানে উত্তরাঞ্চলীয় জিয়াংশি প্রদেশের প্রায় পাঁচ হাজার বর্গমাইল দখল করে নেয়। শেষ পর্যন্ত, সম্রাটের পুত্র, প্রিন্স ই একটি সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছিলেন যা সফলভাবে বিদ্রোহীদের পরাজিত করেছিল এবং তাদের নেতা লিউ জিংগংকে বন্দী করেছিল, যাকে রাজধানীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং শহরের কেন্দ্রীয় বাজারে শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।
৫৪৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দেশটি এমন এক ভয়াবহ আর্থিক অবস্থার মধ্যে ছিল যে মুদ্রাটি তার মূল্য হারাতে শুরু করে। ৫৪৭ সালে আরও বিদ্রোহ ঘটে। বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতো, ৫৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে জলবায়ুর ঘটনাগুলি জলবায়ু অস্থিতিশীলতার একটি সময়ের সূচনা করেছিল এবং ৫৪৪, ৫৪৮ এবং ৫৪৯ সালে চীন আরও তিনটি খরা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। উত্তর চীনা বেই শি-তে, ৫৪৮-তে একটি বড় খরা হয়েছিল, দক্ষিণ রাজবংশের ইতিহাসে ৫৪৯ এবং ৫৫০ সালে অত্যন্ত গুরুতর খরার কথা শোনা যায়, অনেক মানুষ এই সময়ে নরখাদক হয়ে যায়, জনসংখ্যা অনেক হ্রাস পায়। নথিতে আছে ৫৪৯ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ইয়াংজিজের দক্ষিণ তীরে জিউজিয়াং (বর্তমানে জিয়াংঝৌ) এর মহান শহরে “মানুষ একে অপরকে খেয়েছিল”, এবং ৫৫০ সালে “বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত একটি বড় খরা ছিল, লোকেরা একে অপরকে খেয়েছিল এবং রাজধানীতে (আধুনিক নানজিং) এটি বিশেষত গুরুতর ছিল। সরকার এই খরার জন্য দুর্বল হয়, কর বাড়িয়ে দেয়, ফলে কৃষক-বিদ্রোহ ঘটে। ৫৪৭ খ্রিষ্টাব্দে একজন উত্তর চীনা জেনারেল, হু জিং, দক্ষিণে চলে যান, এবং এর ফলে, তিনি উত্তরাঞ্চলে যে বিশাল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছিলেন তা দক্ষিণ অঞ্চলের অধীনে চলে আসে। উত্তরের সরকার এই হারিয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধারের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়েছিল, এবং এক বছরের মধ্যে হু জিং পরাজিত হয়েছিল, তার অঞ্চলটি আবার উত্তরের নিয়ন্ত্রণে পড়ে এবং পরাজিত জেনারেল দক্ষিণে পালিয়ে যায়। দক্ষিণের সরকার তখন উত্তরের সাথে শান্তি স্থাপন করে এবং হু জিং তাকে তার প্রাক্তন উত্তরাঞ্চলীয় সহকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে এই ভয় পেয়ে দক্ষিণ চীনা রাজ্যের দুর্বলতাগুলি জেনে ৫৪৮ সালের আগস্টে বিদ্রোহ করেছিলেন। এই বিদ্রোহে তিনি দারিদ্রপীড়িত গ্রামীণ কৃষক ও শহুরে দরিদ্রদের প্রতি আকৃষ্ট করেছিলেন যারা তাকে মসিহ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তিনি দক্ষিণের রাজধানী জিয়ানকাং (বর্তমানে নানজিং) এ সেনাভিযান পরিচালনা করেন এবং মাত্র চার মাস অবরোধের পর শহরটি আত্মসমর্পণ করে। এই জেনারেল তুর্কি বংশোদ্ভূত ছিলেন, তিনি চীনা অভিজাতদের ঘৃণা করতেন। বিদ্রোহীরা জিয়ানকাং-এ প্রবেশ করে দেখতে পায় যে অভিজাতরা তাদের প্রাসাদে অনাহারে মারা যাচ্ছে এবং তাদের অনুসারীদের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়েছে। সম্রাট তখন অশিতিপর বৃদ্ধি, তাকে বন্দি করে তার রাজকীয় প্রাসাদে অনাহারের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। শেষ পর্যন্ত হাউ জিং শেষ পর্যন্ত ৫৫২ সালে পরাজিত হন, কিন্তু দক্ষিণের রাজ্যটি ক্লান্ত এবং চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। জেনারেলদের বিদ্রোহ অনেক দিক থেকেই দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ এবং ঐতিহ্যবাহী অভিজাত শাসনের বিরুদ্ধে একটি জনপ্রিয় বিপ্লবে পরিণত হয়েছিল। দক্ষিণী সরকারী কর্মচারী রচিত চীনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাকাব্যিক কবিতা—The Lament for the South-তে রূপক পরিভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে যে, কিভাবে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যভাগের পরিস্থিতি বিপর্যয়কে অনিবার্য করে তুলেছিল।
যেদিন থেকে রাজধানী বিদ্রোহীদের হাতে পতিত হয়, সেদিন থেকে পুরানো শাসক রাজবংশের অবশিষ্টাংশের মধ্যে একটি রক্তাক্ত, প্রায়শই বহুমুখী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পরবর্তী আট বছরে, দক্ষিণ চীনে দশটিরও কম সম্রাট ছিল না – পুতুল, শিশু এবং বিভিন্ন মেগালোম্যানিয়াক। সাধারণত দু’জন, কখনও কখনও তিন জন, যে কোনও এক সময়ে নিজেকে সম্রাট বলে দাবি করে, এবং বেশিরভাগই খুনী, হত্যার শিকার বা উভয়ই হিসাবে শেষ হয়। তার হাতে সবচেয়ে বেশি রক্ত নিয়ে যুদ্ধবাজ ছিলেন পূর্ববর্তী সম্রাটের এক সন্তান জিয়াও ই, যিনি তার ভাগ্নে এবং তার নিজের ভাইকে হত্যা করেছিলেন এবং দ্বিতীয় ভাইকে তার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। হত্যাকারীকে তখন অন্য এক ভাইপো হত্যা করে। দক্ষিণ চীন তিনটি প্রধান শক্তি কেন্দ্রে বিভক্ত হয়েছিল – প্রাচ্যের জিয়ানকাং, পশ্চিমে সিচুয়ান এবং মাঝখানে, কেন্দ্রীয় ইয়াংৎজে। রাজবংশী ভাই যখন দক্ষিণে রাজবংশী ভাইয়ের সাথে লড়াই করেছিলেন, তখন উত্তর কিউই এবং পশ্চিম ওয়েই-এর উত্তর চীনা শক্তিগুলি নিজেদেরকে দক্ষিণের অঞ্চলটি দখল করতে ব্যস্ত করেছিল যতটা তারা হজম করতে পারে। পশ্চিমা ওয়েই সিচুয়ান এবং কেন্দ্রীয় ইয়াংৎজের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেয় এবং পরবর্তী অঞ্চলের রাজধানীর বেশিরভাগ জনসংখ্যাকে দাসত্বে টেনে নিয়ে যায়। ক্ষমতার জন্য এই বহুমুখী সংগ্রাম চরমে নিষ্ঠুর ছিল, এবং মরিয়া লোকেরা মরিয়া পদক্ষেপের আশ্রয় নিয়েছিল। পুরো পরিবারই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বিদ্রোহী হু জিং এর পুত্রদের হত্যা করার সাবধানতা অবলম্বন করেছিলেন তার পূর্ববর্তী পুতুল সম্রাট, যাকে তিনি ৫৫১ সালে হত্যা করেছিলেন, তিনি নিজেই নিহত হওয়ার কিছুদিন আগে এবং কথিতভাবে, রান্না করা এবং খাওয়া হয়েছিল – তার মাথার খুলিটি তার শত্রুদের দ্বারা একটি পানীয় পাত্র হিসাবে ধরে রাখা হয়েছিল। ৫৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যখন মহান যুদ্ধবাজ জিয়াও ই তার ভাগ্নের হাতে মারা যান, তখন ই-এর বেশীরভাগ পুত্রকেও হত্যা করা হয়। ইই, তার নিজের পরিবারের অসংখ্য সদস্যকে হত্যা করার পাশাপাশি, কালো জাদুতেও জড়িত ছিল বলে মনে করা হয়। ৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে তার ভাইয়ের তৈরি একটি কাঠের কুশপুত্তলিকা ছিল এবং তাতে পেরেক চালাতে শুরু করে। যাই হোক না কেন, নখ বা কোন নখ নেই, আগস্টের মধ্যে তার ভাই চি কে পরাজিত করা হয়েছিল, ধরা হয়েছিল এবং শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত, বিদ্রোহী হু জিং এবং বেশিরভাগ রাজকীয় পরিবারের মৃত্যুর সাথে সাথে, দক্ষিণের দুই জেনারেল ক্ষমতা দখল করে এবং দক্ষিণের রাজকীয় বাড়ির শেষ অবশিষ্ট সদস্যদের মধ্যে একজনকে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করে, জিয়াও ই-এর পুত্র। তবে, উত্তর চীনা চাপ একজন জেনারেলকে একটি বিকল্প দক্ষিণের রাজকীয় – উত্তরাঞ্চলীয় মনোনীত – সিংহাসনে বসাতে বাধ্য করেছিল। দ্বিতীয় জেনারেল, চেন নামে, অবিলম্বে তার পূর্ববর্তী সহকর্মীকে আক্রমণ ও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে এবং মূল পুতুল সম্রাটকে পুনরুদ্ধার করে, তবে খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। ৫৫৭ খ্রিষ্টাব্দে জীবিত জেনারেল সম্রাটকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন, নিজের জন্য সিংহাসন গ্রহণ করেন এবং চীনের সর্বশেষ স্বাধীন দক্ষিণ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
জলবায়ু বিপর্যয় দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের সৃষ্টি করেছিল, যার ফলে দক্ষিণ চীনা রাজ্যে কর ব্যবস্থার পতন ঘটে এবং সরকারকে দুর্বল করে দেয়। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য (এবং কখনও কখনও ফলস্বরূপ মশীহ ধর্মীয় উত্সাহ) এবং সরকারের আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্বলতা তখন সামাজিক অস্থিরতা এবং বিদ্রোহ তৈরি করতে একত্রিত হয়েছিল। এবং বিদ্রোহ – এবং অন্যান্য সমস্ত কারণগুলি – অবশেষে পুরানো দক্ষিণ সাম্রাজ্যবাদী শাসনকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল এবং এর বিভক্তি এবং তার মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছিল। তার জায়গায়, একটি নতুন দক্ষিণ সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা বিকশিত হয়েছিল, কিন্তু এটি পুরানো রাজকীয় ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভবন ছিল যা ৫৩৫ থেকে ৫৫৭ সাল পর্যন্ত বিশৃঙ্খল সময়ের আগে বিকশিত হয়েছিল। পুরনো সিস্টেমটি অপেক্ষাকৃত কেন্দ্রীভূত ছিল, যখন নতুন আদেশটি অত্যন্ত বিকেন্দ্রীভূত ছিল। বছরের পর বছর ধরে বিশৃঙ্খলার সময়, স্থানীয় যুদ্ধবাজরা দুর্বল কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের তুলনায় তাদের শক্তি বাড়িয়েছিল, কিন্তু এখন যেহেতু সমস্যাগুলি শেষ হয়ে গেছে, বিকেন্দ্রীকরণটি বিপরীত হতে পারে না। অধিকন্তু, রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং পুনরুত্থিত করা যাবে না। বিশৃঙ্খলতার বছরগুলিতে ঐতিহ্যবাহী শাসক শ্রেণীর একটি বড় অংশ বিদ্রোহী এবং একে অপরের দ্বারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এই সব কিছুর উপরে, নতুন বিকেন্দ্রীকৃত দক্ষিণের রাজ্যটি অনেক ছোট ছিল। উত্তর চীনের পশ্চিম ওয়েই এবং উত্তর কিউই রাজ্যগুলি দক্ষিণঅঞ্চলের বিশাল অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল, যখন দক্ষিণটি নিজেকে টুকরো টুকরো করতে ব্যস্ত ছিল। এটি এখন কেবল সময়ের ব্যাপার ছিল যখন উত্তরাঞ্চলীয়রা – যারা মধ্য-ষষ্ঠ শতাব্দীর দুর্ভিক্ষের ফলে এমন ভয়াবহ রাজনৈতিক পরিণতিভোগ করেনি – অবশেষে কাজটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, একটি উত্তর কিউই বিরোধী জোটে যোগ দেওয়া। দক্ষিণাঞ্চলীয়রা পথভ্রষ্ট হয়েছিল এবং বিপুল পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম এবং পুরুষদের হারিয়েছিল। শুধুমাত্র উত্তর চীনে রাজনৈতিক বিচ্যুতি দক্ষিণকে সেখানে এবং তারপর গ্রাস করা থেকে রক্ষা করেছিল। কিন্তু দক্ষিণের রাজ্যটি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং কেবল উত্তরের দ্বারা শিকার হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যা জবাই করার অপেক্ষায় রয়েছে, একটি ফসল যা হারভেস্টারের কাস্তে জন্য অপেক্ষা করছে।
উত্তর চীনের সম্রাট ৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দের তৃতীয় মাসে দক্ষিনের সম্রাটকে তার সম্রাটের দায়িত্বের অবহেলা ও শোষনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। অপচয়, কর্তব্যে অবহেলা, নৈতিক শৈথিল্য, এবং আরও অনেক কিছু – এবং তার বিরুদ্ধে অশুভ ফ্যান্টমের আবির্ভাব থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় সমস্ত অসুস্থতার জন্য দায়বদ্ধতার অভিযোগ আনা হয়েছিল। উত্তরের সম্রাট তিন লাখ কপি প্রকাশ করেছিলেন এবং অবৈধভাবে দক্ষিণ চীন জুড়ে বিতরণ করেছিলেন। একটি নতুন রাজবংশ, সুই, ৫৮১ সালে উত্তর চীনে ক্ষমতায় এসেছিল, এবং এর প্রথম সম্রাট ওয়েন্ডি, অবশেষে দক্ষিণ চীনা রাজ্যের যা অবশিষ্ট ছিল তা গ্রাস করার কাজটি শেষ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। ৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে একটি নতুন সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্মাণ করা হয়, যার মধ্যে রাস্তা ও খাল রয়েছে। ৫৮৬ জনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক নিয়োগ করা হয়েছিল। একটি বিশেষ ক্রয় কমিশন উত্তর চীন জুড়ে স্টাড খামার থেকে এক লক্ষ তাজা ঘোড়া কিনেছিল। ৫৮৭ খ্রিষ্টাব্দে উত্তরাঞ্চল আক্রমণ করে এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দখল করে নেয় এবং এইভাবে দক্ষিণের সাথে ইয়াংজি নদীর সীমান্তের সমগ্র উত্তর তীরের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। ৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দুটি বড় নৌবহর নির্মাণ করা হয়- একটি সামুদ্রিক, অন্যটি কেবল ইয়াংজি নদীর যুদ্ধের জন্য নির্মিত হয়েছিল। তারপর অবশেষে, তিন লক্ষ ট্র্যাক্ট বিতরণের মাধ্যমে প্রচারযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাত মাস পরে, উত্তরের সমস্ত দক্ষিণী কূটনীতিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং চূড়ান্ত প্রস্তুতির জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। শুরু হয় আক্রমণ। কয়েক দিনের মধ্যে, বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল। আগ্রাসনকারী বাহিনীতে ৫,১৮,০০০ জলের পদাতিক, অশ্বারোহী সৈন্য, নাবিক এবং মেরিন ছিল। একটি বিশাল আট-মুখী আক্রমণে ইয়াংজি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, আক্রমণকারী বাহিনী শত শত সামুদ্রিক এবং নদীতীরবর্তী যুদ্ধজাহাজও গর্ব করে। দক্ষিণের দুর্বল রাজনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন যা ছিল, তাতে দক্ষিণের সাম্রাজ্য প্রায় পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, দক্ষিণের সম্রাট এতটাই মাতাল ছিলেন যে তিনি তার নিজের জেনারেলের জরুরি সামরিক প্রেরণ পড়তেন না যা তাকে জানায় যে উত্তরাঞ্চলীয় সৈন্যরা সীমান্ত অতিক্রম করেছে। পরে, যখন আক্রমণকারীরা দক্ষিণের রাজধানী দখল করে নেয়, তখন দক্ষিণ সম্রাটের বিছানার নীচে প্রেরণটি খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়। দক্ষিণের রাজধানীতে উত্তরাঞ্চলীয় বাহিনী বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, দক্ষিণের জেনারেলরা দ্রুত আত্মসমর্পণ করতে শুরু করে। একজন প্রধান কমান্ডার কার্যত দলত্যাগ করেছিলেন এবং আক্রমণকারীদের শহরে প্রবেশ করতে সহায়তা করেছিলেন। দক্ষিণের সম্রাট, চেন শুভাও, পালানোর বা আত্মহত্যার একটি দুঃখজনক প্রচেষ্টায়, নিজেকে একটি কূপ থেকে নিচে ফেলে দেয় এবং আক্রমণকারীদের দ্বারা তাকে উদ্ধার করতে হয়, যারা নীচে চিৎকার শুনতে পায় এবং তাকে উপরে তুলে ধরে, ভেজা, বিছানায় পড়ে যায়, এবং দুটি উপপত্নী এখনও তাকে আঁকড়ে ধরে থাকে। এদিকে, দক্ষিণ চীনা অভিজাতদের অধিকাংশই আত্মসমর্পণ করে এবং কয়েকটি বিচ্ছিন্ন কিন্তু রক্তাক্ত যুদ্ধের পরে রাজধানীতে প্রতিরোধ দ্রুত শেষ হয়ে যায়। যাইহোক, দক্ষিণ সাম্রাজ্যের অন্য কোথাও, তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। ইয়াংৎজে নিজেই, চারটি দৈত্যাকার ১১০ ফুট উঁচু, পাঁচ-ডেকের যুদ্ধজাহাজ – প্রতিটি আটশত নাবিক, ক্রসবাউম্যান এবং মেরিন দ্বারা পরিচালিত – দশটি দক্ষিণ যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করার জন্য তাদের পঞ্চাশ ফুট দীর্ঘ ব্যাটারিং র্যাম ব্যবহার করেছিল। অন্যান্য দক্ষিণের পরাজয়গুলি অনুসরণ করা হয়েছিল, এবং শীঘ্রই কার্যত পুরো ইয়াংজি উপত্যকা উত্তরের হাতে চলে যায়। তারপরে, জোয়ারটি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি মরিয়া কিন্তু ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রচেষ্টায়, বেঁচে থাকা দক্ষিণী বাহিনী উঝৌ শহরের চারপাশে জড়ো হয়েছিল, যা পতিত রাজধানী এবং সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত ছিল। কিন্তু উত্তরাঞ্চলীয় ভূমি ও সামুদ্রিক বাহিনীর একটি ভার্চুয়াল ব্লিটজক্রিগ শহরটি দখল করে নেয়। দায়িত্বে থাকা দক্ষিণের জেনারেল একজন তাওবাদী সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে পালিয়ে যান, এবং তার বাহিনী একটি শেষ আশ্রয়ে ফিরে যায়, নিকটবর্তী হ্রদের মাঝখানে একটি দ্বীপ। শীঘ্রই সমগ্র দক্ষিণ সাম্রাজ্য উত্তরের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, এবং দক্ষিণ সম্রাট, তার পরিবার এবং তার সমগ্র অভিজাতদের উত্তরে স্থায়ী নির্বাসনে নিয়ে যাওয়া হয়। এভাবে চীনকে ঐক্যবদ্ধ করা হয়।
কোরিয়ার উত্থান, ঐক্য ও বৌদ্ধধর্মের বিস্তার
৫৩৫ খ্রিষ্টাব্দে যখন চীনে জলবায়ু বিপর্যয় শুরু হয় তখন প্রায় নিশ্চিতভাবে কোরিয়াতেও এই বিপর্যয় ঘটে। এই সময় কোরীয় উপদ্বীপের একমাত্র জীবিত পৌত্তলিক রাষ্ট্র, সিলা রাজ্য, বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল যা এমন পরিস্থিতি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল যা একটি ঐক্যবদ্ধ কোরিয়ার উত্থানের দিকে পরিচালিত করেছিল। ৬ষ্ঠ শতাব্দীর কোরিয়ান ইতিহাসের রেকর্ড সামগুক সাগি ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে সমালোচনার শিকার হলেও ৫৩৫ সালে উপদ্বীপটির জলবায়ু বিশৃঙ্খলার যে বর্ণনা দেয় তা বাকি বিশ্বের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সেখানে উল্লিখিত উত্তর চীন, কোরিয়া এবং জাপানের ৫৩৫ ও ৫৩৬ সালের জলবায়ুর পরিবর্তনের উল্লেখগুলোও আকর্ষণীয়। ৫৩৫ সালে কোরিয়ায় বন্যা হয়েছিল এবং ৫৩৬ সালে “বজ্রপাত হয়েছিল এবং একটি মহান মহামারীও ছিল” এবং তারপরে “একটি মহান খরা” হয়েছিল। ৫৩৫ সালের শেষের দিকে কোরিয়ায় একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। কোরিয়ার পূর্ব প্রতিবেশী, জাপানের বিবরণগুলোও সেখানে জলবায়ু বিশৃঙ্খলার পরামর্শ দেয়। ৫৩৬ সালে জাপানি ক্রনিকল নিহোন শোকি, প্রস্তাব করে যে লোকেরা ভয়াবহ ক্ষুধায় ভুগছিল এবং “ঠান্ডায় ক্ষুধার্ত” ছিল।
৫৩০-এর দশকের আগে, সিলায় ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রভাবশালী ব্যবস্থাটি এমন ছিল যেখানে প্রকৃতি আত্মা এবং পূর্বপুরুষরা সমস্ত প্রাকৃতিক ঘটনাগুলিকে প্রভাবিত করতে সক্ষম বলে মনে করা হত। কোন একটি ধর্ম ছিল না, কেবল স্থানীয় আত্মা এবং দেবতাদের কেন্দ্র করে স্থানীয় কাল্টগুলির একটি সিরিজ ছিল। তা সত্ত্বেও, সাধারণ আচার-অনুষ্ঠান, ভোজের দিন এবং বিশ্বাস ছিল, এবং ধর্মীয় বিষয়গুলি ব্যাপকভাবে শামানিক যাজক বা যাজকদের হাতে ছিল। অমরত্বে বিশ্বাস ছিল, অন্তত আত্মার, এবং অভিজাতদের সোনার গহনাগুলির সাথে সমাহিত করা হয়েছিল যা তারা জীবনে পরিধান করেছিল এবং ডানাযুক্ত মুকুট এবং টুপি যা স্বর্গে আরোহণের জন্য তাদের শাম্যানিক শক্তির প্রতীক হতে পারে। অবশ্যই পার্শ্ববর্তী কায়া অঞ্চলে, মৃতদের এক সময় তাদের অনন্তকালের দিকে যাত্রা সহজতর করার জন্য বড় পাখির ডানাগুলির জোড়া সরবরাহ করা হয়েছিল। জাদু, ভবিষ্যদ্বাণী, এবং পূর্বপুরুষের উপাসনা অনুশীলন করা হয়েছিল, এবং সমগ্র জনসংখ্যা মূল পবিত্র দিনগুলি উদযাপন করেছিল, সম্ভবত বীজ বপন এবং ফসলের উৎসব সহ যখন ড্রামগুলি ফসলের আত্মা বা দেবতাদের সাহায্য করার জন্য বা ধন্যবাদ জানাতে বাজানো হতো।
বৌদ্ধ ধারণাগুলি প্রথম ষষ্ঠ শতাব্দীর গোড়ার দিকে সিলায় স্থায়ী শিকড় নিতে শুরু করে, যখন একজন চীনা কূটনীতিক এবং বৌদ্ধ মিশনারি তার রাজকীয় দরবারে এসেছিলেন। রাজা সহানুভূতিশীল ছিলেন, কিন্তু বেশিরভাগ অভিজাতরা নতুন বিশ্বাসের একগুঁয়েভাবে বিরোধিতা করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তনের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাও ব্যাপক বিরোধিতার মধ্যে পড়েছিল এবং ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু তারপরে ৫৩৫-৫৩৬ সালের জলবায়ু বিপর্যয়গুলি এসেছিল, যা অবশ্যই এতটাই গুরুতর ছিল যে তারা ৫৩৬ সালের মধ্যে রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের দিকে পরিচালিত করেছিল (উপরে উল্লিখিত “মহান মহামারী”), সম্ভবত দুর্ভিক্ষের পাহাড় অনুসরণ করে। বৌদ্ধধর্ম অবশ্যই সিলা রাজতন্ত্র দ্বারা এবং কোন সন্দেহ নেই যে জনসংখ্যার বেশিরভাগ দ্বারা, মূলত তাদের নিজস্ব বিভিন্ন আত্মিক দেবতাদের চেয়ে জাদুর আরও শক্তিশালী রূপ হিসাবে দেখা হয়েছে। এটি চীনা সাম্রাজ্যের শক্তি এবং গৌরবের সাথে চিহ্নিত করা হয়েছিল এবং কিছুটা বিস্ময়ের সাথে বিবেচনা করা হয়েছিল। শুধুমাত্র রক্ষণশীল অভিজাতরা, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতি তাদের স্বার্থান্বেষী স্বার্থের স্থিতাবস্থার বিরোধিতা করা হয়েছিল, এবং এটি সম্ভবত যে জলবায়ু বিশৃঙ্খলা কামড়াতে শুরু করে এবং ফসল ব্যর্থ হতে শুরু করে, আদালতে বৌদ্ধপন্থী এবং বিরোধী শিবিরের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রস্তাবটিতে দুর্যোগ-নিরাময়ের জাদুর সবচেয়ে শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসাবে দেখা হয় তার পক্ষে ইঙ্গিত দেয়। ৫৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সিলা সরকার কর্তৃক বৌদ্ধধর্মের আনুষ্ঠানিক গ্রহণকে এখন কোরিয়ান ইতিহাসের মূল জলাশয় হিসাবে দেখা যেতে পারে, কারণ এটি সিলাকে একটি সম্প্রসারণবাদী পথে চালু করেছিল যা শেষ পর্যন্ত একটি ঐক্যবদ্ধ কোরিয়া সৃষ্টির দিকে পরিচালিত করেছিল। সর্বোপরি, অন্য দুটি কোরিয়ান রাজ্য – পাইচে এবং কোগুরিয়ো – ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বৌদ্ধ ছিল এবং তাদের রূপান্তরের ফলে এই ধরনের উন্নয়ন ঘটেনি। এটি মূলত টাইমিংয়ের বিষয় ছিল। সিলা যে সর্বশেষ রূপান্তরিত হয়েছিল তা উপদ্বীপের ভূ-রাজনৈতিক সংগ্রামে এটি যথেষ্ট সুবিধা দিয়েছিল। এক অর্থে, এটি তার প্রতিযোগীরা বৌদ্ধধর্ম থেকে যা অর্জন করেছিল তা অর্জন করেছিল – জাতীয় পরিচয় এবং নিয়তির একটি আক্রমনাত্মক অনুভূতি। কিন্তু যেহেতু অন্য দুটি কোরিয়ান রাজ্য, পাইচে এবং কোগুরিয়ো, দেড় শতাব্দী আগে ধর্মান্তরিত হয়েছিল, তাই এটি কেবল সিলাই ছিল যা তার সাম্প্রতিক প্রাক-বৌদ্ধ অতীতের ইতিবাচক রাজনৈতিক সাংগঠনিক দিকগুলি থেকে উপকৃত হতে সক্ষম হয়েছিল। পায়েকজে, গোগুরিয়ো এবং অন্য জায়গায় বৌদ্ধধর্ম অভিজাত / রাজকীয় হর্তাকর্তাদের এবং রাজতন্ত্রের উন্নয়ন ও বিকাশকে সমর্থন করেছিল। যদিও পরম রাজত্ব ব্যবস্থার কিছু সুবিধা ছিল, তবে তারা সামগ্রিকভাবে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য আরও দুর্বল ছিল। অন্যদিকে, প্রাক-বৌদ্ধ, প্রাক-স্বৈরাচারী, আরও অলিগার্কি ব্যবস্থা যেখানে রয়্যালটি এবং শীর্ষ অভিজাতরা মূলত ক্ষমতার কিছু দিক ভাগ করে নিয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রে, সম্ভবত আরও স্থিতিশীল ছিল এবং ঐতিহ্যগত অভিজাত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গভীরতর সামাজিক শিকড় ছিল। এক অর্থে, ৫৩৫-এর রূপান্তরের পরের দশকগুলিতে, সিলা তার রাজনৈতিক ত্রুটি ছাড়াই বৌদ্ধ হওয়ার সুবিধাগুলি উপভোগ করেছিল এবং এটি প্রাক-বৌদ্ধ রাজনৈতিক ব্যবস্থাও উপভোগ করেছিল, যা নতুন বিশ্বাসের প্রবর্তনের সাথে সাথে তাত্ক্ষণিকভাবে মারা যায় নি এবং যা, কমপক্ষে কিছু সময়ের জন্য, সামাজিক সংগঠন এবং কার্যত যারা গুরুত্বপূর্ণ তাদের আনুগত্য নিশ্চিত করেছিল।
এটি কোলপ’উম নামে পরিচিত একটি নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল – আক্ষরিক অর্থে, “হাড়ের পদ”- যা ধরে নিয়েছিল যে প্রত্যেকেরই সমাজে একটি নির্দিষ্ট উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কুলুঙ্গি রয়েছে। সমগ্র জনসংখ্যাকে আটটি পদে ভাগ করা হয়েছিল। রাজকীয় পরিবারের কিছু সদস্য শীর্ষ গোষ্ঠী, সংগোল (পবিত্র-হাড়ের পদ) এর অন্তর্গত ছিল; ছোটখাট রাজকীয় এবং কয়েকটি শীর্ষ অভিজাতরা চিবুকের গোল (সত্য-হাড়) এর অন্তর্গত ছিল; এবং বেশিরভাগ অভিজাতরা “মাথা পদ”, ছয়, পাঁচ এবং চারটির অন্তর্গত ছিল। জনসংখ্যার বাকি অংশটি তিন এবং দুই নম্বর পদের অন্তর্গত ছিল এবং খুব নীচে, মাথা পদ ১ ছিল। এই অসাধারণভাবে সংগঠিত এবং সুশৃঙ্খল সমাজের দৈনন্দিন জীবন সম্পূর্ণরূপে পদ বা র্যাংল্কিং সিস্টেম দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল। সত্যিকারের হাড়ের ঘরগুলি দৈর্ঘ্য বা প্রস্থে সর্বোচ্চ চব্বিশ কোরিয়ান ফুট হতে পারে। এক পদ নিচে (মাথার পদ ছয়) এবং একুশ ফুট সীমাবদ্ধ ছিল। মাথার পদ ৫ কে আঠারো ফুট প্রশস্ত বাড়ির সাথে নিজেকে সন্তুষ্ট করতে হয়েছিল, অন্য সবাইকে পনের ফুটের বেশি হতে নিষেধ করা হয়েছিল। হাড়ের পদ এবং মাথার পদ এমনকি কোনও ব্যক্তিকে কোন রঙের পোশাক পরার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং তার ঘোড়ার কী রঙের ফাঁদ থাকতে পারে তা নিয়ন্ত্রণ করা হত। সমস্ত রাষ্ট্রীয় পদগুলিও র্যাংকিং করা হয়েছিল যাতে, উদাহরণস্বরূপ, প্রধান পদ ৬ এ থাকা ব্যক্তিরা অফিস পদ ছয়ের উপরে চাকরি করতে না পারে এবং যারা পদ ৫ এ রয়েছে তারা অফিস পদের চেয়ে বেশি কিছু আশা করতে পারে না। এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে প্রতিফলিত একটি সিস্টেমে, শুধুমাত্র সত্যিকারের হাড় অভিজাতদের শীর্ষ সামরিক অবস্থানগুলি ধরে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
তার নতুন বৌদ্ধ-অনুপ্রাণিত সংকল্প প্রকাশ করার জন্য – এবং পূর্ব এশিয়ায় জলবায়ু বিপর্যয় সত্ত্বেও (সম্ভবত সিলা সহ) – রাজা ৫৩৬ সালে একটি নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করেছিলেন, কনওন (আক্ষরিক অর্থে “প্রবর্তিত সূচনা”)। বৌদ্ধধর্ম সাধারণত রাজাদের কাছে প্রিয় ছিল কারণ এটি রাষ্ট্রের ধারণাটিকে প্রায় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে রক্ষা করেছিল এবং প্রচার করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, একটি বিশাল নয় তলা বৌদ্ধ মন্দির, বিখ্যাত ড্রাগনের মন্দির, পরে সিলার রাজধানীতে নির্মিত হয়েছিল, এবং জনসংখ্যা, সর্বনিম্ন-র্যাংকিং থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত, বজায় রেখেছিল যে এর নয়টি গল্প জাপান এবং চীন সহ নয়টি অন্যান্য দেশকে জয় করার জন্য তাদের জাতির নিয়তির প্রতীক। সিলা বৌদ্ধধর্ম আরও দাবি করতে শুরু করে যে তার কিছু সাহসী পতিত যোদ্ধা – তথাকথিত হুরাং (যৌবনের ফুল) এর ছেলে-সৈনিকরা – ভগবান বুদ্ধের পুনর্জন্ম (প্রযুক্তিগতভাবে, পুনর্জন্মের বুদ্ধ, মৈত্রেয়ের অবতার)। বৌদ্ধ-উদ্ভূত জাতীয়তাবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং তার এখনও শক্তিশালী প্রাক-বৌদ্ধ সামাজিক ঐতিহ্য দ্বারা শক্তিশালী, সিলা ৫৫০ এবং ৫৭৬ এর মধ্যে তার অঞ্চলকে তিনগুণ করতে সফল হয়েছিল। মজার ব্যাপার হল, ৫৩০-এর দশকের জলবায়ু অস্থিতিশীলতার মধ্যে প্রাথমিকভাবে আরেকটি উন্নয়ন শুরু হয়েছিল – ঐক্যের দিকে চীনের পদক্ষেপ – পরিবর্তে, চীনা আগ্রাসনের মুখে তাদের উপদ্বীপকে একত্রিত করার জন্য একটি কোরিয়ান আকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে সহায়তা করেছিল। এই ঐক্যটি ৬৭৫ সালে সিলার নির্দেশনায় অর্জন করা হয়েছিল এবং সিলা রাজ্যের মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল। এর উত্তরাধিকারী রাষ্ট্র, কোরিও (কোরিয়া), দশম শতাব্দীর গোড়ার দিকে তার ধ্বংসাবশেষ থেকে ফিনিক্সের মতো উত্থিত হয়েছিল এবং সংরক্ষিত হয়েছিল। এভাবে কোরিয়া ঐক্যবদ্ধ ও বৌদ্ধ হয়ে ওঠে।
জাপানে ক্ষতি
জাপানের প্রধান পুরাণ, নিহোন শোকিতে ৫৩৬ সালে জাপানি রাজা সেনকা একটি আদেশ জারি করেন, যাতে লেখা ছিল, “খাদ্যই হচ্ছে সাম্রাজ্যের ভিত্তি। হলুদ সোনা এবং নগদ দশ হাজার মুদ্রার ভাণ্ডার ক্ষুধা নিরাময় করতে পারে না। যে ব্যক্তি ঠান্ডায় ক্ষুধার্ত, তার জন্য এক হাজার বাক্স মুক্তো কী উপকারে আসবে?” বিশ্বের অনেক দেশের মতো, জাপানের উত্থানের গুরুত্বপূর্ণ সময়টি ছিল ষষ্ঠ শতাব্দী, এমন একটি শতাব্দী যেখানে ৫৩০ এর দশকের জলবায়ু বিশৃঙ্খলা পরিবর্তনের জন্য মূল প্রাথমিক মোটরগুলির মধ্যে একটি হিসাবে কাজ করেছিল। জাপানে, জলবায়ু বিপর্যয়কে চারটি মূল আন্তঃসম্পর্কিত কারণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় যেগুলো ব্যাপক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবর্তন ঘটায় – জলবায়ু, অভিবাসন, রোগ এবং ধর্ম। ঘটনাগুলির গুরুত্বপূর্ণ ক্রমটি আসলে কোরিয়াতে শুরু হয়েছিল, যেখানে ৫৩৬ সালে (এবং সম্ভবত ইতিমধ্যে ৫৩৫ সালে) খরা এবং দুর্ভিক্ষ আঘাত হেনেছিল। তীব্র দুর্ভিক্ষের পরে খরার প্যাটার্নটি কোরিয়া থেকে মাত্র ১২০ মাইল দূরে অঞ্চলসম্পর্কিত উত্তর চীনা ইতিহাসে আরও বিস্তারিতভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে, তবে এটি অনুমান করা সম্ভবত নিরাপদ যে কোরিয়াও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সাধারণত, দুর্ভিক্ষ তাদের মরিয়া ক্ষুধার্ত শিকারদের ঘুরে বেড়াতে বাধ্য করে, প্রায়শই খাবারের সন্ধানে যথেষ্ট দূরত্ব ভ্রমণ করে – এবং তারপরে সেই কয়েকটি জায়গায় একত্রিত হয় যেখানে এখনও খাদ্য বা জল পাওয়া যায়। জনসংখ্যা আন্দোলন এবং অস্থায়ী জনসংখ্যার ঘনত্বের সংমিশ্রণ মহামারীকে ট্রিগার করে। বর্ধিত গতিশীলতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দ্রুত রোগ ছড়িয়ে দেয়, যেমন উচ্চতর জনসংখ্যার ঘনত্ব, যেখানে ক্ষুধার্ত লোকেরা একত্রিত হয় সেখানে অর্জন করা হয়। সুতরাং, স্থানীয় রোগ দ্রুত মহামারী রোগ হয়ে ওঠে। উল্লেখযোগ্যভাবে, কোরিয়ান ক্রনিকল, সামগুক সাগি, বলে যে একটি মহামারী ঠিক সঠিক বছরে আঘাত করেছিল – ৫৩৬। এটাই একমাত্র মহামারী সমগ্র ষষ্ঠ শতাব্দীর জন্য সামগুক সাগি দ্বারা রেকর্ড করা হয়েছে, তাই এটি অবশ্যই খুব গুরুতর ছিল। জাপানি উৎস থেকে পাওয়া প্রমাণ থেকে জানা যায় যে এই রোগটি সম্ভবত গুটিবসন্ত (বা সম্ভবত হাম, একটি রোগ যা অ-কমিউন জনসংখ্যার মধ্যে গুটিবসন্তের মতো প্রায় অনেক মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম)।
শত শত বছর ধরে কোরিয়া থেকে জাপানে অভিবাসনের বিরতিহীন তরঙ্গ ছিল, এবং ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম চার দশকে কোরিয়ান অভিবাসীদের একটি অবিচলিত প্রবাহ ছিল – কৃষক, লেখক, ধাতব শ্রমিক এবং অন্যান্য। এর সাথে জড়িত সংখ্যাগুলি এতটাই উল্লেখযোগ্য ছিল যে তারা জাপানের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছিল। জাপানের শীর্ষ অভিজাত পরিবারগুলির মধ্যে একটি, সোগা, বিদেশীদের সাথে এবং বিদেশীদের সাথে – অর্থাৎ, বৌদ্ধ এবং চীনা – সাধারণভাবে সংস্কৃতির সাথে নিজেদেরকে সংযুক্ত করেছিল। নিহোন শোকি, বিশেষ করে ৫৪০ বছরের জন্য একটি এন্ট্রিতে অভিবাসীদের উল্লেখ করে বলেছে যে তারা গণনা করার জন্য একত্রিত হয়েছিল এবং সেখানে ৭,০৫৩ টি পরিবার ছিল। এই গণনাসমূহ নির্দেশ করে, ৫৩০-এর দশকে জাপানে অভিবাসীদের একটি বিশেষভাবে বড় প্রবাহ দেখা গিয়েছিল, সম্ভবত তা আংশিকভাবে দুর্ভিক্ষ এবং মহামারীর ফলে ঘটে।
জাপানে, নিহোন শোকিতে উল্লিখিত “হলুদ সোনা ক্ষুধা নিরাময় করতে পারে না” এই আদেশটি ইঙ্গিত দেয় যে রাজা এবং তার আদালত পরিস্থিতি সম্পর্কে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল। এই এন্ট্রিটি দ্রুত বিভিন্ন জেলা থেকে অন্যান্য অঞ্চলে শস্যের সরবরাহ কীভাবে স্থানান্তর করা হবে তার একটি রূপরেখা দ্বারা অনুসরণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, শস্য এমন একটি জেলায় প্রেরণ করা হয়েছিল যেখানে একটি শস্যভাণ্ডার নির্মাণ করা হয়েছিল, “এইভাবে অসাধারণ অনুষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করা এবং দীর্ঘকাল ধরে মানুষের জীবন রক্ষা করা।
পূর্ব এশীয় অঞ্চলটি বেশ কয়েক বছর ধরে জলবায়ু সমস্যা এবং দুর্ভিক্ষ সহ্য করে চলেছে বলে মনে হয়। মূল ভূখন্ডের সূত্রগুলি ৫৩৫ থেকে ৫৩৮ এর মধ্যে চীনের সমস্যাগুলি উদ্ধৃত করে, এবং সম্ভবত জাপানও একই রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। এই সমস্যাগুলির পটভূমির বিরুদ্ধে (এবং সম্ভবত বিশেষ করে অশান্ত সময়ে একটি যোগ্য এবং শান্ত ধর্মীয় কাজ হিসাবে), দক্ষিণ-পশ্চিম কোরিয়ার রাজা (পেইচে) ৫৩৮ সালে জাপানি রাজকীয় আদালতে একটি ধর্মীয় মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মিশনটি জাপানি রাজা সেনকাকে বুদ্ধের একটি স্বর্ণ ও তামার চিত্র, বেশ কয়েকটি আচার বৌদ্ধ ব্যানার এবং ছাতা এবং বেশ কয়েকটি পবিত্র বই উপহার দেয়। বলা হয়ে থাকে যে মিশনের প্রধান রাজাকে বলেছিলেন যে বৌদ্ধধর্ম “সমস্ত মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে চমৎকার,” এবং “প্রতিটি প্রার্থনা পূর্ণ হয় এবং কিছুই চায় না। পেইচে ১৫০ বছর ধরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং এর আগে জাপানি রাজকীয় দরবারে একটি ধর্মীয় মিশন পাঠানোর জন্য তিনি কখনও বিরক্ত হননি বলে জানা যায় না। এবং কোরিয়া এবং চীনের বেশিরভাগ অংশই যথাক্রমে ১৫০ এবং ৩৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বৌদ্ধ বা আংশিকভাবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও, জাপান – এমনকি সোগা পরিবারের মহাদেশের ঝোঁকযুক্ত অভিজাতরাও বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়ে কোনও আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু ৫৩০-এর দশকের পরিস্থিতি ছিল অভূতপূর্ব। পুরো অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষে ভুগছিল, এবং – তিন বছর আগে সিলায়ের মতো – অনেকেই নিশ্চয়ই অনুভব করেছিলেন যে প্রকৃতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী সম্ভাব্য যাদু এবং / অথবা শক্তিশালী সম্ভাব্য ঈশ্বরের সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। তবুও আরও অনেকে ভয় পেয়েছিল যে, সঙ্কটের সময় একজন বিদেশী দেবতার উপাসনা করে জাপানের ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় দেবতাদের অপমান করা বিশেষভাবে বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। নিহোন শোকির মতে, “যারা এই রাজ্যকে শাসন করেছে তারা সর্বদা বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীতকালে উপাসনা করার জন্য তাদের যত্ন নিয়েছে, স্বর্গ ও পৃথিবীর ১৮০ জন দেবতা, এবং ভূমি ও শস্যের দেবতাদের। যদি, ঠিক এই সময়ে, আমরা তাদের পরিবর্তে বিদেশী দেবতাদের উপাসনা করি, তবে এটি ভয় করা যেতে পারে যে আমরা আমাদের জাতীয় দেবতাদের ক্রোধের সম্মুখীন হব। তাই রাজা একটি সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেন। বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করার জন্য নেতৃস্থানীয় উত্সাহী, সোগা বংশের প্রধান, বিদেশী দেবতার উপাসনা করার অনুমতি দেওয়া হবে – একটি পরীক্ষা হিসাবে। সোগা বংশের নেতা, ওহো-ওমি, “হাঁটু গেড়ে বসে বুদ্ধের মূর্তি আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছিলেন,” “তিনি এটিকে তার বাড়িতে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন,” এবং তারপর দ্বিতীয় ভবনটিকে একটি মন্দিরে রূপান্তরিত করেছিলেন। কিন্তু তারপরই বিপর্যয় নেমে আসে। জাপানে একটি বিপর্যয়কর মহামারী (সম্ভবত গুটিবসন্ত) ছড়িয়ে পড়ে। মৃত্যু হয়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষের। যেহেতু জাপান অনেক প্রজন্ম ধরে প্রায় নিশ্চিতভাবে গুটিবসন্তের অভিজ্ঞতা অর্জন করেনি, যদি একেবারেই, কার্যত কোনও অনাক্রম্যতা ছিল না।
নিহোন শোকিতে আছে “দেশে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখান থেকে মানুষ অকালে মারা গিয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে এটি আরও খারাপ হয়ে যায় এবং কোনও প্রতিকার ছিল না,”। জাপানের যেসব এলাকায় আক্রান্ত হয়েছে, সেখানে অবশ্যই তুলনামূলকভাবে বেশি জনসংখ্যার ঘনত্ব রয়েছে এমন সব এলাকাগুলোতে সম্ভবত ৬০ শতাংশ মানুষ মারা গেছে। প্রথমে এই রোগটি ফ্লুর মতো লক্ষণ (জ্বর, পিঠেব্যথা, মাথা ব্যাথা) তৈরি করত, প্রায়শই কাশি এবং ডায়রিয়া দ্বারা অনুসরণ করা হত। একটি ফুসকুড়ি – স্কারলেট জ্বরে অভিজ্ঞ দের মতো – হবে, তারপর হাজির হয়েছে। ভুক্তভোগীরা অনুভব করত যে তারা যেন আগুনে জ্বলছে বা ক্রমাগত ফুটন্ত জল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। নিহোন শোকি পরে ভুক্তভোগীদের বর্ণনা করে বলেন, “আমাদের দেহগুলি যেন পুড়ে গেছে। তাহলে ফুসকুড়ির প্রকৃতি বদলে যেত। মাথার উপর ঘনভাবে শুরু করে এবং নীচের দিকে অগ্রসর হয়, তবে বিশেষত হাত ও পায়েও ঘন, শত শত ঘা (নিহোন শোকিতে পরে উল্লেখ করা হয়) শিকারের ত্বকে প্রদর্শিত হতে শুরু করে। প্রতিটি ঘা একটি ছোট বাম্প হিসাবে শুরু হত, একটি পরিষ্কার ফোস্কা মধ্যে রূপান্তরিত এবং অবশেষে একটি বড় pustule মধ্যে রূপান্তর। প্রথম কয়েক দিনের মধ্যে পাঁচ শতাংশ রোগী অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে মারা যেত, যখন আরও ৫ শতাংশ মারা যেত কারণ ঘাগুলি ধরে ছিল এবং তাদের জ্বর ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী সম্ভবত গুটিবসন্ত ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে পারে তবে নিউমোনিয়া (30 শতাংশ) এবং সেপটিসেমিয়া (এছাড়াও 30 শতাংশ) দ্বারা মারা গেছে, যখন ভাইরাসটি নাক, গলা এবং চোখের প্রতিরক্ষামূলক mucosal কোষগুলিকে ছিনিয়ে নিয়েছিল, এইভাবে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের অনুমতি দেয়। জাপানের বিধ্বস্ত এলাকায়, প্রতি দশজনের মধ্যে নয়জন সম্ভবত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এবং এই নয়জনের মধ্যে মাত্র তিনজন এটি থেকে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাই অবাক হওয়ার কিছু ছিল না যে বুদ্ধকে উপাসনা করার অনুমতি দেওয়ার রাজার সিদ্ধান্তকে মহামারীর কারণ হিসাবে দেখা হয়েছিল।
বৌদ্ধধর্মের বিরোধীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে জাপানের স্থানীয় দেবতারা বোধগম্যভাবে রাগান্বিত ছিলেন। সেই দেবতারা ছিলেন আজকের জাপানি শিন্তো ধর্মের দেবতা। কামি নামে পরিচিত, তারা পাঁচটি প্রধান বিভাগে পতিত হয়েছিল: যারা গাছ, লম্বা পাতলা পাথর, পর্বতমালা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিকভাবে সংঘটিত বস্তুর মধ্যে বাস করত; যারা নির্দিষ্ট কারুশিল্প বা দক্ষতার সাথে যুক্ত; যারা একটি নির্দিষ্ট পরিবার বা বৃহত্তর সম্প্রদায়কে রক্ষা করে; যারা একসময় জীবিত মানুষ ছিল, যাদের মধ্যে কিছু পূর্বপুরুষও ছিল; এবং বিশেষ অভিজাত দেবতা যেমন সূর্য দেবী এবং দুই দেবতা যারা জাপানের দ্বীপপুঞ্জ তৈরি করেছেন বলে মনে করা হয়। কামিকে তাদের নিজস্ব কোনও আকৃতি নেই বলে মনে করা হত এবং একটি শামান (যাজক) দ্বারা এমন একটি বস্তুর মধ্যে প্রবেশ করার জন্য ডেকে আনা হয়েছিল যার ফর্ম তারা তখন গ্রহণ করতে পারে। এটি সাধারণত বিশ্বাস করা হত যে আত্মারা বাস করার জন্য দীর্ঘ পাতলা জাহাজগুলিকে পছন্দ করত – যাদুকাঠি, ব্যানার, দীর্ঘ পাথর, দীর্ঘ পাথর, গাছ, বিশেষভাবে তৈরি পুতুল এবং এমনকি জীবন্ত মানুষ। এই মানুষগুলি- মাধ্যমগুলি – নারী হওয়ার ঝোঁক ছিল এবং তাদের দেহ এবং তাদের কণ্ঠস্বরকে আক্ষরিক অর্থেই দেবতাদের দ্বারা দখল করার অনুমতি দিয়েছিল। রাজাকেও ঐশ্বরিক বাহন হিসাবে দেখা হত।
গুটিবসন্তের মহামারী জাপানকে ধ্বংস করে দেওয়ার সাথে সাথে, মনোনোব এবং নাকাতোমি গোষ্ঠীর প্রধানরা নিহোন শোকিতে বলা হয়েছে যে তারা তাদের রাজাকে সোগা নেতার বুদ্ধ মূর্তি থেকে পরিত্রাণ পেতে অনুরোধ করেছিল: “এটি ছিল কারণ আগের দিনে আপনার দাসদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি, যে লোকেরা এইভাবে রোগে মারা যাচ্ছে। আপনি যদি এখন বিষয়গুলি খুব বেশি দূরে চলে যাওয়ার আগে আপনার পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করেন তবে আনন্দ অবশ্যই ফলাফল হবে! ভবিষ্যতে সুখের সন্ধানের জন্য মূর্তিটি দূরে সরিয়ে দেওয়া এবং অধ্যবসায়ের সাথে এটি তাৎক্ষণিকভাবে ভাল হবে। রাজার কাছে রাজি হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। এক অর্থে, বুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে এই মহামারীর জন্য দায়ী ছিলেন, কারণ এই রোগটি কোরিয়া থেকে “বিদেশী জিনিস” প্যাকেজের একটি অবাঞ্ছিত অংশ হিসাবে এসেছিল যা সোগা উৎসাহিত করেছিল। “আপনার পরামর্শ মতো এটি করা হোক,” নিহোন শোকি বলেছেন যে রাজা তার সমালোচকদের বলেছিলেন। “তদনুসারে,” ক্রনিকলটি চলতে থাকে, “কর্মকর্তারা বুদ্ধের চিত্রটি গ্রহণ করেছিলেন এবং এটি নানিহার খালের স্রোতের কাছে ছেড়ে দিয়েছিলেন। সোগা নেতারা বৌদ্ধ মন্দিরেও আগুন ধরিয়ে দেয়।
তথ্যসূত্র
- David Keys, Catastrophe: An Investigation into the Origins of the Modern World (2000)
Leave a Reply