কিছু ভিন্ন উপাদান আমাদের দাঁতের রঙের উপর প্রভাব ফেলে এবং দাঁত হলুদ করে দেয়। দাঁতের এই হলুদ হওয়াকে এক্সট্রিন্সিক ও ইনট্রিন্সিক স্টেইন এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। তাছাড়াও স্বাস্থ্যগত কারণেও হলুদ হতে পারে।
এক্সট্রিনসিক স্টেইন
আমাদের দাঁতের সবচেয়ে কঠিন ও বাইরের স্তর হচ্ছে এনামেল। আর এই এনামেলের বাইরের স্তরেই এই এক্সট্রিনসিক স্টেইন হয়ে থাকে। মায়ো ক্লিনিক (Mayo Clinic) এর মতানুসারে,যখন এনামেল হাড়ের চেয়ে শক্ত হয় তখন খুব সহজেই এটা বিবর্ণ হয়ে যায়।
আরিজনার চ্যান্ডলারের জে. ফিলিপ ডেন্টিস্ট্রির ডেন্টিস ডক্টর জাস্টিন ফিলিপ এর মতে,দাঁত হলুদ হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে “স্মোকিং,চা-কফি পান করা এবং তামাক সেবন করা”।
অন্যান্য ডার্ক কালারের খাবার এবং পানীয় যেমন রেড ওয়াইন,কোলা,গাঢ় সস এবং নানা রকমের ফল যেমন আঙ্গুর,ব্লুবেরিস আর ডালিম এইগুলোও দাঁতকে বিবর্ণ করে দিতে সক্ষম। এগুলোর মধ্যে উচ্চ ক্রোমোজেন, পিগমেন্ট উৎপাদকারী উপাদান রয়েছে যা এনামেলকে বিবর্ন করে দেয়।
অ্যাসিডিক খাবার এবং পানীয় দাঁতের এনামেলকে উত্তেজিত করে এবং ক্রোমোজেনকে দাঁতের সাথে লেগে থাকতে সহায়তা করে। ওয়াইন এবং চা এর মধ্যে ট্যানিন থাকে। এগুলোও ক্রোমোজেনকে দাঁতের এনামেলের সাথে লেগে থাকতে সহায়তা করে।
ইনট্রিনসিক স্টেইন
দাঁতে ইনট্রিন্সিক স্টেইন ঘটে যখন বিভিন্ন ফ্যাক্টর এনামেল এবং এর ভেতরের ডেন্টিনের লাইট-ট্রান্সমিটিং প্রোপার্টি পরিবর্তন করে দেয়।
কিছু ওষুধ ইনট্রিনসিক স্টেইন ঘটাতে পারে। যদি কোন শিশু আট বছরের আগে টেট্রাসাইক্লিন এবং ডোক্সিসাইক্লিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে তাহলে আর দাঁত হলদেটে বাদামি হয়ে যেতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্ককালে মাড়ি ফোলার পথ্য হিসাবে জীবাণুনাশক ক্লোরিক্সিডাইন নামক যে মাউথওয়াশ ব্যবহার করা হয় সেটিও দাঁতের রঙ পরিবর্তন করে দিতে পারে। একইভাবে একনি বা ব্রণ দূরীকরণে ব্যবহৃত ওষুধ মাইনোসাইক্লিন দাঁতের স্টেইন ঘটাতে পারে। মাথা এবং গলার কেমোথেরাপি এবং কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধও ইনট্রিনসিক স্টেইন এর জন্য দায়ী। এমনকি কিছু সাধারণ ওষুধ যেমন এন্টিহিস্টামিন,আলবুটেরল এবং ব্লাড প্রেসারের ওষুধও দাঁত হলুদ করে দেয়। অতিরিক্ত ফ্লোরাইডও দাঁতের জন্য ভালো নয়।
দাঁতের চিকিৎসাও দাঁত হলুদ যাওয়ার কারন হতে পারে। ফ্লোরিডার ডক্টর ব্রুনো র্সাপ নামক একজন ডেন্টিস বলেন “অনেক ডেন্টাল মেটেরিয়াল বিশেষ করে অ্যামালগাম রেস্টোরেসন রঙ পরিবর্তন করে দিতে পারে।”
অন্যান্য কারণ
এছাড়াও জেনেটিক্স,বয়স এবং স্বাস্থ্যগত কারণের জন্যও দাঁত হলুদ হয়ে যেতে পারে।
ডাইনামিক ডেন্টালের ডিরেক্টর ডঃ এডিটা ওউটারিকা বলেন, “দাঁত অনেক কারণেই হলুদ হতে পারে কিন্তু এর প্রথম কারণ হল জেনেটিক্স। ডেণ্টিনোজেনেসিস ইম্পারফেক্টা এবং অ্যামেলোজেনেসিস ইম্পারফেক্টা দুটি জেনেটিক ডিফেক্ট যার কারণে দাঁত সঠিকভাবে বাড়তে পারে না। এগুলো দাঁতের রঙ পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে”।
ডঃ এডিটা ওইটারিকার মতে, আপনার চোখের রঙের মতই, কেবল জেনেটিক্স এর জন্য আপনার দাঁত হলুদ হয়ে যেতে পারে। যদি আপনার এনামেল পুরু হয় তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার দাঁত হলদেটে হবে।
একইভাবে বয়সের সাথে এনামেলের পুরুত্ব জন্যও আপনার দাঁত আরো বেশি হলুদ দেখা যায় যা আপনার দাঁতের সেন্সিভিটির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মায়ো ক্লিনিক এর মতে, এনামেলের পুরুত্ব দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে,সঠিকভাবে লালা উৎপাদন এবং ফ্লোরাইড। দিনে দুইবার ফ্লোরাইড সমৃদ্ধ টূথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা, পানি পান করলে এই পুরুত্ব দূর হবে। আপনি যদি মুখ শুষ্ক মনে করেন তাহলে একজন ডাক্তারকে দেখাতে পারেন।
অসুস্থ শরীরও দাঁতের রঙের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ওউটেরিকার মত অনুসারে “কিশোর বয়সে উচ্চ জ্বর হওয়ার পরে এবং নিওনেটাল জন্ডিসে ভোগার পরেও দাঁত হলুদ হয়ে যেতে পারে”। এছাড়াও কিছু অস্বাভাবিক অবস্থার জন্যও হলুদ হতে পারে।
প্রতিষেধক এবং চিকিৎসা
হলুদ দাঁতের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রতিষেধক হচ্ছে, আপনি কি খাচ্ছেন সেইদিকে নজর দেওয়া। আপনার উচিত দাঁতের জন্য স্বাস্থ্যকর জিনিসগুলো ব্যবহার করা এবং প্রায়ই একজন ভালো দন্ত চিকিৎসকে দেখানো। ওউটারিকার মতে,দাঁতের জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো হবে যে,নিয়মিতভাবে একজন প্রফেশনালের কাছ থেকে দাঁত পরিস্কার করা। এতে দাঁতের স্টেইনিং দূর হবে। এছাড়াও ড্রিংক করার সময় স্ট্র ব্যবহার করলে কোন তরল পদার্থ দাঁতের সংস্পর্শে আসতে পারবে না। সর্বোপরি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অবশ্যই একজন ভালো ডেটিস্টের কাছে যেতে হবে।
http://healthletter.mayoclinic.com/health/pdf/183/201001.pdf
http://www.livescience.com/54420-yellow-teeth.html
– রঙ্গিন প্রজাপতি
Leave a Reply