নতুন জিন এডিটিং টেকনিক যা পরিবর্তন করতে পারে একটি ডিএনএ বেজকেও

shutterstock_300433304.jpg

ডিএনএকে ম্যানিপুলেট করার জন্য জিন এডিটিং বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতিটি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি আবিষ্কার মানুষের জেনেটিক রোগের দূরীকরণের ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তিটিকে হঠাৎ করেই অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এই নতুন আবিষ্কারটির ফলে বিজ্ঞানীগণ ডিএনএ এর একটি মাত্র ইউনিটকে এডিট করতে সক্ষম হবে। এই প্রক্রিয়ায় একটি এনজাইমের সাহায্যে একটি ডিএনএ বেজ সাইটোসিনকে আরেকটি ডিএনএ বেজ ইউরিডিনে রূপান্তরিত করা যায়। আর সেটাও সম্ভব হয় কোন ডিএনএ অনুর ভাঙ্গন ছাড়াই। এই পদ্ধতিকে তাই বলা হয় পয়েন্ট মিউটেশন। এই টেকনিকটি একটি নিঃসঙ্গ ডিএনএতে শতকরা ৪৪ শতাংশ ক্ষেত্রে সফল হয়। কিন্তু কোন কোষে এই সফলতার শতকরা পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৭.৭ শতাংশে। এটা হবার কারণ হচ্ছে, এনজাইম ডিএনএটির স্ট্র্যান্ডগুলো চেঞ্জ করে দেবার পরে অনেকক্ষেত্রেই কোষটি আবার তা সংশোধন করে দেয়।

হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিকেল বায়োলজিস্ট ডেভিড লিউ বলেছেন, “মানুষের বেশিরভাগ জেনেটিক রোগই ঘটে পয়েন্ট মিউটেশনের কারণে। কিন্তু আমাদের বর্তমান জিনোম মেথড দিয়ে পয়েন্ট মিউটেশন করার কার্যকারীতা এখনও অনেক কম এবং জিনের ক্ষতি না করেই এটা পরিষ্কারভাবে করা কঠিন।”

জিন এডিটিং এর ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পদ্ধতিটি হল CRISPR/Cas9 (ক্রিসপার)। এই টেকনিকটির ক্ষেত্রে অর্থও কম খরচ হয় আবার এটা নির্ভরযোগ্যও বটে। যেমন যে সব মশা এখন ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম তারা এই ক্রিসপার দ্বারাই জেনেটিকালি মডিফাইড।

CRISPR/Cas9 এর Cas9 হল একটি এনজাইম যা একটি গাইড আরএনএ এর সাহায্যে ডিএনএ এর একটি নির্দিষ্ট অংশ কাটতে ব্যবহৃত হয়। দিএনএ এর এই পরিবর্তনের ফলে সে আর তার আগের বৈশিষ্ট প্রকাশ করতে পারে না, পূর্বের বৈশিষ্ট্যটি এতে বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ পূর্বের জিনটি নিজেকে আর প্রকাশিত করতে পারে না। বিজ্ঞানীগণ এই CRISPR/Cas9 কে আবার বিভিন্ন শূন্যস্থানে সঠিক ডিএনএ বসানোর জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন।কিন্তু এখন পর্যন্ত এই পদ্ধতিটি মাত্র ৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই সফলতা পেয়েছে।

লিউর দল এই Cas9 এর সাথে আরেকটি এনজাইম যুক্ত করেছে। এরফলে এটা ডিএনএতে ঠিকই পৌঁছায় কিন্তু ডিএনএ মলিক্যুলটি কাটে না, বদলে এটা ডিএনএ এর একটি বেজকে আরেকটি বেজে পরিণত  করে। এই টেকনিকটির যথেষ্ট সম্ভাবনাময় কিন্তু এটা এখনও তার প্রাথমিক ধাপেই আছে। নেচার জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি অনুসারে গবেষকগণ ইতিমধ্যেই এনজাইমটিকে ব্যবহার করে জিনি মোডিফাই করা শুরু করে দিয়েছেন। লিউ এই নতুন প্রোটিনটির নাম দিয়েছেন “বেস এডিটর”। আর এটা ব্যবহার করে একটি ইঁদুরের কালচার করা কোষে আলঝেইমারের এর জিন মিউটেশনকে ঠিক করে দিয়েছেন। আর এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতা ছিল ৭৫ শতাংশ। এই একই বেজ এডিটর মানুষের ক্যানসার কোষের মিউটেশনকেও ঠিক করে দিতে সক্ষম, যদিও এক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা হবে মাত্র ৭.৬ শতাংশ।

কিন্তু সম্ভবত এই পদ্ধতিটির দ্বারা হয়তো অনেক রোগেরই প্রতিশেধক আবিষ্কার করা সম্ভব হবে। গবেষকদের দলটি এখন অন্যান্য ডিএনএ বেজকে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছেন, সেই সাথে তারা কয়েকটি বেজ একসাথে পরিবর্তিত করারও চেষ্টা করছেন। মানুষের উপর এটা প্রয়োগ করতে হয়তো আরও অনেক সময় লেগে যাবে কিন্তু অবশ্যই একদিন আমরা এই জিন এডিটিং রেভোল্যুশন দেখতে সক্ষম হব।

http://www.nature.com/nature/journal/vaop/ncurrent/full/nature17946.html

http://www.nature.com/news/gene-editing-hack-yields-pinpoint-precision-1.19773

– বুনোস্টেগস

 

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.




This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.