বায়োভিভা (BioViva) নামের বিশ্বের প্রথম বায়োটেক কোম্পানিটি দাবী করছে তারা এমন একটি জিন থেরাপি টেকনিক আবিষ্কার করেছেন যা দিয়ে এজিং বা বয়স বৃদ্ধির ফলে বুড়িয়ে যাওয়া থামিয়ে দেয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি হচ্ছে ডিএনএ এর প্রান্তের অংশ টেলোমিয়ারকে লম্বায় বাড়িয়ে দেয়া। কোম্পানির সিইও হচ্ছেন এলিজাবেথ প্যারিশ।
টেলোমিয়ারকে প্রতিটি ক্রোমোজোমের প্রান্তে পাওয়া যায় যা অর্গানিজমটির কোডিং এর জন্য প্রতিটি জেনেটিক ইনফরমেশন ধারণ করে এবং ক্ষয় এবং আঘাতের হাত থেকে ডিএনএকে রক্ষা করে, ঠিক জুতার ফিতার অগ্রভাগে লাগানো প্লাস্টিকের অংশটির মত যা জুতার ফিতার সুতাগুলোর ছড়িয়ে যাওয়া আটকায়। কোষবিভাজনের সময় ক্রোমোজমের প্রতিলিপি তৈরি হয়, অর্থাৎ একটি ক্রোমোজোম থেকে দুটো তৈরি হয়। এই প্রতিলিপি তৈরির সময় ক্রোমোজোমের টেলোমিয়ারটি তার কিছু অংশ হারায়। এভাবে যতবার কোষবিভাজন হতে থাকে, ততবার ক্রোমোজমের প্রতিলিপি তৈরি হতে থাকে এবং ততবার টেলোমিয়ার তার অংশ হারাতে থাকে। আর এভাবে কমতে কমতে যখন টেলোমিয়ার একটি ক্রিটিকাল লেংথে এসে পড়ে তখন সে আর ডিএনএকে রক্ষা করতে পারে না, কোষ বিভাজন বন্ধ হয়ে যায় এবং কোষগুলো মরতে শুরু করে। আর এই কোষের মৃত্যুই হল এজিং বা বুড়িয়ে যাওয়ার কারণ।
যাই হোক, এই টেলোমিয়ার ক্যাপের ছোট হওয়াই যেহেতু এজিং ও বিভিন্ন অসুখের কারণ হচ্ছে তাই থিওরি বলছে এর এই ছোট হওয়াকে যদি আটকানো যায় তাহলে আটকানো যাবে এজিংকেও। এটাকে অনেকটা কল্পনাতীত বলে মনে হলেও একেবারে তা নয়। কারণ ইতিমধ্যে ল্যাবরেটরিতে মানব কোষগুলোর কালচার করার জন্য এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার ইতিমধ্যেই একটি টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করার জন্য একটি আরএনএকে মোডিফাই করে ফেলেছে। আর এই আরএনএ স্কিন সেলের টেলোমিয়ারের শর্টেনিং বা ছোট হওয়াকে রিভার্স করে দিয়ে উলটে বড় করছে। আর এরফলে নতুন কোষগুলো পূর্বের কোষগুলোর তুলনায় চল্লিশ গুণ বেশি বিভাজিত হচ্ছে!
যাই হোক এই মেথডটি এখন কেবল ড্রাগ টেস্টিং এবং ডিজিস মডেলিং এর জন্য সেল কালচারেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। কার্যকরীভাবে মানুষের এজিং রোধ করতে এখনও সেভাবে এর প্রয়োগ দেখা যায় নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন মানুষের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি প্রয়োগে সফলতা পেতে আরও অনেক দূর যেতে হবে। কিন্তু ইতিমধ্যে বায়োভিভা কাজটিতে সফলতা পেতে উঠে পড়ে লেগেছে। কোম্পানিটির সিইও স্বয়ং এলিজাবেথ প্যারিশের হোয়াইট ব্লাড টেস্টে এটা প্রয়োগ করার চেষ্টা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।এখন যদি তারা নাও সফল হয়, ভবিষ্যতেও যদি সফল হয় তাহলে হয়তো বুড়ো হওয়াটাই মানব সভ্যতায় একটি ইতিহাস হয়ে যাবে!
https://med.stanford.edu/news/all-news/2015/01/telomere-extension-turns-back-aging-clock-in-cultured-cells.html
http://aem.asm.org/content/82/9/2656.abstract?sid=10b00e9c-dd80-4007-9ade-2292ac144148
– বুনোস্টেগস
Leave a Reply